ইসলামের ক্রয় বিক্রয় বিধি বিধান বিষয়ক হাদীস

ইসলামের ক্রয় বিক্রয় বিধি বিধান বিষয়ক হাদীস

ইসলামের ক্রয় বিক্রয় বিধি বিধান বিষয়ক হাদীস >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ১২, অনুচ্ছেদঃ (৩৪-৫৩)=২০টি

৩৪. অনুচ্ছেদঃ প্রতিনিধি কর্তৃক দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করে মূলধন ও মুনাফা মালিককে দিয়ে দেয়া
৩৫. অনুচ্ছেদঃ মুকাতাব গোলামের মূল্য পরিশোধ করার মত টাকা থাকলে
৩৬. অনুচ্ছেদঃ দেউলিয়া লোকের নিকট পাওনাদারের মাল পাওয়া গেলে
৩৭. অনুচ্ছেদঃ কোন মুসলমানের পক্ষে কোন যিম্মীকে শারাব [মদ] বিক্রয় করিতে দেওয়া নিষেধ
৩৮. অনুচ্ছেদঃ আমানাতদারী রক্ষা করা
৩৯. অনুচ্ছেদঃ আরিয়া অর্থাৎ ধারে নিয়ে আসা জিনিস ফেরত দিতে হইবে
৪০. অনুচ্ছেদঃ মজুতদারি [ইহ্‌তিকার] প্রসঙ্গে
৪১. অনুচ্ছেদঃ স্তনে দুধ জমিয়ে পশু বিক্রয় করা প্রসঙ্গে
৪২. অনুচ্ছেদঃ কোন মুসলমানের সম্পদ আত্মসাতের জন্য মিথ্যা শপথ করা
৪৩. অনুচ্ছেদঃ ক্রেতা-বিক্রেতা পরস্পরের মধ্যে মতবিরোধ হলে
৪৪. অনুচ্ছেদঃ উদ্বৃত্ত পানি বিক্রয় করা
৪৫. অনুচ্ছেদঃ পাল দেওয়ার উদ্দেশ্যে ষাঁড় প্রদান করে মজুরি নেওয়া উচিত নয়
৪৬. অনুচ্ছেদঃ কুকুরের বিক্রয় মূল্য প্রসঙ্গে
৪৭. অনুচ্ছেদঃ রক্তক্ষরণ কাজের বিনিময়ে মজুরি গ্রহণ করা
৪৮. অনুচ্ছেদঃ রক্তক্ষরণ কাজের মজুরি নেওয়ার অনুমতি প্রসঙ্গে
৪৯. অনুচ্ছেদঃ কুকুর ও বিড়ালের বিক্রয় মূল্য নেওয়া মাকরূহ
৫১. অনুচ্ছেদঃ গায়িকা ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ
৫২. অনুচ্ছেদঃ দুই সহোদর ভাই অথবা মা ও সন্তানকে বিক্রয়ের সময় পৃথক করা নিষেধ
৫৩. অনুচ্ছেদঃ গোলাম কিনে তাকে কাজে নিযুক্ত করার পর দোষ-ত্রুটি ধরা পড়লে

৩৪. অনুচ্ছেদঃ প্রতিনিধি কর্তৃক দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করে মূলধন ও মুনাফা মালিককে দিয়ে দেয়া

১২৫৭. হাকীম ইবনি হিযাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজের জন্য এক দীনারে একটি কুরবানীর পশু কেনার উদ্দেশ্য তাকে [বাজারে] পাঠান। তিনি [এক দীনারে] একটি পশু কিনে [তা আবার বিক্রয় করে] এক দীনার লাভ করেন। এর পরিবর্তে তিনি আরও একটি পশু কিনেন। তারপর তিনি একটি পশু ও এক দীনারসহ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে চলে আসেন। তিনি বললেনঃ বকরীটা কুরবানী কর এবং দীনারটি দান-খাইরাত কর।

ইসলামের ক্রয় বিক্রয় বিধি বিধান-যঈফ, বেচা-কেনার হাদীস অধ্যায়আবু ঈসা বলেন, হাকীম ইবনি হিযামের হাদীসটি আমরা শুধু উল্লেখিত সূত্রেই জেনেছি। আমার মতে হাকীম ইবনি হিযাম [রাদি.] এর নিকট হইতে হাবীব ইবনি আবু সাবিত কিছু শুনেননি।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১২৫৮. উরওয়া আল-বারিকী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে তাহাঁর নিজের জন্য একটি ছাগল কেনার উদ্দেশ্যে একটি দীনার প্রদান করিলেন। আমি তাহাঁর জন্য দুটি ছাগল কিনলাম। আমি এর মধ্য হইতে একটিকে এক দীনারের বিনিময়ে বিক্রয় করে দিলাম। তারপর আমি একটি ছাগল ও একটি দীনারসহ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এলাম। [অধঃস্তন বর্ণনাকারী বলেন] তিনি তাঁকে পুরো ঘটনা বর্ণনা করে শুনালেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌ তোমার ডান হাতের ব্যবসায়ে বারকাত দান করুন। তিনি কূফার অদূরে কুনাসা নামক জায়গায় চলে যান এবং ব্যবসায়ে অনেক মুনাফা অর্জন করেন। ফলে তিনি কূফার সম্পদশালী লোকে পরিণত হন।

ইসলামের ক্রয় বিক্রয় বিধি বিধান-সহীহ্‌, বেচা-কেনার হাদীস।উপরোক্ত হাদীসের মত আবু লাবীদের সূত্রেও বর্ণিত আছে। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম মত দিয়েছেন। একই কথা বলেছেন ঈমাম আহ্‌মাদ ও ইসহাকও। এ হাদীস অনুযায়ী অন্য একদল আলিম মত গ্রহণ করেননি। তাহাদের মধ্যে ঈমাম শাফি অন্যতম। সাঈদ ইবনি যাইদ হাম্মাদ ইবনি যাইদের ভাই, আবু লাবীদের নাম লিমাযাহ্‌ পিতার নাম যাব্বার।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৫. অনুচ্ছেদঃ মুকাতাব গোলামের মূল্য পরিশোধ করার মত টাকা থাকলে

১২৫৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুকাতাব গোলামের দিয়াত বা ওয়ারিসী স্বত্ব পাওয়ার সুযোগ এলে সে যতটুকু পরিমাণ মুক্ত হয়েছে ততটুকু অংশ পরিমাণ মালিক হইবে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরও বলেছেনঃ মুকাতাব গোলামের যতটুকু অংশ মুক্ত তাকে ততটুকু মুক্তির সমান দিয়াত প্রদান করিতে হইবে এবং বাকীগুলোর জন্য গোলামের সমান পরিমাণ দিয়াত প্রদান করিতে হইবে।

ইসলামের ক্রয় বিক্রয় বিধি বিধান-সহীহ্‌, ইরওয়া [১৭২৬]উন্মু সালামা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি কাছীর ও ইকরিমা হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে উপরোক্ত হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। ইকরামার সূত্রে আলী [রাদি.]-এর বক্তব্য হিসাবেও এটাকে খালিদ আল-হাযযা বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীস অনুযায়ী একদল সাহাবী ও তাবিঈ আমল করিয়াছেন। কিন্তু বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও তাবিঈ বলেন, মুকাতাব গোলামের চুক্তিকৃত টাকার মধ্যে এক দিরহাম অনাদায়ী থাকলেও সে গোলামই গণ্য হইবে [এবং গোলামের সমান আইনগত সুযোগ-সুবিধা পাবে]। এই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী, শাফিঈ, আহ্‌মাদ ও ইসহাক।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২৬০. আমর ইবনি শুআইব [রঃ] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [দাদা] বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর এক বক্তৃতায় বলিতে শুনেছিঃ একশত উকিয়া প্রদানের শর্তে কোন লোক তার গোলামকে মুক্তির চুক্তিপত্র প্রদান করিল। সে চুক্তির মূল্য পরিশোধ করিতে থাকল। কিন্তু দশ উকিয়া বা দশ দিরহাম পরিমাণ পরিশোধ করিতে সে অসমর্থ হয়ে পড়ল। এরকম পরিস্থিতিতে সে গোলামই রয়ে যাবে।

ইসলামের ক্রয় বিক্রয় বিধি বিধান-হাসান, ইবনি মা-জাহ [২৫১৯]এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গরীব বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও তাবিঈ আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে, মুকাতাব গোলাম গোলামই রয়ে যাবে চুক্তিকৃত পরিমাণ টাকার অল্প পরিমাণ বাকী থাকলেও। হাজ্জাজ ইবনি আরতাত ও আমর ইবনি শুআইব হইতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১২৬১. উম্মু সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কোন মহিলার মুকাতাব ক্রীতদাসের নিকটে নিজেদের স্বাধীন করার মত সম্পদ থাকলে সে যেন তার থেকে পর্দা করে।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২৫২০]

ইসলামের ক্রয় বিক্রয় বিধি বিধান-আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। বিশেষজ্ঞ আলিমদের মতে এই হাদীসের মর্মার্থ হলঃ তাকওয়া ও পরহিযগারী হাসিলের জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পর্দা করা কর্তব্য। তারা বলেন, মুকাতাব ক্রীতদাসের নিকটে নিজেকে মুক্ত করার মত সম্পদ থাকলে সে ক্রীতদাস হিসেবেই বিবেচিত। চুক্তি অনুযায়ী সকল দেনা পাওনা মিটিয়ে দেবার পরই সে মুক্ত বলে বিবেচিত হইবে।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৬. অনুচ্ছেদঃ দেউলিয়া লোকের নিকট পাওনাদারের মাল পাওয়া গেলে

১২৬২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোক দেউলিয়া [মুফলিস] বলে ঘোষিত হওয়ার পরেও কোন ব্যক্তি নিজের মাল পূর্বাবস্থায় তার নিকট পেয়ে গেলে সে তাতে অন্য লোকদের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাবে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৩৫৮], নাসা-ঈসামুরা ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করিয়াছেন। একথা বলেছেন ঈমাম শাফি, আহ্‌মাদ ও ইসহাকও। অন্য একদল আলিম বলেছেন, দেউলিয়াত্ব লোকের নিকট কোন ব্যক্তি তার মাল পূর্বাবস্থায় পেলেও তাকে তা অন্যান্য পাওনাদারদের সাথে সমান ভাগে ভাগ করে নিতে হইবে। কূফাবাসী আলিমদের এই অভিমত।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭. অনুচ্ছেদঃ কোন মুসলমানের পক্ষে কোন যিম্মীকে শারাব [মদ] বিক্রয় করিতে দেওয়া নিষেধ

১২৬৩. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাদের নিকট এক ইয়াতীম বালকের শারাব ছিল। সূরা মাইদা [৯০-৯১ আয়াত] অবতীর্ণ হলে আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে বললাম, এই মদ এক ইয়াতীম বালকের। তিনি বললেনঃ এগুলো ঢেলে ফেলে দাও।

ইসলামের ক্রয় বিক্রয় বিধি বিধান-সহীহ্‌ মিশকাত তাহকীক ছানী [৩৬৪৮], পরবর্তী [১৩১৬] নং হাদীসটি এই হাদীসের সহায়কআবু ঈসা বলেন, আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীসটি একাধিক সূত্রে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম] হইতে বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম মত দিয়েছেন। শারাবকে সিরকাতে পরিবর্তন করাকে তারা মাকরূহ বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে মাকরূহ মনে করার কারণ হলঃ শারাব থেকে সিরকা তৈরীর উদ্দেশ্যে একজন মুসলমানের ঘরে শারাব থাকাটা আপত্তিকর মনে হয়। আল্লাহ্ তাআলাই অধিক ভালো জানেন। শারাব যদি সিরকা অবস্থায় পাওয়া যায় তবে একদল আলিমের মতে এই সিরকা ব্যবহার করা জায়িয। আবুল ওয়াদ্দাকের নাম জুব্‌র পিতা নাওফ।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮. অনুচ্ছেদঃ আমানাতদারী রক্ষা করা

১২৬৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমার নিকট যে লোক কোন কিছু আমানাত রেখেছে তাকে তা ফিরিয়ে দাও। যে লোক তোমার খিয়ানাত করেছে তুমি তার খিয়ানাত [ক্ষতিসাধন] কর না।

সহীহ্‌, মিশকাত [২৯৩৪], সহীহা [৪২৩০], রাওযুন নায়ীর [১৬]এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গরীব বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম মত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, এক লোক নিজের কিছু আমানাত রাখল অন্য লোকের নিকট, কিন্তু সে তা ফিরত দিল না। ঘটনাচক্রে প্রথমোক্ত ব্যক্তির হাতে শেষোক্ত ব্যক্তির কোন মাল এসে পড়লো। এক্ষেত্রে সে লোক যে পরিমাণ সম্পদ প্রথমোক্ত ব্যক্তি হইতে আত্মসাৎ করেছিল, সেই সম্পদ হইতে প্রথমোক্ত ব্যক্তি তার পাওনা পরিমাণ কেটে রাখতে পারবে না, কিন্তু কিছু তাবিঈ কেটে রাখার সম্মতি দিয়েছেন। সুফিয়ান সাওরীও এই মত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এক লোক কিছু দিরহাম রাখল অন্য লোকের নিকট। সে তা আত্মসাৎ করিল। ঘটনাচক্রে প্রথমোক্ত ব্যক্তির হাতে শেষোক্ত ব্যক্তির কিছু দীনার এসে পড়ল। এক্ষেত্রে প্রথমোক্ত ব্যক্তি তার দিরহামের পরিবর্তে দীনার রাখতে পারবে না। হ্যাঁ ঐ ব্যক্তির দিরহাম যদি তার হাতে আসে তাহলে সে তার দিরহামের সমপরিমাণ দিরহাম কেটে রাখতে পারবে।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৯. অনুচ্ছেদঃ আরিয়া অর্থাৎ ধারে নিয়ে আসা জিনিস ফেরত দিতে হইবে

১২৬৫. আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-কে আমি তাহাঁর বিদায় হাজ্জের বক্তৃতায় বলিতে শুনেছিঃ ধার করা বস্তু ফেরত দিতে হইবে, যামিনদার পাওনা পরিশোধ করার দায় বহন করিবে এবং ঋণ পরিশোধ করিতে হইবে।

ইসলামের ক্রয় বিক্রয় বিধি বিধান-সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৩৯৮]সামুরা, সাফওয়ান ইবনি উমাইয়্যা ও আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। এ হাদীসটি একাধিক সূত্রে আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হয়েছে।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২৬৬. সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যা গ্রহণ করেছে তা ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত এর জন্য সে দায়বদ্ধ থাকিবে। কাতাদা বলেন, পরবর্তীতে হাসান এ হাদীস ভুলে যান। ফলে তিনি বলেছেন, সে তোমার আমানতদার, তার উপর এর ক্ষতিপূরণ আরোপ করা হইবে না অর্থাৎ তা আরিয়া।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২৪০০]. আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও তাবিঈ এ হাদীস অনুসারে মত দিয়েছেন। অর্থাৎ কর্জ গ্রহণকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে। শাফিঈ ও আহ্‌মাদের এই মত। অপর একদল সাহাবী ও তাবিঈ বলেছেন, কর্জ গ্রহণকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে না, কিন্তু আমানাতদাতার কথার খিলাপ করলে ক্ষতিপুরণ দিতে হইবে। সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসী আলিমদের এই মত। ইসহাকও এই মত দিয়েছেন।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৪০. অনুচ্ছেদঃ মজুতদারি [ইহ্‌তিকার] প্রসঙ্গে

১২৬৭. মামার ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি নাযলাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ “শুধুমাত্র দুর্নীতিপরায়ণ মানুষই মজুতদারি করে থাকে”। আমি [মুহাম্মাদ ইবনি ইবরাহীম] সাঈদকে বললাম, হে মুহাম্মাদের পিতা! আপনিও তো মজুতদারি করে থাকেন। তিনি বলিলেন, মজুতদারি তো মামারও করিতেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২১৫৪], মুসলিমআবু ঈসা বলেন, সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যিব প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, তিনি তেল, গম ও এই জাতীয় জিনিস মজুত করিতেন।উমার, আলী, আবু উমামা ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। মামার [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীস মোতাবিক আলিমগণ আমল করিয়াছেন। খাদ্যদ্রব্যের মজুতদারি করাকে তারা মাকরূহ বলেছেন। খাদ্যদ্রব্য ব্যতীত অন্য কিছুর মজুতদারি করার পক্ষে কিছু সংখ্যক আলিম অনুমতি দিয়েছেন। ইবনিল মুবারাক বলেছেন, তুলা, ছাগলের চামড়া বা ঐ ধরণের অন্য কিছুর মজুতদারি করাতে কোন সমস্যা নেই।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪১. অনুচ্ছেদঃ স্তনে দুধ জমিয়ে পশু বিক্রয় করা প্রসঙ্গে

১২৬৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বাজারের বাইরে গিয়ে পণ্যদ্রব্য আনিত বণিকদলের সাথে মিলিত হইবে না, পশুর স্তনে দুধ জমিয়ে রাখবে না এবং দাম বৃদ্ধি করে একজন অন্যজনের পণ্য বিক্রয় করে দেওয়ার অপকৌশল অবলম্বন করিবে না।

ইসলামের ক্রয় বিক্রয় বিধি বিধান-হাসান, বেচা-কেনার হাদীসআবু ঈসা বলেন, ইবনি মাসউদ ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীস মোতাবিক আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে কয়েক দিনের দুধ পশুর স্তনে জমিয়ে স্তন ফুলিয়ে তা বিক্রয় করা মাকরূহ। এতে ক্রেতা ধোঁকার মধ্যে পড়ে যায়। এটাও এক ধরণের প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি ।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৪২. অনুচ্ছেদঃ কোন মুসলমানের সম্পদ আত্মসাতের জন্য মিথ্যা শপথ করা

১২৬৯. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মিথ্যা শপথের মাধ্যমে যদি কোন লোক কোন মুসলমানের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করে তবে সে এরূপ অবস্থায় আল্লাহ্ তাআলার সামনে উপস্থিত হইবে যে, তিনি তার প্রতি খুবই অসন্তুষ্ট থাকিবেন। আশআস ইবনি কাইস [রাদি.] বলেন, আল্লাহর শপথ! তিনি এ হাদীসটি আমার সম্পর্কে বলেছেন। আমার ও এক ইয়াহূদীর মধ্যে একটি শরীকানা যমি ছিল। কিন্তু সে আমার অংশ দিতে অস্বীকার করে বসে। আমি তাকে নিয়ে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট আসি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ তোমার সাক্ষীপ্রমাণ আছে কি? আমি বললাম, না। তিনি ইয়াহূদীকে বললেনঃ শপথ কর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ তো শপথ করিবেই এবং আমার সম্পদ আত্মসাৎ করিবে। আল্লাহ তাআলা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ

‏إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً

“যারা আল্লাহ্‌ তাআলার সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথসমূহ সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে বিক্রয় করে, আখিরাতে তাহাদের জন্য কোন অংশ নেই। কিয়ামাতের দিন আল্লাহ্‌ তাআলা না তাহাদের সাথে কথা বলবেন, না তাহাদের প্রতি তাকাবেন আর না তাহাদেরকে পবিত্র করবেন। তাহাদের জন্য রহিয়াছে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি” [সূরাদি. আলে-ইমরান – ৭৭]।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৩২৩], নাসা-ঈআবু ঈসা বলেন, এ অনুচ্ছেদে ওয়াইল ইবনি হুজর, আবু মূসা, আবু উমামা ও ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩. অনুচ্ছেদঃ ক্রেতা-বিক্রেতা পরস্পরের মধ্যে মতবিরোধ হলে

১২৭০. ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্রয়কারী ও ৰিক্রয়কারীদের মধ্যে মত পার্থক্য হলে বিক্রেতার মতই বেশি প্রাধান্য পাবে, তবে ক্রয়কারীর ক্রয় বাতিলের স্বাধীনতা থাকিবে।

সহীহ্‌, ইরওয়া [১৩২২, ১৩২৪], বেচা-কেনার হাদীসএ হাদীসটিকে আবু ঈসা মুরসাল বলেছেন। ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর সাথে কখনও আওন ইবনি আবদুল্লাহ্‌র সাক্ষাৎ ঘটেনি। ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর এ হাদীসটি কাসিম ইবনি আবদুর রাহমানও ইবনি মাসউদ হইতে, তিনি নাৰী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। এ বর্ণনাটিও মুরসাল। ইসহাক ইবনি মানসূর বলেন, আমি ঈমাম আহ্‌মাদকে প্রশ্ন করলাম, ক্রয়কারী ও বিক্রয়কারী একে অপরের সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়লে এবং কোন সাক্ষী না থাকলে কি করিতে হইবে? তিনি বলিলেন, বিক্রেতার মতই বেশি প্রাধান্য পাবে অথবা দুজনই ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করিবে। ঈমাম ইসহাক কিছুটা এভাবে বলেছেন, যার মতকে বিনা প্রমাণে গ্রহণ করা হইবে তাকে শপথ করাতে হইবে। কিছু সংখ্যক তাবিঈও একইরকম কথা বলেছেন। শুরাইহ [রাহঃ] তাহাদের অন্যতম।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪. অনুচ্ছেদঃ উদ্বৃত্ত পানি বিক্রয় করা

১২৭১. ইয়াস ইবনি আবদ আল-মুযানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] পানি বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৪৭৬]. জাবির, বুহাইসা [তার পিতার সূত্রে], আবু হুরাইরা, আইশা, আনাস ও আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইয়াস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী বেশিরভাগ আলিম আমল করার পক্ষে সম্মতি দিয়েছেন।পানি বিক্রয়কে তারা মাকরূহ বলেছেন। এই মত দিয়েছেন ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহ্‌মাদ ও ইসহাক। পানি বিক্রয়ের পক্ষে কিছু আলিম অনুমতি প্রদান করিয়াছেন। তাহাদের মধ্যে হাসান বাসরী অন্যতম।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২৭২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ ঘাস হইতে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে উদ্বৃত্ত পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে লোকদের কোন প্রকার বাধা দেওয়া নিষেধ।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৪৭৮], নাসা-ঈএ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। আবুল মিনহালের নাম আবদুর রাহমান, পিতা মুতঈম। তিনি কূফার অধিবাসী ছিলেন এবং তার নিকট হইতে হাবীব ইবনি আবু সাবিত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। অপরদিকে আবুল মিনহাল সাইয়্যার ইবনি সালামা বাসরার বাসিন্দা ছিলেন এবং তিনি আবু বারযা আল-আসলামী [রাদি.]-এর সহচর ছিলেন।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৫. অনুচ্ছেদঃ পাল দেওয়ার উদ্দেশ্যে ষাঁড় প্রদান করে মজুরি নেওয়া উচিত নয়

১২৭৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, পাল দেওয়ার উদ্দেশ্যে ষাঁড় প্রদান করে মজুরি নিতে নাবী [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, বেচা-কেনার হাদীস, বুখারীআবু হুরাইরা, আনাস ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীসের সমর্থনে একদল আলিম মত দিয়েছেন। পাল দেওয়ার বিনিময়ে পুরস্কার গ্রহণের পক্ষে অন্য একদল আলিম অনুমতি প্রদান করিয়াছেন।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২৭৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

পাল দেওয়ার উদ্দেশ্যে ষাঁড় প্রদান করে মজুরি নেওয়া প্রসঙ্গে নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট কিলাব গোত্রের এক লোক প্রশ্ন করলে তিনি তা নিতে বারণ করেন। সে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা পাল দেওয়ার উদ্দেশ্যে ষাঁড় দেই এবং আমাদেরকে [দাবি ব্যতীতই] পুরস্কার স্বরূপ কিছু দেওয়া হয়। তিনি তাকে এ ধরণের পুরুস্কার নেওয়ার অনুমতি দেন।

সহীহ্‌, মিশকাত তাহকীক ছানী [২৮৬৬], বেচা-কেনার হাদীস।এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গরীব বলেছেন। আমরা এ হাদীসটি শুধু উল্লেখিত সূত্রেই জেনেছি।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৬. অনুচ্ছেদঃ কুকুরের বিক্রয় মূল্য প্রসঙ্গে

১২৭৫. রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রক্তক্ষরণের মজুরি ঘৃণিত, ব্যভিচারের বিনিময় মূল্য জঘন্য এবং কুকুরের বিক্রয় মূল্যও ঘৃণিত।

সহীহ্‌, বেচা-কেনার হাদীস, মুসলিম

উমার, আলী, ইবনি মাসউদ, আবু মাসউদ, জাবির, আবু হুরাইরা, ইবনি আব্বাস, ইবনি উমার ও আবদুল্লাহ ইবনি জাফার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীস মোতাবিক বেশিরভাগ আলিম আমল করিয়াছেন। কুকুরের বিক্রয় মূল্য গ্রহণকে তারা মাকরূহ বলেছেন। এই মত দিয়েছেন ঈমাম শাফি, আহ্‌মাদ ও ইসহাক। শিকারী কুকুরের বিক্রয় মূল্য গ্রহণের পক্ষে কিছু আলিম অনুমতি প্রদান করিয়াছেন।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২৭৬. আবু মাসউদ আল-আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কুকুরের বিক্রয় মূল্য, যিনার বিনিময় এবং গণকের উপঢৌকন গ্রহণ করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২১৫৯], নাসা-ঈএ হাদীসটি হাসান সহীহ্‌।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৭. অনুচ্ছেদঃ রক্তক্ষরণ কাজের বিনিময়ে মজুরি গ্রহণ করা

১২৭৭. মুহাইয়্যিসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রক্তক্ষরণের মজুরি নেওয়ার জন্য রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট অনুমতি চাইলে তিনি তাকে তা নিতে নিষেধ করেন। তিনি তাহাঁর নিকট বারবার কাকুতি-মিনতি করিতে থাকলেন। অবশেষে তিনি বললেনঃ এই আয় তোমার পানি বহনকারী উট এবং তোমার গোলামের খাবারের জন্য খরচ কর।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২১৬৬], বেচা-কেনার হাদীস।রাফি ইবনি খাদীজ, আবু জুহাইফা, জাবির ও সাইব ইবনি ইয়াযীদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। মুহাইয়্যিসা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী কিছু সংখ্যক আলিম আমল করিয়াছেন। ঈমাম আহ্‌মাদ বলেছেন, আমার নিকট রক্তক্ষরণকারী মজুরি নেওয়ার অনুমতি চাইলে আমি তাকে অনুমতি প্রদান করব না এবং নিজের মতের সপক্ষে এই হাদীসটি দলীল হিসাবে উপস্থাপন করব।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৮. অনুচ্ছেদঃ রক্তক্ষরণ কাজের মজুরি নেওয়ার অনুমতি প্রসঙ্গে

১২৭৮। হুমাইদ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রক্তক্ষরণকারীর পারিশ্রমিক প্রসঙ্গে আনাস [রাদি.]-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রক্তক্ষরণ করিয়েছেন। আবু তাইবা তাহাঁর রক্তক্ষরণ করেন। তিনি তাকে দুই সা পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য দেওয়ার হুকুম দেন। তার মালিক পরিবারের সাথে তিনি আলোচনা করলে তারা তার উপর ধার্যকৃত অর্থের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। তিনি বলেনঃ তোমরা যেসব চিকিৎসা গ্রহণ কর সে সবের মধ্যে রক্তক্ষরণ উত্তম চিকিৎসা। অথবা তোমাদের ঔষধগুলোর মধ্যে রক্তক্ষরণ উত্তম ঔষধ।

সহীহ্‌, মুখতাসার শামাইল [৩০৯], বেচা-কেনার হাদীস, নাসা-ঈআলী, ইবনি আব্বাস ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। রক্তক্ষরণের মজুরি গ্রহণের পক্ষে একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও তাবিঈ সম্মতি দিয়েছেন। ঈমাম শাফিরও এই মত।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৯. অনুচ্ছেদঃ কুকুর ও বিড়ালের বিক্রয় মূল্য নেওয়া মাকরূহ

১২৭৯। জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কুকুর ও বিড়ালের বিক্রয় মূল্য নিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২১৬১], মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসের সনদে গরমিল আছে। বিড়ালের মূল্য সম্পর্কে সহীহ্‌ হাদীস নেই। এই হাদীসটি আমাশের কোন কোন শাগরিদ জাবির [রাদি.] হইতেও বর্ণনা করিয়াছেন। আমাশের স্তরে এসে বর্ণনাকারীগণ গরমিল করিয়াছেন। বিড়ালের বিক্রয় মূল্য নেওয়াকে একদল বিশেষজ্ঞ আলিম মাকরূহ বলেছেন, কিন্তু তা গ্রহণের পক্ষে অন্য দল সম্মতি প্রদান করিয়াছেন। এই শেষোক্ত মত পোষণ করেন ঈমাম আহ্‌মাদ ও ইসহাক। হাদীসটি ইবনি ফুযাইল আমাশ হইতে, তিনি আবু হাযিম হইতে, তিনি আবু হুরাইরা হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে অন্যভাবে বর্ণনা করিয়াছেন।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২৮০. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিড়ালের গোশত খেতে এবং এর বিক্রয় মূল্য নিতে নিষেধ করিয়াছেন।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩২৫০]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আবদুর রাযযাক ব্যতীত অন্য কোন বড় আলিম উমার ইবনি যাইদের নিকট হইতে বর্ণনা করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১২৮১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, শিকারী কুকুর ব্যতীত অন্যান্য কুকুরের বিক্রয় মূল্য নিতে নিষেধ করা হয়েছে।

হাসান, তালীক আলা রাওযাতিন্‌ নাদিয়্যাহ্‌ [২/৯৪]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি উল্লেখিত সনদসূত্রে সহীহ্‌ নয়। আবুল মুহাযযিমের নাম ইয়াযীদ, পিতা সুফিয়ান। শুবা ইবনিল হাজ্জাজ তার সমালোচনা করিয়াছেন এবং তাকে দুর্বল বলেছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে জাবির [রাদি.]-ও উল্লেখিত হাদীসের মত একটি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু এই সূত্রটিও সহীহ্‌ নয়।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৫১. অনুচ্ছেদঃ গায়িকা ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ

১২৮২. আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ গায়িকা বিক্রয় কর না, ক্রয়ও কর না এবং তাহাদেরকে গানের প্রশিক্ষণও দিও না। এদের ব্যবসায়ের মধ্যে কোনরকম কল্যাণ নেই এবং এদের বিনিময় মূল্য হারাম। এই আয়াত এ ধরণের লোকদের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেঃ

 وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ 

“মানুষের মধ্যে কিছু এমন ধরণের লোকও আছে, যে মন ভুলানো কথা ক্রয় করে আনে, যেন আল্লাহ্‌ তাআলার পথ হইতে লোকদেরকে তাহাদের অজান্তেই বিভ্রান্ত করিতে পারে এবং আল্লাহ্ তাআলার পথকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। এই ধরণের লোকদের জন্য আছে কঠিন ও অপমানজনক শাস্তি” [সূরাদি. লুকমান-৬]।

যঈফ, সহীহা [২৯২২], তবে আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার ঘটনা বর্ণনা সহীহ্‌।উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আমরা শুধু উল্লেখিত সনদ সূত্রেই আবু উমামা [রাদি.]-এর হাদীসটি জেনেছি। কিছু হাদীস বিশারদ আলী ইবনি ইয়াযীদের সমালোচনা করিয়াছেন এবং তাকে হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল বলেছেন। তিনি একজন সিরিয়ার অধিবাসী ছিলেন।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৫২. অনুচ্ছেদঃ দুই সহোদর ভাই অথবা মা ও সন্তানকে বিক্রয়ের সময় পৃথক করা নিষেধ

১২৮৩. আবু আইয়্যূব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ মা ও তার সন্তানদের পরস্পর হইতে যে ব্যক্তি পৃথক করে ফেলবে, আল্লাহ্ তাআলা ঐ ব্যক্তি ও তার প্রিয়জনকে পরস্পর হইতে কিয়ামাতের দিন পৃথক করে দিবেন।

হাসান, মিশকাত [৩৩৬১]এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১২৮৪. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দুজন ক্রীতদাস দান করেন। এরা ছিল আপন ভাই। আমি তাহাদের একজনকে বেচে দিলাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ হে আলী! তোমার আর একটি গোলাম কোথায়? আমি বিষয়টি তাঁকে জানালে তিনি বললেনঃ তাকে ফেরত নিয়ে আস, তাকে ফেরত নিয়ে আস।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২২৪৯] অন্য শব্দে সংক্ষিপ্তভাবে সহীহ সনদে আবু দাউদে আছে। [২৪১৫]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও তাবিঈ কয়েদীদের বিক্রয় করার সময় [হাদীসে উল্লেখিত সম্পর্ক থাকলে] পরম্পর হইতে আলাদা করিতে মানা করিয়াছেন। অবশ্য কিছু আলিম ইসলামী রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী কয়েদীদের একে অপরের নিকট হইতে আলাদা করে বিক্রয় করার সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু প্রথম মতই বেশী সহীহ। ইবরাহীম নাখঈ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, তিনি মা ও তার সন্তানকে আলাদা আলাদাভাবে বিক্রয় করিয়াছেন। তাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি তার [সন্তানের মায়ের] সম্মতি নিয়ে তা করেছি।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৫৩. অনুচ্ছেদঃ গোলাম কিনে তাকে কাজে নিযুক্ত করার পর দোষ-ত্রুটি ধরা পড়লে

১২৮৫. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফায়সালা করেছেনঃ ক্ষতির দায় বহনের শর্তেই উপকারিতা ভোগের অধিকার সৃষ্টি হয়।

হাসান, ইবনি মা-জাহ [২২৪২, ২২৪৩]এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। হাদীসটি একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করেন।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১২৮৬. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] ফায়সালা করেছেনঃ ক্ষতির দায় বহনের শর্তেই উপকারিতা ভোগের অধিকার সৃষ্টি হয়।

হাসান, দেখুন পূর্বের হাদীসএ হাদীসটি হিশাম ইবনি উরওয়ার সনদসূত্রে হাসান সহীহ্‌ গারীব। হিশাম ইবনি উরওয়া হইতে মুসলিম ইবনি খালিদ এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। জারীরও হিশাম হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। জারীরের বর্ণনায় তাদলীস আছে। জারীর তাদলীস করিয়াছেন।  হিশাম হইতে তিনি তা শুনতে পাননি।“আল-খারাজ বিয-যামান”-এর ব্যাখ্যা হলঃ যেমন এক লোক একটি গোলাম কিনলো । সে তাকে দিয়ে কাজও করাল। তারপর তার নিকট এর দোষ ধরা পড়ল। বিক্রেতাকে গোলামটি ফিরত প্রদান করিতে হইবে, তবে তাকে দিয়ে কাজ করানোর আয় ক্রয়কারীই ভোগ করিবে। কারণ, গোলামটি তার নিকট ফিরতের পূর্বে মৃত্যু বরণ করলে এই আর্থিক ক্ষতি ক্রেতাকেই বহন করিতে হত, বিক্রেতার কোন রকম ক্ষতি হত না। এজন্যই তাকে দিয়ে সুবিধা ভোগের অধিকার অর্জিত হয়েছে। অনুরূপ ক্ষেত্রসমূহে “আল-খারাজ বিয যামান” নীতি প্রযোজ্য। আবু ঈসা বলেন, মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল এই হাদীসটিকে উমার ইবনি আলীর হাদীস হিসেবে গারীব মনে করেন, আমি বললাম, আপনিকি হাদীসটিকে তাদলীস মনে করেন, তিনি বলিলেন, না।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply