শত্রুর উপর বিজয়ী হলে ও গনীমতের মালামাল আত্মসাৎ করা
শত্রুর উপর বিজয়ী হলে ও গনীমতের মালামাল আত্মসাৎ করা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৫৬, জিহাদ, অধ্যায়ঃ (১৮৫-১৯৯)=১৫টি
৫৬/১৮৫. অধ্যায়ঃ শত্রুর উপর বিজয়ী হলে তাদের স্থানের বহির্ভাগে তিন দিবস অবস্থান করা।
৫৬/১৮৬. অধ্যায়ঃ যুদ্ধক্ষেত্রে ও সফরে গণীমত বন্টন করা।
৫৬/১৮৭. অধ্যায়ঃ মুশরিকরা মুসলিমের মালামাল লুন্ঠন করে নিলে মুসলিমদের তা প্রাপ্ত হওয়া।
৫৬/১৮৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ফার্সী কিংবা কোন অনারবী ভাষায় কথা বলে।
৫৬/১৮৯. অধ্যায়ঃ গনীমতের মালামাল আত্মসাৎ করা।
৫৬/১৯০. অধ্যায়ঃ স্বল্প পরিমাণ গনীমতের মাল আত্মসাৎ করা।
৫৬/১৯১. অধ্যায়ঃ গনীমতের উট ও ছাগল (বণ্টিত হওয়ার পূর্বে) যবহ করা মাকরূহ।
৫৬/১৯২. অধ্যায়ঃ বিজয়ের সুসংবাদ প্রদান প্রসঙ্গে।
৫৬/১৯৩. অধ্যায়ঃ সুসংবাদ বহনকারীকে পুরস্কৃত করা।
৫৬/১৯৪. অধ্যায়ঃ (মক্কা) বিজয়ের পর হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই।
৫৬/১৯৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআআলার না-ফরমানি করলে প্রয়োজনে জিম্মী অথবা মুসলিম নারীর চুল দেখা ও তাদের কে বিবস্ত্র করা।
৫৬/১৯৬. অধ্যায়ঃ মুজাহিদদেরকে সাদর সম্ভাষণ জ্ঞাপন করা।
৫৬/১৯৭. অধ্যায়ঃ জিহাদ হইতে ফিরে আসার কালে যা বলবে।
৫৬/১৯৮. অধ্যায়ঃ সফর হইতে প্রত্যাবর্তনের পর সালাত আদায় করা।
৫৬/১৯৯. অধ্যায়ঃ সফর হইতে ফিরে খাদ্য গ্রহন প্রসঙ্গে
৫৬/১৮৫. অধ্যায়ঃ শত্রুর উপর বিজয়ী হলে তাদের স্থানের বহির্ভাগে তিন দিবস অবস্থান করা।
৩০৬৫.আবু ত্বলহা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) যখন কোন সম্প্রদায়ের উপর বিজয় লাভ করিতেন, তখন তিনি তাদের বাহির অঙ্গনে তিন রাত্রি অবস্থান করিতেন। মুআয, আবদুল আলা ও আবু ত্বলহা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে হাদীস বর্ণনায় রাওহা ইবনে উবাদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।
৫৬/১৮৬. অধ্যায়ঃ যুদ্ধক্ষেত্রে ও সফরে গণীমত বন্টন করা।
রাফি (রাদি.) বলেন, আমরা যুল-হুলাইফাহ নামক স্থানে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন আমরা উট ও বকরী লাভ করলাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দশটি বকরীকে একটি উটের সমান গণ্য করেন।
৩০৬৬. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) জিরানা নামক জায়গা হইতে উমারাহর জন্য ইহরাম বাঁধলেন, যেখানে তিনি হুনাইন যুদ্ধের গনীমত বণ্টন করেছিলেন।
৫৬/১৮৭. অধ্যায়ঃ মুশরিকরা মুসলিমের মালামাল লুন্ঠন করে নিলে মুসলিমদের তা প্রাপ্ত হওয়া।
৩০৬৭. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, তাহাঁর একটি ঘোড়া ছুটে গেলে শত্রু তা আটক করে। অতঃপর মুসলিমগণ তাদের উপর বিজয় লাভ করেন। তখন সে ঘোড়াটি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর যুগেই তাঁকে ফেরত দেয়া হয়। আর তাহাঁর একটি গোলাম পলায়ন করে রোমের কাফিরদের সঙ্গে মিলিত হয়। অতঃপর মুসলিমগণ তাদের উপর বিজয় অর্জন করেন। তখন খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাদি.) রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর যামানার পর তা তাঁকে ফেরত দিয়ে দেন।
৩০৬৮.নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু উমর (রাদি.)-এর একটি গোলাম পালিয়ে গিয়ে রোমের মুশরিকদের সঙ্গে মিলিত হয়। অতঃপর খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাদি.) রোম জয় করেন। তখন তিনি সে গোলামটি আবদুল্লাহ (ইবনু উমর) (রাদি.)-কে ফেরত দিয়ে দেন। আর আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.)-এর একটি ঘোড়া ছুটে গিয়ে রোমে পৌঁছে যায়। অতঃপর উক্ত এলাকা মুসলিমদের দখলে আসলে তারা ঘোড়াটি ইবনু উমর (রাদি.)-কে ফেরত দিয়ে দেন। আবু আবদুল্লাহ (রাদি.) বলেন, —- শব্দটি —— হইতে উদগত। আর তা হল বন্য গাধা। — এর অর্থ —– অর্থাৎ পলায়ন করেছে।
৩০৬৯.ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি একটি ঘোড়ার উপর আরোহী ছিলেন। যখন মুসলিমগণ রোমীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন, সে সময় মুসলিমদের অধিনায়ক হিসেবে খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাদি.)-কে আবু বক্র সিদ্দীক (রাদি.) নিযুক্ত করেছিলেন। সে সময় দুশমনরা তাহাঁর ঘোড়াটিকে নিয়ে যায়। অতঃপর যখন দুশমনরা পরাজিত হল তখন খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাদি.) তাহাঁর ঘোড়াটি তাঁকে ফেরত দেন।
৫৬/১৮৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ফার্সী কিংবা কোন অনারবী ভাষায় কথা বলে।
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আর তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতার মধ্যে (রূম ২২) এবং তিনি আরও বলেছেনঃ আর আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার নিজ জাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি। (ইবরাহীম ৪)
৩০৭০. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার একটি ছাগল ছানা যবহ করেছি এবং আমার স্ত্রী এক সা যবের আটা পাকিয়েছে। আপনি কয়েকজন সঙ্গীসহ আসুন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠলেন, হে খন্দকের লোকেরা! জাবির তোমাদের জন্য খানার আয়োজন করেছে, তাই তোমরা চল।
৩০৭১. উম্মু খালিদ বিনতে খালিদ ইবনু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে হলুদ বর্ণের জামা পরে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট আসলাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, সান্না-সান্না। (রাবী) আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হাবশী ভাষায় তা সুন্দর অর্থ বুঝায়। উম্মু খালিদ (রাদি.) বলেন, আতঃপর আমি তাহাঁর মহরে নবুয়্যতের স্থান নিয়ে কৌতুক করিতে লাগলাম। আমার পিতা আমাকে ধমক দিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, ছোট মেয়ে তাকে করিতে দাও। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে বলিলেন, এ কাপড় পর আর পুরানো কর, আবার পর, পুরানো কর, আবার পর, পুরানো কর। আবদুল্লাহ (ইবনু মুবারক) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, উম্মু খালিদ (রাদি.) যতদিন জীবিত থাকেন, তাহাঁর আলোচনা চলতে থাকে।
৩০৭২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
হাসান ইবনু আলী (রাদি.) সদাকাহর খেজুর হইতে একটি খেজুর নিয়ে তা তাহাঁর মুখে দেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) কাখ্-কাখ্ বলিলেন, তুমি কি জান না যে, আমরা সদকা খাই না।
৫৬/১৮৯. অধ্যায়ঃ গনীমতের মালামাল আত্মসাৎ করা।
আল্লাহ তাআলার বানী: “কেউ কোন কিছু অন্যায়ভাবে গোপন করে রাখলে সে তা কিয়ামাতের দিন নিয়ে আসবে।” (আল ইমরান ১৬১)
৩০৭৩.আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাদের মাঝে দাঁড়ান এবং গনীমতের মাল আত্মসাৎ প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। আর তিনি তা মারাত্মক অপরাধ ও তার ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলিলেন, আমি তোমাদের কাউকে যেন এ অবস্থায় কেয়ামতের দিন না পাই যে, তাহাঁর কাঁধে বকরি বয়ে বেড়াচ্ছে আর তা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে চিৎকার দিচ্ছে। অথবা তাহাঁর কাঁধে রয়েছে ঘোড়া আর তা হি হি করে আওয়াজ দিচ্ছে। ঐ ব্যক্তি আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করিতে পারব না। আমি তো (দুনিয়ায়) তোমার নিকট পৌঁছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে উট যা চিৎকার করছে, সে আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসুল! একটু সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করিতে পারব না। আমি তো তোমার নিকট পৌঁছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে ধন-দৌলত এবং আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করিতে পারব না। আমি তো তোমার নিকট পৌঁছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে কাপড়ের টুকরাসমূহ যা দুলতে থাকবে। সে আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করিতে পারব না; আমি তো তোমার নিকট পৌঁছে দিয়েছি।
৫৬/১৯০. অধ্যায়ঃ স্বল্প পরিমাণ গনীমতের মাল আত্মসাৎ করা।
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে এ বর্ণনায় তিনি আত্মসাৎকারীর মালপত্র জ্বালিয়ে দিয়েছেন-কথাটি উল্লেখ করেননি। এটাই বিশুদ্ধ।
৩০৭৪. আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর পাহারা দেয়ার জন্য এক ব্যক্তি নিযুক্ত ছিল। তাকে কার্কারা নামে ডাকা হত। সে মারা গেল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, সে জাহান্নামী! লোকেরা তাকে দেখিতে গেল আর তারা একটি আবা পেল যা সে আত্মসাত করেছিল। আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইবনু সালাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, কারকারা।
৫৬/১৯১. অধ্যায়ঃ গনীমতের উট ও ছাগল (বণ্টিত হওয়ার পূর্বে) যবহ করা মাকরূহ।
৩০৭৫.রাফি ইবনু খাদীজ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে যুল-হুলাইফায় অবস্থান করছিলাম। লোকেরা ক্ষুধার্ত হয়েছিল। আর আমরা গানীমাত স্বরূপ কিছু উট ও বকরী লাভ করেছিলাম। তখন নাবী (সাঃআঃ) লোকদের পেছনে সারিতে ছিলেন। লোকেরা তাড়াতাড়ি করে পাতিল চড়িয়ে দিয়েছিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নির্দেশ দিলেন এবং পাতিলগুলো উপুড় করে ফেলে দেয়া হল। অতঃপর তিনি দশটি বকরীকে একটি উটের সমান ধরে তা বন্টন করে দিলেন। তার নিকট হইতে একটি উট পালিয়ে গেল। লোকদের নিকট ঘোড়া কম ছিল। তাঁরা তা অনুসন্ধানে বেরিয়ে গেল এবং তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ল। অতঃপর এক ব্যক্তি উটটির প্রতি তীর নিক্ষেপ করিল, আল্লাহ তাআলা তার গতিরোধ করে দিলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, এ সকল গৃহপালিত জন্তুর মধ্যেও কতক বন্য পশুর মত অবাধ্য হয়ে যায়। সুতরাং যা তোমাদের নিকট হইতে পলায়ন করে তার সঙ্গে এরূপ আচরণ করিবে। রাবী বলেন, আমার দাদা রাফি ইবনু খাদীজ (রাদি.) বলেছেন, আমরা আশা করি কিংবা বলেছেন আশঙ্কা করি যে, আমরা আগামীকাল শত্রুর মুখোমুখি হব। আর আমাদের সঙ্গে ছুরি নেই। আমরা কি বাঁশের ধারালো চোকলা দ্বারা যবহ করব? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে তা আহার কর। কিন্তু দাঁত ও নখ দিয়ে নয়। কারণ আমি বলে দিচ্ছি: তা এই যে, দাঁত হল হাড় আর নখ হল হাবশীদের ছুরি।
৫৬/১৯২. অধ্যায়ঃ বিজয়ের সুসংবাদ প্রদান প্রসঙ্গে।
৩০৭৬. জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে বলিলেন, তুমি কি যুলখালাসা মন্দিরটি ধ্বংস করে আমাকে সান্ত্বনা দিবে না? এ ঘরটি খাসআম গোত্রের একটি মন্দির ছিল। যাকে ইয়ামানের কাবা বলা হতো। অতঃপর আমি আহমাস গোত্রের দেড়শ লোক নিয়ে রওয়ানা হলাম। তাঁরা সবাই দক্ষ ঘোড় সওয়ার ছিলেন। আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে জানালাম যে, আমি ঘোড়ার উপর স্থির থাকতে পারি না। তখন তিনি আমার বুকে হাত দ্বারা আঘাত করিলেন। এমন কি আমি আমার বুকে তাহাঁর আঙ্গুলের ছাপ দেখিতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য দুআ করে বলিলেন, হে আল্লাহ! তাকে ঘোড়ার পিঠে স্থির রাখ এবং তাকে পথপ্রদর্শক ও সুপথপ্রাপ্ত করুন। অবশেষে জারীর (রাদি.) তথায় গমন করিলেন। ঐ মন্দিরটি ভেঙ্গে দিলেন ও জ্বালিয়ে দিলেন। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ)-কে সুসংবাদ প্রদানের জন্য দূত পাঠালেন। জারীর (রাদি.)-এর দূত রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিলেন, যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করিয়াছেন, সে সত্তার কসম! আমি ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার নিকট আসিনি, যতক্ষণ না আমি তাকে জ্বালিয়ে কাল উটের মত করে ছেড়েছি। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক লোকদের জন্য পাঁচবার বরকতের দুআ করিলেন। মুসাদ্দাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হাদীসে উল্লেখিত যুলখালাস অর্থ খাসআম গোত্রের একটি ঘর।
৫৬/১৯৩. অধ্যায়ঃ সুসংবাদ বহনকারীকে পুরস্কৃত করা।
কাব ইবনু মালিক (রাদি.)-কে যখন তওবা কবুলের সুসংবাদ দান করা হয়, তখন তিনি সংবাদদাতাকে পুরস্কার স্বরূপ দুখানা কাপড় দান করেছিলেন।
৫৬/১৯৪. অধ্যায়ঃ (মক্কা) বিজয়ের পর হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই।
৩০৭৭. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মক্কা বিজয়ের দিন বলেছেন, মক্কা বিজয়ের পর হইতে (মক্কা থেকে) হিজরতের প্রয়োজন নেই। কিন্তু জিহাদ ও নেক কাজের নিয়ত বাকী আছে আর যখন তোমাদের জিহাদের ডাক দেয়া হইবে তখন তোমরা বেরিয়ে পড়বে।
৩০৭৮ মুজাশি ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মুজাশি তাহাঁর ভাই মুজালিদ ইবনু মাসউদ (রাদি.) কে নিয়ে নাবী (সাঃআঃ) আর নিকট এসে বলিলেন, এ মুজালিদ আপনার নিকট হিজরত করার জন্য বাইআত করিতে চায়। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, মক্কা জয়ের পর আর হিজরতের দরকার নেই। কাজেই আমি তাহাঁর নিকট হইতে ইসলামের বাইআত নিচ্ছি।
৩০৭৯. মুজাশি ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মুজাশি তাহাঁর ভাই মুজালিদ ইবনু মাসউদ (রাদি.) কে নিয়ে নাবী (সাঃআঃ) আর নিকট এসে বলিলেন, এ মুজালিদ আপনার নিকট হিজরত করার জন্য বাইআত করিতে চায়। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, মক্কা জয়ের পর আর হিজরতের দরকার নেই। কাজেই আমি তাহাঁর নিকট হইতে ইসলামের বাইআত নিচ্ছি।
৩০৮০. আত্বা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি উবাইদ ইবনু উমাইর (রাদি.) সহ আয়েশা (রাদি.) এর নিকট গেলাম। তখন তিনি সাবীর পাহাড়ের উপর অবস্থান করছিলেন। তিনি আমাদেরকে বলিলেন, যখন হইতে আল্লাহ তাআলা তাহাঁর নাবী (সাঃআঃ)- কে মক্কা বিজয় দান করিয়াছেন, তখন থেকে হিজরত বন্ধ হয়ে গেছে।
৫৬/১৯৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআআলার না-ফরমানি করলে প্রয়োজনে জিম্মী অথবা মুসলিম নারীর চুল দেখা ও তাদের কে বিবস্ত্র করা।
৩০৮১. আবু আবদূর রাহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আর তিনি ছিলেন উসমান (রাদি.) এর সমর্থক। তিনি ইবনু আতিয়্যাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যিনি আলী (রাদি.)-এর সমর্থক ছিলেন, কোন বস্তু তোমাদের সাথী (আলী (রাদি.)- কে রক্তপাতে সাহস যুগিয়েছে, তা আমি জানি। আমি তাহাঁর নিকট শুনিয়াছি, তিনি বলিতেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে এবং যুবাইর (ইবনু আওয়াম) (রাদি.)-কে প্রেরণ করিয়াছেন, আর বলেছেন, তোমরা খাক বাগানের দিকে চলে যাও, সেখানে তোমরা একজন মহিলাকে পাবে, হাতিব তাকে একটি পত্র দিয়েছে। আমরা সে বাগানে পৌঁছলাম এবং মহিলাটিকে বললাম, পত্রখানি দাও, সে বলিল, আমাকে কোন পত্র দেয়নি। তখন আমরা বললাম, হয় তুমি পত্র বের করে দাও, নচেৎ আমরা তোমাকে বিবস্ত্র করব। তখন সে মহিলা তার কেশের ভাঁজ থেকে পত্রখানা বের করে দিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হাতিবকে ডেকে পাঠান। তখন সে বলিল, আমার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করবেন না। আল্লাহর কসম! আমি কুফরী করিনি, আমার হৃদয়ে ইসলামের প্রতি অনুরাগই বর্ধিত হয়েছে। আপনার সাহাবীগণের মধ্যে কেউই এমন নেই, মক্কায় যার সাহায্যকারী আত্মীয় স্বজন না আছে। যদ্দারা আল্লাহ তাআলা তাহাঁর পরিবার-পরিজন ধন-সম্পদ রক্ষা করিয়াছেন। আর আমার এমন কেউ নেই। তাই আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করিতে চেয়েছি। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে সত্যবাদী হিসেবে স্বীকার করে নিলেন। উমর (রাদি.) বলিলেন, লোকটিকে আমার হাতে ছেড়ে দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই, সে তো মুনাফিকী করেছে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি জান কি? অবশ্যই আল্লাহ তাআলা আহলে বদর সম্পর্কে ভালভাবে জানেন এবং তাদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন, তোমরা যেমন ইচ্ছা আমল কর। একথাই তাঁকে (আলী (রাদি.) দুঃসাহসী করেছে।
৫৬/১৯৬. অধ্যায়ঃ মুজাহিদদেরকে সাদর সম্ভাষণ জ্ঞাপন করা।
৩০৮২. ইবনু আবু মুলাইকা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু যুবাইর (রাদি.), ইবনু জাফর (রাদি.) কে বলিলেন, তোমার কি মনে আছে, যখন আমি ও তুমি এবং ইবনু আব্বাস (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে মিলিত হয়েছিলাম? ইবনু জাফর বলিলেন, হ্যাঁ, স্মরণ আছে। রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদেরকে বাহনে তুলে নিলেন আর তোমাকে ছেড়ে আসলেন।
৩০৮৩. সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে আমরাও আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে অভ্যর্থনা জানানোর উদ্দেশে সানিয়্যাতুল বিদা পর্যন্ত গিয়েছিলাম।
৫৬/১৯৭. অধ্যায়ঃ জিহাদ হইতে ফিরে আসার কালে যা বলবে।
৩০৮৪. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যখন নাবী (সাঃআঃ) জিহাদ হইতে ফিরতেন, তখন তিনবার তাকবীর বলিতেন। অতঃপর বলিতেন, আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, গুনাহ হইতে তওবাকারী, তাহাঁরই ইবাদতকারী, প্রশংসাকারী, আমাদের প্রতিপালককে সিজ্দাকারী। আল্লাহ তাআলা তাহাঁর অঙ্গীকার সত্য প্রমাণিত করিয়াছেন, তাহাঁর বান্দাকে সাহায্য করিয়াছেন এবং একাই শত্রু দলকে পরাভূত করিয়াছেন।
৩০৮৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উসফান হইতে প্রত্যাবর্তনের সময় আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে ছিলাম, আর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর সাওয়ারীর উপর আরোহী ছিলেন। তিনি সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই (রাদি.) কে তাহাঁর পেছনে সাওয়ারীর উপর বসিয়েছিলেন। এ সময় উট পিছলিয়ে গেল এবং তাঁরা উভয়ে ছিটকে পড়েন। এ দেখে আবু ত্বলহা (রাদি.) দ্রুত এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তাআলা আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আগে মহিলার খোঁজ নাও। আবু ত্বলহা (রাদি.) তখন একটা কাপড়ে নিজের মুখমণ্ডল ঢেকে তাহাঁর নিকট আসলেন এবং সে কাপড়টা দিয়ে তাকে ঢেকে দিলেন। অতঃপর তাঁদের দুজনের জন্য সাওয়ারীকে ঠিক করিলেন। তাঁরা উভয়েই আরোহণ করিলেন, আর আমরা সবাই আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর চারপাশে বেষ্টন করে চললাম। যখন আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলাম, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এ দুয়া পড়লেন ————————————— আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, আমরা তওবাকারী, আমরা ইবাদতকারী, আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রশংসাকারী। আর মদীনায় প্রবেশ করা পর্যন্ত তিনি এ দুআ পড়তে থাকলেন।
৩০৮৬. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি ও আবু ত্বলহা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে চলছিলেন। আর নাবী (সাঃআঃ) এর সঙ্গে সাফিয়্যাহ (রাদি.)-ও ছিলেন। তিনি তাঁকে নিজ সাওয়ারীতে তাহাঁর পেছনে বসিয়ে ছিলেন। পথিমধ্যে এক জায়গায় উটনীটির পা পিছলে গেল। এতে নাবী (সাঃআঃ) ও সাফিয়্যাহ ছিটকে পড়ে গেলেন। আর আবু ত্বলহা (রাদি.) তাহাঁর উট থেকে তাড়াতাড়ি নেমে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট বলিলেন, হে আল্লাহর নাবী! আল্লাহ তাআলা আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন। আপনার কি কোন আঘাত লেগেছে? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, না। তবে তুমি মহিলাটির খোঁজ নাও। আবু ত্বলহা (রাদি.) একটা কাপড় দিয়ে মুখমণ্ডল ঢেকে তাহাঁর নিকট গেলেন এবং সেই কাপড় দিয়ে তাঁকে ঢেকে দিলেন। তখন সাফিয়্যাহ (রাদি.) উঠে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি আবু ত্বলহা (রাদি.) তাঁদের উভয়ের জন্য সাওয়ারীটি উত্তমরূপে বাঁধলেন। আর তাঁরা উভয়ে (তার উপর) আরোহণ করে চলতে শুরু করেন। অবশেষে যখন তাঁরা মদীনার উপকন্ঠে পৌঁছলেন অথবা বর্ণনাকারী বলেন, যখন মদীনার নিকটবর্তী হলেন, তখন নাবী (সাঃআঃ) এ দুআ পড়লেন, “আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদতকারী, এবং আমাদের প্রতিপালকের প্রশংসাকারী।” আর মদিনাহয় প্রবেশ করা পর্যন্ত তিনি এ দুআ পড়তে থাকলেন।
৫৬/১৯৮. অধ্যায়ঃ সফর হইতে প্রত্যাবর্তনের পর সালাত আদায় করা।
৩০৮৭. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক সফরে আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখন মদীনায় উপস্থিত হলাম, তখন তিনি আমাকে বলিলেন, মসজিদে প্রবেশ কর এবং দু রাকআত সালাত আদায় কর।
৩০৮৮. কাব (ইবনু মালিক) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) যখন চাশতের সময় সফর হইতে ফিরতেন, তখন মসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে দু রাকআত সালাত আদায় করে নিতেন।
৫৬/১৯৯. অধ্যায়ঃ সফর হইতে ফিরে খাদ্য গ্রহন প্রসঙ্গে
আর (আবদুল্লাহ) ইবনু উমর (রাদি.) আগত মেহমানের সম্মানে সাওম পালন করিতেন না।
৩০৮৯. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যখন মাদিনাহয় ফিরতেন, তখন একটি উট অথবা একটি গাভী যবহ করিতেন। আর মুআয (রাদি.) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন যে, [জাবির (রাদি.) বলেন] আল্লাহর রাসুল আমার নিকট হইতে এক উট দু উকিয়া ও একটি দিরহাম কিংবা দু দিরহাম দ্বারা কিনে নেন এবং যখন তিনি সিরার নামক স্থানে পোঁছেন, তখন একটি গাভী যবহ করার নির্দেশ দেন। অতঃপর তা যবহ করা হয় এবং সকলে তাহাঁর গোশ্ত আহার করে। আর যখন তিনি মদীনায় উপস্থিত হলেন, তখন আমাকে মসজিদে প্রবেশ করে দু রাকআত সালাত আদায় করিতে আদেশ করিলেন এবং আমাকে উটের মূল্য পরিশোধ করে দিলেন।
৩০৯০. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি এক সফর হইতে ফিরে এলাম। তখন নাবী (সাঃআঃ) আমাকে বলিলেন, দু রাকআত সালাত আদায় করে নাও। সিরার হচ্ছে মাদিনাহর সন্নিকটে একটি স্থানের নাম।
Leave a Reply