আদম আঃ ও তাহাঁর সন্তানাদির সৃষ্টি। আত্মাসমূহ একত্রিত

আদম আঃ ও তাহাঁর সন্তানাদির সৃষ্টি। আত্মাসমূহ একত্রিত

আদম আঃ ও তাহাঁর সন্তানাদির সৃষ্টি। আত্মাসমূহ একত্রিত >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬০, আম্বিয়া কিরাম, অধ্যায়ঃ (১-২)=২টি

৬০/১. অধ্যায়ঃ ‎ আদম (আঃ) ও তাহাঁর সন্তানাদির সৃষ্টি।
৬০/২. অধ্যায়ঃ আত্মাসমূহ সেনাবাহিনীর ন্যায় একত্রিত।

৬০/১. অধ্যায়ঃ ‎ আদম (আঃ) ও তাহাঁর সন্তানাদির সৃষ্টি।

صَلْصٰلٍ طِيْنٌ خُلِطَ بِرَمْلٍ فَصَلْصَلَ كَمَا يُصَلْصِلُ الْفَخَّارُ وَيُقَالُ مُنْتِنٌ يُرِيْدُوْنَ بِهِ صَلَّ كَمَا يُقَالُ صَرَّ الْبَابُ وَصَرْصَرَ عِنْدَ الإِغْلَاقِ مِثْلُ كَبْكَبْتُهُ يَعْنِيْ كَبَبْتُهُ فَمَرَّتْ بِهِ اسْتَمَرَّ بِهَا الْحَمْلُ فَأَتَمَّتُ أَنْ لَّا تَسْجُدَ أَنْ تَسْجُدَ

صَلْصَالٍ বালি মিশ্রিত শুকনো মাটি যা শব্দ করে যেমন আগুনে পোড়া মাটি শব্দ করে। আরো বলা হয় তা হল দুর্গন্ধময় মাটি। আরবরা এ দিয়ে صَلْ অর্থ নিয়ে থাকে, যেমন তারা দরজা বন্ধ করার শব্দের ক্ষেত্রে صَرَّ الْبَابُ এবং صَرْصَرَ শব্দদ্বয় ব্যবহার করে থাকে। অনুরূপ كَبْكَبْتُهُ এর অর্থ كَبَبْتُهُ নিয়ে থাকে। فَمَرَّتْ بِهِ তার গর্ভ স্থিতি লাভ করিল এবং এর মেয়াদ পূর্ণ করিল। أَنْ لَا تَسْجُدَ এর لَا শব্দটি অতিরিক্ত। أَنْ تَسْجُدَ অর্থ সাজদাহ করিতে।

وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَآئِكَةِ إِنِّيْ جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيْفَةً (البقرة : 30)

স্মরণ করুন, যখন আপনার প্রতিপালক ফেরেশতামন্ডলীকে বলিলেন, আমি পৃথিবীতে খলীফা সৃষ্টি করছি- (আল-বাকারাহ ৩০)।

قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لَمَّا عَلَيْهَا حَافِظٌ (الطارق : 4) إِلَّا عَلَيْهَا حَافِظٌ فِيْ كَبَدٍ (البلد : 4) فِيْ شِدَّةِ خَلْقٍ وَرِيَاشًا (الأعراف : 26) الْمَالُ وَقَالَ غَيْرُهُ الرِّيَاشُ وَالرِّيْشُ وَاحِدٌ وَهُوَ مَا ظَهَرَ مِنْ اللِّبَاسِ مَا تُمْنُوْنَ (الواقعة : 58) النُّطْفَةُ فِيْ أَرْحَامِ النِّسَاءِ

ইবনু আববাস (রাদি.) বলেন, لَمَّا عَلَيْهَا حَافِظٌ এর অর্থ কিন্তু তার ওপর রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক। فِيْ كَبَدٍ সৃষ্টিগত ক্লেশের মধ্যে وَرِيَاشًا এর অর্থ সম্পদ। ইবনু আববাস (রাদি.) ব্যতীত অন্যরা বলেন, الرِّيَاشُ এবং الرِّيشُ উভয়ের একই অর্থ। আর তা হল পরিচ্ছদের বাহ্যিক দিক। مَا تُمْنُوْنَ স্ত্রীলোকদের জরায়ুতে পতিত বীর্য।

وَقَالَ مُجَاهِدٌ إِنَّه” عَلٰى رَجْعِهِ لَقٰدِرٌ (الطارق : 4) النُّطْفَةُ فِي الْإِحْلِيْلِ كُلُّ شَيْءٍ خَلَقَهُ فَهُوَ شَفْعٌ السَّمَاءُ شَفْعٌ وَالْوَتْرُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِيْٓ أَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ (التين : 4) فِيْ أَحْسَنِ خَلْقٍ أَسْفَلَ سَافِلِيْنَ (التين : 5) إِلَّا مَنْ آمَنَ خُسْرٍ (العصر : 2) ضَلَالٍ ثُمَّ اسْتَثْنَى إِلَّا مَنْ آمَنَ لَازِبٍ (الصفات : ) لَازِمٌ وَنُنْشِئُكُمْ (الواقعة : 61) فِيْ أَيِّ خَلْقٍ نَشَاءُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ (البقرة : 30) نُعَظِّمُكَ

আর মুজাহিদ (র.) (আল্লাহর বাণী) إِنَّهُ عَلَى رَجْعِهِ لَقَادِرٌ এর অর্থ বলেছেন, পুরুষের লিঙ্গে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে আল্লাহ সক্ষম। আল্লাহ সকল বস্তুকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করিয়াছেন। আকাশেরও জোড়া আছে, কিন্তু আল্লাহ বেজোড়। فِيْ أَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ উত্তম অবয়ববে। যারা ঈমান এনেছে তারা ব্যতীত সকলেই হীনতাগ্রস্তদের হীনতমে। خُسْرٍ পথভ্রষ্ট। অতঃপর اسْتَثْنَى করে আল্লাহ বলেন, কিন্তু যারা ঈমান এনেছে, তারা ব্যতীত। لَازِبٍ অর্থ আঠালো। نُنْشِئُكُمْ অর্থ যে কোন আকৃতিতে আমি ইচ্ছা করি তোমাদেরকে সৃষ্টি করব। نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ অর্থ আমরা প্রশংসার সঙ্গে আপনার মহিমা বর্ণনা করব।

وَقَالَ أَبُوْ الْعَالِيَةِ فَتَلَقّٰىٓ اٰدَمُ مِنْ رَبِّهٰ كَلِمٰتٍ (البقرة : 37) فَهُوَ قَوْلُهُ رَبَّنَا ظَلَمْنَآ أَنْفُسَنَا (الأعراف : 23) فَأَزَلَّهُمَا (البقرة : 36) فَاسْتَزَلَّهُمَا يَتَسَنَّهْ (البقرة : 259) يَتَغَيَّرْ اٰسِنٌ (الأعراف : 23) مُتَغَيِّرٌ وَالْمَسْنُوْنُ الْمُتَغَيِّرُ حَمَإٍ (الحجرات : 26) جَمْعُ حَمْأَةٍ وَهُوَ الطِّينُ الْمُتَغَيِّرُ يَخْصِفَانِ أَخْذُ الْخِصَافِ مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ يُؤَلِّفَانِ الْوَرَقَ وَيَخْصِفَانِ بَعْضَهُ إِلَى بَعْضٍ سَوْاٰتُهُمَا كِنَايَةٌ عَنْ فَرْجَيْهِمَا وَمَتَاعٌ إِلٰى حِيْنٍ (الأعراف :24) هَا هُنَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ الْحِيْنُ عِنْدَ الْعَرَبِ مِنْ سَاعَةٍ إِلَى مَا لَا يُحْصَى عَدَدُهُ وَقَبِيْلُهُ (الأعراف : 27) جِيْلُهُ الَّذِيْ هُوَ مِنْهُمْ

আর আবুল আলিয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, অতঃপর আদাম (আঃ) যা শিক্ষা করিলেন, তা হলো তাহাঁর উক্তি; হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নফসের উপর যুলুম করেছি। তিনি আরো বলেন, فَأَزَلَّهُمَا শয়তান তাদের উভয়কে পদস্খলিত করিল। يَتَسَنَّهْ পরিবর্তিত হইবে। آسِنٌ পরিবর্তনশীল। الْمَسْنُوْنُ যা পরিবর্তিত। حَمَاءٌ শব্দটি حَمْأَةٌ শব্দের বহুবচন। যার অর্থ গলিত কাদা মাটি। يَخْصِفَانِ তারা উভয়ে (আদাম ও হাওয়া) জান্নাতের পাতাগুলো জোড়া দিতে লাগলেন। (জোড়া দিয়ে নিজেদের লজ্জাস্থান আবৃত করিতে শুরু করিলেন।) سَوْآتُهُمَا দ্বারা তাদের উভয়ের লজ্জাস্থানের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। আর مَتَاعٌ إِلَى حِيْنٍ এর অর্থ এখানে কিয়ামতের দিন অবধি। আর আরববাসীগণ الْحِيْنُ শব্দ দ্বারা কিছু সময় হইতে অগণিত সময়কে বুঝিয়ে থাকেন। قَبِيْلُهُ এর অর্থ তার ঐ প্রজন্ম ও সমাজ যার একজন সে।

৩৩২৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী‎ (সাঃআঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করিলেন। তাহাঁর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) তাঁকে (আদমকে) বলিলেন, যাও। ঐ ফেরেশতা দলের প্রতি সালাম কর এবং তাঁরা তোমার সালামের জওয়াব কিভাবে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোন। কারণ সেটাই হইবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। অতঃপর আদম (আঃ) (ফেরেশতাদের) বলিলেন, “আস্‌সালামু আলাইকুম”। ফেরেশতামন্ডলী তার উত্তরে “আস্‌সালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলিলেন। ফেরেশতারা সালামের জওয়াবে “ওয়া রহমাতুল্লাহ” শব্দটি বাড়িয়ে বলিলেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তারা আদম (আঃ)–এর আকৃতি বিশিষ্ট হইবেন। তবে আদম সন্তানের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপে এসেছে।

(৬২২৭, মুসলিম ৫১/১১ হাদীস ২৮৪১, আহমাদ ৮১৭৭) (আ.প্র. ৩০৮০, ই.ফা. ৩০৮৮)

৩৩২৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করিবে তাদের মুখমণ্ডল হইবে পূর্ণিমার রাতের চন্দ্রের মত উজ্জ্বল। অতঃপর যে দল তাদের অনুগামী হইবে তাদের মুখমণ্ডল হইবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার ন্যায়। তারা পেশাব করিবে না, পায়খানা করিবে না। তাদের থুথু ফেলার প্রয়োজন হইবে না এবং তাদের নাক হইতে শ্লেষ্মাও বের হইবে না। তাদের চিরুণী হইবে স্বর্ণের তৈরী। তাদের ঘাম হইবে মিস্‌কের মত সুগন্ধযুক্ত। তাদের ধনুচি হইবে সুগন্ধযুক্ত চন্দন কাষ্ঠের। বড় চক্ষু বিশিষ্টা হুরগণ হইবেন তাদের স্ত্রী। তাদের সকলের দেহের গঠন হইবে একই। তারা সবাই তাদের আদি পিতা আদম (আঃ)-এর আকৃতিতে হইবেন। উচ্চতায় তাদের দেহের দৈর্ঘ্য হইবে ষাট হাত।

(৩২৪৫) (আ.প্র. ৩০৮১, ই.ফা. ৩০৮৯)

৩৩২৮. উম্মু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উম্মু সুলাইম (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! আল্লাহ সত্য প্রকাশ করিতে লজ্জাবোধ করেন না। মেয়েদের স্বপ্নদোষ হলে কি তাদের উপর গোসল ফর্‌য‎ হইবে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। যখন সে বীর্য দেখিতে পায়। এ কথা শুনে উম্মু সালামা (রাদি.) হাসলেন এবং বলিলেন, মেয়েদের কি স্বপ্নদোষ হয়? তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তা না হলে সন্তান তার মত কিভাবে হয়।

(১৩০) (আ.প্র. ৩০৮২, ই.ফা. ৩০৯০)

৩৩২৯. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালামের নিকট রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর মদীনায় আগমনের খবর পৌঁছল, তখন তিনি তাহাঁর নিকট আসলেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করিতে চাই যার উত্তর নাবী‎ ব্যতীত আর কেউ জানে না। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কী? আর সর্বপ্রথম খাবার কী, যা জান্নাতবাসী খাবে? আর কী কারণে সন্তান তার পিতার মত হয়? আর কী কারণে (কোন কোন সময়) তার মামাদের মত হয়? তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, এই মাত্র জিবরাঈল (আঃ) আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করিয়াছেন। রাবী বলেন, তখন আবদুল্লাহ (রাদি.) বলিলেন, সে তো ফেরশতাগণের মধ্যে ইয়াহূদীদের শত্রু। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হলো আগুন যা মানুষকে পূর্ব হইতে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত করিবে। আর প্রথম খাবার যা জান্নাতবাসীরা খাবেন তা হলো মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ। আর সন্তান সদৃশ হবার ব্যাপার এই যে পুরুষ যখন তার স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করে তখন যদি পুরুষের বীর্য প্রথম স্খলিত হয় তবে সন্তান তার সাদৃশ হইবে আর যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের পূর্বে স্খলিত হয় তখন সন্তান তার সদৃশ হয়। তিনি বলিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি- নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসুল। অতঃপর তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইয়াহূদীরা অপবাদ ও কুৎসা রটনাকারী সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করার পূর্বে তারা যদি আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয় জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার কাছে আমার কুৎসা রটনা করিবে। অতঃপর ইয়াহূদীরা এলো এবং আবদুল্লাহ (রাদি.) ঘরে প্রবেশ করিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু সালাম কেমন লোক? তারা বলিল, তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তির পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির পুত্র। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, যদি আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহণ করে, এতে তোমাদের অভিমত কি হইবে? তারা বলিল, এর থেকে আল্লাহ তাঁকে রক্ষা করুক। এমন সময় আবদুল্লাহ (রাদি.) তাদের সামনে বের হয়ে আসলেন এবং তিনি বলিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) আল্লাহর রাসুল। তখন তারা বলিতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ লোক এবং সবচেয়ে খারাপ লোকের সন্তান এবং তারা তাহাঁর গীবত ও কুৎসা রটনায় লেগে গেল।

(৩৯১১, ৩৯৩৮, ৪৪৮০) (আ.প্র. ৩০৮৩, ই.ফা. ৩০৯১)

৩৩৩০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী‎ (সাঃআঃ) হইতে একইভাবে বর্ণিত আছে। অর্থাৎ নাবী‎ (সাঃআঃ) বলেছেন, বনী ইসরাঈল যদি না হত তবে গোশত দুর্গন্ধময় হতো না। আর যদি হাওয়া (আঃ) না হইতেন তাহলে কোন নারীই স্বামীর খিয়ানত করত না। [১]

(৫১৮৪, ৫১৮৬) (মুসলিম ১৭/১৯ হাদীস ১৪৭০, আহমাদ ৮০৩৮) (আ.প্র. ৩০৮৪, ই.ফা. ৩০৯২)

[১] বনী ইসরাঈল আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে সালওয়া নামক পাখীর গোশত খাওয়ার জন্য অবারিতভাবে পেত। তা সত্ত্বেও তা জমা করে রাখার ফলে গোশত পচনের সূচনা হয়। আর মাতা হাওয়া নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণে আদম (আঃ)-কে প্রভাবিত করেন।

৩৩৩১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমরা নারীদেরকে উত্তম নাসীহাত প্রদান করিবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি বেশী বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করিতে যাও, তাহলে তা ভেঙ্গে যাবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদেরকে নাসীহাত করিতে থাক।

(৫১৮৪, ৫১৮৬) (আ.প্র. ৩০৮৫, ই.ফা. ৩০৯৩)

৩৩৩২. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

সত্যবাদী-সত্যনিষ্ঠ হিসাবে স্বীকৃত রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের সৃষ্টির উপাদান স্বীয় মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত জমা রাখা হয়। অতঃপর অনুরূপভাবে (চল্লিশ দিনে) তা আলাকারূপে পরিণত হয়। অতঃপর অনুরূপভাবে (চল্লিশ দিনে) তা গোশ্‌তের টুকরার রূপ লাভ করে। অতঃপর আল্লাহ তার নিকট চারটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়ে লিখে দেন। অতঃপর তার আমল, তার মৃত্যু, তার রুজী এবং সে সৎ কিংবা অসৎ তা লিখা হয়। অতঃপর তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেয়া হয়। এক ব্যক্তি একজন জাহান্নামীর আমলের মত আমল করিতে থাকে এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে এক হাতের তফাৎ রয়ে যায়, এমন সময় তার ভাগ্যের লিখন এগিয়ে আসে। তখন সে জান্নাতবাসীদের আমলের মত আমল করে থাকে। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর এক ব্যক্তি (প্রথম হইতেই) জান্নাতবাসীদের আমলের মত আমল করিতে থাকে। এমনকি শেষ পর্যন্ত তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাতের ব্যবধান রয়ে যায়। এমন সময় তার ভাগ্য লিখন অগ্রগামী হয়। তখন সে জাহান্নামবাসীদের আমলের অনুরূপ আমল করে থাকে এবং ফলে সে জাহান্নামে প্রবিষ্ট হয়।

(৩২০৮) (আ.প্র. ৩০৮৬, ই.ফা. ৩০৯৪)

৩৩৩৩. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী‎ (সাঃআঃ) বলেন, আল্লাহ মাতৃগর্ভে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। (সন্তান জন্মের সূচনায়) সে ফেরেশতা বলেন, হে রব! এ তো বীর্য। হে রব! এ তো আলাকা। হে রব! এ তো গোশ্‌তের খন্ড। অতঃপর আল্লাহ যদি তাকে সৃষ্টি করিতে চান তাহলে ফেরেশতা বলেন, হে রব! সন্তানটি ছেলে হইবে, না মেয়ে হইবে? হে রব! সে কি পাপিষ্ঠ হইবে, না নেককার হইবে? তার রিয্‌ক কী পরিমাণ হইবে, তার আয়ুষ্কাল কত হইবে? এভাবে তার মাতৃগর্ভে সব কিছুই লিখে দেয়া হয়।

(৩১৮) (আ.প্র. ৩০৮৭, ই.ফা. ৩০৯৫)

৩৩৩৪. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আনাস (রাদি.) রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে শুনে বর্ণনা করিয়াছেন, আল্লাহ তাআলা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে সহজ আযাব ভোগকারীকে জিজ্ঞেস করবেন, যদি পৃথিবীর ধন-সম্পদ তোমার হয়ে যায়, তবে তুমি কি আযাবের বিনিময়ে তা দিয়ে দিবে? সে উত্তর দিবে, হ্যাঁ। তখন আল্লাহ বলবেন, যখন তুমি আদম (আঃ)-এর পৃষ্ঠে ছিলে, তখন আমি তোমার নিকট এর থেকেও সহজ একটি জিনিস চেয়েছিলাম। সেটা হল, তুমি আমার সঙ্গে কাউকে শরীক করিবে না। কিন্তু তুমি তা না মেনে শির্‌ক করিতে লাগলে।

(৬৫৩৮, ৬৫৫৭) (মুসলিম ৫০/১০ হাদীস ২৮০৫, আহমাদ ১২৩১৪) (আ.প্র. ৩০৮৮, ই.ফা ৩০৯৬)

৩৩৩৫. আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে, তার এ খুনের পাপের অংশ আদম (আঃ) এর প্রথম ছেলে (কাবিলের) উপর বর্তায়। কারণ সেই সর্বপ্রথম হত্যার প্রচলন ঘটায়।

(৬৮৬৭, ৬৩২১) (মুসলিম ২৮/৭ হাদীস ১৬৭৭, আহমাদ ৩৬৩০) (আ.প্র. ৩০৮৯, ই.ফা. ৩০৯৭)

৬০/২. অধ্যায়ঃ আত্মাসমূহ সেনাবাহিনীর ন্যায় একত্রিত।

৩৩৩৬. আায়িশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী‎ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, সমস্ত রূহ সেনাবাহিনীর মত একত্রিত ছিল। সেখানে তাদের যে সমস্ত রূহের পরস্পর পরিচয় ছিল, এখানেও তাদের মধ্যে পরস্পর পরিচিতি থাকবে। আর সেখানে যাদের মধ্যে পরস্পর পরিচয় হয়নি, এখানেও তাদের মধ্যে পরস্পর মতভেদ ও মতবিরোধ থাকবে। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে এভাবে বর্ণনা করিয়াছেন।

Comments

Leave a Reply