ইসলামে চুরির শাস্তি – যে পরিমাণ সম্পদ চুরি করলে চোরের হাত কাটা যায়
ইসলামে চুরির শাস্তি – যে পরিমাণ সম্পদ চুরি করলে চোরের হাত কাটা যায় >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ৪০, অনুচ্ছেদঃ ১১-২২=১২টি
অনুচ্ছেদ-১১ঃ যে পরিমাণ সম্পদ চুরি করলে চোরের হাত কাটা যায়
অনুচ্ছেদ-১২ঃ যেসব বস্তু চুরির দায়ে হাত কাটা যায় না
অনুচ্ছেদ-১৩ঃ ছিনতাই ও প্রতারনার অপরাধে হাত কাটা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৪ঃ যে নিরাপদে সংরক্ষিত স্হান থেকে চুরি করে
অনুচ্ছেদ—১৫ঃ ঋণ গ্রহনের পর তা অস্বীকার করলে হাত কাটা প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ—১৬ঃ পাগল চুরি বা হাদ্দযোগ্য অপরাধ করলে
অনুচ্ছেদ—১৭ঃ নাবালগের অপরাধের শাস্তি
অনুচ্ছেদ-১৮ঃ যুদ্ধের সময় চুরি করলে হাত কাটা প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-১৯ঃ কাফন চোরের হাত কাটা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ—২০ঃ একই চোর একাধিবার চুরি করলে
অনুচ্ছেদ—২১ঃ হাত কেটে চোরের গর্দানে ঝুলিয়ে দেয়া
অনুচ্ছেদ—২২ঃ দাস চুরি করলে তাহাকে বিক্রি করে দেয়া
অনুচ্ছেদ–১১ঃ যে পরিমাণ সম্পদ চুরি করলে চোরের হাত কাটা যায়
৪৩৮৩. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] এক দীনারের এক-চতুর্থাংশ বা এর চাইতে বেশী চুরির অপরাধে চোরের হাত কাটতেন।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৮৪. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ দীনারের এক-চতুর্থাংশ অথবা এর চেয়ে বেশী পরিমাণ সম্পদ চুরির দায়ে চোরের হাত কাটা হইবে। আহমাদ ইবনি সালিহ বলেন, দীনারের এক-চতুর্থাংশ বা এর চেয়ে বেশী সম্পদ চুরির অপরাধে হাত কাটা যায়।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৮৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তিন দিরহাম মূল্যের বর্ম চুরির দায়ে চোরের হাত কেটেছেন।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৮৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] এমন এক চোরের হাত কেটেছেন, যে মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান হইতে তিন দিরহাম মূল্যের একটি বর্ম চুরি করেছিল।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৮৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] এক দীনার অথবা দশ দিরহাম মূল্যের বর্ম চুরির অপরাধে এক ব্যক্তির হাত কেটেছেন। {৪৩৮৬}
{৪৩৮৬} নাসায়ী। সনদে মুহাম্মাদ বিন ইসহাক্ব একজন মুদাল্লিস এবং তিনি এটি আন্ আন্ শব্দে বর্ণনা করেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ শায
অনুচ্ছেদ–১২ঃ যেসব বস্তু চুরির দায়ে হাত কাটা যায় না
৪৩৮৮. মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াহইয়া ইবনি হাব্বান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা এক গোলাম এক ব্যক্তির বাগান হইতে খেজুরের চারা চুরি করে এনে তার মনিবের বাগানে রোপন করে। চারা গাছের মালিক তা খুজঁতে খুজঁতে পেয়ে যায় এবং ওই গোলামের ব্যাপারে তৎকালীন মাদীনাহর গভর্নর মারওয়ান ইবনিল হাকামের কাছে বিচার প্রার্থী হয়। মারওয়ান গোলামটিকে বন্দী করে রাখেন এবং তার হাত কাটতে মনস্হ করেন। অতঃপর গোলামটির মনিব রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.]-র নিকট গিয়ে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি তার নিকট বর্ণনা করেন যে তিনি, রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ ফল আর খেজুরের চারা চুরির অপরাধে হাত কাটা যাবে না। লোকটি বললো, মারওয়ান তো আমার গোলাম কে ধরে রেখেছেন আর তার হাত কাটতে চাচ্ছেন। আমি চাই, আপনি আমার সাথে তার নিকট গিয়ে, রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এই ব্যাপারে যা শুনেছেন তা তাহাকে জানাবেন। অতঃপর রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] তার সঙ্গে মারওয়ান ইবনিল হাকামের নিকট গিয়ে বলেন, আমি রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছিঃ ফল আর খেজুরের চারা চুরির অপরাধে হাত কাটা যাবে না। অতঃপর মারওয়ানের আদেশে গোলামটিকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৮৯. মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াহিয়া ইবনি হাব্বান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উপরোক্ত হাদিস বর্ণনা প্রসঙ্গে মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াহিয়া ইবনি হাব্বান [রাদি.] বলেন, মারওয়ান তাহাকে কয়েকটি বেত্রাঘাত করে ছেড়ে দেন।
হাদিসের তাহকিকঃ শায
৪৩৯০. আমর ইবনি শুআইব [রাদি.] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-কে গাছে ঝুলন্ত ফল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ কোনো ক্ষুধার্ত লোক তা খেলে এবং কাপড়ে বেঁধে নিয়ে না গেলে তার কোনো অপরাধ নাই। কিন্তু কেউ যদি কাপড়ে বেধেঁ তা হইতে কিছু নিয়ে যায় তবে তাহাকে এর দ্বিগুন জরিমানা দিতে হইবে এবং শাস্তিও ভোগ করিতে হইবে। আর কেউ যদি এমন স্হান হইতে তা চুরি করে, যেখানে ফল শুকানোর জন্য রাখা হয়েছে, আর চুরিকৃত ফলের মূল্য একটি বর্মের মূল্যর সমপরিমান হয় , তবে আর হাত কাটা যাবে। কেউ উপরোক্ত মূল্যর কম পরিমান চুরি করলে তাহাকে দ্বিগুন জরিমানা করা হইবে এবং তাহাকে শাস্তিও দেয়া হইবে। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, খেজুর শুকানোর স্হানকে জারীন বলা হয়।
{৪৯৮৯} হাদিস হাসান। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ–১৩ঃ ছিনতাই ও প্রতারনার অপরাধে হাত কাটা সম্পর্কে
৪৩৯১. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ লুন্ঠনকারীর হাত কাটা যাবে না। যে ব্যক্তি দিবালোকে লুন্ঠন করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৯২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ প্রতারকের হাত কাটা যাবে না।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৯৩. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] এর সূত্রে অনুরুপ হাদিস বর্ণিত। তাতে আরো রয়েছেঃ লুন্ঠনকারীর হাত কাটা যাবে না। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি জুরাইজ উপরোক্ত হাদিসদ্বয় আবুস-যুবাইর হইতে শোনেননি। আমি আ্হমাদ ইবনি হাম্বাল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে জেনেছি। তিনি বলিয়াছেন, ইবনি জুরাইজ উপরোক্ত হাদিসদ্বয় ইয়াসীন আয-যাইয়াতের কাছে শুনেছেন। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মুগীরাহ ইবনি মুসলিম হাদিসদ্বয় আবু যুবাইর [রাদি.] হইতে নাবী [সাঃআঃ] এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–১৪ঃ যে নিরাপদে সংরক্ষিত স্হান থেকে চুরি করে
৪৩৯৪. সাফওয়ান ইবনি উমাইয়্যাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি ত্রিশ দিরহাম মূল্যের আমার একটি চাদরে মাসজিদে ঘুমিয়েছিলাম। অতঃপর এক ব্যক্তি এসে আমার কাছ থেকে সেটা টেনে নিয়ে যায়। তাহাকে হাতেনাতে ধরে নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট নিয়ে আসা হলে তিনি তার হাত কাটার আদেশ দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাহাঁর নিকট হাজির হয়ে বলিলাম, মাত্র ত্রিশটি দিরহামের কারণে আপনি তার হাত কাটাবেন? আমি তার নিকট এটা বাকীতে বিক্রি করছি। তিনি বলিলেন, তুমি তাহাকে আমার নিকট নিয়ে আসার পূর্বে তা করলে না কেনো? ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, যায়িদাহ সিমাকের সূত্রে জুআইদ ইবনি হুযাইর হইতে এই হাদিস বর্ণনা করে বলেন, সাফওয়ান ঘুমিয়েছিলেন। তাউস ও মুজাহিদ এ হাদিস বর্ণনা করে বলেন, তিনি ঘুমন্ত ছিলেন। চোর এসে তার মাথার নীচ হইতে চাদরটি চুরি করে নিয়ে যায়। আবু সালামাহ ইবনি আবদুর রা্হমান এ হাদিস বর্ণনা করে বলেন, চোরটি তার মাথার নীচ হইতে চাদরটি টান দিয়ে নিয়ে যায়। তিনি জাগ্রত হয়ে চিৎকার দেন এবং তাহাকে ধরে ফেলা হয়। যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সাফওয়ান ইবনি আবদুল্লাহ হইতে বর্ণনা করে বলেন, তার চাদরটাকে তিনি বালিশ বানিয়ে মাথার নিচে রেখে মাসজিদে ঘুমান। এ সময় চোর এসে তার চাদরটা হস্তগত করে। তিনি তাহাকে ধরে নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট নিয়ে আসেন।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ—১৫ঃ ঋণ গ্রহনের পর তা অস্বীকার করলে হাত কাটা প্রসঙ্গে
৪৩৯৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
জনৈকা মাখযুমী মহিলা বিভিন্ন জিনিস ধার নিয়ে পরে তা অস্বীকার করতো। নাবী [সাঃআঃ] এর নির্দেশে তার হাত কেটে দেয়া হয়। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, জুয়াইরিয়া, নাফি হইতে ইবনি উমার অথবা সাফিয়্যাহ বিনতু আবু উবাইদ সূত্রে আরো বর্ণনা করেনঃ নাবী [সাঃআঃ] ভাষন দিতে দাঁড়িয়ে বলেনঃ এমন কোনো মহিলা আছে কি যে আল্লাহ ও তার রাসূলের নিকট তাওবাহ করিবে? একথা তিনি তিনবার বলেন। তখন ঐ মহিলাটি সেখানে উপস্হিত ছিলো; কিন্তু সে দাঁড়ায়নি এবং কথাও বলেনি। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি গানাজ নাফির সূত্রে সাফিয়্যাহ বিনতু আবু উবাইদ সূত্রে এ হাদিস বর্ণনা করে বলেন, মহিলাটির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া হয়।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৯৬. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক অপরিচিত মহিলা কিছু পরিচিত লোকের নামে অলংকার ধার নেয়। অতঃপর সে এগুলো বিক্রি করে দেয়। তাহাকে ধরে নিয়ে নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট হাজির করা হয়। তিনি তার হাত কাটার নির্দেশ দিলেন। এ সেই মহিলা যার জন্য উসামা্হ ইবনি যায়িদ [রাদি.] সুপারিশ করেছিলেন। আর রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] তার ব্যাপারে যা বলার বলেছিলেন।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৯৭. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মাখযুম গোত্রের এক মহিলা জিনিসপত্র ধার নেয়ার পর তা অস্বীকার করতো। নাবী [সাঃআঃ] তার হাত কাটতে নির্দেশ দেন। ইবনি শিহাব হইতে বর্ণিত এই হাদিসে আরো আছেঃ অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] তার হাত কেটে দেন।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ—১৬ঃ পাগল চুরি বা হাদ্দযোগ্য অপরাধ করলে
৪৩৯৮. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তিন ধরনের লোকের উপর হইতে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ [১] নিদ্রিত ব্যক্তি, যতক্ষন না জাগ্রত হয়, [২] অসুস্হ [পাগল] ব্যক্তি, যতক্ষণ না আরোগ্য লাভ করে এবং [৩] অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক যতক্ষণ না বালেগ হয়।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩৯৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা যেনার অপরাধে জনৈকা উম্মাদিনীকে ধরে এনে উমার [রাদি.]-র নিকট হাযির করা হয়। তিনি এই ব্যাপারে লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে তাহাকে পাথর মেরে হত্যা করার নির্দেশ দেন। এ সময় আলি [রাদি.] তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি প্রশ্ন করিলেন, এর কি হয়েছে? উপস্হিত লোকেরা বললো, সে অমুক গোত্রের উম্মাদিনী [পাগল মহিলা] সে যেনা করেছে। উমার[রাদি.] তাহাকে পাথর মেরে হত্যা করার আদেশ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বলিলেন, তোমরা তাহাকে নিয়ে ফিরে যাও। অতঃপর তিনি উমারের নিকট এসে বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি কি জানেন না, তিন ধরনের লোকের উপর হইতে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ [১] পাগল, যতক্ষণ না সুস্হ হয় [২] নিদ্রিত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয়, এবং [৩] নাবালগ শিশু যতক্ষণ না বালেগ হয়। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আলী [রাদি.] বলেন, তাহলে তাহাকে পাথর মারা হইবে কেন? তিনি বলেন, কোন কারন নেই। আলী [রাদি.] বলেন, তবে তাহাকে ছেড়ে দিন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাহাকে ছেড়ে দিলেন এবং আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করিলেন।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৪০০. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে অনুরূপ হাদিস বর্ণিত। এতে রয়েছেঃ তিনি বলেন, নাবালেগ যতক্ষন না বুদ্ধিমান হইবে। তিনি বলেনঃ পাগল যতক্ষণ না সুস্হ জ্ঞানসম্পন্ন হইবে। বর্ণনাকারী বলেন, উমার [রাদি.] আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিতে থাকেন।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৪০১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আলি ইবনি আবু ত্বালিব [রাদি.]-র পাশ দিয়ে যাওয়া…অতঃপর উসমান ইবনি শাইরাহ বর্ণিত হাদিসের সমার্থবোধক হাদিস বর্ণিত। তিনি বলেন, আপনার কি মনে নেই, রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তিন প্রকার লোকদের উপর হইতে কলম তুলে রাখা হয়েছেঃ [১] নির্বোধ পাগল, যতক্ষণ না সুস্হ হয় [২] নিদ্রিত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয়, এবং [৩] নাবালেগ শিশু, যতক্ষণ না প্রাপ্তবয়স্ক হয়। একথা শুনে উমার [রাদি.] বলেন, আপনি সত্যিই বলিয়াছেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি দন্ডিতাহাকে ছেড়ে দিলেন।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৪০২. আবু যিবৃয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, হান্নাদ আল-জানাবী বলিয়াছেনঃ একদা এক জেনাকারিনীকে উমার [রাদি.]–র নিকট হাযির করা হলে তিনি তাহাকে পাথর মেরে হত্যার আদেশ দেন। এ সময় আলি [রাদি.] ঐ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তাহাকে ছেড়ে দিলেন। উমার [রাদি.] এ সংবাদ পেয়ে আলি [রাদি.] কে ডেকে পাঠালেন। আলি [রাদি.] তার নিকট এসে বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি নিশ্চয়ই জানেন যেঃ রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তিন প্রকার লোকদের উপর হইতে কলম তুলে রাখা হয়েছেঃ [১] নাবালেগ, যতক্ষণ না বালেগ হয় [২] নিদ্রিত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয়, এবং [৩] পাগল, যতক্ষণ না সুস্হ হয়। আর এ তো অমুক গোত্রের পাগলিনী। সে যা করেছে, সম্ভবত উন্মাদ অবস্হায় তা করেছে। বর্ণনাকারী বলেন, উমার [রাদি.] বলেন, আমার বিষয়টি জানা নেই। অতঃপর আলি [রাদি.] বলেন, আমিও জানতাম না।
সহিহঃ এ কথাটি বাদেঃ সম্ভবত উন্মাদ অবসহায় …। ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৪০৩. আলি [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তিন ধরণের লোকের উপর হইতে কলম তুলে রাখা হয়েছেঃ [১] ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয় [২] নাবালেগ, যতক্ষণ না সাবালেগ হয় এবং [৩] পাগল, যতক্ষণ না জ্ঞানসম্পন্ন হয়। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন ,ইবনি জুরাইজ পর্যায়ক্রমে ক্বাসমম ইবনি ইয়াযীদ হইতে আলি [রাদি.] থেকে নাবী [সাঃআঃ] এর সূত্রে এ হাদিস বর্ণনা করেন, তাতে বার্ধক্যজনিত কারণে নিস্তেজ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি কথাটুকু রয়েছে।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ—১৭ঃ নাবালগের অপরাধের শাস্তি
৪৪০৪. আত্বিয়্যাহ আল-কুরাযী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি বনু কুরাইযার বন্দীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। তারা দেখতো, যার নাভীর নীচে চুল উঠেছে, তাহাকে হত্যা করা হতো; আর যার উঠেনি, তাহাকে হত্যা করা হতো না। আর আমি তাহাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। যাদের তা উঠেনি।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৪০৫. আবদুল মালিক ইবনি উমাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আত্বিয়্যাহ [রাদি.] বলেন, তারা [মুসলিমরা] আমার নাভীর নীচ্ অনাবৃত করে দেখলো যে, চুল উঠেনি। সুতরাং তারা আমাকে বন্দীদের অন্তর্ভুক্ত করলো।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৪০৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উহুদ যুদ্ধের সময় তাহাকে নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট হাযির করা হয়। তখন তিনি চৌদ্দ বছরের বালক ছিলেন। তিনি তাহাকে অনুমতি দেননি। আবার খন্দক যুদ্ধের সময়ও তাহাকে হাযির করা হয়। তখন তিনি ছিলেন পনেরো বছরের তরুণ। তখন তিনি তাহাকে [যুদ্ধ করার] অনুমতি দেন।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৪০৭. উবাইদুল্লাহ ইবনি উমার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিয়াছেন, আমি এই হাদিস উমার ইবনি আবদুর আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, এই বয়সটাই নাবালেগ ও সাবালেগের মধ্যেকার সীমারেখা।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–১৮ঃ যুদ্ধের সময় চুরি করলে হাত কাটা প্রসঙ্গে
৪৪০৮. জুনাদাহ ইবনি আবু উমাইয়্যাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা বুসর ইবনি আরত্বাত [রাদি.]-এর সাথে নৌযুদ্ধে ছিলাম। এ সময় মিসদার নামক এক চোরকে ধরে তার নিকট হাযির করা হলো। সে একটি উষ্ট্রী চুরি করেছিলো। তিনি বলিলেন, আমি রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছিঃ সফরে হাত কাটা যাবে না। অন্যথায় আমি অবশ্যই এর হাত কেটে দিতাম।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–১৯ঃ কাফন চোরের হাত কাটা সম্পর্কে
৪৪০৯. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে ডেকে বলিলেন, হে আবু যার! আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সৌভাগ্যপূর্ণ দরবারে উপস্হিত। তিনি বলিলেনঃতুমি কি করিবে যখন মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হইবে এবং তখন একটি ঘর অর্থাৎ কবরের ক্রয়মূল্য হইবে একটি ক্রীতদাসের মূল্যের সমান? আমি বলিলাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলই ভালো জানেন অথবা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূল আমার জন্য যা পছন্দ করেন। তিনি বলিলেনঃতুমি তখন ধৈর্য ধরবে। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাম্মান ইবনি আবু সুলাইমান বলিয়াছেন, কাফন চোরের হাত কাটতে হইবে; কেননা সে মৃত ব্যক্তির ঘরে হানা দেয়।
ইসলামে চুরির শাস্তি – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ—২০ঃ একই চোর একাধিবার চুরি করলে
৪৪১০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এক চোরকে ধরে আনা হলে তিনি বলেনঃ তোমরা একে হত্যা করো। তারা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে চুরি করেছে। তিনি বলিলেনঃএর হাত কেটে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, তার হাত কেটে দেয়া হলো। অতঃপর তাহাকে দ্বিতীয়বার তাহাঁর নিকট আনা হলে তিনি বলেনঃ তোমরা একে হত্যা করো। তারা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল ! সে তো চুরি করেছে! তিনি আদেশ দিলেন, তোমরা এর অপর হাত কেটে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, তার হাত কেটে দেয়া হলো। তৃতীয়বার তাহাকে তাহাঁর নিকট ধরে আনা হলে তিনি বলেনঃ তোমরা একে হত্যা করো। তারা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো চুরি করেছে। তিনি বলিলেনঃতাহলে তোমরা তার অঙ্গ [এক পা] কেটে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, এবার তার পা কাটা হলো। অতঃপর চতুর্থবার তাহাকে ধরে আনা হলে তিনি তাহাকে হত্যা করার আদেশ দিলেন। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো চুরি করেছে। তিনি বলিলেনঃতাহলে তাহাঁর আরেক পা কেটে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, এবার তার অপর পা কাটা হলো। অতঃপর পঞ্চমবার তাহাকে ধরে আনা হলে তিনি [সাঃআঃ] তাহাকে হত্যা করার আদেশ দিলেন। জাবির [রাদি.] বলেন, অতএব আমরা তাহাকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করলাম এবং হেঁচড়িয়ে টেনে নিয়ে একটি কূপে ফেলে দিয়ে তার উপর পাথরচাপা দিলাম।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ—২১ঃ হাত কেটে চোরের গর্দানে ঝুলিয়ে দেয়া
৪৪১১. আবদুর রাহমান ইবনি মুহাইরিয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা ফাদালাহ ইবনি উবাইদ [রাদি.]-কে বলিলাম, চোরের কাটা হাত গর্দানের সঙ্গে বেঁধে দেয়া কি সুন্নাত? তিনি বলিলেন, একদা রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এক চোরকে নিয়ে আসা হলে তাহাঁর হাত কাটা হয় এবং তাহাঁর নির্দেশমত তা গর্দানের সঙ্গে বেঁধে দেয়া হয়। {৪৪১০}
{৪৪১০} তিরমিজি, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ। এর সানাদে হাজ্জাজ ইবনি আরত্বাত রয়েছে। ঈমাম নাসায়ী বলেনঃ তিনি যয়ীফ, তাহাঁর হাদিস দ্বারা দলিল গ্রহন করা যাবে না। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ—২২ঃ দাস চুরি করলে তাহাকে বিক্রি করে দেয়া
৪৪১২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ দাস যদি চুরি করে তবে তাহাকে এক নাশ্ অর্থাৎ বিশ দিরহামের বিনিময়ে হলেও বিক্রি করে দাও। {৪৪১১}
{৪৪১১} নাসায়ী, ইবনি মাজা্হ, আহমাদ। সানাদে আমর আবু সালামাহ রয়েছে। হাফিয বলেনঃ তিনি সত্যবাদী কিন্তু প্রচুর ভুল করেন। আবু হাতিম বলেনঃ তার দ্বারা দলিল গ্রহনযোগ্য নয়। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
Leave a Reply