কবরে দাফন করা । আত্মহত্যাকারী সম্পর্কে যা কিছু এসেছে

কবরে দাফন করা । আত্মহত্যাকারী সম্পর্কে যা কিছু এসেছে

কবরে দাফন করা । আত্মহত্যাকারী সম্পর্কে যা কিছু এসেছে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ২৩, জানাযা, অধ্যায়ঃ (৬৭-৮৪)=১৮টি

২৩/৬৭. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তি (দাফনকারীদের) জুতার আওয়াজ শুনতে পায়।
২৩/৬৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি বাইতুল মাক্বদিস বা অনুরূপ কোন জায়গায় দাফন হওয়া পছন্দ করেন
২৩/৬৯. অধ্যায়ঃ রাত্রি কালে দাফন করা।
২৩/৭০. অধ্যায়ঃ কবরের উপর মসজিদ তৈরি করা।
২৩/৭১. অধ্যায়ঃ স্ত্রীলোকের কবরে যে অবতরণ করে।
২৩/৭২. অধ্যায়ঃ শহীদের জন্য জানাযার সালাত।
২৩/৭৩. অধ্যায়ঃ দুই বা তিনজনকে একই কবরে দাফন।
২৩/৭৪. অধ্যায়ঃ যাঁরা শহীদগণকে গোসল দেয়া দরকার মনে করেন না।
২৩/৭৫. অধ্যায়ঃ প্রথমে কবরে কাকে রাখা হইবে।
২৩/৭৬. অধ্যায়ঃ কবরের উপরে ইয্‌খির বা অন্য কোন প্রকারের ঘাস দেয়া।
২৩/৭৭ অধ্যায়ঃ কোন কারণে মৃত ব্যক্তিকে কবর বা লাহদ হইতে বের করা যাবে কি?
২৩/৭৮. অধ্যায়ঃ কবরকে লাহদ ও শাক্‌ক বানানো।
২৩/৭৯. অধ্যায়ঃ কোন বালক ইসলাম গ্রহণ করে মারা গেলে তার জন্য (জানাযার) সালাত আদায় করা যাবে কি? বালকের নিকট ইসলামের দাওয়াত দেয়া যাবে কি?
২৩/৮০. অধ্যায়ঃ মৃত্যুকালে কোন মুশরিক ব্যক্তি লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু বললে।
২৩/৮১. অধ্যায়ঃ কবরের উপর খেজুরের ডাল গেড়ে দেয়া।
২৩/৮২. অধ্যায়ঃ কবরের পাশে কোন মুহাদ্দিসের নসীহত পেশ করা আর তার সহচরদের তার আশে পাশে বসা।
২৩/৮৩. অধ্যায়ঃ আত্মহত্যাকারী সম্পর্কে যা কিছু এসেছে।
২৩/৮৪. অধ্যায়ঃ মুনাফিকদের জন্য (জানাযার) সালাত আদায় করা এবং মুশরিকদের জন্য মাগফিরাত কামনা করা অপছন্দনীয় হওয়া।

২৩/৬৭. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তি (দাফনকারীদের) জুতার আওয়াজ শুনতে পায়।

১৩৩৮. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তাকে পিছনে রেখে তার সাথীরা চলে যায় (এতটুকু দূরে যে,) তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়, এমন সময় তার নিকট দুজন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে দেন। অতঃপর তাঁরা প্রশ্ন করেন, এই যে মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)! তাহাঁর সম্পর্কে তুমি কী বলিতে? তখন সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাহাঁর রাসুল। তখন তাঁকে বলা হইবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানের জায়গাটি দেখে নাও, যার পরিবর্তে আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য জান্নাতে একটি স্থান নির্ধারিত করিয়াছেন। নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ তখন সে দুটি স্থান একই সময় দেখিতে পাবে। আর যারা ক্বাফির বা মুনাফিক, তারা বলবে, আমি জানি না। অন্য লোকেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হইবে, না তুমি নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। অতঃপর তার দু কানের মাঝখানে লোহার মুগুর দিয়ে এমন জোরে মারা হইবে, যাতে সে চিৎকার করে উঠবে, তার আশপাশের সবাই তা শুনতে পাবে মানুষ ও জ্বীন ছাড়া।

২৩/৬৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি বাইতুল মাক্বদিস বা অনুরূপ কোন জায়গায় দাফন হওয়া পছন্দ করেন

১৩৩৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মালাকুল মাওতকে মূসা (আঃ)-এর নিকট পাঠানো হল। তিনি তাহাঁর নিকট আসলে, মূসা (আঃ) তাঁকে চপেটাঘাত করিলেন। (যার ফলে তাহাঁর চোখ বেরিয়ে গেল।) তখন মালাকুল মাওত তাহাঁর প্রতিপালকের নিকট ফিরে গিয়ে বলিলেন, আমাকে এমন এক বান্দার কাছে পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। তখন আল্লাহ তাহাঁর চোখ ফিরিয়ে দিয়ে হুকুম করিলেন, আবার গিয়ে তাঁকে বল, তিনি একটি ষাঁড়ের পিঠে তাহাঁর হাত রাখবেন, তখন তাহাঁর হাত যতটুকু আবৃত করিবে, তার সম্পূর্ণ অংশের প্রতিটি পশমের বিনিময়ে তাঁকে এক বছর করে আয়ু দান করা হইবে। মূসা (আঃ) এ শুনে বলিলেন, হে আমার রব! অতঃপর কী হইবে? আল্লাহ বললেনঃ অতঃপর মৃত্যু। মূসা (আঃ) বলিলেন, তা হলে এখনই হোক। তখন তিনি একটি পাথর নিক্ষেপ করলে যতদূর যায় বাইতুল মাক্বদিসের ততটুকু নিকটবর্তী স্থানে তাঁকে পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে নিবেদন করিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি সেখানে থাকলে অবশ্যই পথের পাশে লাল বালুর টিলার নিকটে তাহাঁর কবর তোমাদের দেখিয়ে দিতাম।

২৩/৬৯. অধ্যায়ঃ রাত্রি কালে দাফন করা।

আবু বক্‌র (রাদি.) –কে রাতে দাফন করা হয়েছিল।

১৩৪০. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তিকে রাত্রিকালে দাফন করার পর তার জানাযার সালাত আদায় করার জন্য নাবী (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সাহাবীগণ গিয়ে দাঁড়ালেন। তখন তিনি লোকটির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিলেন এবং বলিলেন, এ লোকটি কে? তাঁরা জবাব দিলেন, অমুক, গতরাতে তাকে দাফন করা হয়েছে। তখন তাঁরা তার জানাযার সালাত আদায় করিলেন।

২৩/৭০. অধ্যায়ঃ কবরের উপর মসজিদ তৈরি করা।

১৩৪১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর অসুস্থতার সময় তাহাঁর এক সহধর্মিণী হাবাশা দেশে তাহাঁর দেখা মারিয়া নামক একটি গীর্জার কথা বলিলেন। উম্মু সালামা এবং উম্মু হাবীবা (রাদি.) হাবাশায় গিয়েছিলেন। তাঁরা দুজন ঐ গীর্জার সৌন্দর্য এবং তার ভিতরের চিত্রকর্মের বিবরণ দিলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর মাথা তুলে বললেনঃ সে সব দেশের লোকেরা তাদের কোন নেক্‌কার ব্যক্তি মারা গেলে তাহাঁর কবরে মসজিদ নির্মাণ করত এবং তাতে ঐ সব চিত্রকর্ম অংকণ করত। তারা হলো, আল্লাহর নিকৃষ্ট সৃষ্টি।

২৩/৭১. অধ্যায়ঃ স্ত্রীলোকের কবরে যে অবতরণ করে।

১৩৪২. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর এক কন্যার দাফনে হাযির ছিলাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কবরের পাশেই বসেছিলেন। আমি দেখলাম, তাহাঁর দুচোখে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে আজ রাতে স্ত্রী মিলনে লিপ্ত হয়নি? আবু তালহা (রাদি.) বলেন, আমি। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তাহাঁর কবরে নেমে পড়, তখন তিনি তাহাঁর কবরে নেমে গেলেন এবং তাঁকে দাফন করিলেন।

ফুলাইহ বলেন, – অর্থ – পিছনে। আবু আবদুল্লাহ বুখারী বলেন, – অর্থাৎ যেন লিপ্ত হয়ে পড়ে।

২৩/৭২. অধ্যায়ঃ শহীদের জন্য জানাযার সালাত।

১৩৪৩. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) উহুদের শহীদগণের দু দু জনকে একই কাপড়ে (কবরে) একত্র করিতেন। অতঃপর জিজ্ঞেস করিতেন, তাঁদের উভয়ের মধ্যে কে কুরআন সম্পর্কে অধিক জানত? দু জনের মধ্যে এক জনের দিকে ইঙ্গিত করা হলে তাঁকে কবরে পূর্বে রাখতেন এবং বলিলেন, আমি ক্বিয়ামতের দিন এদের ব্যাপারে সাক্ষী হব। তিনি রক্ত-মাখা অবস্থায় তাঁদের দাফন করার নির্দেশ দিলেন, তাঁদের গোসল দেয়া হয়নি এবং তাঁদের (জানাযার) সালাতও আদায় করা হয়নি।

১৩৪৪. উক্‌বা ইবনু আমির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) একদা বের হলেন এবং উহুদে পৌঁছে মৃতের জন্য যেরূপ (জানাযার) সালাত আদায় করা হয় উহুদের শহীদানের জন্য অনুরূপ সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর ফিরে এসে মিম্বারে তাশরীফ রেখে বললেনঃ আমি হবো তোমাদের জন্য অগ্রে প্রেরিত এবং তোমাদের জন্য সাক্ষী। আল্লাহর কসম! এ মুহূর্তে আমি অবশ্যই আমার হাউয (হাউয-ই-কাউসার) দেখছি। আর অবশ্যই আমাকে পৃথিবীর ভান্ডারসমূহের চাবিগুচ্ছ প্রদান করা হয়েছে। অথবা (বর্ণনাকারী বলেছেন) পৃথিবীর চাবিগুচ্ছ [২৫] আর আল্লাহর কসম! তোমরা আমার পরে শির্‌ক করিবে এ আশঙ্কা আমি করি না। তবে তোমাদের ব্যাপারে আমার আশঙ্কা যে, তোমরা পার্থিব সম্পদ লাভে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হইবে।

[২৫] পৃথিবীর চাবিগুচ্ছ কথাটির অর্থ হল, দুনিয়ার প্রাচুর্য দেয়া হইবে।

২৩/৭৩. অধ্যায়ঃ দুই বা তিনজনকে একই কবরে দাফন।

১৩৪৫. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি খবর দিয়েছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) উহুদের শহীদগণের দু দুজনকে একত্র করে দাফন করেছিলেন।

২৩/৭৪. অধ্যায়ঃ যাঁরা শহীদগণকে গোসল দেয়া দরকার মনে করেন না।

১৩৪৬. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তাঁদেরকে তাঁদের রক্ত সহ দাফন কর। অর্থাৎ উহুদের যুদ্ধের দিন শহীদগণের সম্পর্কে (কথাটি বলেছিলেন) আর তিনি তাঁদের গোসলও দেননি।

২৩/৭৫. অধ্যায়ঃ প্রথমে কবরে কাকে রাখা হইবে।

আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, একদিকে ঢালু করে গর্ত করা হয় বলে লাহদ নামকরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক যালিমই মুলহিদ (ঝগড়াটে)  مُلتَحَدًا অর্থ হল পাশ কাটিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার স্থান। আর কবর সমান হলে তাকে বলা হয় যারীহ (সিন্দুক কবর)।

১৩৪৭. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উহুদের শহীদগণের দু দুজনকে একই কাপড়ে (কবরে) একত্রে দাফন করার ব্যবস্থা করে জিজ্ঞেস করিলেন। তাঁদের মধ্যে কে কুরআন সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত? যখন তাঁদের একজনের দিকে ইঙ্গিত করা হত, তখন তিনি তাঁকে প্রথম কবরে রাখতেন আর বলিতেনঃ আমি তাঁদের জন্য সাক্ষী হব। (কিয়ামাতে) তিনি তাঁদের রক্ত-মাখা অবস্থায় দাফন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তিনি তাঁদের জানাযার সালাতও আদায় করেননি। তাঁদের গোসলও দেননি।

১৩৪৮. See previous Hadith. রাবী আওযায়ী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) উহুদ যুদ্ধের শহীদগণের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিতেন, তাঁদের মাঝে কুরআন সম্পর্কে কে অধিক জ্ঞাত? কোন একজনের দিকে ইঙ্গিত করা হলে, তিনি তাঁকে তাহাঁর সঙ্গীর পূর্বে কবরে রাখতেন। জাবির (রাদি.) বলেন, আমার পিতা ও চাচাকে একখানি পশমের তৈরি নক্‌শা করা কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল।

আর সুলাইমান ইবনু কাসীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমার নিকট এমন এক ব্যক্তি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, যিনি জাবির (রাদি.) হইতে শুনেছেন।

২৩/৭৬. অধ্যায়ঃ কবরের উপরে ইয্‌খির বা অন্য কোন প্রকারের ঘাস দেয়া।

১৩৪৯. ইবনু আব্বাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ, তাআলা মক্কাকে হারাম (সম্মানিত বা নিষিদ্ধ এলাকা) সাব্যস্ত করিয়াছেন। আমার পূর্বে তা, কারো জন্য হালাল (বৈধ ও উন্মুক্ত এলাকা) ছিল না এবং আমার পরেও কারো জন্য তা হালাল হইবে না। আমার জন্য একটি দিনের (মক্কা বিজয়ের দিন) কিছু সময় হালাল করা হয়েছিল। কাজেই তার ঘাস উৎপাটন করা যাবে না, তার গাছ কাটা যাবে না, শিকারকে তাড়িয়ে দেয়া যাবে না। সেখানে পড়ে থাকা (হারানো) বস্তু উঠিয়ে নেয়া যাবে না, তবে হারানো প্রাপ্তির ঘোষণা প্রদানকারীর জন্য (অনুমতি থাকবে)। তখন আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, তবে ইয্‌খির ঘাস আমাদের স্বর্ণকারদের জন্য এবং আমাদের কবরগুলোর জন্য প্রয়োজন। তখন তিনি বললেনঃ ইয্‌খির ব্যতীত। আবু হুরাইরা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন, আমাদের কবর ও বাড়ী ঘরের জন্য। আর আবান ইবনু সালিহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সাফিয়্যা বিনত শায়বাহ (রাদি.) সুত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-কে আমি অনুরূপ বলিতে শুনিয়াছি আর মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু আব্বাস (রাদি.) সূত্রে বলেন, তাদের কর্মকার ও ঘর-বাড়ির জন্য।

২৩/৭৭ অধ্যায়ঃ কোন কারণে মৃত ব্যক্তিকে কবর বা লাহদ হইতে বের করা যাবে কি?

১৩৫০. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উবাই (মুনাফিক সর্দারকে) কবর দেয়ার পর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তার (কবরের) নিকট আসলেন এবং তিনি তাঁকে বের করার নির্দেশ দিলে তাকে (কবর হইতে) বের করা হল। তখন তিনি তাকে তাহাঁর (নিজের) দু হাঁটুর উপর রাখলেন, নিজের (মুখের) লালা (তাহাঁর উপর ফুঁকে) দিলেন এবং নিজের জামা তাকে পরিয়ে দিলেন। আল্লাহ সমধিক অবগত। সে আব্বাস (রাদি.)-কে একটি জামা পড়তে দিয়েছিল। আর সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর পরিধানে তখন দুটি জামা ছিল। আবদুল্লাহ (ইবনু উবাই)-এর পুত্র (আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার (পবিত্র) দেহের সাথে জড়িয়ে থাকা জামাটি আমার পিতাকে পরিয়ে দিন। সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তারা মনে করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর জামা আবদুল্লাহ (ইবনু উবাই)-কে পরিয়ে দিয়েছিলেন, তার কৃত (ইহসানের) বিনিময় স্বরূপ।

১৩৫১. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন উহুদ যুদ্ধের সময় উপস্থিত হল, তখন রাতের বেলা আমার পিতা আমাকে ডেকে বলিলেন, আমার মনে হয় যে, নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবীগনের মধ্যে যাঁরা প্রথমে শহীদ হইবেন, আমি তাঁদের মধ্যে একজন হব। আর আমি আমার (মৃত্যুর) পরে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ব্যতীত তোমার চেয়ে অধিকতর প্রিয় কাউকে রেখে যাচ্ছি না। আমার যিম্মায় কর্য রয়েছে। তুমি তা পরিশোধ করিবে। তোমার বোনদের ব্যাপারে সদুপদেশ গ্রহণ করিবে। জাবির (রাদি.) বলেন, পরদিন সকাল হলে (আমরা দেখলাম যে) তিনিই প্রথম শহীদ। তাহাঁর কবরে তাহাঁর আর একজন সাহাবীকে তাহাঁর সাথে দাফন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে অন্য একজনের সাথে (একই) কবরে তাঁকে রাখা আমার মনে ভাল লাগল না। তাই ছয় মাস পর আমি তাঁকে (কবর হইতে) বের করলাম এবং দেখলাম যে, তাহাঁর কানে সামান্য চিহ্ন ব্যতীত তিনি সেই দিনের মতই (অক্ষত ও অবিকৃত) রয়েছেন, যে দিন তাঁকে (কবরে) রেখেছিলাম।

১৩৫২. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার পিতার সাথে আরেকজন শহীদকে দাফন করা হলে আমার মন তাতে তুষ্ট হইতে পারল না। অবশেষে আমি তাঁকে (কবর হইতে) বের করলাম এবং একটি পৃথক কবরে তাঁকে দাফন করলাম।

২৩/৭৮. অধ্যায়ঃ কবরকে লাহদ ও শাক্‌ক বানানো।

১৩৫৩. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) উহুদের শহীদগণের দু দুজনকে একত্র করে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে কুরআন সম্পর্কে কে অধিক জ্ঞাত? দুজনের কোন একজনের দিকে ইঙ্গিত করা হলে প্রথমে তাঁকে কবরে রাখতেন। অতঃপর ইরশাদ করেনঃ কিয়ামাতের দিন আমি তাঁদের জন্য সাক্ষী হব। তিনি রক্ত-মাখা অবস্থায়ই তাঁদের দাফন করার আদেশ করিলেন এবং তাঁদের গোসলও দেননি।

২৩/৭৯. অধ্যায়ঃ কোন বালক ইসলাম গ্রহণ করে মারা গেলে তার জন্য (জানাযার) সালাত আদায় করা যাবে কি? বালকের নিকট ইসলামের দাওয়াত দেয়া যাবে কি?

হাসান, শুরাইহ, ইবরাহীম ও কাতাদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, পিতা-মাতার কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে সন্তান মুসলিম ব্যক্তির সঙ্গে থাকবে। ইবনু আব্বাস (রাদি.) তাহাঁর মায়ের সাথে মুস্‌তাযআফীন (দুর্বল ও নির্যাতিত জামাআত) –এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তাঁকে তাহাঁর পিতা (আব্বাস)- এর সাথে তার কাওমের (মুশরিকদের) ধর্মে গণ্য করা হতো না। নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করেছেনঃ ইসলাম বিজয়ী হয়, বিজিত হয় না।

১৩৫৪. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উমর (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে একটি দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ইবনু সাইয়াদ-এর (বাড়ির) দিকে গেলেন। তাঁরা তাঁকে (ইবনু সাইয়াদকে) বনূ মাগালা দুর্গের পাশে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলাধূলারত পেলেন। তখন ইবনু সাইয়াদ বালিগ হবার নিকটবর্তী হয়েছিল। সে নাবী (সাঃআঃ)-এর আগমন অনুভব করার পূর্বেই নাবী (সাঃআঃ) তার হাত ধরে ফেললেন। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আমি আল্লাহর রাসুল? ইবনু সাইয়াদ তাহাঁর দিকে দৃষ্টি করে বলিল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মীদের রাসুল। অতঃপর সে নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিল, আপনি কি সাক্ষ্য দিবেন যে, আমি আল্লাহর রাসুল? তখন নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ আমি আল্লাহর প্রতি এবং তাহাঁর রাসুলগণের প্রতি ঈমান এনেছি। অতঃপর তিনি তাকে (ইবনু সাইয়াদকে) জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কী দেখে থাক? ইবনু সাইয়াদ বলিল, আমার নিকট সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী আগমন করে থাকে। নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করলেনঃ ব্যাপারটি তোমার নিকট বিভ্রান্তিকর করা হয়েছে। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) তাকে বললেনঃ আমি একটি বিষয় তোমার হইতে (আমার মনের মধ্যে) গোপন রেখেছি। বলতো সেটি কী? ইবনু সাইয়াদ বলিল, তা হচ্ছে (الدُّخُّ) আদ্-দুখখু। তখন তিনি ইরশাদ করলেনঃ তুমি লাঞ্ছিত হও ! তুমি কখনো তোমার (জন্য নির্ধারিত) সীমা অতিক্রম করিতে পারবে না। তখন উমর (রাদি.) বলিলেন, আমাকে অনুমতি দিন, হে আল্লাহর রাসুল ! আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই [২৬]। নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করলেনঃ যদি সে সে-ই (অর্থাৎ মাসীহ দাজ্জাল) হয়ে থাকে, তাহলে তাকে কাবু করার ক্ষমতা তোমাকে দেয়া হইবে না। আর যদি সে-ই (দাজ্জাল) না হয়, তাহলে তাকে হত্যা করার মধ্যে তোমার কোন কল্যাণ নেই।

[২৬] ইসলামী শরীয়ত নির্ধারিত শাস্তির হকদার কেউ হলে একমাত্র ক্ষমতাসীন দায়িত্বশীল ব্যক্তিই পারবে তার উপর তা প্রয়োগ করিতে। অন্য কারো অধিকার নেই। বর্ণিত হাদীসে উমর (রাদি.)-এর অনুমতি চাওয়াতে এটাই প্রমাণিত হয়।

১৩৫৫. See previous Hadith.রাবী সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমি ইবনু উমর (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি, অতঃপর রাসুল (সাঃআঃ) এবং উবাই ইবনু কাব (রাদি.) ঐ খেজুরের বাগানের দিকে গমন করিলেন যেখানে ইবনু সাইয়াদ ছিল। ইবনু সাইয়াদ তাকে দেখে ফেলার পূর্বেই ইবনু সাইয়াদের কিছু কথা তিনি শুনে নিতে চাচ্ছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) তাকে একটি চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখলেন। যার ভিতর হইতে তার গুনগুন আওয়াজ শোনা [১] যাচ্ছিল। ইবনু সাইয়াদের মা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে দেখিতে পেল যে, তিনি খেজুর (গাছের) কাণ্ডের আড়ালে আত্মগোপন করে চলছেন। সে তখন ইবনু সাইয়াদকে ডেকে বলিল, ও সাফ ! (এটি ইবনু সাইয়াদের ডাক নাম) এই যে মুহাম্মাদ ! তখন ইবনু সাইয়াদ লাফিয়ে উঠল। নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করলেনঃ সে (ইবনু সাইয়াদের মা) তাকে (যথাবস্থায়) থাকতে দিলে (ব্যাপারটি) স্পষ্ট হয়ে যেত।

শুআইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর হাদীসে (فَرَفَضَهُ) বলেন, এবং সন্দেহের সাথে বলেন, (رَمْرَمَةُ) অথবা (زَمْزَمَةُ) এবং উকাইল (র.) বলেছেন, (رَمْزَةُ) আর মামার বলেছেন, (আরবী)।

[১] (رَمْرَمَة، زَمْزَمَة، رَمْزَةُ، رَمْزَمَةُ ) শব্দগুলো সমার্থকবোধক। অর্থাৎ অষ্পষ্ট ও গুনগুন শব্দ।

১৩৫৬. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ইয়াহূদী বালক নাবী (সাঃআঃ)-এর খিদমাত করত, সে একবার অসুস্থ হয়ে পড়লে নাবী (সাঃআঃ) তাকে দেখার জন্য আসলেন। তিনি তার মাথার নিকট বসে তাকে বললেনঃ তুমি ইসলাম গ্রহণ কর, সে তখন তার পিতার দিকে তাকাল, সে তার নিকটেই ছিল, পিতা তাকে বলিল, আবুল কাসেম (নাবী (সাঃআঃ)-এর কুনিয়াত) এর কথা মেনে নাও, তখন সে ইসলাম গ্রহণ করিল। নাবী (সাঃআঃ) সেখান হইতে বের হয়ে যাওয়ার সময় ইরশাদ করলেনঃ যাবতীয় প্রশংসা সে আল্লাহর, যিনি তাকে জাহান্নাম হইতে মুক্তি দিলেন।

১৩৫৭. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এবং আমার মা (লুবাবাহ বিনত হারিস) মুসতাযআফীন (দুর্বল, অসহায়) এর অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। আমি ছিলাম না-বালিগ শিশুদের মধ্যে আর আমার মা ছিলেন মহিলাদের মধ্যে।

১৩৫৮. শুআইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, নবজাত শিশু মারা গেলে তাঁদের প্রত্যেকের জানাযার সালাত আদায় করা হইবে। যদিও সে কোন ভ্রষ্টা মায়ের সন্তানও হয়। এ কারণে যে, সে সন্তানটি ইসলামী ফিতরাহর (তাওহীদ) এর উপর জন্মলাভ করেছে। তার পিতামাতা ইসলামের দাবীদার হোক বা বিশেষভাবে তার পিতা। যদিও তার মা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের অনুসারী হয়। নবজাত শিশু সরবে কেঁদে থাকলে তার জানাযার সালাত আদায় করা হইবে। আর যে শিশু না কাঁদবে, তার জানাযার সালাত আদায় করা হইবে না। কেননা, সে অপূর্ণাঙ্গ সন্তান। কারণ, আবু হুরাইরা (রাদি.) হাদীস বর্ণনা করিতেন যে, নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করেছেনঃ প্রতিটি নবজাতকই জন্মলাভ করে ফিতরাতের (তাওহীদের) উপর। অতঃপর তার মা-বাপ তাকে ইয়াহূদী বা খ্রিস্টান বা অগ্নিপূজারী রূপে গড়ে তোলে। যেমন, চতুষ্পদ পশু নিখুঁত বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাদের মধ্যে কোন কান কাটা দেখিতে পাও? (বরং মানুষরাই তার নাক কান কেটে দিয়ে বা ছিদ্র করে তাকে বিকৃত করে থাকে। অনুরূপ ইসলামের ফিতরাহতে ভূমিষ্ট সন্তানকে মা-বাপ তাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও জীবন ধারায় প্রবাহিত করে ভ্রান্ত ধর্মী বানিয়ে ফেলে) পড়ে আবু হুরাইরা (রাদি.) তিলাওয়াত করলেনঃ

(فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا)

“আল্লাহর দেয়া ফিতরাতের অনুসরন কর যে ফিতরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করিয়াছেন -“

(সুরা রূমঃ ৩০)

১৩৫৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইরশাদ করেছেনঃ প্রত্যেক নবজাতকই ফিতরাতের উপর জন্মলাভ করে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহূদী, নাসারা বা মাজূসী (অগ্নিপূজারী) রূপে গড়ে তোলে। যেমন, চতুষ্পদ পশু একটি পূর্নাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে কোন (জন্মগত) কানকাটা দেখিতে পাও? অতঃপর আবু হুরাইরা তিলাওয়াত করলেনঃ

(فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ)

(যার অর্থ) “আল্লাহর দেয়া ফিতরাতের অনুসরণ কর, যে ফিতরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করিয়াছেন, এটাই সরল সুদৃঢ় দ্বীন”- (সুরা রুমঃ ৩০)।

২৩/৮০. অধ্যায়ঃ মৃত্যুকালে কোন মুশরিক ব্যক্তি লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু বললে।

১৩৬০. সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু তালিব এর মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তার নিকট আসলেন। তিনি সেখানে আবু জাহল ইবনু হিশাম ও আবদুল্লাহ ইবনু আবু উমায়্যা ইবনু মুগীরাকে উপস্থিত দেখিতে পেলেন। (রাবী বলেন) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আবু তালিবকে লক্ষ্য করে বললেনঃ চাচাজান!

اَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু

কালিমা পাঠ করুন, তাহলে এর অসীলায় আমি আল্লাহর সমীপে আপনার জন্য সাক্ষী দিতে পারব। আবু জাহল ও আবদুল্লাহ ইবনু আবু উমায়্যা বলে উঠল, ওহে আবু তালিব! তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম হইতে বিমুখ হইবে? অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তার নিকট কালিমাহ পেশ করিতে থাকেন, আর তারা দুজনও তাদের উক্তি পুনরাবৃত্তি করিতে থাকে। অবশেষে আবু তালিব তাদের সামনে শেষ কথাটি যা বলিল, তা এই যে, সে আবদুল মুত্তালিবের ধর্মের উপর অবিচল রয়েছে, সে লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু বলিতে অস্বীকার করিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! তবুও আমি আপনার জন্য মাগফিরাত কামনা করিতে থাকব, যতক্ষণ না আমাকে তা হইতে নিষেধ করা হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা নাযিল করেনঃ – (নাবীর জন্য সঙ্গত নয়……)

مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ.

. (সুরা আত-তাওবাহ্ঃ ১১৩)।

২৩/৮১. অধ্যায়ঃ কবরের উপর খেজুরের ডাল গেড়ে দেয়া।

বুরাইদা আসলামী (রাদি.) তাহাঁর কবরে দুটি খেজুরের ডাল পুঁতে দেয়ার ওয়াসিয়াত করেছিলেন। আবদূর রাহমান (ইবনু আবু বক্‌র) (রাদি.) –এর কবরের উপরে একটি তাঁবু দেখিতে পেয়ে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) বলিলেন, হে বালক! ওটা অপসারিত কর, কেননা একমাত্র তার আমলই তাকে ছায়া দিতে পারে। খারিজ ইবনু যায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আমার মনে আছে, উসমান (রাদি.) –এর খিলাফাতকালে যখন আমরা তরুণ ছিলাম তখন উসমান ইবনু মাজউন (রাদি.) –এর কবর লাফিয়ে অতিক্রমকারীকেই আমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ লম্ফবিদ মনে করা হত। আর উসমান ইবনু হাকীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, খারিজাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমার হাত ধরে একটি কবরের উপর বসিয়ে দিলেন এবং তার চাচা ইয়াযীদ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে আমাকে অবহিত করেন যে, তিনি বলেন, কবরের উপরে বসা মাকরূহ তা ঐব্যক্তির জন্য যে, যেখানে বসে পেশাব পায়খানা করে। আর নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, ইবনু উমর (রাদি.) কবরের উপরে বসতেন।

১৩৬১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এমন দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যে কবর দুটির বাসিন্দাদের উপর আযাব দেয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বললেনঃ এদের দুজনকে আযাব দেয়া হচ্ছে অথচ তাদের এমন গুনাহর জন্য আযাব দেয়া হচ্ছে না (যা হইতে বিরত থাকা) দুরূহ ছিল। তাদের একজন পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না, আর অপরজন চোগলখুরী করে বেড়াত। অতঃপর তিনি খেজুরের একটি তাজা ডাল নিয়ে তা দুভাগে বিভক্ত করিলেন, অতঃপর প্রতিটি কবরে একটি করে পুঁতে দিলেন। সাহাবীগন জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন এরূপ করিলেন? তিনি বললেনঃ ডাল দুটি না শুকানো পর্যন্ত আশা করি তাদের আযাব হালকা করা হইবে।

২৩/৮২. অধ্যায়ঃ কবরের পাশে কোন মুহাদ্দিসের নসীহত পেশ করা আর তার সহচরদের তার আশে পাশে বসা।

(মহান আল্লাহর বাণীঃ)

يَخْرُجُونَ مِنَ الأجْدَاثِ

তারা কবর থেকে বের হইবে। (সুরা মাআরিজঃ ৪৩) الا جدث অর্খ কবরসমূহ। (এবং সুরা ইনফিতারে) بُعْثِرَتْ অর্থ উন্মোচিত হইবে بَعْثَرْتُ حَوْضِىْ অর্থ আমি (হাওযের) নিচের অংশকে উপরে তুলে দিয়েছি। الْاِيْفَاضُ অর্থ দ্রুত গতিতে চলা। আমাশ (র.) اِلَى نَصْبِ يُوْضُوْنَ اِلَى شَى مَنْصُوْبٍ يَسْتَبِقُنَ اِليْهِ এর কিরাআত হলো অর্থ তারা স্থাপিত কোন বস্তুর দিকে দ্রুত গতিতে চলে। আর النُّصْبُ একবচন আর النَّصْبُ মাস্দার-ক্রিয়া মূল। (সুরা কাফ এর ৪২ আয়াতে) يَوْمَ الْخُرُوْجِ বেরিয়ে আসার দিন। অর্থাৎ مِنَ الْقُبُوْرِ কবর থেকে। (আর সুরা আম্বিয়ার ৯৬ আয়াতে) يَنْسِلُوْنَ অর্থ বের হয়ে ছুটে আসবে

১৩৬২. আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা বাকীউল গারক্বাদ (কবরস্থানে) এক জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। নাবী (সাঃআঃ) আমাদের নিকট আগমন করিলেন। তিনি উপবেশন করলে আমরাও তাহাঁর চারদিকে বসে পড়লাম। তাহাঁর হাতে একটি ছড়ি ছিল। তিনি নীচের দিকে তাকিয়ে তাহাঁর ছড়িটি দ্বারা মাটি খুঁড়তে লাগলেন। অতঃপর বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, অথবা বললেনঃ এমন কোন সৃষ্ট প্রাণী নেই, যার জন্য জান্নাত ও জাহান্নামে জায়গা নির্ধারিত করে দেয়া হয়নি আর এ কথা লিখে দেয়া হয়নি যে, সে দুর্ভাগা হইবে কিংবা ভাগ্যবান। তখন এক ব্যক্তি আরয করিল, হে আল্লাহর রাসুল! তা হলে কি আমরা আমাদের ভাগ্যলিপির উপর ভরসা করে আমল করা ছেড়ে দিব না? কেননা, আমাদের মধ্যে যারা ভাগ্যবান তারা অচিরেই ভাগ্যবানদের আমলের দিকে ধাবিত হইবে। আর যারা দুর্ভাগা তারা অচিরেই দুর্ভাগাদের আমলের দিকে ধাবিত হইবে। তিনি বললেনঃ যারা ভাগ্যবান, তাদের জন্য সৌভাগ্যের আমল সহজ করে দেয়া হয় আর ভাগ্যাহতদের জন্য দুর্ভাগ্যের আমল সহজ করে দেয়া হয়। অতঃপর তিনি এ আয়াতে তিলাওয়াত করলেনঃ فَاَمَّا مَنْ اَعْطى

– وَاتقى الاية

“কাজেই যে দান করে এবং তাক্‌ওয়া অবলম্বন করে আর ভাল কথাকে সত্য বলে বুঝেছে” –

(সুরা লাইলঃ ৫)

২৩/৮৩. অধ্যায়ঃ আত্মহত্যাকারী সম্পর্কে যা কিছু এসেছে।

১৩৬৩. সাবিত ইবনু যাহহাক (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের (অনুসারী হবার) ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা হলফ করে সে যেমন বলিল, তেমনই হইবে আর যে ব্যক্তি কোন ধারালো লোহা দিয়ে আত্মহত্যা করে, তাকে তা দিয়েই জাহান্নামে আযাব দেয়া হইবে।

১৩৬৪. See previous Hadith হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

জারীর ইবনু হাযিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাদের হাদীস শুনিয়েছেন হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে, তিনি বলেন, জুনদাব (রাদি.) এই মসজিদে আমাদের হাদীস শুনিয়েছেন আর তা আমরা ভুলে যাইনি এবং আমরা এ আশংকাও করিনি যে, জুনদাব (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর নামে মিথ্যা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তির (দেহে) যখম ছিল, সে আত্মহত্যা করিল। তখন আল্লাহ তাআলা বলিলেন, আমার বান্দা তার প্রাণ নিয়ে আমার সাথে তাড়াহুড়া করিল। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম। [২৭]

[২৭] এটা ধমকী স্বরূপ, কেননা কাবীরাহ গুনাহের জন্য জান্নাত হারাম হয় না বরং শিরকে আকবার ও কুফরী অবস্থায় বিনা তাওবায় মারা গেলে জান্নাত হারাম হয়।

১৩৬৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করিবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করিবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) বর্শা বিদ্ধ হইতে থাকবে।

২৩/৮৪. অধ্যায়ঃ মুনাফিকদের জন্য (জানাযার) সালাত আদায় করা এবং মুশরিকদের জন্য মাগফিরাত কামনা করা অপছন্দনীয় হওয়া।

(আবদুল্লাহ) ইবন উমর (রাদি.) নাবী করীম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বিষয়টি রেওয়ায়েত করিয়াছেন।

১৩৬৬. উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (মুনাফিক সর্দার) আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল [১] মারা গেলে জানাযার সালাতের জন্য আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে আহবান করা হল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে) দাঁড়ালে আমি দ্রুত তাহাঁর নিকট গিয়ে বসলাম, হে আল্লাহর রাসুল ! আপনি ইবনু উবাইর জানাযার সালাত আদায় করিতে যাচ্ছেন? অথচ সে অমুক অমুক দিন (আপনার শানে এবং ঈমানদারদের সম্পর্কে) এই এই কথা বলেছে। এ বলে আমি তার উক্তিগুলো গুণেগুণে পুনরাবৃত্তি করলাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মুচকি হাসি দিয়ে বলিলেন, উমর, সরে যাও ! আমি বারবার আপত্তি করলে তিনি বলিলেন, আমাকে (তার সালাত আদায় করার ব্যাপারে) ইখ্‌তিয়ার দেয়া হয়েছে। কাজেই আমি তা গ্রহণ করলাম। আমি যদি জানতাম যে, সত্তর বারের অধিক মাগফিরাত কামনা করলে তাকে মাফ করা হইবে তা হলে আমি অবশ্যই তার চেয়ে অধিক বার মাফ চাইতাম। উমর (রাদি.) বলেন, অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তার জানাযার সালাত আদায় করেন এবং ফিরে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরেই সুরা বারাআতের এ দুটি আয়াত নাযিল হলঃ

وَلَا تُصَلِّ …. مِنْهُم ماتَ اَبَدًا –

“তাদের কেউ মারা গেলে আপনি কখনো তার জানাযার সালাত আদায় করবেন না। এমতাবস্থায় যে তারা ফাসিক” (সুরা আত্তাওবাহ (৯) : ৮৪)। রাবী বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সামনে আমার ঐ দিনের দুঃসাহসিক আচরণ করায় আমি বিস্মিত হয়েছি। আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসুলই সমধিক অবগত।

[১] মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহর পিতার নাম ছিল উবাই, আত মাতার নাম ছিল সালূল, তাই তাকে ইবন উবাই ইবন সালূল বলা হত।

Comments

Leave a Reply