হজ্জের হাদী সম্পর্কে মাসালা ও মাসায়েল
হজ্জের হাদী সম্পর্কে মাসালা ও মাসায়েল >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, দশম অনুচ্ছেদ – হাদী সম্পর্কে
সর্বনিম্ন হলো হাদী হলো বকরী। কেননা নাবী(সাঃআঃ) কে হাদী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, তার সর্বনিম্ন হলো বকরী।
ইমাম কুদুরী(রঃআঃ) বলেন, হাদী তিন প্রকার: উট, গরু ও বকরী। কেননা নাবী(সাঃআঃ) যখন বকরীকে সর্বনিম্ন সাব্যস্ত করেছেন, তখন তার উচ্চ পর্যায় পরিমাণ থাকাও জরুরী। আর তা হলো গরু ও উট।
আর এ কারণে যে, হাদী হল ঐ প্রাণী, যা হাদিয়া স্বরূপ হরম শরীফের দিকে প্রেরণ করা হয়, যাতে তথায় যবাহ্র মাধ্যমে তাকারূব হাসিল করা যায়। আর এই অর্থের দিক দিয়ে তিনটিই সমান।
কুরবানীতে যা যবাহ্ করা জাইয, তাই হাদী রূপেও জাইয। কেননা এটা এমন এক ইবাদত, যার সম্পর্কে হলো রক্ত প্রবাহিত করার সাথে যেমন কুরবানীর বিষয়। সুতরাং একই রকম পশুর সংগে উভয়টি সম্পৃক্ত থাকবে।
হজ্জের সকল ব্যাপারে বকরীই যথেষ্ট। কেবল দুটি ক্ষেত্র ব্যতীত। (এক) যে ব্যক্তি জানাবাতের অবস্থায় তাওয়াফকে যিয়ারত করলো এবং (দুই) যে ব্যক্তি উকুফের পরে স্ত্রী সহবাস করলো।
এদুটি ক্ষেত্রে বাদানাহ (উট বা গরু) ছাড়া জাইয হবে না। এর কারন পিছনে (জিনায়াত অধ্যায়ে) আমরা বলে এসেছি।
নফল তামাত্তু ও কিরামের হাদীর গোশত খাওয়া জাইয। কেননা এটা ইবাদত রূপে যবাহ্কৃত পশু। সুতরাং কুরবানীর ন্যায় এগুলোর গোশত খাওয়া জাইয। আর সহী্হ হাদীছে বর্ণীত আছে যে, নাবী(সাঃআঃ) তার হাদীর গোশত আহার করেছেন এবং তার শুরুয়াও পান করেছেন।
আর হাজীদের জন্য হাদীর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। এর দলিল আমাদের পূর্ব বর্ণীত হাদীস। তদ্রুপ কুরবনীতে যেভাবে বলা হইয়াছে, সেইভাবে হাদীর গোশত সাদাকা করা মুস্তাহাব।
অন্যান্য হাদীর গোশত খাওয়া জাইয নেই। কেননা সেগুলো হলো কাফ্ফারার দম। আর সহী্হ হাদীছে বর্ণীত আছে যে, নাবী(সাঃআঃ) যখন হুদায়বিয়ার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং হযরত নাজিয়া আল-আসলামী (রাঃআঃ) এর হাতে হাদী প্রেরণ করেছিলেন, তখন তাকে বলে দিয়েছিলেন, তুমি এবং তোমার সাথীরা তা থেকে কিছু খাবে না।
নফল তামাত্ত্ব ও কিয়াসের হাদী ইয়াওমুন নহর ছাড়া যবাহ্ করা জাইয নয়।
লেখক বলেন, মাবসূত কিতাবে রহিয়াছে যে, নফল হাদী ইয়াওমুন নহরের পূর্বে যবাহ্ করা জাইয, তবে ইয়াওমুন নহরে যবাহ্ করা উত্তম।
আর এ-ই সহীহ মত। কেননা নফলরূপে যবাহ্ করার ক্ষেত্রে ইবাদত হলো এই হিসাবে যে, সেগুলো হাদী। আর তা সাব্যস্ত হয়ে যায় হরমে পৌছনোর মাধ্যমে।
আর তা যখন পাওয়া গেলো তখন ইয়াওমুন নহরের বাইরেও যবাহ্ করা জাইয হবে। তবে কুরবনীর দিনগুলোতেই উত্তম। কেননা ঐ দিনগুলোতে যবাহ্ করার মাধ্যমে ইবাদতের গুণ অধিক প্রবল।
তামাত্তু ও কিরানের দমের ক্ষেত্রে কারণ হলো আল্লাহ্ তা’আলার বাণী- অনন্তর তোমরা তা থেকে আহার কর। এবং দুস্থ-দরিদ্রদের আহার করাও। অতঃপর তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে।
আর অপরিচ্ছন্নতা দূর করার বিষয়টি ইয়াওমুন নহরের সংগে সম্পৃক্ত। তাছাড়া এটা হলো ইবাদতের দম। সুতরাং তা ইয়াওমুন- নহরের সাথে খাস হবে। যেমন, কুরবানী।
অন্যান্য হাদী যে কোন সময় ইচ্ছা যবাহ্ করা জাইয।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) তামাত্তু ও কিরানের দমের উপর কিয়াস করে বলেন, ইয়াওমুন-নহর ছাড়া যবাহ্ করা জাইয নয়। কেননা তার মতে প্রতিটিই হলো ক্ষতিপূরণের দম।
আমাদের দলিল এই এই যে, এগুলো হলো কাফ্ফারার দম। সুতরাং ইয়াওমুন-নহরের সাথে তা বিশিষ্ট থাকবে না। কেননা এগুলো যখন ক্ষতি পূরনের জন্য ওয়াজিব হইয়াছে, তখন অবিলম্বে তা দ্বারা ত্রুটি দূর করার জন্য তাড়াতাড়ি করাই উত্তম হবে। তামাত্তু ও কিরানের দম এর বিপরীত। কেননা, এ হলো ইবাদতের দম।
ইমাম কুদুরী(রঃআঃ) বলেন, হরম ছাড়া অন্যত্র হাদী যবাহ্ করা জাইয হবে না। কেননা শিকারের ক্ষতিপুরণ সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেন- এমন হাদী-যা কাবায় উপনীত হবে।
সুতরাং কাফ্ফারা জাতীয় প্রতিটি দমের ক্ষেত্রেও এটা মূলনীতি হয়ে গেলো। তাছাড়া (আভিধানিক ভাবে) হাদী বলাই হয় এমন পশুকে, যা কোন স্থানে হাদিয়া স্বরূপ পাঠান হয়। আর তার স্থান হলো হরম।
রসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন- সমগ্র মীনা হলো যবাহ্স্থল এবং মক্কার সমগ্র পথ হলো যবাহ্র স্থল।
হাদীর গোশত হরম এবং অন্যান্য স্থানের মিসকীনদের মাঝে সাদাকা করা জাইয।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। (আমাদের দলিল এই যে,) কেননা সাদাকা হলো একটি বোধগম্য ইবাদত। আর যে কোন দরিদ্রকে সাদাকা করাই ইবাদত।
ইমাম কুদুরী(রঃআঃ) বলেন, হাদীসমূহকে আরাফায় ফিরে নিয়ে যাওয়া (যা চিহ্নিত করা) জরুরী নয়। কেননা হাদী শব্দটি বিশেষ স্থানে নিচে গিয়ে সেখানে যবাহ্ করার মাধ্যমে সাওয়াব অর্জনের অর্থ নির্দেশ করে, আরাফায় নিয়ে যাওয়া বা চিহ্নিত করার অর্থ জ্ঞাপন করে না। সুতরাং তা ওয়াজিব হবে না।
আর যদি তামাত্তুর হাদী আরাফায় গিয়ে যায়, তবে তা উত্তম। কেননা তা যবাহ্ করা ইয়াওমুন নহর এর সাথে নির্দিষ্ট। আর হয়ত সম্ভবতঃ সে তা রাখার জন্য কাউকে নাও পেতে পারে, তখন সংগে করে আরাফায় নিয়ে যেতে বাধ্য হবে।
তাছাড়া এটা হলো ইবাদতের দম। সুতরাং এর ভিত্তি হবে ঘোষণার উপর। কাফ্ফারার দম হলো এর বিপরীত। কেননা এগুলো ইয়াওমুন নহরের পূর্বে যবেহ করা জাইয রহিয়াছে। যেমন ইতোপূর্বে আমরা বর্ণনা করেছি। এবার অপরাধই হলো তা (ওয়াজিব হওয়ার) কারণ। সুতরাং তা গোপন রাখাই সমীচীন।
ইমাম কুদুরী(রঃআঃ) বলেন, উটের ক্ষেত্রে নহর এবং গরু ও বকরীর ক্ষেত্রে যবাহ্ই উত্তম। কেননা আল্লাহ তা্আলা বলেছেন- তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্য নামাজ আদায় কর এবং নহর কর। এখানে নহরের ব্যাখ্যায় উট বলা হইয়াছে। আর আল্লাহ্ তা’আলা অন্যত্র বলেছেন- আর তোমরা গরু যবাহ্ করবে।
আর আল্লাহ্ তা’আলা (বকরী সম্পর্কে) বলেছেন- আর আমরা তার পরিবর্তে ফিদ্ইয়া রূপে এক মহান যবিহা দান করেছি। আর যিবহ বলা হয় ঐ পশূকে, যা যবাহ্র জন্য প্রস্তুত রাখা হইয়াছে। আর সহীহ্ হাদীছে বর্ণীত আছে যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) উটকে নহর করেছেন এবং গরু ও বকরী যবাহ্ করেছেন।
হাদীসমূহের ক্ষেত্রে যদি সে ইচ্ছা করে তবে উটকে দাড়ানো অবস্থায় নহর করিতে পারে, কিংবা তাকে বসিয়ে নহর করিতে পারে। সে যা-ই করবে, তাই ভাল। তবে উত্তম হলো, দাড়ানো অবস্থায় নহর করা। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) দাড়ানো অবস্থায় রেখে হাদীসমূহকে নহর করেছেন। আর সাহাবা কিরামও সামনের বা পা বেধে দাড়ানো অবস্থায় নহর করেছেন।
গরু ও বকরী দাড়ানো অবস্থায় যবাহ করবে না। কেননা পার্শ্বে শোয়ানো অবস্থায় যবাহর স্থানটি অধিক স্পষ্ট থাকে। ফলে যবাহ্ করা সহজ হয়। আর এ দুটির ক্ষেত্রে যবাহ্ই হলো সুন্নাত।
ভালভাবে যবাহ করিতে পারলে উত্তম হলো নিজেই যবাহ্ করা। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী(সাঃআঃ) বিদায় হজ্জের সময় একশ উট নিয়েছিলেন এবং ষাটের কিছু উপরে (তেষট্টিটি) নিজে নহর করেছেন। এবং অবশিষ্টগুলোর ব্যাপারে হযরত আলী (রাঃআঃ) কে দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন।
তাছাড়া এটা হলো ইবাদত, আর ইবাদত নিজে আঞ্জাম দেওয়াই উত্তম। কেননা এতে অধিক বিনয় রহিয়াছে। তবে কোন ব্যক্তি তা ভালরূপে করিতে পারে না। তাই আমরা অন্যকে দায়িত্ব প্রদান অনুমোদন করেছি।
ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, উটের গায়ের চট ও রশি সাদাকা করে দেবে আর এগুলো দ্বারা কসাইয়ের মজুরি প্রদান করবে না। কেননা রসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) আলী (রাঃআঃ) কে বলেছেন- তার গায়ের চট এবং রশি সাদাকা করে দাও। আর তার এগুলো দ্বারা কশাইয়ের মজুরি দিও না।
যে ব্যক্তি উট নিয়ে যাওয়ার সময় তাতে আরোহণ করিতে বাধ্য হলো, সে তাতে আরোহণ করিতে পারে। যদি তাতে আরোহণ না করার উপায় থাকে, তাহলে আরোহণ করবে না। কেননা, সে এটাকে আল্লাহ্র জন্য একান্তভাবে নির্ধারণ করেছে। যতক্ষণ না যবাহ্র স্থানে পৌছে যায়। তবে শুধু এ অবস্থায় যখন সে এর উপর সাওয়াব হতে বাধ্য হয়। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) জনৈক ব্যক্তিকে উট নিয়ে যেতে দেখে বলেছিলেন, তোমরা সর্বনাশ। এতে আরোহণ করো।
এর ব্যাখ্যা এই যে, লোকটি অক্ষম ও অভাবগ্রস্ত ছিলেন।
যদি তাতে আরোহণ করে আর সে কারণে তাতে খুত সৃষ্টি হয়, তাহলে তার যে পরিমাণ খুত সৃষ্টি হইয়াছে, তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর যদি তার দুধ থাকে তাহলে তা দোহন করবে না। কেননা দুধ তা থেকেই জন্মায়। সুতরাং তা নিজের কাজে লাগাবে না। বরং তার ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে, যাতে বন্ধ হয়ে যায়। তবে এ হুকুম হলো যবাহ্র সময় নিকটবর্তী হলে। পক্ষান্তরে যদি যবাহ্র সময় বিলম্বিত হয়, তাহলে দোহন করবে এবং দুধ খরচ করে ফেলে, তাহলে অনুরূপ পরিমাণ দুধ বা তার মূল্য সাদাকা করে দেবে। কেননা তার যিম্মায় ক্ষতিপূরণ রহিয়াছে।
হাদী নিয়ে যাওয়ার সময় যদি তা পথে হালাক হয়ে যায় আর তা নফল হাদী হয় তাহলে তার উপর অন্য হাদী ওয়াজিব হবে না। কেননা ইবাদতের সম্পর্ক হয়েছিলো এই জন্তু বিশেষের সংগে, আর তা ফউত হয়ে গিয়েছে।
যদি সে হাদী ওয়াজিব হিসাবে হয়ে থাকে তাহলে তার স্থলে অন্য একটি আদায় করা ওয়াজিব। কেননা ওয়াজিব তার যিম্মায় রয়ে গেছে।
যদি তাতে বড় ধরনের দোষ দেখা দেয়। তাহলে তার স্থলে অন্য একটি আদায় করিতে হয়। কেননা বড় ধরনের দো্ষযুক্ত হলে তা দ্বারা ওয়াজিব আদায় হয় না। সুতরাং অন্য একটি দ্বারা আদায় করা জরুরী। আর দোষযুক্ত পশুকে যা ইচ্ছা তাই করবে। কেননা এটা এখন তার অন্যান্য সম্পদের সংগে যুক্ত হয়ে গিয়েছে।
পথে যদি উট মুমুর্ষ হয়ে পড়ে, তবে নফল হলে নহর করবে আর তার (কালাদার) জুতা তার রক্ত দ্বারা রঞ্জিত করে দেবে। আর উহা দ্বারা তার কুজের পাশে ছাপ মেরে দেবে। সে কিংবা অন্য কোন মালদার তার গোশত খাবে না।
নজিয়া আসলামী (রাঃআঃ) কে রসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) এরূপ করিতে আদেশ করেছিলেন। মতনে বর্ণীত শব্দটি দ্বারা তার গলায় ঝুলানো কালাদা উদ্দেশ্য । এর ফলে মানুষ জানতে পারবে যে, এটি হাদী,তখন দরিদ্র লোকেরা তা ব্যবহার করবে। আর ধনী লোকেরা করবে না। এর কারণ এই যে, এটা খাওয়ার অনুমতি যবাহ্ করার স্থানে পৌছার শর্তের সাথে যুক্ত। সুতরাং এর পূর্বে তা হালাল না হওয়াই উচিত। তবে হিংস্র প্রাণীদের ছিড়ে খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেয়ার চেয়ে দরিদ্রদের মাঝে সাদাকা করে দেয়া উত্তম। আর তাতে এক ধরণের ইবাদত রহিয়াছে এবং ইবাদতই হলো উদ্দেশ্য।
যদি উক্ত বাদানাহ্ ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে তার স্থলে অন্য বাদানাহ্ আদায় করবে। আর মুমুর্ষটিকে যা ইচ্ছা করিতে পারে। কেননা যে কাজের জন্য সেটাকে নির্ধারণ করেছিল, সেটা সে কাজের উপযুক্ত থাকেনি। আর এতে তার মালিকানা রহিয়াছে অন্যান্য সম্পদের মত। নফল, তামাত্তু ও কিরানের হাদীকে কালাদাহ পরাবে। কেননা এটা ইবাদতের দম। আর কালাদাহ (ছেড়া জুতা বা চামড়ার মালা) ঝুলিয়ে দেয়াতে প্রচার ও ঘোষণা হয়, যা ইবাদতের দমের জন্য উপযোগী।
অবরোধের ও দন্ডসমূহের দম এর হাদীকে কালাদাহ্ পরাবে না। কেননা অপরাধ হলো এক কারণ। আর অপরাধকে গোপন রাখাই সম্মত। আর অবরোধের দম হলো ক্ষতিপূরণের জন্য। সুতরাং এটাকে ক্ষতিপূরণ জাতীয় (অর্থাত্ অপরাধ জনিত) সংগে যুক্ত করা হবে।
ইমাম কুদুরী(রঃআঃ) হাদী শব্দটি উল্লেখ করেছেন। মুলতঃ তার উদ্দেশ্য হলো বাদানাহ্। কেননা বকরীকে সাধারণতঃ কালাদাহ পরানো হয় না। আর আমাদের মতে বকরীকে কালাদাহ্ পরানো সুন্নাত নয়। বকরীর ক্ষেত্রে কালাদাহ পরানোর মধ্যে কোন ফায়দা নেই। যেমন, পূর্বে বলা হইয়াছে। আল্লাহ্ই অধিক অবগত।
বিবিধ মাসআলা
যদি এমন হয় যে, আরাফায় লোকেরা একদিন অবস্থান করলো। আর একদল লোক সাক্ষ্য প্রদান করলো যে, তারা আসলে কুরবানীর দিন (দশই যিলহাজ্জ) উকুফ করেছে, তাহলে তাদের এ উকুফ যথেষ্ট হবে ।
কিয়াসের দাবী এই যে, তা তাদের জন্য যথেষ্ট হবে না। এটাকে ইয়াওমুত্তার বিয়া(আট তারিখ) উকুফের উপর বিবেচনার প্রেক্ষিতে।
এর কারণ এই যে, উকূফ হলো এমন একটি ইবাদত, যা নির্ধারিত সময় ও স্থানের সাথে বিশিষ্ট। সুতরাং এ দুটি বিশিষ্টতাহা ছাড়া উকূফ ইবাদত হবে না।
সূক্ষ্ম কিয়াসের কারণ এই যে, এ সাক্ষ্য নেতিবাচক বিষয়ের উপর হইয়াছে এবং এমন একটি বিষয়ের উপর হইয়াছে, যা বিচারের আওতাভূক্ত কোন বিষয় নয়। সুতরাং তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।
তাছাড়া এ একটি ব্যাপক সমস্যা, যা পরিহার করা সম্ভব নয় এবং তার ক্ষতিপূরণ করাও সম্ভব নয়। আর পরবর্তীতে পুনরায় হজ্জ আদায় করার আদেশ দানে স্পষ্ট জটিলতা রহিয়াছে। সুতরাং সন্দেহজনক অবস্থায় সেটাকেই যথেষ্ট বলে সাব্যস্ত করা জরুরী।
কিন্তু ইয়ামুত্তার-বিয়া উকুফ করার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা আরাফার দিন উকুফ করে সন্দেহ নিরাসনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব।
তাছাড়া বিলম্বিত আমল জাইয হওয়ার নযীর রহিয়াছে, কিন্তু অগ্রবর্তী আমল জাইয হওয়ার নযীর নেই।
ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর অনুসারিগণ বলেছেন, শাসকের কর্তব্য হলো এ ধরণের সাক্ষ্য গ্রহন না করা, এবং ঘোষণা দিয়ে দেয়া যে, লোকদের হজ্জ সম্পন্ন হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা সবাই ফিরে যাও। কেননা সাক্ষ্য গ্রহণ করায় কেবল ফিতনাই সৃষ্টি হয়।
তদ্রুপ যদি তারা আরাফা দিবসের আগের সন্ধ্যায় (অর্থাত্ ইয়ামুত্তাবিয়ায় একদিন আগে) চাদ দেখার সাক্ষ্য দেয় আর ইমামের পক্ষে অবশিষ্ট রাতে লোকদেরকে নিয়ে কিংবা তাদের অধিকাংশের নিয়ে আরাফায় উকুফ করা সম্ভব না হয়, তাহলে ইমাম উক্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন না।
ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) বলেন, যে ব্যক্তি দ্বিতীয় দিন (অর্থাত্ যিলহাজ্জের এগার তারিখে) মধ্যবর্তী ও তৃতীয় জামারায় কংকর নিক্ষেপ করল, কিন্তু প্রথমটি করলো না; তাহলে প্রথমটি কাযা করার সময় যদি পরবর্তী দুটিও করে নেয় তাহলে উত্তম হয়। কেননা এতে মাসনূন তারতীবের সুন্নতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করল। আর যদি শুধু প্রথম জামারায় কংকর নিক্ষেপ করে তাহলেও তা যথেষ্ট হবে। কেননা সে যথা সময়ে ছেড়ে দেওয়া আমলটির ক্ষতিপূরণ করে নিয়েছে। শুধু তারতীব তরক করেছে।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, তা যথেষ্ট হবে না। যতক্ষণ না সকল রামী পুনরায় করে। কেননা এটা তারতীবের সংগেই শরীআত কর্তৃক প্রবর্তিত হইয়াছে। সুতরাং এটা তাওয়াফের পূর্বে সাঈ করার মতো হলো। কিংবা সাফার পরিবর্তে মারওয়া থেকে সাঈ শুরু করার মতো হলো।
আমাদের দলিল এই যে, প্রতিটি জামারাহ্ হলো স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ইবাদত। সুতরাং একটার উপর অন্যটাকে অগ্রবর্তী করার সাথে তার বৈধতা সম্পৃক্ত হবে না। সাঈ-র বিষয়টি ভিন্ন। কেননা এটা তাওয়াফের অনুগামী। কারন তা তাওয়াফের চেয়ে নিম্নমর্যাদার। তদ্রুপ মারওয়া যে সাঈ-র শেষপ্রান্তে, এটা নাস দ্বারা সাব্যস্ত হইয়াছে। সুতরাং এর সাথে প্রারম্ভ এর সম্পর্ক হতে পারে না।
ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ)বলেন, যে ব্যক্তি হেটে হজ্জ করবে বলে নিজের জন্য নির্ধারণ (মান্নাত) করেছে, সে সওয়ারীতে আরোহণ করবে না, যে পর্যন্ত না তাওয়াফ যিয়ারতের শেষ করে।
মাবসূত কিতাবে অবশ্য তাকে পায়ে হাটা বা সওয়াব, যে কোন একটির ইখতিয়ার দেওয়া হইয়াছে। আর এখানে মতনের ভাষ্যে ওয়াজিব হওয়ার দিকে ইংগিত রহিয়াছে। এই হলো নীতিগত হুকুম।
কেননা সে পূর্ণবার গুণসহ নিজের উপর ইবাদত লাযেম করেছে। সুতরাং সে গুণসহ তা তার উপর লাযেম হবে। যেমন, যদি লাগাতার রোযা রাখার মান্নত করে থাকে।
আর হজ্জের কর্মসমূহ যেহেতু তাওয়াফে যিয়ারতের মাধ্যমে শেষ হয়, তাই উক্ত তাওয়ায় করা পর্যন্ত হেটে চলতে হবে।
আর কেউ বলেছেন, ইহরাম করার পর থেকে পায়ে হেটে চলা শুরু করবে। আবার কেউ বলেছেন, তার ঘর থেকে শুরু করবে। কেননা বাহ্যতঃ এটাই হলো উদ্দেশ্য।
যদি সাওয়াব হয়ে চলে, তাহলে দম নিতে হবে, কেননা সে তাতে ত্রুটি স্পষ্ট করে ফেলেছে।
মাশায়েখগণ বলেছেন, দূরত্ব যখন অধিক হয় এবং হাটা কষ্টকর হয়, তখন আরোহণ করবে। আর স্থল নিকটবর্তী হলে এবং সে ব্যক্তি হাটায় অভ্যস্ত হলে এবং তার জন্য কষ্টকর না হলে আরোহণ না করাই উচিত।
আর কোন ব্যক্তি যদি ইহরাম অবস্থায় দাসীকে বিক্রি করে, যে তাকে ইহরামের অনুমতি দিয়েছিলো, তবে ক্রেতার জন্য জাইয হবে তাকে ইহরামযুক্ত করে তার সাথে সহবাস করা।
ইমাম যুফার(রঃআঃ) বলেন, ক্রেতার জন্য তা জাইয হবে না। কেননা ইহরাম এমন এক আকদ, যা তার মালিকানার পূর্বে সংঘটিত হইয়াছে। সুতরাং তা সে বাতিল করিতে পারে না। যেমন, কেউ যদি বিবাহিতা দাসী খরিদ করে।
আমাদের দলিল এই যে, এখানে ক্রেতা বিক্রেতার স্থলবর্তী হইয়াছে। আর বিক্রেতার জন্য তাকে ইহরামমুক্ত করে নেওয়া জাইয ছিল। সুতরাং ক্রেতার জন্যও তা জাইয হবে। অবশ্য বিক্রেতার জন্য তা মাকরূহ। কেননা তাতে ওয়াদা খিলাফী রহিয়াছে। আর এ কারণে ক্রেতার ক্ষেত্রে নেই।
বিবাহের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা বিক্রেতার অনুমতি ক্রমে বিবাহ হয়ে থাকলে তা বাতিল করার অধিকার তার ছিল না। সুতরাং ক্রেতারও সে অধিকার থাকবে না।
ক্রেতার যখন তাকে ইহরাম মুক্ত করে নেয়ার অধিকার রহিয়াছে,তখন আমাদের মতে ইহরামের দোষের কারণে তাকে ফেরত দেয়ার অধিকার থাকবে না। আর ইমাম যুফার(রঃআঃ) এর মতে সে ফেরত দিতে পারবে।
কোন কোন নুসখায় এরূপ রহিয়াছে: অথবা তার সাথে সহবাস করিতে পারবে।
প্রথম মতনের ভাষ্যে বোঝা যায় যে, সহবাস ছাড়া চুল ছাটা কিংবা নখ কর্তন করার মাধ্যমে তাকে ইহরাম মুক্ত করবে। অতঃপর সহবাস করবে।
আর দ্বিতীয় এ বারত দ্বারা বোঝা যায় যে, সহবাস দ্বারা তার ইহরাম ভংগ করাবে। কেননা সহবাসের পূর্বে স্পর্শ সাধারণতঃ হয়েই থাকে। যার দ্বারা ইহরাম ভংগ হয়ে যাবে । আর উত্তম হবে হজ্জের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে সহবাস ব্যতীত তাকে ইহ্রাম মুক্ত করা। আল্লাহ্ই অধিক অবগত।
Leave a Reply