ওমান ও বাহরাইন ঘটনা আশআরী ও ইয়ামানবাসীদের আগমন

ওমান ও বাহরাইন ঘটনা আশআরী ও ইয়ামানবাসীদের আগমন

ওমান ও বাহরাইন ঘটনা আশআরী ও ইয়ামানবাসীদের আগমন >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬৪, মাগাযী, অধ্যায়ঃ (৭৪-৭৫)=২টি

৬৪/৭৪. অধ্যায়ঃ ওমান ও বাহরাইনের ঘটনা
৬৪/৭৫. অধ্যায়ঃ আশআরী ও ইয়ামানবাসীদের আগমন

৬৪/৭৪. অধ্যায়ঃ ওমান ও বাহরাইনের ঘটনা

৪৩৮৩

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে বলিলেন, বাহরাইনের অর্থ-সম্পদ (জিযিয়া) আসলে তোমাকে এত দেব, এত দেব এত দেব। তিনবার বলিলেন। এরপর বাহরাইন থেকে আর কোন অর্থ-সম্পদ আসেনি। আমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর ওফাত হয়ে গেল। এরপর আবু বাকরের যুগে যখন সেই অর্থ সম্পদ আসল তখন তিনি একজন ঘোষণাকারীকে নির্দেশ দিলেন। সে ঘোষণা করলঃ নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে যার প্রাপ্য ঋণ আছে কিংবা কোন ওয়াদা অপূর্ণ আছে সে যেন আমার কাছে আসে। জাবির (রাদি.) বলেনঃ আমি আবু বাকর (রাদি.)- এর কাছে এসে তাঁকে জানালাম যে, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে বলেছিলেন, যদি বাহরাইন থেকে অর্থ-সম্পদ আসে তা হলে তোমাকে আমি এত দেব, এত দেব এত দেব। তিনবার বলিলেন। জাবির (রাদি.) বলেনঃ তখন আবু বকর (রাদি.) আমাকে অর্থ-সম্পদ দিলেন। জাবির (রাদি.) বলেন, এরপর (আবার) আমি আবু বকর (রাদি.)- এর সঙ্গে সাক্ষাত করলাম এবং তার কাছে মাল চাইলাম। কিন্তু তিনি আমাকে কিছুই দিলেন না। এরপর আমি তাহাঁর কাছে দ্বিতীয়বার আসি, তিনি আমাকে কিছুই দেননি। এরপর আমি তাহাঁর কাছে তৃতীয়বার এলাম। তখনো তিনি আমাকে কিছুই দিলেন না। কাজেই আমি তাঁকে বললামঃ আমি আপনার কাছে এসেছিলাম কিন্তু আপনি আমাকে দেননি। তারপর (আবার) এসেছিলাম তখনো দেননি। এরপরেও এসেছিলাম তখনো আমাকে আপনি দেননি। কাজেই এখন হয় আপনি আমাকে সম্পদ দিবেন নয়তো আমি মনে করবঃ আপনি আমার ব্যাপারে কৃপণতা করছেন। তখন তিনি বললেনঃ এ কী বলছ আমার ব্যাপারে কৃপণতা করছেন। কৃপণতা থেকে মারাত্মক ব্যাধি আর কি হইতে পারে। কথাটি তিনি তিনবার বলিলেন। (এরপর তিনি বলিলেন) যতবারই আমি তোমাকে সম্পদ দেয়া থেকে বিরত রয়েছি ততবারই আমার ইচ্ছা ছিল যে, তোমাকে দেব। আমর [ইবনু দীনার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] মুহাম্মাদ ইবনু আলী (রাদি.)- এর কাছে আসলে তিনি আমাকে বলিলেন, এ (আশরাফী) গুলো গুণো, আমি এগুলো গুণে দেখলাম এখানে পাঁচশ (আশরাফী) রয়েছে। তিনি বলিলেন, এ পরিমাণ আরো দুবার উঠিয়ে নাও। [২২৯৬](আ.প্র. ৪০৩৪, ই.ফা. ৪০৩৮)

৬৪/৭৫. অধ্যায়ঃ আশআরী ও ইয়ামানবাসীদের আগমন

নাবী (সাঃআঃ) থেকে আবু আশআরী (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন যে, আশআরীগণ আমার অন্তর্ভুক্ত আর আমি তাদের অন্তর্ভূক্ত।

৪৩৮৪

আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি এবং আমার ভাই ইয়ামান থেকে এসে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত অবস্থান করেছি। এ সময়ে ইবনু মাসঊদ (রাদি.) ও তাহাঁর মায়ের অধিক আসা-যাওয়া ও নাবী (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে আমরা তাঁদরকে আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত মনে করেছিলাম। [৩৭৬৩] (আ.প্র. ৪০৩৫, ই.ফা. ৪০৩৯)

৪৩৮৫

যাহদাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু মূসা (রাদি.) এ এলাকায় এসে জারম গোত্রের লোকদেরকে সম্মানিত করিয়াছেন। একদা আমারা তাহাঁর কাছে বসা ছিলাম। এ সময়ে তিনি মুরগীর গোশ্‌ত দিয়ে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি বসা ছিল। তিনি তাকে খানা খেতে ডাকলেন। সে বলিল, আমি মুরগীটিকে এমন জিনিস খেতে দেখেছি যার জন্য খেতে আমার অরুচি লাগছে। তিনি বলিলেন, এসো। কেননা আমি নাবী (সাঃআঃ)- কে মুরগী খেতে দেখেছি। সে বলিল, আমি শপথ করে ফেলছি যে, এটি খাব না। তিনি বলিলেন, এসে পড়। তোমার শপথ সম্বন্ধে আমি তোমাকে জানাচ্ছি যে, আমরা আশআরীদের একটি দল নাবী (সাঃআঃ)- এর দরবারে এসে তাহাঁর কাছে সাওয়ারী চেয়েছিলাম। তিনি আমাদেরকে সওয়ারী দিতে অস্বীকার করিলেন। এরপর আমরা (আবার) তাহাঁর কাছে সাওয়ারী চাইলাম। তিনি তখন শপথ করে বলিলেন যে, আমাদেরকে তিনি সওয়ারী দেবেন না। কিছুক্ষণ পরেই নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে গানীমাতের কিছু উট আনা হল। তিনি আমাদেরকে পাঁচটি করে উট দেয়ার আদেশ দিলেন। উটগুলো হাতে নেয়ার পর আমরা পরস্পর বললাম, আমরা নাবী (সাঃআঃ)- কে তাহাঁর শপথ থেকে অমনোযোগী করে ফেলছি এমন অবস্থায় আর কখনো আমরা কামিয়াব হইতে পারব না। কাজেই আমি তাহাঁর কাছে এসে বললাম। হে আল্লাহর রাসুল! আপনি শপথ করেছিলেন যে, আমাদের সাওয়ারী দেবেন না। এখন তো আপনি আমাদের সাওয়ারী দিলেন। তিনি বলিলেন, নিশ্চয়ই। তবে আমার নিয়ম হল, আমি যদি কোন ব্যাপারে শপথ করি আর এর বিপরীতে কোনটিকে এ অপেক্ষা উত্তম মনে করি তাহলে উত্তমটিকেই গ্রহণ করে নেই। [৩১৩৩] (আ.প্র. ৪০৩৬, ই.ফা. ৪০৪০)

৪৩৮৬

ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বানী তামীমের লোকজন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর কাছে আসলে তিনি তাদেরকে বলিলেন, হে বানী তামীম! সুসংবাদ গ্রহণ কর। তারা বলিল, আপনি সুসংবাদ তো দিলেন, কিন্তু আমাদের (কিছু অর্থ-সম্পদ) দান করুন। কথাটি শুনে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। এমন সময়ে ইয়ামানী কিছু লোক আসল। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, বানী তামীম যখন সুসংবাদ গ্রহণ করিল না, তাহলে তোমরাই তা গ্রহণ কর। তাঁরা বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা তা গ্রহণ করলাম। [৩১৯০] (আ.প্র. ৪০৩৭, ই.ফা. ৪০৪১)

৪৩৮৭

আবু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) ইয়ামানের দিকে তাহাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে বলেছেন, ঈমান হল ওখানে। [৮০] আর কঠোরতা ও হৃদয়হীনতা হল রাবীআহ ও মুযার গোত্রদ্বয়ের সেসব মানুষের মধ্যে যারা উটের লেজের কাছে দাঁড়িয়ে চীৎকার দেয়, যেখান থেকে শয়তানের দু শিং উদিত হয়। [৮১] [৩৩০২] (আ.প্র. ৪০৩৮, ই.ফা. ৪০৪২)

[৮০] ইয়ামানের দিকে ইংগিত করার কোন গভীর অর্থও থাকতে পারে। তবে আপাত দৃষ্টিতে যা মনে হয় ,এখানে ইয়ামানবাসীদের দ্রুত ও সুন্দরভাবে ঈমান আনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ইয়ামানবাসীদের ঈমানের প্রতি কোন নেতিবাচক ইঙ্গিত নেই।

[৮১] বিভিন্ন হাদীসে ইয়ামান থেকে ফিতনার আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছে।

৪৩৮৮

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ামানবাসীরা তোমাদের কাছে এসেছে। তাঁরা অন্তরের দিক থেকে অত্যন্ত কোমল ও দরদী। ঈমান হল ইয়ামানীদের, হিকমাত হল ইয়ামানীদের, গরিমা ও অহংকার রয়েছে উট-ওয়ালাদের মধ্যে, বাক্‌রী পালকদের মধ্যে আছে প্রশান্তি ও গাম্ভীর্য।

গুনদার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ হাদীসটি শুবাহ-সুলাইমান-যাকওয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। [৩৩০১] (আ.প্র. ৪০৩৯, ই.ফা. ৪০৪৩)

৪৩৮৯

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ঈমান হল ইয়ামানীদের। আর ফিতনা হল ওখানে, যেখানে উদিত হল শয়তানের শিং। [৩৩০১] (আ.প্র. ৪০৪০, ই.ফা. ৪০৪৪)

৪৩৯০

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ামানবাসীরা তোমাদের কাছে এসেছে। তাঁরা অন্তরের দিক থেকে অত্যন্ত কোমল। আর মনের দিক থেকে অত্যন্ত দয়ার্দ্র। ফিকহ হল ইয়ামানীদের আর হিকমাত হল ইয়ামানীদের। [৩৩০১] (আ.প্র. ৪০৪১, ই.ফা. ৪০৪৫)

৪৩৯১

আলক্বামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা ইবনু মাসঊদ (রাদি.)- এর কাছে বসা ছিলাম। তখন সেখানে আব্বাস (রাদি.) এসে বলিলেন, হে আবু আবদুর রহমান (আবদুর রহমানের পিতা আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ [৮২])! এসব তরুণ কি আপনার তিলাওয়াতের মতো তিলাওয়াত করিতে পারে? তিনি বললেনঃ আপনি যদি চান তাহলে একজনকে হুকুম দেই যে, সে আপনাকে তিলাওয়াত করে শুনাবে। তিনি বলিলেন, অবশ্যই। ইবনু মাসঊদ (রাদি.) বলিলেন, ওহে আলকামাহ, পড়। তখন যিয়াদ ইবনু হুদাইরের ভাই যায়দ ইবনু হুদাইর বলিল, আপনি আলকামাহকে পড়তে হুকুম করিয়াছেন, অথচ সে তো আমাদের মধ্যে ভাল তিলাওয়াতকারী নয়। ইবনু মাসঊদ (রাদি.) বলিলেন, যদি তুমি চাও তাহলে আমি তোমার গোত্র ও তার গোত্র সম্পর্কে নাবী (সাঃআঃ) কী বলেছেন তা জানিয়ে দিতে পারি। (আলকামাহ বলেন) এরপর আমি সুরায়ে মারইয়াম থেকে পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করলাম। আবদুল্লাহ (রাদি.) বলিলেন, আপনার কেমন মনে হয়? তিনি বলিলেন, বেশ ভালই পরেছে। আবদুল্লাহ (রাদি.) বলিলেন, আমি যা কিছু পড়ি তার সবই সে পড়ে। এরপর তিনি খাব্বাবের দিকে তাকিয়ে দেখিতে পেলেন, তার হাতে একটি সোনার আংটি। তিনি বলিলেন, এখনো কি এ আংটি খুলে ফেলার সময় হয়নি? খাব্বাব (রাদি.) বলিলেন, আজকের পর আর এটি আমার হাতে দেখিতে পাবেন না। অতঃপর তিনি আংটিটি ফেলে দিলেন।

হাদীসটি গুনদার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। (আ.প্র. ৪০৪২, ই.ফা. ৪০৪৬)

[৮২] তিনি অত্যন্ত সুললিত কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করিতে পারতেন। রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সকল সহাবী থেকে কুরআন শিখার জন্য বলেছিলেন তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply