শর্তাবলী – বিক্রি, বর্গাচাষ, বিবাহ, তালাক, যুদ্ধ, ঋণ ও ওয়াকফ

শর্তাবলী – বিক্রি, বর্গাচাষ, বিবাহ, তালাক, যুদ্ধ, ঋণ ও ওয়াকফ

শর্তাবলী – বিক্রি, বর্গাচাষ, বিবাহ, তালাক, যুদ্ধ, ঋণ ও ওয়াকফ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৫৪, শর্তাবলী, অধ্যায়ঃ (১-১৯)=১৯টি

৫৪/১. অধ্যায়ঃ ইসলামে আহকামে ও ক্রয়-বিক্রয়ে যে সব শর্ত জায়িয।
৫৪/২. অধ্যায়ঃ তাবীর করা খেজুর গাছ বিক্রি করা।
৫৪/৩. অধ্যায়ঃ বিক্রয়ে শর্তারোপ করা।
৫৪/৪. অধ্যায়ঃ নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত সওয়ারীর পিঠে চড়ে যাবার শর্তে পশু বিক্রি করা জায়িয।
৫৪/৫. অধ্যায়ঃ বর্গাচাষ ইত্যাদির বিষয়ে শর্তাবলী।
৫৪/৬. অধ্যায়ঃ বিবাহ বন্ধনের সময় মোহর সম্পর্কে শর্তাবলী।
৫৪/৭. অধ্যায়ঃ বর্গাচাষের শর্তাবলী।
৫৪/৮. অধ্যায়ঃ বিবাহে যে সব শর্ত বৈধ নয়।
৫৪/৯. অধ্যায়ঃ দণ্ড বিধিতে যে সকল শর্ত বৈধ নয়।
৫৪/১০. অধ্যায়ঃ মুক্ত করা হইবে এ শর্তে মুকাতাব বিক্রিত হইতে রাজী হলে তার জন্য কী কী শর্ত জায়িয।
৫৪/১১. অধ্যায়ঃ তালাকের শর্তাবলী।
৫৪/১২. অধ্যায়ঃ লোকজনের সাথে মৌখিক শর্ত করা।
৫৪/১৩. অধ্যায়ঃ ওয়ালার ব্যাপারে অধিকার অর্জনের শর্তারোপ।
৫৪/১৪. অধ্যায়ঃ বর্গাচাষের ক্ষেত্রে এমন শর্তারোপ করা যে, যখন ইচ্ছা আমি তোমাকে বের করে দিব।
৫৪/১৫. অধ্যায়ঃ যুদ্ধের প্রতিপক্ষীয়দের সাথে জিহাদ ও সমঝোতার ব্যাপারে শর্তারোপ এবং লোকদের সঙ্গে কৃত মৌখিক শর্ত লিপিবদ্ধ করা।
৫৪/১৬. অধ্যায়ঃ ঋণের বিষয়ে শর্তারোপ করা।
৫৪/১৭. অধ্যায়ঃ মুকাতাব প্রসঙ্গে এবং যে সব শর্ত আল্লাহর কিতাবের বিপরীত তা বৈধ নয়।
৫৪/১৮. অধ্যায়ঃ শর্তারোপ করা ও স্বীকারোক্তির মধ্য থেকে কিছু বাদ দেয়ার বৈধতা এবং লোকদের মধ্যে প্রচলিত শর্তাবলী প্রসঙ্গে যখন কেউ বলে যে, এক বা দু ব্যতীত একশ? (তবে হুকুম কী হইবে)।
৫৪/১৯. অধ্যায়ঃ ওয়াক্‌ফের ব্যাপারে শর্তাবলী

৫৪/১. অধ্যায়ঃ ইসলামে আহকামে ও ক্রয়-বিক্রয়ে যে সব শর্ত জায়িয।

২৭১১. মারওয়ান ও মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সাহাবীগণ হইতে বর্ণিতঃ

সেদিন সুহাইল ইবনু আমর যখন সন্ধিপত্র লিখল তখন সুহাইল ইবনু আমর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর প্রতি এরূপ শর্তারোপ করিল যে, আমাদের কেউ আপনার নিকট আসলে সে আপনার দ্বীন গ্রহণ করা সত্ত্বেও আপনি তাকে আমাদের নিকট ফিরিয়ে দিবেন। আর আমাদের ও তার মধ্যে হস্তক্ষেপ করবেন না। মুমিনরা এটা অপছন্দ করিলেন এবং এতে রাগান্বিত হলেন। সুহাইল এটা ব্যতীত সন্ধি করিতে অস্বীকার করিল। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সে শর্ত মেনেই সন্ধিপত্র লেখালেন। সেদিন তিনি আবু জানদাল (রাদি.)-কে তার পিতা সুহাইল ইবনু আমরের নিকট ফেরত দিলেন এবং সে চুক্তির মেয়াদ কালে পুরুষদের মধ্যে যেই এসেছিলো মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাকে ফেরত দিলেন। মুমিন নারীরাও হিজরত করে আসলেন। সে সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট যাঁরা এসেছিলেন তাদেঁর মধ্যে উম্মু কুলসুম বিনতে উকবাহ ইবনু আবু মুয়ায়ত (রাদি.) ছিলেন। তিনি ছিলেন যুবতী। তাহাঁর পরিজন তাঁকে তাদের নিকট ফেরত দেয়ার জন্য নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে দাবী জানালো। কিন্তু তাঁকে তিনি তাদের নিকট ফেরত দিলেন না। কেননা, সেই নারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা আয়াত নাযিল করেছিলেনঃ মুমিন নারীরা হিজরত করে তোমাদের নিকট আসলে তাদের তোমরা পরীক্ষা কর। আল্লাহ তাদের ঈমান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মুমিন তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠাবে না- (সুরা আল-মুমতাহিনা : ১০)। উরওয়াহ (রাদি.) বলেন, আয়েশা (রাদি.) আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) (আরবী) এই আয়াতের ভিত্তিতেই তাদের পরীক্ষা করে দেখিতেন।

২৭১২. মারওয়ান ও মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সাহাবীগণ হইতে বর্ণিতঃ

সেদিন সুহাইল ইবনু আমর যখন সন্ধিপত্র লিখল তখন সুহাইল ইবনু আমর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর প্রতি এরূপ শর্তারোপ করিল যে, আমাদের কেউ আপনার নিকট আসলে সে আপনার দ্বীন গ্রহণ করা সত্ত্বেও আপনি তাকে আমাদের নিকট ফিরিয়ে দিবেন। আর আমাদের ও তার মধ্যে হস্তক্ষেপ করবেন না। মুমিনরা এটা অপছন্দ করিলেন এবং এতে রাগান্বিত হলেন। সুহাইল এটা ব্যতীত সন্ধি করিতে অস্বীকার করিল। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সে শর্ত মেনেই সন্ধিপত্র লেখালেন। সেদিন তিনি আবু জানদাল (রাদি.)-কে তার পিতা সুহাইল ইবনু আমরের নিকট ফেরত দিলেন এবং সে চুক্তির মেয়াদ কালে পুরুষদের মধ্যে যেই এসেছিলো মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাকে ফেরত দিলেন। মুমিন নারীরাও হিজরত করে আসলেন। সে সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট যাঁরা এসেছিলেন তাদেঁর মধ্যে উম্মু কুলসুম বিনতে উকবাহ ইবনু আবু মুয়ায়ত (রাদি.) ছিলেন। তিনি ছিলেন যুবতী। তাহাঁর পরিজন তাঁকে তাদের নিকট ফেরত দেয়ার জন্য নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে দাবী জানালো। কিন্তু তাঁকে তিনি তাদের নিকট ফেরত দিলেন না। কেননা, সেই নারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা আয়াত নাযিল করেছিলেনঃ মুমিন নারীরা হিজরত করে তোমাদের নিকট আসলে তাদের তোমরা পরীক্ষা কর। আল্লাহ তাদের ঈমান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মুমিন তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠাবে না- (সুরা আল-মুমতাহিনা : ১০)। উরওয়াহ (রাদি.) বলেন, আয়েশা (রাদি.) আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) (আরবী) এই আয়াতের ভিত্তিতেই তাদের পরীক্ষা করে দেখিতেন।

২৭১৩. উরওয়াহ (রাদি.) বলেন, আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আয়েশা (রাদি.) বলেছেন, তাদের মধ্যে যারা এই শর্তে রাজী হতো তাকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) শুধু এ কথা বলিতেন, আমি তোমাকে বায়আত করলাম। আল্লাহর কসম! বায়আত গ্রহণে তাহাঁর হাত কখনো কোন নারীর হাত স্পর্শ করেনি। তিনি তাদের শুধু কথার মাধ্যমে বায়আত করিয়াছেন।

২৭১৪. যিয়াদ ইবনু ইলাকা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি জারীর (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট বায়আত গ্রহণ করলাম। তিনি আমার উপর প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কল্যাণ কামনার শর্তারোপ করিলেন।

২৭১৫. জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি সালাত কায়িম করার, যাকাত প্রদান করার এবং প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কল্যাণ কামনা করার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট বাইআত করেছি।

৫৪/২. অধ্যায়ঃ তাবীর করা খেজুর গাছ বিক্রি করা।

২৭১৬. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, কেউ তাবীর করা খেজুর গাছ বিক্রি করলে তার ফল হইবে বিক্রেতার, যদি ক্রেতা শর্তারোপ না করে।

৫৪/৩. অধ্যায়ঃ বিক্রয়ে শর্তারোপ করা।

২৭১৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বারীরা (রাদি.) একবার তাহাঁর নিকট এসে তার চুক্তি পত্রের ব্যাপারে সাহায্য প্রার্থনা করিল, তখন পর্যন্ত সে চুক্তির অর্থ কিছুই আদায় করেনি। আয়েশা (রাদি.) তাকে বলিলেন, তুমি তোমার মালিকের নিকট ফিরে যাও। তারা যদি এটা পছন্দ করে যে, আমি তোমার পক্ষ থেকে তোমার চুক্তিপত্রের প্রাপ্য পরিশোধ করে দিব, আর তোমার ওয়ালা আমার জন্য থাকবে, তাহলে আমি তাই করব। বারীরা (রাদি.) তার মালিককে সে কথা জানালে তারা অস্বীকার করে বলিল, তিনি যদি তোমাকে দিয়ে সওয়াব পেতে চান তবে করুন, তোমার ওয়ালা অবশ্য আমাদেরই থাকবে। আয়েশা (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে সে কথা জানালে তিনি তাঁকে বলিলেন, তুমি তাকে কিনে নাও তারপর আযাদ করে দাও। ওয়ালা তারই যে আযাদ করে।

৫৪/৪. অধ্যায়ঃ নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত সওয়ারীর পিঠে চড়ে যাবার শর্তে পশু বিক্রি করা জায়িয।

২৭১৮. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি তাহাঁর এক উটের উপর সওয়ার হয়ে সফর করছিলেন, সেটি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন নাবী (সাঃআঃ) আমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করিলেন এবং উটটিকে (চলার জন্য) প্রহার করে সেটির জন্য দুআ করিলেন। ফলে উটটি এত জোরে চলতে লাগলো যে, কখনো তেমন জোরে চলেনি। অতঃপর তিনি বলিলেন, এক উকিয়ার বিনিময়ে এটি আমার নিকট বিক্রি কর। আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, এটি আমার নিকট এক উকিয়ার বিনিময়ে বিক্রি কর। তখন আমি সেটি বিক্রি করলাম। কিন্তু আমার পরিজনের নিকট পৌঁছা পর্যন্ত সওয়ার হবার অধিকার রেখে দিলাম। অতঃপর উট নিয়ে আমি তাহাঁর নিকট গেলাম। তিনি আমাকে এর নগদ মূল্য দিলেন। অতঃপর আমি চলে গেলাম। তখন আমার পেছনে লোক পাঠালেন। পরে বলিলেন, তোমার উট নেয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না। তোমার এ উট তুমি নিয়ে যাও এটি তোমারই মাল।

শুবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জাবির (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উটটির পেছনে মদীনা পর্যন্ত আমাকে সাওয়ার হইতে দিলেন। ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জারীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সুত্রে মুগীরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করেন, আমি সেটি এ শর্তে বিক্রি করলাম যে, মদীনায় পৌঁছা পর্যন্ত তার পিঠে সাওয়ার হবার অধিকার আমার থাকবে। আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) প্রমুখ বলেন, [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছিলেন], মদীনা পর্যন্ত তোমার তাতে সওয়ার হবার অধিকার থাকবে। ইবনু মুনকাদির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জাবির (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি মদীনা পর্যন্ত এর পিঠে সওয়ার হবার শর্ত করিয়াছেন। যায়দ ইবনু আসলাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জাবির (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তোমার প্রত্যাবর্তন করা পর্যন্ত এর পিঠে সওয়ার হইতে পারবে। আবু যুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জাবির (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তোমাকে মদীনা পর্যন্ত এর পিঠে সওয়ার হইতে দিলাম। আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে জাবির (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন, এর উপর সওয়ার হয়ে তুমি পরিজনের নিকট পৌঁছবে। উবাইদুল্লাহ ও ইবনু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ওয়াহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে জাবির (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন, নাবী (সাঃআঃ) এক উকিয়ার বিনিময়ে সেটি খরিদ করেছিলেন। জাবির (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিতে গিয়ে যায়দ ইবনু আসলাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ওয়াহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন। ইবনু জুরাইজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) প্রমুখ সূত্রে জাবির (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, [রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, ] আমি এটাকে বার দীনারের বিনিময়ে নিলাম। দশ দিরহামে এক দীনার হিসেবে তাতে এক উকিয়াই হয়। মুগীরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে জাবির (রাদি.) থেকে এবং ইবনু মুনকাদির ও আবু যুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জাবির (রাদি.) থেকে বর্ণনায় মূল্য উল্লেখ করেননি। আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে জাবির (রাদি.) থেকে বর্ণনায় এক উকিয়া স্বর্ণ উল্লেখ করিয়াছেন। সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে জাবির (রাদি.) থেকে দাউদ ইবনু কায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) –এর বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি সেটি তাবুকের পথে খরিদ করেন। রাবী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছেন, চার উকিয়ার বিনিময়ে। আবু নাযরা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জাবির (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি সেটি বিশ দীনারে খরিদ করিয়াছেন। তবে শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কর্তৃক বর্ণিত এক উকিয়াই অধিক বর্ণিত। আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, (রিওয়ায়াতে বিভিন্ন রকমের হলেও) শর্ত আরোপ কৃত রিওয়ায়াতই অধিক সূত্রে বর্ণিত এবং আমার মতে এটাই অধিক সহীহ।

৫৪/৫. অধ্যায়ঃ বর্গাচাষ ইত্যাদির বিষয়ে শর্তাবলী।

২৭১৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আনসারগণ নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিলেন, আমাদের ও আমাদের (মুহাজির) ভাইদের মধ্যে খেজুর গাছ বণ্টন করে দিন। তিনি বলিলেন; না। তখন তাঁরা বলিলেন, তোমরা আমাদের শ্রমে সাহায্য করিবে আর তোমাদের আমরা ফলের অংশ দিব। তারা [মুহাজিরগণ (রাদি.) বলিলেন, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম।

২৭২০. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) খায়বার ইয়াহূদীদেরকে দিলেন এ শর্তে যে, তারা তাতে কাজ করিবে এবং তাতে ফসল ফলাবে, তাতে যা উৎপন্ন হইবে তার অর্ধেক তারা পাবে।

৫৪/৬. অধ্যায়ঃ বিবাহ বন্ধনের সময় মোহর সম্পর্কে শর্তাবলী।

উমর (রাদি.) …… বলেন, দাবী দাওয়া নির্ধারণ শর্তারোপের সময়। আর তুমি যে শর্ত করেছ, তাই তোমার প্রাপ্য। মিসওয়ার (রাদি.) বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে তাহাঁর এক জামাতার [১] সম্পর্কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি জামাতা হিসেবে তাহাঁর বহু প্রশংসা করিলেন। বলিলেন, সে আমার সঙ্গে যে কথা বলেছে তা সত্য বলে প্রমাণ করেছে। আর আমার সঙ্গে যে অঙ্গীকার করেছে তা পূরণ করেছে।

[১] নাবী (সাঃআঃ)-এর এই জামাতার নাম ছিল আবুল আস ইবনুর রবী (আরবী)

২৭২১. উকবাহ ইবনু আমির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, শর্তসমূহের মধ্যে যা পূর্ন করার সর্বাধিক দাবী রাখে তা হল সেই শর্ত যার দ্বারা তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের হালাল করেছ।

৫৪/৭. অধ্যায়ঃ বর্গাচাষের শর্তাবলী।

২৭২২.রাফি ইবনু খাদীজ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আনসারদের মধ্যে আমরা অধিক শস্য ক্ষেত্রের মালিক ছিলাম। তাই আমরা জমি বর্গা দিতাম। কখনো এ অংশে ফসল হতো, আর ঐ অংশে ফসল হতো না। তখন আমাদের তা করিতে নিষেধ করে দেয়া হলো। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে চাষ করিতে দিতে নিষেধ করা হয়নি।

৫৪/৮. অধ্যায়ঃ বিবাহে যে সব শর্ত বৈধ নয়।

২৭২৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, শহরবাসী গ্রামবাসীর পক্ষ হয়ে বিক্রয় করিবে না। আর তোমরা (মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশে) দালালী করিবে না। কেউ যেন তার ভাইয়ের ক্রয়ের উপরে দাম না বাড়ায় এবং কেউ যেন তার ভাইয়ের (বিবাহের) প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। আর কোন স্ত্রীলোক যেন তার বোনের (সতীনের) পাত্রের অধিকারী হওয়ার উদ্দেশে তার তালাকের চেষ্টা না করে।

৫৪/৯. অধ্যায়ঃ দণ্ড বিধিতে যে সকল শর্ত বৈধ নয়।

২৭২৪.আবু হুরাইরা ও যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা বলেন, এক বেদুঈন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আমার ব্যাপারে আল্লাহর কিতাব মত ফয়সালা করুন। তখন তার প্রতিপক্ষ, যে তার তুলনায় বেশি জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন সে বলিল, হ্যাঁ, আপনি আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব মত ফয়সালা করুন এবং আমাকে বলার অনুমতি দিন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, বল। সে বলিল, আমার ছেলে এর নিকট মজুর ছিলো। সে তার স্ত্রীর সঙ্গে যিনা করেছে। আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, আমার ছেলের প্রাপ্য দণ্ড হল রজম। তখন আমি তাকে (ছেলেকে) একশ বকরী এবং একটি বাঁদীর বিনিময়ে তার নিকট হইতে ছাড়িয়ে এনেছি। পরে আমি আলিমদের জিজ্ঞেস করলাম। তাঁরা আমাকে জানালেন যে, আমার ছেলের দণ্ড হল একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের নির্বাসন। আর এই লোকের স্ত্রীর দণ্ড হল রজম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাহাঁর কসম, অবশ্যই আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফায়সালা করব। বাঁদী এবং একশ বকরী তোমাকে ফেরত দেয়া হইবে। আর তোমার ছেলের শাস্তি একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের নির্বাসন। হে উনায়স! আগামীকাল সকালে এ লোকের স্ত্রীর নিকট যাবে। যদি সে স্বীকার করে তাহলে তাকে রজম করিবে। রাবী বলেন, উনায়স (রাদি.) পরদিন সকালে সে স্ত্রীলোকের নিকট গেলেন। সে অপরাধ স্বীকার করিল। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নির্দেশে তাকে রজম করা হল।

২৭২৫. আবু হুরাইরা ও যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা বলেন, এক বেদুঈন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আমার ব্যাপারে আল্লাহর কিতাব মত ফয়সালা করুন। তখন তার প্রতিপক্ষ, যে তার তুলনায় বেশি জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন সে বলিল, হ্যাঁ, আপনি আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব মত ফয়সালা করুন এবং আমাকে বলার অনুমতি দিন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, বল। সে বলিল, আমার ছেলে এর নিকট মজুর ছিলো। সে তার স্ত্রীর সঙ্গে যিনা করেছে। আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, আমার ছেলের প্রাপ্য দণ্ড হল রজম। তখন আমি তাকে (ছেলেকে) একশ বকরী এবং একটি বাঁদীর বিনিময়ে তার নিকট হইতে ছাড়িয়ে এনেছি। পরে আমি আলিমদের জিজ্ঞেস করলাম। তাঁরা আমাকে জানালেন যে, আমার ছেলের দণ্ড হল একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের নির্বাসন। আর এই লোকের স্ত্রীর দণ্ড হল রজম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাহাঁর কসম, অবশ্যই আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফায়সালা করব। বাঁদী এবং একশ বকরী তোমাকে ফেরত দেয়া হইবে। আর তোমার ছেলের শাস্তি একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের নির্বাসন। হে উনায়স! আগামীকাল সকালে এ লোকের স্ত্রীর নিকট যাবে। যদি সে স্বীকার করে তাহলে তাকে রজম করিবে। রাবী বলেন, উনায়স (রাদি.) পরদিন সকালে সে স্ত্রীলোকের নিকট গেলেন। সে অপরাধ স্বীকার করিল। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নির্দেশে তাকে রজম করা হল।

৫৪/১০. অধ্যায়ঃ মুক্ত করা হইবে এ শর্তে মুকাতাব বিক্রিত হইতে রাজী হলে তার জন্য কী কী শর্ত জায়িয।

২৭২৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুকাতাবা অবস্থায় বারীরা আমার নিকট এসে বলিল, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি আমাকে কিনে নিন। কারণ আমার মালিক আমাকে বিক্রি করে ফেলবে। অতঃপর আমাকে আযাদ করে দিন। তিনি বলিলেন ঠিক আছে, বারীরা বলিল, ওয়ালার অধিকার মালিকের থাকবে- এ শর্ত না রেখে তারা আমাকে বিক্রি করিবে না। তিনি বলিলেন, তবে তোমাকে দিয়ে আমার কোন দরকার নেই। পরে নাবী (সাঃআঃ) তা শুনলেন কিংবা তাহাঁর নিকট সে সংবাদ পৌঁছল। তখন তিনি বলিলেন, বারীরার খবর কী? এবং বলিলেন, তাকে কিনে নাও। অতঃপর তাকে আযাদ করে দাও। তারা যত ইচ্ছা শর্তারোপ করুক। আয়েশা (রাদি.) বলেন, অতঃপর আমি তাকে কিনে নিলাম এবং আযাদ করে দিলাম। তার মালিক পক্ষ ওয়ালার শর্তারোপ করিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, ওয়ালা তারই হইবে, যে আযাদ করিবে, তারা শত শর্তারোপ করলেও।

৫৪/১১. অধ্যায়ঃ তালাকের শর্তাবলী।

ইবনু মুসাইয়ব, হাসান ও আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তালাক প্রথমে বলুক বা শেষে বলুক, তা শর্তানুযায়ী প্রযুক্ত হইবে।

২৭২৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কাউকে শহরের বাইরে গিয়ে বাণিজ্য বহরের কাফেলা থেকে মাল কিনতে নিষেধ করিয়াছেন। আর বেদুঈন পক্ষ হয়ে মুহাজিরদেরকে কোন কিছু বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন। আর কোন স্ত্রীলোক যেন তার বোনের (অপর স্ত্রীলোকের) তালাকের শর্তারোপ না করে আর কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের দামের উপর দাম না করে এবং নিষেধ করিয়াছেন দালালী করিতে, (মূল্য বাড়ানোর উদ্দেশে) এবং স্তন্যে দুধ জমা করিতে (ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশে)। মুআয ও আবদুস সমদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে হাদীস বর্ণনায় মুহাম্মদ ইবনু আরআরা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন। গুনদার ও আবদুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) (আরবী) বলেছেন এবং আদাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, (আরবী) আর নাযর ও হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল বলেছেন, (আরবী)।

৫৪/১২. অধ্যায়ঃ লোকজনের সাথে মৌখিক শর্ত করা।

২৭২৮. উবাই ইবনু কাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহর রাসুল মূসা (আঃ) বলেন। অতঃপর তিনি পুরো ঘটনাটি বর্ণনা করেন। [এ ব্যাপারে খিয্‌র (আঃ)-এর এ কথাটি উল্লেখ করেন যা তিনি মূসা (আঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন], আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে ধৈর্য্যধারণ করিতে পারবে না? [মূসা (আঃ)-এর আপত্তি] প্রথমটি ছিল ভুলক্রমে, দ্বিতীয়টি শর্ত মুতাবিক, তৃতীয়টি ইচ্ছাকৃত। মূসা (আঃ) বলিলেন, আপনি আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না। তাঁরা উভয়ে এক বালকের সাক্ষাৎ পেলেন এবং খিয্‌র (আঃ) তাকে হত্যা করিলেন। অতঃপর তাঁরা উভয়ে পথ চলতে লাগলেন। কিছু দূর এগিয়ে তাঁরা পতনোন্মুখ একটি প্রাচীর দেখিতে পেলেন। খিয্‌র (আঃ) প্রাচীরটি সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন। ইবনু আব্বাস (রাদি.) আয়াতের (আরবী) এর স্থলে (আরবী) পড়েছেন।

৫৪/১৩. অধ্যায়ঃ ওয়ালার ব্যাপারে অধিকার অর্জনের শর্তারোপ।

২৭২৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বারীরা আমার নিকট এসে বলিল, আমি আমার মালিকের সঙ্গে নয় উকিয়ার বিনিময়ে আমাকে স্বাধীন করার এক চুক্তি করেছি। প্রতি বছর এক উকিয়া করে পরিশোধ করিতে হইবে। এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করুন। আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, তারা যদি এ শর্তে রাজী হয় যে, আমি তাদের সমস্ত প্রাপ্য একবারে দিয়ে দিই এবং তোমার ওয়ালা আমার জন্য থাকবে, তাহলে আমি তা করব। বারীরা তার মালিকের নিকট গিয়ে এ কথা বলিল; কিন্তু তারা তাতে অস্বীকৃতি জানাল। অতঃপর বারীরা তাদের নিকট হইতে ফিরে এল। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উপবিষ্ট ছিলেন। বারীরা বলিল, আমি তাদের নিকট প্রস্তাবটি পেশ করেছি, ওয়ালার অধিকার তাদের জন্য না হলে, এতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছে। নাবী (সাঃআঃ) শুনলেন এবং আয়েশা (রাদি.) -ও তাঁকে জানালেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, তুমি বারীরাহকে নিয়ে নাও এবং তাদের জন্য ওয়ালার অধিকারের শর্ত কর। কারণ ওয়ালার অধিকার তো তারই যে মুক্ত করিবে। আয়েশা (রাদি.) তাই করিলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) লোকদের মাঝে দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি করে বলিলেন, লোকদের কি হল যে, তারা এমন শর্তারোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই? আল্লাহর কিতাবের বহির্ভুত যে কোন শর্ত বাতিল, যদিও শত শর্তারোপ করা হয়। আল্লাহর হুকুম যথার্থ ও তাহাঁর শর্ত সুদৃঢ়। ওয়ালা তো তারই যে মুক্ত করে।

৫৪/১৪. অধ্যায়ঃ বর্গাচাষের ক্ষেত্রে এমন শর্তারোপ করা যে, যখন ইচ্ছা আমি তোমাকে বের করে দিব।

২৭৩০.ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন খায়বারবাসীরা আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.)-এর হাত পা ভেঙ্গে দিল, তখন উমর (রাদি.) ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন এবং বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) খায়বারের ইয়াহূদীদের সঙ্গে তাদের মাল সম্পত্তি সম্পর্কে চুক্তি করেছিলেন এবং বলেছিলেন, আল্লাহ তাআলা যতদিন তোমাদের রাখেন, ততদিন আমরাও তোমাদের রাখব। এই অবস্থায় আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) তাহাঁর নিজ সম্পত্তি দেখাশুনা করার জন্য খায়বার গমন করলে রাতে তাহাঁর উপর আক্রমণ করা হয় এবং তাহাঁর দুটি হাত পা ভেঙ্গে দেয়া হয়। সেখানে ইয়াহূদীরা ব্যতীত আমদের আর কোন শত্রু নেই। তারাই আমাদের দুশমন। তাদের উপর আমাদের সন্দেহ হয়। অতএব আমি তাদের নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উমর (রাদি.) যখন এ ব্যাপারে তাহাঁর দৃঢ় মত প্রকাশ করিলেন, তখন আবু হুকায়ক গোত্রের এক ব্যক্তি এসে বলিল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি কি আমদেরকে খায়বার থেকে বের করে দিবেন? অথচ মুহাম্মদ (সাঃআঃ) আমাদেরকে এখানে অবস্থানের অনুমতি দিয়েছিলেন। আর উক্ত সম্পত্তির ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে বর্গাচাষের ব্যবস্থা করেন এবং আমাদের এ শর্তে দেন। উমর (রাদি.) বলিলেন, তুমি কি মনে করেছ যে, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সে উক্তি ভুলে গিয়েছি, তোমার কী অবস্থা হইবে, যখন তোমাকে খায়বার থেকে বের করে দেয়া হইবে এবং তোমার উটগুলো রাতের পর রাত তোমাকে নিয়ে ছুটবে। সে বলিল, এটাতো আবুল কাসিমের বিদ্রুপাত্মক উক্তি ছিল। উমর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর দুশমন! তুমি মিথ্যা বলছ। অতঃপর উমর (রাদি.) তাদের নির্বাসিত করেন এবং তাদের ফল-ফসল, মালামাল, উট, লাগাম রজ্জু ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য দিয়ে দেন। রিওয়ায়াতটি হাম্মাদ ইবনু সালামা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)… উমর (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেন।

৫৪/১৫. অধ্যায়ঃ যুদ্ধের প্রতিপক্ষীয়দের সাথে জিহাদ ও সমঝোতার ব্যাপারে শর্তারোপ এবং লোকদের সঙ্গে কৃত মৌখিক শর্ত লিপিবদ্ধ করা।

২৭৩১. মিস্‌ওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) ও মারওয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তাদের উভয়ের একজনের বর্ণনা অপরজনের বর্ণনার সমর্থন করে তাঁরা বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হুদাইবিয়ার সময় বের হলেন। যখন সাহাবীগণ রাস্তার এক জায়গায় এসে পৌঁছলেন, তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, খালিদ ইবনু ওয়ালিদ কুরাইশদের অশ্বারোহী অগ্রবর্তী বাহিনী নিয়ে গোমায়ম নামক স্থানে অবস্থান করছে। তোমরা ডান দিকের রাস্তা ধর। আল্লাহর কসম! খালিদ মুসলিমদের উপস্থিতি টেরও পেলো না, এমনকি যখন তারা মুসলিম সেনাবাহিনীর পশ্চাতে ধূলিরাশি দেখিতে পেল, তখন সে কুরাইশদের সাবধান করার জন্য ঘোড়া দৌঁড়িয়ে চলে গেল। এদিকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) অগ্রসর হয়ে যখন সেই গিরিপথে উপস্থিত হলেন, যেখান থেকে মক্কার সোজা পথ চলে গিয়েছে, তখন নাবী (সাঃআঃ)-এর উটনী বসে পড়ল। লোকজন (তাকে উঠাবার জন্য) হাল-হাল বলিল, কাস্‌ওয়া ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, কাসওয়া ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, কাসওয়া ক্লান্ত হয়নি এবং তা তার স্বভাবও নয় বরং তাকে তিনিই আটকিয়েছেন যিনি হস্তি বাহিনীকে আটকিয়ে ছিলেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! কুরাইশরা আল্লাহর সম্মানিত বিষয় সমূহের মধ্যে যে কোন বিষয়ের সম্মান দেখানোর জন্য কিছু চাইলে আমি তা পূরণ করব। অতঃপর তিনি তাহাঁর উষ্ট্রীকে ধমক দিলে সে উঠে দাঁড়াল। রাবী বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তাদের পথ ত্যাগ করে হুদায়বিয়ার শেষ সীমায় অল্প পানি বিশিষ্ট কুপের নিকট অবতরণ করেন। লোকজন সেখান থেকে অল্প অল্প করে পানি নিচ্ছিল। এভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকজন পানি শেষ করে ফেলল এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট পিপাসার অভিযোগ পেশ করা হলো। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর কোষ থেকে একটি তীর বের করিলেন এবং সে তীরটি সেই কূপে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। আল্লাহর কসম, তখন পানি উথলে উঠতে লাগল, এমনকি সকলেই তৃপ্তি সহকারে তা থেকে পানি পান করিলেন। এমন সময় বুদায়ল ইবনু ওয়ারাকা খুযাঈ তার খুযাআ গোত্রের কতিপয় ব্যক্তিদের নিয়ে আসল। তারা তিহামাবাসীদের মধ্যে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর প্রকৃত হিতাকাঙ্খী ছিল। বুদাইল বলিল, আমি কাব ইবনু লুওয়াই ও আমির ইবনু লুওয়াইকে রেখে এসেছি। তারা হুদাইবিয়ার প্রচুর পানির নিকট অবস্থান করছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে বাচ্চাসহ দুগ্ধবতী অনেক উষ্ট্রী। তারা আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে ও বাইতুল্লাহ যিয়ারতে বাধা দেয়ার জন্য প্রস্তুত। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি তো কারো সাঙ্গে যুদ্ধ করিতে আসিনি; বরং উমরাহ করিতে এসেছি। যুদ্ধ অবশ্যই কুরাইশদের দুর্বল করে দিয়েছে, কাজেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা চাইলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের সঙ্গে সন্ধি করিতে পারি আর তারা আমার ও কাফিরদের মধ্যকার বাধা তুলে নিবে। যদি আমি তাদের উপর বিজয় লাভ করি তাহলে অন্যান্য ব্যক্তি ইসলামে যেভাবে প্রবেশ করেছে, তারাও ইচ্ছা করলে তা করিতে পারবে। আর না হয়, তারা এ সময়ে শান্তিতে থাকবে। কিন্তু তারা যদি আমার প্রস্তাব অস্বীকার করে, তাহলে সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার গর্দান আলাদা না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাব। আর অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তাহাঁর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। বুদায়ল বলিল, আমি আপনার কথা তাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিব। অতঃপর বুদায়ল কুরাইশদের নিকট এসে বলিল, আমি সেই ব্যক্তিটির কাছ থেকে এসেছি এবং তাহাঁর নিকট কিছু কথা শুনে এসেছি। তোমরা যদি চাও, তাহলে তোমাদের তা শোনাতে পারি। তাদের মধ্যে নির্বোধ লোকেরা বলিল, তাহাঁর পক্ষ থেকে আমাদের নিকট তোমার কিছু বলার দরকার নাই। কিন্তু তাদের জ্ঞানসম্পন্ন লোকেরা বলিল, তুমি তাঁকে যা বলিতে শুনেছ, তা বল। তারপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যা যা বলেছিলেন, বুদায়ল সব তাদের শুনাল। অতঃপর উরওয়াহ ইবনু মাসউদ উঠে দাঁড়িয়ে বলিল, হে লোকেরা! আমি কি তোমাদের পিতৃতুল্য নই? তারা বলিল, হ্যাঁ নিশ্চয়ই। উরওয়াহ বলিল, তোমরা কি আমার সন্তান তুল্য নও? তারা বলিল, হ্যাঁ অবশ্যই। উরওয়াহ বলিল, আমার ব্যাপারে তোমাদের কি কোন অভিযোগ আছে? তারা বলিল, না। উরওয়াহ বলিল, তোমারা কি জান না যে, আমি তোমাদের সাহায্যের জন্য উকাযবাসীদের নিকট আবেদন করেছিলাম এবং তারা আমাদের ডাকে সাড়া দিতে অস্বীকার করলে আমি আমার আত্মীয়-স্বজন, সন্তান-সন্ততি ও আমার অনুগত লোকদের নিয়ে তোমাদের নিকট এসেছিলাম? তারা বলিল, হ্যাঁ, জানি। উরওয়াহ বলিল, এই ব্যক্তিটি তোমাদের নিকট একটি ভাল প্রস্তাব পেশ করিয়াছেন। তোমরা তা গ্রহণ কর এবং আমাকে তার নিকট যেতে দাও। তারা বলিল, আপনি তাহাঁর নিকট যান। অতঃপর উরওয়াহ নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এল এবং তাহাঁর সঙ্গে কথা শুরু করিল। নাবী (সাঃআঃ) তার সঙ্গে কথা বলিলেন, যেমনিভাবে বুদায়লের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। উরওয়াহ তখন বলিল, হে মুহাম্মদ, আপনি কি চান যে, আপনার কওমকে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন, আপনি কি আপনার পূর্বে আরববাসীদের এমন কারো কথা শুনেছেন যে, সে নিজ কওমের মূলোৎপাটন করিতে উদ্যত হয়েছিল? আর যদি অন্য রকম হয়, (তখন আপনার কি অবস্থা হইবে?) আল্লাহর কসম! আমি কিছু চেহারা দেখছি এবং বিভিন্ন ধরনের লোক দেখিতে পাচ্ছি যাঁরা পালিয়ে যাবে এবং আপনাকে পরিত্যাগ করিবে। তখন আবু বকর (রাদি.) তাকে বলিলেন, তুমি লাত দেবীর লজ্জাস্থান চেটে খাও। আমরা কি তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে যাব। উরওয়াহ বলিল, সে কে? লোকজন বলিলেন, আবু বক্‌র। উরওয়াহ বলিল, যার হাতে আমার প্রাণ, আমি তাহাঁর কসম করে বলছি, আমার উপর যদি আপনার ইহসান না থাকত, যার প্রতিদান আমি দিতে পারিনি, তাহলে নিশ্চয়ই আপনার কথার জবাব দিতাম। রাবী বলেন, উরওয়াহ পুনরায় নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে কথা বলিতে শুরু করিল। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে সে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর দাড়িতে হাত দিত। তখন মুগীরাহ ইবনু শুবা (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর শিয়রে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং তাহাঁর সঙ্গে ছিল একটি তরবারী ও মাথায় ছিল লৌহ শিরস্ত্রাণ। উরওয়াহ যখনই আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর দাড়ির দিকে হাত বাড়াতো মুগীরাহ (রাদি.) তাহাঁর তরবারীর হাতল দিয়ে তার হাতে আঘাত করিতেন এবং বলিতেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর দাঁড়ি থেকে হাত হটাও। উরওয়াহ মাথা তুলে বলিল, এ কে? লোকজন বলিলেন, মুগীরাহ ইবনু শুবাহ। উরওয়াহ বলিল, হে গাদ্দার! আমি কি তোমার গাদ্দারীর পরিণতি থেকে তোমাকে উদ্ধারের চেষ্টা করিনি? মুগীরাহ (রাদি.) জাহেলী যুগে কিছু লোকদের সঙ্গে ছিলেন। একদা তাদের হত্যা করে তাদের সহায় সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি তোমার ইসলাম মেনে নিলাম, কিন্তু যে মাল তুমি নিয়েছ, তার সঙ্গে আমার কোন সর্ম্পক নেই। অতঃপর উরওয়াহ চোখের কোণ দিয়ে সাহাবীদের দিকে তাকাতে লাগল। সে বলিল, আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কখনো থুথু ফেললে তা সাহাবীদের হাতে পড়তো এবং তা তারা গায়ে মুখে মেখে ফেলতেন। তিনি তাঁদের কোন আদেশ দিলে তা তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে পালন করিতেন। তিনি ওযু করলে তাহাঁর ওযুর পানির জন্য তাহাঁর সাহাবীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হত। তিনি যখন কথা বলিতেন, তখন তাঁরা নীরবে তা শুনতেন এবং তাহাঁর সম্মানার্থে সাহাবীগণ তাহাঁর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেন না। অতঃপর উরওয়াহ তার সঙ্গীদের নিকট ফিরে গেল এবং বলিল, হে আমার কওম, আল্লাহর কসম! আমি অনেক রাজা-বাদশাহর দরবারে প্রতিনিধিত্ব করেছি। কায়সার, কিসরা ও নাজাশী সম্রাটের দরবারে দূত হিসেবে গিয়েছি; কিন্তু আল্লাহর কসম করে বলিতে পারি যে, কোন রাজা বাদশাহকেই তার অনুসারীদের মত এত সম্মান করিতে দেখিনি, যেমন মুহাম্মাদের অনুসারীরা তাঁকে করে থাকে। আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যদি থুথু ফেলেন, তখন তা কোন সাহাবীর হাতে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে তারা তা তাদের গায়ে মুখে মেখে ফেলেন। তিনি কোন আদেশ দিলে তারা তা সঙ্গে সঙ্গে পালন করেন; তিনি ওযু করলে তাহাঁর ওযুর পানি নিয়ে সাহাবীগণের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়; তিনি কথা বললে, সাহাবীগণ নিশ্চুপ হয়ে শুনেন। এমনকি তাহাঁর সম্মানার্থে তারা তাহাঁর চেহারার দিকেও তাকান না। তিনি তোমাদের নিকট একটি ভালো প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, তোমরা তা মেনে নাও। তা শুনে কিনানা গোত্রের এক ব্যক্তি বলিল, আমাকে তাহাঁর নিকট যেতে দাও। লোকেরা বলিল, যাও। সে যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও সাহাবীগণের নিকট এল তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, এ হলো অমুক ব্যক্তি এবং এমন গোত্রের লোক, যারা করবানীর পশুকে সম্মান করে থাকে। তোমরা তার নিকট কুরবানীর পশু নিয়ে আস। অতঃপর তার নিকট তা নিয়ে আসা হলো এবং লোকজন তালবিয়া পাঠ করিতে করিতে তার সামনে এলেন। তা দেখে ব্যক্তিটি বলিল, সুবহানাল্লাহ। এমন সব লোকদেরকে কাবা যিয়ারত থেকে বাধা দেয়া সঙ্গত নয়। অতঃপর সে তার সঙ্গীদের নিকট ফিরে গিয়ে বলিল, আমি কুরবানীর পশু দেখে এসেছি, সেগুলোকে কিলাদা পরানো হয়েছে ও চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই তাদের কাবা যিয়ারতে বাধা প্রদান সঙ্গত মনে করি না। তখন তাদের মধ্য থেকে মিকরায ইবনু হাফ্‌স নামক এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিল, আমাকে তাহাঁর নিকট যেতে দাও। তারা বলিল, তাহাঁর নিকট যাও। অতঃপর সে যখন মুসলিমদের নিকটবর্তী হল, নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এ হল মিকরায আর সে দুষ্ট ব্যক্তি। সে নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে কথা বলছিল, এমন সময় সুহায়ল ইবনু আমর এল। মামার বলেন, ইকরিমাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে আইয়ুর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে বলেছেন যে, যখন সুহায়ল এল তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ সহজ হয়ে গেল। মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর বর্ণিত হাদীসে বলেছেন যে, সুহায়ল ইবনু আমর এসে বলিল, আসুন আমাদের ও আপনাদের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র লিখি। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) একজন লেখককে ডাকলেন। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, (লিখ) (আরবী) এতে সুহায়ল বলিল, আল্লাহর কসম! রাহমান কে-? আমরা তা জানি না, বরং পূর্বে আপনি যেমন লিখতেন, লিখুন (আরবী) মুসলিমগণ বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমরা (আরবী) ব্যতীত আর কিছু লিখব না। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, লিখ, (আরবী) অতঃপর বলিলেন, এটা যার উপর চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সাঃআঃ)। তখন সুহায়ল বলিল, আল্লাহর কসম! আমরা যদি আপনাকে আল্লাহর রাসুল বলেই বিশ্বাস করতাম, তাহলে আপনাকে কাবা যিয়ারত থেকে বাধা দিতাম না এবং আপনাদের সাথে যুদ্ধ করিতে উদ্যত হতাম না। বরং আপনি লিখুন, আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদ (এর তরফ থেকে)। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর রাসুল; যদিও তোমরা আমাকে মিথ্যাবাদী মনে কর। (হে ফাতির!) লিখ, আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এটি এজন্য যে, তিনি বলেছিলেন, তারা যদি আল্লাহর পবিত্র বস্তুগুলোর সম্মান করার কোন কথা দাবী করে তাহলে আমি তাদের সে দাবী মেনে নিব। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এ চুক্তি কর যে, তারা আমাদের ও কাবা শরীফের মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করিবে না, যাতে আমরা (নির্বিঘ্নে) তাওয়াফ করিতে পারি। সুহায়ল বলিল, আল্লাহর কসম! আরববাসীরা যেন একথা বলার সুযোগ না পায় যে, এ প্রস্তাব গ্রহণে আমাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে। বরং আগামী বছর তা হইতে পারে। অতঃপর লেখা হলো। সুহায়ল বলিল, এও লিখা হউক যে, আমাদের কোন ব্যক্তি যদি আপনার নিকট চলে আসে এবং সে যদিও আপনার দ্বীন গ্রহণ করে থাকে, তবুও তাকে আমাদের নিকট ফিরিয়ে দিবেন। মুসলিমগণ বলিলেন, সুবহানাল্লাহ! যে ইসলাম গ্রহণ করে আমাদের নিকট এসেছে, তাকে কেমন করে মুশরিকদের নিকট ফেরত দেয়া হইতে পারে? এমন সময় আবু জানদাল ইবনু সুহায়ল ইবনু আমর সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি বেড়ী পরিহিত অবস্থায় ধীরে ধীরে চলছিলেন। তিনি মক্কার নিম্নাঞ্চল থেকে বের হয়ে এসে মুসলিমদের সামনে নিজেকে পেশ করিলেন। সুহায়ল বলিল, হে মুহাম্মদ! আপনার সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছে, সে অনুযায়ী প্রথম কাজ হলো তাকে আমার নিকট ফিরিয়ে দিবেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, এখনো তো চুক্তি সম্পাদিত হয়নি। সুহায়ল বলিল, আল্লাহর কসম! তাহলে আমি আপনাদের সঙ্গে আর কখনো সন্ধি করব না। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, কেবল এ ব্যক্তিটিকে আমার নিকট থাকার অনুমতি দাও। সে বলিল, না, এ অনুমতি আমি দেব না। আল্লাহর রাসুল বলিলেন, হ্যাঁ, তুমি এটা কর। সে বলিল, আমি তা করব না। মিকরায বলিল, আমরা তাকে আপনার নিকট থাকবার অনুমতি দিলাম। আবু জানদাল (রাদি.) বলেন, হে মুসলিম সমাজ, আমাকে মুশরিকদের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হইবে, অথচ আমি মুসলিম হয়ে এসেছি। আপনারা কি দেখছেন না আমি কত কষ্ট পাচ্ছি। আল্লাহর পথে তাকে অনেক নির্যাতিত করা হয়েছে। উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এলাম এবং বললাম, আপনি কি আল্লাহর সত্য নাবী নন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, তা হলে দ্বীনের ব্যাপারে কেন আমরা এত হেয় হবো? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি অবশ্যই রাসুল; অতএব আমি তাহাঁর অবাধ্য হইতে পারি না, অথচ তিনিই আমার সাহায্যকারী। আমি বললাম, আপনি কি আমাদের বলেন নাই যে, আমরা শীঘ্রই বায়তুল্লাহ যাব এবং তাওয়াফ করব। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আমি কি এ বছরই আসার কথা বলেছি? আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, তুমি অবশ্যই কাবা গৃহে যাবে এবং তাওয়াফ করিবে। উমর (রাদি.) বলেন, অতঃপর আমি আবু বকর (রাদি.)-এর নিকট গিয়ে বললাম, হে আবু বক্‌র। তিনি কি আল্লাহর সত্য নাবী নন? আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, অবশ্যই। আমি বললাম, আমরা কি সত্যের উপর নই এবং আমাদের দুশমনরা কি বাতিলের উপর নয়? আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, নিশ্চয়ই। আমি বললাম, তবে কেন এখন আমরা আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে এত হীনতা স্বীকার করব? আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, ওহে! নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর রাসুল এবং তিনি তাহাঁর রবের নাফরমানী করিতে পারেন না। তিনিই তাহাঁর সাহায্যকারী। তুমি তাহাঁর অনুসরণকে আঁকড়ে ধরো। আল্লাহর কসম! তিনি সত্যের উপর আছেন। আমি বললাম, তিনি কি বলেননি যে, আমরা অচিরেই বায়তুল্লাহ যাব এবং তাওয়াফ করব? আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, অবশ্যই। কিন্তু তুমি এবারই যে যাবে একথা কি তিনি বলেছিলেন? আমি বললাম, না। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, তবে নিশ্চয়ই তুমি সেখানে যাবে এবং তার তাওয়াফ করিবে। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন যে, উমর (রাদি.) বলেছেন, আমি এর জন্য (অর্থাৎ ধৈর্যহীনতার কাফ্‌ফারা হিসেবে) অনেক নেক আমল করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, সন্ধিপত্র লেখা শেষ হলে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সাহাবাদেরকে বলিলেন, তোমরা উঠ এবং কুরবানী কর ও মাথা কামিয়ে ফেল। রাবী বলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসুল তিনবার তা বলার পরও কেউ উঠলেন না। তাদের কাউকে উঠতে না দেখে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উম্মু সালামা (রাদি.)-এর নিকট এসে লোকদের এই আচরণের কথা বলেন। উম্মু সালামা (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর নাবী, আপনি যদি তাই চান, তাহলে আপনি বাইরে যান ও তাদের সঙ্গে কোন কথা না বলে আপনার উট আপনি কুরবানী করুন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা মুড়িয়ে নিন। সেই অনুযায়ী আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বেরিয়ে গেলেন এবং কারো সঙ্গে কোন কথা না বলে নিজের পশু কুরবানী দিলেন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা মুড়ালেন। তা দেখে সাহাবীগণ উঠে দাঁড়ালেন ও নিজ নিজ পশু কুরবানী দিলেন এবং একে অপরের মাথা কামিয়ে দিলেন। অবস্থা এমন হল যে, ভীড়ের কারণে একে অপরের উপর পড়তে লাগলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট কয়েকজন মুসলিম মহিলা এলেন।

তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ “হে মুমিনগণ! মুমিন মহিলারা তোমাদের নিকট হিজরত করে আসলে, ……. কাফির নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না।” (আল মুমতাহিনাহ : ১০)। সেদিন উমর (রাদি.) দুজন স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিলেন, তারা ছিল মুশরিক থাকাকালে তাহাঁর স্ত্রী। তাদের একজনকে মুআবিয়াহ ইবনু আবু সুফ্‌ইয়ান এবং অপরজনকে সাফওয়ান ইবনু উমাইয়া বিয়ে করেন। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মদীনায় ফিরে আসলেন। তখন আবু বাসীর (রাদি.) নামক কুরাইশ গোত্রের এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এলেন। মক্কার কুরাইশরা তাহাঁর তালাশে দুজন লোক পাঠাল। তারা [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে] বলিল, আপনি আমাদের সঙ্গে যে চুক্তি করিয়াছেন (তা পূর্ণ করুন)। তিনি তাঁকে ঐ দুই ব্যক্তির হাওয়ালা করে দিলেন। তাঁরা তাঁকে নিয়ে বেরিয়ে গেল এবং যুল-হুলায়ফায় পৌঁছে অবতরণ করিল আর তাদের সঙ্গে যে খেজুর ছিল তা খেতে লাগল। আবু বাসীর (রাদি.) তাকে তাদের একজনকে বলিলেন, আল্লাহর কসম! হে অমুক, তোমার তরবারিটি খুবই চমৎকার দেখছি। সে ব্যক্তিটি তরবারীটি বের করে বলিল, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম! এটি একটি উৎকৃষ্ট তরবারী। আমি একাধিক বার তার পরীক্ষা করেছি। আবু বাসীর (রাদি.) বলিলেন, তলোয়ারটি আমি দেখিতে চাই আমাকে তা দেখাও। অতঃপর ব্যক্তিটি আবু বাসীরকে তলোয়ারটি দিল। আবু বাসীর (রাদি.) সেটি দ্বারা তাকে এমন আঘাত করিলেন যে, তাতে সে মরে গেল। অতঃপর অপর সঙ্গী পালিয়ে মদীনায় এসে পৌঁছল এবং দৌড়িয়ে মাসজিদে প্রবেশ করিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাকে দেখে বলিলেন, এই ব্যক্তিটি ভীতিজনক কিছু দেখে এসেছে। ইতোমধ্যে ব্যক্তিটি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট পৌছে বলিল, আল্লাহর কসম! আমার সঙ্গীকে হত্যা করা হয়েছে, আমিও নিহত হতাম। এমন সময় আবু বাসীর (রাদি.) -ও সেখানে উপস্থিত হলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনার দায়িত্ব সম্পূর্ণ করে দিয়েছেন। আমাকে তার নিকট ফেরত দিয়েছেন; এ ব্যাপারে আল্লাহ আমাকে তাদের কবল থেকে নাজাত দিয়েছেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, সর্বনাশ! এতো যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিতকারী, কেউ যদি তাকে বিরত রাখত। আবু বাসীর (রাদি.) যখন এ কথা শুনলেন, তখন বুঝতে পারলেন যে, তাকে আবার তিনি কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠাবেন। তাই তিনি বেরিয়ে নদীর তীরে এসে পড়লেন। রাবী বলেন, এ দিকে আবু জানদাল ইবনু সুহায়ল কাফিরদের কবল থেকে পালিয়ে এসে আবু বাসীরের সঙ্গে মিলিত হলেন। অতঃপর থেকে কুরাইশ গোত্রের যে-ই ইসলাম গ্রহণ করতো, সে-ই আবু বাসীরের সঙ্গে এসে মিলিত হতো। এভাবে তাদের একটি দল হয়ে গেল। আল্লাহর কসম! তাঁরা যখনই শুনত যে, কুরাইশদের কোন বাণিজ্য কাফিলা সিরিয়া যাবে, তখনই তাঁরা তাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিতেন এবং তাদের হত্যা করিতেন ও তাদের মাল সামান কেড়ে নিতেন। তখন কুরাইশরা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট লোক পাঠাল। আল্লাহ ও আত্মীয়তার ওয়াসীলাহ দিয়ে আবেদন করিল যে, আপনি আবু বাসীরের নিকট এত্থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ পাঠান। এখন থেকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট কেউ এলে সে নিরাপদ থাকবে (কুরাইশদের নিকট ফেরত পাঠাতে হইবে না)। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) তাদের নিকট নির্দেশ পাঠালেন। এ সময় আল্লাহ তাআলা নাযিল করেনঃ (আরবী) থেকে (আরবী) পর্যন্ত। “তিনি তাদের হাত তোমাদের থেকে এবং তোমাদের হাত তাদের থেকে বিরত রেখেছেন ….. জাহিলী যুগের অহমিকা পর্যন্ত” (আল-ফাতহ : ২৬)। তাদের অহমিকা এই ছিল যে, তারা মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-কে নাবী বলে স্বীকার করেনি এবং (আরবী) মেনে নেয়নি; বরং বায়তুল্লাহ ও মুসলিমদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল।

২৭৩২. মিস্‌ওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) ও মারওয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তাদের উভয়ের একজনের বর্ণনা অপরজনের বর্ণনার সমর্থন করে তাঁরা বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হুদাইবিয়ার সময় বের হলেন। যখন সাহাবীগণ রাস্তার এক জায়গায় এসে পৌঁছলেন, তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, খালিদ ইবনু ওয়ালিদ কুরাইশদের অশ্বারোহী অগ্রবর্তী বাহিনী নিয়ে গোমায়ম নামক স্থানে অবস্থান করছে। তোমরা ডান দিকের রাস্তা ধর। আল্লাহর কসম! খালিদ মুসলিমদের উপস্থিতি টেরও পেলো না, এমনকি যখন তারা মুসলিম সেনাবাহিনীর পশ্চাতে ধূলিরাশি দেখিতে পেল, তখন সে কুরাইশদের সাবধান করার জন্য ঘোড়া দৌঁড়িয়ে চলে গেল। এদিকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) অগ্রসর হয়ে যখন সেই গিরিপথে উপস্থিত হলেন, যেখান থেকে মক্কার সোজা পথ চলে গিয়েছে, তখন নাবী (সাঃআঃ)-এর উটনী বসে পড়ল। লোকজন (তাকে উঠাবার জন্য) হাল-হাল বলিল, কাস্‌ওয়া ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, কাসওয়া ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, কাসওয়া ক্লান্ত হয়নি এবং তা তার স্বভাবও নয় বরং তাকে তিনিই আটকিয়েছেন যিনি হস্তি বাহিনীকে আটকিয়ে ছিলেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! কুরাইশরা আল্লাহর সম্মানিত বিষয় সমূহের মধ্যে যে কোন বিষয়ের সম্মান দেখানোর জন্য কিছু চাইলে আমি তা পূরণ করব। অতঃপর তিনি তাহাঁর উষ্ট্রীকে ধমক দিলে সে উঠে দাঁড়াল। রাবী বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তাদের পথ ত্যাগ করে হুদায়বিয়ার শেষ সীমায় অল্প পানি বিশিষ্ট কুপের নিকট অবতরণ করেন। লোকজন সেখান থেকে অল্প অল্প করে পানি নিচ্ছিল। এভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকজন পানি শেষ করে ফেলল এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট পিপাসার অভিযোগ পেশ করা হলো। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর কোষ থেকে একটি তীর বের করিলেন এবং সে তীরটি সেই কূপে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। আল্লাহর কসম, তখন পানি উথলে উঠতে লাগল, এমনকি সকলেই তৃপ্তি সহকারে তা থেকে পানি পান করিলেন। এমন সময় বুদায়ল ইবনু ওয়ারাকা খুযাঈ তার খুযাআ গোত্রের কতিপয় ব্যক্তিদের নিয়ে আসল। তারা তিহামাবাসীদের মধ্যে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর প্রকৃত হিতাকাঙ্খী ছিল। বুদাইল বলিল, আমি কাব ইবনু লুওয়াই ও আমির ইবনু লুওয়াইকে রেখে এসেছি। তারা হুদাইবিয়ার প্রচুর পানির নিকট অবস্থান করছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে বাচ্চাসহ দুগ্ধবতী অনেক উষ্ট্রী। তারা আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে ও বাইতুল্লাহ যিয়ারতে বাধা দেয়ার জন্য প্রস্তুত। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি তো কারো সাঙ্গে যুদ্ধ করিতে আসিনি; বরং উমরাহ করিতে এসেছি। যুদ্ধ অবশ্যই কুরাইশদের দুর্বল করে দিয়েছে, কাজেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা চাইলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের সঙ্গে সন্ধি করিতে পারি আর তারা আমার ও কাফিরদের মধ্যকার বাধা তুলে নিবে। যদি আমি তাদের উপর বিজয় লাভ করি তাহলে অন্যান্য ব্যক্তি ইসলামে যেভাবে প্রবেশ করেছে, তারাও ইচ্ছা করলে তা করিতে পারবে। আর না হয়, তারা এ সময়ে শান্তিতে থাকবে। কিন্তু তারা যদি আমার প্রস্তাব অস্বীকার করে, তাহলে সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার গর্দান আলাদা না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাব। আর অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তাহাঁর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। বুদায়ল বলিল, আমি আপনার কথা তাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিব। অতঃপর বুদায়ল কুরাইশদের নিকট এসে বলিল, আমি সেই ব্যক্তিটির কাছ থেকে এসেছি এবং তাহাঁর নিকট কিছু কথা শুনে এসেছি। তোমরা যদি চাও, তাহলে তোমাদের তা শোনাতে পারি। তাদের মধ্যে নির্বোধ লোকেরা বলিল, তাহাঁর পক্ষ থেকে আমাদের নিকট তোমার কিছু বলার দরকার নাই। কিন্তু তাদের জ্ঞানসম্পন্ন লোকেরা বলিল, তুমি তাঁকে যা বলিতে শুনেছ, তা বল। তারপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যা যা বলেছিলেন, বুদায়ল সব তাদের শুনাল। অতঃপর উরওয়াহ ইবনু মাসউদ উঠে দাঁড়িয়ে বলিল, হে লোকেরা! আমি কি তোমাদের পিতৃতুল্য নই? তারা বলিল, হ্যাঁ নিশ্চয়ই। উরওয়াহ বলিল, তোমরা কি আমার সন্তান তুল্য নও? তারা বলিল, হ্যাঁ অবশ্যই। উরওয়াহ বলিল, আমার ব্যাপারে তোমাদের কি কোন অভিযোগ আছে? তারা বলিল, না। উরওয়াহ বলিল, তোমারা কি জান না যে, আমি তোমাদের সাহায্যের জন্য উকাযবাসীদের নিকট আবেদন করেছিলাম এবং তারা আমাদের ডাকে সাড়া দিতে অস্বীকার করলে আমি আমার আত্মীয়-স্বজন, সন্তান-সন্ততি ও আমার অনুগত লোকদের নিয়ে তোমাদের নিকট এসেছিলাম? তারা বলিল, হ্যাঁ, জানি। উরওয়াহ বলিল, এই ব্যক্তিটি তোমাদের নিকট একটি ভাল প্রস্তাব পেশ করিয়াছেন। তোমরা তা গ্রহণ কর এবং আমাকে তার নিকট যেতে দাও। তারা বলিল, আপনি তাহাঁর নিকট যান। অতঃপর উরওয়াহ নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এল এবং তাহাঁর সঙ্গে কথা শুরু করিল। নাবী (সাঃআঃ) তার সঙ্গে কথা বলিলেন, যেমনিভাবে বুদায়লের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। উরওয়াহ তখন বলিল, হে মুহাম্মদ, আপনি কি চান যে, আপনার কওমকে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন, আপনি কি আপনার পূর্বে আরববাসীদের এমন কারো কথা শুনেছেন যে, সে নিজ কওমের মূলোৎপাটন করিতে উদ্যত হয়েছিল? আর যদি অন্য রকম হয়, (তখন আপনার কি অবস্থা হইবে?) আল্লাহর কসম! আমি কিছু চেহারা দেখছি এবং বিভিন্ন ধরনের লোক দেখিতে পাচ্ছি যাঁরা পালিয়ে যাবে এবং আপনাকে পরিত্যাগ করিবে। তখন আবু বকর (রাদি.) তাকে বলিলেন, তুমি লাত দেবীর লজ্জাস্থান চেটে খাও। আমরা কি তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে যাব। উরওয়াহ বলিল, সে কে? লোকজন বলিলেন, আবু বক্‌র। উরওয়াহ বলিল, যার হাতে আমার প্রাণ, আমি তাহাঁর কসম করে বলছি, আমার উপর যদি আপনার ইহসান না থাকত, যার প্রতিদান আমি দিতে পারিনি, তাহলে নিশ্চয়ই আপনার কথার জবাব দিতাম। রাবী বলেন, উরওয়াহ পুনরায় নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে কথা বলিতে শুরু করিল। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে সে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর দাড়িতে হাত দিত। তখন মুগীরাহ ইবনু শুবা (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর শিয়রে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং তাহাঁর সঙ্গে ছিল একটি তরবারী ও মাথায় ছিল লৌহ শিরস্ত্রাণ। উরওয়াহ যখনই আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর দাড়ির দিকে হাত বাড়াতো মুগীরাহ (রাদি.) তাহাঁর তরবারীর হাতল দিয়ে তার হাতে আঘাত করিতেন এবং বলিতেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর দাঁড়ি থেকে হাত হটাও। উরওয়াহ মাথা তুলে বলিল, এ কে? লোকজন বলিলেন, মুগীরাহ ইবনু শুবাহ। উরওয়াহ বলিল, হে গাদ্দার! আমি কি তোমার গাদ্দারীর পরিণতি থেকে তোমাকে উদ্ধারের চেষ্টা করিনি? মুগীরাহ (রাদি.) জাহেলী যুগে কিছু লোকদের সঙ্গে ছিলেন। একদা তাদের হত্যা করে তাদের সহায় সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি তোমার ইসলাম মেনে নিলাম, কিন্তু যে মাল তুমি নিয়েছ, তার সঙ্গে আমার কোন সর্ম্পক নেই। অতঃপর উরওয়াহ চোখের কোণ দিয়ে সাহাবীদের দিকে তাকাতে লাগল। সে বলিল, আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কখনো থুথু ফেললে তা সাহাবীদের হাতে পড়তো এবং তা তারা গায়ে মুখে মেখে ফেলতেন। তিনি তাঁদের কোন আদেশ দিলে তা তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে পালন করিতেন। তিনি ওযু করলে তাহাঁর ওযুর পানির জন্য তাহাঁর সাহাবীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হত। তিনি যখন কথা বলিতেন, তখন তাঁরা নীরবে তা শুনতেন এবং তাহাঁর সম্মানার্থে সাহাবীগণ তাহাঁর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেন না। অতঃপর উরওয়াহ তার সঙ্গীদের নিকট ফিরে গেল এবং বলিল, হে আমার কওম, আল্লাহর কসম! আমি অনেক রাজা-বাদশাহর দরবারে প্রতিনিধিত্ব করেছি। কায়সার, কিসরা ও নাজাশী সম্রাটের দরবারে দূত হিসেবে গিয়েছি; কিন্তু আল্লাহর কসম করে বলিতে পারি যে, কোন রাজা বাদশাহকেই তার অনুসারীদের মত এত সম্মান করিতে দেখিনি, যেমন মুহাম্মাদের অনুসারীরা তাঁকে করে থাকে। আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যদি থুথু ফেলেন, তখন তা কোন সাহাবীর হাতে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে তারা তা তাদের গায়ে মুখে মেখে ফেলেন। তিনি কোন আদেশ দিলে তারা তা সঙ্গে সঙ্গে পালন করেন; তিনি ওযু করলে তাহাঁর ওযুর পানি নিয়ে সাহাবীগণের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়; তিনি কথা বললে, সাহাবীগণ নিশ্চুপ হয়ে শুনেন। এমনকি তাহাঁর সম্মানার্থে তারা তাহাঁর চেহারার দিকেও তাকান না। তিনি তোমাদের নিকট একটি ভালো প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, তোমরা তা মেনে নাও। তা শুনে কিনানা গোত্রের এক ব্যক্তি বলিল, আমাকে তাহাঁর নিকট যেতে দাও। লোকেরা বলিল, যাও। সে যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও সাহাবীগণের নিকট এল তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, এ হলো অমুক ব্যক্তি এবং এমন গোত্রের লোক, যারা করবানীর পশুকে সম্মান করে থাকে। তোমরা তার নিকট কুরবানীর পশু নিয়ে আস। অতঃপর তার নিকট তা নিয়ে আসা হলো এবং লোকজন তালবিয়া পাঠ করিতে করিতে তার সামনে এলেন। তা দেখে ব্যক্তিটি বলিল, সুবহানাল্লাহ। এমন সব লোকদেরকে কাবা যিয়ারত থেকে বাধা দেয়া সঙ্গত নয়। অতঃপর সে তার সঙ্গীদের নিকট ফিরে গিয়ে বলিল, আমি কুরবানীর পশু দেখে এসেছি, সেগুলোকে কিলাদা পরানো হয়েছে ও চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই তাদের কাবা যিয়ারতে বাধা প্রদান সঙ্গত মনে করি না। তখন তাদের মধ্য থেকে মিকরায ইবনু হাফ্‌স নামক এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিল, আমাকে তাহাঁর নিকট যেতে দাও। তারা বলিল, তাহাঁর নিকট যাও। অতঃপর সে যখন মুসলিমদের নিকটবর্তী হল, নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এ হল মিকরায আর সে দুষ্ট ব্যক্তি। সে নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে কথা বলছিল, এমন সময় সুহায়ল ইবনু আমর এল। মামার বলেন, ইকরিমাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে আইয়ুর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে বলেছেন যে, যখন সুহায়ল এল তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ সহজ হয়ে গেল। মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর বর্ণিত হাদীসে বলেছেন যে, সুহায়ল ইবনু আমর এসে বলিল, আসুন আমাদের ও আপনাদের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র লিখি। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) একজন লেখককে ডাকলেন। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, (লিখ) (আরবী) এতে সুহায়ল বলিল, আল্লাহর কসম! রাহমান কে-? আমরা তা জানি না, বরং পূর্বে আপনি যেমন লিখতেন, লিখুন (আরবী) মুসলিমগণ বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমরা (আরবী) ব্যতীত আর কিছু লিখব না। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, লিখ, (আরবী) অতঃপর বলিলেন, এটা যার উপর চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সাঃআঃ)। তখন সুহায়ল বলিল, আল্লাহর কসম! আমরা যদি আপনাকে আল্লাহর রাসুল বলেই বিশ্বাস করতাম, তাহলে আপনাকে কাবা যিয়ারত থেকে বাধা দিতাম না এবং আপনাদের সাথে যুদ্ধ করিতে উদ্যত হতাম না। বরং আপনি লিখুন, আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদ (এর তরফ থেকে)। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর রাসুল; যদিও তোমরা আমাকে মিথ্যাবাদী মনে কর। (হে ফাতির!) লিখ, আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এটি এজন্য যে, তিনি বলেছিলেন, তারা যদি আল্লাহর পবিত্র বস্তুগুলোর সম্মান করার কোন কথা দাবী করে তাহলে আমি তাদের সে দাবী মেনে নিব। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এ চুক্তি কর যে, তারা আমাদের ও কাবা শরীফের মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করিবে না, যাতে আমরা (নির্বিঘ্নে) তাওয়াফ করিতে পারি। সুহায়ল বলিল, আল্লাহর কসম! আরববাসীরা যেন একথা বলার সুযোগ না পায় যে, এ প্রস্তাব গ্রহণে আমাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে। বরং আগামী বছর তা হইতে পারে। অতঃপর লেখা হলো। সুহায়ল বলিল, এও লিখা হউক যে, আমাদের কোন ব্যক্তি যদি আপনার নিকট চলে আসে এবং সে যদিও আপনার দ্বীন গ্রহণ করে থাকে, তবুও তাকে আমাদের নিকট ফিরিয়ে দিবেন। মুসলিমগণ বলিলেন, সুবহানাল্লাহ! যে ইসলাম গ্রহণ করে আমাদের নিকট এসেছে, তাকে কেমন করে মুশরিকদের নিকট ফেরত দেয়া হইতে পারে? এমন সময় আবু জানদাল ইবনু সুহায়ল ইবনু আমর সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি বেড়ী পরিহিত অবস্থায় ধীরে ধীরে চলছিলেন। তিনি মক্কার নিম্নাঞ্চল থেকে বের হয়ে এসে মুসলিমদের সামনে নিজেকে পেশ করিলেন। সুহায়ল বলিল, হে মুহাম্মদ! আপনার সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছে, সে অনুযায়ী প্রথম কাজ হলো তাকে আমার নিকট ফিরিয়ে দিবেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, এখনো তো চুক্তি সম্পাদিত হয়নি। সুহায়ল বলিল, আল্লাহর কসম! তাহলে আমি আপনাদের সঙ্গে আর কখনো সন্ধি করব না। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, কেবল এ ব্যক্তিটিকে আমার নিকট থাকার অনুমতি দাও। সে বলিল, না, এ অনুমতি আমি দেব না। আল্লাহর রাসুল বলিলেন, হ্যাঁ, তুমি এটা কর। সে বলিল, আমি তা করব না। মিকরায বলিল, আমরা তাকে আপনার নিকট থাকবার অনুমতি দিলাম। আবু জানদাল (রাদি.) বলেন, হে মুসলিম সমাজ, আমাকে মুশরিকদের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হইবে, অথচ আমি মুসলিম হয়ে এসেছি। আপনারা কি দেখছেন না আমি কত কষ্ট পাচ্ছি। আল্লাহর পথে তাকে অনেক নির্যাতিত করা হয়েছে। উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এলাম এবং বললাম, আপনি কি আল্লাহর সত্য নাবী নন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, তা হলে দ্বীনের ব্যাপারে কেন আমরা এত হেয় হবো? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি অবশ্যই রাসুল; অতএব আমি তাহাঁর অবাধ্য হইতে পারি না, অথচ তিনিই আমার সাহায্যকারী। আমি বললাম, আপনি কি আমাদের বলেন নাই যে, আমরা শীঘ্রই বায়তুল্লাহ যাব এবং তাওয়াফ করব। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আমি কি এ বছরই আসার কথা বলেছি? আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, তুমি অবশ্যই কাবা গৃহে যাবে এবং তাওয়াফ করিবে। উমর (রাদি.) বলেন, অতঃপর আমি আবু বকর (রাদি.)-এর নিকট গিয়ে বললাম, হে আবু বক্‌র। তিনি কি আল্লাহর সত্য নাবী নন? আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, অবশ্যই। আমি বললাম, আমরা কি সত্যের উপর নই এবং আমাদের দুশমনরা কি বাতিলের উপর নয়? আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, নিশ্চয়ই। আমি বললাম, তবে কেন এখন আমরা আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে এত হীনতা স্বীকার করব? আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, ওহে! নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর রাসুল এবং তিনি তাহাঁর রবের নাফরমানী করিতে পারেন না। তিনিই তাহাঁর সাহায্যকারী। তুমি তাহাঁর অনুসরণকে আঁকড়ে ধরো। আল্লাহর কসম! তিনি সত্যের উপর আছেন। আমি বললাম, তিনি কি বলেননি যে, আমরা অচিরেই বায়তুল্লাহ যাব এবং তাওয়াফ করব? আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, অবশ্যই। কিন্তু তুমি এবারই যে যাবে একথা কি তিনি বলেছিলেন? আমি বললাম, না। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, তবে নিশ্চয়ই তুমি সেখানে যাবে এবং তার তাওয়াফ করিবে। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন যে, উমর (রাদি.) বলেছেন, আমি এর জন্য (অর্থাৎ ধৈর্যহীনতার কাফ্‌ফারা হিসেবে) অনেক নেক আমল করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, সন্ধিপত্র লেখা শেষ হলে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সাহাবাদেরকে বলিলেন, তোমরা উঠ এবং কুরবানী কর ও মাথা কামিয়ে ফেল। রাবী বলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসুল তিনবার তা বলার পরও কেউ উঠলেন না। তাদের কাউকে উঠতে না দেখে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উম্মু সালামা (রাদি.)-এর নিকট এসে লোকদের এই আচরণের কথা বলেন। উম্মু সালামা (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর নাবী, আপনি যদি তাই চান, তাহলে আপনি বাইরে যান ও তাদের সঙ্গে কোন কথা না বলে আপনার উট আপনি কুরবানী করুন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা মুড়িয়ে নিন। সেই অনুযায়ী আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বেরিয়ে গেলেন এবং কারো সঙ্গে কোন কথা না বলে নিজের পশু কুরবানী দিলেন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা মুড়ালেন। তা দেখে সাহাবীগণ উঠে দাঁড়ালেন ও নিজ নিজ পশু কুরবানী দিলেন এবং একে অপরের মাথা কামিয়ে দিলেন। অবস্থা এমন হল যে, ভীড়ের কারণে একে অপরের উপর পড়তে লাগলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট কয়েকজন মুসলিম মহিলা এলেন।

তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ “হে মুমিনগণ! মুমিন মহিলারা তোমাদের নিকট হিজরত করে আসলে, ……. কাফির নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না।” (আল মুমতাহিনাহ : ১০)। সেদিন উমর (রাদি.) দুজন স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিলেন, তারা ছিল মুশরিক থাকাকালে তাহাঁর স্ত্রী। তাদের একজনকে মুআবিয়াহ ইবনু আবু সুফ্‌ইয়ান এবং অপরজনকে সাফওয়ান ইবনু উমাইয়া বিয়ে করেন। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মদীনায় ফিরে আসলেন। তখন আবু বাসীর (রাদি.) নামক কুরাইশ গোত্রের এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এলেন। মক্কার কুরাইশরা তাহাঁর তালাশে দুজন লোক পাঠাল। তারা [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে] বলিল, আপনি আমাদের সঙ্গে যে চুক্তি করিয়াছেন (তা পূর্ণ করুন)। তিনি তাঁকে ঐ দুই ব্যক্তির হাওয়ালা করে দিলেন। তাঁরা তাঁকে নিয়ে বেরিয়ে গেল এবং যুল-হুলায়ফায় পৌঁছে অবতরণ করিল আর তাদের সঙ্গে যে খেজুর ছিল তা খেতে লাগল। আবু বাসীর (রাদি.) তাকে তাদের একজনকে বলিলেন, আল্লাহর কসম! হে অমুক, তোমার তরবারিটি খুবই চমৎকার দেখছি। সে ব্যক্তিটি তরবারীটি বের করে বলিল, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম! এটি একটি উৎকৃষ্ট তরবারী। আমি একাধিক বার তার পরীক্ষা করেছি। আবু বাসীর (রাদি.) বলিলেন, তলোয়ারটি আমি দেখিতে চাই আমাকে তা দেখাও। অতঃপর ব্যক্তিটি আবু বাসীরকে তলোয়ারটি দিল। আবু বাসীর (রাদি.) সেটি দ্বারা তাকে এমন আঘাত করিলেন যে, তাতে সে মরে গেল। অতঃপর অপর সঙ্গী পালিয়ে মদীনায় এসে পৌঁছল এবং দৌড়িয়ে মাসজিদে প্রবেশ করিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাকে দেখে বলিলেন, এই ব্যক্তিটি ভীতিজনক কিছু দেখে এসেছে। ইতোমধ্যে ব্যক্তিটি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট পৌছে বলিল, আল্লাহর কসম! আমার সঙ্গীকে হত্যা করা হয়েছে, আমিও নিহত হতাম। এমন সময় আবু বাসীর (রাদি.) -ও সেখানে উপস্থিত হলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনার দায়িত্ব সম্পূর্ণ করে দিয়েছেন। আমাকে তার নিকট ফেরত দিয়েছেন; এ ব্যাপারে আল্লাহ আমাকে তাদের কবল থেকে নাজাত দিয়েছেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, সর্বনাশ! এতো যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিতকারী, কেউ যদি তাকে বিরত রাখত। আবু বাসীর (রাদি.) যখন এ কথা শুনলেন, তখন বুঝতে পারলেন যে, তাকে আবার তিনি কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠাবেন। তাই তিনি বেরিয়ে নদীর তীরে এসে পড়লেন। রাবী বলেন, এ দিকে আবু জানদাল ইবনু সুহায়ল কাফিরদের কবল থেকে পালিয়ে এসে আবু বাসীরের সঙ্গে মিলিত হলেন। অতঃপর থেকে কুরাইশ গোত্রের যে-ই ইসলাম গ্রহণ করতো, সে-ই আবু বাসীরের সঙ্গে এসে মিলিত হতো। এভাবে তাদের একটি দল হয়ে গেল। আল্লাহর কসম! তাঁরা যখনই শুনত যে, কুরাইশদের কোন বাণিজ্য কাফিলা সিরিয়া যাবে, তখনই তাঁরা তাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিতেন এবং তাদের হত্যা করিতেন ও তাদের মাল সামান কেড়ে নিতেন। তখন কুরাইশরা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট লোক পাঠাল। আল্লাহ ও আত্মীয়তার ওয়াসীলাহ দিয়ে আবেদন করিল যে, আপনি আবু বাসীরের নিকট এত্থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ পাঠান। এখন থেকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট কেউ এলে সে নিরাপদ থাকবে (কুরাইশদের নিকট ফেরত পাঠাতে হইবে না)। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) তাদের নিকট নির্দেশ পাঠালেন। এ সময় আল্লাহ তাআলা নাযিল করেনঃ (আরবী) থেকে (আরবী) পর্যন্ত। “তিনি তাদের হাত তোমাদের থেকে এবং তোমাদের হাত তাদের থেকে বিরত রেখেছেন ….. জাহিলী যুগের অহমিকা পর্যন্ত” (আল-ফাতহ : ২৬)। তাদের অহমিকা এই ছিল যে, তারা মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-কে নাবী বলে স্বীকার করেনি এবং (আরবী) মেনে নেয়নি; বরং বায়তুল্লাহ ও মুসলিমদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল।

২৭৩৩. উকাইল (রাদি.) যহুরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন যে, আমার নিকট আয়েশা (রাদি.) বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মুসলিম নারীদের পরীক্ষা করিতেন এবং আমাদের নিকট এ বর্ণনা পৌঁছেছে যে, যখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করেন, মুসলিমগণ যেন মুশরিক স্বামীদের সে সব খরচ আদায় করে দেয়, যা তারা তাদের হিজরতকারী স্ত্রীদের জন্য ব্যয় করেছে এবং মুসলিমদের নির্দেশ দেন যেন তারা কাফির স্ত্রীদের আটকিয়ে না রাখে। তখন উমর (রাদি.) তাহাঁর দুই স্ত্রী কুরাইবাহ বিনতু আবু উমায়্যাহ ও বিনতে জারওয়াল খুযায়ীকে তালাক দিয়ে দেন। অতঃপর কুরাইবাহকে মুআবিয়াহ ও অপরজনকে আবু জাহাম বিয়ে করে নেয়। অতঃপর কাফিররা যখন মুসলিমদের তাদের স্ত্রীদের জন্য খরচকৃত অর্থ ফেরত দিতে অস্বীকার করিল, তখন নাযিল হলঃ

‏وَإِنْ فَاتَكُمْ شَىْءٌ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ إِلَى الْكُفَّارِ فَعَاقَبْتُمْ

“তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যদি কেউ হাত ছাড়া হয়ে কাফিরদের কাছে চলে যায়, তবে তোমরা তার বদলা নিবে”- (আল-মুমতাহিনাহ ১১)। বদলা হলঃ কাফিরদের স্ত্রী যারা হিজরত করে চলে আসে, তাদের কাফির স্বামীকে মোহর মুসলিমদের যা দিতে হয়, এ সম্বন্ধে নাবী (সাঃআঃ) নির্দেশ দেন যে, তারা যেন মুসলিমদের যে সব স্ত্রী চলে গেছে ঐ অর্থ তাদের মুসলিম স্বামীদেরকে দিয়ে দেয়। [যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আরো বলেন] এমন কোন মুহাজির নারীর কথা আমাদের জানা নেই, যে ঈমান আনার পর মুরতাদ হয়ে চলে গেছে। আমাদের কাছে এ বর্ণনা পৌঁছেছে যে, আবু বাসীর ইবনু আসীদ সাকাফী (রাদি.) ঈমান এনে চুক্তির মেয়াদের মধ্যে নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট হিজরত করে চলে আসলেন। তখন আখনাস ইবনু শারীক আবু বাসীর (রাদি.)-কে ফেরত চেয়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট পত্র লিখল। অতঃপর তিনি হাদীসের বাকি অংশ বর্ণনা করিয়াছেন।

৫৪/১৬. অধ্যায়ঃ ঋণের বিষয়ে শর্তারোপ করা।

২৭৩৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) এক ব্যক্তির উল্লেখ করে বলেন যে, সে বনূ ইসরাঈলের এক ব্যক্তির নিকট এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা ধার চাইলে সে তাকে নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধের শর্তে তা দিল। ইবনে উমর (রাদি.) এবং আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ঋণের ব্যাপারে সময় নির্ধারিত করা হলে তা জায়িয।

৫৪/১৭. অধ্যায়ঃ মুকাতাব প্রসঙ্গে এবং যে সব শর্ত আল্লাহর কিতাবের বিপরীত তা বৈধ নয়।

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) মুকাতাব সম্পর্কে বলেন, গোলাম ও মালিকের মধ্যে সম্পাদিত শর্তই কার্যকর হইবে। ইবনু উমর অথবা উমর (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কিতাবের বিরোধী সকল শর্ত বাতিল তা শত শর্ত হলেও। আবু আবদুল্লাহ [বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, কথাটি উমর ও ইবনু উমর (রাদি.) উভয় থেকেই বর্ণিত আছে।

২৭৩৫. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বারীরা তার কিতাবাতের ব্যাপারে তাহাঁর নিকট সাহায্যের আবেদন নিয়ে এল। তিনি বলিলেন, তুমি চাইলে আমি (কিতাবাতের সমুদয় প্রাপ্য) তোমার মালিককে দিয়ে দিতে পারি এবং ওয়ালার অধিকার হইবে আমার। অতঃপর যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এলেন, তিনি তাহাঁর নিকট বিষয়টি উল্লেখ করেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি তাকে কিনে মুক্ত করে দাও। কেননা ওয়ালার অধিকার তারই, যে মুক্ত করে। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলিলেন, লোকদের কী হয়েছে যে, তারা এমন সব শর্তারোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই! যে এমন শর্তারোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই, সে তার অধিকারী হইবে না যদিও শত শর্তারোপ করে।

৫৪/১৮. অধ্যায়ঃ শর্তারোপ করা ও স্বীকারোক্তির মধ্য থেকে কিছু বাদ দেয়ার বৈধতা এবং লোকদের মধ্যে প্রচলিত শর্তাবলী প্রসঙ্গে যখন কেউ বলে যে, এক বা দু ব্যতীত একশ? (তবে হুকুম কী হইবে)।

ইবনু আওন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি তার (সওয়ারীর) কেরায়াদারকে বলিল, তুমি তোমার সওয়ারী রাখ আমি যদি অমুক দিন তোমার সঙ্গে না যাই, তাহলে তুমি একশ দিরহাম পাবে, কিন্তু সে গেলো না। কাযী শুরাইহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি সেচ্ছায় বিনা চাপে নিজরে উপর কোন শর্তারোপ করে, তাহলে তা তার উপর বর্তায়। ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি কিছু খাদ্য-দ্রব্য বিক্রি করিল এবং (ক্রেতা) তাকে বলিল, আমি যদি বুধবার তোমার নিকট না আসি তবে তোমার আমার মধ্যে কোন বেচা-কেনা নেই। অতঃপর সে এল না। তাতে কাযী শুরাইহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ক্রেতাকে বলিলেন, তুমি ওয়াদা খেলাফ করেছ। তাই তিনি ক্রেতার বিপক্ষে ফয়সালা দিলেন।

২৭৩৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহর নিরানব্বই অর্থাৎ এক কম একশটি নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি তা মনে রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

৫৪/১৯. অধ্যায়ঃ ওয়াক্‌ফের ব্যাপারে শর্তাবলী

২৭৩৭. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) খায়বারে কিছু জমি লাভ করেন। তিনি এ জমির ব্যাপারে পরামর্শের জন্য আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! আমি খায়বারে এমন উৎকৃষ্ট কিছু জমি লাভ করেছি যা ইতিপূর্বে আর কখনো পাইনি। আপনি আমাকে এ ব্যাপারে কী আদেশ দেন? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি ইচ্ছা করলে জমির মূলসত্ত্ব ওয়াক্‌ফে রাখতে এবং উৎপন্ন বস্তু সদকা করিতে পার। ইবনু উমর (রাদি.) বলেন, উমর (রাদি.) এ শর্তে তা সদকা (ওয়াক্‌ফ) করেন যে, তা বিক্রি করা যাবে না, তা দান করা যাবে না এবং কেউ এর উত্তরাধিকারী হইবে না। তিনি সদকা করে দেন এর উৎপন্ন বস্তু অভাবগ্রস্ত, আত্মীয়-স্বজন, দাসমুক্তি, আল্লাহর রাস্তায়, মুসাফির ও মেহমানদের জন্য। (রাবী আরও বলিলেন) যে এর মুতাওয়াল্লী হইবে তার জন্য সম্পদ সঞ্চয় না করে ন্যায়সঙ্গতভাবে খাওয়া ও খাওয়ানোতে কোন দোষ নেই। অতঃপর আমি ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর নিকট হাদীস বর্ণনা করলে তিনি বলেন, অর্থাৎ মাল জমা না করে।

Comments

Leave a Reply