যাকাত ও উশরের হাদিস – চাওয়া হইতে বিরত থাকা।

যাকাত ও উশরের হাদিস – চাওয়া হইতে বিরত থাকা।

যাকাত ও উশরের হাদিস – চাওয়া হইতে বিরত থাকা। >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ২৪, যাকাত, অধ্যায়ঃ (৪৯-৫৮)=১০টি

২৪/৪৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ দাসমুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য ও আল্লাহর পথে। (আত-তাওবাঃ ৬০)
২৪/৫০. অধ্যায়ঃ চাওয়া হইতে বিরত থাকা।
২৪/৫১. অধ্যায়ঃ যাকে আল্লাহ সওয়াল ও অন্তরের লোভ ব্যতীত কিছু দান করেন।
২৪/৫২. অধ্যায়ঃ সম্পদ বাড়ানোর জন্য যে মানুষের কাছে সওয়াল করে।
২৪/৫৩. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে যাচঞা করে না- (আল-বাকারাঃ ২৭৩), আর ধনী হওয়ার পরিমাণ কত?
২৪/৫৪. অধ্যায়ঃ খেজুরের পরিমাণ আন্দাজ করা।
২৪/৫৫. অধ্যায়ঃ বৃষ্টির পানি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত ভূমির উৎপাদিত ফসলের উপর উশর।
২৪/৫৬. অধ্যায়ঃ পাঁচ ওয়াসাক-এর কম উৎপাদিত পণ্যের যাকাত নেই।
২৪/৫৭. অধ্যায়ঃ যখন খেজুর সংগ্রহ করা হইবে তখন যাকাত দিতে হইবে এবং শিশুকে যাকাতের খেজুর নেওয়ার অনুমতি দেয়া যাবে কি?
২৪/৫৮. অধ্যায়ঃ এমন ফল বা গাছ (ফলসহ) অথবা (ফসল সহ) জমি, কিংবা শুধু (জমির) ফসল বিক্রয় করা, যেগুলোর উপর যাকাত বা উশর ফরয হয়েছে, অতঃপর ঐ যাকাত বা উশর অন্য ফল বা ফসল দ্বারা আদায় করা বা এমন ধরনের ফল বিক্রয় করা যেগুলোর উপর সদকা ফরয হয়নি।

২৪/৪৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ দাসমুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য ও আল্লাহর পথে। (আত-তাওবাঃ ৬০)

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত। নিজের মালের যাকাত দ্বারা দাসমুক্ত করিবে এবং হজ্জ আদায়কারীকে দিবে। হাসান (বসরী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, কেউ যাকাতের অর্থ দিয়ে তার পিতাকে ক্রয় করলে তা জায়িয হইবে। আর মুজাহিদীন এবং যে হজ্জ করেনি (তাকে হজ্জ করার জন্য) তাদেরও (যাকাত) দিবে। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন (আল্লাহর বাণীঃ) “যাকাত পাবে দরিদ্রগণ” – (আত-তাওবাঃ ৬০)। এর যে কোন খাত দিয়েই যাকাত আদায় হইবে। নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ খালিদ (ইবনু ওয়ালিদ) (রাদি.) তার বর্মসমূহ জিহাদের কাজে আবদ্ধ রেখেছেন। আবু লাইস (রাদি.) হইতে (দুর্বল সূত্রে) বর্ণিত যে, নাবী (সাঃআঃ) আমাদের হজ্জ আদায় করার জন্য বাহনরূপে যাকাতের উট দেন।

এ হাদীসটিকে ইমাম বুখারী যঈফ হওয়ার ইঙ্গিত বাহক শব্দের সাথে বর্ণনা করিয়াছেন এবং তা যঈফও বটে।

১৪৬৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যাকাত দেয়ার নির্দেশ দিলে বলা হলো, ইবনু জামীল, খালিদ ইবনু ওয়ালীদ ও আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাদি.) যাকাত প্রদানে অস্বীকার করছে। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ ইবনু জামীলের যাকাত না দেয়ার কারণ এ ছাড়া কিছু নয় যে, সে দরিদ্র ছিল, পরে আল্লাহর অনুগ্রহে ও তাহাঁর রাসূলের বরকতে সম্পদশালী হয়েছে। আর খালিদের ব্যাপার হলো তোমরা খালিদের উপর অন্যায় করেছ, কারণ সে তার বর্ম ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র আল্লাহর পথে আবদ্ধ রেখেছে। আর আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রাদি.) তো আল্লাহর রসূলের চাচা। তাহাঁর যাকাত তাহাঁর জন্য সাদকা এবং সমপরিমাণও তার জন্য সাদকা। ইবনু আবুয যিনাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর পিতা হইতে হাদীস বর্ণনায় শুআইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন। আর ইবনু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবুয যিনাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীসের শেষাংশে সাদকা শব্দের উল্লেখ করেননি। ইবনু জুরাইজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আরাজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে অনুরূপ হাদীস আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে।

২৪/৫০. অধ্যায়ঃ চাওয়া হইতে বিরত থাকা।

১৪৬৯. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

কিছু সংখ্যক আনসারী সাহাবী আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট কিছু চাইলে তিনি তাঁদের দিলেন, পুনরায় তাঁরা চাইলে তিনি তাঁদের দিলেন। এমনকি তাহাঁর নিকট যা ছিল সবই শেষ হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেনঃ আমার নিকট যে মাল থাকে তা তোমাদের না দিয়ে আমার নিকট জমা রাখি না। তবে যে চাওয়া হইতে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন আর যে পরমুখাপেক্ষী না হয়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাকে সবর দান করেন। সবরের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোন নিআমত কাউকে দেয়া হয়নি।

১৪৭০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যার হাতে আমার জীবন, সেই সত্তার কসম! তোমাদের মধ্যে কারো রশি নিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে পিঠে করে বয়ে আনা, কোন লোকের কাছে এসে চাওয়া অপেক্ষা অনেক ভাল, চাই সে দিক বা না দিক।

১৪৭১. যুবাইর ইবনু আওয়াম (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ রশি নিয়ে তার পিঠে কাঠের বোঝা বয়ে আনা এবং তা বিক্রী করা, ফলে আল্লাহ তার চেহারাকে (যাচঞা করার লাঞ্ছনা হইতে) রক্ষা করেন, তা মানুষের কাছে সওয়াল করার চেয়ে উত্তম, চাই তারা দিক বা না দিক।

১৪৭২. হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট কিছু চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। অতঃপর বললেনঃ হে হাকীম! এই সম্পদ শ্যামল সুস্বাদু। যে ব্যক্তি প্রশস্ত অন্তরে (লোভ ব্যতীত) তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় হয়। আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় করা হয় না। যেন সে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না। উপরের হাত নিচের হাত হইতে উত্তম। হাকীম (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, তাহাঁর কসম! হে আল্লাহর রাসুল! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত (সওয়াল করে) আমি কাউকে সামান্যতমও ক্ষতিগ্রস্থ করবো না। এরপর আবু বকর (রাদি.) হাকীম (রাদি.)-কে অনুদান গ্রহণের জন্য ডাকতেন, কিন্তু তিনি তাহাঁর কাছ হইতে তা গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিতেন। অত:পর উমর (রাদি.) (তাহাঁর যুগে) তাঁকে কিছু দেয়ার জন্য ডাকলেন। তিনি তাহাঁর কাছ হইতেও কিছু গ্রহণ করিতে অস্বীকার করেন। উমর (রাদি.) বলিলেন, মুসলিমগণ! হাকীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর ব্যাপারে আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি। আমি তাহাঁর এই গণীমত হইতে তাহাঁর প্রাপ্য পেশ করেছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করিতে অস্বীকার করেছে। (সত্য সত্যই) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর পর হাকীম (রাদি.) মৃত্যু অবধি কারো নিকট কিছু চেয়ে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করেননি।

২৪/৫১. অধ্যায়ঃ যাকে আল্লাহ সওয়াল ও অন্তরের লোভ ব্যতীত কিছু দান করেন।

(আল্লাহর বাণী) তাদের (ধনীদের) সম্পদে হক রয়েছে যাচঞাকারী ও বঞ্চিতের। (আয-যারিয়াতঃ ১৯)

১৪৭৩. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি উমর (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে কিছু দান করিতেন, তখন আমি বলতাম, যে আমার চেয়ে বেশি অভাবগ্রস্ত, তাকে দিন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিতেনঃ তা গ্রহণ কর। যখন তোমার কাছে এসব মালের কিছু আসে অথচ তার প্রতি তোমার অন্তরের লোভ নেই এবং তার জন্য তুমি প্রার্থী নও, তখন তা তুমি গ্রহণ করিবে। এরূপ না হলে তুমি তার প্রতি অন্তর ধাবিত করিবে না।

২৪/৫২. অধ্যায়ঃ সম্পদ বাড়ানোর জন্য যে মানুষের কাছে সওয়াল করে।

১৪৭৪. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সব সময় মানুষের কাছে চেয়ে থাকে, সে কিয়ামাতের দিন এমনভাবে উপস্থিত হইবে যে, তার চেহারায় কোন গোশত থাকবে না।

১৪৭৫. Read previous Hadith. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আরো বলেনঃ কিয়ামাতের দিন সূর্য তাদের অতি কাছে আসবে, এমনকি ঘাম কানের অর্ধেক পর্যন্ত পৌছবে। যখন তারা এই অবস্থায় থাকবে, তখন তারা সাহায্য চাইবে আদম (আঃ)-এর কাছে, অতঃপর মূসা (আঃ)-এর কাছে, তারপর মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-এর কাছে। আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যমে ইবনু আবু জাফর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন, অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সৃষ্টির মধ্যে ফয়সালা করার জন্য সুপারিশ করবেন। তিনি যেতে যেতে জান্নাতের ফটকের কড়া ধরবেন। সেদিন আল্লাহ তাঁকে মাকামে মাহমূদে পৌছে দিবেন। হাশরের ময়দানে সমবেত সকলেই তাহাঁর প্রশংসা করিবে।

রাবী মুআল্লা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ….. ইবনু উমর (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে ভিক্ষাবৃত্তি সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

২৪/৫৩. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে যাচঞা করে না- (আল-বাকারাঃ ২৭৩), আর ধনী হওয়ার পরিমাণ কত?

নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণীঃ “এবং এতটুকু পরিমাণ সম্পদ তার কাছে নেই, যা তাকে অভাবমুক্ত করিতে পারবে”। (আল্লাহ বলেন) এ ব্যয় ঐ সব অভাবগ্রস্ত লোকদের জন্য যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত হয়ে পড়েছে যে, তারা জীবিকার সন্ধানে যমীনে ঘোরাফেরা করিতে পারে না। ভিক্ষা না করার দরুন অজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবমুক্ত বলে মনে করে। তাদের লক্ষণ দেখলেই তুমি তাদের চিনতে পারবে। কাকুতি-মিনতি করে তারা মানুষের কাছে ভিক্ষা চায় না। আর যে সম্পদ তোমরা ব্যয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত। (আল-বাকারাঃ ২৭৩)

১৪৭৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ সে ব্যক্তি প্রকৃত মিসকীন নয়, যাকে এক দুলোকমা ফিরিয়ে দেয় (যথেষ্ট হয়) বরং সে-ই প্রকৃত মিসকীন যার কোন সম্পদ নেই, অথচ সে (চাইতে) লজ্জাবোধ করে অথবা লোকদেরকে আঁকড়ে ধরে যাচঞা করে না।

১৪৭৭. শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

মুগীরা ইবনু শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাতিব (একান্ত সচিব) বলেছেন, মুআবিয়া (রাদি.) মুগীরা ইবনু শুবাহ (রাদি.)-এর কাছে লিখে পাঠালেন যে, নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছ হইতে আপনি যা শুনেছেন তার কিছু আমাকে লিখে জানান। তিনি তাহাঁর কাছে লিখলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) –কে বলিতে শুনিয়াছি, আল্লাহ তোমাদের তিনটি কাজ অপছন্দ করেন- (১) অনর্থক কথাবার্তা, (২) সম্পদ নষ্ট করা এবং (৩) অত্যধিক সওয়াল করা।

১৪৭৮. সাদ ইবনু আবু ওক্কাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) একদল লোককে কিছু দান করিলেন। আমি তাদের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলাম। নাবী (সাঃআঃ) তাদের মধ্য হইতে এক ব্যক্তিকে কিছুই দিলেন না। অথচ সে ছিল আমার বিবেচনায় তাদের মধ্যে সবচাইতে উত্তম। আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে গিয়ে চুপে চুপে বললাম, অমুক সম্পর্কে আপনার কি হলো? আমি তো তাকে অবশ্য মুমিন বলে মনে করি। তিনি বললেনঃ বরং মুসলিম (বল)। সাদ (রাদি.) বলেন, এরপর আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। আবার তার সম্পর্কে আমার ধারণা প্রবল হয়ে উঠলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! অমুক সম্পর্কে আপনার কি হলো? আল্লাহর কসম! আমি তো তাকে অবশ্য মুমিন বলে মনে করি। তিনি বললেনঃ বরং মুসলিম। এবারও কিছুক্ষণ নীরব রইলাম। আবার তার সম্পর্কে আমার ধারণা প্রবল হয়ে উঠলে আমি বললাম, অমুক সম্পর্কে আপনার কি হলো? আল্লাহর কসম! আমি তো তাকে মুমিন বলে মনে করি। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ অথবা মুসলিম! এভাবে তিনবার বলিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি একজনকে দিয়ে থাকি অথচ অন্য ব্যক্তি আমার কাছে অধিক প্রিয় এই আশঙ্কায় যে, তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে। অপর সনদে ইসমাঈল ইবনু মুহাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে এভাবে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি হাদীসটি বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন, অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমার কাঁধে হাত রাখলেন, এরপর বলিলেন, হে সাদ! অগ্রসর হও। আমি সে লোকটিকে (এখন) অবশ্যই দিব।

আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, — অর্থ “উল্টিয়ে দেয়া হয়েছে।”

(আল-ইসরা/বানী ইসরাঈলঃ ৯৪) — — বাগধারা অনুসারে — হইতে গৃহীত হয়েছে অর্থাৎ কর্তার কর্ম যখন কারো প্রতি না বর্তায় তখনই এরূপ বলা হয়ে থাকে। আর যদি কর্ম কারোর উপর বর্তায়, তখন বলা হয় –।

১৪৭৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, প্রকৃত মিসকীন সে নয় যে মানুষের কাছে ভিক্ষার জন্য ঘুরে বেড়ায় এবং এক-দু লুকমা অথবা এক-দুটি খেজুর পেলে ফিরে যায় বরং প্রকৃত মিসকীন সেই ব্যক্তি, যার এতটুকু সম্পদ নেই যাতে তার প্রয়োজন মিটতে পারে এবং অবস্থা সেরূপ বোঝা যায় না যে, তাকে দান খয়রাত করা যাবে আর সে মানুষের কাছে যাচঞা করে বেড়ায় না।

১৪৮০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকাল বেলা বের হয়, (রাবী বলেন) আমার ধারণা যে, তিনি বলছেন, পাহাড়ের দিকে, অতঃপর লাকড়ী সংগ্রহ করে এবং তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে, তা তার পক্ষে লোকের কাছে যাচনা করার চেয়ে উত্তম।

২৪/৫৪. অধ্যায়ঃ খেজুরের পরিমাণ আন্দাজ করা।

১৪৮১. আবু হুমাইদ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে তাবূকের যুদ্ধে শরীক হয়েছি। যখন তিনি ওয়াদিউল কুরা নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন এক মহিলা তার নিজের বাগানে উপস্থিত ছিল। নাবী (সাঃআঃ) সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা এই বাগানের ফলগুলোর পরিমাণ আন্দাজ কর। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নিজে দশ ওয়াসাক পরিমাণ আন্দাজ করিলেন। অতঃপর মহিলাকে বললেনঃ উৎপন্ন ফলের হিসাব রেখো। আমরা তাবূক পৌঁছলে, তিনি বললেনঃ সাবধান! আজ রাতে প্রবল ঝড় প্রবাহিত হইবে। কাজেই কেউ যেন দাঁড়িয়ে না থাকে এবং প্রত্যেকেই যেন তার উট বেঁধে রাখে। তখন আমরা নিজ নিজ উট বেঁধে নিলাম। প্রবল ঝড় হইতে লাগল। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেলে ঝড় তাকে তায় নামক পর্বতে নিক্ষেপ করিল। আয়লা নগরীর শাসনকর্তা নাবী (সাঃআঃ)-এর জন্য একটি সাদা খচ্চর ও চাদর হাদিয়া দিলেন। আর নাবী (সাঃআঃ) তাকে সেখানকার শাসনকর্তারূপে বহাল থাকার লিখিত নির্দেশ দিলেন। (ফেরার পথে) ওয়াদিল কুরা পৌঁছে সেই মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার বাগানে কী পরিমাণ ফল হয়েছে? মহিলা বলিল, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর অনুমিত পরিমাণ, দশ ওয়াসাকই হয়েছে। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি দ্রুত মদীনায় পৌঁছতে ইচ্ছুক। তোমাদের কেউ আমার সাথে দ্রুত যেতে চাইলে দ্রুত কর। ইবনু বাক্কার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এমন একটি বাক্য বলিলেন, যার অর্থ, যখন তিনি মদীনা দেখিতে পেলেন তখন বললেনঃ এটা ত্বাবা (মদীনার অপর নাম)। এরপর যখন তিনি উহুদ পর্বত দেখিতে পেলেন তখন বললেনঃ এই পর্বত আমাদেরকে ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসি। আনসারদের সর্বোত্তম গোত্রটি সম্পর্কে আমি তোমাদের খবর দিব কি? তারা বলিলেন, হাঁ। তিনি বললেনঃ বনূ নাজ্জার গোত্র, অতঃপর বনূ আবদুল আশহাল গোত্র, এরপর বনূ সায়ীদা গোত্র অথবা বনূ হারিস ইবনু খাযরাজ গোত্র। আনসারদের সকল গোত্রেই কল্যাণ রয়েছে।

১৪৮২. Read previous Hadith. সাহল ইবনু বাক্কার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সুলায়মান ইবনু বিলাল সূত্রে আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

এরপর বনূ হারিস ইবনু খাযরাজ গোত্র, এরপর বনূ সায়িদা গোত্র এবং সুলায়মান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) …. নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদ পর্বত আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও তাকে ভালবাসি।

আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যে বাগান দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত তাকে বলা হয় — এবং যা দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত নয় তাকে — বলা হয় না।

২৪/৫৫. অধ্যায়ঃ বৃষ্টির পানি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত ভূমির উৎপাদিত ফসলের উপর উশর।

উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মধুর উপর (উশর) ওয়াজিব মনে করেননি।

১৪৮৩. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বৃষ্টি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা সেচ ব্যতীত উর্বরতার ফলে উৎপন্ন ফসলের উপর (দশমাংশ) উশর ওয়াজিব হয়। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের উপর অর্ধ (বিশ ভাগের এক ভাগ) উশর। (আ.প্র. ১৩৮৭)

ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এই হাদীসটি প্রথম হাদীসের ব্যাখ্যাস্বরূপ। কেননা, প্রথম হাদীস অর্থাৎ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিত হাদীসে ঊশর বা অর্ধ উশর-এর ক্ষেত্র নির্দিষ্টরূপে বর্ণিত হয়নি। আর এই হাদীসে তার নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বর্ণিত হয়েছে। রাবী নির্ভরযোগ্য হলে তাহাঁর বর্ণনায় অন্য সূত্রের বর্ণনা অপেক্ষা বর্ধিত অংশ থাকলে গ্রহণযোগ্য হয় এবং এ ধরনের বিস্তারিত বর্ণনা অস্পষ্ট বর্ণনার ফয়সালাকারী হয়। যেমন, উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ফাযল ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত আছে যে, নাবী (সাঃআঃ) কাবা গৃহে সালাত আদায় করেননি। বিলাল (রাদি.) বলেন, সালাত আদায় করিয়াছেন। এক্ষেত্রে বিলাল (রাদি.)-এর বর্ণনা গৃহীত হয়েছে আর ফাযল (রাদি.)-এর বর্ণনা গৃহীত হয়নি।

২৪/৫৬. অধ্যায়ঃ পাঁচ ওয়াসাক-এর কম উৎপাদিত পণ্যের যাকাত নেই।

১৪৮৪. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াসাক-এর কম উৎপন্ন দ্রব্যের যাকাত নেই এবং পাঁচটির কম উটের যাকাত নেই। এমনিভাবে পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণ রৌপ্যেরও যাকাত নেই।

আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এটি প্রথমটির ব্যাখ্যায়, যখন বলা হয় পাঁচ ওয়াসাক-এর কম উৎপাদিত পণ্যের যাকাত নেই। জ্ঞানের ক্ষেত্রে জ্ঞানের অধিকারীগণ যা কিছু বৃদ্ধি করিয়াছেন অথবা বর্ণনা করিয়াছেন তা সর্বদা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত।

২৪/৫৭. অধ্যায়ঃ যখন খেজুর সংগ্রহ করা হইবে তখন যাকাত দিতে হইবে এবং শিশুকে যাকাতের খেজুর নেওয়ার অনুমতি দেয়া যাবে কি?

১৪৮৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, খেজুর কাটার মৌসুমে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে (সাদকার) খেজুর আনা হতো। অমুকে তার খেজুর নিয়ে আসতো, অমুক এর খেজুর নিয়ে আসতো। এভাবে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে খেজুর স্তূপ হয়ে গেলো। হাসান ও হুসাইন (রাদি.) সে খেজুর নিয়ে খেলতে লাগলেন, তাদের একজন একটি খেজুর নিয়ে তা মুখে দিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তার দিকে তাকালেন, এবং তার মুখ হইতে খেজুর বের করে বলিলেন, তুমি কি জান না যে, মুহাম্মাদের বংশধর (বনূ হাশিম) সাদকা ভক্ষণ করে না।

২৪/৫৮. অধ্যায়ঃ এমন ফল বা গাছ (ফলসহ) অথবা (ফসল সহ) জমি, কিংবা শুধু (জমির) ফসল বিক্রয় করা, যেগুলোর উপর যাকাত বা উশর ফরয হয়েছে, অতঃপর ঐ যাকাত বা উশর অন্য ফল বা ফসল দ্বারা আদায় করা বা এমন ধরনের ফল বিক্রয় করা যেগুলোর উপর সাদকা ফরয হয়নি।

নাবী (সাঃআঃ)-এর উক্তিঃ ব্যবহারযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত ফল বিক্রয় করিবে না, কাজেই ব্যবহারযোগ্য হওয়ার পর কাউকেও বিক্রি করিতে নিষেধ করেননি এবং কার উপর যাকাত ওয়াজিব হইবে আর কার উপর ওয়াজিব হইবে না, তা নির্দিষ্ট করেননি।

১৪৮৬. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) খেজুর ব্যবহারযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। যখন তাঁকে ব্যবহারযোগ্যতা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন তিনি বললেনঃ ফল নষ্ট হওয়া হইতে নিরাপদ হওয়া।

১৪৮৭. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ফল ব্যবহারযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত তা বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

১৪৮৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রং ধরার আগে ফল বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন। বর্ণনাকারী বলেন, – এর অর্থ লালচে হওয়া।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply