সূর্যগ্রহণের সময় সালাত , দুয়া, খুতবা, সিজদা, যিকর ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

সূর্যগ্রহণের সময় সালাত , দুয়া, খুতবা, সিজদা, যিকর ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত

সূর্যগ্রহণের সময় সালাত , দুয়া, খুতবা, সিজদা, যিকর ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ১৬, সূর্যগ্রহণ, অধ্যায়ঃ (১-১৯)=১৯টি

১৬/১. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সময় সালাত।
১৬/২. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সময় দান-খয়রাত করা।
১৬/৩. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সালাতে আস্-সালাতু জামিয়াতুন বলে ডাকা।
১৬/৪. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সময় ইমামের খুতবাহ।
১৬/৫. অধ্যায়ঃ কাসাফাতিশ্ শামসু বলবে, না খাসাফাতিশ্ শামসু বলবে ?
১৬/৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর উক্তিঃ আল্লাহ তাআলা সূর্যগ্রহণ দিয়ে তাহাঁর বান্দাদের হুঁশিয়ার করেন।
১৬/৭. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সময় কবরের আযাব হইতে পরিত্রাণ চাওয়া।
১৬/৮. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সালাতে দীর্ঘ সিজদা করা।
১৬/৯. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণ-এর সালাত জামাআতের সঙ্গে আদায় করা।
১৬/১০. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সময় পুরুষদের সঙ্গে মহিলাদের সালাত।
১৬/১১. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সময় ক্রীতদাস মুক্ত করা পছন্দনীয়।
১৬/১২. অধ্যায়ঃ মসজিদে সূর্যগ্রহণের সালাত।
১৬/১৩. অধ্যায়ঃ কারো মৃত্যু বা জন্মের জন্যে সূর্যগ্রহণ হয় না।
১৬/১৪. অধ্যায়ঃ সুর্যগ্রহনের সময় আল্লাহর যিকর।
১৬/১৫. অধ্যায়ঃ সুর্যগ্রহনের সময় দুআ।
১৬/১৬. অধ্যায়ঃ সুর্যগ্রহনের খুতবায় ইমামের “আমমা-বাদু” বলা।
১৬/১৭. অধ্যায়ঃ চন্দ্রগ্রহণের সালাত
১৬/১৮. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সালাতে প্রথম রাকআত হইবে দীর্ঘতর।
১৬/১৯. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সালাতে শব্দ সহকারে কিরআত পাঠ।

১৬/১. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সময় সালাত।

১০৪০. আবু বাকরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট ছিলাম, এ সময় সূর্যগ্রহণ শুরু হয়। নাবী (সাঃআঃ) তখন উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজের চাদর টানতে টানতে মসজিদে প্রবেশ করিলেন এবং আমরাও প্রবেশ করলাম। তিনি আমাদেরকে নিয়ে সূর্য প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ কারো মৃত্যুর কারণে কখনো সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তোমরা যখন সূর্যগ্রহণ দেখবে তখন এ অবস্থা দূর না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করিবে এবং দুআ করিতে থাকবে।

১০৪১. আবু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কোন লোকের মৃত্যুর কারণে কখনো সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তবে তা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। তাই তোমরা যখন সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হইতে দেখবে, তখন দাঁড়িয়ে যাবে এবং সালাত আদায় করিবে।

১০৪২. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে হয় না। তবে তা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কাজেই তোমরা যখনই গ্রহণ হইতে দেখবে তখনই সালাত আদায় করিবে।

১০৪৩. মুগীরা ইবনু শুবাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সময় যে দিন (তাহাঁর পুত্র) ইবরাহীম (রাদি.) ইন্তিকাল করেন, সেদিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। লোকেরা তখন বলিতে লাগল, ইবরাহীম (রাদি.) এর মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ কারো মৃত্যু অথবা জন্মের কারণে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তোমারা যখন তা দেখবে, তখন সালাত আদায় করিবে এবং আল্লাহর নিকট দুআ করিবে।

১৬/২. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সময় দান-খয়রাত করা।

১০৪৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সময় একবার সূর্যগ্রহণ হল। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। তিনি দীর্ঘ সময় কিয়াম করেন, অতঃপর দীর্ঘক্ষণ রুকূ করেন। অতঃপর পুনরায় (সালাতে) তিনি উঠে দাঁড়ান এবং দীর্ঘ কিয়াম করেন। অবশ্য তা প্রথম কিয়াম চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি রুকূ করেন এবং এ রুকূও দীর্ঘ করেন। তবে তা প্রথম রুকূর চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি সিজদা করেন এবং সিজদাও দীর্ঘক্ষন করেন। অতঃপর তিনি প্রথম রাকাআতে যা করেছিলেন তার অনুরূপ দ্বিতীয় রাকাআতে করেন এবং যখন সূর্য প্রকাশিত হয় তখন সালাত শেষ করেন। অতঃপর তিনি লোকজনের উদ্দেশে খুতবা দান করেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন তোমরা আল্লাহর নিকট দুআ করিবে। তাহাঁর মহত্ব ঘোষণা করিবে এবং সালাত আদায় করিবে ও সদকা প্রদান করিবে। অতঃপর তিনি আরো বললেনঃ হে উম্মাতে মুহাম্মাদী! আল্লাহর কসম, আল্লাহর কোন বান্দা যিনা করলে কিংবা কোন নারী যিনা করলে, আল্লাহর চেয়ে অধিক অপছন্দকারী কেউ নেই। হে উম্মাতে মুহাম্মাদী! আল্লাহর কসম, আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তাহলে তোমরা অবশ্যই হাসতে কম এবং বেশী করে কাঁদতে।

১৬/৩. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সালাতে আস্-সালাতু জামিয়াতুন বলে ডাকা।

১০৪৫. আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সময় যখন সূর্যগ্রহণ হলো, তখন

الصَّلاَةَ جَامِعَةٌ

আস্-সলাতু জামিআতুন বলে (সালাতে সমবেত হবার জন্য) আহ্বান জানানো হল।

১৬/৪. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সময় ইমামের খুতবাহ।

আয়েশা ও আসমা (রাদি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) খুতবা দিয়েছিলেন।

১০৪৬. নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর জীবদ্দশায় একবার সূর্যগ্রহণ হয়। তখন তিনি মসজিদে গমন করেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকেরা তাহাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হলো। তিনি তাক্‌বীর বলিলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দীর্ঘ কিরআত পাঠ করিলেন। অতঃপর তাক্‌বীর বলিলেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকূতে থাকলেন। অতঃপর

 سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ

বলে দাঁড়ালেন এবং সিজদায় না গিয়েই আবার দীর্ঘক্ষণ কিরআত পাঠ করিলেন। তবে তা প্রথম কিরাআতের চেয়ে অল্পস্থয়ী। অতঃপর তিনি আল্লাহু আকবর বলিলেন এবং দীর্ঘ রুকূ করিলেন, তবে তা প্রথম রুকূর চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি বললেনঃ

رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ  

অতঃপর সিজদায় গেলেন। অতঃপর তিনি পরবর্তী রাকাআতেও অনুরূপ করিলেন এবং এভাবে চার সিজদার সাথে চার রাকআত পূর্ণ করিলেন। তাহাঁর সালাত শেষ করার পূর্বেই সূর্যগ্রহণ মুক্ত হয়ে গেল। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করিলেন এবং বললেনঃ সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন মাত্র। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে গ্রহণ হয় না। কাজেই যখনই তোমরা গ্রহণ হইতে দেখবে, তখনই ভীত হয়ে সালাতের দিকে গমন করিবে।

রাবী বর্ণনা করেন, কাসীর ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিতেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে আয়েশা (রাদি.) হইতে উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তাই আমি উরওয়াহকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার ভাই (আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র) তো মদীনায় যেদিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল, সেদিন ফজরের সালাতের ন্যায় দুরাকআত সালাত আদায়ের অতিরিক্ত কিছু করেননি। তিনি বলিলেন, তা ঠিক, তবে তিনি সুন্নাত অনুসরণ করিতে ভুল করিয়াছেন।

১৬/৫. অধ্যায়ঃ কাসাফাতিশ্ শামসু বলবে, না খাসাফাতিশ্ শামসু বলবে ?

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “আর চন্দ্র নিষ্প্রভ হয়ে পড়বে”। (সুরা কিয়ামাহ ৭৫/৮)

১০৪৭. নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সূর্যগ্রহণের সময় সালাত আদায় করেন। তিনি দাঁড়িয়ে তাক্‌বীর বলিলেন। অতঃপর দীর্ঘ কিরআত পাঠ করেন। অতঃপর তিনি দীর্ঘ রুকূ করিলেন। অতঃপর মাথা তুললেন, আর 

سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  

বলে পূর্বের মতই দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ কিরআত পাঠ করিলেন। তবে তা পূর্বের কিরাআতের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকূ করিলেন, তবে এ রুকূ প্রথম রুকূর চেয়ে কম দীর্ঘ ছিল। অতঃপর তিনি দীর্ঘ সিজদা করিলেন। অতঃপর তিনি শেষ রাকআতে প্রথম রাকাআতের অনুরূপ করিলেন এবং সালাম ফিরালেন। তখন সূর্যগ্রহণ মুক্ত হয়ে গেল। অতঃপর লোকদের উদ্দেশে তিনি খুতবা দিলেন। খুতবায় তিনি সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে বলিলেন, এ হচ্ছে আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু কিংবা জন্মের কারণে গ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন তোমরা ভীত অবস্থায় সালাতের দিকে গমন করিবে।

১৬/৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর উক্তিঃ আল্লাহ তাআলা সূর্যগ্রহণ দিয়ে তাহাঁর বান্দাদের হুঁশিয়ার করেন।

আবু মূসা (আশআরী (রাদি.) রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে তা বর্ণনা করিয়াছেন।

১০৪৮. আবু বাকারাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল বলেছেনঃ সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যুর কারণে এ দুটির গ্রহণ হয় না। তবে এ দিয়ে আল্লাহ তাআলা তাহাঁর বান্দাদের সতর্ক করেন। ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবদুল্লাহ ওয়ারিস, শুআইব, খালিদ ইবনু আবদুল্লাহ, হাম্মাদ ইবনু সালাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে এ দিয়ে আল্লাহ তাহাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করেন বাক্যটি বর্ণনা করেননি; আর মূসা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মুবারক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) স্থলে হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন। তিনি বলেন, আমাকে আবু বক্‌র (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ এ দিয়ে তাহাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করেন।

১৬/৭. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সময় কবরের আযাব হইতে পরিত্রাণ চাওয়া।

১০৪৯. নাবী (সাঃআঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ইয়াহুদী মহিলা তাহাঁর নিকট কিছু জিজ্ঞেস করিতে এলো। সে আয়েশা (রাদি.) কে বলিল, আল্লাহ তাআলাও আপনাকে কবর আযাব হইতে রক্ষা করুন। অতঃপর আয়েশা (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কে জিজ্ঞেস করেন, কবরে কি মানুষকে আযাব দেয়া হইবে? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ এত্থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই।

১০৫০. নাবী (সাঃআঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

পরে কোন এক সকালে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সওয়ারীতে আরোহণ করেন। তখন সূর্যগ্রহণ আরম্ভ হয়। তিনি সূর্যোদয় ও দুপুরের মাঝামাঝি সময় ফিরে আসেন এবং কামরাগুলোর মাঝখান দিয়ে অতিক্রম করেন। অতঃপর তিনি সালাতে দাঁড়ালেন এবং লোকেরা তাহাঁর পিছনে দাঁড়াল। অতঃপর তিনি দীর্ঘ কিয়াম করেন। অতঃপর আবার তিনি দীর্ঘ রুকূ করেন, পরে মাথা তুলে দীর্ঘ কিয়াম করেন। তবে এ কিয়াম পূর্বের কিয়ামের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর আবার তিনি দীর্ঘ রুকূ করেন, তবে এ রুকূ পূর্বের রুকূর চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি মাথা তুললেন এবং সিজদায় গেলেন। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ কিয়াম করিলেন। তবে তা প্রথম কিয়ামের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর দীর্ঘ রুকূ করিলেন। এ রুকূ প্রথম রাকআতের রুকূর চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর আবার রুকূ করিলেন এবং তা প্রথম রাকআতের রুকূর চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। পরে মাথা তুললেন এবং সিজদায় গেলেন। অতঃপর সালাত শেষ করিলেন। আল্লাহর যা ইচ্ছা তিনি তা বলিলেন এবং কবর আযাব হইতে পানাহ চাওয়ার জন্য উপস্থিত লোকেদের আদেশ করিলেন।

১৬/৮. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সালাতে দীর্ঘ সিজদা করা।

১০৫১. আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সময় যখন সূর্যগ্রহণ হয় তখন

الصَّلاَةَ جَامِعَةٌ

আস্-সালাতু জামিয়াতুন বলে ঘোষণা দেয়া হয়। নাবী (সাঃআঃ) তখন এক রাকআতে দুবার রুকূ করেন, অতঃপর দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় রাকাআতেও দুবার রুকূ করেন অতঃপর বসেন আর ততক্ষণে সূর্যগ্রহণ মুক্ত হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেন, আয়েশা (রাদি.) বলেছেন, এ সালাত ছাড়া এত লম্বা সিজদা আমি কক্ষণো করিনি।

১৬/৯. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণ-এর সালাত জামাআতের সঙ্গে আদায় করা।

ইবন আব্বাস (রাদি.) লোকদেরকে নিয়ে যমযমের সুফ্‌ফায় সালাত আদায় করেন এবং আলী ইবন আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাদি.) জামাআতে সালাত আদায় করিয়াছেন। ইবন উমর (রাদি.) গ্রহণে-এর সালাত আদায় করিয়াছেন।

১০৫২. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন নাবী (সাঃআঃ)-এর সময় সূর্যগ্রহণ হল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তখন সালাত আদায় করেন এবং তিনি সুরা আল-বাক্বারা পাঠ করিতে যত সময় লাগে সে পরিমাণ দীর্ঘ কিয়াম করেন। অতঃপর দীর্ঘ রুকূ করেন। অতঃপর মাথা তুলে পুনরায় দীর্ঘ কিয়াম করেন। তবে তা প্রথম কিয়ামের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকূ করিলেন। তবে তা প্রথম রুকূর চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি সিজদা করেন। আবার দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ কিয়াম করিলেন। তবে তা প্রথম কিয়ামের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর আবার দীর্ঘ রুকূ করেন, তবে তা পূর্বের রুকূর চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি মাথা তুললেন এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কিয়াম করিলেন, তবে তা প্রথম কিয়াম অপেক্ষা অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকূ করেন, তবে তা প্রথম রুকূর অপেক্ষা অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি সিজদা করেন এবং সালাত শেষ করেন। ততক্ষণে সূর্যগ্রহণ মুক্ত হয়ে গিয়েছে। তারপর তিনি বললেনঃ নিঃসন্দেহে সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে এ দুটির গ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা গ্রহণ দেখবে তখনই আল্লাহকে স্মরণ করিবে। লোকেরা জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা হইতে কি যেন ধরেছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পিছনে সরে এলেন। তিনি বললেনঃ আমিতো জান্নাত দেখেছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে দুনিয়া কায়িম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। অতঃপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি। আর আমি দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রাসুল! কী কারণে? তিনি বললেনঃ তাদের কুফরীর কারণে। জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে? তিনি জবাব দিলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো প্রতি সারা জীবন সদাচরণ কর, অতঃপর সে তোমার হইতে (যদি) সামান্য ত্রুটি পায়, তা হলে বলে ফেলে, তোমার কাছ থেকে কখনো ভাল ব্যবহার পেলাম না।

১৬/১০. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সময় পুরুষদের সঙ্গে মহিলাদের সালাত।

১০৫৩. আসমা বিনতে আবু বক্‌র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

সূর্যগ্রহের সময় আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.)-এর নিকট গেলাম। তখন লোকজন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিল। তখন আয়েশা (রাদি.) ও সালাতে দাঁড়িয়েছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, লোকদের কী হয়েছে? তখন তিনি হাত দিয়ে আসমানের দিকে ইশারা করিলেন এবং সুবহানাল্লাহ বলিলেন। আমি বললাম, এ কি কোন নিদর্শন? তখন তিনি ইঙ্গিতে বলিলেন, হাঁ। আসমা (রাদি.) বলেন, আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। এমন কি (দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে) আমি প্রায় বেহুঁশ হয়ে পড়লাম এবং মাথায় পানি ঢালতে লাগলাম। আল্লাহর রাসুল (রাদি.) যখন সালাত শেষ করিলেন, তখন আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করিলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমি এ স্থান হইতে দেখিতে পেলাম, যা এর পূর্বে দেখিনি, এমন কি জান্নাত এবং জাহান্নাম। আর আমার নিকট ওয়াহী পাঠান হয়েছে যে, নিশ্চয়ই তোমাদেরকে কবরের মধ্যে দাজ্জালের ফিতনার ন্যায় অথবা বলেছেন তার কাছাকাছি ফিতনায় লিপ্ত করা হইবে। বর্ণনাকারী বলেন, (মিস্‌লা ও কারীবান) দুটির মধ্যে কোনটি আসমা (রাদি.) বলেছিলেন, তা আমার মনে নেই। তোমাদের এক একজনকে উপস্থিত করা হইবে এবং তাকে প্রশ্ন করা হইবে, এ ব্যক্তি সম্পর্কে কী জান? তখন মুমিন (ঈমানদার) অথবা মুকিন (বিশ্বাসী) বলবেন- বর্ণনাকারী বলেন যে, আসমা (রাদি.) মুমিন শব্দ বলেছিলেন, না মুকীন তা আমার স্মরণ নেই, তিনি হলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সুস্পষ্ট দলীল ও হিদায়াত নিয়ে আমাদের নিকট এসেছিলেন এবং আমরা এতে সাড়া দিয়ে ঈমান এনেছি ও তাহাঁর অনুসরণ করেছি। অতঃপর তাঁকে বলা হইবে, তুমি পুণ্যবান বান্দা হিসেবে ঘুমিয়ে থাক। আমরা অবশ্যই জানতাম যে, নিশ্চিতই তুমি দৃঢ়বিশ্বাস স্থাপনকারী ছিলে। আর মুনাফিক কিংবা সন্দেহকারী বর্ণনাকারী বলেন, আসমা (রাদি.) মুনাফিক না সন্দেহকারী বলেছিলেন তা আমার মনে নেই, সে শুধু বলবে, আমি কিছুই জানি না। আমি মানুষকে কিছু বলিতে শুনিয়াছি এবং আমিও তাই বলেছি।

১৬/১১. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সময় ক্রীতদাস মুক্ত করা পছন্দনীয়।

১০৫৪. আসমা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সূর্যগ্রহণের সময় গোলাম আযাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

১৬/১২. অধ্যায়ঃ মসজিদে সূর্যগ্রহণের সালাত।

১০৫৫. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ইয়াহূদী মহিলা তাহাঁর নিকট কিছু জিজ্ঞেস করিতে এল। মহিলাটি বলিল, আল্লাহ আপনাকে কবরের আযাব হইতে পানাহ দিন। অতঃপর আয়েশা (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, কবরে কি মানুষকে আযাব দেয়া হইবে? তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাই ক্ববরের আযাব হইতে।

১০৫৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

পরে একদা সকালে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সওয়ারীতে আরোহণ করেন। তখন সূর্যগ্রহণ আরম্ভ হয়। তিনি ফিরে এলেন, তখন ছিল সূর্যোদয় ও দুপুরের মাঝামাঝি সময়। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর হুজরাগুলোর মাঝখান দিয়ে অতিক্রম করিলেন। অতঃপর তিনি সালাতে দাঁড়ালেন এবং লোকেরাও তাহাঁর পিছনে দাঁড়াল। তিনি দীর্ঘ কিয়াম করিলেন। অতঃপর দীর্ঘ রুকূ করিলেন। অতঃপর মাথা তুলে আবার দীর্ঘ কিয়াম করেন। তবে এ কিয়াম প্রথম রুকূর চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি আবার দীর্ঘ রুকূ করেন। তবে এ রুকূ প্রথম কিয়ামের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি মাথা তুললেন এবং দীর্ঘ রুকূ করেন। তবে এ রুকূ প্রথম কিয়ামের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি মাথা তুললেন এবং দীর্ঘ সিজদা করিলেন। অতঃপর তিনি আবার দাঁড়িয়ে কিয়াম করেন অবশ্য তা প্রথম কিয়ামের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি দীর্ঘ রুকূ করিলেন, তা প্রথম রুকূর চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি আবার দীর্ঘ কিয়াম করেন। তবে তা প্রথম কিয়ামের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর দীর্ঘ রুকূ করেন। অবশ্য এ রুকূ প্রথম রুকূর চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি সিজদা করেন। এ সিজদা প্রথম সিজদার চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি সালাত শেষ করেন। এরপরে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আল্লাহর যা ইচ্ছা তাই বলিলেন। শেষে তিনি সবাইকে কবরের আযাব হইতে আশ্রয় প্রার্থনার আদেশ করিলেন।

১৬/১৩. অধ্যায়ঃ কারো মৃত্যু বা জন্মের জন্যে সূর্যগ্রহণ হয় না।

আবু বাকরাহ, মুগীরা, আবু মূসা, ইবনু আব্বাস ও ইবনু উমর (রাদি.)-এর এ বিষয়ে বিবরণ রয়েছে।

১০৫৭. আবু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কারো জন্মের ও মৃত্যুর কারণে সুর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। এগুলো আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে দুটি নিদর্শন। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন সালাত আদায় করিবে।

১০৫৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সময় সুর্যগ্রহণ হল। নাবী (সাঃআঃ) তখন দাঁড়ালেন এবং লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করিলেন। তিনি কিরআত দীর্ঘ করেন। অতঃপর তিনি দীর্ঘ রুকু করেন। অতঃপর তিনি মাথা তুলেন এবং দীর্ঘ কিরআত পড়েন। তবে তা প্রথম কিরআতের চেয়ে স্বল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি রুকু করেন এবং রুকু দীর্ঘ করেন। তবে এ রুকু প্রথম রুকুর চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি মাথা তুলেন এবং দুটি সিজদা করেন। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং দ্বিতীয় রাকআতেও অনুরুপ করেন। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে বললেনঃ সুর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ কারো মৃত্যু কিংবা জন্মের কারণে হয় না। আল্লাহর নিদর্শন সমুহের মধ্যে এ হল দুটি নিদর্শন; যা আল্লাহ তাহাঁর বান্দাদের দেখিয়ে থাকেন। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে ভীত অবস্থায় সালাতের দিকে আসবে।

১৬/১৪. অধ্যায়ঃ সুর্যগ্রহনের সময় আল্লাহর যিকর।

এ সম্বন্ধে ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণনা রয়েছে।

১০৫৯. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার সুর্যগ্রহণ হল, তখন নাবী (সাঃআঃ) ভীত অবস্থায় উঠলেন এবং ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবার ভয় করছিলেন। অতঃপর তিনি মসজিদে আসেন এবং এর পূর্বে আমি তাঁকে যেমন করিতে দেখেছি, তার চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কিয়াম, রুকু এবং সিজদা সহকারে সালাত আদায় করিলেন। আর তিনি বললেনঃ এগুলো হল নিদর্শন যা আল্লাহ পাঠিয়ে থাকেন, তা কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে হয় না। বরং আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে তাহাঁর বান্দাদের সতর্ক করেন। কাজেই যখন তোমরা এর কিছু দেখিতে পাবে, তখন ভীত অবস্থায় আল্লাহর যিকর, দুআ এবং ইস্‌তিগ্‌ফারের দিকে ধাবিত হইবে।

১৬/১৫. অধ্যায়ঃ সুর্যগ্রহনের সময় দুআ।

এ বিষয়ে আবু মূসা ও আয়েশা (রাদি.) নাবী ক্‌রীম (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন ।

১০৬০. মুগীরা ইবনু শুবাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) –(এর পুত্র) ইবরাহীম (রাদি.) যেদিন ইনতিকাল করেন, সেদিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। লোকেরা বলিল ইবরাহীম (রাদি.) এর মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তখন বললেনঃ নিশ্চয়ই সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে এ দুটোর গ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা এদের গ্রহণ হইতে দেখবে, তখন তাদের গ্রহণ মুক্ত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর নিকট দুআ করিবে এবং সালাত আদায় করিতে থাকবে।

১৬/১৬. অধ্যায়ঃ সুর্যগ্রহনের খুতবায় ইমামের “আমমা-বাদু” বলা।

১০৬১. আসমা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সালাত শেষ করিলেন আর এদিকে সূর্যগ্রহণ মুক্ত হয়ে গেল। অতঃপর তিনি খুতবা দিলেন। এতে তিনি প্রথমে আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা করিলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমমা বাদ।

১৬/১৭. অধ্যায়ঃ চন্দ্রগ্রহণের সালাত

১০৬২. আবু বাকরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর সময় সূর্যগ্রহণ হল। তখন তিনি দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন।

১০৬৩. আবু বাক্‌রাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর সময় সূর্যগ্রহণ হল। তিনি বের হয়ে তাহাঁর চাদর টেনে টেনে মসজিদে পৌঁছলেন এবং লোকজনও তাহাঁর নিকট সমবেত হল। অতঃপর তিনি তাদের নিয়ে দুরাকআত সালাত আদায় করেন। অতঃপর সূর্যগ্রহণ মুক্ত হলে তিনি বললেনঃ সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যুর কারণে এ দুটোর গ্রহণ হয় না। কাজেই যখন গ্রহণ হইবে, তা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করিবে এবং দুআ করিতে থাকবে। এ কথা নাবী (সাঃআঃ) এ কারণেই বলেছেন যে, সেদিন তাহাঁর পুত্র ইবরাহীম (রাদি.)-এর ওফাত হয়েছিল এবং লোকেরা সে ব্যাপারে পরস্পর বলাবলি করছিল।

১৬/১৮. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সালাতে প্রথম রাকআত হইবে দীর্ঘতর।

১০৬৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) সূর্যগ্রহণের সময় লোকদের নিয়ে দুরাকআতে চার রুকূ সহ সালাত আদায় করেন। প্রথমটি (দ্বিতীয় রাকআতের চেয়ে) দীর্ঘস্থায়ী ছিল।

১৬/১৯. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সালাতে শব্দ সহকারে কিরআত পাঠ।

১০৬৫. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সূর্যগ্রহণের সালাতে তাহাঁর কিরআত সশব্দে পাঠ করেন। কিরআত সমাপ্ত করার পর তাক্‌বীর বলে রুকু করেন। যখন রুকু হইতে মাথা তুললেন, তখন বলিলেন (আরবি), অতঃপর এ গ্রহণ-এর সালাতেই তিনি আবার কিরআত পাঠ করেন এবং চার রুকূ ও চার সিজদাসহ দুরাকআত সালাত আদায় করেন।

১০৬৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এর যুগে সূর্যগ্রহণ হলে তিনি একজনকে

الصَّلاَةَ جَامِعَةٌ

“আস-সালাতু জামিয়াতুন” বলে ঘোষণা দেয়ার জন্য পাঠান। অতঃপর তিনি অগ্রসর হন এবং চার রুকূ ও চার সিজদাসহ দুরাকআত সালাত আদায় করেন।

ওয়ালীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমাকে আবদুর রহমান ইবনু নামির আরো বলেন যে, তিনি ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে অনুরূপ শুনেছেন, যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন যে, আমি উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে বললাম, তোমার ভাই আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) এরূপ করেননি। তিনি যখন মদীনায় গ্রহণ-এর সালাত আদায় করেন, তখন ফজরের সালাতের ন্যায় দুরাকআত সালাত আদায় করেন। উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, হাঁ, তিনি সুন্নাত অনুসরণে ভুল করিয়াছেন। সুলাইমান ইবনু কাসীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে সশব্দে কিরাআতের ব্যাপারে ইবনু কাসীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply