লাইলাতুল কদর এর ফযিলত ও রমযানের শেষ দশকের আমল।

লাইলাতুল কদর এর ফযিলত ও রমযানের শেষ দশকের আমল।

লাইলাতুল কদর এর ফযিলত ও রমযানের শেষ দশকের আমল। >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৩২, লাইলাতুল কদর এর ফযিলত, অধ্যায়ঃ (১-৫)=৫টি

৩২/১. অধ্যায়ঃ লাইলাতুল কদর- এর ফযীলত ।
৩২/২. অধ্যায়ঃ (রমযানের) শেষের সাত রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা ।
৩২/৩. অধ্যায়ঃ রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা ।
৩২/৪. অধ্যায়ঃ মানুষের পারস্পরিক ঝগড়ার কারণে লাইলাতুল কদরের সুনির্দিষ্টতার জ্ঞান তুলে নেয়া।
৩২/৫. অধ্যায়ঃ রমযানের শেষ দশকের আমল।

৩২/১. অধ্যায়ঃ লাইলাতুল কদর- এর ফযীলত ।

আর মহান আল্লাহর বাণীঃ “নিশ্চয়ই আমি নাযিল করেছি এ কুরআন মহিমান্বিত রাত্রিতে। আর আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত্রি কী? মহিমান্বিত রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাত্রে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ এবং রূহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়। সেই রাত্রি শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।” (আল-কাদর ১-৫)

ইবনু উয়ায়না (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, কুরআন মাজীদে যে স্থলে —— উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে অবহিত করিয়াছেন। আর যে স্থলে আরবী উল্লেখ্য করা হয়েছে তা তাঁকে অবহিত করান নি।

২০১৪.আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সাওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল ক্বদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। সুলায়মান ইবনু কাসীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

৩২/২. অধ্যায়ঃ (রমযানের) শেষের সাত রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা ।

২০১৫. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) – এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে রমযানের শেষের সাত রাত্রে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়। (এ শুনে) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে।

২০১৬. আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে রমযানের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমাকে লাইলাতুল কদর (-এর সঠিক তারিখ) দেখানো হয়েছিল পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তার সন্ধান কর। আমি দেখিতে পেয়েছি যে, আমি (ঐ রাতে) কাদা-পানিতে সিজদা করছি। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে (মসজিদ হইতে বের হয়ে না যায়)। আমরা সকলে ফিরে আসলাম (থেকে গেলাম)। আমরা আকাশে হাল্কা মেঘ খন্ডও দেখিতে পাইনি। পরে মেঘ দেখা দিল ও এমন জোরে বৃষ্টি হলো যে, খেজুরের শাখায় তৈরী মসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল। সালাত শুরু করা হলে আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) – কে কাদা-পানিতে সিজদা করিতে দেখলাম। পরে তাহাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখিতে পাই।

৩২/৩. অধ্যায়ঃ রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা ।

—- এ প্রসঙ্গে উবাদাহ (রাদি.) হইতে রিওয়ায়াত রয়েছে ।

২০১৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধান কর।

২০১৮. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রমযান মাসের মাঝের দশকে ইতিকাফ করেন। বিশ তারিখ অতীত হওয়ার সন্ধ্যায় এবং একুশ তারিখের শুরুতে তিনি এবং তাহাঁর সঙ্গে যাঁরা ইতিকাফ করেছিলেন সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে প্রস্থান করেন এবং তিনি যে মাসে ইতিকাফ করেন ঐ মাসের যে রাতে ফিরে যান সে রাতে লোকদের সামনে ভাষণ দেন। আর তাতে মাশাআল্লাহ, তাদেরকে বহু নির্দেশ দান করেন, অতঃপর বলেন যে, আমি এই দশকে ইতিকাফ করেছিলাম। এরপর আমি সিদ্ধান্ত করেছি যে, শেষ দশকে ইতিকাফ করব। যে আমার সংগে ইতিকাফ করেছিল সে যেন তার ইতিকাফস্থলে থেকে যায়। আমাকে সে রাত দেখানো হয়েছিল, পরে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। (আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন): শেষ দশকে ঐ রাতের তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তা তালাশ কর। আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, ঐ রাতে আমি কাদা-পানিতে সিজদা করছি। ঐ রাতে আকাশে প্রচুর মেঘের সঞ্চার হয় এবং বৃষ্টি হয়। মসজিদে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) – এর সালাতের স্থানেও বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। এটা ছিল একুশ তারিখের রাত। যখন তিনি ফজরের সালাত শেষে ফিরে বসেন তখন আমি তাহাঁর দিকে তাকিয়ে দেখিতে পাই যে, তাহাঁর মুখমন্ডল কাদা-পানি মাখা।

২০১৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন যে, তোমরা (লাইলাতুল কদর) অনুসন্ধান কর।

২০২০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করিতেন এবং বলিতেনঃ তোমরা রমযানের শেষ দশকে [৩] লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর।

[৩] আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমের সুরা ক্বদরে ঘোষণা করিয়াছেন- লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাসের (ইবাদাতের) চেয়েও উত্তম। সহীহ শুদ্ধ হাদীস থেকে জানা যায় যে, লাইলাতুল ক্বদর রমযানের শেষ দশ দিনের যে কোন বিজোড় রাত্রিতে হয়ে থাকে। বিভিন্ন সহীহ হাদীসে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখে লাইলাতুল ক্বদর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখিত আছে। হাদীসে এ কথাও উল্লেখিত আছে, যে কোন একটি নির্দিষ্ট বিজোড় রাত্রিতেই তা হয় না। (অর্থাৎ কোন বছরে ২৫ তারিখে হল, আবার কোন বছরে ২১ তারিখে হল এভাবে। আমাদের দেশে সরকারী আর বেসরকারীভাবে জাঁকজমকের সঙ্গে ২৭ তারিখের রাত্রিকে লাইলাতুল ক্বদরের রাত হিসেবে পালন করা হয়। এভাবে মাত্র একটি রাত্রিকে লাইলাতুল ক্বদর সাব্যস্ত করার কোনই হাদীস নাই। লাইলাতুল ক্বদরের সওয়াব পেতে চাইলে ৫টি বিজোড় রাত্রেই তালাশ করিতে হইবে।

বর্তমানে রাত্রি জাগরণের জন্য মসজিদে সকলে সমবেত হয়ে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলের যে ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে সেটিও নবাবিষ্কৃত কাজ। কারণ আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সময়ে সাহাবীদের নিয়ে মসজিদে জাগরিত হয়ে বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে ইবাদত না করে নিজ নিজ পরিবারকে জাগিয়ে কিয়ামুল লাইল পালন করিতেন।

২০২১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা তা (লাইলাতুল কদর) রমযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর। লাইলাতুল কদর (শেষ দিক হইতে গণনায়) নবম, সপ্তম বা পঞ্চম রাত অবশিষ্ট থাকে।

২০২২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তা শেষ দশকে, তা অতিবাহিত নবম রাতে অথবা অবশিষ্ট সপ্তম রাতে অর্থাৎ লাইলাতুল কদর। ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে অন্য সূত্রে বর্ণিত যে, তোমরা ২৪তম রাতে তালাশ কর।

৩২/৪. অধ্যায়ঃ মানুষের পারস্পরিক ঝগড়ার কারণে লাইলাতুল কদরের সুনির্দিষ্টতার জ্ঞান তুলে নেয়া।

২০২৩. উবাদা ইবনুস সামিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা নাবী (সাঃআঃ) আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের (নির্দিষ্ট তারিখ) অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলেন। তখন দুজন মুসলমান ঝগড়া করছিল। তা দেখে তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল কদরের সংবাদ দিবার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল, ফলে তার (নির্দিষ্ট তারিখের) পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবতঃ এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ কর।

৩২/৫. অধ্যায়ঃ রমযানের শেষ দশকের আমল।

২০২৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিত

তিনি বলেন, যখন রমযানের শেষ দশক আসত তখন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশী বেশী ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্র জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply