সীফুল বাহরের যুদ্ধ
সীফুল বাহরের যুদ্ধ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬৪, মাগাযী, অধ্যায়ঃ ৬৬
৬৪/৬৬. অধ্যায়ঃ সীফুল বাহরের যুদ্ধ
এ যুদ্ধে মুসলিমগণ কুরাইশের একটি কাফেলার প্রতিক্ষায় ছিল এবং তাঁদের সেনাপতি ছিলেন আবু উবাইদাহ (রাদি.)।
৪৩৬০
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রা.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সমুদ্র তীরের দিকে একটি সৈন্যবাহিনী পাঠালেন। আবু উবাইয়দাহ ইবনুল জাররাহ (রাদি.)-কে তাদের আমীর নিযুক্ত করে দিলেন। তাঁরা সংখ্যায় ছিল তিনশ। (রাবী বলেন) আমরা বেরিয়ে পড়লাম। আমরা এক রাস্তায় ছিলাম তখন আমাদের রসদপত্র শেষ হয়ে গেল, তাই আবু উবাইদাহ (রাদি.) আদেশ দিলেন সমগ্র সেনাদলের অবশিষ্ট পাথেয় একত্রিত করিতে। অতএব সব একত্রিত করা হল। মাত্র দুথলে খেজুর হল। এরপর তিনি প্রত্যহ অল্প অল্প করে আমাদের মধ্যে খাদ্য সরবরাহ করিতে লাগলেন। যখন তাও শেষ হয়ে গেল। তখন কেবল একটি করে খেজুর আমরা পেতাম। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি জাবির (রাদি.)-কে বললাম, একটি করে খেজুর খেয়ে আপনাদের কতটুকু ক্ষুধা মিটত? তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম! একটি খেজুর পাওয়াও বন্ধ হয়ে গেলে আমরা একটির কদরও বুঝতে পারলাম। এরপর আমরা সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম। তখন আমরা পর্বতের মতো বড় একটি মাছ পেয়ে গেলাম। বাহিনীর সকলে আঠারো দিন পর্যন্ত তা খেল। তারপর আবু উবাইদা (রাদি.) মাছটির পাঁজরের দুটি হাড় আনতে হুকুম দিলেন। (দুটি হাড় আনা হলে) সেগুলো দাঁড় করানো হল। এরপর তিনি একটি সওয়ারী প্রস্তুত করিতে বলিলেন। সাওয়ারী প্রস্তুত হল এবং হাড় দুটির নিচ দিয়ে সওয়ারীটি অতিক্রম করিল। কিন্তু হাড় দুটিতে কোনই স্পর্শ লাগল না। [২৪৮৩] (আ.প্র. ৪০১৪, ই.ফা. ৪০১৮)
৪৩৬১
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রা.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের তিনশ সাওয়ারীর একটি সৈন্যবাহিনীকে কুরাইশদের একটি কাফেলার উপর সুযোগ মতো আক্রমন চালানোর জন্য পাঠিয়েছিলেন। আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রাদি.) ছিলেন আমাদের সেনাপতি। আমরা অর্ধমাস সমুদ্র তীরে অবস্থান করলাম। ভয়ানক ক্ষুধা আমাদেরকে পেয়ে বসল। ক্ষুধার জ্বালায় গাছের পাতা খেতে থাকলাম। এ জন্যই এ সৈন্যবাহিনীর নাম রাখা হয়েছে জায়শুল খাবাত অর্থাৎ পাতাওয়ালা সেনাদল। এরপর সমুদ্র আমাদের জন্য আম্বর নামক একটি প্রাণী নিক্ষেপ করিল। আমরা অর্ধমাস ধরে তা থেকে খেলাম। এর চর্বি শরীরে লাগালাম। ফলে আমাদের শরীর পূর্বের মত হৃষ্টপুষ্ট হয়ে গেল। এরপর আবু উবাইদাহ (রাদি.) আম্বরটির শরীর থেকে একটি পাঁজর ধরে খাড়া করালেন। এরপর তাহাঁর সাথীদের মধ্যকার সবচেয়ে লম্বা লোকটিকে আসতে বলিলেন। সুফ্ইয়ান (রাদি.) আরেক বর্ণনায় বলেছেন, আবু উবাইদাহ (রাদি.) আম্বরটির পাঁজরের হারগুলোর মধ্য থেকে একটি হাড় ধরে খাড়া করালেন এবং (ঐ) লোকটিতে উটের পিঠে বসিয়ে এর নিচ দিয়ে অতিক্রম করালেন। জাবির (রাদি.) বলেন, সেনাদলের এক ব্যক্তি (খাদ্যের অভাভ দেখে) প্রথমে তিনটি উট যবহ করেছিলেন, তারপর আরো তিনটি উট যবেহ করেছিলেন, তারপর আরো তিনটি উট যবহ করেছিলেন। এরপর আবু উবাইদাহ (রাদি.) তাকে (উট যবহ করিতে) নিষেধ করিলেন। আমর ইবনু দীনার (রাদি.) বলিতেন , আবু সালিহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাদের জানিয়েছেন হে, কায়স ইবনু সাদ (রাদি.) (অভিযান থেকে ফিরে এসে) তাহাঁর পিতার কাছে বর্ণনা করেছিলেন যে, সেনাদলে আমিও ছিলাম, সেনাদল ক্ষুধার্ত হয়ে পরল, (কথাটা শোনামাত্র কায়সের পিতা) সাদ বলিলেন, এমতাবস্থায় তুমি উট যবহ করে দিতে। কায়স বলিলেন, (হ্যাঁ) আমি উট যবেহ করেছি। তিনি বলিলেন, তারপর আবার সবাই ক্ষুধার্ত হয়ে গেল। এবারো তার পিতা বলিলেন, তুমি যবহ করিতে। তিনি বলিলেন, (হ্যাঁ) যবহ করেছি। তিনি বলিলেন, তারপর আবার সবাই ক্ষুধার্ত হল। সাদ বলিলেন, এবারো উট যবহ করিতে। তিনি বলিলেন, (হ্যাঁ) যবহ করেছি। তিনি বলিলেন, এরপরও আবার সবাই ক্ষুধার্ত হল। সাদ (রাদি.) বলিলেন, উট যবহ করিতে। যখন কায়স ইবনু সাদ (রাদি.) বলিলেন, তখন আমাকে (যবহ করিতে) নিষেধ করা হল। [৮২] [২৪৮৩; মুসলিম ৩৪/৪, হাদীস ১৯৩৫, আহমাদ ১৪৩১৯] (আ.প্র. ৪০১৫, ই.ফা. ৪০১৯)
[৮২] নিষেধ করার কারণ ছিল এই যে, উতগুলো কায়স ইবনু সাদ এর ছিল না এবং তার পিতা সাদ (রা.)-এর ছিল। পিতার অনুমতি ব্যতীত পুত্র পিতার সম্পদ হইতে খরচ করিতে পারে না।
৪৩৬২
জাবির (রা.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা জাইশুল খাবাত-এর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম, আবু উবাইদাহ (রাদি.)-কে আমাদের সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়েছিল। পথে আমরা ভীষণ ক্ষুধায় ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ি। তখন সমুদ্র আমাদের জন্য একটি মরা মাছ তীরে নিক্ষেপ করে দিল। এত বড় মাছ আমরা আর কখনো দেখিনি, একে আমবার বলা হয়। এরপর মাছটি থেকে আমারা অর্ধমাস আহার করলাম। একবার আবু উবাইদাহ (রাদি.) মাছটির হাড়গুলোর একটি হাড় তুলে ধরলেন আর সওয়ারীর পিঠে চড়ে একজন হারটির নিচ দিয়ে অতিক্রম করিল। (ইবনু জুরায়জ বলেন) আবু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি জাবির (রাদি.) থেকে শুনেছেন, জাবির (রাদি.) বলেনঃ ঐ সময়ে আবু উবাইদাহ (রাদি.) বললেনঃ তোমারা মাছটি আহার কর। এরপর আমরা মাদীনাহ ফিরে আসলে নাবী (সাঃআঃ)-কে বিষয়টি অবগত করলাম। তিনি বলিলেন, খাও। এটি তোমাদের জন্য রিয্ক, আল্লাহ পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর তোমাদের কাছে কিছু অবশিষ্ট থাকলে আমাদেরকেও খাওয়াও। মাছটির কিছু অংশ নাবী (সাঃআঃ)-কে এনে দেয়া হল। তিনি তা খেলেন। [২৪৮৩] (আ.প্র. ৪০১৬, ই.ফা. ৪০২০)
Leave a Reply