মৃত ব্যক্তির জন্য কান্না করা কি জায়েজ । বিলাপ নিষিদ্ধ হওয়া
মৃত ব্যক্তির জন্য কান্না করা কি জায়েজ । বিলাপ নিষিদ্ধ হওয়া >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ২৩, জানাযা, অধ্যায়ঃ (৩০-৪৫)=১৬টি
২৩/৩০. অধ্যায়ঃ স্বামী ছাড়া অন্যের জন্য স্ত্রীলোকের শোক প্রকাশ।
২৩/৩১. অধ্যায়ঃ কবর যিয়ারত।
২৩/৩২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) –এর বাণীঃ পরিবার-পরিজনের কান্নার কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়, যদি বিলাপ করা তার অভ্যাস হয়ে থাকে।
২৩/৩৩. অধ্যায়ঃ মৃতের জন্য বিলাপ করা মাকরূহ। [১৪]
২৩/৩৪. অধ্যায়ঃ
২৩/৩৫. অধ্যায়ঃ যারা জামার বুক ছিঁড়ে ফেলে তারা আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
২৩/৩৬. অধ্যায়ঃ সাদ ইবনু খাওলা (রাদি.) –এর প্রতি নাবী (সাঃআঃ) –এর দুঃখ প্রকাশ।
২৩/৩৭. অধ্যায়ঃ বিপদে মাথা মুন্ডানো নিষেধ।
২৩/৩৮.অধ্যায়ঃ যারা গাল চাপড়ায় তারা আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
২৩/৩৯. অধ্যায়ঃ বিপদের সময় হায়, ধ্বংস বলা ও জাহিলী যুগের মত চিৎকার করা নিষেধ।
২৩/৪০.অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি বিপদের সময় এমন ভাবে বসে পড়ে যে, তার মধ্যে দুঃখবোধের পরিচয় পাওয়া যায়।
২৩/৪১. অধ্যায়ঃ বিপদের সময় দুঃখ প্রকাশ না করা।
২৩/৪২. অধ্যায়ঃ মুসীবতের প্রথম অবস্থায়ই প্রকৃত সবর।
২৩/৪৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) এর বাণীঃ তোমার জন্য আমরা অবশ্যই শোকাভিভূত।
২৩/৪৪. অধ্যায়ঃ রোগাক্রান্ত ব্যক্তির নিকট কান্নাকাটি করা।
২৩/৪৫. অধ্যায়ঃ (সরবে) কাঁদা ও বিলাপ নিষিদ্ধ হওয়া এবং তাতে বাধা প্রদান করা।
২৩/৩০. অধ্যায়ঃ স্বামী ছাড়া অন্যের জন্য স্ত্রীলোকের শোক প্রকাশ।
১২৭৯. মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উম্মু আতিয়্যা (রাদি.)-এর এক পুত্রের মৃত্যু হল। তৃতীয় দিবসে তিনি হলুদ বর্ণের সুগন্ধি আনয়ন করিয়ে ব্যবহার করিলেন, আর বলিলেন, স্বামী ব্যতীত অন্য কারো জন্য তিন দিবসের বেশি শোক পালন করিতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।
১২৮০. যায়নাব বিনত আবু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন সিরিয়া হইতে আবু সুফিয়ান (রাদি.)-এর মৃত্যুর খবর পৌছল, তার তৃতীয় দিবসে উম্মু হাবীবা (রাদি.) হলুদ বর্ণের সুগন্ধি আনয়ন করিলেন এবং তাহাঁর উভয় গন্ড ও বাহুতে মথিত করিলেন। অতঃপর বলিলেন, অবশ্য আমার এর কোন প্রয়োজন ছিল না, যদি আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে এ কথা বলিতে না শুনতাম যে, স্ত্রীলোক আল্লাহ এবং ক্বিয়ামাতের দিবসের প্রতি ঈমান রাখে তার পক্ষে স্বামী ব্যতীত অন্য কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়। অবশ্য স্বামীর জন্য সে চার মাস দশ দিন শোক পালন করিবে।
১২৮১. যায়নাব বিনতু আবু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী উম্মু হাবীবা (রাদি.)-এর নিকটে গেলাম। তখন তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, যে স্ত্রীলোক আল্লাহ এবং ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে তার পক্ষে কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা বৈধ নয়। তবে স্বামীর জন্য চার মাস দশ দিন (বৈধ)।
১২৮২. See previous Hadith. যায়নাব বিনতু আবু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
অতঃপর যায়নাব বিনতু জাহশ (রাদি.)-এর ভ্রাতার মৃত্যু হলে আমি তাহাঁর নিকট গেলাম। তখন তিনি কিছু সুগন্ধি আনয়ন করিয়ে তা ব্যবহার করিলেন। অতঃপর বলিলেন, সুগন্ধি ব্যবহারের আমার কোন প্রয়োজন নেই, তবু যেহেতু আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এমন কোন স্ত্রীলোকের পক্ষে কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের অধিক শোক পালন করা বৈধ নয়। তবে স্বামীর জন্য চার মাস দশ দিন (শোক পালন করিবে)। [১২]
[১২] শোক পালনের সময় মহিলাদের সুগন্ধি ব্যবহার করা জায়িয নয়। অন্যান্য সময় তা বৈধ হলেও নিজ বাড়ীতে অবস্থানের সময়ে মাত্র। পক্ষান্তরে তাদের জন্যে বাইরে বের হওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার করা হারাম।
২৩/৩১. অধ্যায়ঃ কবর যিয়ারত।
১২৮৩. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এক মহিলার পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন, যিনি কবরের পার্শ্বে ক্রন্দন করছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি আল্লাহকে ভয় কর বং ধৈর্য ধারণ কর। মহিলাটি বলিলেন, আমার নিকট থেকে প্রস্থান করুন। আপনার উপর তো আমার মত বিপদ উপস্থিত হয়নি। তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে চিনতে পারেননি। পরে তাকে বলা হল, তিনি তো নাবী (সাঃআঃ)। তখন তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর দরজায় উপস্থিত হলেন, তাহাঁর কাছ কোন প্রহরী ছিল না। তিনি নিবেদন করিলেন, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। তিনি বললেনঃ ধৈর্য তো বিপদের প্রাথমিক অবস্থাতেই (ধারণ করিতে হয়)। [১৩]
[১৩] হাদীসটি হইতে জানা গেল, সর্বাবস্থায় মানুষকে উপদেশ দিতে হইবে। আরও জানা গেল যে, নাবী (সাঃআঃ) সাদাসিধে চলতেন। সেই সাথে আরও জানা গেল যে, না জানা ব্যক্তির ওযর গ্রহণযোগ্য।
২৩/৩২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) –এর বাণীঃ পরিবার-পরিজনের কান্নার কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়, যদি বিলাপ করা তার অভ্যাস হয়ে থাকে।
কারণ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
Uccharon: (যার অর্থ) “তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।” (তাহরীমঃ ৬)।
এবং নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকই তার নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইবে। কিন্তু তা যদি তার অভ্যাস না হয়ে থাকে তবে তার বিধান হইবে যা আয়েশা (রাদি.) ব্যক্ত করেছেনঃ
(যার অর্থ) “নিজ বোঝা বহনকারী কোন ব্যক্তি অপরের বোঝা বহন করিবে না”- (আল-আনআমঃ ১৬৪)।
আর এ হলো আল্লাহ তাআলার এ বাণীর ন্যায়
“কোন (গুনাহের) বোঝা বহনকারী ব্যক্তি যদি কাউকেও তা বহন করার আহবান জানায় তবে তা থেকে কিছুই বহন করা হইবে না- (ফাতিরঃ ১৮)।
আর বিলাপ ব্যতীত ক্রন্দনের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা হলে সে হত্যার অপরাধের অংশ প্রথম আদম সন্তান (কাবিল) এর উপর বর্তাবে। আর সেটা এ কারণে যে, সেই প্রথম ব্যক্তি যে হত্যার প্রবর্তন করেছে।
১২৮৪. উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর জনৈকা কন্যা (যায়নাব) তাহাঁর (সাঃআঃ) নিকট লোক পাঠালেন যে, আমার এক পুত্র মরণাপন্ন অবস্থায় রয়েছে, তাই আপনি আমাদের নিকট আসুন। তিনি বলে পাঠালেন, (তাঁকে) সালাম দিবে এবং বলবেঃ আল্লাহরই অধিকারে যা কিছু তিনি নিয়ে যান আর তাহাঁরই অধিকারে যা কিছু তিনি দান করেন। তাহাঁর নিকট সকল কিছুরই একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। কাজেই সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং সওয়াবের অপেক্ষায় থাকে। তখন তিনি তাহাঁর কাছে কসম দিয়ে পাঠালেন, তিনি যেন অবশ্যই আগমন করেন। তখন তিনি দন্ডায়মান হলেন এবং তাহাঁর সাথে ছিলেন সাদ ইবনু উবাদাহ, মুআয ইবনু জাবাল, উবাই ইবনু কাব, যাইদ ইবনু সাবিত (রাদি.) এবং আরও কয়েকজন। তখন শিশুটিকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে তুলে দেয়া হল। তখন সে ছটফট করছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা ধারনা যে, তিনি এ কথা বলেছিলেন, যেন তার শ্বাস মশকের মত (শব্দ হচ্ছিল)। আর নাবী (সাঃআঃ)-এর দু চক্ষু বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। সাদ (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! একি? তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে রহমত, যা আল্লাহ তাহাঁর বান্দার অন্তরে গচ্ছিত রেখেছেন। আর আল্লাহ তো তাহাঁর দয়ালু বান্দাদের প্রতিই দয়া করেন।
১২৮৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর এক কন্যা [উম্মু কুলসুম (রাদি.)]-এর জানাযায় উপস্থিত হলাম। আল্লাহর রাসুল কবরের পার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। আনাস (রাদি.) বলেন, তখন আমি তাহাঁর চক্ষু হইতে অশ্রু ঝরতে দেখলাম। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে আজ রাতে স্ত্রী মিলন করোনি? আবু তালহা (রাদি.) বলিলেন, আমি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তা হলে তুমি (কবরে) অবতরণ কর। রাবী বলেন, তখন তিনি আবু তালহা (রাদি.) তাহাঁর কবরে অবতরণ করিলেন।
১২৮৬. আবদুল্লাহ ইবনু উবাইদুল্লাহ ইবনু আবু মুলাইকা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মক্কায় উসমান (রাদি.)-এর জনৈকা কন্যার মৃত্যু হল। আমরা সেখানে (জানাযায়) অংশগ্রহন করার জন্য গেলাম। ইবনু উমর এবং ইবনু আব্বাস (রাদি.) -ও সেখানে উপস্থিত হলেন। আমি তাঁদের দুজনের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলাম, অথবা তিনি বলেছেন, আমি তাঁদের একজনের পার্শ্বে গিয়ে উপবেশন করলাম, পরে অন্যজন আগমন করে আমার পার্শ্বে উপবেশন করিলেন। (ক্রন্দনের শব্দ শুনে) ইবনু উমর (রাদি.) আমর ইবনু উসমানকে বলিলেন, তুমি কেন ক্রন্দন করিতে নিষেধ করছ না? কেননা, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিজনদের কান্নার কারণে আযাব দেয়া হয়।
১২৮৭. See previous Hadith. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তখন ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, উমর (রাদি.) -ও এমন কিছু বলিতেন। অতঃপর ইবনু আব্বাস (রাদি.) বর্ণনা করিলেন, উমর (রাদি.)-এর সাথে মক্কা থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলাম। আমরা বাইদা (নামক স্থানে) উপস্থিত হলে উমর (রাদি.) বাবলা বৃক্ষের ছায়ায় একটি কাফিলা দর্শন করতঃ আমাকে বলিলেন, গিয়ে দেখো এ কাফিলা কার? ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, আমি গিয়ে দেখলাম সেখানে সুহাইব (রাদি.) আছেন। আমি তাঁকে তা অবহিত করলাম। তিনি বলিলেন, তাঁকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো। আমি সুহাইব (রাদি.)-এর নিকট আবার গেলাম এবং বললাম, চলুন, আমীরুল মুমিনীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করুন। অতঃপর যখন উমর (রাদি.) (ঘাতকের আঘাতে) আহত হলেন, তখন সুহাইব (রাদি.) তাহাঁর কাছে আগমন করতঃ এ বলে ক্রন্দন করিতে লাগলেন, হায় আমার ভাই! হায় আমার বন্ধু! এতে উমর (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, তুমি আমার জন্য ক্রন্দন করছো? অথচ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তির জন্য তার আপন জনের কোন কোন কান্নার কারণে অবশ্যই তাকে আযাব দেয়া হয়।
১২৮৮. See previous Hadith. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, উমর (রাদি.)-এর মৃত্যুর পর আয়েশা (রাদি.)-এর নিকট আমি উমর (রাদি.)-এর এ উক্তি উল্লেখ করলাম। তিনি বলিলেন, আল্লাহ উমর (রাদি.)-কে রহম করুন। আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এ কথা বলেননি যে, আল্লাহ ঈমানদার (মৃত) ব্যক্তিকে তার পরিজনের কান্নার কারণে আযাব দিবেন। তবে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা কাফিরদের আযাব বাড়িয়ে দেন তার পরিজনের কান্নার কারণে। অতঃপর আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, (এ ব্যাপারে) আল্লাহর কুরআনই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। (ইরশাদ হয়েছে) :
বোঝা বহনকারী কোন ব্যক্তি অপরের বোঝা বহন করিবে না- (আনআম ১৬৪)।
তখন ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহই (বান্দাকে) হাসান এবং কাঁদান করান। রাবী ইবনু আবু মুলাইকা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আল্লাহর কসম! (এ কথা শুনে) ইবনু উমর কোন মন্তব্য করিলেন না।
১২৮৯. নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এক ইয়াহুদী স্ত্রীলোকের (কবরের) পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যার পরিবারের লোকেরা তার জন্য ক্রন্দন করছিল। তখন তিনি বললেনঃ তারা তো তার জন্য ক্রন্দন করছে। অথচ তাকে কবরে আযাব দেয়া হচ্ছে।
১২৯০. আবু বুরদার পিতা (আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন উমর (রাদি.) আহত হলেন, তখন সুহাইব (রাদি.) হায়! আমার ভাই! বলিতে লাগলেন। উমর (রাদি.) বলিলেন, তুমি কি অবহিত নও যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ জীবিতদের কান্নার কারণে অবশ্যই মৃতদের আযাব দেয়া হয়?
২৩/৩৩. অধ্যায়ঃ মৃতের জন্য বিলাপ করা মাকরূহ। [১৪]
উমর (রাদি.) বলেন, আবু সুলাইমান (খালিদ ইবন ওয়ালীদ (রাদি.)-এর জন্য) তাহাঁর (পরিবার পরিজনকে) কাঁদতে দাও । যতক্ষণ نقع (নাক্) কিংবা لقلقة (লাকলাকা) না হয় । নাক্ হল, মাথায় মাটি নিক্ষেপ, আর লাকলাকা হল, চিৎকার ।
[১৪] মৃত ব্যক্তির জন্য আত্মীয়দের যা করণীয়ঃ
(১) ধৈর্য ধারণ করা ও তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকা ও
إنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন
বলা। (সুরা আল-বাক্বারাহ ১৫৫-১৫৭)
(২) তার জন্য দুআ করা ও তার সামনে উত্তম কথা বলা।
(৩) মৃত্যু সংবাদ দিয়ে মানুষকে এ কথা বলা যে, তোমরা মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর।
(৪) যথাশীঘ্র তার জানাযা ও দাফনের ব্যবস্থা করা।
(৫) মৃতের ঋণ থাকলে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করা।
মৃত্যুর পর মানুষ যে সব কাজের জন্য উপকৃত হবেঃ মানুষ মারা গেলে তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় তিনটি আমল ব্যতীতঃ (১) সে নিজে বা তার পক্ষ থেকে সাদাকায়ে জারিয়া। (২) ইল্ম যার দ্বারা উপকার সাধিত হয়। (৩) সৎ সন্তান যে তার জন্য দুআ করিতে থাকে। (মুসলিম)
মৃতের জন্য তার কবরে একাকীভাবে দুহাত তুলে দুআ করা জায়িয। [ আয়েশা (রাদি.)-এর হাদীস]
মসজিদ, মাদরাসাহ, মুসাফিরখানা প্রতিষ্ঠা, রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণ, কূপ, খাল, বিল, নহর খনন, কুরআন-হাদীসের কিতাবাদি ক্রয় করে প্রদান এসব কাজ সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত।
১২৯১. মুগীরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমার প্রতি মিথ্যারোপ করা অন্য কারো প্রতি মিথ্যারোপ করার মত নয়। যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন অবশ্যই তার ঠিকানা জাহান্নামে করে নেয়। [মুগীরা (রাদি.) আরও বলেছেন,] আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে আরও বলিতে শুনিয়াছি, যে (মৃত) ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা হয়, তাকে বিলাপকৃত বিষয়ের উপর আযাব দেয়া হইবে।
১২৯২. উমর (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য কৃত বিলাপের বিষয়ের উপর কবরে শাস্তি দেয়া হয়। আবদুল আলা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ……কাতাদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনায় আবদান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন। আদম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শুবাহ (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন যে, মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য জীবিতদের কান্নার কারণে আযাব দেয়া হয়।
২৩/৩৪. অধ্যায়ঃ
১২৯৩. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উহুদের দিন আমার পিতাকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্তিত অবস্থায় নিয়ে এসে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সামনে রাখা হল। তখন একখানি বস্ত্র দ্বারা তাঁকে আবৃত রাখা হয়েছিল। আমি তাহাঁর উপর হইতে আবরণ উন্মোচন করেতে আসলে আমার কওমের লোকেরা আমাকে নিষেধ করিল। পুনরায় আমি আবরণ উন্মুক্ত করিতে থাকলে আমার কওমের লোকেরা (আবার) আমাকে নিষেধ করিল। পরে আল্লাহর রাসুল(সাঃআঃ)-এর নির্দেশে তাঁকে উঠিয়ে নেয়া হল। তখন তিনি (রাসুল (সাঃআঃ) ) এক ক্রন্দনকারিণীর শব্দ শুনে জিজ্ঞেস করিলেন, এ কে? লোকেরা বলিল, আমরের মেয়ে অথবা (তারা বলিল,) আমরের বোন। তিনি বলিলেন, ক্রন্দন করছো কেন? অথবা বলিলেন, ক্রন্দন করো না। কেননা, তাঁকে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তাঁদের পক্ষ বিস্তার করে তাঁকে ছায়া দিয়ে রেখেছিলেন।
২৩/৩৫. অধ্যায়ঃ যারা জামার বুক ছিঁড়ে ফেলে তারা আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
১২৯৪. আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যারা (মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গন্ডে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে বং জাহিলী যুগের মত চিৎকার দেয়, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।
২৩/৩৬. অধ্যায়ঃ সাদ ইবনু খাওলা (রাদি.) –এর প্রতি নাবী (সাঃআঃ) –এর দুঃখ প্রকাশ।
১২৯৫. সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জে একটি কঠিন রোগে আমি আক্রান্ত হলে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমার খোঁজ খবর নেয়ার জন্য আসতেন। একদা আমি তাহাঁর কাছে নিবেদন করলাম, আমার রোগ চরমে পৌঁছেছে আর আমি সম্পদশালী। একমাত্র কন্যা ছাড়া কেউ আমার উত্তরাধিকারী নেই। তবে আমি কি আমার সম্পদের দু তৃতীয়াংশ সদকা করিতে পারি? তিনি বলিলেন, না। আমি আবার নিবেদন করলাম, তাহলে অর্ধেক। তিনি বলিলেন, না। অতঃপর তিনি বলিলেন, এক তৃতীয়াংশ আর এক তৃতীয়াংশও বিরাট পরিমাণ অথবা অধিক। তোমরা ওয়ারিসদের অভাবমুক্ত রেখে যাওয়া, তাদের খালি হাতে পরমুখাপেক্ষী অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। [১৫] আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তুমি যে কোন ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার বিনিময়ে প্রদান করা হইবে। এমনকি যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে (তারও প্রতিদান পাবে)। আমি নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! (আফসোস) আমি আমার সাথীদের হইতে পিছনে থেকে যাব? তিনি বলিলেন, তুমি যদি পিছনে থেকে নেক আমল করিতে থাক, তাহলে তাতে তোমার মর্যাদা ও উন্নতি বৃদ্ধিই পেতে থাকবে। তাছাড়া, সম্ভবত, তুমি পিছনে (থেকে যাবে)। যার ফলে তোমার দ্বারা অনেক কওম উপকার লাভ করিবে। আর অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। হে আল্লাহ! আমার সাহাবীগনের হিজরত বলবৎ রাখুন। পশ্চাতে ফিরিয়ে দিবেন না। কিন্তু আফসোস! সাদ ইবনু খাওলার জন্য (এ বলে) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর জন্য শোক প্রকাশ করছিলেন, যেহেতু মক্কায় তাহাঁর মৃত্যু হয়েছিল।
[১৫] বর্তমান সমাজে কিছু অতি পরহেজগার লোক দেখা যায় যারা নিজেদের ওয়ারিসদের বঞ্চিত করে মালের সিংহভাগ দান করে থাকেন, কেউ বা মেয়েদের বঞ্চিত করেন আবার কেউ বা সমাবেশ করে লিখে দিয়ে যান তাদেরকে এ হাদীস থেকে শিক্ষা নেয়া দরকার।
২৩/৩৭. অধ্যায়ঃ বিপদে মাথা মুন্ডানো নিষেধ।
১২৯৬. আবু বুরদা ইবনু আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু মূসা আশআরী (রাদি.) কঠিন রোগে আক্রান্ত হলেন। এমনকি তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। তখন তাহাঁর মাথা তাহাঁর পরিবারভুক্ত কোন এক মহিলার কোলে ছিল। তিনি তাকে কোন জবাব দিতে পারছিলেন না। জ্ঞান ফিরে পেলে তিনি বলিলেন, সে সব লোকের সঙ্গে আমি সম্পর্ক রাখিনা যাদের সাথে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সম্পর্ক ছিন্ন করিয়াছেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সে সব নারীর সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা প্রকাশ করিয়াছেন- যারা চিৎকার করে ক্রন্দন করে, যারা মস্তক মুন্ডন করে এবং যারা জামা কাপড় ছিন্ন করে।
২৩/৩৮.অধ্যায়ঃ যারা গাল চাপড়ায় তারা আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
১২৯৭. আবদুল্লাহ ইবনূ মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করেছেনঃ যারা শোকে গণ্ডে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে ও জাহিলী যুগের মত চিৎকার দেয়, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।
২৩/৩৯. অধ্যায়ঃ বিপদের সময় হায়, ধ্বংস বলা ও জাহিলী যুগের মত চিৎকার করা নিষেধ।
১২৯৮. আব্দুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এরশাদ করেছেনঃ যারা শোকে গণ্ডে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে ও জাহিলী যুগের মত চিৎকার দেয়, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।
২৩/৪০.অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি বিপদের সময় এমন ভাবে বসে পড়ে যে, তার মধ্যে দুঃখবোধের পরিচয় পাওয়া যায়।
১২৯৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন (মুতা-র যুদ্ধ ক্ষেত্র হইতে) নাবী (সাঃআঃ)-এর খিদমতে (যায়দ) ইবনূ হারিসা, জাফর ও ইবনু রাওয়াহা (রাদি.)-এর শাহাদাতের খবর পৌঁছল, তখন তিনি (এমনভাবে) বসে পড়লেন যে, তাহাঁর মধ্যে দুঃখের চিহ্ন ফুটে উঠেছিল। আমি [আয়েশা (রাদি.)] দরজার ফাঁক দিয়ে তা প্রত্যক্ষ করছিলাম। এক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়ে জাফর (রাদি.)-এর পরিবারের মহিলাদের কান্নাকাটির কথা উল্লেখ করিলেন। নাবী (সাঃআঃ) ঐ ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন তাদেরকে (কান্নাকাটি করিতে) নিষেধ করেন, লোকটি চলে গেল এবং দ্বিতীয়বার এসে (বলিল) তারা তার কথা মানেনি। তিনি ইরশাদ করলেনঃ তাঁদেরকে নিষেধ করো। ঐ ব্যক্তি তৃতীয়বার এসে বলিলেন, আল্লাহর কসম! সে আল্লাহর রাসুল! তাঁরা আমাদের হার মানিয়েছে। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমার মনে হয়, তখন নাবী (সাঃআঃ) বিরক্তির সাথে বললেনঃ তাহলে তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করো। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ তোমার নাকে ধূলি মিলিয়ে দেন। [১] তুমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নির্দেশ পালন করিতে পারনি। অথচ তুমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বিরক্ত করিতেও দ্বিধা করোনি।
[১] أَرغَمَ اللهُ : আরবী ব্যবহারে বাক্যটি তোমাকে অপছন্দনীয় বিষয়ের সম্মুখীন করুন ও তোমাকে লজ্জিত, অপমানিত করুন, অর্থে ব্যবহৃত।
১৩০০. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (বীর-ই মাউনার ঘটনায়) ক্বারি (সাহাবীগনের) শাহাদাতের পর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (ফজরের সালাতে) এক মাস যাবত কুনুত-ই নাযিলা [১] পাঠ করেছিলেন। (বর্ণনাকারী বলেন) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে আমি আর কখনো এর চেয়ে অধিক শোকাভিভূত হইতে দেখিনি।
[২] কুনূত-ই-নাযিলাঃ মুসলমানদের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় সার্বিক বিপদকালে ফজরের সালাতে দ্বিতীয় রাকাআতের রুকূর পর দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেব উচ্চস্বরে বিশেষ দুআ পড়েন, (মুক্তাদীগণ আমীন, আমীন, বলিতে থাকেন) এ দুআকে কুনূত-ই-নাযিলা বলা হয়।
২৩/৪১. অধ্যায়ঃ বিপদের সময় দুঃখ প্রকাশ না করা।
মুহাম্মদ ইবনু কাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, অস্থিরতা হচ্ছে মন্দ বাক্য উচ্চারন করা, কুধারনা পোষণ করা। ইয়াকূব আলাইহিস্ সালাম বলেছেনঃ
“আমি আমার অসহনীয় বেদনা ও আমার দুঃখ শুধু আল্লাহর নিকট নিবেদন করছি।” (সুরা ইউসুফ (১২) : ৮৬)
১৩০১. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু তালহা (রাদি.)-এর এক পুত্র অসুস্থ হয়ে পড়ল। বর্ণনাকারী বলেন, তার মৃত্যু হলো। তখন আবু তালহা (রাদি.) বাড়ির বাইরে ছিলেন। তাহাঁর স্ত্রী যখন দেখলেন যে, ছেলেটি মারা গেছে, তখন তিনি কিছু প্রস্তুতি নিলেন [১] এবং ছেলেটিকে ঘরের এক কোণে রেখে দিলেন। আবু তালহা (রাদি.) বাড়িতে এসে জিজ্ঞেস করিলেন, ছেলের অবস্থা কেমন? স্ত্রী জওয়াব দিলেন, তার আত্মা শান্ত হয়েছে এবং আশা করি সে এখন আরাম পাচ্ছে। আবু তালহা ভাবলেন তাহাঁর স্ত্রী সত্য বলেছেন। রাবী বলেন, তিনি রাত যাপন করিলেন এবং ভোরে গোসল করিলেন। তিনি বাইরে যেতে উদ্যত হলে স্ত্রী তাঁকে জানালেন, ছেলেটি মারা গেছে। অতঃপর তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে (ফজরের) সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ)-কে তাঁদের রাতের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করিলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইরশাদ করলেনঃ আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তোমাদের এ রাতে বরকত দিবেন। সুফিয়ান (রাদি.) বলেন, এক ব্যক্তি বর্ণনা করিয়াছেন, আমি আবু তালহা (রাদি.) দম্পতির নয় জন সন্তান দেখেছি, তাঁরা সবাই কুরআন পাঠ করেছে।
[১] যাতে স্বামী ব্যাপারটি বুঝতে না পারেন তজ্জন্য তিনি নিজেই শিশুটির গোসল ও কাফনের ব্যবস্থা করিলেন, অথবা খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করিলেন, অথবা স্বামীর সঙ্গলাভের জন্য সাজ-সজ্জার প্রস্তুতি নিলেন।
২৩/৪২. অধ্যায়ঃ মুসীবতের প্রথম অবস্থায়ই প্রকৃত সবর।
উমর (রাদি.) বলেন, কতই না উত্তম দুই ঈদল এবং কতই না উত্তম ইলাওয়াহ [১৬] (আল্লাহর বাণী) :
[যার অর্থ] “যারা তাদের উপর যখন কোন বিপদ আপতিত হয় তখন বলেঃ আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং আমরা সবাই অবশ্যই তাহাঁরই কাছে ফিরে যাব। এরাই তাঁরা যাদের প্রতি রয়েছে তাদের পালনকর্তার তরফ থেকে অশেষ অনুগ্রহ ও করুণা আর এরাই হল হিদায়াতপ্রাপ্ত।” (আল-বাকারাহ ১৫৬-১৫৭)
আর আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
(যার অর্থ) “তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে। অবশ্যটা অত্যন্ত কঠিন, তবে সেসব বিনীত লোকদের ব্যতিরেকে।” (আল-বাকারাহ ৪৫)
[১৬] উটের পিঠে দুই পার্শের বোঝাকে ঈদলান বলা হয় এবং তাহাঁর উপরে মধ্যবর্তী স্থানে যে বোঝা রাখা হয় তাকে ইলাওয়াহ বলা হয়। (১৫৭)।
১৩০২. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, বিপদের প্রথম অবস্থায়ই প্রকৃত সবর।
২৩/৪৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) এর বাণীঃ তোমার জন্য আমরা অবশ্যই শোকাভিভূত।
ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, (বিপদে) চোখ অশ্রু সজল হয়, অন্তর হয় ব্যথিত।
১৩০৩. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে আবু সায়ফ্ কর্মকারের নিকট গেলাম। তিনি ছিলেন (নাবী -তনয়) ইবরাহীম (রাদি.)-এর দুধ সম্পর্কীয় পিতা। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইবরাহীম (রাদি.)-কে তুলে নিয়ে চুমু খেলেন এবং নাকে-মুখে লাগালেন। অতঃপর (আরেক বার) আমরা তাহাঁর (আবু সায়ফ্-এর) বাড়িতে গেলাম। তখন ইবরাহীম (রাদি.) মুমূর্ষু অবস্থায়। এতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর উভয় চক্ষু হইতে অশ্রু ঝরতে লাগল। তখন আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আর আপনিও? (ক্রন্দন করছেন?)। তখন তিনি বললেনঃ অশ্রু প্রবাহিত হয় আর হৃদয় হয় ব্যথিত। তবে আমরা মুখে তা-ই বলি যা আমাদের রব পছন্দ করেন। [১৭] আর হে ইবরাহীম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা অবশ্যই শোকসন্তপ্ত। [১৮]
মূসা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….আনাস (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে হাদীসটি বর্ণনা করেন।
[১৭] হাদিসটি হইতে বিপদে অশ্রু ঝড়ানো আর মহান আল্লাহর নাফরমানী প্রকাশক শব্দাবলী বাদ দিয়ে মুখে শোক প্রকাশ করার অনুমতি পাওয়া যায়, পক্ষান্তরে মহান আল্লাহর নাফরমানী হয় কিংবা তাকদীরের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশক শব্দাবলী পরিত্যাগ করার তাকীদ দেয়া হয়।. [১৮] এ ধরনের বাকরীতি বিভিন্ন ভাষায় বিদ্যমান আছে। সুতরাং আরবীতে তো থাকবেই। বিধায় মৃত ব্যক্তিকে সংশোধন করার দলীল হিসাবে নাবী (সাঃআঃ) এর বাণীটি ব্যবহার করার কোনই অবকাশ নেই।
২৩/৪৪. অধ্যায়ঃ রোগাক্রান্ত ব্যক্তির নিকট কান্নাকাটি করা।
১৩০৪. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) রোগাক্রান্ত হলেন। নাবী (সাঃআঃ) আবদুর রাহমান ইবনু আওফ সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস এবং আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.)-কে সঙ্গে নিয়ে তাঁকে দেখিতে আসলেন। তিনি তাহাঁর ঘরে প্রবেশ করে তাঁকে পরিজনের মাঝে দেখিতে পেলেন। জিজ্ঞেস করিলেন, তার কি মৃত্যু হয়েছে! তাঁরা বলিলেন, না। হে আল্লাহর রাসুল! তখন নাবী (সাঃআঃ) কেঁদে ফেললেন। নাবী (সাঃআঃ)-এর কান্না দেখে উপস্থিত লকেরা কাঁদতে লাগলেন। তখন তিনি ইরশাদ করলেনঃ শুনে রাখ! নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা চোখের পানি ও অন্তরের শোক-ব্যথার কারনে আযাব দিবেন না। তিনি আযাব দিবেন এর কারনে (এ বলে) জিহ্বার দিকে ইঙ্গিত করিলেন। অথবা এর কারণেই তিনি রহম করে থাকেন। আর নিশ্চয় মৃত ব্যক্তিকে তাহাঁর পরিজনের বিলাপের কারণে আযাব দেয়া হয়। উমর (রাদি.) এ (ধরণের কান্নার) কারণে লাঠি দ্বারা আঘাত করিতেন, কঙ্কর নিক্ষেপ করিতেন বা মুখে মাটি পুরে দিতেন।
২৩/৪৫. অধ্যায়ঃ (সরবে) কাঁদা ও বিলাপ নিষিদ্ধ হওয়া এবং তাতে বাধা প্রদান করা।
১৩০৫. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (মুতার যুদ্ধ ক্ষেত্র হইতে) যায়দ ইবনু হারিসাহ, জাফর এবং আব্দুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.)-এর শাহাদাতের খবর পৌঁছলে নাবী (সাঃআঃ) বসে পড়লেন; তাহাঁর মধ্যে শোকের আলামত প্রকাশ পেল। আমি [আয়েশা (রাদি.)] দরজার ফাঁক দিয়ে ঝুঁকে তা দেখছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তাহাঁর নিকট এসে সম্বোধন করেন, হে আল্লাহর রাসুল! জাফর (রাদি.)-এর (পরিবারের) মহিলাগণ কান্নাকাটি করছে। তিনি তাদের নিষেধ করার জন্য তাকে আদেশ করিলেন। সেই ব্যক্তি চলে গেলেন। পরে এসে বলিলেন, আমি তাদের নিষেধ করেছি। তিনি উল্লেখ করিলেন যে, তারা তাকে মানেনি। তিনি তাদের নিষেধ করার জন্য দ্বিতীয়বার তাকে নির্দেশ দিলেন। তিনি চলে গেলেন এবং আবার এসে বলিলেন, আল্লাহর কসম! অবশ্যই তাঁরা আমাকে (বা বলেছেন আমাদেরকে) হার মানিয়েছে। আয়েশা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তা হলে তাঁদের মুখে মাটি ছুঁড়ে মারো। [আয়েশা (রাদি.) বলেন] আমি বললাম, আল্লাহ তোমার নাকে ধূলি মিশ্রিত করুন। আল্লাহর কসম! তোমাকে যে কাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা করিতে পারছ না আর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বিরক্ত করিতেও ছাড়ছ না।
১৩০৬. উম্মু আতিয়্যা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বাইআত গ্রহণকালে আমাদের কাছ হইতে এ অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, আমরা (কোন মৃতের জন্য) বিলাপ করব না। ….আমাদের মধ্য হইতে পাঁচজন মহিলা উম্মু সুলাইম, উম্মুল আলা, আবু সাবরাহর কন্যা মুআযের স্ত্রী, আরো দুজন মহিলা বা মুআযের স্ত্রী ও আরেকজন মহিলা ব্যতীত কোন নারীই সে ওয়াদা রক্ষা করেনি।
Leave a Reply