লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ও অন্যান্য দুয়া

লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ও অন্যান্য দুয়া

লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ও অন্যান্য দুয়া >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ৪৫, অনুচ্ছেদঃ (১২০-১৩৬)=১৭টি

অনুচ্ছেদ-১২০ঃ “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” পাঠ করার ফাযীলাত
অনুচ্ছেদ-১২১ঃ তাসবীহ, তাহলীল ও তাক্বদীসের ফাযীলাত
অনুচ্ছেদ-১২২ঃ যুদ্ধের সময় দুয়া
অনুচ্ছেদ-১২৩ঃ আরাফার দিনের দুয়া
অনুচ্ছেদ-১২৪ঃ উমার [রাদি.]-কে শিখানো দুয়া
অনুচ্ছেদ-১২৫ঃ হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী
অনুচ্ছেদ-১২৬ঃ ব্যথা উপশমের দুয়া
অনুচ্ছেদ-১২৭ঃ উম্মু সালামার দুয়া
অনুচ্ছেদ-১২৮ঃ আল্লাহ তাআলার নিকট কোন কথাটি বেশি প্রিয়
অনুচ্ছেদ-১২৯ঃ ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-১৩০ঃ যামীনে আল্লাহর পক্ষ হইতে বিচরণকারী ফেরেশতা প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-১৩১ঃ “লা-হাওলা ওয়ালা কু-ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” –এর ফাযীলাত
অনুচ্ছেদ-১৩২ঃ আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে সু-ধারণা রাখা
অনুচ্ছেদ-১৩৩ঃ আশ্রয় প্রার্থনা প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-১৩৪ সম্পর্ক ছিন্নকারী দুয়া ব্যতীত দুয়া ক্ববূল হওয়া প্রসঙ্গে।
অনুচ্ছেদ-১৩৫ আল্লাহ! আমার শ্রবণ শক্তি দ্বারা আমাকে উপকৃত কর।
অনুচ্ছেদ-১৩৬ সকল সময়েই কল্যাণের ইচ্ছা করিবে

অনুচ্ছেদ-১২০ঃ “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” পাঠ করার ফাযীলাত

৩৫৮১ : ক্বাইস ইবনি সাদ ইবনি উবাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তার বাবা তাকে নাবী [সাঃআঃ] এর সেবার জন্য তাহাঁর কাছে অর্পণ করেন। তিনি বলেন, আমি নামাজরত থাকা অবস্থায় নাবী [সাঃআঃ] আমার কাছ দিয়ে গমন করিলেন। তিনি নিজের পা দিয়ে আমাকে আঘাত [ইশারা] করে বললেনঃ আমি তোমাকে কি জান্নাতের দরজাগুলোর একটি দরজা সম্পর্কে জানাব না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ

اَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّ

“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” [আল্লাহ ব্যতীত অনিষ্ট দূর করার এবং কল্যাণ লাভের কোন শক্তি কারো নেই]।

সহীহঃ সহীহাহ [১৭৪৬] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫৮২ : সাফওয়ান ইবনি সুলাইম হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কোন ফেরেশতাই

لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّ

“লা –হাওলা ওয়ালা কু-ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”

পাঠ না করে ঊর্ধ্বাকাশের দিকে গমন করেন না।

এর সনদ সহীহ মাকতূ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ মাকতু

অনুচ্ছেদ-১২১ঃ তাসবীহ, তাহলীল ও তাক্বদীসের ফাযীলাত

৩৫৮৩ : ইউসাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি ছিলেন হিজরতকারিণী মহিলাদের একজন –তিনি বলেন, আমাদেরকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অবশ্যই তোমরা তাসবীহ

[সুবহানাল্লাহ], তাহলীল [লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ] ও তাক্বদীস [সুব্বুহুন কুদ্দূসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ অথবা সুবহানালা মালিকিল কুদ্দূস]

আঙ্গুলের গিরায় হিসাব করে পড়বে। কেননা এগুলোকে ক্বিয়ামাতের দিন জিজ্ঞাসা করা হইবে এবং কথা বলিতে আদেশ দেয়া হইবে। সুতরাং তোমরা রহমাত [অনুগ্রহের কারণ] সম্পর্কে উদাসীন থেকো না এবং তা ভুলে যেও না।

হাসানঃ সহীহ আবু দাঊদ [১৩৪৫], মিশকাত [২৩১৬], যঈফার [৮৩] নং হাদীসের অধীনে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

অনুচ্ছেদ-১২২ঃ যুদ্ধের সময় দুয়া

৩৫৮৪ : আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, জিহাদ করার সময় নাবী [সাঃআঃ] বলিতেনঃ

اللَّهُمَّ أَنْتَ عَضُدِي وَأَنْتَ نَصِيرِي وَبِكَ أُقَاتِلُ

“হে আল্লাহ! তুমিই আমার বাহুবল, তুমিই আমার সাহায্যকারী এবং তোমার সহযোগিতায় আমি যুদ্ধ করি”।

সহীহঃ আল –কালিমুত তাইয়্যিব [১২৫], সহীহ আবু দাঊদ [২৩৬৬] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-১২৩ঃ আরাফার দিনের দুয়া

৩৫৮৫ : আমর ইবনি শুআইব [রঃ] কর্তৃক পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও তার দাদা হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আরাফাতের দিনের দুয়াই উত্তম দুয়া। আমি ও আমার আগের নাবীগণ যা বলেছিলেন তার মধ্যে সর্বোত্তম কথাঃ

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়া লাহুল হামদু,ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর

“আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই। তিনি এক, তাহাঁর কোন অংশীদার নেই, সার্বভৌমত্ব তারই এবং সমস্ত কিছুর উপর তিনি সর্বশক্তিমান”।

হাসানঃ মিশকাত [২৫৯৮], তালীকুর রাগীব [২/২৪২], সহীহাহ [১৫০৩]। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

অনুচ্ছেদ-১২৪ঃ উমার [রাদি.]-কে শিখানো দুয়া

৩৫৮৬ : উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে [দুয়া] শিখিয়ে বলেনঃ তুমি বল,

اللَّهُمَّ اجْعَلْ سَرِيرَتِي خَيْرًا مِنْ عَلاَنِيَتِي وَاجْعَلْ عَلاَنِيَتِي صَالِحَةً اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ صَالِحِ مَا تُؤْتِي النَّاسَ مِنَ الْمَالِ وَالأَهْلِ وَالْوَلَدِ غَيْرِ الضَّالِّ وَلاَ الْمُضِلِّ

আল্লাহুম্মাজ আল সারিইয়ারিতি খইরান মিন আলানিয়াতি ওয়াজাল আলানিয়াতি সালিহাতান আল্লাহুম্মাজ ইন্নি আসালুকা মিন সালিহি মা তুওতিন নাসা মিনাল মালি ওয়া আহলি ওয়াল ওয়ালাদি গইরিদ দাল্লি ওয়ালাল মুদিল্লি।

“হে আল্লাহ্‌! আমার বাহিরের অবস্থার চেয়ে আমার ভিতরের অবস্থাকে বেশি ভাল কর এবং আমার বাহিরের অবস্থাকেও অতি উত্তম কর। হে আল্লাহ্‌! তুমি মানুষকে যে ধন-দৌলত, পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্তুতি দিয়ে থাক, তাতে আমাকে উত্তমগুলোই দাও, যারা বিপথগামী এবং বিপথগামীকারীও নয়। ”

যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [২৫০৪], আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি এবং এর সনদসূত্র তেমন মজবুত নয়। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

অনুচ্ছেদ-১২৫ঃ হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী

৩৫৮৭ : আসিম ইবনি কুলাইব [রাহঃ] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদা হইতে বর্ণীতঃ

৩৫৮৭. আসিম ইবনি কুলাইব [রাহঃ] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত।

তিনি বলেনঃ আমি রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের] নিকট গেলাম, তখন তিনি নামাজ আদায় করছিলেন। তিনি তার বাম হাত বাম ঊরুর উপর এবং ডান হাত ডান ঊরুর উপর রাখেন এবং তর্জনী উঠিয়ে অবশিষ্ট আঙ্গুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে রেখে বলেনঃ

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ

ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুবি সাবিত কালনি আলা দিনিকা

“হে অন্তরসমূহের ওলট-পালটকারী! তুমি আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর অটল রাখ”।

এই বর্ণনায় হাদীসটি মুনকার, দেখুন হাদীস নং [২৯১, ২৯২, ২১২৮, ৩৩৫০], আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি উক্ত সনদূত্রে গারীব। এই হাদীসটির তাহকিকঃ মুনকার

অনুচ্ছেদ-১২৬ঃ ব্যথা উপশমের দুয়া

৩৫৮৮ :আব্দুল ওয়ারিস ইবনু আব্দিস সামাদ – আবি –>>মুহাম্মাদ ইবনি সালিম [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

সাবিত আল –বুনানী [রঃ] আমাকে বলিলেন, হে মুহাম্মাদ! তোমার কোন অংশে ব্যথা হলে তুমি ব্যথার জায়গায় তোমার হাত রেখে বলঃ

بِسْمِ اللَّهِ أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ

বিস্মিল্লাহি আউজু বি ইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরতিহি মিন সাররি মা আজিদু

“আল্লাহ তাআলার নামে, আমি আল্লাহ তাআলার অসীম সম্মান ও তাহাঁর বিরাট ক্ষমতার নিকট আমার এ ব্যথার অনুভূতি ও অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থণা করি”।

তারপর তোমার হাত তুমি তুলে নাও, পরে পুণরায় ঐ নিয়মে বেজোড় সংখ্যায় উক্ত দুয়া পাঠ কর। কেননা আমাকে আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] বলেছেন যে, তাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঐ দুয়া বলে দিয়েছেন।

সহীহঃ সহীহাহ [১২৫৮] আবু ঈসা বলেন, উক্ত সনদসূত্রে এ হাদীসটি হাসান গারীব। এই মুহাম্মাদ ইবনি সালিম হলেন বাসরার শাইখ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-১২৭ঃ উম্মু সালামার দুয়া

৩৫৮৯ : উম্মু সালামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উম্মু সালামা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে এই দুয়াটি শিখিয়েছেন এবং বলেছেনঃ তুমি পাঠ কর

اللَّهُمَّ هَذَا اسْتِقْبَالُ لَيْلِكَ وَإِدْبَارُ نَهَارِكَ وَأَصْوَاتُ دُعَاتِكَ وَحُضُورُ صَلَوَاتِكَ أَسْأَلُكَ أَنْ تَغْفِرَ لِي

আল্লাহুম্মা হাজাসতিক বালু লাইলিকা ওয়া ইজবারু নাহারিকা ওয়া আসওয়াতু দুয়াতিকা ওয়া হুদুরু সালাওয়াতিকা আন তাগফিরলি

“হে আল্লাহ্‌! এটা তোমার রাত আসার, তোমার দিন চলে যাওয়ার, তোমার দিকে আহবানকারীর [মুয়াজ্জিনের] আওয়াজ দেয়ার এবং তোমার নামাযে হাযির হওয়ার সময়। আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি যে, তুমি আমাকে মাফ করে দাও”।

যঈফ, আল-কালিমুত-তায়্যির [৭৬/৩৫], যঈফ আবু দাঊদ [৮৫], মিশকাত [৬৬৯] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা এ হাদীস শুধু উপরোক্ত সনদে জেনেছি। হাফছা বিনতি আবু কাসীর ও তার পিতা প্রসঙ্গে আমরা অবহিত নই। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৫৯০ : আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন বান্দা সততার সাথে

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

“লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ”

বললে তার জন্য আকাশের দ্বারগুলো খোলা হয়। ফলে উক্ত কালিমাহ আরশে আজীম পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যতক্ষণ সে কবীরাহ গুনাহ ত্যাগ করে”।

হাসানঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী [২৩১৪], তালীকুর রাগীব [২/২৩৮] এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৫৯১ : যিয়াদ ইবনি ইলাক্বাহ [রঃ] হইতে তার চাচা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলিতেনঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ ‏

আল্ল-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন্ মুনকারা-তিল আখলা-কি, ওয়াল আমা-লি, ওয়াল আহ্ওয়া-য়ি

“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে গর্হিত চরিত্র, গর্হিত কাজ ও কু-প্রবৃত্তি হইতে আশ্রয় চাই”।

সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী [২৪৭১] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫৯২ : ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে নামাজ পড়ছিলাম। সে সময় সমাগত লোকদের মাঝে হইতে এক লোক বলিল,

اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا وَسُبْحَانَ اللَّهِ بُكْرَةً وَأَصِيلاً

আল্ল-হু আকবার কাবীরা-ওয়াল হাম্‌দুলিল্লা-হ কাসীরা-ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি বুকরাতান্‌ ওয়া আসীলা

“আল্লাহ মহান, অতি মহান, আল্লাহ তাআলার জন্য অনেক অনেক প্রশংসা এবং সকাল-সন্ধ্যা আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি”।

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এই এই কথা কে বলেছে? উপস্থিত লোকদের মাঝে এক লোক বলিল, আমি হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ এ দুয়ায় আমি খুব আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। এ বাক্যগুলোর জন্য আকাশের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে আমি এ কথা শুনার পর থেকে কখনো তা পাঠ করা পরিহার করিনি।

সহীহঃ সিফাতুস নামাজ [৭৪], মুসলিম . এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-১২৮ঃ আল্লাহ তাআলার নিকট কোন কথাটি বেশি প্রিয়

৩৫৯৩ : আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে দেখিতে যান অথবা তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে দেখিতে যান। আবু যার [রাদি.] বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। আল্লাহ তাআলার নিকট কোন কথা বেশি প্রিয়? তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাহাঁর ফেরেশতাহাদের জন্য যে বাক্যটি নির্বাচন করেছেনঃ

سُبْحَانَ رَبِّي وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ رَبِّي وَبِحَمْدِهِ

“সুবাহানা রাব্বী ওয়া বিহামদিহী সুবহানা রাব্বী ওয়া বিহামদিহী”

[আমার পালনকর্তা অতীব পবিত্র, সকল প্রশংসা তাহাঁর জন্য, আমার পালনকর্তা অতীব পবিত্র, সকল প্রশংসা তাহাঁর জন্য]

সহীহঃ তালীকুর রাগীব [২/২৪২], সহীহাহ [১৪৯৮], মুসলিম এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-১২৯ঃ ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে

৩৫৯৪ : আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “আযান ও ইক্বামাতের মাঝের সময়ের দুয়া প্রত্যাখ্যাত হয় না”। সাহাবাগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! [ঐ সময়ে] আমরা কি বলব? তিনি বললেনঃ “তোমরা আল্লাহর নিকট ইহকাল ও পরকালের নিরাপত্তা প্রার্থনা কর”।

এই পূর্ণাঙ্গ বর্ণনাটি মুনকারঃ আল–কালিমুত তাইয়্যিব [৪৭/৫১], ইরওয়াহ [১/২৬২], নাক্বদুত তাজ [৯৫], তালীকুর রাগীব [১/১১৫], সহীহ আবু দাঊদ [৫৩৪]। তবে “সালুল্লাহা….” বর্ণনাটি অন্য হাদীসে সাব্যস্ত আছে। ৩২৮৩ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত রয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। সাহাবাগণ বললেনঃ আমরা কি বলব….. শেষ পর্যন্ত এই অংশটি ইয়াহইয়া ইবনিল ইয়ামান বর্ধিত করিয়াছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ মুনকার

৩৫৯৫ : আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দুয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না।

সহীহঃ ২১২ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫৯৬: আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ হালকা-পাতলা লোকেরা অগ্রগামী হয়ে গেছে। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! হালকা-পাতলা লোক কারা? তিনি বলেনঃ যে সকল লোক আল্লাহ্‌ তাআলার স্মরণে নিমগ্ন থাকে এবং আল্লাহ্‌র যিকির [স্মরণ] তাহাদের [পাপের] ভারী বোঝাটি তাহাদের হইতে সরিয়ে ফেলে। ফলে কিয়ামাতের দিন তারা আল্লাহ্‌ তাআলার সম্মুখে হালকা বোঝা নিয়েই হাযির হইবে।

যঈফ, যঈফা [৩৬৯০], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৫৯৭ : আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ

 سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ

“সুবহানাল্লাহ ওয়াল-হামদু লিল্লাহ ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার”

[আল্লাহ অতীব পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ] বলা আমার কাছে যে সকল জিনিসের উপর সূর্য উদিত হয় তা হইতে বেশি পছন্দনীয়।

সহীহঃ মুসলিম [৮/৭০] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫৯৮ : আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিন ধরনের লোকের দুয়া কখনও ফিরিয়ে দেয়া হয় না। রোযাদার যতক্ষণ ইফতার না করে, সুবিচারক শাসকের দুয়া এবং মজলুমের [নির্যাতিতের] দুয়া। আল্লাহ্‌ তাআলা ঐ দুয়াগুলি মেঘমালার উপরে [আকাশের] তুলে নেন এবং এর জন্য আকাশের দ্বারগুলো খুলে দেয়া হয়। রব্বুল আলামীন বলেনঃ আমার মর্যাদার শপথ ! আমি নিশ্চয়ই তোমার সাহায্য করব কিছু দেরি হলেও।

দুর্বল, কিন্তু হাদীসের প্রথম অংশ সহীহ, আর তাতে ন্যায় পরায়ন শাসকের পরিবর্তে মুসাফির শব্দ আছে। আরেক বর্ণনায় পিতার উল্লেখ আছে। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৭৫২]। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। সাদান আল-কুম্মী হলেন সাদান ইবনি বিশর। ঈসা ইবনি ইউনুস, আবু আসিম প্রমুখ বয়স্ক হাদীস বিশারদগণ তার সূত্রে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবু মুজাহিদ হলেন সাদ আত-তাঈ এবং আবু মুদিল্লাহ হলেন উম্মুল মুমিনীন আইশা [রাদি.]-এর স্বাধীন গোলাম। আমরা শুধু এ হাদীসের মাধ্যমেই তার পরিচয় পেয়েছি এবং তার হইতে এ হাদীসটি আরো বর্ধিত ও সম্পূর্ণভাবে বর্ণিত হয়েছে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৩৫৯৯ : আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ

اللَّهُمَّ انْفَعْنِي بِمَا عَلَّمْتَنِي وَعَلِّمْنِي مَا يَنْفَعُنِي وَزِدْنِي عِلْمًا الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ حَالِ أَهْلِ النَّارِ

আল্লাহুম্মান ফা’নি বিমা আল্লামতানি ওয়া আল্লিমনি মা ইয়ানফাউনি ওয়া জিদনি ইলমাল হামদুলিল্লাহি আলা কুল্লি হালিন ওয়া আউজু বিল্লাহি মিন আজাবান নার

হে আল্লাহ! আমাকে তুমি যা শিখিয়েছ তা দিয়ে আমাকে উপকৃত কর, আমার জন্য যা উপকারী হইবে তা আমাকে শিখিয়ে দাও এবং আমার ইলম [জ্ঞান] বাড়িয়ে দাও। সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা এবং আমি জাহান্নামীদের অবস্থা থেকে হিফাযাতের জন্য আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থণা করি।

হাদীসে বর্ণিত আলহামদুলিল্লাহ ….. অংশ বাদে হাদীসটি সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[হাঃ ২৫১, ৩৮৩৩] আবু ঈসা বলেন, উপর্যুক্ত সনদে এ হাদীসটি গারীব। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-১৩০ঃ যামীনে আল্লাহর পক্ষ হইতে বিচরণকারী ফেরেশতা প্রসঙ্গে

৩৬০০ : আবু হুরাইরাহ্ অথবা আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মানুষের আমালনামা লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতাগণ ছাড়া আল্লাহ তাআলার আরও কিছু ফেরেশতা আছেন যারা দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ান। তারা আল্লাহ তাআলার যিকরে রত ব্যক্তিদের পেয়ে গেলে একে অন্যকে ডেকে বলেন, নিজেদের উদ্দেশ্যে তোমরা এদিকে চলে এসো। অতএব তারা সেদিকে ছুটে আসেন এবং যিকরে রত লোকদের পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশ পর্যন্ত পরিবেষ্টন করে রাখেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা সে সময় [ফেরেশতাহাদের] বলেন, আমার বান্দাদেরকে তোমরা কি কাজে রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছ? ফেরেশতারা বলেন, আমরা তাহাদেরকে আপনার প্রশংসারত, আপনার মর্যাদা বর্ণনারত এবং আপনার যিকরে রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তাহাদেরকে আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা আমাকে দেখেছে কি? তারা বলেন, না। নাবী বলেনঃ আল্লাহ তাআলা পুণরায় প্রশ্ন করেন, তারা আমাকে দেখলে কেমন হত? ফেরেশতারা বলেন, তারা আপনার দর্শন পেলে আপনার অনেক বেশি প্রশংসাকারী, অধিক মাহাত্ম্য বর্ণনাকারী এবং অধিক যিকরকারী হত। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাহাদের আবারও বলেন, আমার কাছে তারা কি চায়? ফেরেশতারা বলেন, আপনার নিকট তারা জান্নাত পেতে চায়। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা প্রশ্ন করেন, তারা তা দেখেছে কি? ফেরেশতারা বলেন, না। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা তাহাদেরকে প্রশ্ন করেন, তারা তা প্রত্যক্ষ করলে কেমন হত? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ ফেরেশতাগণ বলেন, তারা জান্নাতের দর্শন পেলে তা পাওয়ার আরও অধিক প্রার্থনা করত, আরো বেশি আকাঙ্ক্ষা করত। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা আবারও প্রশ্ন করেন, তারা কোন বস্তু থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে? ফেরেশতারা বলেন, তারা জাহান্নাম হইতে আশ্রয় প্রার্থণা করে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা তা দেখেছে কি? ফেরেশতারা বলেন, না। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা তা প্রত্যক্ষ করলে কেমন হত? ফেরেশতারা বলেন, তারা তা প্রত্যক্ষ করেলে তা থেকে আরো অধিক পালিয়ে যেত, আরো বেশি ভয় করত এবং তা থেকে বাঁচার জন্য বেশি বেশি আশ্রয় প্রার্থণা করত। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদেরকে আমি সাক্ষী করছি যে, আমি তাহাদেরকে মাফ করে দিলাম। তখন ফেরেশতারা বলেন, তাহাদের মাঝে এমন এক লোক আছে যে তাহাদের সঙ্গে একত্র হওয়ার জন্য আসেনি, বরং ভিন্ন কোন দরকারে এসেছে। সে সময় আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা এরূপ একদল ব্যক্তি যে, তাহাদের সাথে উপবেশনকারী-ও বঞ্চিত হয় না।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-১৩১ঃ “লা-হাওলা ওয়ালা কু-ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” –এর ফাযীলাত

৩৬০১ : আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমাকে মহানাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি

لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّ

“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”

বেশি বেশি বল। কেননা, তা জান্নাতের রত্নভান্ডারের অন্তর্ভূক্ত। মাকহূল [রঃ] বলেন, যে লোক

 لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ وَلاَ مَنْجَا مِنَ اللَّهِ إِلاَّ إِلَيْهِ

“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ওয়ালা মানজায়া মিনাল্লাহি ইল্লা ইলাইহি”

পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তার হইতে সত্তর প্রকারের অনিষ্ট অপসারণ করেন এবং এগুলোর মাঝে সাধারণ বা ক্ষুদ্র বিপদ হল দরিদ্রতা।

মাকহুলের উক্তি “ফামান ক্বালা …..” এই অংশ ব্যতীত হাদীসটি সহীহ কেননা ঐ অংশ মাক্বতূ সহীহাহ [১০৫, ১৫২৮] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসের সনদসূত্র মুত্তাসিল [পরস্পর সংযুক্ত] নয়। মাকহূল [রঃ]  আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে হাদীস রিওয়ায়াত করেননি। এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৬০২ : আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিটি নাবীরই একটি দুয়া আছে যা ক্ববূল হয়। আমার উক্ত দুয়া [ক্বিয়ামাতের দিন] আমি আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য সংরক্ষিত রেখেছি। ইনশাআল্লাহ সেই দুয়াটি সে লোক পাবে যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার সঙ্গে অন্য কিছুকে অংশীদার করেনি।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ . এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-১৩২ঃ আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে সু-ধারণা রাখা

৩৬০৩ : আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, আমাকে আমার বান্দা যেভাবে ধারণা করে আমি [তার জন্য] সে রকম। যখন সে আমাকে মনে করে সে সময় আমি তার সঙ্গেই থাকি। সুতরাং সে আমাকে মনে মনে স্মরণ করলে তাকে আমিও মনে মনে স্মরণ করি। আমাকে সে মাজলিসে স্মরণ করলে আমিও তাকে তাহাদের চাইতে ভাল মজলিসে [ফেরেশতাহাদের মাজলিসে] মনে করি। সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে এলে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে, তবে তার দিকে আমি এক বাহু এগিয়ে যাই। সে আমার দিকে হেটে অগ্রসর হলে আমি তার দিকে দৌঁড়িয়ে এগিয়ে যাই।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩৮২২], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-১৩৩ঃ আশ্রয় প্রার্থনা প্রসঙ্গে

৩৬০৪ : আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকটে জাহান্নামের শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থণা কর, আল্লাহ তাআলার নিকট তোমরা ক্ববরের শাস্তি হইতে মুক্তি কামনা কর, তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে মসীহ দাজ্জালের যুলম হইতে মুক্তি চাও, তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকট জীবন ও মুত্যর বিপর্যয় হইতে আশ্রয় প্রার্থনা কর।

সনদ সহীহঃ মুসলিম [২/৯৩], তাশাহুদের বর্ণনার সাথে আরেক বর্ণনায় শেষ তাশাহুদে” এই কথা উল্লেখ আছে। সিফাতুস নামাজ [১৬৩] আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।

৩৬০৪/১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে যে,

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে তিনবার বলে,

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

আঊযু বিকালিমাতিল্ লা-হিত্ তা-ম্মা-তি মিন্ শার্রি মা- খলাক্

“আল্লাহ তাআলার নিকট আমি তাহাঁর সম্পূর্ণ কালামের ওয়াসীলায় আশ্রয় প্রার্থনা করি, সে সকল অনিষ্ট হইতে, যা তিনি সৃষ্টি করিয়াছেন”,

ঐ রাতে কোন বিষ তার অনিষ্ট করিতে পারবে না। সুহাইল [রঃ] বলেন, আমার পরিবারের লোকেরা এই দুয়া শিখে তা প্রতি রাতে পড়ত। একদিন তাহাদের একটি মেয়ে দংশিত হয়, কিন্তু তাতে সে কোন যন্ত্রণা অনুভব করেনি।

সহীহঃ তালীকুর রাগীব [১/২২৬], মুসলিম সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। মালিক ইবনি আনাস [রঃ] এ হাদীস সুহাইল ইবনি আবী সালিহ্ হইতে, তিনি তাহাঁর বাবা হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সনদে রিওয়ায়াত করিয়াছেন। এ হাদীস উবাইদুল্লাহ ইবনি উমার প্রমুখ সুহাইল [রঃ] হইতে রিওয়ায়াত করিয়াছেন, কিন্তু তাতে আবু হুরাইরা [রাদি.] এর উল্লেখ করেননি।

৩৬০৪/২. আবু হুরাইরা [রাদি.] বলেনঃ

আমি রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের] নিকট হইতে একটি দুয়া আয়ত্ত করেছি, যা আমি কখনও বাদ দেই নাঃ

اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي أُعَظِّمُ شُكْرَكَ وَأُكْثِرُ ذِكْرَكَ وَأَتَّبِعُ نَصِيحَتَكَ وَأَحْفَظُ وَصِيَّتَكَ

আল্লাহুম্মাজ আলনি উয়াজ্জিমু সুকরাকা ওয়া উকছিরু জিকরাকা ওয়া আত্তাবিয়ু নাসিহাতাকা ওয়া আহফাজু ওয়া সিয়য়াতাক

“হে আল্লাহ! তুমি আমাকে বেশি পরিমাণে তোমার প্রতি শুকরিয়া প্রকাশকারী, তোমাকে অধিক স্মরণকারী, তোমার নাসিহাতের অনুসারী এবং তোমার ওয়াসিয়াত [নির্দেশ] স্মরণকারী বানাও”।

যইফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [২৪৯৯], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব।

অনুচ্ছেদ-১৩৪ সম্পর্ক ছিন্নকারী দুয়া ব্যতীত দুয়া ক্ববূল হওয়া প্রসঙ্গে।

৩৬০৪/৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে যে,

তিনি বলেন, মহানাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে কোন ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কোন দুয়া করলে তার দুয়া ক্ববূল হয়। হয়তোবা সে দুনিয়াতেই তার ফল পেয়ে যায় অথবা তা তার আখিরাতের পাথেয় হিসেবে জমা রাখা হয় অথবা তার দুয়ার সম-পরিমাণ তার গুনাহ মাফ করা হয়, যতক্ষণ না সে পাপ কাজের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দুয়া করে অথবা দুয়া ক্ববূলের জন্য তাড়াতাড়ি করে। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াতাড়ি করে কিভাবে? তিনি বলেনঃ সে বলে, আমি আমার আল্লাহর নিকটে দুয়া করেছিলাম, কিন্তু আমার দুয়া তিনি ক্ববূল করেননি।

“হয়তোবা তার দুয়ার সমপরিমাণ গুনাহ মাফ করা হয়” এই অংশ ব্যতীত হাদীসটি সহীহ। যঈফাহ [হাঃ ৪৪৮৩]

আবু ঈসা বলেন, উপর্যুক্ত সূত্রে এ হাদীসটি গারীব।

৩৬০৪/৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে যে,

মহানাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে সময় কোন বান্দা তার দুই হাত উপরের দিকে উত্তোলন করে, এমনকি তার বগল খুলে আল্লাহর নিকটে কিছু প্রার্থনা করে, তখন তিনি অবশ্যই তাকে তা দেন, যদি সে তাড়াহুড়া না করে। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! তার তাড়াহুড়া কি? তিনি বললেনঃ সে বলে, আমি তো প্রার্থনা করছি, আবারও প্রার্থনা করেছি [অধিকবার প্রার্থনা করছি], কিন্তু আমাকে কিছুই দান করা হয়নি।

“হাত উত্তোলন” অংশ ব্যতীত হাদীসটি সহীহঃ প্রাগুক্ত, মুসলিম অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীসটি যুহরী [রঃ] ইবনি আযহারের মুক্তদাস আবু উবাইদ হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সনদে রিওয়ায়াত করিয়াছেন। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের যে কারো দুয়া ক্ববূল হয়ে থাকে, যতক্ষণ না সে তড়িঘড়ি করে এবং বলে, আমি দুয়া করলাম কিন্তু ক্ববূল তো হল না। সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ।

অনুচ্ছেদ-১৩৫ আল্লাহ! আমার শ্রবণ শক্তি দ্বারা আমাকে উপকৃত কর।

৩৬০৪/৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে,

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আলাহ তাআলা প্রসঙ্গে ভাল উপলব্ধি পোষণও আল্লাহ্‌র উত্তম ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত।

যঈফ, যঈফা [৩১৫০], আবু ঈসা বলেনঃ উক্ত সনদসূত্রে এ হাদীসটী গারীব।

অনুচ্ছেদ-১৩৬ সকল সময়েই কল্যাণের ইচ্ছা করিবে

৩৬০৪/৬. আবু সালামা ইবনি আবদুর রহমান [রাদি.] হইতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত আছে,

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের যে কেউ অবশ্যই লক্ষ্য রাখবে যে, সে কি [পাওয়ার] ইচ্ছা করছে। যেহেতু সে জানেনা যে, তার চাওয়ার ভিত্তিতে তার জন্য কি লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে [তাই সর্বদা উত্তম ধারণা ও উত্তম কিছু চাইতে হইবে]।

দুর্বল, যঈফা [৪৪০৫], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান।

৩৬০৪/৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে,

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিতেনঃ

اللَّهُمَّ مَتِّعْنِي بِسَمْعِي وَبَصَرِي وَاجْعَلْهُمَا الْوَارِثَ مِنِّي وَانْصُرْنِي عَلَى مَنْ يَظْلِمُنِي وَخُذْ مِنْهُ بِثَأْرِي 

আল্লাহুম্মা মাত্তিনি বিসামইয় ওয়া বাসারি, ওয়া জায়ালহুমাল ওয়া রিসা মিন্নি ওয়ানসুরনি আলা মান ইয়াজলিমুনি ওয়া খুজু মিনহু ছারিয়

“হে আল্লাহ! আমার কর্ণ ও চক্ষুর মাধ্যমে আমাকে উপকৃত কর এবং এ দুটোকে আমার উত্তরাধিকারী কর [মৃত্যু পর্যন্ত অটুট রাখ], যে লোক আমার উপর অত্যাচার করে তার বিরুদ্ধে আমায় তুমি সহযোগিতা কর এবং তার হইতে তুমি আমার প্রতিশোধ গ্রহণ কর”।

হাসানঃ রাওযুন নাযীর [১৯০] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি উক্ত সনদসূত্রে হাসান গারীব।

৩৬০৪/৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে,

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই যেন তার প্রতিটি অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে তার রবের নিকটে প্রার্থনা করে, এমনকি তার জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলে তাও যেন তাহাঁর নিকটে চায়।

যঈফ, যঈফা [১৩৬২] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। একাধিক রাবী এ হাদীস জাফর ইবনি সুলাইমান হইতে তিনি সাবিত আল-বুনানী হইতে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু তাতে তারা আনাস [রাদি.]-এর উল্লেখ করেননি।

৩৬০৪/৯. সাবিত আল-বুনানী [রাহঃ] হইতে বর্ণিত আছে,

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের সকলেই যেন তার অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে তার রবের নিকটে প্রার্থনা করে, এমনকি তার লবণের জন্যও, এমনকি তার জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলে তার জন্যও তাহাঁর নিকটে প্রার্থনা করে।

যঈফ, প্রাগুক্ত আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি কাতান হইতে জাফর ইবনি সুলাইমান-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসের তুলনায় বেশি সহীহ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply