খন্দকের যুদ্ধের ঘটনা – এ যুদ্ধকে আহযাবের যুদ্ধ ও বলা হয়

খন্দকের যুদ্ধের ঘটনা – এ যুদ্ধকে আহযাবের যুদ্ধ ও বলা হয়

খন্দকের যুদ্ধের ঘটনা – এ যুদ্ধকে আহযাবের যুদ্ধ ও বলা হয় >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬৪, মাগাযী, অধ্যায়ঃ (৩০-৩১)=২টি

৬৪/৩০. অধ্যায়ঃ খন্দকের যুদ্ধ [৩৬]। এ যুদ্ধকে আহযাবের যুদ্ধ ও বলা হয়
৬৪/৩১. অধ্যায়ঃ আহযাব নাবী (সাঃআঃ)-এর প্রত্যাবর্তন এবং তাহাঁর বনূ কুরাইযাহ অভিযান ও তাদের অবরোধ

৬৪/৩০. অধ্যায়ঃ খন্দকের যুদ্ধ [৩৬]। এ যুদ্ধকে আহযাবের যুদ্ধ ও বলা হয়

মূসা ইবনু উকবাহ (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন যে, এ যুদ্ধ ৪র্থ হিজরী সনের শাওয়াল মাসে হয়েছিল।

[৩৬] মুসলিমদের সামরিক তৎপরতা চালানোর ফলে জাজিরাতুল আরাবে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। চারিদিকে মুসলিমদের প্রভাব প্রতিপত্তির বিস্তার ঘটে। এ সময় ইয়াহুদীরা তাদের ঘৃন্য আচরণ, ষড়যন্ত্র, এবং বিশ্বাসঘাতকতার নানা ধরনের অবমাননা ও অসম্মানের সম্মুখীন হয়। কিন্তু তবু তাদের আকল হয়নি। খায়বারে নির্বাসনের পর ইয়াহুদীরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে, কিন্তু উত্তরোত্তর দূর দূরান্তে ইসলামের জয়জয়কার ছড়িয়ে পড়ার ফলে ইয়াহুদীরা হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছারখার হইতে লাগল। হিজরী পঞ্চম সনের ঘটনা। যেহেতু বনু নাযীর খায়বারে নির্বাসিত হয়েও নিশ্চুপে বসে ছিল না সেহেতু তারা মুসলিমদের মুলোৎপাটনের জন্য এক সম্মলিত চেষ্টা চালাবার দৃঢ় সংকল্প করেছিল, যার মধ্যে আরবের সমস্ত গোত্র-উপগোত্রের বীর যোদ্ধা শামিল থাকে।

তারা বিশ জন নেতার উপর এই দায়িত্ব অর্পন করে যে, তারা সমস্ত গোত্রকে আক্রমণের জন্যে উত্তেজিত করিবে। এই চেষ্টার ফল এই দাঁড়াল যে, হিজরী পঞ্চম সনের যুলকাদাহ মাসে (যাদুল মাআদ, ১ম খন্ড, ৩৬৭ পৃষ্ঠা) দশ হাজার রক্ত পিপাসু সৈন্য, যাদের মধ্যে মূর্তিপূজক, ইয়াহুদী প্রভৃতি সবাই শামিল ছিল, মাদীনাহ্র উপর আক্রমণ করে। কুরআন মাজীদে এই যুদ্ধের নাম হচ্ছে আহযাবের যুদ্ধ। যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী গোত্রগুলি হলঃ

১। কুরাইশ, বানু কিনানাহ, আহলে তিহামাহ, -সেনাপতি সুফইয়ান ইবনু র্হাব।

২। বানু ফাযারাহ-সেনাপতি উকবা ইবনু হুসায়ন।

৩। বানু মুররাহ-সেনাপতি হারিস ইবনু আওফ।

৪। বানু আশজা ও আহলি নাজদ-সেনাপতি মাসউদ ইবনু দাখীলা।

মুসলিমরা যখন দেখলেন যে, এই সেনাবাহিনীর সাথে মুকাবালা করার শক্তি তাদের নেই তখন তারা শহরের চতুর্দিকে খন্দক খনন করিলেন। দশ দশজন লোক চল্লিশ গজ করে খন্দক খনন করেছিলেন। (তবারী, ২য় খন্ড)

মুসলিমদের সংখ্যা ছিল মাত্র তিন হাজার। ইসলামী সেনাবাহিনী মাদীনাহর ভিতরেই এভাবে অবস্থান করিলেন যে, সামনে ছিল খন্দক এবং পিছনে ছিল সালা (যাদুল মাআদ, ৩৬৭ পৃষ্ঠা) পর্বত। আর ইয়াহুদী, বানু কুরাইযাহ-যারা মাদীনাহয় বসবাস করতো এবং যাদের চুক্তি অনুযায়ী মুসলিমদের সাথে যোগ দেয়া একান্ত যরুরী ছিল-তাদের সাথে রাত্রির অন্ধাকারে বানূ নাযীর ইয়াহুদীদের নেতা হুইয়াই ইবনু আখতাব মিলিত হলো এবং চুক্তি ভঙ্গ করার জন্যে উত্তেজিত করে নিজের দিকে ডেকে নিলো। রাসুল (সাঃআঃ) তাদেরকে বুঝাবার জন্যে নিজের কয়েকজন দলপতিকে তাদের নিকট বার বার প্রেরণ করিলেন। কিন্তু তারা পরিষ্কারভাবে বরে দিলোঃ “মুহাম্মদ (সাঃআঃ) কে যে, আমরা তাহাঁর কথা মেনে চলবো? তাহাঁর সাথে আমাদের কোনই চুক্তি ও অঙ্গীকার নেই। (ইবনু হিশাম, ২য় খন্ড, ১৪১ পৃষ্ঠা)

এরপর বানূ কুরাইযাহ শহরের নিরাপত্তায় বাধা সৃষ্টি করিল এবং মুসলিম মহিলা ও শিশুদেরকে বিপদে ফেলে দিল। সুতরাং বাধ্য হয়ে তিন হাজার মুসলিম সৈন্যের মধ্য হইতেও একটি অংশকে শহরের সাধারণ নিরাপত্তা রক্ষার জন্যে পৃথক করিতে হলো। বানূ কুরাইযাহ মনে করেছিল যে, যখন বাহির হইতে শত্রু পক্ষের দশ হাজার বীর যোদ্ধার আক্রমণ সংঘটিত হইবে এবং তারা শহরের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা ছড়িয়ে দিয়ে মুসলিমদের নিরাপত্তা নষ্ট করে দিবে তখন দুনিয়ায় মুসলিমদের নাম নিশানা ও বাকী থাকবে না।

নাবী (সাঃআঃ) যেহেতু স্বাভাবিক যুদ্ধকে ঘৃনার চোখে দেখিতেন, সেহেতু তিনি সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করিলেন যে, উৎপাদিত ফলের এক তৃতীয়াংশ প্রদানের শর্তে আক্রমনমুখী গাতফান নেতৃবর্গের সাথে সন্ধি করে নেয়া হোক। কিন্তু আনসার দল যুদ্ধকেই প্রাধান্য দিলেন। সাদ ইবনু মুআয (রাদি.) এবং সাদ ইবনু উবাইদাহ (রাদি.) এই প্রস্তুতি সম্পর্কে ভাষন দিতে গিয়ে বলেনঃ “যে সময় প্রদান করিনি। আর আজ যখন মহান আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় দান করিয়াছেন তখন কী করে আমরা তাদেরকে আমাদের উৎপাদিত ফলের এক তৃতীয়াংশ প্রদান করিতে পারি? তাদের জন্যে আমাদের কাছে তরবারি ছাড়া কিছুই নেই।” আক্রমণকারী সৈন্যদের অবরোধ এক মাস বা এক মাসের কাছাকাছি পর্যন্ত ছিল। মাঝে মাঝে দুএকটি খন্ডযুদ্ধও সংঘটিত হয়। আমর ইবনু আবদে ওদ, যে নিজেকে এক হাজার বীর পুরুষের সমান মনে করতো, আল্লাহর সিংহ, আলীর (রাদি.) হাতে নিহত হয়।

নওফিল ইবনু আবুদিল্লাহ ইবনু মুগীরাও মুকাবালায় মারা যায়। মক্কাবাসীরা নওফিলের মৃতদেহ নেয়ার জন্যে দশ হাজার দিরহাম মুসলিমদের সামনে পেশ করে। রাসুল (সাঃআঃ) সাহাবীদেরকে বলেনঃ “মৃতদেহ দিয়ে দাও, মুল্যের প্রয়োজন নেই।” (ইবনু হিশাম।)

যখন তারা অবরুদ্ধ মুসলিমদের কোনই ক্ষতি সাধন করিতে পারলো না তখন তাদের সাহস হারিয়ে গেল। পৌত্তলিকদের জোটে ভাঙ্গন ধরার পর এবং তাদের মধ্যে হতাশা ও পারস্পরিক অবিশ্বাস সৃষ্টির পর আল্লাহ তাদের উপর ঝড়ো বাতাস পাঠিয়ে দিলেন। বাতাস কাফিরদের সব কিছু তছনছ করে দিল। অবশেষে তারা ময়দান ছেড়ে পালিয়ে গেল।

৪০৯৭

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উহূদ যুদ্ধের দিন তিনি (যুদ্ধের জন্য) নিজেকে পেশ করার পর নাবী (সাঃআঃ) তাকে অনুমতি দেননি। তখন তাহাঁর বয়স ছিল চৌদ্দ বছর। তবে খন্দক যুদ্ধের দিন তিনি নিজেকে পেশ করলে নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে অনুমতি দিলেন। তখন তাহাঁর বয়স পনের বছর।

[২৬৬৪] (আ.প্র. ৩৭৯১ ই.ফা. ৩৭৯৪)

৪০৯৮

সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, পরিখা খননের কাজে আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে অংশ নিয়েছিলাম। তাঁরা পরিখা খুঁড়ছিলেন আর আমরা কাঁধে মাটি বহন করছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দুআ করেছিলেন, হে আল্লাহ! আখিরাতের শান্তি ব্যতীত প্রকৃত কোন শান্তি নেই। আপনি মুহাজির এবং আনসারদেরকে ক্ষমা করে দিন।

[৩৭৯৭] (আ.প্র. ৩৭৯২, ই.ফা. ৩৭৯৫)

৪০৯৯

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বের হয়ে পরিখা খননের স্থানে উপস্থিত হন। আনসার ও মুহাজিরগণ একদিন ভোরে তীব্র শীতের মধ্যে পরিখা খনন করেছিলেন। তাদের কোন গোলাম বা ক্রীতদাস ছিল না যে, তারা তাদেরকে এ কাজে নিয়োগ করবেন। ঠিক এমনি সময়ে নাবী (সাঃআঃ) তাদের মাঝে উপস্থিত হলেন। তাদের অনাহার ক্লিষ্টতা ও কষ্ট দেখে তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! আখিরাতের সুখ শান্তিই প্রকৃত সুখ শান্তি। তুমি আনসার ও মুহাজিরদেরকে ক্ষমা করে দাও। সাহাবীগন এর উত্তরে বলিলেন-

“আমরা সে সব লোক, যারা মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-এর হাতে বাইআত গ্রহন করেছি,

যতদিন আমরা জীবিত থাকি জিহাদের জন্য।”

[২৮৩৪] (আ.প্র. ৩৭৯৩, ই.ফা. ৩৭৯৬)

৪১০০

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আনসার ও মুহাজিরগণ মদীনার চারপাশে খাল খনন করছিলেণ আর পিঠে মাটি বহন করছিলেন। আর (খুশিতে) আবৃত্তি করছিলেন-

“আমরা সে সব লোক, যারা মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-এর হাতে বাইআত গ্রহন করেছি,

যতদিন আমরা জীবিত থাকি জিহাদের জন্য।”

বর্ণনাকারী বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তাদের এ কথার উত্তরে বলিতেন, হে আল্লাহ! আখিরাতের কল্যাণ ব্যতীত আর কোন কল্যাণ নেই, তাই আনসার ও মুহাজিরদের কাজে বারাকাত দান করুন।

বর্ণনাকারী [আনাস (রাদি.)] বর্ণনা করছেন যে, তাদেরকে এক মুষ্টি ভরে যব দেয়া হত। তা বাসি, স্বাদবিকৃত চর্বিতে মিশিয়ে খাবার রান্না করে ক্ষুধার্ত লোকগুলোর সামনে পরিবেশন করা হত। যদিও এ খাদ্য ছিল একেবারে স্বাদহীন ও ভীষন দুর্গন্ধময়।

[২৮৩৪] (আ.প্র. ৩৭৯৪, ই.ফা. ৩৭৯৭)

৪১০১

আইমান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি জাবির (রাদি.) এর নিকট গেলে তিনি বলিলেন, খন্দকের দিন আমরা পরিখা খনন করছিলাম। এ সময় একখন্ড কঠিন পাথর বেরিয়ে আসলে তারা নাবী (সাঃআঃ) এর কাছে এসে বলিলেন, খন্দকের ভিতর একটি শক্ত পাথর বেরিয়েছে। তখন তিনি বলিলেন, আমি নিজে খন্দকে নামব। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন। আর তাহাঁর পেটে একটি পাথর বাঁধা ছিল। আর আমরা ও তিন দিন ধরে অনাহারী ছিলাম। কোন কিছুর স্বাদই চাখিনি। তখন নাবী (সা, ) একখানা কোদাল হাতে নিয়ে পাথরটিকে আঘাত করিলেন। ফলে তৎক্ষনাৎ তা চূর্ণ হয়ে বালুকারাশিতে পরিণত হল। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে বাড়ি যাওয়ার জন্য অনুমতি দিন। (বাড়ি পৌছে) আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, নাবী (সাঃআঃ) এর মধ্যে আমি এমন কিছু দেখলাম যা আমি সহ্য করিতে পারছি না। তোমার নিকট কোন খাবার আছে কি? সে বলিল, আমার কাছে কিছু যব ও একটি বর্কীর বাচ্চা আছে। তখন বাক্রীর বাচ্চাটি আমি যবহ করলাম এবং সে যব পিষে দিল। এরপর গোশত ডেকচিতে দিয়ে আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে আসলাম। এ সময় আটা খামির হচিছল এবং ডেকচি চুলার উপর ছিল ও গোশত প্রায় রান্না হয়ে আসছিল। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার (বাড়ীতে) সামান্য কিছু খাবার আছে। আপনি একজন দুজন সঙ্গে নিয়ে চলুন। তিনি বলিলেন, কী পরিমাণ খাবার আছে? আমি তাহাঁর কাছে সব খুলে বললাম। তিনি বলিলেন, এ-তো অনেক বেশ ভাল। তিনি বলিলেন, তোমার স্ত্রীকে গিয়ে বল, আমি না আসা পর্যন্ত উনান থেকে ডেকচি ও রুটি যেন না নামায়। এরপর তিনি বলিলেন উঠ! মুহাজির ও আনসারগণ উঠলেন। জাবির (রাদি.) তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে বলিলেন, তোমার সর্বনাশ হোক! নাবী (সাঃআঃ) তো মুহাজির, আনসার আর তাঁদের সাথীদের নিয়ে চলে এসেছেন। তিনি (জাবিরের স্ত্রী) বলিলেন, তিনি কি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। এরপর নাবী (সাঃআঃ) (উপস্থিত হয়ে) বলিলেন, তোমরা সকলেই প্রবেশ কর কিন্তু ভিড় করো না। এ বলে তিনি রুটি টুকরো করে এর উপর গোশত দিয়ে সাহাবীগণের মাঝে বিতরণ করিতে শুরু করিলেন। তিনি ডেকচি এবং উনান ঢেকে রেখেছিলেন। এমনি করে তিনি রুটি টুকরো করে হাত ভরে বিতরণ করিতে লাগলেন। এতে সকলে পেট পুরে খাওয়ার পরে ও কিছু বাকী রয়ে গেল। তিনি (জাবিরের স্ত্রীকে) বলিলেন, এ তুমি খাও এবং অন্যকে হাদিয়া দাও। কেননা লোকদের ও ক্ষুধা পেয়েছে। [৩০৭০] (আ.প্র. ৩৭৯৫, ই.ফা. ৩৭৯৮)

৪১০২

জাবির ইবনু আবদূল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন পরিখা খনন করা হচ্ছিল তখন আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে ভীষন ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখিতে পেলাম। তখন আমি আমার স্ত্রীর কাছে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কাছে কোন কিছু আছে কি? আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে দারুন ক্ষুধার্ত দেখেছি। তিনি একটি চামড়ার পাত্র এনে তা থেকে এক সা পরিমাণ যব বের করে দিলেন। আমার বাড়ীতে একটা বাক্রীর বাচ্চা ছিল। আমি সেটি যবহ করলাম। আর সে (আমার স্ত্রী) যব পিষে দিল। আমি আমার কাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে সেও তার কাজ শেষ করিল এবং গোশত কেটে কেটে ডেকচিতে ভরলাম। এর পর আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর কাছে ফিরে চললাম। তখন সে (স্ত্রী) বলিল, আমাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সাহাবীদের নিকট লজ্জিত করবেন না। এরপর আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট গিয়ে চুপে চুপে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আমাদের একটি বাক্রীর বাচ্চা যবহ করেছি এবং আমাদের ঘরে এক সা যব ছিল। তা আমার স্ত্রী পিষে দিয়েছে। আপনি আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আসুন। তখন নাবী (সাঃআঃ) উচ্চৈঃস্বরে সবাইকে বলিলেন, হে পরিখা খননকারীরা! জাবির খানার ব্যবস্থা করেছে। এসো, তোমরা সকলেই চল। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, আমার আসার পূর্বে তোমাদের ডেকচি নামাবে না এবং খামির থেকে রুটিও তৈরী করিবে না। আমি (বাড়ীতে) আসলাম এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সাহাবা-ই-কিরামসহ আসলেন। এরপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট আসলে সে বলিল, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন। আমি বললাম, তুমি যা বলেছ আমি তাই করেছি। এরপর সে রাসুলুল্লাহ এর সামনে আটার খামির বের করে দিলে তিনি তাতে মুখের লালা মিশিয়ে দিলেন, এবং বারাকাতের জন্য দুআ করিলেন। এরপর তিনি ডেকচির কাছে এগিয়ে গেলেন এবং তাতে মুখের লালা মিশিয়ে এরজন্য বারাকাতের দুআ করিলেন। তারপর বলিলেন, রুটি প্রস্তুতকারিণীকে ডাক। সে আমার কাছে বসে রুটি প্রস্তুত করুক এবং ডেকচি থেকে পেয়ালা ভরে গোশত বেড়ে দিক। তবে (উনুন হইতে) ডেকচি নামাবে না। তাঁরা ছিলেন সংখ্যায় এক হাজার। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, তাঁরা সকলেই তৃপ্তি সহকারে খেয়ে বাকী খাদ্য রেখে চলে গেলেন। অথচ আমাদের ডেকচি আগের মতই টগবগ করছিলো আর আমাদের আটার খামির থেকেও আগের মতই রুটি তৈরী হচ্ছিলো। [৩০৭০] (আ., প্র ৩৭৯৬, ই, ফা, ৩৭৯৯)

৪১০৩

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, “যখন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল উচুঁ অঞ্চল ও নীচু অঞ্চল হইতে এবং তোমাদের চক্ষু বিস্ফোরিত হয়েছিল…………..”-(সুরা আল আহযাব ৩৩/১০) তিনি বলেন, এ আয়াতখানা খন্দকের যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। (আ.প্র. ৩৭৯৭, ই, ফা. ৩৮০০)

৪১০৪

বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) খন্দক যুদ্ধের দিন মাটি বহন করেছিলেন। এমনকি মাটি তাহাঁর পেট ঢেকে ফেলেছিল অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) তাহাঁর পেট ধূলোয় আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। এ সময় তিনি বলছিলেনঃ

আল্লাহর কসম! আল্লাহ হিদায়াত না করলে আমরা হিদায়াত পেতাম না,

দান সদাকাহ করতাম না এবং সালাতও আদায় করতাম না।

সুতরাং (হে আল্লাহ!) আমাদের প্রতি রাহমাত অবতীর্ণ করুন

এবং আমাদেরকে শত্রুর সঙ্গে মুকাবালা করার সময় দৃঢ়পদ রাখুন।

নিশ্চয় মক্কাবাসীরা আমাদের প্রতি বিদ্রোহ করেছে।

যখনই তারা ফিতনার প্রয়াস পেয়েছে তখনই আমরা এড়িয়ে গেছি।

শেষের কথাগুলো বলার সময় নাবী (সাঃআঃ) উচ্চৈঃস্বরে “এড়িয়ে গেছি”, “এড়িয়ে গেছি” বলে উঠেছেন। [২৮৩৬] (আ.প্র. ৩৭৯৮, ই.ফা. ৩৮০১)

৪১০৫

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে পূবের বাতাস দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে, আর আদ জাতিকে পশ্চিমা বাতাস দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। [৩৭] [১০৩৫] (আ.প্র. ৩৭৯৯, ই.ফা. ৩৮০২)

[৩৭] কাফিরদের সম্মিলিত বাহিনী যখন মাদীনাহকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল এ্ই আশায় যে, তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখলে তাদের যখন রসদ ফুরিয়ে যাবে তখন তারা এমনিতেই আত্মসমর্পন করিবে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমাতে একদিন রাতের বেলা পশ্চিম দিক থেকে আসা প্রবল মরু ঝড় কাফিরদের তাঁবুর খুটি উপড়ে ফেলে এবং সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেয়। ফলে তারা অবরোধ উঠিয়ে নিয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

৪১০৬

বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আহযাব (খন্দক) যুদ্ধের সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) পরিখা খনন করিয়াছেন। আমি তাঁকে খন্দকের মাটি বহন করিতে দেখেছি। এমনকি ধূলাবালি পড়ার কারণে তার পেটের চামড়া ঢেকে গিয়েছিল। তিনি অধিকতর পশম বিশিষ্ট ছিলেন। সে সময় আমি নাবী (সাঃআঃ) কে মাটি বহন রত অবস্থায় ইবনু রাওয়াহার কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়াছি। তিনি বলছিলেনঃ

হে আল্লাহ! আপনি যদি হিদায়াত না করিতেন তাহলে আমরা হিদায়াত পেতাম না,

আমরা সদাকাহ করতাম না এবং আমরা সালাতও আদায় করতাম না।

সুতরাং আমাদের প্রতি আপনার শান্তি অবতীর্ণ করুন,

এবং দুশমনের সম্মুখীন হওয়ার সময় আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখুন।

অবশ্য মক্কাবাসীরাই আমাদের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছে,

তারা ফিতনা বিস্তার করিতে চাইলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি।

বর্ণনাকারী (বারাআ) বলেন, শেষের কথাগুলি তিনি টেনে আবৃত্তি করছিলেন। [২৮৩৬] (আ.প্র. ৩৮০০, ই.ফা. ৩৮০৩)

৪১০৭

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, প্রথমে যে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম সেটা খন্দকের যদ্ধ ছিল। (আ.প্র. ৩৮০১ ই.ফা. ৩৮০৪)

৪১০৮

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমি হাফসাহ (রাদি.)-এর কাছে গেলাম। সে সময় তাহাঁর চুলের বেণি থেকে ফোঁটা পানি ঝরছিল। আমি তাঁকে বললাম, আপনি দেখছেন, (নেতৃত্বের ব্যাপারে) লোকজন কী সব করছে। নেতৃত্বের কোন অংশই আমার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়নি। তখন তিনি বলিলেন, আপনি তাদের সঙ্গে যোগ দিন। কেননা তাঁরা আপনার অপেক্ষা করছে। আপনি তাদের থেকে পৃথক থাকলে বিচ্ছিন্নতা ঘটতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করছি। হাফসাহ (রাদি.) তাঁকে বলিতেই থাকলেন। শেষে তিনি গেলেন। এরপর লোকজন ওখান থেকে চলে গেলে মুআবিয়াহ (রাদি.) বক্তৃতা করে বলিলেন, ইমারতের ব্যাপারে কারো কিছু বলার ইচ্ছা হলে সে আমাদের সামনে মাথা তুলুক। এ ব্যাপারে আমরাই তাহাঁর ও তাহাঁর পিতার চেয়ে অধিক হাকদার। তখন হাবীব ইবনু মাসলামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাঁকে বলিলেন আপনি এ কথার জবাব দেননি কেন? তখন আবদুল্লাহ (ইবনু উমার) বলিলেন, আমি তখন আমার গায়ের চাদর ঠিক করলাম এবং এ কথা বলার ইচ্ছা করলাম যে, এ বিষয়ে ঐ ব্যক্তি অধিক হাকদার যে ইসলামের জন্য আপনার ও আপনার পিতার বিরুদ্ধে লড়াই করিয়াছেন। তবে আমার এ কথাই ঐক্যৈ ফাটল ধরবে, রক্তপাত ঘটবে এবং আমার এ কথার অন্য রকম অর্থ করা হইবে এ আশঙ্কা করলাম এবং আল্লাহ জান্নাতে যে নিআমাত তৈরি করে রেখেছেন তা স্মরণ করলাম বলে কথা বলা থেকে বিরত থাকলাম। তখন হাবীব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, আপনি (ফিতনা থেকে) রক্ষা পেয়েছন এবং বেঁচে গেছেন। (আ.প্র. ৩৮০২ ই.ফা. ৩৮০৫)

৪১০৯

সুলায়মান ইবনু সুবাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধের দিন নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন যে, এখন আমরা তাদেরকে আক্রমন করব, তারা আমাদের প্রতি আক্রমন করিতে পারবে না। (৪১১০) (আ.প্র. ৩৮০৩, ই.ফা. ৩৮০৬)

৪১১০

সুলাইমান ইবনু সুবাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধের দিন কাফিরদের সম্মিলিত বাহিনী মাদীনাহ ছেড়ে যেতে বাধ্য হলে নাবী (সাঃআঃ)-কে আমি বলিতে শুনিয়াছি যে, এখন থেকে আমরাই তাদেরকে আক্রমন করব। তারা আমাদের উপর আক্রমন করিতে পারবে না। আর আমরা তাদের এলাকায় গিয়ে আক্রমন চালাব। (৪১০৯) (আ.প্র. ৩৮০৪, ই.ফা. ৩৮০৭)

৪১১১

আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, তিনি খন্দকের যুদ্ধের দিন বদদুআ করে বলছিলেন, আল্লাহ তাদের ঘরবাড়ি ও কবর আগুন দ্বারা ভরে দিন। কারণ তারা আমাদেরকে মধ্যবর্তী সলাতের সময় ব্যস্ত করে রেখেছে, এমনকি সূর্য অস্তমিত হয়ে গেছে। (২৯৩১) (আ.প্র. ৩৮০৫, ই.ফা. ৩৮০৮)

৪১১২

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

খন্দকের দিন সূর্যাস্তের পর উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) এসে কুরায়শ কাফিরদের গালি দিতে লাগলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সূর্যাস্তের পূর্বে আমি সালাত আদায় করিতে পারিনি। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আমিও আজ এ সালাত আদায় করিতে পারিনি। [বর্ণনাকারী বলেন!] অতঃপর আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বুতহান উপত্যকায় গেলাম। তিনি সলাতের জন্য উযূ করিলেন। তিনি সূর্যাস্তের পর আসরের সালাত আদায় করিলেন তারপর মাগরিবের সালাত আদায় করিলেন। (৫৯৬) (আ.প্র. ৩৮০৬, ই.ফা. ৩৮০৯)

৪১১৩

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, কুরায়শ কাফিরদের খবর আমাদের নিকট কে এনে দিতে পারবে? যুবায়র (রাদি.) বলিলেন, আমি। তিনি (সাঃআঃ) আবার বলিলেন, কুরায়শদের খবর আমাদের নিকট কে এনে দিতে পারবে? তখনও যুবায়র (রাদি.) বলিলেন, আমি। তিনি (সাঃআঃ) পুনরায় বলিলেন, কুরায়শদের সংবাদ আমাদের নিকট কে এনে দিতে পারবে? এবারও যুবায়র (রাদি.) বলিলেন, আমি। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, প্রত্যেক নাবীরই হাওয়াবী (বিশেষ সাহায্যকারী) ছিল। আমার হাওয়াবী হল যুবায়র। (২৮৪৬) (আ.প্র. ৩৮০৭, ই.ফা. ৩৮১০)

৪১১৪

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) (খন্দকের যুদ্ধের সময়) বলিতেন, এক আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার অর্থে কোন ইলাহ নেই। তিনিই তাহাঁর বাহিনীকে মর্যাদাবান করিয়াছেন, তাহাঁর বান্দাকে সাহায্য করিয়াছেন এবং তিনি একাই সম্মিলিত বাহিনীকে পরাভূত করিয়াছেন। এরপর শত্রু ভয় বলিতে কিছুই থাকল না। (মুসলিম ৪৮/১৮, হাদীস ২৭২৪, আহমাদ ১০৪১১) (আ.প্র. ৩৮০৮, ই.ফা. ৩৮১১)

৪১১৫

আবদুল্লাহ ইবনু আবু আওফা (আঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে দুআ করে বলেছেন, হে কিতাব অবতীর্ণকারী ও তৎপর হিসাব গ্রহণকারী আল্লাহ! আপনি সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করুন। হে আল্লাহ! তাদেরকে পরাজিত এবং তাদেরকে প্রকম্পিত করুন। (২৯৩৩) (আ.প্র. ৩৮০৯, ই.ফা. ৩৮১২)

৪১১৬

আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যুদ্ধ, হাজ্জ, বা উমরাহ থেকে ফিরে আসতেন তখন প্রথমে তিনবার তাকবীর বলিতেন। এরপর বলিতেন, সত্যিকার অর্থে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তাহাঁর কোন শারীক নেই। রাজত্ব এবং প্রশংসা একমাত্র তাহাঁরই। সব বিষয়ে তিনিই সর্বশক্তিমান। আমরা তাহাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাহ্কারী, তাহাঁরই ইবাদাতকারী। আমরা আমাদের প্রভুর কাছে সাজদাহ্কারী, তাহাঁরই প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাহাঁর ওয়াদা সত্যে পরিণত করিয়াছেন। তাহাঁর বান্দাকে সাহায্য করিয়াছেন এবং সম্মিলিত বাহিনীকে পরাভূত করিয়াছেন। (১৭৯৭) (আ.প্র. ৩৮১০, ই.ফা. ৩৮১৩)

৬৪/৩১. অধ্যায়ঃ আহযাব নাবী (সাঃআঃ)-এর প্রত্যাবর্তন এবং তাহাঁর বনূ কুরাইযাহ অভিযান ও তাদের অবরোধ

৪১১৭

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) খন্দক যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে অস্ত্র রেখে গোসল করিয়াছেন। এমনি মুহূর্তে তাহাঁর কাছে জিবরীল (আঃ) এসে বলিলেন, আপনি অস্ত্র রেখে দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! আমরা তা খুলিনি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে চলুন। নাবী (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, কোথায় যেতে হইবে? তিনি বনূ কুরাইযার প্রতি ইশারা করে বলিলেন, ঐ দিকে। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে বেরিয়ে পড়লেন। (৪৬৩) (আ.প্র. ৩৮১২, ই.ফা. ৩৮১৪)

৪১১৮

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বনূ গানম গোত্রের গলিতে জিবরীল বাহিনীর গমনে উত্থিত ধূলারাশি এখনো দেখিতে পাচ্ছি, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন বনূ কুরাইযার দিকে যাচ্ছিলেন। (৩২১৪) (আ.প্র. ৩৮১২, ই.ফা. ৩৮১৫)

৪১১৯

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আহযাব যুদ্ধের দিন (যুদ্ধ শেষে) বলিলেন, বনূ কুরাইযায় না পৌছে কেউ আসরের সালাত আদায় করিবে না। [৩৮] তাদের একাংশের পথিমধ্যে আসরের সলাতের সময় হয়ে গেলে কেউ কেউ বলিলেন, আমরা সেখানে পৌছার আগে সালাত আদায় করব না। আবার কেউ কেউ বলিলেন, আমরা এখনই সালাত আদায় করব, সময় হলেও রাস্তায় সালাত আদায় করা যাবে না উদ্দেশ্য তা নয়। বিষয়টি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে বলা হলে তিনি তাদের কোন দলের প্রতি অসন্তুষ্টি ব্যক্ত করেননি। [৯৪৬] (আ.প্র. ৩৮১৩ ই.ফা. ৩৮১৬)

[৩৮]বনূ কুরাইযাহ্র বিশ্বাসঘাতকতার কারণে আহযাব যুদ্ধের দিন যুদ্ধ শেষে নাবী (সাঃআঃ)-এর নির্দেশ মতে মুসলিম বাহিনী বনূ কুরাইযা রওয়ানা হন। নাবী (সাঃআঃ) বনূ কুরাইযাহ্কে তাদের কৃতকর্মের কারণ দর্শানোর জন্য ডেকে পাঠান। কিন্তু নবূ করাইযা তখন দূর্গদ্বার বন্ধ করে দেয় এবং যুদ্ধের পরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহন করে। এ সময় মুসলিমগণ জানতে পারেন যে, বনূ নাযীরের নেতা হুইয়াই ইবনু আখতাব যে বনূ কুরাইযাহ্কে মুসস্লিমদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিতে এসেছিল সেও দূর্গের মধ্যে বিদ্যমান। বনূ কুরাইযাহ্র বিশ্বাসঘাতকতার এটাই প্রথম ঘটনা ছিল না। বাদর যুদ্ধেও এরা কুরায়শদেরকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করলেও রসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদেরকে ক্ষ্মা করে দিয়েছিলেন। তারা দূর্গা বন্ধ করে দেয়ায় বাধ্য হয়ে মুসলমানদের যুদ্ধ করিতে হয়েছে। যিলহাজ্জ মাসে তাদের দূর্গ অবরোধ করা হয়েছিল যা পঁচিশ দিন স্থায়ী ছিল। এ অবরোধের ফলে তারা কঠিন সংকটে পতিত হয়।ফলে তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে সম্মত করে নিল, তাউস গোত্রের সাআদ ইবনু মুআযাকে বিচারক বানিয়ে দেয়া হোক। এবং তিনি যে মীমাংসা দিবেন সেটাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-ও মেনে নিবেন। হয়ত তারা এটা ভেবেছিল যে, যেহেতু তাউস গোত্রের মুসলমানদের সাথে তাদের পূর্বে বন্ধত্ব ছিল তাই তারা মনে করলো যে, নিশ্চয়ই তারা তাদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) অপেক্ষা হালকা শাস্তি দিবে। আল্লাহই ভাল জানেন। কিন্তু সব দিক বিচার বিশ্লেষণ করে তিনি যে ফায়সালা দিলেন তা হলোঃ (১) বনূ কুরাইযাহ্র পুরুষ যোদ্ধাদের হত্যা করা হইবে। (২) মহিলা ও শিশুদের দাস-দাসী বানিয়ে নেয়া হইবে। (৩) ধন-সম্পদ বন্টন করে নেয়া হইবে। কিন্তু আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) যে বর্ণনা করিয়াছেন তাতে তাদের মহিলা ও শিশুদেরকে দাস দাসী বানিয়ে নেয়ার কথা উল্লেখ নেই।

তাদের নিজেদের মনোনীত ও নির্বাচিত বিচারক ঠিক ঐ ফায়সালই দিলেন যা ইয়াহূদীরা তাদের শত্রুদেরকে দিইয়ে থাকতো, যা তাদের শরীআতে আছে। (উর্দু তরজুমা কাদীম হিন্দুস্তান কী তাহযীব)

এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান আছে যে, যদি বনূ কুরাইযা তাদের ব্যাপারটা রসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর উপর অর্পণ করতো তাহলে তাদের তিনি বড়জোর এ শাস্তি দিতেন যে, তাদেরকে বলিতেনঃ “যাও তোমরা খায়বারে গিয়ে বসতি স্থাপন কর।“ যেমনটি করেছিলেন বনূ কাইনুক ও বনূ নাযীরের ব্যাপারে। কেননা এরূপ ফায়সালার পরও রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বনূ কুরায়যার কয়েকজনের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে ভিন্ন ফায়ফালা কার্যকর করেছিলেন। যেমন ইয়াহূদী যুবায়রের জন্য নির্দেশ ছিল যে, তাহাঁর স্ত্রী-পুত্র, পরিবার ও ধনমাল সহ মুক্ত করে দেয়া হোক।অনুরূপ রিফাআহজ ইবনু শামূঈল নামক ইয়াহূদীকেও তিনি রেহাই দিইয়েছিলেন। (তারীখে তাবারী ৫৭ ও ৫৮ পৃষ্ঠা)

৪১২০

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, লোকেরা নাবী (সাঃআঃ)-কে খেজুর গাছ হাদিয়া দিতেন। অতঃপর যখন তিনি বানূ কুরাইযার উপর জয়লাভ করিলেন তখন আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে নির্দেশ দিল, যেন আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে গিয়ে তাদের দেয়া সবগুলো খেজুর গাছ অথবা কিছু সংখ্যক খেজুর গাছ তাহাঁর নিকট থেকে ফেরত গ্রহনের ব্যাপারে নিবেদন করি। আর নাবী (সাঃআঃ) ঐ গাছগুলো উম্মু আইমান (রাদি.)-কে দান করেছিলেন। উম্মু আইমান (রাদি.) আসলেন এবং আমার গলায় কাপড় লাগিয়ে বলিলেন, এটা কক্ষনো হইতে পারে না। সেই আল্লাহর কসম! যিনি ব্যাতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি ঐ গাছগুলো তোমাকে আর দেবেন না। তিনি এগুলো আমাকে দিয়ে দিয়েছেন। অথবা (রাবীর সন্দেহ) যেমন তিনি বলেছেন। এদিকে নাবী (সাঃআঃ) বলছিলেন, তুমি ঐ গাছগুলোর বদলে আমার নিকট থেকে এত এত পাবে। কিন্তু উম্মু আইমান (রাদি.) বলছিলেন, আল্লাহর কসম! এটা কক্ষনো হইতে পারে না। অবশেষে নাবী (সাঃআঃ) তাকে দিলেন। বর্ণনাকারী আনাস (রাদি.) বলেন, আমার মনে হই নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এর দশগুন অথবা যেমন তিনি বলেছেন। [২৬৩০; মুসলিম ৩২/২৪, হাদীস ১৭৭১] (আ.প্র. ৩৮১৪, ই.ফা. ৩৮১৭)

৪১২১

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সাদ ইবনু মুআয (রাদি.)-এর বিচার মতে বানী কুরাইযাহ গোত্রের লোকেরা দূর্গ থেকে বেরিয়ে আসল। নাবী (সাঃআঃ) সাদকে আনার জন্য লোক পাঠালেন। তিনি গাধায় চড়ে আসলেন। তিনি মসজিদে নাবাবীর নিকটবর্তী হলে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আনসার সাহাবীগণের লক্ষ্য করে বলেলেন, তোমরা তোমাদের নেতা ও সর্বোত্তম লোককে স্বাগত জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে যাও। (অতঃপর) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, এরা তোমরা ফায়সালা মেনে নিয়ে দূর্গ থাকে নিচে নেমে এসেছে। তখন তিনি বলিলেন, তাদের যোদ্ধাদের হত্যা করা হইবে এবং তাদের সন্তানদেরকে বন্দী করা হইবে। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে সাদ! তুমি আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে ফায়সালা দিয়েছ। কোন কোন সময় তিনি বলেছেন, তুমি সকল রাজার রাজা আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক ফায়সালা করেছ। [৩০৪৩] (আ.প্র. ৩৮১৫ ই.ফা. ৩৮১৮)

৪১২২

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধে সাদ (রাদি.) আহত হয়েছিলেন। কুরাইশ গোত্রের হিব্বান ইবনু আরেকা নামক এক ব্যক্তি তাহাঁর উভয় বাহুর মধ্যবর্তী রগে তীর বিদ্ধ করেছিল। নিকট থেকে তার সেবা করার জন্য নাবী (সাঃআঃ) মাসজিদে নাববীতে একটি তাঁবু তৈরি করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) খন্দকের যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে যখন হাতিয়ার গোসল শেষ করিলেন তখন জিবরীল (আঃ) নিজ মাথার ধূলাবালি ঝাড়তে ঝাড়তে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে হাজির হলেন এবং বলিলেন, আপনি হাতিয়ার রেখে দিয়েছেন, কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি এখনো তা রেখে দেইনি। চলুন তাদের দিকে। নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন কোথায়? তিনি বানী কুরাইযা গোত্রের প্রতি ইশারা করিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বনু কুরাইযার মহল্লায় এলেন। অবশেষে তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর ফায়সালা মান্য করে দূর্গ থেকে নিচে নেমে এল। কিন্তু তিনি ফয়সালার ভার সাদ (রাদি.)-এর উপর ন্যস্ত করিলেন। তখন সাদ (রাদি.) বলিলেন, তাদের ব্যাপারে আমি এই ফায়সালা দিচ্ছি যে, তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হইবে, নারী ও সন্তানদেরকে বন্দি করা হইবে এবং তাদের ধন সম্পদ বন্টন করা হইবে। বর্ণনকারী হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার পিতা আয়েশাহ (রাদি.) থেকে আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, সাদ (রাদি.) আল্লাহর কাছে দুআ করেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি তো জানেন, আপনার সন্তুষ্টির জন্য তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার চেয়ে কোন কিছুই আমার কাছে অধিক প্রিয় নয়। যে সম্প্রদায় আপনার রাসুলকে মিথ্যাচারী বলেছে এবং দেশ থেকে বের করে দিয়েছে হে আল্লাহ! আমি মনে করি (খন্দক যুদ্ধের পর) আপনি তো আমাদের ও তাদের যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। যদি এখনো কুরায়শদের বরুদ্ধে কোন যুদ্ধ বাকী থেকে থাকে তাহলে আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন, যাতে আমি আপনার রাস্তায় তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করিতে পারি। আর যদি যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়ে থাকেন তাহলে ক্ষত হইতে রক্ত প্রবাহিত করুন আর আমার তাতেই মৃত্যু দিন। এরপর তাহাঁর ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে প্রবাহিত হইতে লাগল। মাসজিদে বানী গিফার গোত্রের একটি তাঁবু ছিল। তাদের দিকে রক্ত প্রবাহিত হইতে দেখে তারা বলিলেন, হে তাঁবুবাসীগণ! আপনাদের দিক থেকে এসব কী আমাদের দিকে আসতেছে? পরে তাঁরা জানালেন যে, সাদ (রাদি.)-এর ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ জখমের কারণেই তিনি মারা যান, আল্লাহ তাহাঁর উপর সন্তুষ্ট থাকুন। [৪৬৩, মুসলিম ৩২/২২, হাদীস ১৭৬৯, আহমাদ ২৪৩৪৯] (আ.প্র. ৩৮১৬, ই.ফা. ৩৮২০)

৪১২৩

আদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বারাআ (রাদি.)-কে বলিতে শুনেছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) হাস্‌সান (রাদি.)-কে বলছেন, কবিতার দ্বারা তাদের (কাফিরদের) দোষত্রুটি বর্ণনা কর অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) তাদের দোষত্রুটি বর্ণনা করার জবাব দাও। জিবরীল (আঃ) তোমার সঙ্গে থাকবেন। [৩২১৩] (আ.প্র. ৩৮১৭, ই.ফা. ৩৮২০)

৪১২৪

ইবরাহীম ইবনু তাহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) থেকে অধিক বর্ণনা করে বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) বানু কুরাইযাহর সঙ্গে যুদ্ধের দিন হাস্‌সান ইবনু সাবিত [৩৯] (রাদি.) বলেছিলেন (কবিতা আবৃতি করে) মুশরিকদের দোষত্রুটি তুলে ধর। এ ব্যাপারে জিবরীল (আঃ) তোমার সঙ্গী। [৩২১৩] (আ.প্র. ৩৮১৭, ই.ফা. ৩৮২০)

[৩৯] হাসসান ইবনু সাবিত (রাদি.)-কে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কবি বা ইসলামের কবি বলা হতো। কারণ, কাফির কবিরা যেমন আল্লাহর রাসুল ও ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা ও বদনাম করতো তেমনি তিনিও কাফিরদেরকে কবিতা ও সাহিত্যের মাধ্যমে তার জবাব দিতেন।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply