আবদুল কায়স, বানু হানীফা ও বানী তামীমের প্রতিনিধি দল

আবদুল কায়স, বানু হানীফা ও বানী তামীমের প্রতিনিধি দল

আবদুল কায়স, বানু হানীফা ও বানী তামীমের প্রতিনিধি দল >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬৪, মাগাযী, অধ্যায়ঃ (৬৭-৭১)=৫টি

৬৪/৬৭.অধ্যায়ঃ হিজরাতের নবম বছর লোকজনসহ আবু বাক্‌র (রাদি.)-এর হাজ্জ পালন
৬৪/৬৮. অধ্যায়ঃ বানী তামীমের প্রতিনিধি দল
৬৪/৬৯. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই
৬৪/৭০ অধ্যায়ঃ আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল
৬৪/৭১ অধ্যায়ঃ বানু হানীফার প্রতিনিধি দল এবং সুমামাহ ইবনু উসাল (রাদি.)-এর ঘটনা

৬৪/৬৭.অধ্যায়ঃ হিজরাতের নবম বছর লোকজনসহ আবু বাক্‌র (রাদি.)-এর হাজ্জ পালন

৪৩৬৩

আবু হুরাইরাহ (রা.) হইতে বর্ণিতঃ

বিদায় হাজ্জের পূর্ববর্তী হাজ্জে নাবী (সাঃআঃ) আবু বাক্‌র সিদ্দীক (রাদি.)-কে আমীরুল হাজ্জ নিযুক্ত করেছিলেন। সে সময় দশ তারিখে আবু বাক্‌র (রাদি.) তাঁকে [আবু হুরাইরা (রাদি.)-কে] একটি ছোট দলসহ লোকজনের মধ্যে এ ঘোষণা দেয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন যে, আগামী বছর কোন মুশরিক হাজ্জ করিতে পারবে না। আর উলঙ্গ অবস্থায় কেউ বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করিতে পারবে না।[৮৩] (আ.প্র. ৪০১৭, ই.ফা. ৪০২১)

[৮৩] পূর্বে নারী পুরুষ নির্বিশেষে উলঙ্গ হয়ে কাবা তাওয়াফ করতো। তাই এহেন জঘন্য কাজ না করার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন।

৪৩৬৪

বারাআ (ইবনু আযিব) (রা.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সর্বশেষ যে সুরাটি পূর্ণরূপে অবতীর্ণ হয়েছিল তা ছিল সুরা বারাআত। আর সর্বশেষ যে আয়াতটি সমাপ্তিরূপে অবতীর্ণ হয়েছিল সেটি ছিল সুরা আন-নিসার এ আয়াতঃ অর্থাৎ লোকেরা আপনার কাছে সমাধান জানতে চায়, বলুন পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্পর্কে তোমাদেরকে আল্লাহ সমাধান জানাচ্ছেন- (সুরা আন-নিসা ৪/১৭৬) [৪৬০৫, ৪৬৫৪,৬৭৪৪] (আ.প্র. ৪০১৮, ই.ফা. ৪০২২)

৬৪/৬৮. অধ্যায়ঃ বানী তামীমের প্রতিনিধি দল

৪৩৬৫

ইমরান ইবনু হুসাইন (রা.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বানু তামীমের একটি প্রতিনিধি দল নাবী (সাঃআঃ)-এর দরবারে আসলে তিনি তাদেরকে বলিলেন, হে বানু তামীম! সুসংবাদ গ্রহণ কর। তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি সুসংবাদ দিয়ে থাকেন, এবার আমাদেরকে কিছু (অর্থ-সম্পদ) দিন। কথাটি শুনে তাহাঁর চেহারায় অসন্তোষের ভাব প্রকাশ পেল। এরপর ইয়ামানের একটি প্রতিনিধি দল আসলে তিনি তাঁদেরকে বলিলেন, বানু তামীম যখন সুসংবাদ গ্রহণ করিলই না তখন তোমরা সেটি গ্রহণ কর। তারা বলিলেন, আমরা তা গ্রহণ করলাম হে আল্লাহর রাসুল! [৩১৯০] (আ.প্র. ৪০১৯, ই.ফা. ৪০২৩)

৬৪/৬৯. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই

বানু তামীমের উপগোত্র বানু আমবার-এর বিরুদ্ধে উইয়াইনাহ ইবনু হিস্‌ন ইবনু হুযাইফাহ ইবনু বাদরের যুদ্ধ। ইবনু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) উইয়াইনাহ (রাদি.)-কে এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য পাঠিয়েছেন। তারপর তিনি রাতের শেষ ভাগে তাদের উপর আক্রমন চালিয়ে কিছু লোককে হত্যা করেন এবং তাদের মহিলাদেরকে বন্দী করেন।

৪৩৬৬

আবু হুরাইরাহ (রা.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর নিকট থেকে তিনটি কথা শুনার পর থেকে আমি বানী তামীমকে ভালবাসতে থাকি। (তিনি বলেছেন) তারা আমার উম্মাতের মধ্যে দাজ্জালের বিরোধিতায় সবচেয়ে অধিক কঠোর হইবে। তাদের গোত্রের একটি বাঁদী আয়েশাহ (রাদি.)- এর কাছে ছিল। রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, একে আযাদ করে দাও, কারণ সে ইসমাঈল (আ.)- এর বংশধর। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর কাছে তাদের সাদকাহর অর্থ-সম্পদ আসলে তিনি বলিলেন, এটি একটি কাওমের সদাকাহ বা তিনি বলিলেন, এটি আমার কাওমের সদাকাহ। [২৫৪৩] (আ.প্র. ৪০২০, ই.ফা. ৪০২৪)

৪৩৬৭

আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

বানী তামীম গোত্র থেকে একটি অশ্বারোহী দল নাবী (সাঃআঃ)-এর দরবারে আসল। আবু বাকর (রাদি.) প্রস্তাব দিলেন, কাকা ইবনু মাবাদ ইবনু যারারা (রাদি.)-কে এদের আমীর নিযুক্ত করে দিন। উমার (রাদি.) বলিলেন, বরং আকরা ইবনু হাবিস (রাদি.)-কে আমীর বানিয়ে দিন। আবু বাকর (রাদি.) বলিলেন, আমার বিরোধিতা করাই তোমার উদ্দেশ্য। উমার (রাদি.) বলিলেন, আপনার বিরোধিতা করার ইচ্ছা আমি কখনো করি না। এর উপর দুজনের বাক-বিতণ্ডা চলতে চলতে শেষ পর্যায়ে উভয়ের আওয়াজ উঁচু হয়ে গেল। ফলে এ সম্পর্কে এ আয়াত অবতীর্ণ হল, “হে মুমিনগণ! আল্লাহ এবং তার রসূলের সামনে তোমরা কোন ব্যাপারে অগ্রবর্তী হয়ো না। বরং আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। হে মুমিনগণ! তোমরা নাবীর কন্ঠস্বরের উপর নিজেদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চৈঃস্বরে কথা বল তাহাঁর সঙ্গে সেরূপ উচ্চৈঃস্বরে কথা বলো না। কারণ এতে তোমাদের আমাল নিস্ফল হয়ে যাবে তোমাদের অজ্ঞাতসারে”- (সুরা আল-হুজুরাত ৪৯/১-২)। [৪৮৪৫, ৪৮৪৭, ৭৩০২] (আ.প্র. ৪০২১, ই.ফা. ৪০২৫)

৬৪/৭০ অধ্যায়ঃ আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল

৪৩৬৮

আবু জামরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

(তিনি বলেন) আমি ইবনু আব্বাস (রাদি.)-কে বললামঃ আমার একটি কলসী আছে। তাতে আমার জন্য (খেজুর ভিজিয়ে) নাবীয তৈরী করা হয় এবং পানি মিঠা হলে আমি তা আরেকটি পাত্রে ঢেলে পানি করি। কিন্তু কখনো যদি ঐ পানি অধিক পরিমাণ পান করে লোকজনের সঙ্গে বসে যাই এবং দীর্ঘ সময় মাসজিদে বসে থাকি তখন আমার ভয় হয় যে, (নেশার কারণে) আমি অপমাণিত হব। তখন ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, আবদুল কায়স গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর দরবারে আসলে তিনি বলিলেন, কাওমের জন্য খোশ-আমদেদ যাদের আগমণ না ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় হয়েছে, না অপমানিত অবস্থায়। তারা আরয করিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের ও আপনার মধ্যে মুদার গোত্রের মুশরিকরা প্রতিবন্ধক হয়ে আছে। এ জন্য আমিরা আপনার কাছে নিশিদ্ধ মাসসমূহ ব্যতীত অন্য সময়ে আসতে পারি না। কাজেই আমাদেরকে সংক্ষিপ্ত কয়েকটি কথা বলে দিন, যেগুলোর উপর আমাল করলে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারব। আর যারা আমাদের পেছনে (বাড়িতে) রয়ে গেছে তাদেরকে এর দাওয়াত দেব। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি তোমাদেরকে চারটি জিনিস পালন করার নির্দেশ দিচ্ছি। আর চারটি জিনিস থেকে বিরত থাকতে বলছি। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ দিচ্ছি। তোমরা কি জান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা কাকে বলে? তা হলঃ আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই- এ কথার সাক্ষ্য দেয়া, আর সালাত আদায় করা, যাকাত দেয়া, রমাযানের সওম পালন করা এবং গানীমাতের মালের এক-পঞ্চমাংশ জমা দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছি। আর চারটি জিনিস- লাউয়ের পাত্র, কাঠের তৈরী নাকীর নামক পাত্র, সবুজ কলসী এবং মুযাফফাত নামক তৈল মাখানো পাত্রে নাবীয [৮৪] তৈরী করা থেকে নিষেধ করছি। [৫৩] (আ.প্র. ৪০২২, ই.ফা. ৪০২৬)

[৮৪]- খেজুরের পানি থেকে তৈরী খুবই নেশা সৃষ্টিকারী এক জাতীয় মদকে নাবীয বলা হয় এবং উপরোক্ত পাত্রগুলো ব্যবহারই হতো মদ প্রস্তুতের জন্য। এ কারণে এগুলোর ব্যবহার নিষেধ করা হয়েছে।

৪৩৬৯

আবু জামরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি ইবনু আব্বাস (রাদি.) থেকে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন- আবদুল কায়স গোত্রে একটি প্রতিনিধি দল নাবী (সাঃআঃ)-এর দরবারে এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা অর্থাৎ এই ছোট্ট দল রাবীআহর গোত্র। আমাদের এবং আপনার মাঝখানে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে মুদার গোত্রের মুশরিকরা। কাজেই আমরা নিষিদ্ধ মাসগুলো ব্যতীত অন্য সময়ে আপনার কাছে আসতে পারি না। এ জন্য আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বিষয়ের নির্দেশ দিয়ে দিন যেগুলোর উপর আমরা আমাল করিতে থাকব এবং যারা আমাদের পেছনে রয়েছে তাদেরকেও সেই দিকে আহ্বান জানাব। তিনি বলিলেন, আমি তোমাদেরকে চারটি বিষয়ের হুকুম দিচ্ছি এবং চারটি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। (বিষয়গুলো হল) আল্লাহর উপর ঈমান আনা অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই এ কথার সাক্ষ্য দেয়া। (কথাটি বলে) তিনি আঙ্গুলের সাহায্যে এক গুণলেন। আর সলাত আদায় করা, যাকাত দেয়া এবং তোমরা যে গানীমাত লাভ করিবে তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর জন্য জমা দেয়া। আর আমি তোমাদেরকে লাউয়ের পাত্র, নাকীর নামক খোদাইকৃত কাঠের পাত্র, সবুজ কলসী এবং মুযাফফাত নামক তৈল মাখানো পাত্র ব্যবহার থেকে নিষেধ করছি। [৫৩] (আ.প্র. ৪০২৩, ই.ফা. ৪০২৭)

৪৩৭০

বুকায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর আযাদকৃত গোলাম কুরাইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, ইবনু আব্বাস, আবদুর রহমান ইবনু আযহার এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাদি.) (এ তিনজনে) আমাকে আয়েশাহ (রাদি.)-এর কাছে পাঠিয়ে বলিলেন, তাঁকে আমাদের সবার পক্ষ থেকে সালাম জানাবে এবং তাঁকে আসরের পরের দুরাকআত সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিবে। কারণ আমরা অবহিত হয়েছি যে, আপনি নাকি এই দুরাকআত সলাত আদায় করেন অথচ নাবী (সাঃআঃ) এ দুরাকআত সলাত আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন- এ হাদীসও আমাদের কাছে পৌঁছেছে। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, আমি উমার (রাদি.)-এর উপস্থিতিতে এ দুরাকআত সলাত আদায়কারী লোকদেরকে প্রহার করতাম। কুরায়ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি তাহাঁর [আয়েশাহ (রাদি.) কাছে গেলাম এবং তারা আমাকে যে ব্যাপারে পাঠিয়েছেন তা জানালাম। তিনি বলিলেন, বিষয়টি উম্মু সালামাহ (রাদি.)-এর কাছে জিজ্ঞেস কর। এরপর আমি তাঁদেরকে জানালে তাঁরা আবার আমাকে উম্মু সালামাহ (রাদি.)-এর কাছে পাঠালেন যেভাবে তারা আমাকে আয়েশাহ (রাদি.)-এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। তখন উম্মু সালামাহ (রাদি.) বলিলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) থেকে শুনিয়াছি, তিনি দুরাকআত সলাত আদায় করা থেকে নিষেধ করিয়াছেন। কিন্তু একদিন তিনি আসরের সলাত আদায় করে আমার ঘরে ঘরে প্রবেশ করিলেন। এ সময় আমার কাছে ছিল আনসারদের বানী হারাম গোত্রের কতিপয় মহিলা। তখন নাবী (সাঃআঃ) দুরাকআত সলাত আদায় করিলেন। আমি তখন পরিচারিকাদের পাঠিয়ে বললাম, তুমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে এবং বলবে, “উম্মু সালামাহ (রাদি.) আপনাকে এ কথা বলছেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি আপনাকে এ দুরাকআত আদায় করা থেকে নিষেধ করিতে শুনিনি অথচ দেখিতে পাচ্ছি আপনি সে দুরাকআত আদায় করছেন?” এরপর যদি তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করেন তাহলে পিছনে সরে যাবে। পরিচারিকা গিয়ে সেভাবেই বলিল। তিনি হাত দিয়ে ইংগিত করিলেন। পরিচারিকা পেছনের দিকে সরে গেল। সলাত সম্পাদন করে তিনি বলিলেন, হে আবু উমাইয়্যার কন্যা! (উম্মু সালামাহ) তুমি আমাকে আসরের পরের দুরাকআত সলাতের কথা জিজ্ঞেস করছে। আসলে আজ আবদুল কায়স গোত্র থেকে তাদের কতিপয় লোক আমার কাছে ইসলাম গ্রহণ করিতে এসেছিল। তাঁরা আমাকে ব্যস্ত রাখার কারণে যুহরের পরের দুআকআত সলাত করিতে পারিনি। সেই দুরাকআত হল এ দুরাকআত সলাত। [১২৩৩] (আ.প্র. ৪০২৪, ই.ফা. ৪০২৮)

৪৩৭১

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর মাসজিদে জুমুআহর সলাত জারী করার পরে সর্বপ্রথম যে মাসজিদে জুমুআহর সলাত জারী করা হয়েছিল তা হল বাহরাইনের জুয়াসা এলাকায় অবস্থিত আবদুল ক্বায়স গোত্রের মাসজিদ। [৮৯২] (আ.প্র. ৪০২৫, ই.ফা. ৪০২৯)

৬৪/৭১ অধ্যায়ঃ বানু হানীফার প্রতিনিধি দল এবং সুমামাহ ইবনু উসাল (রাদি.)-এর ঘটনা

৪৩৭২

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) একদল অশ্বারোহী সৈন্য নজদের দিকে পাঠিয়েছিলেন। তারা সুমামাহ ইবনু উসাল নামক বনু হানীফার এক লোককে ধরে আনলেন এবং মাসজিদে নাববীর একটি খুঁটির সঙ্গে তাঁকে বেঁধে রাখলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) তার কাছে গিয়ে বলিলেন, ওহে সুমামাহ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে উত্তর দিল, হে মুহাম্মাদ! আমার কাছে তো ভালই মনে হচ্ছে। যদি আমাকে হত্যা করেন তাহলে আপনি একজন খুনিকে হত্যা করবেন। আর যদিকে আপনি অনুগ্রহ করেন তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে অনুগ্রহ করবেন। আর যদি আপনি অর্থ সম্পদ পেতে চান তাহলে যতটা ইচ্ছা দাবী করুন। নাবী (সাঃআঃ) তাকে সেই অবস্থার উপর রেখে দিলেন। এভাবে পরের দিন আসল। নাবী (সাঃআঃ) আবার তাকে বলিলেন, ওহে সুমামাহ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে বলিল, আমার কাছে সেটিই মনে হচ্ছে যা আমি আপনাকে বলেছিলাম যে, যদি আপনি অনুগ্রহ করেন তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করবেন। তিনি তাকে সেই অবস্থায় রেখে দিলেন। এভাবে এর পরের দিনও আসল। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, হে সুমামাহ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে বলিল, আমার কাছে তা-ই মনে হচ্ছে যা আমি পূর্বেই বলেছি। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা সুমামাহর বন্ধন ছেড়ে দাও। এবার সুমামাহ মাসজিদে নাববীতে প্রবেশ করিল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) আল্লাহর রাসুল। (তিনি বলিলেন) হে মুহাম্মাদ! আল্লাহর কসম! ইতোপূর্বে আমার কাছে যমীনের উপর আপনার চেহারার চেয়ে অধিক অপছন্দনীয় আর কোন চেহারা ছিল না। কিন্তু এখন আপনার চেহারাই আমার কাছে সকল চেহারা অপেক্ষা অধিক প্রিয়। আল্লাহর কসম! আমার কাছে আপনার দ্বীন অপেক্ষা অধিক ঘৃণিত অন্য কোন দ্বীন ছিল না। এখন আপনার দীনই আমার কাছে সকল দ্বীনের চেয়ে প্রিয়তম। আল্লাহর কসম! আমার মনে আপনার শহরের চেয়ে অধিক খারাপ শহর আর কোনটি ছিল না। কিন্তু এখন আপনার শহরটিই আমার কাছে সকল শহরের চেয়ে অধিক প্রিয়। আপনার অশ্বারোহী সৈনিকগণ আমাকে ধরে এনেছে, সে সময় আমি উমরাহর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ছিলাম। এখন আপনি আমাকে কী হুকুম করেন? তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাঁকে সু-সংবাদ প্রদান করিলেন এবং উমরাহ আদায়ের নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি যখন মক্কায় আসলেন তখন এক ব্যক্তি তাকে বলিল, বেদ্বীন হয়ে গেছ? তিনি উত্তর করিলেন, না, বরং আমি মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আর আল্লাহর কসম! নাবী (সাঃআঃ)-এর অনুমতি ব্যতীত তোমাদের কাছে ইয়ামামাহ থেকে গমের একটি দানাও আসবে না। [৪৬২; মুসলিম ৩২/১৯, হাদীস ১৭৬৪] (আ.প্র. ৪০২৬, ই.ফা. ৪০৩০)

৪৩৭৩

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর যুগে একবার মিথ্যুক মুসাইলামাহ (মাদীনাহয়) এসেছিল। সে বলিতে লাগল, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) যদি আমাকে তাহাঁর পরে তাহাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যায় তাহলে আমি তাহাঁর অনুগত হয়ে যাব। সে তার গোত্রের বহু লোকজনসহ এসেছিল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সাবিত ইবনু কায়স ইবনু সাম্মাসকে সঙ্গে নিয়ে তার দিকে অগ্রসর হলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর হাতে ছিল একটি খেজুরের ডাল। মুসাইলামাহ তার সঙ্গী-সাথীদের মাঝে ছিল, এই অবস্থায় তিনি তার কাছে পৌঁছলেন। তিনি বলিলেন, যদি তুমি আমার কাছে এ ডালটিও চাও তবে তাও আমি তোমাকে দেব না। তোমার ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ কক্ষনো লঙ্ঘিত হইবে না। যদি তুমি আমার আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করে দিবেন। আমি তোমাকে ঠিক তেমনই দেখিতে পাচ্ছি যেমনটি আমাকে (স্বপ্নে) দেখানো হয়েছে। এই সাবিত আমার পক্ষ হইতে তোমাকে জবাব দেবে। এরপর তিনি তার নিকট হইতে চলে আসলেন। [৩৬২০] (আ.প্র. ৪০২৭, ই.ফা. ৪০৩১)

৪৩৭৪

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর উক্তি “আমি তোমাকে তেমনই দেখিতে পাচ্ছি যেমন আমাকে দেখানো হয়েছিল” সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আবু হুরাইরা (রাদি.) আমাকে জানালেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, একদিন আমি ঘুমাচ্ছিলাম তখন স্বপ্নে দেখলাম, আমার দুহাতে স্বর্ণের দুটি কঙ্কন। কঙ্কন দুটি আমাকে চিন্তিত করিল। তখন ঘুমের মধ্যেই আমার প্রতি ওয়াহী করা হল, কাঁকন দুটিতে ফুঁ দাও। আমি সে দুটিতে ফুঁ দিলে তা উড়ে গেল। আমি এর ব্যাখ্যা করেছি দুজন মিথ্যাচারী (নাবী) যারা আমার পরে বের হইবে। তাদের একজন আনসী, অন্যজন মুসাইলামাহ। [৩৬২১] (আ.প্র. ৪০২৭, ই.ফা. ৪০৩১)

৪৩৭৫

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি ঘুমাচ্ছিলাম এমতাবস্থায় (স্বপ্নে) আমাকে পৃথিবীর সকল দেয়া হল এবং আমার হাতে দুটি স্বর্ণ কঙ্কন রাখা হল। এ দুটি আমার কাছে গুরুতর মনে হল। তখন ওয়াহী যোগে আমাকে জানানো হল যে, ও দুটিতে ফুঁ দাও। আমি ফুঁ দিলাম, তখন ও দুটি উধাও হয়ে গেল। আমি এ দুটির ব্যাখ্যা করলাম যে, এরা সেই দু মিথ্যাচারী (নাবী) যাদের মাঝখানে আমি অবস্থান করছি। অর্থাৎ সানআর অধিবাসী (আসওয়াদ আনসী) এবং ইয়ামামার অধিবাসী (মুসাইলামাতুল কাযযাব)। [৩৬২১; মুসলিম ৪২/৪, হাদীস ২২৭৪, আহমাদ ১১৮১৪] (আ.প্র. ৪০২৮, ই.ফা. ৪০৩২)

৪৩৭৬

আবু রাজা উতারিদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

(ইসলাম পূর্ব যুগে) আমরা একটি পাথরের পূজা করতাম। যখন এ অপেক্ষা উত্তম কোন পাথর পেতাম তখন এটিকে নিক্ষেপ করে দিয়ে অপরটির পূজা আরম্ভ করতাম। কোন পাথর না পেলে কিছু মাটি একত্রিত করে স্তুপ বানিয়ে নিতাম। তারপর একটি বাকরী এনে সেই স্তুপের উপর দোহন করতাম তারপর এর চারপাশে তাওয়াফ করতাম। আর রজব মাস এলে আমরা বলতাম, এটা তীর থেকে ফলা বিচ্ছিন্ন করার মাস। কাজেই আমরা রজব মাসে সব কটি তীর ও বর্শা থেকে এর তীক্ষ্ণাংশ খুলে রেখে দিতাম। রজব মাসব্যাপী আমরা এগুলো খুলে নিক্ষেপ করতাম। (আ.প্র. ৪০২৯, ই.ফা. ৪০৩৩)

৪৩৭৭

রাবী মাহদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমি আবু রাজা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- কে বলিতে শুনিয়াছি যে, নাবী (সাঃআঃ)- এর নবুয়ত লাভের সময় আমি ছিলাম অল্প বয়স্ক বালক। আমি আমাদের উট চরাতাম। যখন আমরা তাহাঁর অভিযানের কথা শুনলাম তখন আমরা পালিয়ে এলাম জাহান্নামের দিকে অর্থ্যাত মিথ্যাচারী (নাবী) মুসাইলামাহর দিকে। (আ.প্র. ৪০২৯, ই.ফা. ৪০৩৩)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply