ইতিকাফ করা নিয়ম, ফজিলত এবং মসজিদ হতে বের হওয়া
ইতিকাফ করা নিয়ম, ফজিলত এবং মসজিদ হতে বের হওয়া >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৩৩, ইতিকাফ, অধ্যায়ঃ (১-১৯)=১৯টি
৩৩/১. অধ্যায়ঃ রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ এবং ইতিকাফ সব মসজিদেই করা ।
৩৩/২. অধ্যায়ঃ ঋতুবতী কর্তৃক ইতিকাফকারীর চুল আঁচড়ে দেওয়া।
৩৩/৩. অধ্যায়ঃ (প্রাকৃতিক) প্রয়োজন ব্যতীত ইতিকাফরত ব্যক্তি (তার) গৃহে প্রবেশ করিতে পারবে না।
৩৩/৪. অধ্যায়ঃ ইতিকাফকারীর গোসল করা।
৩৩/৫. অধ্যায়ঃ রাত্রিকালে ইতিকাফ করা।
৩৩/৬. অধ্যায়ঃ মহিলাগণের ইতিকাফ করা।
৩৩/৭. অধ্যায়ঃ মসজিদের ভিতরে তাঁবু খাটানো ।
৩৩/৮. অধ্যায়ঃ প্রয়োজনবশতঃ ইতিকাফরত ব্যক্তি কি মসজিদের দরজা পর্যন্ত বের হইতে পারেন?
৩৩/৯. অধ্যায়ঃ ইতিকাফ এবং নাবী (সাঃআঃ) কর্তৃক (রমযানের) বিশ তারিখ সকালে বেরিয়ে আসা ।
৩৩/১০. অধ্যায়ঃ মুস্তাহাযা নারীর ইতিকাফ করা ।
৩৩/১১. অধ্যায়ঃ ইতিকাফরত স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর দেখা করা ।
৩৩/১২. অধ্যায়ঃ ইতিকাফকারী কি নিজের উপর সৃষ্ট সন্দেহ দূর করিতে পারেন?
৩৩/১৩. অধ্যায়ঃ ইতিকাফ হইতে সকাল বেলা বের হওয়া
৩৩/১৪. অধ্যায়ঃ শাওয়াল মাসে ইতিকাফ করা ।
৩৩/১৫. অধ্যায়ঃ যিনি ইতিকাফকারীর জন্য রোযা রাখা আবশ্যক মনে করেন না।
৩৩/১৬. অধ্যায়ঃ জাহিলিয়্যাতের যুগে ইতিকাফ করার নযর মেনে পরে ইসলাম গ্রহণ করা।
৩৩/১৭. অধ্যায়ঃ রমযানের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করা।
৩৩/১৮. অধ্যায়ঃ ইতিকাফ করার সংকল্প করে পরে কোন কারণবশতঃ তা হইতে বেরিয়ে যাওয়া।
৩৩/১৯. অধ্যায়ঃ ইতিকাফরত ব্যক্তি মাথা ধোয়ার নিমিত্তে তার মাথা ঘরে প্রবেশ করানো।
৩৩/১. অধ্যায়ঃ রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ এবং ইতিকাফ সব মসজিদেই করা ।
কদরের
কারণ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “আর যতক্ষণ তোমরা ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদসমূহে অবস্থান কর ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। অতএব তোমরা এর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবে আল্লাহ তাহাঁর নিদর্শনাবলী মানব জাতির জন্যে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।” (আল-বাকারাঃ ১৮৭)
২০২৫.আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করিতেন।
২০২৬. নাবী সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করিতেন। তাহাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তাহাঁর সহধর্মিণীগণও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করিতেন।
২০২৭. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রমযানের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করিতেন। এক বছর এরূপ ইতিকাফ করেন, যখন একুশের রাত এল, যে রাতের সকালে তিনি তাহাঁর ইতিকাফ হইতে বের হইবেন, তখন তিনি বললেনঃ যারা আমার সঙ্গে ইতিকাফ করেছে তারা যেন শেষ দশকে ইতিকাফ করে। আমাকে স্বপ্নে এই রাত (লাইলাতুল ক্বদর) দেখানো হয়েছিল, পরে আমাকে তা (সঠিক তারিখ) ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য আমি স্বপ্নে দেখিতে পেয়েছি যে, ঐ রাতের সকালে আমি কাদা-পানির মাঝে সিজদা করছি। তোমরা তা শেষ দশকে তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ কর। পরে এই রাতে আকাশ হইতে বৃষ্টি বর্ষিত হয়, মসজিদের ছাদ ছিল খেজুরের পাতার ছাউনির। ফলে মসজিদে টপটপ করে বৃষ্টি পড়তে লাগল। একুশের রাতের সকালে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) – এর কপালে কাদা-পানির চিহ্ন আমার এ দুচোখ দেখিতে পায়।
৩৩/২. অধ্যায়ঃ ঋতুবতী কর্তৃক ইতিকাফকারীর চুল আঁচড়ে দেওয়া।
২০২৮. নাবী সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় নাবী (সাঃআঃ) আমার দিকে তাহাঁর মাথা ঝুঁকিয়ে দিতেন আর আমি ঋতুবতী অবস্থায় তাহাঁর চুল আঁচড়িয়ে দিতাম।
৩৩/৩. অধ্যায়ঃ (প্রাকৃতিক) প্রয়োজন ব্যতীত ইতিকাফরত ব্যক্তি (তার) গৃহে প্রবেশ করিতে পারবে না।
২০২৯. নাবী সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মসজিদে থাকাবস্থায় আমার দিকে মাথা বাড়িয়ে দিতেন আর আমি তা আঁচড়িয়ে দিতাম এবং তিনি যখন ইতিকাফে থাকতেন তখন (প্রাকৃতিক) প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে প্রবেশ করিতেন না।
৩৩/৪. অধ্যায়ঃ ইতিকাফকারীর গোসল করা।
২০৩০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমার ঋতুবতী অবস্থায় আমার সঙ্গে (প্রাকৃতিক) প্রয়োজনে মিশতেন।
২০৩১. See previous Hadith. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এবং তিনি ইতিকাফরত অবস্থায় মসজিদ হইতে তাহাঁর মাথা বের করে দিতেন, আমি ঋতুবতী অবস্থায় তা ধুয়ে দিতাম।
৩৩/৫. অধ্যায়ঃ রাত্রিকালে ইতিকাফ করা।
২০৩২. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উমর (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) – কে জিজ্ঞেস করেন যে, আমি জাহি্লিয়্যাহ যুগে মসজিদুল হারামে এক রাত ইতিকাফ করার মানত করেছিলাম। তিনি (উত্তরে) বললেনঃ তোমার মানত পুরা কর।
৩৩/৬. অধ্যায়ঃ মহিলাগণের ইতিকাফ করা।
২০৩৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রমযানের শেষ দশকে নাবী (সাঃআঃ) ইতিকাফ করিতেন। আমি তাহাঁর তাঁবু তৈরি করে দিতাম। তিনি ফজরের সালাত আদায় করে তাতে প্রবেশ করিতেন। নাবী-সহধর্মিণী হাফসা (রাদি.) তাঁবু খাটাবার জন্য আয়েশা (রাদি.)-এর কাছে অনুমতি চাইলেন। তিনি তাঁকে অনুমতি দিলে হাফসা (রাদি.) তাঁবু খাটালেন। (নাবী-সহধর্মিণী) যায়নাব বিনতু জাহশ (রাদি.) তা দেখে আরেকটি তাঁবু তৈরি করিলেন। সকালে নাবী (সাঃআঃ) তাঁবুগুলো দেখলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এগুলো কী? তাঁকে জানালো হলে তিনি বললেনঃ তোমরা কি মনে কর এগুলো দিয়ে নেকী হাসিল হইবে? এ মাসে তিনি ইতিকাফ ত্যাগ করিলেন এবং পরে শাওয়াল মাসে দশ দিন (কাযা স্বরূপ) ইতিকাফ করিলেন।
৩৩/৭. অধ্যায়ঃ মসজিদের ভিতরে তাঁবু খাটানো ।
২০৩৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) ইতিকাফ করার ইচ্ছা করিলেন। এরপর যে স্থানে ইতিকাফ করার ইচ্ছা করেছিলেন সেখানে এসে কয়েকটি তাঁবু দেখিতে পেলেন। (তাঁবুগুলো হল নাবী—সহধর্মিণী) আয়েশা (রাদি.), হাফসা (রাদি.) ও যায়নব (রাদি.)- এর তাঁবু। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা কি এগুলো দিয়ে নেকী হাসিলের ধারণা কর? এরপর তিনি চলে গেলেন আর ইতিকাফ করিলেন না। পরে শাওয়াল মাসে দশ দিনের ইতিকাফ করিলেন।
৩৩/৮. অধ্যায়ঃ প্রয়োজনবশতঃ ইতিকাফরত ব্যক্তি কি মসজিদের দরজা পর্যন্ত বের হইতে পারেন?
২০৩৫. নাবী—সহধর্মিণী সাফীয়্যা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একদা তিনি রমযানের শেষ দশকে মসজিদে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) – এর খিদমতে উপস্থিত হন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইতিকাফরত ছিলেন। সাফীয়্যা তাহাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলেন। অতঃপর ফিরে যাবার জন্য উঠে দাঁড়ান। নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে পৌছে দেয়ার উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়ালেন। যখন তিনি (উম্মুল মুমিনীন) উম্মু সালামা (রাদি.) এর গৃহ সংলগ্ন মসজিদের দরজা পর্যন্ত পৌছলেন, তখন দুজন আনসারী সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁরা উভয়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) – কে সালাম করিলেন। তাঁদের দুজনকে নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা দুজন থাম। ইনি তো (আমার স্ত্রী) সাফীয়্যা বিনতু হুয়ায়্যী (রাদি.)। এতে তাঁরা দুজনে সুবহানাল্লাহ হে আল্লাহর রাসুল বলে উঠলেন এবং তাঁরা বিব্রত বোধ করিলেন। নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ শয়তান মানুষের রক্তের শিরায় চলাচল করে। আমি ভয় করলাম যে, সে তোমাদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করিতে পারে।
৩৩/৯. অধ্যায়ঃ ইতিকাফ এবং নাবী (সাঃআঃ) কর্তৃক (রমযানের) বিশ তারিখ সকালে বেরিয়ে আসা ।
২০৩৬. আবু সালামা ইবনু আবদুর রাহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.)- কে জিজ্ঞেসা করলাম, আপনি কি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) – কে লাইলাতুল ক্বদর প্রসঙ্গে উল্লেখ করিতে শুনেছেন? তিনি বলিলেন, হাঁ, আমরা রমযানের মধ্যম দশকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছিলাম। রাবী বলেন, এরপর আমরা বিশ তারিখের সকালে বের হইতে চাইলাম। তিনি বিশ তারিখের সকালে আমাদেরকে সম্বোধন করে ভাষণ দিলেন। তিনি বলিলেন আমাকে (স্বপ্নযোগে) লাইলাতুল ক্বদর (-এর নির্দিষ্ট তারিখ) দেখানো হয়েছিল। পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় তারিখে তা খোঁজ কর। আমি দেখছি যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে (বের হওয়া হইতে বিরত থাকে)। লোকেরা মসজিদে ফিরে এল। আমরা তখন আকাশে এক খন্ড মেঘও দেখিতে পাইনি। একটু পরে এক খন্ড মেঘ দেখা দিল ও বর্ষণ হল এবং সালাত শুরু হল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কাদা-পানির মাঝে সিজদা করিলেন। এমনকি আমি তাহাঁর কপালে ও নাকে কাদার চিহ্ন দেখিতে পেলাম।
৩৩/১০. অধ্যায়ঃ মুস্তাহাযা নারীর ইতিকাফ করা ।
২০৩৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে তাহাঁর এক মুস্তাহাযা সহধর্মিণী ইতিকাফ করিলেন। তিনি লাল ও হলুদ রংয়ের স্রাব নির্গত হইতে দেখিতে পেতেন। অনেক সময় আমরা তাহাঁর নীচে গামলা রেখে দিতাম আর তিনি তাহাঁর উপর সালাত আদায় করিতেন।
৩৩/১১. অধ্যায়ঃ ইতিকাফরত স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর দেখা করা ।
২০৩৮. আলী ইবনু হুসাইন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) সহধর্মিণী সাফিয়্যাহ (রাদি.) বর্ণনা করেন, নাবী (সাঃআঃ) (ইতিকাফ অবস্থায়) মসজিদে অবস্থান করছিলেন, ঐ সময় তাহাঁর নিকট তাহাঁর সহধর্মিণীগণ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা যাওয়ার জন্য রওয়ানা হন। তিনি [আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ] সাফীয়্যা বিনতু হুয়ায়্যীকে বললেনঃ তুমি তাড়াতাড়ি করো না। আমি তোমার সাথে যাব। তাহাঁর [সাফিয়্যাহ (রাদি.)]- এর ঘর ছিল উসামার বাড়িতে। এরপর নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে সঙ্গে করে বের হলেন। এমতাবস্থায় দুজন আনসার ব্যক্তির সাক্ষাৎ ঘটলে তারা নাবী (সাঃআঃ) – কে দেখিতে পেয়ে (দ্রুত) আগে বেড়ে গেলেন। নাবী (সাঃআঃ) তাদের দুজনকে বললেনঃ তোমরা এদিকে আসো। এতো সাফীয়্যা বিনতু হুয়ায়্যী। তাঁরা দুজন বলে উঠলেন, সুবহানাল্লাহ হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেনঃ শয়তান মানুষের শরীরে রক্তের মত চলাচল করে। আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে তোমাদের মনে কিছু সন্দেহ ঢুকিয়ে দিবে।
৩৩/১২. অধ্যায়ঃ ইতিকাফকারী কি নিজের উপর সৃষ্ট সন্দেহ দূর করিতে পারেন?
২০৩৯. সাফীয়্যা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) -এর ইতিকাফ অবস্থায় একদা তিনি তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে আসেন। তিনি যখন ফিরে যান তখন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সাথে কিছু দূর হেঁটে আসেন। ঐ সময়ে এক আনসার ব্যক্তি তাঁকে দেখিতে পায়। তিনি যখন তাকে দেখিতে পেলেন তখন তাকে ডাক দিলেন ও বললেনঃ এসো, এ তো সাফিয়্যাহ বিনতু হুয়ায়্যী। শয়তান মানব দেহে রক্তের মতো চলাচল করে থাকে। রাবী বলেন, আমি সুফিয়ান (রাদি.)- কে বললাম, তিনি রাতে এসেছিলেন? তিনি বলিলেন, রাতে ছাড়া আর কি?
৩৩/১৩. অধ্যায়ঃ ইতিকাফ হইতে সকাল বেলা বের হওয়া
২০৪০. আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রমযানের মাঝের দশকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছিলাম। বিশ তারিখের সকালে (ইতিকাফ শেষ করে চলে আসার উদ্দেশ্যে) আমরা আমাদের আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের নিকটে এসে বললেনঃ যে ব্যক্তি ইতিকাফ করেছে সে যেন তার ইতিকাফ স্থলে ফিরে যায়। কারণ আমি এই রাতে (লাইলাতুল ক্বাদর) দেখিতে পেয়েছি এবং আমি আরো দেখেছি যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি। এরপর যখন তিনি তাহাঁর ইতিকাফের স্থানে ফিরে গেলেন ও আকাশে মেঘ দেখা দিল, তখন আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হল। সেই সত্তার কসম! যিনি তাঁকে যথাযথই প্রেরণ করিয়াছেন, ঐ দিনের শেষভাগে আকাশে মেঘ দেখা দিল। মসজিদ ছিল খেজুর পাতার ছাউনির। আমি তাহাঁর নাকের অগ্রভাগে পানি ও কাদার চিহ্ন দেখেছিলাম।
৩৩/১৪. অধ্যায়ঃ শাওয়াল মাসে ইতিকাফ করা ।
২০৪১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) প্রতি রমযানে ইতিকাফ করিতেন। ফজরের সালাত শেষে ইতিকাফের নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ করিতেন। আয়েশা (রাদি.) তাহাঁর কাছে ইতিকাফ করার অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দেন। আয়েশা (রাদি.) মসজিদে (নিজের জন্য) তাঁবু করে নিলেন। হাফসা (রাদি.) তা শুনে (নিজের জন্য) একটি তাঁবু তৈরি করে নিলেন এবং যায়নাব (রাদি.) ও তা শুনে (নিজের জন্য) আর একটি তাঁবু তৈরি করে নিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ফজরের সালাত শেষে এসে চারটি তাঁবু দেখিতে পেয়ে বললেনঃ একী? তাঁকে তাঁদের ব্যাপার জানালো হলে, তিনি বললেনঃ নেক আমলের প্রেরণা তাদেরকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেনি। সব খুলে ফেলা হল। তিনি সেই রমযানে আর ইতিকাফ করিলেন না। পরে শাওয়াল মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করেন।
৩৩/১৫. অধ্যায়ঃ যিনি ইতিকাফকারীর জন্য রোযা রাখা আবশ্যক মনে করেন না।
২০৪২. উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি জাহিলিয়্যাতের যুগে মসজিদে হারামে এক রাত ইতিকাফ করার মানত করেছিলাম। নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে বললেনঃ তোমার মানত পুরা কর। তিনি এক রাতের ইতিকাফ করিলেন।
৩৩/১৬. অধ্যায়ঃ জাহিলিয়্যাতের যুগে ইতিকাফ করার নযর মেনে পরে ইসলাম গ্রহণ করা।
২০৪৩. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উমর (রাদি.) জাহিলিয়্যাতের যুগে মসজিদে হারামে ইতিকাফ করার মানত করেছিলেন। (বর্ণনাকারী) বলেন, আমার মনে হয় তিনি এক রাতের কথা উল্লেখ করেছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে বললেনঃ তোমার মানত পুরা কর।
৩৩/১৭. অধ্যায়ঃ রমযানের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করা।
২০৪৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) প্রতি রমযানে দশ দিনের ইতিকাফ করিতেন। যে বছর তিনি ইন্তিকাল করেন সে বছর তিনি বিশ দিনের ইতিকাফ করেছিলেন।
৩৩/১৮. অধ্যায়ঃ ইতিকাফ করার সংকল্প করে পরে কোন কারণবশতঃ তা হইতে বেরিয়ে যাওয়া।
২০৪৫. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার ইচ্ছে প্রকাশ করলে আয়েশা (রাদি.) তাহাঁর কাছে ইতিকাফ করার অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। এরপর হাফসা (রাদি.) আয়েশা (রাদি.) এর নিকট অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। তা দেখে যায়নাব বিনতু জাহশ (রাদি.) নিজের জন্য তাঁবু লাগানোর নির্দেশ দিলে তা পালন করা হল। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ফজরের সালাত আদায় করে নিজের তাঁবুতে ফিরে এসে কয়েকটি তাঁবু দেখিতে পেলেন। তখন তিনি বললেনঃ এ কী ব্যাপার? লোকেরা বলিল, আয়েশা, হাফসা , যায়নাব (রাদি.)- এর তাঁবু। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তারা কি নেকী পেতে চায়? আমি আর ইতিকাফ করবো না। এরপর তিনি ফিরে আসলেন। পরে সাওম শেষ করে শাওয়াল মাসের দশ দিন ইতিকাফ করেন।
৩৩/১৯. অধ্যায়ঃ ইতিকাফরত ব্যক্তি মাথা ধোয়ার নিমিত্তে তার মাথা ঘরে প্রবেশ করানো।
২০৪৬.আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি ঋতুবতী অবস্থায় নাবী (সাঃআঃ) -এর চুল আঁচড়িয়ে দিতেন। ঐ সময়ে তিনি মসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় থাকতেন আর আয়েশা (রাদি.) তাহাঁর হুজরায় অবস্থান করিতেন। তিনি আয়েশা (রাদি.)-এর দিকে তাহাঁর মাথা বাড়িয়ে দিতেন।
Leave a Reply