আল্লাহ তায়ালার জিকির তাওবাহ ও সকল দুয়ার সমাহার

আল্লাহ তায়ালার জিকির তাওবাহ ও সকল দুয়ার সমাহার

আল্লাহ তায়ালার জিকির তাওবাহ ও সকল দুয়ার সমাহার >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ৪৫, অনুচ্ছেদঃ (৭৯-১০০)=২২টি

অনুচ্ছেদ-৭৯ঃ [আল্লাহ্‌ তাআলা প্রতি রাতে পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন]
অনুচ্ছেদ-৮০ঃ [আল্লাহ্‌! নির্দয় লোককে আমাদের শাসক পদে নিয়োগ করো না]
অনুচ্ছেদ-৮১ঃ আলী [রাদি.]- কে শিখানো দুয়া
অনুচ্ছেদ-৮২ঃ [দুয়া ইউনুস]
অনুচ্ছেদ-৮৩ঃ [আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীনের নিরানব্বই নাম]
অনুচ্ছেদ-৮৪ঃ [ বিপদে নিপতিত অবস্থায় পাঠ করার দুয়া]
অনুচ্ছেদ-৮৫ঃ [পৃথিবী ও আখিরাতের শান্তি ও হিফাযত আশা করা]
অনুচ্ছেদ-৮৬ঃ [ভোরে উপনীত হয়ে মানুষ নিজেকে বিক্রয় করে]
অনুচ্ছেদ-৮৭ঃ তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীরের ফাযীলাত
অনুচ্ছেদ-৮৮ঃ আরাফাতে দুপুরের পর পাঠের দুয়া
অনুচ্ছেদ-৮৯ঃ সকল দুয়ার সমাহার
অনুচ্ছেদ-৯০ঃ [রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বেশী বেশী যে দুয়া পাঠ করিতেন]
অনুচ্ছেদ-৯২ঃ [কঠিন কাজ হাযির হলে যে দুয়া পাঠ করিবে]
অনুচ্ছেদ-৯৩ঃ ঘুম না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার যিকির করার ফাযীলত
অনুচ্ছেদ-৯৪ঃ [ঘুমের মধ্যে আতংকিত হলে যা পড়বে]
অনুচ্ছেদ-৯৫ঃ {আবু বাক্‌র [রাদি.] কে শিখানো দুয়া}
অনুচ্ছেদ-৯৬; [আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক আত্মমর্যাদাবোধের অধিকারী]
অনুচ্ছেদ-৯৭; [নিজের উপর অনেক অত্যাচার করেছি]
অনুচ্ছেদ-৯৮ঃ [গুনাহ ঝরে পরা]
অনুচ্ছেদ-৯৯ঃ তাওবাহ ও ক্ষমা প্রার্থনার ফাযীলাত এবং বান্দাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহ প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-১০০ঃ আল্লাহ তাআলা একশত রাহমাত সৃষ্টি করিয়াছেন

অনুচ্ছেদ-৭৯ঃ [আল্লাহ্‌ তাআলা প্রতি রাতে পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন]

৩৪৯৮ : আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকতে আমাদের প্রভু দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। অতঃপর তিনি বলেন,

“আমার কাছে যে দুয়া করিবে তার দুয়া আমি কবুল করব। যে ব্যক্তি আমার নিকট [কিছু] প্রার্থনা করিবে আমি তাকে তা দান করব। যে ব্যক্তি আমার নিকট মাফ চাইবে আমি তাকে মাফ করে দিব।

সহীহঃ বুখারি ও মুসলিম, ৪৪৬ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪৯৯ : আবু উমামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, বলা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! কোন সময়ের দুয়া বেশী [শোনা] গ্রহণযোগ্য হয়? তিনি বলিলেন, শেষ রাতের মাঝ ভাগের এবং ফরয নামাজ গুলোর পরবর্তী দুয়া।

হাসানঃ তালিকুর রাগীব [হাঃ ২/২৭৬], আল –কালিমুত তাইয়্যিব [হাঃ ১১৩/৭০], তাহকিক সানী। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৫০০ : আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি বলিল, ইয়া রসুলুল্লাহ! আজ রাতে আমি আপনার দুয়া শুনিয়াছি। আমি তা হইতে যা মনে রাখতে পেরেছি তা এই যে, আপনি বলেছেনঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي وَوَسِّعْ لِي فِي رِزْقِي وَبَارِكْ لِي فِيمَا رَزَقْتَنِي

আল্লাহুম্মাগফিরলী, জানবি ওয়া অয়াসসা,লি ফি রিজকি ওয়া বারিকলি ফিমা রাজাকতানি

“হে আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ করে দাও, আমার ঘর প্রশস্ত কর এবং তুমি আমাকে যে রিযিক দিয়েছ তাতে বারকাত দান কর”।

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি কি মনে কর যে, এ দুয়া কিছু বাদ দিয়েছে।

যঈফ, দুয়াটি হাসান। রাওযুন নাযীর [১১৬৭], গায়াতুল মারাম [১১২] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আবু সালীমের নাম যুরাইব, পিতা নুকাইর অথবা নুফাইর। এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৫০১ : আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি সকাল বেলায় উপনীত হয়ে বলেঃ

اللَّهُمَّ أَصْبَحْنَا نُشْهِدُكَ وَنُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ وَمَلاَئِكَتَكَ وَجَمِيعَ خَلْقِكَ بِأَنَّكَ الله لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُولُكَ

আল্ল-হুম্মা আসবাহনা- নুশহিদুকা, ওয়া নুশহিদু হামালাতা আরশিকা, ওয়া মালা-য়িকাতাকা, ওয়া জামীআ খলক্বিকা, বি আন্‌নাকাল্ল-হু, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু আন্‌তা ওয়াহদাকা, লা- শারীকা লাকা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুকা ওয়া রসূলুকা

হে আল্লাহ! আমরা ভোরে উপনীত হলাম, আমরা তোমাকে সাক্ষী বানালাম, আরও সাক্ষী বানালাম তোমার আরশ বহনকারীদেরকে এবং তোমার ফেরেশতাগণকে ও তোমার সকল সৃষ্টিকে এই বিষয়ে যে, তুমিই আল্লাহ, তুমি আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, তুমি এক, তোমার কোন অংশীদার নেই এবং মুহাম্মাদ তোমার বান্দা ও রাসূল”,

আল্লাহ তাআলা তার সে দিনে সম্পাদিত সকল গুনাহ মাফ করে দেন। আর সে যদি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে ঐ কথা বলে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার সেই রাতের কৃত সকল গুনাহ মাফ করে দেন।

যঈফ, আলকালিমুত তায়্যিব [২৫], মিশকাত তাহকীক ছানী [২৩৯৮], যঈফা [১০৪১], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

অনুচ্ছেদ-৮০ঃ [আল্লাহ্‌! নির্দয় লোককে আমাদের শাসক পদে নিয়োগ করো না]

৩৫০২ : ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিম্নোক্ত বাক্যে তাহাঁর সাহাবীগণের জন্য দুয়া না করে হঠাৎ মাজলিস হইতে খুব কমই বিদায় হইতেনঃ

 اللَّهُمَّ اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا يَحُولُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيكَ وَمِنْ طَاعَتِكَ مَا تُبَلِّغُنَا بِهِ جَنَّتَكَ وَمِنَ الْيَقِينِ مَا تُهَوِّنُ بِهِ عَلَيْنَا مُصِيبَاتِ الدُّنْيَا وَمَتِّعْنَا بِأَسْمَاعِنَا وَأَبْصَارِنَا وَقُوَّتِنَا مَا أَحْيَيْتَنَا وَاجْعَلْهُ الْوَارِثَ مِنَّا وَاجْعَلْ ثَأْرَنَا عَلَى مَنْ ظَلَمَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى مَنْ عَادَانَا وَلاَ تَجْعَلْ مُصِيبَتَنَا فِي دِينِنَا وَلاَ تَجْعَلِ الدُّنْيَا أَكْبَرَ هَمِّنَا وَلاَ مَبْلَغَ عِلْمِنَا وَلاَ تُسَلِّطْ عَلَيْنَا مَنْ لاَ يَرْحَمُنَا

আল্লা-হুম্মাক্বসিম লানা মিন খাশ্য়্যাতিকা মা তাহূলু বিহী বাইনানা অবাইনা মা‘আ-স্বীক, অমিন ত্বা-‘আতিকা মা তুবাল্লিগুনা বিহী জান্নাতাক, অমিনাল য়্যাক্বীনি মা তুহাউবিনু বিহী আলাইনা মাস্বা-ইবাদ দুন্য়্যা। আল্লাহুম্মা মাত্তি‘না বিআসমা-‘ইনা অ আবস্বা-রিনা অ ক্বুউওয়াতিনা মা আহয়্যাইতানা, অজ্‘আলহুল ওয়া-রিসা মিন্না। অজ‘আল সা’রানা আলা মান যালামানা, অনস্বুরনা ‘আলা মান ‘আ-দা-না, অলা তাজ‘আল মুস্বীবাতানা ফী দীনিনা। অলা তাজ‘আলিদ্দুন্য়্যা আকবারা হাম্মিনা অলা মাবলাগা ‘ইলমিনা, অলা তুসাল্লিত্ব ‘আলাইনা মাল লা য়্যারহামুনা।

“হে আল্লাহ্‌! আমাদের মাঝে তুমি এতো পরিমাণ আল্লাহ্‌ভীতি ভাগ কর যা আমাদের মাঝে ও তোমার প্রতি অবাধ্যচারী হওয়ার মাঝে বাধা হইতে পারে এবং আমাদের মাঝে তোমার প্রতি আনুগত্য এতো পরিমাণ প্রদান করো যার দ্বারা তুমি আমাদেরকে তোমার জান্নাতে পৌঁছে দিবে, এতটা দৃঢ় প্রত্যয় প্রদান কর যার মাধ্যমে তুমি পৃথিবীর যে কোন অনিষ্ট আমাদের জন্য সহজসাধ্য করিবে, যতক্ষণ আমাদের তুমি জীবিত রাখ ততক্ষণ আমাদের কর্ণ, আমাদের চক্ষু ও আমাদের শক্তি –সামর্থ্য দিয়ে আমাদের জীবনোপকরণ দান কর [কিংবা আমাদের চোখ –কান মৃত্যু পর্যন্ত তাজা ও সুস্থ রাখ], আর তাকে আমাদের উত্তরাধিকার বানিয়ে দাও। আমাদের উপর যে যুল্‌ম করে তার প্রতি আমাদের প্রতিশোধ সুনির্ধারিত কর, আমাদের প্রতি যে দুশমনি করে তার বিরুদ্ধে আমাদেরকে সহযোগিতা কর, আমাদের ধর্ম পালনে আমাদের বিপদাক্রান্ত করো না , দুনিয়া অর্জনকে আমাদের ও আমাদের জ্ঞানের উদ্দেশে রুপান্তর করোনা এবং আমাদের প্রতি যে দয়া করিবে না তাকে আমাদের উপর প্রভাবশালী [শাসক নিয়োগ] করো না”।

হাসানঃ আল-কালিমুত তাইয়িব [হাঃ ২২৫/১৬৯], মিশকাত তাহক্কিক সানী [হাঃ ২৪৯২] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব । এ হাদীসটি কিছু বর্ণনাকারী খালিদ ইবনি আবী ইমরান হইতে, তিনি নাফি হইতে, তিনি ইবনি উমার [রাদি.] হইতে এই সনদে রিওয়ায়াত করিয়াছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৫০৩ : মুসলিম ইবনি আবু বাকারাহ্‌ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আমার পিতা আমাকে বলিতে শুনলেনঃ

اللَّهُمَّ، إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْكَسَلِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ 

আল্ল-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল কাসালি ওয়া আজাবাল কবর

“হে আল্লাহ্‌! তোমার কাছে আমি দুশ্চিন্তা , অলসতা ও কবরের শাস্তি হইতে আশ্রয় প্রার্থনা করি”।

তিনি বলিলেন, হে প্রিয় বৎস! এটা তুমি কার নিকট শুনেছ? আমি বললাম, আমি এ বাক্য গুলো আপনাকেই বলিতে শুনিয়াছি। তিনি বলিলেন, তোমার জন্য এগুলোকে আবশ্যকীয় করে নাও। কেননা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] –কে আমি এ শব্দগুলো বলিতে শুনিয়াছি।

সানাদ সহীহ। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৮১ঃ আলী [রাদি.]- কে শিখানো দুয়া

৩৫০৪ : আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ আমি কি তোমাকে কিছু বাক্য শিখিয়ে দিব না, যেগুলো তুমি বললে আল্লাহ তাআলা তোমাকে মাফ করবেন, যদিও তুমি ক্ষমতাপ্রাপ্ত। তিনি বলিলেন, তুমি বলঃ

 لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

লা ইলা-হা ইল্লা ল্লাহুল আলিয়্যুল আজিমু লা ইলা-হা ইল্লা হুয়াল হালিমুল কারিমু, লা ইলা-হা ইল্লাহু সুবহানাল্লাহি রব্বিল রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম

“আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তিনি অতি সম্মান সম্পন্ন, অতি মহান। আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি অতি সহনশীল, অতি দয়ালু। আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি অতি পবিত্র, তিনি মহান আরশের মালিক”।

আলী ইবনি খাশরাম [রঃ] বলেনঃ আলী ইবনি হুসাইন ওয়াকিদ তাহাঁর পিতার সূত্রে আমাদের নিকট একই রকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, তবে তিনি হাদীসের শেষে বলেছেনঃ আলহামদু লিল্লাহে রব্বিল আলামীন [সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক]।

যঈফ, রাওযুন নাযীর [৬৭৯-৭১৭], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু আবু ইসহাক-আল-হারিস-আলী [রাদি.] সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

অনুচ্ছেদ-৮২ঃ [দুয়া ইউনুস]

৩৫০৫ : সাদ ইবনি আবী ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলার নাবী যুন- নুন {ইউনুস [আঃ]} মাছের পেটে থাকাকালে যে দুয়া করেছিলেন তা হল,

لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায-যা-লিমীন

“ তুমি ব্যতিত কোন মাবূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র। আমি নিশ্চয়ই যালিমদের দলভুক্ত”- [সূরা আম্বিয়া ৮৭]।

যে কোন মুসলিম লোক কোন বিষয়ে কখনো এ দুয়া করলে অবশ্যই আল্লাহ্‌ তাআলা তার দুয়া কবুল করেন।

সহীহঃ আল- কালিমুত, তাইয়্যিব [হাঃ ১২২/৭৯], তা লিকুর রাগীব [২/২৭৫, ৩/৪৩] , মিশকাত তাহক্কিক সানী [হাঃ ২২৯২]। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৮৩ঃ [আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীনের নিরানব্বই নাম]

৩৫০৬ : আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন , আল্লাহ্‌ তাআলার নিরানব্বইটি নাম আছে অর্থাৎ এক কম এক শত। যে লোক এই নামসমুহ মুখস্ত করিবে বা পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

সহীহঃ মিশকাত তাহক্কিক সানী [হাঃ ২২৮৮], বুখারি ও মুসলিম। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫০৭ : আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি নাম আছে অর্থাৎ এক কম এক শত। যে ব্যক্তি তা গণনা [মুখস্ত] করিবে সে জান্নাতে যাবে।

তিনিই আল্লাহ যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ্‌ নেই। তিনি আর-রহমান [মহান দয়ালু], আর-রহীমু [অসীম করুণাময়], আল-মালিকু [স্বত্বাধিকারী], আল-কুদ্দূসু [মহাপবিত্র], আস-সালামু [অধিক শান্তিদাতা], আল-মুমিনু [নিরাপত্তাদানকারী], আল-মুহাইমিনু [চিরসাক্ষী], আল-আযীযু [মহাপরাক্রমশালী], আল-জাব্বারু [মহাশক্তিধর], আল-মুতাকাব্বিরু [মহাগৌরবান্বিত], আল-খালিকু [স্রষ্টা], আল-বারিউ [সৃজনকর্তা], আল-মুসাব্বিরু [অবয়বদানকারী], আল-গাফ্‌ফারু [ক্ষমাকারী], আল-কাহ্‌হারু [শাস্তিদাতা], আল-ওয়াহ্‌হাবু [মহান দাতা], আর-রাযযাকু [রিযিকদাতা], আল-ফাত্তাহ [মহাবিজয়ী], আল-আলীমু [মহাজ্ঞানী], আল-কাবিযু [হরণকারী], আল-বাসিতু [সম্প্রসারণকারী], আল-খাফিযু [অবনতকারী], আর-রাফিউ [উন্নতকারী], আল-মুইয্যু [ইজ্জতদাতা], আল-মুযিল্লু [অপমানকারী], আস-সামিউ [ শ্রবণকারী], আল-বাছীরু [মহাদ্রষ্টা], আল-হাকামু [মহাবিচারক], আল-আদলু [মহান্যায়পরায়ণ], আল-লাতীফু [সূক্ষ্ণদর্শী], আল-খাবীরু [মহা সংবাদরক্ষক], আল-হালীমু [মহাসহিষ্ণু], আল-আযীমু [মহান], আল-গাফূরু [মহাক্ষমাশীল], আশ-শাকূরু [কৃতজ্ঞতাপ্রিয়], আল-আলীয়্যু [মহা উন্নত], আল-কাবীরু [অতীব মহান], আল-হাফীজু [মহারক্ষক], আল-মুকীতু [মহাশক্তিদাতা], আল-হাসীবু [হিসাব গ্রহনকারী], আল-জালীলু [মহামহিমান্বিত], আল-কারীমু [মহাঅনুগ্রহশীল], আর-রাকীবু [মহাপর্যবেক্ষক], আল-মুজীবু [ক্ববূলকারী], আল-ওয়াসিউ [মহাবিস্তারক], আল-হাকীমু [মহাবিজ্ঞ], আল-ওয়াদূদু [মহত্তম বন্ধু], আল-মাজীদু [মহাগৌরবান্বিত], আল-বাইছু [পুনরুত্থানকারী], আশ-শাহীদু [সর্বদর্শী], আল-হাক্কু [মহাসত্য], আল-ওয়াকীলু [মহাপ্রতিনিধি], আল-কাবিয়্যু [মহাশক্তিধর], আল-মাতীনু [দৃঢ় শক্তির অধিকারী], আল-ওয়ালিয়্যু [মহাঅভিভাবক], আল-হামীদু [মহাপ্রশংসিত], আল-মুহসিয়্যু [পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব সংরক্ষণকারী], আল-মুবদিও [সৃষ্টির সূচনাকারী], আল-মুঈদু [পুনরুত্থানকারী], আল-হাইয়্যু [চিরঞ্জীব], আল-কাইয়্যুম [চিরস্থায়ী], আল-মুহ্‌য়ী [জীবনদাতা], আল-মুমীতু [মৃত্যুদাতা], আল-ওয়াজিদু [ইচ্ছামাত্র সম্পাদনকারী], আল-মাজিদু [মহাগৌরবান্বিত], আল-ওয়াহিদু [একক], আস্‌-সামাদু [স্বয়ংসম্পূর্ণ], আল-কাদিরু [সর্বশক্তিমান], আল-মুকতাদিরু [মহাক্ষমতাবান], আল-মুকাদ্দিমু [অগ্রসরকারী], আল-মুআখ্‌খির [বিলম্বকারী], আল-আওয়ালু [অনাদি], আল-আখিরু [অনন্ত], আয-যাহিরু [প্রকাশ্য], আল-বাতিনু [লুকায়িত], আল-ওয়ালিউ [অধিপতি], আল-মুতাআলী [চিরউন্নত], আল-বাররু [কল্যাণদাতা], আত্‌-তাওওয়াবু [তাওবা ক্ববূলকারী], আল-মুনতাকিমু [প্রতিশোধ গ্রহণকারী], আল-আফুব্বু [ক্ষমাকারী, উদারতা প্রদর্শনকারী], আর-রাঊফু [অতিদয়ালু], মালিকুল মুলকি [সার্বভৌমত্বের মালিক], যুলজালালি ওয়াল ইকরাম [গৌরব ও মহত্বের অধিকারী], আল-মুকসিতু [ন্যায়বান], আল-জামিউ [সমবেতকারী], আল-গানিয়্যু [ঐশ্বর্যশালী], আল-মুগনিয়্যু [ঐশ্বর্যদাতা], আল-মানিউ [প্রতিরোধকারী], আয-যাররু [অনিষ্টকারী], আন-নাফিউ [উপকারকারী], আন-নূরু [আলো], আল-হাদিউ [পথপ্রদর্শক], আল-বাদীউ [সূচনাকারী], আল-বাকিউ [চিরবিরাজমান], আল-ওয়ারিস [স্বত্বাধিকারী], আর-রাশীদ [সৎপথে চালনাকারী], আস-সাবূরু [মহা ধৈর্যশীল]।

নাম সমূহ উল্লেখে হাদীসটি দুর্বল। প্রাগুক্ত। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাসীটি গারীব। একাধিক রাবী এ হাদীস সাফওয়ান ইবনি সালিহ্‌-এর সূত্রে আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন। আমরা শুধু সাফওয়ান ইবনি সালিহ্‌-এর সূত্রে এ হাদীস জেনেছি। হাদীস বিশারদদের মতে তিনি নির্ভরযোগ্য রাবী। উক্ত হাদীস আবু হুরাইরা [রাদি.] সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে ভিন্নরূপেও বর্ণিত হয়েছে। আমরা ঐ একটি হাদীস ব্যতীত আল্লাহ্‌ তাআলার নামসমূহ প্রসঙ্গে অবগত নই। অবশ্য আদাম ইবনি আবু ইয়াস এ হাদীস ভিন্ন সনদসূত্রে আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর মাধ্যমে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন এবং তাতে আল্লাহ্‌ তাআলার নামসমূহ উল্লেখ করিয়াছেন, কিন্তু তার সনদসূত্র সহীহ নয়। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৫০৮ : আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্‌র নিরানব্বই নাম রয়েছে। যে লোক তা কণ্ঠস্থ করিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

সহীহ ঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [হাঃ ২২৮৮]। এ হাদীসে সেই নামগুল উল্লেখ নেই। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫০৯ : আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা যখনই জান্নাতের বাগানসমূহ পার হইতে যাবে তখনই ওখান হইতে পাকা ফল সংগ্রহ করিবে। রাবী বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! জান্নাতের বাগানসমূহ কি? তিনি বললেনঃ মাসজিদসমূহ। আমি আবার বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! পাকা ফল সংগ্রহ করার অর্থ কি? তিনি বললেনঃ

سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ

“সুবহানাল্লাহ্‌ ওয়ালহামদু লিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার”

[আল্লাহ মহাপবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র, আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান] বলা।

যঈফ, যঈফা [১১৫০], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৫১০ : আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা যখন জান্নাতের বাগানগুলোর পার্শ্ব দিয়ে যাবে সে সময় সেখান হইতে পাকা ফল তুলে নিবে। লোকজন প্রশ্ন করিল, জান্নাতের বাগানগুলো কি? তিনি বলিলেন, যিকিরের মাজলিস।

হাসানঃ সহিহ [হাঃ ২৫৬২], তালীকুল রাগীব [হাঃ ২/৩৩৫]। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

অনুচ্ছেদ-৮৪ঃ [ বিপদে নিপতিত অবস্থায় পাঠ করার দুয়া]

৩৫১১ : আবু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কারো উপর কোন বিপদ এলে অবশ্যই সে যেন বলেঃ নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহ তাআলার এবং আমাদেরকে অবশ্যই তাহাঁর দিকে ফিরে যেতে হইবে। হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমি আমার বিপদের প্রতিদান চাই। অতএব তুমি আমাকে এর প্রতিদান দাও এবং এর বিনিময়ে ভালো কিছু দান কর। তারপর আবু সালামাহ্ [রাদি.] এর মৃত্যু হাযির হলে তিনি বললেনঃহে আল্লাহ! আমার অবর্তমানে আমার পরিবারের জন্য আমার চাইতে উত্তম স্থালাভিষিক্ত নিযুক্ত করে দাও”। তারপর আবু সালামাহ্ [রাদি.] মৃত্যুবরণ করলে উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] বলেন, “আমরা আল্লাহ তাআলার জন্য এবং আমাদেরকে তাহাঁর কাছে প্রত্যার্বতন করিতে হইবে। আমার এই বিপদের প্রতিদান আমি আল্লাহ তাআলার নিকট পাওয়ার আশা করি। অতএব হে আল্লাহ! তুমি আমাকে প্রতিদান দাও”।

সানাদ সহীহ। উম্মু সালামাহ্ হইতে অনুরূপ বর্ণিত আছে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৮৫ঃ [পৃথিবী ও আখিরাতের শান্তি ও হিফাযত আশা করা]

৩৫১২ : আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে এসে বলিল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! কোন দুয়া সবচেয়ে ভালো? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার রবের নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা কর। তারপর সে দ্বিতীয় দিন তাহাঁর নিকট এসে বলিল, ইয়া রসুলুল্লাহ! কোন দুয়া সর্বোত্তম? তিনি তাকে আগের মতই উত্তর দেন। তারপর সে তাহাঁর নিকট তৃতীয় দিন এলে তিনি আগের মতই উত্তর দেন এবং বলেনঃ যদি তুমি দুনিয়াতে শান্তি এবং আখিরাতে নিরাপত্তা লাভ করিতে পার তাহলে মনে রেখো তুমি সফলতা লাভ করলে।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩৮৪৮], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। আমরা শুধু সালামা ইবনি ওয়ারদানের সূত্রে এ হাদীস জেনেছি। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৫১৩ : আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি “লাইলাতুল ক্বদর জানতে পারি তাহলে সে রাতে কি বলব? তিনি বললেনঃতুমি বল

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউ কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি

হে আল্লাহ! তুমি সম্মানিত ক্ষমাকারী, তুমি মাফ করিতেই পছন্দ কর, অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও”।

সহীহ ঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[হা ঃ ৩৮৫০]। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫১৪ : আল-আব্বাস ইবনি আবদিল মুত্তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এমন কিছু আমাকে শিখিয়ে দিন, যা আল্লাহ তাআলার নিকট আমি প্রার্থনা করিতে পারি। তিনি বললেনঃআল্লাহ তাআলার নিকট আপনি শান্তি ও হিফাযাত কামনা করুন। কিছু দিন যাওয়ার পর আবার গিয়ে আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এমন কিছু আমাকে শিখিয়ে দিন যা আমি আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করিতে পারি। তিনি আমাকে বললেনঃহে আব্বাস, হে আল্লাহ্‌র রাসূলের চাচা! আল্লাহ তাআলার নিকট আপনি পৃথিবী ও আখিরাতের শান্তি ও হিফাযাত প্রার্থনা করুন।

সহীহ ঃ মিশকাত তাহক্বীক সানী [হাঃ ২৪৯০], সহীহাহ্ [হাঃ ১৫২৩।] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৮৬ঃ [ভোরে উপনীত হয়ে মানুষ নিজেকে বিক্রয় করে]

৩৫১৫ : ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনার চাইতে অধিক প্রিয় কিছু তার কাছে চাওয়া হয় না। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র আব্দুর রহমান ইবনি আবী বাকার আল-মুলাইকীর সূত্রেই এ হাদীসটি জানতে পেরেছি।

যঈফ, মিশকাত [২২৩৯]। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৫১৬ : আবু বাকর আস-সিদ্দীক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন কোন কাজের ইচ্ছা করিতেন তখন বলিতেনঃ

 اللَّهُمَّ خِرْ لِي وَاخْتَرْ لِي 

আল্লাহুম্মা খিরলি ওয়াখতারলি

“হে আল্লাহ্‌! আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করুন এবং আমার কাজে কল্যাণ দান করুন”।

যঈফ, যঈফা [১৫১৫], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু যানফালের রিওয়ায়াত হইতে এ হাদীস জেনেছি। তিনি হাদীসবিদদের মতে যঈফ। তাকে যানফাল ইবনি আব্দুল্লাহ আল-আরাফীও বলা হয়। কেননা তিনি আরাফাত এলাকায় বসবাস করিতেন। তিনি এককভাবে এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন এবং এ হাদীস বর্ণনায় তার কোন পক্ষাবলম্বনকারী নেই। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৫১৭ ?: আবু মালিক আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অযূ ঈমানের অর্ধেক। আলহামদু লিল্লাহ দাঁড়ি পাল্লাকে পূর্ণ করে দেয়। সুবাহানাল্লাহ্ ও আলহামদু লিল্লাহ একসাথে আকাশমন্ডলী ও যামীনের মধ্যবর্তী জায়গা ভর্তি করে দেয়। নামাজ হলো নূর [জ্যোতি], সাদাক্বহ্ [দান-খাইরাত] হলো [মুক্তির] দলীল এবং ধৈর্য ও সহনশীলতা হলো আলোকবর্তিকা। কুরআন তোমার সপক্ষে অথবা্ বিপক্ষে সনাদ বা সাক্ষ্যস্বরূপ। ভোরে উপনীত হয়ে প্রতিটি মানুষ নিজেকে বিক্রয় করে। [এর মাধ্যমে] সে নিজেকে হয় আযাদ করে অথবা ধ্বংস করে।

সহীহ ঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[হাঃ ২৮০], মুসলিম। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৮৭ঃ তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীরের ফাযীলাত

৩৫১৮ : আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তাসবীহ” [সুবহানাল্লাহ] মীযানের [দাঁড়িপাল্লার] অর্ধেক, “আলহামদু লিল্লাহ” মীযানকে পুরো করে দেয় এবং “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” ও আল্লাহ্‌ তাআলার মাঝখানে কোন প্রকারের অন্তরায় বা বাধা নেই, এমনকি তা আল্লাহ্‌ তাআলার নিকট পৌঁছে যায়।

যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [২৩১৩], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। এর সনদসূত্র তেমন শক্তিশালী নয়। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৫১৯ : সুলাইম গোত্রের এক ব্যক্তি হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার হইতে অথবা তাহাঁর হইতে এসব বাক্য গুনে গুনে বলেনঃ “তাসবীহ” [সুবহানাল্লাহ] হল মীযানের অর্ধেক, “আলহামদু লিল্লাহ” তাকে পূর্ণ করে দেয় এবং তাকবীর [আল্লাহু আকবার] আকাশ ও যমিনের মধ্যবর্তী জায়গা পরিপূর্ণ করে দেয়। রোযা সবর ও সহিষ্ণুতার অর্ধেক এবং পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।

যঈফ, মিশকাত [২৯৬], তালীকুর রাগীব [২/২৪৬], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। শুবা ও সুফিয়ান সাওরী এ হাদীস আবু ইসহাক হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

অনুচ্ছেদ-৮৮ঃ আরাফাতে দুপুরের পর পাঠের দুয়া

৩৫২০ : আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরাফাত দিবসে আরাফাতে অবস্থানকালে দুপুরের পর বেশিরভাগ সময় যে দুয়া পাঠ করিতেন তা এই যে,

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَالَّذِي تَقُولُ وَخَيْرًا مِمَّا نَقُولُ اللَّهُمَّ لَكَ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِي وَإِلَيْكَ مَآبِي وَلَكَ رَبِّ تُرَاثِي اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَوَسْوَسَةِ الصَّدْرِ وَشَتَاتِ الأَمْرِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا تَجِيءُ بِهِ الرِّيحُ 

আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু কাল্লাজি তাকুলু ওয়া খইরান মিম্মা তাকুলু, আল্লাহুম্মা লাকা সালাতি ওয়া নুসকি ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া মামাতি ওয়া ইলায়কা মানিয় ওয়া লাকা রব্বি তুরাছি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কবর ওয়া ওয়াসওয়াসাতিশ সাদরি ওয়া ছাতাতিল আমরি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন সাররি মা তাজিয়ু বিহির রিহু

“হে আল্লাহ্‌! সকল প্রশংসা তোমার যেভাবে তুমি বলেছ এবং আমরা যা বর্ণনা করি তার চেয়েও বেশি উত্তম। হে আল্লাহ্‌! আমার নামাজ, আমার ইবাদাত [হাজ্জ ও কুরবানী], আমার জীবন ও আমার মরণ তোমার জন্য। পরিশেষে তোমার দিকেই আমার ফিরে আসা এবং আমার মালিকানা তোমার মালিকানাভুক্ত। হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার নিকট সহায়তা চাই কবরের শাস্তি, অন্তরের কুচিন্তা ও কাজ-কর্মের অনিশ্চয়তা হইতে। হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই বায়ু বাহিত ক্ষতি হইতেও”।

যঈফ, যঈফা [২৯১৮], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি উক্ত সনদসূত্রে গারীব। এর সনদসূত্র তেমন মজবুত নয়। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

অনুচ্ছেদ-৮৯ঃ সকল দুয়ার সমাহার

৩৫২১ : আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] অনেক দুয়াই করিয়াছেন কিন্তু আমরা তার কিছুই মনে রাখতে পারিনি। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি অনেক দুয়াই করিয়াছেন কিন্তু আমরা তার কিছুই মনে রাখতে পারিনি। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু বলে দিব না, যা সেই সকল দুয়ার সমষ্টি হইবে? তোমরা বলঃ

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا اسْتَعَاذَ بِكَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ وَأَنْتَ الْمُسْتَعَانُ وَعَلَيْكَ الْبَلاَغُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ

আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা মিন খাইরি মা সাআলাকা মিনহু নাবিয়্যিকা মুহাম্মাদুন ওয়া নাউজুবিকা মিন শাররি মাসতাআজা বিকা মিনহু নাবিয়্যুকা মুহাম্মাদুন ওয়া আংতাল মুসতাআনু ওয়া আলাইকাল বালাগু ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহি।

“হে আল্লাহ্‌! আমরা তোমার নিকট সেই কল্যাণ আশা করি যা তোমার নাবী রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমার নিকট আশা করিয়াছেন এবং আমরা তোমার নিকট সেই অনিষ্ট হইতে রক্ষা চাই যে অনিষ্ট হইতে তোমার নাবী [সাঃআঃ] আশ্রয় চেয়েছেন। তুমিই একমাত্র সাহায্যকারী এবং তুমিই [কল্যাণ] পৌঁছিয়ে দাও। আল্লাহ্‌ তাআলা ছাড়া অনিষ্ট রোধ করার এবং কল্যাণ পৌঁছানোর আর কোন ক্ষমতাবান নেই”।

আল্লাহ তায়ালার জিকির-যঈফ, যঈফা [৩৩৫৬], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

অনুচ্ছেদ-৯০ঃ [রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বেশী বেশী যে দুয়া পাঠ করিতেন]

৩৫২২ : শাহর ইবনি হাওশাব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উম্মু সালামাহ্ [রাদি.]-কে আমি বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আপনার কাছে অবস্থানকালে অধিকাংশ সময় কোন দুয়াটি পাঠ করিতেন? তিনি বলিলেন, তিনি অধিকাংশ সময় এ দুয়া পাঠ করিতেনঃ হে মনের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর স্থির রাখ। উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি অধিকাংশ সময় হে মনের পরিবর্তনকারী! আমার মনকে তোমার দ্বীনের উপর স্থির রাখ দুয়াটি কেন পাঠ করেন? তিনি বললেনঃহে উম্মু সালামাহ্! এরূপ কোন মানুষ নেই যার মন আল্লাহ তাআলার দুই আঙ্গুলের মধ্যবর্তীতে অবস্থিত নয়। যাকে ইচ্ছা তিনি [দ্বীনের উপর] স্থির রাখেন এবং যাকে ইচ্ছা [দ্বীন হইতে] বিপথগামী করে দেন। তারপর অধঃস্তন বর্ণনাকারী মুআয [রঃ] কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করেন [অনুবাদ]ঃ হে আমাদের রব! আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করার পর তুমি আমাদের অন্তরসমূহকে বাঁকা করে দিও না।

আল্লাহ তায়ালার জিকির-সহীহ ঃ যিলালুল জান্নাহ [হাঃ ২২৩]। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫২৩ : সুলাইমান ইবনি বুরাইদা [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ খালিদ ইবনিল ওয়ালীদ আল-মাখযূমী [রাদি.] রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট অভিযোগ করে বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! দুশ্চিন্তা বা স্নায়ুবিক চাপের কারণে রাতে আমি ঘুমাতে পারি না। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যখন তুমি বিছানায় আশ্রয় গ্রহণ কর তখন বল,

اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظَلَّتْ وَرَبَّ الأَرَضِينَ وَمَا أَقَلَّتْ وَرَبَّ الشَّيَاطِينِ وَمَا أَضَلَّتْ كُنْ لِي جَارًا مِنْ شَرِّ خَلْقِكَ كُلِّهِمْ جَمِيعًا أَنْ يَفْرُطَ عَلَىَّ أَحَدٌ مِنْهُمْ أَوْ أَنْ يَبْغِيَ عَلَىَّ عَزَّ جَارُكَ وَجَلَّ ثَنَاؤُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ

আল্লা-হুম্মা রব্বাস্ সামা-ওয়া-তিস সাব‘ঈ, ওয়া মা আজাল্লাতু ওয়া রব্বাল আরদিনা ওয়া মা আকাল্লাতু ওয়া রব্বাস সাইতানি ওয়া মা আদাল্লাতু কুন লী জারান মিন্ সাররি খলকিকা কুল্লিহিম জামিয়ান আন ইয়াফরুত্বা ‘আলাইয়্যা আহাদু মিনহুম আও আন ইয়াত্বগিয়া আলাইয়া আয্যা জা-রুকা, ওয়া জাল্লা সানা-উকা, ওয়া লা ইলা-হা গয়রুকা ওয়া লা ইলা-হাইল্লা আনতা

“হে আল্লাহ্‌! সাত আকাশের প্রতিপালক এবং যা কিছুর উপর তা ছায়া বিস্তার করেছে, সাত যমিনের প্রতিপালক এবং যা কিছু তা উত্থাপন করিয়াছেন, আর শাইতানদের প্রতিপালক এবং এরা যাদেরকে বিপথগামী করেছে! তুমি আমাকে তোমার সকল সৃষ্টিকুলের খারাবী হইতে রক্ষার জন্য আমার প্রতিবেশী হয়ে যাও, যাতে সেগুলোর কোনটি আমার উপর বাড়াবাড়ি করিতে না পারে অথবা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিতে না পারে। সম্মানিত তোমার প্রতিবেশী, সুমহান তোমার প্রশংসা। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তুমি ব্যতীত আর কোন মাবূদ নেই”।

আল্লাহ তায়ালার জিকির-যঈফ, আল-কালিমুত তায়্যিব [৪৭/৩৩], মিশকাত [২৪১১], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসের সনদ তেমন শক্তিশালী নয়। হাকাম ইবনি জুহাইর পরিত্যক্ত রাবী। কিছু হাদীস বিশারদ তার হইতে হাদীস গ্রহণ বাদ দিয়েছেন। এ হাদীসটি ভিন্নসূত্রে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে মুরসালরূপেও বর্ণিত হয়েছে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

অনুচ্ছেদ-৯২ঃ [কঠিন কাজ হাযির হলে যে দুয়া পাঠ করিবে]

৩৫২৪ : আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সম্মুখে কঠিন কাজ হাযির হলে তিনি বলিতেনঃ

يَا حَىُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ

হে চিরজীবি, হে চিরস্থায়ী! আমি তোমার রহমাতের ওয়াসীলায় সাহায্য প্রার্থনা করি।

ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু বিরহ্‌মাতিকা আস্তাগীসু

হাসান ঃ আল-কালিমুত্ তাইয়্যিব [হাঃ ১১৮/৭৬]। একই সনদসূত্রে আনাস [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা সবসময় “ইয়া যাল-জালালি ওয়াল-ইকরাম পাঠ করাকে অপরিহার্য করে নাও। সহীহ ঃ সহীহাহ্ [হাঃ ১৫৩৬]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। এ হাদীস আনাস [রাদি.] হইতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৫২৫ : আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমরা সবসময়

يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ

“ইয়া যাল-জালালিওয়াল-ইকরাম”

[হে গৌরব ও মহত্ত্বের অধিকারী] পাঠ করাকে অপরিহার্য করে নাও।

আল্লাহ তায়ালার জিকির-সহীহ ঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৯৩ঃ ঘুম না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার যিকির করার ফাযীলত

৩৫২৬ : আবু উমামা আল-বাহিলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি ঘুমানোর উদ্দেশ্যে পবিত্র অবস্থায় বিছানায় যায় এবং ঘুম না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার যিকির করিতে থাকে, সে পার্শ্ব পরিবর্তন করার আগেই আল্লাহ তাআলার নিকটে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ হইতে যা কিছু প্রার্থনা করিবে, আল্লাহ তাআলা তাকে নিঃসন্দেহে তা দান করবেন।

যঈফ, তলীকুর রাগীব [১/২৭০], মিশকাত [১২৫০], আল-কালিমুত তায়্যিব তাহকীক ছানী [৪৩/২৯], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীস শাহ্‌র ইবনি হাওশাব হইতে, তিনি আবু যাবিয়্যা হইতে, তিনি আমর ইবনি আবাসার সূত্রেও রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত হয়েছে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

অনুচ্ছেদ-৯৪ঃ [ঘুমের মধ্যে আতংকিত হলে যা পড়বে]

৩৫২৭ : মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] শুনতে পেলেন যে, এক ব্যক্তি তার দুয়ায় বলছে “হে আল্লাহ! আমি তোমার সকল নিআমাত কামনা করি”। তিনি বলেনঃ সকল নিয়ামত কি? সে বলিল, আমি একটি দুয়া করেছি যার উসীলায় কল্যাণ লাভের কামনা করি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেলেনঃ পূর্ণ নিয়ামাত হচ্ছে জান্নাতে প্রবেশলাভ এবং জাহান্নাম হইতে রেহাই। তিনি আরেক ব্যক্তিকে বলিতে শুনেনঃ “হে মর্যাদা ও মহত্বের অধিকারী”। তিনি বলেলেনঃ তোমার দুয়া ক্ববুল করা হইবে, অতএব প্রার্থনা কর। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরেক ব্যক্তিকে বলিতে শুনেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট সবরের প্রার্থনা করি”। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেলেনঃ তুমি তো আল্লাহ তাআলার নিকটে দুরবস্থা প্রার্থনা করেছ, অতএব তাহাঁর নিকটে শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা কর।

যঈফ, যঈফা [৪৫২০], আহামাদ ইবনি মানী ইসমাঈল ইবনি ইবরাহীম হইতে তিনি আল-জুরাইরী [রঃ]-এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৫২৮ : আম্‌র ইবনি শুআইব [রাদি.] হইতে পর্যায়ক্রমে তাহাঁর পিতা ও তাহাঁর দাদা হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে সে যেন বলে ঃ

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ

আউজু বি কালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন গাদাবিহি ওয়া ইকাবিহি ওয়া সাররি ইবাদিহি ওয়া মিন হামাজাতিস সাইয়াতানি ওয়া আন ইয়াহদুরুন

আমি আল্লাহ্‌ তাআলার পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা আশ্রয় চাই তাহাঁর ক্রোধ ও শাস্তি হইতে, তাহাঁর বান্দাদের খারাবী হইতে, শাইতানদের কুমন্ত্রণা হইতে এবং আমার নিকট যারা হাযির হয় সেগুলো হইতে।

তাহলে সেগুলো তার কোন ক্ষতি করিতে পারবে না। আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] তার সন্তানদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্কদের উক্ত দুয়া শিখিয়ে দিতেন এবং উক্ত দুয়া কাগজের টুকরায় লিখে তার নাবালেগ সন্তানদের গলায় ঝুলিয়ে দিতেন।

আব্দুল্লাহ ইবনি উমার …… ঝুলিয়ে দিতেন” অংশটুকু বাদে হাদীসটি হাসান। আল-কালিমুত্‌ তাইয়্যিব [৪৮/৩৫] আবু ঈসা বলেন ঃ হাদীসটি হাসান গারীব। এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

অনুচ্ছেদ-৯৫ঃ {আবু বাক্‌র [রাদি.] কে শিখানো দুয়া}

৩৫২৯ : আবু রাশিদ আল-হুবরানী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনি আম্‌র ইবনিল আস [রাদি.]-এর কাছে এসে আমি তাকে বললাম, আপনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে যা কিছু শুনেছেন, তা হইতে আমাদের কাছে কিছু বর্ণনা করুন। একখানা পান্ডুলিপি আমাকে দিলেন এবং বলিলেন, এটা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে লিখিয়ে দিয়েছেন। আবু রাশিদ বলেন, তাতে আমি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলাম, তাতে লিখা আছে আবু বাক্‌র আস-সিদ্দীক্ব [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এমন কিছু [দুয়া] আমাকে শিখিয়ে দিন যা আমি সকালে ও বিকালে উপনীত হয়ে বলিতে পারি। তিনি বললেনঃ হে আবু বাক্‌র! বলুন,

اللَّهُمَّ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيكَهُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشَرَكِهِ وَأَنْ أَقْتَرِفَ عَلَى نَفْسِي سُوءًا أَوْ أَجُرَّهُ إِلَى مُسْلِمٍ

আল্লাহুম্মা ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি। আলিমাল গাইবি ওয়াশ শাহাদাতি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা রাব্বি কুল্লি শাইয়িন। ওয়া মালিকাহু। আউজু বিকা মিন শাররি নাফসি ওয়া মিন শাররিশ শাইতানি ও শিরকিহি। ওয়া আন আকতারিফা আলা নাফসি সুওয়ান আও আজুররাহু ইলা মুসলি্লি

হে আল্লাহ, আকাশসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা, অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞাতা! তুমি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই, তুমি প্রতিটি বস্তুর পালনকর্তা ও মালিক। আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিজের অন্তরের অনিষ্ট হইতে এবং শাইতানের ক্ষতি ও তার শির্‌কী হইতে এবং আমি আমার নিজের জন্য ক্ষতিকর কিছু লাভ করা হইতে কিংবা উক্ত অনিষ্টকর জিনিস কোন মুসলিমের কাছে টেনে নিয়ে যাওয়া হইতে।

আল্লাহ তায়ালার জিকির-সহীহ ঃ আল-কালিমুত্‌ তাইয়্যিব [হাঃ ২২/৯], সহীহাহ্‌ [হাঃ ২৭৬৩] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৯৬; [আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক আত্মমর্যাদাবোধের অধিকারী]

৩৫৩০ : আম্‌র ইবনি মুর্‌রাহ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু ওয়ায়িল [রঃ]-কে আমি বলিতে শুনিয়াছি, আমি আব্দুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি। আম্‌র বলেন, আবু ওয়ায়িলকে আমি প্রশ্ন করলাম, আপনি কি সত্যিই এ হাদীস আব্দুল্লাহ [রাদি.] এর কাছে শুনেছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ এবং তিনি তা মারফূরূপে রিওয়ায়াত করিয়াছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলার চেয়ে বেশি আত্নমর্যাদাবোধ সম্পন্ন আর কেউ নেই। এ কারণেই তিনি প্রকাশ্য ও লুকায়িত সর্বপ্রকার অশ্লীলতাকে হারাম করিয়াছেন। আল্লাহ তাআলার চাইতে বেশি প্রশংসাপ্রিয় আর কেউ নেই। এজন্যই নিজের প্রশংসা তিনি নিজেই করিয়াছেন।

আল্লাহ তায়ালার জিকির-সহীহ ঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-৯৭; [নিজের উপর অনেক অত্যাচার করেছি]

৩৫৩১ : আবু বাক্‌র আস-সিদ্দীক্ব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এমন একটি দুয়া আমাকে শিখিয়ে দিন যা আমি আমার নামাযের মাঝে পাঠ করিতে পারি। তিনি বললেনঃতুমি বল,

اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

আল্লাহুম্মা ইন্নি জাআলামতু নাফসি জুলমান কাসিরা ওয়ালা ইয়াগফেরুজ জুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম ইন্দিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আন্তাল গাফুরুর রাহিম

হে প্রভু! আমার সত্তার উপর আমি অনেক যুল্‌ম করেছি। তুমি ব্যতীত গুনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। অতএব আমাকে তুমি নিজগুনে ক্ষমা করে দাও। আমার প্রতি করুণা কর। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাকারী, অতীব দয়ালু।

আল্লাহ তায়ালার জিকির-সহীহ ঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[হাঃ ৩৮৩৫], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫৩২ : মুত্তালিব ইবনি আবী ওয়াদাআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ আব্বাস [রাদি.] রাসূল [সাঃআঃ]-এর নিকটে এলেন, মনে হয় তিনি যেন কিছু শুনতে পেয়ে মিম্বারে অরোহন করিলেন। অতঃপর বললেনঃ কোন ব্যক্তি প্রত্যাবর্তন [তাওবা] করেছে? সাহাবাগণ বললেনঃ আপনি আল্লাহ্‌র রাসূল, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হউক। তিনি বললেনঃ আমি মুহাম্মাদ ইবনি আব্দিল্লাহ ইবনি আব্দিল মুত্তালিব। আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি কুলকে সৃষ্টি করে আমাকে উত্তম দলের অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন। তিনি উত্তম দলকে বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত করে আমাকে উত্তম গোত্রের অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন। তিনি উত্তম গোত্রকে বিভিন্ন ঘরে বিভক্ত করে আমাকে উত্তম ঘর ও উত্তম বংশের অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন।

যঈফ, যঈফা [৩০৭৩], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

অনুচ্ছেদ-৯৮ঃ [গুনাহ ঝরে পরা]

৩৫৩৩ : আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি শুকনা পাতাওয়ালা গাছের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাহাঁর লাঠি দিয়ে তাতে আঘাত করলে হঠাৎ পাতাগুলো ঝরে পরে। অতঃপর তিনি বলিলেন কোন বান্দা

الْحَمْدَ لِلَّهِ

“আলহামদুলিল্লাহ (সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার)

سُبْحَانَ اللَّهِ

“ সুবহানাল্লাহ” (আল্লাহ তাআলা অতি পবিত্র)

اَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ

লাইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” [আল্লাহ তাআলা ব্যতীত সত্য কোন মাবূদ নেই, তিনি অতি মহান]

বললে তা তার গুনাহ সমূহ এরূপভাবে ঝরিয়ে দেয় যেভাবে এ গাছের পাতাসমূহ ঝরে পড়েছে।

আল্লাহ তায়ালার জিকির-হাদীসটি হাসান ঃ তালীকুর রাগীব [হাঃ ২/২৪৯] এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস ()

৩৫৩৪ : উমারাহ্‌ ইবনি শাবীব আস্‌-সাবায়ী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মাগরিবের নামাযের পর যে লোক দশবার বলেঃ

 لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়া লাহুল হামদু, ইউহই ওয়া ইউমিতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর

আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন মাবূদ নেই, তিনি এক, তাহাঁর কোন অংশীদার নেই, সমস্ত কিছুই তাহাঁর এবং তিনিই সকল প্রশংসার অধিকারী, তিনিই জীবন দান করেন ও মুত্যু দেন এবং প্রতিটি জিনিসের উপর তিনিই মহা ক্ষমতাশালী”

আল্লাহ তাআলা তার নিরাপত্তার জন্য ফেরেশতা পাঠান যারা তাকে শয়তানের ক্ষতি হইতে ভোর পর্যন্ত নিরাপত্তা দান করেন, তার জন্য [আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ] অবশ্যম্ভাবী করার ন্যায় দশটি পূণ্য লিখে দেন, তার দশটি ধ্বংসাত্মক গুনাহ বিলুপ্ত করে দেন এবং তার জন্য দশটি ঈমানদার দাস মুক্ত করার সমপরিমাণ সাওয়াব রয়েছে।

আল্লাহ তায়ালার জিকির-হাদীসটি হাসান ঃ সহীহ আত্‌-তারগীব ওয়াত্‌ তারহীব ১/১৬০/৪৭২। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

অনুচ্ছেদ-৯৯ঃ তাওবাহ ও ক্ষমা প্রার্থনার ফাযীলাত এবং বান্দাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহ প্রসঙ্গে

৩৫৩৫ : যির ইবনি হুবাইশ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মোজাদ্বয়ের উপর মাসিহ করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করার উদ্দেশে আমি সাফওয়ান ইবনি আসসাল আল-মুরাদী [রাদি.] এর কাছে আগমন করলাম। তিনি বলিলেন, হে যির! তোমাকে কিসে নিয়ে এসেছে? আমি বললাম, জ্ঞানের অন্বেষা! তিনি বলিলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার ফেরেশতাগন জ্ঞানের অন্বেষায় খুশি হয়ে জ্ঞান অন্বেষণকারীর জন্য তাহাদের পাখা বিছিয়ে দেন। আমি বললাম, আমার মনে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে মলমূত্র ত্যাগের পর মোজার উপর মাসেহ করা প্রসঙ্গে। আর আপনি হলেন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর একজন সাহাবী। তাই আপনাকে আমি প্রশ্ন করিতে এসেছি যে, এ প্রসঙ্গে আপনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে কিছু আলোচনা করিতে শুনেছেন কি? তিনি বলিলেন হ্যাঁ। আমাদেরকে তিনি নির্দেশ দিতেন যে, আমরা সফররত অবস্থায় থাকলে এবং নাপাকির গোসলের প্রয়োজন না হলে তিন দিন ও তিন রাত পর্যন্ত যেন আমাদের মোজাদ্বয় না খুলি। মলমূত্র ত্যাগ এবং ঘুমানোর কারণে তা খোলার দরকার নেই, বরং শুধু তার উপর মাসেহ্‌ করলেই চলবে। যির [রঃ] বলেন, আমি বললাম মহব্বত [ভালবাসা] প্রসঙ্গে আপনি কি তাকেঁ কিছু আলোচনা করিতে শুনেছেন? তিনি বলিলেন হ্যাঁ। এক সফরে আমরা নাবী [সাঃআঃ] এর সাথে ছিলাম। একদিন আমরা তাহাঁর নিকটেই ছিলাম, এমন সময় এক বেদুঈন উচ্চৈঃস্বরে তাকেঁ ডাক দিয়ে বলে হে, মুহাম্মাদ! রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও তার ন্যায় একই রকম উচ্চ শব্দে তার ডাকে জবাব দিলেন ঃ আস। সেই বেদুঈনকে আমরা বললাম, তোমার অমঙ্গল হোক, তোমার কন্ঠস্বর নীচু কর। কেননা তুমি নাবী [সাঃআঃ] এর সম্মুখে আছ। নাবীর সম্মুখে তোমাকে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলিতে বারণ করা হয়েছে [কুরআনে]। লোকটি বলিল, আল্লাহর শপথ! আমি নীচু স্বরে কথা বলিতে পারি না। এবার সে বলিল, এক লোক এক গোত্রকে ভালবাসে, কিন্তু তাহাদের সঙ্গে সে মিলিত হইতে পারেনি। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ কোন লোক যাকে ভালবাসে ক্বিয়ামাতের দিন সে তার সঙ্গেই থাকিবে। তারপর তিনি আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলিতে থাকলেন। অবশেষে তিনি পাশ্চাত্যে অবস্থিত একটি দরজার কথা উল্লেখ করিলেন যা এত দীর্ঘ যে, একটি সাওয়ারীর সেই দরজার এক প্রান্ত হইতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পার করিতে চল্লিশ কিংবা সত্তর বছর সময় লাগবে। সুফ্‌ইয়ান [রঃ]বলেন, পাশ্চাত্যের সেই দরজা সিরিয়ার দিকে অবস্থিত। যে দিন আল্লাহ তাআলা আকাশসমূহ ও যামীন সৃষ্টি করিয়াছেন সেদিন ঐ দরজাও সৃষ্টি করিয়াছেন। তা তাওবার জন্য খোলা রয়েছে। পশ্চিম দিকে হইতে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত তা রুদ্ধ করা হইবে না।

আল্লাহ তায়ালার জিকির-হাদীসটি হাসান ঃ তালীকুর রাগীব [৪/৭৩].৯৬ নং হাদীসে এর অংশ বিশেষ বর্ণিত হয়েছে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৫৩৬ : যির ইবনি হুবাইশ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি সাফওয়ান ইবনি আসসাল আল-মুরাদী [রাদি.] এর কাছে আসলাম। তিনি আমাকে বলিলেন তোমাকে কিসে নিয়ে এসেছে? আমি বললাম জ্ঞানের সন্ধানে। তিনি বলিলেন, আমি অবগত হয়েছি যে, জ্ঞান অন্বেষণকারীর কাজের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে ফেরেশতাগণ তার জন্য তাহাদের পাখা বিছিয়ে দেন। যির [রঃ] বলিলেন, মলমূত্র ত্যাগের পর মোজাদ্বয়ের উপর মাসাহ করা প্রসঙ্গে আমার মনে একটা দ্বিধার সঞ্চার হয়েছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে আপনি এ প্রসঙ্গে কিছু জানেন কি? তিনি বলিলেন হ্যাঁ। আমাদেরকে তিনি হুকুম দিয়েছেন যে, আমরা সফররত অবস্থায় নাপাকীর গোসলের প্রয়োজন না হলে যেন তিন দিন ও তিন রাত পর্যন্ত আমাদের মোজা না খুলি। মলমূত্র ত্যাগ ও ঘুমানোর কারণেও তা খোলার প্রয়োজন নেই। যির [রঃ] বলিলেন, আমি পুনরায় বললাম, আপনি ভালবাসা প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে কিছু জানেন কি? তিনি বলিলেন হ্যাঁ। কোন এক সফরে আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সথে ছিলাম। লোকদের একেবারে পেছন হইতে এক লোক খুব উচ্চৈঃস্বরে তাঁকে ডাক দিল। লোকটি নির্বোধ বেদুঈন ও রুক্ষ ছিল। সে বলিল, হে মুহাম্মাদ, হে মুহাম্মাদ! লোকেরা তাকে বলিল, থাম! এভাবে আল্লাহ তাআলার নাবীকে সম্বোধন করিতে তোমাকে [কুরআনে] বারণ করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও তাকে তার ন্যায় উচ্চৈঃস্বরে উত্তর দিলেনঃ আস। লোকটি বলিল, এক লোক কোন গোত্র কে ভালবাসে, কিন্তু তাহাদের সঙ্গে সে মিলিত হইতে পারেনি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ কোন লোক যাকে ভালবাসে সে তার সাথী হইবে। যির [রঃ] বলেন, আমার সঙ্গে সাফওয়ান [রাদি.] অবিরত কথা বলে যাচ্ছিলেন। পরিশেষে তিনি আমাকে বলিলেন, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলা তাওবার জন্য পাশ্চাত্যে একটি দরজা রেখেছেন, যার এক প্রান্ত হইতে অন্য প্রান্তের ব্যবধান সত্তর বছরের। সূর্য সেদিক হইতে উদিত না হওয়া পর্যন্ত সেই দরজা বন্ধ হইবে না। আর সে কথার প্রমাণ প্রাচুর্যময় মহান আল্লাহ তাআলার বাণী [অনুবাদ]ঃ এমন একদিন সংঘটিত হইবে যে দিন তোমার প্রভুর কিছু নিদর্শন আসবে, সেই দিন কোন লোকের ঈমান তার কাজে আসবে না যে আগে কখনো ঈমান আনেনি।

হাদীসটি সানাদ সহীহ ঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫৩৭ : ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ রূহ কন্ঠাগত না হওয়া [মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত] পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা বান্দার তাওবাহ্‌ ক্ববূল করেন।

হাদীসটি হাসান ঃ ইবনি মাজাহ হাঃ ৪২৫৩। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৫৩৮ : আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার হারানো মাল ফিরে পেলে যতটা আনন্দিত হয়, তোমাদের কারো তাওবায় [ক্ষমা প্রার্থনায়] আল্লাহ তাআলা তার চাইতে বেশি আনন্দিত হন।

সহীহ ঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[হাঃ ৪২৪৭], মুসলিম। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫৩৯ : আবু আইউব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় বলেন, তোমাদের হইতে আমি একটি বিষয় লুকিয়ে রেখেছি যা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে আমি শুনিয়াছি। আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছিঃ তোমরা যদি গুনাহ না করিতে, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা এমন এক দলের আবির্ভাব করিতেন যারা গুনাহ করত, তারপর আল্লাহ তাআল তাহাদেরকে মাফ করিতেন।

হাদীসটি সহীহ ; সহীহাহ্‌ হাঃ ৯৬৭-৯৭০, ১৯৬৩], মুসলিম। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫৪০ : আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে আমি বলিতে শুনিয়াছি ঃ বারাকাতময় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হে আদম সন্তান! যতক্ষণ আমাকে তুমি ডাকতে থাকিবে এবং আমার হইতে [ক্ষমা পাওয়ার] আশায় থাকিবে, তোমার গুনাহ যত অধিক হোক, তোমাকে আমি ক্ষমা করব, এত কোন পরওয়া করব না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ্‌র পরিমাণ যদি আসমানের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্তও পৌছে যায়, তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি পরওয়া করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি সম্পূর্ণ পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়েও আমার নিকট আস এবং আমার সঙ্গে কাউকে অংশীদার না করে থাক, তাহলে তোমার কাছে আমিও পৃথিবী পূর্ণ ক্ষমা নিয়ে হাযির হব।

সহীহ ঃ সহীহাহ্‌ [হাঃ ১২৭, ১২৮], রাওযুন নাযীর [হাঃ ৪৩২], মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [হাঃ ২৩৩৬] তালীকুর রাগীব [হাঃ ২/২৬৮]। আবু ঈসা বলেন , হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীস আমারা শুধুমাত্র উপর্যুক্ত সনদেই অবগত হয়েছি। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

অনুচ্ছেদ-১০০ঃ আল্লাহ তাআলা একশত রাহমাত সৃষ্টি করিয়াছেন

৩৫৪১ : আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা একশত রহমাত সৃষ্টি করিয়াছেন, তা হইতে কেবল একটি রহমাত তাহাঁর সৃষ্টিকুলের মাঝে রেখেছেন, তার মধ্যমে তারা একে অপরের প্রতি দয়া ও অনুকম্পা প্রদর্শন করে। আর বাকি নিরানব্বইটি রহমাত আল্লাহ তাআলার নিকট রয়েছে।

হাদীসটি সহীহ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[হা.৪২৯৩, ৪২৯৪], মুসলিম। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫৪২ : আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন যদি মুমিন বান্দা অবগত থাকত যে কি ভীষণ শাস্তি আল্লাহ তাআলার কাছে তৈরী রয়েছে তাহলে কেউই জান্নাতে প্রবেশের কামনা করত না। আর যদি কাফির লোক অবগত থাকত যে আল্লাহ্‌র কাছে কি অপরিসীম দয়া রয়েছে তাহলে কেউই জান্নাতে প্রবেশে আশাহইতে নিরাশ হত না।

সহীহঃ সহীহাহ্‌ [১৬৩৪], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ অনুরুপ বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫৪৩ : আবু হুরাইরাহ্‌[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন যখন আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেন, সে সময় নিজের হাতে নিজের উপর অনিবার্য করে লিখে নিয়েছেন ঃ আমার রাহমাত আমার ক্রোধের উপর বিজয়ী থাকিবে।

হাসান সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৮৯], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

৩৫৪৪ : আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদে প্রবেশ করিলেন, সে সময় এক লোক নামাজ আদায় করে দুয়া করছিল এবং সে তার দুয়ায় বলছিল

اللَّهُمَّ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ

আল্লা-হুম্মা লা ইলা-হা ইল্লা আনতাল মান্নানু বাদীউ’স্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল-আরদ্বি, যাল জালা-লি ওয়াল-ইকরা-ম।

হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই, তুমি পরম অনুগ্রহকারী, আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, অসীম ক্ষমতাবান ও মহাসম্মানিত।

নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা কি জানো আল্লাহ তাআলার নিকট সে কিসের মাধ্যমে দুয়া করেছে? সে আল্লাহ তাআলার নিকটে তাহাঁর মহান নাম এর মাধ্যমে দুয়া করেছে। যে নামে দুয়া করা হলে তিনি তা ক্ববূল করেন এবং ঐ নামের মাধ্যমে প্রার্থনা করা হলে তিনি দান করেন।

আল্লাহ তায়ালার জিকির -সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩৮৫৮] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply