বিতরের নামাজের ওয়াক্ত এবং রুকুর আগে ও পরে কুনুত পাঠ করা
বিতরের নামাজের ওয়াক্ত এবং রুকুর আগে ও পরে কুনুত পাঠ করা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
এ বিষয়ে আরও পড়ুন >> মুয়াত্তা মালিক >> সহীহ মুসলিম >> আবু দাউদ >> ইবনে মাজাহ >> তিরমিজি >> নাসাঈ >> মিশকাত >> বুলুগুল মারাম হাদীস শরীফ হতে
পর্বঃ ১৪, বিতর, অধ্যায়ঃ (১-৭)=৭টি
১৪/১. অধ্যায়ঃ বিতরের বর্ণনা। [১]
১৪/২. অধ্যায়ঃ বিতরের ওয়াক্ত।
১৪/৩. অধ্যায়ঃ বিতরের জন্য নাবী (সাঃআঃ) কর্তৃক তাহাঁর পরিবার-পরিজনকে জাগানো।
১৪/৪. অধ্যায়ঃ বিতর যেন রাতের সর্বশেষ সালাত হয়।
১৪/৫. অধ্যায়ঃ সওয়ারী জন্তুর উপর বিতরের সালাত।
১৪/৬. অধ্যায়ঃ সফর অবস্থায় বিতর।
১৪/৭. অধ্যায়ঃ রুকুর আগে ও পরে কুনুত পাঠ করা।
১৪/১. অধ্যায়ঃ বিতরের বর্ণনা।
৯৯০. ইবনু ঊমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ রাতের সালাত দু দু (রাকআত) করে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ফজর হবার আশঙ্কা করে, সে যেন এক রাকআত সালাত আদায় করে নেয়। আর সে যে সালাত আদায় করলো, তা তার জন্য বিতর হয়ে যাবে।
৯৯১. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) বিতর সালাতের দু রাকআতের মাঝে সালাম ফিরাতেন। অতঃপর কাউকে কোন প্রয়োজনীয় কাজের নির্দেশ দিতেন।
৯৯২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তাহাঁর খালা উম্মুল মুমিনীন মাইমূনা (রাদি.) এর ঘরে রাত কাটান। (তিনি বলেন) আমি বালিশের প্রস্থের দিক দিয়ে শয়ন করলাম এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও তার পরিবার সেটির দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে শয়ন করিলেন। নাবী (সাঃআঃ) রাতের অর্ধেক বা তার কাছাকাছি সময় পর্যন্ত ঘুমালেন। অতঃপর তিনি জাগ্রত হলেন এবং চেহারা হইতে ঘুমের রেশ দূর করিলেন। পরে তিনি সুরা আলে-ইমরানের (শেষ) দশ আয়াত তিলাওয়াত করিলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) একটি ঝুলন্ত মশ্কের নিকট গেলেন এবং উত্তমরূপে উযূ করিলেন। অতঃপর তিনি সালাতে দাঁড়ালেন। আমিও তার মতই করলাম এবং তার পাশেই দাঁড়ালাম। তিনি তাহাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং আমার কান ধরলেন। অতঃপর তিনি দু রাকআত সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর দু রাকআত, অতঃপর দু রাকআত, অতঃপর দু রাকআত, অতঃপর দু রাকআত, অতঃপর দু রাকাত। অতঃপর বিতর আদায় করিলেন। অতঃপর তিনি শুয়ে পড়লেন। অবশেষে মুআয্যিন তাহাঁর নিকট এলো। তখন তিনি দাঁড়িয়ে দু রাকআত সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর বের হয়ে ফজরের সালাত আদায় করিলেন।
৯৯৩. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ রাতের সালাত দু দু রাকআত করে। অতঃপর যখন তুমি সালাত শেষ করিতে চাইবে, তখন এক রাকআত আদায় করে নিবে। তা তোমার পূর্ববর্তী সালাতকে বিতর করে দিবে। ক্বাসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমরা সাবালক হয়ে লোকদের তিন রাকআত বিতর আদায় করিতে দেখেছি। উভয় নিয়মেরই অবকাশ রয়েছে। আমি আশা করি এর কোনটিই দূষনীয় নয়।
৯৯৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এগার রাকআত সালাত আদায় করিতেন। এ ছিল তাহাঁর রাত্রিকালীন সালাত। এতে তিনি এমন দীর্ঘ সিজদা করিতেন যে, তাহাঁর মাথা উঠাবার পূর্বে তোমাদের কেউ পঞ্চাশ আয়াত পড়তে পারে এবং ফাজরের সালাতের পূর্বে তিনি আরো দু রাকআত পড়তেন। অতঃপর তিনি ডান কাতে শুয়ে বিশ্রাম করিতেন, সালাতের জন্য মুআয্যিনের আসা পর্যন্ত।
১৪/২. অধ্যায়ঃ বিতরের ওয়াক্ত।
আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে ঘুমানোর পূর্বে বিতর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছন।
৯৯৫. আনাস ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাদি.) কে বললাম, ফজরের পূর্বের দু রাকআতে আমি কিরআত দীর্ঘ করব কি-না, এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) রাতে দু দু রাকআত করে সালাত আদায় করিতেন এবং এক রাকআত বিতর আদায় করিতেন । অতঃপর ফজরের সালাতের পূর্বে তিনি দু রাকআত এমনভাবে আদায় করিতেন যেন ইক্বামাতের শব্দ তাহাঁর কানে আসছে। রাব্বী হাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, অর্থাৎ তাড়াতাড়ি।
৯৯৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রাতের সকল অংশে (অর্থাৎ বিভিন্ন রাতে বিভিন্ন সময়ে) বিতর আদায় করিতেন আর (জীবনের) শেষ দিকে সাহরীর সময় তিনি বিতর আদায় করিতেন।
১৪/৩. অধ্যায়ঃ বিতরের জন্য নাবী (সাঃআঃ) কর্তৃক তাহাঁর পরিবার-পরিজনকে জাগানো।
৯৯৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) রাতে সালাত আদায় করিতেন, তখন আমি তাহাঁর বিছানায় আড়াআড়িভাবে ঘুমিয়ে থাকতাম। অতঃপর তিনি যখন বিতর পড়ার ইচ্ছা করিতেন, তখন আমাকে জাগিয়ে দিতেন এবং আমিও বিতর আদায় করে নিতাম।
১৪/৪. অধ্যায়ঃ বিতর যেন রাতের সর্বশেষ সালাত হয়।
৯৯৮. আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বিতরকে তোমাদের রাতের শেষ সালাত করিবে।
১৪/৫. অধ্যায়ঃ সওয়ারী জন্তুর উপর বিতরের সালাত।
৯৯৯. সাঈদ ইবনু ইয়াসার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) এর সঙ্গে মক্কার পথে সফর করছিলাম। সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি যখন ফজর হয়ে যাবার ভয় করলাম, তখন সওয়ারী হইতে নেমে পড়লাম এবং বিতরের সালাত আদায় করলাম। অতঃপর তাহাঁর সঙ্গে মিলিত হলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কোথায় ছিলে? আমি বললাম, ভোর হয়ে যাবার ভয়ে নেমে বিতরের নামায আদায় করেছি। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর মধ্যে কি তোমার জন্য উত্তম আদর্শ নেই? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম ! তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উটের পিঠে বিতরের সালাত আদায় করিতেন।
১৪/৬. অধ্যায়ঃ সফর অবস্থায় বিতর।
১০০০. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সফরে ফরয সালাত ব্যতীত তাহাঁর সওয়ারী হইতেই ইঙ্গিতে রাতের সালাত আদায় করিতেন সওয়ারী যে দিকেই ফিরুক না কেন। আর তিনি বাহনের উপরেই বিতর আদায় করিতেন।
১৪/৭. অধ্যায়ঃ রুকুর আগে ও পরে কুনুত পাঠ করা।
১০০১. মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, ফজরের সালাতে কি নাবী (সাঃআঃ) কুনূত পড়েছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো তিনি কি রুকুর পূর্বে কুনূত পড়েছেন? তিনি বলিলেন, কিছু সময় রুকুর পরে পড়েছেন।
১০০২. আসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)-কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, কুনূত অবশ্যই পড়া হত। আমি জিজ্ঞেস করলাম রুকুর পূর্বে না পরে? তিনি বলিলেন, রুকূর পূর্বে। আসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, অমুক ব্যক্তি আমাকে আপনার বরাত দিয়ে বলেছেন যে, আপনি বলেছেন, রুকুর পরে। তখন আনাস (রাদি.) বলেন, সে ভুল বলেছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) রুকুর পরে এক মাস ব্যাপী কুনূত পাঠ করিয়াছেন। আমার জানা মতে, তিনি সত্তর জন সাহাবীর একটি দল, যাদের কুর্রা (অভিজ্ঞ ক্বারীগণ) বলা হতো মুশরিকদের কোন এক কওমের উদ্দেশ্যে পাঠান। এরা সেই কাঊম নয়, যাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বদ দুআ করেছিলেন। বরং যাদের সাথে তাহাঁর চুক্তি ছিল (এবং তারা চুক্তি ভঙ্গ করে ক্বারীগণকে হত্যা করেছিল) তিনি এক মাস ব্যাপী কুনূতে সেসব কাফিরদের জন্য অভিসম্পাত করেছিলেন।
১০০৩. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একমাস ব্যাপী নাবী (সাঃআঃ) রিল ও যাক্ওয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে কুনূতে দুআ পাঠ করেছিলেন।
১০০৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মাগরিব ও ফজরের সালাতে কুনূত পড়া হত।
Leave a Reply