ক্রয় বিক্রয়ে দোস ত্রুটি গোপন না রাখা এবং নম্রতা দেখানো
ক্রয় বিক্রয়ে দোস ত্রুটি গোপন না রাখা এবং নম্রতা দেখানো >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৩৪, ক্রয় ও বিক্রয়, অধ্যায়ঃ (১৪-২২)=৯টি
৩৪/১৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) কর্তৃক ধারে ক্রয় করা।
৩৪/১৫. অধ্যায়ঃ স্বহস্তের উপার্জনে জীবিকা নির্বাহ করা।
৩৪/১৬ অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়ে নম্রতা ও কোমলতা। পাওনা ফিরিয়ে চাইলে নম্রতার সাথে চাওয়া উচিত।
৩৪/১৭. অধ্যায়ঃ সচ্ছল ব্যক্তিকে সুযোগ দেয়া।
৩৪/১৮. অধ্যায়ঃ অসচ্ছল ও অভাবীকে অবকাশ দেয়া।
৩৪/১৯. অধ্যায়ঃ ক্রেতা-বিক্রেতা কর্তৃক বিক্রিত বস্তুর কোন কিছু লুকিয়ে না রেখে পণ্যের পূর্ণ অবস্থা বলে দেয়া এবং একে অন্যের কল্যাণ চাওয়া।
৩৪/২০. অধ্যায়ঃ মেশানো (ভালমন্দ) খেজুর বিক্রি করা।
৩৪/২১. অধ্যায়ঃ গোশ্ত বিক্রেতা ও কসাই সম্পর্কিত বিবরণ।
৩৪/২২. অধ্যায়ঃ মিথ্যা বলা ও দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখায় ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে যায়।
৩৪/১৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) কর্তৃক ধারে ক্রয় করা।
২০৬৮. আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বাকীতে ক্রয়ের জন্য বন্ধক রাখা সম্পর্কে আমরা ইব্রাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছে আলোচনা করছিলাম। তখন তিনি বলেন আসওয়াদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আয়েশা (রাদি.) হইতে আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) জনৈক ইয়াহুদীর নিকট হইতে নির্দিষ্ট মেয়াদে মূল্য পরিশোধের শর্তে খাদ্য ক্রয় করেন এবং তার নিকট নিজের লোহার বর্ম বন্ধক রাখেন।
২০৬৯. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একবার তিনি যবের আটা ও পুরানো গন্ধযুক্ত চর্বি নিয়ে নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলেন। রাবী বলেন, আমি তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি যে, মাদীনায় অবস্থান কালে তাহাঁর বর্ম জনৈক ইয়াহুদীর নিকট বন্ধক রেখে তিনি নিজ পরিবারের জন্য তার হইতে যব খরিদ করেন। [রাবী কাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমি তাঁকে [ আনাস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে] বলিতে শুনিয়াছি যে, মুহাম্মদ (সাঃআঃ)- এর পরিবারের কাছে এক সা পরিমাণ গম বা এক সা পরিমাণ আটা ও থাকত না, অথচ সে সময় তাহাঁর নয়জন সহধর্মিণী ছিলেন
৩৪/১৫. অধ্যায়ঃ স্বহস্তের উপার্জনে জীবিকা নির্বাহ করা।
২০৭০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন আবু বকর সিদ্দীক (রাদি.)-কে খলীফা বানানো হল, তখন তিনি বলিলেন, আমার জাতি জানে যে, আমার উপার্জন আমার পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য অপর্যাপ্ত ছিল না। কিন্তু এখন আমি মুসলিম জনগণের কাজে সার্বক্ষণিক ব্যাপৃত হয়ে গেছি। অতএব আবু বকরের পরিবার এই রাষ্ট্রীয় কোষাগার হইতে খাদ্য গ্রহণ করিবে এবং আবু বকর (রাদি.) মুসলিম জনগণের সম্পদের তত্ত্বাবধান করবেন।
২০৭১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর সাহাবীগণ নিজেদের কাজ-কর্ম নিজেরা করিতেন। ফলে তাদের শরীর হইতে ঘামের গন্ধ বের হতো। সেজন্য তাদের বলা হল, যদি তোমরা গোসল করে নাও। হাম্মাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ………আয়েশা (রাদি.) হইতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।
২০৭২. মিকদাম (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায় না। আল্লাহর নাবী দাঊদ (আঃ) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন।
২০৭৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর নাবী দাঊদ (আঃ) নিজের হাতের উপার্জন হইতেই খেতেন।
২০৭৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের কারো পক্ষে এক বোঝা লাকড়ি সংগ্রহ করে পিঠে বহন করে নেয়া কারো নিকট চাওয়ার চেয়ে উত্তম। কেউ দিতেও পারে, নাও দিতে পারে।
২০৭৫. যুবাইর ইবনু আওয়াম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের কারো জন্য তার রশি নিয়ে কাঠ সংগ্রহ করিতে বের হওয়া মানুষের নিকট তার ভিক্ষা করার চেয়ে উত্তম। আবু নুআঈম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু সওয়াব ও ইবনু নুমাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যমে তার পিতা হইতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।
৩৪/১৬ অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়ে নম্রতা ও কোমলতা। পাওনা ফিরিয়ে চাইলে নম্রতার সাথে চাওয়া উচিত।
২০৭৬. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহমত বর্ষণ করেন যে নম্রতার সাথে ক্রয়-বিক্রয় করে ও পাওনা ফিরিয়ে চায়।
৩৪/১৭. অধ্যায়ঃ সচ্ছল ব্যক্তিকে সুযোগ দেয়া।
২০৭৭. হুযাইফাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক ব্যক্তির রুহের সাথে ফেরেশতা সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি কোন নেক কাজ করেছ? লোকটি উত্তর দিল, আমি আমার কর্মচারীদের আদেশ করতাম যে, তারা যেন সচ্ছল ব্যক্তিকে অবকাশ দেয় এবং তার উপর পীড়াপীড়ি না করে। রাবী বলেন, তিনি বলেছেন, ফেরেশতারাও তাঁকে ক্ষমা করে দেন।
আবু মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) রিবঈ হিরাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে বর্ণনা করেন, আমি সচ্ছল ব্যক্তির জন্য সহজ করতাম এবং অভাবগ্রস্তকে অবকাশ দিতাম। শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবদুল মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে অনুরূপ বর্ণনা করেন। আবু আওয়ানাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবদুল মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে বর্ণনা করেন, আমি সচ্ছলকে অবকাশ দিতাম এবং অভাবগ্রস্তকে মাফ করে দিতাম এবং নুআইম ইবনু আবু হিনদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) রিবঈ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে বলেন, আমি সচ্ছল ব্যক্তি হইতে গ্রহণ করতাম এবং অভাবগ্রস্তকে ক্ষমা করে দিতাম।
৩৪/১৮. অধ্যায়ঃ অসচ্ছল ও অভাবীকে অবকাশ দেয়া।
২০৭৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জনৈক ব্যবসায়ী লোকদের ঋণ দিত। কোন অভাবগ্রস্তকে দেখলে সে তার কর্মচারীদের বলত, তাকে ক্ষমা করে দাও, হয়তো আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। এর ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন।
৩৪/১৯. অধ্যায়ঃ ক্রেতা-বিক্রেতা কর্তৃক বিক্রিত বস্তুর কোন কিছু লুকিয়ে না রেখে পণ্যের পূর্ণ অবস্থা বলে দেয়া এবং একে অন্যের কল্যাণ চাওয়া।
আদ্দা ইবনু খালিদ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে লিখে দেন যে, এটি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আদ্দা ইবনু খালিদ (রাদি.) হইতে খরিদ করিলেন। এ হলো এক মুসলিমের সঙ্গে আর এক মুসলিম এর ক্রয়-বিক্রয়। এতে নেই কোন খুঁৎ, কোন অবৈধতা এবং গায়েলা। কাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, গায়িলা অর্থ ব্যভিচার, চুরি ও পলায়নের অভ্যাস। ইবরাহীম নাখয়ী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে বলা হল, কোন কোন দালাল খুরাসান ও সিজিস্তান এর খাসবারশি নাম উচ্চারন করে এবং বলে, এটি কালকে এসেছে খুরাসান হইতে, আর এটি আজ এসেছে সিজিস্তান হইতে। তিনি এরূপ বলাকে খুবই গর্হিত মনে করিলেন। উকবা ইবনু আমির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, কোন ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় যে, সে কোন পণ্য বিক্রি করছে এবং এর দোষ-ত্রুটি জেনেও তা প্রকাশ করে না।
২০৭৯. হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ তাদের ইখতিয়ার থাকবে (ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা বা বাতিল করা)। যদি তারা সত্য বলে এবং অবস্থা ব্যক্ত করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হইবে আর যদি মিথ্যা বলে এবং দোষ গোপন করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়।
৩৪/২০. অধ্যায়ঃ মেশানো (ভালমন্দ) খেজুর বিক্রি করা।
২০৮০. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদের মিশ্রিত খেজুর দেয়া হতো, আমরা তা দু সা-এর পরিবর্তে এক সা বিক্রি করতাম। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এক সা-এর পরিবর্তে দুসা এবং এক দিরহামের পরিবর্তে দুদিরহাম বিক্রি করিবে না।
৩৪/২১. অধ্যায়ঃ গোশ্ত বিক্রেতা ও কসাই সম্পর্কিত বিবরণ।
২০৮১. আবু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি, আবু শুআইব নামক জনৈক আনসারী এসে তার কসাই গোলামকে বলিলেন, পাঁচ জনের উপযোগী খাবার তৈরি করো। আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- সহ পাঁচজনকে দাওয়াত করিতে যাই। তাহাঁর চেহারায় আমি ক্ষুধার চিহ্ন দেখিতে পেয়েছি। তারপর সে লোক এসে দাওয়াত দিলেন। তাদের সঙ্গে আরেকজন অতিরিক্ত এলেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এ আমাদের সঙ্গে এসেছে, তুমি ইচ্ছা করলে একে অনুমতি দিতে পার আর তুমি যদি চাও সে ফিরে যাক, তবে সে ফিরে যাবে। সাহাবী বলিলেন, না, বরং আমি তাকে অনুমতি দিলাম।
৩৪/২২. অধ্যায়ঃ মিথ্যা বলা ও দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখায় ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে যায়।
২০৮২. হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন না হইবে ততক্ষণ ক্রেতা-বিক্রেতার ইখতিয়ার থাকবে। যদি তারা সত্য বলে ও যথাযথ অবস্থা বর্ণনা করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হইবে, আর যদি পণ্যের প্রকৃত অবস্থা গোপন করে ও মিথ্যা বলে তবে ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত চলে যাবে।
Leave a Reply