যাকাত কাকে দেওয়া যাবে এবং ভিক্ষাবৃত্তি অপছন্দনীয়
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে এবং ভিক্ষাবৃত্তি অপছন্দনীয় >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ৯, অনুচ্ছেদঃ ২২-৩৫=১৪টি
অনুচ্ছেদ-২২ঃ অবিলম্বে যাকাত প্রদান
অনুচ্ছেদ-২৩ঃ এক শহর হইতে অন্য শহরে যাকাত স্থানান্তর করা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২৪ঃ কাকে যাকাত দিবে এবং ধনী কাকে বলে?
অনুচ্ছেদ-২৫ঃ ধনী হওয়া সত্ত্বেও যার জন্য যাকাত গ্রহণ জায়িয
অনুচ্ছেদ-২৬ঃ এক ব্যক্তিকে কি পরিমাণ মাল যাকাত দেয়া যায় ?
অনুচ্ছেদ-২৭ঃ যে অবস্থায় যাকাত চাওয়া জায়িয
অনুচ্ছেদ-২৮ঃ ভিক্ষাবৃত্তি অপছন্দনীয়
অনুচ্ছেদ-২৯ঃ কারো নিকট কিছু চাওয়া থেকে বিরত থাকা
অনুচ্ছেদ-৩০ঃ বনু হাশিমকে যাকাত প্রদান
অনুচ্ছেদ-৩১ঃ ফকীর যাকাত থেকে ধনীকে উপঢৌকন দিলে
অনুচ্ছেদ-৩২ঃ কেউ স্বীয় সদাক্বাহ কৃত বস্তুর ওয়ারিস হলে
অনুচ্ছেদ-৩৩ঃ মালের হাক্ব সমূহ
অনুচ্ছেদ-৩৪ঃ যাঞ্ঝাকারীর অধিকার সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৩৫ঃ অমুসলিম নাগরিকদেরকে সদাক্বাহ দেয়া
অনুচ্ছেদ–২২ঃ অবিলম্বে যাকাত প্রদান
১৬২৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা নাবী [সাঃআঃ] যাকাত আদায়ের জন্য ইমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] -কে প্রেরণ করেন। [তিনি ফিরে এসে বলিলেন] ইবনি জামীল, খালিদ ইবনিল ওয়ালীদ ও আব্বাস [রাদি.] যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, ইবনি জামীলের আপত্তি করার তেমন কোন কারণ নেই। ইতিপূর্বে সে গরীব ছিলো কিন্তু এখন মহান আল্লাহ তাহাকে ধনী বানিয়েছেন। আর খালিদের উপর তোমরা [যাকাত চেয়ে] যুলুম করেছো। কেননা সে তার লৌহবর্ম ও যুদ্ধ-সরঞ্জামাদি আল্লাহর পথে ওয়াক্ফ করে দিয়েছে। আর আব্বাস! রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] চাচা, যার যাকাত ও অনুরূপ খরচের ভার আমাকে বহন করিতে হইবে। অতঃপর তিনি বলিলেনঃ [হে উমার!] তুমি কি জানো না, কোন ব্যক্তির চাচা পিতার সমতুল্য?
সহীহঃ মুসলিম। বুখারীতে তার এ কথা বাদেঃ “তুমি কি জানো না, কোন ব্যক্তির চাচা তার পিতার সমতুল্য।” এবং তিনি বলিয়াছেনঃ [….আরবী], আর এটাই প্রাধান্যযোগ্য। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬২৪. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা আব্বাস [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট আগাম যাকাত দেয়ার আবেদন করলে তিনি তাহাকে এ ব্যাপারে অনুমতি দেন।
যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ–২৩ঃ এক শহর হইতে অন্য শহরে যাকাত স্থানান্তর করা সম্পর্কে
১৬২৫, ইবরাহীম ইবনি আত্বা [রাদি.] হইতে তার পিতার হইতে বর্ণীতঃ
যিয়াদ কিংবা অন্য কোনো শাসক ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.]–কে যাকাত আদায়ের উদ্দেশে প্রেরণ করেন। অতঃপর তিনি ফিরে এলে শাসক তাহাকে জিজ্ঞেস করেন, [যাকাতের] মাল কোথায়? তিনি বলিলেন, আপনি আমাকে যে মাল নিয়ে আসার জন্য পাঠিয়েছেন তা আমার এমন স্থান হইতে আদায় করেছি, যেখান থেকে আমার রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] যুগে আদায় করতাম এবং তা এমন খাতে ব্যয় করেছি, যেখানে আমরা রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] যুগে ব্যয় করতাম।
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–২৪ঃ কাকে যাকাত দিবে এবং ধনী কাকে বলে?
১৬২৬. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি পর্যাপ্ত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষা করে, সে ক্বিয়ামাতের দিন তার মুখমন্ডলে অসংখ্য যখম, নখের আঁচড় ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উপস্থিত হইবে। কেউ জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! সম্পদশালী কে? তিনি বলিলেনঃ পঞ্চাশ দিরহাম অথবা এ মূল্যের স্বর্ণ [যার আছে]।১৬২৬
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬২৭. আত্বা ইবনি ইয়াসার হইতে বনী আসাদের এক ব্যক্তির সুত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি ও আমার পরিবার-পরিজন বাকী আল-গার্কাদ [ক্ববরস্থানে] যাত্রাবিরতী করি। আমার স্ত্রী বললো, আপনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাছে গিয়ে আমাদের আহারের জন্য কিছু খাবার চান। পরিবারের প্রত্যেকেই তাহাদের প্রযোজন বর্ণনা করলো। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] কাছে গিয়ে দেখি, এক লোক তাহাঁর নিকট কিছু চাইছে। আর রসূলুল্লাহ বলিলেন, আমার কাছে তোমাকে দেয়ার মতো কিছু নাই। অতঃপর লোকটি রাগান্বিত অবস্থায় একথা বলিতে বলিতে চলে গেলো যে, আমার জীবনের শপথ! আপনি কেবল আপনার পছন্দের লোককেই দিয়ে থাকেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, এ ব্যক্তি আমার উপর এ জন্যই ক্ষুদ্ধ হয়েছে যে, আমি তাহাকে দিতে পারলাম না। তোমাদের যে কেউ ভিক্ষা করে, অথচ তার এক উকিয়া বা তার সমপরিমান সম্পদ আছে, সে তো উত্যক্ত করার জন্যই ভিক্ষা করে। আসাদী লোকটি বলেন, [আমি ভাবলাম] আমাদের একটি উষ্ট্রী আছে, যা উকিয়া চাইতে উত্তম, এক উকিয়া হচ্ছে চল্লিশ দিরহাম। অতঃপর আমি তার কাছে কিছু না চেয়েই ফিরে আসি। পরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট কিছু যব ও কিশমিশ এলে তিনি তা থেকে আমাদেরকেও একভাগ দিলেন, অথবা বর্ণনাকার যেমন বলিয়াছেন। এমনকি মহান আল্লাহ আমাদেরকে সম্পদশালী করেন।
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬২৮. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি ভিক্ষা চায়, অথচ তার কাছে এক উকিয়া মূল্যের সম্পদ আছে, সে নিশ্চিত অসংগতভাবে ভিক্ষা চাইল। আমি [মনে মনে] বলিলাম, আমার ইয়াকুত নামক উষ্টীটি তো এক উকিয়ার চেয়েও উত্তম। হিশাম বলেন, চল্লিশ দিরহামের চাইতে উত্তম। অতঃপর তার কাছে কিছু না চেয়েই আমি ফিরে আসি। হিশাম তার বর্ণনায় আরো বলেন, রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] যুগে এক উকিয়া ছিল চল্লিশ দিরহামের সমান।
যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৬২৯. সাহল ইবনিল হানযালিয়্যাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা উয়াহইনাহ ইবনি হিস্ন ও আকরা ইবনি হাবিস [রাদি.] রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] নিকট এসে কিছু চাইলে তিনি তাহাদেরকে তা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে তা লিখার জন্য মুআবিয়াহ [রাদি.] -কে আদেশ করেন। অতঃপর আকরা নিদের্শনামা নিয়ে তা ভাঁজ করে নিজের পাগরীর ভেতর ঢুকিয়ে চলে গেলেন। কিন্তু উয়াইনাহ তার পত্রখানা নিয়ে নাবী [সাঃআঃ] এর বাড়িতে এসে বলিলেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি চান যে, আমি মুতালাম্মিসের মতো এমন একটি পত্র নিয়ে আমার সম্প্রদায়ের নিকট যাই যে, আমি নিজেও পত্রের বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ? মুআবিয়াহ [রাদি.] তার বক্তব্য রসূলুল্লাহকে [সাঃআঃ] জানালেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ যে ব্যক্তি ভিক্ষা করে, অথচ তার নিকট এ পরিমাণ সম্পদ আছে যা তাহাকে ভিক্ষা হইতে বিরত রাখতে পারে তার এ কাজ কেবল আগুনই বৃদ্ধি করে। বর্ণনাকরী আন-নুফাইলীর অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ সে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনের কয়লাই বৃদ্ধি করলো। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! কি পরিমাণ সম্পদ ভিক্ষা হইতে বিরত রাখতে পারে? নুফাইলী অন্যত্র বর্ণনা করেন, কি পরিমাণ সম্পদ থাকলে ভিক্ষা করা অনুচিত? তিনি বলিয়াছেনঃ সকাল ও বিকাল খাওয়ার জন্য যথেষ্ট হয় এ পরিমাণ সম্পদ থাকা। নুফাইলী অন্যত্র বর্ণনা করেন, একদিন ও একরাত অথবা বলিয়াছেন, একরাত ও একদিন তৃপ্তি সহকারে খেতে যথেষ্ট হয় এ পরিমাণ সম্পদ।
ঈমাম আবু দাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি এখানে যে শব্দগুলোর দিয়ে হাদিস বর্ণনা করেছি নুফাইলী আমাদেরকে তা সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৩০. যিয়াদ ইবনিল হারিস আস-সুদায়ী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা আমি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] কাছে দিয়ে তাহাঁর নিকট বায়আত গ্রহণ করি। অতঃপর তিনি দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করে বলেন, এ সময় তাহাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললো, আমাকে সদাক্বাহ দিন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে বলিলেনঃ মহান আল্লাহ যাকাত বিতরণের ব্যাপারে কোনো নাবী এবং অন্য কারোর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন। বরং তিনি এ বিষয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তিনি তা আট ভাগে বিভক্ত করেছেন। সুতরাং যদি তুমি তাহাদের অন্তর্ভুক্ত হও, তাহলে আমি তোমাকে তোমর প্রাপ্য প্রদান করবো।
১৬৩০. দারাকুতনী, বায়হাক্বী। এর সানদে আবদুর রহমান ইবনি যিয়াদ আফরিক্বীর স্মরণশক্তি দুর্বল। ইবনি মাঈন ও নাসায়ী তাহাকে দুর্বল বলিয়াছেন। দারাকুতনী বলেন, তিনি শক্তিশারী নন। আহমাদ তাহাকে বাজে বলিয়াছেন। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৬৩১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি একটি বা দুটি খেজুর অথবা এক বা দুই লোকমা খাবারের জন্য ঘুরে বেড়ায় সে প্রকৃত মিসকীন নয়। বরং প্রকৃত মিসকীন ঐ ব্যক্তি যে লোকদের নিকট চায় না এবং তারাও তার অবস্থা অবহিত নয় যে, তাহাকে কিছু দান করিবে।
সহীহঃ সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৩২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, …… পূবোর্ক্ত হাদিসের অনুরূপ। প্রকৃত মিসকীন ঐ ব্যক্তি, যে অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে। মুসাদ্দাদ আরো বলেন, তার নিকট নিজেকে অভাবমুক্ত রাখার মত সম্পদ নেই, তা সত্ত্বেও সে চায় না, এবং লোকেরাও তার অভাব সম্পর্কে অবহিত নয় যে, তাহাকে কিছু দান করিবে। বস্তুত এমন ব্যক্তি নিঃস্ব।
সহীহঃ তার একথা বাদেঃ “এমন ব্যক্তি নিঃস্ব।” কেননা তা মাক্বতু এবং যুহরীর উক্তিঃ সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম। মুসাদ্দাদ তার বর্ণনায় “এ ব্যক্তিই মুতাআফ্ফিফ যে চেয়ে বেড়ায় না।” এ বাক্যটি উল্লেখ করেননি ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মুহাম্মাদ ইবনি সাওর ও আবদুর রাযযাক্ব, মামার হইতে বর্ণনা করেন যে, আল-মাহরূম শব্দটি যুহরীর উক্তি। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৩৩. উবায়দুল্লাহ ইবনি আদী ইবনিল খিয়ার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, দু ব্যক্তি আমাকে সংবাদ দেন যে, তারা বিদায় হাজ্জের সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিকট উপস্থিত হন, তখন তিনি [সাঃআঃ] সদাক্বাহ বিতরণ করছিলেন। তারা উভয়ে তাহাঁর কাছে যাকাত হইতে কিছু চাইলেন। তিনি আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে আবার চোখ নামালেন। তিনি দেখলেন, তারা উভয়েই স্বাস্থ্যবান। তিনি বলিলেনঃ তোমরা চাইলে আমি তোমাদের দিবো, কিন্তু এতে ধনী ও কর্মক্ষম ব্যক্তির অংশ নেই।
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৩৪. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ ধনী এবং সুস্থ-সবল ব্যক্তির জন্য যাকাত হালাল নয়।
ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, শুবাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সাদ হইতে বর্ণনা করেন যে, কর্মক্ষম শক্তিশালী ব্যক্তি।
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–২৫ঃ ধনী হওয়া সত্ত্বেও যার জন্য যাকাত গ্রহণ জায়িয
১৬৩৫. আত্বা ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ ধনীর জন্য যাকাত গ্রহণ হালাল নয়। তবে পাঁচ শ্রেনীর ধনীর জন্য তা জায়িযঃ [১] আল্লাহর পথে জিহাদরত ব্যক্তি [২] যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী [৩] ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি [৪] কোন ধনী ব্যক্তির দরিদ্রের প্রাপ্ত যাকাতের মাল নিজ অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করা [৫] মিসকীন প্রতিবেশী তার প্রাপ্ত যাকাত হইতে ধনী ব্যক্তিকে উপঢৌকন দেয়া।
সহীহঃ পরবর্তী হাদিসের কারণে। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৩৬. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন …. পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ ভাবার্থ বর্ণিত।
সহিহ, যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৩৭. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, ধনী ব্যক্তির জন্য যাকাত নেয়া হালাল নয়। তবে সে আল্লাহর পথে জিহাদেরত থাকলে অথবা মুসাফির হলে অথবা দরিদ্র প্রতিবেশী প্রাপ্ত যাকাত হইতে তাহাকে উপঢৌকনস্বরূপ কিছু দিলে অথবা তোমাকে দাওয়াত করে খাওয়ালে তা বৈধ। {১৬৩৭}
[১৬৩৭] আহমাদ, ইবনি খুযাইমাহ [হাঃ ২৩৬৮] এর সানাদে আতিয়্যাহ আওফী দুর্বল। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ–২৬ঃ এক ব্যক্তিকে কি পরিমাণ মাল যাকাত দেয়া যায় ?
১৬৩৮. বুশাইর ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, সাহল ইবনি আবু হাসমাহ [রাদি.] নামক এক আনসারী তাহাকে বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে দিয়াত হিসেবে একশো যাকাতের উট দান করেছেন। অর্থাৎ সেই আনসারীর দিয়াত যিনি খায়বারে নিহত হয়েছিলেন।]
সহিহ ঃ সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম দীর্ঘভাবে। সামনে তা আসছে [৪৫২০ নং হাদিসে]। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–২৭ঃ যে অবস্থায় যাকাত চাওয়া জায়িয
১৬৩৯. সামুরাহ ইবনি জুনদুব [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, ভিক্ষাবৃত্তি হচ্ছে ক্ষতবিক্ষতকারী। মানুষ এর দ্বারা স্বীয় মুখমন্ডল ক্ষতবিক্ষত করে। কাজেই যার ইচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তি করে স্বীয় মুখকে ক্ষতবিক্ষত রাখুক। আর যে ইচ্ছে তা পরিহার করুক। তবে রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে চাওয়া কিংবা নিরুপায় হয়ে কিছু চাওয়ার বিষয়টি ভিন্ন।
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৪০. ক্বাবীসাহ ইবনি মুখারিক আল-হিলালী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি অন্যের ঋণের জামিনদার হলাম। পরে আমি নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট গেলে তিনি বলিলেনঃ হে ক্বাবীসাহ ! আমাদের কাছে যাকাতের মাল আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আমরা তা থেকে তোমাকে কিছু দেয়ার নির্দেশ দিবো। পরে তিনি বলিলেন, হে ক্বাবীসাহ ! তিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো জন্য সওয়াল করা বৈধ নয়। [১] যে ব্যক্তি কোন ঋণের জামিনদার হয়েছে ঋণ পরিশোধ করা পর্যন্ত তার জন্য সওয়াল করা হালাল, পরিশোধ হয়ে গেলে সে বিরত থাকিবে। [২] যে ব্যক্তির সমস্ত মাল আকস্মিক দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়ে গেছে, তার জীবন ধারণের পরিমাণ সম্পদ পাওয়া পর্যন্ত তার জন্য সওয়াল করা হালাল। [৩] যে ব্যক্তি দুর্ভিক্ষ কবলিত, এমনকি তার গোত্র-সমাজের তিনজন বিবেচক ও সুধী ব্যক্তি বলে যে, অমুক ব্যক্তি দুর্ভিক্ষ পীড়িত। তখন জীবন ধারণের পরিমাণ সম্পদ পাওয়া পর্যন্ত তার জন্য সওয়াল করা বৈধ, এরপর তা থেকে বিরত থাকিবে। অতঃপর বলেন, হে ক্বাবীসাহ ! এ তিন প্রকারের লোক ছাড়া অন্যদের জন্য সওয়াল করা হারাম এবং কেউ করলে সে হারাম ভক্ষণ করলো। [১৬৪০]
সহিহ ঃ মুসলিম। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৪১. আনাস ইবনি মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একদা নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এক আনসারী ব্যক্তি এসে ভিক্ষা চাইলে তিনি জিজ্ঞেস করিলেন ঃ তোমার ঘরে কিছু আছে কি? সে বললো, একটি কম্বল আছে, যার কিছু অংশ আমরা পরিধান করি এবং কিছু অংশ বিছাই। একটি পাত্রও আছে, তাতে আমরা পানি পান করি। তিনি বলিলেন, সেগুলো আমার কাছে নিয়ে এসো, লোকটি তা নিয়ে এলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা হাতে নিয়ে বলিলেনঃ এ দুটি বস্তু কে কিনবে? এক ব্যক্তি বললো, আমি এগুলো এক দিরহামে নিবো। তিনি দুইবার অথবা তিনবার বলিলেনঃ কেউ এর অধিক মূল্য দিবে কি? আরেকজন বললো, আমি দুই দিরহামে নিতে পারি। তিনি ঐ ব্যক্তিকে তা প্রদান করে দিরহাম দুটি নিলেন এবং ঐ আনসারীকে তা প্রদান করে বলিলেনঃ এক দিরহামে খাবার কিনে পরিবার-পরিজনকে দাও এবং আরেক দিরহাম দিয়ে একটি কুঠার কিনে আমার কাছে নিয়ে এসো। লোকটি তাই করলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] স্বহস্তে তাতে একটি হাতল লাগিলে দিয়ে বলিলেনঃযাও, তুমি কাঠ কেটে এনে বিক্রি করো। পনের দিন যেন আমি আর তোমাকে না দেখি। লোকটি চলে গিয়ে কাঠ কেটে বিক্রি করিতে লাগলো। অতঃপর সে আসলো, তখন তার নিকট দশ দিরহাম ছিলো। সে এর থেকে কিছু দিয়ে কাপড় এবং কিছু দিয়ে খাবার কিনলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ ভিক্ষা করে বেড়ানোর চেয়ে এ কাজ তোমার জন্য অধিক উত্তম। কেননা ভিক্ষার কারণে ক্বিয়ামাতের দিন তোমার মুখমন্ডলে একটি বিশ্রী কালো দাগ থাকতো। ভিক্ষা করা তিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারোর জন্য বৈধ নয়। [১] ধুলা-মলিন নিঃস্ব ভিক্ষুকের জন্য ; [২] ঋণে জর্জরিত ব্যক্তি ; [৩] যার উপর রক্তপণ আছে, অথচ সে তা পরিশোধ করিতে অক্ষম। [১৬৪১]
[১৬৪১] তিরমিজি [অধ্যায় ঃ যাকাত, হাঃ ১২১৮], নাসায়ী [অধ্যায় ঃ ব্যবসা, হাঃ ৪৫২০], ইবনি মাজাহ [অধ্যায় ঃ তিজারাত, হাঃ ২১৯৮], আহমাদ। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ–২৮ঃ ভিক্ষাবৃত্তি অপছন্দনীয়
১৬৪২. আওফ ইবনি মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা সাতজন অথবা আটজন অথবা নয়জন রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] নিকট ছিলাম। তিনি বলিলেনঃ তোমরা কি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] এর নিকট বাইআত গ্রহণ করিবে না? অথচ আমরা কয়েকদিন আগেই বাইআত নিয়েছি, তাই আমরা বলিলাম, আমরা তো আপনার কাছে বাইআত হয়েছি। এমনকি তিনি এ কথাটি তিনবার বলিলেন। অতঃপর আমরা আমাদের হাত প্রসারিত করে বাইআত গ্রহণ করলাম। একজন বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমরা তো বাইআত করেছি, তাহলে এখন আবার কিসের উপর বাইআত হবো? তিনি বলিলেনঃ তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করিবে, তাহাঁর সাথে কাউকে শরীক করিবে না, পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করিবে এবং আমীরের কথা শুনবে ও তার আনুগত্য করিবে। তিনি সংক্ষেপে নিচু স্বরে বলিলেনঃ মানুষের কাছে কিছু সওয়াল করিবে না। বর্ণনাকারী বলেন, এদের কেউই [সফরে] একটি ছড়ি নীচে পড়ে গেলেও অন্যকে তা তুলে দিতে অনুরোধ করেননি। [১৬৪২]
সহিহ ঃ মুসলিম। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৪৩.সাওবান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি আমাকে নিশ্চয়তা দিবে যে, সে অন্যের কাছে কিছু চাইবে না, তাহলে আমি তার জান্নাতের যিম্মাদার হবো। সাওবান [রাদি.] বলেন, আমি। এরপর তিনি কারো কাছে কিছু সওয়াল করেননি। [১৬৪৩]
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–২৯ঃ কারো নিকট কিছু চাওয়া থেকে বিরত থাকা
১৬৪৪. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিকট কতিপয় আনসারী কিছু চাইলে তিনি তাহাদেরকে দান করিলেন, তারা পুনরায় চাইলে তিনি তাহাদেরকে পুনরায় দান করিলেন। এভাবে দান করিতে করিতে তাহাঁর সম্পদ শেষ হয়ে গেলো। তখন তিনি বলিলেনঃ আমার কাছে সম্পদ থাকলে আমি তোমাদেরকে না দিয়ে তা জমা করে রাখি না। কেউ সওয়াল থেকে পবিত্র থাকতে চাইলে আল্লাহ তাহাকে পবিত্র রাখেন। যে অমুখাপেক্ষী থাকতে চায়, আল্লাহ তাহাকে অমুখাপেক্ষী রাখেন এবং যে ধৈর্য ধারণ করিতে চায়, আল্লাহ তাহাকে তাই দান করেন। ধৈর্যের চেয়ে অধিক ব্যাপক কিছু দান করা হয়নি। [১৬৪৪]
সহিহ ঃ সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৪৫. ইবনি মাসউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি দুর্ভিক্ষে পড়ে মানুষের দুয়ারে দুয়াতে চেয়ে বেড়ায়, তার ক্ষুধা কখনো বন্ধ হইবে না। আর যে আল্লাহর স্মরণাপন্ন হয়েছে শীঘ্রই মহান আল্লাহ তাহাকে অমুখাপেক্ষী করবেন, হয়ত দ্রুত মৃত্যুর দ্বারা অথবা সম্পদশালী বানিয়ে। {১৬৪৫}
{১৬৪৫} তিরমিজি [অধ্যায় ঃ যুহদ, হাঃ ২৩২৬], তিনি বলেন, এ হাদিসটি হাসান সহিহ ও গরীব। আহমাদ। আহমাদ শাকির বলেন, এর সনদ সহিহ। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৪৬. ইবনিল ফিরাসী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একদা তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমি কি লোকদের কাছে কিছু চাইতে পারি? নাবী [সাঃআঃ] বলিলেনঃ না। যদি তোমাকে চাইতেই হয় তাহলে নেককার লোকদের কাছে চাও। {১৬৪৬}
[১৬৪৬] নাসায়ী [অধ্যায় ঃ যাকাত, হাঃ ২৫৮৬], আহমাদ। সনদের মুসলিম ইবনি শাখশীকে হাফিয বলেন, মাক্ববুল। আর ইবনিল ফিরাশী সম্পর্কে হাফিয বলেন, নাবী [সাঃআঃ] এর সূত্রে তাহাকে চেনা যায়নি। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৬৪৭. ইবনিস সাঈদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উমার [রাদি.] আমাকে যাকাত আদায়ের জন্য নিযুক্ত করেন। আমি তা আদায়ের পর তার নিকট পৌঁছিয়ে দিলে তিনি আমার কাজের পারিশ্রমিক প্রদানের নির্দেশ দেন। আমি বলিলাম, আমি এ কাজ আল্লাহর ওয়াস্তে করেছি, তাই এর বিনিময় আল্লাহর কাছেই চাই। তিনি বলিলেন, তোমাকে যা দেয়া হয় গ্রহণ করো। কেননা আমি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] সময় এ কাজ করেছিলাম। তিনি আমাকে পারিশ্রমিক দিলে আমিও তোমার মত বলেছিলাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলিয়াছেনঃ চাওয়া ছাড়াই তোমাকে যা কিছু দেয়া হয় তা খাও এবং সদাক্বাহ করো।
সহিহ ঃ সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৪৮. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিম্বারে দাঁড়িয়ে যাকাত গ্রহণ, তা থেকে বিরত থাকা এবং ভিক্ষা সম্পর্কে উপরের হাত নীচের হাতের চেয়ে উত্তম বলিয়াছেন। উপরের হাত হলো দাতার হাত এবং ভিক্ষার হাত হলো নীচের হাত।
ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, নাফি হইতে আইয়ূব সূত্রে বর্ণিত হাদিসে মতভেদ আছে। আবদুল ওয়ারিস বলেন, এমন হাতই উপরের হাত যা ভিক্ষা হইতে বিরত থাকে এবং অনেকেই হাম্মাদ ইবনি যায়িদ হইতে আইয়ূব সূত্রে বলিয়াছেন, দানকারীর হাতই উপরের হাত। আরেক বর্ণনাকারী বলেন, [তা হচ্ছে] ভিক্ষা হইতে বিরত হাত।
সহিহ ঃ সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম। এছাড়া তার “ভিক্ষা হইতে বিরত হাত।” কথাটি শায। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৪৯. মালিক ইবনি নাদলাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ [দানের] হাত তিন প্রকার। [১] আল্লাহর হাত সবার উপরে [২] অতঃপর দানকারীর হাত [৩] এবং ভিক্ষার হাত সবার নীচে। কাজেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ দান করো এবং প্রবৃত্তির কাছে অক্ষম হয়ো না।
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–৩০ঃ বনু হাশিমকে যাকাত প্রদান
১৬৫০. আবু রাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাখযূম গোত্রের এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়ের উদ্দেশে প্রেরণ করলে তিনি আবু রাফি [রাদি.]-কে বলেন, তুমি আমার সাথে গেলে তুমিও তা থেকে কিছু পাবে। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে নিবো। অতঃপর তিনি এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃ কোন সম্প্রদায়ের মুক্তদাস তাহাদেরই একজন। আর আমাদের জন্য যাকাত হালাল নয়।
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৫১. আনাস [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাস্তায় পড়ে থাকা একটি খেজুরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি শুধু এ কারণেই তুলে নেননি যে, হয়ত ওটা যাকাতের [খেজুর]।
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৫২. আনাস [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পথে একটি খেজুর পেয়ে বলেনঃ আমি এটি যাকাতের খেজুর হওয়ার আশংকা না করলে এটি খেতাম।
সহিহঃ মুসলিম। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৫৩. ইবনি আব্বাস [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ.
তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] নিকট একটি উটের জন্য প্রেরণ করেন- যা তিনি তাহাকে যাকাতের মাল হইতে দান করেছিলেন।
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৫৪. ইবনি আব্বাস [রাঃ] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
অনুরূপ বর্ণিত। তাতে এ কথাটি অতিরিক্ত আছে ঃ আমার পিতা তা পরিবর্তন করে নিয়েছেন।
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–৩১ঃ ফকীর যাকাত থেকে ধনীকে উপঢৌকন দিলে
১৬৫৫. আনাস [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খিদমাতে গোশত পেশ করা হলে তিনি জিজ্ঞেস করিলেন ঃ এটা কি ধরনের গোশত? লোকেরা বললো, এটা বারীরাহকে সদাক্বাহ দেয়া হয়েছিলো। তিনি বলিলেনঃ এটা তার জন্য সদাক্বাহ, কিন্ত আমাদের জন্য উপঢৌকন।
সহিহ ঃ সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–৩২ঃ কেউ স্বীয় সদাক্বাহ কৃত বস্তুর ওয়ারিস হলে
১৬৫৬. বুরাইদাহ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
এক মহিলা রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] নিকট এসে বললো, আমি আমার মাকে একটি দাসী দান করেছিলাম। তিনি ঐ দাসীটি রেখে মারা গেছেন। তিনি বলিলেনঃ তুমি দানের সওয়াব পেয়েছো এবং সে উত্তরাধিকার সূত্রে তোমার কাছে ফিরে এসেছে।
সহিহ ঃ মুসলিম। [আরবী] অতিরিক্ত যোগে। যেমন সামনে আসছে হাদিস [২৮৭৭ নং]। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–৩৩ঃ মালের হাক্ব সমূহ
১৬৫৭. আবদুল্লাহ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] যুগে মাউন গন্য করতাম বালতি, হাঁড়ি-পাতিল ইত্যাদি ছোট-খাটো বস্তু ধারে আদান-প্রদান করাকে। {১৬৫৭}
যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৬৫৮. আবু হুরাইরাহ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কোন ধনী ব্যক্তি তার হাক্ব [যাকাত] আদায় না করলে ক্বিয়ামাতের দিন সোনা ও রুপা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তার ললাটে, তার পার্শ্বদেশে ও তার পৃষ্ঠদেশে সেঁক দেয়া হইবে। এমন শাস্তি অব্যাহত থাকিবে আল্লাহ তাহাঁর বান্দাদের মধ্যে ফায়সালা করার দিন পর্যন্ত, যে দিন হইবে তোমাদের গণনা অনুসারে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। এরপর সে নিজের গন্তব্যস্থান চাক্ষুস দেখবে, জান্নাত অথবা জাহান্নাম। আর যে মেষপালের মালিক তার যাকাত দেয় না ক্বিয়ামাতের দিন সেগুলো পূর্বের চেয়েও সংখ্যায় অধিক ও মোটা-তাজা অবস্থায় উপস্থিত হইবে এবং তাহাকে শিং দিয়ে গুতা মারবে ও খুর দিয়ে দলিত করিবে। ওসবের কোনোটিই বাঁকা শিং বিশিস্ট বা শিংবিহীন হইবে না। যখন সর্বশেষ জানোয়ারটি তাহাকে দলিত করে চলে যাবে, তখন প্রথমটিকে আবার তার কাছে আনা হইবে। এরূপ চলতে থাকিবে আল্লাহ তাহাঁর বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করার দিন পর্যন্ত, যে দিনটি হইবে তোমাদের হিসাব মতে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। এরপর সে তার গন্তব্যস্থান প্রত্যক্ষ করিবে, জান্নাত অথবা জাহান্নাম। আর যে উটের মালিক উটের যাকাত প্রদান করে না ক্বিয়ামাতের দিন ঐ উট পূর্বের চাইতেও সংখ্যায় অধিক ও মোটা-তাজা অবস্থায় মালিকের নিকট উপস্থিত হইবে। তাহাকে এক বিশাল সমভূমিতে উপুড় করে শোয়ানো হইবে এবং পশুগুলো তাহাকে খুর দিয়ে দলন করিতে থাকিবে। সর্বশেষ পশুটি তাহাকে অতিক্রম করার পর প্রথমটিকে পুনরায় তার কাছে ফিরে আনা হইবে। এরূপ চলতে থাকিবে আল্লাহ তাহাঁর বান্দাদের মাঝে ফয়সালা করার দিন পর্যন্ত, যেদিন হইবে তোমাদের গণনা অনুযায়ী পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। অতঃপর সে তার গন্তব্যস্থল প্রত্যক্ষ করিবে, হয়তো জান্নাত অথবা জাহান্নাম।
সহিহ ঃ মুসলিম। বুখারী সংক্ষেপে।যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৫৯. আবু হুরাইরাহ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেন। তাতে উটের ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছেঃ যে ব্যক্তি তার হাক্ব আদায় করে না। এর হাক্ব হচ্ছে, পানি পান করার দিন তার দুধ দোহন করা।
সহিহ ঃ মুসলিম। বুখারী সংক্ষেপে। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৬০. আবু হুরাইরাহ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে এরূপই বলিতে শুনিয়াছি। বর্ণনাকারী আবু হুরায়রা [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করিলেন, উটের হাক্ব কি? তিনি বলিলেন, উত্তমটি দান করা, অধিক দুগ্ধবতী দান করা, তার পৃষ্ঠে আরোহণ করিতে দেয়া, পুরুষ উট দ্বারা প্রজনন করিতে দেয়া এবং দুধ [অভাবীদের] পান করিতে দেয়া। {১৬৬০}
হাসান, পরবর্তী হাদিসের কারণে। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৬৬১. উবাইদ ইবনি উমাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রসূল! উটের হাক্ব কি? অতঃপর পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ। তবে এতে অতিরিক্ত রয়েছে ঃ তার দুধ ধার দেয়া।
সহিহ ঃ মুসলিম। জাবির হইতে। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৬২. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নির্দেশ দিয়েছেন দশ ওয়াসাক্ব খেজুর কাটলে এক কাঁদি খেজুর মিসকীনদের জন্য মাসজিদে ঝুলিয়ে রাখবে।
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৬৩. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা এক সফরে আমরা রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] সাথে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তার উটে আরোহণ করে সেটিকে ডানে-বামে হাঁকাতে লাগলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ যার অতিরিক্ত সওয়ারী আছে সে যেন তা যার কোনো সওয়ারী নেই তাহাকে দান করে এবং যার অতিরিক্ত পাথেয় আছে, সে যেন তা এমন ব্যক্তিকে দান করে যার পাথেয় নেই। বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের ধারণা হলো যে, আমাদের অতিরিক্ত সম্পদ রাখার কোন অধিকার নেই।
সহিহ ঃ মুসলি। যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৬৪. ইবনি আব্বাস [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো ঃ “যারা সোনা-রুপা সঞ্চিত করে রাখে …..” [সূরাহ আত-তাওবাহ ঃ ৩৪], মুসলমানদের উপর তা ভারী মনে হলো। তখন উমার [রাদি.] বলিলেন, আমিই তোমাদের পক্ষ হইতে এর সুষ্ঠু সমাধান নিয়ে আসবো। অতঃপর তিনি গিয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর নাবী ! এ আয়াতটি আপনার সঙ্গীদের উপর কষ্টকর অনুভূত হচ্ছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ নিশ্চয় মহান আল্লাহ তোমাদের অতিরিক্ত মাল পবিত্র করার জন্যই যাকাত ফারয করেছেন। আর তিনি উত্তরাধিকারীর ব্যবস্থা ফারয করেছেন এজন্যই যেন তা তোমাদের পরবর্তীদের জন্য থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর উমার [রাদি.] আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করিলেন। তিনি [সাঃআঃ] তাহাকে বলিলেনঃ আমি কি তোমাকে মানুষের সর্বোত্তম সম্পদ সম্পর্কে অবহিত করবো না? তা হলো, নেককার স্ত্রী। সে তার দিকে তাকালে সে তাহাকে আনন্দ দেয় এবং তাহাকে কোন নির্দেশ দিলে সে তা মেনে নেয় এবং সে যখন তার থেকে অনুপস্থিত থাকে, তখন সে তার সতীত্ব ও তার সম্পদের হিফাযাত করে। {১৬৬৪}
{১৬৬৪} হাকিম, বায়হাক্বী। ঈমাম হাকিম বলেন, সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহিহ। ঈমাম যাহাবী তার সাথে একমত পোষণ করেছেন। সনদের হাবীব ইবনি সালিম ও তার পরের জনকে শুবাহ দুর্বল বলিয়াছেন [আত-তাক্বরীব ১/১২৯]। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ–৩৪ঃ যাঞ্ঝাকারীর অধিকার সম্পর্কে
১৬৬৫. হুসাইন ইবনি আলী [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ [তোমাদের সম্পদে] যাঞ্ঝাকারীর অধিকার রয়েছে, যদিও সে ঘোড়ায় চড়ে আসে। {১৬৬৫}
{১৬৬৫} আহমাদ, বায়হাক্বী। সনদ দুর্বল। এর সনদের ইয়ালা ইবনি আবু ইয়াহইয়াকে আবু হাতিম মাজহুল বলিয়াছেন। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৬৬৬. আলী [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ.
নাবী [সাঃআঃ] এর সূত্রে অনুরূপ হাদিস বর্ণিত। {১৬৬৬}
{১৬৬৬} বায়হাক্বী। সনদ দুর্বল। সানাদে নাম উল্লেখহীন জনৈক ব্যক্তি রয়েছে। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৬৬৭. উম্মু বুজাইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি ছিলেন রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] কাছে বাইআত প্রহণকারিণীদের একজন। তিনি তাঁকে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ আপনার প্রতি অনুগ্রহ করুন। মিসকীন আমার দরজায় এসে দাড়ায়, কিন্তু তাহাকে দেয়ার মতো কিছুই আমি পাই না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে বলিলেনঃ তাহাকে দেয়ার মতো কিছু না পেলে অন্তত রান্না করা পশুর একখান পায়া হলেও তার হাতে তুলে দাও।
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–৩৫ঃ অমুসলিম নাগরিকদেরকে সদাক্বাহ দেয়া
১৬৬৮. আসমা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়] আমার মা-যিনি ইসলাম বিদ্বেষী ও কুরাইশদের ধর্মাবলম্বী ছিলেন, তিনি সদ্ব্যবহার পাবার আশায় আমার নিকট আসলেন। তখন আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার মা আমার কাছে এসেছেন, অথচ তিনি ইসলাম বিদ্বেষী মুশরিকা। আমি কি তার সাথে সদাচরণ করবো? তিনি বলিলেনঃ তুমি তোমার মায়ের সাথে অবশ্যই সদাচরণ করিবে।
সহীহঃ সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম, যাকাত কাকে দেওয়া যাবে হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply