সওমে বিসাল এবং বাচ্চাদের সওম পালন করা
সওমে বিসাল এবং বাচ্চাদের সওম পালন করা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৩০, সাওম, অধ্যায়ঃ (৪৭-৫১)=৫টি
৩০/৪৭. অধ্যায়ঃ বাচ্চাদের সওম পালন করা ।
৩০/৪৮. অধ্যায়ঃ সওমে বিসাল (বিরামহীন সওম) ।
৩০/৪৯. অধ্যায়ঃ অধিক পরিমাণে সওমে বিসালকারীর শাস্তি ।
৩০/৫০. অধ্যায়ঃ সাহরীর সময় পর্যন্ত সওমে বিসাল করা ।
৩০/৫১. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের নফল সওম ভাঙ্গার জন্য কসম দিলে এবং তার জন্য এ সওমের কাযা ওয়াজিব মনে না করলে, যখন সওম পালন না করা তার জন্য ভাল হয় ।
৩০/৪৭. অধ্যায়ঃ বাচ্চাদের সাওম পালন করা ।
রমযানে দিনের বেলায় এক নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে উমার (রাদি.) বলেন, আমাদের বাচ্চারা পর্যন্ত সাওম পালন করছে । তোমার সর্বনাশ হোক! অতঃপর উমার (রাদি.) তাকে মারলেন ।
১৯৬০. রুবায়্যি বিনতু মুআব্বিয (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আশুরার সকালে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আনসারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেনঃ যে ব্যক্তি সাওম পালন করেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে, আর যার সাওম অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন সাওম পূর্ণ করে। তিনি (রুবায়্যি) (রাদি.) বলেন, পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন সাওম পালন করতাম এবং আমাদের শিশুদের সাওম পালন করাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত।
৩০/৪৮. অধ্যায়ঃ সওমে বিসাল (বিরামহীন সাওম) ।
আল্লাহ তাআলার বাণী “রাতের আগমন পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর- (আল-বাকারাহঃ ১৮৭) । এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতে সাওম পালন করা যাবে না বলে যিনি অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন, নাবী (সাঃআঃ) উম্মতের উপর দয়াপরবশ হয়েও তাদের স্বাস্থ্য রক্ষার খাতিরে সওমে বিসাল হইতে নিষেধ করিয়াছেন এবং কোন বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা নিন্দনীয় ।
১৯৬১.আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমরা সওমে বিসাল পালন করিবে না। লোকেরা বলিল, আপনি যে সওমে বিসাল করেন? তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের মত নই। আমাকে পানাহার করানো হয় (অথবা বলিলেন) আমি পানাহার অবস্থায় রাত অতিবাহিত করি।
১৯৬২. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সওমে বেসাল হইতে নিষেধ করিলেন। লোকেরা বললো, আপনি যে সওমে বেসাল পালন করেন! তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই, আমাকে পানাহার করানো হয়।
১৯৬৩. আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন যে, তোমরা সওমে বিসাল পালন করিবে না। তোমাদের কেউ সওমে বিসাল করিতে চাইলে সে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। লোকেরা বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি যে সওমে বিসাল পালন করেন? তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই, আমি রাত্রি যাপন করি এরূপ অবস্থায় যে, আমার জন্য একজন খাদ্য পরিবেশনকারী থাকেন যিনি আমাকে আহার করান এবং একজন পানীয় পরিবেশনকারী আমাকে পান করান।
১৯৬৪. আয়িশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) লোকদের উপর দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে সওমে বেসাল হইতে নিষেধ করলে তারা বলিল, আপনি যে সওমে বেসাল করে থাকেন! তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান। আবু আবদুল্লাহ বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, রাবী উসমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) —– তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে কথাটি উল্লেখ করেননি।
৩০/৪৯. অধ্যায়ঃ অধিক পরিমাণে সওমে বিসালকারীর শাস্তি ।
আনাস (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে এ বর্ণনা করিয়াছেন ।
১৯৬৫. আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বিরতিহীন সাওম (সওমে বিসাল) পালন করিতে নিষেধ করলে মুসলিমদের এক ব্যক্তি তাঁকে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি যে বিরতিহীন (সওমে বিসাল) সাওম পালন করেন? তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে আমার অনুরূপ কে আছ? আমি এমনভাবে রাত যাপন করি যে, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান। এরপর যখন লোকেরা সওমে বিসাল করা হইতে বিরত থাকল না তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে দিনের পর দিন (লাগাতার) সওমে বিসাল করিতে থাকলেন। এরপর লোকেরা যখন চাঁদ দেখিতে পেল তখন তিনি বললেনঃ যদি চাঁদ উঠতে আরো দেরী হত তবে আমি তোমাদেরকে নিয়ে আরো বেশী দিন সওমে বিসাল করতাম। এ কথা তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান স্বরূপ বলেছিলেন, যখন তারা বিরত থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
১৯৬৬. আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ তোমরা সওমে বেসাল পালন করা হইতে বিরত থাক ( বাক্যটি তিনি ) দুবার বলিলেন। তাঁকে বলা হল, আপনি তো সওমে বেসাল করেন। তিনি বললেনঃ আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করিয়ে থাকেন। তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আমল করার দায়িত্ব গ্রহণ করো।
৩০/৫০. অধ্যায়ঃ সাহরীর সময় পর্যন্ত সওমে বিসাল করা ।
১৯৬৭. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন যে, তোমরা সওমে বিসাল করিবে না। তোমাদের কেউ যদি সওমে বিসাল করিতে চায়, তবে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। সাহাবাগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো সওমে বিসাল পালন করেন? তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই। আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার জন্য একজন আহারদাতা রহিয়াছেন যিনি আমাকে আহার করান, একজন পানীয় দানকারী আছেন যিনি আমাকে পান করান।
৩০/৫১. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের নফল সাওম ভাঙ্গার জন্য কসম দিলে এবং তার জন্য এ সওমের কাযা ওয়াজিব মনে না করলে, যখন সাওম পালন না করা তার জন্য ভাল হয় ।
১৯৬৮. আবু জুহায়ফাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সালমান (রাদি.) ও আবুদ দারদা (রাদি.)-এর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন করে দেন। (একদা) সালমান (রাদি.) আবুদ দারদা (রাদি.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করিতে এসে উম্মুদ দারদা (রাদি.)-কে মলিন কাপড় পরিহিত দেখিতে পান। তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে উম্মুদ দারদা (রাদি.) বলিলেন, আপনার ভাই আবুদ দারদার পার্থিব কোন কিছুরই প্রতি মোহ নেই। কিছুক্ষণ পরে আবুদ দারদা (রাদি.) এলেন। অতঃপর তিনি সালমান (রাদি.)-এর জন্য খাদ্য প্রস্তুত করান এবং বলেন, আপনি খেয়ে নিন, আমি সাওম পালন করছি। সালমান (রাদি.) বলিলেন, আপনি না খেলে আমি খাবো না। এরপর আবুদ দারদা (রাদি.) সালমান (রাদি.)- এর সঙ্গে খেলেন। রাত হলে আবুদ দারদা (রাদি.) (সালাত আদায়ে) দাঁড়াতে গেলেন। সালমান (রাদি.) বলিলেন, এখন ঘুমিয়ে পড়েন। আবুদ দারদা (রাদি.) ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবুদ দারদা (রাদি.) আবার সলাতে দাঁড়াতে উদ্যত হলেন, সালমান (রাদি.) বলিলেন, ঘুমিয়ে পড়েন। যখন রাতের শেষ ভাগ হলো, সালমান (রাদি.) আবুদ দারদা (রাদি.)-কে বলিলেন, এখন উঠুন। এরপর তাঁরা দুজনে সালাত আদায় করিলেন। পরে সালমান (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, আপনার প্রতিপালকের হাক্ব আপনার উপর আছে। আপনার নিজেরও হাক্ব আপনার উপর রহিয়াছে। আবার আপনার পরিবারেরও হাক্ব রহিয়াছে। প্রত্যেক হাক্বদারকে তার হাক্ব প্রদান করুন। এরপর আবুদ দারদা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট হাজির হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করেন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ সালমান ঠিকই বলেছে।
Leave a Reply