মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ এবং বিজয়াভিযান এর বর্ণনা

মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ এবং বিজয়াভিযান এর বর্ণনা

মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ এবং বিজয়াভিযান এর বর্ণনা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬৪, মাগাযী, অধ্যায়ঃ (৪৭-৫৩)=৭টি

৬৪/৪৭. অধায়ঃ মাক্কাহয় বিজয়াভিযান
৬৪/৪৮. অধ্যায়ঃ রমযান মাসে সংঘটিত মাক্কাহ বিজয়ের যুদ্ধ
৬৪/৪৯. অধ্যায়ঃ মাক্কাহ বিজয়ের দিনে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোথায় ঝাণ্ডা স্থাপন করেছিলেন
৬৪/৫০. অধ্যায়ঃ মাক্কাহ নগরীর উঁচু এলাকার দিক দিয়ে নাবী (সাঃআঃ)-এর প্রবেশের বর্ণনা
৬৪/৫১. অধ্যায়ঃ মাক্কাহ বিজয়ের দিন নাবী (সাঃআঃ)-এর অবস্থানস্হল
৬৪/৫২. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই
৬৪/৫৩. অধ্যায়ঃ মাক্কাহ বিজয়ের সময় নাবী (সাঃআঃ)-এর সেখানে অবস্থানকালের পরিমাণ

৬৪/৪৭. অধায়ঃ মক্কায় বিজয়াভিযান

এবং নাবী (সাঃআঃ)-এর অভিযানের ব্যাপারে খবর জানিয়ে মক্কাবাসীদের নিকট হাতিব ইবনু আবু বালতাআর লোক প্রেরণের ঘটনা ।

৪২৭৪

আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাকে এবং যুবায়র ও মিকদাদ (রাদি.)-কে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ কথা বলে পাঠালেন যে, তোমরা রওয়ানা হয়ে রাওযায়ে খাখ পর্যন্ত চলে যাও, সেখানে সাওয়ারীর পৃষ্ঠে হাওদায় উপবিষ্টা জনৈকা মহিলার নিকট একখানা পত্র আছে। তোমরা ঐ পত্রটি তার থেকে নিয়ে আসবে। আলী (রাদি.) বলেন, আমরা রওয়ানা দিলাম। আর আমাদের অশ্বগুলো আমাদের নিয়ে খুব দ্রুত ছুটে চলল। শেষ পর্যন্ত আমরা রাওযায়ে খাখ-এ পৌঁছে গেলাম। গিয়েই আমরা হাওদায় আরোহিণী মহিলাটিকে পেয়ে গেলাম। আমরা বললাম, পত্রটি বের কর। সে বললঃ আমার কাছে কোন পত্র নেই। আমরা বললাম, তুমি অবশ্যই পত্রটি বের করিবে, অন্যথায় আমরা তোমার কাপড়-চোপড় খুলে তালাশ করব। রাবী বলেন, মহিলাটি তখন তার চুলের খোপা থেকে পত্রটি বের করিল। আমরা পত্রটি নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে আসলাম। দেখা গেল এটি হাতিব ইবনু আবু বালতাআ (রাদি.)-এর পক্ষ থেকে মক্কার কতিপয় মুশরিকের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি এতে মক্কার কাফিরদের বিরুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কিছু তৎপরতার সংবাদ দিয়েছেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, হে হাতিব! এ কী কাজ করেছ? তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (দয়া করে) আমার ব্যাপারে তাড়াতাড়ি কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। আমি কুরাইশদের সঙ্গে স্বগোত্রীয় কেউ ছিলাম না বরং তাদের বন্ধু অর্থাৎ তাদের মিত্র গোত্রের একজন ছিলাম। আপনার সঙ্গে যেসব মুহাজির আছেন কুরায়শ গোত্রে তাঁদের অনেক আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। যারা এদের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদের হিফাযাত করছে। আর কুরাইশ গোত্রে যেহেতু আমার বংশগত কোন সম্পর্ক নেই, তাই আমি ভাবলাম, যদি আমি তাদের কোন উপকার করে দেই তাহলে তারা আমার পরিবার-পরিজনের হিফাযাতে এগিয়ে আসবে। কখনো আমি আমার দ্বীন পরিত্যাগ করা কিংবা ইসলাম গ্রহনের পর কুফরকে গ্রহণ করার জন্য এ কাজ করিনি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তখন বলিলেন, সে (হাতিব) তোমাদের কাছে সত্য কথাই বলেছে। উমার (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এ মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেব। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, দেখ সে বদর যুদ্ধে যোগদান করেছে। তুমি তো জান না, হয়তো আল্লাহ তাআলা বাদরে যোগদানকারীদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে বলে দিয়েছেন, তোমরা যা খুশী করিতে থাক, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তখন আল্লাহ তাআলা এ সুরা অবতীর্ণ করেনঃ “ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমারা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা তোমাদের কাছে যে সত্য এসেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা রাসুলকে এবং তোমাদেরকে মক্কা থেকে নির্বাসিত করেছে এ কারণে যে, তোমরা তোমাদের রব আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ। যদি তোমরা বের হয়ে থাক আমার পথে জিহাদ করার উদ্দেশে এবং আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, তবে কেন গোপনে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করিতে চাও? আর তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর তা আমি ভাল জানি। তোমরদের যে কেউ এরূপ করে, সে তো সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়”-(সুরা আল-মুমতাহিনাহ ৬০/১)। [৩০০৭] (আ.প্র. ৩৯৪০, ই.ফা. ৩৯৪৪)

৬৪/৪৮. অধ্যায়ঃ রমযান মাসে সংঘটিত মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ

৪২৭৫

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি জানিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) রমাযান মাসে মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ করিয়াছেন। বর্ণনাকারী যুহরী (রাদি.) বলেন, আমি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কেও একই রকম বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি। আরেকটি সূত্র দিয়ে তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনু আবব্দুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যমে ইবনু আব্বাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আবব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস বলেছেন, (মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হয়ে) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সওম পালন করছিলেন। অবশেষে তিনি যখন কুদাইদ এবং উস্‌ফান নামক স্থানদ্বয়ের মাঝে কাদীদ নামক জায়গায় ঝরণার কাছে পৌঁছেন তখন তিনি ইফতার করেন। এরপর রমাযান মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি সওম পালন করেননি। [১৯৪৪] (আ.প্র. ৩৯৪১, ই.ফা. ৩৯৪৫)

৪২৭৬

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) রমাযান মাসে মাদীনাহ থেকে (মক্কা অভিযানে) রওয়ানা হন। তাহাঁর সঙ্গে ছিল দশ হাজার সহাবী। তখন হিজরাত করে চলে আসার সাড়ে আট বছর পার হয়ে গিয়েছিল। তিনি ও তাহাঁর সঙ্গী মুসলিমগণ সওম অবস্থায়ই মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হন। অবশেষে তিনি যখন উস্‌ফান এবং কুদাইদ স্থানদ্বয়ের মধ্যবর্তী কাদীদ নামক জায়গায় ঝরণার নিকট পৌঁছলেন তখন তিনি ও সঙ্গী মুসলিমগণ ইফতার করিলেন। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেনঃ উম্মতের জীবনযাত্রায় গ্রহণ করার ব্যাপারে রসূল্ললাহ (সাঃআঃ)-এর কাজকর্মের শেষোক্ত আমালটিকেই চূড়ান্ত দলীল হিসাবে গণ্য করা হয়। [৬৭] [১৯৪৪] (আ.প্র. ৩৯৪২, ই.ফা. ৩৯৪৬)

[৬৭] রসূল্ললাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সময় একটি কাজ করে থাকলেও পরে যদি তার ব্যতিক্রম কোন কাজ করে থাকেন, তাহলে পরবর্তীটিই দলীল হিসাবে গণ্য হইবে। এবং পূর্বের কাজটি মানসূখ (রহিত) হিসাবে পরিগণিত হইবে।

৪২৭৭

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) রমাযান মাসে হুনাইনের দিকে রওয়ানা হয়েছিলেন। সঙ্গী মুসলিমদের অবস্থা ছিল ভিন্ন ভিন্ন। কেউ ছিলেন সওমরত। কেউ ছিলেন সওমহীন। তাই তিনি যখন সওয়ারীর উপর বসলেন তখন তিনি একপাত্র দুধ কিংবা পানি আনতে বলিলেন। তারপর তিনি পাত্রটি হাতের উপর কিংবা সওয়ারীর উপর রেখে লোকজনের দিকে তাকালেন। এ অবস্থা দেখে সওমবিহীন লোকেরা সওমরত লোকদেরকে ডেকে বললেনঃ তোমরা সওম ভেঙ্গে ফেল। [১৯৪৪] (আ.প্র. ৩৯৪৩, ই.ফা. ৩৯৪৭)

৪২৭৮

ইবনু আববাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুর রায্যাক, মামার, আইয়ুব, ইকরিমা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে ইবনু আববাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, মক্কা বিজয়ের বছর নাবী সাঃআঃ এ অভিযানে বের হয়েছিলেন। এভাবে হাম্মাদ ইবনু যায়িদ আইয়ূব, ইকরিমাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু আববাস (রাদি.) সূত্রে নাবী সাঃআঃ থেকেও বিষয়টি বর্ণনা করিয়াছেন। [১৯৪৪] (আঃপ্রঃ ৩৯৪৩, ইঃফাঃ ৩৯৪৭)

৪২৭৯

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) রমাযান মাসে সওয়মরত অবস্থায় (মক্কা আভিমুখে) সফর করিয়াছেন। অবশেষে তিনি উস্‌ফান নামক স্থানে পৌঁছলে একপাত্র পানি দিতে বলিলেন। তারপর দিনের বেলাতেই সে পানি পান করিলেন যেন তিনি লোকজনকে তাহাঁর সওমবিহীন অবস্থা দেখাতে পারেন। এরপর মক্কা পৌঁছা পর্যন্ত তিনি আর সওম পালন করেননি। বর্ণনাকারী বলেছেন, পরবর্তীকালে ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিতেন সফরে কোন সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সওম পালন করিতেন আবার কোন সময় তিনি সওমবিহীন আবস্থায়ও ছিলেন। তাই সফরে যার ইচ্ছা সওম পালন করিবে যার ইচ্ছে সওমবিহীন অবস্থায় থাকবে। (সফর শেষে বাসস্থানে তা আদায় করে নিতে হইবে)। [১৯৪৪] (আ.প্র. ৩৯৪৪, ই.ফা. ৩৯৪৮)

৬৪/৪৯. অধ্যায়ঃ মক্কা বিজয়ের দিনে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোথায় ঝাণ্ডা স্থাপন করেছিলেন

৪২৮০

হিশামের পিতা [উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রাদি.)] হইতে বর্ণিতঃ

মক্কা বিজয়ের বছর নাবী (সাঃআঃ) (মক্কা অভিমুখে) রওয়ানা করিয়াছেন। এ সংবাদ কুরাইশদের কাছে পৌঁছালে আবু সুফ্‌ইয়ান ইবনু হার্‌ব, হাকীম ইবনু হিযাম এবং বুদাইল ইবনু ওয়ারকা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সংবাদ জানার জন্য রাতের বেলা সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে (মক্কার অদূরে) মাররুয জাহরান নামক স্থান পর্যন্ত এসে পৌঁছালে তারা আরাফার ময়দানে প্রজ্জ্বলিত আলোর মতো অসংখ্য আগুন দেখিতে পেল। আবু সুফ্‌ইয়ান বলে উঠল, ঠিক আরাফাহর ময়দানে প্রজ্জ্বলিত আলোর মতো এ সব কিসের আলো? বুদাইল ইবনু ওয়ারকা উত্তর করিল, এগুলো আমর গোত্রের (চুলার) আলো। আবু সুফ্‌ইয়ান বলিল, আমর গোত্রের লোক সংখ্যা এর চেয়ে অনেক কম। এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কয়েকজন প্রহরী তাদেরকে দেখে ফেলল এবং কাছে গিয়ে তাদেরকে পাকড়াও করে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে নিয়ে এল। এ সময় আবু সুফ্‌ইয়ান ইসলাম গ্রহণ করিল। এরপর তিনি [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)] যখন (সেনাবাহিনী সহ) রওয়ানা হলেন তখন আব্বাস (রাদি.)-কে বলিলেন, আবু সুফ্‌ইয়ানকে পথের একটি সংকীর্ণ জায়গায় দাঁড় করাবে, যেন সে মুসলিমদের পুরো সেনাদলটি দেখিতে পায়। তাই আব্বাস (রাদি.) তাকে যথাস্থানে থামিয়ে রাখলেন। আর নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে আগমনকারী বিভিন্ন গোত্রের লোকজন আলাদা আলাদাভাবে খণ্ড দলে আবু সুফইয়ানের স্মমুখ দিয়ে অতিক্রম করিতে লাগল। (প্রথমে) একটি দল অতিক্রম করে গেল। আবু সুফ্‌ইয়ান বলিলেন, হে আব্বাস (রাদি.) এরা কারা? আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, এরা গিফার গোত্রের লোক। আবু সুফ্‌ইয়ান বলিলেন, আমার এবং গিফার গোত্রের মধ্যে কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ ছিল না। এরপর জুহাইনা গোত্রের লোকেরা অতিক্রম করে গেলেন, আবু সুফ্‌ইয়ান অনুরূপ বলিলেন। তারপর সাদ ইবনু হুযাইম গোত্র অতিক্রম করিল, তখনো আবু সুফ্‌ইয়ান অনুরূপ বলিলেন। তারপর সুলাইম গোত্র অতিক্রম করলেও আবু সুফ্‌ইয়ান অনুরূপ বলিলেন। অবশেষে একটি বিরাট বাহিনী তার সামনে এল যে, এত বিরাট বাহিনী এ সময় তিনি আর দেখেননি। তাই জিজ্ঞেস করিলেন, এরা কারা? আব্বাস (রাদি.) উত্তর দিলেন, এরাই আনসারবৃন্দ। সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) তাঁদের দলপতি। তাহাঁর হাতেই রয়েছে তাঁদের পতাকা। সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) বলিলেন, হে আবু সুফইয়ান! আজকের দিন রক্তপাতের দিন, আজকের দিন কাবার অভ্যন্তরে রাক্তপাত হালাল হওয়ার দিন। আবু সুফ্‌ইয়ান বলিলেন, হে আব্বাস! আজ হারাম ও তার অধিবাসীদের প্রতি তোমাদের করুণা প্রদর্শনেরও কত উত্তম দিন। তারপর আরেকটি দল আসল। এটি ছিল সবচেয়ে ছোট দল। আর এদের মধ্যেই ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সাহাবীগণ। যুবায়র ইবনুল আওয়াম (রাদি.)-এর হাতে ছিল নাবী (সাঃআঃ)-এর পতাকা। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন আবু সুফ্‌ইয়ানের সামনে দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন আবু সুফ্‌ইয়ান বলিলেন, সাদ ইবনু উবাদাহ কী বলছে আপনি তা কি জানেন? রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, সে কী বলেছে? আবু সুফ্‌ইয়ান বলিলেন, সে এ রকম বলেছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, সাদ ঠিক বলেনি বরং আজ এমন একটি দিন যে দিন আল্লাহ কাবাকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আজকের দিনে কাবাকে গিলাফে আচ্ছাদিত করা হইবে। বর্ণনাকারী বলেন, (মক্কায়) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হাজুন নামক স্থানে তাহাঁর পতাকা স্থাপনের নির্দেশ দেন। বর্ণনাকারী উরওয়া নাফি ইবনু যুবায়র ইবনু মুতঈম আব্বাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি যুবায়র ইবনু আওয়াম (রাদি.)-কে (মক্কা বিজয়ের পর একদা) বলিলেন, হে আবু আবদুল্লাহ! রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আপনাকে এ জায়গায়ই পতাকা স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। উরওয়াহ (রাদি.) আরো বলেন, সে দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) খালিদ ইবনু ওয়ালীদকে মক্কার উঁচু এলাকা কাদার দিক থেকে প্রবেশ করিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর নাবী (সাঃআঃ) কুদার দিক দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন। সেদিন খালিদ ইবনু ওয়ালীদের অশ্বারোহী সৈন্যদের মধ্য থেকে হুবায়শ ইবনুল আশআর এবং কুরয ইবনু জাবির ফিহরী (রাদি.)-এ দুজন শহীদ হয়েছিলেন। [২৯৭৬] (আ.প্র. ৩৯৪৫, ই.ফা. ৩৯৪৯)

৪২৮১

আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্‌ফাল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে তাহাঁর উটনীর উপর দেখেছি, তিনি তারজী অর্থাৎ পূর্ণ তাজভীদ সহকারে সুরা আল-ফাতহ তিলাওয়াত করছেন। বর্ণনাকারী মুআবিয়াহ ইবনু কুররাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যদি আমার চারপাশে লোকজন জমায়েত হওয়ার আশঙ্কা না থাকত, তা হলে উবাইদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্‌ফাল (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর তিলাওয়াত বর্ণনা করিতে যেভাবে তারজী করেছিলেন আমিও ঠিক সে রকমে তারজী করে তিলওয়াত করতাম। [৪৮৩৫, ৫০৩৪, ৫০৪৭, ৭৫৪০] (আ.প্র. ৩৯৪৬, ই.ফা. ৩৯৫০)

৪২৮২

উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি মক্কা বিজয়ের কালে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! আগামীকাল আপনি কোথায় অবস্থান করবেন? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আকীল কি আমাদের জন্য কোন বাড়ি অবশিষ্ট রেখে গেছে? [১৫৮৮] (আ.প্র. ৩৯৪৭, ই.ফা. ৩৯৫১)

৪২৮৪

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (মক্কা বিজয়ের পূর্বে) রসূল্লুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহ আমাদেরকে বিজয় দান করলে ইনশাআল্লাহ খাইফ হইবে আমাদের অবস্থানস্থল, যেখানে কাফিররা কুফরীর উপর পরস্পরের শপথ গ্রহণ করেছিল। [৬৯] [১৫৮৯] (আ.প্র. ৩৯৪৮, ই.ফা. ৩৯৫২)

[৬৯] হিজরাতের পূর্বে কাফিররা সম্মিলিতভাবে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) , বানূ হাশিম ও বনূ মুত্তালিবকে মক্কা হইতে বহিষ্কার করে খাইফ এলাকায় নির্বাসন দেয়ার ফয়সালা করেছিল। পরিশেষে তারা পরস্পর শপথ করে একটি চুক্তিনামাও স্বাক্ষর করেছিলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এদিকেই ইশারা করেছিলেন।

৪২৮৫

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূল্লুল্লাহ (সাঃআঃ) হুনাইনের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে বলিলেন, বানী কিনানার খায়ফ নামক স্থানই হইবে আমাদের আগামীকালের আবস্থানস্থল, যেখানে কাফিররা কুফরের উপর পরস্পরের শপথ গ্রহণ করেছিল। [১৫৮৯] (আ.প্র. ৩৯৪৯, ই.ফা. ৩৯৫৩)

৪২৮৬

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মক্কা বিজয়ের দিন নাবী (সাঃআঃ) মাথায় লোহার টুপি পরিহিত অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করিয়াছেন। তিনি সবেমাত্র টুপি খুলেছেন এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলিল, ইবনু খাতাল কাবার গিলাফ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তাকে হত্যা কর। [৭০] ইমাম মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আমাদের ধারণামতে সেদিন নাবী (সাঃআঃ) ইহরাম অবস্থায় ছিলেন না। তবে আল্লাহ আমাদের চেয়ে ভাল জানেন। [১৮৪৬] (আ.প্র. ৩৯৫০, ই.ফা. ৩৯৫৪)

[৭০] খাতাল কুফর ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে পুনরায় মুরতাদ হয়ে যায় এবং অন্যায়ভাবে কয়েকজন মুসলিমকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এ জন্যই নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কা বিজয় করেন তখন তিনি তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। তাকে যমযম কূপ ও মাকামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে হত্যা করা হয়।

৪২৮৭

আবদুল্লাহ [ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নাবী (সাঃআঃ) মক্কায় প্রবেশ করিলেন, তখন বাইতুল্লাহর চারপাশ ঘিরে তিনশত ষাটটি প্রতিমা স্থাপিত ছিল। তিনি হাতে একটি লাঠি নিয়ে প্রতিমাগুলোকে আঘাত করিতে থাকলেন আর বলিতে থাকলেন, হাক এসেছে, বাতিল অপসৃত হয়েছে। হাক এসেছে, বাতিলের উদ্ভব বা পুনরুত্থান আর ঘটবে না। [২৪৭৮] (আ.প্র. ৩৯৫১, ই.ফা. ৩৯৫৫)

৪২৮৮

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মক্কায় আগমন করার পর তৎক্ষনাৎ বাইতুল্লাহর ভিতরে প্রবেশ করা থেকে বিরত রইলেন, কেননা সে সময় বাইতুল্লাহর ভিতরে অনেক প্রতিমা স্থাপিত ছিল। প্রতিমাগুলো বের করে ফেলা হল। তখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর মূর্তিও বেরিয়ে আসল। তাদের উভয়ের হাতে ছিল মুশরিকদের ভাগ্য নির্ণয়ের কয়েকটি তীর। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন। তারা অবশ্যই জানত যে, ইবরাহীম (আঃ) ও ইসমাঈল (আঃ) কক্ষনো তীর দিয়ে ভাগ্য নির্ণয় করেননি। এরপর তিনি বাইতুল্লাহর ভিতরে প্রবেশ করিলেন। আর প্রত্যেক কোণায় কোণায় গিয়ে আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিলেন এবং বেরিয়ে আসলেন। আর সেখানে সলাত আদায় করেননি। মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে এবং ওয়াহায়ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যমে ইকরামাহ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। [৩৯৮] (আ.প্র. ৩৯৫২, ই.ফা. ৩৯৫৬)

৬৪/৫০. অধ্যায়ঃ মক্কা নগরীর উঁচু এলাকার দিক দিয়ে নাবী (সাঃআঃ)-এর প্রবেশের বর্ণনা

৪২৮৯

আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর সওয়ারীতে আরোহণ করে উসামাহ ইবনু যায়িদকে নিজের পিছনে বসিয়ে মক্কা নগরীর উঁচু এলাকার দিক দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করিয়াছেন। তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন বিলাল এবং বাইতুল্লাহর চাবি রক্ষক উসমান ইবনু ত্ব্লহা। অবশেষে তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] মাসজিদে হারামের সামনে সওয়ারী থামালেন এবং উসমান ইবনু ত্ব্লহাকে চাবি এনে (দরজা খোলার) আদেশ করিলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) (কাবায়) প্রবেশ করিলেন। সে সময় তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন উসামাহ ইবনু যায়্দ, বিলাল এবং উসমান ইবনু ত্ব্লহা (রাদি.)। সেখানে তিনি দিনের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবস্থান করে (সলাত আদায়, তাকবীর ও অনান্য দুআ করার পর) বের হয়ে এলেন। তখন অনান্য লোক দ্রুত ছুটে এল। তন্মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) প্রথমেই প্রবেশ করিলেন এবং বিলাল (রাদি.)-কে দরজার পাশে দাঁড়ানো পেয়ে জিজ্ঞাসা করিলেন-রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কোন জায়গায় সলাত আদায় করিয়াছেন? তখন বিলাল তাকে তাহাঁর সলাতের জায়গাটি ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কত রাকআত আদায় করেছিলেন বিলাল (রাদি.)-কে আমি এ কথাটি জিজ্ঞেস করিতে ভুলে গিয়েছিলাম। [৩৯৭] (আ.প্র. ৩৯৫৩, ই.ফা. ৩৯৫৬)

৪২৯০

আয়েশাহ [রা.] হইতে বর্ণিতঃ

মক্কা বিজয়ের বছর নাবী (সাঃআঃ) মক্কার উঁচু এলাকা কাদা-এর দিক দিয়ে প্রবেশ করিয়াছেন। আবু উসামাহ এবং ওহাইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কাদা-এর দিক দিয়ে প্রবেশ করার বর্ণনায় হাফস্‌ ইবনু মাইসারাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন। [১৫৭৭] (অ.প্র. ৩৯৫৩, ই.ফা. ৩৯৫৬)

৪২৯১

হিশামের পিতা হইতে বর্ণিতঃ

মক্কা জয়ের বছর নাবী (সাঃআঃ) মক্কার উঁচু এলাকা অর্থাৎ কাদা নামক স্থান দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন। [১৫৭৭] (আ.প্র. ৩৯৫৪, ই.ফা. ৩৯৫৭)

৬৪/৫১. অধ্যায়ঃ মক্কা বিজয়ের দিন নাবী (সাঃআঃ)-এর অবস্থানস্হল

৪২৯২

ইবনু আবী লাইলা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-কে চাশতের সলাত আদায় করিতে দেখেছে-এ কথাটি একমাত্র উম্মু হানী (রাদি.) ব্যতীত অন্য কেউ আমাদের কাছে বর্ণনা করেননি। তিনি বলেছেন যে, মক্কা বিজয়ের দিন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর বাড়িতে গোসল করেছিলেন, এরপর তিনি আট রাকআত সলাত আদায় করিয়াছেন। উম্মু হানী (রাদি.) বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে এ সলাত অপেক্ষা হালকাভাবে অন্য কোন সলাত আদায় করিতে দেখিনি। তবে তিনি রুকূ, সাজদাহ পুরোপুরিই আদায় করেছিলেন। [১১০৩] (আ.প্র. ৩৯৫৫, ই.ফা. ৩৯৫৮)

৬৪/৫২. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই

৪২৯৩

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সলাতের রুকূ ও সাজদাহয় পড়তেন, সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকাল্লাহুম্মা গফির লী অর্থাৎ অতি পবিত্র। হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রভু! আমি তোমারই প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করে দাও। [৭৯৪] (আ.প্র. নাই, ই.ফা. ৩৯৬০)

৪২৯৪

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার (রাদি.) তাহাঁর (পরামর্শ মজলিসে) বাদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বর্ষীয়ান সহাবাদের সঙ্গে আমাকেও শামিল করিতেন। তাই তাঁদের কেউ কেউ বলিলেন, আপনি এ তরুণকে কেন আমাদের সঙ্গে মজলিসে শামিল করেন। তার মতো সন্তান তো আমাদেরও আছে। তখন উমার (রাদি.) বলিলেন, ইবনু আববাস (রাদি.) ঐ সব মানুষের একজন যাদের (মর্যাদা) সম্পর্কে আপনারা অবহিত আছেন। ইবনু আববাস বলেন, একদিন তিনি (উমার) তাদেরকে পরামর্শ মজলিসে আহবান করিলেন এবং তাঁদের সঙ্গে তিনি আমাকেও ডাকলেন। তিনি (ইবনু আববাস) বলেন, আমার মনে হয় সেদিন তিনি তাঁদেরকে আমার ইল্ম দেখানোর জন্যই ডেকেছিলেন। উমার বলেন, إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُوْنَ فِيْ دِيْنِ اللهِ أَفْوَاجًا এভাবে সুরাটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করে তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এ সুরা সম্পর্কে আপনাদের কী বক্তব্য? তখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলিলেন, এখানে আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে যে, যখন আমাদেরকে সাহায্য করা হইবে এবং বিজয় দান করা হইবে তখন যেন আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি এবং তাহাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আর কেউ কেউ বলিলেন, আমরা অবগত নই। আবার কেউ কেউ কোন কথাই বলেননি। এ সময় উমার (রাদি.) আমাকে বলিলেন, ওহে ইবনু আববাস! তুমি কি এ রকমই মনে কর? আমি বললাম, জ্বী, না। তিনি বলিলেন, তা হলে তুমি কী বলিতে চাও? আমি বললাম, এটি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর ওফাতের সংবাদ। আল্লাহ তাঁকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। যখন আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয় আসবে অর্থাৎ মক্কা বিজয়। সেটাই হইবে আপনার ওফাতের নিদর্শন। সুতরাং এ সময়ে আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করবেন এবং তাহাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। অবশ্যই তিনি তাওবা কবুলকারী। এ কথা শুনে উমার (রাদি.) বলিলেন, এ সুরা থেকে তুমি যা বুঝেছ আমি তা ব্যতীত আর অন্য কিছুই বুঝিনি। [৩৬২৭] (আঃপ্রঃ ৩৯৫৬, ইঃফাঃ ৩৯৬১)

৪২৯৫

আবু শুরাইহিল আদবী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

(মাদীনাহর শাসনকর্তা) আমর ইবনু সাঈদ যে সময় মক্কা অভিমুখে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলেন তখন আবু শুরায়হিল আদবী (রাদি.) তাকে বলেছিলেন, হে আমাদের আমীর! আপনি আমাকে একটু অনুমতি দিন, আমি আপনাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর একটি বাণী শোনাব, যেটি তিনি মক্কা বিজয়ের পরের দিন বলেছিলেন। সেই বাণীটি আমার দুকান শুনেছে। আমার হৃদয় তা হিফাযাত করে রেখেছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন সে কথাটি বলেছিলেন তখন আমার দুচোখ তাঁকে অবলোকন করেছে। প্রথমে তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] আলাহর প্রশংসা করেন এবং সানা পাঠ করেন। এরপর তিনি বলেন, আল্লাহ নিজে মক্কাকে হারাম ঘোষণা করিয়াছেন। কোন মানুষ এ ঘোষণা দেয়নি। কাজেই ব্যক্তি আল্লাহ এবং ক্বিয়ামাত দিবসের উপর ঈমান এনেছে তার পক্ষে সেখানে রক্তপাত করা কিংবা এখানকার গাছপালা কর্তন করা কিছুতেই হালাল নয়। আর আল্লাহর রসূলের সে স্থানে লড়াইয়ের কথা বলে যদি কেউ নিজের জন্যও সুযোগ নিতে চায় তবে তোমরা তাকে বলে দিও, আল্লাহ তাহাঁর রসূলের ক্ষেত্রে (বিশেষভাবে) অনুমতি দিয়েছিলেন, তোমাদের জন্য কোন অনুমতি দেননি। আর আমার ক্ষেত্রেও তা একদিনের কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই কেবল অনুমতি দেয়া হযেছিল। এরপর সেদিনই তা পুনরায় সেরূপ হারাম হয়ে গেছে যেরূপে তা একদিন পূর্বে হারাম ছিল। উপস্থিত লোকজন (এ কথাটি) অনুপস্থিত লোকের কাছে পৌঁছিয়ে দেবে| (বর্ননাকারী বলেন) পরবর্তী সময়ে আবু শুরায়হ (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, আমর ইবনু সাঈদ আপনাকে কী উত্তর করেছিলেন? তিনি বলিলেন, আমর আমাকে বলিলেন, হে আবু শুরায়হ! হাদীসটির বিষয় আমি তোমার চেয়ে অধিক অবগত আছি। হারামে মক্কা কোন অপরাধী বা খুনী পলাতককে কিংবা কোন বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ফেরারীকে প্রশ্রয় দেয় না। আর আব্দুল্লাহ বলেন, আল খারবাহ অর্থ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। [১০৪] (আ.প্র. ৩৯৫৭, ই.ফা. ৩৯৬২)

৪২৯৬

জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মক্কা বিজয়ের বছর তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে মক্কায় এ কথা বলিতে শুনেছেন যে, আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসুল মদের ক্রয়-বিক্রয় হারাম করে দিয়েছেন। [৭১] [২২৩৬] (আ.প্র. ৩৯৫৮, ই.ফা. ৩৯৬৩)

[৭১] মদ পান যেমন হারাম তেমনি তার ক্রয়-বিক্রয়ও হারাম।

৬৪/৫৩. অধ্যায়ঃ মক্কা বিজয়ের সময় নাবী (সাঃআঃ)-এর সেখানে অবস্থানকালের পরিমাণ

৪২৯৭

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে মক্কায় দশদিন অবস্থান করেছিলাম। সে সময় আমরা সলাত কসর করতাম। [৭২] [১০৮১] (আ.প্র. ৩৯৫৯, ই.ফা. ৩৯৬৪)

[৭২] আল্লাহ তাআলা আল-কুরানে ঘোষণা দিয়েছেন-

যখন তোমরা যমীনে ভ্রমণ করিবে তখন সলাত কসর করলে তাতে কোন সমস্যা নেই। (সুরা অন-নিসাঃ ১০১)

উক্ত আয়াতে এরূপ প্রমাণ মিলে না যে, কি পরিমাণ সফর করলে কসর করা যাবে। এ কারণেই সহাবীগণের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ইবনু উমার ও ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত হয়েছে, তারা চার বুরুদ (১৬ ফারসাখ সমান ৪৮ মাইল) পরিমান সফর করলে সলাত কসর করিতেন এবং সওম ভেঙ্গে দিতেন। পক্ষান্তরে ইবনু উমার হইতে সহীহ বর্ণনায় সাব্যস্ত হয়েছে তিনি বলেন, “তিন মাইল সফর করলে সলাত কসর করা যাবে। সহীহ সানাদে তার থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে, তিনি মক্কায় অবস্থানকালীন যখন মিনায় যেতেন তখন কসর করিতেন। এমনকি সহীহ সুত্রে ইবনু উমার হইতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমি যদি এক মাইল পথের জন্য বের হতাম তাহলেও সলাত করতাম। তিনি আরো বলিলেন, আমি দিনের কিছু সময় সফর করতাম এবং কসর করতাম। এসব আসারের সুত্রগুলো সহীহ। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ফাতহুল বারী ও শাইখ আলবানীর ইরওয়াউল গালীল (৩/১৪-২০)

এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, সহাবীগণ এ বিষয়ে একমত ছিলেন না। বরং তাদের মধ্যে মতভেদ সংঘটিত হয়েছিল। অতএব আমাদেরকে দেখা দরকার এ ব্যাপারে রাসুল (সাঃআঃ)-এর আমল কি ছিল? আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর আমলের এর দিকে লক্ষ্য করলে দেখছি ইবনু উমর (রাদি.) এর আমল তাহাঁর আমলের সাথে অনেকাংশেই মিলে যাচ্ছে। যদিও তাহাঁর থেকে এ ব্যাপারে কোন মৌখিক হাদীছ বর্ণিত হয়নি। কারণ আনাস (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর আমল বর্ননা করিয়াছেন। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াযিদ আল হুনাই বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)-কে কসর করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃআঃ) তিন মাইল বা তিন ফারসাখ পরিমাণ পথ সফর করলেই দুরাকআত সলাত আদায় করিতেন। (নিম্নের বর্ণনাকারী শুবাহ সন্দেহ বশতঃ তিন মাইল বা তিন ফারসাখ বলেছেন) ।

হাদীছটি ইমাম মুসলিম (২/১৪৫) , আবু আওয়ানাহ (২/৩৪৬) , আবু দাউদ, ইবনু আবী শাইবাহ (২/১০৮/১-২) , বায়হাক্বী (৩/১৪৬) ও আহমাদ (৩/১২৯) বর্ননা করিয়াছেন।

উল্লেখ এক ফারসাখ সমান তিন মাইল। অতএব তিন ফারসাখ সমান ৯ মাইল। যেহেতু মুসলিম সহ অনান্য হাদীছগ্রন্থে বর্ণিত এ হাদীছটিতে তিন মাইল বা ৯ মাইল এর কথা বলা হয়েছে। যা নাবী (সাঃআঃ)-এর আমল হিসেবে প্রমাণিত। অতএব আমরা সতর্কতার স্বার্থে তিন মাইল গ্রহণ না করে ৯ মাইলকে গ্রহণ করব এবং ৯ মাইল পরিমান পথ সফর করলেই নির্দ্বিধায় সলাত কসর করব।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ফিকহুস সুন্নাহ ইরওয়াউল গালীল ৩য় খণ্ড ফতহুল বারী প্রমুখ গ্রন্থসমূহের সলাত অধ্যায়। (দেখুন মুসলিম হাদীস নং ৬৯১, সহীহ আবু দাউদ ১২০১, আহমাদ ১১৯০৪, সিলসিলা সহীহা হাদীস নং ১৬৩)

৪২৯৮

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (মক্কা বিজয়ের সময়ে) নাবী (সাঃআঃ) ঊনিশ দিন মক্কায় অবস্থান করেছিলেন, তিনি সে সময় দুরাকআত সলাত আদায় করিতেন। [১০৮০] (আ.প্র. ৩৯৬০, ই.ফা. ৩৯৬৫)

৪২৯৯

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সফরে আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ঊনিশ দিন (মক্কা বিজয়্কালে) অবস্থান করেছিলাম। [৭৩] ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, আমরা সফরে উনিশ দিন পর্যন্ত কসর করতাম। এর চেয়ে অধিক দিন থাকলে আমরা পূর্ণ সলাত আদায় করতাম। [১০৮০] (আ.প্র. ৩৯৬১, ই.ফা. ৩৯৬৬)

[৭৩] হাদীসের পণ্ডিতগণের মতে আনাস (রাদি.) বর্ণিত হাদীসে বিদায় হাজ্জের সফরে এবং ইবনু আব্বাস (রাদি.) বর্ণিত হাদীসে মক্কা বিজয়্কালে মাক্কায় অবস্থানের মেয়াদ উল্লেখ করা হয়েছে।

৬৪/৫৪. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই

৪৩০০

লায়্স [ইবনু সাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] হইতে বর্ণিতঃ

ইউনুস আমার কাছে ইবনু শিহাব থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালাবাহ ইবনু সুআয়র (রাদি.) আমার নিকট বর্ননা করিয়াছেন, আর মক্কা বিজয়ের বছর নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর মুখমণ্ডল মাসহ করেছিলেন। [৬৩৫৬] (আ.প্র. অনুচ্ছেদ, ই.ফা. অনুচ্ছেদ)

৪৩০১

যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি সুনায়ন আবু জামীলাহ (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমরা (সাঈদ) ইবন মুসায়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর সঙ্গে ছিলাম। এ সময় আবু জামীলাহ (রাদি.) দাবি করেন যে, তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর সাক্ষাৎ লাভ করিয়াছেন এবং তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে মক্কা বিজয়ের বছর (যুদ্ধের জন্য) বেরিয়েছিলেন। (আ.প্র. ৩৯৬২, ই.ফা. ৩৯৬৭)

৪৩০২

আমর ইবনু সালামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আবু কিলাবাহ আমাকে বলিলেন, তুমি আমর ইবনু সালামাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে (তাহাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা সম্পর্কে) জিজ্ঞাস কর না কেন? আবু কিলাবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, অতঃপর আমি আমর ইবনু সালামাহর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে (তাহাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, আমরা লোকজনের চলার পথের পাশে একটি ঝরণার কাছে বাস করতাম। আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা চলাচল করত। তখন আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করতাম, (মক্কার) লোকজনের অবস্থা কী? মক্কার লোকজনের অবস্থা কী? আর ঐ লোকটির কী অবস্থা? তারা বলত, ঐ ব্যক্তি তো দাবী করে যে, আল্লাহ তাঁকে রাসুল বানিয়ে পাঠিয়েছেন, তাহাঁর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ করিয়াছেন। (কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করে বলত) তাহাঁর কাছে আল্লাহ এ রকম ওয়াহী অবতীর্ণ করিয়াছেন। (আমর ইবনু সালামাহ বলেন) তখন আমি সে বাণীগুলো মুখস্থ করে নিতাম যেন তা আমার হৃদয়ে গেঁথে থাকত। সমগ্র আরব ইসলাম গ্রহণের জন্য নাবী (সাঃআঃ)-এর বিজয়ের অপেক্ষা করছিল। তারা বলত, তাঁকে তার নিজ গোত্রের লোকেদের সঙ্গে (আগে) বোঝাপড়া করিতে দাও। অতঃপর তিনি যদি তাদের উপর বিজয়ী হন তবে তিনি সত্য নাবী। এরপর মক্কা বিজয়ের ঘটনা ঘটল। এবার সব গোত্রই তাড়াহুড়া করে ইসলাম গ্রহণ করিতে লাগল। আমাদের কাওমের ইসলাম গ্রহণ করার ব্যাপারে আমার পিতা বেশ তাড়াহুড়া করিলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণের পর ফিরে এসে বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আমি সত্য নাবীর নিকট থেকে তোমাদের কাছে এসেছি। তিনি বলে দিয়েছেন যে, অমুক সময়ে তোমরা অমুক সলাত এবং অমুক সময় অমুক সলাত আদায় করিবে। এভাবে সলাতের সময় হলে তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে কুরআন অধিক জানে সে সলাতের ইমামাত করিবে। সবাই এ রকম একজন লোক খুঁজলেন। কিন্তু আমার চেয়ে অধিক কুরআন জানা একজনকেও পাওয়া গেল না। কেননা আমি কাফেলার লোকদের থেকে কুরআন শিখেছিলাম। কাজেই সকলে আমাকেই তাদের সামনে এগিয়ে দিল। অথচ তখনো আমি ছয় কিংবা সাত বছরের বালক। আমার একটি চাদর ছিল, যখন আমি সাজদাহয় যেতাম তখন চাদরটি আমার গায়ের সঙ্গে জড়িয়ে উপরের দিকে উঠে যেত। তখন গোত্রের জনৈকা মহিলা বলিল, তোমরা আমাদের দৃষ্টি থেকে তোমাদের ক্বারীর নিতম্ব আবৃত করে দাও না কেন? তারা কাপড় খরিদ করে আমাকে একটি জামা তৈরি করে দিল। এ জামা পেয়ে আমি এত খুশি হয়েছিলাম যে, আর কিছুতে এত খুশি হইনি। (আ.প্র. ৩৯৬৩, ই.ফা. ৩৯৬৮)

৪৩০৩

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উতবাহ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাদি.) তার ভাই সাদ [ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাদি.)]-কে ওয়াসিয়াত করে গিয়েছিল যে, সে যেন যামআহর বাঁদীর সন্তানটি তাহাঁর নিজের কাছে নিয়ে নেয়। উতবাহ বলেছিল, পুত্রটি আমার ঔরসজাত। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন মক্কা বিজয়কালে সেখানে আগমন করিলেন তখন সাদ ইবনু আবী ওয়াক্কাস যামআহর বাঁদীর সন্তানটি রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে উপস্থিত করিলেন। তাহাঁর সঙ্গে আবদ ইবনু যামআহ (যামআর পুত্র)-ও আসলেন। সাদ ইবনু আবী ওয়াক্কাস বলিলেন, সন্তানটি তো আমার ভাতিজা। আমার ভাই আমাকে বলে গিয়েছেন যে, এ সন্তান তার ঔরসজাত কিন্তু আবদ ইবনু যামআহ তার দাবী পেশ করে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ আমার ভাই, এ যামআহর সন্তান, তাহাঁর বিছানায় এর জম্ম হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তখন যামআহর ক্রীতদাসীর সন্তানের প্রতি নযর দিয়ে দেখলেন যে, সন্তানটি আকৃতিতে উতবাহ ইবনু আবু ওয়াক্কাসের সঙ্গেই অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আবদ ইবনু যামআহ! একে নিয়ে যাও। সে তোমার ভাই। কেননা সে তার (তোমার পিতা যামআহর) বিছানায় জম্মগ্রহণ করেছে। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঐ সন্তানটির আকৃতি উতবাহ ইবনু আবী ওয়াক্কাসের আকৃতির মত হওয়ার কারণে (তাহাঁর স্ত্রী) সাওদা বিনতে যামআহ (রাদি.)-কে বলিলেন, হে সওদা! তুমি তার থেকে পর্দা করিবে। ইবনু শিহাব যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আয়েশাহ (রাদি.) বলেছেন যে, এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, শয্যা যার, ছেলে তার। আর ব্যভিচারীর জন্য আছে পাথর। ইবনু শিহাব যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আবু হুরাইরা (রাদি.)-এ কথাটি উচ্চৈঃস্বরে বলিতেন। [২০৫৩] (আ.প্র. ৩৯৬৪, ই.ফা. ৩৯৬৯)

৪৩০৪

উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর যামানায় মক্কা বিজয় অভিযানের সময়ে এক স্ত্রীলোক চুরি করেছিল। তাই তার গোত্রের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.)- এর কাছে এসে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর নিকট সুপারিশ করার জন্য অনুরোধ জানালো। উরওয়াহ (রাদি.) বলেন, উসামাহ (রাদি.)- এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর কাছে কথা বলা মাত্র তাহাঁর চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। তিনি উসামাহ (রাদি.)- কে বলিলেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তিগুলোর একটি শাস্তির ব্যাপারে আমার কাছে সুপারিশ করছ? উসামাহ (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এরপর সন্ধ্যা হলে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) খুতবা দিতে দাঁড়ালেন। যথাযথভাবে আল্লাহর হাম্দ-সানা করে বলিলেন, “আম্মা বাদ” তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতরা এ জন্য ধ্বংস হয়েছিল যে, তারা তাদের মধ্যকার উচ্চ শ্রেণীর কোন লোক চুরি করলে তাকে ছেড়ে দিত। পক্ষান্তরে কোন দুর্বল লোক চুরি করলে তার উপর নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করত। যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তাহাঁর শপথ, যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমাও চুরি করত তা হলে আমি তার হাত কেটে দিতাম। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সেই মহিলাটির ব্যাপারে আদেশ দিলেন। ফলে তার হাত কেটে দেওয়া হল। অবশ্য পরবর্তীকালে সে উত্তম তওবার অধিকারিণী হয়েছিল এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, এরপর সে আমার কাছে প্রায়ই আসত। আমি তার প্রয়োজনাদি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর কাছে তুলে ধরতাম। [২৬৪৮] (আ.প্র. ৩৯৬৫ , ই.ফা. ৩৯৭০)

৪৩০৯

মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে বললাম, আমি সিরিয়া দেশে হিজরাত করার ইচ্ছা করেছি। তিনি বলিলেন, এখন হিজরাত নয়, এখন জিহাদ। সুতরাং যাও, নিজ অন্তরের সঙ্গে বুঝে দেখ, জিহাদের সাহস খুঁজে পাও কিনা, তা না হলে হিজরাতের ইচ্ছা থেকে ফিরে আস। (৩৮৯৯) (আ.প্র. ৩৯৬৮, ই.ফা. ৩৯৭৩)

৪৩১০

নায্‌র [ইবনু শুমায়ল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] হইতে বর্ণিতঃ

মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত। (তিনি বলেছেন) আমি ইবনু উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে বললে তিনি উত্তরে বলিলেন, বর্তমানে হিজরাতের কোন প্রয়োজন নেই, অথবা তিনি বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর পরে কোন হিজরাত নেই। অতঃপর তিনি উপরোল্লিখিত হাদীসের মত বর্ণনা করেন। [৩৮৯৯] (আ.প্র. ৩৯৬৮, ই.ফা. ৩৯৭৩)

৪৩১১

মুজাহিদ ইবনু জাবর আল-মাক্কী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলিতেনঃ মক্কা বিজয়ের পর আর কোন হিজরাত নেই। [৩৮৯৯] (আ.প্র. ৩৯৬৯, ই.ফা. ৩৯৭৪)

৪৩১২

আত্বা ইবনু আবু রাবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি উবায়দ ইবনু উমায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সহ আয়েশা (রাযিআল্লাহু আনহা)- এর সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। সে সময় উবায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাঁকে হিজরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, বর্তমানে কোন হিজরাত নেই। আগে মুমিন ব্যক্তি তার দ্বীনকে ফিতনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ এবং তাহাঁর রসূলের দিকে (মদিনায়) পালিয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে আল্লাহ ইসলামকে বিজয় দান করিয়াছেন। তাই এখন মুমিন যেখানে চায় আল্লাহর ইবাদাত করিতে পারে। তবে বর্তমানে জিহাদ এবং নিয়্যাত করা যাবে। [৩০৮০] (আ.প্র. ৩৯৭০, ই.ফা. ৩৯৭৫)

৪৩১৩

মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবার জন্য দাঁড়িয়ে বলিলেন, যেদিন আল্লাহ সমুদয় আসমান ও যমীন সৃষ্টি করিয়াছেন, সেই দিন থেকেই তিনি মক্কা নগরীকে সম্মান দান করিয়াছেন। তাই আল্লাহ কর্তৃক এ সম্মান প্রদানের কারণে এটি ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত সম্মানিত থাকবে। আমার পূর্বে কারো জন্য তা হালাল করা হয়নি, আমার পরে কারো জন্যও তা হালাল করা হইবে না। আর আমার জন্যও মাত্র একদিনের সামান্য অংশের জন্যই তা হালাল করা হয়েছিল। তার শিকারযোগ্য প্রাণীকে বিতাড়িত করা যাবে না। ঘাস সংগৃহীত হইবে না। বিজ্ঞপ্তির উদ্দেশ্য ব্যতীত রাস্তায় পতিত বস্তু উত্তোলিত হইবে না। তখন আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইয্‌খির ঘাস ব্যতীত। কেননা ইয্‌খির ঘাস আমাদের কর্মকার ও বাড়ির (ছাউনির) কাজে লাগে। তখন রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপ থাকলেন। এর কিছুক্ষণ পরে বলিলেন, ইয্‌খির ব্যতীত। ইয্‌খির ঘাস কাটা অনুমোদিত। অন্য সানাদে ইবনু জুরায়জ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….. ইবনু আব্বাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে এভাবেই বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া এ হাদীস আবু হুরাইরা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) ও নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। [১৩৪৯] (আ.প্র. ৩৯৭১, ই.ফা. ৩৯৭৬)

৬৪/৫৫. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

এবং হুনায়নের দিনে, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে গর্বিত করে তুলেছিল; কিন্তু সে সংখ্যাধিক্য তোমাদের কোন কাজে আসেনি এবং সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল তোমাদের প্রতি এ পৃথিবী এত প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও, পরে তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়েছিলে। অতঃপর আল্লাহ নিজের তরফ থেকে প্রশান্তি অবর্তীর্ণ করিলেন তাঁরা রসূলের প্রতি এবং মুমিনদের প্রতি, আর তিনি অবর্তীর্ণ করিলেন এমন এক সেনাবাহিনী যাদের তোমরা দেখিতে পাওনি। তিনি কাফিরদের শাস্তি দিলেন এবং তা ছিল কাফিরদের কর্মফল। আর আল্লাহ এরপরও তাওবার তাওফীক দেন যাদের ইচ্ছা করেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা আত-তওবাহ ৯/২৫-২৭)

৪৩১৪

ইসমাঈল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আবু আউফা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর হাতে একটি আঘাতের চিহ্ন দেখিতে পেয়েছি। তিনি বলেছেন, হুনাইনের দিন নাবী (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে থাকা অবস্থায় আমাকে এ আঘাত করা হয়েছিল। আমি বললাম, আপনি কি হুনাইন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন? তিনি বলিলেন, এর পূর্বেও (সংঘটিত যুদ্ধগুলোতে) অংশ নিয়েছি। (আ.প্র. ৩৯৭২, ই.ফা. ৩৯৭৭)

৪৩১৫

আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, আমি বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) – কে বলিতে শুনিয়াছি যে, এক ব্যক্তি এসে তাকে জিজ্ঞেস করিল, হে আবু উমারাহ! হুনাইনের দিন কি আপনি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিলেন? তখন তিনি বলেন যে, আমি তো নিজেই নাবী (সাঃআঃ) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেননি। তবে মুজাহিদদের অগ্রবর্তী যোদ্ধাগণ (গানীমাত সংগ্রহের জন্য) তাড়াহুড়া করলে হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা তাঁদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করিতে থাকে। এ সময় আবু সুফ্‌ইয়ান ইবনুল হারিস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সাদা খচ্চরটির মাথা ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। আর রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলেছিলেন-

আমি আল্লাহর নাবী, এটা মিথ্যা নয়।

আমি আবদুল মুত্তালিবের সন্তান। [২৮৬৪] (আ.প্র. ৩৯৭৩, ই.ফা. ৩৯৭৮)

৪৩১৬

আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমি শুনলাম যে, বারাআ ইবনু আযিব (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে জিজ্ঞেস করা হল, হুনাইন যুদ্ধের দিন আপনারা কি নাবী (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিলেন? তিনি বলিলেন, কিন্তু নাবী (সাঃআঃ) পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেননি। তবে তারা (হাওয়াযিনের লোকেরা) ছিল দক্ষ তীরন্দাজ, তাদের তীর বর্ষণে মুসলিমরা পিছনে হটলেও নাবী (সাঃআঃ) (অটলভাবে দাঁড়িয়ে) বলছিলেন-

আমি আল্লাহর নাবী, এটা মিথ্যা নয়।

আমি আবদুল মুত্তালিবের সন্তান। [২৮৬৪] (আ.প্র. ৩৯৭৪, ই.ফা. ৩৯৭৯)

৪৩১৭

আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বারআ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে বলিতে শুনেছেন যে, তাঁকে কায়স গোত্রের এক লোক জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, হুনাইনের দিন আপনারা কি রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট হইতে পালিয়েছিলেন? তখন তিনি বলিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কিন্তু পালিয়ে যাননি। হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা ছিল সুদক্ষ তীরন্দাজ। আমরা যখন তাদের উপর আক্রমণ চালালাম তখন তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। আমরা গানীমাত তুলতে শুরু করলাম তখন আমরা তাদের তীরন্দাজ বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়লাম। তখন আমি রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে তাহাঁর সাদা রংয়ের খচ্চরটির পিঠে আরোহিত অবস্থায় দেখলাম। আর আবু সুফ্‌ইয়ান (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাহাঁর খচ্চরটির লাগাম ধরেছিলেন। তিনি বলছিলেন-

আমি আল্লাহর নাবী, এটা মিথ্যা নয়।

বর্ণনাকারী ইসরাঈল এবং যুহায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন যে, তখন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর খচ্চর থেকে অবতরন করেছিলেন। [২৮৬৪; মুসলিম ৩২/২৮, হাদীস ১৭৭৬, আহমাদ ১৮৪৯৫] (আ.প্র. ৩৯৭৫, ই.ফা. ৩৯৮০)

৪৩১৮

মারওয়ান এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিগণ যখন মুসলিম হয়ে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকটে এলো এবং তাদের (যুদ্ধে ফেলে যাওয়া) সম্পদ ও বন্দীদেরকে ফেরত দেয়ার প্রার্থনা জানালো তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং তাদের বলিলেন, আমার সঙ্গে যারা আছে তোমরা দেখিতে পাচ্ছ। সত্য কথাই আমার কাছে অধিক প্রিয়। কাজেই তোমরা যুদ্ধবন্দী অথবা সম্পদ- এ দুটির যে কোন একটিকে গ্রহণ করিতে পার। আমি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বস্তুতঃ রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তায়েফ থেকে ফিরে আসার পথে দশ রাতেরও অধিক সময় তাদের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। (বর্ণনাকারী বলেন) হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিদের কাছে যখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাদেরকে এ দুটির মধ্যে একটির অধিক ফেরত দিতে সম্মত নন, তখন তারা বলিলেন, আমরা আমাদের বন্দীদেরকে গ্রহণ করিতে চাই। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ মুসলিমদের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথাযোগ্য হাম্দ ও সানা পাঠ করে বলিলেন, আম্মা বাদু, তোমাদের (মুসলিম) ভাইয়েরা তওবা করে আমাদের কাছে এসেছে, আমি তাদের বন্দীদেরকে তাদের নিকট ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত করেছি। অতএব তোমাদের মধ্যে যে আমার এ সিদ্ধান্তকে খুশি মনে গ্রহণ করিবে সে (বন্দী) ফেরত দিক। আর তোমাদের মধ্যে যে তার অংশের অধিকারকে অবশিষ্ট রেখে তা এভাবে ফেরত দিতে চাইবে যে, ফাইয়ের সম্পদ থেকে (আগামীতে) আল্লাহ আমাকে সর্বপ্রথম যা দান করবেন তা দিয়ে আমি তার এ বন্দীর মূল্য পরিশোধ করব, তবে সে তাই করুক। তখন সকল লোক উত্তর করলঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার প্রথম সিদ্ধান্ত খুশিমনে গ্রহণ করলাম। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, তোমাদের মধ্যে এ ব্যাপারে কে খুশিমনে অনুমতি দিয়েছে আর কে খুশিমনে অনুমতি দেয়নি আমি তা বুঝতে পারিনি। তাই তোমরা ফিরে যাও এবং তোমাদের মধ্যকার বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ কর। তাঁরা আমার কাছে বিষয়টি পেশ করিবে। সবাই ফিরে গেল। পরে তাদের বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ তাদের সঙ্গে আলাপ করে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট ফিরে এসে জানাল যে, সবাই তাহাঁর (প্রথম) সিদ্ধান্তকেই খুশি মনে মেনে নিয়েছে এবং (যুদ্ধবন্দী ফেরত দেয়ার) অনুমতি দিয়েছে। [ইমাম ইবনু শিহাব যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] হাওয়াযিন গোত্রের বন্দীদের বিষয়ে এ হাদীসটিই আমার কাছে পৌঁছেছে। [২৩০৭, ২৩০৮] (আঃপ্রঃ ৩৯৭৬, ইঃফাঃ ৩৯৮১)

৪৩১৯

মারওয়ান এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিগণ যখন মুসলিম হয়ে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকটে এলো এবং তাদের (যুদ্ধে ফেলে যাওয়া) সম্পদ ও বন্দীদেরকে ফেরত দেয়ার প্রার্থনা জানালো তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং তাদের বলিলেন, আমার সঙ্গে যারা আছে তোমরা দেখিতে পাচ্ছ। সত্য কথাই আমার কাছে অধিক প্রিয়। কাজেই তোমরা যুদ্ধবন্দী অথবা সম্পদ- এ দুটির যে কোন একটিকে গ্রহণ করিতে পার। আমি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বস্তুতঃ রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তায়েফ থেকে ফিরে আসার পথে দশ রাতেরও অধিক সময় তাদের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। (বর্ণনাকারী বলেন) হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিদের কাছে যখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাদেরকে এ দুটির মধ্যে একটির অধিক ফেরত দিতে সম্মত নন, তখন তারা বলিলেন, আমরা আমাদের বন্দীদেরকে গ্রহণ করিতে চাই। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ মুসলিমদের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথাযোগ্য হাম্দ ও সানা পাঠ করে বলিলেন, আম্মা বাদু, তোমাদের (মুসলিম) ভাইয়েরা তওবা করে আমাদের কাছে এসেছে, আমি তাদের বন্দীদেরকে তাদের নিকট ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত করেছি। অতএব তোমাদের মধ্যে যে আমার এ সিদ্ধান্তকে খুশি মনে গ্রহণ করিবে সে (বন্দী) ফেরত দিক। আর তোমাদের মধ্যে যে তার অংশের অধিকারকে অবশিষ্ট রেখে তা এভাবে ফেরত দিতে চাইবে যে, ফাইয়ের সম্পদ থেকে (আগামীতে) আল্লাহ আমাকে সর্বপ্রথম যা দান করবেন তা দিয়ে আমি তার এ বন্দীর মূল্য পরিশোধ করব, তবে সে তাই করুক। তখন সকল লোক উত্তর করলঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার প্রথম সিদ্ধান্ত খুশিমনে গ্রহণ করলাম। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, তোমাদের মধ্যে এ ব্যাপারে কে খুশিমনে অনুমতি দিয়েছে আর কে খুশিমনে অনুমতি দেয়নি আমি তা বুঝতে পারিনি। তাই তোমরা ফিরে যাও এবং তোমাদের মধ্যকার বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ কর। তাঁরা আমার কাছে বিষয়টি পেশ করিবে। সবাই ফিরে গেল। পরে তাদের বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ তাদের সঙ্গে আলাপ করে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট ফিরে এসে জানাল যে, সবাই তাহাঁর (প্রথম) সিদ্ধান্তকেই খুশি মনে মেনে নিয়েছে এবং (যুদ্ধবন্দী ফেরত দেয়ার) অনুমতি দিয়েছে। [ইমাম ইবনু শিহাব যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] হাওয়াযিন গোত্রের বন্দীদের বিষয়ে এ হাদীসটিই আমার কাছে পৌঁছেছে। [২৩০৭, ২৩০৮] (আঃপ্রঃ ৩৯৭৬, ইঃফাঃ ৩৯৮১)

৪৩২০

নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! …. হাদীসটি অন্য সানাদে মুহাম্মাদ ইবনু মুকাতিল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)… ইবনু উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হুনায়নের যুদ্ধ থেকে ফেরার কালে উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) নাবী (সাঃআঃ)- কে জাহিলিয়্যাতের যুগে মানৎ করা তাহাঁর একটি ইতিকাফ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে সেটি পূরণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন, হাদীসটি হাম্মাদ-আইয়ূব-নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া জারীর ইবনু হাযিম এবং হাম্মাদ ইবনু সালামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও এ হাদীসটি আইয়ূব, নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। [২০৩২] (আ.প্র. ৩৯৭৭, ই.ফা. ৩৯৮২)

৪৩২১

আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হুনাইনের বছর আমরা নাবী (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। আমরা যখন শত্রুর মুখোমুখী হলাম তখন মুসলিমদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। এ সময় আমি মুশরিকদের এক ব্যক্তিকে দেখলাম, সে মুসলিমদের এক ব্যক্তিকে পরাভূত করে ফেলেছে। তাই আমি কাফির লোকটির পশ্চাৎ দিকে গিয়ে তরবারি দিয়ে তার কাঁধ ও ঘাড়ের মাঝে শক্ত শিরার উপর আঘাত হানলাম এবং লোকটির গায়ের লৌহ বর্মটি কেটে ফেললাম। এ সময় সে আমার উপর আক্রমণ করে বসল এবং আমাকে এত জোরে চাপ দিয়ে জড়িয়ে ধরল যে, আমি আমার মৃত্যুর বাতাস অনুভব করলাম। এরপর মৃত্যু লোকটিকে পেয়ে বসল আর আমাকে ছেড়ে দিল। এরপর আমি উমার [ইবনুল খাত্তাব (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর] কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মুসলিমদের হলটা কী? তিনি বলিলেন, মহান শক্তিধর আল্লাহর ইচ্ছা। এরপর সবাই (আবার) ফিরে এল (এবং মুশরিকদের উপর হামলা চালিয়ে যুদ্ধে জয়ী হল)। যুদ্ধের পর নাবী (সাঃআঃ) বসলেন এবং ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি কোন মুশরিক যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং তার কাছে এর প্রমাণ রয়েছে তাঁকে তার (নিহত ব্যক্তির) পরিত্যক্ত সকল সম্পদ দেয়া হইবে। এ ঘোষণা শুনে আমি দাঁড়িয়ে বললাম, আমার পক্ষে কেউ সাক্ষ্য দিবে কি? আমি বসে পড়লাম। নাবী (সাঃআঃ)- ও অনুরূপ ঘোষণা দিলে আমি দাঁড়ালাম। তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলিলেন, আবু ক্বাতাদাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তোমার কী হয়েছে? আমি তাঁকে ব্যাপারটি জানালাম। এ সময় এক ব্যক্তি বলিল, আবু ক্বাতাদাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) ঠিকই বলেছেন, নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত বস্ত্রগুলো আমার কাছে আছে। সুতরাং সেগুলো আমার প্রাপ্তির ব্যাপারে আপনি তাঁকে সম্মত করুন। তখন আবু বাক্‌র (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলিলেন, না আল্লাহর শপথ! তা হইতে পারে না। আল্লাহর সিংহদের এক সিংহ যে আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছে তার যুদ্ধলব্ধ দ্রব্যাদি তোমাকে দিয়ে দেয়ার ইচ্ছা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) করিতে পারে না। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আবু বাক্‌র ঠিকই বলছে। সুতরাং এসব দ্রব্য তুমি তাঁকে (আবু ক্বাতাদাহ) দিয়ে দাও। [আবু ক্বাতাদাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন] তখন সে আমাকে দ্রব্যগুলো দিয়ে দিল। এ দ্রব্যগুলোর বিনিময়ে আমি বানী সালামাহর এলাকায় একটি বাগান কিনলাম। আর ইসলাম গ্রহণের পর এটিই হল প্রথম সম্পদ যেটা ছিল আমার আর্থিক বুনিয়াদ। [২১০০] (আ.প্র. ৩৯৭৮/৩৯৭৯, ই.ফা. ৩৯৮৩)

৪৩২২

আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হুনাইন যুদ্ধের দিন আমি দেখলাম যে, এক মুসলিম এক মুশরিকের সঙ্গে লড়াই করছে। আরেক মুশরিক মুসলিম ব্যক্তিটির পেছন থেকে তাকে হত্যা করার জন্য আক্রমণ করছে। তখন আমি তার হাতের উপর আঘাত করে তা কেটে ফেললাম। সে আমাকে ধরে ভীষণ ভাবে চাপ দিল। এমনকি আমি শঙ্কিত হয়ে পড়লাম। এরপর সে আমাকে ছেড়ে দিল ও দুর্বল হয়ে পড়ল। আমি তাকে আক্রমণ করে হত্যা করলাম। মুসলিমগণ পালাতে লাগলে আমিও তাঁদের সঙ্গে পালালাম। হঠাৎ লোকের মাঝে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে দেখিতে পেলাম। তাকে বললাম, লোকজনের অবস্থা কী? তিনি বলিলেন, আল্লাহর যা ইচ্ছা। এরপর লোকেরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর নিকট ফিরে এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, “যে (মুসলিম) ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে বলে প্রমাণ পেশ করিতে পারবে নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ সে-ই পাবে। আমি যাকে হত্যা করেছি তার সম্পর্কে সাক্ষী খোঁজার জন্য আমি দাঁড়ালাম। কিন্তু আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে এমন কাউকে পেলাম না। তখন বসে পড়লাম। এরপর আমার সুযোগমত ঘটনাটি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- কে জানালাম। তখন তাহাঁর পাশে উপবিষ্ট একজন বলিলেন- উল্লিখিত নিহত ব্যক্তির হাতিয়ার আমার কাছে আছে, সেগুলো আমাকে দিয়ে দেয়ার জন্য আপনি তাকে সম্মত করুন। তখন আবু বাক্‌র (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলিলেন, না, তা হইতে পারে না। আল্লাহর সিংহদের এক সিংহ যে আল্লাহ এবং তাহাঁর রসূলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছে তাকে না দিয়ে এ কুরাইশী দুর্বল ব্যক্তিকে তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] দিতে পারেন না। রাবী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দাঁড়ালেন এবং আমাকে তা দিয়ে দিলেন। আমি এর দ্বারা একটি বাগান কিনলাম। আর ইসলাম গ্রহণের পর এটিই ছিল প্রথম সম্পদ, যদ্দারা আমি আমার আর্থিক বুনিয়াদ করেছি। [২১০০] (আ.প্র. ৩৯৭৮/৩৯৭৯, ই.ফা. ৩৯৮৩)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply