উক্‌ল ও উরাইনাহ গোত্রের ঘটনা এবং যাতুল কারাদের যুদ্ধ

উক্‌ল ও উরাইনাহ গোত্রের ঘটনা এবং যাতুল কারাদের যুদ্ধ

উক্‌ল ও উরাইনাহ গোত্রের ঘটনা এবং যাতুল কারাদের যুদ্ধ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬৪, মাগাযী, অধ্যায়ঃ (৩৭-৩৮) =২টি

৬৪/৩৭. অধ্যায়ঃ উক্‌ল ও উরাইনাহ গোত্রের ঘটনা
৬৪/৩৮. অধ্যায়ঃ যাতুল কারাদের যুদ্ধ

৬৪/৩৭. অধ্যায়ঃ উক্‌ল ও উরাইনাহ গোত্রের ঘটনা

৪১৯২

ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আনাস (রাদি.) তাদেরকে বলেছেন, উক্‌ল এবং উরাইনাহ গোত্রের কতিপয় লোক মাদীনাহতে নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে কালেমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করিল। এরপর তারা নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিল, হে আল্লাহর নাবী! আমরা দুগ্ধপানে বেঁচে থাকি, আমরা কৃষক নই। তারা মাদীনাহর আবহাওয়া নিজেদের জন্য অনুকূল মনে করিল না। তাই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদেরকে একজন রাখালসহ কতগুলো উট নিয়ে মাদীনাহর বাইরে যেতে এবং ঐগুলোর দুধ ও প্রস্রাব পান করার নির্দেশ দিলেন। তারা যাত্রা করে হার্‌রা-এর নিকট পৌঁছে ইসলাম ত্যাগ করে আবার কাফির হয়ে গেল এবং নাবী (সাঃআঃ)-এর রাখালকে হত্যা করে উটগুলো তাড়িয়ে নিয়ে গেল। নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এ খবর পৌঁছলে তিনি তাদের খোঁজে তাদের পিছে লোক পাঠিয়ে দিলেন। (তাদের আনা হলে) তিনি তাদের প্রতি কঠিন দণ্ডাদেশ প্রদান করিলেন। সাহাবীগণ লৌহ শলাকা দিয়ে তাদের চোখ তুলে দিলেন এবং তাদের হাত কেটে দিলেন। এরপর হাররার এক প্রান্তে তাদেরকে ফেলে রাখা হল। শেষ পর্যন্ত তাদের এ অবস্থায়ই মৃত্যু হল। ক্বাতাদাহ (রাদি.) বলেন, আমাদের কাছে খবর পৌঁছেছে যে, এ ঘটনার পর নাবী (সাঃআঃ) প্রায়ই লোকজনকে সদাকাহ প্রদান করার জন্য উৎসাহ দিতেন এবং মুসলা থেকে বিরত রাখতেন।

শুবাহ, আবান এবং হাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে উরাইনাহ গোত্রের ঘটনা বর্ণনা করিয়াছেন। ইয়াহইয়া ইবনু আবু কাসীর এবং আইয়ূব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু কিলাবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যমে আনাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, উক্‌ল গোত্রের কতিপয় লোক নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এসেছিল। [২৩৩] (আ.প্র. ৩৮৭২, ই.ফা. ৩৮৭৫)

৪১৯৩

উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

একদিন তিনি লোকদের কাছে কাসামাত সম্পর্কে পরামর্শ চেয়ে বলিলেন, তোমরা এ কাসামা সম্পর্কে কী বল? তাঁরা বলিলেন, এটা হাক। আপনার পূর্বে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এবং খলীফাগণ সকলেই কাসামাতের [৪৬]আদেশ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় আবু কিলাবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর পেছনে ছিলেন। তখন আম্বাসা ইবনু সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, উরাইনাহ গোত্র সম্পর্কিত আনাস (রাদি.)-এর হাদীসটি কোথায়? তখন আবু কিলাবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) আমার কাছেই হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। আবদুল আযীয ইবনু সুহাইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) উরাইনাহ গোত্রের কিছু লোকের কথা উল্লেখ করিয়াছেন। আর আবু কিলাবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) থেকে উক্‌ল গোত্রের উল্লেখ করে ঘটনাটি বর্ণনা করিয়াছেন। [২৩৩] (আ.প্র. ৩৮৭৩, ই.ফা. ৩৮৭৬)

[৪৬] কাসামাত হচ্ছে কোন এলাকায় মৃতদেহ ও হত্যার আলামত পাওয়া গেলে এবং তার হত্যাকারীকে বের না করা গেলে ঐ এলাকার লোকদের মধ্য হইতে হত্যাকারীকে খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে প্রত্যেকের নিকট হইতে কসম নেয়া।

৬৪/৩৮. অধ্যায়ঃ যাতুল কারাদের যুদ্ধ

খাইবার যুদ্ধের তিনদিন আগে মুশরিকরা নাবী (সাঃআঃ)-এর দুধেল উটগুলো লুট করে নেয়ার সময়ে এ যুদ্ধ হয়েছিল।

৪১৯৪

সালামাহ ইবনু আকওয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (একদা) আমি ফাজ্‌রের সলাতের আযানের আগে বাইরে বের হলাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর দুধেল উটগুলোকে যি-কারাদ জায়গায় চরানো হতো। সালামাহ (রাদি.) বলেন, তখন আমার সঙ্গে আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.)-এর গোলামের দেখা হলো। সে বলিল, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর দুধেল উটগুলো লুট করা হয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম, কে ওগুলো লুট করেছে? সে বলিল, গাতফানের লোকেরা। তিনি বলেন, তখন আমি ইয়া সাবাহা বলে তিনবার উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার করলাম। আর মাদীনাহর দুই পর্বতের মাঝে অবস্থিত মানুষদের কানে আমার আওয়াজ শুনিয়ে দিলাম। তারপর দ্রুত অগ্রসর হয়ে তাদেরকে পেয়ে গেলাম। এ সময়ে তারা উটগুলোকে পানি পান করাতে শুরু করেছিল। তখন তাদের দিকে তীর নিক্ষেপ করলাম, আমি ছিলাম একজন দক্ষ তীরন্দাজ আর বললাম, আমি হলাম আকওয়া-এর পুত্র, আজকের দিনটি তোমাদের সবচেয়ে খারাপ দিন। এভাবে আমি তাদের নিকট হইতে উটগুলোকে কেড়ে নিলাম এবং তাদের ত্রিশখানা চাদরও কেড়ে নিলাম। তিনি বলেন, এরপর নাবী (সাঃআঃ) ও অন্যান্য লোক সেখানে আসলে আমি বললাম, হে আল্লাহর নাবী! লোক কটি পিপাসার্ত ছিল, আমি তাদেরকে পানি পান করিতেও দেইনি। আপনি এখনই এদের পিছু ধাওয়া করার জন্য সৈন্য পাঠিয়ে দিন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন,

হে ইবনুল আকওয়া!

তুমি (হারানো উট দখল করিতে) সক্ষম হয়েছে, এখন একটু বিশ্রাম নাও।

সালামাহ (রাদি.) বলেন, এরপর আমরা ফিরে আসলাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে তাহাঁর উটনীর পেছনে বসিয়ে নিলেন, এভাবে মদিনায় প্রবেশ করলাম। [৩০৪১] (আ.প্র. ৩৮৭৪, ই.ফা. ৩৮৭৭)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply