ইহরামের সম্পর্ক সম্বন্ধে মাসাল ও মাসায়েল

ইহরামের সম্পর্ক সম্বন্ধে মাসাল ও মাসায়েল

ইহরামের সম্পর্ক সম্বন্ধে মাসাল ও মাসায়েল >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

কিতাবঃ আল হিদায়া, ষষ্ঠ অনুচ্ছেদ – ইহরামের সম্পর্ক সম্বন্ধে

ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) বলেন, মক্কী যদি উমরার ইহরাম বাধে এবং এক চক্কর তাওয়াফ করে ফেলে অতঃপর হজ্জের ইহরাম বাধে, তাহলে সে হজ্জ বর্জন করবে এবং তা বর্জন করার কারণে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। আর তার উপর একটি হজ্জ ও একটি উমরা ওয়াজিব হবে।

ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহা্ম্মদ (রঃআঃ) বলেন, উমরা বর্জন করা আমাদের মতে অধিক পসন্দনীয়। পরে উমরা কাযা করে নেবে এবং তা বর্জন করার কারনে তার উপর একটি দম ওয়াজিব হবে। কেননা দুটির একটি বর্জন করা তো অনিবার্য। কেননা মক্কীর ক্ষেত্রে হজ্জ ও উমরা উভয়কে একত্র করা শরীআত সম্মত নয়। এমতাবস্থায় উমরা বর্জন করাই উত্তম। কারণ এটা মর্যাদার দিক থেকে নিম্নতর এবং ক্রিয়াকর্মের দিক থেকেও অপেক্ষাকৃত স্বল্প আর কাযা করার ব্যাপারেও সহজতর। কেননা তা নির্ধারিত সময়ের সাথে আবদ্ধ নয়।

একই বিধান হবে যদি প্রথমে উমরার এবং পরে হজ্জের ইহরাম বাধে কিন্তু উমরার কোন ক্রিয়াকর্ম শুরু না করে। এর দলিল এই যে, যা আমরা এইমাত্র বলেছি।

যদি উমরার চার চক্কর তাওয়াফ করে ফেলে অতঃপর হজ্জের ইহরাম বাধে, তাহলে কোন দ্বিমত নেই যে, সে বর্জন করবে। কেননা অধিকাংশের জন্য সমগ্রের হুকুম রহিয়াছে। সুতরাং তা বর্জন করা কঠিন। যেমন, সে যদি উমরা থেকে পূর্ণ ফারেগ হয়ে যায়।

একই হুকুম হবে যদি উমরার জন্য এর চেয়ে কম চক্কর তাওয়াফ করে থাকে। এটি ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মত।

ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর দলিল এই যে, কিছু আমল আদায় করার মাধ্যমে উমরার ইহরাম জোরদার হয়ে গেছে, পক্ষান্তরে হজ্জের ইহরাম জোরদার হয়নি। আর যা জোরদার নয়, তা বর্জন করা সহজ। তাছাড়া এই অবস্থায় উমরা বর্জন করার অর্থ হলো আমল নষ্ট করা। পক্ষান্তরে হজ্জ বর্জন করার অর্থ হলো হজ্জ থেকে বিরত থাকা।

অবশ্যই যেটাই বর্জন করবে সেটা বর্জন করার কারণে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। কেননা পরবর্তী ক্রিয়াকর্ম চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হওয়ার কারণে সময়ের পূর্বই সে হালাল হয়ে গেছে। সুতরাং সে অবরুদ্ধ ব্যক্তির সম-পর্যায়ের হলো। তবে উমরা বর্জন করার ক্ষেত্রে শুধু উমরার কাযা করিতে হবে। পক্ষান্তরে হজ্জ বর্জন করার ক্ষেত্রে হজ্জ কাযা করিতে হবে এবং তদুপরি একটি উমরা আদায় করিতে হবে। কেননা সে হজ্জ ফউতকারীর সমপর্যায়ে হইয়াছে।

যদি সে হজ্জ-উমরা উভয়টি পালন করে যায়, তবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। কেননা উভয় আমল যেভাবে সে নিজের জন্য নির্ধারণ করেছে, সেভাবেই আদায় করেছে। যদিও উভয়টি এক সঙ্গে আদায় করা(শরীআতের পক্ষ থেকে) নিষেধকৃত। আর আমাদের মূলনীতি জানা রহিয়াছে যে, নিষেধ কর্মের অস্তিত্ব রোধ করে না।

তবে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। কেননা সে হজ্জ ও উমরা একত্রিত করেছে। আর নিষিদ্ধ কাজ করার কারণে তার আমলের মধ্যে ত্রুটি এসে গেছে। মক্কীর ক্ষেত্রে এটা হলো ক্ষতিপূরণের দম। পক্ষান্তরে বহিরাগতদের ক্ষেতে এটা হলো শোকরানার দম। ( হজ্জের মাসালা মাসায়েল )

যে ব্যক্তি হজ্জের ইহরাম বাধল, অতঃপর দশ তারিখে আরেকটি হজ্জের ইহরাম বাধল, সে যদি প্রথম হজ্জের হলক করে ফেলে থাকে, তাহলে দ্বিতীয় হজ্জও তার যিম্মায় ওয়াজিব হয়ে যাবে। তবে তার উপর কোন দম আসবে না। যদি প্রথম হজ্জের হলক না করে থাকে তাহলেও দ্বিতীয় হজ্জটি তার উপর ওয়াজিব হয়ে যাবে, (দ্বিতীয় ইহরামের পর) তার উপর দম ওয়াজিব হবে-চুল ছাটুক কিংবা না ছাটুক।

এটা ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মত। সাহেবাইন বলেন, যদি চুল না ছাটে তাহলে তার উপর কোন দম ওয়াজিব হবে না। কেননা হজ্জের দুই ইহরাম একত্র করা কিংবা উমরার দুই ইহরাম একত্র করা বিদআত। সুতরাং যখন হলক করবে তখন সেই হলক যদিও প্রথম ইহরামের জন্য একটি আমল, কিন্তু দ্বিতীয় ইহরামের জন্য তা অপরাধ। কেননা (দ্বিতীয় ইহরামের প্রেক্ষিতে) তা অসময়ে হইয়াছে। সুতরাং সর্বসম্মতিক্রমেই তার উপর দম ওয়াজিব হবে। আর যদি আগামী বছর হজ্জ করার পূর্বে হলক না করে, তাহলে প্রথম ইহরামের ক্ষেত্রে হলক কে সে যথা সময় থেকে বিলম্বিত করলো। আর ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মতে বিলম্ব দম ওয়াজিব করে। সাহেবাইনের মতে তার উপর কোন দম আসে না। যেমন ইতোপূর্বে এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করে এসেছি। এ কারণেই ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) চুল ছাটা না ছাটা উভয় অবস্থাকে অভিন্ন সাব্যস্ত করেছেন। পক্ষান্তরে সাহেবাইন (দম ওয়াজিব হওয়ার জন্য)  চুল ছাটার শর্ত আরোপ করেছেন।

যে ব্যক্তি চুল ছাটা ছাড়া উমরার যাবতীয় ক্রিয়াকর্ম থেকে ফারেগ হয়ে গেছে অতঃপর অন্য উমরার ইহরাম বেধেছে, তার উপর একটি দম ওয়াজিব হবে। কারণ হলো সময়ের পূর্বে ইহরাম বাধার কারণে। কেননা সে উমরার দুই ইহরামকে একত্র করেছে, আর তা মাকরূহ। সুতরাং তার উপর দম ওয়াজিব হবে। আর এটা হলো ক্ষতিপূরণ ও কাফ্‌ফারার দম।

যে ব্যক্তি হজ্জের ইহরাম বাধার পর উমরার ইহরাম বাধলো, তার উপর দুটোই আদায় করা ওয়াজিব হবে। কেননা বহিরাগতদের জন্য হজ্জ ও উমরা উভয়কে একত্র করা শরীআতে বৈধ। আর মাসাআলাটি বহিরাগতদের সম্পর্কেই। সুতরাং এর মাধ্যমে সে কিরান হজ্জকারী হলো। তবে সুন্নাতের বিপরীত করার কারণে গুনাহ্গার হবে।

যদি সে উমরার আমলগুলো না করে আরাফায় উকুফ করে ফেলে, তাহলে সে উমরা বর্জনকারী হলো। কারণ তার জন্য তা আদায় করা সম্ভব নয়। কেননা তা হজ্জের উপর ভিত্তিকৃত হচ্ছে, যা শরীআতের অনুমোদিত নয়।

তবে যদি সে আরাফা অভিমূখে রওয়ানা হয়, তাহলে উকুফ করার পূর্ব পর্যন্ত সে উমরা বর্জনকারী হবে না। ইতোপূর্বে আমরা তা উল্লেখ করেছি।

যদি সে হজ্জের জন্য তাওয়াফ করে, অতঃপর উমরার জন্য ইহরাম বাধে এবং উভয়টির ক্রিয়াকর্ম চালিয়ে যায়, তাহলে দুটোই তার উপর ওয়াজিব হবে। এবং উভয়কে একত্র করার কারণে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। কেননা, আগেই বলে আসা হইয়াছে যে, উভয়কে একত্র করা বৈধ। সুতরাং উভয়ের ইহরাম বাধাও শুদ্ধ হবে।

উল্লেখিত তাওয়াফ দ্বারা তাওয়াফ তাহিয়্যা উদ্দেশ্য। আর তা সুন্নাত। রুকন নয়। এমন কি তা তরক করলে কিছু ওয়াজিব হবে না। আর যখন সে কোন রুকন আদায় করেনি তখন কি তা তরক করলে কিছু ওয়াজিব হবে না। আর যখন সে কোন রুকন সম্পাদন করা সম্ভব। এ কারণেই যদি সে উভয়টি সম্পাদন করিতে থাকে বিশুদ্ধ মতে এটি কাফ্‌ফারা সম্পাদন করা সম্ভব। এ কারণেই যদি সে উভয়টি সম্পাদন করিতে থাকে তাহলেও জাইয হবে। তবে উভয়টি একত্র করার কারণে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। আর বিশুদ্ধ মতে এটি কাফ্‌ফারা ও ক্ষতিপূরণের দম। কেননা একদিক থেকে সে উমরার কার্যসমূহকে হজ্জের কার্যসমূহের উপর ভিত্তি করেছে।

তবে তার জন্য উমরা ছেড়ে দেওয়া মুস্তাহাব। কেননা হজ্জের ইহরাম হজ্জের একটি আমল আদায় করার কারণে জোরদার হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে যদি হজ্জের তাওয়াফ না করে থাকে তাহলে হুকুম বিপরীত হবে।

আর যখন উমরা ছাড়ার কারণে তার উপর দম ওয়াজিব হবে যে ব্যক্তি ইয়াওমুন-নহরে কিংবা আইয়ামে তাশরীকে উমরার ইহরাম বাধলে, ঐ উমরা তার জন্য ও্রয়াজিব হয়ে যাবে। (ইতোপূর্বে এর) কারণ আমরা বলে এসেছি।

তবে তা বর্জন করবে। অর্থাত্ বর্জন করা জরুরী হবে ।কেননা সে হজ্জের রুকন আদায় করে ফেলেছে। সুতরাং সর্ব দিক থেকেই সে হজ্জের কার্যসমূহের উপর উমরার কার্যসমূহের ভিত্তিকারী হয়ে যাবে। তাছাড়া এই দিনগুলোতে উমরা মাকরূহ। আমরা এটি বর্ণনা করবো। এ কারণেই উক্ত উমরা বর্জন করা তার উপর জাইয।

যদি সে উমরা বর্জন করে তাহলে বর্জন করার কারণে একটি দম ওয়াজিব হবে এবং তদস্থলে একটি উমরা করা ওয়াজিব হবে। এর কারণ আমরা আগেই বর্ণনা করে এসেছি।

অবশ্য যদি সে উমরার কাজ চালিয়ে তাহলে তা যথেষ্ট হবে। কেননা, উমরার হাকীকতের বাইরের কারণে কারাহাত এসেছে। আর তা এই যে, এই দিনগুলোতে হজ্জের ক্রিয়াকর্ম সম্পাদনে ব্যস্ত থাকবে। সুতরাং হজ্জের তাযীম রক্ষার জন্য সময়টাকে হজ্জের জন্য মুক্ত রাখা ওয়াজিব।

আর অবশ্য তার উপর একটি দম ওয়াজিব হবে। উভয়কে একত্র করার কারণে ইহরামের মধ্যে কিংবা পরবর্তী কর্মসমূহের মধ্যে।

মাশায়েখগণ  বলেছেন যে, এটিও কাফ্‌ফারার দম।

মাবসূতে যা বলা হইয়াছে, বাহ্যতঃ সে আলোকে কেউ কেউ বলেছেন যে, যদি হজ্জের হলকের পর ইহরাম বাধে, তাহলে উমরা বর্জন করবে না।

কিন্তু কেউ কেউ বলেছেন যে, এই দিনগুলোতে উমরা করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা পরিহার করার জন্য তা বর্জন করবে। ফকীহ্‌ আবূ  জাফর (রঃআঃ) বলেছেন, আমাদের মাশায়েখগণ এ মতই পোষণ করেন।

যদি তার হজ্জ ফউত হয়ে যায়, অতঃপর সে উমরা বা হজ্জের ইহরাম বাধে তাহলে সে তা বর্জন করবে। কেননা যার হজ্জ ফউত হয় সে উমরার মাধ্যমে হালাল হয়। কিন্তু তার ইহরাম উমরার ইহরামে পরিবর্তিত হয় না। হজ্জ ফউত হওয়া অধ্যায়ে এ আলোচনা আসবে ইনশাল্লাহ্‌। সুতরাং সে কার্যসমূহের ক্ষেত্রে দুই উমরা একত্রকারী হয়ে যাবে। তাই তার কর্তব্য হলো দ্বিতীয়টি বর্জন করা-যেমন যদি দুই উমরার জন্য ইহরাম বাধে।

আর যদি হজ্জের ইহরাম বেধে থাকে তাহলে সে ইহরামের দিক থেকে দুই হজ্জ একত্রকারী হলো। সুতরাং দ্বিতীয়টি বর্জন করা তার ওয়াজিব হবে। যেমন দুই হজ্জের ইহরাম বাধলে একটি তাকে বর্জন করত হবে। তবে তা শুরু করা বৈধ হওয়ার কারণে কাযা করা তার উপর ওয়াজিব হবে। আবার সময়ের পূর্বে হালাল হওয়ার কারণে তা বর্জন করায় দম ওয়াজিব হবে।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply