ইবলিশ শয়তান ও তার বাহিনী এবং জ্বিনদের বর্ণনা

ইবলিশ শয়তান ও তার বাহিনী এবং জ্বিনদের বর্ণনা

ইবলিশ শয়তান ও তার বাহিনী এবং জ্বিনদের বর্ণনা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৫৯, সৃষ্টির সূচনা, অধ্যায়ঃ (১১-১৩)=৩টি

৫৯/১১. অধ্যায়ঃ ইবলীস ও তার বাহিনীর বর্ণনা
৫৯/১২. অধ্যায়ঃ জ্বিন, তাদের পুরস্কার এবং শাস্তির বিবরণ।
৫৯/১৩. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “স্মরণ করুন, আমি আপনার প্রতি একদল জ্বিনকে আকৃষ্ট করেছিলাম …. এরূপ লোকেরাই প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতার মধ্যে পতিত রয়েছে। (সুরা আহ্কাফ ২৯-৩২)

৫৯/১১. অধ্যায়ঃ ইবলীস ও তার বাহিনীর বর্ণনা

মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ——— তাদের নিক্ষেপ করা হইবে। ——- তাদের হাঁকিয়ে বের করে দেয়া হইবে। ——– স্থায়ী। আর ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, ——— হাঁকিয়ে বের করা অবস্থায়। ——– বিদ্রোহীরূপে। ——- তাকে ছিন্ন করেছে। ——– তুমি ভয় দেখাও। ——– অশ্বারোহী। ——– পদাতিকগণ। এর একবচন —— যেমন ——— এর বহুবচন ——— আর ——– এর বহুবচন ————— অবশ্যই আমি সমূলে উৎপাটন করব। ——— শয়তান।

৩২৬৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-কে যাদু করা হয়েছিল। লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার নিকট হিশাম পত্র লিখেন, তাতে লেখা ছিল যে, তিনি তার পিতা সূত্রে আয়েশা (রাদি.) হইতে হাদীস শুনেছেন এবং তা ভালভাবে মুখস্থ করিয়াছেন। আয়েশা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) কে যাদু করা হয়। এমনকি যাদুর প্রভাবে তাহাঁর খেয়াল হতো যে, তিনি স্ত্রীগণের বিষয়ে কোন কাজ করে ফেলেছেন অথচ তিনি তা করেননি। শেষ পর্যন্ত একদা তিনি রোগ আরোগ্যের জন্য বারবার দুআ করিলেন, অরঃপর তিনি আমাকে বলিলেন, তুমি কি জান আল্লাহ আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন, যাতে আমার রোগের আরোগ্য আছে? আমার নিকট দুজন লোক আসল। তাদের একজন মাথার নিকট বসল আর অপরজন আমার পায়ের নিকট বসল। অরঃপর একজন অন্যজনকে জিজ্ঞেস করিল, এ ব্যক্তির রোগ কি? জিজ্ঞাসিত লোকটি জবাব দিল, তাকে যাদু করা হয়েছে। প্রথম লোকটি বলিল, তাকে যাদু কে করিল? সে বলিল, লবীদ ইবনু আসাম। প্রথম ব্যক্তি বলিল, কিসের দ্বারা? দ্বিতীয় ব্যক্তি বলিল, তাকে যাদু করা হয়েছে, চিরুনি, সুতার তাগা এবং খেজুরের খোসায়। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করিল, এগুলো কোথায় আছে? দ্বিতীয় ব্যক্তি জবাব দিল, যারওয়ান কূপে। তখন নাবী (সাঃআঃ) সেখানে গেলেন এবং ফিরে আসলেন, অতঃপর তিনি আয়েশা (রাদি.)-কে বলিলেন, কূপের কাছের খেজুর গাছগুলো যেন এক একটা শয়তানের মাথা। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি সেই যাদু করা জিনিসগুলো বের করিতে পেরেছেন? তিনি বলিলেন, না। তবে আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দিয়েছেন। আমার আশংকা হয়েছিল এসব জিনিস বের করলে মানুষের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি হইতে পারে। অতঃপর সেই কূপটি বন্ধ করে দেয়া হল।

৩২৬৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যখন নিদ্রা যায় তখন শয়তান তার মাথার শেষভাগে তিনটি গিরা দিয়ে দেয়। প্রত্যেক গিরার সময় এ কথা বলে কুমন্ত্রণা দিয়ে দেয় যে, এখনো রাত অনেক রয়ে গেছে, কাজেই শুয়ে থাক। অতঃপর সে লোক যদি জেগে উঠে এবং আল্লাহকে স্মরণ করে তখন একটি গিরা খুলে যায়। অতঃপর যদি সে উযূ করে, তবে দ্বিতীয় গিরাও খুলে যায়। আর যদি সে সালাত আদায় করে তবে সব কয়টি গিরাই খুলে যায়। আর খুশির সঙ্গে পবিত্র মনে তার সকাল হয়, অন্যথায় অপবিত্র মনে আলস্যের সাথে তার সকাল হয়।

৩২৭০. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এমন এক লোকের ব্যাপারে উল্লেখ করা হল, যে সারা রাত এমনকি ভোর পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিল। তখন তিনি বলিলেন, সে এমন লোক যার উভয় কানে অথবা তিনি বলিলেন, তার কানে শয়তান পেশাব করেছে।

৩২৭১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, দেখ, তোমাদের কেউ যখন তার স্ত্রীর কাছে আসে, আর তখন বলে, বিসমিল্লাহ। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তানের প্রভাব থেকে দূরে রাখ। আর আমাদেরকে যে সন্তান দেয়া হইবে শয়তান তার কোন ক্ষতি করিতে পারবে না।

৩২৭২. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, যখন সূর্যের এক কিনারা উদিত হইবে, তখন তা পরিষ্কারভাবে উদিত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা সালাত আদায় বন্ধ রাখ। আবার যখন সূর্যের এক কিনারা অস্ত যাবে তখন তা সম্পূর্ণ অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা সালাত আদায় বন্ধ রাখ।

৩২৭৩. See previous Hadith. বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

আর তোমরা সূর্যোদয়ের সময়কে এবং সূর্যাস্তের সময়কে তোমাদের সালাতের জন্য নির্ধারিত করো না। কেননা তা শয়তানের দু শিং-এর মাঝখান দিয়ে উদিত হয়। বর্ণনাকারী বলেন, হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শয়তান বলেছেন না আশ-শয়তান বলেছেন তা আমি জানি না।

(মুসলিম ৬/৫১ হাদীস ৮২৯, আহমাদ ৪৬১২) (আঃপ্রঃ শেষাংশ, ইঃফাঃ ৩০৪১ শেষাংশ)

৩২৭৪. আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, সালাত আদায়ের সময় তোমাদের কারো সম্মুখ দিয়ে যখন কেউ চলাচল করিবে তখন সে তাকে অবশ্যই বাধা দিবে। সে যদি অমান্য করে তবে আবারো তাকে বাধা দিবে। অতঃপরও যদি সে অমান্য করে তবে অবশ্যই তার সঙ্গে লড়াই করিবে। কেননা সে শয়তান।

৩২৭৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে রমযানের যাকাত (সাদাকাতুল ফিতরের) হিফাযতের দায়িত্ব প্রাদান করিলেন। অতঃপর আমার নিকট এক আগন্তুক আসল। সে তার দুহাতের আঁজলা ভরে খাদ্যশস্য গ্রহণ করিতে লাগল। তখন আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি অবশ্যই তোমাকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট নিয়ে যাব। তখন সে একটি হাদীস উল্লেখ করিল এবং বলিল, যখন তুমি বিছানায় শুতে যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পড়বে। তাহলে সর্বদা আল্লাহর পক্ষ হইতে তোমার জন্য একজন হিফাযতকারী থাকবে এবং সকাল হওয়া অবধি তোমার নিকট শয়তান আসতে পারবে না। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, সে তোমাকে সত্য বলেছে, অথচ সে মিথ্যাচারী এবং শয়তান ছিল।

৩২৭৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের কারো নিকট শয়তান আসতে পারে এবং সে বলিতে পারে, এ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? ঐ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করিতে করিতে শেষ পর্যন্ত বলে বসবে, তোমাদের প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন ব্যাপারটি এ স্তরে পৌঁছে যাবে তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায় এবং বিরত হয়ে যায়।

৩২৭৭.আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, যখন রমযান মাস আরম্ভ হয়, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানদেরকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়।

৩২৭৮.উবাই ইবনু কাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, “মুসা (আঃ) তার সঙ্গীকে বললেনঃ আমাদের নাশতা আন, এ সফরে আমরা অবশ্যই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। সঙ্গী বললঃ আপনি কি লক্ষ্য করিয়াছেন, আমরা যখন প্রস্তর খণ্ডের কাছে বিশ্রাম করেছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শয়তানই আমাকে এ কথা স্মরণ রাখতে ভুলিয়ে দিয়েছিল”-

(সুরা কাহফ ৬২-৬৩)। আল্লাহ তাআলা মূসা (আঃ)-কে যে স্থানটি সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি সে স্থানটি অতিক্রম করা পর্যন্ত কোন প্রকার ক্লান্তি অনুভব করেননি।

৩২৭৯. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে দেখেছি, তিনি পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, সাবধান! ফিতনা এখানেই। সাবধান! ফিতনা এখানেই। সেখান থেকে শয়তানের শিং উদিত হইবে।

৩২৮০. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, সূর্যাস্তের পরপরই যখন রাত শুরু হয় অথবা বলেছেন, যখন রাতের অন্ধকার নেমে আসে তখন তোমরা তোমাদের শিশুদেরকে ঘরে আটকে রাখবে। কারণ এ সময় শয়তানেরা ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর যখন রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হইবে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পার আর তুমি তোমার ঘরের দরজা বন্ধ করে দাও এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমার ঘরের বাতি নিভিয়ে দাও এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমার পানি রাখার পাত্রের মুখ ঢেকে রাখ এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমার বাসনপত্র ঢেকে রাখ এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। সামান্য কিছু হলেও তার ওপর দিয়ে রেখে দাও।

৩২৮১. সাফিয়্যাহ বিনতু হুয়াই (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইতিকাফ অবস্থায় ছিলেন। আমি রাতে তাহাঁর সঙ্গে দেখা করিতে আসলাম। অতঃপর তার সঙ্গে কিছু কথা বললাম। অতঃপর আমি ফিরে আসার জন্য দাঁড়ালাম। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-ও আমাকে পৌঁছে দেয়ার জন্য আমার সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন। আর তার বাসস্থান ছিল উসামা ইবনু যায়দের বাড়িতে। এ সময় দুজন আনসারী সে স্থান দিয়ে অতিক্রম করিল। তারা যখন নাবী (সাঃআঃ)-কে দেখল তখন তারা শীঘ্র চলে যেতে লাগল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা একটু থাম। এ সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই। তারা বলিলেন, সুবহানাল্লাহ! হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বলিলেন, মানুষের রক্তধারায় শয়তান প্রবাহমান থাকে। আমি শঙ্কাবোধ করছিলাম, সে তোমাদের মনে কোন খারাপ ধারণা অথবা বলিলেন অন্য কিছু সৃষ্টি করে না কি।

৩২৮২. সুলাইমান ইবনু সুরাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন দুজন লোক গালাগালি করছিল। তাদের এক জনের চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল এবং তার রগগুলো ফুলে গিয়েছিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি এমন একটি দুআ জানি, যদি এ লোকটি পড়ে তবে তার রাগ দূর হয়ে যাবে। সে যদি পড়ে “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তান”- আমি শয়তান হইতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। তবে তার রাগ চলে যাবে। তখন তাকে বলিল, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তুমি আল্লাহর নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় চাও। সে বলিল, আমি কি পাগল হয়েছি?

৩২৮৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন স্ত্রীর নিকট গমন করে এবং বলে, “হে আল্লাহ! আমাকে শয়তান হইতে রক্ষা আর আমাকে এর মাধ্যমে যে সন্তান দিবে তাকেও শয়তান থেকে হেফাজত কর”। তাহলে যদি তাদের কোন সন্তান জন্মায়, তবে শয়তান তার কোন ক্ষতি করিতে পারবে না এবং তার উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না। আসমা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….. ইবনু আব্বাস (রাদি.) নিকট হইতে অনুরূপ রিওয়ায়ত বর্ণনা করেন।

৩২৮৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর বলিলেন, শয়তান আমার সামনে এসেছিল। সে আমার সালাত নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আল্লাহ আমাকে তার উপর বিজয়ী করেন। অতঃপর পূর্ণাঙ্গ হাদীসটি উল্লেখ করেন।

৩২৮৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যখন সালাতের জন্যে আযান দেয়া হয় তখন শয়তান সশব্দে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালাতে থাকে। আযান শেষ হলে সামনে এগিয়ে আসে। আবার যখন ইকামাত দেয়া হয় তখন আবার পালাতে থাকে। ইকামাত শেষ হলে আবার সামনে আসে এবং মানুষের মনে খটকা সৃষ্টি করিতে থাকে আর বলিতে থাকে ওটা ওটা মনে কর। এমন কি সে ব্যক্তি আর মনে রাখতে পারে না যে, সে কি তিন রাকআত পড়ল না চার রাকআত পড়ল। এরকম যদি কারো হয়ে যায়, সে মনে রাখতে পারে না তিন রাকাআত পড়েছে না কি চার রাকাআত তখন সে যেন দুটি সাহু সিজদা করে।

৩২৮৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্মের সময় তার পার্শ্বদেশে শয়তান তার দুই আঙ্গুলের দ্বারা খোঁচা মারে। ঈসা ইবনু মরয়াম (আঃ)-এর ব্যতিক্রম। সে তাকে খোঁচা মারতে গিয়েছিল। তখন সে পর্দার ওপর খোঁচা মারে।

৩২৮৭. আলকামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গেলাম, লোকেরা বলিল, ইনি আবু দারদা (রাদি.)। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের মধ্যে কি সে ব্যক্তি আছে, যাকে নাবী (সাঃআঃ)-এর মৌখিক দুআয় আল্লাহ শয়তান হইতে রক্ষা করিয়াছেন? মুগীরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সেই ব্যক্তি যাঁকে আল্লাহ তাহাঁর নাবী (সাঃআঃ)-এর মৌখিক দুআয় শয়তান হইতে রক্ষা করেছিলেন, তিনি হলেন, আম্মার (রাদি.)।

৩২৮৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, ফেরেশতামণ্ডলী মেঘের মাঝে এমন সব বিষয় আলোচনা করেন, যা পৃথিবীতে ঘটবে। তখন শয়তানেরা দু একটি কথা শুনে ফেলে এবং তা জ্যোতিষীদের কানে এমনভাবে ঢেলে দেয় যেমন বোতলে পানি ঢালা হয়। তখন তারা সত্য কথার সঙ্গে শত রকমের মিথ্যা বাড়িয়ে বলে।

৩২৮৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, হাই তোলা শয়তানের পক্ষ হইতে হয়ে থাকে। কাজেই তোমাদের কারো যখন হাই আসবে যথাসম্ভব তা রোধ করিবে। কারণ তোমাদের কেউ হাই তোলার সময় যখন হা বলে, তখন শয়তান হাসতে থাকে।

৩২৯০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহুদের দিন যখন মুশরিকরা পরাজিত হলো, তখন ইবলীস চিৎকার করে বলিল, হে আল্লাহর বান্দারা! তোমাদের পিছনের লোকদের থেকে সতর্ক হও। কাজেই সামনের লোকেরা পিছনের লোকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ফলে উভয় দলের মধ্যে নতুনভাবে লড়াই শুরু হল। হুযাইফাহ (রাদি.) হঠাৎ তার পিতা ইয়ামানকে দেখিতে পেলেন। তখন তিনি (হুযাইফাহ) বলিলেন, হে আল্লাহর বান্দারা! আমার পিতা! আমার পিতা! কিন্তু আল্লাহর কসম, তারা বিরত হয়নি। শেষ পর্যন্ত তারা তাঁকে হত্যা করে ফেলল। তখন হুযাইফাহ (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুক। উরওয়াহ (রাদি.) বলেন, আল্লাহর সঙ্গে মিলত হওয়া পর্যন্ত হুযাইফাহ (রাদি.) দুআ ও ইস্তিগফার করিতে থাকেন।

৩২৯১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে সালাতের ভিতরে মানুষের এদিক-ওদিক তাকানোর বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, তা হল শয়তানের এক ধরনের ছিনতাই, যা সে তোমাদের এক জনের সালাত হইতে ছিনিয়ে নেয়।

৩২৯২. আবু ক্বাতাদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, সৎ ও ভাল স্বপ্ন আল্লাহর তরফ হইতে হয়ে থাকে। আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের তরফ হইতে হয়ে থাকে। কাজেই তোমাদের কেউ যখন ভয়ানক মন্দ স্বপ্ন দেখে তখন সে যেন তার বাম দিকে থুথু ফেলে আর শয়তানের ক্ষতি হইতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায়। তা হলে স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করিতে পারবে না।

৩২৯৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, যে লোক একশবার এ দুআটি পড়বেঃ আল্লাহ ব্যতিত কোন ইলাহা নেই, তিনি একক, তাহাঁর কোন শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাহাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তাহাঁরই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। তাহলে দশটি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব তার হইবে। তার জন্য একশটি সওয়াব লেখা হইবে এবং আর একশটি গুনাহ মিটিয়ে ফেলা হইবে। ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান হইতে মাহফুজ থাকবে। কোন লোক তার চেয়ে উত্তম সওয়াবের কাজ করিতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তি সক্ষম হইবে, যে এর চেয়ে ঐ দুআটির আমল বেশি পরিমাণ করিবে।

৩২৯৪. সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, একদা উমর (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট আসার অনুমতি চাইলেন। তখন তাহাঁর সঙ্গে কয়েকজন কুরাইশ নারী কথাবার্তা বলছিল। তারা খুব উচ্চঃস্বরে কথা বলছিল। অতঃপর যখন উমর (রাদি.) অনুমতি চাইলেন, তারা উঠে শীঘ্র পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে অনুমতি প্রদান করিলেন। তখন তিনি মুচকি হাসছিলেন। তখন উমর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ আপনাকে সর্বদা সহাস্য রাখুন। তিনি বলিলেন, আমার নিকট যে সব মহিলা ছিল তাদের ব্যাপারে আমি আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। তারা যখনি তোমার আওয়াজ শুনল তখনই দ্রুত পর্দার আড়ালে চলে গেল। উমর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকেই তাদের বেশি ভয় করা উচিত ছিল। অতঃপর তিনি মহিলাদের উদ্দেশ্য করে বলিলেন, হে আত্মশত্রু মহিলাগণ! তোমরা আমাকে ভয় করছ অথচ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে ভয় করছ না? তারা জবাব দিল, হ্যাঁ, কারণ তুমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর চেয়ে অধিক কর্কশ ভাষী ও কঠোর হৃদয়ের লোক। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, শপথ ঐ সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তুমি যে পথে চল শয়তান কখনও সে পথে চলে না বরং সে তোমার পথ ছেড়ে অন্য পথে চলে।

৩২৯৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুম হইতে উঠল এবং উযূ করিল তখন তার উচিত নাক তিনবার ঝেড়ে ফেলা। কারণ, শয়তান তার নাকের ছিদ্রে রাত কাটিয়েছে।

৫৯/১২. অধ্যায়ঃ জ্বিন, তাদের পুরস্কার এবং শাস্তির বিবরণ।

মহান আল্লাহর বাণীঃ হে জ্বিন ও মানবজাতি! তোমাদের কাছে কি আসেনি তোমাদের মধ্য থেকে রাসুলগণ যারা তোমাদের কাছে আমার নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করত- (সুরা আনআম ১৩০)। —— ক্ষতি। ————–তারা আল্লাহ ও জ্বিনদের মাঝে সম্পর্ক স্থাপণ করেছে- (সুরা সাফফাত ১৫৮ আয়াতের তাফসীরে)। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, কুরাইশ কাফিররা ফেরেশতামণ্ডলীকে আল্লাহর কন্যা এবং তাদের মাতাদেরকে জ্বিনের নেতাদের কন্যা বলে আখ্যায়িত করত। মহান আল্লাহ বলেনঃ জ্বিনগণ অবশ্যই জানে যে, তাদেরকে হিসাবের সময় উপস্থিত করা হইবে। অচিরেই তাদেরকে হিসাবের জন্য উপস্থিত করা হইবে। ——— তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদেরকে হিসাবের সময় উপস্থিত করা হইবে- (সুরা ইয়াসীন ৭৫)।

৩২৯৬. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- কে বলেছেন, আমি তোমাকে দেখছি তুমি বকরির পাল ও মরুভূমি পছন্দ করছ। অতএব, তুমি যখন তোমার বকরির পাল নিয়ে মরুভূমিতে অবস্থান করিবে, সালাতের সময় হলে আযান দিবে, আযানে তোমার স্বর উচ্চ করিবে। কেননা মুআয্‌যিনের কণ্ঠস্বর জ্বিন, মানুষ ও যে কোন বস্তু শুনে, তারা ক্বিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। আবু সাঈদ (রাদি.) বলেন, আমি এ হাদীসটি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট হইতে শুনিয়াছি।

Comments

Leave a Reply