ফিতরা দেওয়ার সঠিক নিয়ম, সময় ও পরিমাণ

ফিতরা দেওয়ার সঠিক নিয়ম, সময় ও পরিমাণ

ফিতরা দেওয়ার সঠিক নিয়ম, সময় ও পরিমাণ >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ৯, অনুচ্ছেদঃ ১৮-২১=৪টি

অনুচ্ছেদ-১৮ঃ যাকাতুল ফিতর [ফিতরাহ]
অনুচ্ছেদ-১৯ঃ ফিতরাহ প্রদানের সময় ?
অনুচ্ছেদ-২০ ঃ সদাক্বাতুল ফিতর কি পরিমাণ দিতে হইবে ?
অনুচ্ছেদ-২১ঃ অর্ধ সা গম ফিতরাহ দেয়ার বর্ণনা

অনুচ্ছেদ-১৮ঃ যাকাতুল ফিতর [ফিতরাহ]

১৬০৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সদাক্বাতুল ফিতর ফরয করেছেন- অশ্লীল কথা ও বেহুদা কাজ হইতে [রমাযানের] সওমকে পবিত্র করিতে এবং মিসকীনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য। যে ব্যক্তি [ঈদের] সলাতের পূর্বে তা আদায় করে সেটা কবুল সদাক্বাহ গণ্য হইবে। আর যে ব্যক্তি সলাতের পরে আদায় করে, তা সাধারণ দান হিসেবে গৃহীত হইবে। {১৬০৯}

যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৯ঃ ফিতরাহ প্রদানের সময় ?

১৬১০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লোকেরা সলাতের উদ্দেশে [ঈদগাহে] যাওয়ার পূর্বেই আমাদেরকে সদাক্বাতুল ফিতর প্রদান করিতে নির্দেশ দিয়েছেন। নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি উমার [রাদি.] ঈদের একদিন ও দুইদিন পূর্বেই তা আদায় করিতেন।

সহীহঃ সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম ইবনি উমারের কর্ম বাদে। অনুরূপ বুখারীতে। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২০ ঃ সদাক্বাতুল ফিতর কি পরিমাণ দিতে হইবে ?

১৬১১. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সদাক্বাতুল ফিতর ফরয করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনি মাসলামাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তার বর্ণনায় বলেন, ঈমাম মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাকে পাঠ করে শুনিয়েছেন যে, প্রত্যেক স্বাধীন অথবা গোলাম, পুরুষ কিংবা নারী নির্বিশেষে সকল মুসলিমের উপর মাথাপিছু এক সা খেজুর বা যব রমাযানের ফিতরাহ ওয়াজিব।

সহীহঃ সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৬১২. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যাকাতুল ফিতর এক সা ফরয করেছেন। অতঃপর মালিকের হাদিসের ভাবার্থ বর্ণনা করেন। তাতে এ কথাটিও আছেঃ ছোট এবং বড় সকলের পক্ষ হইতেই। তিনি লোকদের [ঈদের] সলাতে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ হাদিস আবদুল্লাহ আল-উমারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ প্রত্যেক মুসলিমের উপর। আল-জুমাহী উবায়দুল্লাহ হইতে, তিনি নাফি হইতে বর্ণনা করেছেন, তাতে মুসলিমের পক্ষ হইতে, কথাটি উল্লেখ নেই।

সহীহঃ বুখারী। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৬১৩. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] স্বাধীন ও গোলাম, ছোট ও বড়- এদের উপর সদাক্বাতুল ফিতর এক সা ফরয করেছেন। বর্ণনাকারী মূসা “পুরুষ ও নারীর” কথাটি বৃদ্ধি করেছেন।

ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আইয়ূব ও আবদুল্লাহ আল-উমারী তাহাদের হাদিসে নাফি হইতে “পুরুষ ও নারী” কথাটি বর্ণনা করেছেন। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৬১৪. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলু্ল্লাহ [সাঃআঃ] এর যুগে লোকেরা মাথাপিছু এক সা যব কিংবা খেজুর অথবা খোসাবিহীন গম অথবা কিসমিস সদাক্বাতুল ফিতর দিতো। নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবদুল্লাহ [রাদি.] বলেন, উমার [রাদি.] খলীফা নিযুক্ত হওয়ার পর পর্যাপ্ত পরিমাণে গম উৎপাদিত হলে উমার [রাদি.] ঐ বস্তুগুলোর এক সা এর স্থলে অর্ধ সা গম নির্ধারণ করিলেন। {১৬১৪}

১৬১৪ নাসায়ী [অধ্যায়ঃ যাকাত, হাঃ ২৫১৫]। এর সনদ দুর্বল। সনদের আবদুল আযীয ইবনি আবু রাওয়াদ সম্পর্কে হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেন, সত্যবাদী, তবে ভুল করতো। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৬১৫. নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ [রাদি.] বলেন, পরবর্তীতে লোকেরা [উমারের নির্ধারিত] অর্ধ সা গম দিতে থাকলো। নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবদুল্লাহ [রাদি.] নিজে খেজুর [ফিতরাহ] দিতেন। অতঃপর একবার মাদীনাহইতে খেজুরের আকাল হওয়ায় তিনি যব দিয়ে [ফিতরাহ] দেন।

সহীহঃ বুখারী সংক্ষেপ। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৬১৬. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যতদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের মাঝে ছিলেন, আমরা ফিতরাহ দিতাম- প্রত্যেক ছোট, বড়, স্বাধীন ও গোলামের পক্ষ হইতে মাথাপিছু এক সা খাদ্য এক সা পনির অথবা এক সা যব অথবা এক সা খেজুর অথবা এক সা কিসমিস। আমরা এ নিয়মেই ফিতরাহ দিয়ে আসছিলাম। অবশেষে মুআবিয়াহ [রাদি.] হাজ্জ কিংবা উমরাহ্‌ করিতে এসে মিম্বারের আরোহন করে ভাষণ দানকালে লোকদেরকে বলিলেন, আমার মতে সিরিয়ার দুই মুদ্দ গম এক সা খেজুরের সমান। ফলে লোকেরা তাই গ্রহণ করলো। কিন্তু আবু সাঈদ [রাদি.] বলেন, আমি যত দিন বেঁচে থাকি সর্বদা এক সা ফিতরাহই দিবো।

সহীহঃ মুসলিম। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৬১৭. মুসাদ্দাদ হইতে ইসমাঈল সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

হাদিসে গমের কথাটি উল্লেখ নেই। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মুআবিয়াহ ইবনি হিমাম এ হাদিসে আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে অর্ধ সা গমের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এটা মুআবিয়াহ ইবনি হিশাম অথবা তার সূত্রে বর্ণনাকারীর অনুমান মাত্র।{১৬১৭}

{১৬১৭}যয়ীফ আবু দাউদ।যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৬১৮. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি সর্বদা এক সা ফিতরাহই দিবো। কেননা আমার রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] যুগে এক সা খেজুর বা এক সা যব কিংবা এক সা কিসমিস দিতাম। এটা ইয়াহইয়া বর্ণিত হাদিস। সুফয়ান বর্ধিত করেনঃ অথবা এক সা আটা। ঈমাম হামিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বরেন, মুহাদ্দিসগণ এ বাক্যটি গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে সুফয়ান এ কথাটি পরিহার করেছেন।

দুর্বল। ঈমাম আবু দাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আসলে এ বর্ধিত কথাটি সুফয়ান ইবনি উয়াইনার অনুমান। ১৬১৮. নাসায়ী [অধ্যায়ঃ যাকাত, হাঃ ২৫১৩[, ইবনি খুযাইমাহ [২৪১৪]। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-২১ঃ অর্ধ সা গম ফিতরাহ দেয়ার বর্ণনা

১৬১৯. আবদুল্লাহ ইবনি আবু সুআইর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, ছোট, বড়, স্বাধীন, গোলাম, পুরুষ অথবা নারী প্রত্যেক দুইজনের উপর এক সা গম [ফিতরাহ] নির্ধারিত। আল্লাহ তোমাদের ধনীদেরকে এ দ্বারা পবিত্র করবেন এবং তোমাদের দরিদ্রদেরকে আল্লাহ তাহাদের দানের চাইতে অধিক দিবেন। সুলায়মান তার বর্ণনায় ধনী ও দরিদ্র শব্দ বৃদ্ধি করেছেন।

১৬১৯. আহমাদ, বায়হাক্বী, দারাকুতনী [হাঃ ৪১]। সনদের নুমান ইবনি রাশিদ সম্পর্কে হাফিয বলেন, সত্যবাদী, কিন্তু স্মরণশক্তি খারাপ। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৬২০. সালাবাহ ইবনি সুআইর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে ভাষণ দানকালে নির্দেশ দিলেন, ফিতরাহ মাথাপিছু এক সা যব। আলী ইবনিল হাসান তার বর্ণনায় বলেন, অথবা প্রতি দুইজনে এক সা গম। অতঃপর উভয়ের বর্ণনা একই রকমঃ প্রত্যেক ছোট, বড়, স্বাধীন এবং গোলামের পক্ষ হইতে আদায় করিতে হইবে।

যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৬২১. ইবনি শিহাব হইতে বর্ণীতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি সালাবাহ ও আহমাদ ইবনি সলিহ তার সাথে আল-আদাবী অর্থাৎ আল-উযরী বলিয়াছেন, একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঈদের দুই দিন পূর্বে লোকদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিলেন। অতঃপর মুকরীর [আবদুল্লাহ ইবনি ইয়াযীদের] হাদিসের অনুরূপ।

যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৬২২. হাসান বসরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একদা ইবনি আব্বাস [রাদি.] রমাযানের শেষভাগে বাসরাহইতে মিম্বারে ভাষন দিতে গিয়ে বলেন, তোমরা তোমাদের সওমের সদাক্বাহ প্রদান করো। লোকেরা হয়ত বিষয়টি অবগত ছিল না। তিনি বলিলেন, এখানে মাদীনাহবাসী কেউ আছে কি? তোমরা তোমাদের ভাইদের কাছে গিয়ে তাহাদেরকে এ বিষয়ে শিক্ষা দাও। কেননা তারা [ফিতরাহ সম্পর্কে] অজ্ঞ। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফিতরাহ নির্ধারণ করছেন মাথাপিছু এক সা খেজুর বা যব বা অর্ধ সা গম স্বাধীন কিংবা গোলাম, পুরুষ অথবা নারী, ছোট অথবা বড়- সকলের পক্ষ হইতে। পরবর্তীতে আলী [রাদি.] বাসরাহইতে এসে জিনিসপত্রের দাম খুবই কম দেখে বলিলেন, আল্লাহ তোমাদেরকে প্রাচুর্য দান করেছেন। সুতরাং তোমরা প্রত্যেক বস্তু হইতে এক সা প্রদান করো [এটাই ভাল হয়]। হুমাইদ আত-তাবীল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাসান বাসরীর মতে, কেবল সওম পালনকারীর উপর রমাযানের ফিতরাহ দেয়া ওয়াজিব।

১৬২২. নাসাযী [অধ্যায়ঃ যাকাত, হাঃ ২৫১৪], আহমাদ, দারাকুতনী। যাকাতের নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply