যুলুম ক্বিসাস অত্যাচার নির্যাতন ও মাযলুমের বদ দোয়া

যুলুম ক্বিসাস অত্যাচার নির্যাতন ও মাযলুমের বদ দোয়া

যুলুম ক্বিসাস অত্যাচার নির্যাতন ও মাযলুমের বদ দোয়া >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৪৬, যুলুম ক্বিসাস, অধ্যায়ঃ (১-৩৫)=৩৫টি

৪৬/১. অধ্যায়ঃ অপরাধের শাস্তি।
৪৬/২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বানীঃ সাবধান! যালিমদের উপর আল্লাহর অভিশাপ। (সুরা হুদ : ১৮)
৪৬/৩. অধ্যায়ঃ মুসলমান মুসলমানদের প্রতি অত্যাচার করিবে না এবং তাকে অপমানিতও করিবে না।
৪৬/৪. অধ্যায়ঃ তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত।
৪৬/৫. অধ্যায়ঃ অত্যাচারিতকে সাহায্য করা
৪৬/৬. অধ্যায়ঃ অত্যাচারী হইতে প্রতিশোধ নেয়া
৪৬/৭. অধ্যায়ঃ নির্যাতিতকে ক্ষমা করা
৪৬/৮. অধ্যায়ঃ যুলুম কিয়ামতের দিন গাঢ় অন্ধকার রূপ ধারণ করিবে।
৪৬/৯. অধ্যায়ঃ মাযলুমের বদ-দোয়াকে ভয় করা এবং তা থেকে বেঁচে থাকা।
৪৬/১০. অধ্যায়ঃ কেউ কারো উপর জুলুম করে এবং মাযলুম ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করে দেয় এর পরও সে অত্যাচারের কথা প্রকাশ করিতে পারবে কি ?
৪৬/১১. অধ্যায়ঃ যদি কেউ কারো যুলুম বা অন্যায় মাফ করে দেয়, তবে সেই যুল্‌মের জন্য পুনরায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা চলবে না।
৪৬/১২. অধ্যায়ঃ যদি কোন ব্যক্তি কাউকে কোন বিষয়ে অনুমতি প্রদান করে, তাকে মাফ করে, কিন্তু কি পরিমাণ ক্ষমা করিল বা কতটুকুর জন্য অনুমতি প্রদান করিল তা উল্লেখ না করে।
৪৬/১৩. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি কারো জমির কিছু অংশ ছিনিয়ে নেয় অথবা যুলুম করে নিয়ে নেয় তার গুনাহ।
৪৬/১৪. অধ্যায়ঃ যদি কোন ব্যক্তি কাউকে কোন বিষয়ে অনুমতি প্রদান করে তবে তা বৈধ।
৪৬/১৫. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ প্রকৃতপক্ষে সে ঘোর বিরোধী। (আল-বাকারা : ২০৪)
৪৬/১৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি জেনে শুনে অন্যায় বিষয়ে বিবাদ করে তার গুনাহ।
৪৬/১৭. অধ্যায়ঃ ঝগড়া বিবাদ করার সময় অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ।
৪৬/১৮. অধ্যায়ঃ অত্যাচারীর সম্পদ যদি অত্যাচারিতের হস্তগত হয়, তবে তা হইতে সে নিজের প্রতিশোধ গ্রহন করিতে পারে।
৪৬/১৯. অধ্যায়ঃ ছায়াযুক্ত স্থান সম্পর্কে
৪৬/২০. অধ্যায়ঃ কোন প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে তার দেয়ালে খুঁটি লাগাতে নিষেধ না করে।
৪৬/২১. অধ্যায়ঃ রাস্তায় মদ বহিয়ে দেয়া
৪৬/২২. অধ্যায়ঃ ঘরের আঙিনা এবং সেখানে রাস্তায় বসা
৪৬/২৩. অধ্যায়ঃ রাস্তায় কুপ খনন করা, যদি তা যাতায়তকারীদের কারো কষ্টের কারন না হয়।
৪৬/২৪. অধ্যায়ঃ রাস্তা হইতে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করা
৪৬/২৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি তার উট মসজিদের উঠানে কিংবা দরজায় বেঁধে রাখে।
৪৬/২৭. অধ্যায়ঃ লোকজনের আবর্জনা নিক্ষেপের জায়গায় দাঁড়ানো ও পেশাব করা।
৪৬/২৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ডালপালা ও কষ্টদায়ক দ্রব্য রাস্তা থেকে তুলে দূরে নিক্ষেপ করে
৪৬/২৯. অধ্যায়ঃ যদি ইজমালি পতিত জমিতে রাস্তার ব্যাপারে লোকেদের মাঝে মতবিরোধ দেখা দেয় এবং কোন শরীক সেখানে বাড়ী তৈরী করিতে চায় তবে রাস্তার জন্য তা হইতে সাত হাত জমি রেখে দিতে হইবে।
৪৬/৩০. অধ্যায়ঃ মালিকের অনুমতি ব্যতীত লুটপাট করা
৪৬/৩১. অধ্যায়ঃ ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলা এবং শূকর হত্যা করা
৪৬/৩২. অধ্যায়ঃ মদের (মৃৎপাত্র) মটকা ভেঙ্গে ফেলা অথবা মশক ছিদ্র করা যায় কি? যদি কেউ নিজের লাঠি দ্বারা মুর্তি বা ক্রুশ অথবা তবলা অথবা কোন অপ্রয়োজনীয় বস্তু ভেঙ্গে ফেলে (তবে তার হুকুম কী)?
৪৬/৩৩. অধ্যায়ঃ সম্পদ হিফাযাত করিতে গিয়ে যে ব্যক্তি নিহত হয়।
৪৬/৩৪. অধ্যায়ঃ যদি কেউ অন্য কারো পাত্র বা কোন বস্তু ভেঙ্গে ফেলে
৪৬/৩৫. অধ্যায়ঃ যদি কোন ব্যক্তি কারো দেয়াল ফেলে দেয় তবে অনুরূপ দেয়াল তৈরী করিতে হইবে।

৪৬/১. অধ্যায়ঃ অপরাধের শাস্তি।

২৪৪০. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, মুমিনগণ যখন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে এক পুলের উপর তাদের আটকে রাখা হইবে। তখন পৃথিবীতে একের প্রতি অন্যের যা যা যুলুম ছিল, তার প্রতিশোধ গ্রহণের পরে যখন তারা পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হইবে। সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকে পৃথিবীতে তার আবাসস্থল যেরূপ চিনত, তার চেয়ে অধিক তার জান্নাতের আবাসস্থল চিনতে পারবে।

৪৬/২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বানীঃ সাবধান! যালিমদের উপর আল্লাহর অভিশাপ। (সুরা হুদ : ১৮)

২৪৪১. সাফওয়ান ইবনু মুহরিব আল–মাযিনী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদিন আমি ইবনু উমর (রাদি.) –এর সাথে তাহাঁর হাত ধরে চলছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলিল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর মুমিন বান্দার একান্তে কথাবার্তা সম্পর্কে আপনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) –কে কি বলিতে শুনেছেন? তখন তিনি বলিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) –কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আল্লাহ তাআলা মুমিন ব্যক্তিকে নিজের কাছে নিয়ে আসবেন এবং তার উপর স্বীয় আবরণ দ্বারা তাকে ঢেকে নিবেন। তারপর বলবেন, অমুক পাপের কথা কি তুমি জান? তখন সে বলবে, হ্যাঁ, হে আমার প্রতিপালক! এভাবে তিনি তার কাছ হইতে তার পাপগুলো স্বীকার করিয়ে নিবেন। আর সে মনে করিবে যে, তার ধ্বংস অনিবার্য। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, “আমি পৃথিবীতে তোমার পাপ গোপন রেখেছিলাম। আর আজ আমি তা মাফ করে দিব”। তারপর তার নেকের আমলনামা তাকে দেয়া হইবে। কিন্তু কাফির ও মুনাফিকদের সম্পর্কে সাক্ষীরা বলবে, এরাই তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে মিথ্যা বলেছিল। সাবধান, যালিমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত।

৪৬/৩. অধ্যায়ঃ মুসলমান মুসলমানদের প্রতি অত্যাচার করিবে না এবং তাকে অপমানিতও করিবে না।

২৪৪২. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুলুম করিবে না এবং তাকে যালিমের হাতে সোপর্দ করিবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করিবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।

৪৬/৪. অধ্যায়ঃ তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত।

২৪৪৩. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে যালিম হোক অথবা মাযলুম। (অর্থাৎ যালিম ভাইকে যুলুম থেকে বিরত রাখবে এবং মাযলুম ভাইকে যালিমের হাত হইতে রক্ষা করিবে)।

২৪৪৪. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে যালিম হোক অথবা মাযলুম। তিনি (আনাস) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ! মাযলুমকে সাহায্য করব, তা তো বুঝলাম। কিন্তু যালিমকে কি করে সাহায্য করবো? তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি তার হাত ধরে তাকে বিরত রাখবে। (অর্থাৎ তাকে যুলুম করিতে দিবে না)।

৪৬/৫. অধ্যায়ঃ অত্যাচারিতকে সাহায্য করা

২৪৪৫. বারা ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাদেরকে সাতটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করিয়াছেন। তারপর তিনি উল্লেখ করিলেন, অসুস্থদের খোঁজখবর নেয়া, জানাযার পিছে পিছে যাওয়া, হ্যাঁচির জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা, সালামের উত্তর দেয়া, অত্যাচারিতকে সাহায্য করা, আহ্বানকারীর প্রতি সাড়া দেয়া, কসমকারীকে দায়িত্বমুক্ত করা।

২৪৪৬. আবু মুসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, এক মুমিন আর এক মুমিনের জন্য ইমারত তুল্য, যার এক অংশ আর এক অংশকে সুদৃঢ় করে। আর তিনি (সাঃআঃ) তাহাঁর এক হাতের আঙ্গুল আর এক হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ করিয়ে দেখালেন।

৪৬/৬. অধ্যায়ঃ অত্যাচারী হইতে প্রতিশোধ নেয়া

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “মন্দ কথার প্রচারণা আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে যার উপর যুলুম করা হয়েছে। আর আল্লাহ শ্রবণকারী, জ্ঞানী”- (আন-নিসাঃ ১৪৮)। “এবং যারা অত্যাচারিত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে”- (শূরা : ৩৯)। ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সাহাবায়ে কিরাম (রাদি.) অপমানিত হওয়াকে পছন্দ করিতেন না, তবে ক্ষমতা লাভ করলে মাফ করে দিতেন।

৪৬/৭. অধ্যায়ঃ নির্যাতিতকে ক্ষমা করা

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “তোমরা সৎকর্ম প্রকাশ্যে করলে অথবা গোপনে করলে অথবা দোষ ক্ষমা করলে আল্লাহও দোষ মোচনকারী, শক্তিমান”- (আন-নিসা : ১৪৯)। “মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ, কিন্তু যে মাফ করে দেয় এবং আপোষে নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকটই রয়েছে। তিনি যালিমদের পছন্দ করেন না। তবে অত্যাচারিত হওয়ার পর যারা প্রতিবিধান করে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে না। কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইবে, যারা মানুষের উপর যুলুম করে এবং পৃথিবীকে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়। এদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। অবশ্য যে ধৈর্য ধারণ করে এবং মাফ করে দেয়, এতো হইবে দৃঢ়সংকল্পের কাজ। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন অভিভাবক নেই। যালিমরা (কিয়ামতের দিন) যখন শাস্তি দেখবে, তখন আপনি তাদের বলিতে শুনবেন প্রত্যাবর্তনের কোন পথ আছে কি?”

(সুরা শূরা (৪২) : ৪০-৪৪)

৪৬/৮. অধ্যায়ঃ যুলুম কিয়ামতের দিন গাঢ় অন্ধকার রূপ ধারণ করিবে।

২৪৪৭. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যুলুম কিয়ামতের দিন অনেক অন্ধকারের রূপ ধারণ করিবে।

৪৬/৯. অধ্যায়ঃ মাযলুমের বদ-দোয়াকে ভয় করা এবং তা থেকে বেঁচে থাকা।

২৪৪৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) যখন মুআয (রাদি.)-কে ইয়ামানে পাঠান এবং তাকে বলেন, মাযলুমের ফরিয়াদকে ভয় করিবে। কেননা, তার ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না।

৪৬/১০. অধ্যায়ঃ কেউ কারো উপর জুলুম করে এবং মাযলুম ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করে দেয় এর পরও সে অত্যাচারের কথা প্রকাশ করিতে পারবে কি ?

২৪৪৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে যুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ হইতে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোন দীনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার যুলুমের পরিমাণ তা তার নিকট থেকে নেয়া হইবে আর তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হইতে নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেয়া হইবে।

আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইসমাঈল ইবনু উয়াইস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, সাঈদ আল-মাকবুরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কবরস্থানের পার্শ্বে অবস্থান করিতেন বলে আল-মাকবুরী বলা হত। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এও বলেছেন, সাঈদ আল-মাকবুরী হলেন বনূ লাইসের আযাদকৃত গোলাম। ইনি হলেন সাঈদ ইবনু আবু সাঈদ। আর আবু সাঈদের নাম হলো কায়সান।

৪৬/১১. অধ্যায়ঃ যদি কেউ কারো যুলুম বা অন্যায় মাফ করে দেয়, তবে সেই যুল্‌মের জন্য পুনরায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা চলবে না।

২৪৫০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

“কোন স্ত্রী যদি স্বামীর অবজ্ঞা ও উপেক্ষার ভয় করে” – (আন-নিসা : ১২৮) আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে তিনি [আয়েশা (রাদি.)] বলেন, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর কাছে বেশি যাওয়া-আসা করত না বরং তাকে পরিত্যাগ অর্থাৎ তালাক দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করত। [১৯] এ অবস্থায় স্ত্রী বলিল, আমি তোমাকে আমার ব্যাপারে দায়মুক্ত করে দিলাম। এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।

[১৯] যে কোন কারনে স্বামীর উপেক্ষার শিকার হয়ে স্ত্রী যদি মনে করে যে, সে তালাকপ্রাপ্তা হলে আশ্রয়হীনা হয়ে পড়বে বা তার সন্তানাদি মাতৃহারা হয়ে যাবে তখন এ সকল বড় বিপদের হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য সে তার ন্যায্য অধিকার ছাড় দিয়ে হলেও স্ত্রী হিসেবে থাকাকে অধিকতর শ্রেয় মনে করিতে পারে।

৪৬/১২. অধ্যায়ঃ যদি কোন ব্যক্তি কাউকে কোন বিষয়ে অনুমতি প্রদান করে, তাকে মাফ করে, কিন্তু কি পরিমাণ ক্ষমা করিল বা কতটুকুর জন্য অনুমতি প্রদান করিল তা উল্লেখ না করে।

২৪৫১. সাহল ইবনু সাদ সায়াদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে কিছু পানীয় দ্রব্য আনা হল। তিনি তা থেকে কিছুটা পান করিলেন। তাহাঁর (সাঃআঃ) ডান দিকে বসা ছিল একটি বালক, আর বাম দিকে ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠরা। তিনি (সাঃআঃ) বালকটিকে বলিলেন, এ বয়োজ্যেষ্ঠদেরকে দেয়ার জন্য তুমি আমাকে অনুমতি দিবে কি? তখন বালকটি বলিল, না, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কসম! আমি আপনার কাছ থেকে প্রাপ্য আমার অংশে কাউকে অগ্রাধিকার দিব না। রাবী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) পানির পেয়ালাটা তার হাতে ঠেলে দিলেন।

৪৬/১৩. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি কারো জমির কিছু অংশ ছিনিয়ে নেয় অথবা যুলুম করে নিয়ে নেয় তার গুনাহ।

২৪৫২. সাঈদ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি কারো জমির অংশ যুলুম করে কেড়ে নেয়, কিয়ামতের দিন এর সাত তবক জমিন তার গলায় লটকিয়ে দেয়া হইবে।

২৪৫৩. আবু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বর্ণনা করেন যে, তাহাঁর এবং কয়েকজন লোকের মধ্যে বিবাদ ছিল। আয়েশা (রাদি.)-এর কাছে উল্লেখ করা হলে তিনি বলিলেন, হে আবু সালামা! জমির ব্যাপারে সতর্ক থাক। কেননা, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যে লোক এক বিঘত জমি অন্যায়ভাবে নিয়ে নেয়, (কিয়ামতের দিন) এর সাত তবক জমি তার গলায় লটকিয়ে দেয়া হইবে।

২৪৫৪. সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর পিতা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে সামান্য পরিমাণ জমিও নিয়ে নেবে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক জমিনের নীচ পর্যন্ত ধসিয়ে দেয়া হইবে। আবু আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মুবারক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কর্তৃক খুরাসানে রচিত হাদীসগ্রন্থে এই হাদীসটি নেই। এই হাদীসটি বসরায় লোকজনকে শুনানো হয়েছে।

৪৬/১৪. অধ্যায়ঃ যদি কোন ব্যক্তি কাউকে কোন বিষয়ে অনুমতি প্রদান করে তবে তা বৈধ।

২৪৫৫. জাবালা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা মদীনায় কিছু সংখ্যক ইরাকী লোকের সাথে ছিলাম। একবার আমরা দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হই, তখন ইবনু যুবাইর (রাদি.) আমাদেরকে খেজুর খেতে দিতেন। ইবনু উমর (রাদি.) আমাদের নিকট দিয়ে যেতেন এবং বলিতেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কাউকে তার ভাইয়ের অনুমতি ব্যতীত এক সাথে দুটো করে খেজুর খেতে নিষেধ করিয়াছেন।

২৪৫৬. আবু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু শুয়াইব (রাদি.) নামক এক আনসারীর গোশত বিক্রেতা এক গোলাম ছিল। একদিন আবু শুয়াইব (রাদি.) তাকে বলিলেন, আমার জন্য পাঁচজন লোকের খাবার তৈরী কর। আমি আশা করছি যে, নাবী (সাঃআঃ)-কে দাওয়াত করব। আর তিনি উক্ত পাঁচজনের একজন। উক্ত আনসারী নাবী (সাঃআঃ)-এর চেহারায় ক্ষুধার ছাপ লক্ষ্য করেছিলেন। কাজেই তিনি তাঁকে (সাঃআঃ) দাওয়াত করিলেন। কিন্তু তাঁদের সাথে আরেকজন লোক আসলেন, যাকে দাওয়াত করা হয়নি। তখন নাবী (সাঃআঃ) (আনসারীকে) বলিলেন, এ আমাদের পিছে পিছে চলে এসেছে। তুমি কি তাকে অনুমতি দিচ্ছ? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ।

৪৬/১৫. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ প্রকৃতপক্ষে সে ঘোর বিরোধী। (আল-বাকারা : ২০৪)

২৪৫৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহর নিকট সেই লোক সবচেয়ে বেশী ঘৃণিত, যে অতি ঝগড়াটে।

৪৬/১৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি জেনে শুনে অন্যায় বিষয়ে বিবাদ করে তার গুনাহ।

২৪৫৮. নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিনী উম্মু সালামা (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

একদিন তিনি তাহাঁর ঘরের দরজার নিকটে ঝগড়ার শব্দ শুনতে পেয়ে তাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন। [তার (সাঃআঃ) নিকট বিচার চাওয়া হল] তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি তো একজন মানুষ। আমার কাছে (কোন কোন সময়) ঝগড়াকারীরা আসে। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অন্যের চেয়ে অধিক বাকপটু। তখন আমি মনে করি যে, সে সত্য বলেছে। তাই আমি তার পক্ষে রায় দেই। বিচারে যদি আমি ভুলবশত অন্য কোন মুসলমানের হক তাকে দিয়ে থাকি, তবে তা দোযখের টুকরা। এখন সে তা গ্রহন করুক বা ত্যাগ করুক।

৪৬/১৭. অধ্যায়ঃ ঝগড়া বিবাদ করার সময় অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ।

২৪৫৯. আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে, সে মুনাফিক অথবা যার মাঝে এ চারটি স্বভাবের কোন একটা থাকে, তার মধ্যেও মুনাফিকির একটি স্বভাব থাকে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিত্যাগ করে। (১) সে যখন কথা বলে মিথ্যা বলে (২) যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে (৩) যখন চুক্তি করে তা লঙ্ঘন করে (৪) যখন ঝগড়া করে অশ্লীল বাক্যালাপ করে।

৪৬/১৮. অধ্যায়ঃ অত্যাচারীর সম্পদ যদি অত্যাচারিতের হস্তগত হয়, তবে তা হইতে সে নিজের প্রতিশোধ গ্রহন করিতে পারে।

ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তার প্রাপ্য যতুটুকু, ততটুকু গ্রহন করিতে পারে এবং তিনি (কুরআনুল করীমের এ আয়াত) পাঠ করেন : “যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহন কর, তবে ঠিক ততখানি করিবে, যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে।” (সুরা নাহল (১৬) : ১২৬)

২৪৬০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদিন উতবা ইবনু রবীআর কন্যা হিন্দা নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (আমার স্বামী) আবু সুফিয়ান বখিল ব্যক্তি। তার সম্পদ হইতে যদি আমার সন্তানদের খেতে দেই, তাহলে আমার গুনাহ হইবে কি? তখন তিনি বলিলেন, যদি তুমি তাদেরকে ন্যায়সঙ্গতভাবে খেতে দাও তাহলে তোমার কোন গুনাহ হইবে না।

২৪৬১. উকবা ইবনু আমির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-কে বললাম, আপনি যখন আমাদের কোন অভিযানে পাঠান, আর আমরা এমন গোত্রের কাছে অবতরণ করি, যারা আমাদের মেহামনদারী করে না। এই ব্যাপারে আপনি কি বলেন? তিনি আমাদেরকে বলিলেন, যদি তোমরা কোন গোত্রের কাছে অবতরণ কর এবং তোমাদের জন্য যদি উপযুক্ত মেহমানদারীর আয়োজন করা হয়, তবে তোমরা তা গ্রহণ করিবে, আড় যদি তা না করে তবে তাদের কাছ থেকে মেহমানের হক আদায় করে নিবে।

৪৬/১৯. অধ্যায়ঃ ছায়াযুক্ত স্থান সম্পর্কে

নাবী (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সাহাবীগণ বনু সাঈদার ছায়াযুক্ত উঠানে বসেছিলেন।

২৪৬২.উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা যখন তাহাঁর নাবী (সাঃআঃ)-কে তাহাঁর সান্নিধ্যে উঠিয়ে নিলেন, তখন আনসারগণ বনূ সাঈদার গোত্রের ছায়া ছাউনীতে গিয়ে সমবেত হলেন। আমি আবু বকর (রাদি.)-কে বললাম, আমাদের সাথে চলুন। এরপর আমরা তাদের নিকট সাকীফাহ বনূ সাইদাতে গিয়ে পৌঁছলাম।

৪৬/২০. অধ্যায়ঃ কোন প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে তার দেয়ালে খুঁটি লাগাতে নিষেধ না করে।

২৪৬৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, কোন প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে তার দেয়ালে খুঁটি পুঁততে নিষেধ না করে। তারপর আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, কি হল, আমি তোমাদের কে এ হাদীস হইতে উদাসীন দেখিতে পাচ্ছি। আল্লাহর কসম, আমি সব সময় তোমাদেরকে এই হাদীস বলিতে থাকব।

৪৬/২১. অধ্যায়ঃ রাস্তায় মদ বহিয়ে দেয়া

২৪৬৪. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদিন আমি আবু তালহার বাড়িতে লোকজনকে শরাব পান করাচ্ছিলাম। সে সময় লোকেরা ফাযীখ শরাব ব্যবহার করিতেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে আদেশ করিলেন, যেন সে এই মর্মে ঘোষনা দেয় যে, সাবধান! শরাব এখন হইতে হারাম করে দেয়া হয়েছে। আবু তালহা (রাদি.) আমাকে বলিলেন, বাহিরে যাও এবং সমস্ত শরাব ঢেলে দাও। আমি বাইরে গেলাম এবং সমস্ত শরাব রাস্তায় ঢেলে দিলাম। আনাস (রাদি.) বলেন, সে দিন মদীনার অলিগলিতে শরাবের প্লাবন বয়ে গিয়েছিল। তখন কেউ কেউ বলিল, একদল লোক নিহত হয়েছে, তথচ যাদের পেটে শরাব ছিল। তখন এই আয়াত নাযিল হল : “যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারা পূর্বে যা কিছু পানাহার করেছে তার জন্য তাদের কোন গুনাহ হইবে না” – (আল-মা-য়িদাহ ৯৩)।

৪৬/২২. অধ্যায়ঃ ঘরের আঙিনা এবং সেখানে রাস্তায় বসা

আয়েশা (রাদি.) বলেন, আবু বক্‌র (রাদি.) তাহাঁর বাড়ির আঙিনায় মসজিদ বানালেন। সেখনে তিনি সালাত আদায় করিতেন ও কুরআন তিলাওয়াত করিতেন। এতে মুশরিকদের স্ত্রী ও তাদের সন্তানেরা তাহাঁর কাছে ভীড় জমাতে লাগল। তারা আবু বকরের অবস্থা দেখে বিস্মিত হত। সে সময় নাবী (সাঃআঃ) মক্কায় ছিলেন।

২৪৬৫. আবু সাঈদ খুদরী হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেন, তোমরা রাস্তার উপর বসা ছেড়ে দাও। লোকজন বলিল, এ ছাড়া আমাদের কোন পথ নেই। কেননা, এটাই আমাদের উঠাবসার জায়গা এবং আমরা এখানেই কথাবার্তা বলে থাকি। নাবী (সাঃআঃ) বলেন, যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক আদায় করিবে। তারা বলিল, রাস্তার হক কি? তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, দৃষ্টি অবনমিত রাখা, কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেয়া, সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অন্যায় কাজে নিষেধ করা।

৪৬/২৩. অধ্যায়ঃ রাস্তায় কুপ খনন করা, যদি তা যাতায়তকারীদের কারো কষ্টের কারন না হয়।

২৪৬৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, একদিন এক ব্যক্তি রাস্তায় চলার পথে অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত হল। তারপর একটি কূয়া দেখিতে পেয়ে তাতে সে নেমে পড়ল এবং পানি পান করিল। উপরে উঠে এসে সে দেখিতে পেল একটি কুকুর হ্যাঁপাচ্ছে আর পিপাসার দরুন ভিজে মাটি চেটে খাচ্ছে। লোকটি (মনে মনে) বলিল, এই কুকুরটির তেমনি পিপাসা পেয়েছে, যেমনি আমার পিপাসা পেয়েছিল। তারপর সে কূয়ার মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা পানি ভর্তি করে এনে কুকুরটিকে পান করাল। আল্লাহ তার এই কাজ কবূল করিলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। সাহাবীগণ বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! পশুদের ব্যাপারেও কি আমাদের পুণ্য রয়েছে? তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, প্রাণী মাত্রের সেবার মধ্যেই পুণ্য আছে।

৪৬/২৪. অধ্যায়ঃ রাস্তা হইতে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করা

হাম্মাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু হুরাইরা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা সদকা সরূপ।

৪৬/২৫. অধ্যায়ঃ দালানের ছাদে বা অন্য কোথাও উঁচু বা নীচু চিলেকোঠা ও কক্ষ নির্মাণ করা।

২৪৬৭. উসামা ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদিন নাবী (সাঃআঃ) মদীনার এক টিলার উপর উঠে বলিলেন, আমি যা দেখছি তোমরা কি তা দেখিতে পাচ্ছ যে তোমাদের ঘরগুলোতে বৃষ্টি বর্ষণের মতো ফিতনা বর্ষিত হচ্ছে।

২৪৬৮. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণীদের মধ্যে ঐ দুসহধর্মিণী সম্পর্কে উমর (রাদি.)-এর কাছে জিজ্ঞাস করিতে সব সময় আগ্রহী ছিলাম, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “যদি তোমরা দুজনে তওবা কর (তাহলে সেটাই হইবে কল্যাণকর)। কেননা, তোমাদের অন্তর বাঁকা হয়ে গেছে”- (তাহরীম : ৪)। একবার আমি তাহাঁর [উমর (রাদি.)-এর] সঙ্গে হজ্জে রওয়ানা করলাম। তিনি রাস্তা হইতে সরে গেলেন। আমিও একটি পানির পাত্র নিয়ে তাহাঁর সঙ্গে গতি পরিবর্তন করলাম। তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ফিরে এলেন। আমি পানির পাত্র হইতে তাহাঁর দুহাতে পানি ঢাললাম, তিনি অযু করিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আমীরুল মুমিনীন! নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণীদের মধ্যে দুসহধর্মিণী কারা ছিলেন, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “যদি তোমরা দুজনে তওবা কর (তবে সেটাই হইবে তোমাদের জন্য কল্যাণকর) কেননা, তোমাদের অন্তর বাঁকা হয়ে গেছে”- (তাহরীম : ৪)। তিনি বলিলেন, হে ইবনু আব্বাস! এটা তোমার জন্য তাজ্জবের বিষয় যে, তুমি জান না। তারা দুজন হলেন, আয়েশা ও হাফসা (রাদি.)। অতঃপর উমর (রাদি.) পুরো ঘটনা বলিতে শুরু করিলেন। তিনি বলিলেন, আমি ও আমার এক আনসারী প্রতিবেশী মদীনার অদূরে বনূ উমাইয়া ইবনু যায়দের মহল্লায় বসবাস করতাম। আমরা দুজনে পালাক্রমে নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট হাযির হতাম। একদিন তিনি যেতেন, আরেকদিন আমি যেতাম, আমি যে দিন যেতাম সে দিনের খবর (ওয়াহী) ইত্যাদি বিষয় তাঁকে অবহিত করতাম। আর তিনি যে দিন যেতেন, তিনিও অনুরূপ করিতেন। আর আমরা কুরাইশ গোত্রের লোকেরা মহিলাদের উপর কর্তৃত্ব করতাম। কিন্তু আমরা যখন মদীনায় আনসারদের কাছে আসলাম তখন তাদেরকে এমন পেলাম, যাদের নারীরা তাদের উপর কর্তৃত্ব করে থাকে। ধীরে ধীরে আমাদের মহিলারাও আনসারী মহিলাদের রীতিনীতি গ্রহণ করিতে লাগল। একদিন আমি আমার স্ত্রীকে ধমক দিলাম। সে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিউত্তর করিল। আর এই প্রতিউত্তর আমার পছন্দ হল না। তখন সে আমাকে বলিল, আমার প্রতিউত্তরে তুমি অসন্তুষ্ট হও কেন? আল্লাহর কসম! নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণীরাও তো তাহাঁর কথার প্রতিউত্তর করে থাকেন এবং তাহাঁর কোন কোন সহধর্মিণী রাত পর্যন্ত পুরো দিন তাহাঁর কাছ হইতে আলাদা থাকেন। এ কথা শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম। বললাম, যিনি এরূপ করিয়াছেন তিনি অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারপর আমি জামা-কাপড় পরে (আমার মেয়ে) হাফসা (রাদি.)-এর কাছে গিয়ে বললাম, হে হাফসা! তোমাদের কেউ কেউ নাকি রাত পর্যন্ত পুরো দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে অসন্তুষ্ট রাখে। সে বলিল, হ্যাঁ। আমি বললাম তবে তো সে বরবাদ এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তোমার কি ভয় হয় না যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) অসন্তুষ্ট হলে আল্লাহও অসন্তুষ্ট হইবেন? এর ফলে তুমি বরবাদ হয়ে যাবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বাড়াবাড়ি করো না এবং তাহাঁর কোন কথার প্রতিউত্তর দিও না এবং তাহাঁর হইতে পৃথক থেক না। তোমার কোন কিছুর দরকার হয়ে থাকলে আমাকে বলবে। আর তোমার প্রতিবেশী তোমার চেয়ে অধিক সুন্দরী এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর অধিক প্রিয় এ যেন তোমাকে ধোঁকায় না ফেলে। তিনি উদ্দেশ্য করিয়াছেন আয়েশা (রাদি.)-কে। সে সময় আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছিল যে, গাস্‌সানের লোকেরা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ঘোড়াগুলোকে প্রস্তুত করছে। একদিন আমার সাথী তার পালার দিন নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে গেলেন এবং এশার সময় এসে আমার দরজায় খুব জোরে করাঘাত করিলেন এবং বলিলেন, তিনি [উমর (রাদি.)] কি ঘুমিয়েছেন? তখন আমি ঘাবড়িয়ে তাহাঁর কাছে বেরিয়ে এলাম। তিনি বলিলেন, সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে গেছে। আমি বললাম, সেটা কী? গাস্‌সানের লোকেরা কি এসে গেছে? তিনি বলিলেন, না, বরং তার চেয়েও বড় ঘটনা ও বিরাট ব্যাপার। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর সহধর্মিণীদেরকে তালাক দিয়েছেন। উমর (রাদি.) বলিলেন, তাহলে তো হাফসার সর্বনাশ হয়েছে এবং সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার তো ধারণা ছিল যে, এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। আমি কাপড় পরে বেরিয়ে এসে নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর কোঠায় প্রবেশ করে একাকী বসে থাকলেন। তখন আমি হাফসা (রাদি.)-এর কাছে গিয়ে দেখি সে কাঁদছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কাঁদছ কেন? আমি কি তোমাকে আগেই সতর্ক করে দেইনি? রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কি তোমাদেরকে তালাক দিয়েছেন? সে বলিল, আমি জানি না। তিনি তাহাঁর ঐ কোঠায় আছেন। আমি বের হয়ে মিম্বরের কাছে আসলাম, দেখি যে লোকজন মিম্বরের চারপাশ জুড়ে বসে আছেন এবং কেউ কেউ কাঁদছেন। আমি তাঁদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বসলাম। তারপর আমার ঔৎসুক্য প্রবল হল, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যে কোঠায় ছিলেন, আমি সে কোঠার কাছে আসলাম। আমি তাহাঁর এক কালো গোলামকে বললাম, উমারের জন্যে অনুমতি গ্রহণ কর। সে প্রবেশ করে নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে আলাপ করে বেরিয়ে এসে বলিল, আমি আপনার কথা তাহাঁর কাছে উল্লেখ করেছি, কিন্তু তিনি নীরব রইলেন। আমি ফিরে এলাম এবং মিম্বরের পাশে বসা লোকদের কাছে গিয়ে বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর আমার আবার উদ্বেগ প্রবল হল। তাই আমি আবার এসে গোলামকে বললাম। (উমারের জন্যে অনুমতি গ্রহণ কর) এবারও সে আগের মতোই বলিল। তারপর যখন আমি ফিরে আসছিলাম, গোলাম আমাকে ডেকে বলিল, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন। এখন আমি তাহাঁর নিকট প্রবেশ করে দেখি, তিনি খেজুরের পাতায় তৈরী ছোবড়া ভর্তি একটা চামড়ার বালিশে হেলান দিয়ে খালি চাটাই এর উপর কাত হয়ে শুয়ে আছেন। তাহাঁর শরীর ও চাটাই এর মাঝখানে কোন ফরাশ ছিল না। ফলে তাহাঁর শরীরের পার্শ্বদেশে চাটাইয়ের দাগ পড়ে গেছে। আমি তাঁকে সালাম করলাম এবং দাঁড়িয়ে আবার আরয করলাম, আপনি কি আপনার সহধর্মিণীদেরকে তালাক দিয়েছেন? তখন তিনি আমার দিকে চোখ তুলে তাকালেন এবং বলিলেন, না। তারপর আমি (থমথমে ভাব কাটিয়ে) অনুকূল ভাব সৃষ্টির জন্যে দাঁড়িয়ে থেকেই বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! দেখুন, আমরা কুরাইশ গোত্রের লোকেরা নারীদের উপর কর্তৃত্ব করতাম। তারপর যখন আমরা এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট এলাম, যাদের উপর তাদের নারীরা কর্তৃত্ব করছে। তিনি এ ব্যাপারে আলোচনা করিলেন। এতে নাবী (সাঃআঃ) মুচকি হাসলেন। তারপর আমি বললাম, আপনি হয়তো লক্ষ্য করিয়াছেন যে, আমি হাফসার ঘরে গিয়েছি এবং তাকে বলেছি, তোমাকে এ কথা যেন ধোঁকায় না ফেলে যে, তোমার প্রতিবেশিনী (সতীন) তোমার চেয়ে অধিক আকর্ষণীয় এবং নাবী (সাঃআঃ)-এর অধিক প্রিয়। এ কথা দ্বারা তিনি আয়েশা (রাদি.)-কে বুঝিয়েছেন। নাবী (সাঃআঃ) আবার মুচকি হাসলেন। তাঁকে একা দেখে আমি বসে পড়লাম। তারপর আমি তাহাঁর (সাঃআঃ) ঘরের ভিতর এদিক সেদিক দৃষ্টি করলাম। কিন্তু তাহাঁর (সাঃআঃ) ঘরে তিনটি কাঁচা চামড়া ব্যতীত দৃষ্টিপাত করার মতো আর কিছুই দেখিতে পেলাম না, তখন আমি আরয করলাম, আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করুন, তিনি যেন আপনাকে উম্মাতকে পার্থিব স্বচ্ছলতা দান করেন। কেননা, পারস্য ও রোমের অধিবাসীদেরকে স্বচ্ছলতা দান করা হয়েছে এবং তাদেরকে পার্থিব (অনেক প্রাচুর্য) দেয়া হয়েছে, অথচ তারা আল্লাহর ইবাদত করে না। তিনি (সাঃআঃ) তখন হেলান দিয়ে ছিলেন। তিনি বলিলেন, হে ইবনু খাত্তাব! তোমার কি এতে সন্দেহ রয়েছে যে, তারা তো এমন এক জাতি, যাদেরকে তাদের ভালো কাজের প্রতিদান দুনিয়ার জীবনেই দিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার জন্য ক্ষমার দুআ করুন। হাফসা (রাদি.) আয়েশা (রাদি.)-এর কাছে এ কথা প্রকাশ করলেই নাবী (সাঃআঃ) সহধর্মিণীদের হইতে আলাদা হয়েছিলেন। তাঁদের উপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর ভীষণ রাগের কারণে তা হয়েছিল। যেহেতু আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। যখন ঊনত্রিশ দিন কেটে গেল, তিনি সর্বপ্রথম আয়েশা (রাদি.)-এর কাছে এলেন। আয়েশা (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, আপনি কসম করিয়াছেন যে, এক মাসের মধ্যে আমাদের কাছে আসবেন না। আর এ পর্যন্ত আমরা ঊনত্রিশ রাত অতিবাহিত করেছি, যা আমি ঠিক ঠিক গণনা করে রেখেছি। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়। আর মূলত এ মাসটি ঊনত্রিশ দিনেরই ছিল। আয়েশা (রাদি.) বলেন, যখন ইখতিয়ারের আয়াত নাযিল হল, তখন তিনি তাহাঁর সহধর্মিণীদের মধ্যে সর্বপ্রথম আমার কাছে আসলেন এবং বলিলেন, আমি তোমাকে একটি কথা বলিতে চাই, তবে তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে পরামর্শ না করে এর জওয়াবে তুমি তাড়াহুড়ো করিবে না। আয়েশা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এ কথা জানতেন যে, আমার পিতা-মাতা তাহাঁর (সাঃআঃ) হইতে আলাদা হওয়ার পরামর্শ আমাকে কখনো দিবেন না। তারপর নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ “হে নাবী! আপনি আপনার সহধর্মিণীদের বলুন। তোমরা যদি পার্থিব জীবন এবং তার চাকচিক্য কামনা কর, তবে আস; আমি তোমাদেরকে কিছু সম্বল প্রদান করি আর তোমাদেরকে সদ্ভাবে বিদায় করে দেই। আর যদি তোমরা আল্লাহ তাআলাকে (এবং) তাহাঁর রাসুলকে চাও এবং কামনা কর পরলোক, তবে তোমার অন্তর্গত সৎকর্মশীলদের জন্য আল্লাহ তাআলা মহাপ্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন”- (আহযাব : ২৮-২৯)। আমি বললাম, এ ব্যাপারে আমি আমার পিতা-মাতার কাছে কি পরামর্শ নিব? আমি তো আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের সন্তুষ্টি এবং পরকালীন (সাফল্য) পেতে চাই। তারপর তিনি (সাঃআঃ) তাহাঁর অন্য সহধর্মিণীদেরকেও ইখতিয়ার দিলেন এবং প্রত্যেকে সে একই জবাব দিলেন, যা আয়েশা (রাদি.) দিয়েছিলেন।

২৪৬৯. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এক মাস তাহাঁর সহধর্মিণীদের কাছে যাবেন না বলে কসম করেন। এ সময় তাহাঁর পা মচ্‌কে গিয়েছিল। তাই তিনি (সাঃআঃ) একটি চিলেকোঠায় অবস্থান করেন। একদিন উমর (রাদি.) এসে বলিলেন, আপনি কি আপনার সহধর্মিণীদেরকে তালাক দিয়েছেন? তিনি বলিলেন, না, তবে আমি একমাস তাদের কাছে যাব না বলে কসম করেছি। তিনি ঊনত্রিশ দিন সেখানে অবস্থান করেন এরপর তিনি অবতরণ করেন এবং নিজের সহধর্মিণীদের কাছে আসেন।

৪৬/২৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি তার উট মসজিদের উঠানে কিংবা দরজায় বেঁধে রাখে।

২৪৭০. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মসজিদে প্রবেশ করিলেন। আমি উটটাকে মসজিদের উঠানের পাশে বেঁধে রেখে তাহাঁর কাছে গেলাম এবং বললাম, এটা আপনার উট। তিনি বেরিয়ে এলেন এবং উটের পাশে ঘুরাফিরা করিতে লাগলেন। তারপর বলিলেন, উট ও তার মুল্য দুটোই তোমার।

৪৬/২৭. অধ্যায়ঃ লোকজনের আবর্জনা নিক্ষেপের জায়গায় দাঁড়ানো ও পেশাব করা।

২৪৭১. হুযাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে দেখেছি। (রাবী বলেন) অথবা তিনি বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) এলেন লোকেদের ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থানে এরপর তিনি দাঁড়িয়ে পেশাব করিলেন।

৪৬/২৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ডালপালা ও কষ্টদায়ক দ্রব্য রাস্তা থেকে তুলে দূরে নিক্ষেপ করে

২৪৭২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় কাঁটাদার গাছের একটি ডাল রাস্তায় পেল, তখন সেটাকে রাস্তা হইতে অপসারণ করিল, আল্লাহ তার এ কাজকে কবূল করিলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন।

৪৬/২৯. অধ্যায়ঃ যদি ইজমালি পতিত জমিতে রাস্তার ব্যাপারে লোকেদের মাঝে মতবিরোধ দেখা দেয় এবং কোন শরীক সেখানে বাড়ী তৈরী করিতে চায় তবে রাস্তার জন্য তা হইতে সাত হাত জমি রেখে দিতে হইবে।

২৪৭৩, আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন মালিকেরা রাস্তার ব্যাপারে পরস্পরে বিবাদ করিল, তখন নাবী (সাঃআঃ) রাস্তার জন্যে সাত হাত জমি ছেড়ে দেয়ার ফয়সালা দেন।

৪৬/৩০. অধ্যায়ঃ মালিকের অনুমতি ব্যতীত লুটপাট করা

উবাদা (রাদি.) বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এ মর্মে বায়আত করেছি যে, আমরা লুটপাট করব না।

২৪৭৪. আদী ইবনু সাবিত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর নানা আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) লুটতরাজ করিতে এবং জীবকে বিকলাঙ্গ করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

২৪৭৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, কোন ব্যভিচারী মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না এবং কোন মদ্যপায়ী মুমিন অবস্থায় মদ পান করে না। কোন চোর মুমিন অবস্থায় চুরি করে না। কোন লুটতরাজকারী মুমিন অবস্থায় এরূপ লুটতরাজ করে না যে, যখন সে লুটতরাজ করে তখন তার প্রতি লোকজন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে।

সাঈদ ও আবু সালামা (রাদি.) আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে অনুরূপ বর্ণিত, তবে তাতে লুটতরাজের উল্লেখ নেই। ফিরাবরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আবু জাফর (রহ)-এর লেখা পান্ডুলিপিতে পেয়েছি যে, আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, এর অর্থ হল, তার হইতে ঈমানের নূর ছিনিয়ে নেয়া হয়।

৪৬/৩১. অধ্যায়ঃ ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলা এবং শূকর হত্যা করা

২৪৭৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি (সাঃআঃ) বলেছেন, ইবনু মারইয়াম [ঈসা (আঃ)] তোমাদের মাঝে ন্যায়বিচারক হয়ে অবতরণ না করা পর্যন্ত কিয়ামত হইবে না। তিনি এসে ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং জিয্‌য়া কর তুলে দিবেন। তখন ধন-সম্পদের এত প্রাচুর্য হইবে যে, তা গ্রহণ করার মতো কেউ থাকবে না।

৪৬/৩২. অধ্যায়ঃ মদের (মৃৎপাত্র) মটকা ভেঙ্গে ফেলা অথবা মশক ছিদ্র করা যায় কি? যদি কেউ নিজের লাঠি দ্বারা মুর্তি বা ক্রুশ অথবা তবলা অথবা কোন অপ্রয়োজনীয় বস্তু ভেঙ্গে ফেলে (তবে তার হুকুম কী)?

শুরাইহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছে তাম্বুরা ভেঙ্গে ফেলার জন্যে মামলা দায়ের করা হলে তিনি এর জন্যে কোন জরিমানার ফায়সালা দেননি।

২৪৭৭. সালামা ইবনু আকওয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) খায়বার যুদ্ধে আগুন প্রজ্বলিত দেখে জিজ্ঞাস করিলেন, এ আগুন কেন জ্বালানো হচ্ছে? সাহাবীগণ বলিলেন, গৃহপালিত গাধার গোশত রান্নার জন্য। তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, পাত্রটি ভেঙ্গে দাও এবং গোশত ফেলে দাও। তাঁরা বলিলেন, আমরা গোশত ফেলে দিয়ে পাত্রটা ধুয়ে নিব কি? তিনি বলিলেন, ধুয়ে নাও। আবু আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইবনু আবু উয়াইস বলিলেন, —— শব্দটি আলিফ ও নুনে যবর হইবে।

২৪৭৮. আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যখন (বিজয়ীর বেশে) মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন কাবা শরীফের চারপাশে তিনশ ষাটটি মূর্তি ছিল। নাবী (সাঃআঃ) নিজের হাতের লাঠি দিয়ে মূর্তিগুলোকে আঘাত করিতে থাকেন আর বলিতে থাকেনঃ “সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, (আয়াতের শেষ পর্যন্ত)”- (বনী ইসরাঈল/ইসরা : ৮১)।

২৪৭৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি তাহাঁর (কামরার) তাকের সম্মুখে একটি পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন, যাতে ছিল প্রাণীর ছবি। নাবী (সাঃআঃ) তা ছিঁড়ে ফেললেন। এরপর আয়েশা (রাদি.) তা দিয়ে দুখানা গদি তৈরী করেন। এই গদি দুখানা ঘরেই ছিল।নাবী (সাঃআঃ) তার উপর বসতেন।

৪৬/৩৩. অধ্যায়ঃ সম্পদ হিফাযাত করিতে গিয়ে যে ব্যক্তি নিহত হয়।

২৪৮০. আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করিতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহীদ।

৪৬/৩৪. অধ্যায়ঃ যদি কেউ অন্য কারো পাত্র বা কোন বস্তু ভেঙ্গে ফেলে

২৪৮১. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একদিন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর কোন এক সহধর্মিণীর কাছে ছিলেন। উম্মুল মুমিনীনদের অপর একজন খাদিমের মারফত এক পাত্রে খাবার পাঠালেন। তিনি তার হাতের আঘাতে পাত্রটি ভেঙ্গে ফেলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) তা জোড়া লাগিয়ে তাতে খাবার রাখলেন এবং (সাথীদেরকে) বলিলেন, তোমরা খাও। যে পর্যন্ত তাঁরা খাওয়া শেষ না করিলেন, সে পর্যন্ত নাবী (সাঃআঃ) পাত্রটি ও প্রেরিত খাদেমকে আটকিয়ে রাখলেন। তারপর তিনি ভাঙ্গা পাত্রটি রেখে দিয়ে একটি ভাল পাত্র ফেরত দিলেন। ইবনু আবু মারইয়াম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)……আনাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত আছে।

৪৬/৩৫. অধ্যায়ঃ যদি কোন ব্যক্তি কারো দেয়াল ফেলে দেয় তবে অনুরূপ দেয়াল তৈরী করিতে হইবে।

২৪৮৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, বনী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইজ নামক একজন লোক ছিলেন। একদিন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় তাহাঁর মা তাকে ডাকলেন। কিন্তু তিনি তাহাঁর ডাকে সাড়া দিলেন না। তিনি বলিলেন, সালাত আদায় করব, না কি তার জবাব দেব। তারপর মা তাহাঁর কাছে এলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহ! তাকে মৃত্যু দিও না যে পর্যন্ত তুমি তাকে কোন বেশ্যার মুখ না দেখাও। একদিন জুরাইজ তার ইবাদতখানায় ছিলেন। এমন সময় এক মহিলা বলিলেন, আমি জুরাইজকে ফাঁসিয়ে ছাড়ব। তখন সে তার নিকট গেল এবং তার সাথে কথাবার্তা বলিল। কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানালেন। তারপর সে মহিলা এক রাখালের কাছে এসে স্বেচ্ছায় নিজেকে তার হাতে সঁপে দিল। তার কিছুদিন পর সে একটি ছেলে প্রসব করিল। তখন সে বলে বেড়াতে লাগল যে, এ ছেলে জুরাইজের! এ কথা শুনে লোকেরা জুরাইজের নিকট এল এবং তার ইবাদতখানা ভেঙ্গে তাকে বের করে দিল এবং তাকে গালিগালাজ করিল। এরপর তিনি (জুরাইজ) অযু করিলেন এবং সালাত আদায় করিলেন। তারপর তিনি ছেলেটির কাছে এসে বলিলেন, হে ছেলে! তোমার পিতা কে? সে জবাব দিল, রাখাল। তখন লোকেরা বলিল, আমরা তোমার ইবাদতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরী করে দিব। জুরাইজ বলিলেন, না মাটি দিয়েই তৈরী করে দাও (যেমনটা পূর্বে ছিল)।

Comments

Leave a Reply