তায়েফের যুদ্ধ । নাজদ জাযীমাহ এবং ইয়ামানে প্রেরণ
তায়েফের যুদ্ধ । নাজদ জাযীমাহ এবং ইয়ামানে প্রেরণ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬৪, মাগাযী, অধ্যায়ঃ (৫৭-৬২)=৬টি
৬৪/৫৭. অধ্যায়ঃ তায়িফের যুদ্ধ
৬৪/৫৮. অধ্যায়ঃ নাজদের দিকে প্রেরিত অভিযান
৬৪/৫৯. অধ্যায়ঃ নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে জাযীমাহর দিকে প্রেরণ
৬৪/৬০. অধ্যায়ঃ আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফা সাহমী এবং আলকামাহ ইবনু মুজাযযিল মুদাল্লিজীর সৈন্যাভিযান, যাকে আনসারদের সৈন্যাভিযানও বলা হয়
৬৪/৬১. অধ্যায়ঃ বিদায় হাজ্জের পূর্বে আবু মূসা আশআরী (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) এবং মুআয [ইবনু জাবল (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)]- কে ইয়ামানে প্রেরণ
৬৪/৬২. অধ্যায়ঃ বিদায় হাজ্জের পূর্বে আলী ইবনু আবু ত্বলিব এবং খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রা.)- কে ইয়ামানে প্রেরণ
৬৪/৫৭. অধ্যায়ঃ তায়েফের যুদ্ধ
মূসা ইবনু উকবাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেছেন এ যুদ্ধ অষ্টম হিজরীর শাওয়াল মাসে সংঘটিত হয়েছে।
৪৩২৪
উম্মু সালামাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিতঃ
আমার কাছে এক হিজড়া ব্যক্তি বসা ছিল, এমন সময়ে নাবী (সাঃআঃ) আমার ঘরে প্রবেশ করিলেন। আমি শুনলাম যে, সে (হিজড়া ব্যক্তি) আবদুল্লাহ ইবনু উমাইয়া (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে বলছে, হে আবদুল্লাহ! কী বল, আগামীকাল যদি আল্লাহ তোমাদেরকে তায়েফের উপর বিজয় দান করেন তা হলে গাইলানের কন্যাকে নিয়ে নিও। কেননা সে (এতই কোমলদেহী), সামনের দিকে আসার সময় তার পিঠে চারটি ভাঁজ পড়ে আবার পিঠ ফিরালে সেখানে আটটি ভাঁজ পড়ে। [উম্মু সালামাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন] তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ এদেরকে তোমাদের কাছে ঢুকতে দিও না। [৭৫] ইবনু উয়াইনাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বর্ণনা করেন যে, ইবনু জুরাইজ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেছেন, হিজড়ার নাম ছিল হীত। (আ.প্র. ৩৯৮১, ই.ফা. ৩৯৮৫)
হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি এ হাদীসে এতুটুকু বৃদ্ধি করিয়াছেন যে, সেদিন তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] তায়িফ অবরোধ করা অবস্থায় ছিলেন। [৫২৩৫, ৫৮৮৭; মুসলিম ৩৯/১৩, হাদীস ২১৮০, আহমাদ ২৬৫৫২] (আ.প্র. ৩৯৮২, ই.ফা. ৩৯৮৬)
[৭৫] হিজড়াদের সম্মুখেও পর্দার বিধান প্রযোজ্য।
৪৩২৫
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তায়িফ অবরোধ করিলেন। কিন্তু তাদের নিকট কিছুই হাসিল করিতে পারেননি। তাই তিনি বলিলেন, ইনশাআল্লাহ আমরা (অবরোধ উঠিয়ে মাদীনাহর দিকে) ফিরে যাব। কথাটি সহাবীদের মনে ভারী লাগল। তাঁরা বলিলেন, আমরা চলে যাব, তায়িফ বিজয় করব না? বর্ণনাকারী একবার কাফিলুন শব্দের স্থলে নাকফুলো (অর্থাৎ আমরা যুদ্ধবিহীন ফিরে যাব) বর্ণনা করিয়াছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তাহলে সকালে গিয়ে লড়াই কর। তাঁরা (পরদিন) সকালে লড়াই করিতে গেলেন, এতে তাঁদের অনেকেই আহত হলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, ইনশাআল্লাহ আমরা আগামীকাল ফিরে চলে যাব। তখন সহাবাদের কাছে কথাটি মনঃপূত হল। এতে নাবী (সাঃআঃ) হাসলেন। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) একবার বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি মুচকি হাসি হেসেছেন। হুমাইদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সুফ্ইয়ান আমাদেরকে এ হাদীসের পূর্ণ সূত্রটিতে খবর শব্দটি ব্যবহার করে বর্ণনা করিয়াছেন। [৬০৮৬, ৭৪৮০; মুসলিম ৩২/২৯, হাদীস ১৭৭৮, আহমাদ ৪৫৮৮] (আ.প্র. ৩৯৮৩, ই.ফা. ৩৯৮৭)
৪৩২৬
আবু উসমান [নাহদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি হাদীসটি শুনিয়াছি সাদ থেকে, যিনি আল্লাহর পথে গিয়ে সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন এবং আবু বাকর (রাদি.) থেকেও শুনিয়াছি যিনি (তায়িফ অবরোধকালে) সেখানকার স্থানীয় কয়েকজনসহ তায়িফের পাঁচিলের উপর চড়ে নাবী সাঃআঃ-এর কাছে এসেছিলেন। তাঁরা দুজনই বলেছেন, আমরা নাবী সাঃআঃ থেকে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি জেনে শুনে অন্যকে নিজের পিতা বলে দাবী করে, তার জন্য জান্নাত হারাম।
হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাদের কাছে আসিম-আবুল আলিয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) অথবা আবু উসমান নাহদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেছেন, আমি সাদ এবং আবু বাকর (রাদি.)-এর মাধ্যমে নাবী সাঃআঃ থেকে হাদীসটি শুনিয়াছি। আসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি (আবুল আলিয়া অথবা আবু উসমান) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নিশ্চয় আপনাকে হাদীসটি এমন দুজন রাবী বর্ণনা করিয়াছেন যাঁদেরকে আপনি আপনার নিশ্চয়তার জন্য যথেষ্ট মনে করেন। তিনি বলিলেন, নিশ্চয়ই, কেননা তাদের একজন হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর রাস্তায় সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন। আর অপরজন হলেন তায়েফ থেকে (প্রাচীর টপকে) এসে নাবী সাঃআঃ-এর সাক্ষাৎকারী তেইশ জনের একজন। [৬৭৬৬, ৬৭৬৭] (আঃপ্রঃ ৩৯৮৪, ইঃফাঃ ৩৯৮৮)
৪৩২৭
আবু উসমান [নাহদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি হাদীসটি শুনিয়াছি সাদ থেকে, যিনি আল্লাহর পথে গিয়ে সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন এবং আবু বাকর (রাদি.) থেকেও শুনিয়াছি যিনি (তায়িফ অবরোধকালে) সেখানকার স্থানীয় কয়েকজনসহ তায়িফের পাঁচিলের উপর চড়ে নাবী সাঃআঃ-এর কাছে এসেছিলেন। তাঁরা দুজনই বলেছেন, আমরা নাবী সাঃআঃ থেকে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি জেনে শুনে অন্যকে নিজের পিতা বলে দাবী করে, তার জন্য জান্নাত হারাম।
হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাদের কাছে আসিম-আবুল আলিয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) অথবা আবু উসমান নাহদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেছেন, আমি সাদ এবং আবু বাকর (রাদি.)-এর মাধ্যমে নাবী সাঃআঃ থেকে হাদীসটি শুনিয়াছি। আসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি (আবুল আলিয়া অথবা আবু উসমান) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নিশ্চয় আপনাকে হাদীসটি এমন দুজন রাবী বর্ণনা করিয়াছেন যাঁদেরকে আপনি আপনার নিশ্চয়তার জন্য যথেষ্ট মনে করেন। তিনি বলিলেন, নিশ্চয়ই, কেননা তাদের একজন হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর রাস্তায় সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন। আর অপরজন হলেন তায়েফ থেকে (প্রাচীর টপকে) এসে নাবী সাঃআঃ-এর সাক্ষাৎকারী তেইশ জনের একজন। [৬৭৬৬, ৬৭৬৭] (আঃপ্রঃ ৩৯৮৪, ইঃফাঃ ৩৯৮৮)
৪৩২৮
আবু মূসা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)- এর নিকট মক্কা ও মাহীনাহর মধ্যবর্তী জিরানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলাম। তখন বিলাল (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাহাঁর কাছে ছিলেন। এমন সময়ে নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে এক বেদুঈন এসে বলিল, আপনি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তা পূরণ করবেন না? তিনি তাঁকে বলিলেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর। সে বলিল, সুসংবাদ গ্রহণ কর কথাটি তো আপনি আমাকে অনেকবারই বলেছেন। তখন তিনি ক্রোধ ভরে আবু মূসা ও বিলাল (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর দিকে ফিরে বলিলেন, লোকটি সুসংবাদ ফিরিয়ে দিয়েছে। তোমরা দুজন তা গ্রহণ কর। তাঁরা উভয়ে বলিলেন, আমরা তা গ্রহণ করলাম। এরপর তিনি পানির একটি পাত্র আনতে বলিলেন। তিনি এর মধ্যে নিজের উভয় হাত ও মুখমণ্ডল ধুয়ে কুল্লি করিলেন। তারপর বলিলেন, তোমরা উভয়ে এ থেকে পান করো এবং নিজেদের মুখমণ্ডল ও বুকে ছিটিয়ে দাও। আর সুসংবাদ গ্রহণ কর। তাঁরা উভয়ে পাত্রটি তুলে নিয়ে নির্দেশ মত কাজ করিলেন। এমন সময় উম্মু সালামাহ (রাযিআল্লাহু আনহা) পর্দার আড়াল থেকে ডেকে বলিলেন, তোমাদের মায়ের জন্যও অতিরিক্ত কিছু রাখ। কাজেই তাঁরা এ থেকে অতিরিক্ত কিছু তাহাঁর [উম্মু সালামাহ (রাযিআল্লাহু আনহা)- এর] জন্য রাখলেন। [১৮৮] (আ.প্র. ৩৯৮৫, ই.ফা. ৩৯৮৯)
৪৩২৯
সাফওয়ান ইবনু ইয়ালা ইবনু উমাইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
ইয়ালা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলিতেন যে, আহা! রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ হওয়ার মুহূর্তে যদি তাঁকে দেখিতে পেতাম। ইয়ালা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন ইতোমধ্যে নাবী (সাঃআঃ) জিরানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তাহাঁর উপর একটি কাপড় টানিয়ে ছায়া করে দেয়া হয়েছিল। আর সেখানে তাহাঁর সঙ্গে তাহাঁর কতিপয় সাহাবীও ছিলেন। এমন সময় তাহাঁর কাছে এক বেদুঈন আসল। তাহাঁর গায়ে ছিল একটি খুশবু মাখানো জোব্বা। সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার অভিমত কী যে গায়ে খুশবু মাখানো জোব্বা পরিধান করে উমরাহ আদায়ের জন্য ইহরাম বেঁধেছে? (এমন সময়) উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হাত দিয়ে ইশারা করে ইয়ালা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে আসতে বলিলেন। ইয়ালা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) এলে উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাহাঁর মাথাটি (কাপড়ের ছায়ায়) ঢুকিয়ে দিলেন। [তখন তিনি ইয়ালা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) দেখিতে পেলেন যে] নাবী (সাঃআঃ)- এর চেহারা লাল বর্ণ হয়ে রয়েছে। শ্বাস-প্রশ্বাস জোরে চলছে। এ অবস্থা কিছুক্ষণ পর্যন্ত ছিল, তারপর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এল। তখন তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] বলিলেন, সে লোকটি কোথায়, কিছুক্ষণ আগে যে আমাকে “উমরাহর বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিল। লোকটিকে খুঁজে আনা হলে তিনি বললেনঃ তোমার গায়ে যে খুশবু রয়েছে তা তুমি তিনবার ধুয়ে ফেল এবং জোব্বাটি খুলে ফেল। তারপর হাজ্জ পালনে যা কর, উমরাহতেও সেগুলোই কর। [১৫৩৬] (আ.প্র. ৩৯৮৬, ই.ফা. ৩৯৯০)
৪৩৩০
আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু আসিম (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনাইনের দিবসে আল্লাহ যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- কে গানীমাতের সম্পদ দান করিলেন তখন তিনি ঐগুলো সেসব মানুষের মধ্যে বন্টন করে দিলেন যাদের হৃদয়কে ঈমানের উপর সুদৃঢ় করার প্রয়োজন তিনি অনুভব করেছিলেন। আর আনসারগণকে কিছুই দিলেন না। ফলে তাঁরা যেন নাখোশ হয়ে গেলেন। কেননা অন্যেরা যা পেয়েছে তাঁরা তা পাননি। অথবা তিনি বলেছেনঃ তাঁরা যেন দুঃখিত হয়ে গেলেন। কেননা অন্যোরা যা পেয়েছে তারা তা পাননি। কাজেই নাবী (সাঃআঃ) তাদেরকে সম্বোধন করে বলিলেন, হে আনসারগণ! আমি কি তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট পাইনি, অতঃপর আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদের হিদায়াত দান করিয়াছেন? তোমরা ছিলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে পরস্পরকে জুড়ে দিয়েছেন। তোমারা ছিলে দরিদ্র, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করিয়াছেন। এভাবে যখনই তিনি কোন কথা বলেছেন তখন আনসারগণ জবাবে বলেছেন, আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসুলই আমাদের উপর অধিক ইহসানকারী। তিনি বললেনঃ আল্লাহর রসূলের জবাব দিতে তোমাদেরকে বাধা দিচ্ছে কিসে? তাঁরা তখনও তিনি যা কিছু বলেছেন তার উত্তরে বলে যাচ্ছেন, আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসুলই আমাদের উপর অধিক ইহসানকারী। তিনি বলিলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে বলিতে পার যে, আপনি আমাদের কাছে এমন এমন (সংকটময়) সময়ে এসেছিলেন কিন্তু তোমরা কি কথায় সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক বক্রী ও উট নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের বাড়ি ফিরে যাবে আল্লাহর নাবীকে সঙ্গে নিয়ে। যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে হিজরাত করানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত না থাকত তা হলে আমি আনসারদের মধ্যকারই একজন থাকতাম। যদি লোকজন উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়েই চলব। আনসারগণ হল (নাববী) ভিতরের পোশাক আর অন্যান্য লোক হল উপরের পোশাক। আমার বিদায়ের পর অচিরেই তোমরা দেখিতে পাবে অন্যদের অগ্রাধিকার। তখন ধৈর্য ধারণ করিবে (দ্বীনের উপর টিকে থাকবে) যে পর্যন্ত না তোমরা হাউজে কাউসারে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ কর। [৭২৪৫; মুসলিম ১২/৪৬, হাদীস ১০৬১, আহমাদ ১৬৪৭০] (আ.প্র. ৩৯৮৭, ই.ফা. ৩৯৯১)
৪৩৩১
আনাস ইবনু মালিক (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন আল্লাহ তাহাঁর রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে হাওয়াযিন গোত্রের সম্পদ থেকে গানীমাত হিসেবে যতটুকু দান করিতে চেয়েছেন দান করিলেন, তখন নাবী (সাঃআঃ) কতিপয় লোককে একশ করে উট দান করিলেন। (এ অবস্থা দেখে) আনসারদের কিছুসংখ্যক লোক বলে ফেললেন, আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- কে ক্ষমা করুন, তিনি কুরায়শদেরকে দিচ্ছেন আর আমাদেরকে বাদ দিচ্ছেন। অথচ আমাদের তলোয়ার থেকে এখলো তাদের রক্ত টপটপ করে পড়ছে। আনাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, তাঁদের একটি চামড়ার তৈরি তাঁবুতে জমায়েত এবং তাঁরা ব্যতীত অন্য কাউকে এখানে থাকতে অনুমতি দিলেন না। এরপর তাঁরা সবাই জমায়েত হলে নাবী (সাঃআঃ) দাঁড়িয়ে বলিলেন, তোমাদের নিকট হইতে কী কথা আমার নিকট পৌঁছল? আনসারদের জ্ঞানীগুণী লোকেরা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের নেতৃস্থানীয় কেউ তো কিছু বলেনি, তবে আমাদের কতিপয় কমবয়সী লোকেরা বলেছে যে, আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- কে ক্ষমা করুন, তিনি আমাদেরকে বাদ দিয়ে কুরাইশদেরকে (গানীমাতের মাল) দিচ্ছেন। অথচ আমাদের তরবারীগুলো থেকে এখনো তাদের রক্ত টপটপ করে পড়ছে। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি অবশ্য এমন কিছু লোককে দিচ্ছি যারা সবেমাত্র কুফ্র ত্যাগ করে ইসলামে প্রবেশ করেছে। আর তা এ জন্যে যেন তাদের মনকে আমি ঈমানের উপর সুদৃঢ় করিতে পারি। তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক ফিরে যাবে ধন-সম্পদ নিয়ে আর তোমরা বাড়ি ফিরে যাবে (আল্লাহর) নাবীকে সঙ্গে নিয়ে? আল্লাহর কসম! তোমরা যে জিনিস নিয়ে ফিরে যাবে তা অনেক উত্তম ঐ ধন-সম্পদ অপেক্ষা, যা নিয়ে তারা ফিরে যাবে। আনসারগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম। নাবী (সাঃআঃ) তাদের বলিলেন, অচিরেই তোমরা (নিজেদের উপর) অন্যদের প্রবল অগ্রাধিকার দেখিতে পাবে। অতএব, (আমার মৃত্যুর পর) আল্লাহ এবং তাহাঁর রসূলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত তোমরা ধৈর্য ধারণ করিবে। আমি হাউজে কাউসারের নিকট থাকব। আনাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, কিন্তু তাঁরা (আনসাররা) ধৈর্যধারণ করেননি। [৩১৪৬] (আ.প্র. ৩৯৮৮, ই.ফা. ৩৯৯২)
৪৩৩২
আনাস (ইবনু মালিক) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিনে রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরাইশদের মধ্যে গানীমাতের মাল বন্টন করে দিলেন। এতে আনসারগণ নাখোশ হয়ে গেলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকজন পার্থিব সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা আল্লাহর রাসুলকে নিয়ে ফিরবে? তাঁরা উত্তর দিলেন, অবশ্যই (আমরা সন্তুষ্ট)। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, যদি লোকজন কোন উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের উপত্যাকা বা গিরিপথ দিয়ে চলব। [৩১৪৬] (আ.প্র. ৩৯৮৯, ই.ফা. ৩৯৯৩)
৪৩৩৩
আনাস (ইবনু মালিক) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনায়ন [৭৬]- এর দিন নাবী (সাঃআঃ) হাওয়াযিন গোত্রের মুখোমুখি হলেন। তাহাঁর সঙ্গে ছিল দশ হাজার (মুহাজির ও আনসার সৈনিক) এবং (মক্কার) নও-মুসলিম। যুদ্ধে এরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিল। এ মুহূর্তে তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] বলিলেন, ওহে আনসার সকল! তাঁরা জওয়াব দিলেন, আমরা হাযির, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার সাহায্য করিতে আমরা প্রস্তুত এবং আপনার সামনেই আমরা উপস্থিত। নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সাওয়ারী থেকে নেমে পড়লেন। তিনি বলিলেন, আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাহাঁর রাসুল। মুশরিকরা পরাজিত হল। তিনি নও-মুসলিম এবং মুহাজিরদেরকে (গানীমাতে) বণ্টন করে দিলেন। আর আনসারদেরকে কিছুই দিলেন না। (এতে তারা নিজেদের মধ্যে সে কথা বলাবলি করছিল।) তখন তিনি তাদেরকে ডেকে এনে একটি তাঁবুর ভিতর জমায়েত করিলেন এবং বলিলেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট থাকবে না যে, লোকজন বাক্রী ও উট নিয়ে যাবে আর তোমরা আল্লাহর রাসুলকে নিয়ে। এরপর নাবী (সাঃআঃ) আরো বলিলেন, যদি লোকজন উপত্যকা দিয়ে চলে আর আনসাররা গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের গিরিপথকেই বেছে নেব। [৩১৪৬] (আ.প্র. ৩৯৯০, ই.ফা. ৩৯৯৪)
[৭৬] মক্কা বিজয়ের পর হাওয়াযিন ও সাকীফ গোত্রগুলো চিন্তা করলো তারা যদি মুসলিমদেরকে পরাজিত করিতে পারে তাহলে মক্কাবাসীর যে সব বাগান ও জায়গীর তায়িফে রয়েছে সেগুলো বিনা বাধায় তাদেরই হয়ে যাবে। আর মুসলিমদের উপর মূর্তি ভাঙ্গার অপরাধের প্রতিশোধও নেয়া যাবে।
তারা বানূ মুযার ও বানূ হেলাল গোত্রকেও তাদের সাথে নিয়ে নিলো এবং চার হাজার বীর যোদ্ধা নিয়ে মক্কার পথে রওয়ানা হলো। তারা হুনায়নের উপত্যকায় এসে অবতরণ করলো। তাদের নেতা মালিক ইবনু আউফের পরামর্শক্রমে তাদের স্ত্রী, শিশু, মাল ও গবাদি পশুকেও সঙ্গে নিয়ে ছিল, তাহাঁর যুক্তি ছিল এর ফলে কেউ যুদ্ধ ক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে যাবে না।
এ সংবাদ শুনে নাবী (সাঃআঃ) মক্কা হইতে সামনে অগ্রসর হলেন এবং তাহাঁর সঙ্গে মক্কার আরও দুহাজার লোক যোগ দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে অমুসলিমরাও ছিল এবং চুক্তিবদ্ধ মূর্তী পূজকরাও ছিল। সৈন্যদের মোট সংখ্যা বারো হাজারে দাঁড়িয়েছিল। নিজেদের সংখ্যাধিক্য দেখে সৈন্যদের মনে অহংকারও এসে গিয়েছিল এবং এজন্যে তারা যেখানে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এরূপ স্থলেও সতর্কতা অবলম্বন করেনি। শত্রুপক্ষ পূর্ব হইতেই সেখানে প্রস্তুত হয়েছিল। পাহাড়ের আবশ্যকীয় ঘাটিগুলি অধিকার করে এবং নিকটবর্তী উপত্যকায় বহু সংখ্যক আব্যর্থ লক্ষ্য তীরন্দাজ সৈন্য বসিয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থা বেশ মযবুত করে নিয়েছিল। প্রাতঃকালে মুসলিম বাহিনী অগ্রসর হবার আয়োজন করেছে, এমন সময় হাওয়াযেনের বিরাট বাহিনী প্রচন্ড বেগে তাদের উপর আপতিত হলো। নব দীক্ষিত মুসলিম এবং অমুসলিম সৈন্যরা আগ্রহাতিশয্য বশতঃ বাহিনীর অগ্রে যাত্রা করছিল। তাদের অনেকের নিকট আবশ্যকীয় অস্ত্রশস্ত্র ও ছিল না। তারা অসতর্ক অবস্থায় শত্রুদের ঘাটির নিকট পৌঁছল। এমতাবস্থায় শত্রুরা তাদের উপর এতো তীর বর্ষণ করলো যে, অগ্রবর্তী সেনাদল মুখ ফিরিয়ে পালাতে শুরু করলো। মুসলিমরা এটা সামলে নিয়ে শত্রু পক্ষের আক্রমণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করিলেন বটে, কিন্তু অগ্রবর্তী সৈন্যদলের ঐ ঘৃণিত পলায়নের জন্য তখন এমনই বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল যে, তাদের সে চেষ্টায় বিশেষ কোন ফল হলো না। এই ভীষণ দুর্যোগের মধ্যে পতিত হয়েও রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মুহূর্তের জন্যেও বিচলিত হননি। এই সময় তিনি নিজের শ্বেত খচ্চরের উপর আরোহণ করে মুসলিমদেরকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিতে লাগলেন। কিন্তু ঐ বিশৃঙ্খলা ও কোলাহলের মধ্যে তাহাঁর কণ্ঠস্বর কারো কর্ণে প্রবেশ করলো না। দুএকজন ব্যতীত সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। ঐ সময় আব্বাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর খচ্চরের লাগাম এবং আবু সুফ্ইয়ান (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাহাঁর পালানের রেকাব ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। মাত্র আর দু-তিন জন মুসলিম তাহাঁর পাশে টিকে ছিলেন।
দ্বাদশ সহস্র আত্নোৎসর্গী সৈন্য চক্ষের পলকে উধাও হয়ে গেছে। অগনিত শত্রু সেনা নাঙ্গা তরবারী হস্তে আক্রমণ করিতে আসছে, সেদিকে তাহাঁর একটুও লক্ষ নেই। ঐ সময় তিনি খচ্চর হইতে অবতরন করিলেন এবং নতজানু হয়ে নিজের পরম জনের নিকট সাহায্য ও শক্তি প্রার্থনা করিতে লাগলেন। তারপর পুনরায় খচ্চরে আরোহণ করে অগণিত শত্রুদলের উপর আক্রমণ করার জন্য তিনি দ্রুতবেগে আগ্রসর হলেন। ঐ সময় তিনি দৃঢ় কন্ঠে ও গুরুগম্ভীর স্বরে ঘোষণা করলেনঃ (আরবী)
“আমি নাবী, এতে মিথ্যার লেশমাত্র নেই, আমি আবদুল মুত্তালিবের সন্তান।” ভাবার্থ ছিলঃ আমার সত্যবাদিতার মাপকাঠি কোন সেনাবাহিনীর জয় বা পরাজয় নয়, বরং আমার সত্যবাদিতা স্বয়ং আমার স্বত্ত্বার দ্বারা হয়ে থাকে।”
ঐ সময় আব্বাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) একটি উচ্চ স্থানে আরোহণ পূর্বক তার স্বভাব সিদ্ধ উচ্চ কন্ঠে মুসলিমদেরকে আহবান করিতে লাগলেনঃ হে আনসার বীরগণ! হে শাজারার বায়আতকারীগণ! হে মুসলিম বীরবৃন্দ! হে মুহাজিরগণ! কোথায় তোমরা? এই দিকে ছুটে এসো।”
সদ্য প্রসূত গাভী যেমন স্বীয় বৎসের বিপদ দর্শনে চীৎকার করিতে করিতে ছুটে আসে, আব্বাসের (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) আহবান শ্রবন করে মুসলিম সৈনিকগণ এরূপ ছুটে আসতে লাগলেন। অতঃপর নতুনভাবে সৈন্যদের শ্রেণী বিন্যাস করা হলো। আনসার ও মুহাজিরকে আগে বাড়িয়ে দেয়া হল। এরপর তারা শত্রু পক্ষকে সমবেতভাবে আক্রমণ করিলেন। শত্রুরা মুসলিমদের তরবারির সামনে বেশীক্ষণ টিকে থাকতে পারলো না। তারা স্ত্রী পুত্র রণ সম্ভার ও সমস্ত ধণ দৌলত যুদ্ধক্ষেত্রে ফেলেই ইতস্ততঃ পালিয়ে গেল।
পলায়নের পর শত্রু পক্ষের কতক সৈন্য তাদের নেতা মালিক ইবনু আওফের সাথে তায়িফের দূর্গে আশ্রয় গ্রহণ করলো।
দ্বিতীয় দল, যাদের সাথে তাদের পরিবার বর্গ ছিল এবং ধন-সম্পদ ছিল, আওতাসের ঘাঁটিতে গিয়ে আত্নগোপন করলো।
রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তায়িফের দূর্গ অবরোধের নির্দেশ দিলেন এবং আওতাসের দিকে আবু আমির আশআরী (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) পৌঁছে শত্রুদের স্ত্রী-পুত্র ও ধন-সম্পদের উপর অধিকার লাভ করিলেন। নাবী (সাঃআঃ) যখন আওতাসের ফলাফল অবগত হলেন তখন তিনি দূর্গের অবরোধ উঠিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলেন। কেননা, ঐ লোকগুলি স্ত্রী-পুত্র নিয়ে কঠিন বিপদে পড়েছিল।
আওতাসের ২৪ হাজার উট, চল্লিশ হাজার বকরী, চার হাজার উকিয়া চাঁদি এবং ছয় হাজার নারী ও শিশু মুসলিমদের হস্তগত হয়েছিল।
রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখনও যুদ্ধ ক্ষেত্রেই ছিলেন। এমন সময় হাওয়াযেন গোত্রের ছয় জন সর্দার আসলো এবং করুণার আবেদন পেশ করলো।
তাদের মধ্যে ঐ লোকগুলি ছিল যারা তায়েফে নাবী (সাঃআঃ)- এর উপর পাথর বর্ষণ করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত যায়েদ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) সেখান হইতে রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে অজ্ঞান অবস্থায় উঠিয়ে নিয়ে আসেন।
নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ “হাঁ আমি স্বয়ং তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম (এবং এই অপেক্ষার মধ্যে প্রায় দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে যায় এবং গানীমাতের মালও বন্টিত হয়নি)। আমি আমার অংশের এবং আমার বংশের ভাগের বন্দীদেরকে সহজেই ছেড়ে দিতে পারি। আর আমার সাথে যদি শুধু আনসার ও মুহাজিরই থাকতো তাহলে সবাইকে ছেড়ে দেয়াও কঠিন ছিল না। কিন্তু তোমরা তো দেখিতেই পাচ্ছ যে, এই সেনাবাহিনীতে আমার সাথে ঐ লোকেরা রয়েছে যারা এখনও মুসলিম হয়নি। এ জন্যে একটা কৌশলের প্রয়োজন আছে। তোমরা আগামীকাল ফজরের ছালাতের সময়ে এসো এবং সাধারণ সমাবেশে তোমাদের আবেদন পেশ করো। ঐ সময় কোন এক উপায় বের হয়ে আসবে।” তিনি আরো বললেনঃ “তোমরা হয় ধনমাল নেয়া পছন্দ করো অথবা স্ত্রী-পুত্র। কেননা, আক্রমণকারী সৈন্যদের সব কিছুই ছেড়ে দেয়া কঠিন।”
পরের দিন ঐ নেতৃ বর্গই আসলো এবং তারা সাধারণ সমাবেশে নিজেদের বন্দীদের মুক্তির আবেদন নাবী কারীমের (সাঃআঃ) খিদমতে পেশ করলো।
তুলনাবিহীন দয়া দাক্ষিণ্য ও করুণা প্রদর্শনঃ রাহমাতের নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ “আমি আমার ও বানু আবদিল মুত্তালিবের বন্দীদেরকে কোন বিনিময় গ্রহণ ছাড়াই মুক্ত করে দিচ্ছি।” আনসার ও মুহাজিররা তাহাঁর এ ঘোষণা শুনে বললেনঃ “আমরাও নিজ নিজ বন্দীদেরকে কোন মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্ত করে দিলাম।”
এখন বাকী থাকল বানু সালিম ও বানু ফাযরাহ। তাদের কাছে এটা খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল যে, আক্রমণকারী সৈন্যদের প্রতি (যারা ভাগ্যক্রমে পরাজিত হয়েছে) এরূপ দয়া প্রদর্শন করা হইবে। এ জন্য তারা নিজ নিজ অংশের বন্দীদেরকে মুক্ত করিল না। রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ডাকলেন। প্রত্যেক বন্দীর মূল্য ছয়টি উট নির্ধারণ করা হলো। এই মূল্য নাবী কারীম (সাঃআঃ) নিজেই প্রদান করিলেন। এভাবে বাকী বন্দীদেরকে তিনি মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বন্দীদের প্রত্যেককে নতুন বস্ত্র পরিয়ে বিদায় করিলেন।
দুধ-বোনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনঃ এই বন্দীদের মধ্যে দাই হালীমার কন্যা শায়মা বিনতুল হারিসও ছিল। নাবী কারীম (সাঃআঃ) তাহাঁর ঐ দুধ-বোনকে চিনতে পারলেন এবং তার সম্মানে নিজের চাদরখানা মাটিতে বিছিয়ে দিলেন। অতঃপর তাকে বললেনঃ “যদি তুমি আমার কাছে থাকো তাহলে ভালো কথা। আর যদি তুমি নিজের সম্প্রদায়ের মধ্যে ফিরে যেতে চাও তাহলে তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।” সে ফিরে যেতে চাওয়ায় রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সসম্মানে তার কওমের মধ্যে পাঠিয়ে দিলেন।
অকৃত্রিম সহচরদের আন্তরিকতার নমুনাঃ গানীমাতের মাল রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ জায়গাতেই বন্টন করে দিলেন। বড় বড় অংশ তিনি ঐ লোকদেরকে প্রদান করিলেন যারা অল্পদিন পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আনসারদেরকে, যারা অত্যন্ত অকৃত্রিম ছিলেন, কিছুই দিলেন না। তিনি বললেনঃ “আনসারদের সাথে আমি নিজেই আছি। মানুষ ধন-দৌলত নিয়ে নিজ নিজ বাড়ীতে যাবে, আর আনসারগণ আল্লাহর রাসুলকে (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ে নিজেদের বাড়ীতে প্রবেশ করিবে।”
আনসারগণ এতে এতো সন্তুষ্ট হন যে সম্পদ প্রাপকরা এমন সন্তুষ্টি লাভ করিতে পারেননি। (রাহমাতুল লিল আলামীন)
৪৩৩৪
আনাস ইবনু মালিক (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আনসারদের লোকজনকে জমায়েত করে বলিলেন, কুরাইশরা সবেমাত্র জাহিলীয়্যাত ছেড়েছে আর তারা দুর্দশাগ্রস্ত। তাই আমি তাদেরকে অনুদান দিয়ে তাদের মন জয় করার ইচ্ছা করেছি। তোমরা কি সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা পার্থিব সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের ঘরে ফিরে যাবে আল্লাহর রাসুলকে নিয়ে। তারা বলিলেন, অবশ্যই আমরা সন্তুষ্ট। তিনি আরো বলিলেন, যদি লোকজন উপত্যকা দিয়ে চলে আর আনসাররা গিরিপথ দিয়ে চলে, তা হলে আনসারদের গিরিপথ অথবা তিনি বলেছেন, আনসারদের উপত্যকা দিয়েই চলব। [৩১৪৬] (আ.প্র. ৩৯৯১, ই.ফা. ৩৯৯৫)
৪৩৩৫
আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন নাবী (সাঃআঃ) হুনাইনের গানীমাত বন্টন করিলেন, তখন আনসারদের এক ব্যক্তি বলে ফেলল যে, এই বন্টনের ব্যাপারে তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করেননি। কথাটি শুনে আমি নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে আসলাম এবং তাঁকে কথাটি জানিয়ে দিলাম। তখন তাহাঁর চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। এরপর তিনি বলিলেন, আল্লাহ, মূসা (আঃ)– এর উপর রাহমাত বর্ষণ করুন। তাঁকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছিল। তাতে তিনি ধৈর্য ধারণ করেছিলেন। [৩১৫০] (আ.প্র. ৩৯৯২, ই.ফা. ৩৯৯৬)
৪৩৩৬
আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনাইনের দিন নাবী (সাঃআঃ) কোন কোন লোককে (গানীমাতের মাল) প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেন। যেমন আকরাকে একশ উট দিয়েছিলেন। উয়াইনাহকে ততই দিয়েছিলেন। অন্যদেরকেও দিয়েছিলেন। এতে এক ব্যক্তি বলে উঠল, এ বণ্টনে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়নি। (রাবী বলেন) তখন আমি বললাম, অবশ্যই আমি নাবী (সাঃআঃ)- কে এ কথা জানিয়ে দিব। [এ কথা জানানো হলে নাবী (সাঃআঃ)] বলিলেন, আল্লাহ মূসা (আঃ)- এর উপর রহম করুন। তাঁকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছিল। তাতে তিনি ধৈর্য ধারণ করেন। [৩১৫০] (আ.প্র. ৩৯৯৩, ই.ফা. ৩৯৯৭)
৪৩৩৭
আনাস ইবনু মালিক (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনায়নের দিন হাওয়াযিন, গাতফান ও অন্যান্য গোত্রগুলো নিজেদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিসহ যুদ্ধক্ষেত্রে এল। আর নাবী (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে ছিল দশ হাজার (ও কিছু সংখ্যক) তুলাকা [৭৭] সৈনিক। যুদ্ধে তারা সবাই তাহাঁর পাশ থেকে পিছনে সরে গেল। ফলে তিনি একাকী রয়ে গেলেন। সেই সময়ে তিনি আলাদা আলাদাভাবে দুটি ডাক দিয়েছিলেন, তিনি ডান দিকে ফিরে বলেছিলেন, ওহে আনসারগণ! তাঁরা সবাই উত্তর করিলেন, আমরা উপস্থিত হে আল্লাহর রাসুল! আপনি সুসংবাদ নিন, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। এরপর তিনি বাম দিকে ফিরে বলেছিলেন, ওহে আনসারগণ! তাঁরা সবাই উত্তরে বলিলেন, আমরা উপস্থিত হে আল্লাহর রাসুল! আপনি সুসংবাদ নিন, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সাদা রঙের খচ্চরটির পিঠে ছিলেন। তিনি নিচে নেমে পড়লেন এবং বলিলেন, আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাহাঁর রাসুল। (শেষে) মুশরিকরাই পরাজিত হল। সে যুদ্ধে বিপুল পরিমাণ গানীমাত হস্তগত হল। তিনি সেসব সম্পদ মুহাজির এবং নও-মুসলিমদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন। আর আনসারদেরকে কিছুই দেননি। তখন আনসারদের (কেউ কেউ) বলিলেন, কঠিন মুহূর্ত আসলে ডাকা হয় আমাদেরকে আর গানীমাত দেয়া হয় অন্যদেরকে। কথাটি নাবী (সাঃআঃ) পর্যন্ত পৌঁছে গেল। তাই তিনি তাদেরকে একটি তাঁবুতে জমায়েত করে বলিলেন, ওহে আনসারগণ! একী কথা আমার কাছে পৌঁছল? তাঁরা চুপ করে থাকলেন। তিনি বলিলেন, হে আনসারগণ! তোমরা কি খুশি থাকবে না যে, লোকজন দুনিয়ার ধন-সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা (বাড়ি ফিরে যাবে আল্লাহর রাসুলকে সঙ্গে নিয়ে? তাঁরা বললেনঃ অবশ্যই। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, যদি লোকজন একটি উপত্যকা দিয়ে চলে আর আনসারগণ একটি গিরিপথ দিয়ে চলে তাহলে আমি আনসারদের গিরিপথকেই গ্রহণ করে নেব। বর্ণনাকারী হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আবু হামযাহ (আনাস ইবনু মালিক) আপনি কি এ ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন? উত্তরে তিনি বলিলেন, আমি তাহাঁর নিকট হইতে কখন বা অনুপস্থিত থাকতাম? [৩১৪৬] (আ.প্র. ৩৯৯৪, ই.ফা. ৩৯৯৮)
[৭৭] ইবনু হাজার আসকালানী ও কিরমানী প্রভৃতি হাদীসবেত্তাগণের মতে তুলাকা শব্দের পূর্বে একটি ওয়াও উহ্য রয়েছে। অর্থাৎ দশ হাজার মুহাজির ও আনসার এবং মুক্তিপ্রাপ্ত লোকজন।
৬৪/৫৮. অধ্যায়ঃ নাজদের দিকে প্রেরিত অভিযান
৪৩৩৮
ইবনু উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাজদের দিকে একটি সৈন্যদল প্রেরিত হয়েছিল, তাতে আমিও ছিলাম। আমাদের সবার ভাগে (গানীমাতের) বারোটি করে উট পৌঁছল। আর একটি একটি করে উট অধিকও দেয়া হল। নাবী (সাঃআঃ) আমাদেরকে পাঠিয়েছিলেন আর আমরা তেরোটি করে উট নিয়ে ফিরে আসলাম। [৩১৩৪] (আ.প্র. ৩৯৯৫, ই.ফা. ৩৯৯৯)
৬৪/৫৯. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) কর্তৃক খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে জাযীমাহর দিকে প্রেরণ
৪৩৩৯
সালিমের পিতা [আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এক অভিযানে খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে বানী জাযিমার বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। (সেখানে পৌঁছে) খালিদ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। কিন্তু আমরা ইসলাম কবূল করলাম, এ কথাটি তারা ভালভাবে বুঝিয়ে বলিতে পারছিল না। তাই তারা বলিতে লাগল, আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করলাম, আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করলাম। খালিদ তাদেরকে হত্যা ও বন্দী করিতে থাকলেন এবং আমাদের প্রত্যকের কাছে বন্দীদেরকে সোপর্দ করিতে থাকলেন। অবশেষে একদিন তিনি আদেশ দিলেন আমাদের সবাই যেন নিজ নিজ বন্দীকে হত্যা করে ফেলি। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি আমার বন্দীকে হত্যা করব না। আর আমার সঙ্গীদের কেউই তাহাঁর বন্দীকে হত্যা করিবে না। অবশেষে আমরা নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে ফিরে আসলাম। আমরা তাহাঁর কাছে এ ব্যাপারটি উল্লেখ করলাম। নাবী (সাঃআঃ) তখন দুহাত তুলে বলিলেন, হে আল্লাহ! খালিদ যা করেছে আমি তার দায় থেকে মুক্ত হওয়ার কথা তোমার নিকট জ্ঞাপন করছি। এ কথাটি তিনি দুবার বলিলেন। [৭১৮৯] (আ.প্র. ৩৯৯৬, ই.ফা. ৪০০০)
৬৪/৬০. অধ্যায়ঃ আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফা সাহমী এবং আলকামাহ ইবনু মুজাযযিল মুদাল্লিজীর সৈন্যাভিযান, যাকে আনসারদের সৈন্যাভিযানও বলা হয়
৪৩৪০
আলী (ইবনু আবু ত্বলিব) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন এবং আনসারদের এক ব্যক্তিকে তার সেনাপতি নিযুক্ত করে তিনি তাদেরকে তাহাঁর (সেনাপতির) আনুগত্য করার নির্দেশ দেন। (কোন কারণে) আমীর রাগান্বিত হয়ে যান। তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করিতে নির্দেশ দেননি? তাঁরা বলিলেন, অবশ্যই। তিনি বলিলেন, তাহলে তোমরা কিছু কাঠ সংগ্রহ করে আনো। তাঁরা কাঠ সংগ্রহ করিলেন। তিনি বলিলেন, এগুলোতে আগুন লাগিয়ে দাও। তাঁরা ওতে আগুন লাগালেন। তখন তিনি বলিলেন, এবার তোমরা সকলে এ আগুনে প্রবেশ কর। তাঁরা আগুনে প্রবেশ করিতে সংকল্প করে ফেললেন। কিন্তু তাদের কয়েকজন অন্যদের বাধা দিয়ে বলিতে লাগলেন, আগুন থেকেই তো আমরা পালিয়ে গিয়ে নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এভাবে ইতস্তত করিতে করিতে আগুন নিভে গেল এবং তার ক্রোধও ঠান্ডা হল। এরপর এ সংবাদ নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে পৌঁছল তিনি বলিলেন, যদি তারা আগুনে ঝাঁপ দিত তা হলে ক্বিয়ামাতের দিন পর্যন্ত এ আগুন থেকে বের হইতে পারত না। আনুগত্য (করিতে হইবে) কেবল সৎ কাজের। (আ.প্র. ৩৯৯৭, ই.ফা. ৪০০১)
৬৪/৬১. অধ্যায়ঃ বিদায় হাজ্জের পূর্বে আবু মূসা আশআরী (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) এবং মুআয [ইবনু জাবল (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)]- কে ইয়ামানে প্রেরণ
৪৩৪১
আবু বুরদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুল সাঃআঃ আবু মূসা এবং মুআয ইবনু জাবাল (রাদি.)-কে ইয়ামানে পাঠালেন। বর্ণনাকারী বলেন, তৎকালে ইয়ামানে দুটি প্রদেশ ছিল। তিনি তাদের প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে পাঠিয়ে বলে দিলেন, তোমরা কোমল হইবে, কঠোর হইবে না। অনীহা সৃষ্টি হইতে দেবে না। এরপর তাঁরা দুজনে নিজ নিজ কর্ম এলাকায় চলে গেলেন। আবু বুরদা (রাদি.) বলিলেন, তাঁদের প্রত্যেকেই যখন নিজ নিজ এলাকায় সফর করিতেন এবং অন্যজনের কাছাকাছি স্থানে পৌঁছে যেতেন তখন তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সালাম বিনিময় করিতেন। এভাবে মুআয (রাদি.) একবার তাহাঁর এলাকায় এমন স্থানে সফর করছিলেন, যে স্থানটি তাহাঁর সাথী আবু মূসা (রাদি.)-এর এলাকার নিকটবর্তী ছিল। সুযোগ পেয়ে তিনি খচ্চরের পিঠে চড়ে (আবু মূসার এলাকায়) পৌঁছে গেলেন। তখন তিনি দেখলেন যে, আবু মূসা (রাদি.) বসে আছেন আর তাহাঁর চারপাশে অনেক লোক জমায়েত হয়ে আছে। আরো দেখলেন, পাশে এক লোককে তার গলার সঙ্গে উভয় হাত বেঁধে রাখা হয়েছে। মুআয (রাদি.) তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (আবু মূসা)। এ লোকটি কে? তিনি উত্তর দিলেন, এ লোকটি ইসলাম গ্রহণ করার পর মুরতাদ হয়ে গেছে। মুআয (রাদি.) বলিলেন, তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি সাওয়ারী থেকে নামব না। আবু মূসা (রাদি.) বলিলেন, এ উদ্দেশেই তাকে আনা হয়েছে, কাজেই আপনি নামুন। তিনি বলিলেন, না তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি নামব না। ফলে আবু মূসা (রাদি.) হুকুম করিলেন এবং লোকটিকে হত্যা করা হল। এরপর মুআয (রাদি.) নামলেন। মুআয (রাদি.) বলিলেন, ওহে আবদুল্লাহ! আপনি কীভাবে কুরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি বলিলেন, আমি (দিবা-রাত্রি) কিছুক্ষণ পরপর কিছু অংশ করে তিলাওয়াত করে থাকি। তিনি বলিলেন, আর আপনি কীভাবে তিলাওয়াত করেন, হে মুআয? উত্তরে তিনি বলিলেন, আমি রাতের প্রথমাংশে শুয়ে পড়ি এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুমিয়ে আমি উঠে পড়ি। এরপর আল্লাহ আমাকে যতটুকু তাওফীক দান করেন তিলাওয়াত করিতে থাকি। এতে আমি আমার নিদ্রার অংশকেও (সওয়াবের বিষয় বলে) মনে করি, আমি আমার দাঁড়িয়ে তিলাওয়াতকে যেমনি (সাওয়াবের বিষয় বলে) মনে করি। [৪৩৪৫; মুসলিম ৩২/৩, হাদীস ১৭৩৩, আহমাদ ১৯৭৬৩] (আঃপ্রঃ ৩৯৯৮, ইঃফাঃ ৪০০২)
৪৩৪২
আবু বুরদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুল সাঃআঃ আবু মূসা এবং মুআয ইবনু জাবাল (রাদি.)-কে ইয়ামানে পাঠালেন। বর্ণনাকারী বলেন, তৎকালে ইয়ামানে দুটি প্রদেশ ছিল। তিনি তাদের প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে পাঠিয়ে বলে দিলেন, তোমরা কোমল হইবে, কঠোর হইবে না। অনীহা সৃষ্টি হইতে দেবে না। এরপর তাঁরা দুজনে নিজ নিজ কর্ম এলাকায় চলে গেলেন। আবু বুরদা (রাদি.) বলিলেন, তাঁদের প্রত্যেকেই যখন নিজ নিজ এলাকায় সফর করিতেন এবং অন্যজনের কাছাকাছি স্থানে পৌঁছে যেতেন তখন তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সালাম বিনিময় করিতেন। এভাবে মুআয (রাদি.) একবার তাহাঁর এলাকায় এমন স্থানে সফর করছিলেন, যে স্থানটি তাহাঁর সাথী আবু মূসা (রাদি.)-এর এলাকার নিকটবর্তী ছিল। সুযোগ পেয়ে তিনি খচ্চরের পিঠে চড়ে (আবু মূসার এলাকায়) পৌঁছে গেলেন। তখন তিনি দেখলেন যে, আবু মূসা (রাদি.) বসে আছেন আর তাহাঁর চারপাশে অনেক লোক জমায়েত হয়ে আছে। আরো দেখলেন, পাশে এক লোককে তার গলার সঙ্গে উভয় হাত বেঁধে রাখা হয়েছে। মুআয (রাদি.) তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (আবু মূসা)। এ লোকটি কে? তিনি উত্তর দিলেন, এ লোকটি ইসলাম গ্রহণ করার পর মুরতাদ হয়ে গেছে। মুআয (রাদি.) বলিলেন, তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি সাওয়ারী থেকে নামব না। আবু মূসা (রাদি.) বলিলেন, এ উদ্দেশেই তাকে আনা হয়েছে, কাজেই আপনি নামুন। তিনি বলিলেন, না তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি নামব না। ফলে আবু মূসা (রাদি.) হুকুম করিলেন এবং লোকটিকে হত্যা করা হল। এরপর মুআয (রাদি.) নামলেন। মুআয (রাদি.) বলিলেন, ওহে আবদুল্লাহ! আপনি কীভাবে কুরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি বলিলেন, আমি (দিবা-রাত্রি) কিছুক্ষণ পরপর কিছু অংশ করে তিলাওয়াত করে থাকি। তিনি বলিলেন, আর আপনি কীভাবে তিলাওয়াত করেন, হে মুআয? উত্তরে তিনি বলিলেন, আমি রাতের প্রথমাংশে শুয়ে পড়ি এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুমিয়ে আমি উঠে পড়ি। এরপর আল্লাহ আমাকে যতটুকু তাওফীক দান করেন তিলাওয়াত করিতে থাকি। এতে আমি আমার নিদ্রার অংশকেও (সওয়াবের বিষয় বলে) মনে করি, আমি আমার দাঁড়িয়ে তিলাওয়াতকে যেমনি (সাওয়াবের বিষয় বলে) মনে করি। [৪৩৪৫; মুসলিম ৩২/৩, হাদীস ১৭৩৩, আহমাদ ১৯৭৬৩] (আঃপ্রঃ ৩৯৯৮, ইঃফাঃ ৪০০২)
৪৩৪৩
আবু মূসা আশআরী (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে (আবু মূসাকে গভর্নর নিযুক্ত করে) ইয়ামানে পাঠিয়েছেন। তখন তিনি ইয়ামানে তৈরি করা হয় এমন কতিপয় শরাব সম্পর্কে নাবী (সাঃআঃ)- কে জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, ঐগুলো কী কী? আবু মূসা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলিলেন, তা হল বিতউ ও মিয্র শরাব। বর্ণনাকারী সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আবু বুরদাহকে জিজ্ঞেস করলাম বিতউ কী? তিনি বলিলেন, বিতউ হল মধু থেকে গ্যাঁজানো রস আর মিয্র হল যবের গ্যাঁজানো রস। (সাঈদ বলেন) তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, সকল নেশা উৎপাদক বস্তুই হারাম। হাদীসটি জারীর এবং আবদুল ওয়াহিদ শাইবানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- এর মাধ্যমে আবু বুরদা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) সূত্রেও বর্ণনা করিয়াছেন। [২২৬১] (আ.প্র. ৩৯৯৯, ই.ফা. ৪০০৩)
৪৩৪৪
আবু বুরদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তার দাদা আবু মূসা ও মুআয (রাদি.)-কে নাবী সাঃআঃ (শাসক হিসেবে) ইয়ামানে পাঠালেন। এ সময় তিনি বলিলেন, তোমরা লোকজনের সঙ্গে সহজ আচরণ করিবে। কখনো কঠিন আচরণ করিবে না। মানুষের মনে সুসংবাদের মাধ্যমে উৎসাহ সৃষ্টি করিবে। কখনো তাদের মনে অনীহা সৃষ্টি করিবে না এবং একে অপরকে মেনে চলবে। আবু মূসা (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর নাবী! আমাদের এলাকায় মিয্র নামের এক প্রকার শরাব যব থেকে তৈরি করা হয় আর বিত্উ নামের এক প্রকার শরাব মধু থেকে তৈরি করা হয় (এগুলো সম্পর্কে হুকুম দিন)। নাবী সাঃআঃ বলিলেন, নেশা সৃষ্টিকারী সকল বস্তুই হারাম। এরপর দুজনেই চলে গেলেন। মুআয আবু মূসাকে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি কীভাবে কুরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি উত্তর দিলেন, দাঁড়িয়ে, বসে, সাওয়ারীর পিঠে সাওয়ার অবস্থায় এবং কিছুক্ষণ পরপরই তিলাওয়াত করি। তিনি বলিলেন, আর আমি রাতের প্রথমদিকে ঘুমিয়ে পড়ি তারপর (শেষ ভাগে তিলাওয়াতের জন্য সালাতে) দাঁড়িয়ে যাই। এভাবে আমি আমার নিদ্রার সময়কেও আমার সালাতে দাঁড়ানোর মতই সওয়াবের বিষয় মনে করে থাকি। এরপর (উভয়েই নিজ শাসন এলাকায়) তাঁবু খাটালেন এবং পরস্পরের সাক্ষাৎ বজায় রেখে চললেন। (এক সময়) মুআয (রাদি.) আবু মূসা (রাদি.)-এর সাক্ষাতে এসে দেখলেন, সেখানে এক ব্যক্তি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এ লোকটি কে? আবু মূসা (রাদি.) বলিলেন, লোকটি ইয়াহূদী ছিল, ইসলাম গ্রহণ করার পর মুরতাদ হয়ে গেছে। মুআয (রাদি.) বলিলেন, আমি ওর গর্দান উড়িয়ে দেবো। শুবাহ থেকে আকাদী এবং ওয়াহ্ব এভাবেই বর্ণনা করিয়াছেন। আর ওকী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নযর ও আবু দাঊদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ হাদীসের সানাদে শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সাঈদ-সাঈদের পিতা-সাঈদের দাদা নাবী সাঃআঃ থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। হাদীসটি জারীর ইবনু আবদুল হামীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শাইবানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যমে আবু বুরদার সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। [২২৬১, ৪৩৪২] (আঃপ্রঃ ৪০০০, ইঃফাঃ ৪০০৪)
৪৩৪৫
আবু বুরদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তার দাদা আবু মূসা ও মুআয (রাদি.)-কে নাবী সাঃআঃ (শাসক হিসেবে) ইয়ামানে পাঠালেন। এ সময় তিনি বলিলেন, তোমরা লোকজনের সঙ্গে সহজ আচরণ করিবে। কখনো কঠিন আচরণ করিবে না। মানুষের মনে সুসংবাদের মাধ্যমে উৎসাহ সৃষ্টি করিবে। কখনো তাদের মনে অনীহা সৃষ্টি করিবে না এবং একে অপরকে মেনে চলবে। আবু মূসা (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর নাবী! আমাদের এলাকায় মিয্র নামের এক প্রকার শরাব যব থেকে তৈরি করা হয় আর বিত্উ নামের এক প্রকার শরাব মধু থেকে তৈরি করা হয় (এগুলো সম্পর্কে হুকুম দিন)। নাবী সাঃআঃ বলিলেন, নেশা সৃষ্টিকারী সকল বস্তুই হারাম। এরপর দুজনেই চলে গেলেন। মুআয আবু মূসাকে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি কীভাবে কুরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি উত্তর দিলেন, দাঁড়িয়ে, বসে, সাওয়ারীর পিঠে সাওয়ার অবস্থায় এবং কিছুক্ষণ পরপরই তিলাওয়াত করি। তিনি বলিলেন, আর আমি রাতের প্রথমদিকে ঘুমিয়ে পড়ি তারপর (শেষ ভাগে তিলাওয়াতের জন্য সালাতে) দাঁড়িয়ে যাই। এভাবে আমি আমার নিদ্রার সময়কেও আমার সালাতে দাঁড়ানোর মতই সওয়াবের বিষয় মনে করে থাকি। এরপর (উভয়েই নিজ শাসন এলাকায়) তাঁবু খাটালেন এবং পরস্পরের সাক্ষাৎ বজায় রেখে চললেন। (এক সময়) মুআয (রাদি.) আবু মূসা (রাদি.)-এর সাক্ষাতে এসে দেখলেন, সেখানে এক ব্যক্তি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এ লোকটি কে? আবু মূসা (রাদি.) বলিলেন, লোকটি ইয়াহূদী ছিল, ইসলাম গ্রহণ করার পর মুরতাদ হয়ে গেছে। মুআয (রাদি.) বলিলেন, আমি ওর গর্দান উড়িয়ে দেবো। শুবাহ থেকে আকাদী এবং ওয়াহ্ব এভাবেই বর্ণনা করিয়াছেন। আর ওকী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নযর ও আবু দাঊদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ হাদীসের সানাদে শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সাঈদ-সাঈদের পিতা-সাঈদের দাদা নাবী সাঃআঃ থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। হাদীসটি জারীর ইবনু আবদুল হামীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শাইবানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যমে আবু বুরদার সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। [২২৬১, ৪৩৪২] (আঃপ্রঃ ৪০০০, ইঃফাঃ ৪০০৪)
৪৩৪৬
আবু মূসা আশআরী (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে আমার গোত্রের এলাকায় (শাসক করে) পাঠালেন। (বিদায় হাজ্জের বছর) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আবতাহ নামক স্থানে অবস্থান করার সময় আমি তাহাঁর সাক্ষাতে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে বলিলেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! তুমি ইহরাম বেঁধেছ কি? আমি বললাম, জী হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বলিলেন, (তালবিয়া) কীভাবে বলেছিলে? আমি উত্তর দিলাম, আমি এরূপ বলেছি যে, হে আল্লাহ! আমি হাযির হয়েছি এবং আপনার [নাবী (সাঃআঃ)- এর] ইহরামের মতো ইহরাম বাঁধলাম। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, বাইতুল্লাহ তাওয়াফ কর এবং সাফা ও মারওয়ার সায়ী আদায় কর, তারপর হালাল হয়ে যাও। আমি সে রকমই করলাম। এমনকি বানী কাইসের জনৈকা মহিলা আমার চুল পর্যন্ত আঁচড়িয়ে দিয়েছিল। আর আমরা উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর খিলাফত কাল পর্যন্ত এভাবেই আমাল করিতে থাকলাম। [১৫৫৯] (আ.প্র. ৪০০১, ই.ফা. ৪০০৫)
৪৩৪৭
ইবনু আব্বাস (রা.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ মুআয ইবনু জাবালকে ইয়ামানে পাঠানোর সময় তাঁকে বলিলেন, অচিরেই তুমি আহলে কিতাবদের এক গোত্রের কাছে যাচ্ছ। যখন তুমি তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছবে তখন তাদেরকে এ দাওয়াত দেবে তারা যেন সাক্ষ্য দেয় যে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাঃআঃ আল্লাহর রাসুল, এরপর তারা যদি তোমার এ কথা মেনে নেয়, তখন তাদেরকে এ কথা জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তোমাদের উপর দিনে ও রাতে পাঁচবার সালাত ফরয করে দিয়েছেন। তারা তোমার এ কথা মেনে নিলে তুমি তাদেরকে জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তোমাদের উপর যাকাত ফরয করে দিয়েছেন, যা তাদের বিত্তশালীদের নিকট হইতে গ্রহণ করা হইবে এবং তাদের অভাবগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হইবে। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয়, তা হলে (যাকাত গ্রহণ কালে) তাদের মালের উৎকৃষ্টতম অংশ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। মাযলুমদের বদদুআকে ভয় করিবে, কেননা মাযলুমের বদদুআ এবং আল্লাহর মাঝখানে কোন আড়াল থাকে না। [১৩৯৫] (আঃপ্রঃ ৪০০২, ইঃফাঃ ৪০০৬)
আবু আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, طَوَّعَتْ، طَاعَتْ এবং أَطَاعَتْ সমার্থবোধক শব্দ, طِعْتُ، طُعْتُ এবং أَطَعْتُ -এগুলোর একই অর্থ।
৪৩৪৮
আমর ইবনু মাইমূন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
মুআয (ইবনু জাবাল) (রাদি.) ইয়ামানে পৌঁছার পর লোকজনকে নিয়ে ফাজ্রের সালাত আদায় করিলেন। তাতে তিনি وَاتَّخَذَ اللهُ إِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا অর্থাৎ আল্লাহ ইবরাহীমকে বন্ধু বানিয়ে নিলেন- (সুরা আন্-নিসা ৪/১২৫) আয়াতটি তিলাওয়াত করিলেন। তখন কাওমের এক ব্যক্তি বলে উঠল, ইবরাহীমের মায়ের চোখ ঠান্ডা হয়ে গেছে।
মুআয (রাদি.) আরও অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন আমর (রাদি.) থেকে। নিশ্চয়ই নাবী সাঃআঃ মুআয (ইবনু জাবাল) (রাদি.)-কে ইয়ামানে পাঠালেন। সেখানে মুআয (রাদি.) ফাজ্রের সালাতে সুরা নিসা তিলাওয়াত করিলেন। যখন তিনি পড়লেন وَاتَّخَذَ اللهُ إِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا তখন তাহাঁর পেছনে এক ব্যক্তি বলে উঠল, ইবরাহীমের মায়ের চোখ ঠান্ডা হয়ে গেছে। (আঃপ্রঃ ৪০০৩, ইঃফাঃ ৪০০৭)
৬৪/৬২. অধ্যায়ঃ বিদায় হাজ্জের পূর্বে আলী ইবনু আবু ত্বলিব এবং খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রা.)- কে ইয়ামানে প্রেরণ
৪৩৪৯
আহমাদ ইবনু উসমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদেরকে খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাদি.)- এর সঙ্গে ইয়ামানে পাঠালেন। বারাআ (রাদি.) বলেন, তিনি খালিদ (রাদি.)- এর স্থলে আলী (রাদি.)- কে পাঠিয়ে বলে দিলেন যে, খালিদ (রাদি.)- এর সাথীদেরকে বলবে, তাদের মধ্যে যে তোমার সঙ্গে (ইয়ামানের দিকে) যেতে ইচ্ছা করে সে যেন তোমার সাথে চলে যায়, আর যে (মদিনায়) ফিরে যেতে চায় সে যেন ফিরে যায়। (রাবী বলেন) তখন আমি আলী (রাদি.)- এর অনুগামীদের মধ্যে থাকলাম। ফলে আমি গানীমাত হিসেবে অনেক পরিমাণ উকিয়া [৭৮] লাভ করলাম। (আ.প্র. ৪০০৪, ই.ফা. ৪০০৮)
[৭৮] এক উকিয়া = ৪০ দিরহাম সমপরিমাণ।
৪৩৫০
বুরাইদাহ (রা.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আলী (রাদি.)- কে খুমুস (গানীমাতের এক-পঞ্চমাংশ) নিয়ে আসার জন্য খালিদ (রাদি.)- এর কাছে পাঠালেন। (রাবী বুরাইদাহ বলেন,) আমি আলী (রাদি.)- এর প্রতি অসন্তুষ্ট, আর তিনি গোসলও করিয়াছেন। (রাবী বলেন) তাই আমি খালিদ (রাদি.)- কে বললাম, আপনি কি তার দিকে দেখছেন না? এরপর আমরা নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে ফিরে আসলে আমি তাহাঁর কাছে বিষয়টি জানালাম। তখন তিনি বলিলেন, হে বুরাইদাহ! তুমি কি আলীর প্রতি অসন্তুষ্ট? আমি বললাম জ্বী, হ্যাঁ। তিনি বলেলন, তার উপর অসন্তুষ্ট থেক না। কারণ খুমুসে তার প্রাপ্য এর চেয়েও অধিক আছে। (আ.প্র. ৪০০৫, ই.ফা. ৪০০৯)
৪৩৫১
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আলী ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.) ইয়ামান থেকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর কাছে এক প্রকার (রঙিন) চামড়ার থলে করে সামান্য কিছু স্বর্ণ পাঠিয়েছিলেন। তখনও এগুলো থেকে সংযুক্ত মাটি পরিষ্কার করা হয়নি। আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) বলেন, রাসুল (সাঃআঃ) চার জনের মাঝে স্বর্ণখণ্ডটি বণ্টন করে দিলেন। তারা হলেন, উয়াইনাহ ইবনু বাদ্র, আকরা ইবনু হাবিস, যায়দ আল-খায়ল এবং চতুর্থ জন আলক্বামাহ কিংবা আমির ইবনু তুফায়ল (রাদি.)। তখন সাহাবীগণের মধ্য থেকে একজন বলিলেন, এটা পাওয়ার ব্যাপারে তাঁদের অপেক্ষা আমরাই অধিক হাকদার ছিলাম। (রাবী) বলেন, কথাতি নাবী (সাঃআঃ) পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছল। তাই নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা কি আমার উপর আস্থা রাখ না অথচ আমি আসমানের অধিবাসীদের আস্থাভাজন, সকাল-বিকাল আমার কাছে আসমানের সংবাদ আসছে। রাবী বলেন, এমন সময়ে এক ব্যাক্তি উঠে দাঁড়াল। লোকটির চোখ দুটি ছিল কোটরাগত, চোয়ালের হাড় যেন বেরিয়ে পড়ছে, উঁচু কপাল বিশিষ্ট, দাড়ি অতি ঘন, মাথাটি ন্যাড়া, পরনের লুঙ্গী উপরে উত্থিত। সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহকে ভয় করুন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমার জন্য আফসোস! আল্লাহকে ভয় করার ব্যাপারে দুনিয়াবাসীদের মধ্যে আমি কি অধিক হাকদার নই? রাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) বলেন, লোকটি চলে গেলে খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি লোকটির গর্দান উড়িয়ে দেব না? রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ না হইতে পারে সে সলাত আদায় করে। খালিদ (রাদি.) বলিলেন, অনেক সলাত আদায়কারী এমন আছে যারা মুখে এমন এমন কথা উচ্চারণ করে যা তাদের অন্তরে নেই। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, আমাকে মানুষের দিল ছিদ্র করে, পেট ফেড়ে দেখার জন্য বলা হয়নি। তারপর তিনি লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখলেন। তখন লোকটি পিঠ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। তিনি বলিলেন, এ ব্যাক্তির বংশ থেকে এমন জাতির উদ্ভব হইবে যারা শ্রুতিমধুর কণ্ঠে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করিবে অথচ আল্লাহর বাণী তাদের গলদেশের নিচে নামবে না। তারা দ্বীন থকে এভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে লক্ষ্যবস্তুর দেহ ভেদ করে তীর বেরিয়ে যায়। (বর্ণনাকারী বলেন) আমার মনে হয় তিনি এ কথাও বলেছেন, যদি আমি তাদেরকে পাই তাহলে অবশ্যই আমি তাদেরকে সামূদ জাতির মতো হত্যা করে দেব। [৩৩৪৪; মুসলিম ১২/৪৭, হাদীস ১০৬৪, আহমাদ ১১৬৯৫] (আ.প্র. ৪০০৬, ই.ফা. ৪০১০)
৪৩৫২
জাবির (রা.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আলী (রাদি.)- কে তাহাঁর কৃত ইহরামের উপর স্থির থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মুহাম্মাদ ইবনু বাক্র জুরায়জ-আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-জাবির (রাদি.) সূত্রে আরও বর্ণনা করেন যে, জাবির (রাদি.) বলেছেনঃ আলী ইবনু আবু ত্বলিব তাহাঁর আদায়কৃত কর খুমুস নিয়ে (মাক্কায়) আসলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাকে বলিলেন, হে আলী! তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছ? তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) যেটির ইহরাম বেঁধেছেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তা হলে তুমি কুরবানীর পশু পাঠিয়ে দাও এবং ইহরাম বাঁধা এ অবস্থায় অবস্থান করিতে থাক। বর্ণনাকারী [জাবির (রাদি.)] বলেন, সে সময় আলী (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)- এর জন্য কুরবানীর পশু পাঠিয়েছিলেন। [১৫৫৭; মুসলিম ১৫/১৭, হাদীস ১২১৬] (আ.প্র. ৪০০৭, ই.ফা. ৪০১১)
৪৩৫৩
বাকর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু উমার (রাদি.)-এর কাছে এ কথা উল্লেখ করা হল, আনাস (রাদি.) লোকেদের কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী সাঃআঃ হাজ্জ ও উমরাহর জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। তখন ইবনু উমার (রাদি.) বলিলেন, নাবী সাঃআঃ হাজ্জের জন্য ইহরাম বেঁধেছেন, তাহাঁর সঙ্গে আমরাও হাজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধি। যখন আমরা মক্কা্য় পৌঁছলাম তিনি বলিলেন, তোমাদের যার সঙ্গে কুরবানীর পশু নেই সে যেন তার হাজ্জের ইহরাম উমরাহর ইহরামে পরিণত করে। অবশ্য নাবী সাঃআঃ-এর সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। অতঃপর আলী ইবনু আবু তালিব (রাদি.) হাজ্জের উদ্দেশে ইয়ামান থেকে আসলেন। নাবী সাঃআঃ (তাঁকে) জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছ? কারণ আমাদের সঙ্গে তোমার স্ত্রী পরিবার আছে। তিনি উত্তর দিলেন, নাবী সাঃআঃ যেটির ইহরাম বেঁধেছেন আমি সেটিরই ইহরাম বেঁধেছি। নাবী সাঃআঃ বলিলেন, তাহলে (এ অবস্থায়ই) থাক, কেননা আমাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু আছে। [মুসলিম ১৫/২৭, হাদীস ১২৩১, ১২৩২] (আঃপ্রঃ ৪০০৮, ইঃফাঃ ৪০১২)
৪৩৫৪
ইবনু উমার (রাদি.)-এর কাছে এ কথা উল্লেখ করা হল, আনাস (রাদি.) লোকেদের কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী সাঃআঃ হাজ্জ ও উমরাহর জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। তখন ইবনু উমার (রাদি.) বলিলেন, নাবী সাঃআঃ হাজ্জের জন্য ইহরাম বেঁধেছেন, তাহাঁর সঙ্গে আমরাও হাজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধি। যখন আমরা মক্কা্য় পৌঁছলাম তিনি বলিলেন, তোমাদের যার সঙ্গে কুরবানীর পশু নেই সে যেন তার হাজ্জের ইহরাম উমরাহর ইহরামে পরিণত করে। অবশ্য নাবী সাঃআঃ-এর সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। অতঃপর আলী ইবনু আবু তালিব (রাদি.) হাজ্জের উদ্দেশে ইয়ামান থেকে আসলেন। নাবী সাঃআঃ (তাঁকে) জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছ? কারণ আমাদের সঙ্গে তোমার স্ত্রী পরিবার আছে। তিনি উত্তর দিলেন, নাবী সাঃআঃ যেটির ইহরাম বেঁধেছেন আমি সেটিরই ইহরাম বেঁধেছি। নাবী সাঃআঃ বলিলেন, তাহলে (এ অবস্থায়ই) থাক, কেননা আমাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু আছে। [মুসলিম ১৫/২৭, হাদীস ১২৩১, ১২৩২] (আঃপ্রঃ ৪০০৮, ইঃফাঃ ৪০১২)
বাকর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
Leave a Reply