সালাত আদায়ের নিয়ম । ইমামের সুতরাই মুক্তাদীর জন্য যথে
সালাত আদায়ের নিয়ম । ইমামের সুতরাই মুক্তাদীর জন্য যথে>> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৮, সালাত (নামাজ), অধ্যায়ঃ (৯০-১০৯)=২০টি
৮/৯০. অধ্যায়ঃ ইমামের সুতরাই মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট।
৮/৯১. অধ্যায়ঃ মুসল্লী ও সুতরার মাঝখানে কী পরিমাণ দুরত্ব থাকা উচিত?
৮/৯২. অধ্যায়ঃ বর্শা সামনে রেখে সালাত আদায়
৮/৯৩. অধ্যায়ঃ লৌহযুক্ত ছড়ি সামনে রেখে সালাত আদায়।
৮/৯৪. অধ্যায়ঃ মক্কা ও অন্যান্য স্থানে সুতরা
৮/৯৫. অধ্যায়ঃ খুঁটি (থাম) সামনে রেখে সালাত আদায়
৮/৯৬. অধ্যায়ঃ জামায়াত ব্যতীত স্তম্ভসমূহের মাঝখানে সালাত আদায় করা।
৮/৯৭. অধ্যায়ঃ
৮/৯৮. অধ্যায়ঃ উটনী, উট, গাছ ও হাওদা সামনে রেখে সালাত সম্পাদন করা।
৮/৯৯. অধ্যায়ঃ চৌকি সামনে রেখে সালাত আদায় করা।
৮/১০০. অধ্যায়ঃ সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারীকে মুসল্লীর বাধা দেয়া উচিত।
৮/১০১. অধ্যায়ঃ সালাত আদায়কারী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীর গুনাহ।
৮/১০২. অধ্যায়ঃ কারো দিকে মুখ করে সালাত আদায়।
৮/১০৩. অধ্যায়ঃ ঘুমন্ত ব্যক্তির পেছনে সালাত আদায়।
৮/১০৪. অধ্যায়ঃ মহিলার পেছনে থেকে নফল সালাত আদায়।
৮/১০৫. অধ্যায়ঃ কোন কিছু সালাত নষ্ট করে না বলে যিনি মত পোষণ করেন।
৮/১০৬. অধ্যায়ঃ সালাতে নিজের ঘাড়ে কোন ছোট মেয়েকে তুলে নেয়া।
৮/১০৭. অধ্যায়ঃ এমন বিছানা সামনে রেখে সালাত আদায় করা যাতে ঋতুবতী মহিলা রয়েছে।
৮/১০৮. অধ্যায়ঃ সিজদার সুবিধার্থে নিজ স্ত্রীকে সিজদার সময় স্পর্শ করা।
৮/১০৯. অধ্যায়ঃ মুসল্লির দেহ হইতে মহিলা কর্তৃক অপবিত্রতা পরিষ্কার করা।
৮/৯০. অধ্যায়ঃ ইমামের সুতরাই মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট।
৪৯৩. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি একটা মাদী গাধার উপর সওয়ার হয়ে এলাম, তখন আমি ছিলাম সাবালক হবার নিকটবর্তী। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সামনে দেয়াল ব্যতীত অন্য কিছুকে সুতরা বানিয়ে মিনায় লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করছিলেন। কাতারের কিছু অংশ অতিক্রম করে আমি সওয়ারী হইতে অবতরণ করলাম। গাধীটিকে চরাতে দিয়ে আমি কাতারে শামিল হয়ে গেলাম। আমাকে কেউই এ কাজে বাধা দেয়নি।
(আঃপ্রঃ ৪৬৩, ইঃফাঃ ৪৬৯)
৪৯৪. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ঈদের দিন যখন বের হইতেন তখন তাহাঁর সম্মুখে ছোট নেযা (বল্লম) পুঁতে রাখতে নিদের্শ দিতেন। সেদিকে মুখ করে তিনি সালাত আদায় করিতেন। আর লোকজন তাহাঁর পেছনে দাঁড়াতো। সফরেও তিনি তাই করিতেন। এ হইতে শাসকগণও এ পন্থা অবলম্বন করিয়াছেন।
(আঃপ্রঃ ৪৬৪, ইঃফাঃ ৪৭০)
৪৯৫. আওন ইবনু আবু জুহাইফা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আমার পিতাকে বলিতে শুনিয়াছি যে, নাবী (সাঃআঃ) সাহাবীগণকে নিয়ে বাতহা নামক স্থানে যুহরের দুরাকআত ও আসরের দুরাকআত সালাত আদায় করেন। তখন তাহাঁর সামনে বল্লম পুঁতে রাখা হয়েছিল। তাহাঁর সম্মুখ দিয়ে (সুতরার বাইরে) নারী ও গাধা চলাচল করতো।
(আঃপ্রঃ ৪৬৫, ইঃফাঃ ৪৭১)
৮/৯১. অধ্যায়ঃ মুসল্লী ও সুতরার মাঝখানে কী পরিমাণ দুরত্ব থাকা উচিত?
৪৯৬. সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর সালাতের স্থান ও দেয়ালের মাঝখানে একটা বকরী চলার মত ব্যবধান ছিল।
(আঃপ্রঃ ৪৬৬, ইঃফাঃ ৪৭২)
৪৯৭. সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ মসজিদের দেয়াল ছিল মিম্বারের এত নিকট যে, মাঝখান দিয়ে একটা বকরীরও চলাচল কঠিন ছিল।
(আঃপ্রঃ ৪৬৭, ইঃফাঃ ৪৭৩)
৮/৯২. অধ্যায়ঃ বর্শা সামনে রেখে সালাত আদায়
৪৯৮. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ)–এর সামনে বর্শা পুঁতে রাখা হতো, আর তিনি সেদিকে সালাত আদায় করিতেন।
(আঃপ্রঃ ৪৬৮, ইঃফাঃ ৪৭৪)
৮/৯৩. অধ্যায়ঃ লৌহযুক্ত ছড়ি সামনে রেখে সালাত আদায়।
৪৯৯. আওন ইবনু আবু জুহাইফা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আমার পিতার কাছ হইতে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেনঃ একদা দুপুরে আমাদের সামনে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাশরীফ আনলেন। তাঁকে উযূর পানি দেয়া হলো। তিনি উযূ করিলেন এবং আমাদের নিয়ে যুহর ও আসরের সালাত আদায় করিলেন। সালাতের সময় তাহাঁর সামনে ছিল বল্লম, যার বাইরের দিক দিয়ে নারী ও গাধা চলাচল করতো।
(আঃপ্রঃ ৪৬৯, ইঃফাঃ ৪৭৫)
৫০০. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) যখন প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রের হইতেন, তখন আমি ও একজন বালক তাহাঁর পিছনে যেতাম। আর আমাদের সাথে থাকতো একটা লাঠি বা একটা ছড়ি অথবা একটা ছোট নেযা, আরো থাকতো একটা পানির পাত্র। তিনি তাহাঁর প্রয়োজন সেরে নিলে আমরা তাঁকে ঐ পাত্রটি দিতাম।
(আঃপ্রঃ ৪৭০, ইঃফাঃ ৪৭৬)
৮/৯৪. অধ্যায়ঃ মক্কা ও অন্যান্য স্থানে সুতরা
৫০১. আবু জুহাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একদা দুপুরে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের সামনে তাশরীফ আনলেন। তিনি বাতহা নামক স্থানে যোহর ও আসরের সালাত দু-দুরাকআত করে আদায় করিলেন। তখন তাহাঁর সামনে একটা লৌহযুক্ত ছড়ি পুঁতে রাখা হয়েছিল। তিনি যখন উযূ করছিলেন, তখন সাহাবীগণ তাহাঁর উযূর পানি নিজেদের শরীরে (বারাকাতের জন্য) মাস্হ করিতে লাগলো।
(আঃপ্রঃ ৪৭১, ইঃফাঃ ৪৭৭)
৮/৯৫. অধ্যায়ঃ খুঁটি (থাম) সামনে রেখে সালাত আদায়
উমর (রাদি.) বলেনঃ বাক্যালাপে রত ব্যক্তিদের চাইতে মুসল্লীরাই স্তম্ভ সামনে রাখার বেশী অধিকারি । এক সময় ইবন উমর (রাদি.) দেখলেন, এক ব্যক্তি দুটো স্তম্ভের মাঝখানে সালাত আদায় করছে । তখন তিনি তাকে একটি স্তম্ভের কাছে এনে বললেনঃ এটি সামনে রেখে সালাত আদায় কর
৫০২. ইয়াযীদ ইবনু আবু উবায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি সালামা ইবনুল আকওয়া (রাদি.)–এর নিকট আসতাম। তিনি সর্বদা মসজিদে নাববীর সেই স্বম্ভের নিকট সালাত আদায় করিতেন যা ছিল মাসহাফের নিকটবর্তী। আমি তাঁকে বললামঃ হে আবু মুসলিম! আমি আপনাকে সর্বদা এই স্তম্ভ খুঁজে বের করে সামনে রেখে সালাত আদায় করিতে দেখি (এর কারণ কী?) তিনি বললেনঃ আমি নাবী (সাঃআঃ)–কে এটি খুঁজে বের করে এর নিকট সালাত আদায় করিতে দেখেছি।
(আঃপ্রঃ ৪৭২, ইঃফাঃ ৪৭৮)
৫০৩. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি নাবী (সাঃআঃ)–এর বিশিষ্ট সাহাবীদের পেয়েছি। তাঁরা মাগরিবের সময় দ্রুত স্তম্ভের নিকট যেতেন। শুবাহ (রাদি.) আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে আনাস (রাদি.) হইতে (এ হাদীসে) অতিরিক্ত বলেছেনঃ নাবী (সাঃআঃ) বেরিয়ে আসা পর্যন্ত।
(আঃপ্রঃ ৪৭৩, ইঃফাঃ ৪৭৯)
৮/৯৬. অধ্যায়ঃ জামায়াত ব্যতীত স্তম্ভসমূহের মাঝখানে সালাত আদায় করা।
৫০৪. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) বাইতুল্লাহ–এ প্রবেশ করেছিলেন। আর তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন উসামা ইবনু যায়দ (রাদি.), উসমান ইবনু ত্বলহা (রাদি.) এবং বিলাল (রাদি.)। তিনি অনেকক্ষণ ভিতরে ছিলেন। অতঃপর বের হলেন। আর আমিই প্রথম ব্যক্তি যে তাহাঁর পরে প্রবেশ করেছে। আমি বিলাল (রাদি.)–কে জিজ্ঞেস করলামঃ নাবী (সাঃআঃ) কোথায় সালাত আদায় করিয়াছেন? তিনি বললেনঃ সামনের দুই খুঁটির মধ্যখানে।
(আঃপ্রঃ ৪৭৪, ইঃফাঃ ৪৮০)
৫০৫. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আর উসামা ইবনু যায়দ, বিলাল এবং উসমান ইবনু তালহা হাজাবী (রাদি.) কাবায় প্রবেশ করিলেন। নাবী (সাঃআঃ)–এর প্রবেশের সাথে সাথে উসমান (রাদি.) কাবার দরজা বন্ধ করে দিলেন। তাঁরা কিছুক্ষণ ভিতরে ছিলেন। বিলাল (রাদি.) বের হলে আমি তাঁকে বললামঃ নাবী (সাঃআঃ) কী করিলেন? তিনি বললেনঃ একটা খুঁটি বাম দিকে, একটা খুঁটি ডান দিকে আর তিনটা খুঁটি পেছনে রাখলেন। আর তখন বায়তুল্লাহ ছিল ছয়টি খুঁটি বিশিষ্ট। অতঃপর তিনি সালাত আদায় করিলেন।
[ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] ইসমাঈল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, ইমাম মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন যে, তাহাঁর (নাবীর) ডান পাশে দুটো স্তম্ভ ছিল। (আঃপ্রঃ ৪৭৫, ইঃফাঃ ৪৮১)
৮/৯৭. অধ্যায়ঃ
৫০৬. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ (রাদি.) যখন কাবা শরীফে প্রবেশ করিতেন তখন সামনের দিকে চলতে থাকতেন এবং দরজা পেছনে রাখতেন। এভাবে এগিয়ে গিয়ে যেখানে তাহাঁর ও দেওয়ালের মাঝে প্রায় তিন হাত পরিমাণ ব্যবধান থাকতো, সেখানে তিনি সালাত আদায় করিতেন। তিনি সে স্থানেই সালাত আদায় করিতে চাইতেন, যেখানে নাবী (সাঃআঃ) সালাত আদায় করেছিলেন বলে বিলাল (রাদি.) তাঁকে খবর দিযেছিলেন। তিনি বলেনঃ কাবা ঘরে যে-কোন প্রান্তে ইচ্ছা, সালাত আদায় করাতে আমাদের কোন দোষ নেই।
(আঃপ্রঃ ৪৭৬, ইঃফাঃ ৪৮২)
৮/৯৮. অধ্যায়ঃ উটনী, উট, গাছ ও হাওদা সামনে রেখে সালাত সম্পাদন করা।
৫০৭. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর উটনীকে সামনে রেখে সালাত আদায় করিতেন। [রাবী নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমি [আবদুল্লাহ ইবনু উনার (রাদি.) কে] জিজ্ঞেস করলামঃ যখন সওয়ারী নড়াচড়া করত তখন (তিনি কি করিতেন?) তিনি বলেনঃ তিনি তখন হাওদা নিয়ে সোজা করে নিজের সামনে রাখতেন, আর তার শেষাংশের দিকে সালাত আদায় করিতেন। [নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ ] ইবনু উমর (রাদি.)- ও তা করিতেন।
(আঃপ্রঃ ৪৭৭, ইঃফাঃ ৪৮৩)
৮/৯৯. অধ্যায়ঃ চৌকি সামনে রেখে সালাত আদায় করা।
৫০৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ তোমরা আমাদেরকে কুকুর, গাধার সমান করে ফেলেছ! আমি নিজে এ অবস্থায় ছিলাম যে, আমি চৌকির উপর শুয়ে থাকতাম আর নাবী (সাঃআঃ) এসে চৌকির মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করিতেন। এভাবে আমি সামনে থাকা পছন্দ করতাম না। তাই আমি চৌকির পায়ের দিকে সরে গিয়ে চুপি চুপি নিজের লেপ হইতে বেরিয়ে পড়তাম।
(আঃপ্রঃ ৪৭৮, ইঃফাঃ ৪৮৪)
৮/১০০. অধ্যায়ঃ সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারীকে মুসল্লীর বাধা দেয়া উচিত।
ইবন উমার (রাদি.) তাশাহ্হুদে বসা অবস্থায় এবং কাবা শরীফেও (অতিক্রমকারীকে) বাধা দিয়েছেন এবং তিনি বলেন, সে অতিক্রম করা থেকে বিরত থাকতে অস্বীকার করে লড়তে চাইলে মুসুল্লী তার সাথে লড়বে
৫০৯. আবু সালেহ সাম্মান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আবু সাইদ খুদরী (রাদি.) কে দেখেছি। তিনি জুমআর দিন লোকদের জন্য সুতরা হিসেবে কোন কিছু সামনে রেখে সালাত আদায় করছিলেন। আবু মুআইত গোত্রের এক যুবক তার সামনে দিয়ে যেতে চাইল। আবু সাইদ খুদরী (রাদি.) তার বুকে ধাক্কা মারলেন। যুবকটি লক্ষ্য করে দেখল যে, তাহাঁর সামনে দিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। এজন্য সে পুনরায় তাহাঁর সামনে দিয়ে যেতে চাইল। এবারে আবু সাইদ খুদরী (রাদি.) প্রথমবারের চেয়ে জোরে ধাক্কা দিলেন। ফলে আবু সাইদ (রাদি.) কে তিরস্কার করে সে মারওয়ানের নিকট গিয়ে আবু সাইদ খুদরী (রাদি.) এর ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করিল। এদিকে তার পরপরই আবু সাইদ খুদরী (রাদি.) মারওয়ানের নিকট গেলেন। মারওয়ান তাঁকে বললেনঃ হে আবু সাইদ! তোমার এই ভাতিজার কি ঘটেছে? তিনি জবাব দিলেন আমি নাবী (সাঃআঃ) কে বলিতে শুনিয়াছি যে, তোমাদের কেউ যদি লোকদের জন্য সামনে সুতরা রেখে সালাত আদায় করে, আর কেউ যদি তার সামনে দিয়ে যেতে চায়, তাহলে যেন সে তাকে বাঁধা দেয়। সে যদি না মানে, তবে সে ব্যক্তি (মুসল্লী) যেন তার সাথে লড়াই করে, কেননা সে শয়তান।
(আঃপ্রঃ ৪৭৯, ইঃফাঃ ৪৮৫)
৮/১০১. অধ্যায়ঃ সালাত আদায়কারী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীর গুনাহ।
৫১০. বুসর ইবনু সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) তাঁকে আবু জুহায়ম (রাদি.) এর নিকট পাঠালেন, যেন তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন যে, মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীর সম্পর্কে তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে কি শুনেছেন। তখন আবু জুহায়ম (রাদি.) বললেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যদি মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী জানতো এটা তার কত বড় অপরাধ, তাহলে সে মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে চল্লিশ (দিন/মাস/বছর) দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে করতো।
আবুন-নাযর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ আমার জানা নেই তিনি কি চল্লিশ দিন বা মাস কিংবা চল্লিশ বছর বলেছেন।
(আঃপ্রঃ ৪৮০, ইঃফাঃ ৪৮৬)
৮/১০২. অধ্যায়ঃ কারো দিকে মুখ করে সালাত আদায়।
উসমান (রাদি.) সালাতরত অবস্থায় কাউকে সামনে রাখা মাকরূহ মনে করিতেন । এ হুকুম তখনই প্রযোজ্য যখন তা মুসল্লীকে অন্যমনস্ক করে দেয় । কিন্তু যখন অন্যমনস্ক করে না, তখন যায়দ ইবন সাবিত (রাদি.)-এর মতানুসারে কোন ক্ষতি নেই । তিনি বলেনঃ একজন আরেক জনের সালত নষ্ট করিতে পারে না
৫১১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একবার তাহাঁর সামনে সালাত নষ্টকারী জিনিস সম্পর্কে আলোচনা করা হল। লোকেরা বললোঃ কুকুর, গাধা ও মহিলা সালাত নষ্ট করে দেয়। আয়েশা (রাদি.) বললেনঃ তোমরা আমাদেরকে কুকুরের সমান করে দিয়েছ! আমি নাবী (সাঃআঃ) কে দেখেছি, সালাত আদায় করছেন আর আমি তাহাঁর ও কিবলার মাঝে চৌকির উপর কাত হয়ে শুয়ে থাকতাম। কোন কোন সময় আমার বের হবার দরকার হতো এবং তাহাঁর সামনের দিকে যাওয়া অপছন্দ করতাম। এজন্য আমি চুপে চুপে সরে পড়তাম। আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আয়েশা (রাদি.) হইতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
(আঃপ্রঃ ৪৮১, ইঃফাঃ ৪৮৭)
৮/১০৩. অধ্যায়ঃ ঘুমন্ত ব্যক্তির পেছনে সালাত আদায়।
৫১২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) সালাত আদায় করিতেন আর আমি তখন তাহাঁর বিছানায় আড়াআড়িভাবে শুয়ে থাকতাম। বিতর পড়ার সময় তিনি আমাকেও জাগাতেন, তখন আমিও বিতর পড়তাম।
(আঃপ্রঃ ৪৮২, ইঃফাঃ ৪৮৮)
৮/১০৪. অধ্যায়ঃ মহিলার পেছনে থেকে নফল সালাত আদায়।
৫১৩. নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সামনে শুয়ে থাকতাম আর আমার পা দুটো থাকত তাহাঁর কিবলার দিকে। তিনি যখন সিজদা করিতেন তখন আমাকে টোকা দিতেন, আর আমি পা সরিয়ে নিতাম। তিনি দাঁড়িয়ে গেলে পুনরায় পা দুটো প্রসারিত করে দিতাম। আয়েশা (রাদি.) বলেনঃ তখন ঘরে কোন বাতি ছিল না।
(আঃপ্রঃ ৪৮৩, ইঃফাঃ ৪৮৯)
৮/১০৫. অধ্যায়ঃ কোন কিছু সালাত নষ্ট করে না বলে যিনি মত পোষণ করেন।
৫১৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর সামনে সালাত নষ্টকারী কুকুর, গাধা ও নারী সমন্ধে আলোচনা চলছিল। আয়েশা (রাদি.) বললেনঃ তোমরা আমাদেরকে গাধা ও কুকুরের সাথে তুলনা করছ? আল্লাহর কসম! আমি নাবী (সাঃআঃ) কে সালাত আদায় করিতে দেখেছি। তখন আমি চৌকির উপরে তাহাঁর ও কিবলার মাঝখানে শুয়ে ছিলাম। আমার প্রয়োজন হলে আমি তাহাঁর সামনে বসা খারাপ মনে করতাম। তাতে নাবী (সাঃআঃ)-এর কষ্ট হইতে পারে। আমি তাহাঁর পায়ের পাশে চুপিসারে বের হয়ে যেতাম।
(আঃপ্রঃ ৪৮৪, ইঃফাঃ ৪৯০)
৫১৫. নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রাতে উঠে সালাতে দাঁড়াতেন আর আমি তাহাঁর ও কিবলার মাঝখানে আড়াআড়িভাবে তাহাঁর পরিজনদের বিছানায় শুয়ে থাকতাম।
(আঃপ্রঃ ৪৮৫, ইঃফাঃ ৪৯১)
৮/১০৬. অধ্যায়ঃ সালাতে নিজের ঘাড়ে কোন ছোট মেয়েকে তুলে নেয়া।
৫১৬. আবু কাতাদা আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর মেয়ে যয়নবের গর্ভজাত ও আবুল আস ইবনু রাবীআ ইবনু আবদ শামস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর ঔরসজাত কন্যা উমামা (রাদি.) কে কাঁধে নিয়ে সালাত আদায় করিতেন। তিনি যখন সিজদায় যেতেন তখন তাকে রেখে দিতেন আর যখন দাঁড়াতেন তখন তাকে তুলে নিতেন।
(আঃপ্রঃ ৪৮৬, ইঃফাঃ ৪৯২)
৮/১০৭. অধ্যায়ঃ এমন বিছানা সামনে রেখে সালাত আদায় করা যাতে ঋতুবতী মহিলা রয়েছে।
৫১৭. মাইমুনা বিনতু হারিস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমার বিছানা নাবী (সাঃআঃ) এঁর মুসাল্লার বরাবর ছিল। আর আমি আমার বিছানায় থাকা অবস্থায় কোন কোন সময় তাহাঁর কাপড় আমার গায়ে এসে পড়তো।
(আঃপ্রঃ ৪৮৭, ইঃফাঃ ৪৯৩)
৫১৮. মাইমুনা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) সালাত আদায় করিতেন আর আমি তাহাঁর পাশে শুয়ে থাকতাম। তিনি যখন সিজদা করিতেন তখন তাহাঁর কাপড় আমার গায়ে এসে পড়তো। সে সময় আমি ঋতুবতী ছিলাম।
(আঃপ্রঃ ৪৮৮, ইঃফাঃ ৪৯৪)
৮/১০৮. অধ্যায়ঃ সিজদার সুবিধার্থে নিজ স্ত্রীকে সিজদার সময় স্পর্শ করা।
৫১৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ তোমরা আমাদেরকে কুকুর ও গাধার সমান করে বড়ই খারাপ করেছ। অথচ আমি নিজেকে এ অবস্থায় দেখেছি যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সালাত আদায়ের সময় আমি তাহাঁর ও কিবলার মাঝখানে আড়াআড়িভাবে শুয়ে থাকতাম। তিনি যখন সিজদা করার ইচ্ছা করিতেন তখন আমার পা দুটোতে টোকা মারতেন আর আমি আমার পা গুটিয়ে নিতাম।
(আঃপ্রঃ ৪৮৯, ইঃফাঃ ৪৯৫)
৮/১০৯. অধ্যায়ঃ মুসল্লির দেহ হইতে মহিলা কর্তৃক অপবিত্রতা পরিষ্কার করা।
৫২০. আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন একদা রাসুল (সাঃআঃ) কাবার নিকট দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। আর কুরাইশের একদল তাদের মাজলিশে উপবিষ্ট ছিল। তাদের মধ্য হইতে এক ব্যক্তি বললঃ তোমরা কি এই রিয়াকারকে লক্ষ্য করছ না? তোমাদের মধ্যে কে এমন আছে, যে অমুক গোত্রের উট যবহ করার স্থান পর্যন্ত যেতে পার? সেখান হইতে গোবর, রক্ত, ও নাড়িভুঁড়ি নিয়ে এসে অপেক্ষা করিবে। যখন তিনি সিজদায় যাবেন, তখন এগুলো তাহাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দিবে। এ কাজের জন্য তাদের চরম দুর্ভাগা ব্যক্তি (উক্ববাহ ইবনু আবু মুআইত) উঠে দাঁড়াল (এবং তা নিয়ে আসলো)। যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সিজদায় গেলেন তখন সে তাহাঁর দুকাঁধের মাঝখানে সেগুলো রেখে দিল। নাবী (সাঃআঃ) সিজদায় স্থির রয়ে গেলেন। এতে তারা পরস্পর হাসাহাসি করিতে লাগলো। এমনকি হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গায়ের উপর লুটোপুটি করিতে লাগলো। এ অবস্থা দেখে এক ব্যক্তি ফাতিমা (রাদি.) এঁর নিকট গেলেন। তখন তিনি ছিলেন ছোট বালিকা। তিনি দৌড়ে চলে এলেন। তখনও নাবী (সাঃআঃ) সিজদায় স্থির ছিলেন। অবশেষে তিনি ফাতিমা (রাদি.) সেগুলো তাহাঁর উপর হইতে ফেলে দিলেন এবং মুশরিকদের লক্ষ্য করে তিরস্কার করিতে লাগলেন। যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সালাত শেষ করিলেন তখন তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি কুরাইশদের ধ্বংস কর।” “হে আল্লাহ! তুমি কুরাইশদের ধ্বংস কর।” “আল্লাহ! তুমি কুরাইশদের ধ্বংস কর।” অতঃপর তিনি নাম নিয়ে বললেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমার ইবনু হিশাম, উতবাহ ইবনু রাবিআহ, শায়বাহ ইবনু রাবিআহ, ওয়ালীদ ইবনু উতবাহ, উমায়্যাহ ইবনু খালাফ, উকবা ইবনু আবু মুআইত এবং উমরাহ ইবনু ওয়ালীদ কে ধ্বংস কর।” আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) বলেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি এদের সকলকেই বদরের দিন লাশ হয়ে পরে থাকতে দেখেছি। অতঃপর তাদেরকে টেনে হিঁচড়ে বদর কূপে নিক্ষেপ করা হয়। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিতেনঃ এই কুয়াবাসীদের উপর চিরস্থায়ী অভিসম্পাত।
(আঃপ্রঃ ৪৯০, ইঃফাঃ ৪৯৬)
Leave a Reply