পবিত্র পানীর মাসালা মাসায়েল – হিদায়া কিতাব
পবিত্র পানীর মাসালা মাসায়েল – হিদায়া কিতাব >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, প্রথম অনুচ্ছেদ পানি
- প্রথম অনুচ্ছেদ পানি
- পরিচ্ছেদ-কুয়ার মাসআলা
- পরিচ্ছেদঃ উচ্ছিষ্ট ইত্যাদি
প্রথম অনুচ্ছেদ পানি
যে পানিতে ওজু জাইয এবং যে পানিতে ওজু জা্ইয নয়।
আসমানের [বৃষ্টির] পানি দ্বারা, উপত্যকায় জমা পানি দ্বারা, ঝরনার পানি দ্বারা, কূপের পানি দ্বারা ও সমুদ্রের পানি দ্বারা অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করা জাইয। কেননা আল্লাহ পাক বলেছেনঃ আসমান থেকে আমি অতি পবিত্র পানি বর্ষণ করেছি। [২৫ঃ৪৮]
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ
পানি পবিত্র, কোন কিছু তাকে না পাক করে না, কিন্তু যে অপবিত্র বস্তু তার বর্ণ, স্বাদ বা গন্ধ পরিবর্তন করে দেয়।
অন্য হাদীস সমুদ্র সম্পর্কে তিনি বলেছেনঃ সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং তার মরা হালাল। আর সাধারণভাবে বিশেষণ ছাড়া পানি শব্দটি এই সকল পানির উপর প্রয়োজ্য।
বৃক্ষ কিংবা ফল থেকে নিংড়ানো পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা জা্ইয নয়। কেননা, তা সাধারণ পানি নয়। আর সাধারণ পানি না পাওয়া গেলে [পবিত্রতা অর্জনের ] হুকুম তায়াম্মুমে রূপান্তরিত। আর এ সকল অংগ ধৌত করার হুকুম কিয়াস বহির্ভূত। সুতরাং তা শরীআতের বাণীতে উল্লেখিত বস্তুকে অতিক্রম করিবে না। তবে আাংগুর বৃক্ষ থেকে ফোটা ফোটা যে পানি পড়ে, তা দ্বারা ওজু জাইয হবে। কেননা তা হস্তক্ষেপ ছাড়া নির্গত হয়েছে। ইমাম আবূ ইউসূফ এ মাসআলা উল্লেখ করিয়াছেন। মূল কুদূরী কিতাবেও এ দিকে ঈংগিত রয়েছে। কেননা তাতে নিঃসরণের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। ( পবিত্র পানীর মাসালা )
এমন পানি দ্বারা [পবিত্রতা অর্জন] জাইয নয়, যাতে অন্য কোন বস্তু প্রভাব বিস্তার করে পানির প্রকৃত গুণ দূরীভূত করে দিয়েছে। যেমন, শরবত, সিরকা, গোলাব জল, সবজির পানি, শুরুয়া পানি। কেননা এগুলোকে সাধারণ পানি বলা হয় না। সবজির পানির উদ্দেশ্য হল যা জ্বাল দেওয়ায় পরিবর্তিত হয়েছে। আর যদি বিনা জ্বালে তাতে পরিবর্তন আসে তাহলে তা দ্বারা ওজু জাইয হবে।
যে পানির সাথে কোন পাক জিনিস মিশ্রিত হয় আর তা পানির [তিনটি গুণে] কোন একটিকে পরিবর্তন করে দেয়, সে পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা জাইয। যেমন বন্যার ঘোলা পানি এবং জাফরান, সাবান ও উশনান মিশ্রিত পানি।
আল হেদায়া কিতাব গ্রন্থকার বলেন, কুদূরীতে লোধ্র ভিজিয়ে রাখা পানিকে ঝোলের পর্যায়ের ধরা হয়েছে। আর ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত মতে তা জাফরান মিশ্রিত পানির সমপর্যায়ের। এ-ই বিশুদ্ধ। নাতিফী ও ইমাম সারখসী এ মতই গ্রহণ করিয়াছেন।
ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] বলেন, জাফরান ও এর অনুরূপ এমন পদার্থ মিশ্রিত পানি যা মাটি জাতীয় নয়, তা দ্বারা ওজু জাইয নয়।তুমি লক্ষ্য করছ না যে তাকে [শুধু পানি না বলে] জাফরানের পানি বলা হয়ে থাকে। মাটি জাতীয় পদার্থ মিশ্রিত পানি এর ব্যতিক্রম। কেননা পানি সাধারণত তা থেকে মুক্ত হয় না।
আমাদের যুক্তি এই যে, এক্ষেত্রে পানি নামটি এখনও সাধারণভাবেই অক্ষুণ্ন আছে। এজন্য তার ক্ষেত্রে আলাদা নতুন কোন নাম যুক্ত হয়নি। জাফরানের দিকে সম্বোধন করে [জাফরানের পানি বলা] মূলতঃ কুয়া ও ঝরনার দিকে সম্বোধন করার মত।
তা ছাড়া সামান্য মিশ্রণ পরিহার করা সম্ভব নয় বিধায় তা ধর্তব্যও নয়, যেমন মাটি জাতীয় পদার্থের ক্ষেত্রে। সুতরাং প্রবলতাই বিবেচ্য বিষয় হবে। আর প্রবলতা সাব্যস্ত হবে অংশগত পরিমাণ দ্বারা; রং-এর পরিবর্তন দ্বারা নয়। এই বিশুদ্ধ মত।
মিশ্রণের পর যদি জ্বাল দ্বারা পানি পরিবর্তিত হয় তবে সে পানি দ্বারা ওজু জাইয নয়। কেননা তা আসমান থেকে বর্ষিত পানির স্বভাবে বহাল নেই। অবশ্য যদি পানিতে এমন কিছু জ্বাল দেওয়া হয় যা দ্বারা অধিক পরিষ্করণ, উদ্দেশ্য হয়। যেমন, পটাশ [বা বড়ই পাতা] তা হলে ভিন্ন কথা। কেননা মাইয়েতকে বড়ই পাতার জ্বাল দেওয়া পানি দ্বারা গোসল দেয়া হয়।হাদীছেও তা আছে। তবে যদি তা পানির উপর প্রবল হয়ে ছাতু [মিশ্রিত পানির] মত হয়ে যায় [তাহলে জাইয হবে না] কেননা তখন পানি নামটি তা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ( পবিত্র পানীর মাসালা )
যে কোন [নিশ্চল ও অল্প] পানিতে নাপাকি পড়লে তা দ্বারা ওজু জাইয নয়। নাপাকি অল্প হোক বা বেশী হোক।ইমাম মালিক [রঃআঃ] বলেন, যতক্ষণ পানির তিনটি গুনের কোন একটির পরিবর্তন না হয় ততক্ষণ ওজু জাইয। উপরে আমাদের বর্ণিত হাদীস দ্বারা তিনি দলীল গ্রহণ করেন।
ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] বলেন, পানি দুই মটকা পরিমাণ হলে ওজু জাইয হবে। কেননা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, পানির যদি দুই মটকা পরিমাণ হয়, তাহলে তা নাপাকি গ্রহণ করে না।
আমাদের দলীল হল ঘুম থেকে জেগে উঠা ব্যক্তি সম্পর্কিত হাদীস এবং নিম্নোক্ত হাদীস- তোমাদের কেউ যেন নিশ্চল পানিতে পেশাব না করে এবং তাতে জানাবাতের গোসল না করে। এখানে [মটকা পরিমাণে] পার্থক্য করা হয়নি।
ইমাম মালিক [রঃআঃ] যে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন তা বুযাআ নামক কূপ সম্পর্কিত। তার পানি ছিল প্রবাহিত বিভিন্ন বাগানে। পক্ষান্তরে ইমাম শাফিই বর্ণিত হাদীসকে ইমাম আবূ দাউদ দুর্বল বলিয়াছেন। অথবা এর অর্থ নাপাকি গ্রহণে দুর্বল [অর্থাত্ নাপাক হয়ে যাবে]। ( পবিত্র পানীর মাসালা )
প্রবহমান পানিতে নাজাসাত পড়লে সে পানি দ্বারা ওজু জাইয, যদি তাতে নাজাসাতের কোন আলামত দেখা না যায়। কেননা, পানির প্রবাহের কারণে তা স্থির থাকে না। আর আলামত হল স্বাদ, গন্ধ বা বর্ণ। প্রবহমান ঐ পানিকে বলা হয় যা পুনঃ পুনঃ ব্যবহার আসে না। কেউ কেউ বলেন, যা খড়কুটা ভাসিয়ে নেয়।
এক পার্শ্ব নাড়া দিলে অপর পার্শ্বের পানি তরংগায়িত হয় না, এমন বড় পুকুরের এক পার্শ্বে নাজাসাত পড়লে অপর পার্শ্বে ওজু করা জাইয। কেননা এটাই স্বাভাবিক যে, অপর পার্শ্বে নাজাসাত পৌছবে না। কারণ, ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে তরঙ্গের প্রভাব নাজাসাত এর প্রভাবের চেয়ে বেশী।
ইমাম আবূ হানাফী [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, তিনি গোসলের দ্বারা সৃষ্ট তরঙ্গ গ্রহণ করেন। এই ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] এর মত। আবূ হানাফী [রঃআঃ] থেকে অন্য এক বর্ণনায় তিনি হাত নাড়ার তরঙ্গ করেন। আর ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত মতে তিনি ওজু দ্বারা সৃষ্ট তরঙ্গ গ্রহণ করেন। প্রথম মতের যুক্তি এই যে, হাউজ ও পুকুরে ওজুর তুলনায় গোসলের প্রয়োজনই বেশী।
কোন কোন ফকীহ্ বিষয়টিকে সাধারণ মানুষের জন্য সহজ করার উদ্দেশ্য মাপের দ্বারা পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। অর্থাত্ কাপড় মাপার হাতে দশ দশ হাত [চতুর্দিকে]-এর উপরই ফাতওয়া। গভীরতার ক্ষেত্রে বিবেচ্য এই যে, তা এমন পরিমাণ হবে যে, অঞ্জলি ভরে পানি তোলার সময় তলা জেগে উঠবে না। এটাই বিশুদ্ধ মত। মূল কিতাবের এ কথা অন্য পার্শ্বে ওজু জাইয হবে ইংগিত করে যে, নাজাসাত পড়ার স্থান নাপাক হয়ে যাবে। তবে ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত যে, উক্ত স্থানও নাপাক হবে না, যতক্ষণ না নাজাসাত প্রকাশ পায়; যেমন প্রবহমান পানির হুকুম।
মশা, মাছি, বোলতা, বিচ্ছু ইত্যাদি যে সকল প্রাণীর মধ্যে প্রবাহিত রক্ত নেই সেগুলোর মৃত্যুর পানি নাপাক হবে না।
ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] বলেন, এটি পানিকে নষ্ট করে দিবে। যা হারাম করা হয়েছে, কিন্তু সম্মানার্থে নয় তা নাজিস হওয়ার পরিচায়ক। তবে মৌমাছি ও ফলের পোকার বিষয়টি এর ব্যতিক্রম। কেননা তাতে মানবীয় প্রয়োজন বিদ্যমান।
আমাদের দলীল এই যে, এ ধরনের পানি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন- এটা খাওয়া ও পান করা এবং তা দ্বারা ওজু করা জাইয। এমন কি, যবাহকৃত জন্তু হালাল করা হয়েছে, প্রবাহিত রক্ত তা থেকে দূরীভূত হওয়ার কারণে অথচ সে সকল জন্তুর মধ্যে রক্ত নেই। [ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] এর জবাব এই যে] হারাম হওয়ার জন্য নাজিস হওয়া অনিবার্য নয়। যেমন মাটি হারাম কিন্তু তা নাজিস নয়।
মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া ইত্যাদি যা পানিতে থাকে, পানিতে তার মৃত্যু, পানি নষ্ট [নাপাক] করিবে না।
ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] বলেন, পূর্বোল্লেখিত যুক্তির আলোকে মাছ ব্যতীত অন্যান্য জন্তুর মৃত্যু পানি নষ্ট করে দিবে। তার দলীল উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
আমাদের দলীল এই যে, এগুলো নিজ উত্পত্তিস্থলে মারা গেছে। সুতরাং সে ক্ষেত্রে নাজাসাতের হুকুম প্রয়োগ করা হবে না। যেমন ডিমের কুসুম রক্তে পরিবর্তিত হলেও [তা নাপাক হয় না]।
তাছাড়া এগুলোতে রক্ত নেই, কেননা রক্তবাহী প্রাণী পানিতে বাস করে না। আর রক্তই হল নাজিস। পানি ছাড়া অন্য কিছুতে এগুলো মারা গেলে, কেউ বলিয়াছেন, মাছ ব্যতীত অন্যান্য জন্তু তা নাপাক করে দিবে, সেসব উত্পত্তিস্থল না থাকার কারণে। আবার কেউ বলিয়াছেন তা নষ্ট করিবে না রক্ত না থাকার কারণে। এ মতই বিশুদ্ধ। জলজ ব্যাঙ ও স্থল ব্যাঙ দুটির হুকুম সমান। আর কেউ কেউ বলিয়াছেন, স্থল জাতীয় ব্যাঙ পানি নষ্ট করে দিবে, কেননা এতে রক্ত বিদ্যমান। এবং যেহেতু তা উত্পত্তিস্থলে মারা যায় নি।
জলজ প্রাণী দ্বারা সে সকল প্রাণী বুঝায়, যার জন্ম ও বাস পানিতে। যে প্রাণী পানিতে অবস্থান করে কিন্তু জন্ম পানিতে নয়, তা পানি নষ্ট করে। ( পবিত্র পানীর মাসালা )
ইমাম কুদূরী বলেন, ব্যবহৃত পানি হাদাছ থেকে পবিত্রতা দান করে না।
ইমাম মালিক ও ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] ভিন্নমত পোষণ করেন। তারা বলেন, [কুরআনে বর্ণিত] অর্থ যা অন্যকে বারবার পাক করতে পারে, যেমন বলে তাকে, যা বারবার কর্তন করতে সক্ষম। ইমাম যুফার [রঃআঃ] বলেন, এবং এটা ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] এর দ্বিতীয় মত-পানি ব্যবহারকারী যদি ওজু অবস্থায় থেকে থাকে তাহলে তার ব্যবহারকৃত পানি দ্বারা আবার তাহারাত হাসিল করা যাবে। আর যদি পানি ব্যবহারকারী ব্যক্তি অপবিত্র থেকে থাকে তাহলে তার ব্যবহৃত পানি পবিত্র থাকবে, কিন্তু পবিত্রকারী থাকবে না।
কেননা অংগ বাহ্যত পবিত্র। সে হিসাবে পানি পবিত্র থাকা চাই। কিন্তু বিধান অনুযায়ী সে অংগ নাপাক। সে হিসাবে পানি নাপাক হয়ে যাওয়া চাই। তাই উভয় অবস্থা বিবেচনা করে আমরা পানির পবিত্রকরণ গুণের বিলুপ্তি এবং পবিত্র থাকার পক্ষে মত পোষণ করেছি।
ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] বলেন, আর তা ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] থেকেও বর্ণিত-ব্যবহৃত পানি পবিত্র কিন্তু পবিত্রকারী নয়। কেননা দুই পবিত্র বস্তুর সংস্পর্শে অপবিত্র হওয়ার কারণ হতে পারে না। তবে যেহেতু তা দ্বারা একটি ইবাদত আদায় করা হয়েছে, সেহেতু তার গুণ পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যেমন, সাদাকার মাল।
ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ]হতে ইমাম হাসান [রঃআঃ] এর সূত্রে বর্ণিত মতে হাকীকী নাজাসাত দূর করার জন্য ব্যবহৃত পানির সমতুল্য গণ্য করে এ পানিও নাজাসাতে গালীজা [ গুরু নাপাক]।
আর ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] থেকে ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] এর সূত্রে বর্ণিত মতে এ পানি নাজাসাতে খাফীফা [লঘু নাপাক]। কেননা, এ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে।
ব্যবহৃত পানি অর্থ, যে পানি দ্বারা হাদাছ দূর করা হয়েছে কিংবা সাওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে শরীরে ব্যবহার করা হয়েছে।
আল হেদায়া কিতাব গ্রন্থকার বলেন, এটা ইমাম আবূ ইউসূফের মত। কেউ কেউ বলিয়াছেন, যে, এটা ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] এরও মত। ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] বলেন, শুধু সাওয়াব হাসিলের নিয়্যতেই পানি ব্যবহৃত গণ্য হবে। কেননা গুনাহের স্থানান্তরিত হওয়ার কারণেই পানি ব্যবহৃত সাব্যস্ত হবে। আর গুনাহ্ দূর হয় সাওয়াবের নিয়্যত দ্বারা। আর ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] বলেন, [পানির মধ্যে] ফরয আদায় করারও প্রভাব রয়েছে। সুতরাং উভয় কারনেই [পানির] নষ্ট হওয়া সাব্যস্ত হবে।
কখন পানি ব্যবহৃত রূপে গণ্য হবে? বিশুদ্ধমত এই যে, [ধৌত] অংগ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মাত্র তা ব্যবহৃত বলে গণ্য হবে। কেননা [পানি শরীর থেকে]বিচ্ছিন্ন হওয়া পূর্বে প্রয়োজনের তাকীদে ব্যবহৃত হওয়ার হুকুম দেওয়া হয় না। আর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর প্রয়োজন নেই।
জুনুবী ব্যক্তি যদি বালতি করার জন্য কূপের মধ্যে ডুব দেয় তাহলে ইমাম আবূ ইউসূফের মতে সে জুনুবী থেকে যাবে। সে তার গায়ে পানি ঢালে নি। আর তার মতে ফরয গোসল আদায় হওয়ার জন্য তা শর্ত। আর পানিও পূর্ব অবস্থায় পাক থাকবে; কেননা, উভয় কারণই এখানে অনুপস্থিত। ইমাম মুহাম্মদ[রঃআঃ] এর মতে [পানি ও মানুষ] উভয়ই পাক।
লোকটি পবিত্র হয়ে গেল পানি ঢালার শর্ত না হওয়ার কারণে, আর পানি পবিত্র থাকল সাওয়াবের নিয়্যত না থাকার কারণে। ( পবিত্র পানীর মাসালা )
ইমাম আবূ হানাফী [রঃআঃ] এর মতে উভয়ই অপবিত্র। পানি একারণে অপবিত্র যে, [পানির সাথে] প্রথম সংস্পর্শের সাথে সাথে শরীরের অংশবিশেষ থেকে জানাবাত দূরীভূত করা হয়েছে। আর লোকটি অপবিত্র এজন্য যে, অবশিষ্ট অংগে হাদাছ বিদ্যমান রয়ে গেছে। আর কেউ কেউ বলেন, তার মতে লোক অপবিত্র থাকার কারণ হলো ব্যবহৃত পানির অপবিত্র হওয়া। তার হইতে বর্ণিত আরেকটি মত হলো, লোকটি পবিত্র হয়ে যাবে। কেননা [শরীর থেকে] বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বে পানির উপর ব্যবহৃত হওয়ার হুকুম আরোপ করা হয় না। তার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত বর্ণনাগুলোর মাঝে এটিই অধিক যুক্তিসংগত।
শূকর ও মানুষের চামড়া ব্যতীত যে কোন চামড়া পাকা করা হয় তা পাক হয়ে যায়।তাতে নামাজ আদায় করা এবং তা থেকে [তৈরী পাত্রের পানি দিয়ে] ওজু জাইয। কেননা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন- যে কোন চামড়া পাকা করা হয়, তা পাক হয়ে যায়।
এ হাদীসটি তার অর্থ ব্যপকতার ভিত্তিতে মৃত পশুর চামড়ার ব্যাপারে ইমাম মালিক [রঃআঃ] এর বিপক্ষে দলীল। আর মৃত পশুকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে বর্ণিত নিষেধবাণী- তোমরা মৃত পশুর চামড়া থেকে উপকার গ্রহণ কর না। এ হাদীস উপরোল্লেখিত হাদিসের বিপরীতে পেশ করা যাবে না। কেননা যে চামড়া পাকা করা হয়নি, তাকেই বলা হয়।
তদ্রূপ আলোচ্য হাদীস কুকুরের চামড়ার ব্যাপারে ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] এর বিপক্ষে দলীল। কেননা, কুকুর [শূকরের মত] সত্তাগত ভাবে নাপাক নয়। তুমি কি দেখতে পাচ্ছো না যে, পাহারা দেওয়া ও শিকার করার ক্ষেত্রে তার থেকে উপকার গ্রহণ করা হয়? আর শূকর হলো সত্তাগত ভাবেই নাপাক। কেননা আল্লাহ তাআলার বাণী [নিঃসন্দেহে তা নাজাসাত] এর সর্বনাম নিকটবর্তী এর দিকে প্রত্যাবর্তিত। মানব দেহের কোন অংশ দ্বারা উপকার লাভ হওয়ার কারণ [নাপাকি নয় বরং] তার মর্যাদাও। সুতরাং এ দুটি আমাদের বর্ণিত হাদিসের আওতার বাইরে।
যা দুর্গন্ধ ও পচনে রোধ করে, তাকেই পাকা করা বলে; রোদে শুকিয়ে হোক বা মাটি মেখে হোক। কেননা মূল উদ্দেশ্য এর দ্বারা অর্জিত হয়। সুতরাং অন্য কোন শর্ত আরোপ করার কোন যুক্তি নেই।
যে চামড়া পাকা করলে পাক হয়, তা যবাহ্ করার মাধ্যমেও পাক হয়। কেননা, যবাহ্ দ্বারা নাপাক আর্দ্রতা দূর করার ক্ষেত্রে পাকা করার ক্রিয়া পাওয়া যায়। এইরূপ যবাহ্ দ্বারা গোশতও পাক হয়ে যায়। এটাই বিশুদ্ধ মত। যদিও তা খাওয়া হালাল নাও হয়।
মৃতপশুর পশম ও হাড় পাক।
ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] নাপাক বলেন, কেননা এগুলো মৃত পশুরই অংশ।
আমাদের দলীল এই যে, তাতে প্রাণ নেই, এজন্য এগুলো কাটলে ব্যথা অনুভূত হয় না। সুতরাং এ দুটোতে মৃত্যু প্রবেশ করে না। কেননা মৃত্যু অর্থ প্রাণের বিলোপ।
মানুষের চুল ও হাড় পাক।
ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] নাপাক বলেন। কেননা, এ দ্বারা উপকার লাভ করা বৈধ নয় এবং তা বিক্রি করাও জাইয নয়।
আমাদের দলীল এই যে, তার ব্যবহার ও বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ মানুষের মর্যাদা রক্ষা। সুতরাং তা তার নাজাসাতের পরিচায়ক নয়। ( পবিত্র পানীর মাসালা )
পরিচ্ছেদ-কুয়ার মাসআলা
কুয়াতে কোন নাজাসাত পড়লে [যদি ১০ ন্ড ১০ হাতের কম হয়] তার পানি বের করে নিতে হবে। আর তাতে বিদ্যমান পানি নিষ্কাশনই তার জন্য তাহারাত বলে গণ্য। এর দলীল হল সলফে সালেহীনের ইজমা। আর কুয়া সংক্রান্ত মাসআলার ভিত্তি হচ্ছে সলফে সালেহীনদের ফাতওয়া, কিয়াস নয়।
কূপে উট বা বকরীর দুএকটি লাদি পড়লে পানি নষ্ট হবে না। এ হুকুম সূক্ষ কিয়াসের ভিত্তিতে। আর সাধারণ কিয়াসের চাহিদা হল পানি নষ্ট হয়ে যাওয়া। কেননা, নাজাসাত পড়েছে অল্প পানিতে।
সূক্ষ কিয়াসের কারণ এই যে, খোলা মাঠের কুয়ার উপরে বাধাদানকারী কোন কিছু থাকে না, আর গবাদিপশু তার আশেপাশে মল ত্যাগ করে, ফলে বাতাসে তা কুয়ায় ফেলে। তাই প্রয়োজনের তাকীদে অল্প পরিমাণ ক্ষমার যোগ্য বলে বিবেচিত। আর অধিক পরিমাণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনের তাকীদ নেই। ( পবিত্র পানীর মাসালা )
ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] এর মতে দর্শক যা অধিক মনে করে, তা-ই অধিক। এ মতই নির্ভরযোগ্য। শূল্ক ও তাজা বিষ্ঠা এবং গোটা ও টুকরা বিষ্ঠা আর উটের লাদা ও ঘোড়ার বা গরু গোবরের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। কেননা, প্রয়োজন সবগুলোতেই ব্যাপ্ত।
দোহন পাত্রে বকরী দুএক গোটা বিষ্ঠা ত্যাগ করলে সে সম্পর্কে ফকীহ্গণ বলিয়াছেন, বিষ্ঠা ফেলে দিয়ে দুধ পান করা যাবে। কেননা, এখানে প্রয়োজন রয়েছে। কারো কারো মতে সাধারণ পাত্রে অল্পও মাফযোগ্য নয়। কেননা, এক্ষেত্রে প্রয়োজন নেই। আর ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, দুএক গোটা বিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটাও কুয়ার অনুরূপ। ( পবিত্র পানীর মাসালা )
যদি কুয়ায় কবুতর বা চড়ুইর বিষ্ঠা পড়ে তাহলে পানি নষ্ট হবে না।
ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] ভিন্নমত পোষণ করেন। তার দলীল এই যে, [বিষ্ঠা] পচা ও দূষিত পদার্থে রূপান্তরিত হয়েছে। সুতরাং তা মুরগীর বিষ্ঠার অনুরূপ।
আমাদের দলীল এই যে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার নির্দেশ সম্বলিত আয়াত সত্তেও মসজিদে কবুতরের অবাধ বিচরণের অনুকূলে মুসলমানদের সাধারণ ঐকমত্য রয়েছে। আর উহার রূপান্তর দুর্গন্ধযুক্ত পচা পদার্থের দিকে নয়। সুতরাং তা কালো কাদা সদৃশ।
যদি কূপে বকরী পেশাব করে দেয় তাহলে ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] এর মতে সবটুকু পানি ফেলে দিতে হবে। আর ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] বলেন, যতক্ষণ তা পানির উপর প্রভাব বিস্তার না করে এবং পানির পবিত্র করার গুণ নষ্ট না করে, ততক্ষণ পানি ফেলতে হবে না। ( পবিত্র পানীর মাসালা )
আলোচ্য মতপার্থক্যের ভিত্তি এই যে, হালাল পশুর পেশাব ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর মতে পাক আর ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আবূ ইউসূফের মতে নাপাক।
ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর দলীল এই যে, হালাল পশু ও হারাম পশুর মাঝে কোন পার্থক্য নির্দেশ না করে নবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেন- তোমরা পেশাব থেকে বেঁচে থাকো। কেননা, কবরের অধিকাংশ আযাব এ কারণেই হয়ে থাকে।
তাছাড়া উক্ত পেশাব পচন ও দুর্গন্ধে পরিবর্তিত হয়েছে। সুতরাং এমন পশুর পেশাবের মত গণ্য হবে, যার গোশত খাওয়া নিষেধ।
ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যা এই যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ওয়াহীর মাধ্যমে [উটের পেশাবে] তাদের রোগ আরোগ্য জানতে পেরেছিলেন।
তবে ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ]-এর মতে চিকিত্সা হিসাবেও তা পান করা হালাল নয়। কেননা তাতে আরোগ্য লাভ নিশ্চিত নয়। সুতরাং হারাম হওয়ার বিষয়টি উপেক্ষা করা যাবে না।
ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ]-এর মতে [উরায়না গোত্রের] ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চিকিত্সার ক্ষেত্রে তা পান করা হালাল।
ইমাম মুহাম্মদ[রঃআঃ] এর মতে উক্ত পেশাব পাক হওয়ার কারণে চিকিত্সা হিসাবে এবং সাধারণভাবে তা পান করা হালাল।
যদি কুয়ায় ইঁদুর, চড়ুই, কোয়েল, দোয়েল, টিকটিকি ইত্যাদি মারা যায়, তাহলে বালতির বড়ত্ব ও ছোটত্ব হিসাবে বিশ থেকে ত্রিশ বালতি পর্যন্ত পানি তুলে ফেলতে হবে।
অর্থাত্ ইঁদুর বের করে নেয়ার পর। এর প্রমাণ হল, আনা্স রাঃআঃ বর্ণিত হাদীছে ইঁদুর সম্পর্কে তিনি বলিয়াছেন যে, তা কুয়াতে মারা গেলে এবং তত্ক্ষণা্ত্ তা বের করে নিলে কুয়া থেকে বিশ বালতি পরিমাণ পানি তুলে ফেলতে হবে।
চড়ুই ও অনুরূপ জন্তু যেহেতু দৈহিক পরিমাণে ইঁদুরের সমান তাই এসবের ব্যাপারে একই হুকুম প্রযোজ্য। বিশ বালতি পরিমাণ পানি তুলে ফেলা ওয়াজিব আর ত্রিশ বালতি পরিমাণ মুস্তাহাব।
যদি কবুতর কিংবা তার মত প্রাণী যেমন, মুরগী, বিড়াল ইত্যাদি কুয়ায় পড়ে মারা যায়, তাহলে চল্লিশ থেকে বিশ বালতি পরিমাণ পানি তুলে ফেলতে হবে।
গ্রন্থে চল্লিশ থেকে পণ্চাশ এর কথা আছে। আর তাই অধিক নির্ভরযোগ্য। কেননা আবূ সাঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিত হাদীছে তিনি মুরগী সম্পর্কে বলিয়াছেন, তা কুয়ায় পড়ে মারা গেলে সেখান থেকে চল্লিশ বালতি পানি তুলে ফেলতে হবে। এ পরিমাণ হলো ওয়াজিবের বিবরণ। আর পণ্চাশ হলো মুস্তাহাব।
প্রত্যেক কুয়ার ক্ষেত্রে সেই বালতিই বিবেচ্য হবে, যা তা থেকে পানি তোলার জন্য ব্যবহৃত হয়। কারো কারো মতে এমন আকারের বালতি হতে হবে, যাতে এক সাআ পরিমাণ পানি ধরে। আর যদি বৃহ্ত্ বালতি দ্বারা একবার বিশ বালতি পানি ধরে, এমন পানি তুলে ফেলা হয়; তাহলে মূল উদ্দেশ্য হাসিল হওয়ার কারণে তা জাইয হবে।
যদি তাতে বকরী, মানুষ বা কুকুর পড়ে মারা যায়, তাহলে তাতে বিদ্যমান সবটুকু পানি তুলে ফেলতে হবে। কেননা ইবন আব্বাস ও ইবন যুবায়র রাঃআঃ যমযম কূপে জনৈক নিগ্রোর মৃত্যুর কারণে সবটুকু পানি তুলে ফাতওয়া দিয়েছিলেন।
যদি মৃত প্রাণী কুয়ার মধ্যে ফুলে পচে গলে যায়, তাহলে প্রাণী বড় হোক বা ছোট হোক, কুয়ার সবটুকু পানি তুলে ফেলতে হবে।
কেননা পানির সর্বাংশে মৃত দেহের নিঃসৃত রস ছড়িয়ে পড়েছে।
কূপ যদি এমন প্রস্রবণ প্রকৃতির হয় যে, তার পানি তুলে ফেলা অসম্ভব হয়, তাহলে তাতে বিদ্যমান পানির সমপরিমাণ তুলে ফেলতে হবে।
এর পরিমাপ জানার উপায় এই যে, কূয়ার পানির সমতল পরিমাণ অনুরূপ একটি গর্ত খোড়া হবে এবং পানি তুলে তা পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তাতে ফেলতে হবে। কিংবা তাতে একটি বাঁশ নামিয়ে পানির উচ্চতা পরিমাণ স্থানে তাতে দাগ কাটা হবে। তারপর ধরুন, দশ বালতি তুলে আবার বাশ নামিয়ে দেখা হবে, কি পরিমাণ হ্রাস পেলো। এরপর প্রত্যেক এই পরিমাণের জন্য দশ বালতি করে পানি উত্তোলন করা হবে।
এ দুটি উপায় আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত। আর ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, দুশ খেকে তিনশ বালতি তুলে ফেললেই হবে। সম্ভবতঃ তিনি নিজ শহরের [বাগদাদে দেখা কুয়াগুলোর] উপরই তার সিদ্ধান্তের ভিত্তি করিয়াছেন। গ্রন্থে এ ধরনের ক্ষেত্রে আবূ হানীফা [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, পানি অনবরত তুলতেই থাকবে, যতক্ষণ না পানি তাদের পরাজিত করে ফেলে। তবে পরাজিত করার নির্দিষ্ট সীমা তিনি নির্ধারণ করেননি। [এ ধরনের ক্ষেত্রে] এটাই তাঁর অনুসৃত নীতি। কারো কারো মতে পানির [গভীরতা] সম্পর্কে অভিজ্ঞ দুজন লোকের মতামত গ্রহণ করা হবে। এ মত ফিকহী দৃষ্টিভঙ্গির সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ।
যদি লোকেরা ইদুর বা এ ধরনের অন্য কোন প্রাণী কুয়াতে দেখতে পায় এবং কখন পড়েছে তা জানা না যায়, আর তা ফুলে গিয়ে না থাকে আর যদি তারা সে কুয়ার পানি দ্বারা ওজু করে থাকে, তাহলে একদিন এক রাত্রের নামাজ দোহরাবে আর ঐ কুয়ার পানি লেগেছে এমন প্রতিটি জিনিস ধুয়ে ফেলতে হবে। আর যদি ফুলে বা পচে গলে গিয়ে থাকে তাহলে তিন দিন তিন রাত্রের নামাজ দোহরাবে। ইহা আবূ হানীফা [রঃআঃ]-এর মত। ইমাম আবূ ইউসূফ ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] বলেন, পতিত হওয়ার সময় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া ছাড়া তাদের কিছুই দোহরান জরুরী নয়। কেননা নিশ্চিত অবস্থা সন্দেহ দ্বারা দূরীভূত হয় না। এটা হল ঐ ব্যক্তির অবস্থার মত যে তার কাপড়ে নাজাসাত দেখতে পেলো, কিন্তু কখন লেগেছে তা সে জানে না।
ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] এর দলীল এই যে, এখানে মৃত্যুর একটি প্রকাশ্য কারণ রয়েছে। তা হল পানিতে পতিত হওয়া। সুতরাং এর সাথে মৃত্যূকে সম্পৃক্ত করা হবে। তবে যেহেতু ফুলে উঠা সময়ের দীর্ঘতার প্রমাণ, সেহেতু সময় সীমা তিন দিন নির্ধারণ করা হবে। আর ফুলে ফেটি না যাওয়া যেহেতু সময়ের নৈকট্যের প্রমাণ; সেহেতু তার সময়সীমা আমরা একদিন একরাত্র নির্ধারণ করেছি। কেননা, এর নীচে হচ্ছে মূহুর্তসমূহ,যা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। অবশ্য [কাপড়ে] নাজাসাত [লেগে থাকার] বিষয়টি সম্পর্কে মুআল্লার বক্তব্য হল, এর মধ্যেও মতভেদ রয়েছে। অর্থাত্ পুরাতন লাগা নাজাসাতের জন্য তিন দিনের সময় সীমা নির্ধারণ করা হবে। আর তাজা নাজাসাতের বেলায় একদিন এক রাত্রের। আর যদি মতভেদ না থাকার দাবী স্বীকার করেও নেওয়া হয়, তা হলে যেহেতু কাপড় তার দৃষ্টির সম্মুখে থাকে আর কুয়া থাকে দৃষ্টির আড়ালে। সুতরাং দুটোর মাসআলা আলাদা।
পরিচ্ছেদঃ উচ্ছিষ্ট ইত্যাদি
প্রত্যেক প্রাণীর ঘাম তার উচ্ছিষ্টের সাথে বিবেচ্য। কেননা [লালা ও ঘাম] দুটোরই জন্ম তার গোশত থেকে। সুতরাং একটিতে অপরটির বিধান প্রযোজ্য।
মানুষের উচ্ছিষ্ট এবং যে প্রাণীর গোশত খাওয়া যায়, তার উচ্ছিষ্ট পাক। কেননা তার সাথে লালা মিশ্রিত হয়েছে। আর তা সৃষ্ট হয়েছে পাক গোশত থেকে। জুনুবী, ঋতুমতী এবং কাফিরও এ হুকুমের অন্তর্ভূক্ত।
কুকুরের উচ্ছিষ্ট নাপাক। সে কোন পাত্রে মুখ দিলে তা ধুতে হবে। কেননা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন-কুকুরের মুখ দেওয়ার কারণে পাত্র তিনবার ধুতে হবে।
কুকুরের জিহ্বা [সাধারণত] পানি স্পর্শ করে, পাত্র নয়। সুতরাং পাত্র যখন নাপাক হয়ে যায়, তখন পানি নাপাক হওয়াত অনিবার্য।
এ হাদীছে নাপাক হওয়া এবং ধোয়ার সংখ্যা প্রমাণিত হয়। সুতরাং এ হাদীস ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] এর সাতবার ধোয়ার শর্ত আরোপের বিপক্ষে দলীল।
তা ছাড়া, যে বস্তুতে কুকুরের পেশাব লাগে, তা তিনবার ধুইলে পাক হয়ে যায়। কাজেই যে বস্তুতে তার উচ্ছিষ্ট লাগে-যা পেশাবের চেয়ে সাধারণ, তা পাক হওয়া তো আরো স্বাভাবিক। আর সাতবার ধোয়া সম্পর্কে বর্ণিত নির্দেশ ইসলামের প্রথম যুগের অবস্থায় প্রয়োজ্য।
শূকরের উচ্ছিষ্ট নাপাক। কেননা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, শূকর সত্তাগতভাবেই নাপাক।
হিংস্র পশুর উচ্ছিষ্ট নাপাক। শূকর ও কুকুর ছাড়া অন্যান্য হিংস্র পশুর উচ্ছিষ্ট সম্পর্কে ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] এর বিপরীত মত রয়েছে।
আমাদের দলীল হল, কেননা হিংস্র পশুর গোশত নাপাক এবং তা থেকেই লালা সৃষ্ট। আর লালার হুকুম গোশতের উপরই নির্ভরশীল।
বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পাক কিন্তু [তা ব্যবহার করা] মাকরূহ।
ইমাম আবূ ইউসফ [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত যে, তা মাকরূহও নয়। কেননা, নবী [সাঃআঃ] বিড়ালের জন্য পাত্র কাত করে ধরতেন। বিড়াল তা থেকে পানি পান করতো, পরে তা দ্বারা তিনি ওজু করতেন। [দারা কুতনী]
ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর দলীল হলো, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন- বিড়াল হিংস্র প্রাণী। এ হাদিসের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিধান বর্ণনা করা। তবে নাকেস হওয়ার হুকুম রহিত করা হয়েছে [গৃহের অভ্যন্তরে] সর্বদা ঘুরাফেরার কারণে। সুতরাং মাকরূহ হওয়ার হুকুম বাকী থেকে যায়। আর পাত্র কাত করে ধরার বর্ণনা হারাম হওয়ার পূর্ববর্তী সময়ের উপর ধর্তব্য। ( পবিত্র পানীর মাসালা )
উল্লেখ্য যে, কারো মতে তার উচ্ছিষ্ট মাকরূহ হওয়ার কারণ, গোশত নাপাক হওয়া। আর কারো মতে নাজাসাত পরিহার না করার কারণে। আর শেষোক্ত মতে তানযীহের এবং প্রথম মতে হারামের কাছাকাছি হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে।
বিড়াল যদি ইদুর খেয়ে সাথে সাথে পানি পান করে, তাহলে পানি নাপাক হয়ে যাবে। তবে কিছু সময় বিলম্ব করার পর হলে নাপাক হবে না। কেননা সে লালা দ্বারা মূখ পরিষ্কার করে ফেলে। এ ব্যতিক্রম শুধু ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] এর মতানুযায়ী। আর অনিবার্য প্রয়োজনবশতঃ পাক হওয়ার জন্য পানি ঢালার শর্তটি রহিত হয়ে যাবে।
ছেড়ে দেয়া মুরগীর উচ্ছিষ্ট মাকরূহ। কেননা ছাড়া মুরগী নাজাসাত ঘটে। তবে যদি এমন ভাবে বাঁধা থাকে যে, তার পায়ের নীচ পর্যন্ত তার চণ্চু পৌছে না, তাহলে নাজাসাতের সংস্পর্শ থেকে মুক্ত থাকার কারণে মাকরূহ হবে না।
হিংস্র পাখীর উচ্ছিষ্টও তদ্রূপ নাপাক। কেননা এরা মরা খায়, সুতরাং ছাড়া মুরগীর মতই হবে।
ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] হতে বর্ণিত আছে যে, হিংস্র পাখী যদি আবদ্ধ থাকে এবং মালিক জানে যে, পাখীর ঠোটে ময়লা নেই, তাহলে [নাজাসাতের] সংস্পর্শ থেকে সংরক্ষিত থাকার কারণে [তার উচ্ছিষ্ট] মাকরূহ হবে না। মাশায়েখগণ এ মতই উত্তম বলে অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন।
সাপ, ইদুর ইত্যাদি গৃহে অবস্থানকারী প্রাণীর উচ্ছিষ্ট মাকরূহ।কেননা [এগুলোর] গোশত হারাম হওয়ার অবশ্যম্ভাবী চাহিদা হল উচ্ছিষ্ট নাপাক হওয়া। তবে সর্বদা গৃহে বিচরণের কারণে নাজাসাতের হুকুম রহিত হয়ে যায় এবং মাকরূহ হওয়ার হুকুম অবশিষ্ট থাকে। আর বিচরণের কারণটি বিড়ালের ব্যাপারে [হাদীছে] উল্লেখ করা হয়েছে।
গাধা ও খচ্চরের উচ্ছিষ্ট সন্দেহযুক্ত। কারো মতে সন্দেহটি পবিত্রতা সম্পর্কে। কেননা উচ্ছিষ্ট পানি পবিত্র হলে অবশ্যই পবিত্রকারীও হবে, যতক্ষণ না লালা পানির চেয়ে অধিক হয়।
অন্য মতে সন্দেহটি পানির পবিত্রকরণ গুণ সম্পর্কে। কেননা সে যদি পানি পায়, তবে তার মাথা ধোয়া তার জন্য ওয়াজিব নয়। তদ্রূপ তার দুধ পাক। তার ঘাম নামাযের বৈধতাকে বাধাগ্রস্ত করে না, যদিও পরিমাণে তা বেশী হয়। সুতরাং তার উচ্ছিষ্ট অনুরূপ হবে। এ মতই সর্বাধিক বিশুদ্ধ। গাধার উচ্ছিষ্ট পাক হওয়ার সম্পর্কে ইমাম মুহাম্মদের স্পষ্ট মত বর্ণিত রয়েছে। সন্দেহের কারণ হচ্ছে গাধার গোশত হালাল বা হারাম হওয়া দলীলগুলো পরস্পর বিরোধী। কিংবা তার উচ্ছিষ্ট পাক বা নাপাক হওয়া সম্পর্কে সাহাবায়ে কিরামের মতভেদ রয়েছে। ( পবিত্র পানীর মাসালা )
আবূ হানীফা [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, তিনি হারাম ও নাপাক হওয়াতে অগ্রাধিকার দিয়ে গাধার উচ্ছিষ্টকে নাজিস বলিয়াছেন। খচ্চর যেহেতু গাধার প্রজননভূক্ত, সুতরাং সেও গাধার পর্যায়ের হবে। যদি গাধা ও খচ্চরের উচ্ছিষ্ট পানি ছাড়া অন্য পানি না পাওয়া যায়, তাহলে তা দ্বারা ওজু করিবে এবং তায়াম্মুম করিবে। এবং যে কোনটা আগে করা জাইয।
ইমাম যুফার [রঃআঃ] বলেন, ওজুকে অগ্রবর্তী না করলে জাইয হবে না। কেননা তা এমন পানি [শরীআতের হুকুম মতে] যার ব্যবহার করা ওয়াজিব। সুতরাং তা সাধারণ পানির সদৃশ। ( পবিত্র পানীর মাসালা )
আমাদের দলীল এই যে, যেহেতু পবিত্রকারী হল দুটির যে কোন একটি, ফলে উভয়ের একত্র হওয়াই বাণ্চনীয়; এর চাহিদা ক্রমবিন্যাস নয়।
ইমাম আবূ ইউসূফ ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর মতে ঘোড়ার উচ্ছিষ্ট পাক। কেননা তার গোশত হালাল। বিশুদ্ধ বর্ণনায় ইমাম আবূ হানীফার মতও অনুরূপ। কেননা গোশত মাকরূহ হওয়ার কারণ হলো তার মর্যাদা প্রকাশ করা।
যদি খোরমা ভিজানো পানি ছাড়া কোন পানি পাওয়া না যায়, তাহলে ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] বলিয়াছেন, তা দ্বারা ওজু করিবে, তায়াম্মুম করিবে না। কেননা জিন সম্প্রদায়ের সাথে সাক্ষাতের রাত্রি সম্পর্কীয় হাদীস রয়েছে যে, নবী [সাঃআঃ] পানি না পেয়ে খোরমা ভিজানো পানি দ্বারা ওজু করিয়াছেন।
ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] বলেন, তায়াম্মুম করিবে, তা দিয়ে ওজু করিবে না। আবূ হানীফা [রঃআঃ] থেকেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] ও এমত পো্ষণ করেন; তায়াম্মুমের আয়াতের উপর আমলের পরিপ্রেক্ষিতে। কেননা আয়াত অধিক শক্তিশালী। অথবা হাদীস আয়াতের দ্বারা রহিত। কেননা তায়াম্মুমের আয়াত মাদানী আর জিনের রাত্রির ঘটনা হল মাক্কী। ( পবিত্র পানীর মাসালা )
ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] বলেন, ওজু ও তায়াম্মুম দুটোই করিবে। কেননা হাদিসের বর্ণনায় স্ববিরোধিতা রয়েছে। আর [ঘটনাটির] তারিখ [সঠিক] জানা নয়। সুতরাং সতর্কতা অবলম্বনে উভয়টির উপর আমল করা ওয়াজিব।
আমাদের পক্ষ থেকে জবাব এই যে, লায়লাতুল জিনের ঘটনা একাধিকবার ঘটেছিলো। সুতরাং রহিত হওয়ার দাবী সঠিক নয়। আর হাদীসটি মশহুর পর্যায়ের, যার উপর সাহাবায়ে কিরাম আমল করিয়াছেন। এধরনের মশহুর হাদীস দ্বারা কিতাবুল্লাহ [এর হুকুমে] বাড়ানো যায়।
আর তা দ্বারা গোসল করার ব্যাপারে কেউ কেউ বলিয়াছেন, ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] এর মতে তা জাইয আছে, ওজুর উপর কিয়াস করে। আবার কেউ কেউ বলিয়াছেন, গোসল জাইয নয়। কেননা গোসল ওজুর চেয়ে উপরের স্তরের।
ঐ নাবীয সম্পর্কে বিরোধ রয়েছে, যা মিষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে এমন তরল যে, সাধারণ পানির মত অংগে প্রবাহিত হয়। আর যা গাঢ় হয়ে গেছে, তা হারাম হবে; তা দ্বারা ওজু জাইয হবে না। আর যদি আগুনে জ্বাল দেয়ার কারণে তাতে পরিবর্তন আসে, তাহলে মিষ্ট থাকা পর্যন্ত অনুরূপ মতভেদ রয়েছে। আর যদি গাঢ় হয়ে যায় তাহলেও আবূ হানীফা [রঃআঃ] এর মতে তা দ্বারা ওজু জাইয। কেননা, তাঁর মতে তা পান করা হালাল। আর ইমাম মুহাম্মদ[রঃআঃ] এর মতে তা পান করা হারাম বিধায় তা দ্বারা ওজু করা যাবে না।
নাবীযুত্তামর ছাড়া অন্য সকল নাবীয দ্বারা কিয়াসের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে ওজু জাইয হবে না। ( পবিত্র পানীর মাসালা )
Leave a Reply