মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরানোর নিয়ম পুরুষ ও মহিলাদের পদ্ধতি
মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরানোর নিয়ম পুরুষ ও মহিলাদের পদ্ধতি >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ২৩, জানাযা, অধ্যায়ঃ (১৪-২৯)=১৬টি
২৩/১৪. অধ্যায়ঃ মহিলাদের চুল খুলে দেয়া
২৩/১৫. অধ্যায়ঃ মৃতকে কিভাবে কাফন জড়ানো হইবে।
২৩/১৬. অধ্যায়ঃ মহিলাদের চুলকে কি তিনটি বেণীতে ভাগ করা হইবে?
২৩/১৭. অধ্যায়ঃ মহিলার চুল তিনটি বেনী করে তার পিছন দিকে রাখা।
২৩/১৮. অধ্যায়ঃ কাফনের জন্য সাদা কাপড়।
২৩/১৯. অধ্যায়ঃ দু কাপড়ে কাফন দেয়া।
২৩/২০. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির জন্য খুশবু ব্যবহার।
২৩/২১. অধ্যায়ঃ মুহরিমকে কিভাবে কাফন দেয়া হইবে?
২৩/২২. অধ্যায়ঃ সেলাইকৃত বা সেলাইবিহীন কামীস দিয়ে কাফন দেয়া এবং কামীস ছাড়া কাফন দেয়া।
২৩/২৩. অধ্যায়ঃ জামা ছাড়া কাফন।
২৩/২৪. অধ্যায়ঃ পাগড়ী ছাড়া কাফন
২৩/২৫. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির সমস্ত সম্পদ হইতে কাফন দেয়া।
২৩/২৬. অধ্যায়ঃ একখানা কাপড় ছাড়া আর কোন কাপড় পাওয়া না গেলে।
২৩/২৭. অধ্যায়ঃ মাথা বা পা ঢাকা যায় এতটুকু ছাড়া অন্য কোন কাফন না পাওয়া গেলে, তা দিয়ে কেবল মাথা ঢাকতে হইবে।
২৩/২৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) –এর আমলে যে নিজের কাফন তৈরি করে রাখল, অথচ তাঁকে এতে বারণ করা হয়নি।
২৩/২৯. অধ্যায়ঃ জানাযার পশ্চাতে মহিলাদের অনুগমণ।
২৩/১৪. অধ্যায়ঃ মহিলাদের চুল খুলে দেয়া
ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, মৃতের চুল খুলে দেয়ার কোন দোষ নেই।
১২৬০. উম্মু আতিয়্যা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) –এর কন্যার মাথার চুল তিনটি বেণী করিয়াছেন। তাঁরা তা খুলেছেন, অতঃপর তা ধুয়ে তিনটি বেনী করিয়াছেন।
২৩/১৫. অধ্যায়ঃ মৃতকে কিভাবে কাফন জড়ানো হইবে।
হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, পঞ্চম বস্ত্রখন্ড [৯] দ্বারা কামীসের নীচে উরুদ্বয় ও নিতম্বদ্বয় বেঁধে দিবে।
[৯] হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর উক্তিতে বুঝা যায় যে, মহিলাদেরকে পাঁচ কাপড়ে কাফন দেয়া যেতে পারে তবে নাবী (সাঃআঃ) থেকে সহীহ সনদে এ ব্যাপারে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি যার ফলে কতক আলিম মহিলাদেরকেও পুরুষদের ন্যায় তিন কাপড়ে কাফন দেয়ার পক্ষপাতী।
১২৬১. আইয়ূব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আনসারী মহিলা উম্মু আতিয়্যা (রাদি.) আগমন করিলেন, যিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট বাইআতকারীদের একজন। তিনি তাহাঁর এক ছেলেকে দেখার জন্য বাসরায় এসেছিলেন, কিন্তু তিনি তাকে পাননি। তখন তিনি আমাদের হাদীস শুনালেন। তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাদের নিকট আসলেন, তখন আমরা তাহাঁর কন্যাকে গোসল দিচ্ছিলাম। তিনি বলেনঃ তোমরা তাঁকে তিনবার, পাঁচবার অথবা প্রয়োজনে তার চেয়ে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। আর শেষবারে কর্পূর দাও। তোমরা শেষ করে আমাকে জানাবে। তিনি বলেন, আমরা যখন শেষ করলাম, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর চাদর আমাদের দিকে নিক্ষেপ করে বললেনঃ এটা তাহাঁর শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে দাও। উম্মু আতিয়্যা (রাদি.)-এর অধিক বর্ণনা করেননি। [আইয়ূব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমি জানি না, নাবী (সাঃআঃ) এর কোন কন্যা ছিলেন? তিনি বলেন, – অর্থ শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে দাও। ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মহিলা সম্পর্কে এভাবেই আদেশ করিতেন যে, ভিতরের কাপড় শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে দিবে, ইজারের মত ব্যবহার করিবে না।
২৩/১৬. অধ্যায়ঃ মহিলাদের চুলকে কি তিনটি বেণীতে ভাগ করা হইবে?
১২৬২. উম্মু আতিয়্যা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর কন্যার মাথায় চুল বেনী পাকিয়ে দিয়েছিলাম, অর্থাৎ তিনটি বেনী। ওয়াকী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, মাথার সামনে একটি বেনী এবং দুপাশে দুটি বেনী।
২৩/১৭. অধ্যায়ঃ মহিলার চুল তিনটি বেনী করে তার পিছন দিকে রাখা।
১২৬৩. উম্মু আতিয়্যা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর কন্যাগণের একজনের ইনতিকাল হলে তিনি আমাদের নিকট এসে বললেনঃ তোমরা তাঁকে বরই পাতার পানি দিয়ে বিজোড় সংখ্যক তিনবার, পাঁচবার অথবা প্রয়োজনবোধ করলে আরও অধিকবার গোসল দাও। শেষবারে কর্পূর অথবা তিনি বলেছিলেন কিছু কর্পূর ব্যবহার করিবে। তোমরা গোসল শেষ করে আমাকে জানাবে। আমরা শেষ করে তাঁকে জানালাম। তখন তিনি তাহাঁর চাদর আমাদের দিকে এগিয়ে দিলেন, আমরা তাহাঁর মাথার চুলগুলো তিনটি বেনী করে পিছনের দিকে ছেড়ে দিলাম।
২৩/১৮. অধ্যায়ঃ কাফনের জন্য সাদা কাপড়।
১২৬৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে তিনটি ইয়ামানী সাহুলী সাদা সূতী বস্ত্র দ্বারা কাফন দেয়া হয়েছিল। তার মধ্যে কামীস এবং পাগড়ী ছিল না।
২৩/১৯. অধ্যায়ঃ দু কাপড়ে কাফন দেয়া।
১২৬৫. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আরাফাতে ওয়াকূফ অবস্থায় অকস্মাৎ তার উটনী হইতে পড়ে যায়। এতে তাহাঁর ঘাড় মটকে গেল অথবা রাবী বলেছেন, তাহাঁর ঘাড় মটকে দিল। (যাতে সে মারা গেল)। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তাঁকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও এবং দু কাপড়ে তাঁকে কাফন দাও। তাঁকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তাহাঁর মস্তক আবৃত করিবে না। কেননা, কিয়ামাতের দিবসে সে তালবিয়া [১] পাঠরত অবস্থায় উত্থিত হইবে।
[১] ইহরাম অবস্থায় যে দুআ পাঠ করা হয়….. اللّهُمَّ لَبَّيك আল্লাহুম্মা লাববায়কা……এ দুআকে তাল্বিয়া বলে ।
২৩/২০. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির জন্য খুশবু ব্যবহার।
১২৬৬. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে আরাফাতে ওয়াকূফ কালে অকস্মাৎ সে তার সওয়ারী হইতে পড়ে যান। যার ফলে তাহাঁর ঘাড় মটকে গেল অথবা রাবী বলেন, ঘাড় মটকে দিল। (যাতে তিনি মারা গেলেন)। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তাঁকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও এবং দু কাপড়ে তাঁকে কাফন দাও; তাঁকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তাহাঁর মস্তক আবৃত করিবে না। কেননা, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাঁকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উত্থিত করবেন।
২৩/২১. অধ্যায়ঃ মুহরিমকে কিভাবে কাফন দেয়া হইবে?
১২৬৭. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তির উট তার ঘাড় মটকে দিল। (ফলে সে মারা গেল)। সে সময় আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। ঐ ব্যক্তি ছিল ইহরাম অবস্থায়। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও এবং দু কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মস্তক আবৃত করো না। কেননা, আল্লাহ তাআলা কিয়ামাতের দিন তাকে মুলাব্বি [১] (অর্থাৎ ইহরামরত) অবস্থায় উত্থিত করবেন।
[১] মুলাব্বিদঃ মাথার চুল এলোমেলো না হওয়ার জন্য মোম জাতীয় আঠাল দ্রব্য ব্যবহারকারী, এখানে ইহরামরত অবস্থা বুঝান হয়েছে।
১২৬৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে আরাফাতে অবস্থান করছিলেন। সে তার সওয়ারী হইতে পতিত হলেন। (পরবর্তী অংশের বর্ণনায়) আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, فوقمصته তার ঘাট মট্কে দিল। আর আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, فاقمصته তাকে দ্রুত মৃত্যুমুখে ঠেলে দিল। যার ফলে তিনি মারা গেলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তাঁকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও এবং দু কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তাঁকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তাহাঁর মস্তক আবৃত করিবে না। কারণ, তাঁকে কিয়ামত দিবসে উত্থিত করা হইবে এ অবস্থায় যে, আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, সে তালবিয়া পাঠ করছে আর আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সে তালবিয়া পাঠরত।
২৩/২২. অধ্যায়ঃ সেলাইকৃত বা সেলাইবিহীন কামীস দিয়ে কাফন দেয়া এবং কামীস ছাড়া কাফন দেয়া।
১২৬৯. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনু উবাই (মুনাফিক সর্দার)-এর মৃত্যু হলে তার পুত্র (যিনি সাহাবী ছিলেন) নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বলিলেন, আপনার জামাটি আমাকে দান করুন। আমি সেটা দিয়ে আমার পিতার কাফন পরাতে ইচ্ছা করি। আর আপনি তার জানাযা পড়বেন এবং তার জন্য মাগফিরাত কামনা করবেন। নাবী (সাঃআঃ) নিজের জামাটি তাঁকে দিয়ে দিলেন এবং বললেনঃ আমাকে খবর দিও, আমি তার জানাযা আদায় করব। তিনি তাঁকে খবর দিলেন। যখন নাবী (সাঃআঃ) তার জানাযা আদায়ের ইচ্ছা করিলেন, তখন উমর (রাদি.) তাহাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলিলেন, আল্লাহ কি আপনাকে মুনাফিকদের জানাযা আদায় করিতে নিষেধ করেননি? তিনি বললেনঃ আমাকে তো দুটির মধ্যে কোন একটি করার ইখ্তিয়ার দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ
اسْتَغْفِرْ لَهُمْ أَوْ لاَ تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ إِنْ تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ سَبْعِينَ مَرَّةً فَلَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لَهُمْ
(যার অর্থ) “আপনি তাদের (মুনাফিকদের) জন্য মাগফিরাত কামনা করুন বা মাগফিরাত কামনা না-ই করুন (একই কথা) আপনি যদি সত্তর বারও তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করেন; কখনো আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না-” (আততাওবাঃ ৮০)। কাজেই তিনি তার জানাযা পড়লেন, অতঃপর নাযিল হলঃ
وَلاَ تُصَلِّ عَلَى أَحَدٍ مِنْهُمْ مَاتَ أَبَدًا
(যার অর্থ) “তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করলে আপনি তাদের জানাযা কক্ষণও আদায় করবেন না।”
(আত-তাওবাঃ ৮৪)
১২৭০. জাবীর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উবাইকে দাফন করার পর নাবী (সাঃআঃ) তার (কবরের) নিকট এলেন এবং তাকে বের করিলেন। অতঃপর তার উপর থুথু দিলেন, আর নিজের জামাটি তাকে পরিয়ে দিলেন। [১০]
[১০] কিন্তু কোনই উপকার হয়নি তার কারণ ও মুনাফিকীর কারণে নিজের পরকালকে বরবাদ করে ফেলেছিল।
২৩/২৩. অধ্যায়ঃ জামা ছাড়া কাফন।
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-কে তিনখানা সুতী সাদা সাহুলী (ইয়ামানী) কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে কামীস এবং পাগড়ী ছিল না।
১২৭১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
১২৭২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে তিনখানা কাপড় দিয়ে কাফন দেয়া হয়েছিল, তাতে জামা ও পাগড়ী ছিলনা। আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু নুআইম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ثلاثة – শব্দটি বলেননি। আর আবদুল্লাহ ইবনু ওয়ালীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীস বর্ণনায় ثلاثة- শব্দটি বলেছেন।
২৩/২৪. অধ্যায়ঃ পাগড়ী ছাড়া কাফন
১২৭৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে তিনখানা সাদা সাহুলী কাপড় দিয়ে কাফন দেয়া হয়েছিল, যার মধ্যে কোন কামীস ও পাগড়ী ছিলনা।
২৩/২৫. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির সমস্ত সম্পদ হইতে কাফন দেয়া।
আতা, যুহরী, আমর ইবনু দীনার এবং কাতাদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ কথা বলেছেন। আমর ইবনু দীনার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আরও বলেছেন, সুগন্ধিও সমস্ত সম্পদ হইতে দিতে হইবে। ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, (সম্পদ হইতে) প্রথমে কাফন অতঃপর ঋণ পরিশোধ, অতঃপর ওয়াসিয়াত পূরণ করিতে হইবে। সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, কবর ও গোসল দেয়ার খরচও কাফনের শামিল।
১২৭৪. সাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর পিতা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.)-কে খাবার দেয়া হল। তখন তিনি বলিলেন, মুস্আব ইবনু উমাইর (রাদি.) শহীদ হলেন আর তিনি আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলেন অথচ তাহাঁর কাফনের জন্য একটি চাদর ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। হামযাহ (রাদি.) বা অপর এক ব্যক্তি শহীদ হলেন, তিনিও ছিলেন আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ, অথচ তাহাঁর কাফনের জন্যও একটি চাদর ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। তাই আমার ভয় হয়, আমাদের নেক আমলের বিনিময়ে আমাদের এ পার্থিব জীবনে পূর্বেই দেয়া হল। অতঃপর তিনি কাঁদতে লাগলেন।
২৩/২৬. অধ্যায়ঃ একখানা কাপড় ছাড়া আর কোন কাপড় পাওয়া না গেলে।
১২৭৫. ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
একদা আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.)-কে খাদ্য পরিবেশন করা হল, তখন তিনি সিয়াম পালন করছিলেন। তিনি বলিলেন, মুসআব ইবনু উমাইর (রাদি.) শহীদ হলেন। তিনি ছিলেন, আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। (অথচ) তাঁকে এমন একটি চাদর দিয়ে কাফন দেয়া হল যে, তাহাঁর মাথা ঢাকলে তাহাঁর দু পা বাইরে থাকে আর দু পা ঢাকলে মাথা বাইরে থাকে। (বর্ণনাকারী বলেন) আমার মনে পড়ে, তিনি আরও বলেছিলেন, হামযাহ (রাদি.) শহীদ হলেন। তিনিও ছিলেন আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। অতঃপর আমাদের জন্য পৃথিবীতে অত্যধিক প্রাচুর্য দেয়া হয়েছে। আশঙ্কা হয় যে, আমাদের নেক আমলগুলো (এর বিনিময়ে) আমাদের পূর্বেই দিয়ে দেয়া হয়েছে। অতঃপর তিনি ক্রন্দন করিতে লাগলেন, এমনকি খাদ্যও বর্জন করিলেন।
২৩/২৭. অধ্যায়ঃ মাথা বা পা ঢাকা যায় এতটুকু ছাড়া অন্য কোন কাফন না পাওয়া গেলে, তা দিয়ে কেবল মাথা ঢাকতে হইবে।
১২৭৬. খাব্বার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে মদীনায় হিজরত করছিলাম, এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করেছিলাম। আমাদের প্রতিদান আল্লাহর দরবারে নির্ধারিত হয়ে আছে। অতঃপর আমাদের মধ্যে অনেকে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা তাঁদের বিনিময়ে কিছুই ভোগ করে যাননি। তাঁদেরই একজন মুসআব ইবনু উমাইর (রাদি.) আর আমাদের মধ্যে অনেকে এমনও আছেন যাঁদের প্রতিদানের ফল পরিপক্ক হয়েছে। আর তাঁরা তা ভোগ করছন। মুসআব (রাদি.) উহুদের দিন শহীদ হয়েছিলেন। আমরা তাঁকে কাফন দেয়ার জন্য এমন একটি চাদর ব্যতীত আর কিছুই পেলাম না; যা দিয়ে তাহাঁর মস্তক আবৃত করলে তাহাঁর দু পা বাইরে থাকে আর তাহাঁর দু পা আবৃত করলে তাহাঁর মস্তক বাইরে থাকে। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর মস্তক আবৃত করিতে এবং তাহাঁর দুখানা পায়ের উপর ইয্খির (ঘাস) দিয়ে দিতে আমাদের নির্দেশ দিলেন।
২৩/২৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) –এর আমলে যে নিজের কাফন তৈরি করে রাখল, অথচ তাঁকে এতে বারণ করা হয়নি।
১২৭৭. সাহল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক মহিলা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট একখানা বুরদা নিয়ে এলেন যার সাথে ঝালর যুক্ত ছিল। সাহল (রাদি.) বলিলেন, তোমরা জান, বুরদা কী? তারা বলিল, চাদর। সাহল (রাদি.) বলিলেন, ঠিকই। মহিলা বলিলেন, চাদরখানি আমি নিজ হস্তে বয়ন করেছি এবং তা আপনার পরিধানের জন্য নিয়ে এসেছি। নাবী (সাঃআঃ) তা গ্রহণ করিলেন এবং তাহাঁর চাদরের প্রয়োজনও ছিল। অতঃপর তিনি তা ইযার হিসেবে পরিধান করে আমাদের সম্মুখে আসলেন। তখন জনৈক ব্যক্তি তার সৌন্দর্য বর্ণনা করে বলিলেন, বাহ! কত সুন্দর! আমাকে এটি পরিধানের জন্য দান করুন। সাহাবীগন বলিলেন, তুমি ভাল করনি। নাবী (সাঃআঃ) তা তাহাঁর প্রয়োজনে পরিধান করিয়াছেন; তবুও তুমি তা চেয়ে বসলে। অথচ তুমি জান যে, তিনি কাউকে বিমুখ করেন না। ঐ ব্যক্তি বলিল, আল্লাহর কসম! আমি তা পরিধানের উদ্দেশে চাইনি। আমার চাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য যেন তা দিয়ে আমার কাফন হয়। সাহল (রাদি.) বলিলেন, অবশেষে তা তাহাঁর কাফনই হয়েছিল। [১১]
[১১] হাদীস হইতে যা জানা যায়ঃ (১) হাদীস বর্ণনায় সময় সাহাবাদের (রাদি.) সতর্কতা। (২) শালীনতা বজায় থাকলে মহিলাদের কাজের অনুমতি। (৩) নাবী (সাঃআঃ) অর্থনৈতিক সংকটে দিনাতিপাত করিতেন। (৪) নাবী ইতস্ততা পরিত্যাগ করে চাদরকে লুঙ্গি বানিয়েছেন। (৫) নাবী (সাঃআঃ) অভাবের মধ্যেও দান করেছন। (৬) নাবী (সাঃআঃ) হাদীয়া গ্রহণ করিতেন। (৭) নাবী (সাঃআঃ) হাদীয়ার মাল দান করে দেয়া বৈধ। (৮) কারো আচরণ ভুল হলে তাকে সতর্ক করা। (৯) নিজের আচরণের প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা প্রদান করা। (১০) সামান্য একটু রূপকভাবে কথা বলা যায়। (১১) রাসুল (সাঃআঃ) এর কাউকে বিমুখ না করার গুনাবলী। (১২) রাসুল (সাঃআঃ) এর জীবদ্দশায় তা সাথে জড়িত বস্তু হইতে বারাকাৎ হাসিল করা। (১৩) তাহাঁর জীবদ্দশায়ই কাফন তৈরীর মাধ্যমে মৃতের প্রস্তুতি নেয়া ভাল। (১৪) কেউ ভাল নিয়ত রাখলে মহান আল্লাহ তা অবশ্যই পূরণ করেন।
২৩/২৯. অধ্যায়ঃ জানাযার পশ্চাতে মহিলাদের অনুগমণ।
১২৭৮. উম্মু আতিয়্যা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জানাযার পশ্চাদানুগমন করিতে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে, তবে আমাদের উপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়নি।
Leave a Reply