জুমার দিনের আমল -গোসল, সুগন্ধি, আযান, খুতবা, সালাত

জুমার দিনের আমল -গোসল, সুগন্ধি, আযান, খুতবা, সালাত

জুমার দিনের আমল -গোসল, সুগন্ধি, আযান, খুতবা, সালাত >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ১১, জুমা, অধ্যায়ঃ (১-৪১)=৪১টি

১১/১. অধ্যায়ঃ জুমুআ ফরয হবার বিবরণ।
১১/২. অধ্যায়ঃ জুমুআর দিন গোসল করার তাৎপর্য। জুমুআর দিবসে শিশু কিংবা নারীদের (সালাতের জন্য) উপস্থিতি কি প্রয়োজন?
১১/৩. অধ্যায়ঃ জুমুআর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার।
১১/৪. অধ্যায়ঃ জুমুআর মর্যাদা।
১১/৫.অধ্যায়ঃ
১১/৬. অধ্যায়ঃ জুমুআর জন্য তৈল ব্যবহার করা।
১১/৭. অধ্যায়ঃ যা আছে তার মধ্যে থেকে উত্তম পোশাক পরিধান করিবে।
১১/৮. অধ্যায়ঃ জুমুআর দিন মিস্‌ওয়াক করা।
১১/৯. অধ্যায়ঃ অন্যের মিস্‌ওয়াক দিয়ে মিস্‌ওয়াক করা।
১১/১০. অধ্যায়ঃ জুমুআর দিন ফজরের সালাতে কী পড়তে হইবে?
১১/১১. অধ্যায়ঃ গ্রামে ও শহরে জুমুআর সালাত।
১১/১২. অধ্যায়ঃ মহিলা, বালক-বালিকা এবং অন্য যারা জুমুআয় উপস্থিত হয় না, তাদের কি গোসল করা জরুরী?
১১/১৩. অধ্যায়ঃ
১১/১৪. অধ্যায়ঃ বৃষ্টির কারণে জুমুআর সালাতে উপস্থিত না হবার অবকাশ।
১১/১৫. অধ্যায়ঃ কতদূর হইতে জুমুআর সালাতে আসবে এবং জুমুআ কার উপর ওয়াজিব?
১১/১৬. অধ্যায়ঃ সূর্য হেলে গেলে জুমুআর সময় হয়
১১/১৭. অধ্যায়ঃ জুমুআর দিন যখন সূর্যের উত্তাপ প্রখর হয়।
১১/১৮. অধ্যায়ঃ জুমুআর জন্য পায়ে হেঁটে চলা
১১/১৯. অধ্যায় : জুমুআর দিন দুজনের মাঝে ফাঁক করে না।
১১/২০. অধ্যায় : জুমুআর দিন কোন ব্যক্তি তার ভাইকে উঠিয়ে দিয়ে তার জায়গায় বসবে না।
১১/২১. অধ্যায় : জুমুআর দিনের আযান।
১১/২২. অধ্যায় : জুমুআর দিন একজন মুয়ায্‌যিনের আযান দেয়া।
১১/২৩. অধ্যায় : ইমাম মিম্বারের উপর বসে জবাব দিবেন, যখন আযানের আওয়ায শ্রবণ করেন।
১১/২৪. অধ্যায় : আযানের সময় মিম্বারের উপর বসা।
১১/২৫. আধ্যায় : খুতবার সময় আযান।
১১/২৬. অধ্যায়ঃ মিম্বারের উপর খুতবা দেয়া।
১১/২৭. অধ্যায়ঃ দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করা।
১১/২৮. অধ্যায়ঃ খুতবার সময় মুসল্লীগণের ইমামের দিকে আর ইমাম মুসল্লীগণের দিকে মুখ করা।
১১/২৯. অধ্যায়ঃ খুতবায় আল্লাহর হামদের পর আমমা বাদু বলা।
১১/৩০. অধ্যায়ঃ জুমুআর দিন দু খুতবার মধ্যখানে বসা।
১১/৩১. অধ্যায়ঃ মনোযোগের সাথে খুতবা শোনা।
১১/৩২. অধ্যায়ঃ ইমাম খুতবা দেয়ার সময় কাউকে আসতে দেখলে তাকে দু রাকআত সালাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া।
১১/৩৩. অধ্যায়ঃ ইমাম খুতবা দেয়ার সময় যিনি মসজিদে আগমন করবেন তার সংক্ষেপে দু রাকআত সালাত আদায় করা।
১১/৩৪. অধ্যায়ঃ খুতবায় দু হাত উত্তোলন করা।
১১/৩৫. অধ্যায়ঃ জুমুআর দিন খুতবায় বৃষ্টির জন্য দুআ পাঠ করা।
১১/৩৬. অধ্যায়ঃ জুমুআর দিন 1139ইমাম খুতবাহ দেয়ার সময় অন্যকে চুপ করানো।
১১/৩৭. অধ্যায়ঃ জুমুআর দিনের সে মুহূর্তটি।
১১/৩৮. অধ্যায়ঃ জুমুআর সালাতে কিছু মুসল্লী যদি ইমামের নিকট হইতে চলে যায় তাহলে ইমাম ও অবশিষ্ট মুসল্লীগণের সালাত বৈধ হইবে।
১১/৩৯. অধ্যায় : জুমুআর (ফরয সালাতের) পূর্বে ও পরে সালাত আদায় করা।
১১/৪০. অধ্যায় : মহান আল্লাহর বাণী : “অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হইবে তখন তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করিবে।” (সুরা জুমুআ ৬২/১০)
১১/৪১. অধ্যায় : জুমুআর পরে কায়লুলাহ (দুপুরে শয়ন ও হালকা নিদ্রা)।

১১/১. অধ্যায়ঃ জুমা ফরয হবার বিবরণ।

এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার বাণীঃ জুমার দিনে যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের প্রতি ধাবিত হও এবং বন্ধ করে দাও বেচা-কেনা। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে। —– অর্থ ধাবিত হও। (সুরা আল-জুমা ৬২/৯)

৮৭৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন যে, আমরা দুনিয়ায় (আগমনের দিক দিয়ে) সর্বশেষ, কিন্তু কিয়ামাতের দিন আমরা মর্যাদার ব্যাপারে সবার পূর্বে। ব্যতিক্রম এই যে, আমাদের পূর্বে তাদের কিতাব প্রদান করা হয়েছে। অতঃপর তাদের সে দিন যে দিন তাদের জন্য ইবাদত ফরয করা হয়েছিল তারা এ বিষয়ে মতভেদ করেছে। কিন্তু সে বিষয়ে আল্লাহ আমাদের হিদায়েত করিয়াছেন। কাজেই এ ব্যাপারে লোকেরা আমাদের পশ্চাদ্বর্তী। ইয়াহূদীদের (সম্মানীয় দিন হচ্ছে) আগামী কাল (শনিবার) এবং নাসারাদের আগামী পরশু (রোববার)।

১১/২. অধ্যায়ঃ জুমার দিন গোসল করার তাৎপর্য। জুমার দিবসে শিশু কিংবা নারীদের (সালাতের জন্য) উপস্থিতি কি প্রয়োজন?

৮৭৭. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ জুমার সালাতে আসলে সে যেন গোসল করে।

৮৭৮. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) জুমার দিন দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন, এ সময় নাবী (সাঃআঃ)-এর প্রথম যুগের একজন মুহাজির সাহাবা এলেন। উমর (রাদি.) তাঁকে ডেকে বলিলেন, এখন সময় কত? তিনি বলিলেন, আমি ব্যস্ত ছিলাম, তাই ঘরে ফিরে আসতে পারিনি। এমন সময় আযান শুনে কেবল উযূ করে নিলাম। উমর (রাদি.) বলিলেন, কেবল উযূই? অথচ আপনি জানেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) গোসলের নির্দেশ দিতেন।

৮৭৯. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ জুমার দিনে প্রত্যেক সাবালকের জন্য গোসল করা ওয়াজিব।

১১/৩. অধ্যায়ঃ জুমার জন্য সুগন্ধি ব্যবহার।

৮৮০. আমর ইবনু সুলাইম আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) বলেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ জুমার দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা কর্তব্য। আর মিস্‌ওয়াক করিবে এবং সুগন্ধি পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করিবে।

আমর (ইবনু সুলায়ম) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, গোসল সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তা ওয়াজিব ৷ কিন্তু মিস্‌ওয়াক ও সুগন্ধি ওয়াজিব কিনা তা আল্লাহই ভাল জানেন। তবে হাদীসে এ রকমই আছে।

আবু আবদুল্লাহ বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু বক্‌র ইবনু মুনকাদির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হলেন মুহন্মাদ ইবনু মুনকাদির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর ভাই ৷ কিন্তু তিনি আবু বক্‌র হিসেবেই পরিচিত নন। বুকায়র ইবনু আশাজ্জ, সাঈদ ইবনু আবু হিলাল সহ অনেকে তাহাঁর হইতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কুনিয়াত (উপনাম) ছিল আবু বক্‌র ও আবু আবদুল্লাহ।

(মুসলিম ৭/১, হাদীস ৮৪৬, আহমাদ ১১২৫০) (আ.প্র. ৮২৯, ই. ফা. ৮৩৬)

১১/৪. অধ্যায়ঃ জুমার মর্যাদা।

৮৮১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কুরবানী করিল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কুরবানী করিল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করিল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করিল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করিল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করিল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করিল। পরে ইমাম যখন খুতবা দেয়ার জন্য বের হন তখন মালাইকা (ফেরেশতাগণ) যিক্‌র শ্রবণের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকে।

১১/৫.অধ্যায়ঃ

৮৮২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

জুমার দিন উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) খুতবা দিচ্ছিলেন, এ সময় এক ব্যক্তি মসজিদে আসলে উমর (রাদি.) তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, সালাতে সময় মত আসতে তোমরা কেন বাধাগ্রস্ত হও? তিনি বলিলেন, আযান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি উযূ করেছি। তখন উমর (রাদি.) বলিলেন, তোমরা কি নাবী (সাঃআঃ)-কে এ কথা বলিতে শোননি যে, যখন তোমাদের কেউ জুমার সালাতে রওয়ানা দেয়, তখন সে যেন গোসল করে নেয়।

১১/৬. অধ্যায়ঃ জুমার জন্য তৈল ব্যবহার করা।

৮৮৩. সালমান ফারসী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হইতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দু জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমা হইতে আরেক জুমা পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।

৮৮৪. তাঊস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমি ইবনূ আব্বাস (রাদি.)-কে বললাম, সাহাবীগণ বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ জুমার দিন গোসল কর এবং মাথা ধুয়ে ফেল যদিও তোমরা জুনুবী না হয়ে থাক এবং সুগন্ধি ব্যবহার কর। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, গোসল সম্পর্কে নির্দেশ ঠিকই আছে, কিন্তু সুগন্ধি সম্পর্কে আমি জানি না।

৮৮৫. তাঊস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি যখন, জুমার দিন গোসল সম্বন্ধে নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণীর উল্লেখ করেন তখন আমি ইবনূ আব্বাস (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃআঃ) যখন পরিবার পরিজনের সঙ্গে অবস্থান করিতেন তখনও কি তিনি সুগন্ধি বা তেল ব্যবহার করিতেন? তিনি বলিলেন, আমি তা জানি না

৮৮৬. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) মসজিদে নববীর দরজার নিকটে এক জোড়া রেশমী পোশাক (বিক্রি হইতে) দেখে নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! যদি এটি আপনি খরিদ করিতেন আর জুমার দিন এবং যখন আপনার নিকট প্রতিনিধি দল আসে তখন আপনি তা পরিধান করিতেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ এটা তো সে ব্যক্তিই পরিধান করে, আখিরাতে যার (মঙ্গলের) কোন অংশ নেই। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এ ধরনের কয়েক জোড়া পোশাক আসে, তখন তার এক জোড়া তিনি উমর (রাদি.)-কে প্রদান করেন। উমর (রাদি.) আরয করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাকে এটি পরতে দিলেন অথচ আপনি উতারিদের (রেশম) পোশাক সম্পর্কে যা বলার তা তো বলেছিলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি তোমাকে এটি নিজের পরার জন্য দেইনি। উমর ইবনূ খাত্তাব (রাদি.) তখন এটি মক্কায় তাহাঁর এক ভাইকে দিয়ে দেন, যে তখন মুশরিক ছিল।

১১/৭. অধ্যায়ঃ যা আছে তার মধ্যে থেকে উত্তম পোশাক পরিধান করিবে।

৮৮৬. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) মসজিদে নববীর দরজার নিকটে এক জোড়া রেশমী পোশাক (বিক্রি হইতে) দেখে নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! যদি এটি আপনি খরিদ করিতেন আর জুমার দিন এবং যখন আপনার নিকট প্রতিনিধি দল আসে তখন আপনি তা পরিধান করিতেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ এটা তো সে ব্যক্তিই পরিধান করে, আখিরাতে যার (মঙ্গলের) কোন অংশ নেই। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এ ধরনের কয়েক জোড়া পোশাক আসে, তখন তার এক জোড়া তিনি উমর (রাদি.)-কে প্রদান করেন। উমর (রাদি.) আরয করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাকে এটি পরতে দিলেন অথচ আপনি উতারিদের (রেশম) পোশাক সম্পর্কে যা বলার তা তো বলেছিলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি তোমাকে এটি নিজের পরার জন্য দেইনি। উমর ইবনূ খাত্তাব (রাদি.) তখন এটি মক্কায় তাহাঁর এক ভাইকে দিয়ে দেন, যে তখন মুশরিক ছিল।

(৯৪৮,২১০৪, ২৬১২, ২৬১৯, ৩০৫৪, ৫৮৪১, ৫৯৮১, ৬০৮১ মুসলিম ৩৭/ আওয়ালুল কিতাব?, হাদীস ২০৬৮, আহমাদ ৫৮০১) (আ.প্র. ৮৩৫ ই.ফা. ৮৪২)

১১/৮. অধ্যায়ঃ জুমার দিন মিস্‌ওয়াক করা।

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি মিস্‌ওয়াক করিতেন।

৮৮৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক সালাতের সাথে তাদের মিস্‌ওয়াক করার হুকুম করতাম।

(৭২৪০; মুসলিম ২/১৫, হাদীস ২৫২, আহমাদ ৭৪১৬) (আ.প্র. ৮৩৬, ই.ফা. ৮৪৩)

৮৮৮. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি মিস্‌ওয়াক সম্পর্কে তোমাদের যথেষ্ট বলেছি।

(আ. প্র. ৮৩৭, ই. ফা. ৮৪৪)

৮৮৯. হুযাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যখন রাতে সালাতের জন্য উঠতেন তখন দাঁত মেজে পরিস্কার করে নিতেন। (২৪৫)

(আ. প্র. ৮৩৮, ই.ফা. ৮৪৫)

১১/৯. অধ্যায়ঃ অন্যের মিস্‌ওয়াক দিয়ে মিস্‌ওয়াক করা।

৮৯০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুর রহমান ইবনু আবু বক্‌র (রাদি.) একটি মিস্‌ওয়াক হাতে নিয়ে দাঁত ঘষতে ঘষতে প্রবেশ করিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তার দিকে তাকালেন। আমি তাঁকে বললাম, হে আবদুর রহমান! মিস্‌ওয়াকটি আমাকে দাও। সে তা আমাকে দিল। আমি ব্যবহৃত অংশ ভেঙ্গে ফেললাম এবং তা চিবিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে দিলাম। তিনি আমার বুকে হেলান দিয়ে তা দিয়ে মিস্‌ওয়াক করিলেন।

(১৩৮৯, ৩১০০, ৩৭৭৪, ৪৪৩৮, ৪৪৪৬, ৪৪৪৯, ৪৪৫০, ৪৪৫১, ৫২১৭, ৬৫১০) (আ. প্র. ৮৩৯, ই.ফা. ৮৪৬). হাদিসের মানঃ নির্ণীত নয়

১১/১০. অধ্যায়ঃ জুমার দিন ফজরের সালাতে কী পড়তে হইবে?

৮৯১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) জুমার দিন ফজরের সালাতে الم تَنْزِيلُ এবং وَهَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ حِينٌ مِنْ الدَّهْرِ দুটি সুরা তেলাওয়াত করিতেন।

(১০৬৮; মুসলিম ৭/৬৪, হাদীস ৮৮০) (আ.প্র. ৮৪০, ই.ফা. ৮৪৭)

১১/১১. অধ্যায়ঃ গ্রামে ও শহরে জুমার সালাত।

৮৯২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর মসজিদে জুমার সালাত অনুষ্ঠিত হবার পর প্রথম জুমার সালাত অনুষ্ঠিত হয় বাহরাইনে জুওয়াসা নামক স্থানে অবস্থিত আবদুল কায়স গোত্রের মসজিদে।

(৪৩৭১) (আ.প্র. ৮৪১, ই.ফা. ৮৪৮)

৮৯৩. উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল। লায়স ইবনু সাদ (রাদি.) আরো অতিরিক্ত বলেন, (পরবর্তী রাবী) ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আমি একদা ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর সঙ্গে ওয়াদিউল কুরা নামক স্থানে ছিলাম। তখন রুযাইক (ইবনু হুকায়ম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর নিকট লিখলেন, আপনি কী মনে করেন, আমি কি (এখানে) জুমার সালাত আদায় করব? রুযায়ক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তখন সেখানে তাহাঁর জমির কৃষি কাজের তত্ত্বাবধান করিতেন। সেখানে একদল সুদানী ও অন্যান্য লোক বাস করত। রুযায়ক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সে সময় আইলা শহরের (আমীর) ছিলেন। ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাঁকে জুমা কায়িম করার নির্দেশ দিয়ে লিখেছিলেন এবং আমি তাকে এ নির্দেশ দিতে শুনলাম। সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্থদের (দায়িত্ব) জিজ্ঞাস করা হইবে। ইমাম [১] একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি, তাঁকে তাহাঁর অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হইবে। পুরুষ তার পরিবার বর্গের অভিভাবক, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হইবে। নারী তার স্বামী-গৃহের কর্ত্রী, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হইবে। খাদিম তার মনিবের ধন-সম্পদের রক্ষক, তাকেও তার মনিবের ধন-সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হইবে। ইবনু উমর (রাদি.) বলেন, আমার মনে হয়, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আরো বলেছেনঃ পুত্র তার পিতার ধন-সম্পদের রক্ষক এবং এগুলো সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হইবে। তোমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং সবাইকে তাদের অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হইবে।

(২৪০৯, ২৫৫৪, ২৫৫৮, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫৬০০, ৭১৩৮) (আ.প্র. ৮৪২, ই.ফা. ৮৪৯). [১] ইমাম শব্দ রাষ্ট্রের কর্ণধার, যে কোন কাজের তত্ত্বাবধায়ক, ব্যবস্থাপক ও সালাতের ইমাম অর্থে ব্যবহৃত হয়।

১১/১২. অধ্যায়ঃ মহিলা, বালক-বালিকা এবং অন্য যারা জুমায় উপস্থিত হয় না, তাদের কি গোসল করা জরুরী?

ইবনু উমর (রাদি.) বলেছেন, যাদের উপর জুমার সালাত ওয়াজিব, শুধু তাদের গোসল করা প্রয়োজন।

৮৯৪. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, “যে ব্যক্তি জুমার সালাতে আসবে সে যেন গোসল করে।”

৮৯৫. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) – বলেছেনঃ প্রত্যেক সাবালকের জন্য জুমার দিন গোসল করা ওয়াজিব।

৮৯৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমরা দুনিয়ার (আগমনের দিক দিয়ে) সর্বশেষে। কিন্তু কিয়ামাতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে সবার পূর্বে। তবে তাদের কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে এবং আমাদের তা দেয়া হয়েছে তাদের পরে। অতঃপর এই দিন (শুক্রবার নির্ধারণ) সম্বন্ধে তাদের মধ্যে মতানৈক্য হয়েছে। আল্লাহ আমাদের এ শুক্রবার সম্পর্কে হিদায়েত দান করিয়াছেন। পরের দিন (শনিবার) ইয়াহূদীদের এবং তারপরের দিন (রোববার) নাসারাদের। অতঃপর কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন।

৮৯৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন প্রত্যেক মুসলিমের উপর হক রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনের এক দিন সে গোসল করিবে, তার মাথা ও শরীর ধৌত করিবে।

৮৯৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের উপর আল্লাহর হক রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনে একবার সে যেন গোসল করে।

১১/১৩. অধ্যায়ঃ

৮৯৯. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তোমরা মহিলাদেরকে রাতে (সালাতের জন্য) মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিবে।

৯০০. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমর (রাদি.)-এর স্ত্রী (আতিকাহ বিনত যায়দ) ফজর ও ইশার সালাতের জামাআতে মসজিদে হাযির হইতেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কেন (সালাতের জন্য) বের হন? অথচ আপনি জানেন যে, উমর (রাদি.) তা অপছন্দ করেন এবং মর্যাদা হানিকর মনে করেন। তিনি জবাব দিলেন, তা হলে কিসে বাধা দিচ্ছে যে, উমর (রাদি.) স্বয়ং আমাকে নিষেধ করছেন না? বলা হল, তাঁকে বাধা দেয় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর বাণীঃ আল্লাহর দাসীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে বারণ করো না।

১১/১৪. অধ্যায়ঃ বৃষ্টির কারণে জুমার সালাতে উপস্থিত না হবার অবকাশ।

৯০১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি তাহাঁর মুয়ায্‌যিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বলিলেন, যখন তুমি (আযানে)  

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ বলবে, তখন

 حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ

হাইয়া আলাস্‌ সালাহ বলবে না, বলবে,

 صَلُّوا فِي بُيُوتِكُمْ‏

“সাল্‌লু ফী বুয়ুতিকুম” (তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে সালাত আদায় কর)। তা লোকেরা অপছন্দ করিল। তখন তিনি বললেনঃ আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিই (রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ) তা করিয়াছেন। জুমা নিঃসন্দেহে জরুরী। আমি অপছন্দ করি তোমাদেরকে মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলতে।

১১/১৫. অধ্যায়ঃ কতদূর হইতে জুমার সালাতে আসবে এবং জুমা কার উপর ওয়াজিব?

(আরবী) কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ জুমার দিন যখন সালাতের জন্য ডাকা হয়, (তখন) আল্লাহর যিকরের দিকে দৌড়িয়ে যাওয়া। (সুরা আল-জুমা ৬২/৯)

আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, যখন তুমি কোন বড় শহরে বাস কর, জুমার দিন সালাতের জন্য আযান দেয়া হলে, তা তুমি শুনতে পাও বা না পাও, তোমাকে অবশ্যই জামাআতে হাযির হইতে হইবে। আনাস (রাদি.) যখন (বস্‌রা হইতে) দু ফারসাখ্‌ (ছয় মাইল) দূরে অবস্থিত জাবিয়া নামক স্থানে তাহাঁর বাড়িতে অবস্থান করিতেন, তখন কখনো জুমা পড়তেন, কখনো পড়তেন না।

৯০২. নাবী (সাঃআঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, লোকজন তাদের বাড়ি ও উঁচু এলাকা হইতেও জুমার সালাতের জন্য পালাক্রমে আসতেন। আর যেহেতু তারা ধুলো-বালির মধ্য দিয়ে আগমন করিতেন, তাই তারা ধূলি মলিন ও ঘর্মাক্ত হয়ে যেতেন। তাঁদের দেহ হইতে ঘাম বের হত। একদা তাদের একজন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট আসেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) আমার নিকট ছিলেন। তিনি তাঁকে বললেনঃ যদি তোমরা এ দিনটিতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে।

১১/১৬. অধ্যায়ঃ সূর্য হেলে গেলে জুমার সময় হয়

উমর, আলী, নুমান ইবনু বাশীর এবং আমর ইবনু হুরায়স (রাদি.) হইতেও অনুরূপ উল্লেখ রয়েছে।

৯০৩. ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আমরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জুমার দিনে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। আমরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আয়িশা (রাদি.) বলেছেন যে, লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করিতেন। যখন তারা দুপুরের পরে জুমার জন্য যেতেন তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাঁদের বলা হল, যদি তোমরা গোসল করে নিতে।

৯০৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জুমার সালাত আদায় করিতেন, যখন সূর্য হেলে যেত।

৯০৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা প্রথম ওয়াক্তেই জুমার সালাতে যেতাম এবং জুমার পরে কাইলূলা (দুপুরের বিশ্রাম) করতাম।

১১/১৭. অধ্যায়ঃ জুমার দিন যখন সূর্যের উত্তাপ প্রখর হয়।

৯০৬. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) শীতের সময় প্রথম ওয়াক্তেই সালাত আদায় করিতেন। আর তীব্র গরমের সময় ঠাণ্ডা করে (বিলম্ব করে- সালাত আদায় করিতেন। অর্থাৎ জুমার সালাত। ইউনুস ইবনু বুকায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাদের বলেছেন, আর তিনি সালাত শব্দের উল্লেখ করিয়াছেন, জুমা শব্দের উল্লেখ করেননি। আর বিশ্‌র ইবনু সাবিত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমাদের নিকট আবু খালদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করিয়াছেন যে, জুমার ইমাম আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি আনাস (রাদি.)-কে বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যুহরের সালাত কিরুপে আদায় করিতেন?

১১/১৮. অধ্যায়ঃ জুমার জন্য পায়ে হেঁটে চলা

এবং আল্লাহর বাণীঃ “তোমরা আল্লাহর যিকরের জন্য দৌড়িয়ে আস”।

যিনি বলেন, সাঈ এর অর্থ কাজ করা, গমন করা। কেননা, আল্লাহর বাণীঃ —-এর অন্তর্গত সাঈ-এর অর্থ হচ্ছে কাজ করা। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, তখন (জুমার আযানের পর) যাবতীয় ক্রয়-বিক্রয় হারাম হয়ে যায়। আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, শিল্প-কারিগরির যাবতীয় কাজই তখন নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ইবরাহীম ইবন সাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করেন, জুমার দিন যখন মুআয্‌যিন সফররত অবস্থায় আযান দেয় তখন তার জন্য জুমার সালাতে উপস্থিত হওয়া উচিত ৷

৯০৭. আবায়া ইবনু রিফাআ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি জুমার সালাতে যাবার কালে আবু আবস্‌ (রাদি.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি বলিলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, যার দুপা আল্লাহর পথে ধূলি ধূসরিত হয়, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।

৯০৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, যখন সালাত শুরু হয়, তখন দৌড়িয়ে গিয়ে সালাতে যোগদান করিবে না, বরং হেঁটে গিয়ে সালাতে যোগদান করিবে। সালাতে ধীর-স্থিরভাবে যাওয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কাজেই জামাআতের সাথে সালাত যতটুকু পাও আদায় কর, আর যা ছুটে গেছে, পরে তা পূর্ণ করে নাও।

৯০৯. আবু ক্বাতাদা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ তোমরা আমাকে না দেখা পর্যন্ত সালাতে দাঁড়াবে না। তোমাদের জন্য ধীর-স্থির থাকা অত্যাবশ্যক।

১১/১৯. অধ্যায় : জুমার দিন দুজনের মাঝে ফাঁক করে না।

৯১০. সালমান ফারসী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, অতঃপর তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর (মসজিদে) যায়, আর দুজনের মধ্যে ফাঁক করে না এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ সালাত আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুতবার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

১১/২০. অধ্যায় : জুমার দিন কোন ব্যক্তি তার ভাইকে উঠিয়ে দিয়ে তার জায়গায় বসবে না।

৯১১. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) নিষেধ করিয়াছেন, যেন কেউ তার ভাইকে স্বীয় বসার স্থান হইতে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সে জায়গায় না বসে। ইবনু জুরাইজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ কি শুধু জুমার ব্যাপারে? তিনি বলিলেন, জুমা ও অন্যান্য (সালাতের) ব্যাপারেও।

১১/২১. অধ্যায় : জুমার দিনের আযান।

৯১২. সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আবু বকর (রাদি.) এবং উমর (রাদি.)-এর সময় জুমার দিন ইমাম যখন মিম্বরের উপর বসতেন, তখন প্রথম আযান দেয়া হত। পরে যখন উসমান (রাদি.) খলীফা হলেন এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি যাওরাহ হইতে তৃতীয়

[১] আযান বৃদ্ধি করেন। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যাওরাহ হল মাদীনার অদূরে বাজারের একটি স্থান।. [১] এর পূর্বে কেবল খুতবার আযান ও ইক্বামাত প্রচলন ছিল। এখানে থেকে তৃতীয় অর্থাৎ সালাতের জন্য বর্তমানে প্রচলিত আযানের প্রচলন শুরু হয়।

১১/২২. অধ্যায় : জুমার দিন একজন মুয়ায্‌যিনের আযান দেয়া।

৯১৩. সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মদীনার অধিবাসীদের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল, তখন জুমার দিন তৃতীয় আযান যিনি বৃদ্ধি করিলেন, তিনি হলেন, উসমান ইবনু আফ্‌ফান (রাদি.)।

নাবী (সাঃআঃ)-এর সময় (জুমার জন্য) একজন ব্যতীত মুয়ায্‌যিন ছিল না এবং জুমার দিন আযান দেয়া হত যখন ইমাম বসতেন অর্থাৎ মিম্বরের উপর খুতবার পূর্বে।

১১/২৩. অধ্যায় : ইমাম মিম্বারের উপর বসে জবাব দিবেন, যখন আযানের আওয়ায শ্রবণ করেন।

৯১৪. মুআবিয়াহ ইবনু আবু সুফিয়ান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি মিম্বারে বসা অবস্থায় মুয়ায্‌যিন আযান দিলেন। মুয়ায্‌যিন বলিলেন,

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার” মুআবিয়াহ (রাদি.) বলিলেন,

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।” মুয়ায্‌যিন বলিলেন,

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

“আশ্‌হাদু আল্ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” তিনি বলিলেন এবং আমিও বলছি

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

“আশ্‌হাদু আল্ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ”। মুয়ায্‌যিন বলিলেন,

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

“আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” তখন মুআবিয়াহ বলিলেন এবং আমিও বললাম। যখন (মুয়ায্‌যিন) আযান শেষ করিলেন, তখন মুআবিয়াহ (রাদি.) বলিলেন, হে লোক সকল! তোমরা আমার হইতে যে বাক্যগুলো শুনেছ, তা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে মুয়ায্‌যিনের আযানের সময় এ মজলিসে বাক্যগুলো বলিতে আমি শুনিয়াছি।

১১/২৪. অধ্যায় : আযানের সময় মিম্বারের উপর বসা।

৯১৫. সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মসজিদে মুসল্লীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, উসমান (রাদি.) জুমার দিন দ্বিতীয় আযানের নির্দেশ দেন। অথচ (ইতোপূর্বে) জুমার দিন ইমাম যখন (মিম্বারের উপর) বসতেন, তখন আযান দেয়া হতো।

১১/২৫. আধ্যায় : খুতবার সময় আযান।

৯১৬. সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আবু বক্‌র এবং উমর (রাদি.)-এর যুগে জুমার দিন ইমাম যখন মিম্বারের উপর বসতেন, তখন প্রথম আযান দেয়া হত। অত:পর যখন উসমান (রাদি.)-এর খিলাফাতের সময় এল এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন জুমার দিন তৃতীয় [১] আযানের নির্দেশ দেন। যাওরা নামক স্থান হইতে এ আযান দেয়া হয়, পরে এ আযানের সিলসিলা চলতে থাকে।

[১] সে যুগে ইকামত কে আযান হিসেবে গন্য করা হত।

১১/২৬. অধ্যায়ঃ মিম্বারের উপর খুতবা দেয়া।

আনাস (রাদি.) বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) মিম্বার হইতে খুতবা দিতেন।

৯১৭. আবু হাযিম ইবনু দীনার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

(একদিন) কিছু লোক সাহল ইবনু সাদ সাঈদীর নিকট আগমন করে এবং মিম্বরটি কো্ন কাঠের তৈরি ছিল, এ নিয়ে তাদের মনে প্রশ্ন জেগে ছিল। তারা এ সম্পর্কে তাহাঁর নিকট জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আমি সম্যকরূপে অবগত আছি যে, তা কিসের ছিল। প্রথম যেদিন তা স্থাপন করা হয় এবং প্রথম যে দিন এর উপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বসেন তা আমি দেখেছি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আনসারদের অমুক মহিলার (বর্ণনাকারী বলেন, সাহল (রাদি.) তার নামও উল্লেখ করেছিলেন) নিকট লোক পাঠিয়ে বলেছিলেন, তোমার কাঠমিস্ত্রি গোলামকে আমার জন্য কিছু কাঠ দিয়ে এমন জিনিস তৈরি করার নির্দেশ দাও, যার উপর বসে আমি লোকদের সাথে কথা বলিতে পারি। অতঃপর সে মহিলা তাকে আদেশ করেন এবং সে (মদীনাহ হইতে নয় মাইল দূরবর্তী) গাবার ঝাউ কাঠ দ্বারা তা তৈরি করে নিয়ে আসে। মহিলাটি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট তা পাঠিয়েছেন। নাবী (সাঃআঃ)-এর আদেশে এখানেই তা স্থাপন করা হয়। অতঃপর আমি দেখেছি, এর উপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সালাত আদায় করিয়াছেন। এর উপর উঠে তাকবীর দিয়েছেন এবং এখানে (দাঁড়িয়ে) রুকূ করিয়াছেন। অতঃপর পিছনের দিকে নেমে এসে মিম্বারের গোড়ায় সিজদা করিয়াছেন এবং (এ সিজদা) পুনরায় করিয়াছেন, অতঃপর সালাত শেষ করে সমবেত লোকদের দিকে ফিরে বলেছেনঃ হে লোক সকল! আমি এটা এ জন্য করেছি যে, তোমরা যেন আমার অনুসরণ করিতে এবং আমার সালাত শিখে নিতে পার।

৯১৮. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (মসজিদে নাববীতে) এমন একটি (খেজুর গাছের) খুঁটি ছিল যার সাথে হেলান দিয়ে নাবী (সাঃআঃ) দাঁড়াতেন। অতঃপর যখন তাহাঁর জন্য মিম্বর স্থাপন করা হল, আমরা তখন খুঁটি হইতে দশ মাসের গর্ভবতী উট্‌নীর মত ক্রন্দন করার শব্দ শুনতে পেলাম। এমনটি নাবী (সাঃআঃ) মিম্বার হইতে নেমে এসে খুঁটির উপর হাত রাখলেন।

৯১৯. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে মিম্বারের উপর হইতে খুতবা দিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার সালাতে আসে সে যেন গোসল করে নেয়।

১১/২৭. অধ্যায়ঃ দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করা।

আনাস (রাদি.) বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন।

৯২০. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। অতঃপর বসতেন এবং পুনরায় দাঁড়াতেন। যেমন তোমরা এখন করে থাক।

১১/২৮. অধ্যায়ঃ খুতবার সময় মুসল্লীগণের ইমামের দিকে আর ইমাম মুসল্লীগণের দিকে মুখ করা।

ইবনু উমর ও আনাস (রাদি.) ইমামের দিকে মুখ করিতেন।

৯২১. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) একদা মিম্বারের উপর বসলেন এবং আমরা তাহাঁর চারদিকে (মুখ করে) বসলাম।

১১/২৯. অধ্যায়ঃ খুতবায় আল্লাহর হামদের পর আমমা বাদু বলা।

ইক্বরিমাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু আব্বাস (রাদি.) – এর সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।

৯২২. আস্‌মা বিনত আবু বক্‌র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি (একদিন) আয়েশা (রাদি.) এর নিকট গেলাম। লোকজন তখন সালাত আদায় করছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, লোকদের কী হয়েছে? তখন তিনি মাথা দিয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি কোন নিদর্শন? তিনি মাথা দিয়ে ইঙ্গিত করে, হ্যাঁ বলিলেন। (এরপর আমিও তাঁদের সঙ্গে সালাত যোগ দিলাম) অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সালাত এত দীর্ঘায়িত করিলেন যে, আমি প্রায় অজ্ঞান হইতে যাচ্ছিলাম। আমার পার্শ্বেই একটি চামড়ার মশকে পানি রাখা ছিল। আমি সেটা খুললাম এবং আমার মাথায় পানি দিতে লাগলাম। অতঃপর যখন সূর্য উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সালাত সমাপ্ত করিলেন এবং লোকজনের উদ্দেশ্যে খুতবা পেশ করিলেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করিলেন। অতঃপর বলিলেন, আমমা বাদু। আসমা (রাদি.) বলেন, তখন কয়েকজন আনসারী মহিলা শোরগোল করছিলেন। তাই আমি চুপ করাবার উদ্দেশ্যে তাঁদের প্রতি ঝুঁকে পড়লাম। অতঃপর আয়েশা (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি নাবী (সাঃআঃ) কী বলিলেন? আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, এমন কোন জিনিস নেই যা আমাকে দেখানো হয়নি আমি এ জায়গা হইতে সব কিছুই দেখেছি। এমন কি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখলাম। আমার নিকট ওয়াহী পাঠানো হয়েছে যে, তোমাদেরকে কবরে মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার ন্যায় অথবা তিনি বলেছেন, সে ফিতনার কাছাকাছি ফিতনায় ফেলা হইবে। (অর্থাৎ তোমাদেরকে পরীক্ষার সম্মুখীন করা হইবে) তোমাদের প্রত্যেককে (কবরে) উঠানো এবং প্রশ্ন করা হইবে, এ ব্যক্তি (রাসুলুল্লাহ) সম্পর্কে তুমি কী জান? তখন মুমিন অথবা মুকিন (নাবী (সাঃআঃ) এ দুটোর মধ্যে কোন শব্দটি বলেছিলেন এ ব্যাপারে বর্ণনাকারী হিশামের মনে সন্দেহ রয়েছে) বলবে, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল, তিনি মুহাম্মাদ (সাঃআঃ), তিনি আমাদের নিকট সুস্পষ্ট দালীল ও হিদায়েত নিয়ে এসেছিলেন। অতঃপর আমরা ঈমান এনেছি, তাহাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়েছি, তাহাঁর আনুগত্য করেছি এবং তাকে সত্য বলে গ্রহণ করেছি। তখন তাঁকে বলা হইবে, তুমি ঘুমিয়ে থাক, যেহেতু তুমি নেককার। তুমি যে তাহাঁর প্রতি ঈমান এনেছ তা আমরা অবশ্যই জানতাম। আর মুনাফিক বা মুরতাব (সন্দেহ পোষণকারী) (এ দুটোর মধ্যে কোন্ শব্দটি বলেছিলেন এ সম্পর্কে বর্ণনাকারী হিশামের মনে সন্দেহ রয়েছে)-কেও প্রশ্ন করা হইবে যে, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কী জান? উত্তরে সে বলবে, আমি কিছুই জানি না। অবশ্য মানুষকে তাহাঁর সম্পর্কে কিছু বলিতে শুনিয়াছি, আমিও তাই বলতাম। হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ফাতিমা (রাদি.) আমার নিকট যা বলেছেন, তা সবটুকু আমি উত্তমরূপে স্মরণ রেখেছি। তবে তিনি ওদের প্রতি যে কঠোরতা করা হইবে তাও উল্লেখ করিয়াছেন।

৯২৩. আমর ইবনু তাগলিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট কিছু মাল বা কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী উপস্থিত করা হলে তিনি তা বণ্টন করে দিলেন। বণ্টনের সময় কিছু লোককে দিলেন এবং কিছু লোককে বাদ দিলেন। অতঃপর তাহাঁর নিকট সংবাদ পৌঁছলো যে, যাদের তিনি দেননি, তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আল্লাহর প্রশংসা করিলেন ও তাহাঁর মহিমা বর্ণনা করিলেন, অতঃপর বললেনঃ আমমা বাদ। আল্লাহর শপথ! আমি কোন লোককে দেই আর কোন লোককে দেই না। যাকে আমি দেইনা সে, যাকে আমি দেই তাহাঁর চেয়ে আমার নিকট অধিক প্রিয়। তবে আমি এমন লোকদের দেই যাদের অন্তরে অধৈর্য ও মালের প্রতি লিপ্সা দেখিতে পাই; আর কিছু লোককে আল্লাহ যাদের অন্তরে অমুখাপেক্ষিতা ও কল্যাণ রেখেছেন, তাদের সে অবস্থার উপর ন্যস্ত করি। তাদের মধ্যে আমর ইবনু তাগলিব একজন। বর্ণনাকারী আমর ইবনু তাগলিব (রাদি.) বলেন, আল্লাহর শপথ! আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর এ বাণীর পরিবর্তে আমি লাল উটও [১] পছন্দ করি না।

[১] তৎকালীন আরবের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।

৯২৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কোন এক রাতের মধ্যভাগে বের হলেন এবং মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করিলেন। তাহাঁর সঙ্গে সাহাবীগণও সালাত আদায় করিলেন, সকালে তাঁরা এ নিয়ে আলোচনা করিলেন। ফলে (দ্বিতীয় রাতে) এর চেয়ে অধিক সংখ্যক সাহাবা একত্রিত হলেন এবং তাহাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করিলেন। পরের দিন সকালেও তাঁরা এ সম্পর্কে আলোচনা করিলেন। ফলে তৃতীয় রাতে মসজিদে লোকসংখ্যা অত্যাধিক বৃদ্ধি পেল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বের হলেন এবং সাহাবীগণ তাহাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করিলেন। চতুর্থ রাতে মসজিদে মুসল্লীগণের স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। অবশেষে তিনি ফজরের সালাতের জন্য বের হলেন এবং ফজরের সালাত শেষ করে লোকদের দিকে ফিরলেন। অতঃপর আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করিলেন। অতঃপর বললেনঃ আমমা বাদ (তারপর বক্তব্য এই যে) এখানে তোমাদের উপস্থিতি আমার নিকট গোপন ছিল না, কিন্তু আমার আশংকা ছিল, তা তোমাদের জন্য ফরয করে দেয়া হয় আর তোমরা তা আদায় করিতে অপারগ হয়ে পড়।

৯২৫. আবু হুমায়দ সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক সন্ধ্যায় সালাতের পর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দাঁড়ালেন এবং শাহাদাত বাণী পাঠ করিলেন। আর যথাযথভাবে আল্লাহর প্রশংসা করিলেন। অতঃপর বলিলেন, আম্মা বাদ।

৯২৬. মিসওয়ার ইবনু মাখ্‌রামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দাঁড়ালেন। অতঃপর আমি তাঁকে তাওহীদের সাক্ষ্য বাণী পাঠান্তে বলিতে শুনলাম, আমমা বাদ।

৯২৭. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মিম্বরের উপর আরোহণ করিলেন। এ ছিল তাহাঁর জীবনের শেষ মজলিস। তিনি বসেছিলেন, তাহাঁর দু কাঁধের উপর বড় চাদর জড়ানো ছিল এবং মাথায় বাঁধা ছিল কালো পট্টি। তিনি আল্লাহর গুণকীর্তন করিলেন এবং তাহাঁর মহিমা বর্ণনা করিলেন, অতঃপর বলিলেন, হে লোক সকল! তোমরা আমার নিকট আস। লোকজন তাহাঁর নিকট একত্র হলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমমা বাদ। শুনে রাখ, এ আনসার গোত্র সংখ্যায় কমতে থাকবে এবং অন্য লোকেরা সংখ্যায় বাড়তে থাকবে। কাজেই যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর উম্মাতের কোন বিষয়ের কর্তৃত্ব লাভ করিবে এবং সে এর সাহায্যে কারো ক্ষতি বা উপকার করার সুযোগ পাবে, সে যেন এই আনসারদের সৎ লোকদের ভাল কাজগুলো গ্রহণ করে এবং তাদের মন্দ কাজগুলো মাফ করে দেয়।

১১/৩০. অধ্যায়ঃ জুমার দিন দু খুতবার মধ্যখানে বসা।

৯২৮. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) দু খুতবা দিতেন আর দু খুতবার মধ্যখানে বসতেন।

১১/৩১. অধ্যায়ঃ মনোযোগের সাথে খুতবা শোনা।

৯২৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেন, জুমার দিন মসজিদের দরজায় মালাইকা (ফেরেশতাগণ) অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে পূর্বে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার পূর্বে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মোটাতাজা উট কুরবানী করে। অতঃপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি গাভী কুরবানী করে। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগী দানকারীর ন্যায়। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি একটি ডিম দানকারীর ন্যায়। অতঃপর ইমাম যখন বের হন তখন মালাইকা (ফেরেশতাগণ) তাঁদের খাতা বন্ধ করে দিয়ে মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করিতে থাকেন।

১১/৩২. অধ্যায়ঃ ইমাম খুতবা দেয়ার সময় কাউকে আসতে দেখলে তাকে দু রাকআত সালাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া।

৯৩০. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (কোন এক) জুমার দিন নাবী (সাঃআঃ) লোকদের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, হে অমুক! তুমি কি সালাত আদায় করেছ? সে বলিল, না; তিনি বলিলেন, উঠ, সালাত আদায় করে নাও।

[১]. [১] আঃপ্রঃ বুখারীর ৮৭৭ নং হাদীসের টীকায় লিখেছেনঃ হাদীসের অন্য কতিপয় বর্ণনার ভিত্তিতে হানাফী মাযহাবে এই সময়ে সালাত না আদায় করাকে অধিকতর বিশুদ্ধ রীতি বলে গণ্য করা হয়েছে।. কিন্তু এটি নিতান্তই অনুবাদকের নিজস্ব মনগড়া মত ও সহীহ হাদীস বিরোধী কথা। বরং কোন সহীহ হাদীস নেই, একটি জাল হাদীসে রয়েছে।

মসজিদে প্রবেশ করে দুরাকআত সালাত পড়া সুন্নাত। নাবী (সাঃআঃ) মসজিদে প্রবেশ করে দুরাকআত সালাত পড়ার পূর্বে বসতে নিষেধ করিয়াছেন এবং বসার পূর্বে সালাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন যেমন নাবী (সাঃআঃ) বাণীঃ আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সে দু রাকআত সালাত না পড়ে ততক্ষন পর্যন্ত যেন না বসে।

আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন বসার পূর্বে দুরাকআত সালাত পড়ে। (বুখারী ১ম খণ্ড ৬৩, ১৫৬ পৃষ্ঠা। মিশকাত ৬৮ পৃষ্ঠা। বুখারী আঃ হক হাদীস ২৮৯। বুখারী ইঃফাঃ হাদীস নং ১০৮৯)

অতঃপর উক্ত হাদীসের উপর আমলার্থে জুমাআর খুতবা চলাকালীনও এ সালাত আদায় করিতে হইবে।

আর এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, বুখারী ও মুসলিম যে হাদীসের ব্যাপারে ইত্তিফাক হয়েছেন সে সকল হাদীস অন্য সকল হাদীস হইতে বেশী শক্তিশালী।

১১/৩৩. অধ্যায়ঃ ইমাম খুতবা দেয়ার সময় যিনি মসজিদে আগমন করবেন তার সংক্ষেপে দু রাকআত সালাত আদায় করা।

৯৩১. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক জুমাআহর দিন নাবী (সাঃআঃ) খুতবা দেয়ার সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, সালাত আদায় করেছ কি? সে বলিল, না; তিনি বললেনঃ উঠ, দুরাকআত সালাত আদায় কর।

১১/৩৪. অধ্যায়ঃ খুতবায় দু হাত উত্তোলন করা।

৯৩২. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক জুমআর দিন নাবী (সাঃআঃ) খুতবা দিচ্ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! (পানির অভাবে) ঘোড়া মরে যাচ্ছে, ছাগল বকরীও মরে যাচ্ছে। কাজেই আপনি দুআ করুন, যেন আল্লাহ আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। তখন তিনি দুহাত প্রসারিত করিলেন এবং দুআ করিলেন।

১১/৩৫. অধ্যায়ঃ জুমার দিন খুতবায় বৃষ্টির জন্য দুআ পাঠ করা।

৯৩৩. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর যুগে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সে সময় কোন এক জুমার দিন নাবী (সাঃআঃ) খুতবা দিচ্ছিলিন। তখন এক বেদুইন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করিল, হে আল্লাহর রাসুল! (বৃষ্টির অভাবে) সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পরিবার পরিজনও অনাহারে রয়েছে। তাই আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দুআ করুন। তিনি দু হাত তুললেন। সে সময় আমরা আকাশে এক খণ্ড মেঘও দেখিনি। যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাহাঁর শপথ (করে বলছি)! (দুআ শেষে) তিনি দু হাত (এখনও) নামান নি, এমন সময় পাহাড়ের ন্যায় মেঘের বিরাট বিরাট খণ্ড উঠে আসল। অতঃপর তিনি মিম্বার হইতে নীচে নামেননি, এমন সময় দেখিতে পেলাম তাহাঁর দাড়ির উপর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। সে দিন আমাদের এখানে বৃষ্টি হল। এর পরে ক্রমাগত দুদিন এবং পরবর্তী জুমা পর্যন্ত প্রত্যেক দিন। (পরবর্তী জুমার দিন) সে বেদুইন অথবা অন্য কেউ উঠে দাঁড়াল এবং আরয করিল, হে আল্লাহর রাসুল! (বৃষ্টির কারণে) এখন আমাদের বাড়ী ঘর ধ্বসে পড়ছে, সম্পদ ডুবে যাচ্ছে। তাই আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করুন। তখন তিনি দু হাত তুললেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় (বৃষ্টি দাও), আমাদের উপর নয়। (দুআর সময়) তিনি মেঘের এক একটি খণ্ডের দিকে ইশারা করছিলেন, আর সেখানকার মেঘ কেটে যাচ্ছিল। এর ফলে চতুর্দিকে মেঘ পরিবেষ্টিত অবস্থায় ঢালের ন্যায় মদীনার আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে এবং কানাত উপত্যকার পানি একমাস ধরে প্রবাহিত হইতে লাগল, তখন (মদীনার) চারপাশের যে কোন অঞ্চল হইতে যে কেউ এসেছে, সে এ প্রবল বৃষ্টির কথা আলোচনা করেছে।

১১/৩৬. অধ্যায়ঃ জুমার দিন ইমাম খুতবাহ দেয়ার সময় অন্যকে চুপ করানো।

যদি কেউ তার সাথীকে (মুসল্লীকে বলে) চুপ থাক, তাহলে সে একটি অনর্থক কথা বললো।

সালমান ফারসী (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন, যখন ইমাম কথা বলবেন, তখন চুপ থাকবে।

৯৩৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ জুমার দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লীকে চুপ থাক বলবে, অথচ ইমাম খুতবা দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে।

১১/৩৭. অধ্যায়ঃ জুমার দিনের সে মুহূর্তটি।

৯৩৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জুমার দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত।

১১/৩৮. অধ্যায়ঃ জুমার সালাতে কিছু মুসল্লী যদি ইমামের নিকট হইতে চলে যায় তাহলে ইমাম ও অবশিষ্ট মুসল্লীগণের সালাত বৈধ হইবে।

৯৩৬. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) এর সঙ্গে (জুমার) সালাত আদায় করছিলাম। এমন সময় খাদ্য দ্রব্য বহনকারী একটি উটের কাফিলা হাযির হল এবং তারা (মুসল্লীগণ) সে দিকে এত অধিক মনোযোগী হলেন যে, নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে মাত্র বারোজন মুসল্লী অবশিষ্ট ছিলেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ

‏وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةً أَوْ لَهْوًا انْفَضُّوا إِلَيْهَا وَتَرَكُوكَ قَائِمًا

“এবং যখন তারা ব্যবসা বা খেল তামাশা দেখিতে পেল তখন সে দিকে দ্রুত চলে গেল এবং আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে গেল”-

(সুরা জুমা ৬২/১১)।

১১/৩৯. অধ্যায় : জুমার (ফরয সালাতের) পূর্বে ও পরে সালাত আদায় করা।

৯৩৭. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যুহরের পূর্বে দু রাকআত ও পরে দু রাকআত, মাগরিবের পর নিজের ঘরে দু রাকআত এবং ইশার পর দু রাকআত সালাত আদায় করিতেন। আর জুমার দিন নিজের ঘরে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করিতেন না। (ঘরে গিয়ে) দু রাকআত সালাত আদায় করিতেন।

[১]. [১] আঃপ্রঃর বুখারীর ৮৮৪ নং হাদীসের টীকায় লিখেছেন : জুমার আগে ও পরে ৪/২ রাকআত সুন্নাত পড়া বিশুদ্ধতর। কিন্তু জুমার পূর্বে দুরাকআত তাহিয়াতুল মসজিদ ব্যতীত চার রাকআত বলে নির্দিষ্ট করে কোন সংখ্যার সালাত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং এ মর্মে বর্ণিত হাদীসগুলো বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য।

১১/৪০. অধ্যায় : মহান আল্লাহর বাণী : “অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হইবে তখন তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করিবে।” (সুরা জুমা ৬২/১০)

৯৩৮. সাহল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে বসবাসকারিণী জনৈকা মহিলা একটি ছোট নহরের পাশে ক্ষেতে বীটের চাষ করিতেন। জুমার দিনে সে বীটের মূল তুলে এনে রান্নার জন্য ডেগে চড়াতেন এবং এর উপর এক মুঠো যবের আটা দিয়ে রান্না করিতেন। তখন এ বীট মূলই এর গোশ্‌ত (গোশতের বিকল্প) হয়ে যেত। আমরা জুমার সালাত হইতে ফিরে এসে তাঁকে সালাম দিতাম। তিনি তখন খাদ্য আমাদের সামনে রাখতেন এবং আমরা তা খেতাম। আমরা সে খাদ্যের আশায় জুমার দিন উদগ্রীব থাকতাম।

৯৩৯. সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আরো বলেছেন, জুমা (সালাতের) পরই আমরা কায়লূলাহ (দুপুরের শয়ন ও হাল্‌কা নিদ্রা) এবং দুপুরের আহার্য গ্রহণ করতাম।

১১/৪১. অধ্যায় : জুমার পরে কায়লুলাহ (দুপুরে শয়ন ও হালকা নিদ্রা)।

৯৪০. হুমাইদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আনাস (রাদি.) বলেছেন: আমরা সকাল সকাল জুমায় যেতাম অতঃপর (সালাত শেষে) কায়লূলাহ করতাম।

৯৪১. সাহল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে জুমার সালাত আদায় করতাম। অতঃপর দুপুরের বিশ্রাম ও হালকা নিদ্রা যেতাম।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply