নবুওয়াতের নিদর্শনাবলী , নবুওয়াতের মোহর ও বর্ণনা
নবুওয়াতের নিদর্শনাবলী , নবুওয়াতের মোহর ও বর্ণনা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬১, মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য, অধ্যায়ঃ (২১-২৮)=৮টি
৬১/২১. অধ্যায়ঃ
৬১/২২. অধ্যায়ঃ নবুওয়াতের মোহর।
৬১/২৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) –এর বর্ণনা।
৬১/২৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর চোখ বন্ধ থাকত কিন্তু তাহাঁর অন্তর থাকত বিনিদ্র।
৬১/২৫. অধ্যায়ঃ ইসলামে নবুওয়াতের নিদর্শনাবলী।
৬১/২৬. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ যাদের আমি কিতাব দিয়েছি তারা তাকে সেরূপ চেনে, যেরূপ তারা তাদের পুত্রদের চেনে। আর তাদের একদল জেনে শুনে নিশ্চিতভাবে সত্য গোপন করে। (আল-বাক্বারাহ ১৪৬)
৬১/২৭. অধ্যায়ঃ মুশরিকরা নিদর্শন দেখানোর জন্য নাবী (সাঃআঃ) -কে বললে তিনি চাঁদ দুভাগ করে দেখালেন।
৬১/২৮. অধ্যায়ঃ
৬১/২১. অধ্যায়ঃ
৩৫৪০. জুআইদ ইব্ন আবদুর রাহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি সাইব ইবন ইয়াযীদকে চুরানব্বই বছর বয়সে সুস্থ – সবল ও সুঠাম দেহের অধিকারী দেখেছি। তিনি বলিলেন, তুমি অবশ্যই জ্ঞাত আছ যে, আমি এখনও নাবী (সাঃআঃ) -এর দুআর বরকতেই চোখ ও কান দিয়ে উপকার লাভ করছি। আমার খালা একদিন আমাকে নিয়ে নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট গেলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার ভাগিনাটি রোগাক্রান্ত। আপনি তার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন। তখন নাবী (সাঃআঃ) আমার জন্য দুআ করিলেন।
৬১/২২. অধ্যায়ঃ নবুওয়াতের মোহর।
৩৫৪১. জুআইদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আমি সাইব ইবন ইয়াযীদকে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমার খালা আমাকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট নিয়ে গেলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার ভাগিনা রোগাক্রান্ত। তখন নাবী (সাঃআঃ) আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার জন্য বরকতের দুআ করিলেন। তিনি ওযু করিলেন, তাহাঁর ওযুর বাকি পানি আমি পান করলাম। অতঃপর আমি তাহাঁর পিছন দিকে গিয়ে দাঁড়ালাম তাহাঁর স্কন্ধের মাঝে “মোহরে নাবুওয়্যাত” দেখলাম যা কবুতরের ডিমের মত অথবা বাসর ঘরের পর্দার বুতামের মত।
ইবন উবায়দুল্লাহ বলেন, (আরবী) অর্থ সাদা চিহ্ন, যা ঘোড়ার কপালের সাদা অংশ এর অর্থ হইতে গৃহীত। আর ইব্রাহীম ইবন হামযাহ বলেন, কবুতরের ডিমের মত। আবু আবদুল্লাহ বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন বিশুদ্ধ (আরবী) এর পূর্বে (আরবী) হইবে অর্থাৎ (আরবী)।
৬১/২৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) –এর বর্ণনা।
৩৫৪২. উকবা ইবন হারিস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন আবু বকর (রাদি.) বাদ আসরের সালাত শেষে বের হয়ে চলতে লাগলেন। হাসান (রাদি.) -কে ছেলেদের সঙ্গে খেলা করিতে দেখলেন। তখন তিনি তাঁকে স্কন্ধে তুলে নিলেন এবং বলিলেন, আমার পিতা কুরবান হোন! এ-ত নাবী (সাঃআঃ) -এর সাদৃশ্য, আলীর সাদৃশ্য নয়। তখন আলী (রাদি.) হাসছিলেন।
৩৫৪৩. আবু জুহাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে দেখেছি। আর হাসান (রাদি.) তাহাঁরই সদৃশ।
৩৫৪৪. আবু জুহাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে দেখেছি। হাসান ইবন আলী ছিলেন (রাদি.) তাহাঁরই সদৃশ। (রাবী বলেন) আমি আবু জুহায়ফাকে বললাম, আপনি নাবী (সাঃআঃ) -এর বর্ণনা দিন। তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) গৌর বর্ণের ছিলেন। কাল কেশরাজির মধ্যে সামান্য সাদা চুলও ছিল। তিনি তেরটি সবল উটনী আমাদেরকে দেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু আমাদের হাতে আসার আগেই নাবী (সাঃআঃ) -এর মৃত্যু হয়।
৩৫৪৫. আবু জুহাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে দেখেছি আর তাহাঁর নীচ ঠোঁটের নিন্মভাগে দাড়িতে সামান্য সাদা চুল দেখেছি।
৩৫৪৬. হারীয ইব্ন উসমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাঃআঃ) -এর সাহাবী আবদুল্লাহ ইবন বুসরকে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি কি নাবী (সাঃআঃ) -কে দেখেছেন যে, তিনি কি বৃদ্ধ ছিলেন? তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) -এর নিম্ন দাড়িতে কয়েকটি চুল সাদা ছিল।
৩৫৪৭. রাবীআ ইব্ন আবু আবদুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আনাস ইবন মালিক (রাদি.) -কে নাবী (সাঃআঃ) -এর বর্ণনা দিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) লোকেদের মধ্যে মাঝারি গড়নের ছিলেন- বেশি লম্বাও ছিলেন না বা বেঁটেও ছিলেন না। তাহাঁর শরীরের রং গোলাপী ধরণের ছিল, ধবধবে সাদাও নয় কিংবা তামাটে বর্ণেরও নয়। মাথার চুল কোঁকড়ানোও ছিলনা, আবার একেবারে সোজাও ছিলনা। চল্লিশ বছর বয়সে তাহাঁর উপর ওয়াহী নাযিল হওয়া শুরু হয়। প্রথম দশ বছর মক্কায় অবস্থানকালে ওয়াহী যথারীতি নাযিল হইতে থাকে। অতঃপর দশ বছর মদীনায় কাটান। অতঃপর তাহাঁর মৃত্যুর সময় তাহাঁর মাথা ও দাড়িতে কুড়িটি সাদা চুলও ছিলনা। রাবীআ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর একটি চুল দেখেছি তা লাল রং-এর ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলে বলা হল যে, সুগন্ধী লাগানোর জন্য তা লাল হয়েছিল।তিনি বলেন, আমি আনাস ইবন মালিক (রাদি.) -কে নাবী (সাঃআঃ) -এর বর্ণনা দিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) লোকেদের মধ্যে মাঝারি গড়নের ছিলেন- বেশি লম্বাও ছিলেন না বা বেঁটেও ছিলেন না। তাহাঁর শরীরের রং গোলাপী ধরণের ছিল, ধবধবে সাদাও নয় কিংবা তামাটে বর্ণেরও নয়। মাথার চুল কোঁকড়ানোও ছিলনা, আবার একেবারে সোজাও ছিলনা। চল্লিশ বছর বয়সে তাহাঁর উপর ওয়াহী নাযিল হওয়া শুরু হয়। প্রথম দশ বছর মক্কায় অবস্থানকালে ওয়াহী যথারীতি নাযিল হইতে থাকে। অতঃপর দশ বছর মদীনায় কাটান। অতঃপর তাহাঁর মৃত্যুর সময় তাহাঁর মাথা ও দাড়িতে কুড়িটি সাদা চুলও ছিলনা। রাবীআ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর একটি চুল দেখেছি তা লাল রং-এর ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলে বলা হল যে, সুগন্ধী লাগানোর জন্য তা লাল হয়েছিল।
৩৫৪৮.আনাস ইবন মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) অতিরিক্ত লম্বাও ছিলেন না এবং বেঁটেও ছিলেন না। ধবধবে সাদাও ছিলেন না, আবার তামাটে রং এরও ছিলেন না। কেশগুচ্ছ একেবারে কুঞ্চিত ছিল না, পুরোপুরি সোজাও ছিল না। চল্লিশ বছর বয়সে তিনি নবুওয়্যাত পান। তাহাঁর নবুওয়্যাত সময়ের প্রথম দশ বছর মক্কায় এবং পরের দশ বছর মদীনায় কাটান। তাহাঁর মৃত্যুকালে মাথা ও দাড়িতে বিশটি চুলও সাদা ছিল না।
৩৫৪৯. বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর চেহারা ছিল মানুষের মধ্যে [১] সর্বাপেক্ষা সুন্দর এবং তিনি ছিলেন সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী। তিনি বেশি লম্বাও ছিলেন না এবং বেঁটেও ছিলেন না।
[১] নাবী (সাঃআঃ) -এর নবুওয়্যাতের আলামতসমূহের উপরে মহামতি ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সহীহ সনদে প্রমাণিত কতিপয় নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন এবং নাবী (সাঃআঃ) সম্পর্কে যে সমুদয় বৈশিষ্ট্য ও নিদর্শনাবলী বর্ণনা করিয়াছেন, তাতে এ কথা পরিষ্কারভাবেই প্রমাণিত হয় যে, মহানাবী (সাঃআঃ) মানুষ ছিলেন। তিনি আল্লাহ তাআলার খাস নূরে তৈরি বা বিশেষ কোন নূরানী কায়দায় সৃষ্ট বা স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই মুহাম্মদ নাম ধারণ করে মানবরূপে আত্মপ্রকাশ করিয়াছেন- এবম্বিধ যাবতীয় চিন্তা-চেতনা, আক্বীদাহ-বিশ্বাস ও কথাবার্তা নিঃসন্দেহে বিভ্রান্তিকর তথা কুফরী কার্য বটে।
কেননা আল্লাহ তাআলা উপরোক্ত বিষয়ে স্বীয় কুরআন মাজীদের মাধ্যমেই বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে অন্য কারো কোন অতিরিক্ত চিন্তা-ভাবনা করার অবকাশ নেই। সুরা কাহফের শেষ আয়াতে আল্লাহ তাআলা নাবী (সাঃআঃ) -কে লক্ষ্য করে এরশাদ করেছেনঃ (আরবী) হে নাবী! তুমি বলে দাও, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। (আল-কাহ্ফঃ ১১০ আয়াতাংশ) এ বিষয়ে অন্যত্র আরো এরশাদ হচ্ছেঃ (আরবী) অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা মুমিনদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ করিয়াছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য হইতেই (ফেরেশতা বা মানুষ নয় এমন কোন ভিন্ন জাতির মধ্য হইতে প্রেরণ করেননি বরং) একজন রাসুল প্রেরণ করিয়াছেন। সুরা আল্ ইমরান, আয়াত নং – ১৬৪। উক্ত আয়াতে উল্লেখিত (আরবী) এই শব্দ দুটির ব্যাখ্যায় হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে রুহুল মাআনীতে আল্লামা শায়খ শেহাবুদ্দীন আলুসী-আল্ হানাফী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) লিখেছেনঃ রাসুল (সাঃআঃ) -কে মানুষ বলে জানা ও তাঁকে মানুষের সন্তান মানুষ বলেই গ্রহণ করা সহীহ হওয়ার জন্য একান্ত শর্ত। তাঁকে ফেরেশতা, জ্বীন, নূরের দ্বারা তৈরী এসব কিছু বলা যাবে না বা চিন্তাও করা যাবে না। যেমন রুহুল মাআনীর নিন্মোদ্ধৃত ভাষ্যে পরিষ্কার করেই বলা হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ নাবী (সাঃআঃ) মানুষ ছিলেন, কি আরবীয় মানুষ ছিলেন, এ বিষয়ে জ্ঞাত হওয়া এবং নাবী (সাঃআঃ) -কে মানুষ বলেই জানা ঈমানের জন্য শর্ত না; ফারযি কিফায়াহ (আরবী)? এর জবাব এই যে, উক্ত বিষয়টি ঈমানের জন্য শর্ত বটে। অতঃপর কেউ যদি বলে, নাবী (সাঃআঃ) সমস্ত মাখলুকের জন্য নাবী এটা বিশ্বাস করি, তবে তিনি মানুষ কি জ্বিন, কি ফেরেশতা, বা আরবের কি অনারবের এটা আমি জানিনা। উক্ত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে কাফের। কেননা সে কুরআনের ঘোষণাকে অস্বীকার করেছে। (আরবী) পৃষ্ঠা নং- ১১৩, ৪র্থ খন্ড। অতএব এখানে লক্ষ্যণীয় এই যে, কতিপয় বিভ্রান্ত লোক নিজেদেরকে হানাফী আল্-ক্বাদরী, আল্-চিশ্তী ইত্যাদি নাম দিয়ে নাবী (সাঃআঃ) -কে অতিমাত্রায় ভক্তি ও শ্রদ্ধা দেখাতে গিয়ে তাঁকে আল্লাহর আসনে বসিয়েছে। (আরবি) (আহাদ) ও (আরবি) (আহমাদ) -এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নিজেদের অজ্ঞতাবশতঃ এ ব্যাখ্যাও দিয়েছে, যে (আরবী) ও (আরবী) এর মধ্যে মাত্র একটি মীমের পার্থক্য ছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই। (আরবী) প্রকাশ থাকে। পাক-ভারত উপমহাদেশের বিদআতীরা কুরআন ও সহীহ হাদীস বিরোধী সমস্ত কার্যাবলী চালু করে নিজেদের নাম দিয়ে রেখেছে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ। এ যেন বেদানা ফলের মতই অবস্থা। বেদানা ফল দানায় ভর্তি, অথচ নাম তার বেদানা। তথাকথিত (আরবী) (আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ) নাম দিয়ে বিদআতীরা এ পৃথিবীর এমন কোন বিদআত নেই, যা এরা করছে না। যেমন কবর পূজা, পীর পূজা, মীলাদ, ওরশ ওরসেকূল, ইসালে সওয়াব, জশ্নে জুলুস, মিছিল, ঈদে মিলাদুন্নাবী ইত্যাদি ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, এক শ্রেণীর বিদআতীরা নাবী (সাঃআঃ) -কে মর্যাদা তথা অত্যধিক পরিমাণে শান-মান দেয়ার নামে এতোই সীমালঙ্ঘন করছে যে, (আরবী) আলিমুল গায়িব আল্লাহ তাআলার বিশেষ ক্ষমতা হলো এই যে, তিনি সমস্ত গায়িবী খবরা-খবর জানেন। এ বিষয়ে বিদআতীদের আক্বীদাহ এই যে, নাউযুবিল্লাহ মহানাবী (সাঃআঃ) ও আল্লাহ তাআলার ন্যায় গায়িবী খবর জানতেন ও জানেন- যা কুরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াস ও জমহারে উলামাসহ হাকপন্থী সর্বশ্রেণীর মুসলমানদের আক্বীদাহ্র বিপরীত। এ ব্যাপারে খোদ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ (আরবী) অদৃশ্য বিষয়সমূহের চাবিকাঠি আল্লাহর নিকটে, তিনি ব্যতীত উক্ত বিষয়াবলী আর কেউ জানেনা। (সুরা আনআম ৫৯) এ বিষয়ে ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করেনঃ (আরবী) অতীতকালের বিভ্রান্ত জাতিসমূহ তাদের নাবীগণকে মাত্রাতিরিক্ত মর্যাদা দিতে গিয়ে আল্লাহর নামে শির্ক করেছিল। ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান জাতি উযাইর ও ঈসা (আঃ) -দ্বয়কে আল্লাহর পুত্র বানিয়ে তাঁদের পূজা অর্চনা করিতে শুরু করেছে এবং বর্তমানের বিভ্রান্ত মুসলমানদের একটা শ্রেণী উল্লেখিত জাতিদ্বয়কে ছাড়িয়ে গিয়ে মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) -কে আল্লাহর সাথে একাকার করে ফেলেছে যা বড়ই পরিতাপের বিষয় বটে। এ জাতীয় বিদআতীদেরকে নাবী (সাঃআঃ) -এর সেই কালজয়ী বাণীটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাইঃ (আরবী) নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করেনঃ মারইয়াম তনয় ঈসা (আঃ) -কে নিয়ে খ্রিস্টানরা যেভাবে বাড়াবাড়ি করছে তোমরা আমাকে নিয়ে সেভাবে বাড়াবাড়ি করোনা, আমি কেবল একজন বান্দা। অতএব তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁর রাসুল বলে সম্বোধন করিবে।
৩৫৫০. ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আনাস (রাদি.) -কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃআঃ) চুলে খেযাব লাগাতেন কি? তিনি বলিলেন, না। তাহাঁর কানের পাশে সামান্য কয়টা চুল সাদা হয়েছিল মাত্র।
৩৫৫১. বারাআ ইব্ন আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মাঝারি গড়নের ছিলেন। তাহাঁর উভয় কাঁধের মধ্যস্থল প্রশস্ত ছিল। তাহাঁর মাথার চুল দুই কানের লতি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আমি তাঁকে লাল ডোরাকাটা জোড় চাদর পরা অবস্থায় দেখেছি। তাহাঁর চেয়ে বেশি সুন্দর আমি কখনো কাউকে দেখিনি। ইউসুফ ইবন আবু ইসহাক তাহাঁর পিতা হইতে হাদীস বর্ণনায় বলেন, নাবী (সাঃআঃ) -এর মাথার চুল কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
৩৫৫২. আবু ইসহাক তাবি-ঈ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বারাআ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -কে জিজ্ঞেস করা হল, নাবী (সাঃআঃ) -এর চেহারা মুবারক কি তলোয়ারের মত ছিল? তিনি বলিলেন, না বরং চাঁদের ন্যায় ছিল।
৩৫৫৩. হাকাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু জুহাইফাহ (রাদি.) -কে বলিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেছেন, একদিন নাবী (সাঃআঃ) দুপুর বেলায় বাতহার দিকে বেরোলেন। সে স্থানে উযূ করে যুহরের দুরাকআত ও আসরের দু রাকআত সালাত আদায় করেন। তাহাঁর সামনে একটি বর্শা পোঁতা ছিল। বর্শার বাহির দিয়ে নারীরা যাতায়াত করছিল। সালাত শেষে লোকজন দাঁড়িয়ে গেল এবং নাবী (সাঃআঃ) -এর দু হাত ধরে তারা নিজেদের মাথা ও মুখমণ্ডলে বুলাতে লাগলেন। আমিও নাবী (সাঃআঃ) -এর হাত ধরে আমার মুখমণ্ডলে বুলাতে লাগলাম। তাহাঁর হাত বরফের থেকেও স্নিগ্ধ শীতল ও কস্তুরীর থেকেও বেশি সুগন্ধিময় ছিল।
৩৫৫৪. ইব্ন আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সর্বাপেক্ষা বেশি দানশীল ছিলেন। তাহাঁর দানশীলতা বহুগুন বর্ধিত হত রমাযানের পবিত্র দিনে যখন জিব্রাঈল (আঃ) তাহাঁর সঙ্গে দেখা করিতেন। জিব্রাঈল (আঃ) রমাযানের প্রতি রাতে তাহাঁর সঙ্গে দেখা করে কুরআনের সবক দিতেন। নাবী (সাঃআঃ) কল্যাণ বণ্টনে প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও বেশি দানশীল ছিলেন।
৩৫৫৫. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একদিন নাবী (সাঃআঃ) অত্যন্ত আনন্দিত ও খুশী মনে তাহাঁর নিকট প্রবেশ করিলেন। খুশীর কারণে তাহাঁর চেহারায় খুশীর চিহ্ন পরিস্ফুট হচ্ছিল। তিনি তখন আয়িশাকে বলিলেন, হে আয়িশা! তুমি শুননি, মুদলাজী যায়দ ও উসামাহ সম্পর্কে কী বলেছে? পিতা-পুত্রের শুধু পা দেখে বলিল, এ পাগুলোর একটি অন্যটির অংশ।
৩৫৫৬. আবদুল্লাহ ইব্ন কাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার পিতা কাব ইবন মালিক (রাদি.) -কে তার তাবূক যুদ্ধে না যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে সালাম করলাম, খুশী ও আনন্দে তাহাঁর চেহারা ঝলমল করে উঠলো। তাহাঁর চেহারা এমনিই আনন্দে টগবগ করত। মনে হত যেন চাঁদের একটি টুক্রা। তাহাঁর মুখমণ্ডলের এ অবস্থা হইতে আমরা তা বুঝতে পারতাম।
৩৫৫৭. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আমি বনি আদমের সর্বোত্তম যুগে আবির্ভূত হয়েছি। যুগের পর যুগ অতিবাহিত হয়ে আমি সেই যুগেই এসেছি যে যুগ আমার জন্য নির্দিষ্ট ছিল।
৩৫৫৮. ইব্ন আব্বাস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর চুল পিছনে দিকে আঁচড়ে রাখতেন আর মুশ্রিকগণ তাদের চুল দুভাগ করে সিঁথি কেটে রাখত। আহলে কিতাব তাদের চুল পিছন দিকে আঁচড়ে রাখত। নাবী (সাঃআঃ) যে কোন বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আহলে কিতাবের অনুসরণ পছন্দ করিতেন। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর চুল দুভাগ করে সিঁথি করে রাখতে লাগলেন।
৩৫৫৯. আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলিতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম।
৩৫৬০. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) -কে যখনই দুটি জিনিসের একটি গ্রহণের স্বাধীনতা দেয়া হত, তখন তিনি সহজটিই গ্রহণ করিতেন যদি তা গুনাহ না হত। গুনাহ হইতে তিনি অনেক দূরে অবস্থান করিতেন। নাবী (সাঃআঃ) নিজের ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করা হলে আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রতিশোধ নিতেন।
৩৫৬১. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) -এর হাতের তালুর চেয়ে মোলায়েম কোন নরম ও গরদকেও আমি স্পর্শ করিনি। আর নাবী (সাঃআঃ) -এর শরীরের সুঘ্রাণ অপেক্ষা অধিক সুঘ্রাণ আমি কখনো পাইনি।
৩৫৬২. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) গৃহবাসিনী পর্দানশীন কুমারীদের চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। মুহাম্মদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…. শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে একই রূপ রিওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে। যখন নাবী (সাঃআঃ) কোন কিছু অপছন্দ করিতেন তা চেহারায় বুঝা যেত।
৩৫৬৩. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) কখনো কোন খাদ্যকে মন্দ বলিতেন না। রুচি হলে খেতেন না হলে বাদ দিতেন।
৩৫৬৪. আবদুল্লাহ ইব্ন মালিক ইব্ন বুহায়নাহ আসাদিইয়ি (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যখন সাজদাহ করিতেন, তখন উভয় বাহুকে শরীর হইতে এমনভাবে আলাদা করিতেন যে, আমরা তাহাঁর বগল দেখিতে পেতাম। ইবন বুকাইর বলেন, বক্র হাদীস বর্ণনা করে বলেছেন, তাহাঁর বগলের শুভ্রতা দেখিতে পেতাম।
৩৫৬৫. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইস্তিস্কায় যতটা উঠাতেন অন্য কোন দুআয় তাহাঁর বাহুদ্বয় এতটা ঊর্ধ্বে উঠাতেন না, কেননা এতে হাত এত ঊর্ধ্বে উঠাতেন যে তাহাঁর বগলের শুভ্রতা দেখা যেত। আবু মূসা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হাদীস বর্ণনায় বলেন, আনাস (রাদি.) বলেছেন নাবী (সাঃআঃ) দুআর মধ্যে দুহাত উপরে উঠিয়েছেন এবং আমি তাহাঁর বগলের শুভ্রতা দেখেছি।
৩৫৬৬. আবু জুহায়ফাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, আমাকে নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে নেয়া হল। নাবী (সাঃআঃ) তখন আবতাহ নামক জায়গায় দুপুর বেলায় একটি তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। বিলাল (রাদি.) তাঁবু হইতে বেরিয়ে এসে যুহরের সালাতের আযান দিলেন এবং আবার প্রবেশ করে নাবী (সাঃআঃ) -এর উযূর অবশিষ্ট পানি নিয়ে বেরিয়ে এলেন। লোকজন তা নেওয়ার জন্য ঝাপিয়ে পড়ল। অতঃপর তিনি আবার তাঁবুতে ঢুকে একটি ছোট্ট বর্শা নিয়ে বেরিয়ে আসলেন। নাবী (সাঃআঃ) -ও বেরিয়ে আসলেন। আমি যেন তাহাঁর পায়ের গোছার উজ্জ্বলতা, এখনো দেখিতে পাচ্ছি। বর্শাটি সম্মুখে পুঁতে রাখলেন। অতঃপর যুহরের দু রাকআত এবং পরে আসরের দু রাকআত সালাত আদায় করিলেন। বর্শার বাহির দিয়ে গাধা ও নারীরা চলাফেরা করছিল।
৩৫৬৭. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) এমনভাবে কথা বলিতেন যে, কোন গণনাকারী গুনতে চাইলে তাহাঁর কথাগুলি গণনা করিতে পারত।
৩৫৬৮. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তুমি অমুকের অবস্থা দেখে কি অবাক হও না? তিনি এসে আমার হুজরার পাশে বসে আমাকে শুনিয়ে হাদীস বর্ণনা করেন। আমি তখন সালাতে ছিলাম। আমার সালাত শেষ হবার আগেই তিনি উঠে চলে যান। যদি আমি তাকে পেতাম তবে আমি অবশ্যই তাকে সতর্ক করে দিতাম যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তোমাদের মত দ্রুততার সঙ্গে কথা বলিতেন না।
৬১/২৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর চোখ বন্ধ থাকত কিন্তু তাহাঁর অন্তর থাকত বিনিদ্র।
সাঈদ ইব্ন মীনাআ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জাবির (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন।
৩৫৬৯. আবু সালামা ইব্ন আবদুর রাহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আয়িশা (রাদি.) -কে জিজ্ঞেস করিলেন, রমাযান মাসে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সালাত কেমন ছিল? আয়িশা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) রমাযান মাসে ও অন্যান্য সব মাসের রাতে এগার রাকআতের অধিক সালাত আদায় রকতেন না। প্রথমে চার রাকআত পড়তেন। এ চার রাকআত আদায়ের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর আরো চার রাকআত সালাত আদায় করিতেন। এ চার রাকআতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিন রাকআত আদায় করিতেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি বিতর সালাত আদায়ের পূর্বে ঘুমিয়ে পড়েন? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমার চোখ ঘুমায়, আমার অন্তর ঘুমায় না।
৩৫৭০. আনাস ইব্ন মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি মসজিদে কাবা হইতে রাতে অনুষ্ঠিত ইসরা -এর ঘটনা বর্ণনা করছিলেন যে, তিন ব্যক্তি তাহাঁর নিকট হাযির হলেন মিরাজ সম্পর্কে ওয়াহী অবতরণের পূর্বে। তখন তিনি মাসজিদুল হারামে ঘুমিয়ে ছিলেন। তাঁদের প্রথম জন বলিল, তাদের কোন জন তিনি? মাঝের জন উত্তর দিল, তিনিই তাদের শ্রেষ্ঠ জন। আর শেষজন বলিল, শ্রেষ্ঠ জনকে নিয়ে চল। এ রাতে এটুকুই হলো এবং নাবী (সাঃআঃ) ও তাদেরকে আর দেখেন নাই। অতঃপর আর এক রাতে তাঁরা আসলেন। নাবী (সাঃআঃ) -এর অন্তর তা দেখিতে পাচ্ছিল। যেহেতু নাবী (সাঃআঃ) -এর চোখ ঘুমাত কিন্তু তাহাঁর অন্তর কখনও ঘুমাত না। এভাবে সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের চোখ ঘুমাত কিন্তু অন্তর ঘুমাত না। অতঃপর জিব্রাঈল (আঃ) দায়িত্ব গ্রহণ করিলেন এবং নাবী (সাঃআঃ) -কে নিয়ে আকাশের দিকে চড়তে লাগলেন।
৬১/২৫. অধ্যায়ঃ ইসলামে নবুওয়াতের নিদর্শনাবলী।
৩৫৭১. ইমরান ইব্ন হুসাইন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক সফরে তাঁরা নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে ছিলেন। সারা রাত পথ চলার পর যখন ভোর কাছাকাছি হল, তখন বিশ্রাম নেয়ার জন্য থেমে গেলেন এবং গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে পড়লেন। অবশেষে সূর্য উদিত হয়ে অনেক উপরে উঠে গেল, [ইমরান (রাদি.) বলেন] যিনি সর্বপ্রথম ঘুম হইতে জাগলেন তিনি হলেন আবু বকর (রাদি.)। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নিজে জাগ্রত না হলে তাঁকে জাগানো হত না। অতঃপর উমর (রাদি.) জাগলেন। আবু বকর (রাদি.) তাহাঁর শিয়রের নিকট গিয়ে বসে উচ্চৈঃস্বরে আল্লাহু আকবার বলিতে লাগলেন। শেষে নাবী (সাঃআঃ) জেগে উঠলেন এবং অন্যত্র চলে গিয়ে অবতরণ করে আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করিলেন। তখন এক ব্যক্তি আমাদের সাথে সালাত আদায় না করে দূরে দাঁড়িয়ে থাকল। নাবী (সাঃআঃ) সালাত শেষ করে বলিলেন, হে অমুক! আমাদের সঙ্গে সালাত আদায় করিতে কিসে বাধা দিল? লোকটি বলিল, আমি অপবিত্র হয়েছি। নাবী (সাঃআঃ) তাকে পাক মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করার নির্দেশ দিলেন, অতঃপর সে সালাত আদায় করিল। (ইমরান (রাদি.) বলেন) নাবী (সাঃআঃ) আমাকে অগ্রবর্তী দলের সঙ্গে পাঠিয়ে দিলেন এবং আমরা ভীষণ তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়লাম। এই অবস্থায় আমরা পথ চলছি। হঠাৎ উষ্ট্রে আরোহী এক মহিলা আমাদের নজরে পড়ল। সে পানি ভর্তি দুটি মশকের মাঝখানে পা ঝুলিয়ে বসে ছিল। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, পানি কোথায়? সে বলিল (আশেপাশে) কোথাও পানি নেই। আমরা বললাম, তোমার ও পানির জায়গার মধ্যে দূরত্ব কতটুকু? সে বলিল একদিন ও এক রাতের দূরত্ব। আমরা তাকে বললাম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট চল। সে বলিল, আল্লাহর রাসুল কী? আমরা তাকে যেতে না দিয়ে তাকে নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট নিয়ে গেলাম। নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে এসেও ঐ রকম কথাই বলিল যা সে আমাদের সঙ্গে বলেছিল। তবে সে তাহাঁর নিকট বলিল, সে কয়েকজন ইয়াতীম সন্তানের মা। নাবী (সাঃআঃ) তার মশক দুটি নামিয়ে ফেলতে আদেশ করিলেন। অতঃপর তিনি মশক দুটির মুখে হাত বুলালেন। আমরা তৃষ্ণার্ত চল্লিশ জন মানুষ পানি পান করে পিপাসা মিটালাম। অতঃপর আমাদের সকল মশক, বাসনপত্র পানি ভর্তি করে নিলাম। তবে উটগুলোকে পানি পান করান হয়নি। এত সবের পরও মহিলার মশকগুলো এত পানি ভর্তি ছিল যে তা ফেটে যাবার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমাদের নিকট যা কিছু আছে উপস্থিত কর। কিছু খেজুর ও রুটির টুকরা জমা করে তাঁকে দেয়া হল। এ নিয়ে নারীটি খুশীর সঙ্গে তার গৃহে ফিরে গেল। গৃহে গিয়ে সকলের নিকট সে বলিল, আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল, এক মহা যাদুকরের সঙ্গে অথবা মানুষ যাকে নাবী বলে ধারণা করে তার সঙ্গে। আল্লাহ এই মহিলার মাধ্যমে এ বস্তিবাসীকে হিদায়াত দান করিলেন। স্ত্রীলোকটি নিজেও ইসলাম গ্রহণ করিল এবং বস্তিবাসী সকলেই ইসলাম গ্রহণ করিল।
৩৫৭২. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট একটি পানির পাত্র আনা হল, তখন তিনি যাওরা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর হাত ঐ পাত্রে রেখে দিলেন আর তখনই পানি অঙ্গুলির ফাঁক দিয়ে উপচে পড়তে লাগল। ঐ পানি দিয়ে উপস্থিত সকলেই উযূ করে নিলেন। ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আনাস (রাদি.) -কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বলিলেন, আমরা তিনশ কিংবা প্রায় তিনশ জন ছিলাম।
৩৫৭৩. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে দেখিতে পেলাম যখন আসরের সালাতের সময় সন্নিকট। সকলেই পেরেশান হয়ে পানি খুঁজছেন কিন্তু পানি পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট উযূর পানি আনা হল। নাবী (সাঃআঃ) সে পাত্রে তাহাঁর হাত রেখে দিলেন এবং সকলকে ঐ পাত্রের পানি দ্বারা উযূ করিতে নির্দেশ দিলেন। আমি দেখলাম তাহাঁর হাতের নীচ হইতে পানি সজোরে উথ্লে পড়ছিল। তাদের শেষ ব্যক্তিটি পর্যন্ত সকলেই এই পানি দিয়ে উযূ করিলেন।
৩৫৭৪. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) কোন এক সফরে বেরিয়ে ছিলেন। তাহাঁর সঙ্গে সাহাবাগণও ছিলেন। তারা চলতে লাগলেন, তখন সালাতের সময় হয়ে গেল, কিন্তু উযূ করার জন্য কোথাও পানি পাওয়া গেল না। কাফেলার এক ব্যক্তি সামান্য পানিসহ একটি পেয়ালা নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট উপস্থিত করিলেন। তিনি পেয়ালাটি হাতে নিয়ে তারই পানি দ্বারা উযূ করিলেন এবং তাহাঁর হাতের চারটি আঙ্গুল পেয়ালার মধ্যে সোজা করে ধরে রাখলেন। আর বলিলেন, উঠ তোমরা উযূ কর। সকলেই ইচ্ছামত উযূ করে নিলেন। তারা ছিলেন সত্তর বা এর কাছাকাছি।
৩৫৭৫. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সালাতের সময় উপস্থিত হল। যাদের বাড়ি মসজিদের নিকটে ছিল তারা উযূ করার জন্য নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেলেন। কিন্তু কিছু সংখ্যক লোক গেলেন না। তখন নাবী (সাঃআঃ) -এর সামনে পাথরের তৈরি একটি পাত্র আনা হল। এতে সামান্য পানি ছিল। নাবী (সাঃআঃ) ঐ পাত্রে তাহাঁর হাত রাখলেন। কিন্তু পাত্রটি ছোট্ট হওয়ার কারণে হাতের আঙ্গুলগুলো বিস্তৃত করিতে পারলেন না বরং একত্রিত করে রেখে দিলেন। অতঃপর উপস্থিত লোকেরা ঐ পানি দ্বারাই উযূ করে নিল। হুমাইদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আনাস (রাদি.) -কে জিজ্ঞেস করলাম আপনারা কতজন ছিলেন? বলিলেন, আশি জন।
৩৫৭৬. জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুদাইবিয়ায় অবস্থানের সময় একদা সাহাবাগণ পিপাসায় খুব কাতর হয়ে পড়লেন। নাবী (সাঃআঃ) -এর সামনে একটি পাত্রে অল্প পানি ছিল। তিনি উযূ করিলেন। তাহাঁর নিকট পানি আছে ধারণা করে সকলে সেদিকে গেলেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমাদের কী হয়েছে? তাঁরা বলিলেন, আপনার সামনের পাত্রের সামান্য পানি ছাড়া উযূ ও পান করার মত পানি আমাদের নিকট নাই। নাবী (সাঃআঃ) ঐ পাত্রে তাহাঁর হাত রাখলেন। তখনই তাহাঁর হাত উপচে ঝর্ণা ধারার মত পানি ছুটে বের হইতে লাগলো। আমরা সকলেই পানি পান করলাম ও উযূ করলাম। সারিম (একজন রাবী) বলেন, আমি জাবির (রাদি.) -কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বলিলেন, আমরা যদি এক লক্ষও হতাম তবুও আমাদের জন্য পানি যথেষ্ট হত। আমরা ছিলাম পনেরশ।
৩৫৭৭. বারাআ (ইবনু আযিব) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে হুদাইবিয়ায় চৌদ্দশ লোক ছিলাম। হুদাইবিয়াহ একটি কূপ, আমরা তা থেকে পানি এমন ভাবে উঠিয়ে নিলাম যে তাতে এক ফোঁটা পানিও অবশিষ্ট থাকল না। নাবী (সাঃআঃ) কূপের কিনারায় বসে কিছু পানি আনার আদেশ করিলেন। তিনি কুলি করে ঐ পানি কূপে নিক্ষেপ করিলেন। অল্প সময় অপেক্ষা করলাম। তখন কূপটি পানিতে পূর্ণ হয়ে গেল। আমরা পানি পান করে তৃপ্তি লাভ করলাম, আমাদের উটগুলোও পানি পান করে পরিতৃপ্ত হল। অথবা বলেছেন আমাদের উটগুলো পানি পান করে ফিরল।
৩৫৭৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু ত্বলহা (রাদি.) উম্মু সুলায়মকে বলিলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর কণ্ঠস্বর দুর্বল শুনিয়াছি। আমি তাহাঁর মধ্যে ক্ষুধা বুঝতে পেরেছি। তোমার নিকট খাবার কিছু আছে কি? তিনি বলিলেন, হাঁ আছে। এই বলে তিনি কয়েকটা যবের রুটি বের করিলেন। অতঃপর তাহাঁর একখানা ওড়না বের করে কিয়দংশ দিয়ে রুটিগুলো মুড়ে আমার হাতে গোপন করে রেখে দিলেন ও ওড়নার অপর অংশ আমার শরীরে জড়িয়ে দিলেন এবং আমাকে নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট পাঠালেন। রাবী আনাস বলেন, আমি তাহাঁর নিকট গেলাম। ঐ সময় তিনি কতক লোকসহ মসজিদে ছিলেন। আমি গিয়ে তাঁদের সামনে দাঁড়ালাম। নাবী (সাঃআঃ) আমাকে দেখে বলিলেন, তোমাকে আবু ত্বলহা পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি, হাঁ। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, খাওয়ার দাওআত দিয়ে পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি- হাঁ। তখন নাবী (সাঃআঃ) সঙ্গীদেরকে বলিলেন, চল, আবু ত্বলহা আমাকে দাওআত করেছে। আমি তাঁদের আগেই চলে গিয়ে আবু ত্বলহা (রাদি.) -কে নাবী (সাঃআঃ) -এর আগমনের কথা শুনালাম। এতদশ্রবণে আবু ত্বলহা (রাদি.) বলেন, হে উম্মু সুলায়ম! নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সঙ্গী সাথীদেরকে নিয়ে আসছেন। তাঁদেরকে খাওয়ানোর মত কিছু আমাদের নিকট নেই। উম্মু সুলায়ম (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলই ভালো জানেন। আবু ত্বলহা (রাদি.) তাঁদেরকে স্বাগত জানানোর জন্য বাড়ি হইতে কিছুদূর এগুলেন এবং নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে দেখা করিলেন এবং নাবী (সাঃআঃ) আবু ত্বলহা (রাদি.) -কে সঙ্গে নিয়ে তার ঘরে আসলেন, আর বলিলেন, হে উম্মু সুলায়ম! তোমার নিকট যা কিছু আছে নিয়ে এসো। তিনি যবের ঐ রুটিগুলি হাজির করিলেন এবং তাহাঁর নির্দেশে রুটিগুলো টুকরা টুকরা করা হল। উম্মু সুলায়ম ঘিয়ের পাত্র ঝেড়ে কিছু ঘি বের করে তরকারী হিসেবে উপস্থিত করিলেন। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) পাঠ করে তাতে ফুঁ দিলেন অতঃপর দশজনকে নিয়ে আসতে বলিলেন। তাঁরা দশজন আসলেন এবং রুটি খেয়ে তৃপ্ত হয়ে চলে গেলেন। অতঃপর আরো দশজনকে আসতে বলা হল। তারা আসলেন এবং তৃপ্তি সহকারে রুটি খেয়ে চলে গেলেন। আবার আরো দশজনকে আসতে বলা হল। তাঁরাও আসলেন এবং পেট পুরে খেয়ে নিলেন। ঐভাবে উপস্থিত সকলেই রুটি খেয়ে তৃপ্ত হলেন। সর্বমোট সত্তর বা আশিজন লোক ছিলেন।
৩৫৭৯. আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নিদর্শনাবলীকে বরকতময় মনে করতাম আর তোমরা ঐসব ঘটনাকে ভীতিকর মনে কর। আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে কোন এক সফরে ছিলাম। আমাদের পানি কমে আসলো। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, অতিরিক্ত পানি খোঁজ কর। (খুঁজে) সাহাবীগণ একটি পাত্র নিয়ে আসলেন যার ভিতর সামান্য পানি ছিল। নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর হাত ঐ পাত্রের ভিতর ঢুকিয়ে দিলেন এবং ঘোষণা করিলেন, বরকতময় পানি নিতে সকলেই এসো। এ বরকত আল্লাহ তাআলার পক্ষ হইতে দেয়া হয়েছে। তখন আমি দেখিতে পেলাম আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে পানি উপচে পড়ছে। কখনও আমরা খাবারের তাসবীহ পাঠ শুনতাম আর তা খাওয়া হত।
৩৫৮০. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর পিতা (আবদুল্লাহ (রাদি.) উহুদ যুদ্ধে) ঋণ রেখে শাহাদাত লাভ করেন। তখন আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আমার পিতা অনেক ঋণ রেখে গেছেন। আমার কাছে বাগানের কিছু খেজুর ছাড়া অন্য কোন মাল নেই। কয়েক বছরের খেজুর একত্র করলেও তাহাঁর ঋণ শোধ হইবে না। আপনি দয়া করে আমার সঙ্গে চলুন, যাতে পাওনাদার আমার প্রতি কঠোর মনোভাব গ্রহণ না করে। নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সঙ্গে গেলেন এবং খেজুরের একটি স্তূপের চারপাশে ঘুরে দুআ করিলেন। অতঃপর অন্য স্তূপের নিকটে গেলেন এবং এর উপরে বসলেন এবং জাবির (রাদি.) -কে বলিলেন, খেজুর বের করে দিতে থাক। সকল পাওনাদারের প্রাপ্য শোধ হয়ে গেল আর তাদের যত দিলেন তত থেকে গেল।
৩৫৮১. আবদুর রাহমান ইবনু আবু বকর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আসহাবে সুফফায় কতক অসহায় গরীব লোক ছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) একবার বলিলেন, যার ঘরে দুজনের খাবার আছে সে যেন এদের মধ্য হইতে তৃতীয় একজন নিয়ে যায়। আর যার ঘরে চার জনের খাবার রহিয়াছে সে এদের মধ্য হইতে পঞ্চম একজন বা ষষ্ঠ একজনকে নিয়ে যায় অথবা নাবী (সাঃআঃ) যা বলেছেন। আবু বকর (রাদি.) তিনজন নিলেন। আর নাবী (সাঃআঃ) নিয়ে গেলেন দশজন এবং আবু বকর (রাদি.) তিনজন। আবদুর রহমান (রাদি.) বলেন, আমি, আমার আব্বা ও আম্মা। আবু উসমান (রাদি.) রাবী বলেন, আমার মনে নাই আবদুর রাহমান (রাদি.) কি এও বলেছিলেন যে, আমার স্ত্রী ও আমাদের পিতা-পুত্রের একজন গৃহভৃত্যও ছিল। আবু বকর (রাদি.) ঐ রাতে নাবীজীর বাড়িতেই খেয়ে নিলেন এবং ইশার সালাত পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করিলেন। ইশার সালাতের পর পুনরায় তিনি নাবী (সাঃআঃ) -এর গৃহে গমন করিলেন। নাবী (সাঃআঃ) -এর রাতের খাবার খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করিলেন। অনেক রাতের পর বাড়ী ফিরলেন। তখন তাহাঁর স্ত্রী তাঁকে বলিলেন, মেহমান পাঠিয়ে আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? তিনি বলিলেন, তাদের কি এখনো রাতের খাবার দাওনি? স্ত্রী বলিলেন, আপনার না আসা পর্যন্ত তারা খাবার খেতে রাযী হননি। তাদেরকে ঘরের লোকজন খাবার দিয়েছিল। কিন্তু তাদের অসম্মতির নিকট আমাদের লোকজন হার মেনেছে। আবদুর রাহমান (রাদি.) বলেন, আমি তাড়াতাড়ি সরে পড়লাম। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, ওরে বেওকুফ! আহম্মক! আরো কিছু কড়া কথা বলে ফেললেন। অতঃপর মেহমান পক্ষকে সম্বোধন করে বলিলেন, আপনারা খেয়ে নিন। আমি কিছুতেই খাব না। আবদুর রহমান (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম, আমরা যখন গ্রাস তুলে নেই তখন দেখি পাত্রের খাবার অনেক বেড়ে যায়। খাওয়ার শেষে আবু বকর (রাদি.) দেখলেন তৃপ্ত হয়ে আহারের পরেও পাত্রে খাবার আগের চেয়ে বেশি রয়ে গেছে। তখন স্ত্রীকে বলিলেন, হে বনী ফিরাস গোত্রের বোন! ব্যাপার কি? তিনি বলিলেন, হে আমার নয়নমণি! খাদ্যের পরিমাণ এখন তিনগুনের চেয়েও অধিক রহিয়াছে। আবু বকর (রাদি.) তা হইতে কয়েক লোকমা খেলেন এবং বলিলেন, আমার কসম শয়তানের প্ররোচনায় ছিল। অতঃপর অবশিষ্ট খাদ্য নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট নিয়ে গেলেন এবং ভোর পর্যন্ত ঐ খাদ্য নাবী (সাঃআঃ) -এর হিফাযতে রইল। রাবী বলেন, আমাদের ও অন্য একটি গোত্রের মধ্যে সন্ধি ছিল। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াতে তাদের মোকাবেলা করার জন্য আমাদের বার জনকে নেতা বানানো হল। প্রত্যেক নেতার অধীনে আবার কয়েকজন করে লোক ছিল। আল্লাহই ভাল জানেন তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে কতজন করে দেয়া হয়েছিল! আবদুর রহমান (রাদি.) বলেন, এদের সকলেই এ খাবার হইতে খেয়ে নিলেন। অথবা তিনি যেমন বলেছেন।
৩৫৮২. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর যুগে একবার মদীনাবাসী অনাবৃষ্টির কারণে দুর্ভিক্ষে নিপতিত হল। এ সময় কোন এক জুমুআর দিনে নাবী (সাঃআঃ) খুতবা দিয়েছিলেন, তখন এক লোক উঠে দাঁড়াল এবং বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! ঘোড়াগুলো নষ্ট হয়ে গেল, বকরীগুলো ধ্বংস হয়ে গেল। আল্লাহর দরবারে বৃষ্টির জন্য দুআ করুন। নাবী (সাঃআঃ) তৎক্ষণাৎ দুহাত উঠিয়ে দুআ করিলেন। আনাস (রাদি.) বলেন, তখন আকাশ কাঁচের মত নির্মল ছিল। হঠাৎ মেঘ সৃষ্টিকারী বাতাস শুরু হল এবং মেঘ ঘনীভূত হয়ে গেল। অতঃপর শুরু হল প্রবল বৃষ্টিপাত যেন আকাশ তার দরজা খুলে দিল। আমরা পানি ভেঙ্গে বাড়ী পৌঁছলাম। পরবর্তী শুক্রবার পর্যন্ত অনবরত বৃষ্টিপাত হল। ঐ শুক্রবারে জুমুআর সময় ঐ ব্যক্তি বা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! গৃহগুলো ধ্বংস হয়ে গেল। বৃষ্টি বন্ধের জন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করুন। তখন নাবী (সাঃআঃ) মুচকি হাসলেন এবং বলিলেন, আমাদের আশে পাশে বৃষ্টি হোক। আমাদের উপর নয়। [আনাস (রাদি.) বলেন,] তখন আমি দেখলাম, মদীনা আকাশ হইতে মেঘরাশি চারিদিকে সরে গেছে আর মদীনাকে মুকুটের মত মনে হচ্ছে।
৩৫৮৩. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, নাবী (সাঃআঃ) খেজুরের একটি কাণ্ডের সঙ্গে খুতবা প্রদান করিতেন। যখন মিম্বার তৈরি করে দেয়া হল। তখন তিনি মিম্বরে উঠে খুতবা দিতে লাগলেন। কাণ্ডটি তখন কাঁদতে শুরু করিল। নাবী (সাঃআঃ) কাণ্ডটির নিকটে গিয়ে হাত বুলাতে লাগলেন। উপরোক্ত হাদীসটি আবদুল হামীদ ও আবু আসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…ইবনু উমর (রাদি.) সূত্রে… নাবী (সাঃআঃ) হইতে একইভাবে বর্ণনা করিয়াছেন।
৩৫৮৪. জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) একটি বৃক্ষের উপর কিংবা একটি খেজুর বৃক্ষের কাণ্ডের উপর শুক্রবারে খুতবা দেয়ার জন্য দাঁড়াতেন। এমতাবস্থায় একজন আনসারী মহিলা অথবা পুরুষ বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার জন্য একটি মিম্বার বানিয়ে দিব? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমাদের ইচ্ছে হলে দিতে পার। অতঃপর তারা একটি কাঠের মিম্বার বানিয়ে দিলেন। যখন শুক্রবার এল নাবী (সাঃআঃ) মিম্বারে বসলেন, তখন কাণ্ডটি শিশুর মত চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। নাবী (সাঃআঃ) মিম্বার হইতে নেমে এসে ওটাকে জড়িয়ে ধরলেন। কিন্তু কাণ্ডটি শিশুর মত আরো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। রাবী বলেন, কাণ্ডটি এজন্য কাঁদছিল যেহেতু সে খুতবাকালে যিকর শুনতে পেত।
৩৫৮৫. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
প্রথন দিকে খেজুরের কয়েকটি কাণ্ডের উপর মসজিদে নববীর ছাদ করা হয়েছিল। নাবী (সাঃআঃ) যখনই খুতবা দানের ইচ্ছা করিতেন, তখন একটি কাণ্ডে হেলান দিয়ে দাঁড়াতেন। অতঃপর তাহাঁর জন্য মিম্বার তৈরি করে দেয়া হলে তিনি সেই মিম্বারে উঠে দাঁড়াতেন। ঐ সময় আমরা কাণ্ডটি হইতে দশ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রীর স্বরের মত কান্নার আওয়াজ শুনলাম। শেষে নাবী (সাঃআঃ) তার কাছে এসে তাকে হাত বুলিয়ে সোহাগ করিলেন। অতঃপর কাণ্ডটি শান্ত হল।
৩৫৮৬. উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কে নাবী (সাঃআঃ) -এর ফিতনা সম্বন্ধীয় হাদীস স্মরণ রেখেছ যেমনভাবে তিনি বর্ণনা করিয়াছেন। হুযাইফাহ (রাদি.) বলিলেন, আমিই সর্বাধিক মনে রেখেছি। উমর (রাদি.) বলিলেন, বর্ণনা কর, তুমি তো অত্যন্ত সাহসী ব্যক্তি। হুযাইফাহ (রাদি.) বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, মানুষের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, এবং প্রতিবেশী দ্বারা সৃষ্ট ফিতনা-ফাসাদের ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে সালাত, সাদকা এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করার দ্বারা। উমর (রাদি.) বলিলেন, আমি এ ধরনের ফিতনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিনি বরং উদ্বেলিত সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ভীষণ আঘাত হানে ঐ ধরনের ফিতনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। হুযাইফাহ (রাদি.) বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এ ধরনের ফিতনা সম্পর্কে আপনার শঙ্কিত হবার কোন কারণ নেই। আপনার এবং এ জাতীয় ফিতনার মধ্যে একটি সুদৃঢ় কপাট বন্ধ অবস্থায় রহিয়াছে। উমর (রাদি.) জিজ্ঞেস করিলেন, এ কপাটটি কি খোলা হইবে, না ভেঙ্গে ফেলা হইবে? হুযাইফাহ (রাদি.) বলেন, ভেঙ্গে ফেলা হইবে। উমর (রাদি.) বলিলেন, তা হলে এ কপাটটি আর সহজে বন্ধ করা যাবে না। আমরা হুযাইফাহকে জিজ্ঞেস করলাম, উমর (রাদি.) কি জানতেন, ঐ কপাট দ্বারা কাকে বুঝানো হয়েছে? তিনি বলিলেন, অবশ্যই; যেমন নিশ্চিতভাবে জানতেন আগামী দিনের পূর্বে আজ রাতের আগমন অনিবার্য। আমি তাঁকে এমন একটি হাদীস শুনিয়েছি, যাতে ভুল-চুকের সুযোগ নেই। আমরা হুযাইফাহকে ভয়ে জিজ্ঞেস করিতে সাহস পাইনি, তাই মাসরূককে বললাম, মাসরূক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জিজ্ঞেস করিলেন, এ বন্ধ কপাট কে? হুযাইফাহ (রাদি.) বলিলেন, উমর (রাদি.) স্বয়ং।
৩৫৮৭. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, কিয়ামত সংঘটিত হইবে না যতক্ষণ না তোমাদের যুদ্ধ হইবে এমন এক জাতির সঙ্গে যাদের পায়ের জুতা হইবে পশমের এবং যতক্ষণ না তোমাদের যুদ্ধ হইবে তুর্কদের সাথে যাদের চক্ষু ছোট, নাক চেপ্টা, চেহারা লাল বর্ণ যেন তাদের চেহারা পেটানো ঢাল।
৩৫৮৮. বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম মানুষ হইবে যারা নেতৃত্ব ও শাসন ক্ষমতায় জড়িয়ে না যাওয়া পর্যন্ত একে অত্যন্ত অপছন্দ করিবে। মানুষ খণির মত। যারা জাহিলীয়্যাতের যুগে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম, ইসলাম গ্রহনের পরও তারা শ্রেষ্ঠ ও উত্তম।
৩৫৮৯. বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
তোমাদের নিকট এমন যুগ আসবে যখন তোমাদের পরিবার-পরিজনরা ধন-সম্পদের অধিকারী হবার চাইতেও আমার সাক্ষাৎ পাওয়া তার নিকট অত্যন্ত প্রিয় বলে গণ্য হইবে।
৩৫৯০. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, কিয়ামত সংঘটিত হইবেনা যে পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ না হইবে খুয ও কিরমান নামক স্থানে (বসবাসরত) অনারব জাতিগুলোর সঙ্গে, যাদের চেহারা লালবর্ণ, চেহারা যেন পিটানো ঢাল, নাক চেপ্টা, চোখ ছোট এবং জুতা পশমের। ইয়াহইয়া ছাড়া অন্যান্য রাবীগণ ও আব্দুর রাজ্জাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে পূর্বের হাদীস বর্ণনায় তার অনুসরণ করিয়াছেন।
৩৫৯১. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর সাথে তিন বছর কাটিয়েছি। আমার জীবনে হাদীস মুখস্থ করার আগ্রহ এ তিন বছরের চেয়ে বেশি আর কখনো ছিল না। আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে হাত দ্বারা এভাবে ইশারা করে বলিতে শুনিয়াছি, কিয়ামতের পূর্বে তোমরা এমন এক জাতির সঙ্গে যুদ্ধ করিবে যাদের জুতা হইবে পশমের। এরা হইবে পারস্যবাসী অথবা পাহাড়বাসী অনারব এবং একবার সুফইয়ান বলেছেন, তারা পারস্যবাসী বা পাহাড়বাসী অনারব।
৩৫৯২. আমর ইবনু তাগলিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা কিয়ামতের আগে এমন এক জাতির সঙ্গে যুদ্ধ করিবে যারা পশমের জুতা ব্যবহার করে এবং তোমরা এমন এক জাতির সঙ্গে লড়াই করিবে যাদের মুখমণ্ডল হইবে পিটানো ঢালের মত।
৩৫৯৩. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি, ইয়াহূদীরা তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হইবে। তখন জয়লাভ করিবে তোমরাই। স্বয়ং পাথরই বলবে, হে মুসলিম, এইতো ইয়াহূদী আমার পেছনে, একে হত্যা কর।
৩৫৯৪. আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, (ভবিষ্যতে) মানুষের নিকট এমন এক সময় আসবে যে, তারা জিহাদ করিবে। তখন তাদেরকে বলা হইবে, তোমাদের মধ্যে এমন কোন লোক আছেন কি যিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সঙ্গ লাভ করিয়াছেন? তখন তারা বলবে, হাঁ। তখন তাদেরকে জয়ী করা হইবে। অতঃপরও তারা আরো জিহাদ করিবে। তখন তাদের বলা হইবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি সাহাবাদের সঙ্গ লাভ করিয়াছেন? তখন তারা বলবে, হাঁ। তখন তাদেরকে জয়ী করা হইবে।
৩৫৯৫. আদি ইবনু হাতিম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ) -এর মজলিসে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এসে দুর্ভিক্ষের অভিযোগ করিল। অতঃপর আর এক ব্যক্তি এসে ডাকাতের উপদ্রবের কথা বলে অনুযোগ করিল। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আদী! তুমি কি হীরা নামক স্থানটি দেখেছ? আমি বললাম, দেখি নাই, তবে স্থানটি আমার জানা আছে। তিনি বলিলেন, তুমি যদি দীর্ঘজীবী হও তবে দেখবে একজন উষ্ট্রারোহী হাওদানশীল মহিলা হীরা হইতে রওয়ানা হয়ে বায়তুল্লাহ শরীফে তাওয়াফ করে যাবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করিবে না। আমি মনে মনে বলিতে লাগলাম তাঈ গোত্রের ডাকাতগুলো কোথায় থাকবে যারা ফিতনা ফাসাদের আগুন জ্বালিয়ে দেশকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলিলেন, তুমি যদি দীর্ঘজীবী হও, তবে নিশ্চয়ই দেখিতে পাবে যে তোমরা কিসরার ধনভাণ্ডার দখল করেছ। আমি বললাম, কিসরা ইবনু হুরমুযের? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হাঁ, কিসরা ইবনু হুরমুযের। তোমার আয়ু যদি দীর্ঘ হয়, তবে অবশ্যই তুমি দেখিতে পাবে, লোকজন মুঠভরা যাকাতের স্বর্ণ-রৌপ্য নিয়ে বের হইবে এবং এমন ব্যক্তির খোঁজ করে বেড়াবে যে তাদের এ মাল গ্রহণ করে। কিন্তু গ্রহণকারী একটি লোকও পাবে না। তোমাদের প্রত্যেকটি মানুষ কিয়ামত দিবসে মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করিবে। তখন তার ও আল্লাহর মাঝে অন্য কোন দোভাষী থাকবে না যিনি ভাষান্তর করে বলবেন। আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমার নিকট আমার বাণী পৌঁছানোর জন্য রাসুল প্রেরণ করিনি? সে বলবে হাঁ, প্রেরণ করিয়াছেন। আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাকে ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি দান করিনি এবং দয়া মেহেরবাণী করিনি? তখন সে বলবে, হাঁ দিয়েছেন। অতঃপর সে ডানদিকে নযর করিবে, জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখিতে পাবে না। আবার সে বাম দিকে নযর করিবে, তখনো সে জাহান্নাম ছাড়া কিছুই দেখবে না। আদী (রাদি.) বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি, আধখানা খেজুর দান করে হলেও জাহান্নামের আগুন হইতে নিজেকে রক্ষা কর আর যদি তাও করার তৌফিক না হয় তবে মানুষের জন্য ভালো কথা বলে নিজেকে আগুন থেকে রক্ষা কর। আদী (রাদি.) বলেন, আমি নিজে দেখেছি, এক উষ্ট্রারোহী মহিলা হীরা হইতে একাকী রওয়ানা হয়ে কাবাহ শরীফ তাওয়াফ করেছে। সে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও ভয় করে না। আর পারস্য সম্রাট কিসরা ইবনু হুরমুযের ধনভাণ্ডার যারা দখল করেছিল, তাদের মধ্যে আমি একজন ছিলাম। তোমরা যদি আরও কিছুদিন বেঁচে থাক তাহলে দেখিতে পাবে যেমন (ভবিষ্যদ্বাণী হিসাবে) আবুল কাসিম (সাঃআঃ) যা বলেছেন, এক ব্যক্তি এক মুষ্টি ভর্তি সোনা-রূপা নিয়ে বের হইবে কিন্তু কেউ নিতে চাইবে না।
মুহিল্লি ইবনু খলীফাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আদী ইবনু হাতিমকে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেন, একদা আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। (বাকী হাদীস পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপঃ এই বর্ণনায় মুহিল্লি ইবনু খলীফা হাদীসটি আদী ইবনু হাতিম হইতে শুনেছেন বলে উল্লেখিত হয়েছে)
৩৫৯৬. উকবাহ ইবনু আমির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একদা নাবী (সাঃআঃ) বের হয়ে মৃত ব্যক্তির সালাতে জানাযার মত উহুদ যুদ্ধে শহীদ সাহাবাগণের কবরের পার্শ্বে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর ফিরে এসে মিম্বারে উঠে বলিলেন, আমি তোমাদের জন্য অগ্রগামী ব্যক্তি, আমি তোমাদের হয়ে আল্লাহর দরবারে সাক্ষ্য দিব। আল্লাহর কসম, আমি এখানে বসে থেকেই আমার হাউযে কাওসার দেখিতে পাচ্ছি। পৃথিবীর ধন-ভাণ্ডারের চাবি আমার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম! আমার মৃত্যুর পর তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে এ আশঙ্কা আমি করি না। তবে আমি তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি যে, দুনিয়ার ধন-সম্পদের মোহে তোমরা আত্নকলহে লিপ্ত হয়ে পড়বে।
৩৫৯৭. উসামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) একদা মদীনায় একটি উঁচু টিলায় উঠলেন, অতঃপর বলিলেন, আমি যা দেখছি, তোমরা কি তা দেখিতে পাচ্ছ? আমি দেখছি পানির স্রোতের মত ফাসাদ ঢুকে পড়ছে তোমাদের ঘরে ঘরে।
৩৫৯৮.যায়নাব বিনতু জাহশ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একদা নাবী (সাঃআঃ) ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে পড়তে তাহাঁর গৃহে প্রবেশ করিলেন এবং বলিতে লাগলেন, শীঘ্রই একটি দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি হইবে। এতে আরবের ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। ইয়াজুজ ও মাজুজের দেয়ালে এতটুকু পরিমাণ ছিদ্র হয়ে গিয়েছে, একথা বলে দুটি আঙ্গুল গোলাকার করে দেখালেন। যায়নাব (রাদি.) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, “হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি ধ্বংস হয়ে যাব, অথচ আমাদের মধ্যে বহু নেক ব্যক্তি আছেন?” নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হ্যাঁ, যখন অশ্লীলতা বেড়ে যাবে।
৩৫৯৯. উম্মু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) জেগে উঠলেন এবং বলিতে লাগলেন, সুবাহানাল্লাহ, আজ কী অফুরন্ত ধনভাণ্ডার অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তারই সঙ্গে অগণিত ফিতনা-ফাসাদ নাযিল করা হয়েছে।
৩৬০০. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আবু সাসাআহকে বলিলেন, তোমাকে দেখছি তুমি বকরীকে অত্যন্ত ভালবেসে এদেরকে সর্বদা লালন-পালন কর, তাই, তুমি এদের যত্ন কর এবং রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা কর। আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি, এমন এক সময় আসবে, যখন বকরীই হইবে মুসলিমের উত্তম সম্পদ। তাকে নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় বৃষ্টি বর্ষণের স্থানে চলে যাবে এবং তাঁদের দীনকে ফিতনা থেকে রক্ষা করিবে।
৩৬০১. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, শীঘ্রই ফিতনা রাশি আসতে থাকবে। ঐ সময় উপবিষ্ট ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে উত্তম (নিরাপদ), দাঁড়ানো ব্যক্তি ভ্রাম্যমান ব্যক্তি হইতে অধিক রক্ষিত আর ভ্রাম্যমান ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে অধিক বিপদমুক্ত। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে চোখ তুলে তাকাবে ফিতনা তাকে গ্রাস করিবে। তখন যদি কোন ব্যক্তি তার দ্বীন রক্ষার জন্য কোন ঠিকানা অথবা নিরাপদ আশ্রয় পায়, তবে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করাই উচিৎ হইবে।
৩৬০২. ইবনু শিহাব যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
ইবন শিহাব যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…. নাওফাল ইবন মুআবিয়া (রাদি.) হইতে আবু হুরায়রা (রাদি.) -এর হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। তবে অতিরিক্ত আর একটি কথাও বর্ণনা করিয়াছেন যে এমন একটি সালাত রহিয়াছে যে ব্যক্তির ঐ সালাত ফওত হয়ে গেল, তার পরিবার-পরিজন ধন-সম্পদ সবই যেন ধ্বংস হয়ে গেল।
৩৬০৩. ইব্ন মাসঊদ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, শীঘ্রই স্বজনপ্রীতির বিস্তৃতি ঘটবে এবং এমন ব্যাপার ঘটবে যা তোমরা পছন্দ করিতে পারবে না। সাহাবাগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ঐ অবস্থায় আমাদের কী করিতে বলেন? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করিবে আর তোমাদের প্রাপ্য আল্লাহর কাছে চাইবে।
৩৬০৪. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, কুরাইশ গোত্রের এ লোকগুলি (যুবকগণ) মানুষের ধ্বংস ডেকে আনবে। সাহাবাগণ বলিলেন, তখন আমাদেরকে আপনি কী করিতে বলেন? তিনি বলিলেন, মানুষেরা যদি এদের সংসর্গ ত্যাগ করত তবে ভালই হত।
৩৬০৫. আহমদ ইব্ন মুহাম্মাদ মাক্কী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…. সাঈদ উমাব্বী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি আবু হুরায়রা (রাদি.) এবং মারওয়ান (রাদি.) -এর নিকট ছিলাম। আবু হুরায়রা (রাদি.) বলিতে লাগলেন, আমি সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি, আমার উম্মাতের ধ্বংস কুরাইশের কতকগুলি অল্প বয়স্ক যুবকের হাতে এবং মারওয়ান বলিলেন, অল্প বয়স্ক ছেলেদের হাতে। আবু হুরায়রা (রাদি.) বলেন, তুমি শুনতে চাইলে তাদের নামও বলিতে পারি, অমুকের ছেলে অমুক, অমুকের ছেলে অমুক।
৩৬০৬ হুযাইফাহ ইব্ন ইয়ামান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, লোকজন নাবী (সাঃআঃ) -কে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিতেন আর আমি তাঁকে অকল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম; এই ভয়ে যেন আমি ঐ সবের মধ্যে পড়ে না যাই। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা জাহিলীয়্যাতে অকল্যাণকর অবস্থায় জীবন যাপন করতাম অতঃপর আল্লাহ আমাদের এ কল্যাণ দান করিয়াছেন। এ কল্যাণকর অবস্থার পর আবার কোন অকল্যাণের আশঙ্কা আছে কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ঐ অকল্যাণের পর কোন কল্যাণ আছে কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আছে। তবে তা মন্দ মেশানো। আমি বললাম, মন্দ মেশানো কি? তিনি বলিলেন, এমন একদল লোক যারা আমার সুন্নাত ত্যাগ করে অন্যপথে পরিচালিত হইবে। তাদের কাজে ভাল-মন্দ সবই থাকবে। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কি আরো অকল্যাণ আছে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তখন জাহান্নামের দিকে আহবানকারীদের উদ্ভব ঘটবে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে তাকেই তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করিবে। আমি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এদের পরিচয় বর্ণনা করুন। তিনি বলিলেন, তারা আমাদেরই সম্প্রদায়ভুক্ত এবং কথা বলবে আমাদেরই ভাষায়। আমি বললাম, আমি যদি এ অবস্থায় পড়ে যাই তাহলে আপনি আমাকে কি করিতে আদেশ দেন? তিনি বলিলেন, মুসলিমদের দল ও তাঁদের ইমামকে আঁকড়ে ধরবে। আমি বললাম, যদি মুসলিমদের এহেন দল ও ইমাম না থাকে? তিনি বলেন, তখন তুমি তাদের সকল দল উপদলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করিবে এবং মৃত্যু না আসা পর্যন্ত বৃক্ষমূল দাঁতে আঁকড়ে ধরে হলেও তোমার দ্বীনের উপর থাকবে।
৩৬০৭. হুযাইফাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার সঙ্গীরা কল্যাণ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন আর আমি জানতে চেয়েছি অকল্যাণ সম্পর্কে।
৩৬০৮. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, কিয়ামত হইবে না যে পর্যন্ত এমন দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ না হইবে যাদের দাবী হইবে এক।
৩৬০৯.আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, কিয়ামত সংঘটিত হইবে না যে পর্যন্ত দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ না হইবে। তাদের মধ্যে হইবে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। তাদের দাবী হইবে এক। আর কিয়ামত কায়িম হইবে না যে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাচারী দাজ্জালের আবির্ভাব না হইবে। এরা সবাই নিজেকে আল্লাহর রাসুল বলে দাবী করিবে।
৩৬১০. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি কিছু গনীমতের মাল বন্টন করছিলেন। তখন বানু তামীম গোত্রের জুলখোয়াইসিরাহ নামে এক ব্যক্তি এসে হাযির হল এবং বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি ইন্সাফ করুন। তিনি বলিলেন তোমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি ইন্সাফ না করি, তবে ইন্সাফ করিবে কে? আমি তো নিষ্ফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হব যদি আমি ইন্সাফ না করি। উমর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে অনুমতি দিন আমি এর গর্দান উড়িয়ে দিই। তিনি বলিলেন, একে ছেড়ে দাও। তার এমন কিছু সঙ্গী সাথী রহিয়াছে তোমারা তাদের সালাতের তুলনায় নিজের সালাত এবং সিয়াম নগণ্য বলে মনে করিবে। এরা কুরআন পাঠ করে, কিন্তু কুরআন তাদের কন্ঠনালীর নিচে প্রবেশ করে না। তারা দ্বীন হইতে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক হইতে বেরিয়ে যায়। তীরের অগ্রভাগের লোহা দেখা যাবে কিন্তু কোন চিহ্ন পাওয়া যাবে না। কাঠের অংশ দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। মাঝের অংশ দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। তার পালক দেখলে তাতেও কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। অথচ তীরটি শিকারী জন্তুর নাড়িভুঁড়ি ভেদ করে রক্তমাংস পার হয়ে বেরিয়ে গেছে। এদের নিদর্শন হল এমন একটি কাল মানুষ যার একটি বাহু নারীর স্তনের মত অথবা মাংস খণ্ডের মত নড়াচড়া করিবে। তারা লোকদের মধ্যে বিরোধকালে আত্মপ্রকাশ করিবে।
আবু সাঈদ (রাদি.) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি স্বয়ং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট হইতে এ কথা শুনিয়াছি। আমি এ-ও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী ইবন আবু তালিব (রাদি.) এদের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়াছেন। আমিও তার সঙ্গে ছিলাম। তখন আলী (রাদি.) ঐ লোককে খুঁজে বের করিতে আদেশ দিলেন। খোঁজ করে যখন আনা হল আমি মনোযোগের সঙ্গে তাকিয়ে তার মধ্যে ঐ সব চিহ্নগুলি দেখিতে পেলাম, যা নাবী (সাঃআঃ) বলেছিলেন।
৩৬১১. সুয়াইদ ইব্ন গাফালা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আলী (রাদি.) বলেছেন, আমি যখন তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর কোন হাদীস বর্ণনা করি, তখন আমার এমন অবস্থা হয় যে, তাহাঁর উপর মিথ্যারোপ করার চেয়ে আকাশ হইতে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া আমার নিকট বেশি পছন্দনীয় এবং আমরা নিজেরা যখন আলোচনা করি তখন কথা হল এই যে, যুদ্ধ ছল-চাতুরী মাত্র। আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, শেষ যুগে একদল যুবকের আবির্ভাব ঘটবে যারা হইবে স্বল্পবুদ্ধি সম্পন্ন। তারা মুখে খুব ভাল কথা বলবে। তারা ইসলাম হইতে বেরিয়ে যাবে যেভাবে তীর ধনুক হইতে বেরিয়ে যায়। তাদের ঈমান গলদেশ পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করিবে না। যেখানেই এদের সঙ্গে তোমাদের দেখা মিলবে, এদেরকে তোমরা হত্যা করে ফেলবে। যারা তাদের হত্যা করিবে তাদের এই হত্যার পুরস্কার আছে ক্বিয়ামতের দিন।
৩৬১২. খাব্বাব ইব্ন আরত্ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ) -এর খেদমতে অভিযোগ করলাম। তখন তিনি তাহাঁর চাদরকে বালিশ বানিয়ে কাবা শরীফের ছায়ায় বিশ্রাম করছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করবেন না? তিনি বলিলেন, তোমাদের আগের লোকদের অবস্থা ছিল এই, তাদের জন্য মাটিতে গর্ত খুঁড়া হত এবং ঐ গর্তে তাকে পুঁতে রেখে করাত দিয়ে তার মাথা দ্বিখণ্ডিত করা হত। এটা তাদেরকে দ্বীন হইতে টলাতে পারত না। লোহার চিরুনী দিয়ে শরীরের হাড় মাংস ও শিরা-উপশিরা সব কিছু ছিন্নভিন্ন করে দিত। এটা তাদেরকে দ্বীন হইতে সরাতে পারেনি। আল্লাহর কসম, আল্লাহ এ দীনকে অবশ্যই পূর্ণতা দান করবেন। তখন একজন উষ্ট্রারোহী সানআ হইতে হাযারামাউত পর্যন্ত সফর করিবে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও ভয় করিবে না। অথবা তার মেষপালের জন্য নেকড়ে বাঘের ভয়ও করিবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়া করছ।
৩৬১৩. আনাস ইব্ন মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) সাবিত ইবন কায়েস (রাদি.) -কে তাহাঁর মাজলিসে অনুপস্থিত পেলেন। তখন এক সহাবী বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তার সম্পর্কে জানি। তিনি গিয়ে দেখেন সাবিত (রাদি.) তাহাঁর ঘরে অবনত মস্তকে বসে আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, হে সাবিত! কী অবস্থা তোমার? তিনি বলিলেন, অত্যন্ত খারাপ। তার গলার স্বর নাবী (সাঃআঃ) -এর গলার স্বর হইতে উচ্চ হয়েছিল। কাজেই তার সব নেক আমল নষ্ট হয়ে গেছে। সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। ঐ ব্যক্তি ফিরে এসে নাবী (সাঃআঃ) -কে জানালেন সাবিত (রাদি.) এসব কথা বলেছে। মূসা ইবন আনাস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ঐ সাহাবী এক মহা সুসংবাদ নিয়ে হাযির হলেন যে নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তুমি যাও সাবিতকে বল, নিশ্চয়ই তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত নও বরং তুমি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত।
৩৬১৪. বারআ ইব্ন আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক সাহাবী সুরা কাহফ তিলাওয়াত করছিলেন। তাহাঁর বাড়িতে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ঘোড়াটি তখন লাফালাফি করিতে লাগল। তখন ঐ সহাবী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করিলেন। তখন তিনি দেখলেন, একখণ্ড মেঘ এসে তাকে ঢেকে দিয়েছে। তিনি নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করিলেন। তখন তিনি বলিলেন, হে অমুক! তুমি এভাবে তিলাওয়াত করিবে। এটা তো প্রশান্তি ছিল, যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে নাযিল হয়েছিল।
৩৬১৫. বারা ইব্ন আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আবু বকর (রাদি.) আমার পিতার কাছে আমাদের বাড়িতে আসলেন। তিনি আমার পিতার কাছ হইতে একটি হাওদা কিনলেন এবং আমার পিতাকে বলিলেন, তোমার ছেলে বারাকে আমার সঙ্গে হাওদাটি বয়ে নিয়ে যেতে বল। আমি হাওদাটি বয়ে তাহাঁর সঙ্গে চললাম। আমার পিতাও ওটার মূল্য নেয়ার জন্য আমাদের সঙ্গী হলেন। আমার পিতা তাঁকে বলিলেন, হে আবু বক্র! দয়া করে আপনি আমাদেরকে বলুন, আপনারা কী করেছিলেন যে রাতে আপনি নাবী (সাঃআঃ) -এর সাথী ছিলেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। অবশ্যই আমরা সারা রাত পথ চলে পরদিন দুপুর অবধি চললাম। যখন রাস্তাঘাট লোকশূন্য হয়ে পড়ল, রাস্তায় কোন মানুষের আনাগোনা ছিল না। হঠাৎ একটি লম্বা ও চওড়া পাথর আমাদের নযরে পড়লো, যার ছায়ায় সূর্যের তাপ প্রবেশ করছিল না। আমরা সেখানে গিয়ে নামলাম। আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর জন্য নিজ হাতে একটি জায়গা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিলাম, যাতে সেখানে তিনি ঘুমাতে পারেন। আমি ওখানে একটি চামড়ার বিছানা পেতে দিলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি আপনার নিরাপত্তার জন্য পাহারায় থাকলাম। তিনি শুয়ে পড়লেন। আর আমি চারপাশের অবস্থা দেখার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হঠাৎ দেখিতে পেলাম, একজন মেষ রাখাল তার মেষপাল নিয়ে পাথরের দিকে ছুটে আসছে। সেও আমাদের মত পাথরের ছায়ায় আশ্রয় নিতে চায়। আমি বললাম, হে যুবক! তুমি কার রাখাল? সে মদীনার কি মক্কার এক লোকের নাম বলিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার মেষপালে কি দুধেল মেষ আছে? সে বলিল, হ্যাঁ আছে। আমি বললাম, তুমি কি দুহে দিবে? সে বলিল, হ্যাঁ। অতঃপর সে একটি বক্রী ধরে নিয়ে এল। আমি বললাম, এর স্তন ধূলা-বালি, পশম ও ময়লা হইতে পরিস্কার করে নাও। রাবী আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি বারাআ (রাদি.) -কে দেখলাম এক হাত অন্য হাতের উপর রেখে ঝাড়ছেন। অতঃপর ঐ যুবক একটি কাঠের বাটিতে কিছু দুধ দোহন করিল। আমার সঙ্গেও একটি চামড়ার পাত্র ছিল। আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর উযূর পানি ও পান করার পানি রাখার জন্য নিয়েছিলাম। আমি দুধ নিয়ে নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট আসলাম। তাঁকে জাগানো ভাল মনে করলাম না। কিছুক্ষণ পর তিনি জেগে উঠলেন। আমি দুধ নিয়ে হাযির হলাম। আমি দুধের মধ্যে কিছু পানি ঢেলেছিলাম তাতে দুধের নিচ পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে গেল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি দুধ পান করুন। তিনি পান করিলেন, আমি তাতে সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এখন কি আমাদের যাত্রা শুরুর সময় হয়নি? আমি বললাম, হ্যাঁ হয়েছে। পুনরায় শুরু হল আমাদের সফর। ততক্ষণে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। সুরাকা ইবন মালিক আমাদের পিছন নিয়েছিল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের অনুসরণে কে যেন আসছে। তিনি বলিলেন, চিন্তা করোনা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাদের সঙ্গে রহিয়াছেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর বিরুদ্ধে দুআ করিলেন। তৎক্ষণাৎ আরোহীসহ ঘোড়া তার পেট পর্যন্ত মাটিতে দেবে গেল, শক্ত মাটিতে। রাবী যুহায়র এই শব্দটি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন আমার ধারণা এ রকম শব্দ বলেছিলেন। সুরাকা বলিল, আমার বিশ্বাস আপনারা আমার বিরুদ্ধে দুআ করিয়াছেন। আমার জন্য আপনারা দুআ করে দিন। আল্লাহর কসম আপনাদের খোঁজকারীদেরকে আমি ফিরিয়ে নিয়ে যাব। নাবী (সাঃআঃ) তার জন্য দুআ করিলেন। সে বেঁচে গেল। ফিরে যাবার পথে যার সঙ্গে তার দেখা হত, সে বলত আমি সব দেখে এসেছি। যাকেই পেয়েছে, ফিরিয়ে দিয়েছে। আবু বকর (রাদি.) বলেন, সে আমাদের সঙ্গে করা অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।
৩৬১৬. ইব্ন আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) একদিন অসুস্থ একজন বেদুঈনকে দেখিতে গেলেন। রাবী বলেন, নাবী (সাঃআঃ) -এর অভ্যাস ছিল যে, পীড়িত ব্যক্তিকে দেখিতে গেলে বলিতেন, কোন দুশ্চিন্তার কারণ নেই, ইনশাআল্লাহ গোনাহ হইতে তুমি পবিত্র হয়ে যাবে। ঐ বেদুঈনকেও তিনি বলিলেন। চিন্তা করো না গুনাহ হইতে তুমি পবিত্র হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। বেদুঈন বলিল, আপনি বলেছেন গোনাহ হইতে তুমি পবিত্র হয়ে যাবে। তা নয়। বরং এতো এমন এক জ্বর যা বয়োঃবৃদ্ধের উপর প্রভাব ফেলছে। তাকে কবরের সাক্ষাৎ করাবে। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তাই হোক।
৩৬১৭. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক খ্রিস্টান ব্যক্তি মুসলিম হল এবং সুরা বাকারাহ ও সুরা আল-ইমরান শিখে নিল। নাবী (সাঃআঃ) -এর জন্য সে অহী লিখত। অতঃপর সে আবার খ্রিস্টান হয়ে গেল। সে বলিতে লাগল, আমি মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) -কে যা লিখে দিতাম তার চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না। (নাউজুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ তাকে মৃত্যু দিলেন। খ্রিস্টানরা তাকে দাফন করিল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এটা দেখে খ্রিস্টানরা বলিতে লাগল- এটা মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) এবং তাহাঁর সাহাবীদেরই কাজ। যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের হইতে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর হইতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদূর পারা যায় গভীর করে কবর খুঁড়ে তাকে আবার দাফন করিল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে আবার বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবারও তারা বলিল, এটা মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সাহাবীদের কাণ্ড। তাদের নিকট হইতে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর হইতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরো গভীর করে কবর খনন করে দাফন করিল। পরদিন ভোরে দেখা গেল কবরের মাটি এবারও তাকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। তখন তারাও বুঝল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা লাশটি ফেলে রাখল।
৩৬১৮. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, যখন কিস্রা ধ্বংস হইবে, অতঃপর অন্য কোন কিস্রা হইবে না। যখন কায়সার ধ্বংস হইবে তখন আর কোন কায়সার হইবে না। ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ নিশ্চয়ই ঐ দুএর ধন-ভাণ্ডার তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করিবে।
৩৬১৯. জাবির ইব্ন সামুরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, কিস্রা ধ্বংস হয়ে যাবার পর আর কোন কিস্রা হইবে না এবং কায়সার ধ্বংস হয়ে যাবার পর আর কোন কায়সার হইবে না। তিনি আরো বলেছেন, নিশ্চয়ই তাদের ধন-ভাণ্ডার তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করিবে।
৩৬২০. ইব্ন আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) -এর যামানায় মুসায়লামাতুল কায্যাব আসল এবং বলিতে লাগল, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) যদি তাহাঁর পর আমাকে তাহাঁর স্থলাভিষিক্ত করেন, তাহলে আমি তাহাঁর অনুসরণ করব। তার জাতির অনেক লোক নিয়ে সে এসেছিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তার নিকট আসলেন। আর তাহাঁর সাথী ছিলেন সাবিত ইবন কায়েস ইবন শাম্মাস (রাদি.)। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর হাতে খেজুরের একটি ডাল ছিল। তিনি সঙ্গী-সাথী পরিবেষ্টিত মুসায়লামার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং বলিলেন, তুমি যদি আমার নিকট খেজুরের এই ডালটিও চাও, তবুও আমি তা তোমাকে দিব না। তোমার ব্যাপারে আল্লাহর যা ফায়সালা তা তুমি লঙ্ঘন করিতে পারবে না। যদি তুমি কিছু দিন বেঁচেও থাক তবুও আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই ধ্বংস করে দিবেন। অবশ্যই তুমি ঐ লোক যার সম্বন্ধে স্বপ্নে আমাকে সব কিছু দেখানো হয়েছে।
৩৬২১. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
(ইবন আব্বাস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…বলেন, ) আবু হুরায়রা (রাদি.) আমাকে জানিয়েছেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখিতে পেলাম আমার দুহাতে সোনার দুটি বালা। বালা দুটি আমাকে চিন্তায় ফেলল। স্বপ্নেই আমার নিকট অহী এল, আপনি ফুঁ দিন। আমি তাই করলাম। বালা দুটি উড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা এভাবে করলাম, আমার পর দুজন কায্যাব বের হইবে। এদের একজন আনসী, অপরজন ইয়ামামাহবাসী মুসায়লামাতুল কাজ্জাব।
৩৬২২. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আমি স্বপ্নে দেখিতে পেলাম, আমি মক্কা হইতে হিজরত করে এমন জায়গায় যাচ্ছি যেখানে বহু খেজুর গাছ রহিয়াছে। তখন আমার ধারণা হল, এ স্থানটি ইয়ামামা অথবা হাযর হইবে। স্থানটি মদীনা ছিল। যার পূর্বনাম ইয়াস্রিব। স্বপ্নে আমি আরো দেখিতে পেলাম যে আমি একটি তলোয়ার হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছি। হঠাৎ তার অগ্রাংশ ভেঙ্গে গেল। উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের যে বিপদ ঘটেছিল এটা তা-ই। অতঃপর দ্বিতীয় বার তলোয়ারটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করলাম তখন সেটি আগের চেয়েও আরো উত্তম হয়ে গেল। এটা হল যে, আল্লাহ মুসলিমগণকে বিজয়ী ও একত্রিত করে দিবেন। আমি স্বপ্নে আরো দেখিতে পেলাম, একটি গরু (যবহ হচ্ছে) এবং শুনতে পেলাম আল্লাহ যা করেন সবই ভাল। এটাই হল উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের শাহাদাত বরণ। আর খায়ের হল- আল্লাহর পক্ষ হইতে ঐ সকল কল্যাণই কল্যাণ এবং সত্যবাদিতার পুরস্কার যা আল্লাহ আমাদেরকে বাদার দিবসের পর দান করিয়াছেন।
৩৬২৩. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) -এর চলার ভঙ্গিতে চলতে চলতে ফাতিমা (রাদি.) আমাদের নিকট আগমন করিলেন। তাঁকে দেখে নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমার স্নেহের কন্যাকে মোবারাকবাদ। অতঃপর তাঁকে তার ডানপাশে বা বামপাশে বসালেন এবং তাহাঁর সঙ্গে চুপিচুপি কথা বলিলেন। তখন ফাতিমা (রাদি.) কেঁদে দিলেন। আমি [আয়িশা (রাদি.) তাঁকে বললাম] কাঁদছেন কেন? নাবী (সাঃআঃ) পুনরায় চুপিচুপি তার সঙ্গে কথা বলিলেন। ফাতিমা (রাদি.) এবার হেসে উঠলেন। আমি [আয়িশা (রাদি.) বললাম, আজকের মত দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দ ও খুশী আমি আর কখনো দেখিনি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি (সাঃআঃ) কী বলেছিলেন? তিনি উত্তর দিলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর গোপন কথাকে প্রকাশ করব না। শেষে নাবী (সাঃআঃ) -এর ইন্তেকাল হয়ে যাবার পর আমি তাঁকে (আবার) জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কী বলেছিলেন?
৩৬২৪. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলিলেন, তিনি (সাঃআঃ) প্রথম বার আমাকে বলেছিলেন, জিব্রাঈল (আঃ) প্রতি বছর একবার আমার সঙ্গে কুরআন পাঠ করিতেন, এ বছর দুবার পড়ে শুনিয়েছেন। আমার মনে হয় আমার বিদায় বেলা উপস্থিত এবং অতঃপর আমার পরিবারের মধ্যে তুমিই সর্বপ্রথম আমার সঙ্গে মিলিত হইবে। তা শুনে আমি কেঁদে দিলাম। অতঃপর বলেছিলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, জান্নাতবাসী নারীদের অথবা মুমিন নারীদের তুমি সরদার হইবে। এ কথা শুনে আমি হেসেছিলাম।
৩৬২৫. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) অন্তিম পীড়িতাবস্থায় তাহাঁর কন্যা ফাতিমা (রাদি.) -কে ডেকে পাঠালেন। অতঃপর চুপিচুপি কী যেন বলিলেন। ফাতিমা (রাদি.) তা শুনে কেঁদে ফেললেন। অতঃপর আবার ডেকে তাঁকে চুপিচুপি আরো কী যেন বলিলেন। এতে ফাতিমা (রাদি.) হেসে উঠলেন। আয়িশা (রাদি.) বলেন, আমি হাসি-কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলাম।
৩৬২৬. আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে চুপে চুপে বলেছিলেন, যে রোগে তিনি রোগাক্রান্ত হয়েছেন এ রোগেই তাহাঁর মৃত্যু হইবে; তাই আমি কেঁদে দিয়েছিলাম। অতঃপত তিনি চুপিচুপি আমাকে বলেছিলেন, তাহাঁর পরিবার-পরিজনের মধ্যে সর্বপ্রথম আমিই তাহাঁর সঙ্গে মিলিত হব, এতে আমি হাসলাম।
৩৬২৭. ইব্ন আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উমর ইবন খাত্তাব (রাদি.) ইবন আব্বাস (রাদি.) -কে বিশেষ মর্যাদা দান করিতেন। একদা আবদুর রাহমান ইবন আউফ (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, তাহাঁর মত ছেলে আমাদেরও আছে। এতে তিনি বলিলেন, এর কারণ তো আপনি নিজেও জানেন। তখন উমর (রাদি.) ইবন আব্বাস (রাদি.) -কে ডেকে (আরবী) আয়াতের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করেন। ইবন আব্বাস (রাদি.) উত্তর দিলেন, এ আয়াতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে তাহাঁর মৃত্যু সন্নিকট বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। উমর (রাদি.) বলিলেন, এ আয়াতের অর্থ তুমি যা জান তা ছাড়া ভিন্ন কিছু আমি জানি না।
৩৬২৮. ইব্ন আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) শেষ রোগে আক্রান্ত হবার পর একটি চাদর পরে মাথায় একটি কাল কাপড় দিয়ে পট্টি বেঁধে ঘর হইতে বের হয়ে মিম্বরের উপর গিয়ে বসলেন। আল্লাহ তাআলার হামদ ও সানা পাঠ করার পর বলিলেন, আম্মা বাদ। লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে, আর আনসারদের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকবে। অবশেষে তাঁদের অবস্থা লোকের মাঝে যেমন খাদ্যের মধ্যে লবণের মত হইবে। তখন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তির মানুষের উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা থাকবে সে যেন আনসারদের ভাল কাজ গ্রহণ করে এবং তাদের ভুল-ক্রুটি ক্ষমা করে। এটাই ছিল নাবী (সাঃআঃ) -এর সর্বশেষ মজলিস যা তিনি করেছিলেন।
৩৬২৯. আবু বকর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) একদা হাসান (রাদি.) -কে নিয়ে বেরিয়ে এলেন এবং তাঁকে সহ মিম্বারে আরোহণ করিলেন। অতঃপর বলিলেন, আমার এ ছেলেটি সরদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে বিবাদমান দুদল মুসলমানের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দিবেন।
৩৬৩০. আনাস ইব্ন মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) জাফর এবং যায়দ [ইবন হারিস (রাদি.)] -এর শাহাদাত অর্জনের সংবাদ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাদের উভয়ের শাহাদাত অর্জনের সংবাদ আসার পূর্বেই। তখন তাহাঁর দুচোখ হইতে অশ্রু ঝরছিল।
৩৬৩১. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের নিকট আনমাত (গালিচার কার্পেট) আছে কি? আমি বললাম আমরা তা পাব কোথায়? তিনি বলিলেন, শীঘ্রই তোমরা আনমাত লাভ করিবে। তখন আমি আমার স্ত্রীকে বলি, আমার বিছানা হইতে এটা সরিয়ে দাও। তখন সে বলিল, নাবী (সাঃআঃ) কি বলেননি যে, শীঘ্রই তোমরা আনমাত পেয়ে যাবে? তখন আমি তা রাখতে দেই।
৩৬৩২. আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাদ ইবন মুআয (রাদি.) উমরাহ আদায় করার জন্য গেলেন এবং সাফওয়ানের পিতা উমাইয়াহ ইবন খালাফ এর বাড়িতে তিনি অতিথি হলেন। উমাইয়াহ ও সিরিয়া গমনকালে (মদীনায়) সাদ (রাদি.) -এর বাড়িতে অবস্থান করত। উমাইয়াহ সাদ (রাদি.) -কে বলিল, অপেক্ষা করুন, যখন দুপুর হইবে এবং যখন চলাফেরা কমে যাবে, তখন আপনি গিয়ে তাওয়াফ করে নিবেন। সাদ (রাদি.) তাওয়াফ করছিলেন। এমতাবস্থায় আবু জাহাল এসে হাজির হল। সাদ (রাদি.) -কে দেখে জিজ্ঞেস করিল, এ ব্যক্তি কে যে কাবার তাওয়াফ করছে সাদ (রাদি.) বলিলেন, আমি সাদ। আবু জাহাল বলিল, তুমি নির্বিঘ্নে কাবার তাওয়াফ করছ? অথচ তোমরাই মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সাথীদেরকে আশ্রয় দিয়েছ? সাদ (রাদি.) বলিলেন, হ্যাঁ। এভাবে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হল। তখন উমাইয়াহ সাদ (রাদি.) -কে বলিল, আবুল হাকামের সঙ্গে উচ্চঃস্বরে কথা বল না, কারণ সে মক্কাবাসীদের নেতা। অতঃপর সাদ (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! তুমি যদি আমাকে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করিতে বাধা প্রদান কর, তবে আমিও তোমার সিরিয়ার সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যের রাস্তা বন্ধ করে দিব। উমাইয়াহ সাদ (রাদি.) -কে তখন বলিতে লাগল, তোমার স্বর উঁচু করো না এবং সে তাঁকে বিরত করিতে চেষ্টা করিতে লাগল। তখন সাদ (রাদি.) ক্রোধান্বিত হয়ে বলিলেন, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি, তারা তোমাকে হত্যা করিবে। উমাইয়াহ বলিল আমাকেই? তিনি বলিলেন হ্যাঁ। উমাইয়াহ বলিল, আল্লাহর কসম মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) কখনও মিথ্যা কথা বলেন না। অতঃপর উমাইয়া তার স্ত্রীর নিকট ফিরে এসে বলিল, তুমি কি জান, আমার ইয়াসরিবী ভাই আমাকে কী বলেছে? স্ত্রী জিজ্ঞেস করিল কী বলেছে? উমাইয়াহ বলিল, সে মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনেছে যে, তারা আমাকে হত্যা করিবে। তার স্ত্রী বলিল, আল্লাহর কসম, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) মিথ্যা বলেন না। যখন মক্কার মুশরিকরা বদরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল এবং আহবানকারী আহবান জানাল। তখন উমাইয়াহর স্ত্রী তাকে স্মরণ করিয়ে দিল, তোমার ইয়াসরিবী ভাই তোমাকে যে কথা বলছিল সে কথা তোমার মনে নেই? তখন উমাইয়া না যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিল। আবু জাহল তাকে বলিল, তুমি এ অঞ্চলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। আমাদের সঙ্গে দুইএকদিনের পথ চল। উমাইয়াহ তাদের সঙ্গে চলল। আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় সে নিহত হল।
৩৬৩৩. আবদুল্লাহ (ইব্ন উমর) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, একদা (স্বপ্নে) লোকজনকে একটি মাঠে সমবেত দেখিতে পেলাম। তখন আবু বকর (রাদি.) উঠে দাঁড়ালেন এবং এক অথবা দুই বালতি পানি উঠালেন। পানি উঠাতে তিনি দুর্বলতা বোধ করছিলেন। আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন। অতঃপর উমর (রাদি.) বালতিটি হাতে নিলেন। বালতিটি তখন বড় আকার ধারণ করিল। আমি মানুষের মধ্যে পানি উঠাতে উমারের মত সুদক্ষ ও শক্তিশালী ব্যক্তি আর দেখিনি। শেষে উপস্থিত লোক তাদের উটগুলোকে পানি পান করিয়ে উটশালে নিয়ে গেল। হাম্মাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রাদি.) -কে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি আবু বক্র দুবালতি পানি উঠালেন।
৩৬৩৪. আবু উসমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাকে জানানো হল যে, একবার জিব্রাঈল (আঃ) নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট আসলেন। তখন উম্মু সালামা (রাদি.) তাহাঁর নিকট ছিলেন। তিনি এসে তাহাঁর সঙ্গে আলোচনা করিলেন। অতঃপর উঠে গেলেন। নাবী (সাঃআঃ) উম্মু সালামা (রাদি.) -কে জিজ্ঞেস করিলেন, লোকটিকে চিনতে পেরেছ কি? তিনি বলিলেন, এতো দেহইয়া। উম্মু সালামা (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি দেহইয়া বলেই বিশ্বাস করেছিলাম কিন্তু নাবী (সাঃআঃ) -কে তাহাঁর খুতবায় জিব্রাঈল (আঃ) -এর আগমনের কথা বলিতে শুনলাম। [সুলায়মান (রাবী) বলেন, আমি আবু উসমানকে জিজ্ঞেস করলাম এ হাদীসটি আপনি কার নিকট শুনেছেন? তিনি বলিলেন, উসামাহ ইবন যায়দ (রাদি.) -এর নিকট শুনিয়াছি।
৬১/২৬. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ যাদের আমি কিতাব দিয়েছি তারা তাকে সেরূপ চেনে, যেরূপ তারা তাদের পুত্রদের চেনে। আর তাদের একদল জেনে শুনে নিশ্চিতভাবে সত্য গোপন করে। (আল-বাক্বারাহ ১৪৬)
৩৬৩৫. আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইয়াহুদীরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর খিদমতে এসে বলিল, তাদের একজন পুরুষ ও একজন মহিলা ব্যভিচার করেছে। নাবী (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা সম্পর্কে তাওরাতে কী বিধান পেয়েছ? তারা বলিল, আমরা এদেরকে অপমানিত করব এবং তাদের বেত্রাঘাত করা হইবে। আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রাদি.) বলিলেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাতে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যার বিধান রয়েছে। তারা তাওরাত নিয়ে এসে বাহির করিল এবং প্রস্তর হত্যা করা সম্পর্কীয় আয়াতের উপর হাত রেখে তার আগের ও পরের আয়াতগুলি পাঠ করিল। আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রাদি.) বলিলেন, তোমরা হাত সরাও। সে হাত সরাল। তখন দেখা গেল প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করার আয়াত আছে। তখন ইয়াহুদীরা বলিল, হে মুহাম্মাদ! তিনি সত্যই বলছেন। তাওরাতে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যার আয়াতই আছে। তখন নাবী (সাঃআঃ) প্রস্তর নিক্ষেপে দুজনকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। আবদুল্লাহ (রাদি.) বলেন, আমি ঐ পুরুষটিকে মেয়েটির দিকে ঝুঁকে পড়তে দেখেছি। সে মেয়েটিকে বাচাঁনোর চেষ্টা করছিল।
(১৩২৯, মুসলিম ২৯/৬, হাদীস ১৬৯৯, আহমাদ ৪৪৯৮) (আ.প্র. ৩৩৬৪, ই.ফা. ৩৩৭১)
৬১/২৭. অধ্যায়ঃ মুশরিকরা নিদর্শন দেখানোর জন্য নাবী (সাঃআঃ) -কে বললে তিনি চাঁদ দুভাগ করে দেখালেন।
৩৬৩৬. আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) -এর যুগে চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয়েছিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা সাক্ষী থাক।
(৩৮৬৯, ৩৮৭১, ৪৮৬৪, ৪৮৬৫, মুসলিম ৫০/৮, হাদীস ২৮০০, আহমাদ ৩৫৮৩) (আ.প্র. ৩৩৬৫, ই.ফা. ৩৩৭২)
৩৬৩৭. আনাস (ইবন মালিক) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
মক্কাবাসী কাফিররা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট নির্দশন দেখানোর জন্য বললে তিনি তাদেরকে চাঁদ দুভাগ করে দেখালেন।
(৩৮৬৮, ৪৮৬৭, ৪৮৬৮, মুসলিম ৫০/৮, হাদীস ২৮০২) (আ.প্র. ৩৩৬৬, ই.ফা. ৩৩৭৩)
৩৬৩৮. ইবন আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) -এর যুগে চাদঁ দুখন্ড হয়েছিল।
(৩৮৭০, ৪৮৬৬, মুসলিম ৫০/৮, হাদীস ২৮০৩) (আ.প্র. ৩৩৬৭, ই.ফা. ৩৩৭৪)
৬১/২৮. অধ্যায়ঃ
৩৬৩৯. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) -এর দুজন সহাবী অন্ধকার রাতে নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট হইতে বের হলেন, তখন তাদের সঙ্গে দুটি বাতির মত কিছু তাদের সম্মুখ ভাগ আলোকিত করে চলল। যখন তাঁরা আলাদা হয়ে গেলেন তখন প্রত্যেকের সঙ্গে এক একটি বাতি চলতে লাগল। তাঁরা নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছা পর্যন্ত। (৪৬৫)
(আ.প্র. ৩৩৬৮, ই.ফা. ৩৩৭৫)
৩৬৪০. মুগীরা ইবন শুবাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা বিজয়ী থাকবে। এমনকি যখন ক্বিয়ামত আসবে তখনও তারা বিজয়ী থাকবে।
(৭৩১১, ৭৪৫৯, মুসলিম ৩৩/৫৩, হাদীস ১৯২১) (আ.প্র. ৩৩৬৯, ই.ফা. ৩৩৭৬)
৩৬৪১. মুআবিয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি, আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা আল্লাহর দ্বীনের উপর অটল থাকবে। তাদেরকে যারা অপমান করিতে চাইবে অথবা তাদের বিরোধিতা করিবে, তারা তাদের কোন ক্ষতি করিতে পারবে না। এমনকি কিয়ামত আসা পর্যন্ত তাঁরা এই অবস্থার উপর থাকবে। উমাইর ইবন হানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মালিক ইবন ইউখামিরের (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বরাত দিয়ে বলেন, মুআয (রাদি.) বলেছেন, ঐ দলটি সিরিয়ায় অবস্থান করিবে। মুআবিয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -এর ধারণা যে ঐ দলটি সিরিয়ায় অবস্থান করিবে বলে মুআয (রাদি.) বলছেন। (৭১)
(আ.প্র. ৩৩৭০, ই.ফা. ৩৩৭৭)
৩৬৪২. উরওয়া বারিকী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) একটি বকরী কিনে দেয়ার জন্য তাকে একটি দিনার দিলেন। তিনি ঐ দীনার দিয়ে দুটি বকরী কিনলেন। অতঃপর এক দীনার মূল্যে একটি বকরী বিক্রি করে দিলেন এবং নাবী (সাঃআঃ) -এর খিদমতে একটি বকরী ও একটি দীনার নিয়ে উপস্থিত হলেন। তা দেখে তিনি তার ব্যবসা বাণিজ্যে বরকত হবার জন্য দুআ করে দিলেন। অতঃপর তার অবস্থা এমন হল যে, ব্যবসার জন্য যদি মাটিও তিনি কিনতেন তাতেও তিনি লাভবান হইতেন। এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী সুফিয়ান ইবন উয়াইনাহ বলেন, হাসান ইবন উমারাহ শাবীব ও উরওয়ার বরাদ দিয়ে এ হাদীসটি আমাদেরকে বলেছেন। তারপর আমি শাবীবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন যে, আমি উরওয়া থেকে শুনিনি। একটি গোত্র উরওয়ার বরাত দিয়ে আমাকে হাদীস বলেছেন। তবে উরওয়ার থেকে আমি (অপর) একটি হাদীস শুনিয়াছি।
(আ.প্র. ৩৩৭১ প্রথমাংশ, ই.ফা. ৩৩৭৮ প্রথমাংশ)
৩৬৪৩. উরওয়া বারিকী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আর তা হলো এইঃ উরওয়া বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি, ঘোড়ার কপালের কেশদামে বরকত ও কল্যাণ আছে ক্বিয়ামাত অবধি। রাবী বলেন, আমি তার গৃহে সত্তরটি ঘোড়া দেখেছি। সুফইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) -এর জন্য যে বকরীটি কেনা হয়েছিল তা ছিল কুরবানীর জন্য। (২৮৫০)
(আ.প্র. ৩৩৭১ শেষাংশ, ই.ফা. ৩৩৭৮ শেষাংশ)
৩৬৪৪. ইবন উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, ঘোড়ার কপালের কেশদামে কিয়ামত অবধি কল্যাণ ও বরকত আছে।
(২৮৪৯) (আ.প্র. ৩৩৭২, ই.ফা. ৩৩৭৯)
৩৬৪৫
আনাস ইবনে মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, ঘোড়ার কপালে কল্যাণ ও বরকত আছে। (২৮৫১)
(আ.প্র. ৩৩৭৩, ই.ফা. ৩৩৮০)
৩৬৪৬.আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, ঘোড়া তিন প্রকার। একজনের জন্য পূণ্য, আর একজনের জন্য আবরণ ও অন্য আর একজনের জন্য পাপের কারণ। সে ব্যক্তির জন্য পূণ্য, যে আল্লাহর রাস্তায় ঘোড়াকে সর্বদা প্রস্তুত রাখে এবং সে ব্যক্তি যখন লম্বা রশি দিয়ে ঘোড়াটি কোন চারণভূমি বা বাগানে বেঁধে রাখে তখন ঐ লম্বা দড়ির মধ্যে চারণভূমি অথবা বাগানের যে অংশ পড়বে তত পরিমান সাওয়াব সে পাবে। যদি ঘোড়াটি দড়ি ছিঁড়ে ফেলে এবং দুই একটি টিলা পার হয়ে কোথাও চলে যায় তার পরে তার লাদাগুলিও নেকী বলে গন্য হইবে। যদি কোন নদী-নালায় গিয়ে পানি পান করে, মালিক যদিও পানি পান করানোর ইচ্ছা করেনি তাও তার নেক আমলে গন্য হইবে। আর যে ব্যক্তি নিজের অস্বচ্ছলতা দারিদ্রের গ্লানি ও পরমুখাপেক্ষিতা হইতে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ঘোড়া পালন করে এবং তার গর্দান ও পিঠে আল্লাহর যে হক রয়েছে তা ভুলে না যায়। তবে এই ঘোড়া তার জন্য আযাব হইতে আবরণ হইবে। অপর এক ব্যক্তি যে অহংকার, লোক দেখানো এবং আহলে ইসলামের সঙ্গে শত্রুতার কারণে ঘোড়া লালন-পালন করে এ ঘোড়া তার জন্য পাপের বোঝা হইবে। নাবী (সাঃআঃ) -কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলিলেন, এ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোন আয়াত আমার নিকট অবতীর্ণ হয়নি। তবে ব্যাপক অর্থবোধক অনন্য আয়াতটি আমার নিকট নাযিল হয়েছেঃ যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ নেক আমল করিবে সে তার প্রতিফল অবশ্যই দেখিতে পাবে। আর যে অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করিবে সেও তার প্রতিফল দেখিতে পাবে। (যিলযালঃ ৭৮)
(২৩৭১) (আ.প্র. ৩৩৭৪, ই.ফা. ৩৩৮১)
৩৬৪৭. আনাস ইবন মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) খুব সকালে খায়বারে পৌঁছলেন। তখন খায়বারবাসী কোদাল নিয়ে ঘর হইতে বের হচ্ছিল। তাঁকে (সাঃআঃ) -কে দেখে তারা বলিতে লাগল, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) পুরা সেনা বাহিনী নিয়ে এসে পড়েছে। (এ বলে) তারা দৌড়াদৌড়ি করে তাদের সুরক্ষিত কিল্লায় ঢুকে পড়ল। নাবী (সাঃআঃ) দুহাত উপরে উঠিয়ে বলিলেন, “আল্লাহু আকবার” খায়বার ধ্বংস হোক, আমরা যখন কোন জাতির, আঙ্গিণায় অবতরণ করি তখন এসব সাবধানকৃত লোকদের প্রভাতটি অত্যন্ত অশুভ হয়। (৩৭১)
(আ.প্র. ৩৩৭৫, ই.ফা. ৩৩৮২)
৩৬৪৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলিলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার হইতে অনেক হাদীস আমি শুনিয়াছি, তবে তা আমি ভুলে যাই। তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমার চাদরটি বিছাও। আমি চাদরটি বিছালাম। তিনি তাহাঁর হাত দিয়ে চাদরের মধ্যে কী যেন রাখলেন এবং বলিলেন, চাদরটি চেপে ধর। আমি চেপে ধরলাম, অতঃপর আমি আর কোন হাদীস ভুলিনি। (১১৮)
(আ.প্র. ৩৩৭৬, ই.ফা. ৩৩৮৩)
Leave a Reply