আযানের দুআ ,শব্দ, সূচনা, আওয়াজ, কথা বলা ও জবাব

আযানের দুআ ,শব্দ, সূচনা, আওয়াজ, কথা বলা ও জবাব

আযানের দুআ ,শব্দ, সূচনা, আওয়াজ, কথা বলা ও জবাব >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

এ বিষয়ে আরও পড়ুন >> মুয়াত্তা মালিক >> সহীহ মুসলিম >> আবু দাউদ >> ইবনে মাজাহ >> তিরমিজি >> নাসাঈ >> মিশকাত >> বুলুগুল মারাম >> লুলু ওয়াল মারজান হাদীস শরীফ হতে

পর্বঃ ১০, আযান, অধ্যায়ঃ (১-১৩)=১৩টি

১০/১. অধ্যায়ঃ আযানের সূচনা ।
১০/২. অধ্যায়ঃ দু দুবার আযানের শব্দ বলা ।
১০/৩. অধ্যায়ঃ “কাদ কামাতিস্-সালাহ” ব্যতীত ইক্বামাতের শব্দগুলো একবার করে বলা ।
১০/৪. অধ্যায়ঃ আযানের মর্যাদা ।
১০/৫. অধ্যায়ঃ আযানের আওয়াজ উচ্চ করা ।
১০/৬. অধ্যায়ঃ আযানের কারণে রক্তপাত হইতে নিরাপত্তা পাওয়া ।
১০/৭. অধ্যায়ঃ মুয়াজ্জিনের আযান শুনলে যা বলিতে হয় ।
১০/৮. অধ্যায়ঃ আযানের দুআ ।
১০/৯. অধ্যায়ঃ আযানের ব্যাপারে কুরআহর মাধ্যমে নির্বাচন।
১০/১০. অধ্যায়ঃ আযানের মধ্যে কথা বলা ।
১০/১১. অধ্যায়ঃ সময় বলে দেয়ার লোক থাকলে অন্ধ ব্যক্তি আযান দিতে পারে ।
১০/১২. অধ্যায়ঃ ফজরের সময় হবার পর আযান দেয়া ।
১০/১৩. অধ্যায়ঃ ফজরের ওয়াক্ত হবার পূর্বে আযান দেয়া ।

১০/১. অধ্যায়ঃ আযানের সূচনা ।

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “আর যখন তোমরা সালাতের জন্য আহবান কর, তখন তারা একে হাসি-তামাশা ও খেলা বলে মনে করে। কারণ তারা এমন লোক যাদের বোধশক্তি নেই”- (সুরা আল-মাদিয়াহ ৫/৫৮)।

আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ “আর যখন জুমুয়ার দিনে সালাতের জন্য ডাকা হয় ।” (সুরা আল-জুমুআহ ৬২/৯)

৬০৩. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (জামাআতে সালাত আদায়ের জন্য) সাহাবা-ই-কিরাম (রাদি.) আগুন জ্বালানো অথবা নাকূস বাজানোর কথা আলোচনা করেন। আবার এগুলোকে (যথাক্রমে) ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রথা বলে উল্লেখ করা হয়। অতঃপর বিলাল (রাদি.)-কে আযানের বাক্য দুবার করে ও ইক্বামাতের বাক্য বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেয়া হয়।[১]

(আঃপ্রঃ ৫৬৮, ইঃফাঃ ৫৭৬) [১] বুখারী ছাড়াও মুসলিম ও আবু দাউদে ইক্বামতের বাক্যগুলো একবার করে বলার সহীহ হাদীস বিদ্যমান। তথাপিও আঃপ্রঃর টীকায় লেখা “হানাফীগণ অন্য এক হাদীসের ভিত্তিতে ইক্বামাতের বাক্যগুলো দুবার করে বলেন ।” এ কথার জবাবে সাধারন পাঠকের উদ্দেশে মুহাদ্দিসীনদের কতিপয় মতামত পেশ করা হলঃ

হাফিয আবু উমর বিন আবদুর রব বলেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, ইসহাক বিন রাহওয়াইহি, দাউদ বিন আলী, মোহাম্মদ বিন জরীর প্রভৃতি ইক্বামতের শব্দগুলি একবার বা দুবার করে বলার উভয়বিধ অভিমত গ্রহন করিয়াছেন। তাঁদের দৃষ্টিতে উভয় নিয়মই বিশুদ্ধ, বৈধ ও গ্রহণযোগ্য এবং ঐচ্ছিক ব্যাপার-যে ইচ্ছা করিবে একবারও বলিতে পারবে এবং অপরপক্ষে যে ইচ্ছা করিবে দুবার করেও বলিতে পারবে। (তুহফা সহ তিরমিযী ১ম খণ্ড ১৭৪পৃঃ)

হাফিয আবু আওয়ানাহ তদীয় মসনদ গ্রন্থে ১ম খণ্ড ৩৩০ পৃষ্ঠায় বলেন, বিলালের আযানের ইক্বামাত একবার করে বলার নিয়ম মনসূখ হয়নি। আবু মাহযূরাহর হাদীস হইতে ইক্বামাত দুবার করে বলা প্রমাণিত হলেও তা হইতে অধিক সহীহ আনাসের হাদীসে একবার করে বলা প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং উসূলে হাদীস শাস্ত্রের বিধান ও ন্যায়নীতির ভিত্তিতে বিরোধক্ষেত্রে যা অধিক সহীহ তা-ই গ্রহণ করা উত্তম ও একান্ত বাঞ্ছনীয়। ইমাম আবদুল ওয়াহহাব শারানী হানাফী কাশ্‌ফুল গুম্মা ১ম খণ্ড ১২৮ পৃষ্ঠায় আবুদল্লাহ বিন যায়দের আযানের সাথে উল্লেখিত ইক্বামাতের শব্দগুলি একবার করে বলার নিয়মের উল্লেখ করিয়াছেন। উক্ত গ্রন্থে ১২৯ পৃষ্ঠায় তিনি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বিলালকে আযানের শব্দগুলি দুবার করে এবং ইক্বামাতের শব্দগুলো একবার করে বলার নির্দেশ সম্বলিত হাদীসের উল্লেখ করিয়াছেন ।

শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তদীয় সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ গুনিয়াতুত তালেবীন-এর ৮ পৃষ্ঠায় ইক্বামাতের শব্দগুলি একবার করে বলার স্বপক্ষে তাহাঁর নিজের মন্তব্য পেশ করিয়াছেন। মোটের উপর আমরা ইমাম আহমাদ, ইসহাক বিন রাহওয়াইহি এবং অন্যান্য ওলামায়ে কিরামের ন্যায় ইক্বামাতের শব্দগুলি একবার করে অথবা দুবার করে বলার উভয়বিধ অভিমতের বৈধতা ও প্রামাণিকতা স্বীকার করি; অধিকন্তু আমরা উভয়বিধ আমলকে জায়েজ বলে মনে করি। কিন্তু যেহেতু ইক্বামাতের শব্দগুলি দুবার করে বলার নির্দেশ সম্বলিত হাদীস হইতে একবার করে বলার নির্দেশ সম্বলিত হাদীস অধিক প্রামাণ্য ও বিশুদ্ধ এবং তা বহু সূত্রে বর্ণিত এমনকি ইমাম বুখারী ও মুসলিম উভয় কর্তৃক গৃহীত, কাজেই আমরা ইক্বামাতের শব্দগুলি একবার করে বলা সর্বোত্তম মনে করি ।

৬০৪. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাদি.) বলিতেন যে, মুসলমানগণ যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন তাঁরা সালাতের সময় অনুমান করে সমবেত হইতেন। এর জন্য কোন ঘোষণা দেয়া হতো না। একদা তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনা করিলেন। কয়েকজন সাহাবী বলিলেন, নাসারাদের ন্যায় নাকূস বাজানোর ব্যবস্থা করা হোক। আর কয়েকজন বলিলেন, ইয়াহূদীদের শিঙ্গার ন্যায় শিঙ্গা ফোঁকানোর ব্যবস্থা করা হোক। উমর (রাদি.) বলিলেন, সালাতের ঘোষণা দেয়ার জন্য তোমরা কি একজন লোক পাঠাতে পার না? তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃহে বিলাল, উঠ এবং সালাতের জন্য ঘোষণা দাও।

(আঃপ্রঃ ৫৬৯, ইঃফাঃ ৫৭৭)

১০/২. অধ্যায়ঃ দু দুবার আযানের শব্দ বলা ।

৬০৫. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বিলাল (রাদি.)-কে আযানের শব্দ দু দুবার এবং

قَدْقَامَتِ الصَّلاَةُ

ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ

ব্যতীত ইক্বামাতের শব্দগুলো বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। (৬০৩)

(আঃপ্রঃ ৫৭০, ইঃফাঃ ৫৭৮)

৬০৬. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মুসলিমগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তাঁরা সালাতের সময়ের জন্য এমন কোন সংকেত নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিলেন, যার সাহায্যে সালাতের সময় উপস্থিত এ কথা বুঝা যায়। কেউ কেউ বলেলেন, আগুন জ্বালানো হোক, কিংবা ঘণ্টা বাজানো হোক। তখন বিলাল (রাদি.)-কে আযানের শব্দগুলো দু দুবার এবং ইক্বামাতের শব্দগুলো বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেয়া হলো।

(আঃপ্রঃ ৫৭১, ইঃফাঃ ৫৭৯)

১০/৩. অধ্যায়ঃ “কাদ কামাতিস্-সালাহ” ব্যতীত ইক্বামাতের শব্দগুলো একবার করে বলা ।

৬০৭. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বিলাল (রাদি.)-কে আযানের বাক্যগুলো দু দুবার এবং ইক্বামাতের বাক্যগুলো বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেয়া হয়। ইসমাঈল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি এ হাদীস আইয়ূবের নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, তবে কাদকামাতিস্ সলাতু ছাড়া।

১০/৪. অধ্যায়ঃ আযানের মর্যাদা ।

৬০৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন সালাতের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ন করে, যাতে সে আযানের শব্দ না শুনে। যখন আযান শেষ হয়ে যায়, তখন সে আবার ফিরে আসে। আবার যখন সালাতের জন্য ইক্বামাত বলা হয়, তখন আবার দূরে সরে যায়। ইক্বামাত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর, বিস্মৃত বিষয়গুলো সে মনে করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পোঁছে যে, সে কয় রাকআত সালাত আদায় করেছে তা মনে করিতে পারে না।

১০/৫. অধ্যায়ঃ আযানের আওয়াজ উচ্চ করা ।

উমর ইবন আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) (মুয়াজ্জিনকে) বলিতেন, স্বাভাবিক কণ্ঠে সাদাসিধাভাবে আযান দাও, নতুবা এ পদ ছেড়ে দাও।

৬০৯. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান আনসারী মাযিনী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তাকে তার পিতা সংবাদ দিয়েছেন যে, আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, আমি দেখছি তুমি বক্‌রী চরানো এবং বন-জঙ্গলকে ভালোবাসো। তাই তুমি যখন বক্‌রী নিয়ে থাকো, বা বন-জঙ্গলে থাকো এবং সালাতের জন্য আযান দাও, তখন উচ্চকণ্ঠে আযান দাও। কেননা, জিন্, ইনসান বা যে কোন বস্তুই যতদূর পর্যন্ত মুয়ায্‌যিনের আওয়াজ শুনবে, সে কিয়ামাতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। আবু সাঈদ (রাদি.) বলেন, এ কথা আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট শুনিয়াছি।

১০/৬. অধ্যায়ঃ আযানের কারণে রক্তপাত হইতে নিরাপত্তা পাওয়া ।

৬১০. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যখনই আমাদের নিয়ে কোন গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে যেতেন, ভোর না হওয়া পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করিতেন না বরং লক্ষ্য রাখতেন, যদি তিনি আযান শুনতে পেতেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হইতে বিরত থাকতেন। আর যদি আযান শুনতে না পেতেন, তাহলে অভিযান চালাতেন। আনাস (রাদি.) বলেন, আমরা খায়বারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম এবং রাতের বেলায় তাদের সেখানে পোঁছলাম। যখন প্রভাত হলো এবং তিনি আযান শুনতে পেলেন না; তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সওয়ার হলেন। আমি আবু তালহা (রাদি.)-এর পিছনে সওয়ার হলাম। আমার পা, নাবী (সাঃআঃ)-এর পায়ের সাথে লেগে যাচ্ছিল। আনাস (রাদি.) বলেন, তারা তাদের থলে ও কোদাল নিয়ে বেরিয়ে আমাদের দিকে আসলো। হঠাৎ তারা যখন নাবী (সাঃআঃ)-কে দেখিতে পেলো, তখন বলে উঠল, এ যে মুহাম্মাদ, আল্লাহর শপথ! মুহাম্মাদ তাহাঁর পঞ্চ বাহিনী সহ! আনাস (রাদি.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদের দেখে বলে উঠলেনঃ

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, খায়বার ধ্বংস হোক।

আমরা যখন কোন কাওমের আঙ্গিণায় অবতরণ করি, তখন সতর্কীকৃতদের প্রভাত হয় মন্দ।

১০/৭. অধ্যায়ঃ মুয়াজ্জিনের আযান শুনলে যা বলিতে হয় ।

৬১১. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন তোমরা আযান শুনতে পাও তখন মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও তাই বলবে।

৬১২. ঈসা ইবনু তালহা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একদা তিনি মুআবিয়াহ (রাদি.)-কে (আযানের জবাব দিতে) শুনেছেন যে, তিনি আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ পর্যন্ত মুআযযিনের মতই বলেছেন।

৬১৩. ইয়াহইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

ইয়াহইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আমার কোনো ভাই আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, মুআয্যিন যখন

حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ

হাইয়্যাআলাস সালাহ,

বলিল, তখন তিনি (মুআবিয়াহ (রাদি.)

لاَحَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ

লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ

বলিলেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, তোমাদের নাবী সাঃআঃ -কে আমরা এরূপ বলিতে শুনিয়াছি। (৬১২)

(আঃপ্রঃ ৫৭৮, ইঃফাঃ ৫৮৬)

১০/৮. অধ্যায়ঃ আযানের দুআ ।

৬১৪. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনে দুআ করেঃ

 اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ

আল্ল-হুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দা’ওয়াতিত তা-ম্মাতি ওয়াস্ সালা-তিল ক-য়িমাতি আ-তি মুহাম্মাদানাল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাতা ওয়াব’ আসহুল মাকা-মাল মাহমূদাল্লাযী ওয়া আত্তাহ

হে আল্লাহ-এ পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের মালিক, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-কে ওয়াসীলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সে মাকামে মাহমুদে পোঁছে দিন যার অঙ্গীকার আপনি করিয়াছেন–ক্বিয়ামাতের দিন সে আমার শাফাআত লাভের অধিকারী হইবে। [১]

[১] আযানের জওয়াবে কয়েকটি বিষয় বাড়তিভাবে চালু হয়েছে, যা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেনঃ “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নামে মিথ্যারোপ করলো, সে জাহান্নামে তার ঠিকানা করে নিল ।” (বুখারী, মিশকাত ১৯৮ ইলম অধ্যায়)

(১) অত্র হাদীসের শেষাংশে ইন্নাকা লা তুখলিফুল মীআদ। (২) বায়হাক্বীতে (১ম খণ্ডের ৪১০ পৃঃ) বর্ণিত আযানের দুআর শুরুতে আল্লাহুম্মা ইন্নী আস-আলুকা বি হাক্কি হা-যিহিদ দাওয়াতে। (৩) ইমাম তাহাভীর শারহু মাআনিল আসার-এ বর্ণিত আ-তি সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদান। (৪) ইবনুস সুন্নীর ফী আমালিল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ গ্রন্থে ওয়াদ দারাজাতার রাফীআহ। রাফীঈ প্রণীত আল মুহাররির গ্রন্থে আযানের দুআর শেষে বর্ণিত ইয়া আরহামার রা-হিমীন। আযানের জওয়াবে প্রচলিত বাড়তি বিষয়গুলো অবশ্যই পরিত্যাজ্য। অতিরিক্ত শব্দগুলো সহীহ সূত্রে প্রমাণিত নয়। (মুহাদ্দিস শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী কৃত ইরওয়াইল গালীল, ১ম খণ্ড ২৬০-২৬১ পৃষ্ঠা হাদীস নং ২৪৩) রেডিও ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে প্রচারিত দুআয় ওয়ারযুকনা শাআতাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ বাক্যটি যা যোগ করা হয়েছে তার কোন ভিত্তি নেই ।

১০/৯. অধ্যায়ঃ আযানের ব্যাপারে কুরআহর মাধ্যমে নির্বাচন।

উল্লেখ করা হয়েছে যে,একদল লোক আযান দেয়ার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করিল। সাদ (রাদি.) তাঁদের মধ্যে কুরআহর (লটারি) মাধ্যমে নির্বাচন করিলেন।

৬১৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আযানে ও প্রথম কাতারে কী (ফযীলত) রয়েছে, তা যদি লোকেরা জানত, কুরআহর মাধ্যমে বাছাই ব্যতীত এ সুযোগ লাভ করা যদি সম্ভব না হত, তাহলে অবশ্যই তারা কুরআহর মাধ্যমে ফায়সালা করত। যুহরের সালাত আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করার মধ্যে কী (ফযীলত) রয়েছে, যদি তারা জানত, তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। আর ইশা ও ফজরের সালাত (জামাআতে) আদায়ের কী ফযীলত তা যদি তারা জানত, তাহলে নিঃসন্দেহে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা হাজির হত।

১০/১০. অধ্যায়ঃ আযানের মধ্যে কথা বলা ।

সুলাইমান ইবন সুরাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আযানের মধ্যে কথা বলেছেন। হাসান বসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আযান বা ইকামত দেওয়ার সময় হেসে ফেললে কোন দোষ নেই।

৬১৬. আবদুল্লাহ ইবনু হারিস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার বর্ষণ মুখর দিনে ইবনু আব্বাস (রাদি.) আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবাহ দিচ্ছিলেন। এদিকে মুয়াজ্জিন আযান দিতে গিয়ে যখন —– -এ পোঁছল, তখন তিনি তাকে এ ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দিলেন যে, লোকেরা যেন আবাসে সালাত আদায় করে নেয়। এতে লোকেরা একে অপরের দিকে তাকাতে লাগল। তখন ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, তাহাঁর চেয়ে যিনি অধিক উত্তম ছিলেন (রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ) তিনিই এরূপ করিয়াছেন। অবশ্য জুমুআর সালাত ওয়াজিব। (তবে ওযরের কারণে নিজ আবাসস্থলে সালাত আদায় করার অনুমতি আছে)।

১০/১১. অধ্যায়ঃ সময় বলে দেয়ার লোক থাকলে অন্ধ ব্যক্তি আযান দিতে পারে ।

৬১৭. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, বিলাল (রাদি.) রাত থাকতেই আযান দেন। কাজেই ইবনু উম্মে মাকতূম (রাদি.) আযান না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা (সাহরীর) পানাহার করিতে পার। আবদুল্লাহ (রাদি.) বলেন, ইবনু উম্মে মাকতূম (রাদি.) ছিলেন অন্ধ। যতক্ষণ না তাঁকে বলে দেওয়া হত যে, ভোর হয়েছে, ভোর হয়েছে–ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি আযান দিতেন না।

১০/১২. অধ্যায়ঃ ফজরের সময় হবার পর আযান দেয়া ।

৬১৮. হাফসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন মুয়াজ্জিন সুবহে সাদিকের প্রতীক্ষায় থাকত (ও আযান দিত) এবং ভোর স্পষ্ট হতো- জামাআত দাঁড়ানোর পূর্বে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সংক্ষেপে দু রাকআত সালাত আদায় করে নিতেন।

৬১৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ফজরের আযান ও ইক্বামাতের মাঝে দু রাকআত সালাত সংক্ষেপে আদায় করিতেন।

৬২০. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বিলাল (রাদি.) রাত থাকতে আযান দিয়ে থাকেন। কাজেই তোমরা (সাহরী) পানাহার করিতে থাক; যতক্ষণ না ইবনু উম্মে মাকতূম (রাদি.) আযান দেন।[১]

[১] আঃপ্রঃর ৫৮৫ নং হাদীসের টীকায় লিখেছেন যে, বিলাল (রাদি.) তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য আযান দিতেন। কিন্তু কথাটি ভুল কারণ পরবর্তী হাদীস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে যে, তাহাজ্জুদ সালাত আদায়কারী ব্যক্তির অবসর গ্রহণ ও ঘুমন্ত মানুষকে জাগ্রত করার জন্য (যাতে তারা সাহারী খেতে পারে) বিলাল (রাদি.) আযান দিতেন। আর যারা জাগ্রত অবস্থায় সাহারী খেতেন তারা যেন এই আযান শুনে সাহারী খাওয়া বন্ধ না করেন। মক্কা মদীনায় ফজরের আযানের মাত্র আধা ঘণ্টা পূর্বে এ আযান এখনও চালু আছে। এবং এটা তাহাজ্জুদের আযান নয়। নাসায়ী, বাইহাকী, ইবনু খুযাইমাহ, ইবনুস সাকান থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যাতে প্রমাণিত হয় যে, শুধুমাত্র প্রথম আযানে “আস্ সলাতু খাইরুম মিনান নাওম” আছে। আর দ্বিতীয়তে অর্থাৎ ফজরের মূল আযানে নেই। বিস্তারিত দেখুন সুবুলুস সালাম ২য় খণ্ড ১৮৫ পৃষ্ঠা ।

আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী লিখিত তামামুল মিন্নাহ গ্রন্থের ১৪৬ পৃষ্ঠা থেকে ১৪৮ পৃষ্ঠায় দীর্ঘ আলোচনার শেষ পর্যায়ে এসে তিনি বলেছেনঃ উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, দ্বিতীয় আযানে তাসবীব বা আসসলাতু খাইরুম মিনান নাওম বলা বিদআত–সুন্নত বিরোধী। সুন্নাতের বিরোধিতা আরো বেশী সাব্যস্ত হয় প্রথম আযানকে উৎখাত করে সে আযানের তাসবীব বা শব্দবিশেষ “আস্ সলাতু খাইরুম মিনান নাওমকে দ্বিতীয় আযানে যুক্ত করায়। আর বাড়াবাড়ি করে দ্বিতীয় আযানে সাব্যস্ত করা হয়। (তামামুল মিন্নাহ ১৪৮ পৃঃ)

ইমাম তাহাবী প্রথম আযানে তাসবীব হওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচিত ইবনু উমর ও আবু মাহযূরাহর সুস্পষ্ট হাদীস দুটি উল্লেখ করার পর বলেছেন। এটিই ইমাম আবু হানিফাহ, ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মত। ( তামুমুল মিন্নাহ ১৪৮. পৃষ্ঠা) আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী সুন্নাহ বিরোধী আমল প্রচলন হওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করেছেনঃ একঃ ইসলামী দুনিয়ার অধিকাংশ মুয়াযযিন সুন্নাত বিরোধী আমল অব্যাহত রেখেছেন এবং খুব কম সংখ্যক আলিম এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। দুইঃ অধিকাংশগণই এ বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান ছাড়াই আলোচনা করিয়াছেন। তাঁরা তাসবীব ফজরের প্রথম আযানে যেমনটি স্পষ্টভাবে সহীহ হাদীসগুলোতে এসেছে- তেমনটি ব্যাখ্যা প্রদান করেননি। একমাত্র ইবনু রাসলান এবং সামআনী অধিকাংশের বিরোধিতা করে সহীহ হাদীস অনুযায়ী ব্যাখ্যা প্রদান করিয়াছেন ।

ঘুমের চেয়ে সালাত উত্তম এ কথাটি ফারয সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ ঘুমের সাথে ফারয সালাতের তুলনা হইতে পারে না। এটি হইতে পারে নফল সালাতের ক্ষেত্রে। কারণ উত্তমতার প্রসঙ্গ আনলে উভয়টি করা বৈধ হয়। এখানে ফারয সালাত বাদ দিয়ে ঘুমানো যাবে এমন কথা কেউ বলিতে পারবেন না। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে তাসবীব প্রথম আযানের সাথে সংশ্লিষ্ট, দ্বিতীয় আযানে নয়। যা বিভিন্ন দেশে চালু আছে। উল্লেখ্য সিরিয়া ও জর্দানের যে সব এলাকায় আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানীর দাওয়াত ও তাবলীগের ব্যাপকা প্রচার লাভ করেছে সে সব জায়গায় এবং সুদানের সালাফীগণও (আনসারুস সুন্নাহ) ফজরের দ্বিতীয় আযানে তাসবীব ব্যাবহার করেন না ।

শাইখ উসাইমিন “প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যে সালাত রয়েছে” এ আম হাদীস দ্বারা তিনি উপরে বর্ণিত আযান বলিতে সকালের আযানকে বুঝিয়েছেন। কারণ দ্বিতীয় আযানটি হচ্ছে ইক্বামাত। এ হাদীস দ্বারা তাসবীব ফজরের দ্বিতীয় আযানে সাব্যস্ত করা অযৌক্তিক। কারণ ইক্বামাতকে যদি আযান হিসেবে ধরা হয় তাহলে সেটি ফজরের ক্ষেত্রে তৃতীয় আযান, দ্বিতীয় নয়। যখন বিষয়টি ফজরের আযানকে ঘিরেই তখন স্পষ্টভাবে যেখানে প্রথম বলা হয়েছে তখন দ্বিতীয় আযান হিসেবে দ্বিতীয় আযানকেই ধরতে হইবে। তৃতীয়টিকে নয়। আর যারা “প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যে সালাত রয়েছে” এই আম হাদীসের উপর আমল করিতে গিয়ে ফজরের তিনটি আযানকে অস্বীকার করবেন। তারা কি ৬২০ নং হাদীসের বিলাল (রাদি.) প্রথম আযান দেয়ার সময় পানাহার বন্ধ না করে উম্মু মাকতূমের ইক্বামাত পর্যন্ত পানাহার করে থাকেন । এই আযান দেয়ার পূর্বে সতর্ক করার জন্য কোন কিছু বলা জায়িয নয়। ফজরে অন্য মুয়াযযিন আযান দিবে যাতে দুই আযানের পার্থক্য নিরূপণ করা যায়। শুধু তাই নয় প্রথম আযানে আসসলাতু খাইরুম…. আছে যা উম্মে মাকতূমের আযানে ছিল না। (সুবুলুস সালাম) [আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন]

১০/১৩. অধ্যায়ঃ ফজরের ওয়াক্ত হবার পূর্বে আযান দেয়া ।

৬২১. আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করেছেনঃ বিলালের আযান যেন তোমাদের কাউকে সাহরী খাওয়া হইতে বিরত না রাখে। কেননা, সে রাত থাকতে আযান দেয়- যেন তোমাদের মধ্যে যারা তাহাজ্জুদের সালাতে রত তারা ফিরে যায় আর যারা ঘুমন্ত তাদেরকে জাগিয়ে দেয়। অতঃপর তিনি বললেনঃ ফজর বা সুবহে সাদিক বলা যায় না– তিনি একবার আঙ্গুল উপরের দিকে উঠিয়ে নীচের দিকে নামিয়ে ইঙ্গিত করে বলিলেন, যতক্ষণ না এরূপ হয়ে যায়। বর্ণনাকারী যুহাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর শাহাদাত আঙ্গুলদ্বয় একটি অপরটির উপর রাখার পর তাহাঁর ডানে ও বামে প্রসারিত করে দেখালেন।[১]

[১] পূর্ব দিকে প্রথমে খাড়া আলোক-রেখা দেখা যায় এই আলোক রেখা প্রকৃত ফজর নয়। পূর্ব দিকে আড়াআড়িভাবে বিস্তৃত আলোক রেখাই প্রকৃত ফজরের সময় ।

৬২২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বিলাল (রাদি.) রাত থাকতে আযান দিয়ে থাকেন। কাজেই, ইবনু উম্মু মাকতূম (রাদি.) যতক্ষণ আযান না দেয়, ততক্ষণ তোমরা (সাহারী) পানাহার করিতে পার।

৬২৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বিলাল (রাদি.) রাত থাকতে আযান দিয়ে থাকেন। কাজেই, ইবনু উম্মু মাকতূম (রাদি.) যতক্ষণ আযান না দেয়, ততক্ষণ তোমরা (সাহারী) পানাহার করিতে পার।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply