হুদায়বিয়ার যুদ্ধ

হুদায়বিয়ার যুদ্ধ

হুদায়বিয়ার যুদ্ধ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬৪, মাগাযী, অধ্যায়ঃ ৩৬

৬৪/৩৬. অধ্যায়ঃ হুদাইবিয়াহর যুদ্ধ।

মহান আল্লাহর বাণীঃ মুমিনগণ যখন গাছের তলে আপনার নিকট বাইআত গ্রহন করিল তখন আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন……। (সুরাহ ফাতহ ৪৮/১৮)

৪১৪৭

যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হুদাইবিয়ার বছর আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর সঙ্গে বের হলাম। এক রাতে খুব বৃষ্টি হল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করিলেন। এরপরে আমাদের দিকে ফিরে বলিলেন, তোমরা জান কি তোমাদের রব কী বলেছেন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই অধিক জানেন। তখন তিনি বলিলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন (বৃষ্টির কারণে) আমার কতিপয় বান্দা আমার প্রতি ঈমান এনেছে, আর কেউ কেউ আমাকে অমান্য করেছে। যারা বলেছে, আল্লাহর রহমত, আল্লাহর দয়া এবং আল্লাহর ফযলে আমাদের প্রতি বৃষ্টি হয়েছে, তারা আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী মুমিন এবং তারা নক্ষত্রের প্রভাব অস্বীকারকারী। আর যারা বলেছে যে অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি হয়েছে [৪১], তারা তারকার প্রতি ঈমান এনেছে এবং আমাকে অস্বীকারকারী কাফির। [৮৪৬] (আ.প্র. ৩৮৩৫, ই.ফা. ৩৮৩৮)

[৪১] কেউ যদি এ বিশ্বাস বা আকীদা পোষণ করে তারকা বা নক্ষত্রের কোন ক্ষমতা প্রভাব আছে, তারকার প্রভাবকে যারা বৃষ্টিপাত হওয়া বা না হওয়ার কারণ মনে করে তারা স্পষ্টত কুফুরীর মধ্যে পতিত। কারণ এর দ্বারা আল্লাহর এখতিয়ার বা সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা হয় এবং তারকার শক্তির প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকে। এটা সম্পূর্ণ কুফুরী ও জাহিলী যুগের বিশ্বাস। ইমাম নাবাবী, ইমাম শাফিঈ ও জমহুর আলিমদের মত এটাই।

৪১৪৮

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) চারটি উমরাহ পালন করিয়াছেন। তিনি হাজ্জের সঙ্গে যে উমরাহ্টি পালন করেন সেটি ব্যতীত সবকটিই যুলকাদাহ মাসে। হুদাইবিয়ার উমরাহটি ছিল যুলকাদাহ মাসে। হুদাইবিয়ার পরের বছরের উমরাহটি ছিল যুলকাদাহ মাসে এবং হুনাইনের প্রাপ্ত গানীমাত যে জিঈরানা নামক স্থানে বন্টন করেছিলেন, সেখানের উমরাহটি ছিল যুলকাদাহ মাসে, আর তিনি হাজ্জের সঙ্গে একটি উমরাহ পালন করেন। [১৭৭৮, ১৭৭৯] (আ.প্র. ৩৮৩৬, ই.ফা. ৩৮৩৯)

৪১৪৯

আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হুদাইবিয়ার যুদ্ধের বছর আমরা নাবী (সাঃআঃ) এর সঙ্গে রওয়ানা করেছিলাম। তখন তার সাহাবীগণ ইহরাম বেঁধেছিলেন কিন্তু আমি ইহরাম বাঁধিনি। [১৮২১] (আ.প্র. ৩৮৩৭, ই.ফা. ৩৮৪০)

৪১৫০

বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়কে তোমরা বিজয় মনে করছ। মাক্কাহ বিজয়ও একটি বিজয়। কিন্তু হুদাইবিয়ার দিনের বাইআতে রিদওয়ানকে আমরা প্রকৃত বিজয় মনে করি। সে সময় আমরা চৌদ্দশ সহাবী নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। হুদাইবিয়াহ একটি কূপ। আমরা তা থেকে পানি উঠাতে উঠাতে তাতে এক বিন্দুও বাকী রাখিনি। এ সংবাদ নাবী (সাঃআঃ) এর কাছে পৌছলে তিনি এসে সে কুপের পাড়ে বসলেন। তারপর এক পাত্র পানি আনিয়ে অযু করিলেন এবং কুল্লি করিলেন। শেষে দুআ করে অবশিষ্ট পানি কুপের মধ্যে ফেলে দিলেন। আমরা অল্প সময় কূপের পানি উঠানো বন্ধ রাখলাম। এরপর আমরা আমাদের নিজেদের ও আরোহী পশুর জন্য ইচ্ছে মত পানি কূপ থেকে উঠালাম। [৩৫৭৭] (আ.প্র. ৩৮৩৮, ই.ফা. ৩৮৪১)

৪১৫১

আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাকে বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) সংবাদ দিয়েছেন যে, হুদাইবিয়ার যুদ্ধের দিন তাঁরা চৌদ্দশ কিংবা তার চেয়েও অধিক লোক রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলেন। তারা একটি কূপের পার্শ্বে অবতরণ করেন এবং তা থেকে পানি উত্তোলন করিতে থাকেন। (পানি নিঃশেষ হয়ে গেলে) তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর কাছে এসে তা জানালেন। তখন তিনি কূপটির নিকট এসে ওটার পাড়ে বসলেন। এরপর বলিলেন, আমার কাছে ওটা থেকে এক বালতি পানি নিয়ে আস। তখন তা নিয়ে আসা হলো। তিনি এতে থুথু ফেললেন এবং দুআ করিলেন। এরপর তিনি বলিলেন, কিছুক্ষণের জন্য তোমরা এ থেকে পানি উঠানো বন্ধ রাখ। এরপর সকলেই নিজেদের ও আরোহী জন্তুগুলোর তৃষ্ণা নিবারণ করে যাত্রা করিলেন। [৩৫৭৭] (আ.প্র. ৩৮৩৯, ই.ফা. ৩৮৪২)

৪১৫২

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হুদাইবিয়ার দিন লোকেরা পিপাসার্ত হয়ে পড়লেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট একটি চামড়ার পাত্র ভর্তি পানি ছিল। তিনি তা দিয়ে ওযু করিলেন। তখন লোকেরা তাহাঁর দিকে এগিয়ে আসলে তিনি তাদেরকে বলিলেন, কী হয়েছে তোমাদের? তারা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার চর্মপাত্রের পানি বাদে আমাদের কাছে এমন কোন পানি নেই যা দিয়ে আমরা ওযু করিতে এবং পান করিতে পারি। বর্ণনাকারী জাবির (রাদি.) বলেন, এরপর নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর হাত ঐ চর্মপাত্রে রাখলেন। অমনি তার আঙ্গুলগুলো থেকে ঝরণার মতো পানি উথলে উঠতে লাগল। জাবির (রাদি.) বলেন, আমরা সে পানি পান করলাম এবং ওযু করলাম। [সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমি জাবির (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা সেদিন কতজন ছিলেন? তিনি বলিলেন, আমরা যদি একলাখও হতাম তবু এ পানিই আমাদের জন্য যথেষ্ট হত। আমরা ছিলাম পনেরশ। [৩৫৭৬] (আ.প্র. ৩৮৪০, ই.ফা. ৩৮৪৩)

৪১৫৩

ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি সাঈদ ইবনু মুসায়্যিব (রাদি.)-কে বললাম, আমি শুনতে পেয়েছি যে, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) বলিতেন, তাঁরা (হুদাইবিয়ার) চৌদ্দশ ছিলেন। সাঈদ (রাদি.) আমাকে বলিলেন, জাবির (রাদি.) আমাকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, হুদাইবিয়ার দিন যাঁরা নাবী (সাঃআঃ)-এর হাতে বাইআত গ্রহণ করেছিলেন, তাদের সংখ্যা ছিল পনের শত। আবু দাউদ কুররা (রাদি.)-এর মাধ্যমে ক্বাতাদাহ (রাদি.) থেকে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্শার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-ও অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) (অন্য সানাদে) শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকেও একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। [৩৫৭৬] (আ.প্র. ৩৮৪১, ই.ফা. ৩৮৪৪)

৪১৫৪

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হুদাইবিয়ার যুদ্ধের দিন আমাদেরকে বলেছেন, পৃথিবীবাসীদের মধ্যে তোমরাই সর্বোত্তম। সেদিন আমরা ছিলাম চৌদ্দশ। আজ আমি যদি দেখতাম, তাহলে আমি তোমাদেরকে সে গাছের জায়গাটি দেখিয়ে দিতাম। [৩৫৭৬; মুসলিম ৩৩/১৮, হাদীস ১৮৫৬; আহমাদ ১৪৩১৭]

আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হাদীসটি সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যমে জাবির (রাদি.)-এর অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন চৌদ্দশ। (আ.প্র. ৩৮৪২, ই.ফা. ৩৮৪৫)

৪১৫৫

আবদুল্লাহ ইবনু আবু আউফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

গাছের নীচে বাইআত গ্রহণকারীদের সংখ্যা ছিল তেরশ। আসলাম গোত্রীয়রা ছিলেন মুহাজিরগণের মোট সংখ্যার এক-অষ্টমাংশ। [মুসলিম ৩৩/১৮, হাদীস ১৮৫৭] (আ.প্র. ৩৮৪২, ই.ফা. ৩৮৪৫)

মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্শার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

৪১৫৬

কায়েস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি হুদাইবিয়ার সন্ধির দিন বৃক্ষতলের সহাবী মিরদাস আসলামীকে বলিতে শুনেছেন যে, নেককার লোকদেরকে একের পর এক উঠিয়ে নেয়া হইবে। এরপর বাকী থাকবে খেজুর ও যবের খোসার মতো খোসাগুলো আল্লাহ যাদের কোন তোয়াক্কা করবেন না। [৬৪৩৪] (আ.প্র. ৩৮৪৩, ই.ফা. ৩৮৪৬)

৪১৫৭

মারওয়ান এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা উভয়ই বলেছেন যে, হুদাইবিয়াহর বছর নাবী সাঃআঃ এক সহস্রাধিক সহাবীকে সঙ্গে নিয়ে মদিনা থেকে বের হলেন। যুল-হুলাইফাহ[১]তে পৌঁছে তিনি কুরবানীর পশুর গলায় কিলাদা বাঁধলেন, পশুর কুজ কাটলেন এবং সেখান থেকে ইহরাম বাঁধলেন। (বর্ণনাকারী) বলেন, এ হাদীস সুফ্ইয়ান থেকে কয় দফা শুনিয়াছি তার সংখ্যা আমি গণনা করিতে পারছি না। পরিশেষে তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি, যুহরী থেকে কুরবানীর পশুর গলায় কিলাদা বাঁধা এবং ইশআর করার কথা আমার স্মরণ নেই। রাবী আলী ইবনু আবদুল্লাহ বলেন, সুফ্ইয়ান এ কথা বলে কী বোঝাতে চেয়েছেন তা আমি জানি না। তিনি কি এ কথা বলিতে চেয়েছেন যে, যুহরী থেকে ইশআর ও কিলাদা করার কথা তাহাঁর স্মরণ নেই, নাকি সম্পূর্ণ হাদীসটি স্মরণ না থাকার কথা বলিতে চেয়েছেন? [১৬৯৪, ১৬৯৫] (আঃপ্রঃ ৩৮৪৪, ইঃফাঃ ৩৮৪৭)

[১] মাদীনাহ বা এদিক হইতে আগত ব্যক্তিগণের হাজ্জ ও উমরাহর জন্য ইহরাম বাঁধার মীকাত।

৪১৫৮

মারওয়ান এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা উভয়ই বলেছেন যে, হুদাইবিয়াহর বছর নাবী সাঃআঃ এক সহস্রাধিক সহাবীকে সঙ্গে নিয়ে মদিনা থেকে বের হলেন। যুল-হুলাইফাহ[১]তে পৌঁছে তিনি কুরবানীর পশুর গলায় কিলাদা বাঁধলেন, পশুর কুজ কাটলেন এবং সেখান থেকে ইহরাম বাঁধলেন। (বর্ণনাকারী) বলেন, এ হাদীস সুফ্ইয়ান থেকে কয় দফা শুনিয়াছি তার সংখ্যা আমি গণনা করিতে পারছি না। পরিশেষে তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি, যুহরী থেকে কুরবানীর পশুর গলায় কিলাদা বাঁধা এবং ইশআর করার কথা আমার স্মরণ নেই। রাবী আলী ইবনু আবদুল্লাহ বলেন, সুফ্ইয়ান এ কথা বলে কী বোঝাতে চেয়েছেন তা আমি জানি না। তিনি কি এ কথা বলিতে চেয়েছেন যে, যুহরী থেকে ইশআর ও কিলাদা করার কথা তাহাঁর স্মরণ নেই, নাকি সম্পূর্ণ হাদীসটি স্মরণ না থাকার কথা বলিতে চেয়েছেন? [১৬৯৪, ১৬৯৫] (আঃপ্রঃ ৩৮৪৪, ইঃফাঃ ৩৮৪৭)

[১] মাদীনাহ বা এদিক হইতে আগত ব্যক্তিগণের হাজ্জ ও উমরাহর জন্য ইহরাম বাঁধার মীকাত।

৪১৫৯

কাব ইবনু উজরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাঁকে এমন অবস্থায় দেখলেন যে, উকুন তার মুখমন্ডলে ঝরে পড়ছে। তখন তিনি বলিলেন, কীটগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন যখন তিনি হুদাইবিয়াহতে অবস্থান করছিলেন। তখন সাহাবীগণ মাক্কাহ প্রবেশ করার জন্য খুবই আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। হুদাইবিয়াহতেই তাদের হালাল হইতে হইবে এ কথা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের কাছে বর্ণনা করেননি। তাই আল্লাহ ফিদইয়ার বিধান অবতীর্ণ করিলেন। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাঁকে ছয়জন মিসকীনকে এক ফারাক (প্রায় বারো সের) খাদ্য খাওয়ানোর অথবা একটি বাক্‌রী কুরবানী করার অথবা তিন দিন সওম পালনের নির্দেশ দিলেন। [১৮১৪] (আ.প্র. ৩৮৪৫, ই.ফা. ৩৮৪৮)

৪১৬০

আসলাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমি উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.)-এর সঙ্গে বাজারে বের হলাম। সেখানে একজন যুবতী মহিলা তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলিল, হে আমীরুল মুমিনীন! আমার স্বামী ছোট ছোট বাচ্চা রেখে মারা গেছেন। আল্লাহর কসম! তাদের খাওয়ার জন্য পাকানোর মতো কোন বাকরীর খুরও নেই এবং নেই কোন ফসলের ব্যবস্থা ও দুধেল উট, বাকরী। আমার আশঙ্কা হচ্ছে পোকা তাদেরকে খেয়ে ফেলবে অথচ আমি হলাম খুফাফ ইবনু আইমা গিফারীর কন্যা। আমার পিতা নাবী সাঃআঃ-এর সঙ্গে হুদাইবিয়াহ্য় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ কথা শুনে উমার (রাদি.) তাকে অতিক্রম না করে পার্শ্বে দাঁড়ালেন। এরপর বলিলেন, তোমার গোত্রকে মোবারাকবাদ। তাঁরা তো আমার খুব নিকটের মানুষ। এরপর তিনি ফিরে এসে আস্তাবলে বাঁধা উটের থেকে একটি মোটা তাজা উট এনে দুই বস্তা খাদ্য এবং এর মধ্যে কিছু নগদ অর্থ ও বস্ত্র রেখে এগুলো উটের পিঠে তুলে দিয়ে মহিলার হাতে এর লাগাম দিয়ে বলিলেন, তুমি এটি টেনে নিয়ে যাও। এগুলো শেষ হওয়ার আগেই হয়তো আল্লাহ তোমাদের জন্য এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন। তখন এক ব্যক্তি বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি তাকে খুব অধিক দিলেন। উমার (রাদি.) বলিলেন, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক।১ আল্লাহর কসম! আমি দেখেছি এ মহিলার আববা ও ভাই দীর্ঘদিন পর্যন্ত একটি দূর্গ অবরোধ করে রেখেছিলেন এবং পরে তা জয় করেছিলেন। এরপর ঐ দূর্গ থেকে প্রাপ্ত তাদের অংশ থেকে আমরাও যুদ্ধলব্ধ সম্পদের দাবী করি। (আঃপ্রঃ ৩৮৪৬, ইঃফাঃ ৩৮৪৯)

৪১৬১

আসলাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমি উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.)-এর সঙ্গে বাজারে বের হলাম। সেখানে একজন যুবতী মহিলা তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলিল, হে আমীরুল মুমিনীন! আমার স্বামী ছোট ছোট বাচ্চা রেখে মারা গেছেন। আল্লাহর কসম! তাদের খাওয়ার জন্য পাকানোর মতো কোন বাকরীর খুরও নেই এবং নেই কোন ফসলের ব্যবস্থা ও দুধেল উট, বাকরী। আমার আশঙ্কা হচ্ছে পোকা তাদেরকে খেয়ে ফেলবে অথচ আমি হলাম খুফাফ ইবনু আইমা গিফারীর কন্যা। আমার পিতা নাবী সাঃআঃ-এর সঙ্গে হুদাইবিয়াহ্য় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ কথা শুনে উমার (রাদি.) তাকে অতিক্রম না করে পার্শ্বে দাঁড়ালেন। এরপর বলিলেন, তোমার গোত্রকে মোবারাকবাদ। তাঁরা তো আমার খুব নিকটের মানুষ। এরপর তিনি ফিরে এসে আস্তাবলে বাঁধা উটের থেকে একটি মোটা তাজা উট এনে দুই বস্তা খাদ্য এবং এর মধ্যে কিছু নগদ অর্থ ও বস্ত্র রেখে এগুলো উটের পিঠে তুলে দিয়ে মহিলার হাতে এর লাগাম দিয়ে বলিলেন, তুমি এটি টেনে নিয়ে যাও। এগুলো শেষ হওয়ার আগেই হয়তো আল্লাহ তোমাদের জন্য এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন। তখন এক ব্যক্তি বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি তাকে খুব অধিক দিলেন। উমার (রাদি.) বলিলেন, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক।১ আল্লাহর কসম! আমি দেখেছি এ মহিলার আববা ও ভাই দীর্ঘদিন পর্যন্ত একটি দূর্গ অবরোধ করে রেখেছিলেন এবং পরে তা জয় করেছিলেন। এরপর ঐ দূর্গ থেকে প্রাপ্ত তাদের অংশ থেকে আমরাও যুদ্ধলব্ধ সম্পদের দাবী করি। (আঃপ্রঃ ৩৮৪৬, ইঃফাঃ ৩৮৪৯)

৪১৬২

মুসাইয়্যাব (ইবনু হুয্‌ন) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (যেটির নীচে বাইআত করা হয়েছিল) আমি সে গাছটি দেখেছিলাম। কিন্তু পরে যখন ওখানে আসলাম তখন আর সেটা চিনতে পারলাম না। মাহমুদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, (মুসাইয়্যাব ইবনু হুয্‌ন বলেছেন) পরে ওটা আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। [৪১৬৩, ৪১৬৪, ৪১৬৫; মুসলিম ৩৩/১৮, হাদীস ১৮৫৯] (আ.প্র. ৩৮৪৭, ই.ফা. ৩৮৫০)

৪১৬৩

তারিক ইবনু আবদুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি হাজ্জে রওয়ানা হয়েছিলাম। পথে সালাতরত এক কাওমের নিকট দিয়ে পথ অতিক্রমকালে তাদেরকে বললাম, এটা কেমন সালাতের স্থান? তাঁরা বলিলেন, এটা হলো সেই গাছ যেখানে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বাইআতে রিদওয়ান গ্রহণ করেছিলেন। তখন আমি সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে তাঁকে জানালাম। তখন সাঈদ (ইবনু মুসাইয়্যাব) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, আমার পিতা আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন, গাছটির নীচে যারা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর হাতে বাইআত গ্রহণ করেছিলেন তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। মুসাইয়্যাব (রাদি.) বলেছেন, পরের বছর আমরা যখন সেখানে গেলাম তখন আমাদেরকে ওটা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছিল যার ফলে তা নির্দিষ্ট করিতে পারলাম না। সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) –এর সাহাবীগণ ওটা চিনতে পারলেন না আর তোমরা তা চিনে ফেললে? তাহলে তোমরাই দেখছি অধিক জান! [৪১৬২] (আ.প্র. ৩৮৪৮, ই.ফা. ৩৮৫১)

৪১৬৪

মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

গাছের তলে যারা বাইআত নিয়েছিলেন তিনি ছিলেন তাঁদের একজন। (তিনি বলেন) পরের বছর আমরা আবার সে গাছের কাছে গেলে আমরা গাছটিকে চিনতে পারলাম না। এ ব্যাপারে আমাদেরকে ভ্রান্তিতে নিপতিত করা হয়েছে। [৪১৬২] (আ.প্র. ৩৮৪৯, ই.ফা. ৩৮৫২)

৪১৬৫

তারিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছে সে গাছটির কথা উল্লেখ করা হলে তিনি হেসে বলিলেন, আমার পিতা আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি সেখানের বাইআতে উপস্থিত ছিলেন। [৪১৬২] (আ.প্র. ৩৮৫০, ই.ফা. ৩৮৫৩)

৪১৬৬

আমর্‌ ইবনু মুররা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বৃক্ষতলে বাইআতকারী সহাবী আবদুল্লাহ ইবনু আবু আউফাকে বলিতে শুনিয়াছি যে, তিনি বলেছেন, কোন কাওম নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে সদাকাহর অর্থ নিয়ে আসলে তিনি তাদের জন্য বলিতেন, “হে আল্লাহ! আপনি তাদের উপর রহম করুন”। এ সময় আমার পিতা তাহাঁর কাছে সদাকাহর অর্থ নিয়ে আসলে তিনি বলিলেন, “হে আল্লাহ! আপনি আবু আউফার পরিবারবর্গের উপর রহম করুন”। [১৪৯৭] (আ.প্র. ৩৮৫১, ই.ফা. ৩৮৫৪)

৪১৬৭

আববাদ ইবনু তামীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হাররার দিন যখন লোকজন আবদুল্লাহ ইবনু হানযালা (রাদি.)-এর হাতে বাইআত গ্রহণ করেছিলেন, তখন ইবনু যায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জিজ্ঞেস করিলেন, ইবনু হানযালা (রাদি.) কিসের উপর লোকদের বাইআত গ্রহণ করছেন? তখন তাঁকে বলা হল, মৃত্যুর উপর। তিনি বলিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর পরে এর উপর আমি আর কারো কাছে বাইআত গ্রহণ করব না। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে হুদাইবিয়াহয় উপস্থিত ছিলেন। [২৯৫৯] (আ.প্র. ৩৮৫২, ই.ফা. ৩৮৫৫)

৪১৬৮

ইয়াস ইবনু সালামাহ ইবনু আকওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার পিতা-যিনি ছিলেন বৃক্ষ-তলের বাইআতকারীদের একজন বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে জুমুআহর সলাত আদায় করে যখন বাড়ি ফিরতাম তখনও প্রাচীরের ছায়া পড়ত না, যে ছায়ায় আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। [মুসলিম ৭/৯, হাদীস ৮৬০; আহমাদ ১৬৫৪৬] (আ.প্র. ৩৮৫৩, ই.ফা. ৩৮৫৬)

৪১৬৯

ইয়াযীদ ইবনু আবু উবায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি সালামাহ ইবনু আকওয়া (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হুদাইবিয়াহর দিন আপনারা কোন জিনিসের উপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট বাইআত করেছিলেন। তিনি বলিলেন, মৃত্যুর উপর। [২৯৬০] (আ.প্র. ৩৮৫৪, ই.ফা. ৩৮৫৭)

৪১৭০

মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমি বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.)-এর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বললাম, আপনার খোশ খবর, আপনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গ পেয়েছেন এবং বৃক্ষ তলে তাহাঁর নিকট বাইআত করিয়াছেন। তখন তিনি বলিলেন, ভাতিজা! তুমি তো জান না, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর ইন্তিকালের পর আমরা কী কী নতুন বিষয় উদ্ভাবন করেছি (যুদ্ধ-বিগ্রহ ও ফিতনাহ ইত্যাদি)। (আ.প্র. ৩৮৫৫, ই.ফা. ৩৮৫৮)

৪১৭১

আবু ক্বিলাবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

সাবিত ইবনু দাহহাক (রাদি.) তাকে খবর দিয়েছেন, তিনি গাছের তলায় নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট বাইআত করিয়াছেন। [১৩৬৩; মুসলিম ১/৪৭। হাদীস ১১০] (আ.প্র. ৩৮৫৬, ই.ফা. ৩৮৫৯)

৪১৭২

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِيْنًا-অবশ্যই আমি আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দিয়েছি- (সুরা ফাত্হ ৪৮/১)। তিনি বলেনঃ এ আয়াতে فَتْحًا مُبِيْنًا (সুস্পষ্ট বিজয়) দ্বারা হুদাইবিয়াহর সন্ধিকেই বোঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সহাবীগণ বলিলেন, এটা খুশী ও আনন্দের কথা। কিন্তু আমাদের জন্য কী আছে? তখন আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করিলেন, لِيُدْخِلَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ যাতে তিনি মুমিন ও মুমিনাগণকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবেন যার নীচ দিয়ে বহু নদী-নালা প্রবাহিত হচ্ছে। শুবাহ (রাদি.) বলেন, এরপর আমি কুফায় গেলাম এবং ক্বাতাদাহ থেকে বর্ণনাকৃত হাদীসটির সবটুকু বর্ণনা করলাম, অতঃপর কুফা থেকে প্রত্যাবর্তন করে ক্বাতাদাহকে জানালাম। তিনি বলিলেন, إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ সম্পর্কিত কথা আনাস হইতে বর্ণিত। আর هَنِيئًا مَرِيئًا সম্পর্কিত কথা ইকরামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। [৪৮৩৪] (আঃপ্রঃ ৩৮৫৭, ইঃফাঃ ৩৮৬০)

৪১৭৩

মাজ্‌যা ইবনু যাহির আসলামী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর পিতা হইতে বর্ণিতঃ

(যিনি বৃক্ষ তলের বাইআতে অংশ নিয়েছিলেন) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি ডেকচিতে গাধার গোশত রান্না করছিলাম, এমন সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর ঘোষক ঘোষণা দিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তোমাদেরকে গাধার গোশত খেতে নিষেধ করিয়াছেন। (আ.প্র. ৩৮৫৮, ই.ফা. ৩৮৬১)

৪১৭৪

মাজযাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

উহবান ইবনু আওস নামক বৃক্ষতলের বাইআতে অংশগ্রহণকারী এক সহাবী থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তাহাঁর হাঁটুতে আঘাত লেগেছিল। তাই তিনি সালাত আদায় কালে হাঁটুর নীচে বালিশ রাখতেন। (আ.প্র. ৩৮৫৮, ই.ফা. ৩৮৬১)

৪১৭৫

বৃক্ষতলের বাইআতে অংশগ্রহণকারী সহাবী সুওয়াইদ ইবনু নুমান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ও তাহাঁর সহাবীদের জন্য ছাতু আনা হত। তাঁরা তা খেয়ে নিতেন। মুআয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শুবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে এ হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। [২০৯] (আঃপ্রঃ ৩৮৫৯, ইঃফাঃ ৩৮৬২)

৪১৭৬

আবু জামরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বৃক্ষতলের বাইআতে অংশগ্রহণকারী নাবী (সাঃআঃ)-এর সহাবী আয়িয ইবনু আমর (রাদি.)-কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, বিতর কি ভাঙ্গা যাবে? তিনি বলিলেন, রাতের প্রথম অংশে বিতর আদায় করলে রাতের শেষে আর আদায় করিবে না। [৪৩] (আ.প্র. ৩৮৬০, ই.ফা. ৩৮৬৩)

[৪৩] যেহেতু রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন বিতরকে রাতের শেষ সালাত হিসেবে আদায় করো। সুতরাং যারা ইশা সলাতের পরপরই বিতর সালাত আদায় করে নিয়ে থাকেন তারা যদি পুনরায় রাতে সালাতুল লাইল আদায় করেন তাহলে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ মতে তাদেরকে পুনরায় বিতর আদায় করা উচিত ছিল। কিন্তু অত্র হাদীসে পরিষ্কারভাবে বোঝা গেল যে, তাদেরকে আর পুনরায় বিতর আদায় করিতে হইবে না। এবং বিতর আদায় করার পরও কেউ ইচ্ছা করলে সলাতুল লাইল আদায় করিতে পারেন।

৪১৭৭

আসলামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর কোন এক সফরে রাত্রিকালে চলছিলেন। এ সফরে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদি.)-ও তাহাঁর সঙ্গে চলছিলেন। উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোন উত্তর করিলেন না। তিনি আবার জিজ্ঞেস করিলেন, তিনি এবারও জবাব দিলেন না। এরপর আবার তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, এবারও উত্তর দিলেন না। তখন উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) মনে মনে বলিলেন, হে উমার! তোমাকে তোমার মা হারিয়ে ফেলুক! তুমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে তিনবার বিরক্ত করলে। কিন্তু কোনবারই তিনি তোমাকে জবাব দেননি। উমার (রাদি.) বলিলেন, এরপর আমি আমার উটকে তাড়িয়ে মুসলিমদের সম্মুখে চলে যাই। কারণ আমি আশঙ্কা করছিলাম যে, হয়তো আমার ব্যাপারে কুরআন মাজীদের কোন আয়াত অবতীর্ণ হইতে পারে। অধিক দেরি হয়নি এমন সময় শুনতে পেলাম এক লোক চীৎকার করে আমাকে ডাকছে। উমার (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, আমার ব্যাপারে হয়তো কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এ ভেবে আমি ভীত হয়ে পড়লাম। অতঃপর আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে তাঁকে সালাম করলাম। তখন তিনি বলিলেন, আজ রাতে আমার প্রতি এমন একটি সুরাহ অবতীর্ণ হয়েছে যা আমার কাছে যার উপর সূর্য উদিত হয় তার থেকেও অধিক প্রিয়। তারপর তিনি إِناَّ فَتَحْنَ لَكَ فَتْحًا مُبِيْنًا পাঠ করিলেন। [৪৮৩৩, ৫০১২] (আ.প্র. ৩৮৬১, ই.ফা. ৩৮৬৪]

৪১৭৮

মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ ও মারওয়ান ইবনু হাকাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা একে অন্যের চেয়ে অধিক বর্ণনা করিয়াছেন। তারা উভয়ে বলেন, হুদাইবিয়াহর বছর নাবী সাঃআঃ এক সহস্রাধিক সহাবী সঙ্গে নিয়ে বের হলেন। যখন তাঁরা যুল হুলাইফাহ পৌঁছলেন কুরবানীর পশুর গলায় কিলাদা বাঁধলেন, ইশআর করিলেন। সেখান থেকে উমরাহর ইহরাম বাঁধলেন এবং খুযাআ গোত্রের এক লোককে গোয়েন্দা হিসেবে পাঠালেন। নাবী সাঃআঃ নিজেও রওয়ানা হলেন। গাদীরুল আশ্তাত নামক স্থানে পৌঁছলে গোয়েন্দা এসে তাঁকে বলিল, কুরাইশরা বিরাট দল নিয়ে আপনার বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে। তারা আপনার বিরুদ্ধে লড়াই করিবে এবং বাইতুল্লাহ্য় যেতে বাধা দিবে ও বিঘ্ন সৃষ্টি করিবে। তখন তিনি বলিলেন, হে লোক সকল! তোমরা আমাকে পরামর্শ দাও, যারা আমাদেরকে বাইতুল্লাহ্য় যেতে বাধা দেয়ার ইচ্ছা করছে, আমি কি তাদের পরিবারবর্গ এবং সন্তান-সন্ততিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ব। তারা আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্প করে থাকলে আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন, যিনি মুশরিকদের থেকে একজন গোয়েন্দাকে নিরাপদে ফিরিয়ে এনেছেন। আর যদি তারা আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই না করে তাহলে আমরা তাদের পরিবার এবং অর্থ-সম্পদ থেকে বিরত থাকব এবং তাদেরকে তাদের পরিবার ও অর্থ সম্পদ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেব। তখন আবু বাকর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল সাঃআঃ! আপনি তো বাইতুল্লাহর উদ্দেশে বেরিয়েছেন, কাউকে হত্যা করা এবং কারো সঙ্গে লড়াই করার উদ্দেশে তো আসেননি। তাই বাইতুল্লাহর দিকে চলুন। যে আমাদেরকে তা থেকে বাধা দিবে আমরা তার সঙ্গে লড়াই করব। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, তবে চল আল্লাহর নামে। [১৬৯৪, ১৬৯৫] (আঃপ্রঃ ৩৮৬২, ইঃফাঃ ৩৮৬৫)

৪১৭৯

মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ ও মারওয়ান ইবনু হাকাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা একে অন্যের চেয়ে অধিক বর্ণনা করিয়াছেন। তারা উভয়ে বলেন, হুদাইবিয়াহর বছর নাবী সাঃআঃ এক সহস্রাধিক সহাবী সঙ্গে নিয়ে বের হলেন। যখন তাঁরা যুল হুলাইফাহ পৌঁছলেন কুরবানীর পশুর গলায় কিলাদা বাঁধলেন, ইশআর করিলেন। সেখান থেকে উমরাহর ইহরাম বাঁধলেন এবং খুযাআ গোত্রের এক লোককে গোয়েন্দা হিসেবে পাঠালেন। নাবী সাঃআঃ নিজেও রওয়ানা হলেন। গাদীরুল আশ্তাত নামক স্থানে পৌঁছলে গোয়েন্দা এসে তাঁকে বলিল, কুরাইশরা বিরাট দল নিয়ে আপনার বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে। তারা আপনার বিরুদ্ধে লড়াই করিবে এবং বাইতুল্লাহ্য় যেতে বাধা দিবে ও বিঘ্ন সৃষ্টি করিবে। তখন তিনি বলিলেন, হে লোক সকল! তোমরা আমাকে পরামর্শ দাও, যারা আমাদেরকে বাইতুল্লাহ্য় যেতে বাধা দেয়ার ইচ্ছা করছে, আমি কি তাদের পরিবারবর্গ এবং সন্তান-সন্ততিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ব। তারা আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্প করে থাকলে আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন, যিনি মুশরিকদের থেকে একজন গোয়েন্দাকে নিরাপদে ফিরিয়ে এনেছেন। আর যদি তারা আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই না করে তাহলে আমরা তাদের পরিবার এবং অর্থ-সম্পদ থেকে বিরত থাকব এবং তাদেরকে তাদের পরিবার ও অর্থ সম্পদ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেব। তখন আবু বাকর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল সাঃআঃ! আপনি তো বাইতুল্লাহর উদ্দেশে বেরিয়েছেন, কাউকে হত্যা করা এবং কারো সঙ্গে লড়াই করার উদ্দেশে তো আসেননি। তাই বাইতুল্লাহর দিকে চলুন। যে আমাদেরকে তা থেকে বাধা দিবে আমরা তার সঙ্গে লড়াই করব। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, তবে চল আল্লাহর নামে। [১৬৯৪, ১৬৯৫] (আঃপ্রঃ ৩৮৬২, ইঃফাঃ ৩৮৬৫)

৪১৮০

উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি মারওয়ান ইবনু হাকাম এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) উভয়কে হুদাইবিয়াহর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর উমরাহ আদায় করার ঘটনা বর্ণনা করিতে শুনেছেন। তাঁদের থেকে উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমার (মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম ইবনু শিহাব) নিকট যা বর্ণনা করছেন তা হচ্ছে এই যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ সুহায়ল ইবনু আমরকে হুদাইবিয়াহর দিন সন্ধিনামায় যা লিখিয়েছিলেন তার মধ্যে সুহায়ল ইবনু আমরের শর্তগুলোর একটি শর্ত ছিল এইঃ আমাদের থেকে যদি কেউ আপনার কাছে চলে যায় তাকে আমাদের কাছে ফেরত দিতে হইবে যদিও সে আপনার ধর্মের উপর থাকে এবং তার ও আমাদের মধ্যে আপনি কোন বাধা সৃষ্টি করিতে পারবেন না। এ শর্ত পূর্ণ করা ছাড়া সুহায়ল রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সঙ্গে সন্ধি করিতেই অস্বীকৃতি জানায়। এ শর্তটিকে মুমিনগণ অপছন্দ করিলেন এবং এতে তারা ক্ষুব্ধ হলেন ও এর বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করিলেন। কিন্তু যখন সুহায়ল এ শর্ত ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সঙ্গে চুক্তি করিতে অস্বীকার করিল তখন এ শর্তের উপরই রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ সন্ধিপত্র লেখালেন এবং আবু জানদাল ইবনু সুহায়ল (রাদি.)-কে ঐ মুহূর্তেই তার পিতা সুহায়ল ইবনু আমরের কাছে ফিরিয়ে দিলেন। সন্ধির মেয়াদকালে পুরুষদের মধ্যে যারাই রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে চলে আসতেন, মুসলিম হলেও তিনি তাদেরকে ফিরিয়ে দিতেন। এ সময় কিছু সংখ্যক মুসলিম মহিলা হিজরাত করে চলে আসেন। উম্মু কুলসুম বিনত উকবাহ ইবনু আবু মুআইত (রাদি.) ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট হিজরাতকারিণী একজন যুবতী মহিলা। তিনি হিজরাত করে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে এসে পৌঁছলে তার পরিবারের লোকেরা নাবী সাঃআঃ-এর নিকট এসে তাঁকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানালো। এ সময় আল্লাহ তাআলা মুমিন মহিলাদের সম্পর্কে যা অবতীর্ণ করার তা অবতীর্ণ করিলেন। [১৬৯৪, ১৬৯৫] (আঃপ্রঃ ৩৮৬৩, ইঃফাঃ ৩৮৬৬)

৪১৮১

উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি মারওয়ান ইবনু হাকাম এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) উভয়কে হুদাইবিয়াহর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর উমরাহ আদায় করার ঘটনা বর্ণনা করিতে শুনেছেন। তাঁদের থেকে উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমার (মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম ইবনু শিহাব) নিকট যা বর্ণনা করছেন তা হচ্ছে এই যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ সুহায়ল ইবনু আমরকে হুদাইবিয়াহর দিন সন্ধিনামায় যা লিখিয়েছিলেন তার মধ্যে সুহায়ল ইবনু আমরের শর্তগুলোর একটি শর্ত ছিল এইঃ আমাদের থেকে যদি কেউ আপনার কাছে চলে যায় তাকে আমাদের কাছে ফেরত দিতে হইবে যদিও সে আপনার ধর্মের উপর থাকে এবং তার ও আমাদের মধ্যে আপনি কোন বাধা সৃষ্টি করিতে পারবেন না। এ শর্ত পূর্ণ করা ছাড়া সুহায়ল রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সঙ্গে সন্ধি করিতেই অস্বীকৃতি জানায়। এ শর্তটিকে মুমিনগণ অপছন্দ করিলেন এবং এতে তারা ক্ষুব্ধ হলেন ও এর বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করিলেন। কিন্তু যখন সুহায়ল এ শর্ত ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সঙ্গে চুক্তি করিতে অস্বীকার করিল তখন এ শর্তের উপরই রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ সন্ধিপত্র লেখালেন এবং আবু জানদাল ইবনু সুহায়ল (রাদি.)-কে ঐ মুহূর্তেই তার পিতা সুহায়ল ইবনু আমরের কাছে ফিরিয়ে দিলেন। সন্ধির মেয়াদকালে পুরুষদের মধ্যে যারাই রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে চলে আসতেন, মুসলিম হলেও তিনি তাদেরকে ফিরিয়ে দিতেন। এ সময় কিছু সংখ্যক মুসলিম মহিলা হিজরাত করে চলে আসেন। উম্মু কুলসুম বিনত উকবাহ ইবনু আবু মুআইত (রাদি.) ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট হিজরাতকারিণী একজন যুবতী মহিলা। তিনি হিজরাত করে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে এসে পৌঁছলে তার পরিবারের লোকেরা নাবী সাঃআঃ-এর নিকট এসে তাঁকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানালো। এ সময় আল্লাহ তাআলা মুমিন মহিলাদের সম্পর্কে যা অবতীর্ণ করার তা অবতীর্ণ করিলেন। [১৬৯৪, ১৬৯৫] (আঃপ্রঃ ৩৮৬৩, ইঃফাঃ ৩৮৬৬)

৪১৮২

বর্ণনাকারী ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমাকে উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন যে, নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশাহ (রাদি.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) নিম্নোক্ত আয়াতের নির্দেশ মোতাবেক হিজরতকারিণী মুমিন মহিলাদেরকে পরীক্ষা করিতেন। আয়াতটি হল এইঃ হে নাবী! মুমিন মহিলাগণ যখন আপনার কাছে বাইআত করে …. শেষ পর্যন্ত-(সুরাহ আল-মুমতাহিনাহ ৬০/১২)। (অন্য সানাদে) ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাদের কাছে এ বিবরণও পৌঁছেছে যে, যখন আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে মুশরিক স্বামীর তরফ থেকে হিজরাতকারিণী মুমিনা স্ত্রীকে দেয়া মুহরানা মুশরিক স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর আবু বাসীর (রাদি.)-এর ঘটনা সম্পর্কিত হাদীসও আমাদের কাছে পৌঁছেছে। অতঃপর তিনি তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করিলেন। [২৭১৩] (আ.প্র. ৩৮৬৩, ই.ফা. ৩৮৬৬)

৪১৮৩

নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

ফিতনার সময় (হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফের মাক্কাহ আক্রমণের সময়) আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) উমরাহর ইহরাম বেঁধে রওয়ানা হয়ে বলিলেন, যদি আমাকে বাইতুল্লাহয় যেতে বাধা দেয়া হয় তাহলে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে আমরা যা করেছিলাম তাই করব। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যেহেতু হুদাইবিয়াহর বছর উমরাহর ইহরাম বেঁধে রওয়ানা করেছিলেন তাই তিনিও উমরাহর ইহরাম বেঁধে রওয়ানা করিলেন। [১৬৩৯] (আ.প্র. ৩৮৬৪, ই.ফা. ৩৮৬৭)

৪১৮৪

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

(ফিতনার বছর) তিনি উমরাহর ইহরাম বেঁধে বলিলেন, যদি আমার আর তার (বাইতুল্লাহর) মধ্যে কোন বাধা সৃষ্টি করা হয় তাহলে কুরাইশ কাফিররা বাইতুল্লাহয় যেতে বাধা সৃষ্টি করলে নাবী (সাঃআঃ) যা করেছিলেন আমিও তাই করব, আর তিনি তিলাওয়াত করিলেন, لَقَدْ كاَنَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ “তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর মাঝে আছে উত্তম আদর্শ”-(সুরাহ আহযাব ৩৩/২১)। [১৬৩৯] (আ.প্র. ৩৮৬৫, ই.ফা. ৩৮৬৮)

৪১৮৫

নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ (রাদি.)-এর কোন ছেলে তাঁকে [আবদুল্লাহ (রাদি.)-কে] বলিলেন, এ বছর আপনি মক্কায় যাওয়া স্থগিত রাখলে ভাল হত। কারণ আমি আশঙ্কা করছি যে, আপনি বাইতুল্লাহয় যেতে পারবেন না। তখন আবদুল্লাহ (রাদি.) বলিলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে রওয়ানা হয়েছিলাম। পথে কুরাইশ কাফিররা বাইতুল্লাহয় যেতে বাধা দিলে নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর কুরবানীর পশুগুলো যবহ করে মাথা কামিয়ে ফেলেন। সাহাবীগণ চুল ছাঁটেন। এরপর তিনি বলিলেন আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমার জন্য উমরাহ করা আমি ওয়াজিব করে নিয়েছি। যদি আমার ও বাইতুল্লাহর মধ্যে বাধা সৃষ্টি করা না হয় তাহলে আমি বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করব। আর যদি আমার ও বাইতুল্লাহর মাঝে বাধা সৃষ্টি করা হয় তাহলে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যা করিয়াছেন আমি তাই করব। এরপর তিনি কিছুক্ষণ পথ চলে বলিলেন, আমি হাজ্জ এবং উমরাহ একই মনে করি। আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আমার হাজ্জকেও উমরাহর সঙ্গে আমার জন্য ওয়াজিব করে নিয়েছি। এরপর তিনি উভয়ের জন্য একই তওয়াফ এবং একই সায়ী করিলেন এবং হাজ্জ ও উমরাহর ইহরাম খুলে ফেললেন। [১৬৩৯] (আ.প্র. ৩৮৬৬, ই.ফা. ৩৮৬৯)

৪১৮৬

নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, লোকেরা বলাবলি করে যে, ইবনু উমার (রাদি.) উমার (রাদি.)-এর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করিয়াছেন। ব্যাপার এমন নয়। তবে (মূল ঘটনা ছিল যে,) হুদাইবিয়াহর দিন উমার (রাদি.) (তাহাঁর পুত্র) আবদুল্লাহ (রাদি.)-কে এক আনসারী সহাবার কাছে রাখা তাহাঁর ঘোড়াটি আনার জন্য পাঠিয়েছিলেন, যাতে তিনি এতে চড়ে লড়াই করিতে পারেন। এদিকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) গাছের নিকট বাইআত গ্রহণ করছিলেন। তা উমার (রাদি.) জানতেন না। আবদুল্লাহ (রাদি.) তখন বাইআত গ্রহণ করে ঘোড়াটি আনার জন্য গেলেন এবং ঘোড়াটি নিয়ে উমার (রাদি.)-এর কাছে আসলেন। এ সময় উমার (রাদি.) যুদ্ধের পোশাক পরিধান করছিলেন। তখন আবদুল্লাহ (রাদি.) তাঁকে জানালেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বৃক্ষতলে বাইআত গ্রহণ করছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন উমার (রাদি.) তাহাঁর [আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.)] সঙ্গে গেলেন এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট বাইআত গ্রহণ করিলেন। এ হল ব্যাপার যার জন্য লোকেরা এ কথা বলাবলি করছে যে, ইবনু উমার (রাদি.) উমার (রাদি.)-এর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করিয়াছেন। [৪৪] [৩৯১৬] (আ.প্র. ৩৮৬৭, ই.ফা. ৩৮৭০)

[৪৪] আসলে হুদাইবিয়াতে যে বাইআত গ্রহণ করা হয়েছিল সেখানে উমার (রাদি.)-এর পূর্বে আবদুল্লাহ ইবনু উমার বাইআত গ্রহণ করেছিলেন। এ ঘটনাটি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে, অনেকে মনে করিতে থাকে যে, পিতার পূর্বে পুত্র ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কথাটি আদৌ সত্য নয়।

৪১৮৭

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

হুদাইবিয়াহর দিন নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে লোকজন বিভিন্ন গাছের ছায়ায় ছড়িয়ে গিয়েছিলেন। এক সময় তাঁরা নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে ভিড় করেছিলেন। তখন উমার (রাদি.) বলিলেন, ওহে আবদুল্লাহ! দেখতো মানুষের কী হয়েছে? তাঁরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে ভিড় করেছে কেন? ইবনু উমার (রাদি.) দেখলেন যে, তাঁরা বাইআত গ্রহণ করছেন। তাই তিনিও বাইআত গ্রহণ করিলেন। এরপর উমার (রাদি.)-এর কাছে ফিরে আসলেন। তখন উমার (রাদি.) রওয়ানা করিলেন এবং বাইআত নিলেন। [৩১৯৬] (আ.প্র. ৩৮৬৭, ই.ফা. ৩৮৭০)

৪১৮৮

আবদুল্লাহ ইবনু আবু আওফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যখন উমরাহ আদায় করেন তখন আমরাও তাহাঁর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তওয়াফ করলে আমরাও তাহাঁর সঙ্গে তওয়াফ করলাম। তিনি সলাত আদায় করলে আমরাও তাহাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। তিনি সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করিলেন। আমরা তাঁকে আড়াল করে রাখতাম মক্কাবাসীদের কেউ যাতে কোন কিছু দ্বারা তাঁকে আঘাত করিতে না পারে। [১৬০০] (আ.প্র. ৩৮৬৮, ই.ফা. ৩৮৭১)

৪১৮৯

আবু হাসীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু ওয়াইল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন যে, সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাদি.) যখন সিফ্‌ফীন যুদ্ধ থেকে ফিরলেন তখন যুদ্ধের খবরাখবর জানার জন্য আমরা তাহাঁর কাছে আসলে তিনি বলিলেন, নিজেদের মতামতকে সন্দেহমুক্ত মনে করিবে। আবু জানদাল (রাদি.)-এর ঘটনার [৪৫] দিন আমি আমাকে (আল্লাহর পথে) দেখিতে পেয়েছিলাম। সেদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর আদেশ আমি উপেক্ষা করিতে পারলে উপেক্ষা করতাম। কিন্তু আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলই অধিক জানেন। আর কোন দুঃসাধ্য কাজের জন্য আমরা যখন তরবারি হাতে নিয়েছি তখন তা আমাদের জন্য অত্যন্ত সহজসাধ্য হয়ে গেছে। এ যুদ্ধের পূর্বে আমরা যত যুদ্ধ করেছি তার সবগুলোকে আমরা নিজেদের জন্য কল্যাণকর মনে করেছি। কিন্তু এ যুদ্ধের অবস্থা এই যে, আমরা একটি সমস্যা সামাল দিতে না দিতেই আরেকটি নতুন সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু কোন সমাধানের পথ আমাদের জানা নেই। [৩১৮১] (আ.প্র. ৩৮৬৯, ই. ফা ৩৮৭২)

[৪৫] হুদাইবিয়ার সন্ধিপত্র লেখা শেষ হলে উভয় পক্ষ হইতে তাতে স্বাক্ষর করিল। ঠিক এ সময়ে এক কাণ্ড ঘটলো। মাক্কাহ হইতে সুহায়লের পুত্র আবু জানদাল শিকল পরা অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে উপস্থিত হলো। ইসলাম গ্রহণ করায় দীর্ঘদিন যাবত তার উপর অত্যাচার চলছিল। আবু জানদালকে দেখে সুহাইল বলে উঠলো মুহাম্মাদ! এইবার আপনার আন্তরিকতার পরীক্ষা উপস্থিত। সন্ধির শর্তানুসারে আপনি এখন আবু জানদালকে আমাদের নিকট ফিরিয়ে দিতে বাধ্য। “

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলিলেন, “নিশ্চয় আমি আমার কর্তব্য পালন করবো। ” এই বলে তিনি আবু জানদালকে বুঝিয়ে মাক্কাহয় ফিরে যেতে আদেশ দিলেন। সে কী করুণ দৃশ্য। আবু জানদাল নিজের শরীরের ক্ষতগুলো দেখিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মুসলিমদেরকে বলিলেন, “আজ আমাকে কুরায়শদের হাতে সমর্পণ করা হচ্ছে। সেখানে ধর্মচ্যুত করার জন্য আমার উপর আবার এহেন অত্যাচার করা হইবে। “

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু জানদালকে গভীর বেদনাযুক্ত গম্ভীর স্বরে বলিলেন, “আবু জানদাল, তোমার পরীক্ষা খুবই কঠিন, ধৈর্য ধারণ কর, আল্লাহর নামে শক্তি সঞ্চয় কর। সব কিছু সহ্য করে নাও। তোমার ও তোমার ন্যায় উৎপীড়িত মুসলিমদের জন্য আল্লাহ শীঘ্রই উপায় করে দিবেন-(বুখারী বাবুশ শরুত ফিল জিহাদ, হাদীস নং ২৭৩৪) । আমরা এইমাত্র সন্ধি করেছি, তার অমর্যাদা করা অসম্ভব। ” অতঃপর আবু জানদালকে কুরায়শদের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হলো।

আবু জানদালের অত্যাচার দেখে মুসলিমদের মনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় কিন্তু নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশে ধৈর্য ধারণ করেন। আবু জানদাল কারাগারে পৌঁছে দ্বীন প্রচারের কাজ শুরু করেন। যে কেউই তাকে পাহারা দেয়ার কাজে আদিষ্ট হতো তাকে তিনি তাওহীদের দাওয়াত দিতেন এবং আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার বর্ণনা দিয়ে ঈমানের পথ প্রদর্শন করিতেন। আল্লাহর কী অপার মহিমা সে পাহারাদার লোকটিও মুসলিম হইতে যেতো এবং তাকেও বন্দী করা হতো। এভাবে ফল দাঁড়ালো এই যে, তাহাঁর দাওয়াতে আল্লাহর অশেষ রাহমতে প্রায় তিনশত লোক ঈমান আনলেন। (রহমাতুল লিল আলামীন-আল্লামা কাযী মুহাম্মাদ সুলাইমনা মানসূর পূরী)

৪১৯০

কাব ইবনু উজরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হুদাইবিয়াহর সময় নাবী (সাঃআঃ) আমার কাছে আসলেন। সে সময় আমার মুখমণ্ডলে উকুন ঝরে পড়ছিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমার মাথার উকুন তোমাকে কি কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বলিলেন, তুমি মাথা ন্যাঁড়া করে ফেল। আর এ জন্য তিনদিন সওম পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াও অথবা একটি পশু কুরবানী কর। আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এগুলোর কোনটি প্রথমে বলেছিলেন তা আমি জানি না। [১৮১৪] (আ.প্র. ৩৮৭০, ই.ফা. ৩৮৭৩)

৪১৯১

কাব ইবনু উজরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হুদাইবিয়াহর মুহরিম অবস্থায় আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। মুশরিকররা আমাদেরকে আটকে রেখেছিল। কাব ইবনু উজরাহ (রাদি.) বলেন, আমার কান পর্যন্ত বাবরী চুল ছিল। (মাথার) উকুনগুলো আমার মুখমণ্ডলের উপর ঝরে ঝরে পড়ছিল। এ সময় নাবী (সাঃআঃ) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বলিলেন, তোমার মাথার উকুনগুলো তোমাকে কি কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। কাব ইবনু উজরাহ (রাদি.) বলেন, এরপর আয়াত অবতীর্ণ হল, “তোমাদের মধ্যে কেউ যদি পীড়িত হয় কিংবা তার মাথায় ক্লেশ থাকলে সওম কিংবা সাদকাহ কিংবা কুরবানীর দ্বারা তার ফিদাইয়া আদায় করিবে”-(সুরাহ আল-বাকারা ১৯৬) [১৮১৪] (আ.প্র. ৩৮৭১, ই.ফা. ৩৮৭৪)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply