ক্বিয়ামুল লাইল তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম

ক্বিয়ামুল লাইল তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম

ক্বিয়ামুল লাইল তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ৫, অনুচ্ছেদঃ ৩০৬-৩১৭=১২টি

অনুচ্ছেদ-৩০৬ তাহাজ্জুদ নামাজের বাধ্যবাধকতা রহিত করে শিথিল করা হয়েছে
অনুচ্ছেদ-৩০৭ ক্বিয়ামুল লাইল
অনুচ্ছেদ–৩০৮ নামাজের মধ্যে তন্দ্রা এলে
অনুচ্ছেদ-৩০৯ ঘুমের কারণে ওযীফা ছুটে গেলে
অনুচ্ছেদ-৩১০ নফল নামাজ এর নিয়্যাত করার পর ঘুমিয়ে গেলে
অনুচ্ছেদ-৩১১ (ইবাদাতের জন্য) রাতের কোন্‌ সময়টি উত্তম?
অনুচ্ছেদ–৩১২ নাবী (সাঃআঃ) এর রাতে নামাজ আদায়ের সময়
অনুচ্ছেদ-৩১৩ দু রাকআত নফল দ্বারা রাতের নামাজ আরম্ভ করা
অনুচ্ছেদ-৩১৪ রাতের নামাজ দু দু রাকআত করে
অনুচ্ছেদ–৩১৫ রাতের নামাজে উচ্চস্বরে ক্বিরাআত পাঠ
অনুচ্ছেদ-৩১৬ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৩১৭ নামাজে ভারসাম্য বজায় রাখার নির্দেশ

অনুচ্ছেদ৩০৬ তাহাজ্জুদ নামাজের বাধ্যবাধকতা রহিত করে শিথিল করা হয়েছে

১৩০৪. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি সূরাহ মুয্‌যাম্মিল সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর বাণীঃ

 قُمِ اللَّيْلَ إِلاَّ قَلِيلاً * نِصْفَهُ

“কুমিল লায়লাহ ইল্লা ক্বালীলান নিসফাহু” (অর্থঃ আপনি রাতের কিছু অংশ ব্যতীত সারা রাত আল্লাহর ইবাদাতে দাঁড়িয়ে থাকুন)। অতঃপর এর পরবর্তী আয়াতটি এ নির্দেশকে রহিত করেঃ

عَلِمَ أَنْ لَنْ تُحْصُوهُ فَتَابَ عَلَيْكُمْ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ

“আলিমা আন লান তুহ্‌সূহু ফাতাবাআলাইকুম ফাক্বরাউ মা তাইয়াস্‌সারা মিনাল কুরআন। ” (অর্থঃ তিনি খুব ভাল করেই জানেন যে, তা করা তোমাদের পক্ষে অসম্ভব। তাই তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছেন। সুতরাং এখন তোমরা কুরআনের যতটুকু পাঠ করা সম্ভব ততটুকুই পড়ো)

এবং রাতের প্রথামাংশ। তাহাঁদের নামাজ রাতের প্রথমভাগেই হয়ে থাকতো। ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) বলেন, কাজেই আল্লাহ তোমাদের উপর যেটুকু রাতের ইবাদত ফরয করিয়াছেন তা সঠিকভাবে আদায় করো। কেননা মানুষ ঘুমিয়ে গেলে কখন সে জাগ্রত হইবে তা বলিতে পারে না। আল্লাহর বাণীঃ

أَقْوَمُ قِيلاً

আকওয়ামু কীলা” –অর্থ হচ্ছে কুরআনকে অনুধাবন করার অধিক যোগ্য। আল্লাহর বাণীঃ

إِنَّ لَكَ فِي النَّهَارِ سَبْحًا طَوِيلاً

“ইন্না লাকা ফিন নাহারি সাবহান তাবীলা” এর অর্থ হচ্ছে, আপনি দিনের বেলায় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন।

নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১৩০৫. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সূরাহ মুয্‌যাম্মিলের প্রথমাংশ অবতীর্ণ হলে মুসলিমরা রমাযান মাসের ন্যায় রাতে দীর্ঘ ক্বিয়াম (নামাজ আদায়) করতে লাগলেন। অতঃপর এ সূরাহ্‌র শেষাংশ অবতীর্ণ হয়। এ সুরাহ্‌র প্রথম ও শেষাংশ অবতীর্ণের মধ্যে এক বছরের ব্যবধান ছিল।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ৩০৭ ক্বিয়ামুল লাইল

১৩০৬. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শাইত্বান তাহাঁর মাথার পিছনে তিনটি গিরা দেয় এবং প্রতিটি গিরা দেয়ার সময় বলে, আরো ঘুমাও, রাত এখনো অনেক বাকী। যদি ঐ ব্যক্তি সজাগ হয়ে আল্লাহর যিকির করে, তখন একটি গিরা খুলে যায়। যদি সে উযু করে হলে আরেকটি গিরা খুলে যায় এবং যদি সে নামাজ আদায় করে, তাহলে শেষ গিরাও খুলে যায়। ফলে ঐ ব্যক্তি সতেজ ও উৎফুল্লতা নিয়ে সকাল করে। (আর এরূপ না করে ঘুমিয়ে থাকলে) সে অলসতা ও মন্দ মন নিয়ে সকাল করিবে।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩০৭. আব্দুল্লাহ ইবনি আবু ক্বায়িস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন,আয়েশা (রাঃআঃ) বলেছেন, তুমি রাতের ক্বিয়াম ছেড়ে দিবে না। কারণ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কখনো একে পরিত্যাগ করতেন না। তিনি (সাঃআঃ) অসুস্থ হলে কিংবা অলসতা বোধ করলে বসে নামাজ আদায় করতেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩০৮. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি দয়া করুন যে রাতে সজাগ হয়ে নিজে নামাজ আদায় করে এবং তার স্ত্রীকেও সজাগ করে। স্ত্রী উঠতে না চাইলে সে তার মুখমণ্ডলে পানি ছিটায়।

নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

১৩০৯. আবু সাঈদ ও আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) সূত্র হইতে বর্ণিতঃ

তারা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি রাতের বেলায় স্বীয় স্ত্রীকে সজাগ করে উভয়ে কিংবা প্রত্যেকে দু দু রাকআত নামাজ আদায় করলে তাহাঁদেরকে আল্লাহর স্মরণকারী ও স্মরণকারিনীর তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইবনি কাসীর এ হাদিস রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) পর্যন্ত পৌঁছাননি এবং তিনি আবু হুরাইরা (রাঃআঃ) এর নাম উল্লেখ করেননি বরং বলেছেন, এটি আবু সাঈদ (রাঃআঃ) এর নিজস্ব বক্তব্য।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ৩০৮ নামাজের মধ্যে তন্দ্রা এলে

১৩১০. নাবী (সাঃআঃ) এর স্ত্রীআয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ নামাজরত অবস্থায় তোমাদের কারো ঝিমনি এলে ঝিমনি দূর না হওয়া পর্যন্ত সে যেন অবশ্যই শুয়ে পড়ে। কেননা কেউ ঘুমের ঘোরে নামাজ আদায় করলে হয়ত সে নিজের ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে নিজেকে গালি দিবে।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩১১. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ (ঘুমের ঘোরে) রাতের নামাজে দণ্ডায়মান হলে কুরআন স্বাভাবিকভাবে তাহাঁর মুখ থেকে বের হয় না, এবং সে কি তিলাওয়াত করছে তাও বুঝতে পারে না। কাজেই এরূপ অবস্থায় সে যেন অবশ্যই ঘুমিয়ে পড়ে।

সহীহঃ মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩১২. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মাসজিদে প্রবেশ করে দুটি খুটির মাঝে রশি বাধা দেখে জিজ্ঞেস করলেনঃ এ রশিটি কিসের? বলা হল, হে আল্লাহর রসূল! এটা হামনাহ বিনতু জাহ্‌শের (রাঃআঃ) রশি, তিনি রাতে নামাজ আদায়কালে ক্লান্তিবোধ হলে এ রশিতে নিজেকে আটকে রাখেন। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তাহাঁর উচিত সামর্থ্ অনুযায়ী নামাজ আদায় করা, যখন ক্লান্তিবোধ করিবে তখন নামাজ ছেড়ে বসে যাবে। যিয়াদের বর্ণনায় রহিয়াছে, তিনি (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ এটা কি? লোকেরা বলিল, এটা যাইনাবের (রাঃআঃ) রশি, তিনি নামাজ আদায়কালে ক্লান্তি বা অলসতাবোধ করলে এতে ঝুলে থাকেন। তিনি বললেনঃ এটা খুলে ফেলো। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের আনন্দের সাথে নামাজ আদায় করা উচিত, যখন ক্লান্তি কিংবা অলসতাবোধ করিবে তখন নামাজ ছেড়ে বসে পড়বে।

সহিহ, হামনাহ শব্দ উল্লেখ বাদেঃ বোখারি ও মুসলিম . তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ৩০৯ ঘুমের কারণে ওযীফা ছুটে গেলে

১৩১৩. উমার ইবনিল খাত্তাব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঘুমের কারণে রাতের বেলায় তসবীহ বা কুরআন পূর্ণরূপে পড়তে না পারায় তা ফাজ্‌র ও যুহরের নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে পাঠ করে নিয়েছে, এর বিনিময়ে তাহাঁর জন্য ঐরূপ সওয়াব লিখা হয়, যেন সে রাতেই তা পাঠ করেছে।

সহীহঃ মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ৩১০ নফল নামাজ এর নিয়্যাত করার পর ঘুমিয়ে গেলে

১৩১৪. নাবী (সাঃআঃ) এর স্ত্রীআয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে নামাজ আদায়ের ইচ্ছা করা সত্ত্বেও ঘুম তাকে পরাভূত করে দিলো, তার আমলনামায় রাতে নামাজ আদায়ের সওয়াবই লিখা হইবে। তার জন্য ঘুম সদাক্বাহ হিসেবে গন্য হইবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ৩১১ (ইবাদাতের জন্য) রাতের কোন্‌ সময়টি উত্তম?

১৩১৫. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ আমাদের মহা মহীয়ান রব্ব প্রতি রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করে বলেন, আছে কেউ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিবো? আছে কেউ আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করবো? আছে কি কেউ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করিবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো?

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ৩১২ নাবী (সাঃআঃ) এর রাতে নামাজ আদায়ের সময়

১৩১৬. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মহা মহীয়ান আল্লাহ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে রাতে সজাগ করতেন এবং তিনি সাহরীর সময়ে তাহাঁর নফল নামাজ, তাসবীহ ইত্যাদি হইতে অবসর হইতেন।

নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১৩১৭. মাসরুক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমিআয়েশা (রাঃআঃ) কে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে বলি, তিনি কোন সময় নামাজ আদায় করতেন? তিনি বলিলেন, তিনি মোরগের ডাক শুনে উঠে নামাজে দাড়াতেন।

সহীহঃ ও বুখারি ও মুসলিম এ শব্দে (আরবি)। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩১৮. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তিনি নাবী (সাঃআঃ) আমার নিকট যখনই ভোর করিয়াছেন, ( আমি তাঁকে) নিদ্রাবস্থায় পেয়েছি।

সহীহঃ বুখারি ও মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩১৯. হুযাইফাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন।

নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১৩২০. রবীআহ ইবনি কাব আল-আসলামী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

যখন আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর সাথে রাত যাপন করতাম, তখন তাহাঁর উযুর পানি ও অন্যান্য প্রয়োজন পূরণ করে দিতাম। তিনি বললেনঃ তুমি আমার কাছে কিছু চাও। আমি বললাম , জান্নাতে আপনার সান্নিধ্যে থাকতে চাই। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ আরো কিছু? আমি বললাম, এটাই যথেষ্ট। তিনি বললেনঃ তাহলে অধিক পরিমানে সাজদাহ করে এ কাজে আমাকে সাহায্য করো।

সহীহঃ মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩২১. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর বাণীঃ

 تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ، يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ

“তারা (মুমিনরা) স্বীয় পিঠ হইতে বিছানা ত্যাগ করে তাহাঁদের রব্বকে ভয় ও আশা নিয়ে ডাকে ,আর আমরা তাহাঁদেরকে যা কিছু রিযিক্ব দিয়েছি তা হইতে খরচ করে” ( সুরা্হ আস-সাজদা্হঃ ১৬)।

তিনি বলেন, এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে তারা (সাহাবীগণ) মাগরিব এবংইশার মধ্যবর্তী সময় জেগে থেকে নামাজ আদায় করতেন। বর্ননাকারী বলেন, হাসান বাসরি বলেছেন, এই আয়াতের অর্থ হলো, রাত জেগে নামাজে দাঁড়িয়ে থাকা।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩২২. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর বাণীঃ

كَانُوا قَلِيلاً مِنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ

“তারা রাতের সামান্য সময় ঘুমে কাটাতো” (সূরাহ আয- যারিআতঃ ১৭ )। তিনি বলেন, এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে, সাহাবীগণ মাগরিব ওইশার মধ্যবর্তী সময়ে নামাজ আদায় করতেন। ইয়াহইয়া তার বর্ননায় এটুকু বৃদ্ধি করিয়াছেন যে, “তাতাজাফা জুনূবুহুম” -এর অর্থও অনুরুপ।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ৩১৩ দু রাকআত নফল দ্বারা রাতের নামাজ আরম্ভ করা

১৩২৩. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ রাতে নামাজ আদায় করতে দাড়াঁলে সে যেন প্রথমে সংক্ষেপে দু রাকআত নামাজ আদায় করে নেয়। {১৩২৩}

দুর্বল, সহিহ হচ্ছে এটি তার মাওকূফ বর্ননা। যা এর পরের হাদীসে রহিয়াছে। {১৩২৩} মুসলিম (অধ্যায়ঃ মুসাফিরের নামাজ, অনু রাতের নামাজের দুআ ), আহমাদ (হাঃ ১৭৭৬) শায়খ আহমেদ শাকির বলেন, এর সানাদ সহিহ। তিরমিযীশামায়িল (হাঃ ১৬৩০)। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৩২৪. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরুপ বর্ণিত। তবে এতে রহিয়াছে, এরপর যত ইচ্ছা দীর্ঘ করিবে। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদিসটি হাম্মাদ ইবনি সালামাহ, যুহাইর ইবনি মুআবিয়াহ, আইয়ূব, ইবনি আওন ও একদল হিশাম সুত্রে বর্ননা করিয়াছেন, তারা এটি আবু হুরাইরা (রাঃআঃ) এর নিজস্ব বক্তব্য হিসাবে উল্লেখ করিয়াছেন। ইবনিআওন মুহাম্মাদ ইবনি সীরীন সুত্রে বর্ননা করেন যে, প্রথম দু রাকআতের ক্বিরাআত ছোট করিবে।

নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাওকুফ

১৩২৫. আবদুল্লা ইবনি হুবশী আল-খাসআমী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) কে সবচেয়ে উত্তম আমল সম্পর্কে জ্ঞিগেস করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা।

সহীহঃ এ শব্দেঃ কোন নামাজ? তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ৩১৪ রাতের নামাজ দু দু রাকআত করে

১৩২৬. আবদুল্লা ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

একদা কতিপয় লোক রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে রাতের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলেন, রাতের নামাজ হচ্ছে দু দু রাকআত করে। তোমাদের কেউ সুবহি সাদিকের আশংকা করলে পূর্বে যেটুকু নামাজ আদায় করেছে তা বিতর করতে এক রাকআত নামাজ আদায় করে নিবে।

সহীহঃ বুখারি ও মুসলিম. তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ৩১৫ রাতের নামাজে উচ্চস্বরে ক্বিরাআত পাঠ

১৩২৭. ইবনিআববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ঘরে নামাজ আদায়কালে নাবী (সাল্লালাহিআলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ক্বিরাআত এত স্পষ্ট হতো যে, হুজরাহইতে অবস্থানকারীরা তা শুনতে পেতো।

নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

১৩২৮. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) রাতের নামাজে ক্বিরাআত কখনো সশব্দে আবার কখনো নিঃশব্দে পড়তেন।

নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১৩২৯. আবু ক্বাতাদাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

এক রাতে নাবী (সাঃআঃ) বেরিয়ে আবু বাকর (রাঃআঃ) কে নিঃশব্দে ক্বিরাআত পড়তে দেখলেন। অতঃপরউমার ইবনিল খাত্তাব (রাঃআঃ) এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে সশব্দে ক্বিরাআত পড়তে দেখলেন। বর্ননাকারী বলেন, অতঃপর তারা উভয়ে নাবী (সাঃআঃ) এর নিকট একত্র হলে নাবী (সাঃআঃ)বললেনঃ হে আবু বাকর! আমি তোমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম, তুমি নিঃশব্দে ক্বিরাআত পরছিলে। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তাঁকেই শুনাচ্ছিলাম যার সাথে চুপিসারে কথা বলছিলাম।বর্ণনাকারী বলিলেন, অতঃপর তিনিউমার (রাঃআঃ) কে বললেনঃ আমি তোমার পাশ দিয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম, তুমি সশব্দে ক্বিরাআত পড়ছিলে। তিনি বলিলেন হে আল্লাহর রসুল! আমি ঘুমন্ত ব্যাক্তিকে জাগাতে এবং শাইত্বাকে বিতাড়িত করতে চেয়েছিলাম। হাসান বাসরি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর বর্ননায় রয়েছেঃ নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ হে আবু বাকর! তোমার কিরাআত একটু শব্দ করে পড়বে এবং উমারকে বললেনঃ তোমার কিরাআত একটু নিচু স্বরে পড়বে।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৩০. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) এর সুত্রে উপরোক্ত ঘটনা অনুরুপ বর্নিত।। তবে তাতে এটা উল্লেখ নেই। তিনি আবু বাকর (রাঃআঃ) কে বলেন তুমি একটু উচ্চস্বরে পড়বে এবংউমার (রাঃআঃ) কে বলেন তুমি একটু নিচু স্বরে পড়বে। এই বর্ননায় রয়েছেঃ হে বিলাল! আমি তোমার আওয়াজ শুনিয়াছি। তুমি এই এই সূরাহ হইতে তিলওয়াত করছিলে। বিলাল বলিলেন, খুবই উত্তম বাক্য, আল্লাহ একটিকে অন্যটির সাথে সুন্দরভাবে সুসজ্জিত করিয়াছেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা সবাই সঠিক কাজ করেছো। {১৩৩০}

{১৩৩০} সুনান বায়হাকী( ৩/১১) আবু দাউদের সানাদে এর অতিরিক্ত অংশ বাদে । নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১৩৩১. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

এক রাতে জনৈক ব্যক্তি নামাজে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে কিরাআত পাঠ করেন। অতঃপর ভোর হলে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আল্লাহ অমুকের প্রতি দয়া করুন। আজ রাতে সে আমাকে কতিপয় আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যা আমি বাদ দিয়েছিলাম। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হারুন আন না্হবী হাম্মাদ ইবনি সালমা্হ হইতে বর্ণনা করেন যে, তা ছিলো সুরা্হ আল ইমরানের এই আয়াতটিঃ ওয়াকাআইয়্যিম মিন নাবিয়্যীন।

সহিহ ঃ বুখারি ও মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৩২. আবু সাঈদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন , রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মাসজিদে ইতিকাফ কালে সাহাবীদেরকে উচচস্বরে ক্বিরাআত পড়তে শুনে পর্দা সরিয়ে বললেনঃ জেনে রাখো! তোমাদের প্রত্যেকেই স্বীয় রব্বের সাথে চুপিসারে আলাপে রত আছো। কাজেই তোমরা পরস্পরকে কষ্ট দিও না এবং পরস্পরের সামনে ক্বিরাআতে বা নামাজে আওয়াজ উঁচু করো না।

সহিহ। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৩৩. উক্ববাহ ইবনিআমির আল-জুহানী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ,রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ উচচস্বরে পাঠকারী প্রকাশ্যে দানকারীর মত এবং নিঃশব্দে কুরআন পাঠকারী গোপনে দানকারীর মত।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ৩১৬ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে

১৩৩৪. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতে দশ রাকআত নামাজ আদায় করতেন এবং বিতর পড়তেন এক রাকআত। অতঃপর ফাজ্‌রের দু রাকআত (সুন্নাত) নামাজ আদায় করতেন, এ নিয়ে সর্বমোট তেরো রাকআত হতো।

সহিহ ঃবোখারি ও মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৩৫. নাবী (সাঃআঃ) এর স্ত্রীআয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতে এগারো রাকআত নামাজ আদায় করতেন। তন্মধ্যে বিতর হতো এক রাকআত। অতঃপর নামাজ শেষে তিনি ডান কাতে শুয়ে বিশ্রাম নিতেন।

সহিহ ঃ মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৩৬. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ইশার নামাজের পর থেকে সুবহি সাদিক পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী সময়ে এগারো রাকআত নামাজ আদায় করতেন। প্রত্যক দু রাকআতে সালাম ফিরাতেন এবং এক রাকআত দ্বারা বিতর করতেন। তিনি এত দীর্ঘক্ষন সাজদাহয় অবস্থান করতেন যে, তাহাঁর মাথা উঠানোর পূর্বে তোমাদের কেউ আনুমানিক পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করতে পারতে। মুয়ায্‌যিন ফাজ্‌রের (প্রথম) আযান শেষ করলে তিনি উঠে সংক্ষেপে দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন। অতঃপর মুয়াযযিন (জামাআতের সংবাদ দেয়ার জন্য) পুনরায় আসা পর্যন্ত তিনি ডান পাশের পাজরের উপর ভর করে শুয়ে বিশ্রাম নিতেন।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম, তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৩৭. ইবনি শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ সানাদ ও অর্থের হাদিস বর্ণিত। সুলায়মান ইবনি দাউদ বলেন, তিনি বিতর করতেন এক রাকআত। তিনি এতো দীর্ঘক্ষণ সাজদাহয় অবস্থান করতেন যে, তাহাঁর মাথা উঠানোর পূর্বে তোমাদের কেউ পঞ্চাশ আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করতে পারতে। যখন মুয়াযযিন ফাজরের আযান শেষ করতো এবং সুবহি সাদিক উদ্ভাসিত হতো, … অতঃপর উল্লেখিত হাদিসের অনুরূপ। সুলায়মান বলেন, তাহাঁদের একজনের বর্ণনায় অন্যজন হইতে কিছু কম-বেশী আছে।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৩৮. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতে তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন। তন্মধ্যে তিনি পাঁচ রাকআত বিতর আদায় করতেন, এ পাঁচ রাকআতে কেবল শেষ বৈঠক ছাড়া মাঝখানে বসতেন না, অতঃপর সালাম ফিরাতেন।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৩৯. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতে তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন। অতঃপর ফাজর নামাজের আযান শুনতে পেলে সংক্ষেপে দু রাকআত (সুন্নাত) আদায় করতেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৪০. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) রাতে তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন, তন্মধ্যে আট রাকআত (তাহাজ্জুদ), অতঃপর বিতর নামাজ পড়তেন। এরপর তিনি আবার নামাজ আদায় করতেন। বর্ণনাকারী মুসলিম ইবনি ইবরাহীম বলেন, বিতর নামাজের পর তিনি বসাবস্থায় দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন। তবে রুকূর ইচ্ছা করলে দাঁড়িয়ে রুকূ করতেন এবং ফাজরের আযান ও ইক্বামাতের মাঝখানে দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন।

সহীহঃ মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৪১. আবু সালামাহ ইবনিআবদুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

একদা তিনি নাবী (সাঃআঃ) এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃআঃ) কে জিজ্ঞেস করিলেন, রমাযান ও রমাযান ছাড়া অন্য সময়ে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নামাজ কিরূপ ছিল? তিনি বলেন, রমাযান ও রমাযান ছাড়া অন্য সময়ে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এগার রাকআতের অধিক নামাজ আদায় করতেন না। তিনি প্রথমে চার রাকআত আদায় করতেন, খুবই সুন্দর ও দীর্ঘায়িত করে। অতঃপর চার রাকআত, তাও এতো সুন্দর ও দীর্ঘায়িত হতো যে, জিজ্ঞেস করো না। সর্বশেষে (বিতর আদায় করতেন) তিন রাকআত।আয়েশা (রাঃআঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি বিতর নামাজের পূর্বে ঘুমান? তিনি বললেনঃ হে আয়েশা ! আমার দু চোখ ঘুমায় কিন্তু আমার অন্তর জাগ্রত থাকে।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৪২. সাদ ইবনি হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি যুদ্ধে যাওয়ার উদ্দেশে আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে মাদীনাহয় আমার যে ভূমি রহিয়াছে তা বিক্রি করে যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করার জন্য (বাসরাহ থেকে) মাদীনাহইতে আসলাম। এ সময় নাবী (সাঃআঃ) এর একদল সাহাবীর সঙ্গে আমার সাক্ষাত হলে তারা বলিলেন, আমাদের মধ্যকার ছয় ব্যক্তির একটি দল এরূপ ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করে বলেনঃ “তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মাঝেই উত্তম আদর্শ নিহিত আছে ”।

বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) এর নিকট গিয়ে নাবী (সাঃআঃ) এর বিতর নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহর নামাজ সম্পর্কে যিনি অধিক অভিজ্ঞ আমি তোমাকে তার সন্ধান দিচ্ছি। তুমি আয়েশা (রাঃআঃ) এর নিকট যাও। কাজেই আমি তার নিকট যাই এবং হাকীম ইবনি আফলাহকেও যাবার অনুরোধ করি, কিন্তু তিনি অস্বীকার করায় আমি তাকে শপথ দিয়ে অনুরোধ করলে তিনি আমার সঙ্গে রওয়ানা হন। আমরা আয়েশা (রাঃআঃ) এর সাথে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে তিনি জিজ্ঞেস করেন, কে? তিনি বলেন, হাকীম ইবনি আফলাহ। তিনি বলেন, তোমার সাথে কে? তিনি বলিলেন, সাদ ইবনি হিশাম। তিনি বলিলেন, উহুদের যুদ্ধে শহীদ হওয়া হিশাম ইবনি আমির? হাকীম ইবনি আফলাহ বলে, আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলিলেন,আমির তো অত্যন্ত ভাল লোক ছিলেন। তিনি বলেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আমাকে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর চরিত্র সম্বন্ধে বলুন। তিনি বলিলেন, তুমি কি কুরআন পড়ো না? গোটা কুরআনই হচ্ছে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর চরিত্র। তিনি বলেন, আমি বললাম, আমাকে রাতের ক্বিয়াম সম্পর্কে বলুন। তিনি বলিলেন, তুমি কি কুরআনের “ইয়া আইয়্যু হাল মুযযাম্মিল” সূরাহ পাঠ করনি? তিনি বলেন, আমি বললাম, হাঁ, পাঠ করেছি। তিনি বলিলেন, এ সূরাহর প্রথমাংশ অবতীর্ণ হবার পর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর সাহাবীগণ এতো বেশী “ক্বিয়ামুল লাইল” করতেন যে, তাহাঁদের পা ফুলে যেতো। অতঃপর এ সূরাহর শেষাংশ অবতীর্ণ হলে “ক্বিয়ামুল লাইল” ফারয হইতে নাফল হিসেবে পরিবর্তন হয়। তিনি বলেন, আমি বললাম, আমাকে নাবী (সাঃআঃ) এর বিতর নামাজ সম্পর্কে বলুন। তিনি বলিলেন, তিনি আট রাকআত বিতর করতেন এবং তাতে কেবল অষ্টম রাকআতেই বসতেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে আরো এক রাকআত পড়তেন এবং এই অষ্টম ও নবম রাকআত ছাড়া কোথাও বসতেন না। তিনি নবম রাকআতে সালাম ফিরাতেন। অতঃপর বসে বসে দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন। হে আমার বৎস! এ এগার রাকআতই ছিল তাহাঁর রাতের নামাজ। অতঃপর বার্ধক্যের কারণে তাহাঁর শরীর ভারী হয়ে গেলে তিনি সাত রাকআত বিতর করতেন এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম রাকআত ছাড়া বসতেন না, আর সালাম ফিরাতেন সপ্তম রাকআতে। অতঃপর বসে বসে দু রাকআত নাফল নামাজ আদায় করতেন। হে বৎস! এ নয় রাকআতই ছিল রাতের নামাজ। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কখনো সারারাত ভোর পর্যন্ত নামাজ আদায় করতেন না, এক রাতে গোটা কুরআন খতম করতেন না এবং রমাযান মাস ছাড়া পুরো এক মাস সওম পালন করতেন না। তিনি কোনো নামাজ আরম্ভ করলে তা নিয়মিত আদায় করতেন। ঘুমের কারণে রাতে জাগ্রত হইতে না পারলে তিনি দিনের বেলা বারো রাকআত নামাজ আদায় করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) এর কাছে এসে এগুলো বর্ণনা করলে তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! এটাই হচ্ছে প্রকৃত হাদিস। আমি যদি আয়েশার সঙ্গে  কথা বলতাম তাহলে আমি এসে এ হাদিস আলোচনা করতাম। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, আমি যদি জানতাম যে, আপনি তাহাঁর সাথে কথাবার্তা বলেন না, তাহলে আমি হাদিসটি আপনার কাছে বর্ণনা করতাম না।

সহীহঃ মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৪৩. ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

উপরোক্ত সানাদে অনুরূপ হাদিস বর্ণিত। বর্ণনাকারী বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আট রাকআত নামাজ আদায় করতেন এবং তাতে কেবল অষ্টম রাকআতেই বসতেন। তিনি বসে আল্লাহর যিকর করতেন, দুআ করতেন, অতঃপর এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যে, আমরা শুনতে পেতাম। অতঃপর বসাবস্থায় দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন, অতঃপর এক রাকআত নামাজ আদায় করতেন। হে বৎস! এটাই তাহাঁর আদায়কৃত মোট এগার রাকআত নামাজ। অবশ্য বয়োবৃদ্ধির কারণে যখন রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) এর শরীর ভারি হয়ে যায় তখন তিনি সাত রাকআত বিতর আদায় করতেন। অতঃপর সালামের পর বসাবস্থায় দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন।

সহীহঃ মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৪৪. সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত।আয়েশা (রাঃআঃ) বলেন, তিনি এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যে, আমরা শুনতে পেতাম। যেমনটি রহিয়াছে ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ এর বর্ণনায়।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৪৫. সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত। ইবনি বাশশারও ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদের অনুরূপ বলেছেন। তিনি আরো বলেন, তিনি (সাঃআঃ) আমাদেরকে শুনিয়ে সালাম ফিরাতেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৪৬ যুরারাহ ইবনি আওফা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

একদাআয়েশা (রাঃআঃ) কে রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) মধ্য রাতের নামাজ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তিনি ইশার নামাজ জামাআতে আদায় করে নিজ পরিজনের কাছে ফিরে এসে চার রাকআত নামাজ আদায় করে স্বীয় বিছানায় ঘুমিয়ে পড়তেন। এ সময় উযুর পানি ও মিসওয়াক তাহাঁর কাছেই থাকতো। অতঃপর মহান আল্লাহ রাতে যখন সজাগ করার তাঁকে সজাগ করতেন। তিনি মিসওয়াক ও উত্তমরূপে উযু করে তাহাঁর মুসল্লায় দাঁড়িয়ে আট রাকআত নামাজ আদায় করতেন। তাতে সূরাহ ফাতিহা, কুরআনের অন্য সূরাহ এবং আল্লাহ যা চাইতেন তা পাঠ করতেন। তিনি এতে মাঝখানে না বসে কেবলমাত্র অষ্টম রাকআতেই বসতেন এবং সালাম না ফিরিয়ে নবম রাকআতে দাঁড়িয়ে ক্বিরাআত পড়তেন। অতঃপর (শেষ বৈঠকে) বসে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী দুআ করতেন, তাহাঁর কাছে প্রার্থনা করতেন এবং তাহাঁর প্রতি আকৃষ্ট হইতেন। সবশেষে তিনি এতো জোরে সালাম ফিরাতেন যে, সালামের আওয়াজে ঘরের লোকের জাগ্রত হবার উপক্রম হতো। অতঃপর তিনি (বসে দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন এবং তাতে) বসেই সূরাহ ফাতিহা পাঠ ও রুকূ করতেন। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় রাকআতেও বসাবস্থায় রুকূ ও সাজদাহ্‌ করতেন। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী দুআ করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতেন। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) শরীর ভারী হওয়া পর্যন্ত এভাবেই নামাজ আদায় করতেন। অতঃপর ( শরীর ভারী হয়ে গেলে) তিনি নয় রাকআত থেকে দুই কমিয়ে ছয় রাকআত ( এবং এক যোগ করে ) সাত রাকআত আদায় করেন এবং দু রাকআত বসাবস্থায় আদায় করতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এভাবেই নামাজ আদায় করিয়াছেন।

সহিহ, চার রাকআত কথাটি বাদে। সংরক্ষিত হচ্ছেআয়েশা সূত্রে দু রাকআত। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৪৭. বাহয ইবনি হাকীম (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

উপরোক্ত সানাদে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি ইশার নামাজ আদায়ের পর স্বীয় বিছানায় বিশ্রাম নিতেন। এতে চার রাকআতের কথা উল্লেখ নেই। অতঃপর পুরো হাদিস বর্ণনা করেন। এতে রহিয়াছে, অতঃপর তিনি আট রাকআত নামাজ আদায় করতেন। ক্বিরাআত, রুকূ ও সাজদাহ্ এগুলো পরস্পরের মধ্যে ব্যবধান ছিলো সমপরিমাণ এবং তিনি এ নামাজে কেবলমাত্র অষ্টম রাকআতেই বসতেন। অতঃপর উঠে দাঁড়িয়ে এক রাকআত দ্বারা বিতর করতেন। সবশেষে এমনভাবে উচ্চস্বরে সালাম বলিতেন যে, আওয়াজ আমাদের নিদ্রা ভঙ্গ করে দিতো। এরপর পূর্ববর্তী হাদিসের অনুরূপ।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৪৮. উম্মুল মুমিনীনআয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তাকে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নামাজ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে বলেন, তিনি লোকদেরকে নিয়ে ইশার নামাজ আদায় শেষে ঘরে ফিরে এসে চার রাকআত নামাজ আদায় করতেন। এরপর ঘুমের জন্য স্বীয় বিছানায় চলে যেতেন। অতঃপর পূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন। তবে “ক্বিরাআত, রুকূ ও সাজদাহ্‌তে সমতা রক্ষা করা এবং তাহাঁর উচ্চস্বরে সালাম উচ্চারণ আমাদেরকে ঘুম থেকে সজাগ করতো” এ বাক্যে উল্লেখ নেই।

সহিহ, চার রাকআত কথাটি বাদে। মাহফূয হচ্ছে দু রাকআত। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৪৯. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

এ সানাদে উপরোক্ত হাদিস বর্ণিত।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৫০. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতে তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন এবং নবম রাকআতে বিতর অথবা তিনি অনুরূপ বলেছেন। তিনি বসে দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন, অতঃপর ফাজ্‌রের দু রাকআত সুন্নাত নামাজ আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ে আদায় করতেন।

নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

১৩৫১. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বিতর নামাজ নয় রাকআত আদায় করতেন। পরবর্তীতে (পরিণত বয়সে) তিনি সাত রাকআত বিতর নামাজ আদায় করেন এবং বিতরের পর বসাবস্থায় দু রাকআত নামাজ আদায় করিয়াছেন। তাতে ক্বিরাআত পাঠ করিয়াছেন এবং রুকূর সময় দাঁড়িয়ে রুকূ করিয়াছেন, অতঃপর সাজদাহ্ করিয়াছেন।

হাসান সহিহ। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদিস দুটি অনুরূপভাবে বর্ণনা করিয়াছেন খালিদ ইবনিআবদুল্লা আল-ওয়াসিত্বী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মুহাম্মাদ ইবনি আমর হইতে। তাতে রহিয়াছে, আলক্বামাহ ইবনি ওয়াক্কাস বলেন, হে আম্মাজান! তিনি ঐ দু রাকআত কিভাবে আদায় করিয়াছেন? অতঃপর হাদিসের ভাবার্থ উল্লেখ করেন। সহিহ। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

১৩৫২. হিশাম ইবনি সাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি মাদীনাহয় এসেআয়েশা (রাঃআঃ) এর নিকট গিয়ে বললাম, আপনি আমাকে রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) নামাজ সম্বন্ধে বলুন। তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) লোকদের নিয়েই শার নামাজ আদায়ের পর নিজের বিছানায় এসে ঘুমাতেন। অতঃপর মাঝ রাতে উঠে নিজের প্রয়োজন সেরে উযুর পানি নিয়ে উযু করে মাসজিদে গিয়ে আট রাকআত নামাজ আদায় করতেন। আমার ধারণা, তিনি ক্বিরাআত, রুকূ ও সাজদাহ্‌র মধ্যে সমতা বজায় রাখতেন। তারপর এক রাকআত বিতর করতেন। সবশেষে বসাবস্থায় দু রাকআত নামাজ আদায় করে বিশ্রাম নিতেন। অতঃপর কখনো বিলাল এসে তাঁকে নামাজের সংবাদ দিতেন। কখনো তিনি আবার হালকা ঘুমিয়ে পড়েছেন কিনা, এ নিয়ে আমার সংশয় হতো। অতঃপর তাঁকে আবারো নামাজের জন্য ডাকা হতো। এ ছিল বয়োবৃদ্ধ বা শরীর ভারী হওয়া পর্যন্ত তাহাঁর রাতের নামাজ। অতঃপরআয়েশা তাহাঁর শরীর ভারী হওয়া সম্পর্কিত আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী যা উল্লেখ করার করেন। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৫৩. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

একদা তিনি নাবী (সাঃআঃ) এর সাথে ঘুমালেন। অতঃপর তিনি দেখলেন যে, তিনি ঘুম থেকে জেগে মিসওয়াক করে উযু সেরে আল্লাহর এ বাণী তিলাওয়াত করলেনঃ

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ

ইন্না ফি খালক্বিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি” সূরাহ আলইমরানের শেষ আয়াত পর্যন্ত। তারপর উঠে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। নামাজের ক্বিয়াম, রুকূ ও সাজদাহ্‌ খুব দীর্ঘায়িত করিলেন। অতঃপর নামাজ শেষে তিনি নাক ডেকে ঘুমাতে লাগলেন। এরূপে তিনবারে ছয় রাকআত আদায় করিলেন এবং প্রতিবারই মিসওয়াক করে উযু সেরে উক্ত আয়াতগুলো তিলাওয়াত করিলেন। সবশেষে বিতর পড়লেন। বর্ণনাকারীউসমান বলেন, তিনি বিতর নামাজ তিন রাকআত আদায় করিয়াছেন। অতঃপর মুয়াযযিন এলে তিনি মাসজিদে চলে গেলেন। ইবনি ঈসা বলেন, তিনি বিতর করিলেন, অতঃপর ফাজ্‌রের আবির্ভাব হলে বিলাল (রাঃআঃ) এসে তাঁকে নামাজের সংবাদ দিলেন। তিনি ফাজরের দু রাকআত সুন্নাত আদায়ের পর মাসজিদে যান এবং দুআ পাঠ করেনঃ

اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا، وَاجْعَلْ فِي لِسَانِي نُورًا، وَاجْعَلْ فِي سَمْعِي نُورًا، وَاجْعَلْ فِي بَصَرِي نُورًا، وَاجْعَلْ خَلْفِي نُورًا، وَأَمَامِي نُورًا، وَاجْعَلْ مِنْ فَوْقِي نُورًا، وَمِنْ تَحْتِي نُورًا، اللَّهُمَّ وَأَعْظِمْ لِي نُورًا

আল্লা-হুম্মাজ‘আল ফী ক্বালবী নূরান, ওয়াজ আল ফী লিসানী নূরান, ওয়াজ আল ফী সাম্‘য়ী নূরান, ওয়াজ আল ফী বাসারী নূরান, ওয়াজ আল খলফী নূরান, ওয়া মিন আমামী নূরান, ওয়াজ আল মিন ফাওকী নূরান,  ওয়া মিন তাহ্‌তী নূরান, আল্লা-হুম্মা ওয়া আ‘জিমলি নূরান, “হে আল্লাহ! আমার অন্তরে নূর দাও, আমার জবানে নূর দাও, আমার কানে নূর দাও, আমার চোখে নূর দাও, নূর দান করো আমার পিছনে ও সম্মুখভাগে এবং আমার উপরে ও নীচে। হে আল্লাহ! আমাকে পর্যাপ্ত নূর দান করো”।

সহীহঃ মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৫৪. হুসাইন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত। তাতে রয়েছেঃ

وَأَعْظِمْ لِي نُورًا

ওয়া আ‘জিমলি নূরান, “আমাকে পর্যাপ্ত নূর দান করো”।

সহিহ। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু খালিদ আদ-দালানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হাবীব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে এবং সালামাহ ইবনি কুহাইল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু রিশদীন ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৫৫. আল-ফাদল ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, স্বচক্ষে নাবী (সাঃআঃ) এর নামাজ আদায়ের পদ্ধতি অবলোকনের উদ্দেশে আমি একদা নাবী (সাঃআঃ) এর সাথে রাত যাপন করি। তিনি (সাঃআঃ) ঘুম থেকে উঠে উযু করে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। তাহাঁর দাঁড়ানোর দীর্ঘতা তাহাঁর রুকূর সমান এবং তাহাঁর রুকূর দীর্ঘতা ছিলো তাহাঁর সাজদাহ্‌র সমান। অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে আবার সজাগ হয়ে উযু ও মিসওয়াক করে সূরাহ আলইমরান হইতে এ পাঁচটি আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ

 إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ

ইন্না ফি খলকিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়াখতিলাফিল লাইলি ওয়ান নাহারি”। এরূপে তিনি দশ রাকআত নামাজ আদায় করিলেন এবং শেষে এক রাকআত দ্বারা বিতর করিলেন। এ সময় মুয়াযযিন আযান দিলে তিনি সংক্ষেপে দু রাকআত নামাজ আদায় করে বসে থাকলেন। অতঃপর ফাজরের নামাজ আদায় করিলেন। {১৩৫৫}

ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইবনি বাশশার বর্ণিত এ হাদিসটির কিছু অংশ আমার নিকট অস্পষ্ট। {১৩৫৫} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। এর সানাদ দুর্বল। কুরাইব হাদিসটি ফাযল ইবনি আব্বাস  হইতে মুরসালভাবে বর্ণনা করিয়াছেন যেমনআত-তাহযীব গ্রন্থে রহিয়াছে। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৩৫৬. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক রাতে আমি আমার খালা মায়মূনাহর (রাঃআঃ) নিকট অবস্থান করি। সন্ধ্যার পর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এসে জিজ্ঞেস করিলেন, বালকটি কি নামাজ আদায় করেছে? তারা বলিলেন, হাঁ। অতঃপর তিনি শুয়ে পড়লেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি উঠে উযু করে বিতর সহ সাত বা পাঁচ রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। এতে তিনি কেবল শেষ রাকআতেই সালাম ফিরান।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৫৭. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক রাতে আমি আমার খালা মায়মূনাহ বিনতুল হারিসের (রাঃআঃ) ঘরে অবস্থান করি। নাবী (সাঃআঃ)ইশার নামাজ আদায়ের পর ঘরে এসে চার রাকআত নামাজ আদায় করে ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর আবার উঠে নামাজ আদায় করতে লাগলেন, তখন আমি তাহাঁর বাম পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে ঘুরিয়ে এনে তাহাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন এবং তিনি পাঁচ রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর তিনি আবার ঘুমালেন, এমনকি আমি তাহাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। অতঃপর আবার উঠে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর (ঘর থেকে) বের হয়ে (মাসজিদে) গিয়ে ফাজ্‌রের নামাজ আদায় করেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৫৮. সাইদ ইবনি জুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) তাকে এ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি উঠে দু দু রাকআত করে আট রাকআত নামাজ আদায়ের পর পাঁচ রাকআত বিতর করেন এবং তিনি এ রাকআতগুলোর মাঝে বসেননি।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৫৯. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফাজ্‌রের পূর্বের দুরাকআত সহ সর্বমোট তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন। দু দু রাকআত করে ছয় রাকআত এবং বিতর পাঁচ রাকআত, এর সর্বশেষ রাকআত ছাড়া তিনি মাঝখানে বসতেন না।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৬০. উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনিআয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাকে বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) ফাজ্‌রের দু রাকআত (সুন্নাত) সহ রাতে সর্বমোট তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৬১. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)ইশার নামাজ আদায়ের (অনেকক্ষণ) পরে দাঁড়িয়ে আট রাকআত নামাজ আদায় করেন এবং দু আযানের (ফাজ্‌রের আযান ও ইকামাতের) মাঝখানে দু রাকআত নামাজ আদায় করেন। তিনি কখনো এ দু রাকআত ছেড়ে দেননি। জাফর ইবনি মুসাফিরের বর্ণনায় রয়েছেঃ তিনি দু আযানের মাঝখানে দু রাকআত নামাজ বসে আদায় করিয়াছেন।

সহীহঃ তার একথাটি বাদেঃ দুই আযানের মাঝে। সংরক্ষিত হচ্ছেঃ বিতরের পরে। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৬২. আব্দুল্লাহ ইবনি আবু কায়িস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃআঃ) কে রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) বিতর নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, তিনি চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন অথবা তিন রাকআত বিতর পড়তেন। তিনি সাত রাকআতের কম এবং তের রাকআতের অধিক বিতর করতেন না।

সহিহ। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আহমাদের (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনায় ছয় ও তিন রাকআতের কথা উল্লেখ নেই। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৬৩. আল-আসওয়াদ ইবনি ইয়াযীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আয়েশা (রাঃআঃ) এর কাছে গিয়ে তাঁকে রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) রাতের নামাজ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, তিনি রাতে তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন। পরবর্তীতে তিনি দু রাকআত বর্জন করে এগার রাকআত আদায় করিয়াছেন। অতঃপর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি রাতে নয় রাকআত নামাজ আদায় করিয়াছেন। বিতর হতো তাহাঁর রাতের শেষ নামাজ। {১৩৬৩}

{১৩৬৩} বায়হাকীসুনানুল কুবরা (৩/৩৪)। এর সানাদ দুর্বল। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৩৬৪. মাখরামাহ ইবনি সুলায়মান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তাকে ইবনি আব্বাসের (রাঃআঃ) মুক্তদাস কুরাইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) অবহিত করিয়াছেন যে, তিনি ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) কে রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) রাতের নামাজের পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি বলেছেন, একদা আমি মায়মূনাহর (রাঃআঃ) ঘরে নাবী (সাঃআঃ) এর সাথে রাত যাপন করি। সেখানে তিনি কিছুক্ষন ঘুমিয়ে রাতের এক-তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক অতিবাহিত হওয়ার পর জেগে উঠে পানির মশকের নিকট গিয়ে উযু করিলেন। আমিও তাহাঁর সাথে উযু করলাম। তিনি নামাজে দাঁড়ালেন। আমি তাহাঁর বাম পাশে গিয়ে দাঁড়ালে তিনি আমাকে টেনে তাহাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। অতঃপর তিনি আমার মাথার উপর তাহাঁর হাত রাখলেন, যেন তিনি আমার কান মলে আমাকে সজাগ করছেন। অতঃপর তিনি সংক্ষেপে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। প্রতি রাকআতে তিনি সূরাহ ফাতিহা পাঠ করেন। অতঃপর তিনি সালাম ফিরালেন এবং আবার নামাজ আদায় করিলেন। শেষ পর্যন্ত বিতর সহ মোট এগার রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। এরপর ঘুমালেন। অতঃপর বিলাল এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! নামাজ। ফলে তিনি উঠে দু রাকআত (সুন্নাত) নামাজ আদায়ের পর লোকদের নিয়ে ফারয নামাজ আদায় করিলেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৬৫. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মূনাহর (রাঃআঃ) নিকট এক রাত অতিবাহিত করি। নাবী (সাঃআঃ) রাতের নামাজের উদ্দেশ্যে দাঁড়ালেন। তিনি তের রাকআত নামাজ আদায় করিলেন, তাতে ফাজরের দু রাকআত সুন্নাতও ছিল। আমি অনুমান করলাম, তাহাঁর প্রতি রাকআতে দাঁড়ানোর সময়টুকু ছিল “ইয়া আইয়্যূহাল মুযযাম্মিল” সূরাহ পাঠের সময়ের অনুরূপ। বর্ণনাকারী নূহ ইবনি হাবীব,তন্মধ্যে ফাজরের দু রাকআতও ছিল এ কথাটি বলেননি।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৬৬. যায়িদ ইবনি খালিদ আল-জুহানী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর রাতের নামাজ সচক্ষে দেখার সংকল্প করিলেন। তিনি বলেন, আমি তাহাঁর ঘরের চৌকাঠ বা তাঁবুর দরজাতে মাথা রেখে শুয়ে থাকলাম। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) সংক্ষেপে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর দু রাকআত আদায় করিলেন খুবই দীর্ঘভাবে। অতঃপর আরো দু রাকআত। তবে এর দীর্ঘতা পূর্বের দু রাকআতের চেয়ে কম। অতঃপর দু রাকআত পড়লেন, এটা পূর্বের দু রাকআতের চেয়ে সংক্ষিপ্ত ছিলো। অতঃপর আরো দু রাকআত আদায় করিলেন পূর্বেরটির চেয়ে সংক্ষিপ্ত করে। অতঃপর বিতর আদায় করিলেন। এ নিয়ে সর্বমোট তের রাকআত নামাজ।

সহীহঃ মুসলিম, তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৬৭. ইবনিআব্বাসের (রাঃআঃ) মুক্তদাস কুরাইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লা ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) তাকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, এক রাত তিনি তাহাঁর খালা রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) স্ত্রী মায়মূনাহর (রাঃআঃ) ঘরে অবস্থান করেন। তিনি বলেন, আমি বিছানায় আড়াআড়ি ঘুমিয়ে পড়ি আর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এবং তাহাঁর স্ত্রী লম্বালম্বী ঘুমালেন। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঘুমিয়ে থাকলেন। অতঃপর রাতের অর্ধেক অথবা সামান্য অতিবাহিত হলে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) স্বীয় হাত দিয়ে নিজের মুখমণ্ডল হইতে ঘুমের রেশ মুছতে মুছতে উঠে বসেন এবং সূরাহ আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করেন। এরপর পানির একটি ঝুলন্ত মশকের নিকট গিয়ে তা থেকে খুব ভালভাবে উযু করিলেন। তারপর দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে লাগলেন। আবদুল্লা (রাঃআঃ) বলেন, আমিও উঠে তিনি যা যা করিয়াছেন তা করলাম এবং তাহাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রেখে আমার কান ধরে টানলেন। অতঃপর তিনি দু রাকআত, দু রাকআত, অতঃপর দু রাকআত, দু রাকআত, আবার দু রাকআত এবং আবার দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। বর্ণনাকারী আল-কানাবী বলেন, তিনি এভাবে ছয়বার আদায় করেন। অতঃপর বিতর করে বিশ্রাম নেন। অবশেষে মুয়াযযিন এলে তিনি উঠে সংক্ষেপে দু রাকআত (সুন্নাত) নামাজ আদায় করে বের হলেন এবং (মাসজিদে গিয়ে) ফাজরের নামাজ আদায় করিলেন।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ৩১৭ নামাজে ভারসাম্য বজায় রাখার নির্দেশ

১৩৬৮. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা সাধ্যানুযায়ী (নিয়মিতভাবে) আমল করিবে। কেননা তোমরা বিরক্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ প্রতিদান দেওয়া বন্ধ করেন না। মহান আল্লাহ ঐ আমলকে ভালবাসেন যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা পরিমানে কম হয়। তিনি (সাঃআঃ) কোন আমল করলে তা নিয়মিতভাবে করতেন।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৬৯. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

একদা নাবী (সাঃআঃ)উসমান ইবনি মাযউন (রাঃআঃ)-কে ডেকে পাঠালেন। তিনি এলে নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হেউসমান! তুমি কি আমার সুন্নাতকে এড়িয়ে চলছো? তিনি বলিলেন, না, আল্লাহর শপথ, হে আল্লাহর রসূল! বরং আমি আপনার সুন্নাতেরই প্রত্যাশী। তিনি বললেনঃ আমি (রাতে) ঘুমাই এবং নামাজও আদায় করি, সওম পালন করি এবং ইফতারও করি এবং নারীদেরকে বিবাহও করি। হে উসমান! আল্লাহকে ভয় করো! কেননা তোমার প্রতি তোমার পরিবারের হক আছে, তোমার মেহমানের হক আছে এবং তোমার নিজের শরীরেও হক আছে। কাজেই তুমি সওম পালন করিবে এবং ইফতারও করিবে, নামাজ আদায় করিবে এবং নিদ্রায়ও যাবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৩৭০. আলকামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদাআয়েশা (রাঃআঃ)-কে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, তিনিইবাদাতের জন্য কোনো বিশেষ দিনকে নির্ধারণ করতেন কিনা? তিনি বলিলেন, না। তিনি প্রতিটি আমল নিরবচ্ছিন্নভাবে পালন করতেন। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) যা করতে সক্ষম ছিলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি সেরূপ করতে সক্ষম?

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply