যাতুর রিকা যুদ্ধ
যাতুর রিকা যুদ্ধ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬৪, মাগাযী, অধ্যায়ঃ ৩২
৬৪/৩২. অধ্যায়ঃ যাতুর রিকা-র যুদ্ধ
গাতফানের শাখা গোত্র বনু সালাবার অন্তর্ভূক্ত খাসাফার বংশধর মুহারিব গোত্রের সঙ্গে এ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) নাখলা নামক স্থানে অবতরণ করেছিলেন। খায়বার যুদ্ধের পর এ যুদ্ধ হয়েছিল। কেননা আবু মূসা (রাদি.) খায়বার যুদ্ধের পর (হাবশা থেকে) এসেছিলেন।
৪১২৫
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) সপ্তম যুদ্ধ তথা যাতুর রিকার যুদ্ধে তাহাঁর সাহাবীগণকে নিয়ে সলাতুল খাওফ আদায় করিয়াছেন। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) যূকারাদ [৪০]-এর যুদ্ধে সলাতুল খাওফ আদায় করিয়াছেন। [৪১২৬, ৪১২৭, ৪১৩০, ৪১৩৭] (আ.প্র. অনুচ্ছেদ, ই.ফা. অনুচ্ছেদ)
[৪০] মাদীনাহর অনতিদূরে গাতফান এলাকার নিকটস্থ একটি স্থানের নাম।
৪১২৬
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
মুহারিব ও সালাবা গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় নাবী (সাঃআঃ) সহাবীবর্গকে সঙ্গে নিয়ে সলাতুল খাওফ আদায় করিয়াছেন। [৪১২৫] (আ.প্র. অনুচ্ছেদ, ই.ফা. অনুচ্ছেদ)
৪১২৭
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) নাখলা নামক স্থান থেকে যাতুর রিকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে গাতফান গোত্রের একটি দলের সম্মুখীন হন। কিন্তু সেখানে কোন যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। উভয় পক্ষ পরস্পর ভীতি প্রদর্শন করেছিল মাত্র। তখন নাবী (সাঃআঃ) দুরাকআত সলাতুল খাওফ আদায় করেন। ইয়াযীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সালামাহ (রাদি.) থেকে বর্ণনা করে বলেছেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে যূকারাদ-এর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। [৪১২৫; মুসলিম ৬/৫৭, হাদীস ৮৪৩] (আ.প্র. অনুচ্ছেদ. ই.ফা. অনুচ্ছেদ)
৪১২৮
আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন যুদ্ধে আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বের হলাম। আমরা ছিলাম ছয়জন। আমাদের কাছে ছিল মাত্র একটি উট। পালাক্রমে আমরা এর পিঠে চড়তাম। (হেঁটে হেঁটে) আমাদের পা ফেটে যায়। আমার পা দুখানাও ফেটে গেল, নখগুলো খসে পড়ল। এ কারণে আমরা পায়ে নেকড়া জড়িয়ে নিলাম। এ জন্য একে যাতুর রিকা যুদ্ধ বলা হয়। কেননা এ যুদ্ধে আমরা আমাদের পায়ে নেকড়া দিয়ে পট্টি বেধেঁছিলাম। আবু মূসা (রাদি.) উক্ত ঘটনা বর্ণনা করিয়াছেন। পরবর্তীকালে তিনি এ ঘটনা বর্ণনা করাকে অপছন্দ করেন। তিনি বলেন, আমি এভাবে বর্ণনা করাকে ভাল মনে করি না। সম্ভবত তিনি তার কোন আমল প্রকাশ করাকে অপছন্দ করিতেন। [মুসলিম ৩২/৫০, হাদীস ১৮১৬] (আ.প্র. ৩৮১৮, ই.ফা. ৩৮২১)
৪১২৯
সালিহ ইবনু খাওয়াত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এমন একজন সহাবী থেকে বর্ণনা করেন যিনি যাতুর রিকার যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে সলাতুল খাওফ আদায় করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, একদল লোক রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে কাতারে দাঁড়ালেন এবং অপর দলটি থাকলেন শত্রুর সম্মুখীন। এরপর তিনি তার সঙ্গে দাঁড়ানো দলটি নিয়ে এক রাকআত সলাত আদায় করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। মুক্তাদীগণ তাদের সলাত পূর্ণ করে ফিরে গেলেন এবং শত্রুর সম্মুখে সারিবদ্ধ হয়ে বসে থাকলেন। এরপর মুক্তাদীগণ তাদের সলাত সম্পূর্ণ করলে তিনি তাদের নিয়ে সালাম ফিরালেন। [মুসলিম ৬/৫৭, হাদীস ৮৪২] (আ.প্র. ৩৮১৯, ই.ফা. ৩৮২২)
৪১৩০
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, আমরা নাখলা নামক স্থানে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। এরপর জাবির (রাদি.) সলাতুল খাওফের কথা উল্লেখ করেন। এ হাদীসের ব্যাপারে ইমাম মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, সলাতুল খাওফ সম্পর্কে আমি যত হাদীস শুনিয়াছি এর মধ্যে এ হাদীসটিই সবচেয়ে উত্তম। [৪১২৫]
লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) …….. কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (রাদি.) থেকে নাবী (সাঃআঃ) গাযওয়ারে বনু আনমারে সলাতুল খাওফ আদায় করিয়াছেন।
এই বর্ণনায় মুআয (রাদি.)-এর অনুসরণ করিয়াছেন। (আ.প্র. ৩৮১৯, ই.ফা. ৩৮২২)
৪১৩১
সাহল ইবনু আবু হাসমাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (সলাতুল খাওফে) ইমাম কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াবেন। একদল থাকবেন তাহাঁর সঙ্গে এবিং অন্যদল শত্রুদের মুখোমুখী হয়ে তাদের মুকাবিলায় দাঁড়িয়ে থাকবেন। তখন ইমাম তাহাঁর পেছনের একদল নিয়ে এক রাকআত সলাত আদায় করেবেন। এরপর সলাতরত দলটি নিজ স্থানে দাঁড়িয়ে রুকূ ও দু সাজদাহসহ আরো এক রাকআত সলাত আদায় করে ঐ দলের স্থানে গিয়ে দাঁড়াবেন। এরপর তারা এলে ইমাম তাদের নিয়ে এক রাকআত সলাত আদায় করবেন। এভাবে ইমামের দুরাকআত সলাত পূর্ণ হয়ে যাবে। আর পিছনের লোকেরা রুকূ সাজদাহসহ আরো এক রাকআত সলাত আদায় করবেন। (আ.প্র. ৩৮২০, ই.ফা. ৩৮২৩)
সাহল ইবনু আবু হাসমা (রাদি.) সুত্রে নাবী (সাঃআঃ) একইভাবে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। (আ.প্র. ৩৮২১, ই.ফা. ৩৮২৪)
সাহল (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে পূর্ব বর্ণিত হাদীসটির ন্যায় বর্ণনা করিয়াছেন। [মুসলিম ৬/৫৭, হাদীস ৮৪১] (আ.প্র. ৩৮২২, ই.ফা. ৩৮২৫)
৪১৩২
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে নাজ্দ এলাকায় যুদ্ধ করেছি। এ যুদ্ধে আমরা শত্রুদের মুকাবালা করেছিলাম এবং তাদের সম্মুখে কাতারে দাঁড়িয়েছিলাম। [৯৪২] (আ.প্র. ৩৮২৩, ই.ফা. ৩৮২৬)
৪১৩৩
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) একদল সঙ্গে নিয়ে সলাত আদায় করিয়াছেন। অন্যদেরকে রেখেছেন শত্রুর মুকাবালায়। তারপর সলারত দলটি এক রাকআত আদায় করে তাঁরা শত্রুর মুকাবালায় নিজ সাথীদের স্থানে চলে গেলেন। অতঃপর অন্য দলটি আসলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদেরকে নিয়ে এক রাকআত সলাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। এরপর তাঁরা তাদের বাকী রাকআতটি পূর্ণ করিলেন। [৯৪২] (আ.প্র. ৩৮২৪, ই.ফা. ৩৮২৭)
৪১৩৪
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাজ্দ এলাকায় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়াছেন। [২৯১০] (আ.প্র. ৩৮২৫, ই.ফা. ৩৮২৮)
৪১৩৫
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাজ্দ এলাকায় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে যদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধ শেষে রাসুলল্লাহ (সাঃআঃ) প্রত্যাবর্তন করলে তিনিও তার সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করিলেন। পথিমধ্যে কাঁটা গাছ ভরা এক উপত্যকায় মধ্যহ্নের সময় তাঁদের ভীষণ গরম অনুভূত হল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এখানেই অবতরণ করিলেন। লোকজন ছায়াদার বৃক্ষের খোঁজে কাঁটাবনের মাঝে ছড়িয়ে পড়ল। এদিকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) একটি বাবলা গাছের নিচে অবস্থান করে তরবারিখানা গাছে ঝুলিয়ে রাখলেন। জাবির (রাদি.) বলেন, সবেমাত্র আমরা নিদ্রা গিয়েছি। এমন সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদেরকে ডাকতে লাগলেন। আমরা তাহাঁর কাছে উপস্থিত হলাম। তখন তাহাঁর কাছে এক বেদুঈন বসা ছিল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি নিদ্রিত ছিলাম, এমতাবস্থায় সে আমার তরবারিখানা হস্তগত করে কোষমুক্ত অবস্থায় তা আমার উপর উঁচিয়ে ধরলে আমি জেগে যাই। তখন সে আমাকে বলিল, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে? আমি বললাম, আল্লাহ! দেখ না, এ-ই তো সে বসে আছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে কোন প্রকার শাস্তি দিলেন না। [২৯১০; মুসলিম ৬/৫৭, হাদীস ৮৪৩] (আ.প্র. ৩৮২৫, ই.ফা. ৩৮২৮)
৪১৩৬
আবান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যাতুর রিকার যুদ্ধে আমরা নাবী (সাঃআঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা একটি ছায়াদার বৃক্ষের কাছে গিয়ে পৌঁছালে নাবী (সাঃআঃ)-এর জন্য আমরা তা ছেড়ে দিলাম। এমন সময় এক মুশরিক ব্যক্তি এসে গাছের সঙ্গে লটকানো নাবী (সাঃআঃ)-এর তরবারীখানা হাতে নিয়ে তা তাহাঁর উপর উঁচিয়ে ধরে বলিল, তুমি আমাকে ভয় পাও কি? তিনি বলিলেন, না। এরপর সে বলিল, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করিবে কে? তিনি বলিলেন, আল্লাহ। এরপর নাবী (সাঃআঃ)-এর সহাবীগন তাকে ধমক দিলেন। এরপর সলাত আরাম্ভ হলে তিনি সহাবীদের একটি দলকে নিয়ে দুরাকআত সলাত আদায় করিলেন। তারা এখান থেকে সরে গেলে অপর দলটি নিয়ে তিনি আরো দুরাকআত সলাত আদায় করেলেন। এভাবে নাবী (সাঃআঃ)-এর হল চার রাকআত এবং সহাবী হল দুরাকআত সলাত। (অন্য এক সূত্রে) মুসাদ্দাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ……. আবু বিশর (রাদি.) হইতে বর্ণিত যে, নাবী (সাঃআঃ)-এর প্রতি যে লোকটি তলোয়ার উঁচু করেছিল তার নাম গাওরাস ইবনু হারিস। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ অভিযানে খাসাফার বংশধর মুহারিব গোত্রের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। [২৯১০] (আ.প্র. ৩৮২৫, ই.ফা. ৩৮২৮)
৪১৩৭
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, নাখল নামক স্থানে আমরা নাবী (সাঃআঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি এ সময় সলাতুল খাওফ আদায় করিয়াছেন। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, নাজদের যুদ্ধে আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে সলাতুল খাওফ আদায় করেছি। আবু হুরাইরা (রাদি.) খায়বার যুদ্ধের সময় নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এসেছিলেন। (৪১২৫; মুসলিম ৬/৫৭, হাদীস ৮৪৩) (আ.প্র. ৩৮২৫, ই.ফা. ৩৮২৮)
Leave a Reply