সিরিয়া ভূমিতে সংঘটিত মূতার যুদ্ধের ঘটনা

সিরিয়া ভূমিতে সংঘটিত মূতার যুদ্ধের ঘটনা

সিরিয়া ভূমিতে সংঘটিত মূতার যুদ্ধের ঘটনা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬৪, মাগাযী, অধ্যায়ঃ ৪৫

৬৪/৪৫. অধ্যায়ঃ সিরিয়া ভূমিতে সংঘটিত মূতার যুদ্ধের ঘটনা

৪২৬০

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

সেদিন (মূতার যুদ্ধের দিন) তিনি শাহাদাত প্রাপ্ত জাফার ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.)-এর লাশের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। (তিনি বলেন) আমি জাফার (রাদি.)-এর দেহে তখন বর্শা ও তরবারীর পঞ্চাশটি আঘাতের চিহ্ন গুনেছি। তার মধ্যে কোনটাই তাহাঁর পশ্চাৎ দিকে ছিল না। [৪২৬১] (আ.প্র. ৩৯২৭, ই.ফা. ৩৯৩১)

৪২৬১

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মূতার যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যায়দ ইবনু হারিসাহ (রাদি.)-কে (সেনাপতি নিযুক্ত করে) বলেছিলেন, যদি যায়দ (রাদি.) শহীদ হয়ে যায় তাহলে জাফার ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.) (সেনাপতি হইবে)। যদি জাফার (রাদি.)-ও শহীদ হয়ে যায় তাহলে আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) (সেনাপতি হইবে)। আবদুল্লাহ [ইবনু উমার (রাদি.)] বলেন, ঐ যুদ্ধে তাদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। (যুদ্ধ শেষে) আমরা জাফার ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.)-কে তালাশ করলে তাকে শহীদগণের মধ্যে পেলাম। তখন আমরা তার দেহে বর্শা ও তীরের নব্বইটিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন দেখিতে পেয়েছি। [৬২] [৪২৬০] (আ.প্র. ৩৯২৮, ই.ফা. ৩৯৩২)

[৬২] পূর্বোক্ত হাদীসের পঞ্চাশটি আঘাতের চিহ্নের কথা বলা হয়েছিল যা কেবল বর্শা ও তরবারির আঘাত গণনা করা হয়েছে। অত্র হাদীসে তীর, বর্শা ও তরবারী সকল আঘাত চিহ্নের গণনা হয়েছে। পূর্বের হাদীসে তীর বাদ দিয়ে গণনা করার কারনে তারতম্য হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে উভয় হাদীসের মধ্যে কোনরূপ বিরোধ নেই। (ফতহুল বারী)

৪২৬২

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মুসলিমদের নিকট খবর এসে পৌঁছার পূর্বেই নাবী (সাঃআঃ) তাদেরকে যায়দ, জাফার ও ইবনু রাওয়াহা (রাদি.)-এর (শাহাদাতের) কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, যায়দ (রাদি.) পতাকা হাতে এগিয়ে গেলে তাঁকে শহীদ করা হয়। অতঃপর জাফার (রাদি.) পতাকা হাতে এগিয়ে গেলে তাকেও শহীদ করা হয়। অতঃপর ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) পতাকা হাতে নিলে তাকেও শহীদ করা হল। এ সময় তাহাঁর দুচোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল। (তিনি বলিলেন) শেষে আল্লাহর তলোয়ারদের মধ্য হইতে আল্লাহর এক তলোয়ার (খালিদ বিন ওয়ালীদ) পতাকা ধারণ করিল। ফলে আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে বিজয় দান করিলেন। [১২৪৬] (আ.প্র. ৩৯২৯, ই.ফা. ৩৯৩৩)

৪২৬৩

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যায়িদ ইবনু হারিসাহ, জাফার ইবনু আবু ত্বলিব ও আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.)-এর শাহাদাতের সংবাদ পৌঁছলে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বসে পড়লেন। তাহাঁর চেহারায় শোক-চিহ্ন পরিলক্ষিত হচ্ছিল। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, আমি তখন দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম, এক ব্যক্তি তাহাঁর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! জাফার (রাদি.)-এর পরিবারের মেয়েরা কান্নাকাটি করছে। তখন তিনি [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)] মহিলাদেরকে বারণ করার জন্য লোকটিকে আদেশ করিলেন। লোকটি ফিরে গেল। তারপর আবার এসে বলিল, আমি তাদেরকে নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা তা শোনেনি। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, এবারও রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে পুনঃ হুকুম করিলেন। লোকটি গেল কিন্তু আবার ফিরে আসল এবং বলিল, আমি তাদেরকে নিষেধ করেছি কিন্তু তারা আমার কথা মানছে না। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, তিনি লোকটিকে আবার যেতে বলিলেন, কাজেই সে গেল, অতঃপর ফিরে আসল এবং বলিল, আল্লাহর শপথ! আমি তাদের কাছে পরাস্ত হয়ে গেলাম। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, (তারপর) সম্ভবত রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে বলিলেন, তা হলে তাদের মুখের উপর মাটি ছুঁড়ে মার। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, আমি লোকটিকে বললাম, আল্লাহ তোমার নাককে ধূলি ধূসরিত করুন। আল্লাহর শপথ! রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তোমাকে যে কাজ করিতে বলেছেন তা তুমি করিতেও পারছ না অথচ তাঁকে কষ্ট দিতেও ছাড়ছ না। [১২৯৯] ( আ.প্র. ৩৯৩০, ই.ফা. ৩৯৩৪)

৪২৬৪

আমির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনু উমার (রাদি.) যখনই জাফর ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.)-এর পুত্র (আবদুল্লাহ)-কে সালাম দিতেন তখনই তিনি বলিতেন, তোমার প্রতি সালাম, হে দুডানাওয়ালার পুত্র।[৬৩] [৩৭০৯] (আ.প্র. ৩৯৩১, ই.ফা. ৩৯৩৫)

[৬৩] মুতার যুদ্ধে কাফিরদের তীরের আঘাতে জাফার ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.)-এর হাত দুটো দেহ হইতে পৃথক হয়ে যায় এবং তিনি শহীদ হয়ে যান। পরে আল্লাহ তাআলা তার ঐ দুবাহুর বদলে জান্নাতে দুটি ডানা প্রদান করেন। যা দ্বারা তিনি জান্নাতে মালায়িকার সঙ্গে বিচরণ করেন। যা তিনি স্বপ্নযোগে বা ওয়াহীর মাধ্যমে জানতে পারেন। (ফাতহুল বারী ৭ম খণ্ড ৯৬ পৃষ্ঠা)

৪২৬৫

কায়স ইবনু আবু হাযিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি, মূতার যুদ্ধে আমার হাতে নয়টি তরবারি ভেঙ্গে গিয়েছিল। শেষে আমার হাতে একটি প্রশস্ত ইয়ামানী তলোয়ার ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। [৪২৬৬] (আ.প্র. ৩৯৩২, ই.ফা. ৩৯৩৬)

৪২৬৬

ক্বায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাদি.) থেকে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন, মূতার যুদ্ধে আমার হাতে নয়খানা তরবারি ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে গিয়েছিল। (পরিশেষে) আমার হাতে আমার একটি প্রশস্ত ইয়ামানী তরবারিই টিকেছিল। [৪২৬৫] (আ.প্র. ৩৯৩৩, ই.ফা. ৩৯৩৭)

৪২৬৭

নুমান ইবনু বাশীর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক সময় আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) বেহুশ হয়ে পড়লে তাহাঁর বোন আমরা [বিনত রাওয়াহা (রাদি.)] হায়, হায় পর্বতের মতো আমার ভাই, হায়রে অমুকের মতো, তমুকের মতো ইত্যাদি গুন-বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে কান্নাকাটি শুরু করিল। এরপর জ্ঞান ফিরলে তিনি তাহাঁর বোনকে বলিলেন, তুমি যেসব কথা বলে কান্নাকাটি করেছিলে সেসব কথা উল্লেখ করে আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে, তুমি কি সত্যই এরূপ? (আ.প্র. ৩৯৩৪, ই.ফা. ৩৯৩৮)

৪২৬৮

নুমান ইবনু বাশীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক সময় আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) বেহুশ হয়ে পড়লেন বলে তা বর্ণনা করিলেন যেভাবে উপরোক্ত হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে। (তারপর তিনি বলেছেন) অতঃপর তিনি [আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.)] শহীদ হলে তাহাঁর বোন মোটেই কান্নাকাটি করেনি। [৬৪] [৪২৬৭] (আ.প্র. ৩৯৩৫, ই.ফা. ৩৯৩৯)

[৬৪] আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) যিনি যুদ্ধের পূর্বের কোন এক সময়কার ঘটনায় বেহুঁশ হয়ে পড়লে তার বোন আসমা বিনতু রাওয়াহা তার বহুবিধ গুণ বর্ণনা করে কান্নাকাটি করলে তিনি তাহাঁর বোনকে নিষেধ করেছিলেন । তিনি যখন মূতা-এর যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন তখন সে খবর পেয়ে মোটেও কাঁদেননি । এ হাদীসে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply