যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ pdf – মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন আলবানী

যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ pdf

যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ pdf এর লিঙ্ক সবার নিচে দেয়া আছে। আপনারা আরন পড়তে পারেন রমযান জাল হাদীস ১৪২০ হিঃ , কবর যিয়ারত জাল হা. ১৪১৮হিঃ । ১০০টি জাল হাদিস Unicode নিচে দেয়া হল।

যঈফ ও জাল হাদীছ

১) দ্বীন ( ধর্ম )  হচ্ছে বিবেক , যার দ্বীন নেই তার কোন বিবেক নেই ।

সূত্রঃ “ আল- কুনা ”  এবং  “ আল-কুনা ওয়াল  আসমা ”  গ্রন্থে আবূ মালেক বিশ্‌র ইবনি গালিব সূত্রে যুহরী হতে।  

হাদিসটি বাতিল . বাতিল বলেছেনঃ ঈমাম নাসাঈ ( রাহিমাহুল্লাহ ) , হাফিয ইবনি হাজার ( রাহিমাহুল্লাহ ) , আল্লামা আল আলবানী ( রাহিমাহুল্লাহ ) । আল্লামা ইবনিল কাইয়্যিম ( রাহিমাহুল্লাহ )  বলেনঃ “ বিবেক সম্পর্কে বর্ণিত সকল হাদিস মিথ্যা । ” ( আল- মানার ; পৃঃ ২৫ )

২) পুরুষদের ইচ্ছা ( মনোবল )  পর্বতমালাকে স্থানচ্যূত করতে পারে।                    

এটি হাদিস নয়। বাতিল বলেছেনঃ ইসমাঈল আজলুনী ( রাহিমাহুল্লাহ ) এর মন্তব্য – “ এটি যে হাদিস তা সম্পর্কে অবহিত হতে পারি নি । ”  ( কাশফুল খাফা ) , আল্লামা আল আলবানী ( রাহিমাহুল্লাহ ) ।

৩) মসজিদের মধ্যে কথোপকথন পূণ্যগুলোকে খেয়ে ফেলে যেমনভাবে চতুষ্পদ জন্তুগুলো ঘাস খেয়ে ফেলে ।

হাদিসটি ভিত্তিহীন। সূত্রঃ “ আল- ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন ” ; ( ১ / ১৩৬ ) বাতিল বলেছেনঃ হাফিয ইরাকী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , হাফিয ইবনি হাজার ( রাহিমাহুল্লাহ ) , আব্দুল ওয়াহাব সুবকী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , আল্লামা আল আলবানী ( রাহিমাহুল্লাহ )

৪) দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ ।                    

হাদিসটি জাল। জাল বলেছেনঃ ঈমামসাগানী ( রাহিমাহুল্লাহ )  ও অন্যান্য ইমামরা ।

৫) যে ব্যক্তি নিজেকে চিনেছে , সে তার প্রভুকে চিনতে সক্ষম হয়েছে।

হাদিসটির কোন ভিত্তি নেই। বাতিল বলেছেনঃ  ঈমামনববী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , ঈমামইবনি তাইমিয়্যাহ ( রাহিমাহুল্লাহ ) হাফিয সাখাবী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , ঈমামসূয়ুতী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , শাইখ আল- কারী ( রাহিমাহুল্লাহ ) । ফিরোযাবাদী ( রাহিমাহুল্লাহ )  বলেনঃ  যদিও অধিকাংশ লোক এটিকে নবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )  এর হাদিস বলে চালাচ্ছেন , তবুও এটি নবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )  এর হাদীসের অন্তর্ভুক্ত নয়। এর ভিত্তিই সহীহ নয় । এটি ইসরাইলীদের বর্ণনায় বর্ণিত ।

৬) নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ জুমআর দিবসে পাগড়ী ধারীদের প্রতি দয়া করেন।                    

হাদিসটি জাল। সূত্রঃ “ আল মুজামাল কাবীর ”  এবং “ আল- হিলইয়াহ ”  ( ৫ / ১৮৯- ১৯০ )  গ্রন্থে  আলা ইবনি আমর হানাফী সূত্রে আইউব ইবনি মুদরেক হতে……..বর্ণিত। জাল বলেছেনঃ ঈমামইবনিল জাওযী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , হাফিয ইবনি হাজার ( রাহিমাহুল্লাহ ) , ঈমামউকাইলী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , ঈমামইবনি আদী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , ঈমামআল- আলবানী ( রাহিমাহুল্লাহ ) ।

৭) আমি আরবী ভাষী , কুরআন আরবী ভাষায় এবং জান্নাতীদের ভাষা আরবী ।

হাদিসটি জাল। সূত্রঃ “ আল- মু জামুল আওসাত ”  ( ২ /২৮৫// ১ / ৯৩০১ )। হাদীসের রাবীর ( আব্দুল আযীয ) সমালোচনা করেছেনঃ  ঈমামবুখারী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , ঈমামহায়সামী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , ঈমামসূয়ুতী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , হাফিয ইরাকী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , ঈমামইবনি মাঈন ( রাহিমাহুল্লাহ ) , ঈমামইবনি আররাক ( রাহিমাহুল্লাহ ) , ঈমামইবনি আদী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , আল্লামা আল আলবানী ( রাহিমাহুল্লাহ ) ।

৮) পাগড়ীসহ সালাত পড়া দশ হাজার ভাল কর্মের সমতুল্য ।                                     

হাদিসটি জাল। সূত্রঃ “ যায়লুল আহাদীসিল মাওযূ আহ ” ( পৃঃ ১১১ )  গ্রন্থে আবান নামক এক ব্যক্তি হতে বর্ণিত। জাল বলেছেনঃ  ঈমামসাখাবী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , হাফিয ইবনি হাজার ( রাহিমাহুল্লাহ ) , ঈমামমানূফী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , শাইখ আল- কারী ( রাহিমাহুল্লাহ ) । ঈমামসুয়ূতী ( রাহিমাহুল্লাহ ) বর্ণনাকারী আবান সম্পর্কে বলেনঃ আবান মিথ্যার দোষে দোষী । ঈমামইবনিল আররাক ( রাহিমাহুল্লাহ )  “ তানযীহুশ শরীয়াহ ” ( ২ / ২৫৭ ) গ্রন্থেও একই মন্তব্য করেছেন।

৯) মুমিনের উচ্ছিষ্টে রয়েছে  আরোগ্য।                    

হাদিসটির কোন ভিত্তি নেই। ভিত্তি নেই বলেছেনঃ  শাইখ আহমাদ আল গাযাযী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , শাইখ আজলূনী ( রাহিমাহুল্লাহ ) । শাইখ আহমাদ আল গাযাযী ( রাহিমাহুল্লাহ ) বলেনঃ এটি কোন হাদিস নয়।  ( আল- যাদ্দুল হাসীস )

১০) যে ব্যক্তি তর্জনী অংগুলি দু টির ভিতরের অংশ দ্বারা মুয়ায্‌যিন কতৃক আশ্‌-হাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলার সময় দু চোখ মাসেহ করিবে ; তার জন্য রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এর সুপারিশ অপরিহার্য হয়ে যাবে ।                        

হাদিসটি সহীহ নয়। সুত্রঃ  এটি  “ মুসনাদুল ফিরদাউস ”  গ্রন্থে রয়েছে । সহীহ নয় বলেছেনঃ ঈমাম ইবনি তাহির ( রাহিমাহুল্লাহ ) ( আত-তাযকীরাহ ) , ঈমামশওকানী ( রাহিমাহুল্লাহ )  ( আহাদিসুল মাওযূ আহ ), ঈমামসাখাবী ( রাহিমাহুল্লাহ )  ( মাকাসিদুল হাসানা ) ।

১১) যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল- ওয়াকিয়াহ পাঠ করিবে , তাকে কখনও অভাব ( ক্ষুধা ) গ্রাস করিবে না।                        

হাদিসটি দুর্বল। সূত্রঃ হাদিসটি হারিস ইবনি আবী উসামা তার “ মুসনাদ ” গ্রন্থে ( ১৭৮ ) , ইবনিস সুন্নী “ আমালুল ইয়াউম ওয়াল লাইলাহ ” গ্রন্থে ( ৬৭৪ ) , ইবনি লাল তার “ হাদিস ” গ্রন্থে ( ১/ ১১৬ ) , ইবনি বিশরান “ আল- আমালী ” গ্রন্থে  ( ২০/৩৮/১ )  বর্ণনা করেছেন আবূ শুযা সূত্রে আবূ তায়বাহ হতে। দুর্বল বলেছেনঃ ঈমাম আহমাদ ( রাহিমাহুল্লাহ ) , আবূ হাতিম ( রাহিমাহুল্লাহ ) , ইবনি আবী হাতিম ( রাহিমাহুল্লাহ ) , দারা কুতুনী ( রাহিমাহুল্লাহ ) , ঈমামবায়হাক্বী ( রাহিমাহুল্লাহ ) । ঈমাম মানাবী ( রাহিমাহুল্লাহ ) বলেনঃ হাদিসটি মুনকার। ( আত্‌- তায়সীর ) হাদিসটির রাবীদের সম্পর্কে ঈমাম যাহাবী ( রাহিমাহুল্লাহ ) বলেনঃ আবূ শুযাকে চেনা যায় না এবং আবূ তায়বাহ মাজহূল। ঈমামযায়লাঈ ( রাহিমাহুল্লাহ ) হাদিসটি দোষণীয় হওয়ার কারণ উল্লেখ করেছেনঃ- ১) এটির সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে । ২) হাদিসটির মতনে ( ভাষায় ) দুর্বোধ্যতা রয়েছে। ৩) হাদিসটির বর্ণনাকারীগণ দুর্বল। ৪) এছাড়া ইযতিরাব রয়েছে।

১২) যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল- ওয়াকিয়াহ পাঠ করিবে ; তাকে কখনও অভাব গ্রাস করিবে না। যে ব্যক্তি প্রতি রাতে লা- উকসিমু বি-ইয়াওমিল ক্বিয়ামাহ পাঠ করিবে ; সে কিয়ামত দিবসে আল্লাহর সাথে এমতাবস্থায় মিলিত হবে যে , তার চেহারা পূর্ণিমা রাতের চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল থাকবে।                    

হাদিসটি জাল। সূত্রঃ এটি দায়লামী , আহমাদ ইবনি উমার ইয়ামানী সূত্রে নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন। হাদিসটি ঈমামসুয়ূতী ( রাহিমাহুল্লাহ ) “ যায়লুল আহাদীসুল মাওযূআহ ” গ্রন্থে ( ১৭৭ )  উল্লেখ করে বলেছেনঃ বর্ণনাকারী আহমাদ ইয়ামানী মিথ্যুক।

১৩) আমি সে সময়েও নবী ছিলাম যখন আদম পানি এবং মাটির মাঝে ছিলেন।

নিম্নের হাদিসটিও এটির ন্যায়ঃ–  যখন আদম ছিলেন না , পানি ও মাটি ছিল না তখনও আমি নবী ছিলাম। জাল বলেছেনঃ শাইখুল ইসলাম ইবনি তাইমিয়্যাহ  ( রাহিমাহুল্লাহ ) এবং ঈমামসুয়ূতী ( রাহিমাহুল্লাহ ) সহ আহলে সুন্নাত ওয়াল জাময়াতের সকল মুহাদ্দিস। শাইখুল ইসলাম ইবনি তাইমিয়্যাহ  ( রাহিমাহুল্লাহ )  “ বাকরীর প্রতিবাদ ”   গ্রন্থের মধ্যে ( পৃষ্ঠাঃ ৯ )  বলেছেনঃ কুরআন ও হাদীসের মধ্যে এমনকি সুস্থ বিবেকেও এটির কোন ভিত্তি নেই। কোন মুহাদ্দীসই এটি উল্লেখ করেননি। এটির অর্থও বাতিল। কারণ আদম ( আলাইহিস সালাম )  কখনও পানি এবং মাটির মাঝে ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন দেহ এবং রূহ এর মাঝে। ১০০টি জাল হাদিস

১৪)  চীন দেশে গিয়ে হলেও তোমরা জ্ঞান অন্বেষণ কর।                  

হাদিসটি বাতিল। সূত্রঃ এটি যেসব গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছেঃ “ আখবারূ আসহাবান ” ( ২/ ১০৬) ; “ আল- ফাওয়াইদ ” ( ২/২৪১ ) ; “ আল- আরবায়ীন ” ( ২/১৫১ ) ; “ আত্‌- তারিখ ” ( ৯/৩৬৪ ) ; “ কিতাবুল রেহালা ” ( ১/২ ) ; “ আল- মাদখাল ” ( ২৪১/৩২৪ ) ; “ আল- মুনতাকা ” ( ১/২৮ ) । উপরের প্রত্যেকটি গ্রন্থে জাল হাদিসটি হাসান ইবনি আতিয়া সূত্রে  “ আবূ আতিকা ”  হতে বর্ণিত হয়েছে। হাদিসটির বর্ণনাকারী “ আবূ আতিকা ” সম্পর্কে ঈমামবুখারী ( রাহিমাহুল্লাহ ) বলেনঃ তিনি মুনকারূল হাদিস। ঈমাম নাসাঈ ( রাহিমাহুল্লাহ )  বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ঈমামউকায়লী ( রাহিমাহুল্লাহ )  বলেনঃ তিনি নিতান্তই দুর্বল। ঈমামআবূ হাতিম ( রাহিমাহুল্লাহ ) বলেনঃ তিনি যাহেবুল হাদিস। ঈমামইবনিল জাওযী ( রাহিমাহুল্লাহ ) ও ঈমামইবনি হিব্বান ( রাহিমাহুল্লাহ ) বলেনঃ হাদিসটি বাতিল। ঈমামসুলায়মানী ( রাহিমাহুল্লাহ )  “ আবূ আতিকাকে ”  হাদিস জালকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ঈমামসাখাবী ( রাহিমাহুল্লাহ ) তার “ মাকাসীদুল হাসানা ” গ্রন্থে উপরোক্ত মত সমর্থন করেন। ঈমামআহমাদ ( রাহিমাহুল্লাহ ) এ হাদিসটিকে কঠোর ভাষায় ইনকার করেছেন। ঈমামসুয়ূতী ( রাহিমাহুল্লাহ )  “ আল- লায়ালী ”  ( ১/১৯৩ ) গ্রন্থে বলেনঃ   হাদিসটির আরো দু টি সূত্র রয়েছেঃ—

১) একটির সনদে রয়েছেন ইয়াকূব ইবনি ইসহাক ইবনি ইবরাহীম আসকালনী।   এ ইয়াকূব সম্পর্কে ঈমামযাহাবী ( রাহিমাহুল্লাহ ) বলেনঃ সে মিথ্যুক। ২) দ্বিতীয়টির সনদে রয়েছেন আহমাদ ইবনি আবদুল্লাহ যুওয়াইবারী। যুওয়াইবারী হাদিস জালকারী।

১৫) যে ব্যক্তি মাগরীবের পরে কথা বলার পূর্বেই ছয় রাকায়াত সালাত আদায় করিবে ; তা দ্বারা তার ৫০ বছরের গুণাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।                    

হাদিসটি নিতান্তই দুর্বল। সূত্রঃ এটি ইবনি নাসর “ কিয়ামুল্লাহ ” গ্রন্থে ( পৃঃ ৩৩ ) মুহাম্মদ ইবনি গাযওয়ান দামেস্কীর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হাদিসটি ঈমামইবনি আবী হাতিম ( রাহিমাহুল্লাহ )  তার “ আল- ইলাল ”  গ্রন্থে এ সূত্রেই ( ১/১৭৮ ) উল্লেখ করেছেন , অতঃপর বলেছেনঃ—           ঈমামআবূ যুরয়াহ ( রাহিমাহুল্লাহ ) বলেনঃ তোমরা এ হাদিসটিকে পরিহার কর। কারণ এটি বানোয়াট হাদীসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মুহাম্মদ ইবনি গাযওয়ান দামেস্কী মুনকারুল হাদিস।

১০০টি জাল হাদিস বাকি গুলো প্রকাস হবে ।।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply