সেহরি ও ইফতারের দোয়া সময় গুরুত্ব ও খাদ্য

সেহরি ও ইফতারের দোয়া সময় গুরুত্ব ও খাদ্য

সেহরি ও ইফতারের দোয়া সময় গুরুত্ব ও খাদ্য >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ১৪, অনুচ্ছেদঃ ১৫-২৩=৯টি

অনুচ্ছেদ-১৫ঃ সাহারী খাওয়ার গুরুত্ব
অনুচ্ছেদ-১৬ঃ যারা সাহারীকে ভোরের নাস্তা আখ্যায়িত করেন
অনুচ্ছেদ-১৭ঃ সা্হরীর সময়
অনুচ্ছেদ-১৮ঃ খাবার পাত্র হাতে থাকাবস্হায় ফাজরের আযান শুনলে
অনুচ্ছেদ-১৯ঃ সওম পালনকারীর ইফতারের সময়
অনুচ্ছেদ-২০ঃ অবিলম্বে ইফতার করা মুস্তাহাব
অনুচ্ছেদ-২১ঃ ইফতারের খাদ্য
অনুচ্ছেদ-২২ঃ ইফতারের সময় দুআ পাঠ
অনুচ্ছেদ-২৩ঃ সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করলে

অনুচ্ছেদ১৫ঃ সাহারী খাওয়ার গুরুত্ব

২৩৪৩. আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমাদের ও আহলে কিতাবের সওমের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সাহারী খাওয়া।

সেহরি ও ইফতারের দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৬ঃ যারা সাহারীকে ভোরের নাস্তা আখ্যায়িত করেন

২৩৪৪. আল-ইরবাদ ইবনি সারিয়াহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে রমাযানের সাহারীর সময় ডাকলেন এবং বলিলেনঃ বরকতময় সকালের খাবারের দিকে এসো।

সেহরি ও ইফতারের দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৩৪৫. আবু হুরাইরা্হ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ ঈমানদার ব্যক্তির জন্য খেজুর দিয়ে সাহারী খাওয়া কতোই না উত্তম।

সেহরি ও ইফতারের দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৭ঃ সা্হরীর সময়

২৩৪৬. সামুরা্হ ইবনি জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একদা সামুরা্হ ইবনি জুনদুব [রাদি.] খুত্ববাহ প্রদানের সময় বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ বিলালের আযান যেন তোমাদেরকে পানাহার থেকে বিরত না রাখে, আর না [পূর্ব] আকাশের শুভ্র আলো যতক্ষন না পূর্ব দিগন্তে বিস্তৃত হয়।

সেহরি ও ইফতারের দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৩৪৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ বিলালের আযান যেনো তোমাদেরকে সা্হরী খাওয়া থেকে বিরত না রাখে। কেননা সে আযান দেয় [বা আহবান জানায়] রাতের সলাত আদায়কারীদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য, আর যারা ঘুমিয়েছিলো তাহাদেরকে জাগ্রত করিতে। আর এরুপ না হওয়া পর্যন্ত ফাজর হয় না। ইয়াহইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হাতের তালুকে একত্র করে বলেন, এরূপ, ইয়াহহিয়া তর্জনীদ্বয়কে প্রসারিত করেন।

সেহরি ও ইফতারের দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৩৪৮. ক্বায়িস ইবনি ত্বালক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ খাও এবং পান করো। উর্ধাকাশে ভোরের যে লম্বা রেখা ফুটে উঠে, তা যেন তোমাদেরকে [সাহরী খাওয়া থেকে] বিরত না রাখে। সুতরাং আকাশের দিগন্তে লাল রঙ্গের ফর্সা উঠা পর্যন্ত তোমরা খাও এবং পান করো।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

২৩৪৯. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ

حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ

হাত্তা ইয়াতাবাইনা লাকুমুল খাইতুল আবইয়াদু মিনাল খাইতিল আসওয়াদ, তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ না রাতের কালো সুতা থেকে ভোরের সাদা সুতা [রেখা] স্পষ্টরুপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত হয় [সুরাহ আল- বাক্বারাহঃ ১৮৭]।

তখন আমি একটি কালো ও একটি সাদা রংয়ের সুতা নিয়ে আমার বালিশের নীচে রাখি। এরপর আমি তা দেখিতে থাকি কিন্তু স্পষ্টভাবে দেখিতে পেলাম না। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে গিয়ে বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি হেসে উঠলেন এবং বলিলেন, বালিশ তো দৈর্ঘ্য প্রস্থকারী। বরং এটা হচ্ছে রাত ও দিন। উসমানের বর্ণনায় রয়েছেঃ তা তো রাতের অন্ধকার ও দিনের শুভ্রতা।

সেহরি ও ইফতারের দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১৮ঃ খাবার পাত্র হাতে থাকাবস্হায় ফাজরের আযান শুনলে

২৩৫০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যখন তোমাদের কেউ ফাজরের আযান শুনতে পায় অথচ খাবারের পাত্র তার হাতে থাকে, সে যেন তা রেখে না দেয় যতক্ষন না তার প্রয়োজন পূরণ হয়।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

অনুচ্ছেদ১৯ঃ সওম পালনকারীর ইফতারের সময়

২৩৫১. আসিম ইবনি উমার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যখন এদিক [পূর্বদিকে] থেকে রাত আসে এবং এদিক [পশ্চিম দিক] থেকে দিন তিরোহিত হয় অর্থাৎ সূর্য অস্তমিত যায়, তখন সওম পালনকারীর ইফতারের সময়।

সেহরি ও ইফতারের দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৩৫২. আবদুল্লাহ ইবনি আবু আওফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একদা আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে সফরে গেলাম। তখন তিনি সওম পালনরত ছিলেন। সূর্য ডুবে গেলে তিনি বলিলেন, হে বিলাল! সওয়ারী থেকে নেমে আমাদের জন্য ছাতু তৈরি করে আনো। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সন্ধ্যা হইতে দিন। তিনি বলেনঃ সওয়ারী থেকে নেমে আমাদের জন্য ছাতু তৈরি করে আনো। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এখনও তো দিন বাকী আছে। তিনি আবারও বলিলেনঃ নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু বানাও। অতঃপর তিনি নেমে ছাতু তৈরি করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা পান করে বলিলেনঃ যখন তোমরা এদিক [পূর্বদিক] থেকে রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে আসতে দেখবে তখনই সওম পালনকারী ইফতার করিবে। তিনি তাহাঁর আঙ্গুল দিয়ে পূর্বদিক ইঙ্গিত করে দেখালেন।

সেহরি ও ইফতারের দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ২০ঃ অবিলম্বে ইফতার করা মুস্তাহাব

২৩৫৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ দ্বীন বিজয়ী থাকিবে যতদিন লোকেরা অবিলম্বে ইফতার করিবে। কেননা ইহুদী ও খৃস্টানরা বিলম্বে ইফতার করে।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৩৫৪. আবু আত্বিয়্যাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি ও মাসরূক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আয়িশাহ [রাদি.] -এর নিকট গিয়ে বলি, হে উম্মুল মুমিনীন! মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] এর দুইজন সাহাবীর একজন সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করেন এবং খুব তাড়াতাড়ি [মাগরিবের] সলাত আদায় করে নেন। আর দ্বিতীয়জন বিলম্বে ইফতার করেন এবং সলাতও বিলম্বে আদায় করেন। তিনি বলিলেন, তাহাদের মধ্যে কে ইফতার অনতিবিলম্বে করেন এবং সলাত তারাতারি আদায় করেন? আমরা বলিলাম, তিনি হচ্ছেন আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.]। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এরূপই করিতেন।

সেহরি ও ইফতারের দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ২১ঃ ইফতারের খাদ্য

২৩৫৫. সালমান ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমাদের কেউ সওম রাখলে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করিবে। কেননা পানি পবিত্রকারী। {২৩৫৫}

দূর্বলঃ যয়ীফ সুনান আত-তিরমিজি [ ১০১ /৬৬১, ১১০/৬৯৯], যয়ীফ সুনান মাজাহ [৩৭৪], ইরওয়া [৯২২]। ২৩৫৫ তিরমিজি, দারিমী, আহমাদ। ঈমাম তিরমিজি বলেনঃ এই হাদিসটি হাসান। হাদিসের সানাদে রাবাব রয়েছে। হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্হে বলেনঃ মাক্ববুল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২৩৫৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [মাগরিবের] সলাতের পূর্বে কয়েকটি পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করিতেন, পাকা খেজুর না পেলে খোরমা দিয়ে, তাও না পেলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে [ইফতার করিতেন]।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

অনুচ্ছেদ২২ঃ ইফতারের সময় দুআ পাঠ

২৩৫৭. মাওয়ান ইবনি সালিম আল-মুকাফফা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আমি ইবনি উমার [রাদি.] -কে তার দাড়ি মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে মুষ্টির বাড়তি অংশ কেটে ফেলতে দেখেছি। আর তিনি বলিয়াছেন, নাবী [সাঃআঃ] ইফতারের সময় বলিতেনঃ

ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ

যাহাবায যামা-উ অবতাল্লাতিল উরুকু অষাবাতাল আজরু ইন শা-আল্লাহ।” পিপাসা দূরীভূত হয়েছে, শিরা-উপশিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ প্রতিদানও নির্ধারিত হয়েছে।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৩৫৮. মুয়ায ইবনি যুহরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তাহাঁর নিকট হাদিস পৌঁছেছে যে, নাবী [সাঃআঃ] ইফতারের সময় বলিতেনঃ

 اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ 

“আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিযক্বিক্বা আফতারতু”। অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার উদ্দেশ্যেই সওম পালন করেছি এবং আপনার দেয়া রিযিক দ্বারাই ইফতার করেছি। {২৩৫৮}

দুর্বলঃ মিশকাত [১৯৯৪], ইরওয়া [৪/৩৭]। ২৩৫৮ বায়হাক্বী। এর সনদ মুরসাল। এছাড়া সানাদে জাহালাত রয়েছে। মুআয বিন যুহরা সম্পর্কে হাফিয বলেনঃ মাক্ববূল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ২৩ঃ সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করলে

২৩৫৯. আসমা বিনতু আবু বাকর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সময় রমযানে এক মেঘাচ্ছন্ন দিনে ইফতার করার পর সূর্য প্রকাশ হয়ে পড়লো। আবু উসামাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি হিশামকে বলিলাম, তাহাদেরকে কি তা কাযা করার নির্দেশ করা হয়েছিলো? তিনি বলিলেন, তা অবশ্যই করণীয়।

সেহরি ও ইফতারের দোয়া হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply