সূরা নূর এর তাফসীর

সূরা নূর এর তাফসীর

সূরা নূর এর তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> সুরা নুর আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

সূরা নূর এর তাফসীর

৬৫/২৪/১.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
৬৫/২৪/২.অধ্যায়ঃ এবং পঞ্চমবারে বলবে, সে মিথ্যাচারী হলে তার ওপর নেমে আসবে আল্লাহর লানাত। (সুরা নূর ২৪/৭)
৬৫/২৪/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তবে স্ত্রীর শাস্তি রহিত হইবে যদি সে চারবার আল্লাহর নামে শপথ করে সাক্ষ্য দেয় যে, তার স্বামীই মিথ্যাচারী। (সুরা নূর ২৪/৮)
৬৫/২৪/৪.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ এবং পঞ্চমবারে বলে, তার স্বামী সত্যবাদী হলে তার নিজের উপর নেমে আসবে আল্লাহর গযব। (সুরা নূর ২৪/৯)
৬৫/২৪/৫.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
৬৫/২৪/৭.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২৪/৮.অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নাই।
৬৫/২৪/৯.অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নাই।
৬৫/২৪/১০.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন (তোমরা যদি মুমিন হও তবে) কখনও অনুরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি করো না। (সুরা নূর ২৪/১৭)
৬৫/২৪/১১.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সুরা নূর ২৪/১৮)
৬৫/২৪/১২.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
৬৫/২৪/১৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ এবং তারা যেন নিজেদের বক্ষদেশের ওপর ওড়নার আবরণ ফেলে রাখে। (সুরা নূর ২৪/৩১)

৬৫/২৪/১.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

সুরা (২৩) : মুমিনীন

ইবনু উয়াইনাহ বলেন, سَبْعَ طَرَآئِقَ সাত আকাশ। لَهَا سَابِقُوْنَ সৌভাগ্য তাদের ওপর অগ্রগামী। قُلُوْبُهُمْ وَجِلَةٌ তাদের অন্তর সব সময় ভীত ও সন্ত্রস্ত। ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, هَيْهَاتَ هَيْهَاتَ বহুদূর, বহুদূর। فَاسْأَلْ الْعَادِّيْنَ মালায়িকাদের জিজ্ঞেস করুন। لَنَاكِبُوْنَ তারা (সরল পথ থেকে) বিচ্যুত। كَالِحُوْنَ বীভৎস হয়ে যাবে। مِنْ سُلَالَةٍ সন্তান। نُّطْفَةُ নির্গত বীর্য। وَالْجِنَّةُ وَالْجُنُوْنُ এ দুটি একই অর্থে ব্যবহৃত (অর্থাৎ পাগল)। وَالْغُثَآءُ অর্থ ফেনা, যা পানির ওপরে ভাসে এবং তা কোন উপকারে আসে না। يَجْأَرُوْنَ তারা গাভীর ন্যায় তাদের আওয়াজ উঁচু করে, عَلٓٓى أَعْقَابِكُمْপশ্চাতগমন করা, سَامِرًاশব্দটির উৎপত্তি হচ্ছে السَّمَرِ মাসদার হইতে, السُّمَّارُ وَالسَّامِرُশব্দগুলো এখানে বহুবচন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, تُسْحَرُوْنَ তোমরা ব্যাপকভাবে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছ।

সুরা (২৪) : নূর

مِنْ خِلَالِهٰমেঘমালার মাঝ থেকে। বিদ্যুতের আলো। سَنَا بَرْقِهِবিনীত হওয়া। مُذْعِنِيْنَবিনীত হওয়া। বিনয়ী ব্যক্তিকে مُذْعِنٌবলা হয়। أَشْتَاتًا(দলে দলে) شَتَاتٌ-شَتّٰى-وَ-شَتٌّএকই অর্থে ব্যবহৃত হয়। সাদ ইবনু আয়ায সুমালী বলেন, الْمِشْكَاةُহাবশী ভাষায় তাক। আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, سُوْرَةٌ أَنْزَلْنَاهَا(এমন একটি সুরা) যার বর্ণনা ও ব্যাখ্যা আমি প্রদান করেছি। অন্য হইতে বর্ণিত। সুরার সমষ্টিকে কুরআন নাম দেয়া হয়েছে। সুরার নামকরণ করা হয়েছে একটি অপরটি থেকে বিচ্ছিন্ন বলে। তারপর যখন পরস্পরকে একত্র করা হয়, তখন তাকে কুরআন বলা হয়। আল্লাহ তাআলার বাণীঃচإِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهচ وَقُرْاٰنَهُএর এক অংশকে অন্য অংশের সঙ্গে যুক্ত করা। فَإِذَا قَرَأْنَاهচ فَاتَّبِعْ قُرْاٰنَهচতারপর যখন আমি তাকে একত্র করি ও সংযুক্ত করে দেই তখন তুমি অনুসরণ করিবে সে কুরআনের অর্থাৎ যা একত্রিত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তোমাকে যে কাজের নির্দেশ দিয়েছেন, সে কাজ করিবে এবং যে কাজ থেকে নিষেধ করিয়াছেন, তা থেকে বিরত থাকবে। বলা হয়, لَيْسَ لِشِعْرِهٰ قُرْاٰنٌঅর্থাৎ (তার কাব্যে সামঞ্জস্য) নেই। আর কুরআনকে ফুরকান এজন্য নাম দেয়া হয়েছে যে, তা হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করে। আর বলা হয়, স্ত্রীলোকের জন্য مَا قَرَأَتْ بِسَلًا قَطُّঅর্থাৎ তার পেটে সন্তান আসেনি। আর বলে, فَرَّضْنَا(তাশদীদ যুক্ত অবস্থায়) অর্থাৎ আমি তাতে বিভিন্ন ফরয অবতীর্ণ করেছি। আর যাঁরা فَرَّضْنَاهَا(তাশদীদবিহীন) পড়েন তিনি এর অর্থ করেন, আমি তোমাদের এবং তোমাদের পরবর্তীদের উপর ফরয করেছি। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, أَوِالطِّفْلِ الَّذِيْنَ لَمْ يَظْهَرُوْاএর অর্থ সে সব বালক যারা অল্প বয়স্ক হওয়ার কারণে নারীদের ব্যাপারে বুঝে না। শাবী বলেন, غَيْرِأُوْلِي الْإِرْبَةِযারা যৌন কামনামুক্ত, মুজাহিদ বলেন, যে তার পেট ব্যতীত অন্য কোন কিছুকে গুরুত্ব দেয় না, এবং যার ব্যাপারে নারীদের কোন আশংকা নেই, তাঊস বলেন, সে এমন নির্বোধ যার মহিলাদের ব্যাপারে কোন প্রয়োজন নেই।

{وَالَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ أَزْوَاجَهُمْ وَلَمْ يَكُنْ لَّهُمْ شُهَدَآءُ إِلَّآ أَنْفُسُهُمْ فَشَهَادَةُ أَحَدِهِمْ أَرْبَعُ شَهٰدٰتٍم بِاللهِ لا إِنَّه” لَمِنَ الصّٰدِقِيْنَ}.

যারা নিজেদের স্ত্রীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অথচ নিজেরা ব্যতীত তাদের কোন সাক্ষী নাই।(সুরা নূর ২৪/৬)

৪৭৪৫

সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উয়াইমির (রাদি.) আসিম ইবনু আদির নিকট আসলেন। তিনি আজ্লান গোত্রের সর্দার। উয়াইমির তাঁকে বলিলেন, তোমরা ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কী বল, যে তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য পুরুষ দেখিতে পায়। সে কি তাকে হত্যা করিবে? এরপর তো তোমরা তাকেই হত্যা করিবে অথবা সে কী করিবে? তুমি আমার পক্ষ হইতে এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস কর। তারপর আসিম নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল …..। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ ধরনের প্রশ্ন অপছন্দ করিলেন। তারপর উয়াইমির (রাদি.) তাঁকে প্রশ্ন করিলেন। তিনি বলিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ ধরনের প্রশ্ন না-পছন্দ করিয়াছেন ও দূষণীয় মনে করিয়াছেন। তখন উয়াইমির বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আমি এ বিষয়টি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত ক্ষান্ত হব না। তারপর তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য একটি পুরুষকে দেখিতে পেলে সে কি তাকে হত্যা করিবে? তখন তো আপনারা তাকে (কিসাস স্বরূপ) হত্যা করে ফেলবেন অথবা, সে কী করিবে? তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমার ও তোমার স্ত্রী সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) স্বামী-স্ত্রী দু-জনকে লিয়ান করার নির্দেশ দিলেন; যেভাবে আল্লাহ তাআলা তাহাঁর কিতাবে উল্লেখ করিয়াছেন। তারপর উয়াইমির তার স্ত্রীর সঙ্গে লিয়ান করিলেন। এরপরে বলিলেন, (এরপরও) যদি আমি তাকে রাখি, তবে তার প্রতি আমি যালিম হবো। তারপর তিনি তাকে ত্বলাক দিয়ে দিলেন। অতএব, তাদের পরবর্তী লোকদের জন্য, যারা পরস্পর লিয়ান করে এটি সুন্নাতে পরিণত হল। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, লক্ষ্য কর! যদি মহিলাটি একটি কালো ডাগর চক্ষু, বড় পাছা ও বড় পাওয়ালা বাচ্চা জন্ম দেয়, তবে আমি মনে করব, উয়াইমিরই তার সম্পর্কে সত্য বলেছে এবং যদি সে লাল গিরগিটির মত একটি লাল বর্ণের সন্তান প্রসব করে তবে আমি মনে করব, উয়াইমির তার সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে। এরপর সে এমন একটি সন্তান প্রসব করিল, যার গুণাবলী রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) উয়াইমির সত্যবাদী হওয়ার পক্ষে বলেছিলেন। তারপর সন্তানটিকে মায়ের দিকে সম্পর্কযুক্ত করে পরিচয় দেয়া হত। [৪২৩] (আ.প্র. ৪৩৮৪, ই.ফা. ৪৩৮৬)

৬৫/২৪/২.অধ্যায়ঃ এবং পঞ্চমবারে বলবে, সে মিথ্যাচারী হলে তার ওপর নেমে আসবে আল্লাহর লানাত। (সুরা নূর ২৪/৭)

৪৭৪৬

সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! আপনি আমাকে বলুন তো, এক লোক তার স্ত্রীর সঙ্গে এক লোককে দেখিতে পেল। সে কী তাকে হত্যা করিবে? যার ফলে আপনারা তাকে হত্যা করবেন অথবা সে আর কী করিতে পারে! তারপর আল্লাহ তাআলা এ দুজন সম্পর্কে আয়াত অবতীর্ণ করেন, যা কুরআনে পারস্পরিক লানত করা সম্পর্কে বর্ণিত। তখন তাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমার ও তোমার স্ত্রী সম্পর্কে ফয়সালা হয়ে গেছে। বর্ণনাকারী বলেন, তারা উভয়ে পরস্পর লিয়ান করিল। তখন আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তারপর সে তার স্ত্রীকে পৃথক করে দিল। এরপর নিয়ম হয়ে গেল যে,, লিয়ানকারী উভয়কে পৃথক করে দেয়া হইবে। মহিলাটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল, তার স্বামী তার গর্ভ অস্বীকার করিল। সুতরাং সন্তানটিকে তার মায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত করে ডাকা হত। তারপর উত্তরাধিকার স্বত্বে এ নিয়ম চালু হল যে, সন্তান মায়ের মিরাস পাবে। আর মাতাও সন্তানের মিরাস পাবে, যা আল্লাহ তাআলা তার ব্যাপারে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। [৪২৩] (আ.প্র. ৪৩৮৫, ই.ফা. ৪৩৮৭)

৬৫/২৪/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তবে স্ত্রীর শাস্তি রহিত হইবে যদি সে চারবার আল্লাহর নামে শপথ করে সাক্ষ্য দেয় যে, তার স্বামীই মিথ্যাচারী। (সুরা নূর ২৪/৮)

৪৭৪৭

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

হিলাল ইবনু উমাইয়াহ রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে শারীক ইবনু সাহমার সঙ্গে তার স্ত্রীর ব্যভিচারের অভিযোগ করিল। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, সাক্ষী (হাযির কর) নতুবা শাস্তি তোমার পিঠে পড়বে। হিলাল বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! যখন আমাদের কেউ তার স্ত্রীর উপর অন্য কাউকে দেখে তখন সে কি সাক্ষী তালাশ করিতে যাবে? তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিতে লাগলেন, সাক্ষী, নতুবা শাস্তি তোমার পিঠে। হিলাল বলিলেন, শপথ সে সত্তার, যিনি আপনাকে সত্য নাবী হিসাবে পাঠিয়েছেন, নিশ্চয়ই আমি সত্যবাদী। অবশ্যই আল্লাহ তাআলা এমন বিধান অবতীর্ণ করবেন, যা আমার পিঠকে শাস্তি থেকে মুক্ত করে দিবে। তারপর জিবরীল (আ.) এলেন এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করা হল ঃ “যারা নিজেদের স্ত্রীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে” থেকে নাবী (সাঃআঃ) পাঠ করিলেন, “যদি সে সত্যবাদী হয়ে থাকে” পর্যন্ত। তারপর নাবী (সাঃআঃ) ফিরলেন এবং তার স্ত্রীকে ডেকে আনার জন্য লোক পাঠালেন। হিলাল এসে সাক্ষ্য দিলেন। আর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলছিলেন, আল্লাহ তাআলা তো জানেন যে, তোমাদের দুজনের মধ্যে অবশ্যই একজন মিথ্যাচারী। তবে কি তোমাদের মধ্যে কেউ তওবা করিবে? স্ত্রীলোকটি দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিল। সে যখন পঞ্চমবারের কাছে পৌঁছল, তখন লোকেরা তাকে বাধা দিল এবং বলিল, নিশ্চয়ই এটি তোমার ওপর অবশ্যম্ভাবী। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, এ কথা শুনে সে দ্বিধাগ্রস্ত হল এবং ইতস্তত করিতে লাগল। এমনকি আমরা মনে করিতে লাগলাম যে, সে নিশ্চযই প্রত্যাবর্তন করিবে। পরে সে বলে উঠল, আমি চিরকালের জন্য আমার বংশকে কলুষিত করব না। সে তার সাক্ষ্য পূর্ণ করিল। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এর প্রতি দৃষ্টি রেখ, যদি সে কাল ডাগর চক্ষু, বড় পাছা ও মোটা নলা বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে তবে ও সন্তান শারীক ইবনু সাহমার। পরে সে ঐরূপ সন্তান জন্ম দিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, যদি এ বিষয়ে আল্লাহর কিতাব কার্যকর না হত, তা হলে অবশ্যই আমার ও তার মধ্যে কী ব্যাপার যে ঘটত। [২৬৭১] (আ.প্র. ৪৩৮৬, ই.ফা. ৪৩৮৮)

[১] খাওলা (রাদি.)।

[2] আনীত অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে শপথ করিলেন।

[3] পঞ্চমবার শপথ করিল।

৬৫/২৪/৪.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ এবং পঞ্চমবারে বলে, তার স্বামী সত্যবাদী হলে তার নিজের উপর নেমে আসবে আল্লাহর গযব। (সুরা নূর ২৪/৯)

أي : هذا باب في قوله تعالى : {والخَامِسَةَ} أي : الشهادة الخامسة، والكلام فيه قد مر في قوله : {وَالْخَامِسَةُ أَنَّ لَعْنَتَ اللهِ}

অর্থাৎ এই আয়াতের মধ্যে পঞ্চমবারের সাক্ষ্যকে বোঝানো হয়েছে। এর আলোচনা আল্লাহ তাআলার এই বাণীঃ وَالْخَامِسَةُ أَنَّ لَعْنَتَ الله আয়াতে অতিক্রান্ত হয়েছে।

৪৭৪৮

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর যুগে স্বীয় স্ত্রীর উপর (যিনার) অভিযোগ আনে এবং সে স্ত্রীর সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করে। রাসুল উভয়কে লিয়ান করিতে আদেশ দেন। আল্লাহ তাআলা যেভাবে বলেছেন, সেভাবে তারা লিয়ান করে। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ সিদ্ধান্ত দিলেন যে, বাচ্চাটি স্ত্রীর আর তিনি লিয়ানকারী দুজনকে আলাদা করে দিলেন। [৫৩০৬, ৫৩১৩, ৫৩১৪, ৫৩১৫, ৬৭৪৮] (আ.প্র. ৪৩৮৭, ই.ফা. ৪৩৮৯)

৬৫/২৪/৫.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

{ان الَّذِيْنَ جَآءُوْ بِالْإِفْكِ عُصْبَةٌ مِّنْكُمْ ط لَا تَحْسَبُوْهُ شَرًّا لَّكُمْ ط بَلْ هُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ط لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ مَّا اكْتَسَبَ مِنَ الْإِثْمِ ج وَالَّذِيْ تَوَلّٰى كِبْرَه” مِنْهُمْ لَه” عَذَابٌ عَظِيْمٌ}

যারা এ অপবাদ রচনা করেছে, তারা তো তোমাদেরই একটি দল; একে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করো না; বরং এ তো তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের প্রত্যেকের জন্য আছে তাদের কৃত পাপের ফল এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে বড় ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্য আছে কঠিন শাস্তি। (সুরা নূর ২৪/১১)

أَفَّاكٌ : كَذَّابٌ.

أَفَّاكٌ অতি মিথ্যাচারী।

৪৭৪৯

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, وَالَّذِي تَوَلَّى كِبْرَهُ “যে এ অপবাদের বড় ভূমিকা নিয়েছিল” এর ব্যাখ্যায় বলেন, সে হল আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল। [২৫৯৩] (আ.প্র. ৪৩৮৮, ই.ফা. ৪৩৯০)

৬৫/২৪/৬

পরিচ্ছেদ নাই।

{لَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوْهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنٰتُ بِأَنْفُسِهِمْ خَيْرًا} إِلَى قَوْلِهِ : {الْكَاذِبُوْنَ}.

যখন তারা এটা শুনল তখন মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীগণ আপন লোকদের সম্পর্কে কেন ভাল ধারণা করিল না এবং বলিল না, এটা তো সুস্পষ্ট অপবাদ। তারা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করেনি? যেহেতু তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, সে কারণে তারা আল্লাহর নিকট মিথ্যাচারী। (সুরা নূর ২৪/১২-১৩)

৪৭৫০

ইবনু শিহাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাকে উরওয়াহ ইবনু যুবায়র, সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব, আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস, উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উত্বাহ ইবনু মাসউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশাহ (রাদি.)-এর ঘটনা সম্পর্কে বলেন, যখন অপবাদকারীরা তাহাঁর প্রতি অপবাদ এনেছিল এবং আল্লাহ তাআলা তাঁকে তাদের অভিযোগ থেকে নির্দোষ হওয়ার বর্ণনা দেন। তাদের প্রত্যেকেই ঘটনার অংশ বিশেষ আমাকে জানান। অবশ্য তাদের পরস্পর পরস্পরের বর্ণনা সমর্থন করে, যদিও তাদের মধ্যে কেউ অন্যের তুলনায় এ ঘটনাটি অধিক সংরক্ষণ করেছে। তবে উরওয়াহ আয়েশাহ (রাদি.) থেকে আমাকে এরূপ বলেছিলেন যে, নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশাহ (রাদি.) বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন কোথাও সফরে বের হইতেন, তখন তিনি তাহাঁর স্ত্রীগণের মধ্যে লটারী দিতেন। এতে যার নাম উঠত, তাঁকে সঙ্গে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বের হইতেন। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, অতএব, কোন এক যুদ্ধে যাওয়ার সময় আমাদের মধ্যে লটারী দিলেন, তাতে আমার নাম উঠল। আমি রসূসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বের হলাম, পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরে। আমাকে হাওদায় করে উঠানো হতো এবং তাতে করে নামানো হতো। এভাবেই আমরা চললাম। যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যুদ্ধ শেষ করে ফিরলেন এবং ফেরার পথে আমরা মাদীনাহর নিকটবর্তী হলাম। একদা রওয়ানা দেয়ার জন্য রাত থাকতেই ঘোষণা দিলেন। এ ঘোষণা হলে আমি উটে চড়ে সৈন্যদের অবস্থান থেকে কিছু দূরে চলে গেলাম। আমার প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে যখন সওয়ারীর কাছে এলাম, তখন দেখিতে পেলাম যে, জাফারের দানা খচিত আমার হারটি ছিঁড়ে কোথাও পড়ে গেছে। আমি তা খোঁজ করিতে লাগলাম। খোঁজ করিতে আমার একটু দেরী হয়ে গেল। ইতোমধ্যে এ সকল লোক যারা আমাকে সওয়ার করাতো তারা, আমি আমার হাওদার ভেতরে আছি মনে করে, আমার হাওদা উটের পিঠে রেখে দিল। কেননা এ সময় শরীরের গোশত আমাকে ভারী করেনি। আমরা খুব অল্প-খাদ্য খেতাম। আমি ছিলাম অল্পবয়স্কা এক বালিকা। সুতরাং হাওদা উঠাবার সময় তা যে খুব হালকা, তা তারা টের পায়নি এবং তারা উট হাঁকিয়ে রওয়ানা দিল। সেনাদল চলে যাওয়ার পর আমি আমার হার পেয়ে গেলাম এবং যেখানে তারা ছিল সেখানে ফিরে এলাম। তখন সেখানে এমন কেউ ছিল না, যে ডাকবে বা ডাকে সাড়া দিবে। আমি যেখানে ছিলাম সে স্থানেই থেকে গেলাম। এ ধারণায় বসে থাকলাম যে, যখন কিছুদূর গিয়ে আমাকে দেখিতে পাবে না, তখন এ স্থানে অবশ্যই খুঁজতে আসবে। সেখানে বসা অবস্থায় আমার চোখে ঘুম এসে গেল, আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। আর সৈন্যবাহিনীর পিছনে সাফওয়ান ইবনু মুআত্তাল সুলামী যাওকয়ানী ছিলেন। তিনি শেষ রাতে রওয়ানা দিয়ে ভোর বেলা আমার এ স্থানে এসে পৌঁছলেন। তিনি একজন মানুষের আকৃতি নিদ্রিত দেখিতে পেলেন। তিনি আমার কাছে এসে আমাকে দেখে চিনতে পারলেন। কেননা, পর্দার হুকুম অবতীর্ণ হবার আগে আমাকে দেখেছিলেন। কাজেই আমাকে চেনার পর উচ্চকন্ঠে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” পড়লেন। পড়ার শব্দে আমি উঠে গেলাম এবং আমি আমার চাদর পেচিয়ে চেহারা ঢেকে নিলাম। আল্লাহর কসম, তিনি আমার সঙ্গে কোন কথাই বলেননি এবং তাহাঁর মুখ হইতে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” ব্যতীত আর কোন কথা আমি শুনিনি। এরপর তিনি তাহাঁর উষ্ট্রী বসালেন এবং সামনের দুই পা নিজ পায়ে দাবিয়ে রাখলেন। আর আমি তাতে উঠে গেলাম। তখন সাফওয়ান উষ্ট্রীর লাগাম ধরে চললেন। শেষ পর্যন্ত আমরা সৈন্যবাহিনীর নিকট এ সময় গিয়ে পৌঁছলাম, যখন তারা দুপুরের প্রচণ্ড উত্তাপের সময় অবতরণ করে। (এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে) যারা ধ্বংস হওয়ার তারা ধ্বংস হল।

আর যে ব্যক্তি এ অপবাদের নেতৃত্ব দেয়, সে ছিল (মুনাফিক সরদার) আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সুলূল। তারপর আমি মদিনায় এসে পৌঁছলাম এবং পৌঁছার পর আমি দীর্ঘ একমাস পর্যন্ত অসুস্থ ছিলাম। আর অপবাদকারীদের কথা নিয়ে লোকেরা রটনা করছিল। আমি এসব কিছুই বুঝতে পারিনি। তবে এতে আমাকে সন্দেহে ফেলেছিল যে, আমার অসুস্থ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যে রকম স্নেহ-ভালবাসা দেখাতেন, এবারে তেমনি ভালবাসা দেখাচ্ছেন না। শুধু এতটুকুই ছিল যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমার কাছে আসতেন এবং সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করিতেন, তোমার অবস্থা কী? তারপর তিনি ফিরে যেতেন। এই আচরণই আমাকে সন্দেহে ফেলেছিল; অথচ আমি এই অপপ্রচার সম্বন্ধে জানতেই পারিনি। অবশেষে একটু সুস্থ হওয়ার পর মিসতাহের মায়ের সঙ্গে মানাসের (শহরের বাইরে খোলা ময়দানের) দিকে বের হলাম। সে জায়গাটিই ছিল আমাদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার স্থান আর আমরা কেবল রাতের পর রাতেই বাইরে যেতাম। এ ছিল এ সময়ের কথা যখন আমাদের ঘরের পাশে পায়খানা নির্মিত হয়নি। আমাদের অবস্থা ছিল, অনেকটা প্রাচীন আরবদের ন্যায় নিচু ময়দানের দিকে বের হয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারা। কেননা, ঘর-সংলগ্ন পায়খানা নির্মাণ আমরা কষ্টকর মনে করতাম। কাজেই আমি ও মিসতাহের মা বাইরে গেলাম। তিনি ছিলেন আবু রুহ্ম ইবনু আব্দ মানাফের কন্যা এবং মিসতাহের মায়ের মা ছিলেন সাখর ইবনু আমিরের কন্যা, যিনি আবু বাকর সিদ্দীক (রাদি.)-এর খালা ছিলেন। আর তার পুত্র ছিলেন মিসতাহ ইবনু উসাসাহ। আমি ও উম্মু মিসতাহ আমাদের প্রয়োজন সেরে ঘরের দিকে ফিরলাম। তখন মিসতাহের মা তার চাদরে হোঁচট খেয়ে বলিলেন, মিসতাহ ধ্বংস হোক। আমি তাকে বললাম, তুমি খুব খারাপ কথা বলছ, তুমি কি এমন এক ব্যক্তিকে মন্দ বলছ, যে বদরের যুদ্ধে হাজির ছিল? তিনি বলিলেন, হায়রে বেখেয়াল! তুমি কি শোননি সে কী বলেছে? আমি বললাম, সে কী বলেছে? তিনি বলিলেন, এমন এমন। এ বলে তিনি অপবাদকারীদের মিথ্যা অপবাদ সম্পর্কে আমাকে বিস্তারিত খবর দিলেন। এতে আমার অসুখের মাত্রা বৃদ্ধি পেল। যখন আমি ঘরে ফিরে আসলাম এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমার ঘরে প্রবেশ করে বলিলেন, তুমি কেমন আছ? তখন আমি বললাম, আপনি কি আমাকে আমার আব্বা-আম্মার নিকট যেতে অনুমতি দিবেন? আয়েশাহ (রাদি.) বলিলেন, তখন আমার উদ্দেশ্য ছিল যে, আমি তাঁদের কাছে গিয়ে তাঁদের থেকে আমার এ ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জেনে নেই। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি আব্বা-আম্মার কাছে চলে গেলাম এবং আমার আম্মাকে বললাম, ও গো আম্মা! লোকেরা কী বলাবলি করছে? তিনি বলিলেন, বৎস! তুমি তোমার মন হালকা রাখ। আল্লাহর কসম! এমন কমই দেখা যায় যে, কোন পুরুষের কাছে এমন সুন্দরী রূপবতী স্ত্রী আছে, যাকে সে ভালবাসে এবং তার সতীনও আছে; অথচ তার ত্রুটি বের করা হয় না। রাবী বলেন, আমি বললাম, সুবহান আল্লাহ! সত্যি কি লোকেরা এ ব্যাপারে বলাবলি করছে? তিনি বলেন, আমি সে রাত কেঁদে কাটালাম, এমন কি ভোর হয়ে গেল, তথাপি আমার কান্না থামল না এবং আমি ঘুমাতেও পারলাম না। আমি কাঁদতে কাঁদতেই ভোর করলাম। যখন ওয়াহী আসতে দেরী হল, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আলী ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.) ও উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.)-কে তাহাঁর স্ত্রীর বিচ্ছেদের ব্যাপারে তাঁদের পরামর্শের জন্য ডাকলেন। তিনি বলেন, উসামাহ ইবনু যায়দ তাহাঁর সহধর্মিণী (আয়েশাহ (রাদি.)-এর পবিত্রতা এবং তাহাঁর অন্তরে তাঁদের প্রতি তাহাঁর ভালবাসা সম্পর্কে যা জানেন তার আলোকে তাঁকে পরামর্শ দিতে গিয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার পরিবার সম্পর্কে আমরা ভাল ধারণাই পোষণ করি। আর আলী ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ আপনার উপর কোন পথ সংকীর্ণ করে দেননি এবং তিনি ব্যতীত বহু মহিলা রয়েছেন। আর আপনি যদি দাসীকে জিজ্ঞেস করেন, সে আপনার কাছে সত্য ঘটনা বলবে।

তিনি [আয়েশাহ (রাদি.)] বলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বারীরাহ্কে ডাকলেন এবং বলিলেন, হে বারীরাহ! তুমি কি তার নিকট হইতে সন্দেহজনক কিছু দেখেছ? বারীরাহ বলিলেন, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করিয়াছেন, তাহাঁর কসম! আমি এমন কোন কিছু তাহাঁর মধ্যে দেখিতে পাইনি, যা আমি গোপন করিতে পারি। তবে তাহাঁর মধ্যে সবচাইতে অধিক যা দেখেছি, তা হল, তিনি একজন অল্পবয়স্কা বালিকা। তিনি কখনও তাহাঁর পরিবারের আটার খামির রেখে ঘুমিয়ে পড়তেন। অর ছাগলের বাচ্চা এসে তা খেয়ে ফেলত। এরপরে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) (মিম্বরে) দাঁড়ালেন। আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সলুলের বিরুদ্ধে তিনি সমর্থন চাইলেন। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মিম্বরের উপর থেকে বলিলেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, ঐ ব্যক্তির মিথ্যা অপবাদ থেকে আমাকে সাহায্য করিতে পারে, যে আমার স্ত্রীর ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দিয়েছে। আল্লাহর কসম! আমি আমার স্ত্রী সম্পর্কে ভালই জানতে পেরেছি এবং তারা এমন এক পুরুষ সম্পর্কে অভিযোগ এনেছে, যার সম্পর্কে আমি ভাল ব্যতীত কিছুই জানি না। সে কখনও আমাকে ব্যতীত আমার ঘরে আসেনি। এ কথা শুনে সাদ ইবনু মুআয আনসারী (রাদি.) দাঁড়িয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তার বিরুদ্ধে আমি আপনাকে সাহায্য করব, যদি সে আউস গোত্রের হয়, তবে আমি তার গর্দান মেরে দিব। আর যদি আমাদের ভাই খাযরাজ গোত্রের লোক হয়, তবে আপনি নির্দেশ দিলে আমি আপনার নির্দেশ কার্যকর করব। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, এরপর সাদ ইবনু উবাদা দাঁড়ালেন; তিনি খাযরাজ গোত্রের সর্দার। তিনি পূর্বে একজন নেক্কার লোক ছিলেন। কিন্তু এ সময় স্ব-গোত্রের পক্ষপাতিত্ব তাকে উত্তেজিত করে তোলে। কাজেই তিনি সাদকে বলিলেন, চিরঞ্জীব আল্লাহর কসম! তুমি মিথ্যা বলেছ, তুমি তাকে হত্যা করিতে পারবে না এবং তাকে হত্যা করার ক্ষমতা তুমি রাখ না। তারপর উসায়দ ইবনু হুদায়র দাঁড়ালেন, যিনি সাদের চাচাতো ভাই। তিনি সাদ ইবনু উবাদাকে বলিলেন, চিরঞ্জীব আল্লাহর কসম! তুমি মিথ্যা বলছ। আমরা অবশ্যই তাকে হত্যা করব। তুমি নিজেও মুনাফিক এবং মুনাফিকের পক্ষে প্রতিবাদ করছ। এতে আউস এবং খাযরাজ উভয় গোত্রের লোকেরা উত্তেজিত হয়ে উঠল, এমনকি তারা পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার উপক্রম হল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মিম্বরে দাঁড়ানো ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের থামাতে লাগলেন। অবশেষে তারা থামল। নাবী (সাঃআঃ) ও নীরব হলেন। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, আমি সেদিন এমনভাবে কাটালাম যে, আমার চোখের অশ্র“ও থামেনি এবং চোখেও ঘুমও আসেনি। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, সকালবেলা আমার আব্বা-আম্মা আমার কাছে আসলেন, আর আমি দুরাত এবং একদিন (একাধারে) কাঁদছিলাম। এর মধ্যে না আমার ঘুম হয় এবং না আমার চোখের পানি বন্ধ হয়। তাঁরা ধারণা করছিলেন যে, এ ক্রন্দনে আমার কলজে ফেটে যাবে।

আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, এর পূর্বে তারা যখন আমার কাছে বসা ছিলেন এবং আমি কাঁদছিলাম, ইত্যবসরে জনৈকা আনসারী মহিলা আমার কাছে আসার জন্য অনুমতি চাইলেন। আমি তাকে অনুমতি দিলাম। সে বসে আমার সঙ্গে কাঁদতে লাগল। আমাদের এ অবস্থার মধ্যেই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের কাছে প্রবেশ করিলেন এবং সালাম দিয়ে বসলেন। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন এর পূর্বে যখন থেকে এ কথা রটনা চলেছে, তিনি আমার কাছে বসেননি। এ অবস্থায় তিনি একমাস অপেক্ষা করিয়াছেন, আমার সম্পর্কে ওয়াহী আসেনি। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাশাহুদ পাঠ করিলেন। তারপর বলিলেন, হে আয়েশাহ! তোমার সম্পর্কে এরূপ এরূপ কথা আমার কাছে পৌঁছেছে, তুমি যদি নির্দোষ হয়ে থাক, তবে অচিরেই আল্লাহ তাআলা তোমার পবিত্রতা ব্যক্ত করে দিবেন। আর যদি তুমি কোন পাপে লিপ্ত হয়ে থাক, তবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও এবং তাহাঁর কাছে তাওবাহ কর। কেননা, বান্দা যখন তার পাপ স্বীকার করে নেয় এবং আল্লাহর কাছে তাওবাহ করে, তখন আল্লাহ তার তাওবাহ কবূল করেন। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর কথা শেষ করিলেন, তখন আমার চোখের পানি এমনভাবে শুকিয়ে গেল যে, এক ফোঁটা পানিও অনুভব করছিলাম না। আমি আমার পিতাকে বললাম, আপনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে (তিনি যা কিছু বলেছেন তার) জবাব দিন। তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে কী জবাব দিব, তা আমার বুঝে আসছে না। তারপর আমার আম্মাকে বললাম, আপনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে জবাব দিন।

তিনি [আয়েশাহ (রাদি.)-এর আম্মা) বলিলেন ঃ আমি বুঝতে পারছি না, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে কি জবাব দিব। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, তখন আমি নিজেই জবাব দিলাম, অথচ আমি একজন অল্প বয়স্কা বালিকা, কুরআন খুব অধিক পড়িনি। আল্লাহর কসম! আমি জানি, আপনারা এ ঘটনা শুনেছেন, এমনকি তা আপনাদের অন্তরে বসে গেছে এবং সত্য বলে বিশ্বাস করে নিয়েছেন। এখন যদি আমি বলি যে, আমি নির্দোষ এবং আল্লাহ ভালভাবেই জানেন যে, আমি নির্দোষ; তবে আপনারা তা বিশ্বাস করবেন না। আর আমি যদি আপনাদের কাছে এ বিষয় স্বীকার করে নেই, অথচ আল্লাহ জানেন, আমি তা থেকে নির্দোষ; তবে আপনারা আমার এই উক্তি বিশ্বাস করে নিবেন। আল্লাহর কসম! এ ক্ষেত্রে আমি আপনাদের জন্য ইউসুফ (আ.)-এর পিতার উক্তি ব্যতীত আর কোন দৃষ্টান্ত পাচ্ছি না। তিনি বলেছিলেন, فَصَبْرٌ جَمِيلٌ وَاللهُ الْمُسْتَعَانُ عَلَى مَا تَصِفُونَ “পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাওয়া যায়। তিনি বলেন, এরপর আমি আমার চেহারা ঘুরিয়ে নিলাম এবং কাত হয়ে আমার বিছানায় শুয়ে পড়লাম। তিনি বলেন, এ সময় আমার বিশ্বাস ছিল যে আমি নির্দোষ এবং আল্লাহ তাআলা আমার নির্দোষিতা প্রকাশ করে দিবেন। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি তখন এ ধারণা করিতে পারিনি যে, আল্লাহ আমার সম্পর্কে এমন ওয়াহী অবতীর্ণ করবেন যা তিলাওয়াত করা হইবে। আমার দৃষ্টিতে আমার মর্যাদা এর চাইতে অনেক নিচে ছিল। বরং আমি আশা করেছিলাম যে, হয়ত রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) নিদ্রায় কোন স্বপ্ন দেখবেন, যাতে আল্লাহ তাআলা আমার নির্দোষিতা জানিয়ে দেবেন। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম! রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দাঁড়াননি এবং ঘরের কেউ বের হননি। এমন সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ হইতে লাগল এবং তাহাঁর শরীর ঘামতে লাগল। এমনকি যদিও শীতের দিন ছিল, তবুও তাহাঁর উপর যে ওয়াহী অবতীর্ণ হচ্ছিল এর বোঝার ফলে মুক্তার মত তাহাঁর ঘাম ঝরছিল। যখন ওয়াহী শেষ হল, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হাসছিলেন। তখন তিনি প্রথম যে বাক্যটি বলেছিলেন, তা হলে ঃ হে আয়েশাহ! আল্লাহ তোমার নির্দেষিতা প্রকাশ করিয়াছেন। এ সময় আমার মা আমাকে বলিলেন, তুমি উঠে তাহাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তাহাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব না, আল্লাহ ব্যতীত আর কারো প্রশংসা করব না। আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করিলেন পূর্ণ দশ আয়াত পর্যন্ত। إِنَّ الَّذِينَ جَاءُوا بِالإِفْكِ عُصْبَةٌ যারা এ অপবাদ রচনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। যখন আল্লাহ তাআলা আমার নির্দোষিতার আয়াত অবতীর্ণ করিলেন, তখন আবু বকর সিদ্দীক (রাদি.) যিনি মিস্তাহ ইবনু উসাসাকে নিকটবর্তী আত্মীয়তা এবং দারিদ্র্যের কারণে আর্থিক সাহায্য করিতেন, তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম! মিস্তাহ আয়েশাহ সম্পর্কে যা বলেছে, এরপর আমি তাকে কখনই কিছুই দান করব না। তারপর আল্লাহ তাআলা আয়াত অবতীর্ণ করিলেন, “তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তার আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা গৃহত্যাগ করেছে তাদের কিছুই দেবে না। তারা যেন তাদের ক্ষমা করে এবং তাদের দোষত্র“টি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করেন? এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আবু বকর (রাদি.) এ সময় বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই পছন্দ করি যে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করেন। তারপর তিনি মিস্তাহ্কে সাহায্য আগের মত দিতে লাগলেন এবং বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি এ সাহায্য কখনও বন্ধ করব না। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) জয়নব বিন্ত জাহশকেও আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হে জয়নব! (আয়েশাহ সম্পর্কে) কী জান আর কী দেখেছ? তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার কান ও চোখকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। আমি তাহাঁর সম্পর্কে ভাল ব্যতীত অন্য কিছু জানি না। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণীদের মধ্যে তিনি আমার প্রতিদ্বন্দি¡তা করিতেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁকে পরহেযগারীর কারণে রক্ষা করেন। আর তাহাঁর বোন হাম্না তাহাঁর পক্ষ অবলম্বন করে দ্বন্দ্ব করে এবং অপবাদ দানকারী যারা ধ্বংস হয়েছিল তাদের মধ্যে সেও ধ্বংস হল। [২৫৯৩] (আ.প্র. ৪৩৮৯, ই.ফা. ৪৩৯১)

৬৫/২৪/৭.অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ

{وَلَوْلَا فَضْلُ اللهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُه” فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ لَمَسَّكُمْ فِيْ مَآ أَفَضْتُمْ فِيْهِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ}

তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে, তোমরা যাতে লিপ্ত ছিলে তার কারণে কঠিন শাস্তি তোমাদেরকে স্পর্শ করত। (সুরা নূর ২৪/১৪)

وَقَالَ مُجَاهِدٌ {تَلَقَّوْنَه”} يَرْوِيْهِ بَعْضُكُمْ عَنْ بَعْضٍ {تُفِيْضُوْنَ} تَقُوْلُوْنَ

মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, تَلَقَّوْنَه এর অর্থ, একে অপরের থেকে বর্ণনা করিতে লাগল। تُفِيْضُوْنَ তোমরা বলাবলি করিতে লাগলে।

৪৭৫১

আয়েশাহ (রাদি.)-এর মা উম্মু রূমান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন আয়েশাহ (রাদি.)-এর উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া হল তখন তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। [৩৩৮৮] (আ.প্র. ৪৩৯০, ই.ফা. ৪৩৯২)

৬৫/২৪/৮.অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নাই।

{إِذْ تَلَقَّوْنَه” بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُوْلُوْنَ بِأَفْوَاهِكُمْ مَّا لَيْسَ لَكُمْ بِهٰ عِلْمٌ وَّتَحْسَبُوْنَه” هَيِّنًا – وَّهُوَ عِنْدَ اللهِ عَظِيْمٌ}.

যখন তোমরা মুখে মুখে এ ঘটনা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করছিলে যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না এবং তোমরা একে তুচ্ছ মনে করেছিলে, যদিও আল্লাহর নিকট এটা ছিল মারাত্মক বিষয়। (সুরা নূর ২৪/১৫)

৪৭৫২

ইবনু আবু মুলাইকাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়েশাহ (রাদি.) إِذْ تَلِقُونَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ পড়েছেন। অর্থাৎ (تَلِقُونَهُ এর ل এর মধ্যে কাসরা বা যের এবং ق এর উপর যুম্মা বা পেশ দিয়ে পড়েছেন) । [৪১৪৪] (আ.প্র. ৪৩৯১, ই.ফা. ৪৩৯৩)

৬৫/২৪/৯.অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নাই।

৪৭৫৩

ইবনু আবু মুলাইকাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.) আয়েশাহ (রাদি.)-এর ওফাতের পূর্বে তাহাঁর কাছে যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইলেন। এ সময় তিনি [আয়েশাহ (রাদি.)] মৃত্যুশয্যায় শায়িত ছিলেন। তিনি বলিলেন, আমি ভয় করছি, তিনি আমার কাছে এসে আমার সুখ্যাতি করবেন। তখন তাহাঁর [আয়েশাহ (রাদি.)]-এর কাছে বলা হল, তিনি হলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর চাচাতো ভাই এবং সম্মানিত মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলিলেন, তবে তাঁকে অনুমতি দাও। তিনি (এসে) জিজ্ঞেস করিলেন, আপনার কাছে আপনার অবস্থা কেমন লাগছে? তিনি বলিলেন, আমি যদি নেক হই তবে ভালই আছি। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ চাহেত আপনি নেকই আছেন। আপনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী এবং তিনি আপনাকে ব্যতীত আর কোন কুমারীকে বিবাহ করেননি এবং আপনার নির্দোষিতা আসমান থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। এরপর তাহাঁর পেছনে ইবনু যুবায়র (রাদি.) প্রবেশ করিলেন। তখন আয়েশাহ (রাদি.) বলিলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.) আমার কাছে এসেছিলেন এবং আমার সুখ্যাতি করিয়াছেন। কিন্তু আমি এ-ই পছন্দ করি যে, আমি যেন লোকের স্মৃতির পাতা থেকে পুরোপুরি মুছে যায়। [৩৭৭১] (আ.প্র. ৪৩৯২, ই.ফা. ৪৩৯৪)

৪৭৫৪

কাসিম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনু আব্বাস (রাদি.) আয়েশাহ (রাদি.)-এর নিকট যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইলেন। পরবর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনুরূপ। এতে نِسْيًا مَنْسِيًّا (স্মৃতি থেকে বিস্মৃত হয়ে যেতাম) অংশটি নেই। [৩৭৭১] (আ.প্র. ৪৩৯৩, ই.ফা. ৪৩৯৫)

৬৫/২৪/১০.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন (তোমরা যদি মুমিন হও তবে) কখনও অনুরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি করো না। (সুরা নূর ২৪/১৭)

৪৭৫৫

মাসরূক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হাসান ইবনু সাবিত এসে (তাহাঁর ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চাইলেন। আমি বললাম, এ লোককে কি আপনি অনুমতি প্রদান করবেন? তিনি (আয়েশাহ) (রাদি.) বলিলেন, তার উপর কি কঠোর শাস্তি নেমে আসেনি? সুফ্ইয়ান (রাদি.) বলেন, এর দ্বারা আয়েশাহ (রাদি.) তাহাঁর দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়ার কথা বুঝিয়েছেন। হাসান ইবনু সাবিত আয়েশাহ (রাদি.)-এর প্রশংসা করে নিুের ছন্দ দুটি পাঠ করিলেন,

একজন পবিত্র মহিলা যার চরিত্রে কোন সন্দেহ করা হয় না।

তিনি সতীসাধ্বী মহিলাদের গোশ্ত ভক্ষণ থেকে মুক্ত অবস্থায় ভোরে ওঠে। [৪১৪৬] (আ.প্র. ৪৩৯৪, ই.ফা. ৪৩৯৬)

৬৫/২৪/১১.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সুরা নূর ২৪/১৮)

৪৭৫৬

মাসরূক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হাস্সান ইবনু সাবিত আয়েশাহ (রাদি.) কাছে এসে নিচের শ্লোকটি আবৃত্তি করিলেন। তিনি একজন পবিত্র মহিলা যার চরিত্রে কোন সন্দেহ করা হয় না। তিনি সতীসাধ্বী মহিলাদের গোশ্ত ভক্ষণ থেকে মুক্ত অবস্থায় ভোরে ওঠে। আয়েশাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, তুমি তো এরূপ নও। (মাসরূক বলিলেন) আমি বললাম, আপনি এমন এক ব্যক্তিকে কেন আপনার কাছে আসতে দিলেন, যার সম্পর্কে আল্লাহ অবতীর্ণ করিয়াছেন। আর যে ব্যক্তি এর বড় অংশ নিজের উপর নিয়েছে, তার জন্য তো রয়েছে কঠিন শাস্তি। আয়েশাহ (রাদি.) বলিলেন, দৃষ্টিহীনতার চেয়ে কঠিন শাস্তি আর কী হইতে পারে? তিনি আরও বলিলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর পক্ষ হইতে জবাব দিতেন। [৪১৪৬] (আ.প্র. ৪৩৯৫, ই.ফা. ৪৩৯৭)

৬৫/২৪/১২.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

{إِنَّ الَّذِيْنَ يُحِبُّوْنَ أَنْ تَشِيْعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ لا فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ – وَاللهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ ) وَلَوْلَا فَضْلُ اللهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُه” وَأَنَّ اللهَ رَؤُوْفٌ رَّحِيْمٌ} تَشِيْعُ تَظْهَرُ وَقَوْلُهُ {وَلَا يَأْتَلِ أُولُوا الْفَضْلِ مِنْكُمْ وَالسَّعَةِ أَنْ يُّؤْتُوْآ أُولِي الْقُرْبٰى وَالْمَسٰكِيْنَ وَالْمُهٰجِرِيْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ – وَلْيَعْفُوْا وَلْيَصْفَحُوْا ط أَلَا تُحِبُّوْنَ أَنْ يَّغْفِرَ اللهُ لَكُمْ ط وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ}

যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন তোমরা জান না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউ অব্যাহতি পেত না। আর আল্লাহ দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর পথে যারা গৃহ ত্যাগ করেছে, তাদের কিছুই দেবে না। তারা যেন তাদের ক্ষমা করে এবং তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করেন? আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা নূর ২৪/২২)

৪৭৫৭

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন আমার সম্পর্কে আলোচনা চলছিল যা রটনা হয়েছে এবং আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। তখন আমার ব্যাপারে ভাষণ দিতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দাঁড়ালেন। তিনি প্রথমে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করিলেন। তারপর আল্লাহর প্রতি যথাযোগ্য হাম্দ ও সানা পাঠ করিলেন। এরপরে বলিলেন, হে মুসলিমগণ! যে সকল লোক আমার স্ত্রী সম্পর্কে অপবাদ দিয়েছে, তাদের ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ দাও। আল্লাহর কসম! আমি আমার পরিবারের ব্যাপারে মন্দ কিছুই জানি না। তাঁরা এমন এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছে, আল্লাহর কসম, তার ব্যাপারেও আমি কখনও খারাপ কিছু জানি না এবং সে কখনও আমার অনুপস্থিতিতে আমার ঘরে প্রবেশ করে না এবং আমি যখন কোন সফরে গিয়েছি সেও আমার সঙ্গে সফরে গিয়েছে। সাদ ইবনু উবাদা দাঁড়িয়ে বলিলেন, আমাকে তাদের শিরোচ্ছেদ করার অনুমতি দিন। এর মধ্যে বানী খাযরাজ গোত্রের এক ব্যক্তি, যে হাস্সান ইবনু সাবিতের মাতার আত্মীয় ছিল, সে দাঁড়িয়ে বলিল, তুমি মিথ্যা বলেছ, জেনে রাখ, আল্লাহর কসম! যদি সে (অপবাদকারী) ব্যক্তিরা আউস্ গোত্রের হত, তাহলে তুমি শিরোচ্ছেদ করিতে পছন্দ করিতে না। আউস ও খাযরাজের মধ্যে মসজিদেই একটা দুর্ঘটনা ঘটার অবস্থা দেখা দিল। আর আমি এ বিষয় কিছুই জানি না। সেদিন সন্ধ্যায় যখন আমি আমার প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে গেলাম, তখন উম্মু মিসতাহ আমার সঙ্গে ছিলেন এবং তিনি হোঁচট খেয়ে বলিলেন, মিস্তাহ ধ্বংস হোক! আমি বললাম, হে উম্মু মিসতাহ! তুমি তোমার সন্তানকে গালি দিচ্ছ? তিনি নীরব থাকলেন। তারপর দ্বিতীয় হোঁচট খেয়ে বলিলেন, মিসতাহ ধ্বংস হোক। আমি তাকে বললাম, তুমি তোমার সন্তানকে গালি দিচ্ছ? তিনি (উম্মু মিসতাহ) তৃতীয়বার পড়ে গিয়ে বলিলেন, মিসতাহ ধ্বংস হোক। আমি এবারে তাঁকে ধমক দিলাম। তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি তাকে তোমার কারণেই গালি দিচ্ছি। আমি বললাম আমার ব্যাপারে? আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, তখন তিনি আমার কাছে সব ঘটনা বিস্তারিত বলিলেন। আমি বললাম, তাই হচ্ছে নাকি? তিনি বলিলেন, হাঁ আল্লাহর কসম! এরপর আমি আমার ঘরে ফিরে এলাম এবং যে প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলাম তা একেবারেই ভুলে গেলাম। এরপর আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লাম এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বললাম যে, আমাকে আমার পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দিন। তিনি একটি ছেলেকে আমার সঙ্গে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। আমি যখন ঘরে প্রবেশ করলাম, তখন উম্মু রূমানকে নিচে দেখিতে পেলাম এবং আবু বাকর (রাদি.) ঘরের ওপরে পড়ছিলেন। আমার আম্মা জিজ্ঞেস করিলেন, হে বৎস! কিসে তোমাকে নিয়ে এসেছে? আমি তাকে সংবাদ দিলাম এবং তাহাঁর কাছে ঘটনা বললাম। এ ঘটনা তার ওপর তেমন প্রভাব বিস্তার করেনি, যেমন আমার ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। তিনি বলিলেন, হে বৎস! এটাকে তুমি হাল্কাভাবে গ্রহণ কর, কেননা, এমন সুন্দরী নারী কমই আছে, যার স্বামী তাঁকে ভালবাসে আর তার সতীনরা তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয় না এবং তার বিরুদ্ধে কিছু বলে না। বস্তুত তার ওপর ঘটনাটি অতখানি প্রভাব বিস্তার করেনি যতখানি আমার উপর করেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমার আব্বা [আবু বাকর (রাদি.)] কি এ ঘটনা জেনেছেন? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও কি? তিনি জবাব দিলেন হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)ও এ ঘটনা জানেন। তখন আমি অশ্র“ ঝরিয়ে কাঁদতে লাগলাম। আবু বকর (রাদি.) আমার কান্না শুনতে পেলেন। তখন তিনি ঘরের ওপরে পড়ছিলেন। তিনি নিচে নেমে আসলেন এবং আমার আম্মাকে জিজ্ঞেস করিলেন, তার কী হয়েছে? তিনি বলিলেন, তার সম্পর্কে যা রটেছে তা তার গোচরীভূত হয়েছে। এতে আবু বাকরের চোখের পানি ঝরতে লাগল। তিনি বলিলেন, হে বৎস! আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি, তুমি তোমার ঘরে ফিরে যাও। আমি আমার ঘরে ফিরে এলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমার ঘরে আসলেন। তিনি আমার খাদিমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। সে বলিল, আল্লাহর কসম, আমি এ ব্যতীত তাহাঁর কোন দোষ জানি না যে, তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন এবং ছাগল এসে তাহাঁর খামির অথবা বলিলেন, গোলা আটা খেয়ে যেত। তখন কয়েকজন সহাবী তাকে ধমক দিয়ে বলিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে সত্য কথা বল। এমনকি তাঁরা তার নিকট ঘটনা খুলে বলিলেন। তখন সে বলিল, সুবহান আল্লাহ, আল্লাহর কসম! আমি তাহাঁর ব্যাপারে এর চেয়ে অধিক কিছু জানি না, যা একজন স্বর্ণকার তার এক টুকরা লাল খাঁটি স্বর্ণ সম্পর্কে জানে। এ ঘটনা সে ব্যক্তির কাছেও পৌঁছল যার সম্পর্কে এ অভিযোগ উঠেছে। তখন তিনি বলিলেন, সুবহান আল্লাহ! আল্লাহর কসম, আমি কখনও কোন মহিলার পর্দা খুলিনি। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, পরবর্তী সময়ে এ (অভিযুক্ত) লোকটি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ রূপে নিহত হন। তিনি বলেন, ভোর বেলায় আমার আব্বা ও আম্মা আমার কাছে এলেন। তাঁরা এতক্ষণ থাকলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আসরের সলাত আদায় করে আমার কাছে এলেন। এ সময় আমার ডানে ও বামে আমার আব্বা আমাকে ঘিরে বসা ছিলেন। তিনি [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)] আল্লাহ তাআলার হাম্দ ও সানা পাঠ করে বলিলেন, হে আয়েশাহ! তুমি যদি কোন গুনাহ্র কাজ বা অন্যায় করে থাক তবে আল্লাহর কাছে তাওবা কর, কেননা, আল্লাহ তাহাঁর বান্দার তাওবা কবূল করে থাকেন। তখন জনৈকা আনসারী মহিলা দরজার কাছে বসা ছিল। আমি বললাম, আপনি কি এ মহিলাকেও লজ্জা করছেন না, এসব কিছু বলিতে? তবুও রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে নাসীহাত করিলেন। তখন আমি আমার আব্বার দিকে লক্ষ্য করে বললাম, আপনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর জবাব দিন। তিনি বলিলেন, আমি কী বলব? এরপরে আমি আম্মার দিকে লক্ষ্য করে বললাম, আপনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর জবাব দিন। তিনিও বলিলেন, আমি কী বলব? যখন তাঁরা কেউই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে কোন জবাব দিলেন না, তখন আমি কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে আল্লাহর যথোপযুক্ত হাম্দ ও সানা পাঠ করলাম। এরপর বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যদি বলি যে, আমি এ কাজ করিনি এবং আমি যে সত্যবাদী এ সম্পর্কে আল্লাহই সাক্ষী, তবে তা আপনাদের নিকট আমার কোন উপকারে আসবে না। কেননা, এ ব্যাপারটি আপনারা পরস্পরে বলাবলি করিয়াছেন এবং তা আপনাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গেছে। আর আমি যদি আপনাদের বলি, আমি তা করেছি অথচ আল্লাহ জানেন যে আমি এ কাজ করিনি, তবে আপনারা অবশ্যই বলবেন যে, সে তার নিজের দোষ নিজেই স্বীকার করেছে। আল্লাহর কসম! আমি আমার এবং আপনাদের জন্য আর কোন দৃষ্টান্ত পাচ্ছি না। তখন আমি ইয়াকূব (আ.)-এর নাম স্মরণ করার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারিনি-তাই বললাম, যখন ইউসুফ (আ.)-এর পিতার অবস্থা ব্যতীত, যখন তিনি বলেছিলেন, (তোমরা ইউসুফ সম্পর্কে যা বলছ তার প্রেক্ষিতে) পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্যকারী। ঠিক এ সময়ই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট ওয়াহী অবতীর্ণ হল। আমরা সবাই নীরব রইলাম। ওয়াহী শেষ হলে আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর চেহারায় খুশীর নমুনা দেখিতে পেলাম। তিনি তাহাঁর কপাল থেকে ঘাম মুছতে মুছতে বলছিলেন, হে আয়েশাহ! তোমার জন্য খোশখবর! আল্লাহ তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করিয়াছেন। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, এ সময় আমি অত্যন্ত রাগান্বিত ছিলাম। আমার আব্বা ও আম্মা বলিলেন, তুমি উঠে তাহাঁর কাছে যাও, (এবং তার শুকরিয়া আদায় কর)। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তাহাঁর দিকে যাব না এবং তাহাঁর শুক্রিয়া আদায় করব না। আর আপনাদেরও শুকরিয়া আদায় করব না। কিন্তু আমি একমাত্র আল্লাহর প্রশংসা করব, যিনি আমার পবিত্রতা ঘোষণা করিয়াছেন। আপনারা (অপবাদ রটনা) শুনছেন কিন্তু তা অস্বীকার করেননি এবং তার পাল্টা ব্যবস্থাও গ্রহণ করেননি। আয়েশাহ (রাদি.) আরও বলেন, জয়নাব বিন্তে জাহাশকে আল্লাহ তাহাঁর দীনদারীর কারণে তাঁকে রক্ষা করিয়াছেন। তিনি (আমার ব্যাপারে) ভাল ব্যতীত কিছুই বলেননি। কিন্তু তার বোন হামনা ধ্বংসপ্রাপ্তদের সঙ্গে নিজেও ধ্বংস হল। যারা এই ব্যাপারে কটুক্তি করত তাদের মধ্যে ছিল মিস্তাহ, হাস্সান ইবনু সাবিত এবং মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনু উবাই। সে-ই এ সংবাদ সংগ্রহ করে ছড়াত। আর পুরুষদের মধ্যে সে এবং হামনাই এ ব্যাপারে বিরাট ভূমিকা পালন করত। রাবী বলেন, তখন আবু বাকর (রাদি.) কখনও মিসতাহ্কে কোন প্রকার উপকার করবেন না বলে কসম খেলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা আয়াত অবতীর্ণ করিলেন, “তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী অর্থাৎ (আবু বাকর) তারা যেন কসম না করে যে তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে অর্থাৎ মিসতাহ্কে কিছুই দেবে না। তোমরা কি চাও না আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” আবু বাকর (রাদি.) বলিলেন, হাঁ আল্লাহর কসম! হে আমাদের রব! আমরা অবশ্যই এ চাই যে, আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। তারপর আবু বাকর (রাদি.) আবার মিস্তাহকে আগের মত আচরণ করিতে লাগলেন। [২৫৯৩]

৬৫/২৪/১৩.অধ্যায়ঃ  আল্লাহ তাআলার বাণীঃ এবং তারা যেন নিজেদের বক্ষদেশের ওপর ওড়নার আবরণ ফেলে রাখে। (সুরা নূর ২৪/৩১)

৪৭৫৮

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহ তাআলা প্রাথমিক যুগের মুহাজির মহিলাদের উপর রহম করুন, যখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত “তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে” অবতীর্ণ করিলেন, তখন তারা নিজ চাদর ছিঁড়ে তা দিয়ে মুখমণ্ডল ঢাকল। [৪৭৫৯] (আ.প্র. অনুচ্ছেদ, ই.ফা. অনুচ্ছেদ)

৪৭৫৯

সফীয়্যাহ বিন্তে শাইবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আয়েশাহ (রাদি.) বলিতেন, যখন এ আয়াত “তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে” অবতীর্ণ হল তখন মুহাজির মহিলারা তাদের তহবন্দের পার্শ্ব ছিঁড়ে তা দিয়ে মুখমণ্ডল ঢাকতে লাগল। [৪৭৫৮] (আ.প্র. ৪৩৯৬, ই.ফা. ৪৩৯৮)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply