অভিশাপ, ক্রোধ, চোগলখোর, নম্রতা ও বদ দোয়া নিয়ে হাদিস

অভিশাপ, ক্রোধ, চোগলখোর, নম্রতা ও বদ দোয়া নিয়ে হাদিস

অভিশাপ, ক্রোধ, চোগলখোর, নম্রতা ও বদ দোয়া নিয়ে হাদিস >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ২৫, অনুচ্ছেদঃ (৬৮-৮৬)=১৯টি

৬৮. অনুচ্ছেদঃ অত্যাচারিতের বদ-দুআ
৬৯. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চরিত্র বৈশিষ্ট্য
৭০. অনুচ্ছেদঃ উত্তমভাবে ওয়াদা পালন
৭১. অনুচ্ছেদঃ উন্নত চারিত্রিক গুণ
৭২. অনুচ্ছেদঃ অভিশাপ ও তিরস্কার করা।
৭৩. অনুচ্ছেদঃ অধিক ক্রোধ বা উত্তেজনা
৭৪. অনুচ্ছেদঃ ক্রোধ নিয়ন্ত্রন প্রসঙ্গে
৭৫. অনুচ্ছেদঃ বড়দের সম্মান করা
৭৬. অনুচ্ছেদঃ পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারীদের প্রসঙ্গে
৭৭. অনুচ্ছেদঃ ধৈর্য ধারণ করা
৭৮. অনুচ্ছেদঃ দ্বিমুখীপনা প্রসঙ্গে
৭৯. অনুচ্ছেদঃ চোগলখোর [পরোক্ষে নিন্দাকারী] প্রসঙ্গে
৮০. অনুচ্ছেদঃ অল্প কথা বলা
৮১. অনু্চ্ছেদঃ বক্তৃতা-ভাষণেও রয়েছে যাদুকরী প্রভাব
৮২. অনু্চ্ছেদঃ বিনয় ও নম্রতা প্রসঙ্গে
৮৩. অনু্চ্ছেদঃ যুলুম-অত্যাচার প্রসঙ্গে
৮৪. অনু্চ্ছেদঃ নিয়ামাতের মধ্যে ত্রুটি সন্ধান করা অনুচিত
৮৫. অনু্চ্ছেদঃমুমিন লোকেকে সম্মান প্রদর্শন করা
৮৬. অনুচ্ছেদঃ অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে

৬৮. অনুচ্ছেদঃ অত্যাচারিতের বদ-দুআ

২০১৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুআয [রাদি.]-কে ইয়ামানে প্রেরণের সময় বলেনঃ অত্যাচারিতের বদ-দুআকে ভয় কর। কেননা, তার বদ-দুআ এবং আল্লাহ্ তাআলার মাঝখানে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।

বদ দোয়া নিয়ে হাদিস-সহিহ, সহীহ আবু দাঊদ [১৪১২] , বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, আনাস, আবু হুরাইরা, আবদুল্লাহ ইবনি আমর ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু মাবাদের নাম না-ফিয। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৯. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চরিত্র বৈশিষ্ট্য

২০১৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন আমি দশবছর যাবতকাল ধরে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সেবা-যত্ন করেছি। তিনি আমার প্রতি কখনো উহ্ শব্দটিও উচ্চারণ করেননি [অসন্তোষ প্রকাশ করেননি]। তিনি আমার কোন কাজে কখনো অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেননি যে, এটা তুমি করলে কেন অথবা কোন কাজ ছুটে যাওয়ার কারণেও তিনি বলেননি যে, এটা তুমি কেন করলে না। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ছিলেন সবচাইতে উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মানুষ। আমি রেশম এবং পশম মিশিয়ে বানানো কাপড়ও নিজ হাতে ছুয়ে দেখেছি এবং খাঁটি রেশমী কাপড়ও ছুয়েছি কিন্তু রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হাতের চেয়ে অধিক নরম ও মসৃন কোন কিছু স্পর্শ করিনি। আমি মৃগনাভির গন্ধও গ্রহণ করেছি এবং আতরের গন্ধও গ্রহণ করেছি কিন্তু রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর শরীরের ঘামের চেয়ে অধিক সুগন্ধ কোন কিছুতেই পাইনি।

সহীহ, মুখতাসার শামা-ইল [২৯৬] , বূখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, আইশা ও বারাআ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২০১৬. আবু আবদুল্লাহ আল-জাদালী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চরিত্র-মাধুর্য সম্বন্ধে আইশা [রাদি.]-কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কখনো অশ্লীল ও কটুভাষী ছিলেন না, অশ্লীল ব্যবহারও করেননি। তিনি কখনো বাজারে গিয়ে হট্টগোল করিতেন না এবং অন্যায়ের দ্বারা অন্যায়ের প্রতিশোধ নেননি। বরং তিনি উদার মন নিয়ে ক্ষমা করে দিতেন।

সহীহ, মুখতাসার শামা-ইল [২৯৮] , মিশকাত [৫৮২০] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। আবু আবদুল্লাহ আল-জাদালীর নাম আবদ ইবনি আবদ, মতান্তরে আবদুর রাহমান ইবনি আব্‌দ। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭০. অনুচ্ছেদঃ উত্তমভাবে ওয়াদা পালন

২০১৭. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার খাদীজা [রাদি.]-এর উপর যতটুকু ঈর্ষা হয়েছিল, এতটুকু পরিমাণ ঈর্ষা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আর কোন স্ত্রীর উপর হয়নি। অথচ আমি তাঁকে পাইনি। আমার ঈর্ষার কারণ ছিল, তাঁকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বেশি বেশি স্মরণ করিতেন। তিনি কখনো ছাগল যবেহ করলে খাদীজা [রাদি.]-এর বান্ধবীদের খুঁজে খুঁজে তার গোশত্ উপহার স্বরূপ প্রদান করিতেন।

সহীহ, বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব সহিহ, সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭১. অনুচ্ছেদঃ উন্নত চারিত্রিক গুণ

২০১৮. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সর্বোত্তম তোমাদের মধ্যে সে-ই আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় এবং কিয়ামাত দিবসেও আমার খুবই নিকটে থাকিবে। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার নিকট সবচেয়ে বেশি ঘৃণ্য সে ব্যক্তি কিয়ামাত দিবসে আমার নিকট হইতে অনেক দূরে থাকিবে তারা হলোঃ বাচাল, ধৃষ্ট-নির্লজ্জ এবং অহংকারে মত্ত ব্যক্তিরা। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ] ! বাচাল ও ধৃষ্ট-দাম্ভিকদের তো আমরা জানি কিন্তু মুতাফাইহিকূন কারা? তিনি বললেনঃ অহংকারীরা।

সহীহ, সহীহাহ্ [৭৯১। অবূ ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান ও উপরোক্ত সূত্রে গারীব। একদল বর্ণনাকারী তাহাদের বর্ণনায় আবদু রব্বিহি ইবনি সাঈদের নাম উল্লেখ করেননি। তারা  মুবারাক ইবনি ফাযালার মাধ্যমে মুহাম্মাদ ইবনিল মুনকাদির হইতে জাবির [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। এই সূত্রটিই অনেক বেশি সহিহ। আস-সারসার যে লোক বেশি কথা বলে [বাচাল]। আল-মুতাশাদ্দিক মানুষের সামনে যে লোক লম্বা লম্বা কথা বলে বেড়ায়, ধৃষ্টতাপূর্ণ ও অশালীন উক্তি করে, নির্লজ্জ ও দাম্ভিকতাপূর্ণ কথা বল। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭২. অনুচ্ছেদঃ অভিশাপ ও তিরস্কার করা।

২০১৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমিন ব্যক্তি কখনো অভিশাপকারী হইতে পারে না।

বদ দোয়া নিয়ে হাদিস-সহীহ, মিশকাত তাহকীক সানী [৪৮৪৮] , জিলালুল জান্নাত [১০১৪]। আবু ঈসা বলেন, ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীসটিকে অন্য একদল বর্ণনাকারী উল্লেখিত সনদসূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ “মুমিনের জন্য অভিশাপকারী হওয়া শোভনীয় নয়” এ হাদীসটি পূর্বের হাদীসের ব্যাখ্যা। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৩. অনুচ্ছেদঃ অধিক ক্রোধ বা উত্তেজনা

২০২০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট একজন লোক এসে বলিল, আমাকে কিছু শিখিয়ে দিন, তবে আমাকে বেশি বলবেন না, যাতে আমি তা মুখস্থ করিতে পারি। তিনি বললেনঃ ক্রোধ প্রকাশ করো না, উত্তেজিত হয়ো না। লোকটি তার কথার পুনরাবৃত্তি করলে প্রতিবারই তিনি বললেনঃ ক্রোধ প্রকাশ করো না, উত্তেজিত হয়ো না।

সহীহ, বুখারী। আবু ঈসা বলেন, আবু সাঈদ ও সুলাইমান ইবনি সারদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ এবং উল্লেখিত সনদসূত্রে গারীব। আবু হাসীনের নাম উসমান, পিতা আসিম আল-আসাদী। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৪. অনুচ্ছেদঃ ক্রোধ নিয়ন্ত্রন প্রসঙ্গে

২০২১. সাহ্‌ল ইবনি মুআয ইবনি আনাস আল-জুহানী [রাদি.] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক তার ক্রোধকে বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা রেখেও তা নিয়ন্ত্রণ করে-আল্লাহ্‌ তাআলা কিয়ামাত দিবসে তাকে সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে এনে জান্নাতের যে কোন হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেয়ার অধিকার দিবেন।

সহীহ, সহীহাহ্ [১৭৫০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৫. অনুচ্ছেদঃ বড়দের সম্মান করা

২০২২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ যে যুবক প্রবীণ ব্যক্তিকে সম্মান করিবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করবেন যে তাকে তার প্রবীণ বয়সে সম্মান করিবে।

যঈফ, যঈফা [৩০৪], মিশকাত [৪৯৭১] আবু ঈসা বলেছেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র এই শাইখ অর্থাৎ ইয়াযীদ ইবনি বাইয়ানের সূত্রেই এই হাদীস জেনেছি। সনদে আবুর রিজাল আনসারী নামক আরও একজন রাবী আছেন। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৭৬. অনুচ্ছেদঃ পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারীদের প্রসঙ্গে

২০২৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতের দরজাগুলো সোমবার ও বৃহস্পতিবার খুলে দেয়া হয়। যেসব পাপী আল্লাহ্‌ তাআলার সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন করেনি তাহাদেরকে মাফ করে দেয়া হয়। কিন্তু পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারীর ব্যাপারে [আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন] ঃ এদেরকে ফিরিয়ে দাও যে পর্যন্ত না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে।

সহীহ, ইরওয়া [৩/১০৫] , গাইয়াতুল মারাম [৪১২] , মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। কোন কোন হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ “এদের উভয়ের বিষয়টি মুলতবি রাখ যে পযন্ত না নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্ক সংশোধন করে নেয়।” “আল-মুহ্তাজিরাইনি” বলিতে এমন দুইজনকে বুঝানো হয়েছে, যারা পরস্পর সম্পর্ক ছিন্ন করে একজন অন্যজনের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে। এটি ঐ হাদীসের মতো যাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “কোন মুসলমান ব্যক্তির পক্ষে তিনদিনের বেশি সময় তার ভাইকে ছেড়ে থাকা বৈধ নয়”। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৭. অনুচ্ছেদঃ ধৈর্য ধারণ করা

২০২৪. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আনসারদের কয়েকজন লোক রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে যৎসামান্য সাহায্য প্রার্থনা করিল। তাহাদেরকে তিনি তা দিলেন। তারা আরো চাইলে তিনি তাহাদেরকে তা দিলেন। তারপর তিনি বললেনঃ আমার নিকট যে সম্পদই আছে তোমাদের তা না দিয়ে কখনো জমা করে রাখি না। যে স্বনির্ভর হইতে চায় আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে স্বনির্ভর করেন। যে [অপরের নিকট চাওয়া হইতে] সংযমী হইতে চায় আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে সংযমী করেন। যে ধৈর্যশীল হইতে চায়, আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে ধৈর্যের তাওফীক দেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি কল্যাণকর প্রাচর্যপুর্ণ কোন সম্পদ কাউকে দেয়া হয়নি।

সহীহ, তালীকুর রাগীব [২/১১] . সহীহ আবু দাউদ [১৪৫১] , বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ঈমাম মালিকের বর্ণনায় আছে “ফালান আযখারাহু আনকুম”, অর্থ একই [তোমাদেরকে না দিয়ে আমি তা জমা করে রাখি না]। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৮. অনুচ্ছেদঃ দ্বিমুখীপনা প্রসঙ্গে

২০২৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে দ্বিমুখী স্বভাবের মানুষেরা আল্লাহ্ তাআলার নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলে গন্য হইবে।

সহীহ, সহীহুল জামি [২২২৬] , সহীহুল আদাবিল মুফরাদ [৯৮৭] , বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, আম্মার ও আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৯. অনুচ্ছেদঃ চোগলখোর [পরোক্ষে নিন্দাকারী] প্রসঙ্গে

২০২৬. হাম্মাম ইবনিল হারিস [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হুযাইফা ইবনিল ইয়ামান [রাদি.]-কে একজন লোক অতিক্রম করে যাচ্ছিল। তাকে বলা হলো, এই লোক জনসাধারণের কথা প্রশাসকদের কানে পৌঁছিয়ে দেয়। [একথা শুনে] হুযাইফা [রাদি.] বলিলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ চোগলখোর জান্নাতে যেতে পারবে না।

সহীহ, সহীহাহ্ [১০৩৪] , গাইয়াতুল মারাম [৪৩৩] , বুখারী, মুসলিম। সুফিয়ান বলেন, “আল-কাত্তাত” অর্থ চোগলখোর। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ, সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮০. অনুচ্ছেদঃ অল্প কথা বলা

২০২৭. আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ লজ্জা-সম্ভ্রম ও অল্প কথা বলা ঈমানের দুইটি শাখা। অশ্লীলতা ও বাকপটুতা [বাচালতা] নিফাকের [মুনাফিকীর] দুইটি শাখা।

সহীহ, ঈমান ইবনে আবী শাইবা [১১৮] , মিশকাত তাহকীক ছানী [৪৭৯৬]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এটিকে আবু গাসান মুহাম্মাদ ইবনি মুতারিরকের হাদীস হিসাবে জেনেছি। বর্ণনাকারী বলেন, আল-আয়্যু অর্থ স্বল্পবাক আল-বাযা-য়ু অর্থ অশ্লীল ও নির্লজ্জবাক আল-বায়ান অর্থ বাকপটু, বাক্যবাগীশ। যেমন পেশাধারী বক্তারা লম্বা লম্বা বক্তৃতা দিয়ে বেড়ায়, কথার বন্যা ছুটিয়ে দেয় এবং বাকপটুতার আশ্রয় নিয়ে মানুষের এমন সব প্রশংসা করিতে থাকে, যা আল্লাহ্‌ তাআলা মোটেই পছন্দ করেন না। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮১. অনু্চ্ছেদঃ বক্তৃতা-ভাষণেও রয়েছে যাদুকরী প্রভাব

২০২৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আমলে দুইজন লোক এসে উপস্থিত হয়। তারা দুজনে এরকম জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিল যে, জনগণ আশ্চর্য্ হয়ে গেল। তখন আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন কোন বক্তৃতায় যাদু রয়েছে অথবা কোন কোন ভাষণে রয়েছে যাদুকরী প্রভাব।

সহীহ্ঃ বুখারী। আবু ঈসা বলেন, আম্মার, ইবনি মাসউদ ও আবদুল্লাহ ইবনিশ শিখখীর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮২. অনু্চ্ছেদঃ বিনয় ও নম্রতা প্রসঙ্গে

২০২৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যাকাত বা দানের কারনে কখনো সম্পদের কমতি হয় না। অবশ্যই ক্ষমা ও উদারতার দ্বারা আল্লাহ্‌ তাআলা মান-সম্মান বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ্‌ তাআলার সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে যে লোক বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে অতি মর্যাদা সম্পন্ন করেন।

সহীহ, ইরওয়া [২২০০] , সহীহাহ [২৩২৮] , মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, আবদুর রাহমান ইবনি আওফ, ইবনি আব্বাস ও আবু কাবশা আমর ইবনি সাদ আল-আনসা-রী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৩. অনু্চ্ছেদঃ যুলুম-অত্যাচার প্রসঙ্গে

২০৩০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে যুলুম-অত্যাচার অন্ধকারের মতো আবির্ভূত হইবে।

সহীহ, বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, আবদুল্লাহ্‌ ইবনি আমর, আইশা, আবু মূসা, আবু হুরাইরা ও জাবির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি উমারের হাদীস হিসাবে এ হাদীসটি হাসান সহীহ্‌ গারীব। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৪. অনু্চ্ছেদঃ নিয়ামাতের মধ্যে ত্রুটি সন্ধান করা অনুচিত

২০৩১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] কোন খাদ্যের উপর কখনো দোষারোপ করিতেন না। রুচি হলে খেতেন আর না হয় পরিত্যাগ করিতেন।

সহীহ, বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। আবু হাযিম হলেন আল-আশজাঈ আল-কূফী, তার নাম সালমান, আয্‌যা আল-আশজাইয়ার মুক্তদাস। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৫. অনু্চ্ছেদঃমুমিন লোকেকে সম্মান প্রদর্শন করা

২০৩২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] মিম্বারে উঠে চিৎকার দিয়ে বললেনঃ হে ঐ জামাআত, যারা মুখে ইসলাম ক্ববূল করেছ কিন্তু অন্তরে এখনো ঈমান মাজবুত হযনি! তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিবে না, তাহাদের লজ্জা দিবেনা এবং তাহাদের গোপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইবে না। কেননা, যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধানে নিয়োজিত হইবে আল্লাহ্ তাআলা তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ্‌ তাআলা প্রকাশ করে দিবেন তাকে অপমান করে ছাড়বেন, সে তার উটের হাওদার ভিতরে অবস্থান করে থাকলেও।

বর্ণনাকারী [নাফি] বলেন, একদিন ইবনি উমার [রাদি.] বাইতুল্লাহ বা কাবার দিকে তাকিয়ে বলিলেন, তুমি কতই না ব্যাপক ও বিরাট! তুমি কতইনা সম্মানি তা কিন্তু তোমার চেয়েও মুমিনের সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ্‌ তাআলার নিকটে অনেক বেশি।

হাসান, মিশকাত [৫০৪৪] , তালীকুর রাগীব [৩/২৭৭]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধু হুসাইন ইবনি ওয়াকিদের সূত্রেই জেনেছি। ইসহাক ইবনি ইবরাহীম আস-সামারকান্দী-হুসাইন ইবনি ওয়াকিদ হইতে একইরকম বর্ণনা করিয়াছেন। আবু বারযা আল-আসলামী [রাদি.]-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]-এর হইতে একইরকম বর্ণিত আছে। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৮৬. অনুচ্ছেদঃ অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে

২০৩৩. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিই সহনশীল ও ধৈর্যশীল হয় এবং অভিজ্ঞতা ছাড়া বিচক্ষণ ও প্রজ্ঞাবান হওয়া যায় না।

যঈফ, মিশকাত [৫০৫৬] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু উল্লেখিত সনদসূত্রেই এ হাদীসটি জেনেছি। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৮৭. অনু্চ্ছেদঃকিছু না পেয়ে পাওয়ার ভান করা

২০৩৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কাউকে কিছু দান করা হলে পরে তার [দান গ্রহীতার] সংগতি হলে সে যেন এর প্রতিদান দেয়। সংগতি না হলে সে যেন তার প্রশংসা করে। কেননা, যে লোক প্রশংসা করিল সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিল। আর যে তা গোপন রাখল সে অকৃতজ্ঞ হলো। যে লোক এমন কিছু পাওয়ার ভান করিল যা তাকে দান করা হয়নি, সে যেন ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার দুটি পোশাক পরল।

হাসান, সহীহাহ [২৬১৭] , তালীকুর রাগীব [২/৫৫]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আসমা বিনতু আবী বাক্‌র ও আইশা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। “মান কাতামা ফাকাদ কাফারা”-এর অর্থ “যে অনুগ্রহ গোপন করিল সে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিল”। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২০৩৫. উসামা ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কাউকে অনুগ্রহ করা হলে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে, “তোমাকে আল্লাহ্‌ তাআলা কল্যাণকর প্রতিদান দিন” তবে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করিল।

সহীহ মিশকাত [৩০২৪] , তালীকুর রাগীব [২/৫৫] , রাওযুন নাযীর [৮]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান, জায়্যিদ [উত্তম] গারীব। এটিকে শুধূমাত্র উক্ত সনদে উসামা ইবনি যাইদ [রাদি.]-এর হাদীস বলে আমরা জানি। রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]-এর অনুরূপ হাদীস আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও বর্ণিত হয়েছে। আমি মুহাম্মদ [বুখারীকে] কে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি এটি জানেন না বলেছেন। আব্দুর রহিব ইবনি হাযিম আল বালখী হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মাক্কী ইবনি ইবরাহীমকে বলিতে শুনিয়াছি, আমরা ইবনি জুরাইজ আল-মাক্কীর নিকট উপস্থিত ছিলাম এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে তার নিকট কিছু চাইল। ইবনি জুরাইজ তার অর্থ সচিবকে বলিলেন তাকে একটি দীনর দিন। সে বলিল, আমার নিকট একটি দীনার ব্যতীত আর কিছু নেই। এটি তাকে দান করলে আমার আপনার পরিবারের সবাইকে উপোস করিতে হইবে। এ কথা শুনে তিনি রাগান্বিত হলেন এবং বললেনঃ তাকে সেটা দাও। মাক্কী বলেন, আমরা ইবনি জুরাইজের নিকট থাকাবস্থায়ই এক ব্যক্তি একটি চিঠি এবং একটি থলে নিয়ে উপস্থিত হলেন। যাহা তার কোন ভাই তার নিকট পাঠিয়েছেন। চিঠিতে লিখাছিল আমি পঞ্চাশটি দীনার পাঠাইলাম। বর্ণনাকারী বলেন, ইবনি জুরাইজ থলেটি খুলে দীনার গননা করিলেন। তাতে তিনি [৫১] একান্নটি দীনার পেলেন। এতে ইবনি জুরাইজ তার অর্থ সচীবকে বললেনঃ তুমি একদীনার দান করেছ, আল্লাহ্‌ সেটা তোমাকে ফেরত দিয়েছেন তার সাথে অতিরিক্ত আরো পঞ্চাশটি দিয়েছেন। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply