তায়াম্মুমের ফরজ ও সুন্নত সমূহ এবং কখন কিভাবে করতে হয়

তায়াম্মুমের ফরজ ও সুন্নত সমূহ এবং কখন কিভাবে করতে হয়

 তায়াম্মুমের ফরজ ও সুন্নত সমূহ এবং কখন কিভাবে করতে হয় >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৭, তায়াম্মুম, অধ্যায়ঃ (১-৯)=৯টি

৭/১. অধ্যায়ঃ “এবং তোমরা পানি না পেলে পাক মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করিবে এবং তা তোমরা তোমাদের মুখ ও হাতে বুলাবে” (৪ : ৪৩)
৭/২. অধ্যায়ঃ পানি ও মাটি না পাওয়া গেলে।
৭/৩. অধ্যায়ঃ মুকীম অবস্থায় পানি না পেলে এবং সালাত ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকলে তায়াম্মুম করা।
৭/৪. অধ্যায়ঃ তায়াম্মুমের জন্য মাটিতে হাত মারার পর উভয় হাতে ফুঁ দেয়া।
৭/৫ অধ্যায়ঃ মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয়ে তায়াম্মুম করা।
৭/৬. অধ্যায়ঃ পবিত্র মাটি মুসলমানদের উযূর পানির স্থলবর্তী। পবিত্রতার জন্য পানির পরিবর্তে এটাই যথেষ্ট।
৭/৭. অধ্যায়ঃ অপবিত্র ব্যক্তির রোগ বেড়ে যাওয়ার, মৃত্যুর বা তৃষ্ণার্ত থেকে যাবার আশঙ্কাবোধ হলে তায়াম্মুম করা।
৭/৮. অধ্যায়ঃ তায়াম্মুমের জন্য মাটিতে একবার হাত মারা
৭/৯. অধ্যায়ঃ

৭/১. অধ্যায়ঃ “এবং তোমরা পানি না পেলে পাক মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করিবে এবং তা তোমরা তোমাদের মুখ ও হাতে বুলাবে” (৪ : ৪৩)

৩৩৪. নাবী (সাঃআঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমরা রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে কোন এক সফরে বের হয়েছিলাম যখন আমরা বায়যা অথবা যাতুল জায়শ নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন একখানা হার হারিয়ে গেল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-সেখানে হারের খোঁজে থেমে গেলেন আর লোকেরাও তাহাঁর সঙ্গে থেমে গেলেন, অথচ তাঁরা পানির নিকটে ছিলেন না। তখন লোকেরা আবু বকর (রাদি.) এর নিকট এসে বললেনঃ আয়েশা কী করিয়াছেন আপনি কি দেখেন নি? তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-ও লোকদের আটকিয়ে ফেলেছেন, অথচ তাঁরা পানির নিকটে নেই এবং তাঁদের সাথেও পানি নেই। আবু বকর (রাদি.) আমার নিকট আসলেন, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-আমার উরুর উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলেন। আবু বকর (রাদি.) বললেনঃ তুমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর লোকদের আটকিয়ে ফেলেছ! অথচ আশেপাশে কোথাও পানি নেই। এবং তাঁদের সাথেও পানি নেই। আয়েশা (রাদি.) বলেনঃ আবু বক্‌র আমাকে খুব তিরস্কার করিলেন আর, আল্লাহর ইচ্ছা, তিনি যা খুশি তাই বলিলেন। তিনি আমার কোমরে আঘাত দিতে লাগলেন। আমার উরুর উপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর মাথা থাকায় আমি নড়তে পারছিলাম না। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-ভোরে উঠলেন, কিন্তু পানি ছিল না। তখন আল্লাহ তাআলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করিলেন। অতঃপর সবাই তায়াম্মুম করে নিলেন। উসায়দ ইবনু হুযায়্‌র (রাদি.) বললেনঃ হে আবু বকরের পরিবারবর্গ! এটাই আপনাদের প্রথম বরকত নয়। আয়েশা (রাদি.) বলেনঃ তারপর আমি যে উটে ছিলাম তাকে দাঁড় করালে দেখি আমার হারখানা তার নীচে পড়ে আছে।

(৩৩৬, ৩৬৭২, ৩৭৭৩, ৪৫৮৩, ৪৬০৭, ৪৬০৮, ৫১৬৪, ৫২৫০, ৫৮৮২, ৬৮৪৪, ৬৮৪৫; মুসলিম ৩/২৮, হাদীস ৩৬৭, আহমাদ ২৫৫১০) (আ.প্র. ৩২২, ই.ফা. ৩২৭)

৩৩৫. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ)-বলেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে, যা আমার পুর্বে কাউকেও দান করা হয়নি।

(১) আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যে, একমাস দূরত্বেও তা প্রতিফলিত হয়;

(২) সমস্ত যমীন আমার জন্য পবিত্র ও সালাত আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কোন লোক ওয়াক্ত হলেই সালাত আদায় করিতে পারবে;

(৩) আমার জন্য গানীমাতের মাল হালাল করে দেওয়া হয়েছে, যা আমার পূর্বে আর কারো জন্য হালাল করা হয়নি;

(৪) আমাকে (ব্যাপক) শাফাআতের অধিকার দেওয়া হয়েছে;

(৫) সমস্ত নাবী প্রেরিত হইতেন কেবল তাঁদের সম্প্রদায়ের জন্য, আর আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র মানব জাতির জন্য।

(৪৩৮, ৩১২২; মুসলিম ৫/১, হাদীস ৫২১ আহমাদ ১৪২৬৮) (আ.প্র. ৩২৩, ই.ফা. ৩২৮)

৭/২. অধ্যায়ঃ পানি ও মাটি না পাওয়া গেলে।

৩৩৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি একদা (তাহাঁর বোন) আসমা (রাদি.) এর হার ধার করে নিয়ে গিয়েছিলেন। (পথিমধ্যে) হারখানা হারিয়ে গেল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-সেটির অনুসন্ধানে লোক পাঠালেন। তিনি হারটি এমন সময় পেলেন, যখন তাঁদের সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল অথচ তাঁদের কাছে পানি ছিল না। তাঁরা সালাত আদায় করিলেন। তারপর বিষয়টি তাঁরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট বর্ণনা করেন। তখন আল্লাহ তাআলা তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করেন। সেজন্য উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাদি.) আয়েশা (রাদি.) কে লক্ষ্য করে বললেনঃ আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। আল্লাহর কসম! আপনি যে কোন অপছন্দনীয় অবস্থার মুখোমুখী হয়েছেন, তাতেই আল্লাহ তাআলা আপনার ও সমস্ত মুসলমানের জন্য মঙ্গল রেখেছেন।

(৩৩৪) (আ.প্র. ৩২৪, ই.ফা. ৩২৯)

৭/৩. অধ্যায়ঃ মুকীম অবস্থায় পানি না পেলে এবং সালাত ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকলে তায়াম্মুম করা।

আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মতামতও তাই। হাসান বসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ যে রোগীর নিকট পানি আছে কিন্তু তার নিকট তা পৌঁছাবার কোন লোক না থাকে, তবে সে তায়াম্মুম করিবে।

ইবনু উমর (রাদি.) তাহাঁর জরুফ নামক স্থানের জমি হইতে ফেরার সময় মিরবাদুল গানাম-এ পৌঁছলে আসরের সময় হয়ে যায়। তখন তিনি (তায়াম্মুম করে) সালাত আদায় করিলেন। পরে তিনি মদীনা পৌঁছলেন। তখনো সূর্য উপরে ছিল। কিন্তু তিনি সালাত পুনরায় আদায় করিলেন না।

৩৩৭. আবু জুহায়ম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) মদীনার কাছে অবস্থিত বিরে জামাল হইতে আসছিলেন। পথিমধ্যে তাহাঁর সাথে এক ব্যক্তির সাক্ষাত হলো। লোকটি তাঁকে সালাম করলো। নাবী (সাঃআঃ) জওয়াব না দিয়ে দেয়ালের নিকট অগ্রসর হয়ে তাতে (হাত মেরে) নিজের চেহারা ও হস্তদ্বয় মাস্‌হ করে নিলেন, তারপর সালামের জবাব দিলেন।

(মুসলিম ৩/২৮, হাদীস ৩৬৯ আহমদ ১৭৫৪৯) (আ.প্র. ৩২৫, ই.ফা. ৩৩০)

৭/৪. অধ্যায়ঃ তায়াম্মুমের জন্য মাটিতে হাত মারার পর উভয় হাতে ফুঁ দেয়া।

4

৩৩৮. বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ জনৈক ব্যক্তি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.)-এর নিকট এসে জানতে চাইল : একবার আমার গোসলের দরকার হল অথচ আমি পানি পেলাম না। তখন আম্মার ইবনু ইয়াসার (রাদি.) উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.)-কে বললেনঃ আপনার কি সেই ঘটনা মনে আছে যে, একদা আমরা দুজন সফরে ছিলাম এবং দুজনেরই গোসলের প্রয়োজন দেখা দিল। আপনি তো সালাত আদায় করিলেন না। আর আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে সালাত আদায় করলাম। তারপর আমি ঘটনাটি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলাম। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমার জন্য তো এতটুকুই যথেষ্ট ছিল- এ বলে নাবী (সাঃআঃ) দু হাত মাটিতে মারলেন এবং দুহাতে ফুঁ দিয়ে তাহাঁর চেহারা ও উভয় হাত মাস্‌হ করিলেন।

(৩৩৯, ৩৪০, ৩৪১, ৩৪২, ৩৪৩, ৩৪৫, ৩৪৬, ৩৪৭; মুসলিম ৩/২৮, হাদীস ৩৬৮, আহমাদ ১৮৩৫৬) (আ.প্র. ৩২৬, ই.ফা. ৩৩১)

 ব্যাখ্যা

৭/৫ অধ্যায়ঃ মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয়ে তায়াম্মুম করা।

৩৩৯. আম্মার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আম্মার (রাদি.)-ও এ কথা (যা পূর্বের হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে তা) বর্ণনা করিয়াছেন। শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নিজের হস্তদ্বয় মাটিতে মেরে মুখের নিকট নিলেন (ফুঁ দিলেন)। তারপর নিজের চেহারা ও উভয় হাত মাস্‌হ করিলেন। নাযর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেন।

(৩৩৮) (আ.প্র. ৩২৭, ই.ফা. ৩৩২)

৩৪০. ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আবযা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর পিতা হইতে হইতে বর্ণিতঃ

তিনি (আবদুর রহমান) উমর (রাদি.)-এর নিকট উপস্থিত ছিলেন, আর আম্মার (রাদি.) তাঁকে বলছিলেনঃ আমরা এক অভিযানে গিয়েছিলাম, আমরা উভয়ই জুনুবী হয়ে পড়লাম। উক্ত রিওয়ায়াতে হাত দুটোতে ফুঁ দেয়ার বর্ণনা — -এর স্থলে — বলেছেন। উভয়ই সমার্থক।

(৩৩৮) (আ.প্র. ৩২৮, ই.ফা. ৩৩৩)

৩৪১. আবদুর রহমান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আম্মার (রাদি.) উমর (রাদি.)-কে বলছিলেনঃ আমি (তায়াম্মুমের জন্য) মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম। পরে নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন তিনি বলেছিলেন: চেহারা ও হাত দুটো মাস্‌হ করাই তোমার জন্য যথেষ্ট।

(৩৩৮) (আ.প্র. ৩২৯, ই.ফা. ৩৩৪)

৩৪২. আবদুর রহমান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি উমর (রাদি.)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, আম্মার (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, …. এরপর রাবী পূর্বের হাদীসটি বর্ণনা করেন।

(৩৩৮) (আ.প্র. নাই, ই.ফা. ৩৩৫)

৩৪৩. ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আবযা তাহাঁর পিতা (আবদুর রহমান) হইতে বর্ণিতঃ

আম্মার (রাদি.) বলেছেনঃ নাবী (সাঃআঃ) মাটিতে হাত মারলেন এবং তাহাঁর চেহারা ও হস্তদ্বয় মাস্‌হ করিলেন।

(৩৩৮) (আ.প্র. ৩৩০, ই.ফা. ৩৩৬)

৭/৬. অধ্যায়ঃ পবিত্র মাটি মুসলমানদের উযূর পানির স্থলবর্তী। পবিত্রতার জন্য পানির পরিবর্তে এটাই যথেষ্ট।

হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ হাদস না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য তায়াম্মুমই যথেষ্ট । ইবন আব্বাস (রাদি.) তায়াম্মুম করে ইমামতি করিয়াছেন । ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ লোনা ভূমিতে সালাত আদায় করা বা তাতে তায়াম্মুম করায় কোন বাধা নেই ।

৩৪৪. ইমরান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। আমরা রাতে চলতে চলতে শেষরাতে এক স্থানে ঘুমিয়ে পড়লাম। মুসাফিরের জন্য এর চেয়ে মধুর ঘুম আর হইতে পারে না। (আমরা এমন ঘোর নিদ্রায় নিমগ্ন ছিলাম যে,) সূর্যের উত্তাপ ছাড়া অন্য কিছু আমাদের জাগাতে পারেনি। সর্বপ্রথম জাগলেন অমুক, তারপর অমুক, তারপর অমুক। (রাবী) আবু রাজা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাঁদের সবার নাম নিয়েছিলেন কিন্তু আওফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাঁদের নাম মনে রাখতে পারেন নি। চতুর্থবারের জেগে ওঠা ব্যক্তি ছিলেন উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.)। নাবী (সাঃআঃ) ঘুমালে আমরা তাকে কেউ জাগাতাম না, যতক্ষণ না তিনি নিজেই জেগে উঠতেন। কারণ নিদ্রাবস্থায় তাহাঁর উপর কী অবতীর্ণ হচ্ছে তা তো আমাদের জানা নেই। উমর (রাদি.) জেগে মানুষের অবস্থা দেখলেন, আর তিনি ছিলেন দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তি – উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর বলিতে আরম্ভ করিলেন। তিনি ক্রমাগত উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর বলিতে থাকলেন। এমন কি তাহাঁর শব্দে নাবী (সাঃআঃ) জেগে উঠলেন। তখন লোকেরা তাহাঁর নিকট ওজর পেশ করলো। তিনি বললেনঃ কোন ক্ষতি নেই বা বললেনঃ কোন ক্ষতি হইবে না। এখান হইতে চল। তিনি চলতে লাগলেন। কিছু দূর গিয়ে থামলেন। উযূর পানি আনালেন এবং উযূ করিলেন। সালাতের আজান দেয়া হলো। তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করিলেন। সালাত শেষে দেখলেন, একলোক আলাদা দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি লোকদের সাথে সালাত আদায় করেন নি। নাবী (সাঃআঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে অমুক! তোমাকে লোকদের সাথে সালাত আদায় করিতে কিসে বিরত রাখলো? তিনি বলিলেন আমার উপর গোসল ফরয হয়েছে। অথচ পানি নেই। তিনি বললেনঃ পবিত্র মাটি নাও (তায়াম্মুম কর), এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। নাবী (সাঃআঃ) পুনরায় সফর শুরু করিলেন। লোকেরা তাঁকে পিপাসার কষ্ট জানালো। তিনি অবতরণ করিলেন, তারপর অমুক ব্যক্তিকে ডাকলেন। (রাবী) আবু রাজা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তার নাম উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু আওফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তা ভুলে গেছেন। তিনি আলী (রাদি.)-কেও ডাকলেন। তারপর উভয়কেই পানি খুঁজে আনতে বলিলেন। তারা পানির খোঁজে বের হলেন। তাঁরা পথে এক মহিলাকে দুই মশক পানি উটের উপর করে নিতে দেখলেন। তাঁরা তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ পানি কোথায়? গতকাল এ সময়ে আমি পানির নিকটে ছিলাম। আমার গোত্র পিছনে রয়ে গেছে। তাঁরা বললেনঃ এখন আমাদের সঙ্গে চলো। সে বললো: কোথায়? তারা বললেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট। সে বললো: সেই লোকটির নিকট যাকে সাবি (ধর্ম পরিবর্তনকারী) বলা হয়? তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ, তোমরা যাকে এই বলে থাক। আচ্ছা, এখন চলো। তারা তাকে নিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এলেন এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বলিলেন। ইমরান (রাদি.) বললেনঃ লোকেরা স্ত্রীলোকটিকে তার উট হইতে নামালেন। তারপর নাবী (সাঃআঃ) একটি পাত্র আনতে বলিলেন এবং উভয় মশকের মুখ খুলে তাতে পনি ঢাললেন এবং সেগুলোর মুখ বন্ধ করে দিলেন। তারপর সে মশকের নীচের মুখ খুলে দিয়ে লোকদের মধ্যে পানি পান করার ও জন্তু-জানোয়ারকে পানি পান করানোর ঘোষণা দিয়ে দিলেন। তাঁদের মধ্যে যার ইচ্ছা পানি পান করিলেন ও জন্তুকে পান করালেন। অবশেষে যে ব্যক্তির গোসল দরকার ছিল, তাকেও এক পাত্র পানি দিয়ে নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ এ পানি নিয়ে যাও এবং গোসল সার। ঐ মহিলা দাঁড়িয়ে দেখছিল যে, তার পানি নিয়ে কী করা হচ্ছে। আল্লাহর কসম! যখন তার হইতে পানি নেয়া শেষ হল তখন আমাদের মনে হল, মশকগুলো পূর্বাপেক্ষা অধিক ভর্তি। তারপর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ মহিলার জন্য কিছু একত্র কর। লোকরা মহিলার জন্যে আজওয়া (বিশেষ খেজুর), আটা ও ছাতু এনে একত্র করিলেন। যখন তাঁরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী জমা করিলেন, তখন একটা কপড়ে বেঁধে মহিলাকে উটের উপর সওয়ার করালেন এবং তার সামনে কাপড়ে বাঁধা গাঁঠরিটি রেখে দিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি জান যে, আমরা তোমার পানি মোটেই কম করিনি; বরং আল্লাহ তাআলাই আমাদের পানি পান করিয়েছেন। অতঃপর সে তার পরিজনের নিকট ফিরে গেল। তার বেশ দেরী হয়েছিল। পরিবারের লোকজন তাকে জিজ্ঞেস করলো, হে অমুক! তোমার এত দেরী হল কেন? উত্তরে সে বললোঃ একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা! দুজন লোকের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তারা আমাকে সেই লোকটির কাছে নিয়ে গিয়েছিল, যাকে সাবি বলা হয়। আর সেখানে সে এসব করিল। এ বলে সে মধ্যমা এবং তর্জনী আঙুল দিয়ে আসমান ও জমিনের দিকে ইঙ্গত করে বলিল, আল্লাহর কসম! সে এ দুটির মধ্যে সবচেয়ে বড় জাদুকর নয় তো সে বস্তবিকই আল্লাহর রাসুল। এ ঘটনার পর মুসলিমরা ঐ মহিলার গোত্রের আশপাশের মুশরিকদের উপর হামলা করিতেন কিন্তু মহিলার সাথে সম্পর্কযুক্ত গোত্রের কোন ক্ষতি করিতেন না। একদা মহিলা নিজের গোত্রকে বললোঃ আমার মনে হয়, তারা ইচ্ছা করে আমাদের নিস্কৃতি দিচ্ছে। এসব দেখে কি তোমরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হইবে না? তারা সবাই মহিলাটির কথা মেনে নিল এবং ইসলামে দাখিল হয়ে গেল।

আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ صباء শব্দের অর্থ নিজের দ্বীন ছেড়ে অন্যের দ্বীন গ্রহণ করা। আবুল আলিয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ صابئين হচ্ছে আহলে কিতাবের একটি দল, যারা যবূর কিতাব পড়ে থাকে। أصب শব্দের অর্থ ঝুঁকে পড়া। (৩৪৮, ৩৫৭১; মুসলিম ৫/৫৫, হাদীস ৬৮২ আহমদ ১৯৯১৯) (আ.প্র. ৩৩১, ই.ফা. ৩৩৭). সুরা ইউসুফের ৩৩নং আয়াতে এ শব্দটি এসেছে।

৭/৭. অধ্যায়ঃ অপবিত্র ব্যক্তির রোগ বেড়ে যাওয়ার, মৃত্যুর বা তৃষ্ণার্ত থেকে যাবার আশঙ্কাবোধ হলে তায়াম্মুম করা।

বর্ণিত আছে যে, এক শীতের রাতে আমর ইবনুল আস (রাদি.) জুনুবী হয়ে পড়লে তায়াম্মুম করিলেন। আর (এ প্রসঙ্গে) তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করিলেন : তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (৪ : ২৯) এরপর নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তিনি তাকে দোষারোপ করেননি।

৩৪৫. –আবু ওয়াইল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আবু মূসা (রাদি.) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ (অপবিত্র ব্যক্তি) পানি না পেলে কি সালাত আদায় করিবে না? আবদুল্লাহ (রাদি.) বললেনঃ হাঁ, আমি একমাসও যদি পানি না পাই তবে সালাত আদায় করবো না। এ ব্যাপারে যদি লোকদের অনুমতি দেই তা হলে তারা একটু শীত বোধ করলেই এরূপ করিতে থাকবে। অর্থাৎ তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করিবে। আবু মূসা (রাদি.) বললেনঃ তাহলে উমর (রাদি.)-এর সামনে আম্মার (রাদি.)-এর কথার তাৎপর্য কী হইবে? তিনি উত্তরে বললেনঃ উমর (রাদি.) আম্মার (রাদি.)-এর কথায় সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে আমি মনে করি না।

৩৪৬. শাক্বীক ইবনু সালামা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ ও আবু মূসা (রাদি.)-এর নিকট ছিলাম। তাঁকে আবু মূসা (রাদি.) বললেনঃ হে আবু আবদুর রহমান। কেউ অপবিত্র হলে যদি পানি না পায় তবে কী করিবে? তখন আবদুল্লাহ (রাদি.) বললেনঃ পানি না পাওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করিবে না। আবু মূসা (রাদি.) বললেনঃ তা হলে আম্মার (রাদি.)-এর কথার উত্তরে আপনি কী বলবেন? তাঁকে যে নাবী (সাঃআঃ) বলেছিলেন (তায়াম্মুম করে নেয়া) তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল। আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাদি.) বললেনঃ তুমি দেখ না উমর (রাদি.) আম্মারের এই কথায় সন্তুষ্ট ছিলেন না? আবু মূসা (রাদি.) পুনরায় বলিলেন আম্মারের কথা বাদ দিলেও তায়াম্মুমের আয়াতের কী ব্যাখ্যা করবেন? আবদুল্লাহ (রাদি.) এর কোন উত্তর দিতে পারলেন না। তিনি তবুও বললেনঃ আমরা যদি লোকদের তার অনুমতি দিয়ে দেই তাহলে আশঙ্কা হয়, কারো নিকট পানি ঠাণ্ডা মনে হলেই তায়াম্মুম করিবে। রাবী আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ আমি শাক্বীক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে প্রশ্ন করলাম, “আবদুল্লাহ (রাদি.) এ কারণে কি তায়াম্মুম অপছন্দ করেছিলেন?” তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।

৭/৮. অধ্যায়ঃ তায়াম্মুমের জন্য মাটিতে একবার হাত মারা

৩৪৭. শাক্বীক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) ও আবু মূসা আশআরী (রাদি.)-এর সঙ্গে বসা ছিলাম। আবু মূসা (রাদি.) আবদুল্লাহ (রাদি.)-কে বললেনঃ কোন ব্যক্তি জুনুবী হলে সে যদি এক মাস পর্যন্ত পানি না পায়, তা হলে কি সে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করিবে না? শাক্বীক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবদুল্লাহ (রাদি.) বললেনঃ এক মাস পানি না পেলেও সে তায়াম্মুম করিবে না। তখন তাঁকে আবু মূসা (রাদি.) বললেনঃ তাহলে সুরা মায়িদাহর এ আয়াত সম্পর্কে কী করবেন যে, “পানি না পেলে পাক মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করিবে”- (সুরা আল-মায়িদা ৫/৬)। আবদুল্লাহ (রাদি.) জওয়াব দিলেন, মানুষকে সেই অনুমতি দিলে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছার সম্ভাবনা রয়েছে যে, সামান্য ঠান্ডা লাগলেই লোকেরা মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করিবে। আমি বললাম আপনারা এ জন্যেই কি তা অপছন্দ করেন? তিনি জবাব দিলেন, হাঁ। আবু মূসা (রাদি.) বললেনঃ আপনি কি উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.)–এর সম্মুখে আম্মার (রাদি.)-এর এ কথা শোনেননি যে, আমাকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) একটা প্রয়োজনে বাইরে পাঠিয়েছিলেন। সফরে আমি জুনুবী হয়ে পড়লাম এবং পানি পেলাম না। এজন্য আমি জন্তুর মত মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম। পরে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর নিকট ঘটনাটি বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমার জন্য তো এটুকুই যথেষ্ট ছিল- এই বলে তিনি দু হাত মাটিতে মারলেন, তারপর তা ঝেড়ে নিলেন এবং তা দিয়ে তিনি বাম হাতে ডান হাতের পিঠ মাস্‌হ করিলেন কিংবা রাবী বলেছেন, বাম হাতের পিঠ ডান হাতে মাস্‌হ করিলেন। তারপর হাত দুটো দিয়ে তাহাঁর মুখমন্ডল মাস্‌হ করিলেন। আবদুল্লাহ বললেনঃ আপনি দেখেন নি যে, উমর (রাদি.) আম্মার (রাদি.)-এর কথায় সন্তুষ্ট হননি? ইয়ালা (রাদি.) আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে এবং তিনি শাক্বীক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে আরো বলেছেন যে, তিনি বললেনঃ আমি আবদুল্লাহ (রাদি.) ও আবু মূসা (রাদি.)–এর নিকট হা্যির ছিলামঃ আবু (রাদি.) বলছিলেনঃ আপনি উমর (রাদি.) হইতে আম্মারের এ কথা শোনেননি যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে ও আপনাকে বাইরে পাঠিয়েছিলেন। তখন আমি জুনুবী হয়ে গিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়েছিলাম। তারপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর নিকট এসে এ বিষয় তাঁকে জানালাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমার জন্য এই যথেষ্ট ছিল- এ বলে তিনি তাহাঁর মুখমন্ডল ও দু হাত একবার মাস্‌হ করিলেন?

৭/৯. অধ্যায়ঃ

৩৪৮. ইমরান ইবনু হুসায়ন আল-খু্যাঈ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এক ব্যাক্তিকে জামাআতে সালাত আদায় না করে পৃথক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। তিনি লোকটিকে ডেকে বললেনঃ হে অমুক! তুমি জামাআতে সালাত আদায় করলে না কেন? লোকটি বললোঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমার গোসলের প্রয়োজন হয়েছিল, কিন্তু পানি নেই। তিনি বললেনঃ তুমি পবিত্র মাটির ব্যবহার (তায়াম্মুম) করিবে। তা-ই তোমার জন্য যথেষ্ট।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply