মহিলাগণ কিভাবে ইহরাম বাঁধবে ও হজ্জে তামাত্তু
মহিলাগণ কিভাবে ইহরাম বাঁধবে ও হজ্জে তামাত্তু >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ২৫, হজ্জ, অধ্যায়ঃ (৩১-৩৭)=৭টি
২৫/৩১. অধ্যায়ঃ ঋতু ও প্রসবোত্তর স্রাব অবস্থায় মহিলাগণ কিভাবে ইহরাম বাঁধবে?
২৫/৩২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর জীবদ্দশায় তাহাঁর ইহরামের মত যিনি ইহরাম বেঁধেছেন।
২৫/৩৩. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “হজ্জ হয় সুবিদিত মাসগুলোতে। অতঃপর যে কেউ এ মাসগুলোতে হজ্জ করা স্থির করে, তার জন্য হজ্জের সময়ে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ বিবাদ বিধেয় নয়”- (আল-বাকারাঃ ১৯৭)।
২৫/৩৪. অধ্যায়ঃ তামাত্তু, ক্বিরান ও ইফরাদ হজ্জ করা এবং যার সঙ্গে কুরবানীর জন্তু নেই তার জন্য হজ্জের ইহরাম পরিত্যাগ করা [৫৭]।
২৫/৩৫. অধ্যায়ঃ হজ্জ-এর নামোল্লেখ করে যে ব্যক্তি তালবিয়া পাঠ করে।
২৫/৩৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর যুগে হজ্জে তামাত্তু।
২৫/৩৭. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বানী : তা ( হজ্জে তামাত্তু) তাদের জন্য, যাদের পরিবার-পরিজন মাসজিদুল হারামের (সীমানার) মধ্যে বসবাস করে না। (আল-বাকারা : ১৯৬)
২৫/৩১. অধ্যায়ঃ ঋতু ও প্রসবোত্তর স্রাব অবস্থায় মহিলাগণ কিভাবে ইহরাম বাঁধবে?
(আরবি) অর্থ (আরবি) কথা বলা (আরবি) ও (আরবি) কথা বলা প্রকাশ পাওয়ার অর্থে ব্যবহৃত এবং (আরবি) অর্থ মেঘ হইতে বৃষ্টি হওয়া (আরবি) “যে পশু যবেহ করার সময় আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নাম উচ্চারণ করা হয়।” (আল-মায়িদাহঃ ৩) এ অর্থ (আরবি) (সদ্যজাত শিশুর আওয়াজ) অর্থ হইতে গৃহীত।
১৫৫৬. নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা বিদায় হজ্জের সময় নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে বের হয়ে উমরাহর নিয়্যাতে ইহরাম বাঁধি। নাবী বললেনঃ যার সঙ্গে কুরবানীর পশু আছে সে যেন উমরাহর সাথে হজ্জের ইহরামও বেঁধে নেয়। অতঃপর সে উমরাহ ও হজ্জ উভয়টি সম্পন্ন না করা পর্যন্ত হালাল হইতে পারবে না। [আয়েশা (রাদি.) বলেন] এরপর আমি মক্কায় ঋতুবতী অবস্থায় পৌঁছলাম। কাজেই বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সায়ী কোনটিই আদায় করিতে সমর্থ হলাম না। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে আমার অসুবিধার কথা জানালে তিনি বললেনঃ মাথার চুল খুলে নাও এবং তা আঁচড়িয়ে নাও এবং হজ্জের ইহরাম বহাল রাখ এবং উমরাহ ছেড়ে দাও। আমি তাই করলাম, হজ্জ সম্পন্ন করার পর আমাকে নাবী (সাঃআঃ) আবদুর রহমান ইবনু আবু বকর (রাদি.)-এর সঙ্গে তানঈম-এ প্রেরণ করেন [৫৬]। সেখান হইতে আমি উমরাহর ইহরাম বাঁধি। নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ এ তোমার (ছেড়ে দেয়া) উমরাহর স্থলবর্তী। আয়েশা (রাদি.) বলেন, যাঁরা উমরাহর ইহরাম বেঁধেছিলেন, তাঁরা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সায়ী সমাপ্ত করে হালাল হয়ে যান এবং মিনা হইতে ফিরে আসার পর দ্বিতীয়বার তাওয়াফ করেন আর যাঁরা হজ্জ ও উমরাহ উভয়ের ইহরাম বেঁধেছিলেন তাঁরা একটি মাত্র তাওয়াফ করেন। (২৯৪)
(আঃপ্রঃ১৪৫৩, ইঃফাঃ ১৪৫৯). [৫৬]আয়েশা (রাদি.) উমরার জন্য ইহরাম বাঁধার পর ঋতুবতী হয়ে পড়লে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে গোসল করার নির্দেশ দেন এবং উমরার ইহরাম ছেড়ে দিয়ে হজ্জের ইহরাম বাঁধার আদেশ দেন। ফলে হজ্জের পর পাক-সাফ অবস্থায় তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট ঋতুর কারণে বাতিল হয়ে যাওয়া উমরার পরিবর্তে নতুনভাবে উমরাহ করার অনুমতি প্রার্থনা করেন। ফলে নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে সেই অনুমতি প্রদান করেন। “হারাম” সীমায় থাকা অবস্থায় যে ব্যক্তি উমরার ইরাদা করিবে তাকে হারামের সীমার বাইরে গিয়ে উমরার ইহরাম বাঁধতে হইবে। এজন্য আয়েশা (রাদি.)-কে তানঈমে পাঠানো হয়েছিল। যা হারামের সীমানার বাইরে অবস্থিত।
২৫/৩২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর জীবদ্দশায় তাহাঁর ইহরামের মত যিনি ইহরাম বেঁধেছেন।
ইবনু উমর (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে এ সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
(আরবি)
১৫৫৭. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) আলী (রাদি.)-কে ইহরাম বহাল রাখার আদেশ দিলেন, এরপর জাবির (রাদি.) সুরাকাহ (রাদি.)-এর উক্তি বর্ণনা করেন। মুহাম্মাদ ইবনু বকর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু জুরাইজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন; নাবী (সাঃআঃ) আলী (রাদি.)-কে বললেনঃ হে আলী! তুমি কোন প্রকার ইহরাম বেঁধেছ? আলী (রাদি.) বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর ইহরামের অনুরূপ। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তাহলে কুরবানীর পশু প্রেরণ কর এবং ইহরাম অবস্থায় যেভাবে আছ সেভাবেই থাক।
(১৫৬৮, ১৫৭০, ১৬৫১, ১৭৮৫, ২৫০৬, ৪৩৫২, ৭২৩০, ৭৩৬৭) (আঃপ্রঃ১৪৫৪, ইঃফাঃ ১৪৬০)
১৫৫৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আলী (রাদি.) ইয়ামান হইতে এসে নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তুমি কী প্রকার ইহরাম বেঁধেছ? আলী (রাদি.) বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর অনুরূপ। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)বললেনঃ আমার সঙ্গে কুরবানীর পশু না থাকলে আমি হালাল হয়ে যেতাম।
(আঃপ্রঃ১৪৫৫, ইঃফাঃ ১৪৬১)
১৫৫৯. আবু মূসা (আশআরী) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে ইয়ামানে আমার গোত্রের নিকট পাঠিয়েছিলেন; তিনি (হজ্জ-এর সফরে) বাতহা নামক স্থানে অবস্থানকালে আমি (ফিরে এসে) তাহাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি কোন প্রকার ইহরাম বেঁধেছ? আমি বললাম, নাবী (সাঃআঃ)-এর ইহরামের অনুরূপ আমি ইহরাম বেঁধেছি। তিনি বললেনঃ তোমার সঙ্গে কুরবানীর পশু আছে কি? আমি বললাম, নেই। তিনি আমাকে বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করিতে আদেশ করিলেন। আমি বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়ার সায়ী করলাম। পরে তিনি আদেশ করলে আমি হালাল হয়ে গেলাম। অতঃপর আমি আমার গোত্রীয় এক মহিলার নিকট আসলাম। সে আমার মাথা আঁচড়িয়ে দিল অথবা বলেছেন, আমার মাথা ধুয়ে দিল। এরপর উমর (রাদি.) তাহাঁর খিলাফতকালে এক উপলক্ষে আসলেন। (আমরা তাঁকে বিষয়টি জানালে) তিনি বললেনঃ কুরআনের নির্দেশ পালন কর। কুরআন তো আমাদেরকে হজ্জ ও উমরাহ পৃথক পৃথকভাবে যথাসময়ে পূর্ণরূপে আদায় করার নির্দেশ দান করে। আল্লাহ বলেনঃ
وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ للهِ
“তোমরা হজ্জ ও উমরাহ আল্লাহর উদ্দেশে পূর্ণ কর”- (আল-বাকারাঃ ১৯৬)। আর যদি আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সুন্নাতকে অনুসরণ করি, তিনি তো কুরবানীর পশু যবহ করার আগে হালাল হননি।
(১৫৬৫, ১৭২৪, ১৭৯৫, ৪৩৪৬, ৪৩৯৭) (আঃপ্রঃ১৪৫৬, ইঃফাঃ ১৪৬২)
২৫/৩৩. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “হজ্জ হয় সুবিদিত মাসগুলোতে। অতঃপর যে কেউ এ মাসগুলোতে হজ্জ করা স্থির করে, তার জন্য হজ্জের সময়ে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ বিবাদ বিধেয় নয়”- (আল-বাকারাঃ ১৯৭)।
এবং তাহাঁর বাণীঃ “নতুন চাঁদ সম্পর্কে লোকেরা আপনাকে প্রশ্ন করে, বলুন, তা মানুষ এবং হজ্জের জন্য সময় নির্দেশক”- (আল-বাকারাঃ ১৮৯)।
ইবনু উমর (রাদি.) বলেন, হজ্জ-এর মাসগুলো হলঃ শাওয়াল, যিলক্বাদ এবং যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেনঃ সুন্নাত হল, হজ্জের মাসগুলোতেই যেন হজ্জের ইহরাম বাঁধা হয়। কিরমান ও খুরাসান হইতে ইহরাম বেঁধে বের হওয়া উসমান (রাদি.) অপছন্দ করেন।
১৫৬০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হজ্জ-এর মাসে, হজ্জ-এর দিনগুলোতে, হজ্জ-এর মৌসুমে আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে ( হজ্জে) বের হয়ে সারিফ নামক স্থানে আমরা অবতরণ করলাম। আয়েশা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সাহাবীগণের নিকট বেরিয়ে ঘোষণা করলেনঃ যার সাথে কুরবানীর পশু নেই এবং যে এ ইহরাম উমরাহর ইহরামে পরিণত করিতে আগ্রহী, সে তা করিতে পারবে। আর যার সাথে কুরবানীর পশু আছে সে তা পারবে না। আয়েশা (রাদি.) বলেন, কয়েকজন সাহাবী উমরাহ করিলেন, আর কয়েকজন তা করিলেন না। তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ও তাহাঁর কয়েকজন সাহাবী (দীর্ঘ ইহরাম রাখতে) সক্ষম ছিলেন এবং তাঁদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল। তাই তাঁরা (শুধু) উমরাহ করিতে (ও পরে হালাল হয়ে যেতে) সক্ষম হলেন না। তিনি আরো বলেন, আমি কাঁদছিলাম, এমন সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমার নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ ওহে কাঁদছ কেন? আমি বললাম, আপনি সহাবাদের যা বলেছেন, আমি তা শুনিয়াছি, কিন্তু আমার পক্ষে উমরাহ করা সম্ভব নয়। তিনি বললেনঃ তোমার কী হয়েছে? আমি বললাম, আমি সালাত আদায় করিতে পারছি না (আমি ঋতুবতী)। তিনি বললেনঃ এতে তোমার কোন ক্ষতি নেই, তুমি আদম-সন্তানের এক মহিলা। সকল নারীর জন্য আল্লাহ যা নির্ধারন করিয়াছেন, তোমার জন্যেও তাই নির্ধারণ করিয়াছেন। কাজেই তুমি হজ্জ-এর ইহরাম অবস্থায় থাক। আল্লাহ তোমাকে উমরাহ করার সুযোগও দিতে পারেন। তিনি বলেন, আমরা হজ্জ-এর জন্য বের হয়ে মিনায় পৌঁছলাম। সে সময় আমি পবিত্র হলাম। পরে মিনা হইতে ফিরে (বাইতুল্লাহ পৌঁছে) তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করি। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে সর্বশেষ দলে বের হলাম। তিনি মুহাস্সাব নামক স্থানে অবতরণ করেন, আমি তাহাঁর সাথে অবতরণ করলাম। এখানে এসে নাবী (সাঃআঃ) আবদুর রাহমান ইবনু আবু বকর (রাদি.)-কে ডেকে বললেনঃ তোমার বোন (আয়েশা)-কে নিয়ে হারম সীমারেখা হইতে বেরিয়ে যাও। সেখান হইতে সে উমরার ইহরাম বেঁধে মক্কা হইতে উমরাহ সমাধা করলে তাকে নিয়ে এখানে ফিরে আসবে। আমি তোমাদের আগমন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকব। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমরা বের হয়ে গেলাম এবং আমি ও আমার ভাই তাওয়াফ সমাধা করে ফিরে এসে প্রভাত হওয়ার আগেই নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট পৌঁছে গেলাম। তিনি বললেনঃ কাজ সমাধা করেছ কি? আমি বললাম জী-হ্যাঁ। তখন তিনি রওয়ানা হওয়ার ঘোষণা দিলেন। সকলেই মদীনার দিকে রওয়ানা করিলেন।
(আরবি) শব্দটি (আরবি) (ক্ষতিকর) শব্দ হইতে উদগত। এমনই ভাবে (আরবি) সমার্থবোধক। (২৯৪)
(আঃপ্রঃ১৪৫৭, ইঃফাঃ ১৪৬৩)
২৫/৩৪. অধ্যায়ঃ তামাত্তু, ক্বিরান ও ইফরাদ হজ্জ করা এবং যার সঙ্গে কুরবানীর জন্তু নেই তার জন্য হজ্জের ইহরাম পরিত্যাগ করা [৫৭]।
[৫৭] হজ্জ হচ্ছে ৩ প্রকারঃ ইফরাদ, তামাত্তু ও ক্বিরান। ইফরাদ হচ্ছে শুধু হজ্জ করার নিয়তে ইহরাম বাঁধতে হয়। হজ্জে তামাত্তুতে হজ্জযাত্রীকে উমরাহ করার নিয়ত করে নির্ধারিত মীকাতে ইহরাম বাঁধতে হয়। অতঃপর তাওয়াফ ও সাঈ করে মাথা মুন্ডানো বা চুল ছাঁটতে হয়। যদি কেউ কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়ে আসেন তাহল তিনি ইহরামের অবস্থাতেই থেকে যাবেন, পশু সঙ্গে না আনলে ইহরাম থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন। যিল হজ্জের দিন শুরু হলে তিনি ইহরাম বাঁধবেন এবং হজ্জ সম্পন্ন করবেন। হজ্জে ক্বিরানে একই সঙ্গে উমরাহ ও হজ্জের নিয়তে ইহরাম বাঁধতে হয়।
১৫৬১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বের হলাম এবং একে হজ্জের সফর বলেই আমরা জানতাম। আমরা যখন (মক্কায়) পৌঁছে বাইতুল্লাহ-এর তাওয়াফ করলাম তখন নাবী (সাঃআঃ) নির্দেশ দিলেনঃ যারা কুরবানীর পশু সঙ্গে আসেনি তারা যেন ইহরাম ছেড়ে দেয়। তাই যিনি কুরবানীর পশু সঙ্গে আনেননি তিনি ইহরাম ছেড়ে দেন। আর নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণীগণ তাঁরা ইহরাম ছেড়ে দিলেন। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমি ঋতুবতী হয়েছিলাম বিধায় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করিতে পারিনি। (ফিরতি পথে) মুহাসসাব নামক স্থানে রাত যাপনকালে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! সকলেই উমরাহ ও হজ্জ উভয়টি সমাধা করে ফিরছে আর আমি কেবল হজ্জ করে ফিরছি। তিনি বললেনঃ আমরা মক্কা পৌঁছলে তুমি কি সে দিনগুলোতে তওয়াফ করনি? আমি বললাম, জ্বী-না। তিনি বলিলেন, তোমার ভাই-এর সাথে তানঈম চলে যাও, সেখান হইতে উমরাহর ইহরাম বাঁধবে। অতঃপর অমুক স্থানে তোমার সাথে সাক্ষাৎ ঘটবে। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ কী বললে! তুমি কি কুরবানীর দিনগুলোতে তাওয়াফ করনি! আমি বললাম, হ্যাঁ করেছি। তিনি বললেনঃ তবে কোন অসুবিধা নেই, তুমি চল। আয়েশা (রাদি.) বলেন, এরপর নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে এমতাবস্থায় আমার সাক্ষাৎ হলো যখন তিনি মক্কা ছেড়ে উপরের দিকে উঠছিলেন, আর আমি মক্কার দিকে অবতরণ করছি। অথবা আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমি উঠছি ও তিনি অবতরণ করছেন।
(২৯৪, মুসলিম ১৫/১৭, হাদীস ১২১১, আহমাদ ২৬২২৪) (আঃপ্রঃ১৪৫৮, ইঃফাঃ ১৪৬৪)
১৫৬২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হান্থাতুল বিদার বছর আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বের হই। আমাদের মধ্যে কেউ কেবল উমরাহর ইহরাম বাঁধলেন, আর কেউ হজ্জ ও উমরাহ উভয়টির ইহরাম বাঁধলেন। আর কেউ শুধু হজ্জ-এর ইহরাম বাঁধলেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধলেন। যারা কেবল হজ্জ বা এক সঙ্গে হজ্জ ও উমরাহর ইহরাম বেঁধেছিলেন তাদের একজনও কুরবানী দিনের পূর্বে ইহরাম খোলেননি। (২৯৪)
(আঃপ্রঃ১৪৫৯, ইঃফাঃ ১৪৬৫)
১৫৬৩. মারওয়ান ইবনু হাকাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি উসমান ও আলী (রাদি.)-কে (উসফান নামক স্থানে) দেখেছি, উসমান (রাদি.) তামাত্তু, হজ্জ ও উমরাহ একত্রে আদায় করিতে নিষেধ করিতেন। আলী (রাদি.) এ অবস্থা দেখে হজ্জ ও উমরাহর ইহরাম একত্রে বেঁধে তালবিয়া পাঠ করেন- (আরবি) (হে আল্লাহ! আমি উমরাহ ও হজ্জ-এর ইহরাম বেঁধে হাযির হলাম) এবং বলিলেন, কারো কথায় আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সুন্নাত বর্জন করিতে পারব না।
(১৫৬৯, মুসলিম ১৫/২৩, হাদীস ১২২৩) (আঃপ্রঃ১৪৬০, ইঃফাঃ ১৪৬৬)
১৫৬৪. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, লোকেরা হজ্জ-এর মাসগুলোতে উমরাহ করাকে দুনিয়ার সবচেয়ে ঘৃণ্য পাপের কাজ বলে মনে করত। তারা মুহাররম মাসের স্থলে সফর মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ মনে করত। তারা বলত, উটের পিঠের যখম ভাল হলে, রাস্তার মুসাফিরের পদচিহ্ন মুছে গেলে এবং সফর মাস অতিক্রান্ত হলে উমরাহ করিতে ইচ্ছুক ব্যক্তি উমরাহ করিতে পারবে। নাবী (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সাহাবীগণ হজ্জ-এর ইহরাম বেঁধে (যিলহজ্জ মাসের) চার তারিখ সকালে (মক্কায়) উপনীত হন। তখন তিনি তাঁদের এ ইহরামকে উমরাহর ইহরামে পরিণত করার নির্দেশ দেন। সকলের কাছেই এ নির্দেশটি গুরুতর বলে মনে হলো (উমরাহ শেষ করে) তাঁরা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের জন্য কী কী জিনিস হালাল? তিনি বললেনঃ সবকিছু হালাল (ইহরামের পূর্বে যা হালাল ছিল তার সব কিছু এখন হালাল)। (১০৮৫)
(আঃপ্রঃ১৪৬১, ইঃফাঃ ১৪৬৭)
১৫৬৫. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি আমাকে (ইহরাম ভঙ্গ করে) হালাল হয়ে যাওয়ার আদেশ দিলেন। (১৫৫৯)
(আঃপ্রঃ১৪৬২, ইঃফাঃ ১৪৬৮)
১৫৬৬. নাবী সহধর্মিণী হাফসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! লোকদের কী হল, তারা উমরাহ শেষ করে হালাল হয়ে গেল, অথচ আপনি উমরাহ হইতে হালাল হচ্ছেন না? তিনি বললেনঃ আমি মাথায় আঠালো বস্তু লাগিয়েছি এবং কুরবানীর জানোয়ারের গলায় মালা ঝুলিয়েছি। কাজেই কুরবানী করার পূর্বে হালাল হইতে পারি না।
(১৬৯৭, ১৭২৫, ৪৩৯৭, ৫৯১৬, মুসলিম ১৫/২৫, হাদীস ১২২৯, আহমাদ ২৬৪৮৬) (আঃপ্রঃ১৪৬৩, ইঃফাঃ ১৪৬৯)
১৫৬৭. আবু জামরাহ নাসর ইবনু ইমরান যুবায়ী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি তামাত্তু হজ্জ করিতে ইচ্ছা করলে কিছু লোক আমাকে নিষেধ করিল। আমি তখন ইবনু আব্বাস (রাদি.) – এর নিকট জিজ্ঞেস করলে তিনি তা করিতে আমাকে নির্দেশ দেন। এরপর আমি স্বপ্নে দেখলাম, যে এক ব্যক্তি আমাকে বলছে, উত্তম হজ্জ ও মাকবূল উমরাহ। ইবনু আব্বাস (রাদি.) -এর নিকট স্বপ্নটি বললাম। তিনি বলিলেন, তা নাবী (সাঃআঃ)-এর সুন্নাত। এরপর আমাকে বলিলেন, তুমি আমার কাছে থাক, তোমাকে আমার মালের কিছু অংশ দিব। রাবী শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি (আবু জামরাকে) বললাম, তা কেন? তিনি বলিলেন, আমি যে স্বপ্ন দেখেছি সে জন্য। (১৬৮৮)
(আঃপ্রঃ১৪৬৪, ইঃফাঃ ১৪৭০)
১৫৬৮. আবু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আমি উমরাহর ইহরাম বেঁধে হজ্জে তামাত্তুর নিয়্যতে তারবিয়্যাহ দিবস (আট তারিখ)-এর তিন দিন পূর্বে মক্কায় প্রবেশ করলাম, মক্কাবাসী কিছু লোক আমাকে বলিলেন, এখন তোমার হজ্জের কাজ মক্কা হইতে শুরু হইবে। আমি বিষয়টি জানার জন্য আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি বলিলেন, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) আমাকে বলেছেন, যখন নাবী (সাঃআঃ) কুরবানীর উট সঙ্গে নিয়ে হজ্জে আসেন তখন তিনি তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন। সাহাবীগন ইফরাদ হজ্জ-এর নিয়্যাতে শুধু হজ্জের ইহরাম বাধেঁন। কিন্তু নাবী (সাঃআঃ) (মক্কায় পৌছে) তাদেরকে বললেনঃ বাইতুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সাঈ সমাধা করে তোমরা ইহরাম ভঙ্গ করে হালাল হয়ে যাও এবং চুল ছোট কর। এরপর হালাল অবস্থায় থাক। যখন যিলহজ্জ মাসের আট তারিখ হইবে তখন তোমরা হজ্জ-এর ইহরাম বেঁধে নিবে, আর যে ইহরাম বেঁধে এসেছ তা তামাত্তু হজ্জের উমরাহ বানিয়ে নিবে। সাহাবীগন বলিলেন, এ ইহরামকে আমরা কিরূপে উমরাহর ইহরাম বানাব? আমরা হজ্জ-এর নাম নিয়ে ইহরাম বেঁধেছি। তখন তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে যা আদেশ করছি তাই কর। কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়ে না আসলে তোমাদেরকে যা করিতে বলছি, আমিও সেরূপ করতাম। কিন্তু কুরবনী করার পূর্বে (ইহরামের কারনে) নিষিদ্ধ কাজ (আমার জন্য) হালাল নয়। সাহাবীগন সেরূপ পশু যবহ করিলেন। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে মারফূ বর্ণনা মাত্র এই একটিই পাওয়া যায়। (১৫৫৭)
(আঃপ্রঃ ১৪৬৫, ইঃফাঃ ১৪৭১)
১৫৬৯. সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উসমান নামক স্থানে অবস্থানকালে আলী ও উসমান (রাদি.) -এর মধ্যে হজ্জে তামাত্তু করা সম্পর্কে পরস্পরে দ্বিমত সৃষ্টি হয়। আলী (রাদি.) উসমান (রাদি.) -কে লক্ষ্য করে বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যে কাজ করিয়াছেন, আপনি কি তা হইতে বারণ করিতে চান? উসমান (রাদি.) বলিলেন, আমাকে আমার অবস্থায় থাকতে দিন। আলী (রাদি.) এ অবস্থা দেখে হজ্জ ও উমরাহ উভয়ের ইহরাম বাধেঁন। (১৫৬৩)
(আঃপ্রঃ ১৪৬৬, ইঃফাঃ ১৪৭২)
২৫/৩৫. অধ্যায়ঃ হজ্জ-এর নামোল্লেখ করে যে ব্যক্তি তালবিয়া পাঠ করে।
১৫৭০. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে আমরা হজ্জের তালবিয়া পাঠ করিতে করিতে (মক্কায়) উপনীত হলাম। এরপর নাবী (সাঃআঃ) আমাদের নির্দেশ দিলেন, আমরা হজ্জকে উমরাহতে পরিণত করলাম। (১৫৫৭)
(আঃপ্রঃ ১৪৬৭, ইঃফাঃ ১৪৭৩)
২৫/৩৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর যুগে হজ্জে তামাত্তু।
১৫৭১. ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর যুগে হজ্জে তামাত্তু করেছি, কুরআনেও তার বিধান নাযিল হয়েছে অথচ এক ব্যক্তি তার ইচ্ছাতম অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন। (৪৫১৮)
(আঃপ্রঃ ১৪৬৮ ইঃফাঃ ১৪৭৪)
২৫/৩৭. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বানী : তা ( হজ্জে তামাত্তু) তাদের জন্য, যাদের পরিবার-পরিজন মাসজিদুল হারামের (সীমানার) মধ্যে বসবাস করে না। (আল-বাকারা : ১৯৬)
১৫৭২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
হজ্জে তামাত্তু সম্পর্কে তাহাঁর নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলিলেন, বিদায় হজ্জের বছর আনসার ও মুজাহির সাহাবীগন, নাবী-সহধর্মিণীগণ ইহরাম বাঁধলেন, আর আমরাও ইহরাম বাঁধলাম। আমরা মক্কায় পৌছুলে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা হজ্জ-এর ইহরামকে উমরায় পরিনত কর। তবে যারা কুরবানীর পশুর গলায় মালা ঝুলিয়েছে, তাদের কথা ব্যতিক্রম (তারা ইহরাম ভঙ্গ করিতে পারবে না)। আমরা বাইতুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সায়ী করলাম। এরপর স্ত্রী-সহবাস করলাম এবং কাপড়-চোপড় পরিধান করলাম। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ যে ব্যক্তি কুরবানীর জন্য উপস্থিত করার উদ্দেশে পশুর গলায় মালা ঝুলিয়েছে, পশু কুরবানীর স্থানে না পৌছা পর্যন্ত সে হালল হইতে পারে না। এরপর যিলহজ্জ মাসের আট তারিখ বিকালে আমাদেরকে হজ্জ-এর ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দেন। যখন আমরা হজ্জ-এর সকল কার্য শেষ করে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সায়ী করে অবসর হলাম, তখন আমাদের হজ্জ পূর্ণ হল এবং আমাদের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হলো। যেমন মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : “যার পক্ষে সম্ভব সে একটি কুরবানী করিবে, আর যার পক্ষে সম্ভব নয় সে হজ্জ চলাকালে তিনটি সওম পালন করিবে এবং ফিরে এসে সাত দিন সওম পালন করিবে অর্থাৎ নিজ দেশে ফিরে”- (আল-বাকারা : ১৯৬)। একটি বকরীই দম হিসেবে কুরবানীর জন্য যথেষ্ট। একই বছরে সাহাবীগন হজ্জ ও উমরাহ একসাথে আদায় করিলেন। আল্লাহ তাহাঁর কুরআনে এ বিধান নাযিল করিয়াছেন এবং নাবী (সাঃআঃ) এ তরীকা জারী করিয়াছেন আর মক্কাবাসী ব্যতীত অন্যদের জন্য তা বৈধ করিয়াছেন। আল্লাহ ইরশাদ করেন : “( হজ্জে তামাত্তু) তাদের জন্য, যাদের পরিবার-পরিজন মাসজিদে হারামের (হারামের সীমার) মধ্যে বাস করে না” – (আল-বাকারা : ১৯৬)। আল্লাহ তাহাঁর কুরআনে হজ্জের যে মাসগুলোর কথা উল্লেখ করিয়াছেন তা হলো : শাওয়াল, যিলক্বাদ ও যিলহজ্জ। যারা এ মাসগুলোতে তামাত্তু হজ্জ করিবে তাদের অবশ্য দম দিতে হইবে অথবা সওম পালন করিতে হইবে। (আঃপ্রঃ অনুচ্ছেদ ৩৭ এর শেষাংশ)
(আরবি) অর্থ স্ত্রী সহবাস, (আরবি) অর্থ গুনাহ, (আরবি) অর্থ বিবাদ।
(আঃপ্রঃ, ই.ফা, পরিচ্ছেদ ৯৯৭)
Leave a Reply