জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা আর তা হইতে সৃষ্ট বস্তু

জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা আর তা হইতে সৃষ্ট বস্তু

জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা আর তা হইতে সৃষ্ট বস্তু >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৫৯, সৃষ্টির সূচনা, অধ্যায়ঃ (৮-১০)=৩টি

৫৯/৮. অধ্যায়ঃ জান্নাতের বর্ণনা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে আর তা হল সৃষ্ট
৫৯/৯. অধ্যায়ঃ জান্নাতের দরজাসমূহের বর্ণনা
৫৯/১০. অধ্যায়ঃ জাহান্নামের বিবরণ আর তা হইতে সৃষ্ট বস্তু।

৫৯/৮. অধ্যায়ঃ জান্নাতের বর্ণনা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে আর তা হল সৃষ্ট

আবুল আলিয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন,——–মাসিক ঋতু, পেশাব ও থুথু হইতে পবিত্র। ———যখনই তাদের সামনে কোন একপ্রকারের খাদ্য পরিবেশন করা হইবে, অতঃপরই অন্য এক প্রকারের খাদ্য পরিবেশন করা হইবে। তারা (জান্নাতবাসীরা) বলবে, এগুলোতো ইতোপূর্বেই আমাদেরকে পরিবেশন করা হয়েছে। ———— তাদেরকে পরস্পরসদৃশ খাবার পরিবেশন করা হইবে অথচ সেগুলো স্বাদে হইবে বিভিন্ন। ——- তারা যেভাবে ইচ্ছা ফলফলাদি গ্রহণ করিবে। ——- নিকটবর্তী ——- পালঙ্কসমূহ। হাসান বসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ——– চেহারার সজীবতা। আর —— মনেরআনন্দ।

মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, —– –দ্রুতপ্রবাহিতপানি। —- পেটের ব্যথা। —- তাদের বুদ্ধি লোপ পাবেনা। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন,—- পরিপূর্ণ। —- অংকুরিত যৌবনা তরুণী। —- পাণীয়। —- – জান্নাতবাসীদের পাণীয় যা উঁচু হইতে নিঃসৃত হয়। —- তার মোড়ক হইবে —- কস্তুরী। —- দুই উচ্ছলিত (ঝর্ণা) —- সোনা ও মণিমুক্তা দিয়ে তৈরী। এ শব্দটি হইতেই ——-– এর উৎপত্তি অর্থাৎ উটের পিঠের গদী। —- –হাতল বিহীন পানপাত্র —-–– হাতল বিশিষ্ট পানপাত্র। ——– সোহাগিনী। একবচনে —- –যেমন —–এর বহুবচন —– মক্কা বাসী একে — –মদীনা বাসী —- আর ইরাকীরা— বলে থাকে।

মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, — জান্নাত ও স্বচ্ছল জীবন। — জীবিকা। .— কলা — কাঁদিভরা, এটাও বলা হয় যার কাঁটা নেই। — স্বামীদের নিকট সোহাগিনী। — প্রবাহিত। — একটির উপর আরেকটি বিছানা — অলীক কথা। — মিথ্যা। — ডালসমূহ। ———– দুই বাগিচার ফল হইবে তাদের নিকটবর্তী যা নিকট হইতে গ্রহণ করিবে। ——— এ বাগিচা দুটি ঘন সবুজ।

৩২৪০. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি মারা যায় তখন সকাল-সন্ধায় তার পরকালের আবাসস্থল তার নিকট পেশ করা হয়। সে যদি জান্নাতবাসী হয় তবে তাকে জান্নাতবাসীর আবাস স্থান আর যদি সে জাহান্নাম বাসী হয় তবে তাকে জাহান্নামবাসীর আবাসস্থান দেখান হয়।

৩২৪১. ইমরান ইবনু হুসাইন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি জান্নাতের অধিবাসী সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছি। আমি জানতে পারলাম, জান্নাতে অধিকাংশ অধিবাসী হইবে দরিদ্রলোক। জাহান্নামীদের সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছি, আমি জানতে পারলাম, এর বেশির ভাগ অধিবাসী নারী।

৩২৪২.আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক সময় আমরা নাবী (সাঃআঃ)- এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি বলিলেন, আমি নিদ্রিত ছিলাম। দেখলাম আমি জান্নাতে অবস্থিত। হঠাৎ দেখলাম এক নারী একটি দালানের পাশে উযু করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ দালানটি কার? তারা উত্তরে বলিলেন, উমারের। তখন তাহাঁর আত্মমর্যাদার কথা আমার স্মরণ হল। আমি পেছনের দিকে ফিরে চলে আসলাম। একথা শুনে উমর (রাদি.) কেঁদে ফেললেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আপনার সম্মুখে কি আমার কোন মর্যাদাবোধ থাকতে পারে?

৩২৪৩. আবদুল্লাহ ইবনু কায়স আল-আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, গুণসম্পন্ন মোতির তাঁবু থাকবে যার উচ্চতা ত্রিশ মাইল। এর প্রতিটি কোণে মুমিনদের জন্য এমন স্ত্রী থাকবে যাদেরকে অন্যরা কখনো দেখেনি। আবু আবদুস সামাদ ও হারিস ইবনু উবায়দ আবু ইমরান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে ষাট মাইল বলে বর্ণনা করিয়াছেন।

৩২৪৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরি করে রেখেছি, যা কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করিতে পার, কেউ জানেনা, তাদের জন্য তাদের চোখ শীতলকারী কী জিনিস লুকানো আছে-

(আসসাজদাহঃ ১৩)

৩২৪৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, যে দল প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করিবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল হইবে। তারা সেখানে থুথু ফেলবে না, নাক ঝাড়বেনা, মল মূত্র ত্যাগ করিবেনা। সেখানে তাদের পাত্র হইবে স্বর্ণের; তাদের চিরুণী হইবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের, তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধি কাষ্ঠ। তাদের গায়ের ঘাম মিসকের মত সুগন্ধময় হইবে। তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দুজন স্ত্রী থাকবে যাদের সৌন্দর্যের কারণে গোশত ভেদ করে পায়ের নলার হাড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোন মতভেদ থাকবে না; পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সকলের অন্তর এক অন্তরের মত হইবে। তারা সকাল- সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করিতে থাকবে।

৩২৪৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, প্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করিবে তারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে প্রবেশ করিবে আর তাদের পর যারা প্রবেশ করিবে তারা অতি উজ্জ্বল তারার ন্যায় আকৃতি ধারন করিবে। তাদের অন্তরগুলো এক ব্যাক্তির অন্তরের মত থকবে। তাদের মধ্যে কোন রকম মতভেদ থাকবে না আর পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের প্রত্যেকের দুজন করে স্ত্রী থাকবে। সৌন্দর্যের কারণে গোশ্‌ত ভেদ করে পায়ের নলার মজ্জা দেখা যাবে। তারা সকাল- সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করিবে। তারা রোগাক্রান্ত হইবে না, নাক ঝাড়বেনা, থুথু ফেলবে না। তাদের পাত্রসমূহ হইবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের আর চিরুণী হইবে স্বর্ণের। তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধি কাষ্ঠ। আবুল ইয়ামান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, অর্থাৎ কাষ্ঠ। তাদের গায়ের ঘাম মিসকের মত সুগন্ধময় হইবে। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, — অর্থ উষাকালের প্রথম অংশ — অর্থ সূর্য ঢলে পড়ার সময় হইতে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময়কাল।

৩২৪৭.সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ), বলেছেন, আমার উম্মাতের সত্তর হাজার লোক অথবা সাত লক্ষ লোক একই সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। তাদের কেউ আগে কেউ পরে এভাবে নয় আর তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল থাকবে।

৩২৪৮.আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-কে একটি রেশমী জুব্বা হাদিয়া দেয়া হল। অথচ তিনি রেশমী বস্ত্র পরতে নিষেধ করিতেন; লোকেরা তা খুব পছন্দ করিল। তখন তিনি বলিলেন, ঐ সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, অবশ্যই জান্নাতে সাদ ইবনু মুআযের রুমাল এর থেকে বেশি সুন্দর হইবে।

৩২৪৯. বারাআ ইবনু আযির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট একখানা রেশমী বস্ত্র আনা হল। লোকজন এর সৌন্দর্য এবং কমনীয়তার জন্য সেটা খুব পছন্দ করিতে লাগল। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, অবশ্যই জান্নাতে সাদ ইবনু মুআযের রুমাল এর থেকেও বেশি উত্তম হইবে।

৩২৫০. সাহল ইবনু সাদ আস্‌সাইয়িদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, জান্নাতে চাবুক পরিমাণ সামান্য জায়গাও দুনিয়া এবং এর মধ্যে যা আছে তার থেকে উত্তম।

৩২৫১. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, জান্নাতে এমন একটি গাছ আছে, যার ছায়ায় কোন আরোহী শত বছর পর্যন্ত চললেও তা অতিক্রম করিতে পারবে না।

৩২৫২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ আছে যার ছায়ায় কোন আরোহী শত বছর পর্যন্ত চলতে পারবে। আর তোমরা ইচ্ছা করলে তিলওয়াত করিতে পার ————– এবং দীর্ঘ ছায়া।

৩২৫৩. See previous Hadith. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আর জান্নাতে তোমাদের কারও একটি ধনুকের পরিমাণ জায়গাও ঐ জায়গা অপেক্ষা অধিক উত্তম সেখানে সূর্য উদিত হয় আর সূর্য অস্তমিত হয় (অর্থাৎ পৃথিবীর চেয়ে)।

৩২৫৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, প্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করিবে তাদের চেহারা পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল হইবে আর তাদের অনুগামী দলের চেহারা আকাশের উজ্জ্বল তারকার চেয়েও অধিক সুন্দর ও উজ্জ্বল হইবে। তাদের অন্তরগুলো এক ব্যক্তির অন্তরের মত হইবে। তাদের মধ্যে কোন বিদ্বেষ থাকবে না, কোন হিংসা থাকবে না, তাদের প্রত্যেকের জন্য ডাগর ডাগর চোখওয়ালা দুজন করে এমন স্ত্রী থাকবে, যাদের পদ তলের অস্থি মজ্জা ও গোশত ভেদ করে দেখা যাবে।

৩২৫৫. বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেন, যখন নাবী (সাঃআঃ) (এর ছেলে) ইবরাহীম (রাদি.) ইন্তিকাল করেন, তখন তিনি বলেন, জান্নাতে এর এক ধাত্রী আছে।

৩২৫৬. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, অবশ্যই জান্নাতবাসীরা তাদের উপরের বালাখানার বাসিন্দাদের এমনভাবে দেখিতে পাবে, যেমন তোমরা আকাশের পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে উজ্জ্বল দীপ্তিমান নক্ষত্র দেখিতে পাও। এটা হইবে তাদের মধ্যে মর্যাদার পার্থক্যের কারণে। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এ তো নাবীগণের জায়গা। তাদের ব্যতিত অন্যরা সেখানে পৌঁছতে পারবে না। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, সে সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যেসব লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং রাসুলগণকে সত্য বলে স্বীকার করিবে।

৫৯/৯. অধ্যায়ঃ জান্নাতের দরজাসমূহের বর্ণনা

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন জিনিস জোড়া জোড়া দান করিবে তাকে জান্নাতের দরজা থেকে ডাকা হইবে। এ কথাটি উবাদা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।

৩২৫৭. সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেন, জান্নাতে আটটি দরজা। তার মধ্যে একটি দরজার নাম হইবে রাইয়্যান। সাওম পালনকারী ছাড়া অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করিবে না।

৫৯/১০. অধ্যায়ঃ জাহান্নামের বিবরণ আর তা হইতে সৃষ্ট বস্তু।

——- প্রবাহিত পূঁজ যেমন কেউ বলে, তার চোখ প্রবাহিত হয়েছে ও ঘা প্রবাহিত হচ্ছে। —— আর —— একই অর্থ। —— যে কোন বস্তুকে ধৌত করার পর তা হইতে যা বের হয়, তাকে —— বলা হয়, এটা ——- শব্দ হইতে ——- এর ওযনে হয়ে থাকে। ইকরিমা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, ———-এর অর্থ জাহান্নামের জ্বালানী। এটা হাবশীদের ভাষা। আর অন্যরা বলেছেন, ——– অর্থ দমকা হাওয়া। আর ——- অর্থ বায়ু যা ছুঁড়ে ফেলে। এ হইতে হয়েছে ————– যার অর্থ হচ্ছে যা কিছু জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হয় আর এরাই এর জ্বালানী। ——- শব্দটি ——– শব্দ হইতে উৎপত্তি। যার অর্থ কংকরসমূহ। ——–পূঁজ ও রক্ত। ——– নিভে গেছে। ———- তোমরা আগুন বের করছ। —— অর্থ আমি আগুন জ্বালিয়েছি। ——— মুসাফিরগণের উপকারার্থে। আর —– তরুলতাহীন প্রান্তর। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, ————- অর্থ জাহান্নামের দিক ও তার মধ্যস্থল। —— তাদের খাদ্য অতি সরম পানির সঙ্গে মিশানো হইবে। ———- কঠোর চিৎকার ও আর্তনাদ। —— পিপাসার্ত। ——– ক্ষতিগ্রস্ত। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, ——— তাদের দ্বারা আগুন জ্বালানো হইবে। আর —— অর্থ শীশা যা গলিয়ে তাদের মাথায় ঢেলে দেয়া হইবে। বলা হয়েছে ——- এর অর্থ স্বাদ গ্রহণ কর এবং অভিজ্ঞতা হাসিল কর। এরা কিন্তু মুখের দ্বারা স্বাদ গ্রহণ করা নয়। —— নির্ভেজাল অগ্নি। —————— আমীর তার প্রজাকে ছেড়ে দিয়েছে, কথাটি এ সময় বলা হয় যখন সে তাদেরকে ছেড়ে দেয় আর তারা একে অন্যের প্রতি শত্রুতা করিতে থাকে। —— মিশ্রিত। ————- যখন মানুষের কোন বিষয় তালগোল পাকিয়ে যায়। আর ———- অর্থ তিনি দুটি নদী প্রবাহিত করিয়াছেন। —————– এ কথাটি সে সময় বলা হয়, যখন তুমি তোমার চতুষ্পদ জন্তুকে ছেড়ে দাও।

৩২৫৮. আবু যার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, নাবী (সাঃআঃ)-এক সফরে ছিলেন, তখন তিনি বলেন, ঠাণ্ডা হইতে দাও। আবার বলিলেন, টিলাগুলোর ছায়া নীচে নেমে আসা পর্যন্ত ঠাণ্ডা হইতে দাও। আবার বলিলেন, সালাত ঠাণ্ডা হলে পরে আদায় করিবে। কেননা, গরমের তীব্রতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকে হয়।

৩২৫৯. আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন যে, সালাত ঠাণ্ডা হলে, পরে আদায় করিবে। কেননা গরমের ভীষণতা জাহান্নামের উত্তাপ হইতে হয়।

৩২৬০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, জাহান্নাম তার রবের নিকট অভিযোগ করে বলেছে, হে রব! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলেছে। তখন তিনি তাকে দুটি নিঃশ্বাস ফেলার অনুমতি প্রদান করেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে আর একটি নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাক।

৩২৬১. আবু জামরাহ যুবায়ী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি মক্কায় ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর নিকট বসতাম। একবার আমি জ্বরাক্রান্ত হই। তখন তিনি আমাকে বলিলেন, তুমি তোমার গায়ের জ্বর যমযমের পানি দিয়ে ঠাণ্ডা কর। কারণ, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, এটা জাহান্নামের উত্তাপ হইতেই হয়ে থাকে। কাজেই তোমরা তা পানি দিয়ে ঠাণ্ডা কর অথবা বলেছেন। যমযমের পানি দিয়ে ঠাণ্ডা কর। এ বিষয়ে বর্ণনাকারী হাম্মাম সন্দেহ পোষণ করিয়াছেন।

৩২৬২. রাফি ইবনু খাদীজ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, জ্বরের উৎপত্তি হয় জাহান্নামের ভীষণ উত্তাপ হইতে। অতএব তোমাদের গায়ের সে তাপ পানি দ্বারা ঠাণ্ডা কর।

৩২৬৩. আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, জ্বর হয় জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। কাজেই তোমরা তা পানি দিয়ে ঠাণ্ডা কর।

৩২৬৪. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, জ্বর হয় জাহান্নামের উত্তাপ থেকে, কাজেই তোমরা পানি দিয়ে তা ঠাণ্ডা কর।

৩২৬৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের একভাগ মাত্র। বলা হল, হে আল্লাহর রাসুল! জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য দুনিয়ার আগুনই তো যথেষ্ট ছিল। তিনি বলিলেন, দুনিয়ার আগুনের উপর জাহান্নামের আগুনের তাপ আরো ঊনসত্তর গুন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, প্রত্যেক অংশে তার সম পরিমাণ উত্তাপ রয়েছে।

৩২৬৬. ইয়ালা (রাদি.) এর পিতা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে মিম্বারে তিলওয়াত করিতে শুনেছেন, “আর তারা ডাকবে, হে মালিক।”

(সুরা যুখরুফঃ ৭৭)

৩২৬৭. আবু ওয়াইল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উসামা (রাদি.)-কে বলা হল, কত ভাল হত! যদি আপনি ঐ ব্যক্তির [উসমান (রাদি.)]-এর নিকট যেতেন এবং তার সঙ্গে আলোচনা করিতেন। উত্তরে তিনি বলিলেন, আপনারা মনে করছেন যে আমি তাহাঁর সঙ্গে আপনাদেরকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলব। অথচ আমি তাহাঁর সঙ্গে (দাঙ্গা দমনের ব্যাপারে) গোপনে আলোচনা করছি, যেন আমি একটি দ্বার খুলে না বসি। আমি দ্বার উন্মুক্তকারীর প্রথম ব্যক্তি হইতে চাই না। আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট হইতে কিছু শুনিয়াছি, যার পরে আমি কোন ব্যক্তিকে যিনি আমাদের আমীর নির্বাচিত হয়েছেন এ কারণে তিনি আমাদের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি এ কথা বলিতে পারি না। লোকেরা তাঁকে বলিল, আপনি তাঁকে কি বলিতে শুনেছেন? উসা্‌মাহ (রাদি.) বলিলেন, আমি তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি, ক্বিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হইবে। অরঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে। তখন আগুনে পুড়ে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। এ সময় সে ঘুরতে থাকবে যেমন গাধা তার চাকা নিয়ে তার চারপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামবাসীরা তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, হে অমুক ব্যক্তি! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না আমাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করিতে আর অন্যায় কাজ হইতে নিষেধ করিতে? সে বলবে, আমি তোমাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করতাম বটে, কিন্তু আমি তা করতাম না আর আমি তোমাদেরকে অন্যায় কাজ হইতে নিষেধ করতাম, অথচ আমিই তা করতাম। এ হাদীসটি গুনদার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শুবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।

Comments

Leave a Reply