সুরা হাজ্জ তাফসীর
সুরা হাজ্জ তাফসীর >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> সুরা হাজ্জ্ব আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
সুরা হাজ্জ তাফসীর
৬৫/২২/১.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আর মানুষকে দেখবে নেশাগ্রস্ত সদৃশ। (সুরা হাজ্জ ২২/২)
৬৫/২২/২.অধ্যায়ঃ আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বনেদ্বর সঙ্গে আল্লাহর ইবাদাত করে। যদি তার কোন পার্থিব স্বার্থ লাভ হয় তবে সে তাতে প্রশান্তি লাভ করে; কিন্তু যদি তার উপর কোন বিপর্যয় ঘটে তবে সে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। এতে সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়টাই হারিয়ে বসে। এটাই প্রকাশ্য ক্ষতি। সে আল্লাহ্কে ছেড়ে এমন সব কিছুর উপাসনা করে, যা তার কোন ক্ষতিও করিতে পারে না এবং উপকারও করিতে পারে না। এটাই চরম গোমরাহী। (সুরা হাজ্জ ২২/১১-১২)
৬৫/২২/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ এরা দুটি কলহরত পক্ষ, তারা তাদের প্রতিপালকের ব্যাপারে বিতর্ক করছে। (সুরা হাজ্জ ২২/১৯)
৬৫/২২/১.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আর মানুষকে দেখবে নেশাগ্রস্ত সদৃশ। (সুরা হাজ্জ ২২/২)
সুরা (২২) : হাজ্জ
وَقَالَ ابْنُ عُيَيْنَةَ {الْمُخْبِتِيْنَ} الْمُطْمَئِنِّيْنَ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فِيْ {إِذَا تَمَنّٰىٓ أَلْقَى الشَّيْطَانُ فِيْٓ أُمْنِيَّتِهٰ} إِذَا حَدَّثَ أَلْقَى الشَّيْطَانُ فِيْ حَدِيْثِهِ فَيُبْطِلُ اللهُ مَا يُلْقِي الشَّيْطَانُ وَيُحْكِمُ آيَاتِهِ وَيُقَالُ أُمْنِيَّتُهُ قِرَاءَتُهُ {إِلَّاأَمَانِيَّ} يَقْرَءُوْنَ وَلَا يَكْتُبُوْنَ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {مَشِيْدٌ} بِالْقَصَّةِ جِصٌّ وَقَالَ غَيْرُهُ {يَسْطُوْنَ} يَفْرُطُوْنَ مِنْ السَّطْوَةِ وَيُقَالُ يَسْطُوْنَ يَبْطِشُوْنَ وَهُدُوْا إِلَى الطَّيِّبِ أُلْهِمُوْا وَقَالَ ابْنُ أَبِيْ خَالِدٍ إِلَى الْقُرْآنِ {وَهُدُوْا إِلَى صِرَاطِ الْحَمِيْدِ} الإِسْلَامِ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {بِسَبَبٍ} بِحَبْلٍ إِلَى سَقْفِ الْبَيْتِ ثَانِيَ عِطْفِهِ مُسْتَكْبِرٌ {تَذْهَلُ} تُشْغَلُ.
ইবনু উয়াইনাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, الْمُخْبِتِيْنَ বিনয়ী, শান্তিপ্রাপ্ত। ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, فِيْٓ أُمْنِيَّتِهٰঅর্থাৎ যখন তিনি কোন কথা বলেন, তখন শয়তান তাহাঁর কথার সঙ্গে নিজের কথা মিলিয়ে দেয়। এরপর আল্লাহ তাআলা শয়তানের সে মিলানো কথা মিটিয়ে দিয়ে তাহাঁর আয়াতকে সুদৃঢ় করেন। কেউ কেউ বলেন, أُمْنِيَّتِهٰঅর্থাৎ তার কিরাআত (পাঠ) إِلَّآ أَمَانِيَّ তাঁরা পড়তে জানতেন লিখতে জানতেন না। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, مَشِيْدٌ অর্থাৎ চুন-সুরকি দ্বারা দৃঢ় নির্মিত। অন্যরা বলেন, يَسْطُوْنَ অর্থাৎ বাড়াবাড়ি করে। এটি سَطْوَةً থেকে উদ্ভূত। বলা হয় يَسْطُوْنَ অর্থাৎ মজবুত করে ধরে। وَهُدُوْآ إِلَى الطَّيِّبِ مِنَ الْقَوْلِ অর্থাৎ তাদের অন্তরে পবিত্র বাক্য[১] ঢেলে দেয়া হয়েছে। ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, بِسَبَبٍ রজ্জু দ্বারা যা ঘরের ছাদের দিকে। تَذْهَلُ তুমি বিস্মৃত হইবে।
৪৭৪১
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে আদম! তিনি বলবেন, হে রব! আমার সৌভাগ্য, আমি হাজির। তারপর তাকে উচ্চৈঃস্বরে ডেকে বলা হইবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাকে নির্দেশ দিতেছেন যে, তোমার বংশধর থেকে একদলকে বের করে জাহান্নামের দিকে নিয়ে আস। আদাম (আ.) বলবে, হে রব! জাহান্নামী দলের পরিমাণ কী? বলবে, প্রতি হাজার থেকে আমার ধারণা যে, বলিলেন, নয়শত নিরানব্বই, এ সময় গর্ভবতী মহিলা গর্ভপাত করিবে, শিশুরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে এবং তুমি মানুষকে দেখবে মাতাল; অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুত আল্লাহর শাস্তি কঠিন। [পরে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ আয়াতটি পাঠ করিলেন] ঃ এ কথা লোকদের কাছে ভয়ানক মনে হল, এমনকি তাদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। এরপর নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন তো ইয়াজুজ-মাজূজ থেকে নেয়া হইবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে একজন। আবার মানুষদের মধ্যে তোমাদের তুলনা হইবে যেমন সাদা গরুর পার্শ্ব মধ্যে যেন একটি কালো পশম অথবা কালো গরুর পার্শ্বে যেন একটি সাদা পশম। আমি অবশ্য আশা রাখি যে, জান্নাতবাসীদের মধ্যে তোমরাই হইবে এক-চতুর্থাংশ। (রাবী বলেন) আমরা সবাই খুশীতে বলে উঠলাম, আল্লাহু আকবার। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা হইবে জান্নাতবাসীদের এক তৃতীয়াংশ। আমরা বলে উঠলাম, আল্লাহু আকবার। তারপর তিনি বলিলেন, তোমরা হইবে জান্নাতবাসীদের অর্ধেক। আমরা বলে উঠলাম, আল্লাহু আকবার।
আমাশ থেকে উসামার বর্ণনায় এসেছে تَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى এবং তিনি বলেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন।
জারীর, ঈসা, ইবনু ইউসুফ ও আবু মুআবিয়াহর বর্ণনায় سُكَرَى এবং وَمَا هُمْ بِسُكَارَى রয়েছে। [৩৩৪৮] (আ.প্র. ৪৩৮০, ই.ফা. ৪৩৮২)
[১] পবিত্র বাক্য দ্বারা কালিমাহ তাওহীদ অথবা কুরআনকে বোঝানো হয়েছে।
৬৫/২২/২.অধ্যায়ঃ আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বনেদ্বর সঙ্গে আল্লাহর ইবাদাত করে। যদি তার কোন পার্থিব স্বার্থ লাভ হয় তবে সে তাতে প্রশান্তি লাভ করে; কিন্তু যদি তার উপর কোন বিপর্যয় ঘটে তবে সে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। এতে সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়টাই হারিয়ে বসে। এটাই প্রকাশ্য ক্ষতি। সে আল্লাহ্কে ছেড়ে এমন সব কিছুর উপাসনা করে, যা তার কোন ক্ষতিও করিতে পারে না এবং উপকারও করিতে পারে না। এটাই চরম গোমরাহী। (সুরা হাজ্জ ২২/১১-১২)
حَرْفٍ দ্বিধা দ্বন্দ্ব। أَتْرَفْنَاهُمْ আমি তাদের প্রশস্ততা দান করলাম।
৪৭৪২
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি النَّاسِ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ عَلَى حَرْفٍ সম্পর্কে বলেন, কোন ব্যক্তি মদিনায় আগমন করতঃ যদি তার স্ত্রী পুত্র-সন্তান প্রসব করত এবং তার ঘোড়ায় বাচ্চা দিত, তখন বলত এ দ্বীন ভাল। আর যদি তার স্ত্রীর গর্ভে পুত্র সন্তান না জন্মাত এবং তার ঘোড়াও বাচ্চা না দিত, তখন বলত, এটা মন্দ দ্বীন। (আ.প্র. ৪৩৮১, ই.ফা. ৪৩৮৩)
৬৫/২২/৩.অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ এরা দুটি কলহরত পক্ষ, তারা তাদের প্রতিপালকের ব্যাপারে বিতর্ক করছে। (সুরা হাজ্জ ২২/১৯)
৪৭৪৩
আবু যার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি এ আয়াত সম্পর্কে কসম খেয়ে বলেন, এ আয়াত هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ (এরা দুটি বিবদমান পক্ষ। তারা তাদের প্রতিপালকের ব্যাপারে বিতর্ক করে)। হামযা এবং তাহাঁর দুসঙ্গী এবং উত্বা ও তার দুসঙ্গীর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে, যেদিন তারা বাদরের যুদ্ধে বিপক্ষের সঙ্গে মুকাবালা করেছিল।
সুফ্ইয়ান আবু হাশিম সূত্রে এবং উসমান…..এ বক্তব্যটি আবু মিজলায এর উক্তি হিসেবে বর্ণনা করেন। [৩৯৬৬] (আ.প্র. ৪৩৮২, ই.ফা. ৪৩৮৪)
৪৭৪৪
আলী ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমিই সর্বপ্রথম ক্বিয়ামাত দিবসে আল্লাহর সমীপে নতজানু হয়ে নালিশ জানাব। কায়েস বলেন, এ ব্যাপারেই هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, এরাই বাদরের যুদ্ধে সর্বপ্রথম বিপক্ষের সাথে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়েছিল। অর্থাৎ আলী, হামযা ও উবাইদাহ, শাইবাহ ইবনু রাবীয়াহ, উত্বাহ ইবনু রাবীয়াহ এবং ওয়ালীদ ইবনু উত্বাহ। [৩৯৬৫] (আ.প্র. ৪৩৮৩, ই.ফা. ৪৩৮৫)
Leave a Reply