সূরা আল বাকারা তাফসীর – মহান আল্লাহর বাণী

সূরা আল বাকারা তাফসীর – মহান আল্লাহর বাণী

সূরা আল বাকারা তাফসীর – মহান আল্লাহর বাণী >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন >> সুরা বাকারা আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

৬৫/১/২. অধ্যায়ঃ যারা ক্রোধে পতিত নয়।
৬৫/২/১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ আর তিনি শিখালেন আদমকে সব কিছুর নাম। (সুরা আল-বাকারাহ ২/৩১)
৬৫/২/২. অধ্যায়ঃ –
৬৫/২/৩. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ অতএব, তোমরা জেনে-বুঝে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করো না। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২২)
৬৫/২/৪. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/৫. অধ্যায়ঃ
৬৫/২/৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/৭. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ আমি কোন আয়াত রহিত করলে কিংবা ভুলিয়ে দিলে। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১০৬)
৬৫/২/৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ আর তারা বলেঃ আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করিয়াছেন। তিনি অতি পবিত্র। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১১৬)
৬৫/২/৯. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে সলাতের জায়গারূপে গ্রহণ কর। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১২৫)
৬৫/২/১০. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/১১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৩৬)
৬৫/২/১২. অধ্যায়ঃ
৬৫/২/১৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/১৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/১৫. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/১৬. অধ্যায়ঃ
৬৫/২/১৭. অধ্যায়ঃ
৬৫/৪/২৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/১৮. অধ্যায়ঃ
৬৫/২/১৯. অধ্যায়ঃ
৬৫/২/২০. অধ্যায়ঃ
৬৫/২/২১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/২১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/২২. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/২৩. অধ্যায়ঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিহতদের ব্যাপারে কিসাসের১ বিধান দেয়া হল, স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী। তবে তার ভাইয়ের তরফ থেকে কাউকে কিছু ক্ষমা করে দেয়া হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করিতে হইবে এবং সততার সঙ্গে তা তাকে প্রদান করিতে হইবে। এটা তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে ভার লাঘব ও বিশেষ রাহমাত। এরপরও যে কেউ বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৭৮)
৬৫/২/২৩. অধ্যায়ঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিহতদের ব্যাপারে কিসাসের১ বিধান দেয়া হল, স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী। তবে তার ভাইয়ের তরফ থেকে কাউকে কিছু ক্ষমা করে দেয়া হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করিতে হইবে এবং সততার সঙ্গে তা তাকে প্রদান করিতে হইবে। এটা তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে ভার লাঘব ও বিশেষ রাহমাত। এরপরও যে কেউ বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৭৮)
৬৫/২/২৩. অধ্যায়ঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিহতদের ব্যাপারে কিসাসের১ বিধান দেয়া হল, স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী। তবে তার ভাইয়ের তরফ থেকে কাউকে কিছু ক্ষমা করে দেয়া হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করিতে হইবে এবং সততার সঙ্গে তা তাকে প্রদান করিতে হইবে। এটা তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে ভার লাঘব ও বিশেষ রাহমাত। এরপরও যে কেউ বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৭৮)
৬৫/২/২৪. অধ্যায়ঃ
৬৫/২/২৪. অধ্যায়ঃ
৬৫/২/২৪. অধ্যায়ঃ
৬৫/২/২৪. অধ্যায়ঃ
৬৫/২/২৫. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/২৬. অধ্যায়ঃ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে সওম করে । (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৮৫)
৬৫/২/২৭. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/২৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/২৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/২৯. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/৩০. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/৩১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/৩২. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা মাথায় কোন কষ্ট থাকে তবে সওম কিংবা সদাকাহ অথবা কুরবানী দিয়ে তার ফিদ্ইয়া দিবে। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৯৬)
৬৫/২/৩৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ যখন তোমরা নিরাপদ হইবে, তখন তোমাদের মধ্যে যে কেউ হাজ্জ ও উমরাহ একত্রে পালন করিতে চায়, সে যা কিছু সহজলভ্য তা দিয়ে কুরবানী করিবে। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৯৬)
৬৫/২/৩৪. অধ্যায়ঃ তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় তোমাদের কোন পাপ নেই। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৯৮)
৬৫/২/৩৫. অধ্যায়ঃ তারপর তোমরা দ্রুতগতিতে সেখান থেকে ফিরে আস যেখান থেকে সবাই ফিরে। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৯৯)
৬৫/২/৩৬. অধ্যায়ঃ
৬৫/২/৩৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ প্রকৃতপক্ষে সে কিন্তু ঘোর বিরোধী। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২০৪) وَقَالَ عَطَاءٌ النَّسْلُ الْحَيَوَانُ.
৬৫/২/৩৮. অধ্যায়ঃ তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা বেহেশতে চলে যাবে, যদিও এখনও তোমরা তাদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে গত হয়েছে? তাদের উপর পতিত হয়েছিল অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ। তারা এমনভাবে ভীত-শিহরিত হয়েছিল যে, রাসুল এবং তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদের বলিতে হয়েছিলঃ কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? হাঁ, আল্লাহর সাহায্য একান্তই কাছে। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২১৪)
৬৫/২/৩৮. অধ্যায়ঃ তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা বেহেশতে চলে যাবে, যদিও এখনও তোমরা তাদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে গত হয়েছে? তাদের উপর পতিত হয়েছিল অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ। তারা এমনভাবে ভীত-শিহরিত হয়েছিল যে, রাসুল এবং তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদের বলিতে হয়েছিলঃ কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? হাঁ, আল্লাহর সাহায্য একান্তই কাছে। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২১৪)
৬৫/২/৩৯. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের স্ত্রীরা হল তোমাদের শস্যক্ষেত্র। যেভাবে ইচ্ছা তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে গমন করিতে পার। তবে তোমরা নিজেদের জন্য কিছু আগামী দিনের ব্যবস্থা করিবে এবং আল্লাহ্কে ভয় করিবে। আর জেনে রেখ যে, আল্লাহর সঙ্গে তোমাদের সাক্ষাৎ হইবেই এবং মুমিনদের সুসংবাদ দাও। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২২৩)
৬৫/২/২৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/৪০. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আর যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের তালাক দিয়ে দাও এবং তারা তাদের ইদ্দাতকাল পূর্ণ করিতে থাকে তখন যদি তারা পরস্পর সম্মত হয়ে নিজেদের স্বামীদের বিধিমত বিয়ে করিতে চায় তাহলে তোমরা তাদের বাধা দিবে না। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৩২)
৬৫/২/৪১. অধ্যায়ঃ
৬৫/২/৪১. অধ্যায়ঃ
৬৫/২/৪২. অধ্যায়ঃ তোমরা সলাতের প্রতি যত্নবান হইবে বিশেষত মধ্যবর্তী সলাতের। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৩৮)
৬৫/২/৪৩. অধ্যায়ঃ এবং আল্লাহর উদ্দেশে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াবে। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৩৮)
৬৫/২/৪৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ
৬৫/২/৪৫. অধ্যায়ঃ আর তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হইবে, …..(সুরা আল-বাকারাহ ২/২৪০)
৬৫/২/৪৬. অধ্যায়ঃ আর স্মরণ কর যখন ইবরাহীম বললঃ হে আমার পালনকর্তা! আমাকে দেখাও কীভাবে তুমি মৃতকে জীবিত কর। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৬০)
৬৫/২/৪৭. অধ্যায়ঃ
৬৫/২/৪৮. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ কাকুতি-মিনতি করে তারা মানুষের কাছে ভিক্ষা চায় না। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৭৩)
৬৫/২/৪৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধ এবং সুদকে অবৈধ করিয়াছেন- (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৭৫)।
৬৫/২/৫০. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৭৬)
৬৫/২/৫১. অধ্যায়ঃ তারপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তাহলে আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে তৈরি হয়ে যাও- (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৭৯)।
৬৫/২/৫২. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ খাতক (ঋণী) যদি অভাবগ্রস্ত হয় তবে তার সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দেয়া উচিত। আর যদি তোমরা ক্ষমা করে দাও, তা হইবে তোমাদের জন্য অতি উত্তম কাজ, যদি তোমরা জানতে। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৮০)
৬৫/২/৫৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আর সেদিনকে ভয় কর, যেদিন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তিত হইবে। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৮১)
৬৫/২/৫৪. অধ্যায়ঃ “তোমাদের মনে যা আছে তা তোমরা প্রকাশ কর কিংবা গোপন রাখ আল্লাহ তোমাদের নিকট হইতে তার হিসাব নেবেন। তারপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৮৪)
৬৫/২/৫৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ রাসুল ঈমান এনেছেন ঐ সব বিষয়ের উপর যা তাহাঁর প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে তাহাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে এবং মুমিনরাও ঈমান এনেছে। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৮৫)
৬৫/৩/১. অধ্যায়ঃ …… যার কতক আয়াত সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন।

৬৫/২/১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ আর তিনি শিখালেন আদমকে সব কিছুর নাম। (সূরা আল বাকারা ২/৩১)

৪৪৭৬

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ক্বিয়ামাতের দিন মুমিনগণ একত্রিত হইবে এবং তারা বলবে, আমরা যদি আমাদের রবের কাছে আমাদের জন্য একজন সুপারিশকারী পেতাম। এরপর তারা আদম (আ.)-এর কাছে আসবে এবং তাঁকে বলবে, আপনি মানব জাতির পিতা। আপনাকে আল্লাহ তাআলা নিজ হাতে সৃষ্টি করিয়াছেন। তাহাঁর মালায়িকাহ দ্বারা আপনাকে সাজদাহ করিয়েছেন এবং যাবতীয় বস্তুর নাম আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। অতএব আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন, যেন আমাদের কঠিন স্থান থেকে আরাম দিতে পারেন। তিনি বলবেন, আমি এ কাজের যোগ্য নই। তিনি নিজ ভুলের কথা স্মরণ করে লজ্জাবোধ করবেন। (তিনি বলবেন) তোমরা নূহ (আ.)-এর কাছে যাও। তিনিই প্রথম রাসুল (আ.) যাকে আল্লাহ জগৎবাসীর কাছে পাঠিয়েছেন। তখন তারা তাহাঁর কাছে আসবে। তিনিও বলবেন, এ কাজ আমার দ্বারা হওয়ার নয়। তিনি তাহাঁর রবের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন এমন বিষয়ে যা তাহাঁর জানা ছিল না। সে কথা স্মরণ করে তিনি লজ্জাবোধ করবেন এবং বলবেন বরং তোমরা আল্লাহর খলীল (ইব্রাহীম) (আ.)-এর কাছে যাও। তারা তখন তাহাঁর কাছে আসবে, তখন তিনি বলবেন, এ কাজ আমার দ্বারা হওয়ার নয়। তোমরা মূসা (আ.)-এর কাছে যাও। তিনি এমন বান্দা যে, তাহাঁর সঙ্গে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং তাঁকে তাওরাত গ্রন্থ দান করিয়াছেন। তখন তারা তাহাঁর কাছে আসবে। তিনি বলবেন, তোমাদের এ কাজের জন্য আমার সাহস হচ্ছে না এবং তিনি এক কিবতীকে বিনা দোষে হত্যা করার কথা স্মরণ করে তাহাঁর রবের নিকট লজ্জাবোধ করবেন। তিনি বলবেন, তোমরা ঈসা (আ.)-এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসুল এবং আল্লাহর বাণী ও রূহ। (তারা সেখানে যাবে) তিনি বলবেন, এ কাজ আমার দ্বারা হওয়ার নয়। তোমরা মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর কাছে যাও। তিনি এমন এক বান্দা যার পূর্ব ও পরের ভুলত্র“টি আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন তারা আমার কাছে আসবে। তখন আমি আমার রবের কাছে যাব এবং অনুমতি চাব, আমাকে অনুমতি প্রদান করা হইবে। আর আমি যখন আমার রবকে দেখব, তখন আমি সাজদাহ্য় লুটিয়ে পড়ব। আল্লাহ যতক্ষণ চান এ অবস্থায় আমাকে রাখবেন। তারপর বলা হইবে, আপনার মাথা উঠান এবং চান দেয়া হইবে, বলুন শোনা হইবে, সুপারিশ করুন কবূল করা হইবে। তখন আমি আমার মাথা উঠাব এবং আমাকে যে প্রশংসাসূচক বাক্য শিক্ষা দিবেন তা দ্বারা আমি তাহাঁর প্রশংসা করব। তারপর সুপারিশ করব। আমাকে একটি সীমারেখা নির্দিষ্ট করে দেয়া হইবে। (সেই সীমিত সংখ্যায়) আমি তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাব। আমি পুনরায় রবের সমীপে ফিরে আসব। যখন আমি আমার রবকে দেখব তখন আগের মত সবকিছু করব। তারপর আমি সুপারিশ করব। আর আমাকে একটি সীমারেখা নির্দিষ্ট করে দেয়া হইবে। তদনুসারে আমি তাদের জান্নাতে দাখিল করাব। (তারপর তৃতীয়বার) আমি আবার রবের দরবারে উপস্থিত হয়ে অনুরূপ করব। এরপর আমি চতুর্থবার ফিরে আসব এবং আরয করব এখন তারাই কেবল জাহান্নামে অবশিষ্ট রয়ে গেছে যারা কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী অনেক আছে যাদের উপর জাহান্নামে চিরবাস অবধারিত হয়ে গেছে।

আবু আবদুল্লাহ বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, কুরআনের যে ঘোষণায় তারা জাহান্নামে আবদ্ধ রয়েছে তা হল মহান আল্লাহর বাণী ঃ “তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে।” [৪৪; মুসলিম ১/৮৪, হাদীস ১৯৩, আহমাদ ১২১৫৩] (আ.প্র. ৪১১৮, ই.ফা. ৪১২১)

৬৫/২/২. অধ্যায়ঃ –

মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, إِلَى شَيَاطِيْنِهِمْ-তাদের সঙ্গী-সাথী মুনাফিক ও মুশরিক। مُحِيْطٌ بِالْكَافِرِيْنَ -আল্লাহ কাফিরদের পরিবেষ্টন করে আছেন- (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৯)। অর্থাৎ আল্লাহ তাদের একত্রকারী। صِبْغَةَ অর্থাৎ দ্বীন। عَلَى الْخَاشِعِيْنَ-প্রকৃত মুমিনদের নিকট। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, بِقُوَّةٍ-তাতে যা আছে তা আমাল করে। আবুল আলিয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, مَرَضٌ-সন্দেহ। وَمَا خَلْفَهَا -পরবর্তীদের জন্য নাসীহাত। لَا شِيَةَ -দাগ বিহীন। অন্যরা বলেন, يَسُوْمُوْنَكُمْ-তারা তোমাদের কষ্ট দিত- (সুরা আল-বাকারাহ ২/৪৯)। الْوَلَايَةُ-আল ওয়াও মাফতুহ অবস্থায় الْوَلَاء-আল-ওয়ালা এর ধাতু। অর্থাৎ প্রভুত্ব, আর যখন ওয়াও-কে যের দেয়া হইবে, তখন অর্থ দাঁড়াবে নেতৃত্ব। কেউ কেউ বলেন, যে সমস্ত বীজ খাওয়া হয় তাকে ফুম فُوْمٌ বলে। ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, فَبَاءُوْا তারা (আল্লাহর গযবের দিকে) ফিরে গেল। يَسْتَفْتِحُوْنَ তারা সাহায্য চাইতো। شَرَوْا-তারা বিক্রি করিল। رَاعِنَا নির্গত হয়েছে الرُّعُوْنَةِ মাসদার থেকে। যখন তারা লোককে বোকা বানাতে চাইত তখন বলত, রায়িনা رَاعِنَا। لَا يَجْزِيْ -অর্থাৎ কোন কাজে আসবে না। خُطُوَاتِ নির্গত হয়েছে الْخَطْوِ মাসদার হইতে যার অর্থ পদচিহ্ন। ابْتَلَى -পরীক্ষা করিলেন।

৬৫/২/৩. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ অতএব, তোমরা জেনে-বুঝে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করো না। (সূরা আল বাকারা ২/২২)

৪৪৭৭

আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, কোন্ গুনাহ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড়? তিনি বলিলেন, আল্লাহর জন্য অংশীদার দাঁড় করান। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করিয়াছেন। আমি বললাম, এতো সত্যিই বড় গুনাহ। আমি বললাম, তারপর কোন্ গুনাহ? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি তোমার সন্তানকে এই ভয়ে হত্যা করিবে যে, সে তোমার সঙ্গে আহার করিবে। আমি আরয করলাম, এরপর কোনটি? তিনি উত্তর দিলেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে তোমার ব্যভিচার করা। [৪৭৬১, ৬০০১, ৬৮১১, ৬৮৬১, ৭৫২০, ৭৫৩২; মুসলিম ১/৩৭, হাদীস ৮৬০] (আ.প্র. ৪১১৯, ই.ফা. ৪১২২)

৬৫/২/৪. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

{وَظَلَّلْنَا عَلَيْكُمْ الْغَمَامَ وَأَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ الْمَنَّ وَالسَّلْوٰى كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَمَا ظَلَمُوْنَا وَلٰكِنْ كَانُوْآ أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ}

وَقَالَ مُجَاهِدٌ {الْمَنُّ}صَمْغَةٌ {وَالسَّلْوَى} الطَّيْرُ.

আর আমি মেঘমালা দিয়ে তোমাদের উপর ছায়া দান করেছি এবং তোমাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছি মান্না ও সালওয়া। তোমরা খাও সেসব পবিত্র বস্তু যা আমি তোমাদের দান করেছি। তারা আমার প্রতি কোন জুলুম করেনি, বরং তারা নিজেদের উপরই জুলুম করেছিল। (সুরা আল-বাকারাহ ২/৫৭)

মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মান্ন শিশির জাতীয় সুস্বাদু খাদ্য (যা পাথর ও গাছের উপর অবতীর্ণ হত পরে জমে গিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো হত) আর সাল্ওয়া-পাখি।

৪৪৭৮

সাঈদ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ …… আল কামাআত (ব্যাঙের ছাতা) মান্ন জাতীয়। আর তার পানি চোখের রোগের প্রতিষেধক। [৪৬৩৯, ৫৭০৮; মুসলিম ৩৬/২৮, হাদীস ২০৪৯, আহমাদ ১৬২৫] (আ.প্র. ৪১২০, ই.ফা. ৪১২৩)

৬৫/২/৫. অধ্যায়ঃ

{وَإِذْ قُلْنَا ادْخُلُوْا هٰذِهِ الْقَرْيَةَ فَكُلُوْا مِنْهَا حَيْثُ شِئْتُمْ رَغَدًا وَادْخُلُوا الْبَابَ سُجَّدًا وَّقُوْلُوْا حِطَّةٌ نَّغْفِرْ لَكُمْ خَطَايَاكُمْ وَسَنَزِيْدُ الْمُحْسِنِيْنَ} رَغَدًا وَاسِعٌ كَثِيْرٌ.

স্মরণ করুন, যখন আমি বললাম, এই জনপদে প্রবেশ কর, যেখানে ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দে খাও, অবনত মস্তকে প্রবেশ কর দ্বার দিয়ে এবং বল حِطَّةٌ-ক্ষমা চাই। আমি তোমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করব এবং সৎকর্মশীলদের প্রতি আমার দান বৃদ্ধি করব- (সুরা আল-বাকারাহ ২/৫৮)। رَغَدًا প্রভূত স্বাচ্ছন্দ্য।

৪৪৭৯

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেন, বানী ইসরাঈলকে বলা হয়েছিল যে, তোমরা সাজদাহ অবস্থায় নগর দ্বারে প্রবেশ কর এবং বল حِطَّةٌ (ক্ষমা চাই) কিন্তু তারা প্রবেশ করিল নিতম্ব হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে এবং শব্দকে পরিবর্তন করে তদস্থলে বলিল, গম ও যবের দানা। [৩৪০৩] (আ.প্র. ৪১২১, ই.ফা. ৪১২৪)

৬৫/২/৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ

{مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ} وَقَالَ عِكْرِمَةُ جَبْرَ وَمِيْكَ وَسَرَافِ عَبْدٌ إِيْلْ اللهُ.

যারা জিবরীলের শত্রুতা করিবে। ইকরিমাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, জবর, মীক, সরাফ অর্থ আবদ-বান্দা, ঈল-আল্লাহ। (অর্থ হল আবদুল্লাহ-আল্লাহর বান্দা) (আঃপ্রঃ ৪১২১, ইঃফাঃ ৪১২৪)

৪৪৮০

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর শুভাগমনের খবর পেলেন। তখন তিনি (আবদুল্লাহ ইবনু সালাম) বাগানে ফল সংগ্রহ করছিলেন। তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বলিলেন, আমি আপনাকে তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করব যা নাবী (সাঃআঃ) ব্যতীত অন্য কেউ জানেন না। তা হল ক্বিয়ামাতের প্রথম আলামাত কী? জান্নাতীদের প্রথম খাদ্য কী হইবে? এবং সন্তান কখন পিতার মত হয় আর কখন মাতার মত হয়? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমাকে জিব্রীল (আ.) এখনই এসব ব্যাপারে জানিয়ে গেলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালাম বলিলেন, জিবরীল? নাবী (সাঃআঃ) বলিল, হ্যাঁ। ইবনু সালাম বলিলেন, সে তো মালায়িকাদের মধ্যে ইয়াহূদীদের শত্রু। তখন নাবী (সাঃআঃ) এই আয়াত পাঠ করিলেন, আপনি বলে দিনঃ যে কেউ জিবরাঈলের শত্র“ এ কারণে যে, সে আল্লাহর নির্দেশে আপনার অন্তরে কুরআন অবতীর্ণ করেছে (সুরা আল-বাকারাহ ২/৯৭)। ক্বিয়ামাতের প্রথম আলামাত হল, এক রকম আগুন মানুষদেরকে পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত একত্রিত করিবে। আর জান্নাতীরা প্রথমে যা খাবেন তা হল মাছের কলিজার টুকরা। আর যখন পুরুষের বীর্য স্ত্রীর উপর প্রাধান্য লাভ করে তখন সন্তান পিতার আকৃতি পায় এবং যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের উপর প্রাধান্য লাভ করে তখন সন্তান মাতার আকৃতি পায়। তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.) বলিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রাসুল। হে আল্লাহর রাসুল! ইয়াহূদরা চরম মিথ্যারোপকারী। যদি তারা আপনার প্রশ্ন করার পূর্বেই আমার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ জেনে যায় তবে তারা আমার প্রতি অপবাদ আরোপ করিবে। ইতোমধ্যে ইয়াহূদীরা এসে গেল। তখন নাবী (সাঃআঃ) ইয়াহূদীদের জিজ্ঞেস করিলেন, আবদুল্লাহ তোমাদের মধ্যে কেমন লোক? তারা উত্তর দিল, তিনি আমাদের মধ্যে উত্তম এবং আমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির পুত্র। তিনি আমাদের নেতা এবং আমাদের নেতার ছেলে। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, যদি আবদুল্লাহ ইবনু সালাম ইসলাম গ্রহণ করেন, তাহলে তোমাদের অভিমত কী? তারা বলিল, আল্লাহ তাকে এর থেকে রক্ষা করুন। তখন [আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.)] বের হয়ে এসে বলিলেন, আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) অবশ্যই আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। তখন তারা বলিল, সে আমাদের মধ্যে মন্দ ব্যক্তি ও মন্দ ব্যক্তির ছেলে। তারপর তারা ইবনু সালাম (রাদি.)-কে দোষী সাব্যস্ত করে সমালোচনা করিতে লাগল। তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! এটাই আমি আশঙ্কা করছিলাম। [৩৩২৯] (আ.প্র. ৪১২২, ই.ফা. ৪১২৫)

৬৫/২/৭. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ আমি কোন আয়াত রহিত করলে কিংবা ভুলিয়ে দিলে। (সূরা আল বাকারা ২/১০৬)

৪৪৮১

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার (রাদি.) বলেন, উবাই (রাদি.) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ক্বারী, আর আলী (রাদি.) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক। কিন্তু আমরা উবাই (রাদি.)-এর কিছু কথা বাদ দেই। কারণ উবাই (রাদি.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে যা শুনিয়াছি তার কিছুই ছাড়ব না। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি যে আয়াত রহিত করি অথবা ভুলিয়ে দেই …….. (সুরা আল-বাকারাহ ২/১০৬)। [৫০০৫] (আ.প্র. ৪১২৩, ই.ফা. ৪১২৬)

৬৫/২/৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ আর তারা বলেঃ আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করিয়াছেন। তিনি অতি পবিত্র। (সূরা আল বাকারা ২/১১৬)

৪৪৮২

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, আদম সন্তান আমার ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলে। অথচ তার এ কাজ ঠিক নয়। আমাকে গালি দিয়েছে অথচ তার জন্য এটা ঠিক নয়। তার আমার প্রতি মিথ্যারোপ হল, সে বলে যে, আমি তাকে (মৃত্যুর) পূর্বের মত পুনরায় জীবিত করিতে সক্ষম নই। আর আমাকে তার গালি দেয়া হলতার এ কথা যে, আমার সন্তান আছে অথচ আমি স্ত্রী ও সন্তান গ্রহণ থেকে পবিত্র। (আ.প্র. ৪১২৩, ই.ফা. ৪১১৭)

৬৫/২/৯. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে সলাতের জায়গারূপে গ্রহণ কর। (সূরা আল বাকারা ২/১২৫)

{مَثَابَةً} يَثُوْبُوْنَ يَرْجِعُوْنَ.

مَثَابَةً-ফিরে আসার স্থান। يَثُوْبُوْنَ লোকজন প্রত্যাবর্তন করে।

৪৪৮৩

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার (রাদি.) বলেছেন, তিনটি বিষয়ে আমার মতামত আল্লাহর ওয়াহীর অনুরূপ হয়েছে অথবা (তিনি বলেছেন) তিনটি বিষয়ে আমার মতামতের অনুকূলে আল্লাহ ওয়াহী অবতীর্ণ করিয়াছেন। তা হল, আমি বলেছিলাম হে আল্লাহর রাসুল! যদি আপনি মাকামে ইব্রাহীমকে সলাতের স্থান হিসাবে গ্রহণ করিতেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করিলেন ……. তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে সলাতের জায়গারূপে গ্রহণ কর (সুরা আল-বাকারাহ ২/১২৫)। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার কাছে ভাল ও মন্দ উভয় প্রকারের লোক আসে। কাজেই আপনি যদি উম্মাহাতুল মুমিনীনদেরকে পর্দা করার আদেশ করবেন। তখন আল্লাহ তাআলা পর্দার আয়াত অবতীর্ণ করেন। তিনি আরো বলেন, আমি জানতে পেরেছিলাম যে, নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর কতক স্ত্রীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তখন আমি তাদের কাছে উপস্থিত হই এবং বলি যে, আপনারা এর থেকে বিরত থাকুন নচেৎ আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-কে আপনাদের পরিবর্তে উত্তম স্ত্রী দান করবেন। এরপর আমি তাহাঁর কোন স্ত্রীর কাছে আসি, তখন তিনি বলিলেন, হে উমার! রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারেও নাক গলাতে শুরু করেছ। তিনি (সাঃআঃ) স্ত্রীগণকে নাসীহাত করে থাকেন আর এখন তুমি তাদের নাসীহাত করিতে আরম্ভ করেছ? তখন আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন ঃ عَسَى رَبُّهُ إِنْ طَلَّقَكُنَّ أَنْ يُبَدِّلَهُ أَزْوَاجًا خَيْرًا مِنْكُنَّ مُسْلِمَاتٍ “যদি নাবী তোমাদের সবাইকে তালাক দেন, তবে তাহাঁর রব অচিরেই তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের চেয়ে উত্তম স্ত্রী তাঁকে দিবেন, যারা হইবে আজ্ঞাবহ, ঈমানদার, অনুগত, তাওবাহকারিণী, ইবাদাতকারিণী, সিয়াম পালনকারী, অকুমারী ও কুমারী” (সুরা আত্-তাহরীম ৬৬/৫)।

ইবনু আবী মারইয়াম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত যে, উমার (রাদি.) আমার কাছে এরূপ বলেছেন। [৪০২] (আ.প্র. ৪১২৫, ই.ফা. ৪১২৮)

৬৫/২/১০. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

{وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيْمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيْلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ}

{الْقَوَاعِدُ} : أَسَاسُهُ وَاحِدَتُهَا، قَاعِدَةٌ، وَالْقَوَاعِدُ مِنْ النِّسَاءِ وَاحِدُهَا : قَاعِدٌ.

স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কাবাঘরের ভিত নির্মাণ করছিল তখন তারা দুআ করেছিলঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের এ প্রয়াস ক্ববূল কর, নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১২৭)

الْقَوَاعِدُ ভিত্তি, একবচনে কায়িদাতু قَاعِدَةٌ। আল কাওয়ায়িদ মহিলাদের সম্পর্কে বলা হলে এর অর্থ বৃদ্ধা নারী, তখন এর একবচন قَاعِدٌ হইবে।

৪৪৮৪

নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, তোমার কি জানা নেই যে, তোমার সম্প্রদায় কুরাইশ কাবা তৈরী করেছে এবং ইবরাহীম (আ.)-এর ভিত্তির থেকে ছোট নির্মাণ করেছে? [আয়েশাহ (রাদি.) বলেন] আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি ইবরাহীম (আ.)-এর ভিত্তির উপর কাবাকে আবার নির্মাণ করবেন না? তিনি বলিলেন, যদি তোমার গোত্রের কুফরীর যুগ নিকট অতীতে না হত। এ কথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) বলিলেন, যদি আয়েশাহ (রাদি.) এ কথা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে শুনে থাকেন, তবে আমার মনে হয় যে এ কারণেই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হাজরে আসওয়াদ সংলগ্ন দু রুকনকে চুম্বন করিতেন না, বর্জন করিয়াছেন, যেহেতু বাইতুল্লাহ্র নির্মাণ কাজ ইবরাহীম (আ.)-এর ভিতের উপর সম্পূর্ণ করা হয়নি। [১২৬] (আ.প্র. ৪১২৬, ই.ফা. ৪১২৯)

৬৫/২/১১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি। (সূরা আল বাকারা ২/১৩৬)

৪৪৮৫

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আহলে কিতাব (ইয়াহূদী) ইবরানী ভাষায় তাওরাত পাঠ করে মুসলিমদের কাছে তা আরবী ভাষায় ব্যাখ্যা করত। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা আহলে কিতাবকে বিশ্বাসও কর না আর অবিশ্বাসও কর না এবং (আল্লাহর বাণী) “তোমরা বল, আমরা আল্লাহ্তে ঈমান এনেছি এবং যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে . . . .” (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৩৬)। [৭৩৬২, ৭৫৪২] (আ.প্র. ৪১২৭, ই.ফা. ৪১৩০)

৬৫/২/১২. অধ্যায়ঃ

{سَيَقُوْلُ السُّفَهَآءُ مِنَ النَّاسِ مَا وَلَّاهُمْ عَنْ قِبْلَتِهِمْ الَّتِيْ كَانُوْا عَلَيْهَا قُلْ لِّـلّٰهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ إِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ}

অচিরেই নির্বোধ লোকেরা বলবেঃ কিসে ফিরিয়ে দিল তাদের সে কিবলা থেকে, যে কিবলা তারা এ যাবৎ অনুসরণ করে আসছিল? আপনি বলুনঃ পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করেন। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৪২)

৪৪৮৬

বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) মাদীনাতে ষোল অথবা সতের মাস যাবৎ বাইতুল মাকদাসের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করেন। অথচ নাবী (সাঃআঃ) বাইতুল্লাহর দিকে তার কিবলা হওয়াকে পছন্দ করিতেন। নাবী (সাঃআঃ) আসর এর সলাত (কাবার দিকে মুখ করে) আদায় করেন এবং লোকেরাও তাহাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করেন। এরপর তাহাঁর সঙ্গে সলাত আদায়কারী একজন বের হন এবং তিনি একটি মাসজিদের লোকেদের পার্শ্ব দিয়ে গেলেন তখন তারা রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি বলিলেন, আমি আল্লাহ্কে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে মাক্কাহর দিকে মুখ করে সলাত আদায় করেছি। এ কথা শোনার পর তাঁরা যে অবস্থায় ছিলেন, সে অবস্থায় বাইতুল্লাহর দিকে ফিরে গেলেন। আর যারা কিবলা বাইতুল্লাহর দিকে পরিবর্তনের পূর্বে বাইতুল মাকদাসের দিকে সলাত আদায় অবস্থায় মারা গিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, তাদের সম্পর্কে আমরা কী বলব তা আমাদের জানা ছিল না। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন “আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান ব্যর্থ করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি পরম মমতাময়, পরম দয়ালু” (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৪৩)। [৪০] (আ.প্র. ৪১২৮, ই.ফা. ৪১৩১)

৬৫/২/১৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ

{وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَّسَطًا لِّتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا}

আর এভাবে আমি তোমদেরকে করেছি এক মধ্যপন্থী জাতি যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষ্যদাতা হও এবং রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষ্যদাতা হন। (সুরা আল-বাকারাহ ২/৪৩)

৪৪৮৭

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামাতের দিন নূহ (আ.)-কে ডাকা হইবে। তখন তিনি বলবেনঃ হে আমাদের রব! আমি আপনার পবিত্র দরবারে হাযির (তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন) তুমি কি (আল্লাহর বাণী) পৌঁছে দিয়েছিলে? তিনি বলবেন, হ্যাঁ। এরপর তার উম্মতকে জিজ্ঞেস করা হইবে, [নূহ (আ.) কি] তোমাদের নিকট (আল্লাহর বাণী) পৌঁছে দিয়েছে? তারা তখন বলবে, আমাদের কাছে কোন ভয়প্রদর্শনকারী আসেনি। তখন আল্লাহ তাআলা [নূহ (আ.)-কে] বলবেন, তোমার পক্ষে কে সাক্ষ্য দেবে? তিনি বলবেন, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) এবং তাহাঁর উম্মতগণ। তখন তারা সাক্ষ্য দেবে যে, নূহ (আ.) তাহাঁর উম্মতের নিকট আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন এবং রাসুল (সাঃআঃ) তোমাদের জন্য সাক্ষী হইবেন। এটাই মহান আল্লাহর বাণী “আর এ ভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যপন্থী উম্মাত করেছি যাতে তোমরা মানবজাতির সাক্ষী হইতে পার আর রাসুল তোমাদের সাক্ষী হন।” (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৪৩) ওয়াসাত ন্যায়নিষ্ঠ। [৩৩৩৯] (আ.প্র. ৪১২৯, ই.ফা. ৪১৩২)

৬৫/২/১৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ

{وَمَا جَعَلْنَا الْقِبْلَةَ الَّتِيْ كُنْتَ عَلَيْهَآ إِلَّا لِنَعْلَمَ مَنْ يَّتَّبِعُ الرَّسُوْلَ مِمَّنْ يَّنْقَلِبُ عَلٰى عَقِبَيْهِ ط وَإِنْ كَانَتْ لَكَبِيْرَةً إِلَّا عَلَى الَّذِيْنَ هَدَى اللهُ ط وَمَا كَانَ اللهُ لِيُضِيْعَ إِيْمَانَكُمْ ط إِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَؤُوْفٌ رَّحِيْمٌ (143).

আপনি যে কিবলার এ যাবত অনুসরণ করছিলেন তাকে আমি এজন্য প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যাতে জানতে পারি কে রাসূলের অনুসরণ করে, আর কে পিঠটান দেয়? আল্লাহ যাদের সৎপথ প্রদর্শন করিয়াছেন তাদের ব্যতীত অন্যদের কাছে এটা নিশ্চিত কঠোরতর বিষয়। আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান ব্যর্থ করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি পরম মমতাময়, পরম দয়ালু। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৪৩)

৪৪৮৮

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একদিন লোকেরা কূবা মাসজিদে ফাজ্রের সলাত আদায় করছিলেন। এমন সময় এক আগন্তুক এসে বলিল, আল্লাহ তাআলা নাবী (সাঃআঃ)-এর প্রতি কুরআনের এ আয়াত অবতীর্ণ করিয়াছেন যে, তিনি যেন (সলাতে) কাবার দিকে মুখ করেন। কাজেই আপনারাও কাবার দিকে মুখ করুন। তখন লোকেরা কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে নেন। [৪০৩] (আ.প্র. ৪১৩০, ই.ফা. ৪১৩৩)

৬৫/২/১৫. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

{قَدْ نَرٰى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَآءِ ج فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضٰهَا ص فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ط} إِلَى قوله : {عَمَّا تَعْمَلُوْنَ}.

বার বার আকাশের দিকে আপনার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করছি….. আল্লাহ সে সম্বন্ধে বেখবর নন যা তারা করে। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৪৪)

৪৪৮৯

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যারা উভয় কিবলার (বাইতুল মাকদাস কাবা-এর) দিকে মুখ করে সলাত আদায় করিয়াছেন তাদের মধ্যে আমি ব্যতীত আর কেউ বেঁচে নেই। (আ.প্র. ৪১৩১, ই.ফা. ৪১৩৪)

৬৫/২/১৬. অধ্যায়ঃ

{وَلَئِنْ أَتَيْتَ الَّذِيْنَ أُوْتُوا الْكِتٰبَ بِكُلِّ اٰيَةٍ مَّا تَبِعُوْا قِبْلَتَكَ} إِلَى قَوْلِهِ : {إِنَّكَ إِذًا لَّمِنَ الظَّالِمِيْنَ}.

যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের কাছে আপনি সমস্ত প্রমাণ পেশ করলেও তারা আপনার কিবলার অনুসরণ করিবে না, আর আপনি তাদের কিবলা অনুসরণ করার নন। আর তারা একে অন্যের কিবলা অনুসরণ করে না। আপনি যদি আপনার কাছে জ্ঞান আসার পর তাদের বাসনার অনুসরণ করেন, তবে নিশ্চয়ই আপনি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বেন। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৪৫)

৪৪৯০

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একদা লোকেরা মাসজিদে কুবায় ফাজ্রের সলাত আদায় করছিলেন। এমন সময় তাদের কাছে একজন লোক এসে বলিল, এ রাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর উপর কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে এবং কাবার দিকে মুখ করে সলাত আদায় করার জন্য তিনি নির্দেশিত হয়েছেন। অতএব আপনারা কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিন। আর তখন লোকেদের চেহারা শামের দিকে ছিল। তখন তারা তাদের চেহারা কাবার দিকে ঘুরিয়ে নিলেন। [৪০৩] (আ.প্র. ৪১৩২, ই.ফা. ৪১৩৫)

৬৫/২/১৭. অধ্যায়ঃ

{اَلَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتٰبَ يَعْرِفُوْنَه” كَمَا يَعْرِفُوْنَ أَبْنَآءَهُمْ ط وَإِنَّ فَرِيْقًا مِّنْهُمْ لَيَكْتُمُوْنَ الْحَقَّ} إِلَى قَوْلِهِ : {فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِيْنَ}.

যাদের আমি কিতাব দিয়েছি তারা তাকে সেরূপ চেনে, যেরূপ তারা তাদের পুত্রদের চেনে। আর তাদের একদল জেনেশুনে নিশ্চিতভাবে সত্য গোপন করে। প্রকৃত সত্য তো তা, যা তোমার পালনকর্তার তরফ থেকে প্রাপ্ত। কাজেই তুমি সন্দিহানদের দলভুক্ত হয়ো না। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৪৬-১৪৭)

৪৪৯১

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা লোকেরা কুবা মাসজিদে ফাজ্রের সলাতে ছিলেন, তখন তাদের কাছে একজন আগন্তুক এসে বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর প্রতি এ রাতে কুরআন (এর আয়াত) অবতীর্ণ করা হয়েছে, আর এতে তিনি কাবার দিকে মুখ ফিরানোর জন্য নির্দেশিত হয়েছেন। কাজেই আপনারা কাবার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিন। আর তখন তাদের মুখ শামের দিকে ছিল। তখন তারা কাবার দিকে ঘুরে গেলেন। [৪০৩] (আ.প্র. ৪১৩৩, ই.ফা. ৪১৩৬)

৬৫/৪/২৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ

{وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِنْ كَانَ بِكُمْ أَذًى مِّنْ مَطَرٍ أَوْ كُنْتُمْ مَرْضٰىٓ أَنْ تَضَعُوْآ أَسْلِحَتَكُمْ}.

যদি তোমরা বৃষ্টির কারণে কষ্ট পাও অথবা যদি তোমরা অসুস্থ হও, এ অবস্থায় নিজেদের অস্ত্র পরিত্যাগ করলে তোমাদের কোন গুনাহ নেই। (সুরা আন-নিসা ৪/১০২)

৪৫৯৯

ইবনু আববাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

إِنْ كَانَ بِكُمْ أَذًى مِنْ مَطَرٍ أَوْ كُنْتُمْ مَرْضَى আয়াতটি নাযিল হয়েছিল যখন আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.) আহত হয়েছিলেন। (আঃপ্রঃ ৪২৩৮, ইঃফাঃ ৪২৪১)

৬৫/২/১৮. অধ্যায়ঃ

{وَلِكُلٍّ وِّجْهَةٌ هُوَ مُوَلِّيْهَا فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرٰتِ ط صـ أَيْنَ مَا تَكُوْنُوْا يَأْتِ بِكُمُ اللهُ جَمِيْعًا ط إِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ (148)}.

আর প্রত্যেকেরই রয়েছে একটি দিক, যেদিকে সে মুখ করে। সুতরাং তোমরা সৎকাজে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাও। যেখানেই তোমরা থাক না কেন, আল্লাহ তোমাদের সবাইকে একত্র সমবেত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৪৮)

৪৪৯২

বারাআ (ইবনু আযিব) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ষোল অথবা সতের মাস ব্যাপী (মাদীনাতে) বাইতুল মাকদাসের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করেছি। তারপর আল্লাহ তাঁকে কাবার পানে ফিরিয়ে দেন। [৪০] (আ.প্র. ৪১৩৪, ই.ফা. ৪১৩৭)

৬৫/২/১৯. অধ্যায়ঃ

{وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ط وَإِنَّه” لَلْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَ ط وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ (149)} شَطْرُهُ تِلْقَاؤُهُ.

যেখান থেকেই তুমি বের হও না কেন, তোমার মুখ আল-মাসজিদুল হারামের দিকে ফেরাও। নিশ্চয় এটা হল তোমার পালনকর্তার তরফ থেকে অবধারিত সত্য। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ বেখবর নন- (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৪৯)। شَطْرُهُ সেই দিকে।

৪৪৯৩

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা কূবা মাসজিদে সহাবীগণ ফাজ্রের সলাত সম্পাদন করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলিল, আজ রাতে [নাবী (সাঃআঃ)-এর প্রতি] কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে কাবার দিকে মুখ ফিরানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই আপনারা সেদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিন। তখন তারা আপন আপন অবস্থায় মুখ ঘুরিয়ে নেন এবং কাবার দিকে মুখ করেন। তখন তাদের মুখ সিরিয়ার দিকে ছিল। [৪০৩] (আ.প্র. ৪১৩৫, ই.ফা. ৪১৩৮)

৬৫/২/২০. অধ্যায়ঃ

{وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ط وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ} إِلَى قَوْلِهِ : {وَلَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ}.

এবং যেখান থেকেই তুমি বের হও না কেন, তোমার মুখ আল-মাসজিদুল হারামের দিকে ফেরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক না কেন সেদিকেই মুখ ফেরাবে, যাতে….. তোমরা সৎপথে পরিচালিত হইতে পার। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৫০)

৪৪৯৪

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা কূবাতে সহাবীগণ ফাজ্রের সলাত সম্পাদন করছিলেন এমন সময় এক আগন্তুক এসে বলিল, রাসুলুল্লাহ -এর প্রতি আজ রাতে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে এবং তিনি কাবার দিকে মুখ ফিরানোর নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছেন। অতএব আপনারাও সেদিকে মুখ ফিরিয়ে নিন। তাদের মুখ তখন ছিল সিরিয়ার দিকে। তখন তারা কাবার দিকে ফিরে গেলেন। [৪০৩] (আ.প্র. ৪১৩৬, ই.ফা. ৪১৩৯)

৬৫/২/২১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

{إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِ ج فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَا ط وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا لا فَإِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ (158)}

{شَعَآئِرٌ} : عَلَامَاتٌ وَاحِدَتُهَا شَعِيْرَةٌ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ الصَّفْوَانُ الْحَجَرُ وَيُقَالُ الْحِجَارَةُ الْمُلْسُ الَّتِيْ لَا تُنْبِتُ شَيْئًا وَالْوَاحِدَةُ صَفْوَانَةٌ بِمَعْنَى الصَّفَا وَالصَّفَا لِلْجَمِيْعِ.

নিশ্চয় সাফা ও মারওয়াহ হল আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে কেউ কাবা ঘরে হাজ্জ বা উমরাহ পালন করে তার পক্ষে এ দুটির মধ্যে প্রদক্ষিণ করাতে কোন পাপ নেই। আর কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোন নেক কাজ করলে আল্লাহ তার পুরস্কার দেবেন, তিনি সর্বজ্ঞ। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৫৮)

شَعَائِرٌ হলো شَعِيْرَةٌ এর বহু বচন। নিদর্শন। ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, সাফওয়ান অর্থ পাথর; বলা হত এমন পাথর যা কিছু উৎপন্ন করে না। একবচনেصَفْوَانَةٌ হয়ে থাকে। الصَّفَا বহুবচনে ব্যবহৃত হয়।

৪৪৯৫

উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশাহ (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম আর তখন আমি অল্প বয়সের ছিলাম।

মহান আল্লাহর বাণীঃ إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ এ আয়াত সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? “নিশ্চয় সাফা ও মারওয়াহ হল আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে কেউ কাবা ঘরে হাজ্জ বা উমরাহ পালন করে তার পক্ষে এ দুটির মধ্যে প্রদক্ষিণ করাতে কোন পাপ নেই” (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৫৮)। আমি মনে করি উক্ত দুই পর্বত সায়ী না করলে কোন ব্যক্তির উপর গুনাহ বর্তাবে না। তখন আয়েশাহ (রাদি.) বলিলেন, কক্ষনো তা নয়। তুমি যা বলছ যদি তাই হত তাহলে বলা হত এভাবে فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ “উভয় পর্বত তাওয়াফ না করাতে কোন গুনাহ বর্তাবে না। বস্তুতঃ এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে আনসারদের ব্যাপারে। তারা মানাত-এর পূজা করত। আর মানাত ছিল কুদায়েদের পথে অবস্থিত। আনসারগণ সাফা এবং মারওয়াহর মধ্যে সায়ী করা খারাপ জানত। ইসলামের আগমনের পর তারা এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করিল। তখন আল্লাহ অবতীর্ণ করিলেন إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوْ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا। [১৬৪৩] (আ.প্র. ৪১৩৭, ই.ফা. ৪১৪০)

৬৫/২/২১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

৪৪৯৬

আসিম ইবনু সুলাইমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)-কে সাফা ও মারওয়াহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমরা ঐ দুটিকে জাহিলী যুগের কাজ বলে মনে করতাম। যখন ইসলাম আসল, তখন আমরা এ দুটির মধ্যে সায়ী করা থেকে বিরত থাকি। তখন আল্লাহ আয়াত অবতীর্ণ করেন إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ থেকে أَنْ يَطَّوَّفَ পর্যন্ত। [১৬৪৮] (আ.প্র. ৪১৩৮, ই.ফা. ৪১৪১)

৬৫/২/২২. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

{وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ أَنْدَادًا} أَنْدَادًا : وَاحِدُهَا نِدٌّ.

মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যে আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে তাহাঁর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৬৫)

এখানেأَنْدَادًا অর্থ সমকক্ষ ও বরাবর। نِدٌّ এর একবচন।

৪৪৯৭

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) একটি কথা বলিলেন, আর আমি একটি বললাম। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে তাহাঁর সমকক্ষ হিসেবে আহ্বান করা অবস্থায় মারা যায়, সে জাহান্নামে যাবে। আর আমি বললাম, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে সমকক্ষ হিসেবে আহ্বান না করা অবস্থায় মারা যায়? (তিনি বলিলেন) সে জান্নাতে যাবে। [১২৩৮] (আ.প্র. ৪১৩৯, ই.ফা. ৪১৪২)

৬৫/২/২৩. অধ্যায়ঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিহতদের ব্যাপারে কিসাসের১ বিধান দেয়া হল, স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী। তবে তার ভাইয়ের তরফ থেকে কাউকে কিছু ক্ষমা করে দেয়া হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করিতে হইবে এবং সততার সঙ্গে তা তাকে প্রদান করিতে হইবে। এটা তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে ভার লাঘব ও বিশেষ রাহমাত। এরপরও যে কেউ বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা আল বাকারা ২/১৭৮)

৪৪৯৮

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বানী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের কিসাস প্রথা চালু ছিল কিন্তু দিয়াত তাদের মধ্যে চালু ছিল না। অনন্তর আল্লাহ তাআলা এ উম্মতের জন্য এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ হত্যার ক্ষেত্রে কিসাস বা খুনের বদলে খুন তোমাদের জন্য ফরয করা হয়েছে। স্বাধীন মানুষের বদলে স্বাধীন মানুষ, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং স্ত্রীলোকের বদলে স্ত্রীলোকের কিসাস নেয়া হইবে। হাঁ, কোন হত্যাকারীর সঙ্গে তার কোন (মুসলিম) ভাই নম্রতা দেখাতে চাইলে। উল্লিখিত আয়াতে আলআফুব فَالْعَفْوُ -এর অর্থ ইচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষেত্রে দিয়াত গ্রহণ করতঃ কিসাস ক্ষমা করে দেয়া। فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ অর্থাৎ এ ব্যাপারে যথাযথ বিধি মেনে চলবে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দিয়াত আদায় করে দেবে। তোমাদের পূর্বের লোকেদের উপরে আরোপিত কিসাস হইতে তোমাদের প্রতি দিয়াত ব্যবস্থা আল্লাহর পক্ষ হইতে তোমাদের প্রতি শাস্তি হ্রাস ও বিশেষ অনুগ্রহ। দিয়াত কবূল করার পরও যদি হত্যা করে তাহলে তার জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। [৬৮৮১] (আ.প্র. ৪১৪০, ই.ফা. ৪১৪৩)

৬৫/২/২৩. অধ্যায়ঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিহতদের ব্যাপারে কিসাসের১ বিধান দেয়া হল, স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী। তবে তার ভাইয়ের তরফ থেকে কাউকে কিছু ক্ষমা করে দেয়া হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করিতে হইবে এবং সততার সঙ্গে তা তাকে প্রদান করিতে হইবে। এটা তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে ভার লাঘব ও বিশেষ রাহমাত। এরপরও যে কেউ বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা আল বাকারা ২/১৭৮)

৪৪৯৯

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাদের কাছে নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আল্লাহর কিতাবের নির্দেশ হল কিসাস। [২৭০৩] (আ.প্র. ৪১৪৩, ই.ফা. ৪১৪৪)

৬৫/২/২৩. অধ্যায়ঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিহতদের ব্যাপারে কিসাসের১ বিধান দেয়া হল, স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী। তবে তার ভাইয়ের তরফ থেকে কাউকে কিছু ক্ষমা করে দেয়া হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করিতে হইবে এবং সততার সঙ্গে তা তাকে প্রদান করিতে হইবে। এটা তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে ভার লাঘব ও বিশেষ রাহমাত। এরপরও যে কেউ বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা আল বাকারা ২/১৭৮)

৪৫০০

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আনাসের ফুফু রুবাঈ এক বাঁদির সম্মুখ দাঁত ভেঙ্গে ফেলে। এরপর বাঁদির কাছে রুবাঈয়ের লোকজন ক্ষমা চাইলে বাঁদির লোকেরা অস্বীকার করে। তখন তাদের কাছে দিয়াত পেশ করা হল, তখন তা তারা গ্রহণ করিল না। অগত্যা তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সমীপে এসে ঘটনা জানাল। কিন্তু কিসাস ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করিতে তারা অস্বীকার করিল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কিসাসের নির্দেশ দিলেন। তখন আনাস ইবনু নযর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! রুবাঈদের সামনের দাঁত ভাঙ্গা হইবে? না, যে সত্তা আপনাকে সত্য সহ পাঠিয়েছেন তাহাঁর শপথ, তাহাঁর দাঁত ভাঙ্গা হইবে না। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আনাস! আল্লাহর কিতাব তো কিসাসের নির্দেশ দেয়। এরপর বাঁদির লোকেরা রাযী হয়ে যায় এবং রুবাঈকে ক্ষমা করে দেয়। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এমন মানুষও আছে যিনি আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহ তা পূরণ করেন। [২৭০৩] (আ.প্র. ৪১৪২, ই.ফা. ৪১৪৫)

৬৫/২/২৪. অধ্যায়ঃ

{يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ}

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সওম ফারয করা হল যেরূপ ফারয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হইতে পার। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৮৩)

৪৫০১

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জাহিলী যুগের লোকেরা আশুরার সওম পালন করত। এরপর যখন রমাযানের সওমের বিধান অবতীর্ণ হল, তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, যার ইচ্ছা সে আশুরার সওম পালন করিবে আর যার ইচ্ছা সে তার সওম পালন করিবে না। [১৮৯২; মুসলিম ১৩/১৯, হাদীস ১১২৬, আহমাদ ৬৩০০] (আ.প্র. ৪১৪৩, ই.ফা. ৪১৪৬)

৬৫/২/২৪. অধ্যায়ঃ

৪৫০২

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রমাযানের সওমের (আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার) পূর্বে আশুরার সওম পালন করা হত। এরপর যখন রমাযানের (সম্পর্কিত বিধান) অবতীর্ণ হল, তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, যে ইচ্ছা করে (আশুরার) সওম পালন করিবে, আর যে চায় সে সওম পালন করিবে না। [১৫৯২] (আ.প্র. ৪১৪৪, ই.ফা. ৪১৪৭)

৬৫/২/২৪. অধ্যায়ঃ

৪৫০৩

আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) (ইবনু মাসঊদ) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তাহাঁর নিকট আশআস (রাদি.) আসেন। এ সময় ইবনু মাসঊদ (রাদি.) পানাহার করছিলেন। তখন আশআস (রাদি.) বলিলেন, আজ তো আশুরা। তিনি বলিলেন, রমাযানের (এর সওমের বিধান) অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে আশুরার সওম পালন করা হত। যখন রমাযানের (এর সওমের বিধান) অবতীর্ণ হল তখন তা পরিত্যাগ করা হয়েছে। এসো, তুমিও খাও। [মুসলিম ১৩/১৯, হাদীস ১১২৭] (আ.প্র. ৪১৪৫, ই.ফা. ৪১৪৮)

৬৫/২/২৪. অধ্যায়ঃ

৪৫০৪

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জাহিলী যুগে কুরাইশগণ আশুরার দিন সওম পালন করত। নাবী (সাঃআঃ)-ও সে সওম পালন করিতেন। যখন তিনি মদিনায় হিজরাত করিলেন তখনও তিনি সে সওম পালন করিতেন এবং অন্যদের পালনের নির্দেশ দিতেন। এরপর যখন রমাযান (সম্পর্কিত আয়াত) অবতীর্ণ হলে রমাযানের সওম ফরয হল এবং আশুরার সওম বাদ গেল। এরপর যে চাইত সে উক্ত সওম পালন করত আর যে চাইত তা পালন করত না। [১৫৯২] (আ.প্র. ৪১৪৬, ই.ফা. ৪১৪৯)

৬৫/২/২৫. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

{أَيَّامًا مَّعْدُوْدٰتٍ ط فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيْضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ط وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَه” فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍ ط فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّه”ط وَأَنْ تَصُوْمُوْا خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ (184)}

নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। তবে তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে কিংবা সফরে থাকলে সে অন্য সময়ে সওমের সংখ্যা পূরণ করে নিবে। আর সওম যাদের জন্য অতিশয় কষ্টদায়ক, তারা এর পরিবর্তে ফিদয়া দিবে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করে। কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। যদি তোমরা সওম কর; তবে তা হইবে তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৮৪)

وَقَالَ عَطَاءٌ يُفْطِرُ مِنَ الْمَرَضِ كُلِّهِ كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى وَقَالَ الْحَسَنُ وَإِبْرَاهِيْمُ فِي الْمُرْضِعِ أَوِ الْحَامِلِ إِذَا خَافَتَا عَلَى أَنْفُسِهِمَا أَوْ وَلَدِهِمَا تُفْطِرَانِ ثُمَّ تَقْضِيَانِ وَأَمَّا الشَّيْخُ الْكَبِيْرُ إِذَا لَمْ يُطِقْ الصِّيَامَ فَقَدْ أَطْعَمَ أَنَسٌ بَعْدَ مَا كَبِرَ عَامًا أَوْ عَامَيْنِ كُلَّ يَوْمٍ مِسْكِيْنًا خُبْزًا وَلَحْمًا وَأَفْطَرَ قِرَاءَةُ الْعَامَّةِ يُطِيْقُوْنَهُ وَهْوَ أَكْثَرُ.

ইমাম আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সর্বপ্রকার রোগেই সওম ভাঙ্গা যাবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম হাসান ও ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, স্তন্যদাত্রী এবং গর্ভবতী স্ত্রীলোক যখন নিজ প্রাণ অথবা তাদের সন্তানের জীবনের প্রতি হুমকির আশঙ্কা করে তখন তারা উভয়ে সওম ভঙ্গ করিতে পারবে। পরে তা আদায় করে নিতে হইবে। অতিবৃদ্ধ ব্যক্তি সওম পালনে অক্ষম হলে যেমন আনাস (রাদি.) বৃদ্ধ হওয়ার পর এক বছর অথবা দুবছর প্রতিদিন এক দরিদ্র ব্যক্তিকে রুটি ও গোশ্ত খেতে দিতেন এবং সওম ত্যাগ করিতেন। অধিকাংশ লোকের কিরাআত হল يُطِيْقُوْنَهُ অর্থাৎ যারা সওমের সামর্থ্য রাখে এবং এটাই সাধারণ্যে প্রচলিত।

৬৫/২/২৬. অধ্যায়ঃ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে সওম করে । (সূরা আল বাকারা ২/১৮৫)

৪৫০৬

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি পাঠ করিতেন فِدْيَةٌ طَعَامُ مَسَاكِينَ রাবী বলেন, এ আয়াত (فَمَنْ شَهِدَ الخ আয়াত দ্বারা) রহিত হয়ে গেছে। [১৯৪৯] (আ.প্র. ৪১৪৮, ই.ফা. ৪১৫১)

৪৫০৭

সালামাহ ইবনু আকওয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ এ আয়াত অবতীর্ণ হল এবং যারা সওম পালনের সামর্থ্য রাখে তারা একজন মিসকীনকে ফিদ্য়া স্বরূপ আহার্য দান করিবে। তখন যে ইচ্ছা সওম ভঙ্গ করত এবং তার পরিবর্তে ফিদ্য়া প্রদান করত। এরপর পরবর্তী আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং পূর্বোক্ত আয়াতের হুকুম রহিত করে দেয়।

আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইয়াযীদের পূর্বে বুকায়র মারা যান। [মুসলিম ১৩/২৫, হাদীস ১১৪৫] (আ.প্র. ৪১৪৯, ই.ফা. ৪১৫২)

৬৫/২/২৭. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

{أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلٰى نِسَآئِكُمْ ط هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ط عَلِمَ اللهُ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُوْنَ أَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ ج فَالْئٰنَ بَاشِرُوْهُنَّ وَابْتَغُوْا مَا كَتَبَ اللهُ لَكُمْ}

তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে সিয়ামের রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করা। তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক। আল্লাহ জানতেন যে, তোমরা নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা করছিলে। সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করিলেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিলেন। অতএব, এখন থেকে তোমরা তাদের সঙ্গে সহবাস করিতে পার এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ করিয়াছেন তা লাভ কর। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৮৭)

৪৫০৮

বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন রমাযানের সওমের হুকুম অবতীর্ণ হল তখন মুসলিমরা গোটা রমাযান মাস স্ত্রীদের নিকটবর্তী হইতেন না আর কিছু সংখ্যক লোক এ ব্যাপারে নিজেদের উপর (স্ত্রী-সম্ভোগ করে) অবিচার করে বসে। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন عَلِمَ اللهُ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُونَ أَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ “আল্লাহ জানতেন যে, তোমরা নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা করছিলে। সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করিলেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিলেন। অতএব, এখন থেকে তোমরা তাদের সঙ্গে সহবাস করিতে পার এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ করিয়াছেন তা লাভ কর” (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৮৭)। [১৯১৬] (আ.প্র. ৪১৫১, ই.ফা. ৪১৫৩)

৬৫/২/২৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

{وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتّٰى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِص ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ ج وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَأَنْتُمْ عٰكِفُوْنَ فِي الْمَسَاجِدِ} إِلَى قَوْلِهِ {يَتَّقُوْنَ} الْعَاكِفُ : الْمُقِيْمُ.

আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। তারপর সওম পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর তোমরা যখন মসজিদে ইতিকাফ করিবে তখন স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করিবে না। এগুলো আল্লাহর বেঁধে দেয়া সীমারেখা। সুতরাং এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে আল্লাহ তাহাঁর নিদর্শনাবলী মানুষের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা সতর্কতা অবলম্বন করিতে পারে। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৮৭)

আল আকিফু الْعَاكِفُ الْمُقِيْمُ অবস্থানকারী।

৪৫০৯

আদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি (আদী) একটি সাদা ও একটি কালো সুতা সঙ্গে রাখলেন। কিন্তু রাত অতিবাহিত হলে খুলে দেখলেন কিন্তু তার কাছে সাদা কালোর কোন পার্থক্য নিরূপিত হল না। যখন সকাল হল তখন তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার বালিশের নিচে (সাদা ও কালো রংয়ের দুটি সুতা) রেখেছিলাম (এবং তিনি রাতের ঘটনাটি বলিলেন)। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমার বালিশ তো খুবই বড় দেখছি, যদি কালো ও সাদা সুতা (সুবহি কাযিব ও সুবহি সাদিক) তোমার বালিশের নিচে থেকে থাকে। (রাসুল (সাঃআঃ) আদী (রা.)-এর বর্ণনা শুনে কৌতুক করে বলেছেন যে, গোটা পূর্বাকাশ যদি তোমার বালিশের নিচে রেখে থাক তাহলে সে বালিশ তো খুব বড়ই দেখছি) [১৯১৬] (আ.প্র. ৪১৫২, ই.ফা. ৪১৫৪)

৬৫/২/২৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

৪৫১০

আদী ইবনু হাতিম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! (আল্লাহর বাণীতে) الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ সাদা সুতা কালো সুতা থেকে বের হয়ে আসার অর্থ কী? আসলে কি ঐ দুটি সুতা? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি আজব লোক দেখছি যে, সূতা দুটি তুমি দেখিতে পেয়েছ। তারপর তিনি বলিলেন, তা নয় বরং এ হল রাতের কৃষ্ণতা ও দিনের শুভ্রতা। [১৯১৬] (আ.প্র. ৪১৫৩, ই.ফা. ৪১৫৫)

৬৫/২/২৯. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

{وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَنْ تَأْتُوا الْبُيُوْتَ مِنْ ظُهُوْرِهَا وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنِ اتَّقٰى ج وَأْتُوا الْبُيُوْتَ مِنْ أَبْوٰبِهَا ص وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ}

আর পেছনের দিক দিয়ে ঘরে প্রবেশ করাতে কোন পুণ্য নেই, বরং পুণ্য আছে কেউ তাকওয়া অবলম্বন করলে। সুতরাং তোমরা দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ কর এবং আল্লাহ্কে ভয় কর, যাতে তোমরা কৃতকার্য হইতে পার। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৮৯)

৪৫১১

সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمْ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ এ আয়াত যখন অবতীর্ণ হয় তখন مِنَ الْفَجْرِ ফজর হইতে কথাটি অবতীর্ণ হয়নি। তাই লোকেরা সওম পালনের ইচ্ছা করলে তখন তাদের কেউ কেউ দুই পায়ে সাদা ও কালো রঙের সূতা বেঁধে রাখত। এরপর ঐ দুটি সুতা পরিষ্কারভাবে দেখা না যাওয়া পর্যন্ত তারা পানাহার করত। তখন আল্লাহ তাআলা পরে مِنَ الْفَجْرِ শব্দটি অবতীর্ণ করেন। এতে লোকেরা জানতে পারেন যে, এ দ্বারা উদ্দেশ্য হল দিন হইতে রাত্রির স্পষ্টতা। [১৯১৭] (আ.প্র. ৪১৫৪, ই.ফা. ৪১৫৬)

৬৫/২/৩০. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

{وَقٰتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّيَكُوْنَ الدِّيْنُ لِلهِ ط فَإِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظّٰلِمِيْنَ}

আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবে যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দ্বীন শুধু আল্লাহর জন্য হয়। তারপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তবে সীমালংঘনকারীদের ব্যতীত কাউকে জবরদস্তি করা চলবে না। (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৯৩)

৪৫১২

বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জাহিলী যুগে যখন লোকেরা ইহরাম বাঁধত, তারা পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করত। তখন আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করিলেন “আর পেছনের দিক দিয়ে ঘরে প্রবেশ করাতে কোন পুণ্য নেই, বরং পুণ্য আছে কেউ তাকওয়া অবলম্বন করলে। সুতরাং তোমরা দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করো” (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৮৯)। [১৮০৩] (আ.প্র. ৪১৫৫, ই.ফা. ৪১৫৭)

৬৫/২/৩১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

{وَأَنْفِقُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا تُلْقُوْا بِأَيْدِيْكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ؁ج وَأَحْسِنُوْا ؁ج إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ (195)} التَّهْلُكَةُ وَالْهَلَاكُ وَاحِدٌ.

আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে এবং নিজেদের হাতে নিজেদেরকে তোমরা ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না। আর তোমরা সৎকাজ কর। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন- (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৯৫)। আয়াতে উল্লেখিত التَّهْلُكَةُ ও الْهَلَاك একই অর্থে ব্যবহৃত।

৪৫১৩

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাহাঁর কাছে দুই ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়রের যুগে সৃষ্ট ফিতনার সময় আগমন করিল এবং বলিল, লোকেরা সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আর আপনি উমার (রাদি.)-এর পুত্র এবং নাবী (সাঃআঃ)-এর সহাবী! কী কারণে আপনি বের হন না? তিনি উত্তর দিলেন আমাকে নিষেধ করেছে এই কথানিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আমার ভাইয়ের রক্ত হারাম করেছে। তারা দুজন বলিলেন, আল্লাহ কি এ কথা বলেননি যে, তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর যাবৎ না ফিতনার অবসান ঘটে। তখন ইবনু উমার (রাদি.) বলিলেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি যাবৎ না ফিতনার অবসান ঘটেছে এবং দ্বীনও আল্লাহর জন্য হয়ে গেছে। আর তোমরা ফিতনা প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করার ইচ্ছা করছ আর যেন আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য দ্বীন হয়ে গেছে। [৩১৩০] (আ.প্র. ৪১৫৬, ই.ফা. ৪১৫৮)

৪৫১৪

নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি ইবনু উমার (রাদি.)-এর নিকট এসে বলিল, হে আবু আবদুর রহমান! কী কারণে আপনি এক বছর হাজ্জ করেন এবং এক বছর উমরাহ করেন অথচ আল্লাহর পথে জিহাদ ত্যাগ করিয়াছেন? আপনি পরিজ্ঞাত আছেন যে, আল্লাহ এ বিষয়ে জিহাদ সম্পর্কে কীভাবে উদ্বুদ্ধ করিয়াছেন। ইবনু উমার (রাদি.) বলিলেন, হে ভাতিজা! ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে পাঁচটি বস্তুর উপর ঃ আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সঃ)-এর প্রতি ঈমান আনা, পাঁচ ওয়াক্ত সলাত প্রতিষ্ঠা, রমাযানের সওম পালন, যাকাত প্রদান এবং বাইতুল্লাহ্র হাজ্জ পালন। তখন সে ব্যক্তি বলিল, হে আবু আবদুর রহমান! আল্লাহ তাআলা তাহাঁর কিতাবে কী বর্ণনা করিয়াছেন তা কি আপনি শুনেননি? وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللهِ “আর যদি মুমিনদের দুটি দল পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অন্য দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তবে তোমরা যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবে যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে, তবে তোমরা উভয় দলের মধ্যে ন্যায়ের সঙ্গে সন্ধি করে দিবে এবং ইনসাফ করিবে। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ কায়িমকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সুরা আল-হুজরাত ৪৯/৯)

قَاتِلُوهُمْ حَتَّى لاَ تَكُونَ فِتْنَةٌ (এ আয়াতগুলো শ্রবণ করার পর) ইবনু উমার (রাদি.) বলিলেন, আমরা এ কাজ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর যুগে করেছি এবং তখন ইসলামের অনুসারীর দল স্বল্প সংখ্যক ছিল। যদি কোন লোক দ্বীন সম্পর্কে ফিতনায় নিপতিত হত তখন হয় তাকে হত্যা করা হত অথবা শাস্তি প্রদান করা হত। এভাবে ইসলামের অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে গেল। তখন আর কোন ফিতনা রইল না। [৮, ৩১৩০] (আ.প্র. ৪১৫৭, ই.ফা. ৪১৫৮ শেষাংশ)

৬৫/২/৩২. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা মাথায় কোন কষ্ট থাকে তবে সওম কিংবা সদাকাহ অথবা কুরবানী দিয়ে তার ফিদ্ইয়া দিবে। (সূরা আল বাকারা ২/১৯৬)

৪৫১৭

আবদুল্লাহ ইবনু মাকিল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি কাব ইবনু উজরা-এর নিকট এই কূফার মাসজিদে বসে থাকাকালে সওমের ফিদ্য়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, আমার চেহারায় উকুন ছড়িয়ে পড়া অবস্থায় আমাকে নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে আনা হয়। তিনি তখন বলিলেন, আমি মনে করি যে, এতে তোমার কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি একটি বকরী সংগ্রহ করিতে পার? আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, তুমি তিনদিন সওম পালন কর অথবা ছয়জন দরিদ্রকে খাদ্য দান কর। প্রতিটি দরিদ্রকে অর্ধ সা খাদ্য দান করিতে হইবে এবং তোমার মাথার চুল কামিয়ে ফেল। তখন আমার ব্যাপারে বিশেষভাবে আয়াত অবতীর্ণ হয়। তবে তোমাদের সকলের জন্য এই হুকুম। [১৮১৪] (আ.প্র. ৪১৫৯, ই.ফা. ৪১৬০)

৬৫/২/৩৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ যখন তোমরা নিরাপদ হইবে, তখন তোমাদের মধ্যে যে কেউ হাজ্জ ও উমরাহ একত্রে পালন করিতে চায়, সে যা কিছু সহজলভ্য তা দিয়ে কুরবানী করিবে। (সূরা আল বাকারা ২/১৯৬)

৪৫১৮

ইমরান ইবনু হুসাইন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তামাত্তুর (উমরাহ ও হাজ্জ একসঙ্গে করে লাভবাব হওয়ার) আয়াত আল্লাহর কিতাবে অবতীর্ণ হয়েছে। এরপর আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে তা) করেছি এবং এর নিষিদ্ধতা ঘোষণা করে কুরআনের কোন আয়াত অবতীর্ণ হয়নি এবং নাবী (সাঃআঃ) ইন্তিকাল পর্যন্ত তা থেকে নিষেধও করেনি। এ ব্যাপারে এক ব্যক্তি নিজের ইচ্ছানুযায়ী মতামত ব্যক্ত করিয়াছেন। [১৫৭১; মুসলিম ১৫/২৩, হাদীস ১২২৬, আহমাদ ১৯৮৭১] (আ.প্র. ৪১৬০, ই.ফা. ৪১৬১)

৬৫/২/৩৪. অধ্যায়ঃ তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় তোমাদের কোন পাপ নেই। (সূরা আল বাকারা ২/১৯৮)

৪৫১৯

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উকায, মাজান্না এবং যুল-মাজায নামক স্থানে জাহিলী যুগে বাজার ছিল। মুসলিমগণ সেখানে হাজ্জ মওসুমে ব্যবসা করিতে যাওয়া দূষণীয় মনে করত। তাই অবতীর্ণ হলঃ “তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় তোমাদের কোন পাপ নেই” (সুরা আল-বাকারাহ ২/১৯৮)। [১৭৭০] (আ.প্র. ৪১৬১, ই.ফা. ৪১৬২)

৬৫/২/৩৫. অধ্যায়ঃ তারপর তোমরা দ্রুতগতিতে সেখান থেকে ফিরে আস যেখান থেকে সবাই ফিরে। (সূরা আল বাকারা ২/১৯৯)

৪৫২০

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

কুরাইশ এবং যারা তাদের দ্বীনের অনুসারী ছিল তারা (হাজ্জের সময়) মুযদালাফাহইতে অবস্থান করত। আর কুরাইশগণ নিজেদের হুকুম ও (ধর্মে অটল) বলে অভিহিত করত এবং অপরাপর আরবগণ আরাফাতে অবস্থান করত। অতঃপর ইসলামের আগমন ঘটলে আল্লাহ তাআলা তাহাঁর নাবী (সাঃআঃ)-কে আরাফাতে আসার, সেখানে ওকুফের এবং এরপর সেখান থেকে ফেরার নির্দেশ দিলেন। ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ আয়াত আল্লাহ এ সম্পর্কেই ব্যক্ত করিয়াছেন। [১৬৬৫] (আ.প্র. ৪১৬২, ই.ফা. ৪১৬৩)

৪৫২১

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তামাত্তু আদায়কারী উমরাহ আদায়ের পর যদ্দিন হালাল অবস্থায় থাকবে তদ্দিন বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করিবে। তারপর হাজ্জের জন্য ইহ্রাম বাঁধবে। এরপর যখন আরাফাতে যাবে তখন উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি যা মুহ্রিমের জন্য সহজলভ্য হয় তা মীনাতে কুরবানী করিবে। আর যে কুরবানীর সঙ্গতি রাখে না সে হাজ্জের দিনসমূহের মধ্যে তিনদিন সওম পালন করিবে। আর তা আরাফার দিনের আগে হইতে হইবে। আর তিনদিনের শেষ দিন যদি আরাফার দিন হয়, তবে তাতে কোন দোষ নেই। তারপর আরাফাত ময়দানে যাবে এবং সেখানে আসরের সলাত হইতে সূর্যাস্তের অন্ধকার পর্যন্ত ওকুফ (অবস্থান) করিবে। এরপর আরাফা হইতে প্রত্যাবর্তন করে মুযদালাফায় পৌঁছে সেখানে পুণ্য অর্জনের কাজ করিতে থাকবে আর সেখানে আল্লাহ্কে অধিক অথবা (রাবীর সন্দেহ) সবচেয়ে অধিক স্মরণ করিবে। সেখানে ফাজ্র হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাকবীর ও তাহলীল পাঠ করিবে। এরপর (মীনার দিকে) প্রত্যাবর্তন করিবে যেভাবে অন্যান্য লোক প্রত্যাবর্তন করে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, “এরপর প্রত্যাবর্তন কর সেখান হইতে, যেখান হইতে লোকজন প্রত্যাবর্তন করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল, দয়াময়।” তারপর জামরায় প্রস্তর নিক্ষেপ করিবে। (আ.প্র. ৪১৬৩, ই.ফা. ৪১৬৪)

৬৫/২/৩৬. অধ্যায়ঃ

{وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ (201) }

এবং তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যে বলেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! এ দুনিয়াতেও আমাদের কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান কর এবং জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা কর।[১] (সুরা আল-বাকারাহ ২/২০১)

৪৫২২

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এই বলে দুআ করিতেন ঃ اللهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ “হে আমাদের প্রভু! এ দুনিয়াতেও আমাদের কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান কর এবং দোজখের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা কর” (সুরা আল-বাকারাহ ২/২০১)। (আ.প্র. ৪১৬৪, ই.ফা. ৪১৬৫)

[১] উপরোক্ত আয়াতটিকে আল্লাহর রাসুল সাঃআঃ অধিকাংশ সময় পঠিতব্য দুআ হিসেবে ব্যবহার করিয়াছেন। কারণ উক্ত দুআ ও আয়াতের দ্বারা বান্দা আল্লাহর নিকট দুনিয়ার সামগ্রিক কল্যাণ ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ কামনা করে থাকে। আখিরাতের অনন্ত জীবনকে ভুলে গিয়ে যারা কেবল পার্থিব জীবনকে নিয়ে ব্যস্ত, তাদেরকে এই বস্ত্তজগতের মোহ-মমতার প্রতি এত বিপুল পরিমাণে আকর্ষণ করে যে, শেষ পর্যন্ত এই শ্রেণীর মানুষ আল্লাহকে ভুলে গিয়ে সীমাহীনভাবে পাপাসক্তিতে লিপ্ত হয়, স্বীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রয়োজনে অন্যায়-অত্যাচার, অবিচার, ব্যভিচার ও লুণ্ঠনসহ যাবতীয় নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতার সীমা ছাড়িয়ে এক হিংস্র পশুতে পরিণত হয়। অবলীলায় সৃষ্টি জগতের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বার্থপরতা, ভোগবাদিতা, লোলুপতা ও লাম্পট্য তাকে আল্লাহ বিমুখ করে দেয়। ফলে এই শ্রেণীর মানুষদের মধ্য হইতেই নাস্তিক্যবাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত নাস্তিক হয়ে তাকে দুনিয়া ত্যাগ করিতে হয়।

পক্ষান্তরে আল্লাহয় বিশ্বাসী আর এক শ্রেণীর মানুষ দুনিয়ার প্রতি এতই ত্যক্ত, বিরক্ত যে তারা বিবাহ-শাদীতে অনাগ্রহী ব্যবসা-বাণিজ্যে অমনোযোগী, ঘর-সংসারের কাজে-কর্মে অনুৎসাহী হয়ে এক ধরনের বৈরাগ্য জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে কালাতিপাত করিতে থাকে। বলা বাহুল্য, এই শ্রেণীর মানুষ সমাজ, দেশ, জাতি ও বিশ্ব সভ্যতার উপরে দুর্বহ বোঝার ন্যায় বিচরণ করছে। উল্লেখ্য, উপরোক্ত উভয় শ্রেণীর মানুষই মানবতা, সভ্যতা ও বিশ্ব বিবেকের বিচারে অবাঞ্ছিত, অনাকাঙ্ক্ষিত বটে। অতএব আলোচ্য প্রার্থনামূলক আয়াত দ্বারা আল্লাহ তাআলা এতদুভয়কেই এক নৈতিক, আধ্যাত্মিক, ব্যবহারিক তথা মানুষের প্রাত্যহিক জীবনকে পরিমার্জিত ও সুষমামন্ডিত করার জন্য এক অভূতপূর্ব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করিয়াছেন। আলোচ্য দুআর আয়াতে উভয় শ্রেণীকে এক সুসমন্বয় ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় উন্নীত করার সুচিন্তিত ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। আর এ বিষয়ের সংক্ষিপ্ত কথা এই যে, কেবল দুনিয়া দুনিয়া করে মহামূল্যবান জীবনকে শেষ করলে চলবে না, আখিরাত অবশ্যম্ভাবী। আবার আখিরাতের প্রতি মনোযোগ দিতে গিয়ে কেউ যেন সংসারবিরাগী হয়ে না যায়। কৃচ্ছ্র সাধনায়, বৈরাগ্য সাধনায় ইহ-পরকালের কোন কল্যাণ নেই, আল্লাহ প্রেমিক যেন এ কথাটিকে শিরোধার্য করে নেয়। উক্ত আয়াতের একান্ত ও মৌল লক্ষ্য এটাই। দুনিয়ার প্রতি আসক্তি আসার প্রয়োজন আছে, অতটুকু যতটুকু উপায়-উপকরণ ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন যাপনে আবশ্যক। যেমন কবির ভাষায় প্রতিভাত হয়েছেঃ آب اندر در هلاك كشتى است – آب اندر زير كشتى ﭘشتى است (رومي رح)

নৌকা চলতে পানির আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। কিন্তু সেই পানি নৌকায় বেশী পরিমাণে প্রবেশ করলে নৌকার ধ্বংস ও নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সুতরাং এ দুনিয়ার সাথে একজন মুমিনের সম্পর্ক তেমন, যেমন নৌকার সাথে পানির সম্পর্ক। একজন মুমিনের জন্য দুনিয়ায় সতর্কতা আবশ্যক। যাতে সে এ ভব সাগরে চিরতরেই ডুবে না যায়। আসুন! এখন এ বিষয়ে নাবী সাঃআঃ-এর অমিয় বাণী থেকে হিদায়াত গ্রহণে মনোনিবেশ করি। সহীহুল বুখারীর বর্ণনায় নিম্নোক্ত সহীহ হাদীস, আহমাদ বিন হাম্বলের বর্ণনায় ও অন্যান্য গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারীদের রিওয়ায়াতে আছে।

فقال البخاري: حدثنا معمر حدثنا عبد الوارث عن عبد العزيز عن أنس بن مالك قال: كان النبي – صلى الله عليه وسلم – يقول “اللهم ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار” وقال أحمد: حدثنا إسماعيل بن إبراهيم حدثنا عبد العزيز بن صهيب قال: سأل قتادة أنسا أي دعوة كان أكثر ما يدعوها النبي صلى الله عليه وسلم قال: يقول “اللهم ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار” وكان أنس إذا أراد أن يدعو بدعوة دعا بها وإذا أراد أن يدعو بدعاء دعا بها فيه ورواه مسلم وقال ابن أبي حاتم: حدثنا أبي حدثنا أبو نعيم حدثنا عبدالسلام بن شداد يعني أبا طالوت قال: كنت عند أنس بن مالك فقال له ثابت إن إخوانك يحبون أن تدعو لهم فقال: اللهم آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار وتحدثوا ساعة حتى إذا أرادوا القيام قال أبا حمزة: إن إخوانك يريدون القيام فادع الله لهم فقال: أتريدون أن أشقق لكم الْأمور إذا آتاكم الله في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة ووقاكم عذاب النار فقد آتاكم الخير كله. وقال أحمد أيضا: حدثنا محمد بن أبي عدي عن حميد عن ثابت عن أنس أن رسول الله – صلى الله عليه وسلم – عاد رجلا من المسلمين قد صار مثل الفرخ فقال له رسول الله – صلى الله عليه وسلم – “هل تدعو الله بشيء أو تسأله إياه” قال نعم: كنت أقول اللهم ما كنت معاقبي به في الآخرة فعجله لي في الدنيا. فقال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – “سبحان الله لا تطيقه أو لا تستطيعه فهلا قلت “ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار” قال فدعا الله فشفاه

অর্থঃ ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) পরপর কয়েকজন বর্ণনাকারীর উল্লেখ করে আনাস বিন মালিক (রাদি.) থেকে তিনি নাবী সাঃআঃ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাঃআঃ এই বলে দুআ করিতেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতের সমস্ত কল্যাণও দান কর এবং জাহান্নামের শাস্তি হইতে বাঁচাও। অতঃপর ইমাম আহমাদ বলেন, ক্বাতাদাহ আনাস (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, নাবী সাঃআঃ কোন দুআটি বেশী বেশী করিতেন? তিনি (উত্তরে) বলেন, নাবী সাঃআঃ রাববানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া . . . . . . . . ওয়াক্বিনা আযাবান নার এই দুআই বেশী বেশী করিতেন। অতঃপর ইমাম মুসলিম বলেন, আনাস (রাদি.) দুআ করার ইচ্ছা করলে তিনিও উক্ত দুআ করিতেন। আনাস বিন মালিক (রাদি.)-এর অন্য বর্ণনায় দেখা যায় তাঁকে সাবিত নামক জনৈক তাবিয়ী বলেন যে, আপনার ভাইয়েরা কামনা করছে, আপনি তাদের জন্য একটু দুআ করুন, তখন তিনি উপরোক্ত দুআই করেন। আনাস হইতে আর একটি ঘটনার উল্লেখ দেখা যায়, তা এই যে, আল্লাহর রাসুল সাঃআঃ এক মুসলিম রোগীকে ডাকলেন; যে স্বীয় রোগব্যাধির কারণে অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়েছিল। আল্লাহর রাসুল সাঃআঃ তাকে বলিলেন, তুমি কি আল্লাহর কাছে দুআর মাধ্যমে কোন কিছু চাও? লোকটি বলিল, হ্যাঁ চাই। আর তা এই যে, আমি আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করছি, তিনি যেন আমাকে আখিরাতে শাস্তি না দিয়ে তাড়াতাড়ি এই দুনিয়াতেই শাস্তি দেন। আল্লাহর রাসুল সাঃআঃ বলিলেন, সুবহানাল্লাহ! ওহে! তোমার তা সহ্য করার ক্ষমতা নেই। কেন তুমি রাববানা আতিনা . . . . . ওয়াক্বিনা আযাবান্ নার- এই দুআটি আল্লাহর নিকট করছ না? রাবী বলেন, অতঃপর এই দুআর ওয়াসীলায় আল্লাহ তাআলা উক্ত লোকটিকে রোগ-যন্ত্রণা হইতে মুক্তি দেন ও সুস্থ করেন। সুবহানাল্লাহ! আলোচ্য আয়াত ও উল্লেখিত হাদীসসমূহ দ্বারা নিশ্চিতভাবেই প্রমাণিত হচ্ছে নাবী সাঃআঃ দুনিয়া আখিরাত উভয়টিকেই মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় বিধায় স্বীয় মুবারক দুআর মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য দুআ করিতেন এবং আল্লাহ তাআলার বিধান ও মর্জি এ বিষয়ে এমন বলেই তিনি কুরআন মাজীদের দ্বারা তদীয় নাবী সাঃআঃ ও সমস্ত মুমিনদেরকে দুনিয়ার কল্যাণ, আখিরাতের কল্যাণ ও জাহান্নাম হইতে মুক্তির জন্য প্রার্থনা বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন। যাতে একটা করিতে গিয়ে আর একটা হালকা হয়ে না যায়। সুতরাং এ বিষয়টির উপসংহার করিতে গিয়ে ফারসী ভাষায় রচিত আল্লাহর ওয়ালীর কবিতাখানি এখানে যথার্থই প্রণিধানযোগ্য। কবি বলেনঃ نمردانست كه دينا دوست دارد ু اكر دارد برائ دوست دارد (سعدي رح)

এ দুনিয়া আমার প্রকৃত বন্ধু নয়, তবে আমার পরম বন্ধু আল্লাহর কাজ করিতে গিয়ে দুনিয়ার সাহায্য নিতে হয়। এজন্য যতটুকু একান্ত প্রয়োজন, হালাল-হারামের সীমার মধ্যে অবস্থান করে ঠিক ততটুকু দুনিয়াদারী করা দূষণীয় নয়। বরং আবশ্যক বটে।

৬৫/২/৩৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ প্রকৃতপক্ষে সে কিন্তু ঘোর বিরোধী। (সূরা আল বাকারা ২/২০৪) وَقَالَ عَطَاءٌ النَّسْلُ الْحَيَوَانُ.

আতা বলেন, النَّسْلُজানোয়ার।

৪৫২৩

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আল্লাহর নিকট অতিশয় ঘৃণিত মানুষ হচ্ছে অতিরিক্ত ঝগড়াটে ব্যক্তি। [২৪৫৭]

আবদুল্লাহ বলেন, আমার কাছে সুফ্ইয়ান হাদীস বর্ণনা করেন, সুফ্ইয়ান বলেন, আমার কাছে ইবনু জুরায়জ ইবনু আবু মুলাইকাহ হইতে আয়েশাহ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে এই মর্মে বর্ণনা করিয়াছেন। (আ.প্র. ৪১৬৫, ই.ফা. ৪১৬৬)

৬৫/২/৩৮. অধ্যায়ঃ তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা বেহেশতে চলে যাবে, যদিও এখনও তোমরা তাদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে গত হয়েছে? তাদের উপর পতিত হয়েছিল অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ। তারা এমনভাবে ভীত-শিহরিত হয়েছিল যে, রাসুল এবং তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদের বলিতে হয়েছিলঃ কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? হাঁ, আল্লাহর সাহায্য একান্তই কাছে। (সূরা আল বাকারা ২/২১৪)

৪৫২৪

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর বাণীঃ এমনকি যখন রাসুলগণ নিরাশ হয়ে পড়ল এবং ভাবতে লাগল যে, তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হয়েছে (সুরা ইউসুফ ১২/১১০)। তখন ইবনু আব্বাস (রাদি.) এই আয়াতসহ সুরা আল-বাকারাহর আয়াতের শরণাপন্ন হন ও তিলাওয়াত করেন, যেমনঃ حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللهِ أَلاَ إِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيبٌ এমনকি রাসুল (সাঃআঃ) এবং তাহাঁর সঙ্গে ঈমান আনয়নকারীগণ বলে উঠেছিলআল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? হ্যাঁ, হ্যাঁ, আল্লাহর সাহায্য নিকটেই (সুরা আল-বাকারাহ ২/২১৪)।

৬৫/২/৩৮. অধ্যায়ঃ তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা বেহেশতে চলে যাবে, যদিও এখনও তোমরা তাদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে গত হয়েছে? তাদের উপর পতিত হয়েছিল অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ। তারা এমনভাবে ভীত-শিহরিত হয়েছিল যে, রাসুল এবং তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদের বলিতে হয়েছিলঃ কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? হাঁ, আল্লাহর সাহায্য একান্তই কাছে। (সূরা আল বাকারা ২/২১৪)

৬৫/২/৩৯. অধ্যায়ঃ

মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের স্ত্রীরা হল তোমাদের শস্যক্ষেত্র। যেভাবে ইচ্ছা তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে গমন করিতে পার। তবে তোমরা নিজেদের জন্য কিছু আগামী দিনের ব্যবস্থা করিবে এবং আল্লাহ্কে ভয় করিবে। আর জেনে রেখ যে, আল্লাহর সঙ্গে তোমাদের সাক্ষাৎ হইবেই এবং মুমিনদের সুসংবাদ দাও। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২২৩)

৪৫২৬

নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনু উমার (রাদি.) যখন কুরআন তিলাওয়াত করিতেন তখন কুরআন তিলাওয়াত হইতে অবসর না হয়ে কোন কথা বলিতেন না। একদা আমি সুরা আল-বাকারাহ পাঠরত অবস্থায় তাঁকে পেলাম। পড়তে পড়তে এক স্থানে তিনি পৌঁছলেন। তখন তিনি বলিলেন, তুমি জান, কী ব্যাপারে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে? আমি বললাম, না। তিনি তখন বলিলেন, অমুক অমুক ব্যাপারে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। তারপর আবার পাঠে অগ্রসর হলেন। [৪৫২৭] (আ.প্র. ৪১৬৭, ই.ফা. ৪১৬৮)

৬৫/২/৩৯. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের স্ত্রীরা হল তোমাদের শস্যক্ষেত্র। যেভাবে ইচ্ছা তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে গমন করিতে পার। তবে তোমরা নিজেদের জন্য কিছু আগামী দিনের ব্যবস্থা করিবে এবং আল্লাহ্কে ভয় করিবে। আর জেনে রেখ যে, আল্লাহর সঙ্গে তোমাদের সাক্ষাৎ হইবেই এবং মুমিনদের সুসংবাদ দাও। (সূরা আল বাকারা ২/২২৩)

৪৫২৭

আবদুস সামাদ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেন, আমার পিতা, তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেন আইয়ুব, তিনি নাফি থেকে আর নাফি ইবনু উমার (রাদি.) থেকে। فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ “অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করিতে পার” (সুরা আল-বাকারাহ ২/২২৩)। রাবী বলেন, স্ত্রীলোকের পশ্চাৎদিক দিয়ে সহবাস করিতে পারে। মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ তাহাঁর পিতা থেকে, তিনি উবাইদুল্লাহ থেকে, তিনি নাফি থেকে এবং তিনি ইবনু উমার (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। [৪৫২৬] (আ.প্র. ৪১৬৭, ই.ফা. ৪১৬৮)

৬৫/২/২৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

৪৫২৮

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইয়াহূদীরা বলত যে, যদি কেউ স্ত্রীর পেছন দিক থেকে সহবাস করে তাহলে সন্তান টেরা চোখের হয়। তখন (এর প্রতিবাদে) نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ আয়াত অবতীর্ণ হয়। [মুসলিম ত্বলাক/১৮, হাদীস ১৪৩৫] (আ.প্র. ৪১৬৮, ই.ফা. ৪১৬৯)

৬৫/২/৪০. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আর যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের তালাক দিয়ে দাও এবং তারা তাদের ইদ্দাতকাল পূর্ণ করিতে থাকে তখন যদি তারা পরস্পর সম্মত হয়ে নিজেদের স্বামীদের বিধিমত বিয়ে করিতে চায় তাহলে তোমরা তাদের বাধা দিবে না। (সূরা আল বাকারা ২/২৩২)

৪৫২৯

মাকিল ইবনু ইয়াসার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার এক বোনের বিয়ের পয়গাম আমার নিকট পেশ করা হয়। আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন যে, ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে, তিনি হাসান বসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে এবং তিনি মাকির ইবনু ইয়াসার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন।

আবু মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ……. হাসান (রাদি.) হইতে বর্ণিত যে, মাকিল ইবনু ইয়াসার (রাদি.)-এর বোনকে তার স্বামী তালাক দিয়ে আলাদা করে রাখে। যখন ইদ্দত কাল পূর্ণ হয় তখন তার স্বামী তাকে আবার পয়গাম পাঠায়। মাকিল (রাদি.) অমত করে পুনর্বিবাহে তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। فَلاَ تَعْضُلُوهُنَّ أَنْ يَنْكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ “তখন যদি তারা পরস্পর সম্মত হয়ে নিজেদের স্বামীদের বিধিমত বিয়ে করিতে চায় তাহলে তোমরা তাদের বাধা দিবে না” (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৩২)। [৫১৩০, ৫৩৩০, ৫৩৩১] (আ.প্র. ৪১৬৯, ই.ফা. ৪১৭০)

৬৫/২/৪১. অধ্যায়ঃ

{وَالَّذِيْنَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُوْنَ أَزْوَاجًا يَّتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَّعَشْرًا ج فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيْمَا فَعَلْنَ فِيْٓ أَنْفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوْفِ ط وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ} يَعْفُوْنَ يَهَبْنَ.

তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুবরণ করে, তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশদিন প্রতীক্ষা করিবে। তারপর যখন তারা তাদের ইদ্দাতকাল পূর্ণ করে নেবে, তখন বিধিমত তারা নিজেদের ব্যাপারে যা করিবে তাতে তোমাদের কোন পাপ নেই। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৩৪)

৪৫৩০

. আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনু আফ্ফান (রাদি.)-কে উক্ত আয়াত সম্পর্কে বললাম যে, এ আয়াত তো অন্য আয়াত দ্বারা মানসূখ (রহিত) হয়ে গেছে। অতএব উক্ত আয়াত আপনি মুসহাফে কেন লিখেছেন, (অথবা রাবী বলেন) কেন বর্জন করছেন না, তখন তিনি [উসমান (রাদি.)] বলিলেন, হে ভাতিজা! আমি মুসহাফের স্থান থেকে কোন জিনিস পরিবর্তন করব না। [৪৫৩৬] (আ.প্র. ৪১৭০, ই.ফা. ৪১৭১)

৬৫/২/৪১. অধ্যায়ঃ

৪৫৩১

মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا আয়াতে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর পরিবারে থেকে ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। আয়াতে উল্লিখিত يَعْفُوْنَ শব্দের অর্থيَهَبْنَ দান করে। অনন্তর আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেনঃ وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا وَصِيَّةً لِأَزْوَاجِهِمْ مَتَاعًا إِلَى الْحَوْلِ غَيْرَ إِخْرَاجٍ فَإِنْ خَرَجْنَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنْفُسِهِنَّ مِنْ مَعْرُوفٍ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ “আর তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হইবে, তারা (মৃত্যুর পূর্বে) স্ত্রীদের ঘর থেকে বের না করে দিয়ে তাদের জন্য এক বছরের ভরণপোষণের অসিয়াত করে যাবে। কিন্তু যদি তারা নিজেরা বেরিয়ে যায় তবে বিধিমত তারা নিজেদের ব্যাপারে যা করিবে তাতে তোমাদের কোন পাপ হইবে না। আর আল্লাহ হলেন পরাক্রমশালী, মহাবিজ্ঞ” (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৪০)। রাবী বলেন, আল্লাহ তাআলা স্ত্রীর জন্য পূর্ণ বছর পূর্ণ করার জন্য সাত মাস এবং বিশ রজনী নির্ধারিত করিয়াছেন ওসীয়ত হিসেবে। সে ইচ্ছা করলে তার ওসীয়তে থাকতে পারে, ইচ্ছা করলে বের হয়েও যেতে পারে। এ কথারই ইঙ্গিত করে আল্লাহর বাণী ঃ غَيْرَ إِخْرَاجٍ فَإِنْ خَرَجْنَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ মোটকথা যেভাবেই হোক স্ত্রীর উপর ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। মুজাহিদ থেকে এরূপই জানা গেছে। কিন্তু ইমাম আত্বা বলেন যে, ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, এই আয়াত স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীর বাড়িতে ইদ্দত পালন করার হুকুম রহিত করে দিয়েছে। সুতরাং স্ত্রী যথেচ্ছা ইদ্দত পালন করিতে পারে। আল্লাহর এই বাণীর দলীল বলে ঃ غَيْرَ إِخْرَاجٍ ইমাম আত্বা বলেন, স্ত্রী ইচ্ছা করলে স্বামীর পরিবারে থেকে ইদ্দত পালন করিতে পারে এবং তার ওসীয়ত থাকতে পারে অথবা তথা হইতে চলেও যেতে পারে। فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيْمَا فَعَلْنَ এর আয়াতের মর্ম মুতাবিক।

ইমাম আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তারপর মিরাস বা উত্তরাধিকারের হুকুম فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হল। সুতরাং ঘর ও বাসস্থানের নির্দেশ রহিত হয়ে যায়। কাজেই যথেচ্ছা স্ত্রী ইদ্দত পালন করত পারে। আর তার জন্য ঘরের বা বাসস্থানের দাবী অগ্রাহ্য।

মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাদীস বর্ণনা করেন আমার নিকট ওরাকা ইবনু আবী নাজীহ থেকে আর তিনি মুজাহিদ থেকে এ সম্পর্কে এবং আরও আবু নাজীহ আত্বা থেকে এবং তিনি ইবনু আব্বাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, এই আয়াত স্ত্রীর ইদ্দত স্বামীর বাড়িতে পালন করার হুকুম রহিত করে দেয়। সুতরাং স্ত্রী যথেচ্ছা ইদ্দত পালন করিতে পারে। আল্লাহর এই বাণী ঃ غَيْرَ إِخْرَاجٍ এবং অনুরূপ আয়াত এর দলীল অনুসারে। [৫৩৪৪] (আ.প্র. ৪১৭১, ই.ফা. ৪১৭২)

৪৫৩২

মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এমন একটি মজলিসে উপবিষ্ট ছিলাম যেখানে নেতৃস্থানীয় আনসারদের কতক ছিলেন এবং তাঁদের মাঝে আবদুর রহমান বিন আবু লাইলা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-ও ছিলেন। এরপর সুরাইয়া বিনতে হারিস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) প্রসঙ্গে বর্ণিত আবদুল্লাহ বিন উত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর হাদীসটি নিয়ে আলোচনা করলাম, এরপর আবদুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, “পক্ষান্তরে তাহাঁর চাচা এ রকম বলিতেন না” অনন্তর আমি বললাম, কূফায় বসবাসরত ব্যক্তিটি সম্পর্কে যদি আমি মিথ্যা বলি তবে আমি হব চরম ধৃষ্ট এবং তিনি তাহাঁর স্বর উঁচু করিলেন, তিনি বলিলেন, তারপর আমি বের হলাম এবং মালিক বিন আমির (রাদি.) মালিক ইবনু আওফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর সঙ্গে আমি বললাম, গর্ভাবস্থায় বিধবা রমণীর ব্যাপারে ইবনু মাসঊদ (রাদি.)-এর মন্তব্য কী ছিল, বলিলেন যে ইবনু মাসঊদ (রাদি.) বলেছেন, তোমরা কি তার উপর কঠোরতা অবলম্বন করছ আর তার জন্য সহজ বিধানটি অবলম্বন করছ না, সংক্ষিপ্ত সুরা নাসটি (সুরা ত্বালাক) দীর্ঘটি পরে অবতীর্ণ হয়েছে। আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মুহাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, আবু আতিয়াহ মালিক বিন আমির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর সঙ্গে আমি সাক্ষাৎ করেছিলাম। [৪৯১০] (আ.প্র. ৪১৭২, ই.ফা. ৪১৭৩)

৬৫/২/৪২. অধ্যায়ঃ তোমরা সলাতের প্রতি যত্নবান হইবে বিশেষত মধ্যবর্তী সলাতের। (সূরা আল বাকারা ২/২৩৮)

৪৫৩৩

আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আবদুর রহমান ……. আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিত যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেন, খন্দক যুদ্ধের দিন কাফিরগণ আমাদেরকে মধ্যবর্তী সলাত থেকে বিরত রাখে এমনকি এ অবস্থায় সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়। আল্লাহ তাদের কবর ও তাদের ঘরকে অথবা (রাবীর সন্দেহ) পেটকে আগুন দ্বারা পূর্ণ করুক। [২৯৩১] (আ.প্র. ৪১৭৩, ই.ফা. ৪১৭৪)

৬৫/২/৪৩. অধ্যায়ঃ এবং আল্লাহর উদ্দেশে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াবে। (সূরা আল বাকারা ২/২৩৮)

৪৫৩৪

যায়দ ইবনু আরকাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা সলাতের মধ্যে কথাবার্তা বলতাম আর আমাদের কেউ অন্য ভাইয়ের প্রয়োজন নিয়ে কথা বলিতেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় ঃحَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلاَةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ তখন আমাদেরকে চুপ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। [১২০০] (আ.প্র. ৪১৭৪, ই.ফা. ৪১৭৫)

৬৫/২/৪৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ

{فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالًا أَوْ رُكْبَانًا فَإِذَآ أَمِنْتُمْ فَاذْكُرُوا اللهَ كَمَا عَلَّمَكُمْ مَا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ}

وَقَالَ ابْنُ جُبَيْرٍ : {وَسِعَ كُرْسِيُّهُ} : عِلْمُهُ يُقَالُ {بَسْطَةً} زِيَادَةً وَفَضْلًا. {أَفْرِغْ}أَنْزِلْ، {وَلَا يَئُوْدُهُ} : لَا يُثْقِلُهُ، آدَنِيْ : أَثْقَلَنِيْ وَالْآدُ وَالأَيْدُ : الْقُوَّةُ. {السِّنَةُ} : نُعَاسٌ. {لَمْ يَتَسَنَّهْ} : لَمْ يَتَغَيَّرْ. {فَبُهِتَ} :ذَهَبَتْ حُجَّتُهُ. {خَاوِيَةٌ} : لَا أَنِيْسَ فِيْهَا. {عُرُوْشُهَا} أَبْنِيَتُهَا. {السِّنَةُ} : نُعَاسٌ. {نُنْشِرُهَا} : نُخْرِجُهَا. {إِعْصَارٌ} : رِيْحٌ عَاصِفٌ تَهُبُّ مِنَ الْأَرْضِ إِلَى السَّمَاءِ كَعَمُوْدٍ فِيْهِ نَارٌ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ :{صَلْدًا} لَيْسَ عَلَيْهِ شَيْءٌ وَقَالَ عِكْرِمَةُ {وَابِلٌ}مَطَرٌ شَدِيْدٌ {الطَّلُّ}النَّدَى وَهَذَا مَثَلُ عَمَلِ الْمُؤْمِنِ يَتَسَنَّهْ يَتَغَيَّرْ.

তবে যদি তোমরা আশঙ্কা কর তবে পদচারী অথবা আরোহী অবস্থায়; যখন তোমরা নিরাপদ বোধ কর তখন আল্লাহ্কে স্মরণ করিবে, যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যা তোমরা জানতে না। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৩৯)

ইবনু যুবায়র (রাদি.) বলেন, كُرْسِيُّهُ আল্লাহর কুরসীর অর্থ হলঃ عِلْمُهُ তাহাঁর জ্ঞান। আর بَسْطَةً অতিরিক্ত ও অধিক। أَفْرِغْ অবতীর্ণ কর। يَئُوْدُهُ ভারী ও বোঝা বোধ হয় না তাহাঁর। যেমন آدَنِيْ أَثْقَلَنِيْ শক্ত ও ভারী করেছে আমাকে। الآدُ وَالأَيْدُ শক্ত ও শক্তি। فَبُهِتَ তার দলীল-প্রমাণ শেষ হয়ে গেছে। خَاوِيَةٌ বিরান, জনশূন্য, عُرُوْشُهَا বুনিয়াদ ও ভিত্তি, السِّنَةُ তন্দ্রা, ঝিমুনি, نُنْشزُهَا আমি খাড়া করছি বা উঠাচ্ছি। إِعْصَارٌ ঝড়ো বাতাস বা ঘূর্ণি বায়ু যা ভূমি থেকে আকাশের দিকে প্রলম্বিত হয় এবং এর মধ্যে আগুন বা লু থাকে। আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাদি.) বলেছেনঃ صَلْدًا মসৃণ পরিচ্ছ্ন্ন পাথর যার উপর কিছু্ই থাকে না। ইকরামাহ বলেছেনঃ وَابِلٌ মুষলধারে বৃষ্টি। الطَّلُّ শিশির। এ দ্বারা ঈমানদার ব্যক্তির আমালের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। يَتَسَنَّهْ বিকৃত বা পরিবর্তিত হয়ে যায়নি।

৪৫৩৫

নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.)-কে যখন সলাতুল খাওফ (যুদ্ধক্ষেত্রে শত্র“র ভয় থাকা অবস্থায় সলাত) প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হত তখন তিনি বলিতেন, ইমাম সামনে যাবেন এবং একদল লোকও জামাআতে শামিল হইবে। তিনি তাদের সঙ্গে এক রাকআত সলাত আদায় করবেন এবং তাদের আর একদল জামাআতে শামিল না হয়ে তাদের ও শত্র“র মাঝখানে থেকে যারা সলাত আদায় করেনি তাদের পাহারা দিবে। ইমামের সঙ্গে যারা এক রাকআত সলাত আদায় করেছে তারা পেছনে গিয়ে যারা এখনও সলাত আদায় করেনি তাদের স্থানে দাঁড়াবে কিন্তু সালাম ফেরাবে না। যারা সলাত আদায় করেনি তারা আগে বাড়বে এবং ইমামের সঙ্গে এক রাকআত আদায় করিবে। তারপর ইমাম সলাত হইতে নিষ্ক্রান্ত হইবেন। কেননা তিনি দু রাকআত সলাত আদায় করিয়াছেন। এরপর উভয় দল দাঁড়িয়ে নিজে নিজে বাকি এক রাকআত ইমামের সলাত শেষে আদায় করে নেবে। তাহলে প্রত্যেক জনেরই দু রাকআত সলাত আদায় হয়ে যাবে। ভয়-ভীতি এর চেয়েও অধিক হলে নিজে নিজে দাঁড়িয়ে অথবা যানবাহনে আরোহী অবস্থায় কিবলার দিকে মুখ করে বা যেদিকে সম্ভব মুখ করে সলাত আদায় করিবে। ইমাম মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইমাম নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি অবশ্য মনে করি ইবনু উমার (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে শুনেই এই হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। [৯৪২] (আ.প্র. ৪১৭৫, ই.ফা. ৪১৭৬)

৬৫/২/৪৫. অধ্যায়ঃ আর তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হইবে, …..(সূরা আল বাকারা ২/২৪০)

৪৫৩৬

ইবনু আবু মুলাইকাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু যুবায়র (রাদি.) বলিলেন, আমি উসমান (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, সুরা আল-বাকারাহর এ আয়াতটি وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا কে তো অন্য একটি আয়াত রহিত করে দিয়েছে। তারপরও আপনি তা কেন লিখছেন? জবাবে উসমান (রাদি.) বলিলেন, ভ্রাতুষ্পুত্র। আমরা তা যথাস্থানে রেখে দিয়েছি। আপন স্থান থেকে কোন কিছুই আমরা সরিয়ে ফেলিনি। হুমাইদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, অথবা প্রায় এ রকমই উত্তর দিয়ে দিলেন। [৪৫৩০] (আ.প্র. ৪১৭৬, ই.ফা. ৪১৭৭)

৬৫/২/৪৬. অধ্যায়ঃ আর স্মরণ কর যখন ইবরাহীম বললঃ হে আমার পালনকর্তা! আমাকে দেখাও কীভাবে তুমি মৃতকে জীবিত কর। (সূরা আল বাকারা ২/২৬০)

৪৫৩৭

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন যে, ইবরাহীম (আ.) যখন رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِي الْمَوْتَى قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِنْ قَالَ بَلَى وَلَكِنْ لِيَطْمَئِنَّ قَلْبِي হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে দেখাও কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত কর? তখন ইবরাহীম (আ.)-এর তুলনায় সন্দেহ করার ব্যাপারে আমিই অগ্রসর ছিলাম । [৩৩৭২] (আ.প্র. ৪১৭৭, ই.ফা. ৪১৭৮)

৬৫/২/৪৭. অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ

{أَيَوَدُّ أَحَدُكُمْ أَنْ تَكُوْنَ لَه” جَنَّةٌ مِّنْ نَخِيْلٍ وَّأَعْنَابٍ} إِلَى قَوْلِهِ {لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُوْنَ}.

তোমাদের কেউ কি চায় যে, তার একটি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান থাকবে, যার পাদদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত হইবে এবং যাতে সব ধরনের ফলমূল থাকবে, যখন সে বার্ধক্যে উপনীত হইবে আর তার থাকবে দুর্বল সন্তান-সন্তুতি, তারপর বয়ে যাবে ঐ বাগানের উপর দিয়ে এক অগ্নিগর্ভ প্রবল ঘূর্ণিঝড়, ফলে বাগানটি ভস্মীভূত হয়ে যাবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাহাঁর নিদর্শনাবলী স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করিতে পার। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৬৬)

৪৫৩৮

উবায়দ ইবনু উমায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একদা উমার (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর সহাবীদের জিজ্ঞেস করিলেন যে, أَيَوَدُّ أَحَدُكُمْ أَنْ تَكُونَ لَهُ جَنَّةٌ এ আয়াতটি যে উপলক্ষে অবতীর্ণ হয়েছে, সে ব্যাপারে আপনাদের মতামত কী? তখন তারা বলিলেন, আল্লাহই জানেন। উমার (রাদি.) এতে রেগে গিয়ে বলিলেন, বল আমরা জানি অথবা আমরা জানি না। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এ ব্যাপারে আমার অন্তরে কিছুটা ধারণা আছে। উমার (রাদি.) বলিলেন, বৎস! বলে ফেল এবং নিজেকে তুচ্ছ ভেবো না। তখন ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, এটা কর্মের দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করা হয়েছে। উমার (রাদি.) বলিলেন, কোন্ কর্মের? ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, একটি কর্মের। উমার (রাদি.) বলিলেন, এটি উদাহরণ হচ্ছে সেই ধনবান ব্যক্তির, যে মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহর ইবাদাত করিতে থাকে, এরপর আল্লাহ তাআলা তাহাঁর প্রতি শায়ত্বকে প্রেরণ করেন। অতঃপর সে কাজ করে শেষ পর্যন্ত তাহাঁর সকল সৎকর্ম বরবাদ করে ফেলে। (আ.প্র. ৪১৭৮, ই.ফা. ৪১৭৯)

৬৫/২/৪৮. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ কাকুতি-মিনতি করে তারা মানুষের কাছে ভিক্ষা চায় না। (সূরা আল বাকারা ২/২৭৩)

يُقَالُ : أَلْحَفَ عَلَيَّ، وَأَلَحَّ عَلَيَّ، وَأَحْفَانِيْ بِالْمَسْأَلَةِ فَيُحْفِكُمْ يُجْهِدْكُمْز.

أَلْحَفَ عَلَيَّ، وَأَلَحَّ عَلَيَّ এবং وَأَحْفَانِيْ بِالْمَسْأَلَةِ সবই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। فَيُحْفِكُمْ জোর প্রচেষ্টা চালায়।

৪৫৩৯

আত্বা ইবনু ইয়াসার এবং আবু আমর আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা উভয়ে বলেন যে, আমরা আবু হুরাইরাহ (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, একটি খেজুর কি দুটি খেজুর আর এক গ্রাস কি দু গ্রাস খাদ্য যাকে দ্বারে দ্বারে ঘোরাতে থাকে সে প্রকৃত মিসকীন নয়। মিসকীন তো সে, যে ভিক্ষা করা থেকে বেঁচে থাকে। তোমরা (মিসকীন অর্থ) জানতে চাইলে আল্লাহর বাণী পাঠ করিতে পার لاَ يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا । [১৪৭৬] (আ.প্র. ৪১৭৯, ই.ফা. ৪১৮০)

৬৫/২/৪৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধ এবং সুদকে অবৈধ করিয়াছেন- (সূরা আল বাকারা ২/২৭৫)।

৪৫৪০

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সুদ সম্পর্কে সুরা আল-বাকারাহর শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) লোকেদের নিকট তা পাঠ করে শোনালেন। তারপর মদের ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দিলেন। [৪৫৯] (আ.প্র. ৪১৮০, ই.ফা. ৪১৮১)

৬৫/২/৫০. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন। (সূরা আল বাকারা ২/২৭৬)

৪৫৪১

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সুরা আল-বাকারাহর শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঘর থেকে বের হলেন এবং মাসজিদে লোকেদেরকে তা পড়ে শোনালেন। এরপর মদের ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দিলেন। [৪৫৯] (আ.প্র. ৪১৮১, ই.ফা. ৪১৮২)

৬৫/২/৫১. অধ্যায়ঃ তারপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তাহলে আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে তৈরি হয়ে যাও- (সূরা আল বাকারা ২/২৭৯)।

৪৫৪২

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সুরা আল-বাকারাহর শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মাসজিদে তা পাঠ করে শুনান এবং মদের ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দেন। (আ.প্র. ৪১৮২, ই.ফা. ৪১৮৩)

৬৫/২/৫২. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ খাতক (ঋণী) যদি অভাবগ্রস্ত হয় তবে তার সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দেয়া উচিত। আর যদি তোমরা ক্ষমা করে দাও, তা হইবে তোমাদের জন্য অতি উত্তম কাজ, যদি তোমরা জানতে। (সূরা আল বাকারা ২/২৮০)

৪৫৪৩

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সুরা আল-বাকারার শেষ দিকের আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দাঁড়ালেন এবং আমাদের সামনে তা পাঠ করিলেন। তারপর মদের ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দিলেন। [৪৫৯] (আ.প্র. ৪১৮৩, ই.ফা. ৪১৮৪)

৬৫/২/৫৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আর সেদিনকে ভয় কর, যেদিন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তিত হইবে। (সূরা আল বাকারা ২/২৮১)

৪৫৪৪

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর উপর অবতীর্ণ কৃত শেষ আয়াতটি হল সুদ সম্পর্কিত। (আ.প্র. ৪১৮৪, ই.ফা. ৪১৮৫)

৬৫/২/৫৪. অধ্যায়ঃ “তোমাদের মনে যা আছে তা তোমরা প্রকাশ কর কিংবা গোপন রাখ আল্লাহ তোমাদের নিকট হইতে তার হিসাব নেবেন। তারপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা আল বাকারা ২/২৮৪)

৪৫৪৫

মারওয়ান আল আসফার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ)-এর সহাবীদের কোন একজন থেকে বর্ণনা করেন, আর তিনি হচ্ছেন ইবনু উমার (রাদি.) যে, وَإِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ (তোমাদের অন্তরের কথা প্রকাশ কর আর গোপন কর তার হিসাব আল্লাহ তোমাদের থেকে নেবেন) আয়াতটি রহিত হয়ে গেছে। [৪৫৪৬] (আ.প্র. ৪১৮৫, ই.ফা. ৪১৮৬)

৬৫/২/৫৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ রাসুল ঈমান এনেছেন ঐ সব বিষয়ের উপর যা তাহাঁর প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে তাহাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে এবং মুমিনরাও ঈমান এনেছে। (সূরা আল বাকারা ২/২৮৫)

وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : {إِصْرًا} عَهْدًا. وَيُقَالُ : غُفْرَانَكَ مَغْفِرَتَكَ فَاغْفِرْ لَنَا.

ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, إِصْرًا অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি, غُفْرَانَكَ অর্থ مَغْفِرَتَكَ, আর مَغْفِرَتَكَ অর্থ فَاغْفِرْ لَنَا -তোমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, অর্থাৎ আমাদের ক্ষমা করুন। (সুরা আল-বাকারাহ ২/২৮৫)

৪৫৪৬

মারওয়ানুল আসফার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একজন সহাবী (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন আর তিনি ধারণা করেন যে, তিনি ইবনু উমার (রাদি.) হইবেন। وَإِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ আয়াতটি মানসুখ হয়ে গেছে। [৪৫৪৫] (আ.প্র. ৪১৮৬, ই.ফা. ৪১৮৭)

৬৫/৩/১. অধ্যায়ঃ …… যার কতক আয়াত সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন।

সুরা (৩) : আলে ইমরান

تُقَاةٌ وَتَقِيَّةٌ وَاحِدَةٌ {صِرٌّ} : بَرْدٌ. {شَفَا حُفْرَةٍ} مِثْلُ شَفَا الرَّكِيَّةِ وَهْوَ حَرْفُهَا {تُبَوِّئُ} تَتَّخِذُ مُعَسْكَرًا. الْمُسَوَّمُ الَّذِيْ لَهُ سِيْمَاءٌ بِعَلَامَةٍ أَوْ بِصُوْفَةٍ، أَوْ بِمَا كَانَ. {رِبِّيُّوْنَ} الْجَمِيْعُ وَالْوَاحِدُ رِبِّيٌّ. {تَحُسُّوْنَهُمْ} : تَسْتَأْصِلُوْنَهُمْ قَتْلًا. {غُزًّا} وَاحِدُهَا غَازٍ. {سَنَكْتُبُ} : سَنَحْفَظُ. {نُزُلًا} ثَوَابًا، وَيَجُوْزُ : وَمُنْزَلٌ مِنْ عِنْدِ اللهِ كَقَوْلِكَ أَنْزَلْتُهُ.

وَقَالَ : مُجَاهِدٌ {وَالْخَيْلُ الْمُسَوَّمَةُ} الْمُطَهَّمَةُ الْحِسَانُ. قَالَ سَعِيْدُ بْنُ جُبَيْرٍ : {وَحَصُوْرًا} لَا يَأْتِي النِّسَاءَ. وَقَالَ عِكْرِمَةُ : مِنْ {فَوْرِهِمْ} مِنْ غَضَبِهِمْ يَوْمَ بَدْرٍ. وَقَالَ مُجَاهِدٌ : {يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ} النُّطْفَةِ تَخْرُجُ مَيِّتَةً وَيُخْرِجُ مِنْهَا الْحَيَّ. {الْإِبْكَارُ} أَوَّلُ الْفَجْرِ، وَالْعَشِيُّ مَيْلُ الشَّمْسِ- أُرَاهُ- إِلَى أَنْ تَغْرُبَ.

تُقَاةٌ وَتَقِيَّةٌ একই অর্থে ব্যবহৃত অর্থাৎ ভীতি ও সংযম, صِرٌّ ঠান্ডা। شَفَا حُفْرَةٍ কথাটি شَفَا الرَّكِيَّةِ এর মত অর্থাৎ গর্তের কিনারা। تُبَوِّئُ অস্ত্রে সজ্জিত সৈনিককে সারিবদ্ধ করছিল। الْمُسَوَّم কোন প্রতীক কিংবা অন্য কিছু দ্বারা চিহ্নিত করা। رِبِّيُّوْنَ বহুবচন। একবচনে رِبِّيٌّ আল্লাহ তাআলা ও আল্লাহ্পন্থী। تَحُسُّوْنَهُمْ তোমরা তাদের হত্যার দ্বারা সমূলে উৎপাটিত করছিলে। غُزًّا বহুবচন। একবচনে غَازٍ যোদ্ধা। سَنَكْتُبُ অচিরে আমি সংরক্ষণ করব। نُزُلًا প্রতিদান ও আতিথেয়তা হিসাবে। مُنْزَلٌ مِنْ عِنْدِ اللهِ পড়াও বৈধ। মুফাস্সির ইমাম মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মতে الْخَيْلُ الْمُسَوَّمَةُ পরিপূর্ণ সুন্দর অশ্বপাল, ইবনু যুবায়র (রাদি.) বলেন, حَصُوْرًا কামভাব নিয়ে কোন মহিলার কাছে যায় না। ইকরামাহ (রাদি.) বলেন, فَوْرِهِمْ বাদরের দিনে তাদের ক্রোধ নিয়ে, মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ নিষ্প্রাণ বীর্য নির্গত হয় এরপর তা থেকে জীবিত বের হয়। الإِبْكَارُ ঊষাকাল। وَالْعَشِيُّ সূর্য ঢলে যাওয়া থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

وَقَالَ مُجَاهِدٌ : الْحَلَالُ وَالْحَرَامُ. {وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ} يُصَدِّقُ بَعْضُهُ بَعْضًا، كَقَوْلِهِ تَعَالَى :{وَمَا يُضِلُّ بِهٰٓ إِلَّا الْفَاسِقِيْنَ} وَكَقَوْلِهِ جَلَّ ذِكْرُهُ {وَيَجْعَلُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِيْنَ لَا يَعْقِلُوْنَ} وَكَقَوْلِهِ تَعَالَى: {وَالَّذِيْنَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى وَّاٰتَاهُمْ تَقْوٰهُمْ} {زَيْغٌ} : شَكٌّ. {ابْتِغَآءَ الْفِتْنَةِ}الْمُشْتَبِهَاتِ. {وَالرَّاسِخُوْنَ}يَعْلَمُوْنَ. {يَقُوْلُوْنَ اٰمَنَّا بِهِ}.

ইমাম মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন যে, সেটি হচ্ছে হালাল আর হারাম সম্পর্কিত। وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ আর অন্যগুলো রূপক, একটি অন্যটির সত্যতা প্রমাণ করে। যেমনঃ আল্লাহর বাণীঃ وَمَا يُضِلُّ بِهٰٓ إِلَّا الْفَاسِقِيْنَ -তিনি পথ পরিত্যাগকারী ব্যতীত বস্তুত কাউকে বিভ্রান্ত করেন না। আবার- وَيَجْعَلُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِيْنَ لَا يَعْقِلُوْنَ যারা অনুধাবন করে না আল্লাহ তাদের কলুষলিপ্ত করেন। (সুরা ইউনুস ১০/১০০)

তদুপরি আল্লাহর বাণীঃ وَالَّذِيْنَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى وَّاٰتَاهُمْ تَقْوٰهُمْ যারা সৎপথ অবলম্বন করেছে, আল্লাহ তাদেরকে আরও অধিক হিদায়াত দান করেন এবং তাদেরকে তাকওয়ার তাওফীক দেন- (সুরা মুহাম্মাদ ৪৭/১৭)। زَيْغٌ -সন্দেহ, ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ -ফিতনা শব্দের অর্থ রূপক। وَالرَّاسِخُوْنَ যাঁরা জ্ঞানে সু-গভীর তারা জানে এবং বলে আমরা তা বিশ্বাস করি।

৪৫৪৭

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আয়াতটি هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ ………… إِلاَّ أُولُو الأَلْبَابِ “তিনিই তোমার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন যার কতক আয়াত সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন। এগুলো কিতাবের মূল অংশ; আর অন্যগুলো রূপক; যাদের অন্তরে সত্য-লঙ্ঘন প্রবণতা রয়েছে শুধু তারাই ফিতনা এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশে যা রূপক তার অনুসরণ করে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তাঁরা বলেন, আর যারা জ্ঞানে সুগভীর তারা বলে ঃ আমরা এতে ঈমান এনেছি, এসবই আমাদের প্রভুর তরফ থেকে এসেছে। জ্ঞানবানরা ব্যতীত কেউ নাসীহাত গ্রহণ করে না” (সুরা আলু ইমরান ৩/৭) নাবী (সাঃআঃ) পাঠ করিলেন। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঘোষণা করিয়াছেন যে, যারা মুতাশাবাহাত আয়াতের পেছনে ছুটে তাদের যখন তুমি দেখবে তখন মনে করিবে যে, তাদের কথাই আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন। সুতরাং তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে। [মুসলিম ৪৭/১, হাদীস ২৬৬৫, আহমাদ ২৬২৫৭] (আ.প্র. ৪১৮৭, ই.ফা. ৪১৮৮)

৬৫/৩/২. অধ্যায়ঃ তাঁকে ও তার সন্তানদের তোমার আশ্রয়ে সোপর্দ করছি বিতাড়িত শয়তানের কবল থেকে বাঁচার জন্য। (সুরা আলু ইমরান ৩/৩৬)(আ.প্র. ৪১৮৭, ই.ফা. ৪১৮৮)

৪৫৪৮

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেন, প্রত্যেক নবপ্রসূত বাচ্চার জন্মের সময় শয়তান অবশ্যই তাকে স্পর্শ করে। ফলে শয়তানের স্পর্শমাত্র সে চীৎকার করে উঠে। কিন্তু মারইয়াম (আ.) ও তাহাঁর পুত্র ঈসা (আ.)-কে পারেনি। তারপর আবু হুরাইরাহ (রাদি.) বলিতেন, যদি তোমরা (এটা জানতে) ইচ্ছা কর তাহলে পড় ঃ وَإِنِّي أُعِيذ ُهَا بِكَ وَذ ُرِّيَّتَهَا مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ। [৩২৮৬] (আ.প্র. ৪১৮৮, ই.ফা. ৪১৮৯)

৬৫/৩/৩. অধ্যায়ঃ

৪৫৫১

আবদুল্লাহ ইবনু আবু আউফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি বিক্রি করার জন্য বাজারে কিছু জিনিস আনলো এবং কসম করে বলিতে শুরু করলো যে, লোকে এ জিনিসের এতো এতো মূল্য দিচ্ছে। অথচ কেউ তা দেয়নি। এ মিথ্যা বলার উদ্দেশ্য হলো, মুসলিমরা যাতে তার এ কথা বিশ্বাস করে তার নিকট থেকে জিনিসটা ক্রয় করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত অবতীর্ণ হল ঃ “যারা আল্লাহর প্রতিকৃত প্রতিশ্র“তি ও কসম নগণ্য মূল্যে বিক্রি করে, আখিরাতে তাদের অংশে কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না। ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে কঠিন কষ্টদায়ক শাস্তি” (সুরা আলু ইমরান ৩/৭৭)। [২০৮৮] (আ.প্র. ৪১৯০, ই.ফা. ৪১৯১)

৪৫৫২

ইবনু আবু মুলাইকাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

দুজন মহিলা একটি ঘর কিংবা একটি কক্ষে সেলাই করছিল। হাতের তালুতে সুই বিদ্ধ হয়ে তাদের একজন বেরিয়ে পড়ল এবং অপরজনের বিরুদ্ধে সুই ফুটিয়ে দেয়ার অভিযোগ করিল। এই ব্যাপারটি ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি বলিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, যদি শুধুমাত্র দাবীর উপর ভিত্তি করে মানুষের দাবী পূরণ করা হয়, তাহলে তাদের জান ও মালের নিরাপত্তা থাকবে না। সুতরাং তোমরা বিবাদীদের আল্লাহর নামে শপথ করাও এবং এ আয়াত তার সম্মুখে পাঠ কর। এরপর তারা তাকে শপথ করাল এবং সে নিজ দোষ স্বীকার করিল। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, শপথ বিবাদীকে করিতে হইবে। [২৫১৪; মুসলিম ৩০/১, হাদীস ১৭১১] (আ.প্র. ৪১৯১, ই.ফা. ৪১৯২)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply