কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া । তদের গালি দেয়া নিষেধ।

কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া । তদের গালি দেয়া নিষেধ।

কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া । তদের গালি দেয়া নিষেধ। >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ২৩, জানাযা, অধ্যায়ঃ (৮৫-৯৮)=১৪টি

২৩/৮৫. অধ্যায়ঃ লোকজন কর্তৃক মৃত ব্যক্তির গুণাবলী বর্ণনা করা।
২৩/৮৬. অধ্যায়ঃ কবরের আযাব সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে।
২৩/৮৭. অধ্যায়ঃ কবরের আযাব হইতে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
২৩/৮৮. অধ্যায়ঃ গীবত এবং পেশাবে অসাবধানতার কারণে কবরের আযাব।
২৩/৮৯. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির সম্মুখে সকাল ও সন্ধ্যায় (জান্নাত ও জাহান্নামে তার আবাসস্থল) পেশ করা হয়।
২৩/৯০. অধ্যায়ঃ খাটিয়ার উপর থাকাকালীন মৃতের কথা বলা।
২৩/৯১. অধ্যায়ঃ মুসলমানদের (অপ্রাপ্ত বয়স্ক) সন্তানদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছে।
২৩/৯২. অধ্যায়ঃ মুশরিকদের (অপ্রাপ্ত বয়স্ক) সন্তানদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছে।
২৩/৯৩. অধ্যায়ঃ
২৩/৯৪. অধ্যায়ঃ সোমবার দিন মৃত্যু।
২৩/৯৫. অধ্যায়ঃ হঠাৎ মৃত্যু।
২৩/৯৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ), আবু বক্‌র ও উমর (রাদি.)-এর কবর সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে।
২৩/৯৭. অধ্যায়ঃ মৃতদের গালি দেয়া নিষেধ।
২৩/৯৮. অধ্যায়ঃ মৃতদের দোষ-ত্রুটি আলোচনা করা।

২৩/৮৫. অধ্যায়ঃ লোকজন কর্তৃক মৃত ব্যক্তির গুণাবলী বর্ণনা করা।

১৩৬৭. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক সাহাবী জানাযার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাঁরা তার প্রশংসা করিলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ ওয়াজিব হয়ে গেল। একটু পরে অপর একটি জানাযা অতিক্রম করিলেন। তখন তাঁরা তার নিন্দাসূচক মন্তব্য করিলেন। (এবারও) নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ ওয়াজিব হয়ে গেল। তখন উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.) আরয করিলেন, (হে আল্লাহর রাসুল!) কি ওয়াজিব হয়ে গেল? তিনি বললেনঃ এ (প্রথম) ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা উত্তম মন্তব্য করলে, তাই তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। আর এ (দ্বিতীয়) ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা নিন্দাসূচক মন্তব্য করায় তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেল। তোমরা তো পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী।

১৩৬৮. আবুল আসওয়াদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি মদীনায় আসলাম, তখন সেখানে একটি রোগ (মহামারী আকারে) ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এ সময় তাদের পাশ দিয়ে একটি জানাযা অতিক্রম করিল। তখন জানাযার লোকটি সম্পর্কে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হল। উমর (রাদি.) বলিলেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। অতঃপর অপর একটি (জানাযা) অতিক্রম করিল। তখন সে লোকটি সম্পর্কেও প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হল। (এবারও) তিনি বলিলেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। অতঃপর তৃতীয় একটি (জানাযা) অতিক্রম করিল, লোকটি সম্বন্ধে নিন্দাসূচক মন্তব্য করা হল। তিনি বলিলেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। আবুল আসওয়াদ (রাদি.) বললেনঃ আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! কি ওয়াজিব হয়ে গেল? তিনি বলিলেন, আমি তেমনই বলেছি, যেমন নাবী (সাঃআঃ) বলেছিলেন, যে কোন মুসলমান সম্পর্কে চার ব্যক্তি ভাল বলে সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। উমর (রাদি.) বলেনঃ তখন আমরা বলেছিলাম, তিনজন হলে? তিনি বলিলেন, তিনজন হলেও। আমরা বললাম, দুজন হলে? তিনি বলিলেন, দুজন হলেও। অতঃপর আমরা একজন সম্পর্কে আর তাঁকে জিজ্ঞেস করিনি।

২৩/৮৬. অধ্যায়ঃ কবরের আযাব সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে।

আল্লাহ পাকের বাণীঃ-

وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلائِكَةُ بَاسِطُو أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوا أَنْفُسَكُمُ الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ

আর যদি তুমি দেখিতে পেতে, যখন যালিমরা মৃত্যু যাত্নায় থাকবে এবং ফেরেশতাগন হাত বাড়িয়ে বলবে, তোমাদের প্রাণ বের করে দাও, আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেওয়া হইবে। (সুরা আল-আনআম : ৯৩) আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী (র.) বলেন, الْهُوْنُ অর্থ الْهَوَانُ অর্থাৎ অবমাননা। (আর সুরা আল-ফুরকানের ৬৩ আয়াতে) الهُوْنُ অর্থ الرِفْقُ অর্থাৎ নম্রতা। আল্লাহ পাকের বাণীঃ

سَنُعَذِّبُهُمْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَى عَذَابٍ عَظِيمٍ

অচিরেই আমি তাদেরকে দুবার (বারবার) শাস্তি দিব। পরে তারা প্রত্যাবর্তিত হইবে মহাশাস্তির দিকে। (সুরা তাওবাঃ ১০১) এবং তাহাঁর বাণীঃ

وَحَاقَ بِالِ فِرْعَوْنَ الاية

আর নিকৃষ্ট (কঠিন) শাস্তি ফেরআউন গোষ্টিকে ঘিরে ফেলল, সকাল সন্ধ্যায় তাদের কে উপস্থিত করা হয় জাহান্নামের সামনে, আর যে দিন কিয়ামত সংঘটিত হইবে (সেদিন বলা হইবে) ফিরআউন গোষ্টিকে প্রবিষ্ট কর কঠিন শাস্তিতে

(সুরা মুমিনঃ ৪৫-৪৬)

১৩৬৯. বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুমিন ব্যক্তিকে যখন তার কবরে বসানো হয় তখন উপস্থিত করা হয় ফেরেশতাগণকে। অতঃপর (ফেরেশতাগণের প্রশ্নের উত্তরে) সে সাক্ষ্য প্রদান করে যে, –

لآ الهَ الَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ

“আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই আর মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) আল্লাহর রাসুল।” এটা আল্লাহর কালামঃ (যার অর্থ) “আল্লাহ পার্থিব জীবনে ও আখিরাতে অবিচল রাখবেন সে সকল লোককে যারা ঈমান এনেছে, প্রতিষ্ঠিত বাণীতে” –

(সুরা ইবরাহীমঃ ২৭)।.শুবাহ সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তিনি অতিরিক্ত বলেছেন যে, , يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا আল্লাহ অবিচল রাখবেন যারা ঈমান এনেছে – এ আয়াত কবরের আযাব সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল।

১৩৭০. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) (বদরে নিহত) গর্তবাসীদের [১] দিকে ঝুঁকে দেখে বললেনঃ

“তোমাদের সাথে রব যে ওয়াদা করেছিলেন, তা তোমরা বাস্তবে পেয়েছ তো?” – (সুরা আল-আরাফ (৭) : ৪৪)।

তখন তাঁকে বলা হল, আপনি মৃতদের ডেকে কথা বলছেন? (ওরা কি শুনতে পায়?) তিনি বললেনঃ “তোমরা তাদের চেয়ে অধিক শুনতে পাও না, তবে তারা জবাব দিতে পারছে না”। [২]

[১] القَليب পুরাতন গর্ত বা খাদ যে গর্তের মুখ বন্দ করা হয়নী । বদর যুদ্ধে নিহত মুশরীক দলনেতা আবু জাহল গঙদের একটি গর্তে নিক্কেপ করা হয়েছিল, قَليب বদরের গর্ত বা খাদ বলা হয় ।. [২] কবরবাসীকে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা নাবী (সাঃআঃ) ও কোন কিছু শুনানোর ক্ষমতা রাখেন না তবে মহান আল্লাহ তাওফীক দিলে সম্ভব। বর্ণিত অবস্থা তারই দৃষ্টান্ত।

১৩৭১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন যে, নিশ্চয়ই তারা এখন ভালভাবে জানতে (ও বুঝতে) পেরেছে যে, (কবর আযাব প্রসঙ্গে) আমি তাদের যা বলতাম তা বাস্তব। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেনঃ

‏إِنَّكَ لاَ تُسْمِعُ الْمَوْتَى

“আপনি (হে নাবী !) নিশ্চিতই মৃতদের (কোন কথা) শোনাতে পারেন না” –

(সুরা আন-নামালঃ ৮০)।

১৩৭২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ইয়াহুদী স্ত্রীলোক আয়েশা (রাদি.)-এর কাছে এসে কবর আযাব সম্পর্কে আলোচনা করে তাঁকে (দুআ করে) বলিল, আল্লাহ আপনাকে কবর আযাব হইতে রক্ষা করুন ! পরে আয়েশা (রাদি.) কবর আযাব সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি বললেনঃ হাঁ, কবর আযাব (সত্য)। আয়েশা (রাদি.) বলেন, এরপর থেকে নাবী (সাঃআঃ)-কে এমন কোন সালাত আদায় করিতে দেখিনি, যাতে তিনি কবর আযাব হইতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করেননি। [এ হাদীসের বর্ণনায়] গুণদার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) অধিক উল্লেখ করিয়াছেন যে, কবর আযাব একেবারে বাস্তব।

১৩৭৩. উরওয়া ইবনু যুবাইর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আসমা বিনত আবু বকর (রাদি.)-কে বলিতে শুনেছেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (একবার) দাঁড়িয়ে খুৎবাহ দিচ্ছিলেন তাতে তিনি কবরে মানুষ যে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হইবে, তার বর্ণনা দিলে মুসলমানগণ ভয়ার্ত চিৎকার করিতে লাগলেন।

১৩৭৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীরা এতটুকু মাত্র দূরে যায় যে, সে তখনও তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। [২৯] এ সময় দুজন ফেরেশতা তার নিকট এসে তাকে বসান এবং তাঁরা বলেন, এ ব্যক্তি অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) সম্পর্কে তুমি কী বলিতে? তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাহাঁর রাসুল। তখন তাঁকে বলা হইবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থান স্থলটির দিকে নযর কর, আল্লাহ তোমাকে তার বদলে জান্নাতের একটি অবস্থান স্থল দান করিয়াছেন। তখন সে দুটি স্থলের দিকেই দৃষ্টি করে দেখবে। কাতাদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, সে ব্যক্তির জন্য তাহাঁর কবর প্রশস্ত করে দেয়া হইবে। অতঃপর তিনি (কাতাদা) পুনরায় আনাস (রাদি.)-এর হাদীসের বর্ণনায় ফিরে আসেন। তিনি [আনাস (রাদি.) ] বলেন, আর মুনাফিক বা কাফির ব্যক্তিকেও প্রশ্ন করা হইবে তুমি এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) ) সম্পর্কে কী বলিতে? সে উত্তরে বলবে, আমি জানি না। লোকেরা যা বলত আমি তা-ই বললাম। তখন তাকে বলা হইবে, তুমি না নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। আর তাকে লোহার মুগুর দ্বারা এমনভাবে আঘাত করা হইবে, যার ফলে সে এমন বিকট চিৎকার করে উঠবে যে, দু জাতি (মানুষ ও জ্বিন) ছাড়া তার আশপাশের সকলেই তা শুনতে পাবে।

২৩/৮৭. অধ্যায়ঃ কবরের আযাব হইতে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

১৩৭৫. আবু আইয়ুব [আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (একবার) সূর্য ডুবে যাওয়ার পর নাবী (সাঃআঃ) বের হলেন। তখন তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পেয়ে বলেনঃ ইয়াহূদীদের কবরে আযাব দেয়া হচ্ছে। (এটা আযাব দেয়ার বা আযাবের ফেরেশতাগণের বা ইয়াহূদীদের আওয়াজ।) [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] নযর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) …….আবু আইয়ুব (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে (অনুরূপ) বলেছেন।

১৩৭৬. খালিদ ইবনু সাঈদ ইবনু আস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে কবরের শাস্তি হইতে আশ্রয় প্রার্থনা করিতে শুনেছেন।

১৩৭৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) দুআ করিতেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার সমীপে পানাহ চাচ্ছি কবরের শাস্তি হইতে, জাহান্নামের শাস্তি হইতে, জীবন ও মরণের ফিতনা হইতে এবং মাসীহ দাজ্জাল এর ফিতনা হইতে।

২৩/৮৮. অধ্যায়ঃ গীবত এবং পেশাবে অসাবধানতার কারণে কবরের আযাব।

১৩৭৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (একবার) নাবী (সাঃআঃ) দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বলিলেন, ঐ দুজনকে আযাব দেয়া হচ্ছে আর কোন কঠিন কাজের কারণে তাদের আযাব দেয়া হচ্ছে না। অতঃপর তিনি (সাঃআঃ) বললেনঃ হ্যাঁ (আযাব দেয়া হচ্ছে) তবে তাদের একজন পরনিন্দা করে বেড়াত, অন্যজন তার পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না। (রাবী বলেন) অতঃপর তিনি একটি তাজা ডাল নিয়ে তা দুখন্ডে ভেঙ্গে ফেললেন। অতঃপর সে দুখন্ডের প্রতিটি এক এক কবরে পুঁতে দিলেন। অতঃপর বললেনঃ আশা করা যায় যে এ দুটি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের উভয়ের আযাব হালকা করা হইবে।

২৩/৮৯. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির সম্মুখে সকাল ও সন্ধ্যায় (জান্নাত ও জাহান্নামে তার আবাসস্থল) পেশ করা হয়।

১৩৭৯. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মারা গেলে অবশ্যই তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার অবস্থান স্থল উপস্থাপন করা হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তবে (অবস্থান স্থল) জান্নাতীদের মধ্যে দেখানো হয়। আর সে জাহান্নামী হলে, তাকে জাহান্নামীদের (অবস্থান স্থল দেখানো হয়) আর তাকে বলা হয়, এ হচ্ছে তোমার অবস্থান স্থল, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তোমাকে পুনরুত্থিত করা অবধি।

২৩/৯০. অধ্যায়ঃ খাটিয়ার উপর থাকাকালীন মৃতের কথা বলা।

১৩৮০. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে খাটিয়ায় রেখে লোকেরা যখন কাঁধে বহন করে নিয়ে যায়, তখন সে নেককার হলে বলিতে থাকে, আমাকে এগিয়ে নিয়ে চল, আমাকে এগিয়ে নিয়ে চল; আর সে নেককার না হলে বলিতে থাকে হায় আফসোস! এটাকে নিয়ে তোমরা কোথায় যাচ্ছ? মানুষ ব্যতীত সব কিছুই তার এ আওয়াজ শুনতে পায়। মানুষেরা তা শুনতে পেলে অবশ্যই অজ্ঞান হয়ে পড়ত।

২৩/৯১. অধ্যায়ঃ মুসলমানদের (অপ্রাপ্ত বয়স্ক) সন্তানদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছে।

আবু হুরাইরা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তির এমন তিনটি সন্তান মারা যায়, যারা বালিগ হয়নি, তারা (মাতা-পিতার জন্য) জাহান্নাম হইতে আবরণ হয়ে যাবে। অথবা (তিনি বলেছেন) সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

১৩৮১. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম ব্যক্তির এমন তিনটি (সন্তান) মারা যাবে, যারা বালিগ হয়নি, আল্লাহ তাদের প্রতি তাহাঁর রহমতের ফযলে সে ব্যক্তিকে (মা-বাপকে) জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

১৩৮২. বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (নাবী তনয়) ইবরাহীম (রাদি.) –এর মৃত্যু হলে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তাহাঁর জন্য তো জান্নাতে একজন দুধ-মা রয়েছেন।

২৩/৯২. অধ্যায়ঃ মুশরিকদের (অপ্রাপ্ত বয়স্ক) সন্তানদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছে।

১৩৮৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে মুশরিকদের শিশু সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: আল্লাহ তাদের সৃষ্টি লগ্নেই তাদের ভবিষ্যৎ আমল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।

১৩৮৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-কে মুশরিকদের নাবালক সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে বলেন: আল্লাহ তাদের ভবিষ্যৎ আমল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।

১৩৮৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করেন: প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। অত:পর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহুদী বা নাসারা অথবা অগ্নি উপাসক করে, যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে (জন্মগত) কানকাটা দেখেছ?

২৩/৯৩. অধ্যায়ঃ

১৩৮৬. সামুরা ইবনু জুনদুব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) (ফজর) সালাত শেষে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন এবং জিজ্ঞেস করিতেন, তোমাদের কেউ গত রাতে কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? (বর্ণনাকারী) বলেন, কেউ স্বপ্ন, দেখে থাকলে তিনি তা বিবৃত করিতেন। তিনি তখন আল্লাহর মর্যী মুতাবিক তাবীর বলিতেন। একদা আমাদেরকে প্রশ্ন করিলেন, তোমাদের কেউ কি কোন স্বপ্ন দেখেছ? আমরা বললাম, জী না। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃগত রাতে আমি দেখলাম, দুজন লোক এসে আমার দুহাত ধরে আমাকে পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে চললো। হঠাৎ দেখিতে পেলাম, এক ব্যক্তি বসে আছে আর এক ব্যক্তি লোহার আঁকড়া হাতে দাঁড়িয়ে। [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমাদের এক সাথী মুসা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করিয়াছেন যে, দাঁড়ানো ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তির (এক পাশের) চোয়ালটা এমনভাবে আঁকড়া বিদ্ধ করছিল যে, তা (চোয়াল বিদীর্ণ করে) মস্তকের পিছনের দিক পর্যন্ত পৌছে যাচ্ছিল। অতঃপর অপর চোয়ালটিও আগের মত বিদীর্ণ করিল। ততক্ষণে প্রথম চোয়ালটা জোড়া লেগে যাচ্ছিল। আঁকড়াধারী ব্যক্তি পুণরায় সেরূপ করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ কী হচ্ছে? সাথীদ্বয় বলিলেন, (পরে বলা হইবে এখন) চলুন। আমরা চলতে চলতে চিৎ হয়ে শায়িত এক ব্যক্তির পাশে এসে উপস্থিত হলাম, তার মাথার নিকট পাথর হাতে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে পাথর দিয়ে তার মাথা চূর্ণ করে দিচ্ছিল। নিক্ষিপ্ত পাথর দূরে গড়িয়ে যাওয়ার ফলে তা তুলে নিয়ে শায়িত ব্যক্তির নিকট ফিরে আসার পূর্বেই বিচূর্ণ মাথা আগের মত জোড়া লেগে যাচ্ছিল। সে পুণরায় মাথার উপরে পাথর নিক্ষেপ করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, লোকটি কে? তাঁরা বলিলেন, চলুন। আমরা অগ্রসর হয়ে তন্দুরের ন্যায় এক গর্তের নিকট উপস্থিত হলাম। গর্তের উপরিভাগ ছিল সংকীর্ণ ও নীচের অংশ প্রশস্ত এবং এর তলদেশ হইতে আগুন জ্বলছিল। আগুন গর্তের মুখের নিকটবর্তী হলে সেখানের লোকগুলোও উপরে চলে আসে যেন তারা গর্ত হইতে বের হয়ে যাবে। আগুন ক্ষীণ হয়ে গেলে তারাও (তলদেশে) ফিরে যায়। গর্তের মধ্যে বহুসংখ্যক উলঙ্গ নারী-পুরুষ ছিল। জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তাঁরা বলিলেন, চলুন। আমরা চলতে চলতে একটি রক্ত প্রবাহিত নদীর কাছে হাযির হলাম। নদীর মাঝখানে এক ব্যক্তি দাঁড়ানো ছিল (ইমাম বুখারী (র.) বলেন) ইয়াযীদ ইবন হারূন ও ওহাব ইবন জারীর ইবন হাযিম (র.) বর্ণনায় وَ عَلَى شَتَ النّهَرِ رَجُلُ بَيْنَ يَديهِ حِجَارَةً রয়েছে। নদীর তীরে অপর এক ব্যক্তি যার সামনে ছিল পাথর। নদীর মাঝখানে লোকটি নদী হইতে বের হয়ে আসার জন্য অগ্রসর হলেই তীরে দাঁড়ানো লোকটি সে ব্যক্তির মুখ বরাবর পাথর নিক্ষেপ করছিল, এতে সে পূর্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছিল। এমনভাবে যতবার সে তীরে উঠে আসতে চেষ্টা করে, ততবার সে ব্যক্তি তার মুখ বরাবর পাথর নিক্ষেপ করে পূর্বস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য করে। আমি জানতে চাইলাম, এ ঘটনার কারণ কী? তাঁরা বলিলেন, চলতে থাকুন। আমরা চলতে চলতে একটি সবুজ বাগানে উপস্থিত হলাম। এতে একটি বড় গাছ ছিল। গাছটির গোড়ায় এক বৃদ্ধ ও বেশ কিছু বালক-বালিকা ছিল। হঠাৎ দেখি যে, গাছটির সন্নিকটে জনৈক ব্যক্তি আগুন জ্বালাচ্ছে। সাথীদ্বয় আমাকে নিয়ে গাছে আরোহণ করে এমন একটি বাড়িতে প্রবেশ করিলেন যার চেয়ে সুদৃশ্য বাড়ি ইতিপূর্বে কখনো দেখিনি। বাড়িতে বহু সংখ্যক বৃদ্ধ, যুবক, নারী এবং বালক-বালিকা ছিল। অত:পর তাঁরা আমাকে সেখান হইতে বের করে নিয়ে গাছে আরো উপরে আরোহণ করে অপর একটি বাড়িতে প্রবেশ করালেন। এটা পূর্বাপেক্ষা অধিক সুদৃশ্য ও মনোরম। বাড়িটিতে ছিল কতিপয় বৃদ্ধ ও যুবক। আমি বললাম, আজ রাতে আপনারা আমাকে (বহুদূর পর্যন্ত) ভ্রমণ করালেন। এবার বলুন, যা দেখলাম তার তাৎপর্য কী? তাঁরা বলিলেন, না, আপনি যে ব্যক্তির চোয়াল বিদীর্ণ করার দৃশ্য দেখলেন সে মিথ্যাবাদী; মিথ্যা কথা বলে বেড়াতো, তার বিবৃত মিথ্যা বর্ণনা ক্রমাগত বর্ণিত হয়ে দূর দূরান্তে পৌছে যেতো। ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার সঙ্গে এ ব্যবহার করা হইবে। আপনি যার মাথা চূর্ণ করিতে দেখলেন, সে এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ কুরআনের শিক্ষা দান করেছিলেন, কিন্তু রাতের বেলায় সে কুরআন হইতে বিরত হয়ে নিদ্রা যেতো এবং দিনের বেলায় কুরআন অনুযায়ী আমল করতো না। তার সাথে ক্বিয়ামত পর্যন্ত এইরূপই করা হইবে। গর্তের মধ্যে যাদেরকে আপনি দেখলেন, তারা ব্যভিচারী। (রক্ত প্রবাহিত) নদীতে আপনি যাকে দেখলেন, সে সুদখোর। গাছের গোড়ায় যে বৃদ্ধ ছিলেন তিনি ইবরাহীম (আ.) এবং তাহাঁর চারপাশের বালক-বালিকারা মানুষের সন্তান। যিনি আগুন জ্বালাচ্ছিলেন তিনি হলেন, জাহান্নামের খাযিন-মালিক নামক ফেরেশতা। প্রথম যে বাড়িতে আপনি প্রবেশ করিলেন তা সাধারণ মুমিনদের বাসস্থান। আর এ বাড়িটি হলো শহীদগণের আবাস। আমি (হলাম) জিবরাঈল আর ইনি হলে মীকাইল। (এরপর জিবরাঈল আমাকে বলিলেন) আপনার মাথা উপরে উঠান। আমি উঠিয়ে মেঘমালার মত কিছু দেখলাম। তাঁরা বলিলেন, এটাই হলো আপনার আবাসস্থল। আমি বললাম, আমাকে ছেড়ে দিন আমি আমার আবাসস্থলে প্রবেশ করি। তাঁরা বলিলেন, এখনো আপনার আয়ু কিছু সময়ের জন্য রয়ে গেছে, যা এখনো পূর্ণ হয়নি। অবশিষ্ট সময় পূর্ণ হলে অবশ্যই আপনি স্বীয় আবাসে চলে আসবেন।

২৩/৯৪. অধ্যায়ঃ সোমবার দিন মৃত্যু।

১৩৮৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু বকর (রাদি.)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, কয় খন্ড কাপড়ে তোমরা নাবী (সাঃআঃ)-কে কাফন দিয়েছিলে? আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, তিন খন্ড সাদা সাহুলী (স্থানের নাম) কাপড়ে, যার মধ্যে জামা ও পাগড়ী ছিল না। তিনি আবার জিজ্ঞেস করিলেন, কোন দিন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইনতিকাল করেন? আয়েশা (রাদি.) বলেন, সোমবার। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, আজ কী বার? তিনি [ আয়েশা (রাদি.)] বলিলেন, আজ সোমবার। তিনি [আবু বকর (রাদি.)] বলিলেন, আমি আশা করি এখন হইতে আগত রাতের মধ্যে (আমার মৃত্যু হইবে)। অতঃপর অসুস্থকালীন নিজের পরিধেয় কাপড়ের প্রতি লক্ষ্য করে তাতে জাফরানী রং এর চিহ্ন দেখিতে পেয়ে বলিলেন, আমার এ কাপড়টি ধুয়ে তার সাথে আরো দুখন্ড কাপড় বৃদ্ধি করে আমার কাফন দিবে। আমি (আয়েশা) বললাম, এটা (পরিধেয় কাপড়টি) পুরাতন। তিনি বলিলেন, মৃত ব্যক্তি অপেক্ষা জীবিতদের নতুন কাপড়ের প্রয়োজন অধিক। আর কাফন হলো বিগলিত শবদেহের জন্য। তিনি মঙ্গলবার রাতের সন্ধ্যায় ইনতিকাল করেন, ভোর হবার পূর্বেই তাঁকে দাফন করা হয়েছিল।

২৩/৯৫. অধ্যায়ঃ হঠাৎ মৃত্যু।

১৩৮৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিলেন, আমার মায়ের আকস্মিক মৃত্যু ঘটে, কিন্তু আমার বিশ্বাস তিনি (মৃত্যুর পূর্বে) কথা বলিতে সক্ষম হলে কিছু সদকা করে যেতেন। এখন আমি তাহাঁর পক্ষ হইতে সদকা করলে তিনি এর প্রতিফল পাবেন কি? তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] বলিলেন, হ্যাঁ।

২৩/৯৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ), আবু বক্‌র ও উমর (রাদি.)-এর কবর সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে।

(আল্লাহর বাণী) فَاَقْبَرَهَ তাকে কবরস্থ করিলেন। اَقْبَرْتُ اَقْبِرهُ الرَّجُلَ তখন বলবে যখন তুমি কারোর জন্য কবর তৈরী করিবে। قَبَرْتُهُ دَفنْتُهُ অর্থাৎ কবরস্থ করা, كِفَاتًا অর্থাৎ জীবিতাবস্থায় ভুপৃষ্ঠে অবস্থান করিবে ও মৃত্যুর পর এর মধ্যে সমাহিত হইবে।

১৩৮৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রোগশয্যায় (স্ত্রীগণের নিকট অবস্থানের) পালার সময়কাল জানতে চাইতেন। আমার অবস্থান আজ কোথায় হইবে? আগামীকাল কোথায় হইবে? আয়েশা (রাদি.)-এর পালা বিলম্বিত হচ্ছে বলে ধারণা করেই এ প্রশ্ন করিতেন। [ আয়েশা (রাদি.) বলেন] যে দিন আমার পালা আসলো, সেদিন আল্লাহ তাঁকে আমার কন্ঠদেশ ও বক্ষের মাঝে (হেলান দেয়া অবস্থায়) রূহ কবয করিলেন [৩০] এবং আমার ঘরে তাঁকে দাফন করা হয়।

[৩০] যারা স্বামী মারা যাওয়ার সময় স্ত্রীকে ধারে কাছেও যেতে দেন না, তাদেরকে এ হাদিস থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত।

১৩৯০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) অন্তিম রোগশয্যায় বলেন, ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হোক। কারণ, তারা তাদের নাবী গণের কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করেছে। (রাবী উরওয়া বলেন) এরূপ আশঙ্কা না থাকলে রাসূলূল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কবরকে (ঘরের বেষ্টনীতে সংরক্ষিত না রেখে) খোলা রাখা হতো। কিন্তু তিনি (নাবী (সাঃআঃ)) আশংকা করেন বা আশংকা করা হয় যে, পরবর্তীতে একে মসজিদে পরিণত করা হইবে। রাবী হিলাল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, উরওয়া আমাকে (আবু আমর) কুনিয়াতে ভূষিত করেন আর তখন পর্যন্ত আমি কোন সন্তানের পিতা হইনি।

১৩৯০/১. সুফিয়ান তাম্মার (রাদি.) হইতে বর্ণিত।

তিনি বলেন, তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর কবর উটের কুজের ন্যায় (উঁচু) দেখেছেন।

(আ.প্র.১৩০০, ই.ফা.১৩০৮). ১৩৯০/২. উরওয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ওয়ালীদ ইবনু আবদুল মালিক-এর শাসনামলে যখন (রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর রাওযার) বেষ্টনী দেয়াল ধসে পড়ে, তখন তাঁরা সংষ্কার করিতে আরম্ভ করলে একটি পা প্রকাশ পায়, তা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কদম মুবারক বলে ধারণা করার কারণে লোকেরা খুব ঘাবড়ে যায়। সনাক্ত করার মত কাউকে তারা পায়নি। অবশেষে উরওয়া (রাদি.) তাদের বলিলেন, আল্লাহর কসম এ নাবী (সাঃআঃ)-এর পা নয় বরং এতো উমর (রাদি.)-এর পা। (৪৩৫) (আ.প্র. ১৩০১, ই.ফা.১৩০৯)

১৩৯১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাদি.)-কে অসিয়্যত করেছিলেন, আমাকে তাঁদের (নাবী (সাঃআঃ) ও তাহাঁর দুসাহাবী) পাশে দাফন করিবে না। বরং আমাকে আমার সঙ্গিনীদের সাথে বাকীতে দাফন করিবে যাতে আমি চিরকালের জন্য প্রশংসিত হইতে না থাকি।

১৩৯২. আমর ইবনু মায়মুন আওদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি উমর (রাদি.)-কে দেখলাম তিনি নিজের ছেলে আবদুল্লাহ (রাদি.)-কে ডেকে বলিলেন, তুমি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.)-এর নিকট গিয়ে বল, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.) আপনাকে সালাম বলেছেন। অত:পর আমাকে আমার দুজন সাথী (নাবী (সাঃআঃ) ও আবু বক্‌র)-এর পাশে দাফন করিতে তিনি রাযী আছেন কি না? [১] আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, আমি পূর্ব হইতেই নিজের জন্য এর আশা পোষণ করতাম, কিন্তু আজ উমর (রাদি.)-কে নিজের উপর অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আবদুল্লাহ (রাদি.) ফিরে এলে উমর (রাদি.) তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, কি বার্তা নিলে এলে? তিনি বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! তিনি [আয়েশা (রাদি.)] আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন। উমর (রাদি.) বলিলেন, সেখানে শয্যা লাভই ছিল আমার নিকট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার মৃত্যুর পর আমাকে বহন করে [ আয়েশা (রাদি.)-এর নিকট উপস্থিত করে] তাঁকে সালাম জানিয়ে বলবে, উমর ইবনু খাত্তাব (পুণরায়) আপনার অনুমতি চাইছেন। তিনি অনুমতি দিলে, আমাকে সেখানে দাফন করিবে। অন্যথায় আমাকে মুসলমানদের কবরস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। [২] অত:পর উমর (রাদি.) বলেন, এ কয়েকজন ব্যক্তি যাদের উপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মৃত্যু পর্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন, তাঁদের অপেক্ষা অন্য কাউকে আমি এ খিলাফতের (দায়িত্ব পালনে) অধিক যোগ্য বলে মনে করি না। তাই আমার তাঁরা (তাঁদের মধ্য হইতে) যাঁকে খলীফা মনোনীত করবেন তিনি খলীফা হইবেন। তোমরা সকলেই তাহাঁর আদেশ মেনে চলবে, তাহাঁর আনুগত্য করিবে। এ বলে তিনি উসমান, আলী, তালহা, যুবাইর, আবদুর রাহমান ইবনু আওফ ও সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাদি.)-এর নাম উল্লেখ করিলেন। এ সময়ে এক আনসারী যুবক উমর (রাদি.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, হে আমীরুল মুমিনীন! আল্লাহ প্রদত্ত সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনি ইসলামের ছায়াতলে দীর্ঘদিন অতিবাহিত করার সৌভাগ্য লাভ করিয়াছেন যা আপনিও জানেন। অত:পর আপনাকে খলীফা নিযুক্ত করা হয় এবং আপনি ন্যায়বিচার করিয়াছেন। সর্বোপরি আপনি শাহাদাত লাভ করিয়াছেন। উমর (রাদি.) বলিলেন, হে ভাতিজা! যদি তা আমার জন্য লাভ লোকসানের না হয়ে বরাবর হয়, তবে কতই না ভাল হইবে। (তিনি বলিলেন) আমার পরবর্তী খলীফাকে ওয়াসিয়্যাত করে যাচ্ছি, তিনি যেন প্রথম দিকের মুহাজিরদের ব্যাপারে যত্নবান হন, তাঁদের হক আদায় করে চলেন, যেন তাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেন। আমি তাঁকে আনসারদের সাথেও সদাচারের উপদেশ দেই, যারা ঈমান ও মদীনাকে আঁকড়ে ধরে রয়েছেন, যেন তাঁদের মধ্যকার সৎকর্মপরায়ণদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা হয় এবং তাঁদের মধ্যকার (লঘু) অপরাধীকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। সর্বশেষে আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-এর দায়িত্বভূক্ত (সর্বস্তরের মুমিনদের সম্পর্কে) সতর্ক করে দিচ্ছি যেন মুমিনদের সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করা হয়, তাদের রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা হয় এবং সাধ্যের বাইরে কোন দায়িত্ব তাদের উপর অর্পণ করা না হয়।

[১] রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কবর আয়েশা (রা.) – এর ঘর বিধায় এর মালিকানা তাহাঁর থাকায় উমর (রা.) –এর দাফনে অনুমতির প্রয়োজন ছিল ।. [২] তাহাঁর এ কথাগুলি ক্বিয়ামত পর্যন্ত আদর্শ হয়ে থাকবে, সুতরাং আমাদের সবাইকে বিশেষ করে শাসক গোষ্ঠীকে এখান থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত।

২৩/৯৭. অধ্যায়ঃ মৃতদের গালি দেয়া নিষেধ।

১৩৯৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন: তোমরা মৃতদের গালি দিও না। কারণ, তারা স্বীয় কর্মফল পর্যন্ত পৌছে গেছে। [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল কুদ্দুস ও মুহাম্মাদ ইবনু আনাস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। আলী ইবনু জাদ, ইবনু আরআরা ও ইবনু আবু আদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীস বর্ণনায় আদম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।

২৩/৯৮. অধ্যায়ঃ মৃতদের দোষ-ত্রুটি আলোচনা করা।

১৩৯৪. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু লাহাব লানাতুল্লাহি আলাইহি নাবী (সাঃআঃ)-কে লক্ষ্য করে বললো, সারা দিনের জন্য তোমার অনিষ্ট হোক! (তার এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে) নাযিল হয়: (যার অর্থ)

‏تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ

“আবু লাহাবের হাত দুটো ধ্বংস হোক এবং সেও ধ্বংস হোক” – (আল-মাসাদ:১)।[১]

Comments

Leave a Reply