ওসমান ইবনু আফ্‌ফান আবু আমর কুরায়শী (রা) এর ফযীলত

ওসমান ইবনু আফ্‌ফান আবু আমর কুরায়শী (রা) এর ফযীলত

ওসমান ইবনু আফ্‌ফান আবু আমর কুরায়শী (রা) এর ফযীলত >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬২, সাহাবিগণের মর্যাদা, অধ্যায়ঃ (৭-৮)=২টি

৬২/৭. অধ্যায়ঃ উসমান ইবনু আফ্‌ফান আবু আমর কুরায়শী (রাদি.) –এর ফযীলত ও মর্যাদা।
৬২/৮. অধ্যায়ঃ উসমান ইবনু আফ্‌ফান (রাদি.) –এর প্রতি বায়আত ও তাহাঁর উপর (জনগণের) ঐক্যমত্য হবার বিবরণ আর এতে উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) –এর শহীদ হওয়ার বর্ণনা।

৬২/৭. অধ্যায়ঃ ওসমান ইবনু আফ্‌ফান আবু আমর কুরায়শী (রাদি.) –এর ফযীলত ও মর্যাদা।

নাবী (সাঃআঃ) বলেন, রূমা কূপটি যে খনন করে দিবে তার জন্য জান্নাত। ওসমান (রাদি.) তা খনন করে দিলেন। নাবী (সাঃআঃ) আরো বলেন, যে বিপজ্জনক যুদ্ধে যুদ্ধের মাল–সামানার ব্যবস্থা করিবে তাহাঁর জন্য জান্নাত। ওসমান (রাদি.) তা করে দেন।

৩৬৯৫

আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) একটি বাগানে প্রবেশ করিলেন এবং বাগানের দরজা পাহারা দেয়ার জন্য আমাকে আদেশ করিলেন। তখন এক ব্যক্তি এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তাকে আসতে দাও এবং তাঁকে জান্নাতের সু-সংবাদ দাও। আমি দেখলাম যে, তিনি আবু বকর (রাদি.) অতঃপর আর একজন এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তিনি বলিলেন, তাঁকে প্রবেশের অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সুসংবাদ দাও। দেখিতে পেলেন, তিনি উমার (রাদি.)। অতঃপর আর একজন এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। নাবী (সাঃআঃ) কিছুক্ষণ চুপ করে বলিলেন, তাঁকেও প্রবেশের অনুমতি দাও এবং শীঘ্রই তার উপর বিপদ আসবে এ কথা বলে জান্নাতের সু-সংবাদ দাও। দেখিতে পেলাম যে, তিনি ওসমান ইবনু আফফান (রাদি.)। হাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) …. আবু মূসা (রাদি.) হইতে এ রকম বর্ণিত আছে। আসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উক্ত বর্ণনায় আরো বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বাগানের এমন এক জায়গায় বসেছিলেন যেখানে পানি ছিল এবং তাহাঁর হাঁটুদ্বয় অথবা এক হাঁটু খোলা ছিলেন। যখন ওসমান (রাদি.) আসলেন তখন হাঁটু কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেললেন।

(আঃপ্রঃ ৩৪২০, ইঃফাঃ ৩৪২৭)

৩৬৯৬

উবাইদুল্লাহ ইবনু আদী ইবনু খিয়ার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

মিসওয়ার ইবনু মাখরামা ও আবদুর রাহমান ইবনু আসওয়াদ ইবনু আবদ ইয়াগুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে বলিলেন যে, ওসমান (রাদি.) এর সঙ্গে তাহাঁর (বৈপিত্রিয় ভাই) অলীদের ব্যাপারে আলোচনা করিতে তোমাদের কিসে বাধা দেয়? লোকেরা তার সম্পর্কে নানারূপ কথাবার্তা বলছে। ওসমান (রাদি.) যখন সলাত আদায়ের উদ্দেশে বের হলেন তখন আমি তাহাঁর নিকটে গিয়ে বললাম, আপনার সঙ্গে আমার একটি দরকার আছে এবং তা আমি আপনার ভালোর জন্যই বলবো। ওসমান (রাদি.) বলিলেন, ওহে, আমি তোমা হইতে আল্লাহর নিকট পানাহ চাচ্ছি। আমি তাদের নিকট ফিরে আসলাম। তৎক্ষণাৎ ওসমান (রাদি.) –এর দূত এসে হাযির হলো। আমি তার নিকট গেলাম। তিনি বলিলেন, বল, তোমার নাসীহাত কী? আমি বললাম, আল্লাহ মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-কে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন। কুরআন তাহাঁর উপর অবতীর্ণ করিয়াছেন। আপনি ঐ সকলের একজন যাঁরা আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। আপনি উভয় হিজরাত করিয়াছেন এবং আপনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সাহচর্য লাভ করিয়াছেন এবং তাহাঁর চরিত্রের মাধূর্য লক্ষ্য করিয়াছেন। অলীদ সম্পর্কে লোকেরা নানা ধরনের কথাবার্তা বলাবলি করছে। ওসমান (রাদি.) আমাকে বলিলেন, তুমি কি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) –এর দর্শন পেয়েছ? আমি বললাম, না। তবে তাহাঁর ইলম আমার পর্দানশীন কুমারীগণের নিকট যখন পৌঁছেছে তখন আমার নিকট অবশ্যই পৌঁছেছে। ওসমান (রাদি.) হামদ ও সানা বর্ণনা করে বলিলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-কে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন। আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের ডাকে সাড়াদানকারীদের মধ্যে আমিও ছিলাম। তাহাঁর আনা শরীয়তের উপর আমিও ঈমান এনেছি। আমি উভয় হিজরাত করেছি, যেমন তুমি বলছ। আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) –এর সাহচর্য লাভ করেছি, তাহাঁর হাতে বায়আত করেছি। আল্লাহর কসম, আমি তাহাঁর অবাধ্যতা করিনি ও তাহাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। অতঃপর আল্লাহ তাহাঁর রাসুলকে দুনিয়া হইতে নিয়ে গিয়েছেন। অতঃপর আবু বকর (রাদি.) –এর সঙ্গে ঐরূপই সম্পর্ক ছিল। অতঃপর উমার (রাদি.) –এর সঙ্গেও তেমনই সম্পর্ক ছিল। অতঃপর আমার কাঁধে খিলাফতের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমার কি ঐ সকল অধিকার নেই যা তাঁদের ছিল? আমি বললাম হাঁ, অবশ্যই। তিনি বলিলেন, তাহলে তোমাদের পক্ষ হইতে কী সব কথাবার্তা আমার নিকট পৌঁছেছে? অবশ্য অলীদের ব্যাপারে তুমি যা বলছ অতি শীঘ্র আমি সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিব। এ বলে তিনি আলী (রাদি.) কে ডেকে এনে অলীদকে বেত্রাঘাত করার নির্দেশ দিলেন। আলী (রাদি.) তাকে আশিটি বেত্রঘাত করিলেন।

(আঃপ্রঃ ৩৪২১, ইঃফাঃ ৩৪২৮)

৩৬৯৭

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ওহুদ পাহাড়ে আরোহণ করিলেন। তাহাঁর সাথে ছিলেন আবু বকর, উমার ও ওসমান (রাদি.)। তাদেঁরকে পেয়ে পাহাড়টি কেঁপে উঠল। রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ স্থির হও উহুদ। আমার ধারণা তিনি তাহাঁর পা দ্বারা আঘাত করিলেন। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমার উপর একজন নাবী, একজন সিদ্দীক এবং দুজন শহীদ ছাড়া আর কেউ নেই।

(আঃপ্রঃ ৩৪২৪, ইঃফাঃ ৩৪৩১)

৩৬৯৮

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সময়ে আবু বকর (রাদি.) –এর ন্যায় মর্যাদাবান কাউকে মনে করতাম না, অতঃপর উমার (রাদি.)-কে, অতঃপর ওসমান (রাদি.)-কে, অতঃপর সাহাবাগণের মধ্যে কাউকে কারও উপর মর্যাদা দিতাম না। আবদুল্লাহ ইবনু সালিহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীস বর্ণনায় শাবান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।

(আঃপ্রঃ ৩৪২২, ইঃফাঃ ৩৪২৯)

৩৬৯৯

ওসমান ইবনু মাওহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক মিসরবাসী মক্কায় এসে হাজ্জ করে দেখিতে পেল যে, কিছু লোক একত্রে বসে আছে। সে বলিল, এ লোকজন কারা? বলিলেন, ইনি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.)। সে ব্যক্তি (তাহাঁর নিকট এসে) বলিল, হে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.), আমি আপনাকে একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করব; আপনি আমাকে বলুন, (১) আপনি কি এটা জানেন যে, ওসমান (রাদি.) উহুদ যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পালিয়ে গিয়েছিলেন? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। (২) সে বলিল, আপনি জানেন কি ওসমান (রাদি.) বাদার যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন? ইবনু উমার (রাদি.) বলিলেন, হাঁ। লোকটি বলে উঠল, আল্লাহু আকবার। ইবনু উমার (রাদি.) তাকে বলিলেন, এস, তোমাকে আসল ঘটনা বলে দেই। ওসমান (রাদি.) –এর উহুদ যুদ্ধ হইতে পালিয়ে যাওয়া সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ তাঁকে মাফ করে দিয়েছেন ও ক্ষমা করিয়াছেন। আর তিনি বাদার যুদ্ধে এজন্য অনুপস্থিত ছিলেন যে, নাবী (সাঃআঃ) –এর কন্যা তাহাঁর স্ত্রী রোগাক্রান্ত ছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে বলিলেন, বাদারে অংশ গ্রহণকারী ব্যক্তির সমপরিমাণ সাওয়াব ও গনীমতের অংশ মিলবে। আর বায়আত রিযওয়ান হইতে তাহাঁর অনুপস্থিতির কারণ হল, মক্কার বুকে তাহাঁর চেয়ে সম্ভ্রান্ত অন্য কেউ যদি থাকতো তবে তাকেই তিনি উসমানের বদলে পাঠাতেন। অতঃপর রাসুল (সাঃআঃ) ওসমান (রাদি.) –কে মক্কায় পাঠান। এবং তাহাঁর চলে যাবার পর বায়আত রিযওয়ান অনুষ্ঠিত হয়। তখন রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর ডান হাতের প্রতি ইঙ্গিত করে বলিলেন, এটি উসমানের হাত। অতঃপর ডান হাত বাম হাতে স্থাপন করে বলিলেন যে, এ হল উসমানের বায়আত। ইবনু উমার (রাদি.) ঐ লোকটিকে বলিলেন, তুমি এই জবাব তোমার সঙ্গে নিয়ে যাও।

(আঃপ্রঃ ৩৪২৩, ইঃফাঃ ৩৪৩০)

৬২/৮. অধ্যায়ঃ ওসমান ইবনু আফ্‌ফান (রাদি.) –এর প্রতি বায়আত ও তাহাঁর উপর (জনগণের) ঐক্যমত্য হবার বিবরণ আর এতে উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) –এর শহীদ হওয়ার বর্ণনা।

৩৭০০

আমর ইবনু মায়মূন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) –কে আহত হবার কিছুদিন পূর্বে মদীনায় দেখেছি যে তিনি হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাদি.) ও ওসমান ইবনু হুনায়ফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) –এর নিকট দাঁড়িয়ে তাঁদেরকে লক্ষ্য করে বলছেন, তোমরা এটা কী করলে? তোমরা এটা কী করলে? তোমরা কি আশঙ্কা করছ যে, তোমরা ইরাক ভূমির উপর যে কর ধার্য করেছ তা বহনে ঐ ভূখন্ড অক্ষম? তারা বলিলেন, আমরা যে পরিমাণ কর ধার্য করেছি, ঐ ভূখন্ড তা বহনে সক্ষম। এতে বাড়তি কোন বোঝা চাপান হয়নি। তখন উমার (রাদি.) বলিলেন, তোমরা আবার চিন্তা করে দেখ যে, তোমারা এ ভূখন্ডের উপর যে কর আরোপ করেছ তা বহন সক্ষম নয়? বর্ণনাকারী বলেন, তাঁরা বলিলেন, না। অতঃপর উমার (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখেন তবে ইরাকের বিধবাগণকে এমন অবস্থায় রেখে যাব যে তারা আমার পরে কখনো অন্য কারো মুখাপেক্ষী না হয়। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর চতুর্থ দিন তিনি আহত হলেন। যেদিন ভোরে তিনি আহত হন, আমি তাহাঁর কাছে দাঁড়িয়েছিলাম এবং তাহাঁর ও আমার মাঝে আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) ছাড়া অন্য কেউ ছিল না। উমার (রাদি.) দুকাতারের মধ্য দিয়ে চলার সময় বলিতেন, কাতার সোজা করে নাও। যখন দেখিতেন কাতারে কোন ত্রুটি নেই তখন তাকবীর বলিতেন। তিনি অধিকাংশ সময় সুরা ইউসুফ, সুরা নাহল অথবা এ ধরণের সুরা প্রথম রাকআতে তিলাওয়াত করিতেন, যেন অধিক পরিমাণ লোক প্রথম রাকআতে শরীক হইতে পারেন। তাকবীর বলার পরেই আমি তাঁকে বলিতে শুনলাম, একটি কুকুর আমাকে আঘাত করেছে অথবা বলেন, আমাকে আক্রমণ করেছে। ঘাতক ইলজ দ্রুত পলায়নের সময় দুধারী খঞ্জর দিয়ে ডানে বামে আঘাত করে চলছে। এভাবে তের জনকে আহত করিল। এদের মধ্যে সাত জন শহীদ হলেন। এ অবস্থা দেখে এক মুসলিম তার লম্বা চাদরটি ঘাতকের উপর ফেলে দিলেন। ঘাতক যখন বুঝতে পারল সে ধরা পড়ে যাবে তখন সে আত্মহত্যা করিল। উমার (রাদি.) আব্দুর রাহমান ইবনু আউফ (রাদি.) –এর হাত ধরে সামনে এগিয়ে দিলেন। উমার (রাদি.) –এর নিকটে যারা ছিল শুধুমাত্র তারাই ব্যাপারটি দেখিতে পেল। আর মাসজিদের শেষে যারা ছিল তারা ব্যাপারটি এর অধিক বুঝতে পারল না যে, উমার (রাদি.)-এর কন্ঠস্বর শুনা যাচ্ছে না। তাই তারা “সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ” বলিতে লাগলেন। আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাদি.) তাঁদেরকে নিয়ে সংক্ষেপে সলাত আদায় করিলেন। যখন মুসল্লীগণ চলে গেলেন, তখন উমার (রাদি.) বলিলেন, হে ইবনু আব্বাস (রাদি.) দেখ তো কে আমাকে আঘাত করিল। তিনি কিছুক্ষণ অনুসন্ধান করে এসে বলিলেন, মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাদি.) –এর গোলাম (আবু লুলু)। উমার (রাদি.) জিজ্ঞেস করিলেন, ঐ কারিগর গোলামটি? তিনি বলিলেন, হাঁ। উমার (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ তার সর্বনাশ করুন। আমি তার সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমার মৃত্যু ইসলামের দাবীদার কোন ব্যক্তির হাতে ঘটাননি। হে ইবনু আব্বাস (রাদি.) তুমি এবং তোমার পিতা মদীনায় কাফির গোলামের সংখ্যা বৃদ্ধি পছন্দ করিতেন। আব্বাস (রাদি.) –এর নিকট অনেক অমুসলিম গোলাম ছিল। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, যদি আপনি চান তবে আমি কাজ করে ফেলি অর্থাৎ আমি তাদেরকে হত্যা করে ফেলি। উমার (রাদি.) বলেন, তুমি ভুল বলছ। কেননা তারা তোমাদের ভাষায় কথা বলে, তোমাদের কিবলামুখী হয়ে সলাত আদায় করে, তোমাদের মত হাজ্জ করে। অতঃপর তাঁকে তাহাঁর ঘরে নেওয়া হল। আমরা তাহাঁর সঙ্গে চললাম। মানুষের অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছিল, ইতোপূর্বে তাদের উপর এত বড় মুসীবত আর আসেনি। কেউ কেউ বলছিলেন, ভয়ের কিছু নেই। আবার কেউ বলছিলেন, আমি তাহাঁর সম্পর্কে আশংকাবোধ করছি। অতঃপর খেজুরের শরবত আনা হল, তিনি তা পান করিলেন। কিন্তু তা তার পেট হইতে বেরিয়ে পড়ল। অতঃপর দুধ আনা হল, তিনি তা পান করিলেন। তাও তার পেট হইতে বেরিয়ে পড়ল। তখন সকলেই বুঝতে পারলেন, মৃত্যু তাহাঁর অবশ্যম্ভাবী। আমরা তাহাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। অন্যান্য লোকজনও আসতে শুরু করিল। সকলেই তার প্রশংসা করিতে লাগল। তখন যুবক বয়সী একটি লোক এসে বলিল, হে আমীরুল মুমিনীন। আপনার জন্য আল্লাহর সু-সংবাদ রয়েছে; আপনি তা গ্রহণ করুন। আপনি নাবী (সাঃআঃ) –এর সাহচর্য গ্রহণ করিয়াছেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগেই আপনি তা গ্রহণ করিয়াছেন, যে সম্পর্কে আপনি নিজেই অবগত আছেন অতঃপর আপনি খলীফা হয়ে ন্যায় বিচার করিয়াছেন। অতঃপর আপনি শাহাদাত লাভ করিয়াছেন। উমার (রাদি.) বলিলেন, আমি পছন্দ করি যে তা আমার জন্য ক্ষতিকর বা লাভজনক না হয়ে সমান সমান হয়ে থাকে। যখন যুবকটি চলে যেতে উদ্যত হল তখন তার লুঙ্গিটি মাটি ছুঁয়ে যাচ্ছিল। উমার (রাদি.) বলিলেন, যুবকটিকে আমার নিকট ডেকে আন। তিনি বলিলেন– হে ভাতিজা! তোমার কাপড়টি উঠিয়ে নাও। এটা তোমার কাপড়ের পরিচ্ছন্নতার জন্য এবং তোমার রবের নিকটও পছন্দনীয়। হে আবদুল্লাহ ইবনু উমার, তুমি হিসাব করে দেখ আমার ঋণের পরিমাণ কত। তারা হিসাব করে দেখিতে পেলেন ছিয়াশি হাজার (দিরহাম) বা এর কাছাকাছি। তিনি বলিলেন, যদি উমারের পরিবার পরিজনের মাল দ্বারা পরিশোধ হয়ে যায় তবে তা দিয়ে পরিশোধ করে দাও। অন্যথায় আদি ইবনু কাব এর বংশধরদের নিকট হইতে সাহায্য গ্রহন কর। তাদের মাল দিয়েও যদি ঋণ পরিশোধ না হয় তবে কুরাইস কবিলা হইতে সাহায্য গ্রহণ করিবে, এর বাহিরে কারো সাহায্য গ্রহণ করিবে না। আমার পক্ষ হইতে তাড়াতাড়ি ঋণ আদায় করে দাও। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) –এর খিদমতে এবং বল উমার আপনাকে সালাম পাঠিয়েছে। আমীরুল মুমিনীন শব্দটি বলবে না। কেননা এখন আমি মুমিনগণের আমীর নই। তাঁকে বল উমার ইবন খাত্তাব তাহাঁর সাথীদের পাশে দাফন হবার অনুমতি চাচ্ছেন। ইবন উমার (রাদি.) আয়েশা (রাদি.) এর খিদমতে গিয়ে সালাম জানিয়ে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তিনি বলিলেন, প্রবেশ কর, তিনি দেখলেন, আয়েশা (রাদি.) বসে বসে কাঁদছেন। তিনি গিয়ে বলিলেন, উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) আপনাকে সালাম পাঠিয়েছেন এবং তাহাঁর সঙ্গীদ্বয়ের পার্শ্বে দাফন হবার জন্য আপনার অনুমতি চেয়েছেন। আয়েশা বলিলেন, আমার আকাঙ্খা ছিল। কিন্তু আজ আমি এ ব্যাপার আমার উপরে তাঁকে অগ্রগণ্য করছি। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) যখন ফিরে আসছেন তখন বলা হল– এই যে আবদুল্লাহ ফিরে আসছে। তিনি বলিলেন, আমাকে উঠিয়ে বসাও। তখন এক ব্যক্তি তাকে ঠেস দিয়ে বসিয়ে ধরে রাখলেন। উমার (রাদি.) জিজ্ঞেস করিলেন কী সংবাদ? তিনি বলিলেন, আমীরুল মুমিনীন, আপনি যা কামনা করিয়াছেন, তাই হয়েছে, তিনি অনুমতি দিয়েছেন। উমার (রাদি.) বলিলেন, আলহামদুলিল্লাহ। এর চেয়ে বড় কোন বিষয় আমার নিকট ছিল না। যখন আমার মৃত্যু হয়ে যাবে তখন আমাকে উঠিয়ে নিয়ে, তাঁকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে, উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) আপনার অনুমতি চাচ্ছেন। যদি তিনি অনুমতি দেন, তবে আমাকে প্রবেশ করাবে আর যদি অনুমতি না দেন তবে আমাকে সাধারণ মুসলিমদের গোরস্থানে নিয়ে যাবে। এ সময় উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রাদি.)-কে কতিপয় মহিলাসহ আসতে দেখে আমরা উঠে পড়লাম। হাফসা (রাদি.) তাহাঁর নিকট গিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদলেন। অতঃপর পুরুষরা প্রবেশের অনুমতি চাইলে, তিনি ঘরের ভিতর গেলে ঘরের ভেতর হইতে হইতেও আমরা তাহাঁর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তাঁরা বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি ওয়াসিয়াত করুন এবং খলীফা মনোনীত করুন। উমার (রাদি.) বলিলেন, খিলাফতের জন্য এ কয়েকজন ছাড়া অন্য কাউকে আমি যোগ্যতম পাচ্ছি না, যাদের প্রতি নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর ইন্তিকালের সময় রাযী ও খুশী ছিলেন। অতঃপর তিনি তাঁদের নাম বলিলেন, আলী, ওসমান, যুবায়র, ত্বলহা, সাদ ও আবদুর রাহমান ইবনু আউফ (রাদি.) এবং বলিলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) তোমাদের সঙ্গে থাকবে। কিন্তু সে খিলাফত লাভ করিতে পারবে না। তা ছিল শুধু সান্ত্বনা মাত্র। যদি খিলাফতের দায়িত্ব সাদের (রাদি.) এর উপর ন্যস্ত করা হয় তবে তিনি এর জন্য যোগ্যতম ব্যক্তি। আর যদি তোমাদের মধ্যে অন্য কেউ খলীফা নির্বাচিত হন তবে তিনি যেন সর্ব বিষয়ে সাদের সাহায্য ও পরামর্শ গ্রহণ করেন। আমি তাঁকে অযোগ্যতা বা খিয়ানতের কারণে অপসারণ করিনি। আমার পরের খলীফাকে আমি ওয়াসিয়াত করছি, তিনি যেন প্রথম যুগের মুহাজিরগণের হক সম্পর্কে সচেতন থাকেন, তাদের মান সম্মান রক্ষায় সচেষ্ট থাকেন। এবং আমি তাঁকে আনসার সাহাবীগণের যাঁরা মুহাজিরগণৈর আসার আগে এই নগরীতে (মদীনায়) বসবাস করে আসছিলেন এবং ঈমান এনেছেন, তাঁদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার ওয়াসিয়াত করছি যে তাঁদের মধ্যে নেককারগণের ওযর আপত্তি যেন গ্রহণ করা হয় এবং তাঁদের মধ্যে কারোর ভুলত্রুটি হলে তা যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়। আমি তাঁকে এ ওয়াসিওয়াত ও করছি যে, তিনি যেন রাজ্যের বিভিন্ন শহরের আধিবাসীদের সদ্ব্যবহার করন। কেননা তাঁরাও ইসলামের হিফাযতকারী। এবং তারাই ধনসম্পদের যোগানদাতা। তারাই শত্রুদের চোখের কাঁটা। তাদের হইতে তাদের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে কেবলমাত্র তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ যেন যাকাত আদায় করা হয়। আমি তাঁকে পল্লীবাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করারও ওয়াসিয়াত করছি। কেননা তারাই আরবের ভিত্তি এবং ইসলামের মূল শক্তি। তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ এনে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে যেন বিলিয়ে দেয়া হয়। আমি তাঁকে আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) –এর জিম্মীদের (অর্থাৎ সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়) বিষয়ে ওয়াসিয়াত করছি যে, তাদের সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার যেন পুরা করা হয়। তাদের পক্ষাবলম্বনে যেন যুদ্ধ করা হয়, তাদের শক্তি সামর্থ্যের অধিক জিযিয়া যেন চাপানো না হয়। উমার (রাদি.) এর ইন্তিকাল হয়ে গেলে আমরা তাহাঁর লাশ নিয়ে পায়ে হেঁটে চললাম। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) আয়েশা (রাদি.) –কে সালাম করিলেন এবং বলিলেন, উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) অনুমতি চাচ্ছেন। আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, তাকে প্রবেশ করাও। অতঃপর তাঁকে প্রবেশ করান হল এবং তাহাঁর সঙ্গীদ্বয়ের পার্শ্বে দাফন করা হল। যখন তাহাঁর দাফনকাজ শেষ হল, তখন ঐ ব্যক্তিবর্গ একত্রিত হলেন। তখন আবদুর রাহমান (রাদি.) বলিলেন, তোমারা তোমাদের বিষয়টি তোমাদের মধ্য হইতে তিনজনের উপর ছেড়ে দাও। তখন যুবায়র (রাদি.) বলিলেন, আমি আমার বিষয়টি আলী (রাদি.) –এর উপর অর্পণ করলাম। ত্বলহা (রাদি.) বলিলেন, আমার বিষয়টি ওসমান (রাদি.) –এর উপর ন্যস্ত করলাম। সাদ (রাদি.) বলিলেন, আমার বিষয়টি আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাদি.) উপর ন্যস্ত করলাম। অতঃপর আবদুর রহমান (রাদি.) ওসমান ও আলী (রাদি.)-কে বলিলেন, আপনাদের দুজনের মধ্য হইতে কে এই দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি পেতে ইচ্ছা করেন? এ দায়িত্ব অপর জনের উপর অর্পন করব। আল্লাহ ও ইসলামের হক আদায় করা তাহাঁর অন্যতম দায়িত্ব হইবে। কে অধিকতর যোগ্য সে সম্পর্কে দুজনেরই চিন্তা করা উচিত। ব্যক্তিদ্বয় চুপ থাকলেন। তখন আবদুর রাহমান (রাদি.) নিজেই বলিলেন আপনারা এ দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করিতে পারেন কি? আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আপনাদের মধ্যকার ষোগ্যতম ব্যক্তিকে নির্বাচিত করিতে একটুও ত্রুটি করব না। তাঁরা উভয়ে বলিলেন, হাঁ। তাদের একজনের হাত ধরে বলিলেন, রাসুল (সাঃআঃ) –এর সঙ্গে আপনার যে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা এবং ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামিতা আছে তা আপনিও ভালভাবে জানেন। আল্লাহর ওয়াস্তে এটা আপনার জন্য জরুরী হইবে যে, যদি আপনাকে খলীফা মনোনীত করি তাহলে আপনি ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন। আর যদি ওসমান (রাদি.) –কে মনোনীত করি তবে আপনি তাহাঁর কথা শুনবেন এবং তাহাঁর প্রতি অনুগত থাকবেন। অতঃপর তিনি অপর জনের সঙ্গে একান্তে অনুরূপ কথা বলিলেন। এভাবে অঙ্গীকার গ্রহণ করে তিনি বলিলেন, হে ওসমান (রাদি.) আপনার হাত বাড়িয়ে দিন। তিনি [আবদুর রাহমান (রাদি.)], তাহাঁর হাতে বায়আত করিলেন। অতঃপর আলী (রাদি.) তাহাঁর ওসমান (রাদি.)-এর বায়আত করিলেন। অতঃপর মদীনাবাসীগণ এগিয়ে এস সকলেই বায়আত করিলেন।

(আঃপ্রঃ ৩৪২৫, ইঃফাঃ ৩৪৩২)

Comments

Leave a Reply